কয়েকটি অণুগল্প …


এক নারী তার কষ্ট গুলো শেয়ার করতে চাইলো এক মধ্যরাতে। যখন চারিধার নিশ্চুপ। নৈশব্দের তীব্র একাকীত্ব মাঝে নিজের দেহের উষ্ণতা ধার দিতে চাইলো সে।

আমি দুটার একটাও নিলাম না। শীতের রাতে যে নারীরা বোধের অবোধ্য অনুভবে উষ্ণতর সোপানে আরোহন করতে চায় তাদের যন্ত্রণা আমাকে প্রলুব্ধ করে না। আমি উষ্ণতা এবং কষ্ট ধার নেই না। আমি সমবন্টনে বিশ্বাসী। কষ্ট আমার ও অঢেল আছে। তবে কেন আরো বাড়ানো।

সেই নারী- অচেনা এক মধ্যরাতের কোমল অনুভবে প্রহরের পর প্রহর প্রলুব্ধ করেই যায়।
শরীর দেহের খোঁজে ব্যকূল। মন অন্তরের। তবে নারীর উষ্ণতা কি সুপেয় হ্রদের অনন্ত গভীরতায় তৃষিত দেহের আজনম মেঘবতী হবার অনুরণন জাগায়? রক্তকণিকাদের সৃষ্টি সুখের উল্লাসে প্রহ্লাদে মেতে উঠবার এক চিরায়ত নতজানু অনুভবে প্রচন্ড গতিতে কোষে কোষে তরিৎপ্রবাহ!
জ্বালা ধরায়- জ্বালায়- নেভায় কিন্তু তৃপ্তি মেটায় না।

মধ্যরাতের নারীরা নিজেদের চোখের আগুনে নিজে ও জ্বলে.. পুরুষকে ও জ্বালায়। ভালোবাসাহীন একটা দেহ কামনার উষ্ণতায় থেকে থেকে কেঁপে উঠে..
অন্যকে ও কাঁপায়!

#মধ্যরাতের_নারী

★★

শাহেদ তখন চিটাগং ভার্সিটির অনার্স প্রথম বর্ষের স্টুডেন্ট।
শহরের বাসা থেকে প্রতিদিন যাতায়াত করে।
চরম একটা সময় কাটাচ্ছে… বন্ধুরা … শাটল ট্রেন… সবুজ ক্যাম্পাস…আর গান!
সোলস-ফিডব্যাক-মাইলস-আর এবি’র এল আর বি… ওদেরকে মাতিয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো।

কিন্তু আজ শাহেদের অন্য একটা ব্যান্ড এর গানের কথা মনে পড়লো। গানের কয়েকটা লাইন মনে আছে, ব্যান্ডটা মে বি ‘লেসন ওয়ান’।
“… রাজা আসে রাজা যায় আসে না সুদিন
বাংলাদেশ…।”

আসলেই তাই… জীবনের তিনভাগ পেরিয়ে শেষ ভাগে এসে শাহেদ, এতো বছর পরে সেই গানটির প্রয়োগ বাস্তবে দেখছে নিজের চোখের সামনে।

সেই এরশাদ পতনের পর থেকে অদ্যবধি রাজাদের আসা-যাওয়াই কেবল সার হয়েছে- এদেশে সুদিন কি আদৌ এসেছে???

#রাজা_আসে_রাজা_যায়

★★★
আমার প্রভুকে মনের চোখে দেখলাম।

তাকে জিজ্ঞাসিলাম, ‘কে তুমি?’

উত্তর দিলেন প্রভু, ‘তুমি-ই আমি!’

#তুমিই_আমি

★★★★
সুর্য ডুবে ডুবে এমন সময় বাস থেকে নেমে পারুল লঞ্চ ঘাটে এসে দেখে, আকাশ মেঘলা, আর শেষ লঞ্চটা ও মাঝ নদীতে।

দীর্ঘশ্বাসগুলো বাতাসে পাক খেতে খেতে দূরে অপসৃয়মান লঞ্চের ট্রেইল ধরে ছুটে চলে। ম্লান হেসে এক সদ্য ‘ডিভোর্সি যুবতী ভাবে, একটা আক্ষেপ জীবনভর থেকেই যায়!

আলোছায়ায় মাখামাখি জীবনটায় আর কতটুকু আঁধার? পিছনের আলোর জীবনের প্রখরতায় তো সে ঝলসে এসেছে। আলো ফেলে এসেছে। তাই এখন কেবলি কি ওর গোপন আঁধার?
আপন আঁধার!

#মেঘলা_আকাশ

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

6 thoughts on “কয়েকটি অণুগল্প …

  1. মুখপাতায় মাঝে মধ্যে এমন ধাঁচের লিখা দেখা দেখার সৌভাগ্য বা সুযোগ হলেও আপনি মামুন এদিক থেকে পুরোপুরি অনন্য। আমার ভালো লাগে। অনেক শুভকামনা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. ধন্যবাদ মুরব্বী ভাইয়া।
    নি:সন্দেহে আজ ‘ঈদের আগের রাত’ – এমন অনুভব হলো আমার কাছে।
    প্রিয় ব্লগ আংগিনা আবারো মুখরিত হোক নতুন-পুরাতন-হারানো প্রিয় মুখগুলির সহাবস্থানে। গল্প-কবিতা-উপন্যাস আর সীমান্তের বেড়াজালের নাগপাশ ছিন্ন করে, সবার একটি-ই ইউনিক পরিচয় হোক- আমরা শব্দকারিগর! সৃষ্টির উল্লাসে মেতে থাকি।

    অনেক ভালো থাকুন ব্লগের সবাইকে নিয়ে।

  3. থাক আঁধার, তার পিছনেই আলো। অনাবিল অনুরাগ প্রিয় গল্পকার।

  4. ধন্যবাদ প্রিয় কবিদা’ সৌমিত্র চক্রবর্তী।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    অনেক ভালো থাকুন আপনি।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।