শিমুলে আগুন জ্বেলে এলো ফাগুন
ফুলে ফুলে মৌমাছির মৃদু গুনগুন
– ফাগুনের প্রথম দিনে সকলকে শুভেচ্ছা।
_____________________________
★
গত বছর ফাগুনের প্রথম দিনে এক কোকিল কিভাবে যেন ‘ডিমপাড়াসম্ভবা’ হয়ে কাকের বাসায় ডিম পাড়তে গিয়ে গলাধাক্কা খেলো। কাকের বাসার অন্য বাবুগুলো বড্ড হেসেছিল সেদিন। তবে কাকবাবুগুলোর ভেতর একটার চোখ ফুটেনি, ওর দমকে দমকে শরীর কাঁপানো পিচকি হাসিটা সেদিন কোকিলের মনে শেলের আঘাত দিলো। যার এখনো চোখই ফুটেনি, সে হাসির কি বুঝলো? এতটা অপমান কোকিল সহ্যই করতে না পেরে বসন্তের কোকিল হবে ভাবলো। আগে সে অন্য ‘সিজনের’ কোকিল ও ছিল। সময়ে অসময়ে কুহু কুহু করে বিরক্তি উৎপাদন করতো।
কাকের প্রতি এক তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহায় কোকিল ভয়ংকর হয়ে উঠে। মন ও মননে। কিন্তু কাক বাবুগুলির অবুঝ কাজে ওর ভিতরে বাস করা কোকিলমায়ের ভেতরে জন্ম নেয়া মাতৃস্নেহ ওদের প্রতি তরল হয়ে সৌরভে আশপাতকে মাতিয়ে রাখে।
কাকের সাথে দীর্ঘ ছ’মাস চেষ্টা করে অবশেষে আবার বন্ধুত্ব করতে সক্ষম হয় কোকিল। অন্তরে বিষ একই ছিল। একদিন কোকিলের দূরসম্পর্কের ভাইয়ের মেয়ের বিয়ের কথা বলে কাককে রাজস্থানের এক জায়গায় নিয়ে যেতে রাজী করায় কোকিল। দুস্তর মরুর এক পানিহীন প্রান্তরে কাককে নিয়ে উপস্থিত হয়। দু’জনে পানির অভাবে ডিহাইড্রেশনে মৃতপ্রায়। কোকিল নিজের জন্য আগে থেকেই নির্দিষ্ট এক জায়গায় পানি লুকিয়ে রেখেছিল। সে খোঁজার ছল করে কাককে একা ফেলে অন্য দিকে তার উদ্দিষ্ট পথে চলে গেল। কাকও অন্য দিকে পানির খোঁজে আগায়।
অনেক পরে একটা প্রায় পরিত্যক্ত কলসীর অনেক নিচে পানি দেখতে পায় কাক। তাদের ছেলেবেলায় দাদাদের মুখে মুখে চলে আসা একদার সেই জ্ঞানী পুর্বপুরুষের মিথ চট করে মনে পড়ে যায়। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটে ধাপে ধাপে। জীবন বাঁচে কাকের। তখনই কোকিল আসে। তৃষ্ণার্তের ভান করে। বন্ধুত্ব টিকে থাকে। এইবারও প্রতিশোধ নেয়া হয় না কোকিলের।
পহেলা বৈশাখের পান্তা- ইলিশের উৎসব শেষ হবার আরো একমাস পরে দ্বিতীয় সুযোগটি এসে যায়। একদিন বেল গাছের উপর দিয়ে উড়ে যাবার সময় পাকা বেল দেখে কোকিল। অনেক আগে জানা এক টোটকার কথা মনে পড়ে তার। গাছের পাকা বেল কাককে খাওয়াতে পারলেই কাজ হয়। কাক উন্মাদ হয়ে যাবে চিরতরে।
– দোস্ত, বেল পাকছে গাছে, দেখছো? কোকিলের কথার জবাবে কাক শুধু বলে,
– গাছে বেল পাকিলে তাতে কাকের কি?
কিন্তু গাছের নিচে ততক্ষণ কোকিল নেমে থেমেছে। কাক গাছের ডালে। দৃষ্টিতে নিরব চাহনি, কোকিলের কাছে উপায় খোঁজে যেন। বসন্তের কোকিল সব বুঝে। বলে,
– তোমার ফাইটার বাহিনীর আরো এক স্কোয়াড্রণ ডাকো। সবাইকে দুই পায়ে দুটি এবং মুখে একটি করে নুড়ি আনতে বলবে। এরপর একযোগে অনেক উপর থেকে বেল লক্ষ্য করে নুড়ি নিক্ষেপ করবে। বেল আপনাতেই পড়ে যাবে। কুহু কুহু…’
সব কিছু অ্যারেঞ্জ করতে কাক সময় নেয়.. হয়েও যায়.. উপর থেকে নুড়ির আঘাতে বেল পড়ল পড় মালির ঘাড়ে। বেলের আঘাত মাথায় লেগে বসন্তের কোকিলের ‘ইন্সট্যান্ট’ মৃত্যু ঘটে।
বসন্তের কোকিলরা অপরের জন্য গর্ত খুড়ে সেই গর্তেই সব সময় কেন জানি নিজেরা-ই পড়ে যায়। হায়.. 😀
#বসন্তের_কোকিল_মামুনের_কাক_সম্পর্কীয়_দ্বিতীয়_গল্প_অনুগল্প_১৯৯
★★
জীবনের দিনগুলি নিজেদের মত সামনে এগিয়েছে কেবল। তাঁকে জিজ্ঞেস করার মত ভদ্রতাটুকুর ও ধার ধারেনি। এমনতর জীবন।
সবার-ই কি এমন?
ওড়না ফেলে দেবার বয়স পেরিয়ে, পড়ন্ত বিকেলে খোলা চুলে, মদির হাওয়ার পরশ বুলানো সেই স্বাদ ভুলেছেন কবে!
এখন রুপালী চমক জাগা নিরব সময়। এমন কেন এখন সময়! দু:সহ লাগে কেন.. কখনও কখনো?
দাওয়ায় বসলে, পেছনের বিস্তীর্ণ ধানি জমিতে- দখিনা বাতাসের এলোমেলো ছুঁয়ে দেয়ার শব্দ বুকে নেয়া লিলুয়া বাতাস- এখনো ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপর! নাকের নথ দুলিয়ে দিয়ে যায় এখনো। একজন দোদুল্যমান সেই নথের দিকে নির্ণিমেষ চেয়ে থাকতো! দৃষ্টির ছুঁয়ে যাওয়া ভাললাগার সেই প্রহরে, দাওয়ায় বসে থেকে ভাললাগাটুকু অনুভব করত সে! আর ভালবাসা ফিরিয়ে দিতে চাইত। সেই সব প্রহরগুলি লিলুয়া বাতাসকে নিমন্ত্রণ দিয়ে, এখন ও কদাচিত আসে.. যায়.. হারায়।
কেবল আগের মত শিউরে উঠার সেই অনুভবটুকু আজ আর নেই। কারো চলে যাওয়ায় ওরা ও পিছু নিয়েছে তার। শূণ্যতায় ছেয়ে যাওয়া অন্তর! ইদানিং বড্ড ভঙ্গুর লাগে ওর কাছে।
সব কিছু আগের মতই আছে। তবু ও যেন কিছুই নেই। শূণ্যতা চারিদিকে। শূণ্যতা সারা আকাশ জুড়ে। একাকীত্ব ভেসে বেড়ায় বাতাসে বাতাসে।
তারপর ও.. সবই তো ঠিক লাগে। তবু ও এই নিঃসঙ্গতা কেন? বুকের মাঝে! আজকাল বড্ড বাজে।
‘সব কিছু এখানে আছে
কিছু নেই আমার কাছে’
কেন এমন মনে হয় আজকাল?
ঐ তো কাছারিঘরের পাশ দিয়ে সেই পায়ে চলা পথ। খালের সামনে থমকে দাঁড়িয়েছে। আগে একটা সরু বাঁশের সাঁকো ছিল। সেখানে এখন ছোট্ট কালভার্ট। স্মৃতিরা ও সময়ে এভাবে হারায় কেন?
মানুষটা কাজ শেষে রাতে যখন ঘরে ফিরত, উঠানের বাতাবি লেবুর ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ বাতাস, মনকে অজানা আকর্ষণে প্রলুব্ধ করত। তখন বড্ড প্রলুব্ধ হতে ইচ্ছে করত।
সেই বাতাবি লেবু গাছটি এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে! এখন ও বাতাস বয়। সুরভি ছড়ায়। কিন্তু তাতে প্রলুব্ধ হবার উপকরণটুকু কেন জানি থাকে না আর! সাঁকো পার হয়ে আসা সেই রাতের মানুষটির পদশব্দ ও শুনা হয় না দীর্ঘদিন।
এখন রুপালী ঝিলিকের পড়ন্ত সময়। চোখ ভুলভাল দেখে। তাই সবকিছু চোখে পড়লে ও, একজন ফিরে আসা মানুষকে কেবল চোখে পড়ে না। বসন্তের প্রথম প্রহরগুলিও ইদানিং নিরবে আসে..যায়!
ফিরে আসা মানুষেরা-ই কখনও কখনো হারানো মানুষ হয়ে যায়.. কারও না থাকায় থেকে যায় কেবলি শূণ্যতা! একজন মানুষ না থাকা মানে অনেক কিছুই নাই।।
#শূণ্যতায়_ডুবে_গেছি_আমি_অণুগল্প_২০০
★ ছবি: নেট থেকে কপি করা।
ঠিক দুই মেরুর দুটি লিখা। উভয় লিখাই ইন্টারেস্টিং তবে ভোট প্রথমটায় বেশী।
বসন্তের_কোকিল_মামুনের_কাক_সম্পর্কীয় অণুগল্প।
শূণ্যতায়_ডুবে_গেছি_আমি_অণুগল্প।
অণুগল্প সংশ্লিষ্ট সংগ্রহশালার নাম গুলোও বেশ অদ্ভুত।
বসন্ত দিনের অনাবিল শুভেচ্ছা মি. মামুন। ভালো থাকুন; পাশে থাকুন। ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর অণুভূতি জেনে ভালো লাগলো।
হ্যা, কাক সম্পর্কীয় আমার আরো একটি লেখা আছে। সেটি প্রথম ছিলো। গল্পকারের জীবনে একটি অচ্ছুত কাক বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলো নব্বই দশকে।
আপনাকে ধন্যবাদ শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। সাথে অনেক ভালোবাসা আপনি সহ সকল ব্লগার, টেক প্রশাসক এবং প্রিয় ব্লগের প্রতি। সাথেই পাবেন ইনশা আল্লাহ।
ভালো থাকুন।

‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে; তব অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে কোরোনা বিড়ম্বিত তারে
আজি খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো … আজি ভুলিয়ো আপনপর ভুলিয়ো
এই সংগীত-মুখরিত গগনে তব গন্ধ তরঙ্গীয়া তুলিয়ো।’
অসাধারণ!!
সিম্পলি বিউটিফুল!!
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
‘সব কিছু এখানে আছে
কিছু নেই আমার কাছে’
কেন এমন মনে হয় আজকাল?———-
হ্যা, আলমগীর ভাই, কেন মনে হয়?
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
দুটি গল্পই পড়লাম। মনে ধরেছে, ভাল লেগেছে।
শুভ কামনা।
অনেক ধন্যবাদ স্যার। আপনার সুন্দর অনুভূতি লিখার আগ্রহ বাড়ালো আমার।
ভালো থাকুন
শুভেচ্ছা
ভালোবাসা
নিরন্তর…
স্বর্ণালী সুন্দর এই দিন


কে বাজায় দূরে মধুর বীণ
ঘরে আমার এ মন রয়না
কেন চৈতী হাওয়া বয় না।।
বাহ!

খালিদ ভাই
বাহ!!
– অসাধারণ বললেন।
বেশ ভাল লাগল
ভালো লাগার অনুভূতি জানালেন, আমারও ভালো লাগলো।