বংশ

নিশ্চুপ বিকেল। রমজানের শেষ ভাগ। ঝুম বৃষ্টি। নিজের চেম্বারে শিহাব। বড় মেয়ে ফোন করেছিল। কথা হল। ঈদের কেনাকাটা সংক্রান্ত।
আর তিনদিন পরেই ঈদের ছুটি। এবার আর বাড়ি যাওয়া হল না শিহাবদের। নাড়ির টান। এর অনুকূলে ভাসা হল না। টিকেট পেতে পেতে ও.. কনফার্ম হল না।

‘তুমি কি আসলেই যেতে চেয়েছিলে? যদি চাইতে তবে টিকেট কোনো ব্যাপারই ছিল না।’ – নিজের কাছ থেকে এমন রুঢ় কমপ্লিমেন্ট, ভ্রু কুচকান ভংগির সাথে সাথে শিহাবের ভেতরটা ও কি একটু তেতো.. কিছুটা বন্ধুর করে তোলে?

আজ বড় মেয়ের সাথে কথা হল। মেয়ে কিছু প্রশ্ন করেছে। উত্তর দিতে পারেনি। নিশ্চুপে নিজেকে সরিয়ে নিলেও, মনের ভিতরে কোথায় যেন প্রশ্নগুলি জ্বালা ধরাচ্ছিল। চুপি চুপি। অথচ নির্বাক মৌণতায় ধারাল ইস্পাতে চিরে যাওয়া অনুভবের রেশ রয়ে যায়..দীর্ঘক্ষণ।

‘বাবা! আমি তোমার মেয়ে, আমি কি তোমার বংশ না?’
– কেন বলছ?
‘ বলই না।’
– কেউ কি তোমাকে কিছু বলেছে?

মেয়ে ওর কিছুক্ষণ চুপ থাকে। বাইরে উন্মাতাল আবহাওয়া। অন্য শহরে মেয়ের মনেও বুঝি এমন ভাংগাচুরা। শিহাব অনুভব করে। একজন বাবা বুঝতে চান! মেয়েকে। মেয়েটা বড়ই হয়ে গেল.. বোধহয়!

‘ দাদু ফোন করেছিল। সবার কথা বলা শেষে চাচীর কথা বললেন। জুলাইয়ে বাবু আসার ‘ডেট ‘। দাদু বললেন দোয়া করতে, যেন ছেলে হয়। মরার আগে তিনি যেন বংশ দেখে যেতে পারেন।’

এক বৃষ্টিভেজা শহরে ক্লান্ত শিহাব নীরবে মেয়ের কথা শোনে। নিশ্চুপ থাকে।

‘ বাবা, আমি কি দাদুর বংশ নই? তুমিও কি এমন ভাবো?’

বাবার নীরবতা কি এক ভিন্ন শহরে এক মেয়ের কাছে অসহ্য ঠেকে? তাই যখন সে বাবাকে পরবর্তী প্রশ্ন করে, শিহাব মেয়ের ভেতরের ভাংগাচুরা, উথাল-পাথাল- সব কিছুর দলাপাকানো এক ভিন্ন টোন শুনতে পায়।

‘ আমি তবে কী, বাবা? একজন মেয়ে!?’

আরো বেগে নেমে আসে বৃষ্টি। টানা বয়ে চলায় থাই-গ্লাসের ওপাশটা ঝাপসা দেখে শিহাব। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে হৃদয়ের এপিঠ ওপিঠ- দু’পিঠেই। এর মাঝে এক বিষন্ন বাবা, উত্তর খুঁজে বেড়ান।
বৃষ্টির দিনে। এক বেলাশেষের অবেলায়। বিষন্নভূমে.. যেখানে নীরবতা এক প্রচন্ড কোলাহলকে সাথে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়.. প্রশান্তি চিরে দেয়া অনুভবকে হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নেয়!

#বংশ_অণুগল্প_২৭৯

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

4 thoughts on “বংশ

  1. লিখাটি পড়ার পর মনের ভিতরে থাকা দীর্ঘশ্বাসটি সজোড়ে বেড়িয়ে এলো মি. মামুন।

    1. ধন্যবাদ ভাইয়া।
      লেখাটি তবে সার্থক হলো।
      শুভেচ্ছা।

  2. ‘ আমি তবে কী, বাবা? একজন মেয়ে!?’ বড় কঠিন কথা গল্পের অাড়ালে বলে দিলেন।

    1. অনেক ধন্যবাদ প্রিয় কবি/ভাই/ বন্ধু।
      শুভেচ্ছা নিরন্তর।https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_dance.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।