অণুগল্প : কয়েদী জীবন

সবাই অফিস থেকে চলে গেছে। আমি একাই আছি। কোথায় যাবো? গেলে তো সেই ১০ ফুট বাই ৮ ফুট, ৬ দিনের অস্থায়ী জেলখানায় যেতে হবে। সপ্তাহের ১ দিন যা ও বা ছুটি পাই; সারাদিন শুধু ঘুমাতেই ইচ্ছে করে।

কিন্তু বাসার সবাই তো চায় তাদেরকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি। এ দিকে অফিসে বসে থেকে থেকে আলুর মত সাইজ হয়ে যাচ্ছে আমার। সকালে উঠে যে একটু হাঁটবো, তাও পারি না। অবশ্য হাঁটার অনেক সুন্দর জায়গা আছে আমার। অফিসের বিশাল ছাদ-ই তো আছে, যার চারদিকে ৩০ বার ঘুরলেই ৪৫ মিনিট কেটে যায়।

তার পরও হয়ে উঠে না।

এ দিকে মাথার চুল সব সাদা হয়ে যাচ্ছে; শরীর হচ্ছে ভারী। মনটা কেমন যেন নির্জীব-অসহায় হয়ে থাকছে। বার বার শুধু মনে হয় সময় দ্রুত চলে যাচ্ছে; কিন্তু করা হলোনা কিছুই।

না এই দুনিয়ার- না ওই দুনিয়ার। এক ধরনের অক্ষমতা-ক্রোধ-ক্ষোভ – এ সব কিছু মিলিয়ে নিজের উপরেই প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে।

কয়েদী জীবন।
মনে হয় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে একটা রেললাইন ধরে হেটে চলি।

কয়েদীমানবের সমান্তরাল পদচারণ.. অনিশ্চিত পথচলা। কোথায় যাবো??

____________________
#কয়েদী_জীবন_অণুগল্প_৪৪৪

মামুন সম্পর্কে

একজন মানুষ, আজীবন একাকি। লেখালেখির শুরু সেই ছেলেবেলায়। ক্যাডেট কলেজের বন্দী জীবনের একচিলতে 'রিফ্রেশমেন্ট' হিসেবে এই সাহিত্যচর্চাকে কাছে টেনেছিলাম। এরপর দীর্ঘ বিরতি... নিজের চল্লিশ বছরে এসে আবারো লেখালখি ফেসবুকে। পরে ব্লগে প্রবেশ। তারপর সময়ের কাছে নিজেকে ছেড়ে দেয়া। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৬ তে 'অপেক্ষা' নামের প্রথম গল্পগ্রন্থ দিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। বইমেলা ২০১৭ তে তিনটি গ্রন্থ- 'ছায়াসঙ্গী'- দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ, 'ঘুঙ্গরু আর মেঙ্গরু'- উপন্যাস এবং 'শেষ তৈলচিত্র'- কাব্যগ্রন্থ নিয়ে সাহিত্যের প্রধান তিনটি প্ল্যাটফর্মে নিজের নাম রেখেছি। কাজ চলছে ১০০০ অণুগল্প নিয়ে 'অণুগল্প সংকলন' নামের গ্রন্থটির। পেশাগত জীবনে বিচিত্র অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। একজন অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। পোষাক শিল্পের কর্মকর্তা হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। লেখালেখির পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছি। লেখার ক্ষমতা আমি আমার ঈশ্বরের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি। তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত লিখেই যেতে হবে আমাকে।

12 thoughts on “অণুগল্প : কয়েদী জীবন

  1. 'কয়েদীমানবের সমান্তরাল পদচারণ … অনিশ্চিত পথচলা।'
    সঠিক মি. মামুন। শুভ সকাল।

  2. মনে হয় সম্পূর্ণ উলঙ্গ হয়ে একটা রেললাইন ধরে হেটে চলি।———

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।