সাহিত্য আড্ডা-৬ (আবৃত্তিঃ বনলতা সেন)

বনলতা সেন

জীবনানন্দ দাশগুপ্ত বা জীবনানন্দ দাস ছিলেন প্রকৃতির কবি, নিসর্গের কবি, নিস্তব্ধতার কবি, নীরবতার কবি, নিঃশব্দের কবি, বিষন্নতার কবি। তাকে বাংলাভাষার “শুদ্ধতম কবি” বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তাঁর ঘরোয়া নাম ছিল মিলু। মিলু ছিলেন আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) কবিতার রচয়িতা কুসুমকুমারী দাশের জ্যেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসাবে জীবনানন্দের কোনোও পরিচিতি ছিল না। তিনি ছিলেন বিবরবাসী মানুষ। তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাস-গল্পের পাণ্ডুলিপির খাতাগুলো আবিষ্কার হয়। কবিতায় যেমনি, কথা সাহিত্যেও তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে আলাদা, তাঁর সমসাময়িকদের থেকেও তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।

জীবনানন্দ কবিতা ও কবিদের নিয়ে তাঁর ‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে বলেছিলেন –

“সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবি—কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু’ সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।”

নিজের প্রবন্ধের এই কথাগুলো যেন কবি হিসেবে তার নিজের জন্যই সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য।

তার রচিত বনলতা সেন কবিতাটি আজ আপনাদের উপহার দিচ্ছি আবৃত্তিকার লেনিন জামান-এর দরাজ কণ্ঠে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতাটির এই সুন্দর আবৃত্তিটি শোনার পর আপনাদের মতামত জানাতে কার্পণ্য করার কোন চেষ্টা থাকবে না এই আশা তো করতেই পারি। তাই না ?

www.youtube.com/watch?v=Y8J1Q9t2aiw

বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

আনিসুর রহমান সম্পর্কে

এই যে আমি, এই আমার কি সত্যিই কোন অস্তিত্ব আছে ? বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বহীনতার এ প্রশ্ন প্রমান নির্ভর নয় । কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে । কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ব এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান । বর্তমান অবস্হান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র । অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয় । তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

10 thoughts on “সাহিত্য আড্ডা-৬ (আবৃত্তিঃ বনলতা সেন)

  1. সুরঞ্জনা, ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি,
    বোলো নাকো কথা অই যুবকের সাথে
    ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
    নক্ষত্রের রূপালি আগুন ভরা রাতে ;

    ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে ;
    ফিরে এসো হৃদয়ে আমার ;
    দূর থেকে দূরে—–আরো দূরে
    যুবকের সাথে তুমি যেয়ো নাকো আর।

    কী কথা তাহার সাথে? তার সথে!
    আকাশের আড়ালে আকাশ
    মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
    তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।

    সুরঞ্জনা,
    তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
    বাতাসের ওপারে বাতাস
    আকাশের ওপারে আকাশ।
    ___________________

    আকাশলীনা
    — জীবনান্দ দাশ।
    ___________________

    মি. আনিসুর রহমান। পাঠক ভাবনাই শুধু নয়;
    এমন পোস্টের উপস্থাপনা আপনার শিল্প মনের পরিচয় বহন করে। গ্রেট। :)

    1. ধন্যবাদ স্যার, জীবনান্দ দাশ-এর আরও একটি বিখ্যাত কবিতা আমাদের সাথে ভাগ করে নেওার জন্য । এই আবৃত্তি যদিও পাঠক-শ্রোতা পূর্বে বহুবার শুনে থাকবেন, তারপরও আমি শেয়ার দিচ্ছি ঠিক ঐ সময়ের কথা ভেবে যখন পাঠক তার সাহিত্য তৃষ্ণা নিয়ে শব্দনীড়ে আসেন তৃপ্ত হতে । নিজ মনের ভাব ও ভাবনাকে বিস্তৃত করতে ও আমাদের সামনে মেলে ধরতে। এক্ষেত্রে এই ধারাবাহিক যদি কিঞ্চিৎ ভুমিকা রাখতে পারে তবেই এই প্রচেষ্টা সার্থক ।

    2. এমন প্রচেষ্টাকে আমি সব সময়ই স্বাগত জানাই মি. আনিস। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

      1. আপনার প্রেরনায় ভীষণ অনুপ্রাণিত বোধ করি স্যার । ধন্যবাদ বটবৃক্ষ হয়ে ছায়া দেওয়ার জন্য ।

  2. প্রিয় কবিতার আবৃত্তি শুনলাম। ধন্যবাদ সুযোগ করে দেয়ার জন্য

    1. আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই আবৃত্তিটি শোনার জন্য এবং সেই সাথে মূল্যবান মন্তব্ব্যের জন্য !

  3. জীবনানন্দ দাশ আমাদের কবি।
    তাঁর বিষয়ে কিছু লেখার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

    1. অশেষ ধন্যবাদ সাইয়িদ রফিকুল হক ভাই ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য । আমাদের কবি জীবনানন্দ দাসকে নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে । অনেক রহস্য এখনও উন্মোচনের অপেক্ষায়। আমি কাউকে ভারি ভারি কথা বলে বিরক্ত করতে চাইনি। তাই স্বল্প পরিসরের মধ্যে শেষ করা।

  4. এইখানে সরোজিনী শুয়ে আছে, জানিনা সে শুয়ে আছে কিনা।

    এইখানে আনিস সাহেব আড্ডা দেবেন, জানিনা সে আড্ডা দেবে কিনা!

    1. আছি আড্ডার আসরে সবসময় । আপনাকে অভিনন্দন । আসুন শুরু করা যাক। কবিতাটি কেমন লাগলো আপনার জানাবেন দয়া করে।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।