আনিসুর রহমান এর সকল পোস্ট

আনিসুর রহমান সম্পর্কে

এই যে আমি, এই আমার কি সত্যিই কোন অস্তিত্ব আছে ? বোধ করি অস্তিত্ব এবং অস্তিত্বহীনতার এ প্রশ্ন প্রমান নির্ভর নয় । কেননা অতিশয় নগন্য এ অস্তিত্ব উপেক্ষণীয় এই সুবিশাল কর্মযজ্ঞে । কিন্তু সেই মহা শক্তিতে একাত্ব এই সকল কিছুই সর্বদা বিরাজমান । বর্তমান অবস্হান ক্ষনিকের রুপান্তরিত অবস্থা মাত্র । অস্তিত্ববান সকল কিছুই দৃশ্যমান নয় । তবুও অস্তিত্বই চিরন্তন। অন্যথায় অস্তিত্ব হীনতা থেকে অস্তিত্বের সৃষ্টি সম্ভব কি ? অসীম অসংজ্ঞায়িত ∞

সাহিত্য আড্ডা-৬ (আবৃত্তিঃ বনলতা সেন)

বনলতা সেন

জীবনানন্দ দাশগুপ্ত বা জীবনানন্দ দাস ছিলেন প্রকৃতির কবি, নিসর্গের কবি, নিস্তব্ধতার কবি, নীরবতার কবি, নিঃশব্দের কবি, বিষন্নতার কবি। তাকে বাংলাভাষার “শুদ্ধতম কবি” বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তাঁর ঘরোয়া নাম ছিল মিলু। মিলু ছিলেন আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) কবিতার রচয়িতা কুসুমকুমারী দাশের জ্যেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসাবে জীবনানন্দের কোনোও পরিচিতি ছিল না। তিনি ছিলেন বিবরবাসী মানুষ। তাঁর মৃত্যুর পর উপন্যাস-গল্পের পাণ্ডুলিপির খাতাগুলো আবিষ্কার হয়। কবিতায় যেমনি, কথা সাহিত্যেও তিনি তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে আলাদা, তাঁর সমসাময়িকদের থেকেও তিনি সম্পূর্ণ আলাদা।

জীবনানন্দ কবিতা ও কবিদের নিয়ে তাঁর ‘কবিতার কথা’ প্রবন্ধে বলেছিলেন –

“সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবি—কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু’ সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।”

নিজের প্রবন্ধের এই কথাগুলো যেন কবি হিসেবে তার নিজের জন্যই সবচেয়ে বেশী প্রযোজ্য।

তার রচিত বনলতা সেন কবিতাটি আজ আপনাদের উপহার দিচ্ছি আবৃত্তিকার লেনিন জামান-এর দরাজ কণ্ঠে। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতাটির এই সুন্দর আবৃত্তিটি শোনার পর আপনাদের মতামত জানাতে কার্পণ্য করার কোন চেষ্টা থাকবে না এই আশা তো করতেই পারি। তাই না ?

www.youtube.com/watch?v=Y8J1Q9t2aiw

বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার অশোকের ধুসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের’পর
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, ‌‌‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পাণ্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।

আত্মচিন্তন-১১ (ভাবভঙ্গি)

ভাবভঙ্গি !!!

বর্তমান ভাবের এই ভুবনে ভাবুকেরা আর ভাব দেখায় না। যারা ভাবে চলে তাদের ভাবের অভাব থাকলেও ভঙ্গির অভাব নেই। ভাবনার দৈন্যতায় ভাবের ভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে গেছে ভীষণ ভাবে। কিন্তু ভাবুকদের ভাবের সাথে ভঙ্গির অভাবে ভুল ভাবে ভাবের সংজ্ঞা প্রতিষ্ঠিত করতে ভাব নেয়া ভাবুকদের কোন বৈরী ভাবের মুখে পড়তে হয় না। ভাবভঙ্গিতে যে যত এগিয়ে, ভাবের দুনিয়া তার ততোটাই আয়ত্বে। তাই প্রকৃত ভাবুকদের ভাবনা ও ভাব নিয়ে এই ভাবভঙ্গির ভবে টিকে থাকাও আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দিনকে দিন। এখন ভাবুকদেরও ভাবতে হচ্ছে, তারা কি নিজেদের ভাব নিয়ে থাকবে নাকি ভঙ্গি ধারন করে যুগের উপযোগী ভাবুক হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে অনেক ভাবুককেও ভাব বিসর্জন দিয়ে ভঙ্গিতে মাততে দেখা গেছে। স্বভাবে ভঙ্গিবাজ না হওয়ার কারনে তারা ভাবও ছাড়তে পারেনি আবার ভঙ্গিও শিখতে পারেনি ভালোভাবে। এরা ভাব ও ভঙ্গি দুই দিকেই ব্যার্থ। যারা সার্থক তারা ভাবুক হিসেবে ভণ্ড হলেও ভঙ্গিবাজ হিসেবে যথার্থ। এই ব্যর্থতা ও সার্থকতার হিসেবে ভাবুক সমাজ আজ দুই ভাগে বিভক্ত। অগভীর ভাবুকেরা আজ “ভাব বড় না ভঙ্গি বড় ?” সেই হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত। প্রকৃত ভাবুকদের এই সব ভাবভঙ্গিতে কোন আগ্রহ নাই। তারা আজ আত্মসম্মান বাঁচাতে নিশ্চুপ। এই সুযোগে ফায়দা লুটছে ভাবভঙ্গিতে ভাবের চেয়ে ভঙ্গি বেশী ধরনের ভাবুকেরা। এই হচ্ছে আমাদের সমাজের বর্তমান ভাবভঙ্গি !

আত্মচিন্তন শিরোনামের অন্যান্য লেখাঃ

আত্মচিন্তন-১
আত্মচিন্তন-২
আত্মচিন্তন-৩
আত্মচিন্তন-৪
আত্মচিন্তন-৫
আত্মচিন্তন-৬
আত্মচিন্তন-৭
আত্মচিন্তন-৮
আত্মচিন্তন-৯
আত্মচিন্তন-১০

সাহিত্য আড্ডা-৫ (আবৃত্তিঃ নির্মলেন্দু গুনের কবিতা)

তোমার চোখ এত লাল কেন ?

প্রথম কয়েক পর্ব কয়েকটি গান আপনাদের সাথে শেয়ার করার পর মনে হল এবার কবিতার সময় । গান শোনার ক্ষেত্রে মানুষের রুচির তারতম্য অনেক বেশি । আমার প্রিয় গানের মধ্য থেকে আমি কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে শব্দনীড়ের জন্য গান নির্বাচন করতে যেয়ে নিজেই যেন সাগরে পড়ে গিয়েছিলাম। শব্দনীড়ে যেহেতু কবিতাই বেশী প্রকাশিত হয় সেহেতু কবিতা বন্ধুরা অনেক বেশী পছন্দ করবেন বলে আমার ধারনা।

কবি নির্মলেন্দু গুন, যাকে তার কাছের মানুষেরা গুন দা বা গুন্ডা বলে ডাকেন। বাংলাদেশের বর্তমান কবিদের মধ্যে নির্মলেন্দু গুন’কে আমারা জানি সময়ের সেরা কবি হিসেবে। তার অন্যান্য অনেক পরিচয়ের মধ্যে নারীপ্রেমের বিষয়টা মুখ্য । এই সময়ের সেরা ও জনপ্রিয় আবৃত্তিকারদের একজন মাহিদুল ইসলামের কণ্ঠে আমরা শুনবো তার সম্ভবত এই সময়ের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় প্রেমের কবিতা – তোমার চোখ এত লাল কেন ?

তোমার চোখ এত লাল কেন ?

www.youtube.com/watch?v=JzqQy5tDgCQ

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক ,
শুধু ঘরের ভিতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক । আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে ।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুক
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কি না ।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি ।

আমি বলছি না ভালবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য ভিতর থেকে দরজা খুলে দিক
কেউ আমাকে খেতে বলুক ।
কাম-বাসনার সঙ্গি না হোক
কেউ অন্তত আমাকে জিজ্ঞেস করুরঃ
“তোমার চোখ এত লাল কেন ?”

-নির্মলেন্দু গুন

সাহিত্য আড্ডার আগের পর্ব গুলোঃ
সাহিত্য আড্ডা-১
সাহিত্য আড্ডা-২
সাহিত্য আড্ডা-৩
সাহিত্য আড্ডা-৪

সাহিত্য আড্ডা-৪ (বৃষ্টি কথন)

বৃষ্টি কথন

আজ বৃষ্টি বিলাসের দিন !!!

শ্রাবণের এমন ইলশে গুড়ি খিচুড়ি বৃষ্টির দিনে আমার মত যারা অফিস করছেন তাদের প্রতি সমবেদনা ! গান শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছে, কিন্তু অফিসে বসে নয়। তাহলে কোথায় ? ভাবতে ভাবতে মনে হল নদীতে ছৈ ওয়ালা নৌকায় চুপটি করে বসে বসে গান শুনতে পাড়লে ভালো লাগতো ভীষণ । আফসোস, কি আর করা ?

আপনাদেরও কি আফসোস হচ্ছে আমার মত ? কে কিভাবে বৃষ্টি উপভোগ করলেন আড্ডায় সবার সাথে শেয়ার করতে পারেন। জানাতে পারেন বৃষ্টি দিনে আপনার দুর্ভোগের কথা। অথবা বৃষ্টি দিনে আপনার পছন্দের খাবারের কথা। অথবা যে কোন কিছু !

আর বাড়তি কথা শুনতে নিশ্চয় কারো ভালো লাগছে না। তাহলে আসুন কিঞ্ছিত বিনোদিত হই বৃষ্টির গানে।

শ্রাবণী সেন- এর কণ্ঠে রবীন্দ্র সঙ্গীত এমনও দিনে তারে বলা যায় !

www.youtube.com/watch?v=6vYJeMqhMZ0

গোধূলির গান

গোধূলির গান

সে আমারে দিয়েছিনু গান
স্বযতন ভরে,
আমি তারে দিতে চেয়েছিনু এই মুল্যহীন প্রাণ!
তাহার আপন দুটি কড়ে,
নিলে না সে অবহেলা করে ।

বললে……
কিইবা এমন দিয়েছি তোমায় ?
এ তো নয় একাই তোমার
গেয়েছিনু আনমনে,
যখন তুমি ও ছিলে অন্য সবার সনে ।

আমি শুধু বললেম
সকলই কি শুনেছে সে গান ?
যেমনটি আমি শুনলেম !

সময়ের সাথে সবই হয়ে যায় ম্লান
কিন্তু আমার একি হলো !
সুরের লহরী মালা দোলা দিয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে
যখন সে গোধূলি ফুরলো !

দিবা অবসান
রাতের সৌন্দর্য্য যত বাড়ে,
নিদ্রাহীন চক্ষু কর্ণ
খুঁজে খুঁজে ফেরে শুধু তারে ।

তারপর বহু যুগ পরে
আজি এ লগন
শুধুই নিজের মাঝে আত্মমগন ।

বৃষ্টি ধারার সনে
শন্ শন্ বায়ু যদি বহে কোন ক্ষণে
চিরচেনা সেই সুর ভেসে আসে কানে
আজিকের কোন এক গানে ।

ঈশান কোণেতে যদি কভু
চমকি বজ্র ধ্বনি হানে,
না পেয়েও পাওয়া সেই হারানোর ব্যথা
দূরু দূরু বেজে ওঠে প্রাণে !

২৬ মে, ২০১৬

সার্থক ব্লগিং ও ব্লগিংয়ের সার্থকতা !!!

শব্দনীড়ের বন্ধুদের প্রতি আমার একটা প্রশ্ন-?
আমরা যারা কম বেশী লেখা লেখি করি তারা ব্লগে কেন আসি ? লেখা প্রকাশের তো আরও অনেক মাধ্যম আছে। তবে ব্লগিং কেন ?

এর উত্তরে আমার মনে হয়, একমাত্র ব্লগ ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে নিজের লেখাকে অন্যের দৃষ্টিতে দেখবার এমন সহজ ও সুন্দর সুযোগ আর নাই। এত বেশী পাঠক, লেখক ও বোদ্ধাদের মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা ও উৎসাহ, অনুপ্রেরণা অন্য কোন মাধ্যমে লাভ করা যায় না। একই সাথে সমসাময়িক লেখকদের সাথে ও তাদের সদ্য তরতাজা লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার এমন সুযোগও অন্য কোন মাধ্যমে নাই তাই আমরা ব্লগে আসি।

উপরোক্ত আলোচনার আলোকে আরও সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারি আমরা চাই ব্লগে আমাদের সবাই চিনুক, আমাদের লিখা পড়ুক, ভুলগুলো ধরিয়ে দিক এবং অনুপ্রাণিত করুক।

আমার আবার প্রশ্ন, কিভাবে তা সম্ভব ? আমাদের সবার লিখা তো বহুল পঠিত না বা সবাই আলোচনা, সমালোচনা বা মন্তব্য ও খুব বেশী পাই না। তাহলে ?

আমি আমার মত করে বলছি ধাপে ধাপে।

প্রথম কথাই হচ্ছে আমার লিখা সবাই পড়ুক চাইলে আমাকেও ভালো লিখতে হবে। ভালো লিখলে অন্যান্য সব গুলো নির্ভরশীলতা বা সীমাবদ্ধতা কাটিয়েও আমরা ভালো লেখক হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠতে পারি। ভালো লিখতে হলে ভালো বই পড়ার কোন বিকল্প নাই। স্বনামধন্য সব লেখক ও সাহিত্যিকদের বিষয় ভিত্তিক প্রচুর বই আমাদের পড়তে হবে বাংলা সাহিত্যের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ ও সাহিত্যের গতি প্রকৃতি বোঝার জন্য। সমসাময়িক নতুন ও স্বনামধন্য লেখকদের বই পড়তে হবে বর্তমান আধুনিক সাহিত্যের ভাব ধারা বোঝার জন্য। চলমান সময়ের লিখা সম্পর্কে জানতে চাইলে পড়তে হবে দৈনিক পত্রিকা, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক সাহিত্য পত্রিকা ও লিটল ম্যগ। আর যদি চাই ঠিক আজকে কোন কবি বা সাহিত্যিক কি ভাবছে বা কি লিখছে তার জন্য পড়তে হবে সাহিত্য ব্লগ।

কিন্তু আমরা যদি বিখ্যাত লেখকদের মত ভালো না লিখি তবে কি আমাদের লিখা কেউ পড়বে না ? আমাদেরকে কেউ চিনবে না ? আমরাই বা ভালো লেখা কিভাবে লিখতে পারি যে আমাদের লেখা সবাই পড়বে ? আমাদেরকে সবাই জানবে ?

ব্লগের একটা সুবিধা হল বিখ্যাত লেখকদের মত ভালো না লিখেও আপনি সবার কাছে পরিচিত হতে পারেন। পেতে পারেন সবার মূল্যবান মন্তব্য, আলোচনা, সমালোচনা, পরামর্শ ও অনুপ্রেরণা। যা আপনাকে ধীরে ধীরে বা রাতারাতি খুবই ভালো মানের লেখক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। আর তা হচ্ছে অন্যের পোষ্টে মন্তব্য করা। অন্যের লিখা পড়ে, বুঝে একটা উপযুক্ত মন্তব্য করতে পারা একটা ভালো লিখার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এ চর্চা আপনার লিখার হাতকে দক্ষ ও শানিত করবে নিশ্চিত। আর তাইতো আমাদের ছোট বেলায় ভাবসম্প্রসারণ ও সারাংশ লিখার প্রতি এত জোর দেয়া হতো।

এই পোস্টের প্রথম স্ক্রিনশট এ শব্দনীড়ের ব্লগারদের মন্তব্য করার একটা চিত্র দেখতে পাবেন এবং বেশী (যদিও তা অপ্রতুল) মন্তব্যকারীদের উপর এর প্রভাবও একটু যত্ন নিয়ে দেখলেই পরবর্তী দুটি স্ক্রিনশটে সহজেই বুঝতে পারবেন।

আমরা অনেকেই উদ্বিগ্ন যে শব্দনীড় কি শুধু মাত্র একটা কবিতা নির্ভর ব্লগ হয়ে যাচ্ছে ? এ প্রশ্নের উত্তরে আমি বলতে চাই আমরা কি শুধু কবিতাই ভালোবাসি ? বা আমরা কি শুধু কবিতাই লিখি ? শব্দনীড় আমার ব্লগ, আপনার ব্লগ, আমাদের সবার ব্লগ। আমরা একে যেভাবে দেখতে চাই সেভাবেই সাজিয়ে নিতে পারি। আসুন, আমরা আমাদের নিজেদের রুচি ও পছন্দমত আমাদের ব্লগকে সাজাই হরেক রুপে, নানান ঢঙে, নানার অলংকারে।

পরিশেষে প্রত্যাশা আমাদের সবার স্বতঃস্ফূর্ত ও আন্তরিক অংশ গ্রহনে শব্দনীড়ে আমাদের একক ব্লগিং হয়ে উঠুক সার্থক এবং আমরা সমন্বিত ভাবে উপভোগ করি ব্লগিংয়ের সার্থকতা।

আত্মচিন্তন-১০

সময়ের স্রোত

বহু জ্ঞানী গুনী মহারথীকেও দেখা যায় স্রোতে গা ভাসিয়ে দিতে ! ভেবে অবাক হই যে স্রোত সবাইকেই কোন না কোন সময় ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে ভাটিতে ! স্রোতের প্রতিকুলে এমনকি অনুকুলেও কারো শক্তিই সকল পরিস্থিতিতে পরিক্ষীত নয় ! উহা আপেক্ষিক !!!

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

অসাধারণ সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ও সাধারণের সাহিত্য

হুমায়ুন আহমেদ-এর একটা বিখ্যাত উক্তি দিয়ে শুরু করি ।

“পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।”

আর এই খুব কম মানুষদের মধ্যে তিনি একজন। তিনি পেরেছেন। শুধু পেরেছেনই না, তিনি অনেক ভালোভাবেই পেরেছেন। কারন তিনি শুধু নিজের মধ্যকার ঘুমন্ত দৈত্যকেই জাগিয়ে তুলেননি। জাগিয়ে তুলেছেন সাহিত্য বুঝেন না এমন সাধারণ মানুষের মনে সাহিত্যের বোধ। হুমায়ূন পূর্ববর্তী যুগে বাংলা সাহিত্য ছিল উচ্চ শিক্ষিত ও বোদ্ধা শ্রেণীর মানুষদের দখলে। সাহিত্য চর্চা ছিল একই সাথে অহংকার ও বিলাসিতা করবার মত বিষয়। হুমায়ূন সাহিত্যকে তুলে দিয়েছেন স্বল্প শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের হাতে। এই দখল মুক্তির প্রচেষ্টা সহজ ছিল না নিশ্চয়। কিন্তু এই কঠিন কাজটাই হুমায়ূন করেছেন অত্যন্ত সহজ ভাবে। কারন তিনি ছিলেন জাদুকর। সাহিত্যের জাদুকর। তিনি যেমন সাহিত্যকে করে তুলেছেন সাধারণ মানুষের মানবীয় অনুভূতিতে পরিপূর্ণ তেমনি অতি সাধারণ মানুষকেও করে তুলেছেন সাহিত্যের রস আস্বাদনে উন্মুখ, আলোচক ও সমালোচক। মোট কথা সাহিত্যকে তিনি সাহিত্য হিসেবে নয় বরং মানুষের জীবনানুভূতি হিসেবে তুলে ধরেছেন।

আমার মতে হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একজন অনুভূতি কেন্দ্রিক দার্শনিক। কোন দার্শনিকের প্রশংসায় হয়তো “অনুভূতি কেন্দ্রিক” এমন বিশেষণ ব্যবহার করা হয় না। তবে আমি এখানে একটু ভিন্ন ভাবে বলছি কারন দর্শন বলতে যা বুঝায় সেই মাপকাঠিতে তিনি ব্যতিক্রম। তার দর্শন, জীবন দর্শন। জীবনকে তিনি শুদ্ধতা ও নৈতিকতার আলোকে ব্যাখ্যা করেননি শুধুমাত্র। দায়িত্ব ও কর্তব্য ভাঁড়ে জর্জরিত করেননি জীবনের স্বল্প সময়কে। উন্নতির মাপকাঠিতে জীবনকে যান্ত্রিক ও নিষ্প্রাণ করে তুলেননি তার লিখনিতে। বরং জীবন যেমন, জীবন আসলে তেমন ভাবেই সুখের এই কথাই আড়ম্বর করে বুঝিয়েছেন বারংবার তার লিখনিতে। বুঝিয়েছেন জীবনকে আসলে মূল্য দিতে হয়। উপভোগ করতে হয় নিজের মত করে। সাজাতে হয় সাধ্যের মধ্যে পছন্দের উপকরন দিয়ে।

জ্যোৎস্না বিষয়ক লেখকের দুটি লেখাংশ দিয়ে এই বিষয়টাকে আমার মনে হয়েছে আপনাদের কাছে সবচেয়ে সহজ ভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব।

“প্রতি পূর্ণিমার মধ্যরাতে একবার আকাশের দিকে তাকাই। গৃহত্যাগী হবার মত জোছনা কি উঠেছে? বালিকা ভুলানো জোছনা নয়। যে জোছনায় বালিকারা ছাদের রেলিং ধরে ছুটাছুটি করতে করতে বলবে – ও মাগো, কি সুন্দর চাঁদ। নব দম্পতির জোছনাও নয়। যে জোছনা দেখে স্বামী গাঢ় স্বরে স্ত্রীকে বলবেন – দেখো দেখো চাঁদটা তোমার মুখের মতই সুন্দর। কাজলা দিদির স্যাঁতস্যাতে জোছনা নয়। যে জোছনা বাসি স্মৃতিপূর্ণ ডাস্টবিন উল্টে দেয় আকাশে। কবির জোছনা নয়। যে জোছনা দেখে কবি বলবেন – কি আশ্চর্য রূপার থালার মত চাঁদ। আমি সিদ্ধার্থের মত গৃহত্যাগী জোছনার জন্য বসে আছি। যে জোছনা দেখা মাত্র গৃহের সমস্ত দরজা খুলে যাবে। ঘরের ভিতর ঢুকে পড়বে বিস্তৃত প্রান্তর। প্রান্তরে হাঁটব, হাঁটব আর হাঁটব- পূর্ণিমার চাঁদ স্থির হয়ে থাকবে মধ্য আকাশে। চারদিক থেকে বিবিধ কণ্ঠে ডাকবে-আয় আয় আয়।”

এখানে কবি এক গভীর জ্যোৎস্না বিলাশে মগ্ন। জ্যোৎস্নার মত এমন একটা বিমূর্ত সৌন্দর্যের বিষয়কে লেখক তার অতি প্রাঞ্জল ভাষায় বর্ণনার মধ্য দিয়ে এমন মূর্ত করে তুলেছেন যেন একমাত্র গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নাই পারে একজন মানুষকে তার জীবনের প্রকৃত সুখের সন্ধান দিতে। যে সুখ জীবনে একবার পেলে একজন মানুষ গৃহত্যাগী হয়েও পেতে পারে ত্রিভুবনের সমগ্র সৌন্দর্য ও সুখের দেখা। তার আর জীবনে চাওয়ার বা পাওয়ার কিছুই যেন অবশিষ্ট থাকেবে না যেন। যদিও এমন হয়তো কেউ কোনদিন পায়না। তবুও সেই গৃহত্যাগী জ্যোৎস্নার জন্য অপেক্ষার যে অনন্ত সময় তা সত্যি সুখের নিশ্চয়ই !

অন্য আরেকটি লেখাংশে সেই অপূর্ব জোছনায় সাড়া দিতে না পাড়ার কষ্ট থেকে তিনি লিখেছেন-

“কোন কোন রাতে অপূর্ব জোছনা হয়। সারা ঘর নরম আলোয় ভাসতে থাকে। ভাবি, একা একা বেড়ালে বেশ হতো। আবার চাদর মুড়ি দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলি। যেন বাইরের উথাল পাথাল চাঁদের আলোর সঙ্গে আমার কোন যোগ নেই। মাঝে মাঝে বৃষ্টি নামে। একঘেয়ে কান্নার সুরের মতো সে শব্দ। আমি কান পেতে শুনি। বাতাসে জাম গাছের পাতার সর সর শব্দ হয়। সব মিলিয়ে হৃদয় হা হা করে উঠে। আদিগন্ত বিস্তৃত শূন্যতায় কি বিপুল বিষণ্ণতাই না অনুভব করি। জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে। একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিঃসঙ্গতায় ডুবছি।”

এখানে লেখকের বিষণ্ণতা পাঠকের মনকে নাড়া দেয়। কিন্তু কি এক জাদুকরী শক্তিতে পাঠক তার নিজের অনুভুতিগুলিকে হারিয়ে অথবা নিজের মধ্যে জমে থাকা কষ্ট গুলিকে হারিয়ে ধারন করেন জ্যোৎস্নার মত মায়াময় এক অপার্থিব সৌন্দর্যের অধরা হাতছানি এবং শূন্যতার অনুভূতি। এবারও পাঠক ভুগতে থাকেন ভিন্ন রকম এক সুভ্র সৌন্দর্যের সুখের অসুখে। এটাকে পাঠক যেভাবেই উপলদ্ধি করুক না কেন, তা প্রকৃত অর্থে সুখেরই।

(পোস্টের কলেবর বড় হয়ে যাওয়ায় এই লেখাটা এখানে অসম্পূর্ণ, আরও পর্ব হতে পারে)

সাহিত্য আড্ডা-৩


যেতে যেতে পথে হল দেরী

সাহিত্য আড্ডা‘র প্রথম দুইটা পোষ্টে এমন সাড়া পাবো এটা আমি কখনো ভাবিনি। নাম যদিও সাহিত্য আড্ডা কিন্তু এখানে আমরা ততোটা সাহিত্য বিষয়ক গুরুগম্ভীর আলোচনা করছি না। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে সাহিত্য আড্ডা নামকরন কি ঠিক হল ? আসলে আমার মনে হয় আমাদের সম্পূর্ণ জীবনটাই সাহিত্য । জীবনের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ই সাহিত্যের উপকরন। শব্দনীড়ে তো সবাই অনেক গুরুগম্ভীর লেখা প্রকাশ করেন । কিন্তু মন্তব্যের ঘরে দেখি আড্ডাটা ঠিক জমে উঠছে না । কবিতা পড়তে পড়তে যখন মাথা ঝিম ধরে যায় তখন এই আড্ডায় যদি আমরা একটু প্রিয় কিছু গান শুনে নেই তবে কেমন হয় ? অথবা কবিতা আবৃত্তি ? অথবা যে কোন কিছু ? যে কোন কিছু, যা আমাদের নিজস্ব সাহিত্য রচনা নয় কিন্তু আমরা পড়তে বা শুনতে ভালোবাসি ?

তবে আপনারা চাইলে আমরা এখানে মৌলিক বাংলা সাহিত্য নিয়ে গঠনমূলক, বস্তুনিষ্ঠ ও বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাও করতে পারি । সাহিত্য আড্ডা নামটা ঠিক রেখে এর ক্রম অনুসারে আপনিও আপনার মত করে আড্ডার আহ্বান জানাতে পারেন । অথবা আপনার মত করে অন্য কোন শিরনামে। অন্যের আড্ডায় সাড়া দিতে পারেন মন্তব্য করে। আর যদি এর কোনটাই আপনার ভালো না লাগে তবে শুধু দেখে যান, পড়ে যান, শুনে যান । তবুও সাথে থাকুন।

আমার বিশ্বাস এক সময় আপনারও ভালো লাগবে । লাগুক না ! একটু ভালো লাগলে দোষ কি ? ক্ষতি তো নাই তাতে কোন !

আপনাদের জন্য আমার আজকের নিবেদন সন্দীপন-এর কণ্ঠে বর্ষা দিনের গান যেতে যেতে পথে হল দেরী

www.youtube.com/watch?v=99awnc0IgfQ

যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
ভুল বুঝে তুমি চলে গেছ দূরে
ক্ষমা পাব আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি
আশা ছাড়িনি -আশা ছাড়িনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

আকাশ ভেঙে তখন
বৃষ্টি নেমেছিল
পায়ে যে পথ থেমে ছিল
থেমে ছিল -থেমে ছিল
আমি গিয়ে দেখি তুমি নেই একী
হার মেনে তবু হারিনি
হারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

চলে যে গেছ তুমি
আসিনি আমি দেখে
দাড়িয়ে থেকে থেকে ওগো
চলে গেছ -চলে গেছ
বুকে কাঁটা লয়ে
ব্যথা তবু সয়ে
মুখ থেকে হাসি করিনি করিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো পারিনি যেতে পারিনি
যেতে পারিনি -যেতে পারিনি
যেতে যেতে পথে হল দেরী
তাইতো

শব্দনীড় এর পুরাতন বন্ধুরা নীড়ে ফিরুন আমাদের জন্য

আমার এবং আমাদের সবার প্রিয় সাহিত্য ব্লগ শব্দনীড়‘কে নিয়ে দুটি কথা-

শুরুতেই শব্দনীড়-এর সকল স্বনামধন্য ও নতুন ব্লগার, কবি, লেখক, গল্পকার, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক সহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই শব্দনীড়ে’র প্রতি তাদের ভালোবাসা এবং বিগত পোস্টগুলোতে স্ব স্বকীয় অবদানের জন্য। যথেষ্ঠ মেধা শ্রম মনন এবং রুচির যে অসাধারণ সম্মিলন ঘটিয়েছেন তার জন্য।

আমরা জানি শব্দনীড় বাংলাদেশে বাংলা সাহিত্যের বহুল পঠিত, পাঠক প্রিয় ও পুরাতন ব্লগ গুলোর একটি। যদিও এখন শব্দনীড় নতুন আঙ্গিকে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছে, কিন্তু শব্দনীড়ে’র পুরাতন ব্লগার, কবি, লেখক, গল্পকার, সাহিত্যিক, উপন্যাসিক সবাই শব্দনীড়’কে ভুলে যাননি, ভুলতে পারেন না এবং আবার শব্দনীড়ে ফিরে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস। বিশ্বাসটি কে ধরে রাখতেও চাই।

একজন নতুন ব্লগার হিসেবে আমি আপনাদেরকে শব্দনীড়ে স্বাগতম জানাচ্ছি। আসুন আবার জমিয়ে তুলি শব্দনীড়’কে আমাদের নিজেদের স্বার্থে, আমাদের সবার স্বার্থে, সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসার স্বার্থে। শব্দনীড় থাকুক ভালোবাসায়।

মুখোশ

মুখোশ

আমার একটা মুখোশ আছে
আঁধার হলে খুলি,
যখন দিনের আলো ফোটে
মুখের উপর তুলি ।

আমার একটা মুখোশ আছে
একলা হলেই খুলি,
যেথায় দেখি জন-বসতি
সেথায় মুখে তুলি ।

আমার একটা মুখোশ আছে
ঠাণ্ডা মাথায় ভুলি,
মেজাজ খানা বিগড়ে গেলে
হঠাৎ টেনে খুলি ।

আমার একটা মুখোশ আছে
যা পড়ে পথ চলি,
ক্ষণিক চলায় বিঘ্ন হলেই
চটজলদি খুলি ।

আমার একটা মুখোশ আছে
গর্ব করে বলি,
অহং দর্প চূর্ণ হলে
তড়িৎ পড়ে খুলি ।

আমার একটা মুখোশ আছে
যা পড়ে সঙ ধরি,
শনির দশায় পড়লে পরে
সাঙ্গ জারি জুরি ।

আমার একটা মুখোশ আছে
রঙিন করে তুলি,
আচমকা যেই বৃষ্টি পড়ে
মুখোশ ধুয়ে ধুলি ।

আমার কিছু মুখোশ আছে
সময় বুঝে পড়ি,
অসময়ে অন্য মুখোশ
নতুন করে গড়ি ।

৭ এপ্রিল, ২০১৬

আত্মচিন্তন-৯

আত্মচিন্তন-৯

সমগ্র বিশ্বে একই সাথে যুক্তি, প্রযুক্তি, অযুক্তি আর কুযুক্তি সমান তালে বেড়ে চলেছে। যে পক্ষের জোড় যত বেশি তারা ততোটা আধিপত্য বিস্তার করবে আর অপর পক্ষ নিষ্পেষিত হবে। যে কোন এক পক্ষ অবলম্বন করলে পড়তে হয় অপর পক্ষের রোষানলে। এমতাবস্থায় মধ্য পন্থা অবলম্বন করা বুদ্ধিমানের কাজ মনে হতে পারে, কিন্তু বিবেকবানের কাজ নয়। আমরা নিজেরা কে কোন পক্ষ অবলম্বন করবো তা শুরুতেই বোঝাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পক্ষ এবং পক্ষপাতিত্ব কখনো কখনো ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শ থেকে ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি। আবার কখনোবা একই মতাদর্শের ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সংগঠনের দ্বারা একই বা বিভিন্ন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য তৈরি। আমরা না বুঝেই এই রকম এক বা বিভিন্ন আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে আত্মবিসর্জন দিতে সচেষ্ট হই। তাতে প্রকারান্তরে আসলে আমরা অন্যের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হই মাত্র। ফলাফল আসলে সময়, মেধা, শ্রম, অর্থ এবং অনেক সময় জীবনের অপচয়।

আমাদের সীমাবদ্ধতা, আমরা বুঝিনা যে আদর্শের কোন বিকল্প হয় না। একই আদর্শের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যাও হয় না। আদর্শ একক এবং আদর্শ।

সাহিত্য আড্ডা-২

বর্ষা বন্দনা

বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু। শুধু প্রিয় বললে বর্ষার প্রতি আমার অনুভূতি যথাযথ তীব্রতা নিয়ে প্রকাশ পায় না। বর্ষা আমার ভালোলাগা ঋতু, ভালোবাসার ঋতু। জীবনের প্রতিটা দিনের সাথে আমি বর্ষার এক গভীর সম্পর্ক খুজে পাই। প্রতিটা মুহুর্ত যেন বর্ষার একেকটা রুপ নিয়ে আমার কাছে ধরা দেয়। বর্ষা যেন মিশে আছে আমার অস্তিত্বের সাথে একাত্ম হয়ে।

আমার মনে হয় যে কোন সাহিত্য প্রেমী বা প্রকৃতি প্রেমী মানুষেরই বর্ষার সাথে রয়েছে এক সুগভীর অনুভুতির সম্পর্ক। কখনো তা এক ঘন কাল মেঘে ঢাকা থমথমে আকাশের মত এক বুক কষ্টের। কখনো তা আবার গুচ্ছ গুচ্ছ হাল্কা শ্বেত শুভ্র মেঘলা আকাশের মত শুদ্ধতার। কখনো সারাদিন গুড়ি গুড়ি করে ঝরে পড়ার মত বিষণ্নতার। কখনো অঝোর ধারায় ঝরে পড়ার মত অভিমানের। আবার কখনোবা প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাতের মত ধ্বংসের। কিম্বা শিলা বৃষ্টির মত অভিশাপের।

আমি সারা বছরই বর্ষার গান শুনি। তবে বর্ষায় বৃষ্টি নামলে যে গানগুলো আমি সবচেয়ে বেশী শুনি তার মধ্য থেকে একটি আপনাদের আজ উপহার দিচ্ছি। আপনাদের প্রিয় বর্ষার গান গুলির লিংক মন্তব্যে দিলে আমরা সবাই তা শুনতে পারবো। বর্ষা নিয়ে আপনার ভাললাগার অনুভূতিও আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।

আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে
www.youtube.com/watch?v=hi-C4kD6G9Y

আজ এই বৃষ্টির কান্না দেখে
মনে পড়লো তোমায়
অশ্রু ভরা দুটি চোখ
তুমি ব্যথার কাজল মেখে
লুকিয়েছিলে ঐ মুখ।।

বেদনাকে সাথী করে
পাখা মেলে দিয়েছো তুমি

কত দূরে যাবে বলো।
তোমার পথের সাথী হবো আমি।।

একাকিনী আছো বসে
পথ ভুলে গিয়েছো তুমি

কোন দূরে যাবে বলো।
তোমার চলার সাথী হবো আমি।।


শিল্পী: নিয়াজ মোহাম্মদ চৌধুরী
সুর: লাকী আখন্দ
কথা: কাওসার আহমেদ চৌধুরী

সাহিত্য আড্ডা-১

শব্দনীড় বাংলা সাহিত্য ব্লগ ! আসুন আমরা সাহিত্য নিয়ে একটু আড্ডাবাজি করি !

আমরা যদি ভাবি, শব্দনীড়ে আমরা শুধু আমাদের স্বরচিত লেখা প্রকাশ করবো এবং অন্য সবাই আমার লেখা পড়বে ও মন্তব্য করবে কিন্তু আমার অত সময় নেই অন্যের লেখা পড়ার বা মন্তব্য করার; এমন ভাবলে ব্লগ জমবে কিভাবে ? ব্লগিংকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য দরকার একে অন্যের লেখাকে মূল্যায়ন করা এবং সুন্দর পরিশীলিত মন্তব্যের মাধ্যমে পারস্পরিক আন্তঃসম্পর্ক গড়ে তোলা । আমার মনে হয়, আমরা তখনি কোন একটি ভালো লেখার নির্জাস নিজের মধ্যে ধারন করতে পারি যখন আমরা তার উপর যথাযথ মন্তব্য করতে সমর্থ হই । আপনি কি মনে করেন ?

আড্ডার ছলে অনেক বিরক্তিকর কথা কি বলে ফেললাম ?
তাহলে শব্দনীড়ের বন্ধুদের বিনোদিত করতে আমার অনেক প্রিয় একটি গান আপনাদের সাথে শেয়ার করি ! আপনাদের ভালো লাগলে পরবর্তীতে আবারো আসবো আরও কোন প্রিয় গান নিয়ে !

আলগা করো গো খোপার বাঁধন

– কাজী নজরুল ইসলাম

www.youtube.com/watch?v=LuWCrG-1idk&list=RDLuWCrG-1idk

আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
বিনোদ বেনির জরিন ফিতায়
বিনোদ বেনির জরিন ফিতায়
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি

তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায় আসিলো লোভী আমার মন
তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায় আসিলো লোভী আমার মন
বেহুঁশ হো কার গির পারি হাথো ম্যায়
বেহুঁশ হো কার গির পারি হাথো ম্যায়
বাজু বান্ধ ম্যায় বাস গায়ি
বাজু বান্ধ ম্যায় বাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি

কানেরও দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া
আঁখ ফিরা দিয়া চোরি কার নিন্দিয়া
কানেরও দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া
আঁখ ফিরা দিয়া চোরি কার নিন্দিয়া
দেহেরও দেউরীতে বেড়াতে আসিয়া .
দেহেরও দেউরীতে বেড়াতে আসিয়া
অউর নেহি ওহ ওয়াপাস গায়ি
অউর নেহি ওহ ওয়াপাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
বিনোদ বেনির জরিন ফিতায়
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আন্ধা ইশক মেরা কাস গায়ি
আলগা করো গো খোপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি
দিল ওহি মেরা ফাস গায়ি

প্রশ্ন

প্রশ্ন

আমার একটা প্রশ্ন ছিল
উত্তর পাইনি কোনোদিন ।

আমার কিছু প্রশ্ন আছে
যার উত্তর মেলেনা কারো কাছে ।

তবু আমি নিশ্চুপে উত্তর খুঁজে যাই
পাই না যদিও,
তবুও আজন্ম প্রশ্নেরা তাড়া করে যায় আমাকে ।

কিন্তু আজ আমি ভীষণ ভীত !
ভয় পাই প্রশ্ন করতে, যদি ওরা ভয়ংকর হয়
ভয় পাই উত্তর খুজতেও, যদি ওরা বুঝে যায়

আমি আছি উত্তরের অপেক্ষায় !

১ এপ্রিল, ২০১৫