আহমেদ হানিফ এর সকল পোস্ট

আহমেদ হানিফ সম্পর্কে

ছাত্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

রক্তচোষাদের আজ্ঞাবহ

CL_1694193013719

অপরাধবোধে বিদ্ধ হয়ে আছি,
কত অনাচারের সাক্ষী হয়ে,
কত মানুষের করুণ মৃত্যুতে-
আমাকে শোকাতুর করতে পারেনি।

নিষিদ্ধ জনপদে অবাদ বিচরণে,
আদিমতায় সুখের অনুসন্ধান,
হাড় ভাঙা উপাদেয়-
সহাস্য বদনে সভ্যের মুখোশ।

সকিনা বিবির ছিন্নভিন্ন লাশ,
রুইতনের প্রতিবাদ রুখে দিয়েছি,
টাকায় বিক্রি আমাতে-
মনুষ্যত্ববোধ কখনোই জাগেনি।

ত্রাণের টাকায় প্রমোদতরী,
নিষিদ্ধ এলাকায় সদলবলে,
প্রকাশ্য দিবালোকেও ভয়হীন আত্মা-
পরার্থ চিন্তন কখনো আসেনি।

আমি বিক্রিত দাস,
অসংগতি চোখে পড়েনা আমার,
আমি রক্তচোষাদের আজ্ঞাবহ-
মানবিকতা আমার সংস্পর্শে আসেনি।

বিধবা জমিরনের জমিতে আমার লোভ,
চাঁদার সওদা করি প্রকাশ্য জনপদে,
আমি জুলুমকারীদের দলভুক্ত-
অন্যায়ে নতজানু-নতশির।

সুভাষিণীর পথ আগলে রাখা বখাটেরা,
আমার সম্মুখে বীরদর্পে চলে,
আমি নতশিরে চুপচাপ-
শত অনাচার সয়ে গেছে আমায়।

অপরাধবোধে বিদ্ধ হয়ে আছি,
কত অনাচারের সাক্ষী হয়ে,
অমানুষিক কার্যক্রমে আমি প্রস্তুত থাকি-
আমি আজ্ঞাবহ রক্তচোষাদের।

ছোট্ট গাড়িটা

CL_1692278062355

জ্যামের শহরে আটকে আছি,
ক্লান্তিতে চোখের পাতা লেগে আসছে,
অসুখী মেঘের বুকফাটা আর্তনাদ-
বৃষ্টিতে এ শহর সয়লাব হবে।

ছোট্ট গাড়িটা থেমে যায়,
প্রকাণ্ড পেশিবহুল যন্ত্রের চিৎকারে,
গতরাতের ঘুমহীনতা জ্বালাচ্ছে বড্ড বেশি-
চোখের পাতা খোলা রাখা দায়।

সহসা গগনবিদারী চিৎকারে বৃষ্টির আগমন,
জরাজীর্ণ একখানা কাপড়ে,
ব্যর্থ চেষ্টায় অসফল-
শরীরটা ভিজে জবুথবু অবস্থা।

ছোট্ট গাড়িটা দু’কদম চলে,
এখন ঘুমের লেশমাত্র নেই,
জরাজীর্ণ কাপড়ে নিজেকে ঢেকে রেখে-
জ্যামের শহরে মুখোমুখি যানজটে।

অন্ধকার চারপাশে বিষণ্নতা,
আকাশের গর্জনে ভয়ার্ত জনাকয়েক আমরা,
ছোট্ট গাড়িটা থেমে যায়-
বেরসিক যানজটে বৃষ্টির কি আসে।

চার ঘন্টার অসহ্য যন্ত্রণার অবসান,
মেঠোপথ ধরে চলছে গাড়িটা,
দু’পাশের সারি সারি গাছ ভয়ানক দৃষ্টিতে-
ছোট্ট গাড়িতে দোয়ায় মশগুল আমরা।

হালকা বৃষ্টিতে বাতাসকে সরিয়ে,
গন্তব্যে ছুটছে গাড়ি,
জ্যামের শহর থেকে ঢের ভালো-
বৃষ্টিও সুখকর এখানে।

গাড়িটা শেষবারের মতো থামলো,
আত্মীয়ের হাঁক-ডাক,
ভয়ের অবসান শেষে বিজয়ের হাসি-
কত পথ পিছনে ফেলে এসেছি জানিনা।

দুঃখের অবসানে

CL_1688749542558

থমথমে আকাশটার মেঘগুলো ঝরছে রিমঝিম,
কোথাও কেউ নেই,
বিজন প্রান্তরে একাকী ভিজছি আমি-
আমার দুঃখগুলোকেও বিলাতে বৃষ্টির জলে।

বেশ দিনকয়েক হলো,
ভালো নেই আমি,
বেঁচে থাকার আশাটুকুর লোপ পাচ্ছে-
অস্থিরতার বাহুবলে আবদ্ধ আমি।

একাকী বৃষ্টিতে ভিজছি,
মনে আশা বেঁধে,
রিমঝিম বরষণে হারিয়ে যাবে-
মুছে যাবে চোখের জল মানুষের আড়ালে।

পরিজন ফেলে এসে ইটের শহরে,
প্রতিদিন পুড়ছি,
যন্ত্রণায় মরছি,সীমাহীন কষ্টে-
বুকের আর্তনাদ শুনে না কেউ আজ।

সহসা থেমে গেলো রিমঝিম বৃষ্টি,
বুঝেছি হায়,
আমার কষ্টের ভাগ নিবেনা কেউ-
একাকী বিজন নগরে হাঁটছি।

থমথম আকাশটা সুখী হলো কোন আশে,
নানাবিধ কষ্টে মরছি আমি,
হায় বৃষ্টিও বুঝে না আমায়-
না হলে সহসা থামার মানে কি?

নতশিরে বাড়ির পানে ছুটছি,
আবারো যদি বৃষ্টি নামে,
মনের দুঃখ ভুলতে আসবো-
জলস্রোতে বিলিন করবো চোখের পানি।

উপলব্ধি

CL_1687274096453

অপূর্ব আবরণে মনুষ্য দেহের সৃজন,
অন্তরস্থ উপলব্ধিতে সুখ-দুঃখ যত,
নিশ্বাস দূরত্বের পরমাত্মীয়তে বোধগম্য নয়-
খোলসে আবদ্ধ আত্মার ভালোত্বের খবর।

এক বিছানায় কাটানো দুই আত্মায়,
ভিন্নতা, কল্পনা কিংবা পরার্থবোধে,
পোশাকের আবরণে নগ্নতার দায় এড়ানো-
উপলব্ধিশূণ্য মানুষে সৌহার্দ্য কিসের?

বহুমূল্যের ভূষণে তুমি যদিও বড়বাবু,
আত্মকথনে তুমি আজ অসহায়,
অন্তরস্থ উপলব্ধিতে পৃথিবীর সব সুখ-
পরার্থ অমঙ্গল কামনায় লাভ কিসে?

খোলসে আবদ্ধ আত্মার অসুখে,
কবিরাজের শতপদী ঔষধে,
মিলবে না সুরাহা-
উপলব্ধিহীন আত্মার মরণই শ্রেয়।

পোশাকটা খুলে ফেলে নগ্নতায়,
বনজীবনে ফিরে আসাতে সুখ বুঝি,
নরখাদকের মুখে রক্তের দাগ-
উপলব্ধিহীন মানুষে ন্যায়বোধের মূল্য কি?

পোশাকটা মানদণ্ড যদি সভ্যের,
নগ্নতার সাক্ষী কেন ঘুটঘুটে অন্ধকারে,
ষোড়শীর পাঁজরের হাড়ে কিসের উপলব্ধি-
সভ্যদের রক্তে দোষিণী ষোড়শীরা।

অপূর্ব আবরণে মনুষ্য দেহের সৃজন,
অন্তরস্থ উপলব্ধিতে সুখ-দুঃখ যত,
কথাদের সাথে সখ্যতায়-
নতুন জীবনের গল্প বুনা।

পোশাকের আবরণটাই সব আজ,
ভেতরের আমিত্বের সন্ধান জানা নাই কারো,
উপলব্ধি নেই খোলসের সত্তার-
মৃতের নগরে যাওয়াই শ্রেয়।

পোশাকটা সব আজ,
আত্মার খোঁজ নেই কারো,
এক বিছানায় কাটানো দুই দেহ পরস্পর পর-
উপলব্ধিহীন খোলসের দায় কিসে?

তোমায় নিয়ে বাঁচি

CL_16837028270982

গ্রীষ্মের খরতাপে অস্থির এই নগরে,
চাতকের ন্যায় অসহায় মানুষে,
প্রশান্তির উপলব্ধি আনে-
একটুখানি শীতল বাতাস।

থমথমে দুপুরে ক্লান্ত পথিকের পথ,
দীর্ঘায়িত হয়ে পড়লেও,
নিরাশার অনুযোগের মোচন ঘটে-
ছায়া দানকারী গাছটার অকৃপণতায়।

পৃথিবীর সুখগুলোর শত ভাগে,
ভালোত্বের সংস্পর্শ হৃদয়ে প্রশান্তি আনে,
খরতাপ গ্রীষ্মের প্রাণহীনতায়-
চাতকের উপলব্ধি কষ্টের উপলক্ষ্য আনে।

জাগতিক শত গল্পে,
শত অভিযোগ-অনুরোধে,
খরতাপে জ্বলন্ত দেহটায়-
শীতল বাতাস সুখানুভূতি জাগায়।

তবে,
এইসব জাগতিকজ্ঞান বিতরণে পারঙ্গম নই,
গ্রীষ্মের খরতাপ-শীতল বায়ুতে-
আমি আবদ্ধ নই।

আমি প্রেমহীন নগরে,
প্রাণের সঞ্চারে বেরিয়ে পড়েছি,
জাগতিক মোহে আবিষ্ট নই-
শুধু তোমাতে বেঁচে আছি।

পৃথিবীর গল্প গুলো হারিয়ে যাবে,
চাতকের হাহাকারও থামবে,
মোহে জড়াবে না কেউ-
যখনি আবদ্ধ হবে প্রেয়সীতে।

আমি দ্বিধাহীনভাবে বাঁচি,
তোমার পানে চেয়ে,
কবিতা হই কিংবা কবি-
তোমাতেই যেন বেঁচে থাকি।

আবারো শীতল প্রবাহে প্রশান্তি আসবে,
মানুষে সৌহার্দ্য রচিবে,
চাতকের উপলব্ধিতে শান্তি-
আমিও বাঁচবো তোমায় নিয়ে।

স্মরণে নজরুল

images-18

আজি তোমার জন্মক্ষণে,
শত বন্দনা প্রেম-অর্ঘ্য নিবেদন,
কবিদের আসরে শত আয়োজনে-
স্মরণে নজরুল নতশির সুআসনে।

জনতার সমাবেশে শতেক পঙক্তি বলে,
জনৈক কবির স্মরণে তুমি বিদ্রোহী,
মানবিক কবি কিংবা প্রেমাবতার-
সাহসী জননীর অগ্নিপুরুষ।

পৃথিবীর বুকে আজ নতুনত্বের সৃজন,
তুমি চির অমর-অম্লান,
তোমার স্মরণে চয়িত হয় প্রেমানুভব-
তুমি প্রেমিক বিপ্লবী জনতার।

জনৈক কবির মানসে পঙক্তির সৃজন,
সহস্র শব্দাবরণে তোমার নামের কথামালা,
ভালোবাসা নিবেদনে কসুর নেই-
তোমার জন্মক্ষণের স্মরণে।

কবিদের হৃদ্য সমাবেশে,
আমি অতিশয় নগন্য যাযাবর কবি,
তোমার স্মরণে দু’চারি কথায় সাহস করেছি-
ঐ পার হতে ক্ষমা করো কসুরে।

আজি সুখে আবেশিত সত্তায় প্রেম,
নজরুল বন্দনাবাক্যে তোমার অমরতা,
ভালোবাসি তোমায়,
শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম স্মরণে।

তবে স্বভাব বিরুদ্ধ পরিবেশে কবি,
কলমের ক্লান্তিহীন স্পর্শে,
পুরাতন পাণ্ডুলিপির পাতা থেকে-
প্রিয় নজরুল।

আমার পাণ্ডুলিপিতে ক্ষণিক অঙ্কিত নজরুল রূপ,
তোমায় ভালোবেসে নিবেদন করছি,
নজরুল বন্দনা কিংবা স্মরণিকা-
কসুরে ভয় করছি না।

ঊনিশত নিরানব্বই-
কত শত মানুষের পৃথিবীতে আগমন,
তুমি ও চুরুলিয়ার মাটিতে নেমে আসলে,
না!
বিজয়ের ধ্বনি বাজেনি,
অন্নহীন কত রাতের অবসান।

মক্তব,মসজিদ কিংবা রুটির দোকান-
তোমার পদব্রজে ক্লান্ত হয়ে উঠতো,
বেড়ে উঠার দিনগুলো তুমি নজরুল নও-
কোন এক দুখু মিয়া ছিলে।

আস্তে আস্তে কত বসন্তের দিন পার করে-
তুমি মহান পুরুষ,কবি বিদ্রোহী,
হুম,
বিচিত্র বিচরণে,গল্প,কবিতা,গানে-
তুমি বুঝিয়েছো পৃথিবীটা তোমারও।

বাংলার পথপ্রান্তরে,
যদি কবিতা লিখা হয়-
তুমি শত শব্দে সজ্জিত মহনায়ক হবে,
তোমার বন্দনায় আসর বসবো কবিদের।

তোমার জন্মদিনে এই বলতে পারি,
পৃথিবীতে বেঁচে থাকবে-
স্মরণে-বরণে-
মহাকালসম, রবে মানবহৃদে।

বিষাদে মরি

CL_1682603873231

হৃদয়ে বাঁধিতাম তোমারে,
অযোগ্য বিবেচনায় সংশয়ে মরি,
কল্পনায় যতটা সাহসী আমি-
প্রকাশ্যে সেইরূপ কার্য্য সিদ্ধ নই আমি।

তোমাতে বাঁচার উপলক্ষ্য খুঁজি,
তোমাকে ভালোবাসি গোপনে,
অযোগ্য ভেবে সংশয়ে-
আপনার ভাবনা লুকিয়ে রাখি যতনে।

ভয়ে ভয়ে মরি,
নিঃশব্দে বিচরণ কালে,
তোমার অনুভব চারপাশ জুড়ে-
দোষারোপিত হয় যোগ্যতার মানদণ্ডে।

কবিহীন নগরে ভগ্নসৌধে কবিতার পালক,
গোপন সন্ধিতে কবিতার আসর,
আমি চুক্তিতে বিশ্বাসী নই-
তোমাতে অযোগ্য ভেবে।

সংশয়ে মরি পুনঃবার,
ভালোবাসা জাহিরে পারঙ্গম নই,
কল্পনার নগরে আমি সাহসী-
প্রকাশ্যে বিষাদিত আত্মা।

তোমাকে অনুভব করি,
অনুভব করি নিঃশব্দের রাতে,
তবে অযোগ্য বিবেচনায় সংশয়ে-
আপনার স্বভাব লুকিয়ে সাজি বর্ণচোরা।

হারিয়ে যাওয়ার বাহানা খুঁজি,
প্রকাশ্যে দাঁড়াতে পারিনা বলে,
অযোগ্যতার দোষারোপ-
সংশয়ে মরি পুনঃবার আমি।

হৃদয়ে বাঁধিতাম তোমারে,
অযোগ্য বিবেচনায় সংশয়ে মরি,
জীবনের গল্পে তোমার উপলব্ধি-
দোষারোপিত হই ভালোবাসি এই দোষে।

লেলিহান অগ্নিতে

images-6

আজি যত্রতত্র সাইরেন বাজছে,
লেলিহান অগ্নিতে দেশটা যে পুড়ছে,
সীতাকুণ্ড থেকে বঙ্গবাজার কোথাও কি শান্তি-
মরিছে মানুষ দগ্ধ শত স্বপ্ন।

জনৈক ব্যাপারীর আহাজারি,
পুড়ে শেষ স্বপ্ন শত লাখের,
আগুনের লেলিহান লালসায়-
বঙ্গবাজারের বুকে নেমেছে প্রলয় তাণ্ডব।

দোকানের চৌহদ্দিতে প্রবেশে অপারগ,
মানুষের স্বপ্ন গুলো পুড়ে যায় দেখ,
লেলিহান অগ্নিতে পারে না আত্মাহুতি-
আমাদের দেশটা ক্ষণে ক্ষণে পুড়ছে।

ভাইয়া আমার সব শেষ,
করুণ আহাজারিতে আকাশটা হচ্ছে ভারী,
নিয়তির দোষে বুঝি-
এমন লেলিহান অগ্নিকাণ্ড।

আমাদের দেশটা পুড়ছে সর্বত্র,
সেই সীতাকুণ্ড থেকে আজকের বঙ্গবাজারে,
অসহায় ব্যাপারীর কান্দনে,
কি সান্ত্বনা দিবো জানি না আজ।

অসহায় চাহনিতে তাকিয়ে,
স্বপ্নগুলো পুড়ে শেষ মুহূর্তের ব্যবধানে,
লেলিহান অগ্নিতে বঙ্গবাজার পুড়ছে,
এই বুঝি নিয়তির দোষে বেদনাহত।

পরার্থে সেবিতে শত মানুষের ভীড়,
তবুও অগ্নিতে পুড়ে ছারখার সব,
আমাদের দেশটা পুড়ছে ক্ষণে ক্ষণে আজ-
স্বপ্নসমেত মানুষের আত্মাহুতি।

আজি যত্রতত্র সাইরেন বাজছে,
লেলিহান অগ্নিতে দেশটা যে পুড়ছে,
কত প্রাণ কিংবা স্বপ্নের বিলিনে-
শান্ত হবে আমাদের দেশটা।

বুকফাটা আহাজারিতে আকাশটা ভারী আজ,
শত স্বপ্ন ঝরে গেলো,
লেলিহান অগ্নিতে-
বঙ্গবাজারে।

অসময়ের বৃষ্টি

238

আকাশটা হঠাৎ কোন দুঃখের আবেশনে,
বক্ষ ছিঁড়ে অঝোরে কাঁদছে,
বেদনাহত টুপটাপ ফোঁটা পতনে-
দুঃখের গীত গাইছে।

পড়ন্ত বিকালে রাখালের বাঁশিতে সুর বাঁধেনি,
ভয়ার্ত আহ্বানে তাকিয়ে রয়েছে,
দিকবিদিকশুন্যে গরুর পালায়নে-
অসহায় চাহনি দূর বনে।

কালো মেঘের দলের কষ্টেসৃষ্টে,
টুপটাপ ফোঁটা বৃষ্টি ঝরছে,
অসময়ে বৃষ্টি আগমন ঘটেছে বলে-
এখনো স্বপ্নবাজ বালকের বাড়ি ফেরার নাম নেই।

পৃথিবীর অস্বচ্ছল মানুষের মতো একা বৃষ্টি,
বক্ষে শত কষ্টের রেখাপাত,
বিকাল হতেই যেন কেঁদে কেঁদে সারা-
আকাশটার এতো দুঃখ কি করে হলো?

আর্শীবাদে নতশির-উন্মাদ চিত্ত,
অসময়ে বৃষ্টির আগমনে,
কিঞ্চিত আপত্তি অসহায়ের-
মেঘদলের কষ্ট মননে পৌঁছায়নি তার।

হঠাৎ কি বুঝে অঝোরে কেঁদে হয়রান,
বুকে শত বেদনা বুঝি,
অযাচিত অশোভনে বহুদিনের অবকাশ-
বক্ষ ছিঁড়ে টুপটাপ পতন।

আকাশটা হঠাৎ কোন দুঃখের আবেশনে,
বক্ষ ছিঁড়ে অঝোরে কাঁদছে,
জানি না মর্মের বাণী-
বুঝাতে পারিনা আমিও অসহায়।

অসময়ে কাঁদুক মেঘেদের দল,
রাখালের বাঁশিতে মধুরতা হারাক,
পৃথিবীতে অস্বচ্ছল মানুষের বেদনায়-
বৃষ্টি পৌঁছাক তার পক্ষের বারতায়।

প্রিয়তমার সমীপে

CL_16

হাসপাতালের শক্ত বিছানায় জবুথবু হয়ে,
দূরের প্রকাণ্ড হিজলের ডালে,
কোকিল দম্পতির খুনসুটি অবলোকনে-
ভাবোদয় হয় পৃথিবীতে এখনো প্রেম আছে।

রুটিন করে ডাক্তারের দেখাশোনা,
আত্মীয়ের বেদনাহত মুখের দর্শনে,
বুঝতে বাকি নেই-
পৃথিবীর সময় ফুরিয়ে এসেছে।

মৃত্যুর অপেক্ষায় আমি,
ঐ পাড়ে অসংখ্য স্বজনের ভিড়ে,
চোখ যুগল জ্বলজ্বল করছে-
তুমি যে নির্ঘুম রাতের অবসান করছো।

পৃথিবীর বুকে গল্প রচাতে কত চেষ্টা,
কত রাতের নির্ঘুম কাটানোর ফলে-
স্বপ্ন সাজানো যেত পৃথিবীর আস্তরণে,
বোবা স্বপ্ন গুলো হারিয়ে যাবে।

তোমার সমীপে,
আজকের অব্যক্ত কথাগুলো,
মরণের বিছানায় তোমায় বলতে পারছি-
এই হলো সুখানুভব।

ত্রিশ বছরের যাপিত জীবনে,
শত অনুযোগ, অনাহার-
এক সাথে বাঁচার স্বপ্ন বোনার ক্ষণে,
তোমার সাহচর্য শক্তি দিয়েছিলো।

জানি বোধহয় শেষ নিঃশ্বাস গুনছি,
আত্মীয়ের চোখে বিষাদ চিহ্ন,
তোমার হাতে হাত রেখে বলছি-
ভালোবাসি।

তুমি বেঁচে থেকো সুখে-
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থেকে দেখো-
ঠিক জারুল তলায়,
মাটির বুকে মিশে রবো তোমার অপেক্ষায়।

দুখিনী বর্ণমালা

Scr3

থমথমে বোবাকান্না,
অসহায় আত্মনিবেদনে দুখিনী মায়েরা,
শতছিন্নের বস্ত্রাবরণে একি হাল জননীর-
কৃষ্ণচূড়ার ভূষণে সজ্জিতা ছিল বর্ণমালা।

বাংলার গাঁথুনিতে জোর নাই আজ,
বিদেশি শব্দের চাষাবাদে শৈল্পিক সাজ,
করুণ! মৃত্যু ঘনিয়ে এলো বুঝি-
অভাগীর ভূষণ ছেঁড়া হলো বারংবার।

পলাতক গুণিজনে করজোড়ে প্রার্থনায়,
বাংলার রূপ কীর্তন শুনেছি,
শহিদ বরকত,সালামের রক্তের দাগে-
এই বাংলার চিরাচরিত রূপাঙ্কন।

আজ মলিন বদনে কেন মায়ের চেহারা,
উদিত হচ্ছে, করুণ কাহিনি অবলোকন-
দূষিত জনপদে কৃষ্ণচূড়ার রং ধূসর-বিষন্ন,
অভাগী দুখিনী বর্ণমালা।

দেয়ালিকার বড় অক্ষরে প্রাণহীন কথা,
চাটুকারের সমাজে লজ্জিত অক্ষরগুলো,
প্রতিবাদের মিছিলে সামিল হবে-
আবারো বেজে উঠবে ফেব্রুয়ারির গান।

কত শত কথা জমে আছে,
দুখিনী বর্ণমালার পরিচয়ে অস্বস্তিবোধ,
জরাজীর্ণ দেহটা নিয়েই-
ফেব্রুয়ারির জন্য মরমর বেঁচে থাকা।

চারপাশে থমথমে বোবাকান্না,
অসহায় আত্মনিবেদনে দুখিনী মায়েরা,
আর কতকাল অতিবাহিত হলে তবেই-
কৃষ্ণচূড়ার রাঙা রঙে সাজবে বর্ণমালা।

দুখিনী বর্ণমালার ছিন্ন ভূষণে,
আর কত কেতন উড়াবে?
থাম! বাংলার গাঁথুনি আগে,
পরে হউক বিদেশি শব্দের চাষাবাদ।

ভালোবাসো বুঝতে পারি

Scre

বহুদিন আগে-
তখনও বসন্তের আগমন ঘটেনি,
কোকিলের কুহুতান কিংবা ফুলে ফুলে-
প্রেমের বারতা আনেনি ফাগুন।

খুদে বার্তায় কি যেনো বলতে চেয়েছিলে,
যতনে নিজেকে সাজিয়ে,
শীতের রিক্ততা উপেক্ষায়-
আমার পানে তাকিয়ে ছিলে বুঝি।

গোপন মারফতে খোঁজ নিয়েছিলে তুমি,
বার্তা বাহকের অদূরদর্শীতায়,
তা জানতে পেরেছিলাম-
তুমি কি আমাকে জানতে চাও?

অকারণে তোমার সখীদের হাস্যরসে,
আমি বুঝতে পারি,
কতক পঙক্তির আবরণ দিয়ে-
তুমি আমাকেই ঠিক উপস্থাপন করো।

তুমি অপলকে তাকিয়ে কি খোঁজ?
ডাগর চোখের মায়াবী পরশে,
বারংবার চোখে চোখ পড়ে-
হাজারটা স্বপ্ন ঠিকই দেখতে পাই।

তুমি কি ভালোবাসো?
গল্প সাজাতে চাও-
নতুন করে বাঁচার?
তুমি কি আপন করতে চাও আমায়?

নিজেকে লুকিয়ে রাখি,
আপনার অনুভূতি মরে যায় যাক,
কবিতার শব্দ খুঁজে পাই না-
তাই তোমাকে বলতে দ্বিধায় মরি,
ভালোবাসি।

শত বণিতা ছেড়ে,
পাশে থাকার আয়োজনে,
যদি বলতে পারো ভালোবাসি-
তবে দ্বিধাহীনভাবে বলবো,
ভালোবাসি।

তোমার চোখ যুগল বলে যায়,
তুমি জানতে চাও আমায়,
তাই বোধোদয়ের জাগরণে বুঝি-
ভালোবাসো আমায়।

দু’চারি শব্দের সমাবেশে,
এই বসন্তের শুভ দিন দেখে,
জানিয়ে দিও-
ভালোবাসো তুমি দ্বিধাহীনভাবে।

সুরূপা ও ফাগুন উৎসব

rec

আজি ফাগুন রাঙা দিনে,
বৈরাগ্যের বাসনা সৃজিলো মনে,
মাধুরীলতার নিমন্ত্রণ হেতু কানন সাজিলো ফুলে,
বহুরব উঠেছে বেজে ফাগুনের উৎসবে।

কনকলতার শাখা দুলিছে,
পলাশের ফুলে প্রেম সঞ্চারে ফাগুনের মেয়ে,
প্রেমিক যুগলের বাহারী সাজে,
রঙ লেগেছে ফাগুনের এইদিনে।

কনকচাঁপার অঙ্গে যৌবনারম্ভ,
ফাগুনের প্রথম দর্শনে ষোড়শীর সাদৃশ্য,
খোঁপায় কাঁচা ফুল গুঁজে ব্যস্ত বহ্নিরা,
ফাগুনের উৎসবে মাতোয়ারা সবে।

সুরূপার লাজুক বদনে ফাগুনের রঙ,
দেবকাঞ্চনের ডালে কুহু রব কোকিলের,
হলুদরঙা শাড়িতে সুরূপার পদব্রজে-
বিমুগ্ধ নয়নে নিবদ্ধ চারপাশ।

করবী ফুলের দোসর বনেছে লাজুক স্বর্ণলতা,
শিমুলের ডালে কুহু কুহু রবে,
ষোড়শীর বুকে প্রেমের আকিঞ্চন,
প্রাণ ফিরে আসে ফাগুনে।

সুরূপার জন্য বহু পাড়া ঘুরে,
আলতা আর কাঁচের চুড়ি আনা হলো আজ,
ভাঁটিফুল যেন নিমন্ত্রণ করেছে-
শত অনুনয় করে।

ফাগুনের ফুলে ফুলে শোভিত কাননে,
রঙ লেগেছে আজি,
সুরূপা ও ফাগুনের উৎসবে-
মেতেছে শত অনুরাগী।

তুমি এসো

বসন্তের গান বুনিতেছে কোকিলে,
দূর পাড়ায় বাসন্তী সাজের আয়োজন নববধূর,
পুষ্পরাজিতে ফুলে ফুলে সয়লাব হবে-
তোমার চুলের স্পর্শ রবে কতক গোলাপে।

জারুল তলায় কপোত-কপোতী নানান বেশে,
বসন্তের রঙ মাখাবে শত আদরে,
হৃদয়গ্রাহী বাংলার চিরাচরিত গানে-
তোমার বন্দনাবাক্য ছড়াবে চারপাশে।

পল্লবে প্রেমের রব উঠবে,
কোকিলের কুহুতানে প্রেমিকের মননে-
শতক পঙক্তি সাজাবে প্রেয়সীর তরে,
তোমায় সাক্ষী রেখে আয়োজন সারবে বসন্তের।

সুরূপা,
তোমার আগমন হেতু সেদিন-
নানা স্থান হতে কবিদের সমাবেশ হবে,
তোমার বন্দনার শতেক পঙক্তির নিবেদন।

গত বসন্তে তোমার অপেক্ষায়,
পুষ্পরাজের সভাসদের মলিন বদন দেখেছি,
কোকিলের বিরহ সুরের মূর্ছনায়-
প্রেমিক মনে বসন্তের রঙ জাগেনি।

প্রিয় সুভাষিণী,
এই বসন্তে তুমি রঙ ছড়িয়ে দিও,
কামুকী বসন্তের অঙ্গে-
সর্বত্র,সর্বজনে বসন্ত ঠিকই আসবে।

সুরূপা,
শত আয়োজন সারা নববধূর অন্দরমহলে,
তুমি আসলেই বসন্ত আসবে,
কোকিলের কুহুতান-
কিংবা বৃক্ষরাজিতে পল্লবের প্রেম।

কবিতার দ্রোহ ও সুরূপা

কবিদের শহরে আজ বসন্ত নেই,
বড্ড ক্লান্ত আমি-
পাণ্ডুলিপির পাতাগুলো অনাদরে,
পড়ে আছে বেনামি প্রকাশনীর দোকানে।

কবিতার চাষাবাদে শৈল্পিক আবহ নাই,
নাই, কথাদের সহাস্য মেলবন্ধন!
বিরহ-বিরস বদনে কবি সত্তা-
মস্তিষ্কের বেকার খাটুনি।

কবিতার শহরটা টানছে না দিন কয়েক,
বোবা শব্দে প্রেমানুভূতি অলীক,
পাণ্ডুলিপি পড়ে থাক দোকানে-
অসাড়তা আঁকড়ে ধরেছে।

মিথ্যার চর্চা শিখে গেছি আমি,
দু’চারি কথায় বেশ ভালো থাকি বলি-
কবিতায় মন্দ স্বভাবের বিরুদ্ধাচারণ,
কবিতার শব্দ ঠিক যেন সাজে না। 

যে কবিতা আমার সুরূপার কথা বলতো-
কোন দ্রোহে কলহ করেছে শব্দগুলো, 
নাকি ভুলে যাওয়ার-
আচ্ছা, ভুলে গেছে সুরূপা!

এইতো সেদিন বলেছিলাম,
সুরূপা ভুলে গেছে হয়তো,
কবিতার আসরে শব্দের অনুপস্থিতি-
জানান দিচ্ছে এমনই হয়েছে।

বিছানায় পড়ে আছি মরার মতো,
দুই লাইনের পঙক্তিতে আমার ব্যর্থতা,
সুরূপা ভুলে বসেছে-
তাই, কবিতার বিদ্রোহ!

সুরূপা,
ফিরে এসো পাণ্ডুলিপির অঙ্গজুড়ে,
কবিতায় আবার বসন্ত আসুক,
কবিদের শহরে ছড়িকে পড়ুক প্রেমানুভব।

আমি জানি তুমি আসলেই,
আবার কবিতায় বিপ্লব হবে,
সুরারোপিত হবে কবিতার ভাবে-
তুমি আসলেই।

বোবা শব্দের করুণ চাহনিতে,
প্রেম আসবে,
সুরূপা ফিরলেই,
নতুন পাণ্ডুলিপি জমা দিবো প্রকাশনীতে।