আহমেদ হানিফ এর সকল পোস্ট

আহমেদ হানিফ সম্পর্কে

ছাত্র, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

একটি কুড়ি দুইটি পাতা

বাবু,
কি দেখিস?
পাতা তোলার মুগ্ধকর ছবি-
নাকি জরাজীর্ণ দেহটা?

যদু, কি ভাবছিস অমন করে,
পাতা তোল-
চব্বিশ কেজিতেই পাবি একশো বিশ টাকা-
পাতা তোল, পাতা তোল।

অমোধিনী দেবীর ক্রোড়ে সন্তান কাঁদছে,
বাবু, কি দেখিস?
শুকনো মুখের করুণ দৃষ্টি-
নাকি পাতা তোলা দেখছিস?

বাগানের পাশের ছেলেটা স্কুলে যাচ্ছে,
কি সুন্দর দেখতে!
দেবী, তোর ছেলে স্কুলে যাবে না?
অমন বলিস না আমাদের পড়তে নেই।

নাপিতের দোকানে চাকরি পেয়েছে বাবুন,
ভালো মন্দ খেতে পারবি!
বাগানে বসে অমন ভাবছো-
বাজারে যাও আগে দেখি!

বাবু,
ছবি তুলিস না,
গতরে কাপড় নেই-
ছোট জাতের ইজ্জতই তো আছে।

চব্বিশ কেজিতে একশো বিশ,
বিষ বেঁধেছে গলায়,
আমরা আবার মানুষ কবের?
মরলেই তো বাঁচে দেশ।

বাবু,
কি লেখছিস?
অমন করিস নাতো-
এইসব বলতে নেই।

অবিনিশ বুড়ো লাঠি ঠকঠকে,
ক্ষণিক কেশে বলে-
বাবু,
একটি কুড়ি দুইটি পাতা এই গল্প লেখো!

দেবীর করুণ চাহনিতে,
কত গল্প ভেসে উঠে,
তবে, মানুষের মননে ঠিক একটাই গল্প-
একটি কুড়ি দুইটি পাতা।

প্রেম ও নগর জীবনের ছোট্ট গল্প

যে নগরীতে চালের মূল্য চুকাতে,
মধ্যবয়সী রিকশাওয়ালার সারা দিনগুজরান,
অল্প ক’দিন আগের জন্মানো বাচ্চাটির ক্ষুধা নিবারণে,
মায়ের সাধের গহনা বেচার আয়োজন।

সেই নগরে অল্প কিছু টাকায় ফুল কিনেছি,
তোমার বেণি করা চুলে-
আলতো ছোঁয়ায় ফুলগুলো গুঁজার বাহানা আমার,
অনুমতি দিবেতো আমায়?

বিধবার বাছাধন এই নগরেই মরে,
হাসপাতালের বিছানায় খসে পড়ছে দেহ-
টাকার বড্ড প্রয়োজন,
তবেই না মুক্তি মিলবে দেহের।

সেই হাসপাতালের ঠিক পাশের পার্কে,
তোমার নিমন্ত্রণ আজ-
দশ টাকার পুরাতন নোটে বাদাম কিনবো-
গল্প বলতে বলতে খাবেতো তুমি?

প্রতিবাদের মিছিলে সামিল হয়ে,
রুইতন নিক্ষিপ্ত অন্ধকার কারাগারে, 
বৃদ্ধ বাবার পক্ষে কেউ কথা বলেনি-
তাদের যে টাকার বড্ড অভাব।

কোলাহলপূর্ণ বাজারের ঠিক মাঝখানে,
এক টুকরো কাগজের বুকে তোমার নাম লেখে,
তোমার প্রিয় রঙের কতক বেলুন কিনবো-
আসবে কি তুমি?

এই নগরীর মধ্যবয়সী মহিলার ঘরে,
উন্মাদচিত্তে আদিমতা চলে-
টাকার বড্ড অভাব তার,
ছোট্ট মেয়েটাকে মানুষ বানাবে বলে।

সেই ঘরটার ছায়াগুলো তাড়াতে,
শকুনের চিহ্ন মুছতে-
আমার সবকিছু বেচে দিবো,
তারপরও থাকবে কি তুমি?

মানুষের কথা

আমাদের মতো দেখতে,
ঠিক আমাদের মতোই চলতে পারে-
মিথ্যার ছায়াতলে আশ্রিত,
তারা কি মানুষ?

নিরূপায় হয়ে দু’কদম চলতে,
মনের কথা বলতে-
যারা সঙ্গ দেয় না একাকীতে,
তারাও বুঝি মানুষ!

কবিতার খাতা গুলো ছিঁড়ে ফেলে,
বিদ্রুপের হাসি হেসে বলা-
এইসব কি লেখেছো ছাই!
তারাতো মানুষ!

জাগতিক মোহে হাত বাড়িয়েছি,
অন্য দিকে তাকানোর বাহানায়-
অবহেলা করতে পারা,
এরা মানুষ!

এক টুকরো ছোট কাগজের বুকে,
ভালোবাসি লেখেছি সরল মনে,
তাচ্ছিল্যের সুরে ভালোবাসো এই কথাটি বলতে পারা,
আমাদের মতো তারা মানুষ।

গল্পের আয়োজনে শব্দ খুঁজতে গেলাম,
কথা গুলো আমাদের না বলে-
পত্রপাঠ তাড়িয়ে দেওয়া,
স্বভাবেরও হয় বুঝি মানুষ।

আমাদের মতোই অভাগাদের নাম জানো,
মানুষ!
বাকিরা মানুষ নয়তো-
সমাজের বড় বাবু কিংবা সমাজপতি।

মানুষ পাবো কোথায়?
কোথায় গেলে এক বাঁধনে বাঁধবো,
মানুষের বিজয় মালা-
যতনে ছায়ার মতো থাকবো সদা।

অব্যক্ত কথা

আজও জানাতে পারলাম না-
কত কথা জমে আছে মননে,
তোমায় পাশে পাওয়ার আকুতি,
কিংবা পাশে থাকার আমৃত্যু চেষ্টা।

প্রতীক্ষার প্রহর গুনছি আমি,
এই নগরের প্রতিটা প্রান্তরে-
যাযাবর বেশে,
যদি একটু সময় হয় তোমার!

ভালোবাসি বলাটা সহজ নয়,
ভালো রাখার চেষ্টায় অপেক্ষায় আছি,
তোমার পাশে থেকে মরার ইচ্ছায়-
নিরবধি চলছি তোমার পথের অনুসরণে।

তাই,
নিয়ত করেছি এই আয়োজনে-
ভালোবাসি কথাটি বলবো সাহসে,
পাশে থাকার আহ্বানে,
নতুন বার্তায় জীবন সাজাতে।

তোমায় প্রথম দেখাতেই-
শত সাহসে,চিৎকারে বলবো,
ভালোবাসি-
চিরদিন থাকবো ভালোবেসে পাশে।

দূরত্ব

বহমান সমুদ্রের কলকল ধ্বনিতে,
পাল তোলা নৌকার বিচরণে,
ঐপাড় থেকে এপাড়ে সৌহার্দ্যের বন্ধন-
দূরত্ব ঘুচিয়েছে ভালোবাসার মিলনে।

বসন্তের আগমনী গানে,
ফুলে ফুলে সয়লাব এপাড়ায়,
কোকিলের কুহুতানে কপোত-কপোতীর মননে,
দূরত্ব ঘুচিয়ে প্রেম আনে।

যখন বর্ষা আসে এখানে,
কদমের শুভ্রতায়,
রিমিঝিম বরষনে-
দূরত্ব ঘুচিয়ে সতেজতা প্রকৃতিতে।

শত শত উপমায় কত যে পদ্য লেখা,
কত কাগজের বুকে গল্পের চাষাবাদ,
ধরনীর বন্দনায় শতেক পঙক্তি-
দূরত্ব ঘুচায় সাহিত্য আয়োজনের।

তবুও আমাতে বিরসতা,
চিন্তায় রাতের ঘুমের অবসান,
চোখের নিচে কালি পড়ে গেলো-
দূরত্ব ঠিকই আছে দু’জনের।

শত আয়োজনে ব্যর্থতা গ্রাস করে,
পাণ্ডুলিপির পাতায় ধুলো পড়েছে,
কবিতার শব্দগুলো দিকবিদিকশুন্য-
দূরত্ব ঘুচায়নি আমাদের মাঝে।

অবহেলায় প্রতিবাদ করিনি,
করিনি বোবাকান্নার হিসাবও,
বেলি ফুলের মালা গুঁজেছি খোঁপায়,
দূরত্ব তবুও তো কমেনি।

তোমার নামে লেখেছি কত পঙক্তি,
ভালোবাসার আয়োজনে বেরসিক হইনি,
উচ্চরবে জানান দিয়েছি ভালোবাসি,
দূরত্ব একদমই কমেনি।

শরীরে ব্যামো বেঁধেছে আজ,
নানান চিন্তায় শুকিয়ে গেছি আমি,
টেবিলের উপর পড়ে থাকা ঔষধের শিশিগুলো-
দূরত্ব ঘুচিয়েছে মুমূর্ষু আমাতে।

আজ আর তেমন আশা করছি না,
দূরত্ব ঘুচাতে তেমন ইচ্ছা নেই,
বাড়ুক দূরত্ব অদৃশ্যের-
মরনের দূত শিয়রে দাঁড়িয়ে।

না, একটু ঘুমাই

মানুষ মরছে মরুক না,
কিসের এতো চিন্তা করা-
আমিতো আর মরছি না আজ,
এই দিব্যি বেঁচে থাকা।

জলে ডুবছে ডুবুক না,
কেন এতো আহাজারি,
ব্যাটারা দেখ সাঁতার না জানা,
মরবেইতো মরুক না।

উন্নয়নের জলস্রোতে গা ভাসিয়ে বেড়াক না,
কিসের এতো চিন্তা বলো,
শ’খানেক মরুক না-
সবাইতো আর মরছে না।

তোমরা বাপু বেজায় রসহীন ,
একটু-আধটু ভিজতে হয়,
জলে ডুবে মরলে তবে-
জনসংখ্যার হ্রাস যে হয়।

কবির দেশের কত নদী,
জল ছাড়া মরছে দেখ,
বন্যা স্রোতে প্রাণ ফিরে পাক-
কিসের এতো আহাজারি।

চাল,ডাল নেই কি হয়েছে,
সব সময়ই কি খেতে হয়?
ভুঁড়ির দিকে তাকিয়ে দেখ-
মাঝে মাঝে না খেলেও হয়।

মানুষ মরছে মরুক না আজ,
বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাসে,
তুমিতো বাপু বেঁচে আছো-
কি লাভ এই মায়া কাঁদনের।

সবাই মশায় ঘুমিয়ে পড়ি,
কিসের এতো চিন্তা করা,
উন্নয়নে ভাসছে মানুষ-
দু’চারি যাক না আজ মরা।

পরার্থে সেবায় যারা যাও এবার সবাই বাড়ি,
উন্নয়নের জলস্রোতে গা ভাসিয়ে বেড়াক তারা,
কিসের এতো আহাজারি,
মরুক শতেক জলে ডুবে।

না মশায় একটু ঘুমাই,
কিসের এতো ভাবনা চিন্তা,
মানুষদের মরতে দাও,
আমরাতো আর মরছি না।

চারপাশ দেখ রঙিন চশমায়,
ঝলমলিয়ে উঠবে বেশ,
কবির দেশে নদী বাঁচুক,
মানুষ মরলে ক্ষতি নাই।

না,একটু ঘুমাই,
আবার কাল লেখতে হবে-
কত মানুষ মরলো শেষে,
বাড়ি ছাড়া কতক আছে।

মস্তিষ্ককে রেহাই দেই,
কিসের এতো চিন্তা আজ,
ঘুমিয়ে পড়লে সবে মিটে যায়,
মানুষ মরছে মরুক না আজ।

সীতাকুণ্ড ট্রাজেডি

Untit

সীতাকুণ্ডের মাটির আগুনের লেলিহান শিখা নিভেনি এখনো-
এখনো শুনা যাবে বাঁচার শেষ আকুতি,
বাজান, আমার পা উড়ে গেলো!
কালিমা পড়াও,আমি আর বাঁচবো না।

অন্তঃসত্ত্বা নব বধুর হাসপাতালে হাসপাতালে বিচরণ,
সাত মাসের শিশুর ডিএনএ টেস্টে শনাক্ত-
মৃত বাবার লাশ!
স্বজনদের কান্নার আহাজারি চতুর্দিকে,
কতকের খোঁজ নেই,
মৃত নাকি জীবিত জানে না স্বজনে।

কাজকর্মের মাঝে সুখ খুঁজে নিয়েছিলো ওরা,
রুটি-রুজির আয়োজনে,
বাড়ি ছেড়ে বহুদূরে এই সীতাকুণ্ডে,
বাঁচার শেষ আকুতি ছিলো পরিবারকে ঘিরে।

বিছিন্ন হাতটি ছোট্ট শিশুটির বাবার হাত নয়তো-
যার বাহানা ছিলো,
হাত ধরে বহুদূর চলার,
স্বপ্ন আজ মরে পড়ে আছে-
সীতাকুণ্ডস্থ জনপদে।

সম্প্রচারে ব্যস্ত যুবকটি জানতো না,
সারা পৃথিবীতে ছড়াবে তার মরণের বার্তা,
অগ্নিনির্বাপক কর্মীর কি যে সাহস,
মরণেই যে হাসিছে,
বাঁচিয়ে কতকের সত্তারে।

সীতাকুণ্ডস্থ জনপদের মানুষের মাঝে ভয়,
এতো মানুষের লাশে-
কে বা থাকে সাহসী আর,
রক্তের দাগ মুছেনি আজ।

বাতাসে পোড়া মানুষের গন্ধ,
কতকের অঙ্গহানি কাতরাচ্ছে হাসপাতালে,
স্বজনের আহাজারি,
আমার বাছার লাশ কোনটা বলতে পারো?
নব বধুর হাসপাতালে হাসপাতালে বিচরণ।

পরার্থে নিয়োজিত মানুষের জয়গান,
যারা সেবিছে আত্মারে সযতনে,
ওরাই মানুষ পরিচয়ে আজ,
নেমেছে সেবায় মানবের।

পোড়া মানুষের গন্ধ বাতাসে ভাসমান,
সীতাকুণ্ডের মাটিতে শেষ চিহ্ন,
বাঁচার আকুতি শুনা যাবে এখনো,
যদি কানপাতি মাটিতে।

বিভোল নেত্র

অজস্র কথা মালা আর স্বরচিত একটি কবিতায়-
আমার চয়িত শব্দ গুলো,
নিপুণা লক্ষ্মী আত্মাটার জন্য-
যাকে শব্দের গাঁথুনিতে মানবী রূপে উন্মোচন করি।

কতক মনুষ্য সৃজিত বয়ানে-
পারিপাট্য ‘ডাগর চোখ ওয়ালী’-মনোহরা,
চোখ দু’টোতেই স্বপ্ন দেখি,
জীবন-বিনিময়ে।

অকারণে আজ কথাদের নিমন্ত্রণ,
অজানা গন্তব্যে বিলিন হউক স্বপ্ন সমেত,
তুমি আছো বিচক্ষণ এক কবির নয়ন জুড়ে-
আমার কণ্ঠ রুদ্ধ!

প্রতিনিয়ত স্বপ্নের সংঘাত-
ডাগর, ডাগর চোখ জোড়া-
অস্তিত্বহীন আমি!
তাই,
কবিদের দরবারে বিচারের অপেক্ষারত,
যে চোখ যুগল স্বপ্নে-স্মরণে,
শান্তির বারতা বয়ে আনে,
সেই চোখ একান্ত আমারই-
উপমায় সাজাবো!

প্রাণ-স্পন্দনে, কবিতার খাতায়,
আমি সাক্ষী রবো-সহস্র বছর!
ডাগর চোখ যুগল-
নিরীহ আমাতে ঘুমহীন রাতের নির্বাসন।

কবিতায় নজরুল

ima

কত শত কবি মনে,
হাজারো ছন্দের মেলবন্ধন!
নজরুল বন্দনায় শতেক পদ্য-
কিংবা স্মৃতিচারণ।
আমিও বাদ যাইনি,
যদি কবিদলে কিঞ্চিৎ ঠাঁই হয়-
কতক কথার পসরা সাজাতে পারি!
তবেই,
নজরুল চয়িত হবে।

দিস্তা দুই কাগজ আর কলমের অক্লান্ত খাটুনিতে-
শতেক শব্দের সমাবেশ,
আমার পাণ্ডুলিপিতে ক্ষণিক অঙ্কিত নজরুল রূপ,
১৮৯৯!
কত শত মানুষের পৃথিবীতে আগমন,
তুমি ও চুরুলিয়ার মাটিতে নেমে আসলে,
না!
বিজয়ের ধ্বনি জাগে নি,
অন্নহীন কত রাতের অবসান।

মক্তব, মসজিদ কিংবা রুটির দোকান-
তোমারি পদব্রজে মাড়িতো,
বেড়ে উঠার দিনগুলো তুমি নজরুল নও-
কোন এক দুখু মিয়া!!
আস্তে আস্তে কত বসন্তের দিন পার করে-
তুমি মহান পুরুষ!
হুম,
বিচিত্র বিচরণে,
গল্প,কবিতা,গানে-
তুমি চিনিয়েছো জাত!

বাংলার পথপ্রান্তরে,
যদি কবিতা লিখা হয়-
তুমি শত শব্দে সজ্জিত নায়ক।
পৃথিবীতে বেঁচে থাকো-
মহাকালসম, মানবের পাঠ্যে।

কবি ও কবিতা

images

সাদা কাগজের জমিনে শব্দের চাষাবাদ,
নানা উপমা, গল্পের আয়োজনে-
কবিতা!
বিরহ, বিরস চিন্তন, অদৃশ্য প্রেমালাপ,
কপোত-কপোতীর রূপিত দেহাঙ্গ-
তুমি, আমি হতে আমরা বন্দনা!

কবিতা!
শতেক দিস্তা কাগজের পাণ্ডুলিপি,
সহস্র শব্দের সমাবেশে-
হাজারটা অলিখিত গল্পের আয়োজনে-
কবিতা!
মানবিক মানুষের কথা,
নতুন ভোরের স্বপ্ন দেখা এক ঝাঁক কবির কথা-

কবিতা!
হাজারটা কথার আয়োজনে আমরা-
হুম,
আমরা অদৃশ্যতার দৃশ্যায়ন করি-
যা, রূপায়িত কবিতা।
কথা লিখি মনের কথা।

আর,
কবি,
নতুন স্বপ্ন বুনার আয়োজনে-
কবিতার বাজারে,
ছোট কাগজের বুকে কথা লিখে-
কোনো এক সাময়িকীতে ছাপানোর স্বপ্ন দেখে,
শত দরবার ঘুরে,
জৌলুসহীন কোনো সাময়িকীর শেষ পৃষ্ঠায়-
ছাপা হয় অমূল্য কথা!

না,
বিজয়োৎসব হয় না, কথা গুলো বোবা-
অর্ধমৃত অবস্থায় হারিয়ে যায়,
বহুদূরে!
মাথা উঁচিয়ে বলা হয়না মশায়,
এই দেখুন আমার কবিতা-
বড় বড় অক্ষরে লেখা আমি কবি!!

দেখানো হয়ে উঠেনা,
কবিতা!
আর কবি,
আবারো স্বপ্ন বুনে নতুন দিনের,
নতুন কথা বলার।

মা

মনুষ্য সৃজনে তুমি চিরযৌবনা,
তোমার রক্ত মাংস খেয়েইতো মনুষ্য শিশুর আগমন,
দশ মাস দশ দিন-
এই মহাকালসম সময়ব্যাপী তোমার উদরে,
আমরা কতক জানান দিয়েছি-

মা, পৃথিবী সাজিয়ে রাখো,
আমি আসছি,
আমরা আসছি।
তুমিইতো মিথ্যা বলো,
শত ব্যথার চুপ থাকো,
অনাহারে কিংবা বঞ্চনায়,
খুব মিথ্যা বলো
কত শত!

সমাজের দু’কথা শুনে,
আবার বাবার বকুনি সয়ে,
তবুও চুপ থাকো,
তুমি মিথ্যা বলো।
আমি এত পারিনা বাপু,
মিথ্যা বলতে পারবোনা আজ,
ভালোবাসি তোমায়,
মাগো, আমৃত্যু ভালো রাখবো।

মা,
মাগো তোমাকেই ভালোবাসি।
অকৃত্রিম ভালোবাসা-
যেমনটা ঐ কষ্টের দিন গুলোতে ভালোবেসেছো,
প্রসব বেদনায় কিংবা অনাহারে।

মা,
একটু বুকে টেনে নাও,
আদর দাও সযতনে,
আদরতো তুমিই দিবে-
শুধু শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিতে দিও,
যতদিন বেঁচে থাকি পৃথিবীতে।

আহ্বান

নতুন গল্প বলার মানুষটি নেই,
ক্ষণিক আগে অদৃশ্যতা জব্দ করেছে,
বোবা দেহে ক্ষণিক অবলোকনে,
আমিও মরার অপেক্ষায়।

এই বরষায়,
কত যে গল্প বলেছি…
বেঁচে থাকার, ভালোবাসার।
সে মনোমুগ্ধ শ্রবণকারী-
ঘন্টা দু’য়েক শুনে যেত কত বকবকানি!

হঠাৎ,
কোনো এক অজুহাতে হাত ধরে-
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতাম,
এক সাথে মরবো!
না, পারলাম কই?
ডাহা মিথ্যে বলেছি, সে একাইতো মরলো!
আমি না বড়ই মিথ্যাবাদী!

এখন,
হাত ধরার সাহস হারিয়ে ফেলেছি-
শেষ বিদায়ে না হয়,
মিথ্যা অজুহাত করলাম না।
শুনো,
আর বছর দুই অপেক্ষা করো-
শুনতে পাচ্ছি,
অদৃশ্য দূত অতি নিকটে মরনের ডাক দিচ্ছে,
খুব গোপনে-
কেউ না জানে ঠিক এমনি করে,
তোমার পাশে গিয়ে দাঁড়াবো!

এই মিথ্যাবাদীরে তাড়িয়ে দিও না-
লুকিয়ে রেখো,
তোমার কাছে, সন্তর্পণে।
শুনো,
শেষ আহ্বান-
ক্ষমা করে দিও।

সুবোধ আসিস না

অন্ধকার নেমেছে আজ সভ্যতার ছোট্ট কুটিরে,
কে তুই আজো একেলা দাঁড়িয়ে আছিস?
সুবোধ নাকি?
অবাস্তব কল্পনা বিলাস নয়তো আবার!
কি জানি কি ভাবছি-
মনুষ্য নির্মিত সভ্যতায় তো মানুষের স্বার্থসাধন,
তুই কিভাবে আসবি?
না,
তুই না তোর আদলে স্বার্থান্বেষণে ব্যস্ত কেউ-
চলে যা, যা-ই তুই-
কখনো ডাকবো না, আমি লুটেরা শুধু সভ্যজনে ভয়!

সুবোধ আসিস না, তুই আসিস না,
আমি একটু অমানুষ হবো-
না, বহুদোষে দোষী হবো!
তুই, সাধুদের ছায়াতলে থাক-
দূর হিমালয় কিংবা নির্জন বনবাদাড়ে।

মানুষের কাছে আসিস নে-
কতক অমানুষের স্বার্থের জয়গান!
তুই, নিরেট ভদ্রদের দরবারে যা,
আমরা কদাচারী, স্বার্থোন্মত্ত!
ভালো মানুষ আমরা নই, নইকো কারো দুঃখে জর্জরিত,
আমাদের মানসে স্বার্থই সব।

বাকি সব যাক না মরার দ্বারপ্রান্তে-
আমার কি বা আসে যায়!
সুবোধ,
নতজানু করে বলি তুই আসিস না-
আর কতক কাল যাক-
কতক মানুষ বিচারহীন মরুক না,
অন্যায় আরো গাঢ় হউক, তবুও না!

মানুষের সভ্যতায় তোর ঠাঁই নেই-
আর তুই মানুষের জন্যও না।
ফেরেশতা বা দেবালয়ে তোর বাস হউক,
আমাদের জীর্ণ সমাজে আসিস না।

কোনো কালে যদি সভ্য হতে পারি-
তবেই এসে দেখে যেতে পারিস।
আমরা না জানি কত খুনের রক্তে-
বসবাস করছি।
কারো বোন বা মায়ের অশ্রু জলের সাক্ষী হতে-
কেন আসবি তুই?
না!
তুই আসিস না।
সুবোধ বহুদূরে যা চলে, মানুষের অগোচরে।

মৃন্ময়ী

বহুদিন পরে,
ঠিক তিন বসন্তের দিন অতিবাহিত হলো-
চারিধারে কত ভিন্নতা আজ,
কথারা সুর বেঁধেছে নানা তালে।
আজ স্মৃতি রোমন্থন হলো-
বসন্ত দূতের কুহুতানে,
বাড়ি হতে কয়েক ক্রোশ দূরে-
অদৃশ্যে বিচরণের প্রয়াসে দু’কদম চলেছিলাম।

তাকিয়ে থাকার লোভে পড়ে কথা জমেনি,
বিভোল নেত্রে যার প্রেম জাগে-
তার চাহনিই কবিতা হয়ে উঠে,
বিমুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকাইতো কাব্য।

আজ এতদিন পরে কেন জানি,
মৃন্ময়ী মননে জাগ্রত হচ্ছে,
নতুন গল্পের আসর আর বসবে না-
কবিতার লাইন গুলোও আর সাজবে না।

আজও মৃন্ময়ী আছে,
তবে-
বহুদূরে, অদৃশ্যের কাছাকাছি!
পান্ডুলিপির খাতায় বিরহের সমাবেশে।

মনে পড়াটা মেনে নিলাম,
কথাদের অবাধ্যতায় আবার চয়িত মৃন্ময়ী-
হারিয়ে যাক,
এই ভালো,বসন্তের দিনে একা থাকি আজ।

বিভোল নেত্রের মৃন্ময়ী,
হারিয়ে যাক স্মৃতি থেকে-
কথা থেকে বহুদূরে,
অদৃশ্যে মিশে যাক লেখা গুলো।

না!চুপ থাকি

বেঁচে আছি এইতো বেশ!
কিসের এতো আহাজারি,বেদনাহত!
বিশটি বছর সবে শেষ হলো-
তবুও বুড়িয়ে বসেছি জীবন সংসারে।
এইতো সেই দিনকার কথা,
দাদা ভাই খুব জোর গলায় বললো,
মানুষ নাকি খুবই দয়ালু ও সুচিন্তক ছিলেন!

বাহ!
শুনতে বেশ লাগলো!
আরো কত কথা অবাস্তব লাগবে-
তাই, এই আসরে না বলায় শ্রেয়।
মাথাটা একটু বিশ্রামে দিলাম,
না জানি কি সব ভেবে বসে।

আচ্ছা হয়েছে,
আমাদের সময়কার মানুষ নিয়ে বলবো?
না, থাক বাড়াবাড়ি হয়ে যদি যায়!
চুপটি করে সব সয়ে যাচ্ছিতো-
আর কি দরকার পরলো বলার?
বলবো না!
শুধু দেখে যাব-

হুম, সব দেখে যাবো,
অন্যায় হচ্ছে হউক না, আমার কি?
আমিতো সাধু অন্যায়তো আমি করছিনা।
আরে বাবা,
সুশীল সমাজ কথা শুনাবে, শুনাক না-
আমি না শুনার মতোই থাকবো,
তখন যদি তারা বলে অসামাজিক-
তেমন একটা ক্ষতি নেই সয়ে যাবো!!

শুনতে তো আর খারাপ লাগছেনা-
এই বেশতো-
অসামাজিক!!