বোরহানুল ইসলাম লিটন এর সকল পোস্ট

বোরহানুল ইসলাম লিটন সম্পর্কে

কবির জন্ম নওগাঁ জেলাধীন আত্রাই থানার অন্তর্গত কয়েড়া গ্রামের সম্ভ্রন্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে কবি একই থানার অধিনস্থ পাঁচুপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি অনেকটা ‍নিভৃতচারী লেখিয়ে।

নিঃসঙ্গ জীবন (সনেট)

16

নিস্তব্ধ গভীর রাতে বিরহীর বাসে
অবাক দৃষ্টিতে জাগা আধ খাওয়া চাঁদ,
কবেই নেমেছে বন্যা মালিকের আশে
চৌচির জমিতে খাড়া তবু এক ফাঁদ।

প্রখর দুপুরে বসে গাছ তলে একা
লিলুয়া বাতাসে ভাবা পথিকের মন,
শীর্ণ তর্জনীতে এঁকে নীলিমায় রেখা
অবাধ্য দু’পায়ে চলা পথিকের ক্ষণ।

চৈত্রের জলধি যদি নাও যাচে জল
কালচক্র এনে দিবে জোয়ারের তাড়া,
বেভুলা অম্বুদ সেও ছেড়ে গেলে দল
সিক্ততা জাগাবে তবু সময়ে ইশারা।

টানলে কলুর ঘানি কালশিটে ঘাড়,
চায় কি স্বপন কভু চাঁদে যেতে তার!!

অন্তিম আরজি (ট্রায়োলেট)

images_119

তিরতির করে কাঁপে জননীর সুখ,
তবু যায় বারে বারে ধীরতার দোরে।
ভাবে বুঝি এই হয় লেখনী বিমুখ!
তিরতির করে কাঁপে জননীর সুখ।
’আমার খোকারে প্রভু দিও না গো দুখ’
আরজি যাবে সে বলে অন্তিমে গড়ে,
তিরতির করে কাঁপে জননীর সুখ,
তবু যায় বারে বারে ধীরতার দোরে।

পরম প্রাপ্তি

5

রাত জেগে রোজ মশক মেরেছি
পরহিতে দিনে মাছি,
এরই মাঝে এলে পতঙ্গ কভু
সজোরে ফেলেছি হাঁচি।

দেখে তা আড়ালে অনেকে জ্বলেছে
ব্যঙ্গ কথার ক্ষেতে,
একজন শুধু দূর থেকে চেয়ে
আশায় উঠেছে মেতে।

কতদিন হলো দেখিনি যে তারে
হাসে না বলে স্বদেশী!
খোঁজ নিতে শুনি আজ সে মারছে
মশা-মাছি বেশী বেশী।

স্বরূপের প্রতি ভালোবাসা (সনেট)

index
স্বরূপ বন্ধুরে আমি এতো ভালোবাসি
কক্খনো নয় তা জলে জলধির তুল,
যদি ভাবো অবারিত ফসলের হাসি
জেনো তা কিঞ্চিত নয় পূরো হবে ভুল।

বলছি না আন্দাজে তা এমনই জবান
বিস্তর বিশ্বাসে জাগা নীলিমার মতো,
কিংবা আস্থায় আছে সামান্য লোবান
দানিছে পুষ্পিত বাগ হেসে রোজ যতো।

অটুট বন্ধনে জাগে প্রকৃতির সারি
জানি সেথা ঋতু করে পালাক্রম খেলা,
অম্বুদও সর্বদা গায় আষাঢ়েই জারি
গগনের বক্ষে বেঁধে মমতায় ভেলা।

তবু যদি ভাঙে চাপে হীরকের মন,
ক্ষনিকও থাকে কি তার শুদ্ধ বিচ্ছুরণ!

রুবাইয়াত-ই-বোরহান (ত্রিফলা)

12

(১)
ধনেশ্বরের ধূর্ত মাঝি পেলে নদীর শান্ত কূল,
বলবে জানি জীবন হলো গহন জলের আরশি তুল।
বাঞ্ছা তবু কাল হবে তার হেলায় ভেঙে হাল লগি,
’জোয়ার ভাটা এক ধারে বয়’ এ কথাটা ভাবলে ভুল।

(২)
সংসারের এই সোহাগ নীতির যখন দেখি উল্টো ক্রম,
মনটা আমার হয় সাহারা ধায় বেতালে বুকের দম।
তবু এসে অন্তরে কেউ কয় ভোলা তুই ভাব দেখি,
জন্মটা কি আজগুবি বা সুখ সায়রের স্রোতের ভ্রম?

(৩)
হোক কারণ বা অকারণে টেনে মাথার দীঘল কেশ,
পাইনি কি আর কি পেয়েছি খুঁজতে হলো আয়ুর শেষ।
কষবো না তাই অংক কভু ভাবছি যখন করবো পণ,
মন বলে আর ‘কি পাবো’ তা করবে কে সেই হিসেব পেশ?

বল না রে সখা!

16

বল না রে সখা তুই!
আজও কি প্রভাতে খুঁজে ফিরে হিম
সুজল গাঁয়ের ভুঁই?

সেই যে বিশাল পাকুড়ের গাছ
শীতল ছায়ার তাড়া,
দেয় কি সে আর পত্র দুলায়ে
পথিকের হৃদে নাড়া?

আষাঢ়ে হঠাৎ খাল বিলে এসে
নব বরষার জল,
ঢেলে দিতে প্রেম ধরে কি জড়ায়ে
বিরহী বাটের গল?

ভাদুরে নিশীথে জ্যোৎস্নার ধারে
তাল কুড়ানোর আশে,
কে কে থাকে বল নৌকায় শুয়ে
পুকুরের আসে-পাশে?

আর কি রে কেউ ফাগুনের সাঁঝে
বলে দিয়ে জোরে হাঁক,
আগামী কল্য মাছ ধরা হবে
এসো সবে নিয়ে চাক?

বৌচি হাডুডু ফুটবল খেলা
আজও বুুঝি হয় মাঠে?
বল তো কেউ কি থাকে পথ চেয়ে
সূর্য নামলে পাটে??

ওরা মাটির কথা বলে!

index

ওরা, মাটির কথা বলে!
দেয় যদি শ্রম আধপেটা খে’
গান তবু রয় গলে!
ওরা, মাটির কথা বলে!

বৃষ্টি বা রোদ মাথায় নিয়ে
নিত্য করে কাম,
ভাবেই না কেউ ডাকলো না-কি
দিলো ক্ষণিক দাম।
হরেক আশা বক্ষে রাখি
ঘাম যতো দেয় শস্যে মাখি
ক্লান্তি এলেও হয় খুশি তাই
শুয়ে গাছের তলে!
ওরা, মাটির কথা বলে!

অব্দ যা চায় সুখের খোরাক
নিজেই করে চাষ,
শখ যা বাঁকি ফসল বেচেই
মিটায় তারও আশ।
সখ্য প্রীতির জ্বেলে বাতি
তাড়ায় এলে আঁধার রাতি
যায় কেটে তাই গর্বে জীবন
সাম্য গড়ার চল-এ!
ওরা, মাটির কথা বলে!

খে’> খেয়ে।