বোরহানুল ইসলাম লিটন এর সকল পোস্ট

বোরহানুল ইসলাম লিটন সম্পর্কে

কবির জন্ম নওগাঁ জেলাধীন আত্রাই থানার অন্তর্গত কয়েড়া গ্রামের সম্ভ্রন্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে কবি একই থানার অধিনস্থ পাঁচুপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি অনেকটা ‍নিভৃতচারী লেখিয়ে।

ক্যান সে বাজায়! (গীতিকাব্য)

fty

বসে আমি এই নিরালে
ডাকি তোমায় চোখের জলে
কও তো দয়াল অবিরাম দিন রজনী –
ক্যান সে বাজায় মনের ঘরে খঞ্জনী!

মন্দে গড়া অরির সারি
ভেবে সোনা হীরে,
দিয়েও মোরে সাচ্চা কথা
ফেললো শেষে ছিঁড়ে।
রচে অগাধ স্বপ্ন আশা
টানলো যদি বন্ধনী –
ক্যান সে বাজায় মনের ঘরে খঞ্জনী!

চুপটি দিয়ে আমায় ফাঁকি
শূন্যে যেতে উড়ে,
মজলো সে যে রিপুর ছানা
ডাকাতিয়া সুরে।
যত্নে রোপে এই বুকে গান
কাড়লো যদি ছন্দনী –
ক্যান সে বাজায় মনের ঘরে খঞ্জনী!

তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি! (গীতিকাব্য)

একতারা-1

সুর হারা এই বুকের মাঝে
নিত্তি বাজাস ঝুনঝুনি –
তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি!

ক্ষণিক দোষে মান না করে
সয়ে বর্ষা খরা,
হাতের কাছেই ছন্দে নাচিস
যায় না তবু ধরা।
না যদি হোস আপনজনা
তোর তালে ক্যান ক্ষণ গুনি –
তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি!

নিদ্রা বা হোক জাগরণে
যেথায় থাকি মাতি,
তুই তো আমার ভাঙা ঘরে
জ্বালাস সাঁঝের বাতি।
পাই না বুঝে বারেক দেখা
তোর আশে ক্যান জাল বুণি –
তুই কিরে ধন দুই জনমের টুনটুনি!

খুঁজলি না রে মন ভোলা! (গীতিকাব্য)

giti

খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!
সারাজীবন আশায় শুধু চেয়েই গেলি ত্রাণ –
খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!

জীবন ভেবে নিজের বিভব সটান রেখে ঘাড়,
চন্দ্রমা ক্যান জোছনা ঢালে ভাবলি না একবার!
আসতে যেতে তপ্ত বায়ু
চষতো যদি পরমায়ু
করতো কি রে মেঘের ডাকে দম কভু আনচান?
খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!

সঙ্গী মেনে ভবের মোহ গড়ে বুকের ভীত,
জানলি না ক্যান সরিৎ রচে জোয়ার ভাটার গীত।
চর্ম চোখের দৃষ্টি যদি
দেখতে পেতো নিরবধি
শুক কি রে তোর পিঞ্জিরাতে করতো অভিমান?
খুঁজলি না রে মন ভোলা তুই
ক্যামনে বাঁচে চাতক পাখির প্রাণ!

মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ! (গীতিকাব্য)

একতারা

খেলিস্ নে তুই পথের বাঁকে
ভুলে রে তার সঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

যুগল চোখের রঙ তামাশা
মোহের সে তো ক্ষণিক আশা
স্বপ্ন নয় কুরঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

মার্ রে তালা ক্রোধের ঘরে
ধ্যান সাজাতে জ্ঞানের দরে
ফেলে অচল ঢঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

খুঁজতে শুধু তারই চরণ
গড় ও’ বুকে নামের ক্ষরণ
নিদ্রা করে ভঙ্গ –
মনটারে আর বানাস্ নে ভুজঙ্গ!

তোরে যে মা খুব ভালোবাসি! (গীতিকাব্য)

images32123221

আবার আসবো ফিরে
শ্যামা এ’ নদীর তীরে
সজীব কুঁড়েরই হয়ে বাসি –
তোরে যে মা খুব ভালোবাসি!

বাঁধবো বিকেলে যতো তোরই নামে বোল,
হিজলের শাখে খেয়ে মিলেমিশে দোল।
এ’ হৃদয়ে ভাব চষে
গোধূলির বাটে বসে
ব্যাকুলে বাজাবো ফের বাঁশি –
তোরে যে মা খুব ভালোবাসি!

হাতছানি দিলে তোরে আষাঢ়ের ঢল,
ভাবিস না যেন তুই ফেলে আঁখিজল!

আবার মাতাল হাল এ’ হাতেই ধরি,
বাইবো নদীর বুকে পাল তোলা তরী।
সাজবো আশায় জেলে
বরশি বা জাল ফেলে
কখনো দামাল ক্ষেতে চাষী –
তোরে যে মা খুব ভালোবাসি!

এক চাঁদের কথা (সনেট)

hhu

এ আকাশে চাঁদ ছিলো থালার মতোন
ছড়াতো জ্যোৎস্না রোজ নির্দ্বিধায় হেসে,
দখিনা বাতাস তারে করতো যতন
চকোরের দৃঢ় ধ্যান খুব ভালোবেসে।

রূপালী ধারার আশে তরুলতা দুলে
তেষ্টায় গুনতো জেগে অপেক্ষার শ্বাস,
ঊর্মির নাচন দেখে তটিনীর কূলে
শ্বাপদও খুশিতে হতো ডাহুকের দাস।

হায় এ কি ভগ্ন দশা সেই ষোড়শীর!
কোমরও ভুলেছে ক্ষ্যাপা সবুজের দোলা,
ছুঁড়লো কে বিষ মাখা সঙ্গোপনে তির?
নইলে হতো কি তার নীল বর্ণ গলা!

বিক্ষিপ্ত মেঘের খিল ঠেলে ত্যাড়া দাঁতে,
আকাশও ছুটে যে আজ রজনীর ঘাতে!

আর দিও না ফাঁকি! (গীতিকাব্য)

ggyt

ক্যামনে খুঁজি তোমার চরণ
লিপ্সা করে বোধ যে হরণ
ব্যাকুল সাঁঝে তবু আশায় ডাকি –
আর দিও না দয়াল তুমি ফাঁকি!

এই তনু মন তোমার গড়া তুমিই বুকের মান,
সুর না দিলে দাসের গলে ক্যামনে শুনাই গান!
তোমার কৃপা না যদি পাই
কি বা পরি ক্যামনে বা খাই
এমনিভাবে রইলে যে পাপ
নিত্য দিবেই ঝাঁকি –
আর দিও না দয়াল তুমি ফাঁকি!

রিক্ত আমার বুকের পাঁজর দৃষ্টিহীনা আঁখি,
পিঞ্জিরাতে কাঁন্দে গো এক ডানা ভাঙা পাখি!
বলগা ছেঁড়া রিপুর ফুঁকে
গর্জি তবু ধরার বুকে
এমনিভাবে জনম গেলে
চাইবে যে কাল বাঁকী –
আর দিও না দয়াল তুমি ফাঁকি!

দাও গো সুধা! (গীতিকাব্য)

images32123221

তোমার নামের দাও গো সুধা
অধম দাসের অন্তরে –
ডাকি বসে আরশিনগর বন্দরে!

নীড় হারায়ে ভাবনা যতো
খায় এ হৃদয় কুরে,
সাধের জনম যায় যে বৃথা
রাখলে তুমি দূরে।
নিদেন কালে দাও গো দেখা
মীম আলিফের মন্তরে –
ডাকি বসে আরশিনগর বন্দরে!

ডুকরে আজি ছেঁড়া আশা
গড়ে ভুলের বাড়ি,
পয়সা বিনে নীল দরিয়া
ক্যামনে দিবো পাড়ি।
জিভ গো পেলে নিতুই আঘাত
দোষ যে দিবে দন্তরে –
ডাকি বসে আরশিনগর বন্দরে!

চাস নে কেনো মা! (গীতিকাব্য)

rrty

তোরই গাঁয়ের শ্যামল মাঠে
মনটা আমার যায় ছুটে –
তুই মা তবু চাস নে কেনো খড় ঘুটে!
ভাবি সংকটে –
তুই মা তবু চাস নে কেনো খড় ঘুটে!

সকাল সাঁঝে দুই কানে মা বাজেই পাখির সুর,
লাটাই ঘুড়ি যায় নিয়ে মন আশায় অনেক দূর!
সবুজ ক্ষেতের ব্যাকুল দোলা
নিদ্রা আহার নেয় টুটে –
তুই মা তবু চাস নে কেনো খড় ঘুটে!

মাতাল বাতাস ক্ষণিক এসে টানলে মাথার চুল,
দেয় মা আমায় হাতছানি ওই সতেজ কলাই ফুল!

আজো গীতি জাগলে মাগো বেসুরো এই গলে,
ক্লান্ত দেহ যায় ছুটে তোর পাকুড় গাছের তলে!
সরষে ক্ষেতের কোমল ছোঁয়া
স্বপন আমার নেয় লুটে –
তুই মা তবু চাস নে কেনো খড় ঘুটে!

পৃথিবীতে সবাই সাধু

images123

বেশ কিছু রহস্যের গল্প পড়ে
এক সময় নিজেকে গোয়েন্দা ভাবতে শুরু করলাম,
ভাববোই না বা কেন
যেথায় যাই যেখানেই বসি একই কথা –
ভাই আজ চরম শ্বাসরুদ্ধকর একটা গল্প শুনাতে হবে,
কাল অমুকের বাড়িতে অবাক এক কাণ্ড ঘটেছে
চলো না যদি রহস্যের কিনারা করতে পারো!
আর আমার বন্ধু মাজু
ওর নাকি দিনে অন্তত দু’টো গল্প না শুনলে ভাতই হজম হয় না পেটের।
এমনি ভাবেই সকলের খাতির যত্নে দিনগুলি গত হচ্ছিল বেশ।

শীতের এক বিকেলে –
মাজুর আব্বা ডেকে বললেন
দ্যাখো তো বাবা আমার একটা উপকার করতে পারে কি-না!
মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বললাম –
আপনার উপকারে লাগতে পারলে নিজেকে তো ধন্য মনে করতাম চাচাজান
কি করতে হবে তাই বলুন!
তিনি বললেন –
বেশ কিছু দিন থেকে নিয়মিত খেজুর গাছের রস পাচ্ছি না
মজার ব্যপার হলো – গাছে হাড়ি লাগানোই থাকে অথচ রস থাকে না
মানুষ খায়, না-কি সাপ বা বাদুর খায়
তাও ঠিক মতো বুঝা যায় না
তুমি যদি বাবা একটু খতিয়ে দেখতে !

বললাম –
বলেন কি চাচাজান!
প্রত্যেক দিন খোয়া যায়?
এমন তো হবার কথা নয়!
বলেই মাজুর চোখ রাঙানিতে থেমে গেলাম
বুঝলাম বিশাল একটা বোকামি করে ফেলেছি
গাছের রস যে ২/৩ দিন অন্তর অন্তর আমরাই খাই
সে কথা স্বীকার করে নিয়েছি অকপটে
যদিও চাচাজান ধরতে পারেন নি।
কথা না বাড়িয়ে তাই বললাম –
চিন্তা করবেন না চাচাজান
নিশ্চয় একটা বিহিত করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ!
ভাবতে লাগলাম ঘটনাটা কি!
চাচাজান বলছেন প্রত্যেক দিন রস থাকে না
অথচ আমরা খাই —-
তাহলে কি ——

পূর্ণ শশী জ্যোৎস্না ঢেলে অকাতরে সাজায়ে চলেছে
নিদ্রাহারা ধরণীর বুক,
বেশ ঝকমকে একটা রজনী!
আমরা চলেছি গোপনে পুকুর পাড়ে রহস্যের সন্ধানে।
কিছু দূর থাকতেই হঠাৎ মনে হলো গাছে কি যেন নড়ছে
সাপ বা বাদুর নয়, নিশ্চয় মানুষই হবে!
টান টান উত্তেজনায় ঘেমে উঠলো শরীর
ফিস ফিস করে মাজুকে বললাম –
ভয় করিস নে, পিছু পিছু আয়!
গাছের গোড়ায় না পৌঁছতেই লোকটি অস্তিত্ব অনুভব করে ফেললো আমাদের
হয়তো বা বুঝেও ফেললো একটা অঘটন ঘটতে চলেছে আজ
আর তাই নাগালের বাহিরে থেকেই আওয়াজ দিলো
’আমি সাজু, খবরদার আঘাত করবি নে কেউ!’
তারপর নীচে নেমে আমাদেরকে চিনতে পেরেই ধমক দিয়ে বলে উঠলো –
আমি তো গাছে উঠেছি কেউ রস চুরি করেছে কি-না দেখার জন্য,
কিন্তু তোরা এখানে কি করছিস?

সাজু মাজুর আপন বড় ভাই
কথা বলতে পারলাম না
তার হাতে এক মাথায় কাপড় প্যাঁচানো একটা নল দেখে মনে মনে শুধু বললাম –
’পৃথিবীতে সবাই সাধু
কেউ প্রকৃত কেউ ভেজাইল্যা আর কেউ ছদ্মবেশী!’

জ্বীনের খিটমিটে হাসি

124

এক সময় ষষ্ঠ শ্রেণীর উপরে অধ্যয়ণরত প্রতিটি ছাত্রেরই
লজিং অথবা বোডিং -এ থেকে লেখাপড়া করার সুবাদে
নিজেস্ব ট্রাঙ্ক থাকতো।
তখন আমি দশম শ্রেণীর ছাত্র।
তাই —

ক’দিন থেকেই চলতে ফিরতে মনে হচ্ছিল
সব সময় কে যেন আমাকে ফলো করে।
কখনো ডানে কখনো বামে আবার কখনো পিছে ধুপধাপ শব্দ,
ফিরে তাকালে কিছুই নেই
যেন নিজের স্যান্ডেলই গোপনে চটকা মেরেছে,
তবুও ভিতরে ভিতরে একটা জমিদারী ভাব তৈরী হতে লাগলো
কারণ এহেন কর্ম নাকি জ্বীনেরা করে,
শুনেছি একবার যদি জ্বীন কারো বশীভূত হয় তো লালে লাল শাহজালাল,
সুতরাং বুঝতেই পারছেন!

এরই মাঝে অবাক করা এক ঘটনা ঘটলো –
চিঠি রাখবো বলে সেদিন তালা খুলে দেখি
আমার ট্রাঙ্কের কোণায় বেশ কিছু ঝকঝকে পয়সা,
সিকি আধুলী মিলিয়ে সারে নয় টাকার মতো।
তখন টাকার যথেষ্ট মূল্য ছিল –
একটা আধুলীতেই পাওয়া যেতো পূরো এক ছটাক ভাজা ছোলা।
বুঝলাম নিশ্চয় ওই জ্বীনের কান্ড
কাউকে বলা যাবে না,
প্রকাশ করলে নাকি ওরা কোনদিন আর কাছে আসে না
তাই গম্ভীর হয়ে ঘুরি আর ছোলা কিনে দেদারসে আড়ালে একা খাই।
এক বন্ধু থাকতো আমার কাছে
ওকেও ব্যপারটা বুঝতে দিতাম না।

কয়েক দিনে পরে –
সাঁঝের কুপি জ্বেলে দু-বন্ধু পড়তে বসেছি,
এক ফাঁকে হঠাৎ-ই ও’ বললো –
’জানিস তোর ট্রাঙ্কে তালা মারা থাকলেও চাইলে ডালা জাগিয়ে
অনায়াসে কোণায় কিছু রাখা যায়
কিন্তু বের করা যায় না!’
শুনা মাত্রই স্তব্ধ হয়ে গেলাম
মুহুর্তেই হারিয়ে গেলো সেই জমিদারী ভাব,
ঘোরালো এক চিন্তা ছটফট করতে লাগলো মাথায়।
ওর ট্রাঙ্ক ছিলো না
বোকামিটা বুঝলাম যখন
ততক্ষণে ভেসে এসেছে কানে ফোকলা দাঁত অ’লা এক জ্বীনের
বিদ্রুপাত্নক খিটমিটে হাসি।

রুবাইয়াত-ই-বোরহান (মা হারা মন)

9

(১)
মেললে বসে চাঁদ রাতে তার রূপায় মাখা রঙ তুলি,
এই প্রকৃতিই নেচে উঠে জীব খ্যালে সব ডাংগুলি।
ঘোরও আড়ে রয় না বেজার চষতে যা মান খাপছাড়া,
ডুকরে শুধু এই মনে আজ মা মা ডাকা দিনগুলি।

(২)
হুতোম যদি ঠ্যাং তুলে ওই বাবলা শাখে গায় নেচে,
গুবরে সেও হয় খুশি এক লাদির আশে জল সেচে।
দেখেও এ মন শূন্য ভুবন, ভাবছো বুঝি ক্যান এ হাল?
বুঝবে না গো বলছি তবু ‘মা যে আমার নেই বেঁচে!’

(৩)
গভীর রাতে নিদ খোয়ে আজ দেখি বুকের চোখ মেলি,
করছে হাঁসের এক ছোট ছা মায়ের সাথে জলকেলি।
আশায় এ মন উঠলো কেঁদে ডাকতে এ ঘর ওই বাড়ি,
’আমায় ফেলে তুই মাগো এই ভর দুপুরে কই গেলি!’

(৪)
যতোই উঠুক আশার সুরুজ ফের সে’ উষার বুক চিরে,
আর যাবো না শখের মেলায় ধরুক এসে লোভ ঘিরে।
বলবো না আর এক্ষুণি দে পয়সা সব ওই গিঁট খুলে,
আমায় ভেবে তুই শুধু মা জীর্ণ দোরে আয় ফিরে।

চন্দ্র রে তুই দিস্ নে আমায় ফাঁকি! (গীতিকাব্য)

tty

চন্দ্র রে তুই দিস্ নে আমায় ফাঁকি!
তোরই আশায় রয় জেগে এই
ব্যাকুল দু’টি আঁখি –
চন্দ্র রে তুই দিস্ নে আমায় ফাঁকি!

দিন শেষে যেই আঁধার নামে তৃষ্ণা উঠে জ্বলে,
কাঁপন চেপে হাত পেতে রই জ্যোৎস্না দিবি বলে।
মন হলে রে ধৈর্যহারা
ক্ষণে ক্ষণে দিই ইশারা
রোজ লুকিয়ে বুকের ব্যথা ডাহুক সেজে ডাকি –
চন্দ্র রে তুই দিস্ নে আমায় ফাঁকি!

ভাদর ভুলে দ্যাখ দিয়ে তুই ভাঙা ঘরে উঁকি,
রাখছি কতো আদর ঢেকে তোর তরে রে লুকি!
গাই বলে গান ভাঙা দোরে
জোনাক কতোই গোসসা করে
পূবাল বাতাস চায় না দিতে হিমেল পরশ মাখি –
চন্দ্র রে তুই দিস্ নে আমায় ফাঁকি!

মন তবে ক্যান অচিনপুর! (গীতিকাব্য)

12321

বিশ্বাসেই সে’ বস্তু মিলে
তর্কে নাকি বহুদূর –
মনটা আমার ক্যান তবে গো অচিনপুর!
মিঠা নয় কি গুড় –
মনটা আমার ক্যান তবে গো অচিনপুর!

থাকবো ভেবে সুখের আশায় হলাম গেছো ব্যাঙ,
ডাল নিলো এক বৈশাখী ঝড় ভাঙলো আমার ঠ্যাঙ।
কান্দি বসে গাছতলে আজ
যায় যদি ঢেউ খানিক দূর –
মনটা আমার ক্যান তবে গো অচিনপুর!

বুঝি না এই মায়ার খেলা দেয় কে সুতায় টান,
কার কারণে গায় ভোলামন শিকল গড়ার গান!

ভেন্না কাঠের নৌকা বেয়ে গাঙ হতে যাই পার,
অমনি গো চাঁদ গোসসা করে নেয় তুল জোয়ার!
বৈঠা ভাঙে মাতাল বাতাস
শুনতো যদি কেউ সে’ সুর –
মনটা আমার ক্যান তবে গো অচিনপুর!

ঝরলে পাছে মায়ের চোখের জল! (গীতিকাব্য)

23

সাধের জনম বৃথা যাবে মরণ হবে খল –
ঝরলে পাছে মায়ের চোখের জল!
সইবি নিঠুর ফল –
ঝরলে পাছে মায়ের চোখের জল!

দুখ সয়ে যে গর্ভে রেখে করলো রে যতন,
তারচে’ পরম ধন কি আছে অমূল্য রতন!
সেই মায়েরে রাখলে দোরে
উঠবে খোদার আরশ নড়ে
বইবে না আর সুখের বাতাস জ্বলবে রে অনল –
ঝরলে পাছে মায়ের চোখের জল!

যেজন করে আঘাত দিয়ে মায়ের বুকে ক্ষত,
বোধ যতোই থাক পিঞ্জিরা তার বিরান গৃহের মতো।
ডাক দিয়ে মা পায় না যে সুখ
জনমভর তার ফুরায় কি দুখ!
ব্যাকুল আশা ক্ষণ যা করে মান কেড়ে অচল –
ঝরলে পাছে মায়ের চোখের জল!