বোরহানুল ইসলাম লিটন এর সকল পোস্ট

বোরহানুল ইসলাম লিটন সম্পর্কে

কবির জন্ম নওগাঁ জেলাধীন আত্রাই থানার অন্তর্গত কয়েড়া গ্রামের সম্ভ্রন্ত এক মুসলিম পরিবারে। পিতা মরহুম বয়েন উদ্দিন প্রাং ছিলেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাতা লুৎফুন নেছা গৃহিণী। বর্তমানে কবি একই থানার অধিনস্থ পাঁচুপুর গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তিনি অনেকটা ‍নিভৃতচারী লেখিয়ে।

জীবনের পথে

16

বয়স তো ভাই অনেক হলো, যায় কি রাখা ধরে!
ক’দিন বাদেই হয়তো বা যম জানটা নিবে হরে।
হয়নি আজও কিছুই কেনা
গুনছি তবু কালের দেনা
চাওয়া পাওয়ার রজ্জুতে রোজ গিট্টু নতুন গড়ে।
মন জেনে কি থামছে ক্ষণিক বাস্তবতার দোরে!

যদি ভাবি হোক না জীবন সবুজ গাছের সাড়া,
কেউ পেরেছে রাখতে তারে যত্নে চির খাড়া!
লোভ লালসার ধূর্ত মতি
শুনেই সাজে তালের পতি
ভাঙা ঢোলেই গড়তে সে ফের ঠুমরি গানের তাড়া।
চাইলে কি আর যায় গো রুখা চঞ্চলা সেই ধারা!

কঞ্জুস

14

পাশের গাঁয়ের কদবেল আলী
ভীষণ চতুর লোক,
কোনদিন তারে করতে দেখিনি
পরের কারণে শোক।

কঞ্জুস বলে বেশ আছে খ্যাতি
যদিও পায় না দাম,
সুখে-দুখে তবু সকলেরই মুখে
জেগে থাকে তার নাম।

জমি-জমা আছে পুকুরেও মাছ
খায় না কভু সে ভালো,
খরচের ভয়ে ভুলেও দেয় না
জ্বালাতে সাঁঝের আলো।

কথা বলে সদা শুদ্ধ ভাষায়
চকচকে রেখে সাজ,
খাওয়ার আসরে দেখা যায় তারে
সামনে করতে রাজ।

সেদিন গঞ্জে এক লোক ডেকে
আতর দেখেই হাতে,
শুধায় আপনি বেরুতে কি এটা
ছিটিয়ে দেন না গা’তে?

জবাবে কয় সে সুবাসে কি কেউ
সম্মান দিবে দেখে!
তাইতো গোপনে কিঞ্চিত রাখি
নাসিকা রন্ধ্রে মেখে।

ওরে বাবা!

12zz

ওরে বাবা! রাত্তিরে
দেখি এক গেছো ভূত,
ঘরে ঢুকে করছে সে
ঘুরে ঘুরে খুঁত খুঁত।
এই সাজে চিতা বাঘ
ভাবি বুঝি দেয় হানা,
ফের দেখি ডেকে উঠে
বিড়ালের কালো ছানা।

বুজলেও দু’টি চোখ
সাপ ফুঁসে দেয় দৌড়,
চুপিসারে দোর খুলে
ভল্লুক সেজে চোর।
টমি এসে মাথা নাড়ে
নিশ্চয় নয় পোষা,
হাতি ছুটে শুঁড় তুলে
হায় হায় একি দশা!

দেহ কাঁপে থর থর
ভেবে আছে আরো কি যে,
শুঁকে জানি বিছানাটা
লোনা জলে গেছে ভিজে।
তবু এলো হনুমান
দেবে না কি ভেঙে ঘাড়?
খাট থেকে পড়ে বুঝি
সব দোষ নিদ্রার!!

ছবিঃ নেট থেকে।

গেন্দি মাসির হাসি

gggg

পাশের বাড়ির বুদ্ধু জেঠা
খাবার আশে ভাজি,
হাট থেকে এক ছোট্ট ইলিশ
কিনছে হয়ে রাজি।

জেঠি শুধায় দুর্দিনে আজ
এই কি তোমার শান?
শুনেই এ বাক জাগলো আড়ে
সজাগ দু’টি কান।

বুঝায় জেঠা ক্যান করো আর
আফসোসে হায় হায়!
কাল না হলে দু’দিন পরেই
করবো ফের এ আয়।

তারচে’ বরং মাছে দেখে কও
কেমন হলো জিত!
জেঠি ভাবে রস ঝরে ক্যান
গললো কি ওর পীত!

ব্যাগ ঢেলেই কয় মাছ তো পচা
অনেক দিনের বাসি!
শুনেই সেকি গেন্দি মাসির
খিল-খিলানি হাসি!

ছবিঃ নেট থেকে।

ছোট্ট সোনালী পাখি

5

আজও খুঁজে তারে আঁখি,
যে ছিল আমার আশা জাগানিয়া
ছোট্ট সোনালী পাখি।

রোজ প্রাতে এসে জানালার ধারে
বসে বৃক্ষের ডালে,
গাইতো সে গান সুরেলা কণ্ঠে
পবনের তালে তালে।

কভু যদি মোর বিছানা ছাড়তে
হতো ক্ষণকাল দেরী,
শুকনো পত্র দুলায়ে বাজাতো
বিরহের রণভেরী।

দিবসে সে সদা পাশেই থাকতো
কতো তার অভিমান,
পলকে পলকে গড়ে দিতে যতো
নব স্বপ্নের প্রাণ।

কেন যে একদা গাইছিল বসে
’হে আমার তকদীর!’
ঠিক সেই ক্ষণে বুকে বিঁধে তার
তাতারের ছোঁড়া তির।

রাগের তরে টাকলা দাদু!

185

টাকলা দাদু যাবেই রেগে করছে মনে পণ,
সকাল থেকে ঘুরছে সে তাই রৌদ্রতে বনবন।
ভাবে মাথা গরম হলেই আসবে ছুটে রাগ,
চলবো আমি দর্পে তখন যেমন ফুঁসে নাগ।

ভর দুপুরে বললো দাদী সোহাগ ঝরা স্বরে,
রাগ তো করা অনেক হলো এবার চলো ঘরে!
চোখ করে লাল শুধায় দাদু ‘সস্তা এ পণ অতি?’
ফিরবো না যাও রাগ না এলে হোক সে আমার ক্ষতি!

খবর পেয়েই চাচ্চু এলো সব ফেলে কাজ তার,
বললো বাবা ভাত তো খাবে এইটুকু আবদার!
তারপর না হয় আবার ঘুরো ইচ্ছে মতো বেশ,
দাদু বলে তোর কথা হোক এ পর্যন্তই শেষ!

বাজার থেকে ফিরে জেঠু বললো বাবা এ কি!
স্নান না করে ঘুরলে তোমার থাকবে কি আর নেকী?
চলো হেঁটে যাই দু’জনে ধলুর পুকুর ঘাটে,
দূর হয়ে যা বললো দাদু সূর কি গেছে পাটে?

বিকেল বেলা ইস্কুল থেকে নাতি ফিরে কয়,
কও তো দাদু আমি আপন ভাই কি তোমার নয়?
আজ দু’নে ওই বটগাছের ছায় গাইবো সুখে গান,
দাদু শুধায় কোথায় গেছে বল তোর অভিমান?

এমনি ভাবেই দিন হলো শেষ আসলো ফিরে রাতি,
জ্বাললো জোনাক ঝোপ-ঝাড়ে ফের আগের মতো বাতি।
দাদু দ্যাখে রৌদ্র তো নেই আর ভাবি ক্যান যা-তা,
রাগ সে কি আর আসবে নাকি ঠাণ্ডা হলে মাথা!!

বলতে আছে মানা

images_119

ভীষণ নাকি মুখ্য ব্যাপার
শুনেই তাড়াতাড়ি,
দেখার তরে দৌড় দিয়ে সব
চললো রাজার বাড়ি।

মরলো পথে দীনুর ছেলে
ব্যস্ত চলার ঘাতে,
ছুটলো তবু ঠ্যাং নিয়ে কেউ
আছড়ে পড়া হাতে।

পৌঁছে সেথা দেখলো কি ভাই
বলতে আছে মানা!
বেশ সয়ে ক্লেশ রাণীর বিড়াল
পাড়ছে বলে ছানা।

রোহিণীর কথা

images

দেহ ধরে তার দাঁড়াবে বলেই অন্তরে পুষে আশা,
ছায়াতলে এক রোহিণী জন্মে সাজলো নীরবে চাষা।
মুগ্ধ নয়নে রোজ ভাবে চেয়ে কতো এ গাছের ডাল,
ফেলবে কি মোরে তুচ্ছ ভেবে সে ডাক দিলে ক্ষণকাল!

যবে শিরে তার চারটি পত্র সাড়া দিলো পাশাপাশি,
সেদিন থেকেই মৃদুলার দ্বারে ছড়ায়ে চলেছে হাসি।
এসেছে যদি বা পতঙ্গ কভু স্বপ্ন হরার তরে,
বিশ্বাসী ধারে তুলেছে সে গড়ে প্রতিরোধ অকাতরে।

দিবসে সূর্য রাতে চন্দ্রিমা গড়ে যে সবারই খেলা!
আলো-ছায়া তাই খুশিতে সাজায় জেগে তার সাথে খেলা।
করেছে যদি বা ঝঞ্ঝার রোষ তবু মাঝে নাচা নাচি,
যুদ্ধের মাঠে নিয়েছে সে খুঁজে কাঙ্খিত ত্বরা যাচি।

জমতে দেয়নি হৃদয়ের কোণে ক্ষণিকের তরে ক্ষত,
এমনই ভাবেই করেছে সে দিন দুঃখ বা সুখে গত।
গ্রীষ্ম বরষা বক্ষে জড়ায়ে শীতের উদরে বসি,
খুশিতে মেলেছে জীবনের আশা প্রকৃতির ক্রোড়ে চষি।

আজ সে হয়েছে বেশ বড় দেহে আঁশ যে বসেছে ত্বকে,
শোভিছে শ্যামলা সতেজ স্কন্ধে ডগা ক’টা লকলকে।
ভাবে দেখে আর অপেক্ষা দিয়ে কেন গড়ি ফের শ্বাস,
মনের বাঞ্ছা সোহাগীর কাছে না করে বিনয়ে ফাঁস!

ধীরে ধীরে তাই বৃক্ষের দেহ সপ্রেমে আঁকড়ে ধরি,
শুধায় তোমাকে ভিত্তি ভেবে কি আজীবন যাবো স্মরি?
জবাবে সে বলে দিতে পারো তুমি প্রীতির দুয়ারে সাড়া,
মনে রেখো শুধু সখা সে হয় না ভীরু যার শিরদাঁড়া।

কাব্য লেখার কথা

12

যখনই ঘটনা কোন হৃদে আঁকে রেখা,
কথা ও ছন্দ এসে দেয় ভাবএ দেখা।
তাল লয় ধরে কষি
তাইতো লিখতে বসি
এভাবেই দিনে দিনে বেশ হলো লেখা,
যদিও হয়নি জানি আজও কিছু শেখা!

বুঝেও ওদেরই যাচি নিরালার দোরে,
রেখে এ বুকের কোণে যতনে আদরে।
হয়তো মূল্যহীন
ভাবি তবু রোজ দিন
হোক না নবিশ ভেবে যদি কেউ পড়ে!
কিছু তো মূল্য তবে আসবে এ ঘরে!

কখনো বা রেগে ভাবি লিখবো না আর,
যতোই আসুক ওরা জ্বালাতে আবার।
তবু এ অবলা প্রীতি
দেয় কি গো নিষ্কৃতি!
ফুঁসলেও জেদ তাই ফের মানি হার।
থাকে কি তখন ভুলে চিন্তা অসার!

একবার যেও ঘুরে!

16

একবার এসে ঘুরে যেও তুমি
ছোট যমুনার তীরে,
যেথা আছি গড়ে নতুন বসতি
হরেক লোকের ভিড়ে।

নদীর কিনারে টিন ইটে জাগা
জীর্ণ আমার দ্বার,
বৃক্ষের শাখা দুলে তবু রাখে
দিবা-নিশি আবদার।

মমতার টানে পাখালির ঝাঁক
কলতানে থাকে মেতে,
রোজ এসে দেয় নীরদের ভেলা
হিমেল আঁচল পেতে।

জেলে ধরে মাছ বড়শি বা জালে
উচ্ছ্বাসে বেয়ে তরী,
কামার কুমার খুঁজে ফিরে মান
কর্মের বুক গড়ি।

সারা বৎসরই রঙিলা বদনে
গাছে হাসে ফুল ফল,
মাসে মাসে উঠে উৎসব জেগে
বট-পাকুড়ের তল।

গানে দেয় সাড়া কৃষকের মাঠ
সবুজ দোলনে ফুঁসি,
প্রকৃতির দেয়া দেখলে এ রূপ
জানি তুমি হবে খুশি।

ও সরলা! (ট্রায়োলেট)

18

সাধুতাকে দিলে যদি ছেঁড়া কুশাসন,
ক্যামনে সরলা তুমি চোখে আনো ঘুম?
শোচনা করে না বুঝি ক্ষনিকও শাসন,
সাধুতাকে দিলে যদি ছেঁড়া কুশাসন?
মাশুকের পাতে দিয়ে আঁশটে বাসন,
কভু কি আশেক তার ঠোঁটে রাখে চুম?
সাধুতাকে দিলে যদি ছেঁড়া কুশাসন,
ক্যামনে সরলা তুমি চোখে আনো ঘুম?

সম্পর্কের ভিত (সনেট)

3

চন্দন কাষ্ঠের তৈরী কেদারায় দুলে
বর্ণিল স্বপনে তুমি চাঁদে গড়ো কুঠি,
সখ্যেও মৃদুলা ঝড় কভু এসে ছুঁলে
রক্ষার্থে কুঁড়ের মান আমি ধরি খুঁটি।

ছন্দিত আবেশ পেতে কামনার দোরে
রূপালী ঘুঙ্গুরে তুমি যেচে ঢালো সুরা,
বাঞ্ছার কর্কশ ঘাতে অদিনের ঘোরে
ন্যাড়া পাতে আমি খুঁজি খইলশ্যার মুড়া।

যতোই নামুক বৃষ্টি নিয়ে মিঠা পানি
জানি সমূদ্রের জল তবু রবে লোনা,
টানলেও দস্তা খোশে বিশ্বাসের ঘানি
হবে না কস্মিনকালে বরণে সে সোনা।

তবুও সম্পর্ক হবে খাঁটি অবশেষে,
তুমি আমি মাটি হবো যবে মিলেমিশে।

কাব্যের কথা

14

কাব্য বলো না তারে,
অসাড় বন্দে আপনাকে যেবা
খুঁজে ফিরে হাহাকারে!

চাঁদ-তারা যদি নিশীথের বুক
চিরতরে যায় ভুলি,
ব্যাকুল পিয়াসী সেও কি দেখবে
গগন দৃষ্টি তুলি?

রৌদ্রের ছটা যতোই সাজাক
তির্যক চোখে ক্ষণ,
হাসে না প্রকৃতি না দেখলে তবু
মেঘে মেঘে আলাপন!

জেনে যদি কেউ পিউ কুহু বিনে
খুলে ফাগুনের দ্বার,
বলবে কে দেখে কাব্যরা হলো
তথ্যের সমাহার??

কারিগর

12

সূর্য নামে নি পাটে,
গাগরী কাঁকালে এক কুলবধূ
চলেছে নদীর ঘাটে।

ক্ষণকাল চেয়ে এদিকে-ওদিকে
হঠাৎই তুলে বাঁ হাত,
কি জানি কি ভেবে মাথায় রাখলো
হয়তো পেয়েছে ঘাত।

তারপর দেখি চিমটি দিয়ে সে
উকুন ধরে অক্লেশে,
নখের পরে তা নখ চেপে মেরে
আবার চললো হেসে।

বলি তাই ওরে মনা!
না বুঝেও প্রেম ঘুরেছিস শুধু
হাব-ভাবে সেজে ঘনা!
ভাবিস নি মাঠে না পেয়েও বল
আপনারে ম্যারাডোনা?

ক’ দেখি আজকে জ্ঞান বা গরিমা
যতোই সাজাক ধর,
দক্ষতা বিনে এ খেলা গড়ার
আছে কি রে কারিগর??

আবু ও হাবুর কথা

images_015

আবু আলী হাবু আলী – রোজ করে চুলোচুলি
খসলেই তাল থেকে তিল,
যেকেহ তুললে চড় – অন্যে ভুলে হাশর
খুব তবু দু’জনার মিল।

হাবু কভু খেলে পান – আবু পাশে গায় গান
সজোরে চিবিয়ে ডাল ভাজা,
কোথাও জিতলে আবু – ভাবে ধাপ ফেলে হাবু
যেন সে মঞ্চে জাগা রাজা।

আবু যদি কিনে হাঁস – হাবু দ্বেষে রুই মাছ
দু’পথে দু’জনে ফিরে বাড়ি,
আহারের কালে রাতে – না পেলে ছালুন পাতে
না দিয়ে খায় না কেউ আড়ি।

ধরলে হাবুর জ্বর – আবু করে ধড়ফড়
ডাক্তার এনে তবে থামে,
সুস্থ হলেই ফের – ছোড়াছুড়ি করে জের
ব্যঙ্গে দোঁহের রাখা নামে।

একদিন আবু আলী – চিরতরে গেলো চলি
ঘুমালো হাবুও করে মান,
দেখে বলে লোকজন – প্রমাণ রেখেছে ক্ষণ
দু’টি দেহে এক ছিল প্রাণ।