চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

রৌদ্র ছায়া

=====রৌদ্র ছায়া

বাঁধিতে তারে
বেবস হৃদয়ে মোহ
নাহি চেতন ফিরে
ধরত্রী মোহ হয়ে করেছে হরণ;
যা ছিল সম্বল!

আঁধার ক্ষয়ে,
বিলাপে মিশে নিত্য নতুন সঙ্গ লয়ে।
বেবস তন্দ্রা তাই
সহসাই জেগে উঠে; হৃদয় যাপনে।

মন ছাপিয়ে
সহসা কতক বিদ্রোহ আঁকে?
হৃদয়ে মোহ;
ক্ষণতাপে, প্রতাপে
দ্রোহ সনে আঁতাতে
বিদ্রোহ কপাট খুরে রয়!

আজ ২৫ মাঘ ১৪৩১

নিত্য নতুন মোহ!

=====নিত্য নতুন মোহ!

নিত্য নতুন মোহ!
বাসনায় বাঁচে; আঁচল পেতে বসে
করিতে হরণ যা আছে তলানীতে জমা, যত সামান্য
কিঞ্চিত কড়ি! ফুরালো তা বুঝি
লোভের আতশবাজি পুড়িয়ে।

কোন পথে যে চলা?
কোথা হতে কোন মেঘ ভেসে আসে?
আঁধার রাতে সিদঁকেটে সব লুটেছে;
যা ছিল সম্ভ্রম!
বাসনা টুকু ছাড়া।

তাড়না ভারি মোহ ভুলায় মন
চঞ্চল ভারি তেলে জলে মৌনতা ভুলায়।

আজ ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

একদিন তোমাকে ফেরাবে

—————-একদিন তোমাকে ফেরাবে

সেই স্মৃতিগুলো,
একদিন তোমাকে ফেরাবেই;

সেই পুরাতন পথ!
আগোল খোলা আকাশ তো, কত কিছু ভুলেছো? খসে পড়া পালকের মতো
ঝরে গেছে কতক? কাঠবাদাম তলে, বৃষ্টি ছোঁয়ার মাতম;
ঝরা পাতায় সাঁড়ি বেঁধে চলে পিঁপড়ার দল। স্মৃতির ভির করা উঠানে
সজনে ডালে ভেজা কাক; উঁকি দিয়ে দ্যাখে
এখনো কতক খসে পড়া স্মৃতি তোমার।

ফিরবে বলে বাসন্তী বেলা
তোমার আরধ্য বিরহ অভিমানে কাঁদে; বলে উঠে চুপিসারে
অরন্য বিলাপ। ঝিঁর ঝিঁরে বৃষ্টিতে নেতিয়ে পড়া লজ্জাবতী যেন
বৃষ্টির ছোঁয়া মুর্চ্ছা যায়।

আঙ্গিক খোলসে লুকিয়ে ছিল কিছু স্মৃতি
তুমি তাও ভুলে যেতে বসেছ; বিষম খেয়ে তন্দ্রা
অভিমানে আবসা পথে হাঁটে
যাক তা সরে যাক আসমান জমিন ভেদে
তবু্ও যাতনা বার বার ফিরে; কটুম পাখি যায় ডেকে
একদিন তোমাকে ফেরাবে।
========

আমি তুমি

______আমি তুমি

আমি তুমির লুকোচুরি
মেঘমল্লার মতো বৃষ্টির ঘ্রাণ
যেন মৃগনাভি কস্তুরী!
পৃথিবী ময়
বাসনায় বাসনায়
রোশনাই; জোছনার মাদকতা।

কালে কালে ছিন্ন পাতায়
মর্ম দহন গাছ তলায়; আমি তুমির
ফিরে পাবার অপেক্ষা!
রংধনু প্রলাপ
মেঘ আঁকে ঐ
উতল বায়ু খেলে যায় হরষে
নড়ে উঠে ঘাস ফুল
নড়ে উঠে গাছের পাতা
ওমনি উড়ে গেল পক্ষী ঐ
ঝোপ ঝাড় উজালা।

আমি তুমির প্রলাপ আঁকে ঐ
বুলবুলির খুনসুটি!
লাউ ফুলে
ভ্রমর ঐ গান গায়
আমি তুমির লুকোচুরি।

আজ ২০ ভাদ্র ১৪৩০

আমরা বাংলায় কথা কই

ww

অমর একুশে
প্রভাতফেরির মিছিলে তুমি আসবে তো?
শোকের বসনে ৫২ এর সেই দিনের মতো চেতনায় ফিরে।

মুখের ভাষার সে কি বজ্র নিনাদ মিছিল?
মিছিলে মিছিলে সারা বাংলা;
পলাশের আগুনের দিনে মিছিলে গুলি
রক্তে ভেজা পিচঢালা পথ।
মায়ের বকুনিতে!
শহিদের তরে আজও পথ চেয়ে রয়।
ছেলে আসবে! ঘুমপাড়ানি গানে রাত্রি গভীর হয়,

রাত পোহালেই অমর একুশে
প্রভাতফেরির মিছিলে তুমি আসবে তো?
শহিদ বেদিতে শোকের মুর্চ্ছনায়
ফুলের শ্রদ্ধা।

আমরা বাংলায় কথা কই।

======
আজ ৭ ফাল্গুন ১৪২৯

প্রভাতফেরী

_______প্রভাতফেরী

একুশ আসবে বলে
শঙ্খচিলের ডানায় বর্ণমালা ঐ আলোর ঝলকানিতে
ঝলমলিয়ে উঠে।

দিক ভুলা শঙ্খচিল
শুন্যে মহাশূন্যের দিক ভুলে, পথের নিশানা খুঁজে ফিরে
প্রভাতফেরীর গানে
লয় পথে নিশানা ফিরে আকাশ নীলে।
নীল আকাশের নীলে
শঙ্খচিল তার স্বপ্নের জাল বুনে; স্বপ্নের বুননে প্রভাতফেরী যে
তার অমোঘ মোহে টানে।

মাঘের কুয়াশার আকাশে
ঐ দেখা যায় শঙ্খচিল উড়ে
কবিতায় রাঙা ঠোঁট বিরহী পদ গায়
একুশ আসবে বলে; শহীদ মিনারে শিরীষ ডালে বসে।
======
আজ ২৩ মাঘ ১৪২৯

____মৌন বিস্বাদ

____মৌন বিস্বাদ
মাঘের ধুঁয়াসা মেঘে জল নেই
কুয়াশার আড়ালে; শিশির বিন্দু
আমলকীর নাঙ্গা শরীর ভিজে সারা।

উত্তরের ক্ষেপ
মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
উত্তরের খোলা দ্বারে তুমি দাঁড়িয়ে
চেতনায় পোড়া;
বার বার ভুলের খেসারতের মাত্রা গুনে
ইজি চেয়ারে সবে ঝিম ধরেছে।

কার্নিশে একলা কাক ডেকে উঠে আচমকা
এবার তন্দ্রা টুটে;
বিবর্ণ ঠোঁটে কফিতে চুমুক বি-স্বাদের।
কাকটা উড়ে গেলে
বেগুনী পাপড়ি ঝরে পড়ে ক্যাকটাসের
মৌন বিস্বাদ।

আজ ১৭ মাঘ ১৪২৯

আজকের দিনে মা যে আমার

a7-

____আজকের দিনে মা যে আমার
আজকের দিনে মা যে আমার
হারিয়ে গেল কোন সুদূরে?
বাতাস তোরা জানিস নাকি?
সব খানে যে তাঁরেই খুঁজি
আকাশ কি তোর শুন্য নীলে?
আমার মাকে লুকিয়ে নিলি
দিগন্তের ঐ কোন সে দূরে?
মা যে আমার রইল পরে।
সাঁঝের মায়া ঐ সন্ধ্যা তারা
মা কি আমার তারার মায়া?
সেই মায়াতেই মা কি আমার?
জনমের মতো হারিয়ে গেল।
রাতের মায়া লক্ষ তারা মিটি মিটি জ্বলে
ঘুম পারানি গানের মায়া শৈশব টেনে আনে।

______নন্দ তোমার নদের চাঁদ
সিন্ধু পাড়ের অতল তলে,
আর পাবনা খুঁজে তারে
সাগর জলে গহিন তলে, নিত্য খুঁজি স্বপ্নঘোরে।
বিরহ ব্যথায় কষ্ট হলে,
ঠোঁট কয় যে, ওমা বলে
শান্তি কোথাও না পাই যখন, মা তোমায় মনে পরে।
মা তোমার কত স্মৃতি?
শৈশব কৈশর জীবন বোধি
বয়ে বেড়াই অষ্ট প্রহর, নন্দ তোমার নদের চাঁদ।
কোলাহলে মেঘ ভেসে যায়
বাতাস বনে চুপি চুপি দেখলে চেয়ে একটুখানি
সন্তান তোমার কেমন আছে? পৃথিবী নামের আজব ভূমে।

________ মা যে তোমায় মনে পড়ে
উবু হয়ে, চিৎ হয়ে, রইছি শুধু ঘুমে ঘুমে। মায়ের দুধের বাটটি চেঁপে শৈশব কাটে হেসে হেসে। মায়ের বুকে বসে কত হাসি? কাতু কুতু খুনসুঁটি, সে তো ইশারাতে। হাসতে হাসতে মায়ের আদর সোনা মুখে হাজার হাজার। কইতে কথা একটু একটু? পা টলে যায় হাঁটতে বলা। মা বলে উঠলে ডেকে, আদর সোনার যায় যে বেড়ে। আঁচল টেনে বায়না কবে? মা যে তোমায় মনে পড়ে।

==============
১৪২৪/১৯ পৌষ/শীতকাল।

অনামা বৃত্তায়ণ

ima

_______অনামা বৃত্তায়ণ

পৌষের মেঘ কুয়াশায় ঢাকে
অভিমানে তন্দ্রায়
ধ্রুব তারা জ্বলে জ্বলবে
এমনি সঙ্গোপনে রাত্রি যায়; অমানিশায়

রাত্রি যাপনে নগ্ন কাল
সহ বাসে ধরাশায়ী, কতক বিদ্রূপ?
কতক হাস্য রসে হারা?
তবুও পোড়া বিরহ স্বপ্নঘোরে
পোড়ায় নিত্য অমিয় আশায়।

বিরহে পুড়ে পুড়ে
কবিতার মুখ খুলে; খোলা হাওয়া গিলে
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে
বলে উঠে কবিতা, তুমি নেই
ধ্রুব তারার যে আশ্বাস ছিল
অনামা বৃত্তায়ণ।
_____
আজ ১৪ পৌষ ১৪২৯

সজ্জন সহোদর হারানো বিলাপ

আতর গোলাপ জলে ধৌত শেষ।
সাদা কাপড়ে মোড়া। নাকে কানে সাদা কাপড়ের টুকরা দেয়া। কপিনের চারপাশ চা’পাতি ঢালা, মাঝখানে নিঃস্তব্ধ নিঃসার সোয়ানো লাশ। মুখোমন্ডল যেন, পেলব প্রশান্তির ছাপ ধরে আছে। চিরতরে, নির্বিকার আর কারো সাথে কোন দিন চলবে না, হাঁটবে না, বলবে না কথা! এ তার কেমন চলে যাওয়া?

দিন রাত্রির, এই যে খেলা।
পঞ্চমীর চাঁদের রাতের দ্রোহ। লক্ষ কোটি নক্ষত্রের ঐ তো ছিল,ধব্রতারা, তাও খসে পড়ল! ভোরের বীণায় যে জাগ্রত সুর বাজে নিত্য। দিন বদলে পারাবার। স্বপ্ন জিইয়ে ছিল, সিঁথানে। গীতবিতানের মর্মধ্যানে যাপিত জীবন, ক্ষয়ে যায় ক্ষণে ক্ষণে।

বুঝেনি কেউ, জানেনি কেউ
নিজের মধ্যে নিজে পুড়েছে বারং বার। যেমন চিতার আগুনে চিতারই পোড়ার মতো সহবোধ। কাউকে জানার ফুরসুত দেইনি। কেউ জানতে চায়নি কখনও? তাই বড়ই অভিমান। মুখের প্রলাপে বুঝেনি কেউ। কি সে ডুবছে সে? মর্মাথ্য বিধানে ঝুঁকেছে। ভেঙেছে, গড়েছে, আপ্লুতো, চলে যাবে বলেই; অবিনাসি বৈভব।

১৪২৩/২৬, অগ্রহায়ণ/হেমন্তকাল।

এখানে আলো নেই

এখানে আলো নেই
কি জানি, কেন জানি?
এখানে আলো নেই
মাথার ওপরে ইটসুরকির ছাদ! নেই আকাশ।
পথে আলো নেই,
ঘরে আলো নেই
ইট সুরকির উঁচু উঁচু দালান! সারি সারি।

উঁচু গাছ নেই,
উঁচু পাহাড় নেই
গহিন বন নেই, গরুর রাখালের মাঠ নেই।
এখানে চলচাতুরিতে ভরা,
সস্তা শ্রমে মিলে ভাত; আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

এখানে আলো নেই,
সভ্যতার চিতা জ্বলে
পুড়ে পুড়ে খাঁক, বির্মষ নিষ্ঠা সুসভ্য আলখেল্লা।

১৪২৩/২৪, অগ্রাহায়ণ/হেমন্তকাল।

এবং পথিক

হাওয়ার মতো হালকা বায়ে
উড়ে উড়ে ভেসে ভেসে,
যেতাম যদি তেপান্তরের মাঠ পেরিয়ে!
অচেনা সব নগর বন্দর ঘুরে ফিরে
আঁজলা ভরে নদীর জলে,
প্রাণ ভরে তৃঞ্চা মিটে;
পাখপাখালির ঝাঁকের ভিতর
কুড়িয়ে কটা ঝরা পালক
হাতের মুঠোয় সাজিয়ে নিয়ে পথিক হাঁটে;
আমায় সাথে করে না মোটে
পথিক সেতো বড্ড একা আমারই মতো,
তারই সাথেই আমিও হাঁটি
অচেনা ঐ পথটি ধরে
কালে কালে যুগে যুগে;
গোল বাঁধলেও দেখে না মোটেও
উদাস পবন কালো মেঘে
হারিয়ে গেল কখন যে সে?

.
১৪২১/২২, অগ্রহায়ণ/হেমন্ত কাল।

আধেক সেই প্রেম তৃঞ্চা

——–আধেক সেই প্রেম তৃঞ্চা

তোমার হাতের অস্থির রেখা!
আমাকে টানেনি কখনও,তাই বোধ হয়
অভিমানে মুছে গেছে সব
প্রেম অধ্যায়গুলো ছানি পোড়া চোখের মতো
আঁড়ালে রয়ে গেল; সদলবলে।

প্রেম কি আলো হারা সাঁঝ?
জোনাক আশ্রয়ে বাঁচে; ঠিক দাঁড়িয়ে থাকে
তারকার রোশনাই ক্ষয়ে।

সদ্য লজ্জাবতী ছুঁয়ে
যে ফড়িং ডানা মেলে হা্ওয়ায়
তাকে তুমিই খুঁজে ফিরো জীবন ভর;
আধেক সেই প্রেম তৃঞ্চা।
======

যদি ফিরে বৃষ্টির আচমকা প্রলাপ

________যদি ফিরে বৃষ্টির আচমকা প্রলাপ

ঝর ঝর বৃষ্টির ফো্টা
ধরতে গিয়ে আঁজলা পেতেছিলে বৃষ্টির শরীরে
আঁজলা ভরেছ বার বার
সিক্ততার কৌতূহলে ঢেলে দিয়েছ তা বার বার।
আর এখন বর্ষা;
সে কথা মনে আছে তোমার?
নাকি এখনও সেই রকম আঁজলা ভরো
যদি বৃষ্টি আসে ঝাঁপিয়ে
কিংবা বারান্দায় আসতে আসতে মেঘ বৃষ্টি
ছুটে পালিয়ে গেল তোমাকে না দেখে;

সে দিন চট পটিয়ে বৃষ্টি এলো সাঁঝ বিকেলে
ভিজতে ভিজতে বকুল তলায় আধেক ভেজা
জলে ভেজা বকুলের সে কি বাসনা?

বৃষ্টি যেন আঁজলা ভরে দিয়ে গেল
মুঠো মুঠাে বিরহী আকর ভেজা কবিতা
আওরাতেই তুমি এসে দাঁড়িয়ে গেলে সমুখে।
তোমার পাদুকায় মাড়িয়ে যাওয়া লজ্জাবতী
জলে ভিজে লক লকে ডগায় কুঁকড়ে আছে
যেমন তুমি আঁজলা ভরা জলে ভিজে থৈ থে।

আষাঢ়ে মেঘ ভরা গগন
বৃষ্টির আঁচলে ছন্ন ছড়া মেঘমালা; তোমার মতো
ব্যাকুলতা সাঝঘনালে মেঘের আঁচলে ঢেকে থাকো
যদি ফিরে বৃষ্টির আচমকা প্রলাপ।

১৪২৯/আষাঢ়/ বর্ষাকাল।

স্বপ্ন বাজ পথিক

______স্বপ্ন বাজ পথিক

বিদ্রূপে কাঠিতে আগুন জ্বলে
অথচ দেখো সময় কালে কি চমৎকার খেলা?

বিদ্রূপ ঘুটে এখন সর্ব সহা
নিস্তব্ধ নির্বাক আকল হারা
বে বস,
মস্তিষ্ক বিকৃত পাগল প্রায় মানুষের মতো
বোধ, খাটো থেকে খাটো তরো হচ্ছে।

যাপিত কালে ধাবিত পথে, কৈশোর, যৌবন
মধ্যে বয়সে প্রারম্ভে নিত্য নতুন পথ এসে সমুখে;
পথের খতিয়ান,
বড্ড বেশী যেন ছত্রাকের জ্বাল বিছানো
বুঝতে হয়, খুঁজতে হয়, জলের নুন চেকে
জলের নৈতিকতা পানে সদা তৎপর।

মোহ নেশা ছাপিয়ে গেল; পথহারা সর্বনাশে
খানিক বিষন্ন যাতনা বিদ্রূপ আঁকা পথ থমকে দেয়
অসম কোলাহল; স্বপ্ন ঝুলি কাঁধে বেরিয়ে এলো
স্বপ্ন বাজ পথিক।

=====১৪২৯