চারু মান্নান এর সকল পোস্ট

অর্ধ শতক ধরে হাঁটছে পথিক

বাংলার মৃত্তিকার প্রতি বর্গ ফুটে লুকিয়ে আছে
একাত্তরের জাতি সত্তার শহিদের মজ্জা,
করোটিতে গেঁথে আছে বুলেট, বেয়োনেটের ক্ষত
রক্তমাখা বারুদের কঙ্কাল ফসিল।

নিত্য পথে হাঁটি,
ধুলোর বুক জুড়ে রক্ত মজ্জার রসনাই ঝলমলিয়ে গেয়ে উঠে
মুক্তির গান; উদজিবীত হয়, আমার সোনার বাংলা।
পদতল থমকে যায় মুক্তির অনাহারে, স্বপ্ন বিলাপ
দূর আকাশে আশার প্রদীপ জ্বালায়।

এই যে, অর্ধ শতক ধরে হাঁটছে পথিক
আমিও তাদের দলে; সাতকাহনে শহিদ জননীরা আজও কাঁদে
মুক্তির মিছিলে ঝকঝকে সুর্যির আশায়
স্বপ্ন বুননে আমার সোনার বাংলা।

.
১৪২৮/হেমন্তকাল/ অগ্রহায়ণ।

আশ্বিনে শিন শিন হাওয়া

______আশ্বিনে শিন শিন হাওয়া

আশ্বিনে শিন শিন হাওয়া
মেঘমল্লার দেশ; নদী, বিলে টলটলে জল
শেওলা ঢেউয়ে শাপলার দোল।

ঘাস গালিচা আগাছার ফুল
সাঁঝের হাওয়ায় কাঁপে; লজ্জাবতী চুপটি করে
ধুলোর গায়ে শিশির মাখে।

নাটাই হাতে কিশোর, বালক
আকাশ নিলে ঘুড়ি চরে; কোথায় সেই রাখাল বালক?
গোধুলী বেলায় গাঁয়ে ফিরে।

ফড়িং ডানায় দল বেঁধেছে
সিমের মাছায় সাঁঝ লালিমা; চড়ুই পাখির কিচিরমিচির
ধুলো মাখে উঠুন জুড়ে।

১৪২৮/আশ্বিন/শরৎ কাল।

জানি, শ্রাবণ ছুঁয়েছে তোমায়

জানি, শ্রাবণ ছুঁয়েছে তোমায়
খোলা চুলে সিক্ততার আবেশ; সনাতন কৈলাশ মুর্চ্ছুনায়
নেশা ধরায় ভেজা মাদকতা।

বনে বনে ভেজা সবুজ পাতা যেন উদাসীন আজ
সোঁদামাটির চির চেনা গন্ধ চুঁইয়ে পরে; বির্মষ নিস্তব্ধতায়
ঘরকুনো অভিমান তোমায় ছুঁয়ে বাঁচে।

হাওয়ার ছোঁয়ায় জলে ভেজা লজ্জাবতী
চুপসে রয় তোমারই আঙিনায়; ফিরে দেখা অভিমানে
বিরহ সন্তাপে যেন শ্রাবণ জলছবি।

ঝির ঝিরে ঝরনার নদীর কঙ্কালে
আজ শ্রাবণ যৌবন যেন তোমারই; উচ্ছ্বলে পরা কিশোর কমল
বানভাসি ছিন্ন পদ্ম তোমারই জল ছোঁয়া আশ্ফলন।

.

_____একদিন আপনি আপন

_____একদিন আপনি আপন

একদিন আপনি আপন
মৃদু হরষে,
পথে যেতে যেতে আনমনা পথিক স্বজন
ফিরে দ্যাখা তারই আপনজন।

হয়নি কথা! তার সাথে
কি জানি কি অভিমানে? ফিরে দ্যাখেনি সেও তো আর
চোখের নিশানা মিলিয়ে যায়; ক্ষণ কালেই।

সময় ঢলে পড়ে
আচমকা যেন সাঁঝ নামে, পথিক তার পথে পথে
সেই পিছন ফিরে দ্যাখার আত্মমগ্নে নিমজ্জিত
পায়ের কদম স্তিমিত;
ধুলোর আবিরে ছাপ আঁকে নিত্য
অবিনাশী বিষণ্ণ লয় তারেই খুঁজে খুঁজে ফিরে
পৃথিবীর মগন পথে পথে।

১৪২৭/শরত/ভাদ্র

শূন্য মহাকাল

_____শূন্য মহাকাল

শূন্য মহাকাল,
শূন্য তুচ্ছ অতি কণা সাজিয়ে রইছে দ্যাখো
সচল মহা রণে; দিক হতে দিগন্তে পথিক পথ খুঁজে ফিরে
শূন্য ধুলি কণা শুন্যভুমি মিলে।

কিসের এত সাজ?
কিসের তোরজোড়? সবই তো শূন্য খোল নিত‌্য শূন্য ভরে!
কবিতার আঁচল ছিঁড়ে; শূন্য খান খান
এদিক ওদিক ফিরে শূন্য নিরিখে
অমানিশায় ঘুরে।

বাঁচিতে কত যত্ন আত্তি?
বেঘোর শূন্য কাল, শূন্যকাল বাড়ে
জীবন কাল মাগে; অতীব গোপনে শূন্য আপন টানে
আপন মায়ার টান বিষন্ন বিষম লাগে!
অতীব একা অতীব শুন্যভুমে, একেলা শুধু শুন্য মহাকালে।
======১৪২৭
বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা

_______আচমকা প্রেম

_______আচমকা প্রেম

একদিন সেই দিন
আরশিতে তোমার পারদ খসে পড়ে
তবুও যত্ন আত্তির কমতি নেই।

বাড়ন্ত বেলার তেজ! দিগন্ত দুরে পালিয়ে যায় চুপি চুপি
তোমার বারান্দার কার্নিশে
চুড়ই জটলা; তোমার মৌনতা টুটে যায়
আঁধিয়ার আঁচলে জলের পটলা এখন
ধোঁয়াশা মেঘের পাহাড়।

ইজি চেয়ারে ঝিমুনিতে
তুমিই বুঝি রেখেছ জেইয়ে!
আচমকা প্রেম;
অকার্সাৎ হারিয়ে গেয়েছিল যা, নক্ষত্র স্ফুলিঙ্গ সম
তা যে ফিরবার নয়। বিরহ পিঞ্জরে
শুধু মেঘের মতো জল ভরে, ফুরিয়ে যায়
নিঃস্ব হওয়ার নিমিত্ত।

১৪২৭/ভাদ্র/০২/বিষয়শ্রেণী: বিরহের/রূপক কবিতা

______না, তা নয়

______না, তা নয়

কালের রাজ্য সময় বড়ই ক্ষণিকের অহমিকা
ক্ষণ যাপনেই তৃপ্ত সময়, নিয়েছে জড়িয়ে
অক্টোপাশের মতো করে;
ছাড়াবার কাল, কেবলই যবনিকা পাটে!

সময় আর জীবন
কাঁটায় কাঁটায় চলে ক্ষণ জুঁপে জুঁপে
তবে সময় অসীম পারাবার,
সীমানা কই?
কিন্তু জীবন সময় হিসেবে আঁটা
দম ফুরাইলে ঠুস।

তা, হলে জীবনের সাথে আত্মিকতা আছে
সেও কি সময়ের ছকে আঁটা?
ক্ষণ ছকে সময় বৃদ্ধ; না, তা নয়।

বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী/রূপক কবিতা/শরৎ কাল।

সময় ক্ষত

____সময় ক্ষত

আমাকে ছেড়ে দাও
যেতে দাও আমাকে, আমি যে বন্দি
বাঁধা পড়ে আছি এখানে, এই সময়।

সময় বড়ই স্বাধীন
কিন্তু সময় স্বাধীনতা দিতেই চায় না;
শুধু ফুরিয়ে যাবার চিত্র আঁকে
সময় ফিতায়; উর্মিল মাস্তুল সময় ঝড়ে কেঁপে উঠে
যেন ধরেছে সময় পার্বণ।

কথার সীমানায় সময় ধরে আসে
মেঘেদের বুক চিরে লুকিয়ে পরে
মেঘ ফুরাইলে বেড়িয়ে পড়ে; সময় ক্ষত
অবনীর প্রান্তে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যায়
আমারই সাথে সাথে,,

১৪২৭/শ্রাবণ/২৮/বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা

সবিনয় প্রেম আসুক ফিরে শ্রাবণে

______সবিনয় প্রেম আসুক ফিরে শ্রাবণে

লজ্জাবতীর ঝাড়ে এ কি ছোঁয়া?
আধো বৃষ্টির ধারায়;
নন্দন মায়ায় এ কোন বিরহ পোড়া দহন?
ধোঁয়ার আদলে ঝর ঝর বাদল;
বাবলার ডালে তিলাঘুঘু ভিজে সারা
মেঘ বালিকা ডেকে ডেকে যায়
ঐ দূর নীলিমায়।

রাধার আঁচল চুইয়ে চুইয়ে বিরহী প্রেম
বৃষ্টি বাদল হয়ে ঝরে
ময়ূর পেখম খোলা সাঁঝ; শ্রাবণ অমানিশায়
আকুল হে পারা বার
সবিনয় প্রেম আসুক ফিরে শ্রাবণে।

১৪২৭/শ্রাবণ/২৭/বিষয়শ্রেণী: বিরহের কবিতা/রূপক

_____ শ্রাবণকে ডেকে দাও

_____ শ্রাবণকে ডেকে দাও

আমি তুমির অভিমান ক্ষয়ে গেছে
কোন এক শ্রাবণে? ঝর ঝর বারি বর্ষণে সে কথাই
বার বার মনে পড়ে।

শাপলা বিলে, নতুন জলের বর্ষা
একূল ওকূল ভাসান
বিরহ লখিন্দর পুরাণ; চম্পক বন
ডুবো ডুবো ছেড়া দ্বীপ যেন! নাই ওর নায়ে ছুঁই দেখা যায়
ঐ দূরে জেলের নায়ের পাশ ঘেঁসে
জলের স্রোতের কলতানে; এ কোন মৌনতা ভাসে?
ভাসান জলের মৌন কুঠিরে ডাহুক-ডাহুকী
ভেসে যায় অজানা বিদিশায়,
পোনা মাছের চম্পকলহুরী
ঝাঁক বেঁধে জেগে উঠে শেওলা জলের গা ঘেঁষে।

এমনি ফেরা শ্রাবণে
জানি ফিরবে না তুমি কোন কালেই?
খসে পড়ে নোনা ধরা চাইবার প্রলাপ
প্রণামী বর্ষা আমার, শ্রাবণকে ডেকে দাও

১৪২৭/ শ্রাবণ/ ১৫
বিষয়শ্রেণী: প্রকৃতির/বিরহের/রূপক কবিতা

আমাকে যেতে দাও

_______আমাকে যেতে দাও

স্বাধীনতা আজ, বিমর্ষ যন্ত্রণা! মুক্তির আশফলন
মৃত্যুর মরীচিকা যেন;
কদর্য লেহনে, ঘুরে বেড়ায় দেশ হতে দেশান্তর
প্রেম আজ মৃত্যুর শোক গাঁথা, অশ্রুজল
অবিরাম ভিজে! মৃত্তিকা পান করে শোষণে।

আমাকে যেতে দাও, সেই মৃত্যুর মিছিলে
শবদেহ আর সাদা কাফনে!
মুক্তির স্বাদ; অতল তলে হারিয়ে যাক, লুকিয়ে যাক
ডুবে যাক অপর বেলা, চিহ্ন শুধু জেগে থাকুক;

জাহাজ নাবিক মাস্তুল পুরাণ!
আঙিনায় কবে ধুলোর ফুল উঠবে জেগে?
স্বপ্নের মতো, স্বপ্নে মতো অপেক্ষা তিরোধানে।

বিষয়শ্রেণী: জীবনমুখী কবিতা, রূপক কবিতা/১৭/আষাঢ়/১৪২৭

_______লকডাউন যাপন

_______লকডাউন যাপন

কত দিন পর কবিতার কি প্যাডে?
দিলাম হাত;
আর তখনই গ্রীস্মের তাপদাহ স্বর্ণচূড় ফুলে চমকায়
তোমার হাতের ছোঁয়া বিরহের নামান্তর!

ধুঁ ধুঁ রৌদ্রর মরিচীকায় মৃত্যুর অম্লঘ্রাণ
ঘর্মাক্ত বিষ্ঠার বিষন্নতা ছড়িয়ে যায়,,
হাওয়ার শরীর জুড়ে;

সরীস্রিফের শীতনিদ্রার মতো
লকডাউন যাপন।
তোমায় মনে পড়েছিল খানিক রোদ্রপোলাপে
সজুব ঘাসে চিতল হরিণীর
ঘাসে যাবর কাটার মতো করে;
বনুনে নন্দন প্রেম,
মৃত্তিকা গাত্রে খড়িমাটির আঁচর কাটায় সাঁটা আজও
প্রেম, মৃত্যু সহ বসবাসে।

আকাশ পানে চাহি, চাহি বাঁচিবারে
হে পরাক্রমশালী পথের দিশায়!

১৪২৬/২৪/জ্যৈষ্ঠ

অদৃশ্য ঘণ্টাধ্বনি

অদৃশ্য ঘণ্টাধ্বনি
কোথায় ও
কোন ঘণ্টা বাঁধা নেই?
তবুও ঘণ্টার আওয়াজ ভেসে আসে
যেন মেঘের চাতাল হতে!
ঢ়েরা পেটার মতো
সারা পৃথিবী জুড়ে বিমর্ষ এক ঘণ্টাধ্বনি
বেজে চলেছে তো চলছে
যেন এক রাজার আদেশ? এখনি তাঁর দরবারে
হাজির হতে হবে;
না হলে শাস্তি অশেষ বিড়ম্বনার!

নাকে খত দেবার মতো
আর ও পথে হেঁটো না; ও যে নষ্টের পথ
সরল সোজা পথে হাঁট, হে পথিক বর।

এ কি অদৃশ্য ঘণ্টাধ্বনি?
হতাশার বাজনা বাজে মর্মমূলে; চেতনার আগলে কড়া নারে সহসা
ক্ষিপ্রতায় ক্ষয়ে যায়, অমোঘ লালিত অস্পৃশ্য কপোট যত
ভেসে যায় লালিত লোভ রৌদ্র ধুলি কণায়!
যেন অমোঘ বান ঐ ঘণ্টা ধ্বনির
বেজে চলেছে তো চলছে।

১৪২৬/বসন্ত কাল/ চৈত্র মাস।

হাওয়া ময়

_______হাওয়া ময়

শোনছো না কি?
আজরাইল ঘুরছে, হাওয়া ময়
হাওয়ায় জীবন
চঞ্চলতা, চপলতায় ভরা; সেই হাওয়ায় এখন
লিখছে মৃত্যু সনদ!
লীলা খেলা তাঁরই।

মৃত্যু বিলাপ
তাঁরই হাতেই নিত্য চলাচলে
ধরার বায়ু আলখেল্লা বসনে ছুটে চলে পৃথিবী ময়
কেউ বা বাঁচিবে কেউ বা মরিবে
তাঁর সনদ তাঁরই হাতে উল্‌টায়
সত্য বিধান তলবে;

বার বার খেই হারিয়ে যায়
সু মন্দ বায়ু খুঁজে ফিরে; নগর থেকে নগরে
পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
আজরাইল ঘুরছে দ্যাখো, হাওয়া ময়

১৪২৬/ বসন্ত কাল/ চৈত্র

এমনি তোমার যুগপৎ আমন্ত্রণ

=======এমনি তোমার যুগপৎ আমন্ত্রণ

পলাশ শিমুল পার্বণের
তোমার বাসন্তী দিনে, দক্ষিণা বাতাস আঁচল উড়ায়
মুর্ততায় অভিমানে।
আকাশ নীলের
ব্যথিত বেদন, ঘুচিয়েছে নীল যাতনার অপার
যেন কস্তুরী ঘ্রাণ।

এমনি তোমার যুগপৎ আমন্ত্রণ
এসেছ ফিরে এমন বসন্ত দিন, মলিন বেদন আজ
উঠেছে জেগে শুভ্র সতেজ মননে।

ফুল আর ফুলে করিতে খেলা
দিবা রাত্রির সময় ক্ষয়ে ক্ষয়ে, ভুলেছ যাতনা সোহাগ
আত্মজা কোলাহলে।

১৪২৬/ বসন্ত কাল/ ফাল্গুন। রূপক কবিতা