যুগ যুগ ধরে মানুষমাত্রেই গল্প করে বাঁচে। একজনের সাথে আর একজনের দেখা হলে গল্প করে। গালগল্প, না-গল্প, হ্যাঁ-গল্প। এই গল্প বিনিময়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদ্যতা বাড়ে, মানুষ ঈর্ষান্বিত হয়, মানুষ সৃষ্টি করে, মানুষ ধ্বংস করে এবং মানুষ আগামী গড়ে অথবা ইতিহাস হয়ে যায়।
অর্থাৎ গল্প করাই বাঁচিয়ে রাখে যুগের প্রবাহ। গল্পের মতে করে পড়লে পরা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে বললে শোনা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে পর পর সাজিয়ে শুনলে বুঝতে পারা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে ভাবলে ভাবনা সহজ হয়ে যায়। গল্পের মত করে দেখলে দেখা হয়ে যায় প্রাণবন্ত।
একজন আর একজনের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করলে তাকে চেনা জানা বোঝা সহজ হয়ে যায়। যার সঙ্গে আপনার ভাব তার সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ গল্প করুন দেখবেন তার সঙ্গে আরো গভীর ভাব ভালোবাসা হতে বাধ্য। যাকে রাগ করেছেন গল্প করুন রাগ গলে জল হয়ে যাবে। যাকে ভুল বুঝেছেন, খারাপ লোক মনে হচ্ছে তার সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্প করুন উল্টো ফল পাবেন। তাই তো প্রেমিক প্রেমিকা একান্ত নির্জনে কিছু আলাপচারিতার (গল্প) মাধ্যমে নিজেদেরকে বুঝে নেয়।
এজন্য গল্প আমাদের জীবনের চেনা জানা দেখা বলা ভাবা চলার ক্ষেত্রে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে। হাটে বাজারে মাঠে ঘাটে ফুটপাতে আলিশানে সর্বত্র গল্প বসে থাকে, গল্প ঘুরে বেড়ায়, গল্প দেখে, গল্প ভাবে, গল্প আপনাকে আমাকে নিয়েই গল্প করে। এই গল্পকে বাদ দিয়ে কোন জীবনী নয়, কোন রচনা নয়।
আবার সাহিত্য ধারায় গল্প আপামর মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়। গল্প পড়ার ছলে, গল্প করার ছলে, গল্প ভাবার ছলে যে কেউ যখন তখন দু এক কলি গান গেয়ে ওঠে, কবিতা মনে পড়ে যায় আর পাশের কোন মানুষকে সহজ করে বুঝতে পারে। অর্থাৎ সমস্ত ধারার মাঝে গল্প আছে। গানে আছে, কবিতায় আছে, উপন্যাসে আছে, বক্তব্যে আছে, প্রবন্ধ আছে।
গান শুনতে শুনতে বা গাইতে গাইতে আপনি মনে যে চিত্র আঁকেন তা একটা গল্প। তাই আপনার চোখে জল আসে, আপনি হেসে ওঠেন বা ভাবেন। কবিতা পড়ার সাথে সাথে বা কবিতা লেখার সাথে সাথে যে চিত্র আপনার চোখে ভেসে আসে বা অন্যকে যে চিত্র ভাবাতে বাধ্য করান তা অবশ্যই কোন গল্প ভাবনা। উপন্যাসের এক একটা অংশ ছোট ছোট গল্প উপজীব্য। প্রবন্ধে যা আপনার ব্যাখ্যার বিষয় তাতে অবশ্য সমাজের দেখা কোন কল্প কথার বিস্তৃত রূপ।
অর্থাৎ গান কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ বা সাহিত্যের যে কোন ধারায় আপনি যদি গল্পের আকারে সেই ভাবনা নিজে ভাবতে না পারেন বা অন্যকে ভাবেতে না পারেন তাহলে সেই গান কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ বা অন্য কোন সাহিত্যধারা জনমানসে উপজীব্য হবে না। সেটা গান নয়, কবিতা নয়, উপন্যাস নয়, প্রবন্ধ নয় বা সাহিত্যের অন্য কোন ধারা নয়। যদিও হয় তাহলেও তা কখনওই সুদূর প্রসারী হবে না।
অর্থাৎ গল্পই হল সাহিত্য। সাহিত্যের মাঝে গল্পের অনাবিল ভাবধারা। গল্প ভাবনা উপেক্ষা করে সাহিত্য সৃষ্টি কখনই সম্ভব নয়। যে কোন সমাজের দেশের গোষ্ঠির সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে সেই সমাজের গোষ্ঠির দেশের সাহিত্য পাঠ করলেই জানতে পারবেন। সেই গল্প উপন্যাস গান কবিতা প্রবন্ধ যাই হোক না কেন? কিন্তু জানতে পারবেন তখনকার সমাজ চিত্র।
সাহিত্য ভাবধারার অন্যতম অংশ হল চিত্রকলা। যা না বলেও অনেক কথা বলে। এক একটা চিত্রপট এক একটা গল্প। যেমন সমাজের দেখা প্রতিটি মানুষই এক একটা মস্ত বড় গল্প। আসলে এই মস্ত বড় গল্পকে কমপ্যাক্ট করে যে যেভাবে পারে উপস্থাপিত করে। কেউ গানে কেউ গল্পে কেউ কবিতায় কেউ প্রবন্ধে কেউ উপন্যাসে আর এখন বর্তমানে অণুগল্পে।
সেইসব চলমান গল্পকে অন্যের কাছে উপস্থাপনা করা বা অন্যকে বলব সে যেন শোনে এ রকম করে তুলে ধরা একটু কঠিন। যা বাংলা ভাষায় অসামান্য সাহিত্যিকরা অন্যন্য মুন্সিয়ানায় আমাদের রত্নরাজি দিয়ে গেছেন।
তাই ‘স্বরচিত গল্প রচনা’ ভাবনা বিস্তারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সাহিত্যের অন্যতম ধারা।
দীপঙ্কর বেরা এর সকল পোস্ট
জেনে শুনে
না বলা শুরু করে ছিল
আমি জানতাম ও হ্যাঁ বলবে
কতক্ষণ আর বটগাছের পাতার মত
মুখের ভেতরে মুখ লুকিয়ে রাখবে।
সাহসী যুক্তি তক্ক
বহুক্ষণ বাতাসের মত খেলা করে
পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে
আজকালকার প্রাণবন্ত যাওয়া আসা।
এক কোণে কিনারা হয়ে বসে থাকা
মাঝে মাঝে মনের ক্ষোভে
বিরক্তির হাসছে।
রোজ আমার ক্লান্তি মুছে দেয়
এই সব বাস ট্রেন জীবন কথা।
আমি তাই কান খোলা রাখি
চোখ মেলে দেখি।
অনলাইন গেম
অনলাইন গেম কি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে তা বলার নয়? কিন্তু সেই সব গেম খেলা ছেলে মেয়ের জন্য সেই ফ্যামিলির কতজন অনলাইন ছেড়ে দিয়েছেন? একটু বলবেন কি?
আমার মনে হয় কেউ না। সবাই অনলাইনে আছেন। কেউ গেম খেলছে, কেউ খেলছে না। কিন্তু ফেসবুক হোয়াটস অ্যাপস ইস্ট্রাগ্রাম ও অন্যান্য কেনাকাটা থেকে শুরু করে ফিল্ম দেখা সবই চালিয়ে যাচ্ছেন।
অথচ ছেলেমেয়েকে চোখ রাঙানি। এই, গেম খেলবি না? এ কি সম্ভব।
কেন? আমি তো কোন খারাপ কিছু করছি না। ছেলে মেয়ে কেন করবে? কিন্তু ছেলে মেয়ে তো ভাবছে, তুমি তোমার কাজ করছ আমি আমার কাজ।
তোমার দিক থেকে খারাপ ভাবলেও তার দিক থেকে তো সে মনে করছে ঠিকই করছি।
আমরা ও ছেলেমেয়ে দুজনেই অনলাইনে। আমরা বিজনেস বা লাভজনকে ঘুরছি বন্ধু প্রীতি করছি।
ছেলেমেয়েও তার দিক থেকে তার মত ভেবে অন লাইনে আছে। অনলাইন গেম খেলছে। গান শুনছে। ছবি দেখছে।
এখন দুরবস্থায় হায় হায় করছি। আবেগকে ধরে রেখে বাধ্য ছেলে মেয়েকে বাধ্য করাচ্ছে এই অনলাইন গেম। তুমি অনলাইনে যা যা কর সেগুলো ছেড়ে দাও। দেখি কতটা কি হয়ে যায়? কিছু হবে না। হয়তো কিছু আর্থিক ক্ষতি হতে পারে এছাড়া আর কিছু নয়। তা না। তুমিই অনলাইন ছাড়তে পারবে না বা পারার মানসিকতায় নেই। ওমা, ফেসবুকে সে কি লিখল? কি ছবি দিল? কি শেয়ার করল? মেলটা খুব ইম্পর্টেণ্ট। হোয়াটস অ্যাপ্সে ম্যাসেজটা খুব দরকারী। যেন মনে হয় যুগ যুগ এই মেল ছিল।
আপনি অনলাইন থেকে সরছেন না আর ছেলেকে মেয়েকে আজ ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে বলছেন – অনলাইন ছেড়ে দাও। কিংবা দিয়ে রেখেছেন কিন্তু ওয়াচ করছেন।
অথচ আপনি ছেড়ে দিলে ও ছাড়তে বাধ্য। সেই ভাবনাই এই টিন এজে ঘোরাফেরা করছে। যা সে বলতে পারছে না। তাই অনলাইনে থেকে আজ এই ভয়ঙ্কর ছেড়ে দিলেও অন্য ভয়ঙ্করে জড়িয়ে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কোথায়।
আপনার অফিসে লাগে ভাল কথা। মেবাইলে নেট রিচার্জ আছে তো।
তার পরেও আমরা অনলাইন থেকে কতটা সরছি।
ভাবছি
তুমি যা ভাবছ সেই ভাবাটা আমার ভাবা নয়
আমার ভাবা আমার সাথে তোমাকে নিয়ে নয়
এবার হয়তো বসব গিয়ে তুমি থাকবে দাঁড়িয়ে
আমার আমি বোকার মত নিজেকে দেব হারিয়ে
তুমিও জিতে কোথাও যেন যাচ্ছ কেন পিছিয়ে
আমাদের শূন্য জীবন পূর্ণ দিকে আছে তাকিয়ে
আমি এখন তোমার জন্য আমার খোঁজে থাকি
ভাবতে ভাবতে আমরাই হৃদয়ে হৃদয় মাখি
সেই রাস্তায়
যে আম গাছের পাশে আমাদের বাড়ি
তাতে দুটো পাখির বাসা
সকালের মিষ্টি ডাক বিকেলের কিচিরমিচির
আমাদের ঘর আর ঘরে বাইরের সাথে মিলে যেত।
মায়ের কোলের আদর
বাবার শাসন বাঁধন
দাদা দিদির খুনসুটি
সবই পাখি দেখত আর আমি দেখতাম পাখিদের।
তারপর নীড় ফেলে
আমার মত পাখিও হাওয়া
কে কাকে খুঁজে চলেছে আকাশ দিগন্তে
কে জানে?
মায়ের মতো মাটির রসে ভরপুর
আম গাছেরও বয়স হয়ে এল।
হত … (অণুগল্প)
দড়ির প্যাঁচে শেষ টান দিয়ে মনুয়া উঠে দাঁড়ায় – আমি এখন চললাম। তিনদিন পরে আসব।
রজত আনেকক্ষণ বসে আছে। আড়মোড়া ভেঙে বলল – ক’টা হল? পাঁচশ অর্ডার আছে। তাছাড়া তুই যাবি কোথায়? সামনের রবিবার কেটে গেলে তারপর।
সতন মিনা রুনি হাঁ করে দেখে। মনুয়া কাকুতি মিনতি করে – বউটা খবর পাঠিয়েছে। ছেলেটার জ্বর যাচ্ছে না।
– তো। তুই কি ডাক্তার? ডাক্তার দেখিয়ে নেবে। আমি তো বলছি মালামাল করে দেব। শুধু রবিবারটা কাটতে দে।
জানে বলে লাভ নেই। তাই মনুয়া চুপ।
আবার কাজে লেগে পড়ে। হাত আর চলে না মনুয়ার। কি কুক্ষণে যে বিনোদ কণ্ডাক্টরের পাল্লায় পড়েছিল কে জানে। বেশি টাকার লোভ। নানান কাজ করতে করতে বেশ শিক্ষা হয়েছে। দেখেছে শুধু না-কাজ আর না-কাজ। যে যত না-কাজে সে তত বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। কিছু হবে না, কিছু হয় না কারও। সব সেটিং।
একটু পরে রুনি ও মহুয়া উঠে যায়। পাশের ঘরে স্টোভে রান্না চড়ায়। আজ ডিম আলুর ঝোল। দরজায় টুং টুং টুং আওয়াজ হয়। মনুয়ার মুখ থেকে বেরিয়ে যায় – হারামি আসছে।
কেউ শুনতে পায় না। দেখতে পায় হারাধন। যা যা লাগে সব সাপ্লাই দেয়। রজত হিসেব বুঝিয়ে দেয়।
ঘণ্টা দুই পরে আবার টুং টুং। এবার বিশুয়া। গুনে গুনে তিন ব্যাগ ভরে নিল। আর রজতকে হিসেব বুঝিয়ে দিল। বলল – বাদ বাকী কাল।
ভোরের দিকে সবাই ঘুমিয়ে। মনুয়া সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে। গন্ধবপুর এখন কেমন আছে। শীতের শেষে চাষবাস। দোল উৎসব। মন্দির চাতালে শুয়ে আকাশ। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। এর চেয়ে জেলখানা ভাল। ফ্যান নেই। কোন জানলা নেই। শুধু টাটকা বারুদের গন্ধ।
অণুগল্পের কিছু অণু ভাবনা
এখন প্রায় সব পত্র পত্রিকায় বিশেষত লিটিল ম্যাগাজিনে গল্প কবিতা প্রবন্ধের সাথে অণুগল্পও লেখা হচ্ছে। ফেসবুক এবং ইপত্রিকাতেও অণুগল্প লেখা হচ্ছে। অণুগল্প নিয়ে কিছু বই আছে। এবং অনেকেও টিপস দিচ্ছেন। তার মাঝে আমার ক্ষুদ্র বক্তব্য।
অণুগল্পের মধ্যে যেহেতু গল্প কথাটি যুক্ত আমার মনে হয় যেভাবেই হোক আপনাকে গল্প পরিবেশন করতে হবে। গল্পটি স্পষ্ট প্রতীয়মান না হলে তা অণু তো হবেই না। অন্য কিছু হয়ে যাবে।
এই গল্প বলার প্রেক্ষিত ও বিষয়, ভাবনায় জারিত হয়ে একেবারে নির্যাসটুকু পাঠকের সামনে পরিবেশিত হতে হবে। অর্থাৎ গল্প আপনি কিভাবে বলবেন সেটা আপনার বিষয়। কিন্তু গল্প বা গল্প ভাবনা যেন স্পষ্ট হয়।
এই গল্প বা গল্প ভাবনা স্পষ্ট করার জন্য আপনাকে প্রথমে নিজস্ব বাঙ্ময় অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে হবে। ধরুন এখানে খুন হল। খুনের কারণ, প্রেক্ষিত, অবস্থান, ন্যায়, অন্যায় ইত্যাদি নানান ব্যাপার আসবে। তার মাঝে আপনার সরল অনুভূতি, আত্মভাবনা কি? তা স্পষ্ট করুন। তারপর সেই অনুভূতিকে ঘটনার বর্ণনা বা ভাবের আকারে না এনে গল্পের আকারে ভাবুন আর পরিবেশন করুন।
কিংবা ধরুন চুরি হল চোর ধরা পড়ল। কোটি কোটি চুরি করা স্যুট বুট তাকে মারছে। মেয়েটিকে বিপথে ঠেলে দিয়ে ধড়িবাজ সাধু সাজচ্ছে। এ রকম আরও কত কি? সবক্ষেত্রে আপনি শুভ বুদ্ধি ভাবনায় কলমে হাত দিয়েছেন। তাই এই সব ঘটনা তুলে ধরুন গল্পের আকারে কিন্তু ভাবনায় জারিত করে। যত বেশি ভাবনায় জারিত হবে ততটাই গল্পটি (কখনই ভাবটি নয়) অণুগল্প হয়ে উঠবে।
এর পর আছে উপস্থাপনা। কিভাবে পরিবেশন করবেন? পরিবেশনের গুনে ডাল আলুসেদ্ধ ভাতও অমৃত হয়ে যায়। অর্থাৎ যা আপনি বলতে চাইছেন তা কতটা স্পষ্ট করতে পারলেন। অনেকেই বলেন এখানে বেশি লেখার অবকাশ নাই তাই ধোঁয়াশা রাখা দরকার। আসলে তিনি স্বচ্ছ ভাবনা প্রস্তুত করতে পারেন নি। অণুগল্প লিখছি তাই যতটা সম্ভব অল্পেতে শেষ করা যায়।
তা কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই মান্যতা পায় না। যতই সেই সব ধোঁয়াশা লেখা বাহবা পাক। সাধারণের কাছে তা ব্রাত্য। ধোঁয়াশা কোন লেখাতেই না পসন্দ। সে কবিতা গল্প উপন্যাস যাই হোক না কেন। বর্তমানে কবিতার ক্ষেত্রেও দেখা গেছে শব্দের বাঁধন খুব সুন্দর। পড়তেও দারুণ। কিন্তু কি বলতে চাইছে তা কিছুতেই বোঝা গেল না। কোন সাহিত্য বা লেখা হৃদয়গ্রাহী হওয়া জরুরী। এই হৃদয়গ্রাহীতা উপস্থাপনার গুণে সঠিক ভাবনায় গড়ে ওঠে। তাই উপস্থাপন করা আপনি শিখে যাবেন যদি ভাবনা গল্পের আকারে স্পষ্ট করেন।
কেন না আপনাকে যদি কেউ বলে, ভাই ওদিকে কি হয়েছে? এত গণ্ডগোল কেন? আপনি সেই অবস্থান দেখে এসেছেন। তাই উত্তেজনার মুহূর্তে আপনি যতটা সংক্ষেপে পারবেন নিশ্চয় বলবেন। ধাপে ধাপে বর্ণনা নিশ্চয় করবেন না। গল্পের মত বলার সুযোগ পাবেন না। আবার আপনার নিজস্ব উপলব্ধিও নিশ্চয় রাখবেন। হাতি ঘোড়া গাছ পালা গরু ছাগলের বর্ণনা দিলে কেউ শুনবেও না। সেখানে আপনাকে সব বলতে হবে অথচ অতি সংক্ষিপ্ত। যাতে গণ্ডগোল সম্পর্কে প্রশ্নকর্তা সম্যক উপলব্ধি করতে পারে। আবার ঘুরে জিজ্ঞাসা করার সুযোগ পাবে না। এবং সেটাই অণুগল্প।
আর একটা ব্যাপার সেই গণ্ডগোলের অবস্থান আপনি যদি সঠিক নিরীক্ষণ না করেন তাহলেও ঠিক করে প্রশ্নকর্তাকে বোঝাতে পারবেন না। তাহলে যে কোন বিষয় সম্পর্কে আপনি যতবেশি ওয়াকিবহাল হবেন ততটাই আপনি গল্প লিখতে পারবেন এবং সেই গল্প (বর্ণনা নয়) ভাবনা ও উপলব্ধিতে অণুগল্প হয়ে উঠবে।
আর উপস্থাপন করতে একটা ঘাত বা মোচড় দেওয়া খুবই জরুরী। সেটা আগেও ছিল। এখনও আছে। যত বিখ্যাত গল্প উপন্যাস আছে সবেতেই এই মোচড় বা ঘাত পাঠকের কাছে দারুণ উপজীব্য। কোন মোচড়বিহীন রচনা অনেকটাই ম্যাড়ম্যাড়ে। এই ঘাত বা মোচড় পরিস্থিতির উপর লেখকের সঠিক নিরীক্ষণ ও বলিষ্ঠ অভিজ্ঞতার রূপায়ন।
একই ঘটনার বিভিন্ন দিক। কোনদিকে আপনার অবস্থান সেটা নিজেকে ভাবতে হবে। আবার সবদিকও হতে পারে। কেন না নিরপেক্ষও একটা দিক। এই নানান দিকের মধ্যে আছে হ্যাঁ-গল্প, না-গল্প, না-হ্যাঁ-গল্প এবং শুধুই গল্প আছে। আপনি ঘটনার অবস্থান ও স্পষ্ট দিশাকে গল্পের আকারে( কখনওই ঘটনার বর্ণনা নয়) ভাবুন, লিখুন আর আমাকে বোঝান যাতে আমি পাঠক যেন ঘুরে প্রশ্ন না করে ভাবতে ভাবতে নিজেকে ভাবাতে পারি। তাহলে দেখবেন উপরের যে কোন একটি গল্পে আপনার বিষয়টি দাঁড়িয়ে গেল।
আমাকে আপনি যতটা ভাবাতে চাইছেন তার চেয়ে দশগুণ বিশগুণ একশগুণ নিজে লেখক হিসেবে ভেবেছেন তো? অবস্থানের মাত্রা নিজের কাছে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে তো? তাহলে নিশ্চয় আমি সেই রসে আরো জারিত হব।
তখন দেখবেন গল্প আর শুধু গল্প থাকল না। আরো অনেক দিকে ছড়িয়ে পড়ল। এবং হয়ে গেল অণুগল্প।
অনেকেই ধোঁয়াশা রেখে উহ্য ভাসা ভাসা অবস্থানে পাঠককে ছেড়ে দিতে চাইছেন। এবং তাকেই অণুগল্প বলে বাহবা পাচ্ছেন এবং বাহনা নিচ্ছেন। বলছে পাঠক ভাবুক না। তার মানে লেখক নিজেও সঠিকভাবে ভাবে নি। অণুগল্পে আমি সিদ্ধহস্ত। অতএব কোন কথা হবে না। পাঠকও বিভ্রান্ত। ভাবে, তাই হবে বোধ হয়।
গল্প ভাবনার ক্ষেত্রে যা সঠিক নয়। অণুগল্পের ক্ষেত্রে তো নয়ই।
সহায়
তিন দিন ধরে অজ্ঞান ঋতু।
পাঁচ বছরের ঋতুর জন্য সরকারী হাসপাতালের সামনে জমায়েত হয়েছে সারা শহর। প্রত্যেকের মনে বারুদের স্তুপ। ঋতুর শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সেই বারুদের স্তুপের “ট্রিগার” কাঁপছে।
চাপ একটু বেশী হলেই…..
দু’বেলা ডাক্তার বাবুর একই বক্তব্য:
“আমরা চেষ্টা করছি। পরিস্থিতি আয়ত্বে। আপনারা ধৈর্য্য হারাবেন না।”
ডাক্তার এলেই সবাই এমনই কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকে। কিন্তু আজ ঋতুকে পরীক্ষা করে ডাক্তার বাবু কোন কথা না বলে, মাথা নীচু করে সোজা বেরিয়ে গেলেন।
—————————————————————
একটু পড়াশুনা জানা উদ্বিগ্ন ঋতুর কাকা মিলন বাধ্য হয়ে পেছন থেকে হাঁক পাড়ল – ও ডাক্তারবাবু, ডাক্তারবাবু। কিছু একটা বলুন।
এত হাঁক ডাকে বাধ্য হয়ে পেছন ফিরে দাঁড়ালেন ডাক্তারবাবু। বললেন – আপনারা এখানে অপেক্ষা করুন।
সবার মধ্যে শুরু হয়ে গেল গুঞ্জন। একটু পরে আরও দুজন ডাক্তারসহ ডাক্তারবাবু আবার ঋতুর কেবিনের দিকে।
মিলন আবার বলল – ডাক্তারবাবু।
ডাক্তারবাবু বাঁ হাত দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল। আবার গুঞ্জন।
– মনে হয় ঋতুর কিছু একটা হয়ে গেছে।
– কিছু একটা হয়ে গেলে আমি কিন্তু হাসপাতালকে ছাড়ব না।
– কদিন অপেক্ষা করলাম। আর নয়। যারা এ রকম করেছে সেই পাঁচজনও ছাড়া পাবে না।
মিলনও মুখ খুলল – সরকারি ব্যবস্থার উপর আমাদেরও ভরসা রাখতে হবে। হাসপাতাল, আইন, প্রশাসন, পুলিশ সবাই তৎপর আছে।
– সেই জন্য লোকগুলো বেঁচে গেল। না হলে….
এমন সময় ডাক্তারবাবু বেরিয়ে এলেন। বললেন – ঋতু চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে। জ্ঞান ফিরবে।
সবাই উল্লাসে আত্মহারা হয়ে পড়ল। মিলন সবাইকে বাইরে নিয়ে গেল।
খবর ছড়িয়ে পড়ল বাতাসে। বারুদের তেজ কিছুটা কমল। তবে আইন আদালত ভরসা জনগনকে প্রশাসন মুখ ফেরাতে পারল না।
অথৈ
গত কয়েকদিন ধরে সলিল যেন অন্তঃসলিলে হাবুডুবু খাচ্ছে। সামনে কলেজের ফাইনাল। কিছুতেই পড়াতে মন বসছেনা। এদিকে-
ইতিরও মাধ্যমিক। সারাক্ষণ হাজার প্রশ্ন। আকাশের গুমোট ভাবটা অস্বস্তি বাড়িয়েই চলেছে। কলেজের নোটবইটা সামনে। কলজের ধুকপুকুনিটা গগনে।
“মা…. বৃষ্টি এসেছে।”
ইতির ঘোষণায় পড়িমরি করে সলিল বাইরে বেড়িয়ে এলো।
-দাদা বৃষ্টি এসেছে। আর তুই জানলা বন্ধ না-করে এখানে কি জন্য?
মাথাটা নিচু করে সলিল ফিরে গেল।
——————————————————–
এছাড়া আর উপায় কি? ইতিটা খুব পাজি হয়েছে। নিশ্চয় আন্দাজ করেছে গাছের ফাঁক দিয়ে সামনের জানলার সাথে সলিলের ভালই ইশারা চলে।
এই ইশারার বাইরে সলিলের সাথে ওই জানলার মিতুন পাঁচ ছয়দিন আগে (সলিলের মনে হয় যেন আজ অথবা কাল) এক ছাতার তলায় ছিল। তারপর ছাতা উড়িয়ে দিয়ে ভিজেছে। গায়ে গা লেগেছে। চুমুর গভীরে আরও অনেক মণি মুক্তো পেয়েছে। এসব ইতি জানে না। কিন্তু সলিল অথৈ সলিলে।
নিজের ঘরে ফিরে আসে সলিল। আবার নোটবইয়ে ঢোকার চেষ্টা করে। কম্পিটিশনের বাজারে পরীক্ষায় ভাল করতেই হবে। কিছু তো লিখতেই হবে। ওদিকে বাইরের বৃষ্টির ঝমঝম মাথার মধ্যে। সে যে মিতুনকে সাথে করে কত রকমের অনুভূতির সাগর আঁকছে। সলিলের মন সেই সাগরে ডুবছে আর ভাসছে, ভাসছে আর ডুবছে।
ইতি হাতে বই নিয়ে টোকা মারে – দাদা, ভালই হল আজ কোথাও বেরনো নেই। শুধু খিচুড়ি আর ডিম ভাজা। দাদা, পার্থেনোজেনেসিস কি?
এমন সময় ফোনে ভাইব্রেশন। ভলিয়ম জিরো থাকে, তাই।
ফোনটা বাঁ হাতে সরিয়ে সলিল জবাব দিল – যা ভাগ এখান থেকে। বই আছে নিজে পড়ে নে বুঝে যাবি।
মুখ ভেংচে ইতি চলে গেল। বলে গেল – যাই, জানলা খুলে একটু বৃষ্টি দেখি।
আবার মন ছটপট। সলিল দেখল ফোনে ম্যাসেজ। মিতুন লিখেছে – আজ হল না। কালকে কিন্তু ভিজব। বৃষ্টি হোক না হোক। মেঘ শুভেচ্ছা
বাঁচতে চায়
অনেক ভেঙেছো ভাই আর তো ভেঙো না
যতটা ভাঙছো তুমি তোমার পাওনা
দাম্ভিক গড়নে তাই ফিরবে ভাঙন
যন্ত্রণা লিখেই রাখে হৃদয় জ্বলন।
মানুষ চিহ্নিত কেন জাতপাত মাথা
প্রাণের ধ্বংস ইন্ধন গেয়ে যায় গাঁথা
শান্তির শ্লোক ভাষন ধর্মের বিকৃতি
পৃথিবীর অধিকার না-মুখ আকৃতি।
বাড়ানো হাতে সাহায্য নাই কোন ঢপ
পাশের জন পথিক বাঁচা করে জপ
অস্ত্রের হাতলে তুমি নিজে মৃত্যু লিখে
জয়োল্লাস কেন কর ধর্মান্ধতা শিখে?
ভাঙনে গড়ন তুমি মানুষের জাতি
নিজ পরিচয়ে ভাই, করো না বজ্জাতি।
আমার এ গ্রাম
ওই দূরে পাহাড়ের গায়
কুয়াশা বিছানা পেতে ঘুমায়
পাশে কুলুকুলু নদী বয়ে যায়
আমার গ্রামটি আকাশের সেই সীমানায়।
শান্ত কুটিরে জেগে ওঠে প্রাণ
রবির কিরণ করে তারই আহ্বান
সবুজ হৃদয় ভরা মাঠ সম্মান
তারই মাঝে গ্রামখানি গায় জয় গান।
মেঘের রৌদ্র খেলায় প্রকৃতি উদার
আমার এ গ্রামখানি শুধু প্রাণের বাহার।
খাদ্যের কিছু জীবন অভ্যাস
মানুষের জীবন লোভের ভাণ্ডার। যত পায় আরও চায়। সন্তুষ্টি তার জীবনে সাময়িক। তবু সুস্থ থাকার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা উচিত। বিশেষ করে বয়স যখন চল্লিশ পেরিয়ে যায়।
১। সবসময় পরিমিত আহার করা উচিত। পেট ভরে খাওয়া চলবে না। অর্থাৎ পেটের কিছু অংশ খালি রেখে দেওয়া উচিত। কেন না আমরা বেশিরভাগ খাওয়ার খাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। সেই খাওয়ার হজম হলেও শরীরে তা শুধু জমা হয়। জমার পরিমাণ বাড়ছে কমছে খরচ। ফলে সুগার, পেশার, ওজন বেশি, ভুঁড়ি বাড়া হার্টের রোগ ইত্যাদি নানান রোগের বাসাও তৈরি হচ্ছে। অর্থাৎ যত জমা তত রোগের আমন্ত্রণ।
২। নিয়মিত শরীরকে কাজে লাগানো দরকার। সকালের মর্নিং ওয়াক। সম্ভব না হলে নিজের কাজের প্রেক্ষিতে হাঁটাচলা করা। প্রতিদিন কিছু না কিছু হাঁটা দরকার। হাঁটার চেয়ে বড় ব্যায়াম কিছু নেই। শারীরিক কসরত যোগব্যায়াম খেলাধূলা ইত্যাদি করতে পারলে তো ভালই। কিন্তু যদি এগুলো সম্ভব না হয় তাহলে শুধু হাঁটা। সকালের শীতল ছায়ায় কিংবা বিকেলের মৃদু মন্দ হাওয়ায় শুধু হাঁটা। হাঁটলেই আপনার শরীরের সমস্ত অঙ্গ প্রতঙ্গের নড়াচড়া হয়। জোরে হাঁটা বা দৌড়নো নয়। শুধু হাঁটা। এতেই আপনার শরীরের জমা খরচ হবেই। তার মানে আপনি যদি সুস্থ থাকতে চান তাহলে অবশ্যই হাঁটবেন। হাঁটতে ভয় পাবেন না।
৩। যেখানেই যান না কেন সাথে জল এবং শুকনো খাবার (যেমন বিস্কুটের প্যাকেট) ক্যারি করবেন। জল আমাদের দেহের বাহক। অর্থাৎ আমরা যা কিছু খাবার ইনটেক করি তার অপ্রয়োনীয় বাইরে বের করতে এই জল কার্যকরী। জলে যদি ক্রমাগত অশুদ্ধি থাকে বা কম খাওয়া হয় তাহলে শরীর সচল রাখার জন্য দেহজ জমা রাখা ও খরচ করার সুনির্দিষ্ট কাজ ব্যহত হয়। অর্থাৎ রাস্তায় চায়ের দোকান বা অজানা সোর্স থেকে জল না খাওয়াই ভাল। ঘরের জল ক্যারি করাটাই সবচেয়ে বেটার। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুসারে – অ্যালোপ্যাথি হোমওপ্যাথি, হাইড্রো(জল)প্যাথি ইজ দ্যা বেস্ট প্যাথি।
৪। প্রতিদিন কোন না কোন ফল খাবেন তবে তা কোনকিছু খাবার খাওয়ার পর। একেবারে পরিমিত। একটা কি দুটো। চেষ্টা করবেন দুপুরের আগে খাওয়ার। ফলের কার্যকারিতার মাপকাঠি এভাবে করা যেতে পারে – সকালে ফল খেলে সোনার মত উপকারিতা, দুপুরে খেলে রূপোর মত, আর রাতে খেলে লোহার মত উপকারিতা পাবেন।
৫। বহুল প্রচারিত খাওয়ার দু ঘণ্টার মধ্যে ঘুমোবেন না। ঠিক। তবে ঘুমোবেন রাত এগারোটার মধ্যে। কোনভাবে রাত জাগার কোন প্রয়োজন নেই। যারা রাত জেগে ডিউটি করেন তাদের কথা আলাদা। না হলে রাত জাগার কোন মানেই হয় না। যে কোন কাজ আপনি রুটিন পরিবর্তন করে দিনে করার চেষ্টা করতেই পারেন। আর একটা কথা সময় থাক বা না থাক দিনে বিছানা পেতে আয়েশ করে কখনই ঘুম নয়।
বেশির মানুষ বলে নানান চিন্তা কি করে ঘুম আসবে? এটা কথাটাই ঠিক না। তিনটে জিনিস কাওকে জোর করতে হয় না বা জোর করবেন না। প্রত্যেকে নিজের তাগিদে এবং ভাল থাকার প্রয়াসে সেই তিনটে কাজ করে অথবা করতে পারে। খাওয়া, ঘুমানো, আর মলত্যাগ। খাও খাও, ঘুমাও ঘুমাও, যাও যাও। বলার কোন দরকার নেই। এগুলো কেউ আটকে রাখতে পারবে না। প্রথমেই বলেছি মানুষ প্রয়োজনের অতিরিক্ত খায়। ফলে জোর করা মানেই বিড়ম্বনা। শরীরকে খাটাবেন তবেই ঘুম আসবে। শরীরকে বিশ্রাম আর আয়েশের মধ্যে রাখলে ঘুম আসবে না। অনেকেই দুপুরে একটু গড়িয়ে নেন। আর রাতে জেগে থাকেন। একটা নির্দিষ্ট রিদমে শুধু রাতে নির্দিষ্ট সময়ে রোজ ঘুমোতে গেলে ঘুম আসবেই। ফলে জোর করার দরকার নেই। আর ঠিক একই রকম ভাবে সকালের প্রাতকৃত্য পাক না পাক রোজ করবেন। রিদমে তা ফলপ্রসূ।
৬। সবার সব কিছুই খাওয়া যায়। খাওয়াতে খুব একটা বারণ নেই। কিন্তু অবশ্যই পরিমিত। চল্লিশ পেরিয়ে গেলে আপনি গ্রহণীয় খাবার হজম হয়তো করতে পারবেন কিন্তু খরচ করতে পারবেন না। এই খরচ করার মত প্রয়োজনীয় সার্মথ্য কিন্তু আপনার কমতে থাকবে। তাই গ্রহণও কমিয়ে দেওয়া উচিত। এবং কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে খাওয়া উচিত। যেমন ফার্স্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংস পুরোটাই জমার খাতায়। সব বয়সের ক্ষেত্রে যতটা খাবেন পুরোটাই জমা। খরচ নাই। কম বয়সে যদিও বা কিছু খরচ করা যায় পরে আর তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৭। সবাই প্রায় নেশা করে। এই নেশা পরিমিত হোক বা অপরিমিত সবটাই কিন্তু বিড়ম্বনার। চল্লিশের পরে এই ইনটেক নেশা সবটাই বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে যায়। এই বিড়ম্বনার আবার দুটো দিক। এক আপনার শারীরিক বিড়ম্বনা আর দুই আপনার পারিবারিক বিড়ম্বনা। অনেক সময় এর ফলে আপনি দিব্যি হাসপাতালে আর দৌড়াদৌড়ি বাড়ির লোকের। হয়তো সবক্ষেত্রে নয় কিন্তু কিছুটা তো এর জন্য দায়ী। তার মানে আপনার কার্যকারিতা অন্যের ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে। নেশা থেকে বেরিয়ে আসার দুটো রাস্তা। এক না ঢোকা। দুই নিজেকে ভাবা ও পরিবারকে ভাবা।
৮। দিনে যতবার খাবেন মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাবেন। আধঘণ্টা এদিক ওদিক হতে পারে। কিন্তু সেটা যেন দুই তিন ঘণ্টা পেরিয়ে না যায়। মাঝে মধ্যে হয়তো নিয়ম ব্রেক হল হতেই পারে, কিন্তু সেটাই যেন নিয়ম না হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের শরীরও একটা রিদমে চলে। বিপাক ক্রিয়ার জন্য নিসৃত রস নির্দিষ্ট সময়ে নিসৃত হয়। সে যদি খাবার পেল তো ভাল না পেল তো মাংসপেশী হজম করতে শুরু করল। তাই প্রতিদিন মোটামুটি নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া উচিত।
৯। এই খাওয়ার দাওয়ার অভ্যাসের উপর আরো অনেক কিছু নির্ভরশীল। যেমন বদহজম, গলা বুক জ্বালা, পেট ব্যথা, অরুচি ইত্যাদি নিয়মিত সমস্যা থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্যান্য পেটের রোগ থেকে রেহাই সম্ভব। আর রোগ সৃষ্টি থেকে দূরে থাকা আর তার মোকাবিলা করার প্রধান ও সহজ রাস্তা হল পেট পরিস্কার রাখা। পেট সুস্থ রাখা। মুখ থেকে পায়ূ পর্যন্ত যে নালী বা ড্রেন তাকে যে যতটা পরিচ্ছন্ন রাখতে পেরেছে সে তত বেশি সুস্থ।
১০। সবাই জানে ভাল থাকার পাশওয়ার্ড হল যতটা সম্ভব মুখ বন্ধ রাখা। সে বলার জন্য হোক আর খাওয়ার জন্য। বেশি বলা মানে বিড়ম্বনা, বেশি খাওয়া মানেও বিড়ম্বনা। খোলা রাখুন চোখ কান ইত্যাদি। সে সমস্ত থেকে ইনপুট সমূহ মস্তিষ্ককে সার্ফ করে তোলে। আর মুখ খোলা অতটা অগ্রবর্তী করে তুলতে পারে না। পুষ্টিকর সুষম খাওয়ার বুদ্ধির বিকাশ ঘটায় কি? ঘটায়। পরিমিত আহারে। অতিরিক্ত নয়। ঠুঁসে দিতে তোতাপাখির মত জ্ঞান গ্রহণের মৃত্যু।
পাড়ায় পাড়ায়
রাত প্রায় দু’টো।
রবীন্দ্র সরণী ধরে খালি পায়েই রিক্সাটা নিয়ে ছুটছে সুবল। আজ এই…….
সামনে যমদূত। থমকে যায় সুবল।
-থাম্ শ্শশালা নেমখারাম! এই বয়সেও মাগী দেখলেই…….আহ্!!!!!!!!
না। আর কথা বলতে পারেনি সোনাগাছির গুণ্ডা মদন সিং।
সুবল দেখলো একটা ছুরি মদনের বুকে আমূল গেঁথে গেছে।
কে মারলো ছুরি………?
যদিও সুবল এ দৃশ্য আগেও দেখেছে, তবুও আজ ঘামছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আরও গতি বাড়িয়ে দিল। হারামি মদন প্রতিটি ব্যাপারে হিস্যা নিত। কোন কথা শুনত না। তবে কিছু মেয়ে মদনের জন্য বেঁচে গেছে। ভোট এলেই এই মদনের দ্বিচারিতা শুরু হয়ে যায়। তখন হল্লা পড়ে যায় এ পাড়ায়। বখরা শুরু হয় উৎসবের মত। সুবলের রিক্সা তখন ব্যস্ত সমস্ত। মানুষের মিছিল, মানুষের লাশ, মানুষের বখরা বয়ে বেড়ায়। রোজগার বাড়ে।
মদনের মাথায় হাত আগে ছিল গাজীনাথের। এখন নয়নার। ইদানিং নয়নার ঘন ঘন যাতায়াত। মদনের সঙ্গে খেঁচামেঁচি লাগে। সেই দৌলতে সুবলের সংসার চলছে। তবে ভেসে গেছে প্রেম। কি আর করা যাবে!
একটু এগিয়ে দেখে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নয়না লালবাতি গাড়ির পাশে ফোনে বলছে – পুরো শেষ করে দে। এ রক্ত যেন আর বীজ বুনতে না পারে। বাদবাকী আমি দেখে নেব।
রিক্সা নিয়ে সুবলকে দেখে চিৎকার করল – এই শশালা, চামচা শশালা। দাঁড়া।
সুবল দাঁড়াল। বলল – খদ্দের আছে, বাসায় ছেড়ে দিয়ে আসছি।
তক্ষুণি পাশ দিয়ে ঢুকল পুলিশের গাড়ি। সবাই ছুটে গেল সেদিকে।
পরদিন সুবল দেখল পাড়াটা সেই আগের মত। যেমন চলে তেমন চলছে।
প্রেমের সাথে প্রেমের পথে
প্রেম নিয়ে দু চার পংক্তি। প্রেম কি আসে? নাকি প্রেম করতে হয়? নাকি প্রেম হয়ে যায়?
এর পরের প্রশ্ন প্রেম করার, প্রেম হওয়ার বা প্রেম আসার বয়স মাপকাঠি ঠিক কি? অর্থাৎ যারা ম্যাচিওর পঁচিশ তিরিশ বছরের পরে বা নিজের পায়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে যাদের প্রেম আসে বা হয় তাদের বেলায় এক রকম। আবার যাদের বয়স তার নীচে তাদের প্রেম আসা বা হওয়া কতটা নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে সামাজিকতা বহন করে?
এর পরে প্রেমের আসা, প্রেমে পড়া বা প্রেম করা কি সত্যিই আকস্মিক? ওই যেমন সিনেমায় দেখায় ও এলেই গরমেও মধুর বাতাস বয়, ভিড় বাসে মনে হয় আকাশে উড়ছি, রাতে পছন্দের খাবার না পেলেও অমৃত মনে হয় – এ সব কি সত্যিই হয়? ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে।
কি কথা? এসব আদ্য প্রান্ত সত্যিই মনে হয় তখন সেক্সচুয়াল টান অবধারিত হয়ে যায়। অর্থাৎ স্পর্শ সাপেক্ষ দুই দেহের সংযোগ। অল্প সংযোগ পূর্ণ মিলনের অদম্য আগ্রহে উপরের সমস্ত অবস্থানের জন্য ছটপট করে। তার ফলে বয়স পঁচিশের নিচে যে সব অবধারিত অবস্থান প্রয়োজন তা আর সম্পন্ন হয়ে ওঠে না। যেমন ক্যারিয়ার তৈরীর জন্য পড়াশুনা, নিজের মেধার শ্রীবৃদ্ধি ঘটানোর প্রয়াস সবই জলাঞ্জলি যায়। মনের মধ্যে সেই সব অনাগত আদিম গুঞ্জরিত হতে থাকে।
এর উপর আছে টিন এজ সমস্যা। যৌবন প্রারম্ভে হরমোনাল মানসিকতা উদ্দাম ছোটাছুটি করে। তার পুরোটাই কিন্তু বিপরীত অথবা দুই দেহের সংযোগ হওয়ার আপ্রাণ আগ্রাসী ভাবনা। প্রেমের জ্যোতি তার মধ্যে বিন্দুমাত্র থাকে বলে মনে হয় না। এই সংযোগ যদি সময় সুযোগে আরো গাঢ়তর হয় তখন প্রেমের অবস্থানের সূচনা হয়। ততক্ষণে অবশ্য মানুষ হিসেবে জীবনের রঙ্গমঞ্চে পরিচিতি হারিয়ে যায়। গড্ডলিকায় শুধু বয়ে যায়। যদিও বা কিছু করার বাসনা গড়ে ওঠে তা অনেক পরে নিজস্ব বোধ বুদ্ধি অবস্থানের পর্যায়ক্রমে।
অর্থাৎ পরিণত বোধের পরেই যে দুই দেহের মধ্যে মনের আদান প্রদান গড়ে ওঠে তাকেই প্রেম বলা যেতে পারে। রাধাকৃষ্ণ হীর রাঞ্ঝা সেলিম আনারকলি এসবই সেই সব জীবনের ফসল চিত্রকলা। রাধাকৃষ্ণ তো জন্মসূত্রেই বোধ সম্পন্ন।
আমাদের আশেপাশে শুধুমাত্র প্রেম সকল চিন্তাভাবনায় কত যে এই বোধহীন হারিয়ে গেছে, হারিয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। নারী পুরুষ বা দুই দেহের মন নাড়াচাড়ায় প্রেমের যে পূর্ণতা তা আকাশ অসীম অনন্তের ভাব প্রয়াস। সময় সুযোগ অবস্থান সংযোগ এবং তার অবস্থানিক বোধ পরিচালনায় প্রেমের উন্মুখ চিত্র। সিনেমার মত হুট করে ধাক্কা লাগল আর প্রেম হয়ে গেল – তা কখনই বাস্তবে হয় না। সদ্য যৌবন পা শুধুই ছলাকলায় ডুবে নাবিক কথামালা। পাড়ে পৌঁছতে পারে অথবা হারিয়ে যেতে পারে। বোধ পরিপূর্ণ এ রকম অনেক আছে যারা প্রেম করেছেন কি না জানি না তবে একটা ধরেছেন ছেড়েছেন আবার ধরেছেন আবার ছেড়েছেন এবং আবার তাও তারা প্রতিষ্ঠিত জীবনে ও মননে। সে নারী অথবা পুরুষ, যে কেউ।
কেউ বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলতে পারবে যে স্কুল লাইফে চুটিয়ে প্রেম করেও স্কলার ফেলোসিভ বা সর্বোচ্চ হতে পেরেছেন? তাহলে এই স্থিতি সীমান্তে প্রেমের ভূমি রাজ্য কি? বোধ পূর্ণতা পর্যন্ত অনেকেই নিজেকে আয়ত্বে রাখতে পারে না। অন্য এক দেহের খোঁজে হন্যে হয়ে ফেরে। এই খোঁজার মাঝে যদি সদ্য যৌবন তা পেয়ে যায় তাহলে সোনায় সোহাগা। তবে তা বিপরীতমুখী। জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়ার অনুকুল।
ভাবনার বিষয় তাহলে শুধু প্রেম কি দেয়? আর কি পায়? জৈবিক চাহিদার অজৈবিক পার্থিব অবস্থানে? এর পরে আছে বৈধ আর অবৈধ প্রেম। বৈধ অর্থাৎ সবার সামনে বুক ফুলিয়ে সমাজ সংসারকে সামনে রেখে। যেমন বিয়ে এই জাতীয় অবস্থান। আবার লুকিয়ে। কেউ যেন জানতে না পারে। সবাই গানটি জানে ‘গোপন কথাটি রবে না গোপনে’। প্রকাশ্যে আসবেই আজ কাল কিংবা পরশু। কিন্তু তবু অনেকেই মনে করে কিছু হবে না চল, প্রেম ঘুরে আসি থুড়ি প্রেম করি। কেউ জানতে পারবে না।
যতদূর জানি প্রেমের এই কোন লুকানো ঝুকানো ধরা পড়েছেই। টিন এজ এই অবস্থানে ঢুকে পড়ছে প্রেম রহস্যে। ফলে নিজস্ব কেরিয়ার বৃত্তিতে তারা নিজেদের হারিয়ে ফেলছে। বোধ না জন্মানো বড়দের মত হওয়ার প্রেম নেশায় কত অকাল হয়ে যাচ্ছে তার ইয়ত্তা নেই। তাকে রোধ করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সবার। আমাদের বড়দের। পাশে থাকা, বুঝতে শেখা, বুঝিয়ে বলা ও নিয়মিত টিন এজের মত হওয়া। টিন এজ মেধা যা পড়াশুনার মাধ্যমেই বিকশিত হয়। তার সাথে মানবিক বোধ আহরণ করতে শেখে।
ঠিক সেই সময় প্রেমের নেশা যা পারিপার্শ্বিক অবস্থান ও বিনোদন থেকে দেখে শেখে এবং সদ্য তাই তাকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করে। ফলে মেধার অপচয় ঘটে যায়। তাকে রোধ করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
বোধ পূর্ণতা প্রেম জীবনে স্বাগত। আনন্দম।
নির্মিত নির্মাণ
সত্যিই কি আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম? তা তো নয়। সেই তো এগিয়ে এসেছি নিজস্বতায়। কত বোকা বোকা প্রশ্ন করত সবাই। এমন কি স্যারেরা। রচনা বইতেও দেখি – বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও? Aim in Life।
আরে বাবা আমি জীবনকে কতটুকু চিনি সেই বয়সে। শখ তৈরি করতেও তো বোধ লাগে। সেই বোধের জন্ম দিতে হলে চাপ তো নিতেই হয়। অথচ আজ ফিয়াট থেকে শহরটাকে অন্য রকম লাগছে।
শুধু পড়ার জন্য বাবা নিজেকে বদলী করে এই শহরতলিতে আস্তানা গেড়েছিল। সকাল সন্ধ্যে শুধু পড়া আর পড়া। বাবার সেই পড়া খেলায় আমি নির্মাণ হতে চাইছিলাম না। ঘুম চোখে উঠে স্কুল। তার পর দৌড় দৌড়। বাস ধরে টিউশন ক্লাস, ফিরে এসে পড়া আর একটু আধটু টিভি গেম শো আর নেট। এভাবে জোর করে তুলে দিয়েছিল মেডিক্যাল কলেজের ছাদে।
অথচ আমি এটা হতে চেয়েছিলাম ওটা হতে চেয়েছিলাম। নিজের মনে নিজে হতে চেয়েছিলাম। আজ মনে হয় সে সব বোকামি অথবা হয়তো বা সঠিক। তবু আজ তো তৃপ্ত। ছেয়ে আছে রাস্তা জুড়ে। আজই তো একজন বলল – বাবু, আমার মেয়েটা আবার হাঁটাচলা করছে। আগের মত স্বাভাবিক।
অথচ এই তো দিন দুই আগে আমার প্রিয় বন্ধু যে নিজস্ব পছন্দে এগিয়ে, সেই নবনীত ফোন করেছিল – না রে, কোন মতেই নির্মাণের আকাশ ছোঁয়া ছুঁতে পারছি না। যা করছি দু চার দিন পরে আরো বেশি আরো ভিন্ন কিছু চাইছে। এভাবে কি সম্ভব? চাহিদার তৃপ্তি যেন দেশছাড়া। আমিও দেশছাড়া।
ঘরে ঢুকে মাকে বললাম – ঠিক মত ওষুধ খেয়েছো? বাবা তৃপ্ত হাসিতে উত্তর দিল – খেয়েছি বাবা।
আমি উর্নিশ। আমি চললাম আমার ঘরে। হোম থিয়েটার অপেক্ষা করছে।