দীপঙ্কর বেরা এর সকল পোস্ট

দীপঙ্কর বেরা সম্পর্কে

আমি বাংলা ভালোবাসি। বাংলাকে ভালোবাসি।

প্রেমের নীরবতা

নীরব স্রোতে যে নদী বয়ে যায়
সেও তো মেশে সাগরের মোহনায়
যে ফুল ফোটে ঝোপেঝাড়ে অনাদরে
তাকেও ভ্রমর খুঁজে নেয় পরম আদরে
একা একা ওড়ে যে পাখি আকাশ সীমানায়
তার জন্যও ছোট্ট নীড়ে থাকে কেউ অপেক্ষায়
যে ঢেউ আলতো ছোঁয়ার খেলা করে সমুদ্রের বুকে
সেও সংগ্রামী জীবনের পালতোলা নৌকোতে থাকে সুখে।

চোখের ভাষায় চোখ পড়ে যায় হৃদয়ের কথা বলা
পায়ে পায়ে একসাথে দুজনের চলছে আজও চলা
কর্মের প্রত্যয় জুড়ে রেখেছে হাতে তার হাত
দিগন্তে মিশেছে সূর্য-রঙ তাই এসেছে প্রভাত
সবুজ ছাপিয়ে অবুঝ, ফুটেছে তাই ফুল
প্রেমের সাক্ষী সময়, করে নি কোন ভুল।

সাম্যের কবি নজরুল

আমি মায়ের মুখে প্রথম শুনি ‘ভোর হোল দোর খোলো খুকুমণি ওঠ রে’। ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসতে হত।
তারপর স্কুলে ‘বাবুদের তালপুকুরে হাবুদের ডাল কুকুরে’ এবং ‘কাঠবিড়ালী কাঠবিড়ালী পিয়ারা তুমি খাও’ শুনে মনটা একেবারে ফ্রেস হয়ে যেত।
এরপর উঁচু ক্লাসে একদিন স্যার বললেন – তোমাকে ‘কুলিমজুর’ কবিতাটি কাল সকালে প্রার্থনা শেষে আবৃত্তি করে শোনাতে হবে। গ্রীষ্মকালে সকালের স্কুলে হত। সেখানে প্রার্থনা শেষে ছাত্রছাত্রীদের যে কোন একজনকে গান কবিতা প্রবন্ধ ইত্যাদি শোনাতে হত।
সবার সামনে আমার সেই প্রথম নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করা আর কবি নজরুলকে বুঝতে শেখা। স্কুলের বইয়ে ছিল ‘ একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’। কবিতাটির সরলার্থ বোঝাতে কেঁদে ফেলেছিলেন বাংলার শিক্ষক গগনবাবু।
একটা কবিতা জাতপাতের ঊর্ধ্বে কিভাবে মানুষকে একত্র করতে পারে তা এ কবিতা আত্মস্থ করতে না পারেল বোঝা যাবে না। অনেকেই বুঝতে চায় নি নজরুলের সেই হৃদয়ের বাণী। তাই গগনবাবু নজরুলের ভাষায় আমাদের ক্লাসে বলেছিলেন ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোনজন? কাণ্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মা’র!’
সেদিন যতটা না আত্মস্থ করতে পেরেছি বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আরও বেশি করে অনুভব করি। নজরুলের মত, আমাদের বাংলার স্যার গগনবাবুর মত, হয়তো বা আমার ক্ষুদ্র অনুভবের মত অনেকেই কাঁদছে।
আমার সেই নজরুল ভাবনায় নিজে যখন নিজের কাছে পরাজিত হয়ে যাই, জীবন পথের রাস্তা খুঁজে না পাই তখন একবার মনে মনে কিংবা একা ঘরে কিংবা খোলা ফাঁকা মাঠে উদ্দাত্ত কণ্ঠে বলি
বল বীর –
বল উন্নত মম শির!
শির নেহারি আমারি, নত-শির ওই শিখর হিমাদ্রির!
বল বীর –
কিংবা
চল চল চল
ঊর্ধ্ব গগনে বাজে
নিম্নে উতলা ধরণীতল
চল চল চল।
এর চেয়ে প্রাণোচ্ছল ভাষা আর কি হতে পারে? নিজেকে নিজে জাগিয়ে তোলার মন্ত্র আমি বুকের মাঝে বারবার ঝংকার দিয়ে জেগে উঠি। নিজেকে বাঁচার ‘বিদ্রোহ’, অন্যকে বাঁচিয়ে তোলার ‘বিদ্রোহ’ সুন্দরের প্রতিষ্ঠার ‘বিদ্রোহ’ এই ভাষা।
দুঃখু মিঞার দুঃখ জীবনী পার করে ‘বিদ্রোহী কবি’ নজরুল হয়ে ওঠা অধ্যায়ে নানান দিক উন্মোচিত। এই জীবনীতে মানুষকে জাগিয়ে তোলার সাহিত্য এবং বাংলা ভাষা সবার চেতনায় অমোঘ স্থান করে নিয়েছে।
এখন অনুভব করি এ শুধু লেখার জন্য লেখা হয় নি। হৃদয় মথিত এসব বাঙালি জীবনের সম্পদ।
‘শুকনো পাতার নুপূর পায়ে’ আমি তো গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি। ‘রাঙামাটির পথে লো মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশি’ যেন মাটির কথা বলে যায়। আর ধর্মকে এত কাছ থেকে বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম দেখেছেন যে তাকে বুকে ধারণ করে হৃদয় উৎসারিত বাণী কবিতা গানে উজাড় করে দিয়েছেন।
কবি নজরুল তাঁর লেখনী মানুষ হিসেবে, মানুষের কর্তব্য হিসেবে বার বার প্রতিভাত করেছেন। তাই ‘সাম্যের গান’ গেয়ে গেছেন হৃদয় নিকড়ে।
তিনি কোন জাতি ধর্ম দেশকে আলাদা দেখেন নি। মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখেছেন। বাঙালীর সত্ত্বাকে হৃদয়ঙ্গম করেছেন।
তাই কবি অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন ‘
ভুল হয়ে গেছে বিলকুল
সবকিছু ভাগ হয়ে গেছে
ভাগ হয়নিকো নজরুল।
এই ভুলটুকু বেঁচে থাক
বাঙালি বলতে একজন আছে
দুর্গতি তাঁর ঘুচে যাক।
দুই বাংলায় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে বিদ্রোহী কবি নজরুল তাই আজও রবীন্দ্রনাথের সাথে সমান মর্যাদায় উচ্চারিত।
যে কোন ভাষার প্রাণ ভ্রমরা ও ধারক সেই ভাষার সাহিত্য। সেই সাহিত্যের অন্যতম হল কবিতা। বাংলা ভাষায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এত প্রাচুর্য দিয়ে গেছেন যা বাংলা ভাষার অনন্য দিক চিহ্ন। প্রাণ থেকে উৎসারিত হয়ে পড়ে। বাংলা ভাষা খুঁজে পায় আপন মহিমান্বিত মর্যাদা। যা অসীম কাল অক্ষয় হয়ে থাকবে।
তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। মানুষের হয়ে কথা বলা। তাই তো তিনি সহজেই বলতে পারেন
“আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের।”
নেতৃত্বকে তিনি হুঁশিয়ারী দিয়েছেন ‘কাণ্ডারী হুশিয়ার”। যা বর্তমান সময় প্রেক্ষিতে খুব প্রয়োজন। দিশেহারা দেশ কাল জাতির প্রয়োজনে তাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে শুধু স্মরণ জন্মজয়ন্তী পালনে কিছু হবে না।
নজরুলকে বুঝতে হবে, হৃদয়ঙ্গম করতে হবে, সাম্যের গান মানুষের মধ্যে একাত্ম করে দিতে হবে তবেই বিদ্রোহী কবির প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি পরিপূর্ণ হবে।

বিশ্বাস চরিতার্থ

নিরাপদের দরজায় অজস্র ফুটো,
একটা বন্ধ করা দুদণ্ড
অন্যকে ত্রিভঙ্গ দাঁড় করিয়ে দেয়।
বিশ্বাসের বেড়ায় ঠেস লাগিয়ে
যেটুকু দিনযাপন,
তার পুরোটাই অধিকারের আস্ফালনমাত্র।
সৃষ্টির একমাত্র মূল্যায়ন
অনাদরের কামুক চরিতার্থ,
নৌকা ভাসিয়ে একা পুরুষদ্বীপ
যন্ত্রণার ঢেউয়ে আছড়ে ফেলে নারীকে।
যুগের যুপকাষ্ঠে বলিপ্রদত্ত
নারীর উচ্চারণ,
সমস্ত নাড়ীছেঁড়া দায়ভার ভুলে
একসূত্রে পৃথিবী গাঁথে নি মনুষ্য সমাহার,
মোড়ের মাথায় মেরুদণ্ড
ক্ষমতায় বড্ড তির্যক।
তাই কিছু পুষ্পাঞ্জলি গর্জে উঠুক
রমণীয় সন্তান সিধান্তে।

আঠারোর পথে

তুমি যতই হেঁচকা টান মারো
হাত আমি ছাড়ব না, প্রজন্ম।
আঠারোর আগমনে
বিপথ ছাড়া তুমি কিছু বোঝ না,
প্রলোভনের আকাশে যেটুকু সংবরণ
সে তো আমি ছাড়া কেউ বোঝাতে পারবে না।

যতই একগুঁয়ে জেদি মনোভাব
বাতিকগ্রস্ত ব্যাকওয়ার্ড আনকালচার অবহেলা দিক
জীবনের কাছে বিনোদন আকাঙ্ক্ষা কেঁদে মরুক
অধ্যবসায়ের আগামী মেরুকরণে
আমি হাতে হাত হয়ে থাকব
তোমাকে পথ চেনাতে
আমি আঠারোর পথে থাকব।

তারপর তোমার জীবন তোমার
আমি চিরায়ত কোন এক সংস্কার।

নীলপদ্ম

(অণুগল্প)
গাড়ি বাদ দিয়ে বাসে করে যাচ্ছে দিদিত। নিজের গ্রামে। তাও মা মারা যাওয়ার বছর দশেক পর। হাইরোডের ধারে আর আগের মত ধানক্ষেত, নযনজুলি, পুকুর প্রায় বিলুপ্ত। চোখ জুড়ানো তালের সারি গাছের পাহারা আর নেই। শুধু ইট কাঠ পাথরের চিৎকার।
জানলায় চোখ রাখে। মনটা উদাস হয়ে যায়।
হঠাৎ ছোট একটা পুকুরে দিদিত দেখে একটা নীলপদ্ম। বাস দাঁড় করিয়ে নেমে পড়ে দিদিত। পুকুরটার কাছে গিয়ে দেখে অনেক পদ্ম। ছোট বড়। পদ্মপাতার উপরে টলটলে জল। আর মাঝ পুকুর বরাবর উজ্জ্বল নীলপদ্ম। এদিক-ওদিক তাকাল দিদিত। কেউ কোথাও নেই। ধূ ধূ মাঠ। ঠায় রোদ। পাশ দিয়ে সাঁই সাঁই শব্দ করে একটার পরে একটা বাস লরি চলে যাচ্ছে।
দিদিতের কোন দিকে খেয়াল নেই। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে নীলপদ্মের দিকে। কোনদিন নীলপদ্ম হাতে নিয়ে দেখে নি। আজ সে স্বাদ পূরণ করতে চায়।
ছেলেবেলার সেই দামালপনা জেগে উঠল দিদিতের মনে। কতদিন সাঁতার কাটাও হয় নি। ঝাঁপ দিল পুকুরে।
সাঁতরে পুকুরের মাঝ বরাবর এসে দেখে, না কিছু নেই। সবই যেমন দেখে থাকে তেমনই পদ্ম আর পদ্মপাতা। সাঁতার দিতে দিতে এদিক ওদিক দেখল। না, কোথাও কোন নীলপদ্ম নেই। এ তো বড় একটা দীঘি। চারপাশে ধানক্ষেত। দূরে দূরে গ্রামের বাড়ি ঘর।
ওদিকে হাইরোডের ধারে গাছের ছায়ায় বেশ কয়েকজন। ওরা চিৎকার করছে – বাবু, এত বড় দীঘির মাঝখানে গেলি কেনে? পদ্ম তো পুকুরের ধারেও আছে। পদ্মবনে সাপ আছে। চলে আয়। চলে আয়।

খিদে

পৃথিবীতে এমন কোন মা আছে যে তার শিশুর কাঁদা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তারপর খেতে দেবে না হলে দেবে না? কেউ আছে?
আমার তো মনে হয় কেউ নেই।
তাহলে শিশু না কাঁদলে মা স্তন্যপান করায় না। কথাটা মা শিশুকে নিয়েই কি?
একটু সাধারণ মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত পর্যন্ত প্রতিটি বাবা মা আপ্রাণ চেষ্টা করে তার শিশুটি যেন আর কিছু হোক বা না হোক খাওয়ার কষ্ট যেন না পায়। এই ভাবনা ভেবে বেশিরভাগ বাবা মা শিশুকে খিদে কি জিনিস বুঝতেই দেয় না।
আজকালকার শিশুরা অনেকেই খিদে কি জিনিস ভাল করে জানেই না। বরং মুখে গুঁজে একটু বেশি একটু বেশি করে খাওয়াবেই।
ডাক্তারের কাছে কোন শিশুকে দেখাতে নিয়ে গেলে প্রথম আবদার – ডাক্তারবাবু, দেখুন সারাদিন কিছু খেতে চায় না। কিংবা ডাক্তারবাবু, এর জন্য একটা ভিটামিন বা হজমের ওষুধ লিখে দিন।
অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় সারাদিন শিশুটির খাওয়া নিয়ে ব্যস্ততা। ফলে শিশুদের খিদে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হয় না। তার আগেই মুখের কাছে খাওয়ার চলে আসে। শিশু বুঝতেই পারে না খিদে কি?
তার মানে এই নয় যে খিদে পাক কাঁদুক তারপরে খেতে দেব। তা তো নয়। তবু খিদে বা কষ্ট করে পাওয়ার আনন্দের জন্য সময় দিতে হয়।
যাদের একেবারেই সংস্থান নেই তারাও যে করেই হোক প্রথমে শিশুটির খাওয়ার বন্দোবস্ত করে। এবং সেটাই নিয়ম। আগামী প্রজন্মের জন্য সেটাই আমাদের প্রাথমিক কর্তব্য।
তবু আমাদের কর্তব্য হল প্রজন্মের কাছে খিদে লাগা এবং তাকে কষ্ট সাধনের মাধ্যমে নিবারণের যে পরিতৃপ্তি তা বুঝতে দেওয়া উচিত।
যে শিশু খিদের মর্ম, খিদের উপলব্ধি, খিদে নিবারণের যে আকুতি তা যদি না বুঝতে পারে তাহলে পরবর্তীতে সে যখন সমাজ জীবনে একা প্রবেশের ছাড়পত্র পাবে তখন বুঝতে চাইবে না এই কষ্ট, এই খিদে ও তার উপলব্ধি। ফলে সমাজ চিত্রে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ফোকটে পাওয়া নিয়ে মেতে থাকবে।
খিদে সহ্যের অবস্থান তার জানা নেই। তাই সে ‘পাব না মানে?’ এই ভাবনায় যা কিছু করে ফেলে তা কখনই সমাজের মঙ্গল নয়।
আমরা প্রত্যেকে চাইব আমাদের প্রজন্মকে ভালোবাসতে। সেই সাথে চাইব ভালোবাসার মর্যাদা বোঝাতে, উপলব্ধ করাতে। এই মর্যাদা বা উপলব্ধি প্রজন্ম তখনই বুঝতে পারবে যখন সে খিদের( সে পেটের হোক কিংবা মনের) সঙ্গে কিভাবে কষ্ট জড়িয়ে থাকে। কষ্টের সাথে পরিতৃপ্তি।

বিকেলের গান

বয়সের পাশে বয়স এসে দাঁড়ায়
দুজনে দুজনকে দেখে
ভাব জমাতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায় মন কষাকষি

রাতগুলো জেগে থাকে
কথা বলে যায় ডিঙিয়ে যাওয়া সম্ভাবনা
অনেক দূরের নিস্তব্ধ সন্ধ্যার চাঁদ
ধীরে ধীরে পূর্ণিমা ছাপিয়ে অমাবস্যায়
কিংবা আঁধারের ভেতরে আলোর তপস্যা

এসব কথা বয়স জানে
বয়সকে জানায়
বয়স শুনিয়ে শুনিয়ে বড় হয়
যুগ যুগ।

তবু বিকেলের গান বিকেল হয়ে রয়ে যায়
রাত্রি আসে
সকালের সকল বয়সে।

বাঁচার স্বপ্ন

বাঁচার সাথে মিলিয়ে বাঁচা, বাঁচবে কবে স্বপ্ন?
হাতে হাত আমরা হবো বাঁচার নেশায় মগ্ন!

মুখ তুলে দেখব আকাশ বাঁচার লোভে হাসব
ফুলের বনে ইচ্ছে ডানায় সবাই ভালোবাসব।

চলার পথে সবার জন্য, সবাই হাত বাড়াব
পাশের জনের জন্য আমরা আশ্বাস হয়ে যাব

একসারিতে বসে আমরা দু’মুঠো করে খাব
আমরা কেউ না খেয়ে, কেন ঘুমোতে যাব?

ভোর হয়েছে আমরা কর্মী কর্ম আমাদের ভাই
শ্রমের মূল্যে নির্মাণ মুনাফা আমরা যেন পাই

অধিকারে কোন দখল নয়, দিতে যেন পারি
হিংসা লোভ কাম ক্রোধে আমরা যেন হারি

একসাথে যুজতে চাই বিপদের রোদ বৃষ্টি
একসাথে আমরা করব বাঁচার জীবন সৃষ্টি।

এমন স্বপ্ন নেমে আসুক আমাদের ঘরে ঘরে
আমরা সবাই বাঁচব অনন্ত, নির্মল হাত ধরে।

সম্পর্কের সান্নিধ্য

গত দেড় বছর ধরে, যে অরূপ দিনে অন্তত ১০/১২ বার ফোন না-করে থাকতে পারতো না, আজ ৫ দিন হলো, একটাও ফোন করেনি। সুনন্দা প্রথম ৩দিন অনেকবার ফোন করেছে। ফোন বেজে বেজে কেটে গেছে। তারপর আর ফোন করেনি।
অরূপের পাড়ার এক বান্ধবীকে সুনন্দা ফোন করে। সে যা’ বলল, তাতে সুনন্দার জীবনদর্শনটাই বদলে গেল।
——–
অরূপ তাহলে বিয়ে করছে! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করল না। মাথা চক্কর দিচ্ছে। পা টলমল করছে। ঘরে ফিরে আবার ফোন করল ধরল না।
ভেতর থেকে কি যেন একটা উঠে আসতে চাইছে। অরূপ তুমিও! প্রেমের মন ভোলানো ডায়লগ। সব মিথ্যে। দেখা করা দরকার।
পাঁচটা বাজতে দেরি আছে। সুনন্দা চলল নাকতলা। সোজা উঠে গেল দোতলায়। দেখে অরূপের চেয়ার ফাঁকা। হাসি হাসি মুখে মনীশ জিজ্ঞেস করল – এবার তো বৌদি বলতে পারি? এখানে কেন? অরূপ তো পনের দিন ছুটি নিয়েছে।
কোন কথা না বলে সুনন্দা অফিস থেকে বেরিয়ে আসে। মনীশকে নীলু খোঁচা দিল – তখন থেকে বলছি চুপ কর। চুপ কর।
– কেন?
– আরে, অরূপ যাকে বিয়ে করছে এ সে নয়।
– এই কেলো করেছে। কি বলছিস?
এসব শুনে সুনন্দার ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠল।
কলেজের প্রোজেক্ট কমপ্লিট করতে হবে তাও পরদিন গিয়ে উঠল অরূপের পাড়ার বান্ধবীর বাড়িতে।
সেই গিয়ে খবর দিতে অরূপ তখনি চলে এল – বলো, কেমন আছো?
মানুষ যে এতটা নির্লিপ্ত বেহায়া হতে পারে অরূপকে না দেখলে জানতে পারত না সুনন্দা। উত্তর দিল – কি শুনছি? আমাকে নিয়ে কেন এমন খেলা খেললে?
শান্ত গলায় অরূপ বলল – তুমি আমার কাছে সেই আগের মত আছো। আমার ফোন মণিহার নিয়ে নিয়েছে। না হলে তোমার সঙ্গে কথা বললে আমারও ভালো লাগত। তাছাড়া সম্পর্কের সংজ্ঞা বদলে যাচ্ছে, সুনন্দা। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না এসব আর নেই। প্রেম তাকে রাস্তা দেখায়। তোমার সঙ্গে আমার তো শুধু সেই প্রেম সম্পর্ক। আর কিছু নয়। মণিহারকে নিয়ে একদিন আমি তোমাদের বাড়ি যাব। ভালো থেকো।
সুনন্দা অরূপের বেরিয়ে যাওয়া দেখতে পেল না। জানলা দিয়ে আকাশে এক টুকরো মেঘ দেখতে পেল।

প্রিয় কবি জীবনানন্দ

আমার উঠোনে নেই কলমী শালিক
তারা জীবনানন্দের মর্জির মালিক
গাঙ ফেরা মরা চাঁদ মুনিয়ার বেশে
আমাকে শালুক ফুলে গেছে ভালোবেসে।
আমার তাই সাতটি তারার তিমির
গোলপাতা ছাউনিতে ঝরিয়ে শিশির
মনন সমৃদ্ধি আঁকে বনলতা সেন
আমি করি সেই ভাবে ভাব লেন দেন।

মুখ ফিরিয়ে বাংলা, রূপসী হয়েছে?
সৃষ্টির মনের কথা দ্বেষ রেখে গেছে;
আমিও সুরঞ্জনাকে পাই না যে খুঁজে
সে যে ঝরা পালকের পাণ্ডুলিপি গুঁজে
গোধূলির ছায়াপথে দেখে অমানিশা;
আমিও প্রিয় কবির প্রেমের বিদিশা।

বইমেলার বই

(অণুগল্প)

রঙীন সোয়েটার-টুপি পরা বাচ্চাগুলো বাবা-মায়ের হাত ধরে হাসতে হাসতে মাঠে ঘুরছে। রঙীন ছবির বইগুলো পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে দেখছে, বই কিনছে। গেটের বাইরে থেকেই এঁটো প্লেটগুলো ধুতে ধুতে হাঁ করে দেখছে পুষ্প। বইমেলার বাইরে বাবা ঘুঘনি বিক্রি করছে, পুষ্পকে সাথে এনেছে বাসন ধোয়ার জন্য। কদিন হলো শীতটা ভালোই পড়েছে। ছেঁড়া একটা সোয়েটার ছিল, সেটাও আর গায়ে ঢোকেনা পুষ্পর। প্লেটকটা বাবার কাছে দিয়ে ভুট্টা পোড়াচ্ছে তার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। আগুনের তাতে বেশ একটু আরাম হচ্ছে। কত লোক মেলায় ঢুকছে বেরোচ্ছে। ইস্ ঐ লাল শাড়ি পরা বৌটার টাকার ব্যাগটা তো পড়ে গেল, খেয়ালও করলো না। পুষ্প ছুটে গিয়ে ব্যাগটা কুড়িয়ে ফেরত দিতে যায়। যাহ্ ভিড়ের মধ্যে মিশে গেল তো বৌটা। হয়তো গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেছে। ব্যাগটা তো কুড়িয়ে নিল, এবার কি করবে !!!!!
☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆

এক ছুটে এগিয়ে গেল পুষ্প। এবার তিন চারটে রাস্তা। পুষ্প আর লাল শাড়ি পরা কাওকে দেখতে পেল না। ফিরে এল বাবার কাছে। সব শুনে পুষ্পর বাবা খরিদ্দারকে ঘুগনি দিতে দিতে বাঁ হাতে মানিব্যাগটাকে নীচে লুকিয়ে রাখল। কিছু বলল না।
পুষ্প আরও কটা খাওয়া প্লেট নিয়ে ধুতে গেল। পাশেই ছিল পুলিশকাকু। ক’দিন ধরে দেখছে। তাই জিজ্ঞেস করল – পুলিশকাকু। পুলিশকাকু। কারো হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ যদি কুড়িয়ে পাই তাহলে তোমরা তাকে ফেরত দিতে পারবে?
– নিশ্চয়। এটাই তো আমাদের কাজ। কদিন ধরে তোকে দেখছি। ঠাণ্ডায় ঠাণ্ডা জলে তোর খুব কষ্ট হচ্ছে? তাই না রে?
কোন উত্তর না দিয়ে পুষ্প এক ছুটে ঘুগনি দোকানে চলে এল। বাবাকে না বলে নিচে থেকে মানিব্যাগটা তুলে নিল।
আবার চলে আসে পুলিশকাকুর কাছে। মানিব্যাগ বাড়িয়ে দিয়ে বলল – ওই সামনে একজনের কাছে থেকে পড়ে গিয়েছিল। আমি কুড়িয়েছি একটু আগে।
পুষ্পর নাম জেনে নেয় পুলিশকাকু।
পুষ্প মেলার লোকজনের পাশ কাটিয়ে আবার বাসন মাজায় মন দেয়।
আরও কিছুক্ষণ পরে বইমেলার মাইকে পুষ্পর নাম শুনে ওর বাবা খরিদ্দার সামলাতে সামলাতে অবাক হয়। পুষ্পকে জিজ্ঞেস করে – কি রে তোর নাম ডাকছে কেন? তোকে বলেছিলাম চুপচাপ থাকতে। কারো কিছু নিয়েছিস নাকি?
পুষ্প কিছু বলার আগে পুলিশকাকু চলে আসে। বলে – আয় পুষ্প, আমার সঙ্গে আয়। স্টোভ বন্ধ করে আপনিও আসুন।
ইউ বি আই অডিটোরিয়ামে অনেক লোক দেখে ওরা ঘাবড়ে যায়।
একজন বলছেন – এই হল পুষ্প। ফুলের মত। সবে পড়া শিখছে। বইমেলার উদ্দেশ্য হল শিক্ষার প্রসার ঘটানো। পুষ্পর থেকে বড় শিক্ষা আর কি হতে পারে?
সেই লাল শাড়ি পরা বৌটা পুষ্পর হাত ধরে বলল – সবার সামনে বলছি, আজ থেকে পুষ্পর পড়ার সমস্ত দায়িত্ব আমার।
অডিটোরিয়ামের হাততালির মাঝে পুষ্পর বাবার চোখে জল এসে গেল।

দেখায় অদেখা

(অণুগল্প)
অফিস ছুটির পরে ধীরেন রফিক শীতুর সাথে নানান গল্প করতে করতে বেরিয়ে আসি। স্টেশনে সবাই মিলে হ্যা হ্যা করতে করতে চা খাওয়া আমাদের স্বভাব। গত সপ্তাহ থেকে খেয়াল করছি মিলন আসছে না। অফিসে দুটো সেকশন। অন্যদিকটা ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। সেখানে মিলনের তো বসা বা আড্ডা মারার কোন জায়গাই নেই। তাহলে?
ধীরেনকে জিজ্ঞেস করলাম। ও বলল – চেপে যা। চেপে যা।
আমার মুখে বিস্ময় দেখে আবার বলল – সবাই জানে আর তুই জানিস না। চুপ কর। পরে বলব।
ট্রেন এসে গেল। আমরা ট্রেনে চাপলাম। ধীরেন কিছু বলল না।
পরদিন দেখলাম মিলন বেশ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। টিফিনের পরে দেখি মিলন তার টেবিলে নেই। গত সপ্তাহ থেকে কি তাই হচ্ছে?
ধীরেনর কাছে যেতেই ও বুঝতে পেরে আমাকে চোখ ইশারা করল। আমি তাই বাইরে দাঁড়িয়ে। একটু পরে ধীরেন হাত ধরে অফিস ক্যাণ্টিনের পেছনে নিয়ে গেল। দেখলাম, মিলন পিঙ্ক জামা ও প্যাণ্ট পরা অদ্ভূত রকমের একজনের সঙ্গে এমনি সাধারণ কথা বলছে।
ধীরেন দূরে দাঁড়িয়ে থাকল। আমি কাছে যেতেই মিলন চমকে উঠল। আর পিঙ্ক আরো পেছনে বস্তির দিকে চলে গেল। আমি স্বাভাবিক জিজ্ঞেস করলাম – কে উনি?
মিলন এমনিতে হাসিখুশি। বউ মারা গেছে গত বছর। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। হাত পা ঝাড়া। বলল – রাখ তো। ও সব ফালতু। বেশ কড়কে দিয়েছি।
ধীরেনও কিছু বলতে চাইছে না। অফিসে ফিরে মিলন বড়বাবুকে বলল – অতীশদা, আমার লোনের কি হল?
আমি পেছনেই ছিলাম। বললাম – এই তো মাস দুই আগে লোন নিলি। আবার?
-ধুর, জমা রেখে কি হবে? সরকারের যা অবস্থা।
স্টেশনে এসে দেখি না, মিলন আসে নি। বেরিয়েও কোথায় গেল? ধীরেনকে জিজ্ঞেস করলাম। বলল – ক্রমশ প্রকাশ্য। অনেকেই জানে কিন্তু পুরোটা সবাই জানে না। ভাই, তুমিও জেনে যাবে।
ট্রেনে বসে ভাবলাম। ব্যাপারটা কি? তাহলে কি কোন মেয়ে? কালকে মিলনকেই ধরব।
রাতে খবর দেখে আৎকে গেলাম। এ কি! মিলন! রক্তাক্ত দেহ!
ফোন করলাম ধীরেনকে। শুনলাম বেশ নির্লিপ্ত গলা। বলল – জানতাম। বেশি মাতম্বরী?
-ব্যাপারটা কি?
-ব্যাপার আবার কি? পদ্ধতির বাইরে কিছু হয় কি? দেখলি তো পেছন বস্তি। আহা, ভাল কাজ? আর শোন এই ব্যাপারে আর একটিও কথা কোনদিন জিজ্ঞেস করবি না।আর কাওকে না। ফোন রাখছি।

বার বার ফিরি

আমি তো ফিরতে চাই, বার বার ফিরি
আমার এ চলাফেরা তোমাকেই ঘিরি
চোখে দেখেছি তোমার আকুল আবেদন
তাহলে হবেই হবে আমাদের মিলন।

তবু যেমন কথার ফেরে কথা ঘরোয়া
নিজস্ব মানিয়ে নেওয়া করে নি পরোয়া
এগিয়ে নিয়ে গেছি তফাৎ সমান্তরাল
আমরা আমাদেরকে করেছি আড়াল
আজ তাই ফিরে গেছে ফেরা সংকলন
আমরাও আমাদের কাছে অবোধ মিলন।

তবু ফিরতে হয়, ফেরাটাই হৃদয়ের কথা
কাঁটা নিয়েই তো গোলাপের সৌন্দর্য্য যথা।

কথার কথা

কথা যাই হোক, সব কিছু কি বলা যায় প্রকাশ্যে?
বলার অনেক ক্ষেত্র আছে সেখানে বল সহাস্যে।

বলতে গিয়ে খোঁচা দিলে সইবে না যে কেউ তা
রাজা উজীর ভিখারীরও আছে আত্মমর্যাদা।

সেই আত্ম দেবেই দেবে তার সর্বোচ্চ পাটকেল
তার জন্য কাঁটাকে কখনো বলতে পারো না বিটকেল।

ধাক্কা সামলে গোলাপ দাও তোমার সংশোধনীতে
কথা তখন ফুল হয়ে যাবে সবার নয়ন মনিতে।

বলার কথা বলতে চাইলে বলতে হবে সিস্টেমে
গড্ডলিকায় পাথর ফেললে ঢেউ উঠবে অষ্টমে।

তোমার যে কাজ তাতে, ফাঁকও আছে ফাঁকিও
সিস্টেমের দাস তুমিও ভাই, শুধু বশ্যতায় থাকিও।

বিরুদ্ধতায় বটের ঝুরি মাটি বরাবর নামছে
বিপ্লব তার রহস্য মূল জীবনে জীবন খুঁজছে।

ঘর সংসার

বিকেলটা খুব দ্রুত শেষ হয়ে আসছে।পার্কের বেঞ্চগুলো ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।বাচ্চা গুলোও খেলার শেষে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।শুধু এককোণের একটা বেঞ্চে বসে আছেন অনুপমা দেবী।তাঁর আজ আর বাড়ি ফেরার তাড়া নেই যেন।নিজের বাড়িটাকে নিজের বলে ভাবতেই মন চাইছে না আজ।
অথচ এই সংসার, সন্তানদের জন্য কি অমানুষিক পরিশ্রম তিনি করেছেন। সেই সংসার থেকে এই প্রতিদান পাওনা ছিল?না কিছুতেই আর বাড়ি ফিরে যাবেন না তিনি।মন স্থির করে ফেলেছেন আজ।
হঠাৎ পিঠে কার হাত পড়তে চমকে উঠলেন অনুপমা দেবী।
———————————————————-
দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে দেখেন না কেউ নেই। সামনে থেকে কেউ একজন বললেন – এই তো আমি, এখানে।
অনুপমা দেবী তার মুখোমুখি হয়ে অবাক হলেন না। বললেন – ও। আপনি। কেমন আছেন?
– তুমি না খুব নীরস অনু। মাঝে তিন চার বছর অন্তর দেখা হত। এবার তো অনেকদিন পরে। তাও একটুও উচ্ছ্বাস নেই।
– জীবনের শেষ প্রান্ত সবচেয়ে কঠিন। সবার গলগ্রহ হয়ে নিঃশেষ হওয়ার প্রতীক্ষা। হৃদয় থেকে আর তুমি বেরোচ্ছে না।
– কদিন ধরে তাই দেখছি তোমাকে খুব মন মরা। আজকে যেন একেবারে এক্সট্রিম।
– তাই তো নিশীথদা। আজ নাতি পর্যন্ত বলল, চুপ। একদম চুপ। না হলে ঘাটে ফেলে আসব। অর্ধেক লিখে দিয়েছেন উনি। আমারটুকু আমার। যতই শকুনের দৃষ্টি দিক ওরা।
– কতবার বলেছি আমাকে নিশি বলে ডাকতে। এই বয়সেও তুমি পর পর ভাবো। এই যে বাড়ি ফিরবে না ভাবছো, তো কোথায় যাবে? আর তো নিবারণদা নেই। আমার হাত ধরো।
কিছুক্ষণ মাটির দিকে তাকিয়ে ভাবলেন। তারপর আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন – চলো যাই।
হেমন্ত শেষ হতে চলল। হাল্কা ঠাণ্ডা ঠান্ডা লাগছে। স্ট্রিট লাইট জ্বলতে শুরু করেছে। পাখিরা ঘরে ফিরছে। গাছে ডানা ঝাপটাচ্ছে।
অনুপমা দেবী হাঁটতে লাগলেন নিশীথের হাত ধরে। নিশি নিশি বলে পুরোনো দিনের কত কথা মনে এল। বলতে বলতে কত কি বলা হল। মনটা একেবারে হাল্কা হয়ে গেল। সংসারের কারও উপর আর কোন রাগ নেই। আসলে এটাই সংসার।
আর পৌঁছে গেলেন নিজের বাড়িতে।
ছেলে দেখতে পেয়ে ঝাঁ ঝাঁ করে উঠল – মা, এতক্ষণ কোথায় ছিলে শুনি? বুড়ো বয়সে তোমাদের কি হয়? এই তো অফিস থেকে ফেরার পথে শুনলাম নিশীথ জ্যেঠু ট্রেনে কাটা পড়েছে। এদিক-ওদিক কি দেখছো? যাও নিজের ঘরে যাও।
অনুপমা দেবী নিজের ঘরে থ হয়ে বসে পড়লেন।