ফয়জুল মহী এর সকল পোস্ট

ফয়জুল মহী সম্পর্কে

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

20201130_130354

এই সময় সুজনই ফোন করবে।
হ্যালো সুজন। আমি বাসে আছি এবং বাসও ছেড়ে দিয়েছে। সরি ফোন করতে ভুলে গিয়েছি আর প্রথম একটু ভয় ভয় লেগে ছিলো শিউলীর কথা মনে পড়ায়।
আচ্ছা ঠিক আছে ভয় করিস না। আল্লাহ সহায় আছে, ঠিকভাবে পৌছে যেতে পারবি।
দোয়া কর। অবশ্যই আমি এখন বাহিরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতেছি জানালা দিয়ে। তোর মত আমারও অভ্যাস বাসের জানালার পাশে বসা এবং বাহিরে তাকিয়ে থাকা। তুই সাথে থাকলে দারুণ হতো।
আমি সেই রাস্তায় অনেক চলেছি খুব সুন্দর দেখতে।
রাস্তার দুই পাশের গাছ যেন এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। মানুষ বলে গাছ অক্সিজেন দেয়, ছায়া দেয়, গাছের উপকারিতার শেষ নাই। আসলে গাছ অপরূপ দৃশ্যও উপহার দেয়। সবচেয়ে বড় কথা গাছপালা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় মূর্খ ভূমিকা রাখে। খুলনায় সুন্দরবন আর কক্সবাজারে ঝাউবন বার বার প্রমাণ দিয়েছে। তারপরও আমরা গাছ কেটে বনাঞ্চল উজাড় করছি। নিজের গাছ কেটে আরেকটা গাছ লাগাইতে চাই না। কাঠ চোরাচালানকারী পার্বত্য অঞ্চল কিংবা গাজীপুর কিছুই বাদ দিচ্ছে না। আর এতে জনসাধারণের চোখের আড়ালে সহযোগিতা করে টাকা কামাই করে সরকারি লোকেরা। উগাণ্ডার মত দেশে আইন আছে গাছ কাটলে গাছ লাগাতে হবে সেটা সরকারি কিংবা বেসরকারী যার হোক। এই আইন মানতে সবাই বাধ্য কারণ কঠোরভাবে সরকার তদারকি করে আর না মানলে জেল জরিমানা অবধারিত, কোন ধরনের ছাড় বা মাফ নাই। অথচ আমরা রামগড়, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি ও গাজীপুর সরকারি বন উজাড় করতে তুলে দিয়েছি বনদস্যুদের হাতে। যারা বনাঞ্চল পাহারা দেয় তারা মিলিত হয় যখন যে সরকার থাকে তাঁর দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে, মিলেমিশে খায় বনের কাঠ ফলমূল ও লতাপাতা। মনে হয় যেন চোর ডাকাতের সংসার।

আবার সৎ বন কর্মকর্তার হাতে কখনো কখনো বনদস্যু ধরাও পড়ে, এই ধরা পড়া দস্যু আইনের ফাঁকফোঁকরে বের হয়ে পুরাতন কারবার আবার শুরু করে। বনাঞ্চলকে ঘিরে গাজীপুর শত শত অবৈধ করাত কল গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে এবং আশেপাশে হাজার হাজার অবৈধ করাত কল আছে। রামগড় হতে করেরহাট ও ফেনী। একদিকে করেরহাট হতে ফেনীর উপজেলা শহর ভারতের ত্রিপুরার সীমান্ত এলাকা ছাগলনাইয়া। আরেক দিকে বারইয়ার হাট যার মাঝখান দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রামের হাই ওয়ে। রামগড় খাগড়াছড়ি জেলার পৌরসভা শহর করেরহাট ছোট বাজার এবং বাইয়ারহাট চট্টগ্রামের পৌরসভা শহর। করেরহাট, ছাগলনাইয়া ও বাইয়ারহাট এই তিন জায়গায়ই শুধু প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার গাছ করাত মিলে কাটা হয় যা সম্পন্ন অবৈধ এবং চোরাই কাঠ। এবং তিন জায়গাই একটু পর পর আছে ফরেস্ট অফিস। করেরহাট ছাগলনাইয়া বাইয়ারহাট হতে ঢাকা চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকার ফার্নিচার যায় যার পুরোই চোরাই কাঠে তৈরী। আমার মনে হয় ছাগলনাইয়া কাঠের ফার্নিচারের জন্য বিখ্যাত সারা বাংলাদেশে। অবশ্যই এর সাথে শত শত ফার্নিচার শ্রমিকের রুটিরুজির ব্যবস্থাও হয়েছে। সেগুন, মেহগনি ও গামারিসহ নাম না জানা অসংখ্য পাহাড়ি গাছ প্রতিদিন আসে রামগড় ও খাগড়াছড়ি হতে এইসব অঞ্চলে। তবে মাঝে মাঝে করাত কলে ফরেস্টের অভিযান পরিচালনা হয় আর এতে করাত কল মালিকের যৎসামান্য টাকার ক্ষতি হয় মনে হয়। দুই এক দিন পর আবার সেই পুরানো চেহারায় ফিরে যায়।

করাত কলের পাশে থাকে পুকুর খাল ও বিল। আর এইসব পুকুর খাল ও বিলে পানির ভিতর লুকানো থাকে শত শত পাহাড়ি গাছ। হাই ওয়ের পাশে কিংবা রেল রাস্তার পাশে কোথায় নিরাপদ নয় গাছ। সবখানে বনদস্যু তাদের করাতের আচড় লাগায়। রেল রাস্তার পাশে গাছ কাটার জন্য এক অভিনব কৌশল অবলম্বন করে। একসাথে অনেক গাছ কাটে গাড়ি আসার সময় যাতে গাড়ির আওয়াজে গাছ কাটার আওয়াজ শুনা না যায়। এখন ঢাকা চট্টগ্রাম টু ওয়ে রেল লাইন এবং সড়কও টু ওয়ে। নতুন রাস্তা তৈরি করার জন্যও প্রচুর গাছ কাটা হয়েছে যেখানে যেখানে রাস্তার কাজ শেষ সেখানে সেখানে গাছ লাগানো অতি জরুরী। রেল রাস্তায় খালি জায়গা পড়ে আছে অথচ গাছ লাগানো হয় না। শুধু রাস্তা নয় সমস্ত সরকারি জায়গা টিলা পাহাড় সব জায়গায় প্রচুর গাছ লাগাতে হবে মোট কথা কোনো জায়গাই গালি রাখা যাবে না। গাছই পারবে জলবায়ু পরিবর্তনে প্রধান ভূমিকা রাখতে আর কিছুই না।

অথচ আমরা প্রতি বছর বর্ষাকালে বৃক্ষরোপণ করার জন্য মেলা করি। ঢাক ঢোল পিটিয়ে নেতা নেত্রীরা গাছ লাগানো উদ্বোধন করে। একদিকে গাছ লাগায় আরেক দিকে ছাগল এসে সেই গাছ খেয়ে পেলে এই হলো আমাদের দেশের বাস্তবতা। মজার বিষয় হলো ভরা বর্ষায় নেতা গাছ লাগায় ছাতা মাথা দিয়ে আর সঙ্গীরা সেই গাছে পানি ঢালে। অথচ আমরাই উগাণ্ডাকে নিয়ে হাসি ও মজা করি। সেখানে গাছ কাটার অপরাধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ হয়। যার যে দায়িত্ব তা সৎ ও দক্ষভাবে পালন করে। কয়েকটা কঠোর আইন ও প্রয়োগে সরকার বদ্ধপরিকর তার মধ্যে গাছ ব্যপারে একটা। অথচ উগাণ্ডা পুরোটাই পাহাড়ি বনাঞ্চলের দেশ।
(চলবে)

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫১তম পর্ব।

হ্যাঁ সুজন।
শুনতেছি, বল নাহিদ।
আমি এসে গিয়েছি সুজন।
যাক, আলহামদুল্লিল্লা। আমি ভাবনাতে ছিলাম সারা বিশ্বে দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে কিন্তু বিশ্বনেতারা তা রোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পৃথিবীর প্রাণ আমাজান বন আগুনে পুড়ে ধ্বংস করা হচ্ছে অথচ এই বনই পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী অক্সিজেন দিচ্ছে। ব্রাজিলে অবস্থিত এই আমাজান সেই দেশের সরকারই হাজার হাজার একর ধ্বংস করতেছে। আর বিশ্ব নেতারা চুপ করে আছে কেন বুঝি না।
তা ঠিক। হাঃ হাঃ হাঃ।
নাহিদ শিউলীর মা বাবাকে আমার সালাম বলবি।
ঠিক আছে বলবো।
আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি এখন নাহিদ।
সুজন সত্যিই একজন ভালো মন ও মানের মানুষ, একজন মানবিক ও সমাজ দরদী মানুষ কিন্তু রাজনীতি তার একদম অপছন্দ তাই সে রাজনীতি করতে ও নিষেধ করে। তার মত একজন বন্ধু পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার।
মায়ের উদর হতে জন্ম নেওয়া মানুষটি ভাই কিংবা বোন হয় যা সৃষ্টিকর্তার নিপুণ সৃষ্টি। অবশ্যই ভাইয়ে ভাইয়ে কিংবা বোনে বোনে কখনো কখনো চাওয়া পাওয়ার স্বার্থপরতা এসে ভালোবাসার সম্পর্ক নষ্ট হয়ে মিত্র হতে শত্রুতে পরিনতও হয় । কিন্তু বন্ধু মানুষ পছন্দ করে যা সৃষ্টিকর্তার দেওয়া প্রাকৃতিকভাবে ভালোবাসা সৃষ্টি। এইটি সৃষ্টিকর্তার আরো সুনিপুণ সৃষ্টি। এখানে চাওয়া পাওয়ার হিসাব থাকে না দুই বন্ধু সতর্ক থাকলে এই ভালোবাসা হয় স্বর্গীয়।
আমি অনেক ভুল করলেও সুজন তা সংশোধন করে দেয়। কখনো আমার কথা বা কাজে মন খারাপ করে না, স্বার্থ খোজে না।
“বিধিরে ঘরের মানুষ পর করলো
আর পর করলো আপন। বিধিরে সবই
তোমার লীলা খেলা বিধিরে ওহ বিধি।”

নাহিদ মনে মনে গান ধরে আর হাসে। স্বচ্ছ আকাশ কোথাও কোনো মেঘের চিহৃ নাই, ইস! মানুষের জীবনটা যদি এই রকম স্বচ্ছ সুবিশাল আকাশ হতো। দুঃখজনক কালো মেঘ জমাট বেঁধে যদি বৃষ্টি না ঝরতো তাহলে মানুষ সুখের পায়রা হয়ে এই সুবিশাল আকাশে উঠে বেড়াত। বাংলাদেশের ধনীরা উন্নত দেশ সিঙ্গাপুর, মালেয়শিয়া, কানাডা ও যুক্তরাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যে বিনিয়োগ করে এইসব দেশে নাগরিক হয়। আর গরিব নিজ দেশের মাটিতে চির দিন শুধু নীলময় আকাশে সুখ খোজতে লড়াইয়ে লড়াইয়ে জীবনের অবসান করে। অবশ্যই কারো কারো সুখের খোজ হলেও আর কারো কারো নশ্বর দেহ মাটিতে বিলীন হয়। হয়তো আমিও সুখের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন ধপ করে পড়ে মাটিতে বিলীন হবো। যে মাটিতে শিউলীর দেহ বিলীন হয়েছে সেই মাটিতে। আত্মার বিচরণ হবে চাঁদের ওপারে কোন সুখময় রাজ্যে। শিউলী, সেখানে তোমাকে সুখের একটা প্রসাদ দিবো তুমি রাণী হয়ে হুকুম করবে আর সেই হুকুম আমি মেনেই চলবো। সেই জীবনের শুরু আছে কোনো শেষ নাই। সেই জীবন এক অন্য রকম জীবন, সেইটা পৃথিবীর জীবনের মতো না। সেখানে খাবারের অভাব হবে না কখনোই। কোনো দুষ্ট লোকও থাকবে না তবে জীবনটা হবে অন্তহীন কারণ সে জীবনে কখনোই মৃত্যু থাকবে না।

আজ তোর মনে পড়লো আমাকে নাহিদ। এতদিন তোর কোন ফোন নাই একটু খবর নাই।
আমি অনেক ঝামেলায় ছিলাম আন্টি।
তোর আম্মু আব্বু সবাই কেমন আছে । তাদের কাছে তোর কথা জিজ্ঞাসা করে লাভ নাই তাই, চুপ থাকি।
ভালো করেছেন।
যা হাত মুখ ধোয়া মোছা করে ফ্রেশ হয়ে আয়। খাবার দিচ্ছি আমি এমনিতে অনেক সময় হয়েছে।
ঠিক আছে খাবার দিন, আমারও খুব ক্ষুধা পেয়েছে।
আমি তোর ছোট খালা হয়ে সবসময় তোকে আদর ও স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করি কিন্তু তোর কাজকর্মে আমাকে লজ্জিত হতে হয় নানান জন নানারকম কথা শুনায়। তুই কি এইসব ভেবে দেখেছিস কখনো। নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করে বউটাও হারিয়েছিস। তোর এইসবে দুঃখ হয় না কষ্ট হয় না। আমার তোর জন্য দুঃখ লাগে তোর আম্মু ফোন করে কান্না করে।
আন্টি এখন খেতে দাও রাতে বসে সব কথা হবে।
কি লাগবে নিস রাগ করিস না। তুই আমার সন্তান নয় কিন্তু তোকে সন্তানই মনে করি।
জানি আমি এই জন্য তুমি আমার সুইট আন্টি।

আমি শিউলীর মা বাবার সাথেও দেখা করতে চাই ।
আমি শুনেছি দেখতে শুনতে মেয়েটা রূপসী ছিল তাই বলে একজন নিঃস্ব মানুষের মেয়ে বিয়ে করলি।
এইসব এখন অতীত কারণ শিউলী জীবিত নাই। তাকে নিয়ে আমি সুখী হতে চেয়ে ছিলাম সেই নাই অতএব এইসব কথা বলে কি লাভ এখন।
তারপরও তোর জীবনে একটি দাগ পড়ে গেল।
হাঃ হাঃ হাঃ (সরি আন্টি)।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া,মাদক ও রাষ্ট্র।
৫২তম পর্ব।

হাসির কি হলো।
তুমি অনেক বোকা ও সহজ সরল সুন্দর মনের মানুষ। এই জন্য তুমি,আমি নাহিদের দরদি আন্টি।শিউলীদের বাড়িতে আমার সাথে কালকে আপনি যাবেন কিনা বলেন।
না বাবা আমি যাবো না।
আচ্ছা ঠিক আছে।এখন তার মায়ের সাথে একটু কথা বলেন, আমি যে যাবো জানিয়ে দেন।
না,আমি পারবো না।তোর আব্বু শুনলে আমার সাথে এবার আর সম্পর্কই রাখবে না।
হাঃহাঃহাঃ। তুমি আমার আন্টি মনি,মা মনি আমি তোমার আব্বু হই।
আমি ফোন করলে যদি উনারা খারাপ কিছু বললে।
কিছুই বলবে না। আপনি পরিচয় দিয়ে আমার কথা বলে রেখে দিবেন, উনি কথা বলার সুযোগই পাবে না।
জানি না এবার আবার কোন ঝামেলা সৃষ্টি করবি। আরে খালামনি আমার বাঁধানো ঝামেলা সমাধান করা আপনার আর আম্মুর কাজ।
তোর কারণে তোর আম্মু একবুক কষ্ট বয়ে বেড়ায়।
খালামনি এইসব কথা শুনতে এবং বলতে ভালো লাগে না।
এই নিন ফোন কথা বলেন।
তোর যন্ত্রণা আর সহ্য হয় না।
কথা বলা শেষ করে অনেক বকা দিতে পারবেন আমি শুনতে রাজি আছি। তুমি আর আম্মু ছাড়া আমাকে ভালোবাসার পৃথিবীতে আর কেউ নাই।

হ্যাঁলো ভাবী,আসসালামুলাইকুম,কেমন আছেন।
জ্বি ভালো আছি। আপনারা কেমন আছেন।
আমরাও ভালো আছি। একটা কথা বলতে ফোন দিয়েছি।
জ্বি বলেন আমি শুনতেছি।
একটু আগে শিউলীর খালা শাশুড়ী ফোন দিয়ে বললো শিউলীর স্বামী আমাদের সাথে দেখা করতে সকালে আসতে চায়। আমরা হ্যাঁ অথবা না কিছুই বলি নাই, এখন কি বলবো আপনি বলেন। আর বাড়ির মানুষ সমাজের মানুষ এইটা নিয়ে হয়তো কানাঘুষো করতেও পারে।
ওহ আচ্ছা ঠিক আছে আমি লোকজনকে বলে দিবো সমস্যা নাই এবং জামাইকে আসতে দিন, ভালো খাওয়া-দাওয়া ও ভালো আচরণ করবেন। মেয়ে যখন নাই আর তার স্বামীর উপর রাগ রেখে লাভ কি। সে আপনাদের ভালো আচরণ দেখলে হয়তো আজীবন-পোষিত হবে।
আচ্ছা ঠিক আছে ভাবী। মৌরি মাকে বলবেন আমাদের খোজ খবর নিতে সে অনেক দিন ফোন করে না। চাচীর সাথে দুইদিন আগে কথা বলেছি।
আচ্ছা, আমার কাছেও সকালে ফোন করেছে। আজ নাকি উনার শরীরটা খারাপ লাগতেছে। দোয়া করবেন।
জ্বি ভাবী, অবশ্যই দোয়া করবো।
ঠিক আছে রাখি এখন।

আসসালামুলাইকুম।
নাহিদকে বাড়ির সদর রাস্তা হতে এগিয়ে নেওয়ার জন্য শিউলীর বাবা অপেক্ষা করে । নাহিদ রিক্সা হতে নামতেই দুইজনের দেখা হয় এবং মুখামুখি হলে চিনতে চেষ্টা করে একে অপরকে।
তুমি নাহিদ?
জ্বি।
আমি শিউলীর আব্বু। কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। (নাহিদের চোখ হতে টিপ টিপ জল গড়িয়ে বুকে আসে)। আপনি কেমন আছেন?
আবদুর রহমান জোরে কান্না করে বুকে জড়িয়ে ধরে নাহিদকে। কেন আমার মেয়েটাকে নিয়ে গিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে না বাবা।
বাবা আমি আসছি আপনাদের সামনে, আমি অপরাধী যেই শাস্তি দিতে মন চায় দেন।
দুইজনের কান্না এবং কথায় জড়ো হওয়া অন্যরাও চুপ হয়ে যায়। এক মহিলা বলে উঠে আরে শিউলীর জামাইকে ঘরে নিয়ে যান পরে কথা হবে।
ওহ! আমি ভুলে গিয়েছি। আসো বাবা আসো।
সবাই নাহিদকে দেখে হতবাক স্মার্ট নাহিদ পোষাক পরিচ্ছেদে পরিপাটি দেখতে। দেখতে যেন শতে এক। ঘরে এসে পা রাখতে শিউলীর মার কান্নায় এক হৃদয়গ্রাহী দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
মা আমিও আপনার সন্তান আমি শিউলীকে ফেরত দিতে পারবো না কিন্তু আমি আপনাদের বুকে আগলে রাখতে পারবো। আমি এসেছি আপনাদেরকে দেখতে আমি এসেছি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে, সুখে দুঃখে পাশে থাকার ওয়াদা করতে। শিউলীর মত ভালো মেয়ের মা-বাবা আপনারা তাই সম্মান জানাতে
ছেলেটাকে বসতে দাও, যাও নাস্তা পানি দাও। বাবারে আমরা গরিব মানুষ তোমার উপযুক্ত সম্মান না হলে মন খারাপ করো না।
আমি সব জানি এবং জেনেশুনে আপনার মেয়েকে বিয়ে করেছি। ধনী গরিব সবাই মানুষ এক বিধাতার সৃষ্টি। আমার কাছে মনুষ্যত্ব বড় তাই ছুটে এসেছি আপনাদের কাছে। যদি পারেন ক্ষমা করে দিবেন।

ক্ষমা করতে কষ্ট হলেও পাশে থাকার সুযোগ দিবেন। যেন আমি আপনাদের খোজ খবর রাখতে পারি। এই সুযোগ হতে বঞ্চিত করবেন না বাবা।
নাও, নাস্তা নাও। এই তোমরা সবাই আসো জামাইর সাথে নাস্তা করতে। নতুন বউ অথবা জামাই আসলে বাড়ির মুরব্বিদের ডাকতে হয়, সবাই পরিচয় হয়।এইটা গ্রাম অঞ্চলের পুরাতন প্রথা। আমার এক চাচী উনার ছেলের সাথে কানাডা থাকে, আজ বাড়িতে থাকলে তোমাকে মাথায় তুলে রাখতো উনার ছেলের বউ জলি ভাবী সেই রকম। ভাবী ঢাকায় একা থাকে, একটাই মেয়ে সেও বিদেশে পড়তে গিয়েছে।
আমি উনার কথা সব জানি শিউলী সব সময় আন্টির কথা বলতো।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৩তম পর্ব।

কষ্ট লাগতেছে মেয়েটা যাওয়ার পর আর ফোনও করে নাই কোন দিন। মরার আগে মেয়েটার সাথে কথা বলতে পারি নাই একটু। (জল পড়ে চোখ হতে)।
থাক বৌমা এইসব কথা, নাতিন জামাই এসেছে তোমাদের দেখতে মাফ করে দাও আর শিউলীর জন্য দোয়া করো।
আমিও বলি চাচী কিন্তু সে আছে কান্নাকাটি নিয়ে। নাহিদ চুপ করে বসে সবার কথা শুনে কোন কথা বলে না। বাড়ির মুরব্বি নারী পুরুষ সবাই নাহিদকে দেখতে আসে। শিউলীর মা থেমে থেমে নাক চোখ মুছে শাড়ির আচঁলে। নানা রকমের নাস্তা জরাজীর্ণ ঘরে খুবই বেমানান, তবুও নতুন জামাইকে নাস্তায় ও খাওয়া-দাওয়ায় আদর সমাদরের কমতি করা যায় না। এত খাবার আইটেম যে সব খাওয়া সম্ভব হয় না তবুও ঘরের মুরব্বি মেহমানের সামনে এসে হাত কচালে বলে তেমন কিছুই করতে পারিনি আপনাদের জন্য। মনে কষ্ট না নিয়ে ক্ষমা ও সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসলে এটা একটা ভদ্রতা মেহমানকে সম্মান ও আন্তরিকতা দেখানোর।
এই আসো বউ মা তুমিও বসো নাস্তা করতে। তোমার ছেলেটা দেখছি না যে তাকে জামাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দাও।
আছে চাচী, সে উঠানে খেলা করতেছে।
ডেকে নিয়ে আসো নাস্তা করবে একসাথে।

আপনার নাম জানা হয়নি এখনো।
উনি আপনার দাদী শাশুড়ী জামাই।
জ্বি আমার নাম নাহিদ বীন হোসেন। ডাকে নাহিদ।
আপনার মা-বাবা, ভাই-বোন কে কে আছে।
আমার মা-বাবা সবাই আছে। আমরা এক ভাই এক বোন। মা গৃহিনী, আব্বু কাস্টমস অফিসার এবং বোন স্বামীর সাথে দুবাই থাকে। আর আমি আপনার নাতনী জামাই।
সবাই হেসে উঠে। আর তাতে পরিবেশ অনেকটা হালকা হয়। সবাই এটা সেটা খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে একে অপরের সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন । নাহিদও গ্রামের নাম না জানা হাতে বানানো পিঠা খেতে থাকে। বাড়ির সবাই মিলে নাহিদকে সুন্দর ও সহজেই আপন করে নেয়। বয়স্ক লোকদের পরামর্শে সমাজের লোকজন শিউলীর মা-বাবা এবং নাহিদকে কোন ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন করে নাই। নাস্তা শেষে দুই একজন বাদে সবাই উঠে চলে যায়। তাদের সাথে শিউলীর বাবাও চলে যায়। শিউলীর মা রান্নাঘরে ব্যস্ত আর নাহিদ নীরব হয়ে বসে আছে । পুরাতন বেড়া এবং পুরাতন টিনের ঘরে বেড়ে উঠা অমায়িক ও সামাজিক মানুষের সুখী জীবনের সুন্দর বসবাস। অথচ দালান প্রাসাদে বাস করে সুখের জন্য টাকা আর টাকা করে অসুখী বিত্তবান।

সমজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনসহ নিজ গোত্রের পনর বিশ জনকে দাওয়াত দেয় শিউলীর বাবা উদ্দেশ নতুন জামাইকে সমাজে পরিচয় করা। কতশত নিয়ম সমাজ সংসারে মানুষের পায়ে পায়ে। শিউলী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ঘরে ডুকতে পারিনি সমাজ এবং সংসারের ভয়ে। আর আজ শিউলীর দেহ মাটির অংশ হওয়ার পর তার স্বামীকে সমাজে তুলছে এই সমাজ। সমাজের আগুনে জ্বলে ভালোবাসা সংসারের আগুনে জ্বলে সুখ আর বিশ্বাস । কিন্তু কথা ছিলো ভালোবাসার পরশে সমাজের আগুন নিভে যাওয়ার ভালোবাসার পরশে সংসার ও বিশ্বাস দৃঢ় হওয়ার।
নাহিদ উসখুস করে লেমন ট্রি পান করার জন্য। এমন সময় শিউলীর বাবা ঘরে প্রবেশ করে হাকডাক শুরু করে। তোমরা সবাই জামাইকে একা রেখে কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছো। আপনার কিছু লাগবে বাবা।
জ্বি, রং চা দিতে বলেন লেবু দিয়ে।
আচ্ছা এখনি দিবে।

শিউলীর মা-বাবা নতুন জামাইয়ের সমাদরে কোনো কিছু কমতি রাখে নাই। এবং নিজ গোত্রের লোকজনও সন্তুষ্ট খাওয়া-দাওয়ায়। সবাইর শিউলীর বর পছন্দও হয়েছে, প্রসংশাও করছে।
খাওয়ার পর একটু ঘুম দিতে পারলে ভালো লাগতো। তা যেন শুশুর সাহেব বুঝতে পারে তাই সব গুছিয়ে আমাকে বিছানা করে দেয় আমিও সাথে সাথে শুইয়ে পড়লাম।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৪তম পর্ব।

আজ যেতে দিবো না জামাইকে।
তা অবশ্যই।
একদিন না থেকে কেমন করে চলে যায়।
আপনি ফোনটা ধরেন, আমি মুরব্বিদের নিয়ে জিনিসপত্র দেখি জামাই কি নিয়ে আসছে।
এই শিউলীর মা, তোমাদের বাড়ি হতে ফোন দিয়েছে। আসসামুলাইকুম মা। আপনারা কেউ আসলেন না কেন, এত করে বললাম আসার জন্য।
আমার ইচ্ছা ছিল হঠাৎ করে শরীরটা খারাপ করায় আর যাওয়া হয়নি।
মা এখন রাখেন একটু কাজ আছে।
নাস্তা-পানি, খাওয়া-দাওয়া সব ঠিকমতো হয়েছে।
জ্বি হয়েছে, জামাই এখন ঘুমে উঠলে চা দিবো।
ঠিক আছে এখন রাখছি পরে কথা হবে ।
চাচী এই দেখেন জামাই এইসব নিয়ে আসছে। জিনিস দিয়ে আর কি করবো আমার নাতনীই নেই দুনিয়াতে। আল্লাহ যেন তাকে জান্নাতবাসী করেন, উনার যা সুন্দর মনে হয়ে হয়েছে তাই উনি করেছেন, ধৈর্য্য ধরে দোয়া করো। আমরা সব দেখলাম তুমি এখন সব গুছিয়ে রাখো।
জামাই ঘুম হতে উঠে পড়েছে তুমি চা বানাতে যাও।আপনি উনাকে আমাদের নলকুপ দেখিয়ে দেন। শিউলীর মা-বাবার কথা-বার্তার ফাঁকে নাহিদ ঘর ঘুরে দেখে একবার আর এইটা দেখে শুশুর-শাশুড়ী দুই জনই হেসে উঠে, নাহিদ তা খেয়াল করে না।
আসেন বাবা ঘরের পিছনে নলকুপ আর বার্থরুম আছে, হাত মুখ ধুয়িয়ে আপনি ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আপনার শাশুড়ীকে চা দিতে বলেছি।
রং চা দিলে ভালো হয়।
ঠিক আছে । (হাসি দিয়ে) রং চা আপনার পছন্দ। গ্রামের মানুষের আগের হতে স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক বেড়েছে যা দেখে খুব ভালো লাগলো। এক সময় গ্রামে খোলা বার্থরুম ছিলো, নলকূল ছিলো না এখন ঘরে ঘরে সব হচ্ছে মানুষ কষ্ট করে হলেও এইসব ব্যবস্থা করতেছে। এতে সরকারও যথেষ্ট সচেতন তাই স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশান এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য সব রকম সহযোগিতা দিতেছে। স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে সরকার প্রতিটি পরিবারের জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষার বলয় গড়ে তুলতে চাইতেছে তাই এতে জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণও বাড়ছে। এতে অনেক জীবাণুবাহী রোগ কমে যাবে। শিউলীদের পরিবারের মত দিনে এনে দিনে খাওয়া লোকজন স্বাস্থ্যকর স্যানিটেশান ও গভীর নলকূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে ব্যবহার করা দেখে অন্যরাও শিখবে এবং অন্যরা হয়তো আগে হতে ব্যবহার করতেছে। বিশেষ করে উনাদের সব কিছু খুব পরিষ্কার দেখে ভালো লাগলো বার্থরুম অপরিষ্কার একদম অসহ্য লাগে।

শিউলীরা এক বোন এক ভাই আর মা-বাবাসহ ছোটোখাটো ছিমছাম পরিবার। সেখান হতে শিউলী আজ নেই সত্যিই খুবই নির্মম ও নির্দয় লীলা খেলা মহান অধিপতির। গরিবের সহায় সম্পদ ছিনতাই করার ক্ষমতা দিয়ে সম্পদশালীদের আরো বেপরোয়া করে স্বর্গে তাদের বিচরণ করার সুযোগ তোমার ইচ্ছায় হয়ে থাকে হে অধিপতি। গরিবের দুঃখ কষ্টের ভিতর বেড়ে উঠা সন্তানের অকাল মরণ সেটাও তোমার একান্ত ইচ্ছায় হয় হে সৃষ্টিকারী। তখন গরিব আর জীবনের গতির বাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে না তাই তাদের ক্ষয় হতে থাকে হৃদয়। তারপরও গরিব তোমাকে ভুলে যায় না , তোমার এই লীলা খেলার তরঙ্গ ঢেউয়ে জীবন নৌকার বৈঠা মারে সামন্য সুখ নামক আলোটার জন্য। আর এতে তারা সুখ নামক অমূল্য রত্ন পেয়ে গেলেও কৃতজ্ঞ চিত্তে তোমাকে স্বরণ ও প্রণাম করে। তাই উচিত শিউলীর পরিবারকে শক্তি দেওয়া আর আমাকে অর্থনৈতিক সামর্থ্য দাও যাতে আমি এই পরিবারের পাশে থাকতে পারি।

নাহিদকে চুপচাপ দেখে শিউলীর আব্বু পাশে এসে বসে তার মাথায় হাত রাখে। এমনি নাহিদ কেঁদে উঠে নীরবে, টপ টপ করে অশ্রুজল ঘরের মাটিতে পড়ে। জামাইয়ের কান্না দেখে শুশুর সাহেব দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তবে হাত এখনো নাহিদের মাথার উপরে।
এমন সময় শাশুড়ী ট্রে করে চা নিয়ে আসে বলে এই নিন, জামাই শুশুর চা পান করেন।
রাতে সবাই মিলে আলাপ করবো। বিশেষ করে দুই তিন জন মানুষের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিতে চাই টেলিফোনে।
আমি এখন চলে যেতে হবে যে।
না বাবা এখন যেতে পারবেন না, আগামী কাল সকালে যাবেন।
জ্বি জামাই আপনার শাশুড়ী ঠিকই বলেছে।
আর কথা বলে লাভ নাই উনাদের আবদার রক্ষা করাই ভালো হবে।
শিউলী যখন বেঁচে নাই তখন আর আমাকে উনাদের কাছে মেলে ধরে কি লাভ, বরঞ্চ উনারা কষ্ট পাবে। শিউলী রূপসী হলেও গরিব ও অর্ধশিক্ষিত পরিবারের মেয়ে ছেলের বউ হিসাবে আমার নামী-দামী পিতা কখনো মেনে নিতো না যেতই আমি চাই। আর শিউলীর পরিবার গরিব হলে যদি জানে আমি পরিবার হতে বিছিন্ন তাহলে শিউলী থাকলে মেনে নিতো না আর এখন শুনলেও কষ্ট পাবে। তাই সবই গোপন থাকুক হৃদয়ের গভীরে।
(চলবে)

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৫তম পর্ব।

ব্রাদার-ইন-ল টাও ছোট তার সাথে কথা বলে সময় কাটানো যাবে, একা একা চুপচাপ থেকে সময় অতিবাহিত করা কষ্টকর ব্যাপার। এমনিতে আমার স্বভাব নেই একদম চুপচাপ থাকা। মাঝে মাঝে বাড়ির দাদা-দাদী, চাচা-চাচীরা এসে দেখা করে গেলেও সন্ধ্যার পর সুনশান নীরব হয়ে বসে আছি। তবে গহিন গ্রামেও বিদ্যুৎ থাকায় বাড়ির আঙ্গিনা ও ঘরের উঠান আলোময় হওয়ায় বিদঘুটে অন্ধকার হতে বেঁচে গেলাম। কোনো কোনো ঘরের জানালা খোলা থাকায় বাচ্চাদের পড়ার আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। আগে গ্রামে মায়েরা সন্ধ্যার পর ভাত খাওয়ানোর জন্য বাচ্চাদের তাগদা দিতো কারণ বাচ্চা না হয় ঘুয়িয়ে যাবে। আবার অনেক মাও সন্ধ্যার পর ঘুমিয়ে যেত কারণ সারা দিন কাজের চাপে ঘুম চোখে টলমল করতো। এখন তা আর নেই কাজের তাগিদও কম এবং মায়েরাও শিক্ষিত হওয়ায় অনেক সচেতন। আসলে গরিবের সত্যিকারের সম্পদ হলো বই আর শিক্ষা। দিনে তেমন একটা যুবক-যুবতী দেখা যায়নি দাদা-দাদী ও চাচা-চাচীদের ছাড়া। বেশ কয়েকজন চাচী এসে কথা বলেছে যে তারা মার্জিত, ভদ্র ও শিক্ষিত। দুই একজনতো খুবই স্মার্ট মহিলা, খুব সুন্দর শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা দেখে বুঝা যায় উনারা শালীন পরিবারের মানুষ।

একজন দাদাতো উনাদের বংশ মর্যাদা সম্পর্কে বিরাট এক কাহিনী শুনালেন। বাড়ির সামনে বড় পুকুর তার পাড়ে দুইধারে দুই পাকা ঘাট। ঘাটে মানুষ বসারও জায়গা আছে তাই ঘাটের দুই পাশে দুইটা নিম গাছ। এতে বুঝা মানুষের মন মানসিকা এবং রুচিবোধ। বাড়ির একপাশে বিশাল বড় মসজিদ তার পাশে নুরাণী মাদ্রাসা সব মিলিয়ে দাদা আমার পাক্কা খানদানী মানুষ। গ্রামের মানুষ সমীহ করে চলতো শিক্ষা-দীক্ষা, টাকাপয়সা ও প্রভাব- প্রতিপত্তি অগাধ থাকার কারণে। দাদা অতীতে এই বাড়ির মানুষের গৌরবজনক ইতিহাস শুনালেন। অনেক জায়গা জমির মালিক হওয়ায় গ্রামের কিংবা পাশের গ্রামের মানুষ উনাদের ক্ষেত খামারে কাজ করতো এবং জমি বর্গা চাষ করে তাদের পরিবার -পরিজন চলতো। আমি দাদার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনি বুঝা যায় এতে দাদা খুশি হয়। দাদার সাথে কথা বলতে বলতে মাগরিবের আজান হয় দাদা তাড়াতাড়ি উঠে চলে যায় আমি সোফায় বসে দাদার চলে যাওয়া পরখ করি। ঘরের দরজা জানালা সব খোলা যেন সন্ধ্যার শীতল হাওয়া হু হু করে ঘরে ঢুকে ঘরকে শীতলতায় স্নান করাচ্ছে।

আমার যে চাচীটা কানাডা থাকে আর উনার ছেলের বউয়ের সাথে কথা বললে ভালো হতো।
জ্বি ফোন দিলে ভালো হতো আমিসহ কথা বলবো।
হ্যাঁলো ভাবী, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছেন। আমি শিউলীর আব্বু।
ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বি আমি ভালো আছি ভাই। আপনারা কেমন আছেন।
আমরাও ভালো আছি ভাবী। আমাদের জামাই বাবা সকালে আসছে আপনার সাথে কথা বলতে ফোন দিয়েছি। সকালে আপনি স্কুলে ব্যস্ত থাকেন বলে —–। এখন কথা বলা যাবে ভাবী।
জ্বি এখন আমি বাসায় ফ্রী আছি।
আচ্ছা জামাইকে দিচ্ছি। আর চাচীর কাছে ফোন এখন করা যাবে? নাকি পরে করবো, সেখানের সময়তো আমি জানি না কখন দিন আর কখন রাত। না থাক উনাকে ফোন দিতে হবে না আমি বলে দিবো।আচ্ছা জামাইয়ের সাথে কথা বলেন।
আসসালামুলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন।
আমি ভালো আছি তুমি কেমন আছো, তোমার মা- বাবা কেমন আছে।
জ্বি সবাই ভালো আছে।
সময় সুযোগ করে একদিন আন্টির বাসায় আসিও। তোমার দাওয়াত যখন সময় হয় মন চায় চলে আসবে কোন অসুবিধা নাই।
ঠিক আছে আন্টি।

এইবার আপনার নানা শুশুর বাড়ীতে ফোন করি, আপনার নানী শাশুড়ী কথা বলবে বলেছে।
ঠিক আছে ফোন দেন, কথা বলবো সমস্যা নাই।
উনারা মুরব্বি মানুষ কথা বললে খুশি হবে, দোয়া করবে।
আমি আবার সময় করে আসবো তখন বেড়াতে যাবো আপনাদের সাথে নিয়ে।
হাঃ হাঃ হাঃ তাহলে ভালো হবে। সব সময় ফোন দিয়ে আপনার খবরাখবর জানাবেন এবং আমাদেরও খবর নিবেন। এখন ফোন নাম্বার আছে আমরাও ফোন দিবো আপনার খবর নিতে।
জ্বি অবশ্যই ।
(চলবে)।

রাজনীতিতে Politics প্রিয় স্বদেশে কিন্তু বুঝে না ছোট ছোট মৌলভীরা

250121_tts

এই মাত্র কিছু দিন আগেও এই হেফাজতের সাথে সরকারের কুটুম কুটুম ভাব ছিলো। তবে এই ভাবের আগে কিন্তু শাপলা চত্বরে বাঁশ ঢলা দিয়ে ছিলো আওয়ামী লীগ। সেইদিন হেফাজত কোনো হেফাজত করেনি কোমলমতি শিশুদের। অসংখ্য মাদ্রাসায় চার দেয়ালে বলাৎকার এবং গরুর মত পিটানো হেফাজত কওমীদের সিনেমার পার্ট। তবে শাপলা চত্বরে এতিম শিশুদের দিয়ে বাণিজ্য হেফাজত ভালোই করেছে। কিছু নাম গোত্রহীন এতিম শাপলা চত্বরে মরে তাজা ষাঁড়ের বলাৎকার হতে রক্ষাও পেয়েছে। বিনিময় সাবেক সভাপতি পুত্র পেয়েছে সরকার হতে জায়গা জমি ও টাকার খনি।

হেফাজতের আসল চেহারা।
দূর অতীতঃ এখন হেফাজতে জড়িত বেশ কয়েকটা ইসলামী রাজনৈতিক দল। এরা একসময় বিএনপির সাথে জোটে ছিল তখন আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী আন্দোলন করেছে। এরপর ক্ষমতায় আসে বিএনপি জোট সরকার তারপর মনে হয় হালুয়া রুটির ভাগে বনাবনি না হওয়ায় বিএনপি জোট ত্যাগ করে। সবচেয়ে মজার বিষয় ইসলামী দল ভেঙ্গে এক অংশ আবার আওয়ামী লীগের সাথে জোটও করে। তারপর বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক জল গড়িয়েছে। বিএনপি রাস্তায় রাস্তায় ঘেউ ঘেউ করে পাপ মোচন করতেছে। কিন্তু এইসব ইসলামী দল দেশের রাজনীতিতে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ এখন।

নিকট অতীতঃ হঠাৎ করে গজে উঠলো হেফাজত । শাপলা চত্বর সম্পর্কে সবাই জানে। সরকার বলে কিছুই হয়নি আর বিপক্ষকারি বলে শত শত লাশ পড়েছে। তবে সত্য হলো লাশ না পড়লে হেফাজত শাপলা চত্বর ছাড়তো না সরকার নাকানি চুবানি খেত। কিন্তু আমরা পরে দেখেছি হেফাজত ও সরকার চরম ধাক্কাধাক্কির ভিতর হয়ে গেল একে অপরের ভালো বন্ধু। কিছু হেফাজতি নেতা সরকারের কোলে বসে হালুয়ারুটি খেতে খেতেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন কওমী মাতা। লাভ হলো হেফাজত নেতাদের কিন্ত লাশ হলো এতিম কওম। কি সুন্দর! হেফাজতি মৌলভীদের পলিটিক্স। সেই সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের মোল্লাদের সাথে বসে ঘোষণাও দিলেন দেশ চলবে মদিনা সনদে।

কিন্তু এখন কি হলো।
বিএনপিঃ মাঠে নাই ঘাটেও নাই। মাঝে মাঝে উপনির্বাচনে হাজির হয়ে পার্থী আর উনার বউয়ের ভোট পায় আবার এর জন্যও নিজেরা নিজেরা করে কাদা ছুড়াছুড়ি। বিএনপিকে সরকার তারপরও ভয় পায় যদি বিএনপি সোজা হয়ে দাড়িয়ে যায়। যদিও এটা আদৌ সম্ভব না এমনিতে আবিষ্কার হয়েছে রাতের ভোট, অনুগত নির্বাচন কমিশনের দক্ষতায়। হামলা, মামলা, গুম, খুনে বিএনপি আরো ত্রিশ বছর পরও সোজা হবে না। এইদিকে জামায়াত রাজাকারের বদনাম মুক্ত হতে পারিনি এখনো। তাদের এতই করুণ দশা সরকার তাদের দল ভেঙে কোমরও ভেঙ্গে দিশাহারা করে দিয়েছে । তাই জামায়াত ঘোষণা দিয়েছে ত্রিশ বছর দলীয়ভাবে কোন নির্বাচন করবে না। জাতীয় পার্টি ও বাম দল এখন নাক ডুবিয়ে গোয়ালে খেতে আছে।তারপরও সরকার ভয়ে আছে।

আজই ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঘোষণা দিয়েছে মানব অধিকার লঙ্ঘন ও গণতন্ত্র হরণকারীদের প্রতি অবরোধসহ আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিবে। ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে সরকার ও হেফাজতের মাঠ গরম এটা দুই বন্ধুর ডায়লগ বিনিময় মাত্র। এতে হেফাজত এবং সরকার উভয় পক্ষ লাভবান হবে। মরবে শাপলা চত্বরের মত এতিম কওম। এতে হেফাজত পাবে আগের মত জায়গা-জমি ও বাড়ি-গাড়ি আর টাকার খনি। সরকার ঘোষণা করেছে ভাস্কর্য বানাবেই আর হেফাজত বলেছে মূর্তি ভাঙ্গবেই। মনে হয় এটা সরকার এবং হেফাজতের ভিতর সমঝোতা করা হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার বিভিন্ন দেশের কাছে বার্তা পাঠিয়েছে যে মৌলবাদী মাথা ছাড়া দিয়ে উঠেছে তাদের সাহায্য লাগবে। ইতিমধ্যে আবার জঙ্গীও ধরা হয়েছে । আর পশ্চিমারা মৌলবাদীর নাম শুনলেই বমি করে। তাই সরকারকে সাহায্য করবেই। আওয়ামী লীগ বিদেশীদের বুঝাতে চায় তারাই সন্ত্রাস এবং জঙ্গী দমনে একমাত্র উপযুক্ত দল।

আপনারা যারা হেফাজত হেফাজত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তোলে মরতে প্রস্তুত হচ্ছেন তারা গোবর মাথায় নিয়ে হৃদয়ে ইসলামের আগুনে জিহাদ করতে তৈরী হচ্ছেন তারা বিভিন্ন নদীতে লাশ হয়ে ভাসবেন কিংবা ডাস্টবিনে পচবেন। আগের মত সরকার অনুগত সমস্ত বাহিনী মাঠে নামবে অবুঝ হুজুরদের পিটিয়ে বড় হুজুরদের ঠান্ডা করবে।

ডায়াবেটিস রোধে ১০ ম্যাজিক খাবার

resize-350x250x0image-193101

ডায়াবেটিস এখন একটি কমন রোগ। ঘরে ঘরে মিলছে এই রোগী। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনি ইচ্ছে করলেই এই রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন শুধু খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ ও ব্যায়ামের মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞদের মত, ডায়াবেটিসের প্রথম পর্যায়ে তা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। যদি নিয়ম মেনে চলা যায় তাহলে নাকি মাত্র ৩০ দিনের মধ্যে কোনো ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিসকে মাত করে দেয়া সম্ভব। কিছু ফল ও খাদ্য উপাদান রয়েছে যা শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে শরীরে শর্করার পরিমাণ নামাতে সাহায্য করে। এই খাবারগুলো তারাও খেতে পারেন যাদের এখনো ডায়াবেটিস না হলেও পরিবারের সদস্যদের যদি ডায়াবেটিস আছে।

গাজর: গাজরে বেটা ক্যারোটিন আছে। যা শরীরে ইনসুলিনের উদ্দীপন নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত খাওয়া গেলে মাত্র ৩০ দিনে ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

মাছ: মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ থাকে। যা শরীরের ইনসুলিনের উৎপাদন কম করে। সপ্তাহে দুই দিন করে খেলেই যথেষ্ট।

অলিভ অয়েল: অলিভ অয়েলের মধ্যে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে, যা শরীরের পক্ষে ভাল। শরীরে শর্করার পরিমাণ বাড়তে দেয় না। নিয়মিত অলিভ অয়েল খেলে শরীরে শর্করার পরিমান কমতে থাকে।

পাউরুটি: সাদা পাউরুটি অর্থাৎ যেটা ময়দা দিয়ে তৈরি হয় তা একেবারেই শরীরের উপযোগী নয়। তাই এই ধরনের পাউরুটিকে না বলুন। কিন্তু মাল্টি গ্রেন পাউরুটিতে হজমে কোনো সমস্যা হয় না। পাশাপাশি এতে ক্যালোরির পরিমাণও কম। যার ফলে আপনার ওজনও বাড়ে না এবং ডায়াবেটিসের সম্ভাবনাও কমে।

কমলালেবু: সপ্তাহে দুই দিন যদি কমলালেবু খেতে পারেন তাহলে মাত্র ৩০ দিনেই ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ফটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে। যা ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে।

আমন্ড: আমন্ড হল ডায়াবেটিস রোগীদের প্রিয়বন্ধু। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও প্রোটিন রয়েছে। আমন্ড যদি প্রত্যেকদিন দুটি করেও খাওয়া যায় তাহলে ৩০ দিনেই হাতেনাতে ফল পাবেন।

গ্রিন টি: ক্যাটেচিন, ট্যানিন রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। আর গ্রিন টি এই উপাদানগুলোতে ভর্তি। দিনে দুইবার করে গ্রিন টি পান করুন। যদি ৩০ দিনে ডায়াবেটিসের হাত থেকে মুক্তি চান তাহলে এই সহজ উপায়টি অত্যন্ত উপযোগী।

বিনস: বিনস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কারণ একে একাধিক ধরনের ফটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা শরীরের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

আপেল: আপেল শরীরে শর্করার পরিমাণ আচমকা উত্থান-পতন নিয়ন্ত্রণ করে রক্তে শর্করার পরিমাণে স্থিতি আনতে সাহায্য করে। প্রত্যেকদিন একটা করে আপেল খান। ওটস ওটস পেটের মধ্যে উৎপাদিত পাচক উৎসেচক ও যে খাবার আমরা খাচ্ছি তার শর্করাজাত উপাদানের মধ্যে সেতু তৈরি করে। এর ফলে শরীরে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিক হয়।

(ঢাকা টাইমস)

শিরোনাম আগের মত

20201

১৯শে নভেম্বর ইসরাত জাহান রাফির জন্মদিন ছিল। সে জন্মদিনে ইসরাতের ছোট ভাইয়ের স্মৃতিচারণ ।

#চিঠিঃ
আপু আপনাকে ভুলিনি আমি, আমার অনুভূতিতে এক নিবিড় স্বপ্ন হয়ে আপনি আছেন। অদৃশ্য ভালোবাসায় ভর্তি আমার অনুভূতিগুলো, আপুনি শুনতে পাচ্ছেন কি আমার শব্দহীন চিৎকার? আপনাকে হারিয়ে এখনো এক মানসিক বিপর্যয়ে নিমজ্জিত আমি। হাসিটাই আমাদের ভালো থাকার কারণ ছিল তাইনা আপু? কিন্তু কিছু মানুষরূপী জানোয়ার ইতি টেনে দিল আমাদের সম্পর্ককে। স্মৃতিচারণ করা ছাড়া নিজের মনকে শান্তনা দিতে পারছিনা।

বোন তোকে ভুলে থাকতে পারছিন আমরা।
তোকে উপলব্ধি করি আজো নিদ্রাহীন রাতে, একাকী নিঝুম দুপুরে, বিষণ্ন সন্ধ্যায়। উপলব্ধি করি একসাথে থাকার দীর্ঘ দিবস রজনী, এখনও অনুভব করি তুই পাশে না থাকার যন্ত্রণা। বোন তোকে নিয়ে কোন অনুভূতি কাব্যিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। বহু স্বপ্ন দেখতাম আজকের এই দিনটিকে ঘিরে। মানুষরূপে হায়েনারা তোকে আমার বুক থেকে কেড়ে নেওয়ায় তা এখন শুধুমাত্র কল্পনা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।

বাকি জীবনেও হয়তো পরিপূর্ণ পাবেনা আমার স্বপ্ন; একজন দায়িত্বশীল,প্রতিবাদী বোন হয়ে আমার মাঝে তুই বিরাজমান। কোন শব্দ দিয়ে তোর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা সম্ভব না!! বড় অসহায়ের মতো লাগছে নিজেকে। জন্মদিনে নেই কোন আনন্দ নেই কোন অনুভূতি, আছে শুধু মনের ভেতর জমানো কষ্ট। পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্র ভালোবাসা ভাই-বোনের ভালোবাসা, ভালো থাকুক পৃথিবীর সব ভাই-বোন। প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সূর্য যতটা মূল্যবান, তুই আমার কাছে তার থেকেও লক্ষ কোটি গুণ মূল্যবান কারণ তুই আমার বোন।
শুভ জন্মদিন।
বোন নুসরাত।

#আমার কথাঃ

আধুনিক যুগের নমরূদ সিরাজ । সাথে আছে তার সহযোগী সৈন্য সামন্ত। তাদের পরিচয় ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেতা। নেতারা এইখানে ধর্মীয় লেবাসে মুখোশধারী একজন নমরূদের সহযোগী। তাই একজনের মেয়ে একজনের বোন ইজ্জত আব্রু বাঁচাতে সংগ্রাম রত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে মরলো এই নমরূদ বাহিনীর হাতে। এরা রাজনৈতিক পতিতা যখন তাদের দল ক্ষমতায় আসবে কিংবা থাকবে তারা বিক্রি হবে চড়া দামে এই সব সিরাজের কাছে লোভ,লালসা ও লিপ্সায়। মা ,বোন, বউ ও মেয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে মরবে এদের হাতে।

সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনের ফাঁসির রায় হয়েছে। বাকি আসামীর বেশির ভাগই ওই মাদ্রাসার আলিম ও ফাজিল শ্রেণীর ছাত্র ও শিক্ষক। একজন ছাত্র ছাত্রদল একজন ছাত্র শিবির করতো। নুসরাতের দায়ের করা মামলার পর রুহুল আমিন থানা ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়েছিল। এজন্য সে অধ্যক্ষ সিরাজের পরিবারের কাছ থেকে টাকাও নেয়। রুহুল আমিন অনেক বছর সৌদি ছিল সেখানে ট্যাক্সি চালাতো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ফিরে আসে দেশে আস্তে আস্তে রাজনীতির গভীরে গিয়ে, গড়ে তোলে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী । শুরু করে চাঁদাবাজি বালু উত্তলোন সহ নানা অপকর্ম। অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে নজর দেয় দলীয় পদে।

একজন কমিশনারেরও ফাঁসির রায় হয়েছে। সে সহযোগী ছিল রুহুল আমিনের। একসময় ফুটপাথে বসে কাঁচা সবজি বিক্রি করতো। দল করেই টাকার কুমির বনে কমিশনার হয় এই মূর্খ। সে নেতা বনে সমাজের সালিশ করে টাকা খেত। এরা সবাই অধ্যক্ষ সিরাজের সহযোগী একমাত্র টাকা কারণেই। টাকাই সেতুবন্ধন তৈরী করেছে রুহুল আমিন সিরাজ ও ছাত্র শিক্ষকের মাঝে।

এই নারী লোভী অধ্যক্ষ একজন দুষ্ট লোকই নয় সে একজন প্রতারক ও সুদখোরও বটে। নানান অপকর্মে দক্ষ এক অধ্যক্ষ। ছাত্রীদের নির্যাতনের অভিযোগ থেকে শুরু করে নাশকতা ও মাল্টিপারপাস কোম্পানি খুলে অর্থ আত্মসাতের মামলাও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ছাত্রী নিপীড়নের অভিযোগ, টাকা আত্মসাতের অভিযোগসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তো আছেই। যত তাড়াতাড়ি ফাঁসির রায় কার্যকর হবে এত তাড়াতাড়ি দেশ কিছুটা স্বস্তি পাবে। না হয় বলতে হবে, মেয়ে জন্ম দেওয়া ও নেওয়া এই সমাজে অপরাধ। না হয় মেয়ে জন্ম দেওয়া বন্ধ করা হোক বাংলাদেশে।

0148187

জনগণের কষ্টের টাকা বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করবেন না মাননীয় রাষ্ট্র

05774606575

ভাস্কর্য কখনো কখনো সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়ে থাকে। আবার কখনো অন্য স্মরণ ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তৈরী হয়ে থাকে। যেমন আমার পোস্টে ছবি ভাস্কর্যটা ফেনীতে নতুন করা হয়েছে সালাউদ্দিন মোড়ে আর এতে সৌন্দর্যবর্ধক হয়েছে। এই ভাস্কর্য নিয়ে কারো কোন বাদ-প্রতিবাদ নেই মনে হয় সবাই খুশি। এই রকম ভাস্কর্য শহরে ও উপজেলা শহরেও করা হয়েছে। এই সব ভাস্কর্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এতই ভাইরাল হয়েছে যে মনে হয় সাক্ষাৎ বেহেস্তবাসী ফেনীর জনগন। কারণ এতে আল্লাহর নাম এবং ইসলামিক মন মানসিকতা বজায় রাখা হয়েছে।

আরেকটা ভাস্কর্য সম্মান প্রদর্শনের জন্য নির্মিত যেমন স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনার। স্মৃতিসৌধে বিশেষ বিশেষ দিনে আমারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং শহীদ মিনারেও তাই। এখানে কেউ পুজা করে না মাথা ঠেকিয়ে কিছু মানত করে না। এখানে দেশের জন্য আত্মত্যাগকারী বীর শহীদের স্মরণ করে। এই যে বাংলা ভাষা পেলাম এই যে বাংলাদেশ পেলাম এই টাতো যুদ্ধ করে মরে তারপর পেলাম। এখন যদি এইসব বীর যোদ্ধাদের একটু স্মরণও না করি তাহলে আমরা কিসের কৃতজ্ঞ জাতি হলাম। অবশ্যই ইতিহাস কালচার সংরক্ষণ করা উচিত। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে আমরা মুসলিম প্রধান দেশ। এই দেশে জঙ্গী যেমন সুবিধা করতে পারে না তেমনি নাস্তিকও হালে পানি পায় না। তাই ভাস্কর্য নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে বাহাস করে আমাদের শান্তি নষ্ট করবেন না।

এক পক্ষ বলেছে ঘাড় মড়কে দিবে যদি বেশী বাড়াবাড়ি করে। শুনে হাসি পেল কারণ ক্ষমতা তাদের দেশ তাদের। আরেক পক্ষ বললো বাংলার জমিনে মূর্তি বানাতে দিবোই না। এইটা শুনেও হাসি পেল যেন দেশ দোজখ হয়ে যাবে দুই একটা মূর্তি বানালে। আরব দেশে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ফরজটা পড়ে, শতকরা ৯৯ জন সুন্নত পড়ার গরজ বোধ করে না। কিন্তু চারটা বিয়ে করা সুন্নত আর তা পালনে সচেষ্ট থাকে শতকরা ৯৯ জন। আরে সবচেয়ে বড় কথা এই ভাস্কর্যের মাথায় বসে ছোট চড়ুই পাখি হতে বড় চিল পর্যন্ত বিষ্ঠা ত্যাগ করবে। দেখবেন আপনারা পরিষ্কার করার দরকারও মনে করবে না কেউ। ছাগল এবং পাগল উভয়ে চুচু করবে, সুযোগ পেলে হাগুও করবে দেখার কেউ থাকবে না। তাহলে ভাস্কর্য তৈরী করতে এত উদ্যমী কেন। জানতে হলে দেখতে হবে যমুনা টিভির অনুসন্ধানী অনুষ্ঠান 360 ডিগ্রী।

লুটপাটের সব জায়গা শেষ করে এখন শুরু করেছে ভাস্কর্য নির্মাণের নামে লুটপাট। চট্টগ্রামের এক ভাস্কর্য নিয়ে যমুনা টিভির 360 ডিগ্রী অনুষ্ঠানে সুন্দর লুটপাটের প্রতিবেদন দেখানো হল। ভাস্কর্য শিল্পীর সাথে চুক্তি করেছে ১৮ লাখ টাকায় আর হিসাবে দেখিয়েছে ৮৬ লাখ টাকা! প্রকল্পে মোট খরচ যেখানে হয়েছে দুই কোটি টাকার মত সেখানে ৫ কোটি খরচ দেখিয়ে এখনো কাজ শেষ হয়নি। আবার নতুন বরাদ্দ চেয়েছে কাজ শেষ করতে!

দেশব্যাপী ভাস্কর্য নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার। কেন্দ্রীয় সরকারকে তেলে ভাসিয়ে নিজেদের লুটপাটের জায়গাটা নির্বিঘ্ন করতে চায়। স্থানীয় সরকার ভালোবাসার যায়গা থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ করছে বিষয়টি এমন না। তারা নিজেদের লুটপাট ঠিকঠাক রাখতে নাম ব্যবহার করছে মাত্র। এই লুটপাটের সাথে জড়িত আছে মেয়র থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার। এরা অন্যের আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভাস্কর্যকে লুটপাটের মেশিন হিসাবে ব্যবহার করছে। অনুষ্ঠানে দেখবেন এক পর্যায় সাংবাদিককে ঘুষ দিতে যায় সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার। এসব লুটপাটের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করা অতীব জরুরী। বন্ধ না করলে স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে। জনগণের কষ্টের টাকা বিদেশে পাচারে সহযোগিতা করবেন না মাননীয় রাষ্ট্র।

MG_16057

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

20201109_103236

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৪১তম পর্ব।

মৌরি কেমন আছো মা মনি।
আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন। দাদী ফোন করে ছিল উনিও ভালো আছে।
আমি ভালো আছি। আমি গ্রামের বাড়ি হতে আসার পর খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই আর ফোন দেওয়া হয়নি।
আপনি নিরাপদে বাসায় এসেছেন আল্লাহর শোকর।
তোমার সব কিছু ঠিকমতো চলতেছে মা।
জ্বি আম্মু, আমার কোন সমস্যা হচ্ছে না। ভবিষ্যতে শুধু হাইটেক মাল্টি কোম্পানিতে একটা জব হলে হবে যেন আম্মুকে নিয়ে আসতে পারি তারপর মা মেয়ে একসাথে ইউরোপ আমেরিকা ঘুরে বেড়াবো।
হাঃ হাঃ হাঃ। আল্লাহ যেন সেই স্বপ্ন পূরণ করে। তবে আমি আমার সোনার বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও ঘুরতে আরাম পাবো না। আমি দেশে ঘুরে বেড়াবো সাগরমুখী হয়ে, আমি ঘুরে বেড়াবো পাহাড়িয়া অঞ্চলে। পাহাড়ে দাঁড়িয়ে মেঘের সাথে মিতালি তালে সুখের বীনে বাজবে নজরুল। সাগর গর্ভে ছলাৎ – ছলাৎ পানির ঢেউয়ে সুর মিলিয়ে বাজবে মরমী ও লালনের সুর। তখন আমি দেখবো অপরূপ জন্মভূমি। ওহ ওহ আম্মু আজ আপনি কবি হয়ে গিয়েছেন।

যার জীবনটা করুণ সুরের বীন সে হবে আবার কবি। যার স্বামীটা লোভী। যার মা ভাই শুধু মানসিক যন্ত্রণা দেয় যার শাশুড়ি মা বৌমার জন্য প্রবাসে কান্নারত যার একমাত্র মেয়েটা বুকে নাই সে অনেক কষ্টে বেঁচে থাকে। সে কেমন করে কবি হবে মৌরি মনি। আম্মু এমন করে বলো না তাহলে আমি কান্না করবো না না কান্নাকাটি করলে হবে না তোমার কান্না আমার বুকে করুণ সুর হয়ে বাজে। সারাদিন আর কিছু ভালো লাগবে না। একটা আদর দিয়ে রেখে দাও মা।

এই মেয়েটা যেন আমাকে বেঁচে থাকার অক্সিজেন দিচ্ছে। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে তার করুণ কণ্ঠ আমার মন ও মেজাজ ব্যথিত করে প্রচণ্ডভাবে। আমি কিংবা অন্যজন শিউলীর মা বাবাকে যেত শান্তনা দিই তাদের মন শান্তনা খোঁজে পাবে না। তবে আস্তে আস্তে ভুলে যাবে অবশ্যই তার জন্য সময়ের দরকার। সন্তানকে অকৃত্রিম ও অমলিন যত্ন দিয়ে লালন পালন করে প্রতিটি পিতামাতাই আবার সেই সন্তানই একদিন ছেড়ে যায় পিতামাতাকে। এক সময় সন্তান পিতামাতাকে কৃত্রিম ভালোবাসা দিতেও কৃপণতা করে। যদিও পিতামাতাকে ত্যাগ করা এক সময় আমাদের দেশে কম ছিলো এখন আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে। আর এটা ধনী গরিব, শিক্ষিত অশিক্ষিত সব পরিবারে হচ্ছে কম বেশী। এর পিছনে হয়তো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে কিন্তু ঘরের কোণায় একটা রুম আর দুই বেলা ভাত এবং একটু যত্ন কেন এত দামী অত অধরা হয়ে যাচ্ছে জানি না। আমরা সবাইতো আজ সন্তান কাল মা অথবা বাবা তাহলে কেন এই সুন্দর সামাজিক বন্ধন ভেঙ্গে চুরমার করছি আশ্রয় কেন্দ্রের অনেক মা বাবা সন্তানের জন্য নীরবে অশ্রু জল বিসর্জন দেয়, উদাসী হয়ে দিন কাটায়।

এই উদাসী পিতামাতার তালিকায় আছে ব্যবসায়ী ব্যাংকার,শিক্ষক অধ্যাপক, সরকারি বেসরকারি চাকরিজীবী, ধনী দরিদ্র, দিনমজুর, ড্রাইভার ও হেলপার। এইসব পিতামাতার আশ্রয়দাতাও কারো না কারো সন্তান, কারো না কারো বাবা। আজব দুনিয়া একজন সুশীল ও মানবিক আরেকজন অসুর ও অপরাধী। প্রতিটি পিতামাতারই আমার কাছে এক একটা গোলাপ। সন্তানদের বড় বড় মানুষ করে পিতামাতাই যায় পরের ঘরে। রিক্সা ঠেলে কিংবা ঠেলাগাড়ি ঠেলে সন্তানদের বড় করলেও কপালে সুখ আসে না। বাবা দিবসে ফেসবুক এবং টুইটারে বাবার প্রতি এত ভালোবাসা দেখি যে মাথাই টালমাটাল। আমিও সন্তান আপনিও সন্তান তাহলে এত বৃদ্ধ মানুষ যে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে তারা কে বা কাহারা। প্রতিটি বৃদ্ধ মানুষই আমার কাছে স্বর্গ তাই আমি বলবো রোজ রোজ পূজা দিন স্বর্গের দুয়ারে।

একটা কথা বলার জন্য মনে করে ছিলাম।
কি এমন কথা যে বলতে ভয় পাচ্ছো । বলে বলতে পারো শিউলীর মা।
ঘরে যা আছে টাকা পয়সা এবং আরো কিছু ধার কর্জ করে একটা গরু কিনলে কেমন হয়।
তুমি ঠিক বলেছো কিন্তু আরো দশ/পনের হাজার টাকা লাগবে তা কোথায় পাবো।
আপনি এখন ধার কর্জ করতে পারলে পরে তা আস্তে আস্তে শোধ দিবো। এবং চাচীকে বলবো আর আমার মাকেও বলে কিছু নিবো।
ঠিক আছে দেখি চেষ্টা করে।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪২তম পর্ব।

এইদিক সেইদিক করে শিউলীর বাবা আমিন উদ্দিন গরু কিনে একটা। গরু নিয়ে এখন সময় কাটে আমিন উদ্দিনের । আস্তে আস্তে আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে আমিন উদ্দিন ও তার স্ত্রীর ।
একবার চাচীর সাথে কথা বলা দরকার। উনি কিছু টাকা দিলে কর্জটা তাড়াতাড়ি শোধ করা যাবে। আচ্ছা শিউলীর মা তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে , উনি মাত্র কিছুদিন আগেই টাকা দিলো এখন আবার বলাটা কি ঠিক হবে।
তা ঠিক বলেছেন, এখন আর কিভাবে শোধ দিবো ধার দেনা।
দিতে পারবো তুমি এত চিন্তা করো না।
হাঃ হাঃ হাঃ ঠিক আছে আমি আর চিন্তা করবো না। একটা কথা চিন্তা করি।
কি এমন কথা চিন্তা করো , শুনতে পারি। সন্তান লালন পালনে কিংবা মরণেও পিতামাতার জীবন ওলটপালট হয়ে যায়। যেন মনে হয় সন্তান না মরে পিতামাতার একজন মরে গিয়েও সন্তানটা বেঁচে থাকুক অথচ সেই সন্তানই একদিন সব ভুলে যায়। পিতামাতাকে নিজের কাঁধের বোঝা মনে করে। কত শত মা বাবা অতীত জীবনের মনে করে কান্না করে আমরা তার হিসাবও রাখি না। অথচ পৃথিবীর সব ধর্মই মানুষকে মানবিক হতে বলে।

শক্ত হাতে বারিন্দার গ্রিল ধরে উদাসী মনে আকাশ পানে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন বৃদ্ধ বয়সী মা বাবারা। অশ্রুতে দুই চোখ থাকে ছলছল। হয়তো ফেলে আসা দিনগুলোতে ফিরে গিয়ে জীবনের হিসাব কষেন। ঠিক কোন জায়গায় ভুল ছিল? যে ভুলের শাস্তিস্বরূপ ছেলে, বউমা, মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিতে ভরা সংসার থাকা সত্ত্বেও ঠাঁই এই বৃদ্ধাশ্রমে? জীবনের প্রথম ও শেষ বয়সে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুই বয়সেই মানুষ শিশু হয়ে যায়, পরনির্ভরশীল হয়ে যায়। সমাজ ও পরিবারের কাছে প্রবীণেরা চায় সম্মান ও ভালোবাসা। জীবনের শেষ বেলায় সন্তানের সান্নিধ্য ও পরিজনের সঙ্গ খুব প্রয়োজন। কিন্তু পশ্চিমা সংস্কৃতির নির্মম ও কলঙ্কময় উপহার হিসেবে প্রবীণ নিবাস ও বৃদ্ধাশ্রম ছেয়ে যাচ্ছে সমাজের সব স্তরে, যা মানবতার নির্মম বন্দিশালা।

দীর্ঘ অপেক্ষার যেন শেষ নেই। সারাটি জীবন যে সংসার, সন্তান-সন্ততির কথা চিন্তা করে, তাদের মঙ্গলের জন্য মা বাবা দিনরাত পরিশ্রম করেন, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে নিজেদের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে হলেও সন্তানকে সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেন, আর সেই সংসার থেকে তাদের দূর করে দেওয়া হয়। সামান্যতম ঠাঁই, সহানুভূতি, ভালোবাসা তাঁরা পান না। বর্তমানে কাজের তাগিদে বা আরো বিভিন্ন কারণে একান্নবর্তী পরিবার ভেঙে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট পরিবারে। শুধু স্বামী-স্ত্রী ও তাদের সন্তান নিয়ে গঠিত সেই পরিবার। এই আধুনিক সভ্যতার সব উপকরণ, ব্যক্তি ভোগ-বিলাসের সব উৎস দিয়ে সাজানো সেই সংসার, শুধু ঠাঁই হয় না প্রবীণ মা বাবার। রাস্তায়ও ফেলে যায় অসুস্থ বাবা মাকে,
চিকিৎসার অভাবে মারা যায় এমন নিষ্ঠুর সংবাদ প্রায় শুনা যায়। বাবা মা কর্মক্ষম হারিয়ে গেলে তাদের বোঝা ভাবতে শুরু করে সন্তান-সন্ততি।

অথচ বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের পাশ সন্তানদের ভরসা হিসেবে থাকার কথা। বাবা মা কখনো বোঝা নয় তারা অভিজ্ঞ বটবৃক্ষের মতো। তারা জীবনকে আরো খুব ভালো করে চেনেন। তাদের পরামর্শ সন্তান এর জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক হয়।বাবা মায়ের প্রতি দায়িত্বে যেন কোনো ত্রুটি না হয় তা প্রত্যেক মানুষের ভাবা উচিত। অনেক সময় নিজের কর্মসংস্থান ও ভালো কাজের সুযোগের জন্য দূরে থাকতে হয়, সেই মুহূর্তেও যেন বাবা মায়ের সামান্য কষ্ট না হয়, তার সমস্ত বন্দোবস্ত করা প্রতিটি সন্তানের দায়িত্ব। আর আমি আপনি নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে ঠিক যেভাবে আচরণ করবো, আমার চোখের মণি সন্তানও সেরকম ব্যবহার করা শিখবে। তাই নিজের ভবিষ্যতের কথা ভেবে হলেও নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার। বাবা মা বোঝা না সবচেয়ে আপনজন, সন্তানের নির্ভরতার স্থান। তাই কোন মা বাবার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম যেন না হয়, তাদের ঠিকানা যেন সন্তানের ভরা সংসারেই হয় ,সন্তানের হৃদয়ে হয়।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৩তম পর্ব।

ইউএইচডিপি নামে একটা সেবা প্রতিষ্ঠানে বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক দম্পতি আশ্রিত আছেন বেশ কিছু দিন ধরে । উনাদের সন্তানেরা রেখে গিয়ে আর খোজ নিতেও আসে নাই কখনো।
“৬৩ বছর আমরা এক সাথে থাকি,
আজ পর্যন্ত কখনো তার গায়ে একটা ফুলের টোকাও তো দুরের কথা উচ্চস্বরে কথাও বলিনি।
আমার ডান হাতটা কাঁপে, ঠিক মত খাবার হাতে তুলে খেতে পারি না। আর তাই প্রায়ই মুখে তুলে খাইয়ে দেয় সে। অনেক অভাবের মাঝে আগেও ছিলাম, আমার স্ত্রী অনেক সুন্দরী ছিলো কখনোই অভাব আমাদের মাঝে দেয়াল হয়নি।।
এর মাঝে সন্তানরা বড় হলো, ভেবেছিলাম এবার হয়তো অবসর নিবো। জীবনটা অন্য সব বয়স্কদের মত মসজিদ আর বাসায় কেটে যাবে। অথচ তারা আমাদের ফেলে চলে গেলো। আবারো একা হয়েই রইলাম, তবে আমরা কখনোই একজন আরেকজন কে অসম্মান করিনি।“
ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার ভিতর বেড়ে উঠা সন্তানেরাও পিতামাতাকে সেবা কেন্দ্রে রেখে যান।বৃদ্ধ মোজাম্মেল হক এইসব কথা বলতে বলতে হু হু করে কেঁদে উঠেন এই কান্নাায় পরিবেশ ভারি হয়, এই কান্নায় আকাশ বাতাস সাক্ষী হয়। রাস্তায় হেঁটে যাওয়া অপরিচিত পথিক থমকে দাঁড়িয়ে জানালায় তাকায়। ডাষ্টবিনে খেতে আসা কাক ও কুকুর নিঃশব্দ হয়ে বুঝতে চায় মানবের কান্নার রহস্য। কাক ও কুকুর খাওয়া ছেড়ে চলে যায় হয়তো মোজাম্মেল হকের কান্না তাদের ব্যথিত করে। হয়তো অকৃতজ্ঞ সন্তানদের ঘৃণায়।

নাহিদ পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে সিটকে পড়ে জীবনের চেনা পথ হতে এতে তার জীবনের সৌন্দর্যহানি ঘটে ছেলে বেলায়। বাবার শাসন ও ভালোবাসা সে বুঝতে পারিনি মায়ের এক তরফা সীমাহীন প্রশ্রয়ের কারণে। মায়ের অতিরিক্ত ভালোবাসা ও প্রশ্রয় নাহিদকে করে তুলে বেপরোয়া ও বখাটে। বর্তমান কিশোর গ্যাং ঘটে উঠার পিছনে যেমন স্থানীয় ক্ষমতাবান লোভী নেতা দায়ী তেমনি পরিবারও দায়ী। নাহিদের বাবা ভালোবাসা ও শাসন দিয়ে নাহিদকে নিয়ম ও শৃঙ্খলা বদ্ধ রাখতে চেষ্টা করে ছিল। এতে যদি নাহিদের মা চুপি চুপি অন্যায় আবদার পূরণ না করতো বাবার মত ছেলেকে শৃঙ্খলায় রাখতো তাহলে তাকে আজ জীবনের অন্ধকার গলিতে হাবুডুবু খেতে হতো না। লেখাপড়ায় গাফিলতি করে রাজনৈতিক নেতার চালে পড়ে গ্রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নাহিদ বাবার বকাবকি পছন্দ হয়নি বলে ঘর ছাড়ে । তারপরও কম চেষ্টা করেনি তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিতে কিন্তু সে জড়িয়ে পড়ে মাদক নামক রাজ্যের সাথে আর এতে মাথার ছাতা সোবহান মিয়া। দিন দিন হয়ে উঠে ভয়ংকর নাহিদ।

প্রথম প্রথম মিটিং মিছিলে সীমাবদ্ধ থাকলেও আস্তে আস্তে হয়ে উঠে প্রচণ্ড অন্যায়কারি। আর সোবহান মিয়া সব অন্যায় হতে বাঁচিয়ে ব্যবহার করতে থাকে নিজের মত করে। মাদক, জুয়া ও অস্ত্র নাহিদের সান গ্লাস। একদিন সোবহান মিয়ার জমি দখল করতে গিয়ে মারামারি প্রতিপক্ষের হামলা মামলা হতে বাঁচতে পালিয়ে শিউলীদের এলাকায়। প্রেম ও বিয়ে তারপর আবার ফিরে আসে সোবহান মিয়ার কাছে। অল্প বয়সী বউয়ের উপর পড়ে সোবহান মিয়ার সুরমা লাগানো নজর। আকার ইঙ্গিতে ভয়-ভীতি দেখিয়ে ও বলে কুনজরে সফল না হয়ে মাদকসেবী নাহিদকে পুলিশ দিয়ে জেলে পাঠায়। তারপর সোবহান মিয়া নিজের পরিবার ও পরিবেশ অনুকূল করতে করতে দেরী হওয়ায় শিউলী নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানো জন্য ছুটতে ছুটতে জীবন হারায়।

সুজন, জামিন হয়ে গেল আল্লাহের কাছে শোকর।
হ্যাঁ শোকর আল্লাহর।
জেল হতে বাহির হয়ে শিউলীর মা বাবার সাথে দেখা করবো এবং শিউলীর কবর জিয়ারত করবো ।
খুবই ভালো হবে। তার আত্মা শান্তি পাবে।
জানি না শিউলীর মা বাবা কেমন আচরণ করবে। আরে বেটা নাহিদ, বোকা তুই ।
কেন , কি হলো।
শিউলীর মা বাবা তোকে দেখলে আনন্দিত হবে, খুশি হবে।
ওহ ! আচ্ছা আচ্ছা।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৪তম পর্ব।

দুপুর দুইটা বাজে এখন বাসায় চলে যাই। ফ্রেশ হয়ে খাবো একসাথে, আমি আম্মু সকালে বলে আসছি তুই আজ জামিন পেয়ে জেল হতে ছাড়া পাবি। নাকি হোটেলে খেয়ে ফেলবি , তোর ইচ্ছা।
চল বাসায় খাবো বহু দিন আন্টির হাতের রান্না খাওয়া হয়নি, তাহাছাড়া ফ্রেশও হতে হবে।
ঠিক আছে।
সুজন সোবহান মিয়ার ওখানে যাওয়া দরকার ।
হুম, তবে সেটা পরেও করতে পারবি। আজকের দিনটা বিশ্রাম কর। খেয়ে ঘুম দিতে হবে আমাকে, না হয় আমার মাথা ব্যথা করবে। এমনি সকালে রোদের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে বেশ সময়।
অনেক কষ্ট দিতেছি তোকে দোস্ত, যদি সম্ভব হয় এই অধমকে ক্ষমা করে দিবি। তোর কাছে আমি ঋণী থাকতে চাই জীবন অবসান হওয়া পর্যন্ত কারণ এই ঋণের মূল্য শোধ করার সেই ক্ষমতা আমার নাই। আরে এত আবেগী কথা বলতে হবে না। তুই আমার ভাই ও বন্ধু । তবে একটা জিনিস চাইবো সেটা হলো জীবনের কোন পর্যায়ই শিউলীর মা বাবাকে ভুলে যাবি না। যেতটুকু সম্ভব তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে চেষ্টা করবি। জীবনকে উপভোগ করা শ্রেয় তবে সেটা স্বাভাবিকভাবে এবং সামাজিকভাবে করাই উত্তম। আমি তোর ভালো চাই তাই মন্দ ত্যাগ করতে বলবো বাকিটা তোর ইচ্ছা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর নির্ভর। আর ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।
এইসব বলে আমাকে লজ্জা দিবি না দোস্ত। আমি ভালো হলেও সোবহান মিয়াতো আর ভালো হবে না।আমি তাকে বাবার মত সম্মান করতাম বলে তার জন্য সব করেছি আর সে কিনা আমার বউ শিউলীর প্রতি কামনার চোখ দেয়। শিউলী আমাকে অনেক বলেছে আমি বিশ্বাস করি নাই তাই গুরুত্বও দিতাম না আসলে সোবহান মিয়ার জনদরদী ও সমাজ সেবক নেতার মুখোশে আমি অন্ধ ছিলাম। ভাবতেই খুব অবাক লাগে বৃদ্ধ একজন লোক মেয়ের বয়সী একজনের প্রতি কামুক নজর দিতে পারে।

আসলে নাহিদ ভালো মানুষের মুখোশ শুধু রাজনৈতিক নেতা নয় সমাজের আরো কিছু মানুষও এমন মুখোশ পরে আছে। এরা আমাদের নজরে মানবিক ও সৃজনী মানুষ। এদের ভিতর আছে মানুষ তৈরির কারিগর হুজুর ও মোল্লা ,শিক্ষক ও অধ্যাপক, ব্যবসায়ী ও চাকরীজীবি, একমাত্র মুখোশ বিহীন মানুষ হলো সমাজের নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া আমজনতা। সমাজের উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ছুটছে তো ছুটছে শুধু লোভের পিছনেই ছুটছে। কিছু মানুষের নৈতিকতার এত অধঃপতন হয়েছে যে এদের মানুষ ভাবতেও ঘৃণা হয়। এর ভিতর গুটি কিছু সর্বজন সম্মানিত লোক আছে ভয়ংকর পশুর চেয়েও খারাপ। এইসব মুখোশধারী লোককে পশু বললে যেন পশুরও অপমান হবে । এইসব বিবেকহীন নরপশুদের খবর আমরা মাঝে মাঝে টিভি নিউজে দেখি পেপার পত্রিকায় পড়ি। লজ্জাজনক এইসব খবরে থাকে শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি কিংবা বলৎকার কোন ছাত্রকে। মাধুর্যমণ্ডিত মুখে দাড়ি ও মাথায় টুপি দেওয়া ইসলামী লেবাসধারি মোল্লা খবরের শিরোনাম হয় মাদ্রাসার এতিম ছাত্রকে বলৎকারে। তখন মন চায় বলতে এরা মানুষ না।

শিক্ষক হলো সমাজের বিবেক। মোল্লা হলো সমাজের অক্সিজেন । এই দুষিত অক্সিজেন নিয়ে দুষিত বিবেকের শিক্ষা নিয়ে কখনো আদর্শ মানুষ হবে না আদর্শ সমাজ হবে না আর আদর্শ সমাজ না হলে আদর্শ রাষ্ট্র হবে না। দেশের সর্বস্তরের জনগণ মোল্লাদের সম্মান করে তারা সাধারণ দশজন হতে ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখে তাই অসামাজিক কোন কাজে ধরা পড়লে হৈচৈ বেশী হয়। মানুষের মানতে কষ্ট হয় একজন মৌলভী পশু, মানুষের মানতে কষ্ট হয় একজন শিক্ষক ছাত্রীর ধর্ষক। এমনিতে সমাজে অনাচার বেড়েছে নীতিহীনতার কারণে। রাষ্ট্র আজ রুগ্ন বলে এক শ্রেণীর লোক প্রচণ্ড ক্ষমতাবান। আর ক্ষমতাবানদের যাতাকলে পিষ্ঠ হচ্ছে নিরহ জন। অথচ রাষ্ট্রই সব নাগরিকের মালিক। কিন্তু রাষ্ট্র কিছু লোকের মা কিছু লোকের মাসী মা আবার কিছু লোকের সৎমাও। বাকি কিছু লোকতো রাষ্ট্র নামক মায়ের সন্তানই না আর তারা হলো গরিব জনগণ। অথচ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে গরিবই বেশী। মনে হয় গরিবের রাষ্ট্রের সন্তান বলে পরিচয় নাই বিধায় আইন আদালত তাদের কাছে থাকে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে আর অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সেবাতো স্বপ্নের রাণী। এমন কুলষিত লোক নিয়ে রাষ্ট্র কখনো চলতে পারে না। তাই এদের সীমাবদ্ধ করা সময়ের দাবি ।

সমাজপতিরা সমাজ সুন্দর করার কথা মুখে বলে কিন্তু কাজ করে উল্টোটা। সন্তাস ও মাদকের ধর্মবাবা কে খোজ নিলে আমরা লজ্জা পাবো ভয় পাবো কারণ এইসব ধর্মবাবারা সমাজের অধিপতি। কিন্তু আবার সবাই নয়, ভালো সুন্দর মন ও মননের সমাজপতিরা রাষ্ট্রের ধারক বাহক হতে পারে না অল্প কিছু অসুররের কারণে। সমাজকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আধুনিক ও সৃজনশীল করে বাসযোগ্য করার লোকও আমাদের দেশে বেশী মনে হয় তবুও কেন আমরা অশিক্ষা কুশিক্ষার হতে দুরে সরতে পারছি না তা প্রশ্নবোধক।
(চলবে )।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪৫তম পর্ব।

আমাদের দেশে ভবঘুরে ও হাটে বাজারে গান গাওয়া অশিক্ষিত লোক আইন প্রণেতা হয়। চোরা কারবারী , মাদক কারবারী, মানব পাচারকারী ও জনগণের সম্পদ লুন্ঠনকারী নিজের আসল পরিচয় গোপন করে মুখোশ পরা লোকটি আইন প্রণেতা হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র জীবনে সন্ত্রাসের নেতৃত্বদানকারী আইন প্রণেতা হয়। এইসব আইন প্রণেতাকে বিসিএস ডিগ্রীধারী স্যার স্যার করতে হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মদ খেয়ে মূর্খ নেতাই গালি দেয় একজন উচ্চ শিক্ষিত জেলা প্রশাসককে। আর জেলা প্রশাসক মূর্খ ও চরিত্রহীন নেতার ক্ষমতার ভয়ে জ্বি স্যার জ্বি স্যার করে। আরো মজার ব্যাপার হলো অনেক আইন প্রণেতা মহান সংসদে দাঁড়িয়ে মিথ্যা ভাষণ দেয় এবং অন্যের চামচামিতে সময় নষ্ট করে। প্রতিপক্ষকে অশালীন ভাষায় গালি দিয়ে সংসদে হইচই করে সময় অতিক্রান্ত করে আর এর ব্যয়ভার বহন করে সাধারণ জনগণ। তাই শিক্ষিত মেধাবী যুব সমাজ রাজনীতির প্রতি অনিহা প্রকাশ করে। এই কারণে রাজনীতি শালীনতা হারাচ্ছে। ফেনী জেলার পশুরাম উপজেলায় যে ভারতের সীমান্ত এলাকা সেখানে আছে মাদক ও চোরা কারবারীর শক্ত সিন্ডিকেট। ইউনিয়ন মেম্বার চেয়ারম্যান হতে উপজেলা চেয়ারম্যান পর্যন্ত এতে জড়িত। তারা এত শক্তিশালী যে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারি কর্মকর্তাকে মেরে ফেলার জন্য হামলা করে শেষ পর্যন্ত সেই কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে দিয়ে জীবন বাঁচায়।

তবে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার সাড়াশী অভিযান পরিচালনা করে। এতে শত শত লোক ক্রস ফায়ার দেওয়া হয়। কিন্তু নিজ দলীয় প্রভাবশালী বহাল তবিয়তে থাকে আর মাদকের বাণিজ্য করে। এই হলো আমার দেশ। এখানে শিশু শিক্ষায় আনন্দ নেই আছে গরুর মত এক গোয়ালে ঘাস খাওয়া। এখানে বিজ্ঞানবৃত্তিক কর্মময় শিক্ষার চিন্তা নেই আছে হাজারো কোটায় আবদ্ধ চাকরীর লাইন। এখানে ইংরেজি মাধ্যমের এতিমখানা নেই আছে কওমি নামে দোয়া দরুদ পড়ার মাদ্রসা। এখানে সরকারি মাদ্রসার আধুনিকীকরণ নেই আছে সরকারী মাদ্রসার কোন ভালো ছাত্রকে ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। এখানে আরো আছে জাল সনদে শিক্ষক হওয়া, ডাক্তার হওয়া, আরো আছে জাল সনদে বিদেশে গিয়ে ধরা পড়া । সবচেয়ে আজব যেটা আছো সেটা হলো জাল সনদের মুক্তিযোদ্ধা। এই মুক্তিযোদ্ধারা আসল দেশপ্রমিকের চেয়ে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা বেশি ভোগ করে। এতসব জালের ছড়াছড়িতে আসল নকল বুঝাই দায় এই হলো আমার সোনার বাংলাদেশ। এখানে মাদক বিক্রি করতে করতে নাম পাল্টে যায় হয়ে ইয়াবা যদু মধু। সে মাদকের টাকায় প্রাসাদ বানায় কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে জন প্রতিনিধি হওয়ার জন্য ভোট চায় আর কারবারী হিসাবে ধরা পড়ে মরে যায় রাম রহিম।

শতশত দিবস আছে, মা দিবস ও বাবা দিবসের পাশাপাশি ভাই-বোন দিবসও আছে । অথচ আজব এই দেশে ভাই বোনের সম্পত্তি মেরে খায়। আসলে সব দিবস বাদ দিয়ে মন সাদা করণ ও মানবিক হওয়া দিবস পালন করা উচিত। আমাদের দেশে দিবসের কোন হিসাব নাই। নেতার জন্ম দিবস যেমন পালন হয় তেমনি আবার মৃত্যু দিবসও পালন হয়। এর ভিতর আরো আছে জেলে যাওয়া দিবস জেল হতে বাহির হওয়া দিবস আরো আছে বিদেশে যাওয়া দিবস এমকি দেশে আসা দিবসও পালন করা হয়। আর এতে অতি উৎসাহী অংশীদার থাকে মিডিয়া জগত। আবার মৃত নেতার কবরটিও কোটি কোটি টাকা খরচ করে দৃষ্টিনর্দন কারুশিল্প করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে মৃত নেতার কবরে এত অগাধ টাকা খরচ কিনা প্রশ্নবোধক। আরো বেশী টাকা খরচ করলেও কারো কিছু বলার অধিকার নেই যদি সেই টাকা নেতার নিজস্ব লোকজনের হয়। কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে টাকা খরচ করে কবরে মার্বেল ও টাইলস লাগায় আমাদেরই দেশে।

আর এই সমস্ত টাকা দেশের জনগণের। দেশের জনগণের টাকা খরচ করে কবরকে এমন জোলুস করায় মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় না কিংবা জনসাধারণের ভালোবাসাও নেতার প্রতি বাড়ে না তবুও ক্ষমতা পেলে এমন করে। দলবেধে যখন কবর জেয়ারতে যায় মনে হয় সেই দলেও মাদকসেবী কিংবা মাদক কারবারী নেহাৎ কমই থাকে না। এখন এমন যুগ য়াবা ইয়বাখোর দিনাজপুরে বাঁশের মাঁচায় শুয়ে হা করে আর সরাসরি মায়ানমারের ইয়াবার কারখানায় বসে বিক্রেতা ইয়াবা গ্রাহকের মুখে ছুঁড়ে মেরে খাইয়ে দিতে পারে।
(চলবে)

বিবেক বর্জিত দেশ বিদেশ হাওয়ায় উঠে বিবেক

FB_IMG_1604134812416

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ একজন বিকৃত মস্তিস্কের মানুষ। সাথে করে যে বউটা নিয়ে হাঁটেন সে পঁচিশ বছরের বড় তার স্কুল শিক্ষিকা। ছোটকালে এই মহিলার সাথে দৈহিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে স্কুল ছাড়া হয়। মাক্রোঁ অন্য স্কুলে ভর্তি হয় আর শিক্ষিকাকে বদলী করা হয় অন্যত্র তারপরও তাদের অবৈধ সম্পর্কের বিচ্ছেদ হয়নি। ছোটকাল হতে চতুুর একরোখা বদমেজাজি মাক্রোঁ। আর বর্তমানে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে মুসলিমদের ধর্মে আঘাত করে বিমাতা সুলভ আচরণ করতেছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) একজন মহামানব। উনার আদর্শ সমগ্র মানব জাতির জন্য কল্যাণকর। হযরত মুহাম্মদ (সা.) মুসলিম জাতির সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া মহামানবদের একজন। তাই উনাকে ব্যঙ্গ কিংবা কটাক্ষ করার অধিকার কোন ব্যক্তি সমাজ এবং রাষ্ট্রের নাই। যদিও উনার কোন ছবি কিংবা চিত্র পৃথিবীতে নাই তারপরও কল্পনা করেও অসম্মান করতে পারেন না কেউ। ফ্রান্স যা করেছে তা খুবই ঘৃণিত কাজ এবং নিন্দনীয় তারা খুবই হীনমন্যতার পরিচয় দিচ্ছে। একজন মহামানবকে ব্যঙ্গ করার নিন্দা জানানোর জন্য কোন নির্দিষ্ট জাতি কিংবা গোষ্ঠির লোক হতে হবে এমন কথা নাই। আপনি সুস্থ ও মানবিক হলে সুস্থ ও মানবিক পথে ঘৃণা জানাবেনই। এবং প্রতিটি ধর্মের লোককে মুহাম্মদ (সা.) এর মত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে। উনি শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য নয় সমগ্র মানব জাতির কল্যাণে কাজ করেছেন।

অথচ দুঃখের বিষয় এমন মহামানবকে অপমানে আমরা বেছে নিয়েছি উগ্রতাকে। তবে আশার কথা হল মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির শালীনভাবে প্রচণ্ড প্রতিবাদ করেছেন। তুর্কী প্রেসিডেন্ট প্রতিবাদে সবার আগে আছে। এমনকি রাশিয়াও এগিয়ে এসেছে। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে, রাশিয়া যে দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলেছে এটাই আসল কথা।

রাশিয়া বলেছে ‘ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.) কে অবমাননা করার কারণে ফ্রান্সে সহিংসতা বেড়ে গেছে। কাজেই সবার আগে এ ধরনের অবমাননাকর কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।’ এছাড়া অবমাননাকর কার্টুন প্রকাশের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে, রাশিয়া বলেছে ‘কোনো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি অবমাননা ও ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত হানা রাশিয়ার দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়।’

মুল বিষয় হলো, রোগের মেডিসিন না দিয়ে যদি বলেন রোগ সারে না কেন তাহলে তো বিপদ! রাশিয়ার মত আমিও মনে করি ইসলাম অবমাননা অব্যাহত রাখলে ফ্রান্সের উপর হামলা কেউ ঠেকাইতে পারবে না। হামলা নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যত নিন্দা জ্ঞাপন করেন কোন লাভ হবে না।

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান প্রতিবাদে উত্তাল। তাদের দূতাবাস ঘেরাও করেছে এবং পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশ। কাতার, কুয়েত ও তুর্কী পণ্য বয়কটের ডাক যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। মুসলমানদের তীর্থস্থান মক্কা মদিনার মালিক ম্যাও ম্যাও করেছে একবার। আমরা গরিব মুসলিম নবীজীকে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালোবাসি কিন্তু আমাদের পঞ্চাশ ষাট হাজার লোক ফ্রান্সে থাকে আমাদের পোষাক তারা কিনে পরে আর এইটা হলো গরিব বাংলাদেশের অলংকার। ফ্রান্সের সব জিনিসপত্রই দামি যেমন কসমেটিক্স ও ইলেকট্রিক পণ্য উল্লেখ যোগ্য। আমার বিশ্বাস রাস্তায় যারা চিৎকার করছে তাদের লোকজন ফ্রান্স থাকে না এবং চিৎকারকারী একজন লোকের ঘরেও ফরাসী পারফিউমও নাই তাহলে কি বয়কট করবো আমরা।

আমি মুসলিম হিসাবে মুসলিম দেশের সরকার কে বলবো কূটনীতিক তৎপরতা বাড়ানোর জন্য যাতে উদারমনা দেশগুলি ফ্রান্সের উপর চাপ প্রয়োগ করে এবং এতে আমাদের নবীকে অসম্মান করতে পারবে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবতার ধর্ম। সহনশীল আচরণই ইসলামের মূলনীতি। আমরা একপক্ষ প্রচণ্ড কট্টর ধর মার কাট আরেক পক্ষ (মুসলিম ) ইসলাম ধ্বংস করতে পারলেই সুখ। মাথায় টুপি দিয়ে রমজান মাসেই জিনিসের দাম বাড়াই। মুনাফা করি ,ঘুষ খাই, সুদ খাই সেই টাকায় ঈদের বাজার করি। নামের সাথে হাজি লাগিয়ে সন্ত্রাস করি। আবার সুযোগমতো তাবলীগও করি।

আমাদের মত মুসলিম দেশেই গণ পিটুনির বহু প্রচলন আছে। গরিব চোর ধরে গণপিটুনিতে মারি, লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে গণ পিটুনিতে মারি, ছেলে ধরা বলে মহিলাকে গণ পিটুনিতে মারি সর্বশেষ কোরান অবমাননায় গণ পিটুনি দিয়ে পুড়িয়ে মারি। যাদের মারি তারাও মুসলিম। ঘরে তাদের ফুটফুটে নিষ্পাপ সন্তানও থাকে তারা মা মা, বাবা বাবা চিৎকার করে। কিন্তু মুসলিম শাসক বিচারও করে না। তারপরও বলবো মাক্রোঁ মানসিক রোগী সৌদি আরব বর্বর তাদের সঙ্গী। তবে আশার কথা হচ্ছে মাক্রোঁ আল জাজিরা টিভিকে বলেছেন -মহানবীকে (সা.) অবমাননা করে কার্টুন প্রকাশে মুসলিমদের ‘অনুভূতি’ কেমন হয়েছে তা বুঝতে পারছেন। কিছুটা আমাদের দেশের মত রাজনৈতিক কৌশলও অবলম্বন করেছেন। তাঁর বিরোধী রাজনৈতিক দলকে দোষারোপ করে বলেছেন উনার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করছে তারা।

26932

কালের ইতিহাস

FB_IMG_1603223941292

লিখা থাকুক করোনা কালের ইতিহাস
লিখা থাকুক প্রত্যেক ছবির হাহাকার।
লিখা থাকুক প্রত্যেক স্বজন হারানোর ব্যথা
লিখা থাকুক সযত্নে সমস্ত অবহেলার ইতিহাস।
লিখা থাকুক ডাক্তারের নির্মম ব্যবহার
অন্তর্জালে সেই দহনকালের টুকরো টুকরো স্মৃতি। আজীবনের ইতিহাস হয়েছে পুলিশ আর্মির সেবা।

একপাল কুলাঙ্গারের মাথায় উঠেছে রাজ মুকুট
কারো কারো কাঁধে যেন বেদেনীর সাপের ঝাঁপি।
ঝাঁপিতে আছে কাল নাগিন
আর এই নাগিনের তীব্র ফণায় মাতৃভূমি নীলাতংক।
ভেঙ্গেছে আজ বেহুলার ঘর
অপশাসনের কালা পানিতে ভাসে জীবন
দেখে মনে হয় নদীতে ভাসা একটা ভেলা।
ভেলায় লাল সবুজ কাপড়ে মুড়ানো লক্ষ্মীন্দরের লাশ।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

20201017_104117

আসসালামুলাইকুম আন্টি।
ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছো শিউলী।
আন্টি ভালো আছি। আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমি আগামীকাল আসতে চাইতেছি।
এতে অনুমতির দরকার কি, তুমি চলে আসো।
আচ্ছা ঠিক আছে আন্টি।
ঢাকায় গিয়ে আবার আমাদের ভুলে যেও না শিউলী। ভাইয়া পাখি কখনো নীড় ভুলে যায় না। নীড়হারা পাখি ঝড়ে মরে বাতাসে উঠে আর এটা সাময়িক হয়। আরে বাহ! তুমি অনেক জ্ঞানী কথা শিখে ফেলছো। আমি যে জ্ঞানী এবং ভদ্র লোকের সাথে থাকি।
দোয়া করি তুমি যেন ভালো থাকো আজীবন। ভবিষ্যতে কোন কাজ করার আগে অনেক ভেবে চিন্তে তারপর করবে। তাই মানুষ বলে “ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না”। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ভারত উপমহাদেশে তিনটা জাতির স্বভাব হলো মুসলিম কাজ করিয়া ভাবে ভালো না মন্দ। শিখ কাজ করার আগেও ভাবে না এবং করার পরও ভাবে না ভালো মন্দ নিয়ে আর হিন্দু কাজ করার আগেও ভাবে এবং কাজ করার পরও ভাবে ভালো মন্দ নিয়ে। যেখানে থাকো নিজেকে পড়ালেখায় উন্নত করার চেষ্টা করবে এবং পড়ালেখা থাকলে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে তা সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে।

হ্যালো আম্মু। আমি শিউলী বলতেছি।
শিউলী! শিউলী, শিউলী!
হ্যাঁ আম্মু শিউলী। (কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে ) আমি শিউলী।
কোথায় মা তুমি।
কেমন আছেন আম্মু।
(ফোনে মা মেয়ে উভয়ের কান্না)।
আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মা?
আমিও ভালো আছি। আব্বু কেমন আছে এখন কি ঘরে নাই উনি। আম্মু ছোট পড়াশোনা করে ঠিকমত?
তোমার আব্বুও ভালো আছে উনি ঘরে নাই, মনে হয় দোকানের দিকে গিয়েছে। সেও পড়ে ঠিকভাবে।
আম্মু আমি আগামী কালকে চাচীর কাছে ঢাকায় যাচ্ছি। আমি সেখানে গেলে আপনারা আসবেন তখন বিস্তারিত কথা হবে। চাচীর সাথে আমার কথা হয়েছে সে বলেছে যেতে কোন সমস্যা নাই।
ঠিক আছে তোমার আব্বু ঘরে আসলে আমি উনার সাথে কথা বলে দেখি কবে যেতে পারি আমরা। টাকা পয়সা যোগাড় করে আসতে হবে যে।
তাহলে এখন রেখে দিতেছি।

শিউলী মায়ের সাথে কথা বলে আনন্দে আত্মহারা। এতদিন ভয়ে ফোন করে নাই। মানুষ জানলে শিউলীর মা বাবাকে কটু কথা শুনাবে এবং সমাজের মানুষ প্রচার করতো মা বাপ শিউলীকে গোপনে বিয়ে দিয়েছে। বাড়ী ঘরে বসবাসও হারাম করে দিতো।
ভাইয়া ঘর ছেড়ে বাহির হওয়ার পর আজকের মত এত আনন্দ এই কয়েক মাসে আর আসেনি। আম্মুর সাথে কথা বলে মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি। মা বাবার সাথে বসবাস যেন বসুন্ধরার স্বর্গে থাকা আর আমি সেই স্বর্গ নিজেই পদদলিত করেছি। আর মাত্র দুই/এক দিন পরে সেই স্বর্গের দেখা পাবে। কিন্তু মনে হচ্ছে আজ রাতটাই শেষ হবে না। আপনার প্রতি আবারও কৃতজ্ঞতা জানাই , আপনার বুদ্ধি শ্রম আমার নতুন জীবন পেতে সহযোগিতা করেছে।
ঢাকায় গিয়ে দেখবে আরো ভালো লাগবে জীবন সত্যিই দারুণ উপভোগের একটা অধ্যায়। যাও রাত হয়েছে ঘুমিয়ে যাও সকালে সকালে উঠতে হবে।
শুভ রাত্রি ভাইয়া।

সবকিছু ঠিকমত নিয়েছো শিউলী?
জ্বী নিয়েছি।
মুখ বেধে রাখলে ভালো হয়। এতে পরিচিত কেউ চিনতে পারবে না।
ঠিক আছে ভাইয়া। আন্টি আমার জন্য দোয়া করবেন। এই কয়েক দিন কষ্ট দিয়েছি মেয়ে হিসাবে ক্ষমা করে দিবেন। ফোন দিবেন এই মেয়েকে।
আসো আসো শিউলী । রিক্সা গেইটে দাড়িয়ে আছে।
দশটা বিশ মিনিটের খুলনা টু ঢাকাগামী বাসে তুলে দেয় শিউলীকে সুজন।
বাসায় এসে সুজন ভাবে ভালোবাসার শক্তি নিয়ে। এই শক্তির জোরে শিউলী আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া একজনের হাত ধরে ঘর ছাড়ে যার অতীত বর্তমান কিছুই জানা ছিল না। অনেক দুর হতে নাহিদের জেলা শহর খুলনায় এসে আমার এবং আমার মায়েরও আপন হয়। এটাও একটা ভালোবাসা ভাই বোন আর মায়ের। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৭তম পর্ব।

বাস ছেড়ে যায় খুলনা হতে। কম আওয়াজে মিষ্টি সুরে “এই রাঙ্গামাটির পথে লো, মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি” বেজে উঠে সাউন্ড বক্সে। এতে বুঝা যায় চালক সৌখিন ও রুচিবান (হয়তো পড়াশোনা জানা) । যাক এতে বাসে চড়ার ভয়টা কিছুটা দূর হলো কারণ চালক সাবধানে বাস চালাবে। দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে বিলাসবহুল যানবাহন এবং রাস্তাঘাট দেখে বলা বলা যায়। তবে তার সাথে সাথে শিক্ষিত দক্ষ ও সচেতন চালক বাড়েনি। চালকদের লাইসেন্স প্রাপ্তিতে বেড়েছে সীমাহীন দুর্নীতি ।
একটার পর একটা গান বেজেই চলেছে আর নিচু আওয়াজে শুনতে আমার ভালোই লাগছে। “আকাশের ওই মিটি মিটি তারার সাথে কইবো কথা নাইবা তুমি এলে” বাজে এখন। নজরুল এবং রবীন্দ্র সংগীতের মিক্স গানগুলি নিশ্চয় চালক পছন্দ করে একসাথে করেছে। নাহিদও প্রচুর গান শুনতো তার পছন্দ ভারতীয় বাংলা ক্লাসিক্যাল গান। তার সাথে শুনতে শুনতে আমারও ক্লাসিক্যাল গান পছন্দ এখন। মোবাইলে সারা দিন গান শুনে আর ঘুমিয়ে দিন কাটতো আমার।

নাহিদের মাদকের সেবনের নেশা ছিল কিন্তু কারবারী ছিল না। অথচ সে জেল খাটছে মাদক বিকিকিনির মামলায়, কোথাও যেন ঘাপলা আছে মনে হয়। এই সময় তার পাশে থাকা দরকার দেখা করে মানসিক সমর্থন দেওয়া দরকার অথচ আমি ছেড়ে দুরে চলে যাচ্ছি। কিন্তু কিছুই করার নাই একটু নিরাপদ আশ্রয় নেই যে আমি রাতে শান্তিতে ঘুমাবো। সোবহান মিয়ার উৎপাত আমাকে খুলনা ছাড়তে হলো। অথচ সে আমার দাদার বয়সী নামের আগে জনদরদী নেতা আবার হাজ্বীও লিখে। কিন্তু নাহিদ এমন ভন্ড নয় এমন মুখোশ পরা নয়। আমি কখনো দেখিনি অন্য মেয়ের চেহারা অপলক দৃষ্টিতে দেখেছে। কাজকর্ম করতে চাইতো না অলস বলে কিন্তু আমার বকাবকিতে আমার সাথে কখনো রূঢ় আচরণ করেনি। সংসারের টুকিটাকি খরচ করতে পারতো বলে লজ্জিত থাকতো ডাল ডিম দিয়ে চুপচাপ ভাত খেয়ে উঠে যেতো। তার পরিবার নিয়ে জানতে চাইলে এড়িয়ে যেত বলতো সময় হলে সব জানতে পারবে।
যদি জেল হতে ছাড়া পায় তাকেও ঢাকা নিয়ে যাবো। না হলে তার পরিবারের কাছে ফিরতে চাইবো। এইসব নয় ছয় ভাবতে ভাবতে শিউলীর ঘুম এসে যায়।

নাহিদ আমি বাকরুদ্ধ আমার ভাষা নেই তোকে শান্তনা দেওয়ার। প্রাণচঞ্চল মেয়েটা এইভাবে মরে গেল বাস দুর্ঘটনায়, মনে পড়লে চোখে অন্ধকার নেমে আসে। ভালো মানুষ এত তাড়াতাড়ি কেন মরে যায় আমার বুঝে আসে না। বিধাতার নিপুণ কুদরতী বুঝা বড় দায়। দোয়া করি আল্লাহ যেন তাকে জান্নাত দান করেন। শিউলীর পরিবার যেন অকালে তাকে হারানোর ব্যথা সহ্য করতে পারে ফরিয়াদ থাকবে বিধাতার কাছে। তার মা বাবার খোজ নেওয়ার দরকার ছিল কিন্তু আমাকে উনারা চিনবে না। কান্না বন্ধ কর নাহিদ, কথা বল আমার সাথে।
আমি বের হয়ে উনাদের সাথে দেখা করবো মাপ চাইবো যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। যদি সুযোগ আসে তাহলে পাশে থাকতে চেষ্টা করবো । আমার আর জেলে এক দিনও কাটছে না সুজন যেভাবে হোক আমাকে মুক্ত কর ভাই আমি তোর হাত ধরে বলছি, অনেক কৃতজ্ঞ হবো।
নাহিদ আমি চেষ্টা করতেছি কিন্তু জামিন কেন হচ্ছে না বুঝতেছি না। কোটের সবচেয়ে নামকরা উকিল তোর মামলা লড়তেছে উনারা গাফিলতি করতেছে না। তুই আর একটু ধৈর্য্য ধর ভাই।

একটা মালবোঝাই ট্রাক ওভারটেক করতে গিয়ে শিউলীর বাসের সাথে ধাক্কা লাগে । বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় শিউলীসহ সাতজন যাত্রী নিহত এবং বহু যাত্রী আহত হয়। ট্রাক দ্রুত পালিয়ে যায় । শিউলী বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দুই তিন দিন হাসপাতালের মর্গে পড়ে ছিল পরে পুলিশ টেলিফোন চেক করে তার মা বাবার খোঁজ পায়। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৮তম পর্ব।

মেয়েটা জীবিত ঘর হতে বাহির হয়ে গেল আর ফিরে আসলো লাশ হয়ে কার হাত ধরে ঘর ছাড়লো কে সেই ছেলে জানা হলো না চিনিও না হলো না। সবাই জানতো ছেলেটা পাশের বাড়ির আত্মীয় হয় নাহিদ নাম তার। আর তার সাথে শিউলী পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে। ছেলেটার সাথে সম্পর্ক গঠে উঠলো কিভাবে তাও একটু টের পেলাম না । হায়রে খোদা আমাকে এক বুক ভাঙ্গা কষ্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখলে।
কান্না বন্ধ করো শিউলীর মা। তোমার কান্না দেখলে আমারও খুব কান্না আসে। এখনতো ঘরেই আসতে মন চায় না একদিকে তোমার কান্নাকাটি অন্যদিকে মেয়েটার স্মৃতি ঘরের প্রতিটি আনাচে কানাচে। ঘরে আসলে যেন দম বন্ধ হয়ে যেতে চায়।
আমার মেয়েটা মরণকালে আপনজন কাউকেও পাশে পায়নি । আল্লাহ জানে কত কষ্ট পেয়েছে তখন হে আমার মেয়েকে আপনি জান্নাতবাসী করেন।
হ্যাঁ শিউলীর মা এই দোয়া করি আমরা ।

হ্যলো কেমন আছেন আপনারা।
আমরা কি আর ভালো থাকতে পারি ভাবী। কেমন করে মেয়েটাকে ভুলে ভালো থাকি।
আমার নিজের মন খারাপ মেয়েটার জন্য আর আপনারা হলেন তার মা বাবা আপনাদের অবস্থা আমি বুঝতেছি। ধৈর্য্য ধারণ করা ছাড়া আর কিছুই করার নাই। নামাজ পড়ে দোয়া করবেন মেয়েটা যেন জান্নাতবাসি হয়। মৌরি শুনে খুব হতবাক তারও খুব মন খারাপ শিউলীর জন্য। আম্মাকেও বলেছি ।
ভাবী ( উচ্চস্বরে কান্না শুরু করে শিউলীর মা)। আমি নিজে না খেয়ে এই ছেলে মেয়েকে খাইয়েছি, চাচী অনেক টাকা পয়সা দিয়েছে, অনেক সাহায্য করেছে আমার এই সন্তানদের জন্য আর আজ মেয়েটা কবরে।কেমন করে ভুলি কেমন করে এই শোক সহ্য করি ভাবী।
আম্মা শুনে খুব দুঃখ পেল । সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছা । উনি যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। আমি শুক্রবারে আসবো এখন স্কুল খোলা তাই আসতে পারছি না। আপনাদের কি লাগবে জানাবেন আম্মা থাকলে সব দেখতে পারতো আমি ঢাকা হতে সুয়োগ পাচ্ছি না ।
ভাবী আপনি ফোন করে করে খবর নিচ্ছেন শান্তনা দিচ্ছেন এটাও অনেক কিছু।
আমি আসলে আপনাদের ঘরে রাতে থাকবো। মৌরিদের বাড়িতে যাবো না এই সময় ওই বাড়িতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার দরকার নাই । এখন রাখি।

আজও জামিন হলো না ।
কি আর করবো নাহিদ ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে।
আর সহ্য হচ্ছে না সুজন।
সহ্য না করে অন্য কোন উপায় নাই। যদি তোর কাছে কোন আইড়িয়া থাকে তাহলে বল । মামলা শুনানির প্রতি তারিখে উকিলেরা আশা দেয় জামিন হবে। কিন্তু জামিন হচ্ছে না ।
আসলে শিউলীর কথা মনে পড়লে খুব খারাপ লাগে সুজন । তখন আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না।
মরণের উপর কারো হাত নাই । জন্ম ও মৃত্যু বিধাতা নির্ধারণ করেন আমাদের যেটা করার ক্ষমতা আছে সেটাও আমরা ঠিকমতো করি না। বিধাতার দেওয়া বিবেক আমরা সঠিক সত্য, ন্যায় নীতি ও মানবতার কাজে না লাগিয়ে সম্পূর্ণ তার বিপরীত করি। শিউলী তোর উপর অগাধ বিশ্বাস করে আর আস্থা রেখে প্রাকৃতিকভাবে গঠে উঠা ভালোবাসার কারণে জন্ম দেওয়া রক্তের ভালোবাসা ত্যাগ করে তোর কাছে এসেছে। তুই তার সেই মর্যাদা রাখতে পারলি না। সে তোর সম্পর্কে কোন কিছুই জানতে চায়নি তার কাছে তোর পরিচয় তার পাশের বাড়ির আত্মীয় অথচ তুই তোর পরিচয়ও প্রকাশ করিসনি কোন দিন। সত্য হলো পরিবারের সাথে তোর সম্পর্ক নাই কিন্তু একই শহরে বসবাস। আমার বিশ্বাস সে তোকে তোর অতীত, তোর পরিবার এবং তোর কাজকর্ম নিয়ে কখনো অবান্তর প্রশ্ন করে তোকে বিব্রত করে নাই ।
তা ঠিক সুজন সে কখনো কোন বিব্রতমুলক প্রশ্ন করে নাই। মাঝে মাঝে খরচের টাকার জন্য বলতো। আর তাও দিতে পারিনি অনেক কষ্ট করেছে তবুও সব সহ্য করেছে। এই জেলটা সব তছনছ করে দিয়েছে।
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না নাহিদ জেল হয়েছে মাদকের জন্য তাই শিউলীর আত্মার শান্তির জন্য হলেও তোকে মাদক ছেড়ে দেওয়া উচিত।

আসসালামুলাইকুম। হ্যালো আম্মা কেমন আছেন।
মা আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো মৌরি কেমন আছে সে কি আজ ফোন করেছে।
জি আম্মা ভালো আছি মৌরিও ভালো আছে ।
তুমি কি শুক্রবারে বাড়িতে যেতে পারবে।
জি আমি শুক্রবারে যাবো শনিবার বিকালে ঢাকায় ফিরে আসবো।
হাত খালি তাই আর টাকাপয়সা দিতে পারছি না।
আমিও কিছু দিবো সব মিলিয়ে শিউলীর মাকে দিয়ে আসবো।
না তুমি টাকাপয়সা দিতে হবে না ঘরে নারিকেল সুপারি আছে তা বিক্রি করে টাকা দিয়ে দিও।
আচ্ছা আম্মা ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেজ। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৯তম পর্ব।

কেমন আছো মা মৌরি।
আম্মু আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।
আমিও ভালো আছি । আমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি শিউলীর আব্বু আম্মুকে দেখতে।
ভালো করতেছেন যাওয়াটা । মেয়েটার কথা খুব মনে পড়ছে আমার, অল্প বয়সে আবেগী হয়ে ঘর ছেড়ে এখন দুনিয়া ছাড়া হলো। ওর বয়সী মেয়েরা চুলের বেনী দুলিয়ে গ্রামের মেঠো পথে হেলেদুলে খেলার কথা। চাচা চাচীকে আমার সালাম বলবেন। দাদীরও মন খারাপ উনি কানাডা যাওয়ার পর এই প্রথম বাড়ির মানুষ মারা গেল তাহাছাড়া শিউলী দিনের বেশী সময় দাদীর সাথেই থাকতো।
হ্যাঁ মেয়েটা তোমার দাদীর ভালো দেখাশোনা করতো। জীবন তছনছ করার জন্য একটা দমকা হাওয়াই যথেষ্ট। শিউলী রীতিমত সাইক্লোনের কবলে পড়েছে তাই তার জীবনের শিকড়সহ উপড়ে গেছে। এই জন্য মানুষকে খুব সতর্ক হয়ে পা ফেলতে হয়। ক্ষনিকের আবেগ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। কখনো কখনো জীবনেরই অবসান গড়ে আবার কখনো কখনো জিন্দা লাশ হয়ে সেই ভুলের মাসুল দিতে হয়।
আম্মু বাড়িতে পৌঁছে আবার ফোন দিয়ে জানাবেন এখন রেখে দিচ্ছি। আমার একটু ব্যস্ততা আছে ।
ঠিক আছে ভালো থাকো তুমি।

জন্মের পর আরেকটা সত্য নির্ধারিত থাকে আর তা হলো মৃত্যু। পৃথিবীর কিছু সত্য হতে মানুষ পালিয়ে বাঁচতে চায় কিছু সত্যকে অস্বীকার করে মানুষ ভুলে যায় এইটা দুনিয়া। আবেগ মানুষকে বাস্তবতা ভুলিয়ে দেয় তা শুধু নয় আবেগ মানুষকে জেদী করে আর এই জেদ মানুষকে পৃথিবীতেই নিঃস্ব করে নিঃসঙ্গ করে। আবেগ মানুষকে লোভী করে আর লোভের নেশাগ্রস্ত হয়ে পাপ করে লোভের নেশাগ্রস্ত হয়ে জ্ঞান শূণ্য হয়। জ্ঞান শূণ্য হলেই মানুষ অপমানিত হয় পথে পথে। অনেক জ্ঞানী গুণীও লোভ করে পাপে মরে ভুলে যায় তাঁর সম্মান ।
মাহিনও কানাডায় গিয়ে লোভে পড়ে কানাডার নাগরিক হওয়ার লোভ, তার নিজের উন্নত জীবন মানের লোভ। এই জন্যই আমার ও মৌরির কথা সে ভুলে যায়। কিশোরী শিউলী আবেগে পড়ে যার কারণে ঘর ছাড়া হয়ে ঘর দুয়ার সব ত্যাগ করে। মাহিন আমাদের ত্যাগ করে কষ্ট দিয়ে জীবনের সার্থকতা ফেলেও হারিয়েছে আপনজনের সম্মান, হারিয়েছে মৌরিকে। আর শিউলী জীবনের অপূর্ণতা নিয়েই কবরে গিয়েছে।

মানুষকে ফুল না হয়ে গাছ হওয়াই উত্তম। ফুল ঝরে মাটিতে পড়ে যায়। আর গাছ ঠিকই মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। গাছে ফুল ধরে ফল ধরে তা ঝরে পড়ে গেলেও গাছ সোজা থাকে। যদি সুযোগ থাকতো গ্রামে এসে বাড়িতে থাকতাম গাছ হয়ে এইসব নিরহ মানুষকে ছায়া দিতাম ফুল-ফল দিতাম। এদের খাদ্য এবং সুশিক্ষাই এখন দরকার । মাহিনের কারণে এইসব মানুষের পাশে থাকাই হলো না। নড়বড়ে ব্যক্তিত্বের কারণে অসহায় মানুষের দোয়া ও ভালোবাসা বঞ্চিত হয়েছো তুমি নিজে এবং আমাদের বঞ্চিত করেছো। স্বার্থ ত্যাগ করে মানুষকে সাহায্য করা বিরাট আনন্দময়। গ্রামের নিরহ শান্ত অসহায় হাজারো লোক আছে এরা জটিলতা বুঝে না প্যাঁচানো কথা বুঝে না রাজনীতি বুঝে না এদের পাশে থাকলে বিপদে সহযোগিতা করলে দেবতা মনে করে পুজা করে। বাড়ির এবং গ্রামের মানুষের দেবী হওয়ার ইচ্ছা আমার কখনো ছিল না। সাহায্যের বিপরীতে দোয়ার কাম্যও কখনো নাই। তবে একটা জিনিস পাওয়ার আছে সেটা হলো আমার আত্মার শান্তি। এই শান্তি আমাকে আকাশে উঠায়।

জলিকে কাছে পেয়ে শিউলীর মা বাবার চিৎকার করে কান্নায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।এতে বাড়ির সবাই এসে জড়ো হয়ে যায়। এমনিতে বাড়ির সবার কাছে জলি খুবই শ্রদ্ধার পাত্রী সবাই তাঁর সাথে দেখা করতে আসবেই। যার যা প্রয়োজন টাকা পয়সা বুদ্ধি পরামর্শ প্রয়োজনমতো দিতে অনিহা করেনি। সবার উচ্চস্বরে কান্না ও কথার আওয়াজে জলি নির্বাক হয়ে যায় । মৌরির ফোন আসে তাও ভুলে যায় জলি । (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪০তম পর্ব ।

আমাদের সবাইকে একদিন মরতে হবে কারণ মানুষ মরণশীল । কোরানে আছে “কল্লু নাফছুন জাইকাতুল মউত“ পৃথিবীর সব কিছু মিথ্যা হলেও এই কথা মিথ্যা নয়। কোরানের এই আয়াত চিরন্তন সত্য।
আপনারা যদি এইভাবে কান্নাকাটি করেন সংসার ও জীবন নিয়ে উদাসীন থাকেন তাহলে ছেলের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। এখন হতে আপনাদের কাজ স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করা ঠিকভাবে খাওয়া করবেন ঠিকভাবে ছেলেটার দেখাশোনা করবেন। যাতে এই ছেলেটা পড়াশোনা করে সুশিক্ষিত হয়। আমার কাছে এবং আপনাদের কাছে এমনকি সব মা বাবার কাছেই সন্তান হারানো খুবই কষ্টের। এই কষ্টের পরিমাণ অন্য কোন কষ্ট দিয়ে পরিমাপ করা আদৌ সম্ভব নয়। তবুও মেনে নিতে হয় তবুও জীবনের তাগিদে কর্মের পিছনে ছুটতে হয়। অতীত ভুলে গেলে চলে না অতীত হতে শিক্ষা নিয়ে জীবন সাজানোই উত্তম বুদ্ধির কাজ।
ভাইজান এইভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। মন শক্ত করতে হবে কাজকর্মে মনোযোগ দিতে হবে।
আসলে ভাবী মেয়েটা চলে যাওয়ার পর হতে মনের জোর পাই না কাজকর্ম করতে। তবুও চলেছি কিন্তু মরণের পর যেন চলার শক্তিও পাচ্ছি না।
আল্লাহর শোকর ভালো আছেন। এইভাবে অনবরত কাঁদতে থাকলে খাওয়া দাওয়া না করলে অচিরে অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তখন ঝামেলা আরো বাড়বে, ভুলে গেলে চলবে না আপনার পরিবার আছে।

আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন ভাবী। আমার কষ্টে বুক ভেঙ্গে গেলেও প্রকাশ করতে পারছি না উনার আর ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি সয়ে যাচ্ছি। আত্মীয় স্বজন টাকাপয়সা খাওয়া দাওয়া দিয়েছে বলে এত দিন চলেছি। এখনতো ঘরে চাল ডালও ফুরিয়ে আসছে কিন্তু উনাকে বলার সাহস পাই না।
এইভাবে জীবন চলে না , সবাই মরবেন নাকি। আম্মা পাঁচ হাজার টাকা দিতে বলেছে আর ঘরে যে নারিকেল সুপারি আছে তাও বিক্রি করে টাকা দিতে বলেছে। এখন চলেন ওই বাড়িতে দেখে আসি।
মেয়েটা যদি আপনার কাছে চলে যেত ভালো থাকতো লেখাপড়া শিখে সুনাগরিক হতো।
থাক ওইসব অতীত কথা । তার জন্য এখন শুধু দোয়া করবেন, এইসব কান্নাকাটি কোন কাজেই আসবে না।
“আমরা সকলেই আল্লাহরই আর আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী” ( সূরা আল বাক্বারাহ )।

একদিন এই সুন্দর পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে । কোরানের আয়াত দ্বারা এইটাই প্রমাণিত শুধু পার্থক্য হলো কেউ আগে কেউ পরে। আমি চলে গেলে আবার ভুলে যাবেন না, ফোন দিবেন কোন কিছুর দরকার হলে জানাবেন। ছেলেটাকে পড়ালেখায় কোন প্রশ্রয় দিবেন না তার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন। সেই একমাত্র সম্বল তাই তাকে ভালো করে গড়ে তুলতে হবে এতে একটু গাফিলতি বা খামখেয়ালি করবেন না
ভাবী আপনি ফোন দিবেন। আমাদের খোজখবর নিবেন। আর চাচীকে বলবেন একটু লক্ষ্য রাখতে। জি আম্মাকে আমি বলবো আপনারাও সময় সুযোগ করে উনাকে নিজের সুবিধা অসুবিধার কথা জানাবেন। সুন্দর করে সব দেখাশোনা করবেন এবং গুছিয়ে রাখবেন, ঘর দুয়ার একটু পরিচ্ছন্ন রাখবেন। এখন শিউলীর আম্মুর মন খারাপ তাই সব একটু এলোমেলো আমিও বলেছি সব গুছাইয়া রাখতে। ভাবী আপনি আসায় মনটা কিছুটা হালকা ছিল যদি সুযোগ হয় আবার আসবেন। আপনি যেভাবে আমাদের দেখাশোনা করেন মনে হয় যেন আমার মায়ের পেটের আপন বোন। এই গরিব চাষাভুষা আপনার ঠিকমতো যত্ন করতেও পারে না আবার ভাইয়ের ভালোবাসা কি দিবো।

ঠিক আছে ভাইজান আমি সুযোগ ফেলে আসতে চেষ্টা করবো কিন্তু সুযোগ করা কঠিন। পুরো সপ্তাহ ডিউটি করে একদিন ছুটি পেলে আর মন চায় না কোন দিকে যাই।বাসার সব কাজ শুক্রবারে করতে হয় এদিক-ওদিক গেলে সব কাজ জমা হয়ে থাকে। দয়া করে ভুল বুঝবেন না।
না না ঠিক আছে ভাবী। এই বোনটাকে ভুল বুঝার সেই সাহস আজীবন না হোক। (চলবে)।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আপনার কুল বাঁচান

_101155

বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে গত সোমবার। শীতকাল আসন্ন ফলে এই ভাইরাস আবার দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ার একটা বড় ঝুঁকি রয়েছে। এমনিতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা অবশ্যই অনেক বেশি, পরীক্ষা পদ্ধতিতে ঘাপলা করে অনেক দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। জানি না মৃতের সঠিক সংখ্যা কত।

বৃটিশ দ্বিতীয় দফার করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার চেষ্টা করছেন, বৃটেনের বিভিন্ন অংশে লকডাউন দেয়া হয়েছে। ফ্রান্সে আরোপ করা হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ। ইউরোপের অন্যদেশে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জরুরি নয় এমন অপারেশন। মেডিকেল শিক্ষার্থীদেরকে সার্ভিসে যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ভারতে সব মিলিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এই পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে ৭৪ লাখ ৩০ হাজার। বড় আকারে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে। মৃতের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ার পর শনিবার তৃতীয় সপ্তাহের জন্য রাজধানী তেহরানে লকডাউন রয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু থেকে মারা গেছেন কমপক্ষে ১১ লাখ মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেছেন, মৃতের এই সংখ্যা সফল একটি টিকা আসার আগে ২০ লাখে দাঁড়াতে পারে!

আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি এখন রীতিমতো রূপকথা। একেকজন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ধরা পড়েন আর আমরা শিউরে উঠি তাদের সম্পদের হিসাব মিলাতে হিমশিম খান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। কেউ কেউ আফসোস করে বলেন, আহা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাড়ি চালকও যদি হওয়া যেতো।

কর্মকর্তাদের ধরলে আরও অবৈধ সম্পদের উৎস ও অর্থ লোপাটের তথ্য পাওয়া যাবে। এইসব কর্মকর্তার স্ত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা অত্যন্ত প্রয়োজন। কিছু দিন পরপরই আমরা স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিবাজ ধরার খবর পাই আর এদের প্রায় সবাই কর্মচারী। তাদের সম্পদ দেখে আমরা বিস্মিত হই। আবজাল ও গাড়ি-চালক মালেক এখন কারাগারে দেশ দেশে তাদের সম্পদের ফিরিস্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

আসল কথা হচ্ছে, এই কর্মচারীদের কারও হাতেই আলাদিনের চেরাগ নেই। স্যারদের সহযোগিতা ছাড়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয় কোটিপতি ক্লাবের সদস্য হওয়া। কেবল এই কর্মচারীদের আইনের আওতায় আনলেই স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি বন্ধ হবে না। কান টানাই দুর্নীতি বন্ধের জন্য যথেষ্ট নয়। প্রয়োজনে বড় বড় দুর্নীতিবাজদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।

আমাদের দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার আগে থেকেই মন্ত্রী-আমলারা বলে আসছিল, ভাইরাস মোকাবিলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। পরে দেশের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে, কতটা প্রস্তুত ছিল সরকার! কতটা অসহায় ছিল জনগণ। কতটা বেপরোয়া ছিল সাহেদ ও সাবরিনা, মুনাফাখোর ও দুর্নীতিবাজ। একইভাবে এখন ভ্যাকসিন নিয়েও বক্তৃতা চলছে। তা কি শুধুই মুখে মুখে নাকি বাস্তবেও তার ভিত্তি রয়েছে, তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জনমনে প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক।

আমাদের দেশের জনগণও অচেতন একরোখা গুজবের পিছনে দৌড়ানো সবাই। সৌদিতে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে সফলতা পেয়েছে মাস্ক না পরলে এক হাজার রিয়েল জরিমানা করে। আইনের কঠোর প্রয়োগে জনগণ মানতে বাধ্য। প্রায় সাতশ জনের মত বাংলাদেশী করোনায় নিহত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশী চট্টগ্রামের প্রবাসী। এমনও হয়েছে একই রুমে চারজনই মারা গিয়েছে সতর্ক হয়ে না চলায়। প্রবাসী যে যেখানে আছেন সতর্ক হয়ে চলবেন শুধু রোজগারের পিছনে ছুটবেন না। কষ্ট হচ্ছে সবার টিকা আসা পর্যন্ত আরেকটু কষ্ট করলে অনেকের জীবন বাঁচবে হয়তো। সচেতন হবেন ও মাক্স পরবেন যথাসম্ভব জনসমাগম এড়িয়ে চলুন।

বিভিন্ন খবরের লিংক- এখানে

ধর্ষণ ও রাজনীতি রায়হান ও স্যারেরা আলু মরিচ আর টিভির কথা

ধর্ষণ ও রাজনীতি। রায়হান ও স্যারেরা। আলু মরিচ আর টিভির কথা।

জেনা ব্যাভিচার এবং ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশ করাটা আমার কাছে যথার্থ এবং ইউনিক মনে হয়। ব্যাভিচারে লিপ্ত হলে এক সময় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং শুধু ছেলেটার বিচার হলে এটা জুলুম। ব্যাভিচারে লিপ্ত দুইজন এবং সহযোগীকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এবং সবার শাস্তির আওতায় আনার আওয়াজ তোলা দরকার। বর্তমান বাংলাদেশে দলীয় পান্ডারা ধর্ষণের রাজত্ব কায়েম করেছে। এই কথাটা স্পষ্ট ভাষায় বলতে হবে।

ছোট ছোট শিশুদের বলৎকারে লিপ্ত এক শ্রেণীর আত্মীয় আর কওমি মাদ্রাসার মৌল্লা নামক দুষ্ট কীট। এইসব মৌল্লাদের কারণে প্রকৃত আলেম সমাজ ৭১ টিভির রূপা মিথিলা দ্বারা আক্রান্ত এবং ৭১ টিভি বলৎকারে লিপ্ত ইসলামকে। ইতিমধ্যে ধর্ষণের সাজা মৃত্যুদণ্ড করা হয়েছে। আর এই মৃত্যুদণ্ডে যাওয়া পর্যন্ত একজন ধর্ষিতাকে পাড়ি দিতে হবে থানা কোট কাচারি। ধর্ষকের প্রভাবে ডাক্তারী পরীক্ষা ও থানা প্রভাবমুক্ত থাকবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ লাগে। নোয়াখালীর ধর্ষক একটা বস্তির ছেলেও ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখেছি থানায় মাস্তি করছে। তাহলে আরো দলীয় ক্ষমতাবানদের বিচার কেমন হবে একমাত্র ভবিষ্যৎ জানে। তারপরও বিচার চাওয়া এবং পাওয়ায় মৌলিক অধিকারে বিশ্বাস রাখি। আর মসজিদ মন্দির গির্জা হাট বাজার দোকান পাটে ধর্ষককে বয়কট করি। সবাই মিলে সচেতনতা সৃষ্টি করি। পুরুষ যখন নারীর সন্তান গর্ভে ধারণ করে, পুরুষ যখন নারীর ভাই ,পুরুষ যখন নারীর বাবা তাদের সমালোচনা বন্ধ করে তাদের মানুষ ভাবি । ধর্মকর্ম নিয়ে চলেও স্বাধীন রাখা যায় তাদের।

রায়হানের তিনমাসের এক সন্তান আছে এবং সে একজন খুব সাধারণ যুবক। সে রাজনীতি করতো না, দলবাজি করতো না। খুবই সাধারণ একজন মানুষ যে সন্তানের পিতা হওয়ার পর তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে দেখতে সময় পার করতে ছিল। রায়হানকে ধরে নিয়ে মধ্যযুগীয় বর্বরোচিত হায়নার মত নির্যাতন করতে করতে মেরে ফেলেছে মাত্র দশ হাজার টাকার জন্য।

দেশে যেন পুলিশি শাসন জারি করেছে। ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া থানার এস আই আলামগীর এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে যায় গাজীপুর। ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করার পরও জমিজমা সব লিখে নেয়। যাকে ইচ্ছা মেরে ফেলতেছে, ধরে নিয়ে যাইতেছে গুম করতেছে। কাউকে কোন জবাবদিহি করতে হয়না। পুলিশ রায়হানের হত্যাকাণ্ডকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য প্রচার করেছে যে রায়হান একজন ছিনতাইকারী এবং ছিনতাই করে ধরা পড়ার পরে তাকে গণপিটুনি দেয়ায় সে নিহত হয়। আর এটা হলো পুলিশ এর পুরাতন নাটক যেটা একটা শিশুও শুনে হাসে।

রায়হানকে হত্যাকারী এস আই আকবর যেন ওসি প্রদীপের বড় ভাই । তার বিলাসবহুল বাড়ি কোটি কোট টাকার সম্পতি এবং ব্যাংকে জমানো টাকা আছে। বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে পুলিশ পেশা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত পেশা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার লংঘনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এই বাহিনী তার দুর্নাম কুড়িয়েছে বহু আগেই। মানবাধিকার লংঘনকারী এই পুলিশ বাহিনী বাংলাদেশকে প্রগতিশীল রুপান্তরের প্রধান অন্তরায়। সবচেয়ে আচার্য লাগে আন্দোলন না হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল না হলে বিচার পাওয়া কল্পনাহীন। আলোচিত এ খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়নি। কেউ জানে না এই মামলার আসামি কারা।

টিভি আর পত্রিকার খবরের কথা লিখতে গিয়ে পুরাতন ঘটনা মনে পড়ে গেল। আমাদের ফেনী জেলা শহরে স্থানীয় কিছু পত্রিকা চলতো৷ বাসস্ট্যান্ডে কিংবা রেল স্টেশনে হকারেরা হেড লাইন চিৎকার করে বলে বলে সেই পত্রিকা বিক্রি করতো৷ মজাদার হেড লাইন থাকতো খাঁজা খোর হকারেরা বলতো এই দেখুন হাসিনা অন্তঃসত্ত্বা, গরম খবর, গরম খবর.. । খালেদা এই বয়সে আবার বিয়ে করছেন, দেখুন তাজা খবর, তাজা খবর, ফুঁরিয়ে যাবার আগে কিনুন..। মাত্র দুই টাকা দুই টাকা।

দেখতাম অনেক আম পাবলিক শেখ হাসিনা, আর খালেদা জিয়ার কথা ভেবে পত্রিকা কিনে ফেলতো। ভিতরে পড়ে দেখতো লেখা আছে, লেমুয়া নিবাসী হাসিনা খাতুনকে ধর্ষণ করেছে গুন্ডারা, এখন সে অন্তঃসত্ত্বা। আর দৌলতপুরের ৪৫ বছর বয়সী খালেদা বেগম তৃতীয় বিবাহ করেছেন। পত্রিকার কতৃপক্ষ মানুষকে বিভ্রান্ত করে বিক্রির জন্য হাসিনা খালেদার নামে হেড লাইন করতো, অন্যদিকে হকারেরা আরো একটু রং লাগিয়ে প্রচার চালাইতো শুধু মাত্র দুই টাকা জন্য। তাই বিভ্রান্ত হবার কিছু নেই। আসলে হাসিনা অন্তঃসত্ত্বা নয়, আসলে খালেদা বিয়েও করছেন না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আর একাত্তর টিভি একেবারে দুই জিনিস। হাসিনা খাতুন, আর খালেদা বেগমের মত।

গোবর এক অদ্ভুত জিনিস। শুকিয়ে গেলে জ্বালানি, জমিতে গেলে জৈব সার, পানিতে গেলে মাছের খাদ্য, ভারতে গেলে প্রসাদ, আর মগজে গেলে হলুদ সাংবাদিক!

যাদের ডায়াবেটিস তারা বেশী করে সবজি খাবেন ডাঃ জাহাঙ্গীর কবির বলে। কিন্তু এখন সবজির বাজারে দামের আগুন ধরতে গেলে পকেট পুড়ে। সাধারণ জনগণ খেতে কষ্ট হচ্ছে। সরকার বলেছে চেষ্টা করতেছে দাম কমাতে! কিন্তু কথা হলো সরকার দলীয় লোক ছাড়া বাংলাদেশের লতাপাতা ও ধুলাবালি এদিক সেদিক করার ক্ষমতা অন্য করো নাই তা অবুঝ জনগণ ভালো করে বুঝে। তারাই সাপ তারাই আবার ওঝা। ভাগ্য ভালো বুঝদার মানুষগণ এখনো বলেনি সবজি খাবেন না যেমন আগে বলে ছিল পেয়াজ খাবেন না। আরো ভাগ্য ভালো এখনো কেউ বলেনি সবজি হিসাবে কচুরি ফেনা খাওয়া শুরু করেন। তাই সবাই কম কম খাবেন, রোজা রাখেন এতে সওয়াব পাওয়া যাবে আর যাদের ডায়াবেটিস তাদের রোজা রাখলে অনেক উপকার হবে। তবে রোজা রাখার কথা শুনে কেউ আমাকে আফগানী জঙ্গী ভাববেন না। আমি ৭১ টিভির পক্ষেও নাই বিপক্ষেও নাই। যাদের গ্রামে বসবাস তারা নিজের জমিতে সবজি আবাদ করেন। ঘরের ছাদে করেন এবং উঠানে করেন।

সুস্থ থাকুন নিরাপদ থাকুন। বাচ্চাদের নজরে রাখুন নারীদের সম্মান করুন। ভালোবাসা দিন, ভালোবাসা নিন। পাপিয়া কিংবা সামিয়া এড়িয়ে চলুন। সংসারে সুখ দুনিয়া শান্তি।

20201017_100240

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র

আসলে ভাইয়া আমি যখন বুঝতে পারি যে নাহিদের স্বভাব ভালো নয় সে মাদক কারবারী ও জুয়াড়ি এমনকি কাজকর্মও করে না তখনি চলে যেতে চেয়ে ছিলাম। না গিয়ে যেমন ভুল করেছি তেমনি এমন একটা লোকের সাথে ঘর ছেড়েও ভুল করেছি। প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া মেয়ে মানুষের বিয়ে একবার করাই ভালো। আর আমিতো গরিব ঘরের তালাকপ্রাপ্ত গরিব মেয়ে কেউ বিয়ে না করে সমালোচনা করবে। এর পর আছে সামাজিক নিয়ম নীতি আমি এখনো ঘরে ফিরতে হলে অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে সমাজের কাছে কোথায় ছিলাম কি করেছি শত সওয়াল জবাবের পরও আছে অর্থনৈতিক জরিমানা। এইসব ভয়ে সব সহ্য করে নাহিদকে ভালোবাসা দিয়ে ভালো করতে চেয়েছি। ঘর যেমন ভালোবাসার কানন হওয়া উচিত তেমনি সমাজও ভালোবাসার বিশাল কানন হওয়া উচিত। আপনাদের ঘর যেমন আমাদের ঘরও তেমন আমাদের টাকার কষ্ট আছে না পাওয়ার কষ্ট আছে না খাওয়ার কষ্ট আছে কিন্তু ভালোবাসার কষ্ট নাই ভালোবাসার সুগন্ধীর অভাব নাই। আপনার বাবা মা যেমন ভালোবাসার কাননের মালি তেমনি আমার কৃষক বাবা ও গৃহকর্ত্রী মা ভালোবাসার মালি।

আমার বাবা আমাদের মৌলিক চাহিদাও পূরণ করতে হিমশিম খায় আর করবেই বা কেমন করে দামের এই উর্দ্ধগতির দিনে একজন দিন মজুর কি আর করতে পারবে তার পরিবারের জন্য। আমার মা এইসব নিয়ে কখনো মন খারাপ করে না পরিবারের সব মানিয়ে চলার শিক্ষাটা দিয়েছে উনি। আমার নানা নানী অনেক সাহায্য করে আমার এক দাদী অনেক সাহায্য করে এইসব খয়রাতির সাহায্য না এইসব হলো অকৃত্রিম ভালোবাসা। আমি নাহিদকে সেই ভালোবাসা এবং মায়ের শিক্ষা দিয়ে ভালো করতে চেয়ে ছিলাম। আসলে মনের অজান্তে তাকে এত গভীর ভালোবেসে ফেলেছি যে পরিবার ছেড়ে আজ আমি পথে পথে। তারপরও তাকে আমি আরেকটা সুযোগ দিবো আর এই সুযোগ দিতে চলতে হবে আপনি আমার সাথে একজন গরিব অসহায় মেয়ে আপনাকে বড় ভাই বলে ভালোবাসার দাবি দিয়ে এই অনুরোধ করবো।

আমার একটা কাজিন আছে মৌরি আপু সেও আপনার মত মানুষের উপকার করে আমাকে অনেক ভালোবাসে। এখন বিদেশে পড়তে চলে গিয়েছে সে থাকলে আমি ফোন দিলে চলে আসতো উনার আম্মু ঢাকায় আছে। ওই যে বললাম দাদীর কথা উনি আর উনার ছেলে কানাডা থাকে কিন্তু মৌরি আপুর আম্মু ঢাকায় বড় চাচা কানাডায় বিয়ে করায় আন্টি মেনে নেয়নি। মৌরি আপুকে নিয়ে ঢাকায় থাকতো তবে চাচার সাথে কোন সম্পর্ক রাখেনি। তাই দাদী একা বলে কানাডা চলে যায় আর মৌরি আপুকে উনার আম্মু বিদেশে পাঠায় পড়তে। চাচী এত ভালো মানুষ যে দাদী উনাকে বউমা বলতো না নিজের মেয়ে বলতো। দাদী কানাডা যাওয়ার সময় জমানো টাকা এবং জমিজমা সব চাচীকে দিয়ে গিয়েছে। চাচী বলে ছিল আমাকে ঢাকা নিয়ে যাবে এবং আমার শিক্ষা বিয়েশাদী সব উনি দেখবে। কি আজব আমরা চাচা চাচীর অঢেল টাকা উচ্চ শিক্ষিত অথচ বিছিন্ন ভাঙ্গা ঘর।

আর আমার সোনালি ভবিষ্যৎ গড়তে না গিয়ে আমি এসে পড়ি মাদক কারবারীর ঘরে। এখন না পারছি বাবার ঘরে ফিরতে না পারছি স্বামীর ঘরে ফিরতে। মাঝখানে হায়েনারা আছে ওৎপেতে আমাকে খাবলে খেতে। ভাইয়া আমার কাছে বাবা, নানা এবং চাচীর ফোন নাম্বার আছে আপনি ভেবে দেখেন কাকে ফোন দিলে ভালো হবে। প্রথমে এদের একজনকে আমার সব বলে আমি ফিরতে চাই জানাতে হবে কোথায় গেলে ভালো হয় আপনি চিন্তা করে বলবেন।

(চলবে)

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩২তম পর্ব।

তাহলে আমি বলবো প্রথমে চাচীর কাছে ফোন দিতে।
কারণ উনি ভালো পরামর্শ দিতে পারবে তোমার আব্বু আম্মুকে বুঝাতে পারবে সমাজ উনার একটা কথা মানবে। তাই তোমার উচিত উনাকে সব বিস্তারিত বুঝিয়ে বলে উনার সাহায্য চাওয়া।
ঠিক আছে তাহলে উনার সাথে প্রথম কথা বলবো।
শিউলী তুমি আবার মনে করো না আমরা তোমাকে এখানে রাখতে চাইতেছি না তোমার জন্য আমাদের বাসা নিরাপদ নয়। সোবহান মিয়া কিংবা তার লোকজন জানতে পারলে অনেক সমস্যা করবে।
না না ভাইয়া , আমি কিছু মনে করতেছি না ।
সোবহান মিয়া তোমাকে আজ দুই দিন বাসায় না দেখে অবশ্যই খোজ করতেছে।
তা ঠিক , লোকটা সমাজসেবার মুখোশ পরে আছে। ভিতরে এত খারাপ আমি বললেও কেউ বিশ্বাস করবে উল্টা আমাকে খারাপ বলবে।

চাচা পাখিটা রাতের অন্ধকারে উঠাল দিলো টের পেলাম না।এখন আমও গেল ছালাও গেল।
আমি ভাবছি কে তাকে এখান হতে পালাতে সাহায্য করলো। আমার পাড়ার লোকে নাকি ঘরের লোকে।
ইসরে চাচা আপনার ইজ্জতের দিকে তাকিয়ে নাহিদকে কিছু বলি নাই শালা একটা খাজা খোর। আমি কালকে জেলখানায় যাইবো তার সাথে কথা বলতে। দেখি আসল কথা বাহির করা যায় কিনা।
তোমরা এদিক সেদিক খোজ লাগাও। যদি সুজন এই কাজে জড়িত থাকে তাহলে মেরে হাত পা ভেঙ্গে দিবে। থানা পুলিশ আমি সামাল দিবো আমরা সরকার আমরা দেশ চালাই আর মানুষ করে আমার সাথে বাটপারি।

আসসালামুলাইকুম আন্টি।
ওয়ালাইকুম সালাম। কিন্তু কে আপনি।
আমি শিউলী আন্টি ।
শিউলী !! তুমি কোথায় হতে ফোন দিয়েছো।
আন্টি সব বলবো। এখন আমি আপনার কাছে আসতে চাই। আপনি আমাকে বাঁচান আন্টি।
কিন্তু তোমার আম্মু আব্বু কি জানে তোমার কথা আর আমার আসবে যে। তারা যদি ভুল বুঝে?
আন্টি আমি প্রথম আপনাকে ফোন দিয়েছি এরপর উনাদের ফোন দিবো আমি তাঁদের বলেই আপনার কাছে আসবো এখন আপনারই সাহায্য প্রয়োজন। আচ্ছা ঠিক আছে আসো আমি বাসার ঠিকানা বলে দিবো যখন আসবে আমাকে ফোন দিও।
আন্টি ধন্যবাদ ।

ভাইয়া আপনি নাহিদেকে সব বুঝিয়ে বলবেন। এখন আমি আমার ইজ্জত নিয়ে বেঁচে থাকাই কঠিন হয়ে পড়েছে ভালোবাসার মায়ার তাগিদে ঘর ছেড়েছি এখন ইজ্জত সম্ভ্রম বাঁচানোর তাগিদে স্বামীর মায়া ত্যাগ করতে হবে। সোবহান মিয়ার ওখানে তারা প্রথম জানতে পারে নাই নাহিদ জেলে জানলে এতদিনে হয়তো আমাকে মরতে হতো না হয় দৌলতদিয়ার কুঠিরে সুট টাই পরা কোন ভদ্র লোকের উষ্ণ চুমা সহ্য করতে হতো নাক কাটা যেত পরিবারের। আমি নিরাপদ স্থানে যাচ্ছি তাকে ত্যাগ করছি না সে জেল হতে বাহির হলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রাণপণ চেষ্টা করবো। আর একটা অনুরোধ আবারও করছি আপনি তাকে জেল হতে বাহির করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৩তম পর্ব।

তুমি আমার উপর বিশ্বাস রাখো নাহিদকে অতি তাড়াি বাহির করবোই। তুমি নিজেকে এখন নিরাপদ ও সুস্থ রাখো। আম্মু খাবার দাও ক্ষুধা পেয়েছি।
ঠিক আছে আমি যাচ্ছি খাবার আনতে।
না না তুমি বসো সুজন বলে ।
আপনার প্রসংশা করে আপনাকে ছোট করতে চাই না। আপনার সুস্থ নির্মল অকৃত্রিম ভালোবাসার কথা লিখলে উপন্যাস হবে। আপনার মত লোক আছে বলেই নারী হতে মা হওয়ার ইচ্ছা করে। আমার যদি ছেলে হয় তাহলে নাম দিবো সুজন এতে আপনি আমার ছেলের ভিতর বেঁচে থাকবেন। আর চেষ্টা করবো ছেলেটা যেন স্বভাব চরিত্রে সুজনই হয়।
হাঃ হাঃ হাঃ এত বলো না। চলে গেলে ভুলে যায়।
না না ভাইয়া সবাই এক না। পরজনমে আপনার মায়ের মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে বোনের অধিকার চাইবো

আর যদি ভুলে যাই তাহলে মনে করবেন বাবার ঘরে অথবা নাহিদের ঘরে কিংবা এক অচেনা পরিবেশে শিউলী সংগ্রামে লিপ্ত দু‘মুঠো অন্নের জন্য। তবে নাহিদের বর্তমান অবস্থা আমি আর মেনে নিবো না।আমিও চেষ্টা করবো বুঝাতে নাহিদকে । তবে যারা এই পদে একবার চলে যায় তারা ফিরতে চায় না।
তা ঠিক ভাই ,তবে নাহিদ না বুঝলে কিছুই করার নাই তাকে হয় আমাকে ছাড়তে না হয় মাদক ছাড়তে হবে।দেখা যাক কে জিতে। মাদকের ভালোবাসা নাকি শিউলীর ভালোবাসা ।
কিরে খাওয়ার ঠাণ্ডা হচ্ছে আর তোমরা কথাই বলে যাচ্ছো। এই সুজন মেয়েটাকে এবার খেতে দেয়।
ঠিক আছে আম্মু আপনিও একসাথে বসে যান।
াাএসো এসো খেয়ে কথা বলো।
এইদিন আন্টি আমি নিয়ে দিচ্ছি আপনি খেতে বসেন

নাহিদ আজ তোকে কিছু গুরত্বপূর্ণ কথা বলতে চাই।
ঠিক আছে বল শুনি আমি নাহিদ বললো সুজনকে তুই একজন আমার বলার লোক আছে এখন। আগে বল শিউলী ও আন্টি কেমন আছে।
সবাই ভালো আছে তুই এইসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আগের সব কথা তোকে বলেছি এখন কথা হলো শিউলীকে নিরাপদ রাখা। আমার বাসায় আছে যদি সোবহান মিয়া জানতে পারে তাহলে আমারও ক্ষতি করবে। সে লোকজন লাগিয়ে দিয়েছে খবর নিতে।
এখন তাহলে কি করা যায়।
আমি আর শিউলী সব ঠিক করে রেখেছি শুধু তোর অনুমতি প্রয়োজন তাহাছাড়া তুইও জানা দরকার ।
যা ভালো হয় তুই তাই করবি আমার বিশ্বাস।
সে এখন ঢাকায় চলে যাবে তার চাচীর কাছে উনার সাথে কথা হয়ছে। উনি শিউলীর বাবা মাকে সব জানাবে ।
আমাকে আবার কোন আইনী জটিলতায় ফেললে আন্টি। আমি উনার কথা শুনেছি।
আরে না এইসব এখন আর করবে না।

শিউলী জানে না আমার এবং পরিবারের বিস্তারিত সব। আমার বাবাও সম্মানিত লোক আমি তাকে বলি নাই এবং তারাও জানেও না আমার বর্তমান জীবন। নেতার সাহসে কিশোর কালে গ্যাং নিয়ে চলতে চলতে অস্ত্র আর মাদকে ডুবে খুনে জড়িয়ে পড়াশোনা হলো না। জেল হতে বাঁচতে এলাকা ছাড়লাম যদিও নেতা খুনের মামলা হতে বাঁচালেন আর তখনি শিউলীর সাথে পরিচয়। মেয়েটা আসলে সহজ সরল মাটির ময়না। আমি আমার অভ্যাস পাল্টাতে পারিনি আর পারবো না । মেয়েটাকে আসলে সংসারী করা ঠিক হয়নি মাঝে মাঝে তার জন্য খুব কষ্ট লাগে। তার কথাই সত্য সোবহান মিয়ার কুনজর ছিলো তার উপর তাই হয়তো আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে। আমাকে জেলে আটকে রেখে সে শিউলীর পিছে পড়বে তা স্বাভাবিক । সুজন তোর কোন টাকাই আমি রাখবো না যে করে হোক আমাকে জেল হতে মুক্ত করবি। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৪তম পর্ব।

আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখছি তোকে মুক্ত করার। আর টাকা পয়সা নিয়ে তুই ভাবতে হবে না। আগে তুই মুক্ত হয়ে আয় তারপর সব হিসাব হবে।
তবে সোবহান মিয়ার মুখামুখি হওয়া দরকার ।
আমি বিয়ে করে শিউলীর জন্য সব ছেড়ে দিয়েছি। শুধু মাদকটা ছাড়তে পারেনি আর কুচক্রী তার সুযোগ নিলো সেই কুচক্রীকে কি করে ভুলে যাবো। যে শিউলীফুলের সুগন্ধকে দূষিত করতে চায় তাদের সমাজে মুখোশ খুলে দেওয়া উচিত। এরা ভুলে যায় নিজের জন্ম নারীর গর্ভে এরা ভুলে যায় নারী তার বোন এরা ভুলে যায় নারী তার স্ত্রী এরা ভুলে যায় নারীর সে বাবা।
এই বাবা লোকটা শুধু পুরুষ হয় মানুষ হয় না। তাই তারা নারীকে মানুষই ভাবে না।
একদম ঠিক কথা সুজন।

সময় শেষ হয়ে আসছে সুজন । যেটা ভালো হয় তুই ওটাই করবি। শিউলীকে একটু বুঝিয়ে বলিস আমি বাহির হলে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার শুধু তাকে নিয়ে চিন্তা ।
তুই চিন্তা করিস না নাহিদ। উকিল বললো মাদকের মামলা হওয়াতে জামিন হতে দেরি হচ্ছে । টাকা পয়সার কোন সমস্যা নাই যেখানে যাহা লাগছে তা দিচ্ছি। তুই শুধু কথা দেয় জেল হতে ছাড়া পেলে আর মাদকের সাথে জড়াবে না শিউলীর প্রতি কোন অবিচার করবে না। মেয়েটা গরিব হলেও একটা ভালো পরিবারের মেয়ে মনে হয়। চালচলনে বুঝা যায় না সে গরিব কিংবা অশিক্ষিত তাহাছাড়া সে রূপবতী, মোট কথা সে একজন মার্জিত এবং সুশ্রী মানুষ।
হাঃ হাঃ হাঃ তোর দোস্ত কি তার বউয়ের চেয়ে খারাপ সুজন। আমি তাই শিউলীর প্রেমে পড়েছি, তাহলে বলা যায় না ভুল করেনি তার একটাই কমতি আছে সেটা হলো গরিব, তবে এতে আমার মাথা ব্যাথা নাই। আমিতো এমনিতেই খারাপ বলে ঘর ছাড়া মা টাকা পয়সা দেয় তাতে চলে বাপ ভাই বোন আমার খবরও রাখে না । জেলে আছি মাও জানে না একবার ফোন করেছি আমি বলেছি ভালো আছি টাকা লাগবে না । তাহাছাড়া তোর মত বন্ধু থাকতে চিন্তাও করি না। ঠিক আছে বাই নাহিদ।

আসলে এই ধরনের লোক তেমন একটা ভালো হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে না। এদের কাছে সংসারের ভালোবাসার চেয়ে মাদকের আসক্তিটা প্রেমময় মনে হয়। তাহাছাড়া মাদকের একটা চেইন থাকে আর এই জটিল চেইন রাষ্ট্রের অনেক গভীর পর্যন্ত । তবুও চেষ্টা করছি একজন সুস্থ মানুষ সমাজকে ফিরিয়ে দিতে একজন মেয়েকে তার প্রেম ফিরিয়ে দিতে। যদি নাহিদ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে তাহলে আমার এই কষ্ট সার্থক হবে তার প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যাবে। একটা নারী তার সংসার সুখী করে সাজাতে পারবে। এমনও আছে ত্রিশবার জেল খেটেও মাদকের কারবার ছেড়ে দেয়নি। তার গল্প শুনলে আজব মনে হবে। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩৫তম পর্ব।

প্রথম যাত্রা ২২ বছর আগে। এর পর থেকে এ পর্যন্ত মাদকের কারবার করার অভিযোগে একে একে ৩০ বার গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গেছেন । কিন্তু এ কারবারটি ছাড়তে পারেননি। উল্টো অপরাধী করেও যেন গ্রেপ্তার এড়ানো যায়, সে উদ্দেশে বাড়ির চারপাশে স্থাপন করেছেন অনেক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি)। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারে ভবনটিতে প্রবেশ করলে তিনি জানালা দিয়ে বেরিয়ে গা ঢাকা দিতেন। ভবনের তৃতীয় তলায় প্রস্তুত থাকত জানালা কেটে তৈরি করা তার পলায়ন পথ। চট্টগ্রামের ইকবাল ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় ছিলেন। এর পর দেশে ফিরে ওয়ার্কশপ চালু করেন। এ সময়ে তিনি প্রথমে মাদক সেবন এবং এর পর তা বিকিকিনিতে জড়িয়ে পড়েন। বারবার গ্রেপ্তার হওয়া আর জামিনে বের হতে গিয়ে তার পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনও অনেক অর্থও খুইয়েছেন।

একবার খুব কৌশল করে তাকে ৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। অর্ধ ডজনেরও বেশি মাদক মামলার আসামি ইকবাল। ইকবাল ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ইত্যাদি নেশাদ্রব্য নগরীর বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহের পর বিক্রি করেন। সমাজে এই রকম অসংখ্য ইকবাল আছে যাদের খবর আমরা জানি না। বর্তমানে ইয়াবা নামক মাদকটা যুব সমাজ ধ্বংসের জন্য দায়ী আর এইটা পাড়া মহল্লায় ও গ্রাম গঞ্জে খুবই সহজলভ্য । কিছু কিছু মাদক কারবারী খবুই প্রভাবশালী থাকে তাদের সাথে সম্পর্ক থাকে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিত্তশালী লোকদের তাদের সমীহ করে চলতে হয় জনসাধারণকে এবং সাধারণ আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও। মত এবং পথের অমিল হলেই পোটলা বহনকারী মাদক কারবারী সংবাদ শিরোনাম হয় ক্রসফায়ার না হয় জেল জুুলুমে।

কি নাহিদ মিয়া কেমন আছো।
জ্বী চাচা ভালো আছি।
তুমি মাদক নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে তোমার বউ খবরও দিলো না। আমি শুনে দেখা করতে আসলাম। এখন দেখি তোমার বউও পালিয়েছে।
চাচা আসলে তার মনে ছিলো না। আর আমি জেলে তার সাথে যোগাযোগ হয়নি অনেক দিন।
এইটা একটা হলো নাহিদ । আমার অনেক মাসের বাসা ভাড়া না দিয়ে পালিয়ে গেল। আমি গিয়ে বলেছি কোন অসুবিধা নাই থাকতে পারবে সে ইচ্ছামতো , কোন কিছু দরকার হলে বলতে এবং তোমাকেও জেল বাহির করবার চেষ্টা করতাম শুধু——।
সে মনে হয় তার বাপমার কাছে চলে গিয়েছে। হারামজাদি আমাকে জেলে রেখে পালিয়েছে চাচা।
তুমি কি সত্যিই সত্যিই কিছু জানো না নাকি আমার সাথে অভিনয় করতেছো। আমি মনে করেছি তাকে সোবহান মনজিলে তিন তলার ফ্ল্যাটে থাকতে দিবো যে নিরাপদ থাকে আর তুমি জেল হতে বাহির হলে তুমিও থাকবে ভাড়ার দরকার হতো না। তুমি আমার পার্টির লোক আমার দেখাশোনা করো তোমার বউও একটু দেখাশোনা করতো আমার মেয়ের মত। আর কিনা পালিয়েছে আমার ভাড়া না দিয়ে। আচ্ছা ঠিক আছে তুমি বাহির হয়ে আসো আগে তারপর সব বুঝা পড়া হবে।
ঠিক আছে চাচা। আপনি রাগ করবেন না আমাকে দয়া করে একটু বাহির করেন। আমি বাহির হলে আপনার সব কথা শুনবো শিউলীকেও নিয়ে আসবো

আমার সাথে সব কথা হয়েছে নাহিদের। সোবহান মিয়ার সব কথাই বলেছি তাকে এবং আমাদের কোন কথা সোবহান মিয়াকে বলতে নিষেদও করেছি।
একদম ঠিক করেছেন ভাইয়া, আমি এখন নিশ্চিত হলাম। ঢাকায় আন্টিকে ফোন করা দরকার ছিল।
ফোন করে সিউর করে দাও তুমি ঢাকা যাবে।
জ্বী ভাইয়া আমিও তাই ভাবছি। সোবহান মিয়াকে নিয়ে নাহিদ যে আমাকে ভুল বুঝে নাই এতে নিজেকে হালকা লাগছে ভাইয়া। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ নাহিদকে সব বুঝিয়ে বলে সুন্দর সমাপ্তি করেছেন ঝামেলাটার। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী

আচমকা ইকামা চাওয়ায় লোকমান ভয় পেয়ে যায় মাথা নিচু মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। জিব ইকামা আবারও বলে পুলিশ লোকমান এবার মুখ খোলে বলে মাফি ইকামা (ইকামা নাই ) ইকামা মাফি পুলিশ বলে। দুই বছরে সে মালিকই দেখেনি ইকামা কিভাবে পাবে শুনেছে ভিসাই ক্যানসেল। লোকমানকে গাড়িতে উঠতে বললে সোজা গিয়ে গাড়িতে বসে সে। লোকমান হয়তো ভাবে আজ হতে জীবনের আরেক অধ্যায় যেটা সত্যের চেয়ে সত্য প্রবাসে জেল। মেয়াদ উত্তীর্ণ ইকামা হলেও হয়তো পুলিশ বিবেচনা করতো ছেড়ে দেওয়ার। কিছু লোকের ধারণা লোকমান যে ভিক্ষা করে তা পুলিশকে অন্য কেউ বলেছে। না হয় এই মহামারীতে ইকামা দেখতোই না। এমনও বহু হয়েছে যে ইকামা না থাকায় পুলিশ ধরে আবার ছেড়েও দেয় এমন আমি নিজেও বহু দেখেছি। প্রথমে নিয়ে যায় এলাকাবৃত্তিক পুলিশ ক্যাম্পে সেখানে কয়েক দিন রেখে পাঠিয়ে দেয় বড় জেলে।

যে কোন ছোটখাটো অপরাধ হলে পুলিশ ফাঁড়ি কিংবা থানা হতেই মালিক জিম্মাদার হয়ে নিয়ে আসতে পারে। অবশ্যই বহিরাগতদের একটা অপরাধ মেয়াদ উত্তীর্ণ ইকামা থাকে আর এইটা তাদের অপরাধ নয় মালিক ইকামা করতে গড়িমসি করে আর বিপদে শ্রমিকেরা। আসলে ইকামাতে সরকারি টেক্স আদায় করলেও এইটাতে একজন শ্রমিকের সমস্ত তথ্য লিখা থাকে। সৌদিয়ানদের জন্য আইডি কার্ড় আর বহিরাগতদের জন্য ইকামা বাধ্যতামূলক এর মাধ্যমে পরিচয় যেমন বহন করে তেমনি সমস্ত সেবা নিশ্চিত হয়। এই ইকামা করা না করার উপর শ্রমিকের কোন হাত নেই এইটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে মালিকের উপর। এই মালিকদ্বয় শতে দশ বিশ জন প্রতারক স্বভাবের নিজের কাজ করলেও অনেক সময় ইকামা করতে চায় না। আর মুখের চুক্তি করে যারা ফ্রী থাকার কথা বলে তারা টাকা দেওয়ার পরও ইকামা করে না এর পরে আছে দেশী দালালদের প্রতারণা।

লোকমান একজন নয় এই রকম হাজারো লোকমান আছে ঘড়ি বাড়ি বিক্রি করে ঢাকা শহর দেখে প্লেন চড়ে বিদেশের সোডিয়াম লাল নীল বাতি দেখে। মাঝখানে জেল জুলুম সয়েও পরিবারের বিরাগভাজন হয়। দেশে গিয়ে আবার আগের পেশায় ফিরে যায় বাধ্য হয়ে। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে মানুষ বিদেশ আসবে না এবং এসে সবাই সর্বস্বান্ত হচ্ছে। আগে বেশীর ভাগ সফল হতো এখন বেশীর ভাগ মানুষ প্রতারিত হয় তাই অনেক যাচাই বাছাই করে দেশ হতে পা ফেলতে হবে একবার ডুবে গেলে সাগরের তলদেশে পৌছে যেতে হয়। এখন মানুষ অসাধু হয়ে গিয়েছে সীমাহীন অর্থনৈতিক মন্দা চলে দেশে দেশে যার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম লাগাম ছাড়া এরপর আছে ক্ষমতা দখলের প্রতিযোগিতা। মাঝখানে আমরা গরিব দেশের গরিব শ্রমিক অবশ্যই আমাদের দেশেও বড় বড় লোক আছে যারা বিদেশে টাকা পাচার করে। বিদেশে ব্যবসা করে বাড়ি কিনে গাড়ি কিনে নারী কিনে। আমি ও আপনি শ্রমিক শুধু শ্রমিক।

আজকাল খুব ভয়ও লাগে আমার পাশেই একজন ভারতীয় কেরালার নাগরিক হার্ট এ্যাটাক করে মারা যায়। এর কিছু দিন পর লোকমানের পাশে একজন চাঁদপুরের লোক মারা যায় সেও হার্ট এ্যাটাক। সবাই বলে বেকার থাকায় চিন্তায় মানুষের এমন মরণ।
(চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী।
২৭তম পর্ব।

প্রচুর কর্মহীন করোনা কালে মধ্যপাচ্যে রাজনীতি জম জমাট হয়ে উঠে ইসরায়েলকে নিয়ে। করোনায় সৌদি আরবে দেশী বিদেশী হাজার হাজার লোক বেকার হয়ে পড়ে। সেই দিকে লক্ষ্য না করে মধ্যপাচ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রভাব ধরে রাখতে আমেরিকার দক্ষ কৌশলে সৌদি আরব নাচের পুতুল হয়ে মঞ্চে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিজেদের স্বার্থের জন্য একে একে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। বাহরাইন, সুদান, আরব আমিরাত ও মরক্কোর পরে আর কে স্বীকৃতি দিবে এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। তবে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে ইসরায়েল ভালোবাসার জন্ম হচ্ছে। ভুটানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে ইসরায়েল দক্ষিণ এশিয়াতে প্রবেশ করেছে। ভারত ও সৌদি আরবকে দিয়ে চাপ প্রয়োগ করে পাকিস্তানের কাছ থেকে ইসরায়েল স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে সৌদি আরব, ইসরায়েল ও আমেরিকার ইশারায় পাকিস্তানের কাছ থেকে বাধ্য করে ঋণের টাকা আদায়ের জন্য সময়সীমা বেধে দিয়েছে।

ইসরায়েল ও আমেরিকার ইহুদীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গোটা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সবগুলো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইহুদিরা তৈরি করেছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক,গুগল,নাসা ও বিশ্বসেরা সামরিক সরঞ্জাম সমূহ ইহুদীদের দখলে। বিশ্বে এমন কোন কিছুই নেই, যা সম্পর্কে মোসাদ অবগত নয়। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর পরে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের উপর বহু দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রবল চাপ আসতেছে। বাংলাদেশ সরকার ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনগণের ভয়ে সেই চাপ অদ্যাবধি উপেক্ষা করে আসছে, তবে কতটুকু উপেক্ষা করা সম্ভব সরকারের পক্ষে বলা মুশকিল । আবার এর সাথে জড়িত আছে দেশ শাসনের ক্ষমতার লিপ্সাও।

আমেরিকায় নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয় এবং জো বাইডেনের জয়ের পর সৌদি আরব হঠাৎ করে মধ্যপাচ্যের রাজনীতিতে সিংহ হতে বিড়াল বনে যায়। মাত্র কিছুদিন আগেও ইরান, তুরস্ক ও কাতারকে সর্বশক্তি দিয়ে কূটনীতিক তৎপরতা চালিয়েছে কোণ-ঠাসা করার জন্য কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস সেই সৌদি আরব এখন তুরস্ক ও কাতারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার কৌশল খোজ করতেছে। কিছু দিন আগে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় ইসরায়েলকে মদদ দিয়েছে সৌদি আরব। অথচ এখন এই সৌদি আরব কঠোর ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করতেছে। আসলে আগে হতেই সৌদি আরবের রাজা আর তার পুত্রের ভিতর মতভেদ ছিল ইসরায়েলকে নিয়ে। তারপরও ইসরায়েলকে সৌদি আরবের আকাশ সীমানা ব্যবহার করতে দেয়। যার কারণে ইসরায়েল আরব আমিরাত এবং বাহারাইন সহজভাবে সফর করতে পারে। অথচ কাতারের লোক এবং বিমান সৌদি আরবে নিষিদ্ধ ।

জো বাইডেনের জয়ের পর পরই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোপনে সৌদি আরব এসে বৈঠক করে সৌদি যুব রাজের সাথে। সেই বৈঠকে যুব রাজ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক জোরদার করার প্রস্তাব নাকচ করে দেন। সবচেয়ে আশ্চর্য ঘটনা ঘটে বাহারাইনে নিরাপত্তা বৈঠকে সৌদি রাজার একনিষ্ঠ সমর্থক যুব রাজ তুর্কি বিন ফয়সালের বক্তবে। সে সেখানে কঠোর ভাষায় ইসরায়েলের সমালোচনা করে স্পষ্টভাবে বলে দেন যেতদিন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হচ্ছে তেতদিন ইসরায়েল যেন আর আরব বিশ্বের কারো সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে না পারে ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
২৮তম পর্ব।

সৌদি যুবরাজ ফয়সালের বক্তব্যের সময় ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও সেখানে উপস্থিত ছিছেন। আরব আমিরাত ও বাহারাইনের ধুমধাম করে স্বাগত জানানোর মধ্যেই এমন বক্তব্যে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রী কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েন। আর যুবরাজ ফয়সালের বক্তব্য সৌদি আরবের রাজার বক্তব্যই মনে করা হয়। যুবরাজ বলেন ইসরায়েল নিজেকে শান্তির দূত হিসাবে তুলে ধরেন। আর প্রকৃত সত্যটা হলো ফিলিস্তিন পশ্চিমা শক্তির অধিনে আবদ্ধ আছে। ইসরায়েল যখন তখন ফিলিস্তিনীদের ধরে বন্ধি শিবিরে পাঠিয়ে অত্যাচার করছে, ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষ কেউ এই অত্যাচার হতে বাদ পড়ছে না এবং ন্যায় বিচার পাচ্ছে না। ইসরায়েল ইচ্ছামত বাড়ি-ঘর ধ্বংস করছে যাকে ইচ্ছা ধরে নিয়ে নির্যাতন করছে এবং মেরে ফেলছে। তখন সৌদি যুবরাজ ফয়সালের ভাষা ছিলো অত্যন্ত কঠোর এবং তিনি অভিযোগ করেন ইসরায়েলের হাত পরমাণু অস্ত্র আছে আর তারা এবং তাদের দোসর অনুগত মিডিয়া ক্রমাগত সৌদি আরবের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যেখানে রক্ত পিপাসু বোধ তাদের তারপরও ইসরায়েল প্রচার করে যে তারা শান্তির দূত তাই সৌদির বন্ধু হতে চায়।

যুবরাজ বলেন তারা তখনি সৌদি আরবের বন্ধু হতে পারবে যখন স্বাধীন ফিলিস্তিন মেনে নিবে। অবশ্যই ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে অধিকৃত ভূখণ্ড ফিলিস্তিনকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তারপর সব আরব রাষ্ট্রের ইসরায়েল বন্ধু হতে পারবে। যুবরাজের বক্তব্যের পর পরই ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন এই বক্তব্যে তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, আরব বিশ্বে যে পরিবর্তন আসছে তা যুবরাজের কথায় চাপ নেই এবং তিনি শান্তি চুক্তি না হওয়ার জন্য ফিলিস্তিনকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন হয় ফিলিস্তিনকে সমস্যার সমাধান মেনে নিতে হবে না হয় এমন দোষারোপ করতে হবে। এই উপ্ত বাক্য বিনিময়ের সময় বাহারানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মঞ্চে বসা ছিলেন। হঠাৎ করে সৌদি আরবের এমন কঠোর ভাষায় সবাই হতবাক হয়ে পড়ে।

এই সম্মেলনে যেত কঠোর হয়েছে তার চেয়েও বেশী এখন কাতর হচ্ছে মধ্যপাচ্যের আরেক ছোট দেশ কাতারের কাছে। সৌদি জোটের দেওয়া অবরোধ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। কাতার হলো ইসলামী রাজনৈতিক প্রধান পৃষ্ঠপোষক তারপরও অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ ক্ষুদ্র হলে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কাতার নিখুঁত খেলোয়াড। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এমন অগাধ প্রভাব দেখানো মুসলিম রাষ্ট্র আর দ্বিতীয়টির নজির নেই। কাতারের এই রাজনীতি আবার প্রথা বিরোধী, পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে গিয়ে ইসলামী রাজনীতির বড় পৃষ্ঠপোষকতা করে এই কাতার। আরব বিশ্বে নিষ্ঠুর রাজতন্ত্রের কঠোর প্রতিবাদী কণ্ঠ এই কাতার । আরব দেশে গণতন্ত্রের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠ এই কাতার বিশেষ করে বিশ্বজগৎ খ্যাত চ্যানাল আল-জাজিরার মাধ্যমে এই অসাধ্য সাধন করে চলেছে। এবং সাথে সাফল্যমণ্ডিত কূটনীতি তৎপরতা চালিয়ে পশ্চিমাদের কাছে নিজের অপরিহার্যতা বজায় রেখেছে দোহা। কাতারের এই সাফল্য মোটেও পছন্দ নয় মধ্যপাচ্যে প্রভাব বিস্তারে মরিয়া সৌদি জোটের বিশেষ করে সৌদি ও আমিরাতের, এদের সাথে আছে মিশর ও বাহারাইন। রাজনৈতিক ইসলামের উত্থানে ভিত থাকে এইসব দেশ কারণ যে কোন গণতন্ত্রীকরণে এইসব দেশ হুমকির মুখে পড়বে।

তাই কাতারের গণতন্ত্রমনা নীতিকে এইসব দেশ দেখছে নিজের অস্তিত্নের জন্য প্রচণ্ডভাবে হুমকি হিসাবে। তাই কাতারের সার্বভৌমত্ব হরণ ও দুর্বল করার জন্যই ২০১৭ সালে সৌদি জোট অবরোধ আরোপ করে। এই জোট মনে করে ছিল কাতার নিঃশেষ হয়ে যাবে কিন্তু তাদের ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়, এখনো কাতার মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তবে এই কথা সত্য যে কাতারের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তারপরও কাতার তার নিজের অবস্থা হতে সরে আসেনি। বিবিসি সংবাদ বিশ্লেষকের মতে সৌদি জোট মনে করে ইয়েমেনের হুতির মত কাতার সৌদি জোটের বশ্যতা মেনে নিবে। তবে কাতারে রয়েছে বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
২৯তম পর্ব।

কাতারের রয়েছে বিশাল অর্থনৈতিক ভাণ্ডার, উত্তর অঞ্চলে রয়েছে সুবিশাল তেল ভাণ্ডার। শুধুমাত্র বৃটেনে রয়েছে কাতারের ৫৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এই ছাড়া তাদের পিছনে রয়েছে তুরস্ক ও ইরানের শক্ত সমর্থন। বিবিসি সংবাদ বিশ্লেষক ফিলীপ গাডনারের মতে মধ্যপাচ্যে গত কয়েক বছরে বিরাট বিভাজন রেখা তৈরি হয়ে গিয়েছে। এর একদিকে আছে তিনটি সুন্নি রাজতন্ত্র সৌদি আরব, আরব আমিরাত ও বাহারাইন এবং তাদের মিত্রদেশ মিশর। অন্যদিকে কাতার, তুরস্ক ও ইসলামি আন্দোলন বিভিন্ন সংগঠন। দুই পক্ষ একে অপরকে বয়কট করে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিশাল ক্ষতি সাধন হয়েছে। এই বিভেদ দুর করতে উভয় পক্ষকে চাপ দিতে ট্রাম্পের জামাতা মধ্যপাচ্যে সফরে আসেন। উনি কাতার এবং সৌদি আরবের সাথে বৈঠক করেন। আমেরিকার নতুন প্রেসিডন্টও নিশ্চয় চাইবেন এই সমস্যার সমাধান কারণ কাতারে রয়েছে আমেরিকার বিশাল সেনাঘাঁটি। কাতারে অবরোধের বড় কারণ হলো মধ্যপাচ্যে গণতন্ত্র ও ইসলামি দলগুলির প্রতি আল জাজারির নিবিড় সমর্থন আসলে এইটা হলো কাতারের নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।

তুরস্ক, ইরান ও কাতারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক সৌদি জোটের জন্য অস্তিত্বের হুমকির কারণ। শিয়া রাষ্ট্র ইরান হলো সৌদি আরবের সবচেয়ে বেশী মাথা ব্যথা তেমনি তুরস্কও। কারণ কাতারে রয়েছে তুরস্কের সামরিক ঘাটি। কাতার ও তুরস্ক হলো মধ্যপাচ্যে গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক এবং মুসলিম বাদ্রারহুড়ের বড় পৃষ্ঠপোষক। সৌদি জোট যখন কাতারের উপর অবরোধ দেয় তখন আমেরিকা ও ইউরোপ এই অবরোধ প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয় সৌদি জোটকে আর তখন তারা চৌদ্দটি শর্ত দেয় কাতারকে।
এর মধ্য উল্লেখযোগ্য ছিলঃ
(১) আল জাজিরা টিভি বন্ধ করা।
(২) তুরস্ক ও ইরানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা।
(৩) তুরস্কের সামরিক ঘাটি বন্ধ করা। ও
(৪) মধ্যপাচ্যের সমস্ত ইসলামি দলকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বন্ধ করা।
কাতার এইসব দাবির কোনটিও মেনে নেয়নি বরং আরো উল্টা সৌদি জোটকে বলে দেয় এইসব দাবি কাতারের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব জন্য হুমকি স্বরূপ।

কাতারকে বশে আনতে না পেরে ছোট রাষ্ট্র কাতারকে দখল করার পরিকল্পনা করেন সৌদি পিন্স সালমান। তবে সৌদি আরবের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি এখন আমেরিকায় জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় চোখে সর্ষে ফুল থেখছে। পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা বলতেছেন সৌদি যুবরাজ সালমান লাইন অফ ফায়ারে রয়েছেন কারণ খ্যাতিমান সাংবাদিক জামাল খাসোগি ও ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবেন জো বাইডেন। তিনি ইরানে পরমানু চুক্তির বড় সমর্থক এই জন্য যুবরাজ সালমান ১৮০ ডিগ্রীতে ঘুরে কাতার ও তুরস্কের সাথে সম্পর্ক গঠতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন। কাতারের সাথে সুসম্পর্ক করে বাইডেনকে বুঝাতে চান যুবরাজ তার সাথে থাকতে আগ্রহী, অন্যদিকে তুরস্কেও কাছে টানতে চান সৌদি আরব। এই ট্রাম্পই কাতারে অবরোধ দেওয়ার জোর সমর্থক ছিলেন পরে বুঝতে পারে হিতে বিপরীত হলো।

কাতারের বিমানকে সৌদি আরবের আকাশ সীমা ব্যবহার করতে না দিলে কাতার ইরানের আকাশ সীমা ব্যবহার করা শুরু করে এতে কাতার ও ইরান আরো কাছাকাছি চলে আসে। করোনা মহামারীর মাঝেই ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যার পর প্রথমে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কঠোর নিন্দা জানান। নানা দিক বিবেচনা করে ট্রাম্প কাতার হতে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করে আর এতে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে এগিয়ে আসে কুয়েত, তাই অতি তাড়াতাড়ি কাতার হতে অবরোধ উঠে যাবে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান বলেছেন খুব দ্রুত কাতার সাথে আবার পুনরায় সম্পর্ক শুরু হবে। ট্রাম্প বিদায়ের আগেই অবোধ শিথিল হয়ে যাবে আশা করা যায়।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩০তম পর্ব।

তবে এই সম্পর্কে প্রথমে জোর আপত্তি জানায় আরব আমিরাত। আর এখন কন্ঠ পাল্টিয়ে আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন সব দেশের স্বার্থে সৌদি আরব এক মহতী উদ্যোগ নিয়েছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করে সৌদি আরব আর কাতারের মধ্য উষ্ণ সম্পর্ক আরব আমিরাত আর মিশর চাইবে না । কাতারের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক করতে বড় ধরনের ছাড় দিতে হচ্ছে। কাতার কোন দাবিতো মেনে নেয়নিই এখন উল্টো শর্ত দিয়েছে যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলে বিনা শর্তে অবরোধ তুলে নিতে হবে। এবং সৌদি জোটের সব দেশে কাতারের নাগরিক অবাধে যাতায়াতের সুযোগ দিতে হবে উল্লেখ্য অবরোধে সময় সৌদি জোট কাতারের নাগরিকদের বহিষ্কার করে। সৌদি আরব বিনা শর্তে কাতারের সব শর্ত মেনে নিবে এতে কোন সন্দহ নেই। তবে কাতার সৌদি জোটকে কতটা বিশ্বাস করবে তা বলা মুশকিল। বিশ্লেষক ফিলিপ গাডনার মনে করে প্রতিবেশী দেশগুলিকে ক্ষমা করতে কাতারের বহু সময়ের প্রয়োজন হবে। কাতার, সৌদি আরব ও তুরস্ক সম্পর্ক জোরদার হলে সবচেয়ে বেশী লাভবান হবে তুরস্ক আর মুশকিলে পড়বে আরব আমিরাত ও মিশর। কাতার ও সৌদির সম্পর্কে মধ্যপাচ্যে রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তন হবে হবে তুরস্কের প্রভাব বাড়বে এবং মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন দেশের ইসলামি দলগুলি সুবিধাজনক অবস্থানে চলে আসবে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে সমস্যায় পড়বে ইসরায়েল যদিও সৌদি এই ইস্যু কবর দিতে তৎপর কিন্তু কাতার ফিলিস্তিন নিয়ে আগের মতনই থাকবে।

সৌদি আরব তুরস্কের ভূমিকম্পের পর ত্রাণ সহায়তা পাঠিয়ে ছিল। তার সূত্র ধরে তুরস্ক প্রেসিডেন্ট টেলিফোনে কৃতজ্ঞতা জানান সৌদি বাদশাকে। তারই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব ও তুরস্ক তিক্ততা সম্পর্কের কিছুটা অবসান হবে বলে মনে হয়। হৃদয়তাপূর্ণ আলোচনা দাবী করেন উভয় পক্ষ তখন তাঁরা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনাও করেন। একদিকে মুসলমানদের দুই পবিত্র মসজিদের খাদেম অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা, এই দুই প্রভাবশালী নেতার আলাপে মুসলিম বিশ্বে চমক সৃষ্টি করে। মূলত আমেরিকার নির্বাচন দুই দেশের জন্য নতুন বাস্তবতা নিয়ে এসেছে তাই আলোচনা হচ্ছে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন মোড় নিতে পারে। গত আরব বসন্তের পর হতে এই দেশের মধ্য সম্পর্ক শীতল হয়ে যায় তারপরও সম্পর্ক জোরদার করার নানা উদ্যোগ ছিলো। ২০১৮সালে কানাডা সৌদির অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করলে প্রতিবাদ করে তুরস্ক। সেই সময় সৌদি একজন মহিলা মানবাধিকার কর্মী গ্রেফতার করলে কানাডা এর কঠোর প্রতিবাদ করে বলে এটা মানবাধিকার লক্ষণ রিয়াদের। তখন সৌদি কানাডার রাষ্ট্রদূত বহিষ্কার করে সমস্ত বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থগিত করে। ওই সময় আরো অনেক মুসলিম রাষ্ট্রের সাথে তুরস্কও সৌদির পাশে দাঁড়ায় এবং বলে এইটা কানাডার অনধিকার চর্চা। তার সূত্রধরে দুই প্রভাবশালী মুসলিম রাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা গঠে উঠে। কিন্তু জামাল খাসোগির হত্যায় দুই দেশকে দুই মেরুতে নিয়ে যায় তখন।

তুরস্কে সৌদি দূতাবাসের ভিতর জামাল খাসোগি হত্যায় সৌদি ক্রাউন পিন্স সালমান সারা দুনিয়ায় ভিলেন হিসাবে চিহ্নিত হয়। তুরস্কে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে নিখুঁতভাবে খাসোগিকে হত্যা এবং পরে এক হত্যাকারী খাসোগির পোষাক পরে দূতাবাস হতে খাসোসি সেজে বের হয়ে যায় এই পর্যন্ত সব কিছু ঠিক ছিলো। কিন্তু তুরস্কের তদন্তকারী দল সব কিছু পাল্টে দেয় একে একে তাদের হাতে আসে হত্যা করার প্রমাণ এমনি কি লাশ কেটে টুকরা করার সময় খুনীদের কথা বার্তাও তদন্তকারীর হাতে চলে আসে। আর এতে বুঝা যায় এই হত্যায় প্রভাবশালী কেউ জড়িত এরদোগান কারো নাম না বলে বুঝিয়ে দেন এই হত্যায় পিন্স সালমান জড়িত। এরপর পানি অনেক দূর গড়ায় দুই দেশের যে সুসম্পর্কের সম্ভাবনা দেখা দিয়ে ছিল তা দ্রুত মিলিয়ে যায় অন্ধকারে।

ঐতিহাসিকভাবে সৌদি আরব আর তুরস্কের সম্পর্ক প্রীতিকর নয়। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ওসমানীয় খেলাফত হেরে যাওয়ার পর সৌদি আরব রাষ্ট্র গঠন করা পথ তৈরী হয় আর আগে একশ বছর মক্কা মদিনার খাদেম ছিলেন ওসমানীয় শাসকেরা। কামাল আর্তাতুকের সময় সম্পর্ক ভালো ছিলো স্নায়ু যুদ্ধ, ইরাক ইরান যুদ্ধে সব সময় উভয় দেশ একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে মত-অমত থাকলেও কখনো সম্পর্ক বৈরিতা রূপ নেয়নি বরঞ্চ ব্যবসা বাণিজ্যে সম্পর্ক ক্রমশ বেড়েছে কিন্তু এত বছরের সম্পর্ক পাল্টিয়ে দেয় আরব বসন্ত। গণরোষে যখন আরব বিশ্বে ক্ষমতা আটকে থাকা স্বৈরশাসকের পতন হচ্ছে তখন সৌদি আরব নিজের ক্ষমতার লোভে অবস্থান নেয় এই গণ আন্দোলনের বিপক্ষে আর তুরস্ক অবস্থান নেয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পক্ষে ঠিক তখনি শুরু হয় দুই বন্ধু দেশের দূরত্ব ।
(চলবে)।

আমি অন্ধ, আমার বিবেকের বিচারের দরজা বন্ধ

আমিই বাংলাদেশ!
আমি শত শত মানুষের সামনে কুপিয়ে মারা যাওয়া রিফাত।
আমি আগুনে পুড়ে যাওয়া নুসরাত।
আমি নির্মমভাবে পশুর মতো হত্যা হওয়া সেই আবরার ফাহাদ।
আমি বিশ্বজিৎ, আমি অভিজিৎ, আমি নাদিয়া
আমি তনু, আমি খাদিজা, আমিই রাজন!

আমি মিতু, আমি ব্যার্থ ছাত্র, আমি প্রশ্নপত্র না পাওয়া সেই হত দরিদ্র!
আমি অবিরাম বাংলার মুখ।
আমি লাল সবুজের কফিন,
আমি পিলখানার অসহায় সেনা অফিসারের আধারের দাফন।
আমি স্বাধীন দেশের পরাধীন জনগণ।

আমি বাসে ধর্ষিতা মাজেদা।
আমি ছেলের সামনে ধর্ষিতা মা
আমি ভাইয়ের সামনে ধর্ষিতা বোন!!
আমি এমপির গুলিতে গুলিবিদ্ধ সৌরভ।
আমি গুম হওয়া সন্তানের নিরব কান্না।
আমি রানা প্লাজার ধুলো পড়া লাশ।
আমি তাজরিনের অগ্নিকাণ্ডে অসহায় গরীব কর্মচারী।

আমি ধসে পড়া ভবনের নিচে গলিত লাশের গন্ধ।
আমি পদ্মা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবে মরা মায়ের আলো আধারের বুক ফাটা কান্নার ছন্দ!
আমি সাগর-রুনির মেঘ।

আমি ছিনতাই হওয়া অসহায় পথচারীর ব্যাগ।
আমি জন্মের আগেই গুলিবিদ্ধ নবজাতক শিশু।
আমি সাত খুন শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়!
আমি দিনের আলোতে ধর্ষিতা হিরা মনি।
আমি করোনা ভাইরাসের ভুয়া রিপোর্টকারি।
আমি পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া মেজর রাশেদ সিনহা।
আমি স্বামীর হাত থেকে ছিনতাই হওয়া সেই হতভাগী নারী I        আমি বেগমগঞ্জের বাবা বাবা বলা সেই বস্ত্রহীন মা I
আমি অন্ধ, আমার বিবেকের বিচারের দরজা বন্ধ..!!

সংগ্রহ করা।

একটাই মা চাঁদের চেয়েও সাদা

সূর্যমুখী তারুণ্য আমার তোমার
জেগে উঠুক আগুন কোরাস দাউ দাউ করে
কতকাল ধরে রাখবো করতলে কষ্টদগ্ধ জীবন
দিন বদলের এই মাহেন্দ্রক্ষণে ক্ষণে
মানুষের বিপরীত আক্রোশে আর ঘৃণায়
জ্বেলে দাও অবিনাশী গান
পোড়াও এবার অগ্ন্যুৎসব রাজা ও রাজ্যপাট।

স্লোগান ধর রাস্তায় নেমে সব জালিমের বিরূদ্ধে
রাজপথে পড়ে আছে বিবস্ত্র নারীর মৃত দেহ
একদিন এই জোয়ারে ভাসবে তোমার আমার মা
মেয়ে আর বোন। তখনো কি তুমি আকাশের চাঁদ দেখবে তারা গুণবে। চাঁদের চেয়ে সুন্দর মা আজ ক্ষত বিক্ষত হায়নার নখের আচড়ে। হায়নারাও মানুষ তোমার আর আমার মত। প্রতিবাদী হও রুখে দাঁড়াও, যদি না পারো তাহলে জায়গা হবে তোমার আকাশে।