ফয়জুল মহী এর সকল পোস্ট

ফয়জুল মহী সম্পর্কে

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র

202102w

খালামনি আপনাকে ধন্যবাদটা পৃথিবীর উপরে নীল আকাশের মত বিশাল করে দিলাম। আপনি আর আম্মু আমাকে সত্যিকার ভালোবাসে আর আপুটা একটু একটু কিন্তু আব্বু একটুও নয়। আম্মুর কাছে যেতে পারি না আব্বুর জন্য তাই আপনার কাছে ছুটে আসি, মনে কষ্ট লাগলে ক্ষমা করে দিবেন। আসলে কেমন করে যে মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম আবার গোপনে বিয়ে করলাম, কিন্তু ধরে রাখতে পারলাম না। মেয়েটা কষ্ট নিয়ে না পাওয়ার হাহাকার দেখতে দেখতে ইহজগত ত্যাগ করলো। খুব কষ্ট হয় শিউলীর জন্য, তার মা-বাবার জন্য। ধনী গরিব সবার কাছে সন্তান হলো সাত রাজার ধন। আপনি আম্মু যেমন আমাকে পরম মমতা বিলিয়ে দিতে কোন কার্পণ্য করেন না ঠিক তেমনি শিউলীর মা-বাবাও খালা মনি।

হ্যালো, আসসামুলাইকুম। কেমন আছেন?
ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বি, ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।
ভালো আছি। আমি আগামীকাল সকালে চলে যাবো। আচ্ছা ঠিক আছে, আল্লাহ যেন সহায় থাকে। আবার সময় সুযোগ করে আমাদের দেখতে আসবেন বাবা। ঠিক আছে চেষ্টা করবো, আপনারা ভালো থাকবেন। জীবন, মরণ আর বাস্তবতা কত কাছাকাছি যেন একই বৃত্তে বন্দী আর এই সবের সাথে আমরা হাড়ুড়ু খেলেই বেঁচে থাকি। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া ভালোবাসা আমি ধরে রাখতে পারি নাই। শিউলী মারা গিয়েছে এক এলাকায় মাটি দেওয়া হয়েছে তার নিজের এলাকায় আর আমি থাকবো আরেক জায়গায়। যদি কখনো মন খারাপ হয় শিউলীর কবর দেখতে ইচ্ছে করে পারবো না সময় সুযোগের অভাবে। ইস! জীবিতকালে যদি তাকে আরেকটু অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিতে পারতাম তাহলে বিবাহিত জীবনের সুখ আরো গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারতো। এখন অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকবে বিলীন হওয়া দেহের কবরটা। অবিনশ্বর আত্মা স্বগীয় সুখে যেন সুখী হয় এই চাওয়া রেখে গেলাম তোমার জন্য, হয়তো দেখা হবে কোন একদিন নীল আকাশে।

হ্যালো সুজন, কেমন আছিস?
ভালো আছি, তুই কোথায় এখন, দেখা করিস।
আমি চলে এসেছি, ঠিক আছে দেখা করবো।
কি খরব নাহিদ মিয়া, কেমন আছো?
আসসালামুলাইকুম চাচা, আমি ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন।
ওয়ালাইকুম সালাম। এবার তাহলে কাজকর্মে মন দাও। ভালো করে পার্টির কাজ করো সামনে সব কমিটি নতুন করে হবে, দেখি তোমাকে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া যায় কিনা। অত্যন্ত সাবধানে থেকে কাজ করবে আমার প্রতিপক্ষ ক্ষতি করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। (ম্লান হেসে নাহিদ) চাচা আল্লাহের রহমতে আপনাকে কেউ কিছু করতে পারবে না আমি আছি আপনার পাশে। করতে হলে আমাকে মেরে তারপর করতে হবে। আপনার দিকে বড় চোখ তাকানো সেই চোখ কারো নাই, আপনি মনে সাহস রাখেন। আমি তোমাদের কয়েকজনের কারণে বুক ফুলিয়ে চলার সাহস পাই। কে কি বলে তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই তুমি ঠিক থাকলে হবে। আমি তোমাকেই আমার নীতি আদর্শে গড়তে চাই।
ধন্যবাদ চাচাজান। ঠিক আছে, এখন তাহলে যাই।

হে প্রিয়তমা শিউলী,
যদি পারো ক্ষমা করে দিও। সোবহান মিয়া সমাজের অধিপতি তাই উপরে উঠতে হলে সোবহান মিয়ার সুনজর দরকার। যখন সময় হবে তখন আমি তাকেই কুজনরে ফেলবো ততদিন সয়ে যাই এবং সয়ে যেতেই হবে। রাগ করো না তুমি, তোমার অনুপস্থিতে আমি বড়ই অসহায় তাই শক্তিমান হতেই সোবহান মিয়াই মই। আকাশের একা তারাটার দিকে তাকালে চোখে জল আসে একা নিঃসঙ্গ সেই তারা তুমি। আর সোবহানকে দেখলে ঘৃণা, রাগ, ক্রোধ প্রজ্বলিত হয়ে উঠে তখন চটজলদি আকাশ দেখি সেই নিঃসঙ্গ তারা খুঁজি। খুব দ্রুত সোবহান মিয়া রাবণ উপাধি পাবে তাই অপেক্ষা, তাই সোবহান মিয়ার ছায়ায় হাঁটা।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৫৭তম পর্ব।

কিরে নাহিদ শুশুর বাড়ি গিয়ে একদম চুপ হয়ে থাকলি যে,একবার ফোন পর্যন্ত করিস নাই। এই দিকে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই ফোন দিতে পারি নাই।
এসে সব সামনাসামনি বলবো বলে ফোন করি নাই।আন্টির বাড়ি গেলে আন্টির সাথেই কথা বলে শেষ করতে পারি না দুইজনে এত কথা বলি যে টের পাই না কখন সময় চলে যায়। আর একদিন শিউলীদের বাড়িতে ছিলাম, অনেক লোকজন সাথে ছিলো এবং শুশুর মশাই বসে কথা বললো উনাদের আত্মীয়- স্বজনের সাথে ফোনে কথা বলতে হলো তাই ব্যস্তই ছিলাম বলা যায়।
তোর শুশুর-শাশুড়ী কেমন লোক, কেমন আচার- আচরণ করলো তোর সাথে।
উনারা একশ পারসেন্ট ভালো মানুষ। আসলে আমরা মনে করি গরিব হলে, অভাবী হলে মানুষ আনকালচারহয়। এই কথা পুরো এবং সবার বেলায় সত্য নয়, উনাদের দেখলে বুঝতে পারবি।পুরো বাড়ির পুরো বংশ শিক্ষিত ও ভদ্রলোক, সবাই কে ডেকে আমাকে পরিচয় করে দিয়েছে, সাধ্যমত আপজন ও মান্যগণ্যদের আমার সাথে খাওয়ার খেয়েছে।অথচ তাদের মেয়ে নেই আমি নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করেছি এবং আমার কারণেই হয়তো সে মারা গিয়েছে। উনারা আমার সাথে কেউ কোন প্রকার মন খারাপ করা কথা বলেনি তবে বার বার শিউলীর অভাব অনুভব করে।আমি গিয়ে তাদের অনেক টাকা পয়সা খরচ করে ফেলছি তা যোগাড় করতে কষ্ট হয়ছে উনাদের তাও বুঝা যায়নি। একজন প্রকৃত জামাতা যে সম্মান পায় তাই আমি পেয়েছি।

শিউলী যে একজন ভদ্র পরিবারের মেয়ে সেটা তার আচরণেই বুঝা যেত।
সুজন তার ছোট একটা ভাই পড়াশোনা করে।আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য সহযোগিতায় কোনোমতে চলে, কিন্তু দেখলে বুঝা যায় অনেক সুখী ধনবান একটা পরিবার। আর আমরা দুইহাতে টাকা কামাই টাকা খরচ করি তবুও সুখের ঘরে গরিব মশাই।
আসলে আত্ম তৃপ্তিই হলো সুখের বাসা, নাহিদ।
আমার সব পরিচয় দেওয়ার পর বিশ্বাস করলো কিনা বুঝতে পারি নাই, আমি যে শিউলীকে নিয়ে আম্মু-আব্বুর ছিলাম না সেটা হয়তো বুঝতে পেরেছে। কিন্তু আমি যে একটা অবাধ্য সন্তান সেটা বলি নাই, এই কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে। আসলে সুজন,শিউলীকে নিয়ে আসা উচিত হয়নি।বাদ দেয় অতীত এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা কর, কি করবে। শিউলীর পরিবারের জন্য কিছু করার চেষ্টা কর, যেমন অর্থনৈতিক সাহায্য করা, তার ভাইটাকে পড়াশোনা করানোর চেষ্টা করা।
আমিও তাই ভাবছি সুজন।
মেয়ের জামাই নয় একজন ছেলের মত এই পরিবারের পাশে থাকবো। তবে এর জন্য আমাকে কিছুটা ত্যাগী হতে হবে।এবং সোবহান মিয়ার সাথে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দিয়ে চলতে হবে। প্রতিশোধ নিতে হলে যা করা দরকার সব করবো তবুও সোবহান মিয়াকে ছাড়বোনা।
ভাই রেরাজনীতি অনেক জটিল জিনিস আমি বুঝি না, আমরা দুইজন ভালো বন্ধু এইটাই ভালো।
হাঃহাঃহাঃ।(নাহিদ হাসে সুজনের কথায়)।

আমি তো রাজনীতি করবো না, আমি করবো পলিটিক্স।সোবহান মিয়ার সাথে থাকবো, কাজ করবো কিন্তু মনে থাকবে সোবহান মিয়া শত্রু আমার।সোবহান মিয়া উপরে উঠার মই যেটা দিয়ে আমি আকাশ ধরবো। সোবহান মিয়া এমপি হবে, মন্ত্রী হবে এইটা অবশ্যই তার প্রতিপক্ষে ঘায়েল করে হতে হবে তাই তার দরকার নাহিদের আর উপরে আমিও উঠতে চাই তাই আমার দরকার সোবহান মিয়ার।এখানে নীতি, আদর্শ ও দেশপ্রেমের অভিনয় করা লাগবে। আমি এই সব করতে পারবো না তাই সরাসরি পলিটিক্স করবো সোবহান মিয়ার ইশারায়।অশিক্ষিত বর্বর এক সময়ের মাস্তান সোবহান মিয়া কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে এখন এমপি হতে চায় মন্ত্রী হতে চায়। এখানে জনসেবা, সমাজসেবা কিংবা নামের সাথে হাজ্বি লাগনো হলো চেহারায় মুখোশ পরা এবার বল এখানে দশপ্রেমের কি আছে।দল যখন ক্ষমতায় তখন টাকা রোজগার করাই হলো রাজনীতির একটা অংশ।আর সেটা যেভাবেই হোক শুধু চাই মাথার উপর নিরাপদ একটা ছাতা।

এক সময় সেই বিশ্বস্ত ছাতা সোবহান মিয়া পেয়েছে বলে আজ সে বড় রাজনীতিবিদ। আমি রাজনীতিবিদ হতে চাই না তাই দল ক্ষমতা হারানোর আগেই দেশ ত্যাগ করবো বিদেশে গড়ে তুলবো ব্যবসা বাণিজ্য।
আর যদি অন্য কোন পলিটিক্সে পড়ে তুই মারা যাস।এইটাতো দেশপ্রেমিক নামক ভণ্ডামি হতে বাঁচার সহজ পথ। তোর সাথে যদি কোন ভুল আচরণ করি তুই ক্ষমা করে দিবি এবং আম্মুও ক্ষমা করে দিবে। আর যদি বেঁচে থাকি বিদেশ চলে যেতে পারি কিংবা যেখানেই থাকি তোকে ভুলবো না কখনোই।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৮তম পর্ব।

আম্মু কেমন আছো?
তুমি কেমন মৌরি মামনি। আমি ভালো আছি।
আম্মু একটা সুখবর দিবো, এখন মেইলে নিউজটা পেলাম। তোমাকে বলে তারপর দাদীকে বলবো।
কি এমন খবর বলে ফেলো মামনি।
সেই বহুজাতিক কোম্পানির চাকরীটা আমি পেয়ে গেলাম। খবরটা শেষ হলো আম্মু।
আজ আমার আনন্দময় দিন। আর এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ুক আকাশে বাতাসে জানুক মানুষে।
একি আম্মু তুমি কাঁদছো কেন।
এই কান্না আনন্দ অশ্রু, সুখের নেত্রজল । আজ আমি মা হিসাবে সার্থক, ছুড়ে ফেলে যাওয়া মায়েরা শুনে আশান্বিত হবে। মৌরি এক নিঃসঙ্গ মায়ের সন্তান লন্ডন জয় করেছে, সংগ্রামী মায়ের অনুপ্রেরণায়।
মৌরির আব্বুর মত এমন হাজারো আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর বাবা আছে টাকা-পয়সায় মান-সম্মানে সমাজের উপর তলায় বসবাস কিন্তু মৌরিদের কাছে ঘৃণিত।যেটা সন্তান মুখে প্রকাশ করে না অন্তরে রাখে। আম্মু বাদ দাও এইসব কথা।
তোমার দাদী এবং নানীকে ফোন দিও।
ঠিক আছে, আমি জবে জয়েন্ট করে কোম্পানির সাথে আলাপ করে আপনার ভিসার জন্য আবেদন করবো আর কিছু দিন কষ্ট করে ঢাকায় থাকো আম্মু। যদি শরীর অসুস্থ লাগে তাহলে স্কুল হতে ছুটি নিয়ে কয়েকদিন বাসায় আরামে থাকুন।

না মৌরি,ছুটি নিবো না। একা একা বাসায় থাকতে পারবো না। যাওয়ার আগে পর্যন্ত স্কুলে যাবো, সবার সাথে থাকলে সময় ভালোভাবে কাটবে।
ঠিক আছে আপনার যেমন ভালো লাগে তাই করুণ।নিজের যত্ন নিবে আম্মু, সমযমত খাবার খাবে।
ঠিক আছে মামনি, আল্লাহ হাফেজ।
হ্যালো দাদী। আমি মৌরি বলছি।
আসসামুলাইকুম,কেমন আছেন?
আমি ভালো আছি,তুমি কেমন আছো?
আপনার দোয়ায় আমি ভালো আছি। আগে যে বলেছি আমি চাকরীর জন্য চেষ্টা করতেছি, নিশ্চয় মনে আছে আপনার। সেই চাকরী আমি পেয়েছি, কোম্পানি আমাকে জয়েন্ট করতে ডেকেছে।
আলহামদুল্লিল্লা, শোকর আল্লাহর।
জলি মাকে বলেছো।
জ্বি, বলেছি এখন।
ইস যদি আমরা তিনজন আবার একসাথে থাকতে পারতাম আমি শান্তিতে মরতে পারতাম এবং মরেও আমার আত্মা শান্তি পেতো। তোমাদের ছাড়া আমার অনেক কষ্টে দিন কাটে, মনে হয় মরে গেলেই বাঁচি।

আহ,দাদী কান্না কেন করছো। আমি আর আম্মু জানি আপনি মনে কষ্ট নিয়ে দিন অতিবাহিত করতেছেন। দোয়া করেন আমি যেন আম্মু এবং আপনাকে নিয়ে আসতে চেষ্টা করতে পারি। আবার আমরা একসাথে থাকবো, একসাথে খাবো,এক বিছানায় ঘুমাবো দাদী।
আমি জলি মার হাতে পানি পান করে মরার জন্যই বেঁচে আছিরে বোন। টাকা পয়সা লাগলে বলিও।
আপতত টাকা পয়সা লাগবে না দোয়া করবেন শুধু।আমার কানাডায় থাকা-খাওয়া, সেবা যত্নের কোন সমস্যা হচ্ছে না। তবে সব বাহিরের লোকে করে ঘরের কাজে আয়া এবং সেবা যত্নে সেবিকা। এদের আচরণে কিংবা সেবা যত্নে কোন আন্তরিকতা নেই এরা রোজ টাকার বিনিয়ম ডিউটি করে। যেটা আমার জলি মার ভিতর দেখেছি এখানে আপন পর কারো ভিতর সেই আন্তরিকতা, সেই দয়া-মায়া, সেই দায়িত্বজ্ঞান কোন কিছুই নেই। আমি চাই জলির বুকে মরতে অথচ সে আমার এখন কেউ নয় (কান্নারত)। আহারে দাদী কান্নার কিছুই নেই এইটাই জীবন। মানুষ যা চায় তা খুব কম হয়, এইটাই প্রাকৃতিক রহস্য। আমি এক দেশে, আম্মু এক দেশে আর আব্বু এক দেশে। আমরা মা ও মেয়ের জীবনে আব্বুর কোন প্রভাব নেই এই রকম শত শত আছে। আর এইটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া জীবনের সৌন্দর্য।

কেমন আছেন ভাবী?
জ্বি ভালো আছি, আপনারা সবাই কেমন আছেন।
সবাই ভালো আছি।
শুনেন, মৌরি লন্ডনে ভালো একটা চাকরী পেয়েছে। শিউলীর আব্বুকে বলবেন আর বাড়ির মুরব্বিদেরও বলতে বলবেন যেন দোয়া করে মৌরির জন্য।
অনেক খুশির খবর, দোয়া করি মামনির জন্য। ভাবী সময় সুযোগ পেলে একবার বাড়ি হতে ঘুরে যাবেন। আপনাদের দেখতে মন চায় কিন্তু সময় পাই না দেখি স্কুল বন্ধ হলে চেষ্টা করবো আসতে।
ঠিক আছে এখন রাখি। আল্লাহ হাফেজ।
জ্বি আচ্ছা।
(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫৯তম পর্ব।

চাচা আমি ছোটোখাটো একটা ব্যবসা করতে চাই আর এতে আপনার সাহায্য সহযোগিতা দরকার। কিসের ব্যবসা করবে তুমি। এখন নতুন কমিটি হবে কোন ধরনের ঝামেলায় জড়ানো যাবে না। তাহলে তোমাকে কমিটিতে ভালো কোন পদবি দেওয়া সমস্যা হবে। কমিটি হওয়ার পর যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে আমি নিজেই ব্যবসা করার পথ দেখিয়ে দিবো।
কিন্তু আমার যে পকেট খরচ দরকার হচ্ছে চাচা।
তাও আমি ব্যবস্থা করবো আপতত। আমার হোটেলে খাওয়ার খাবে এখানে থাকবে, বাকি খরচও দেখবো। আচ্ছা ঠিক আছে, কয়েক দিনের জন্য আমি ঘুরতে যাবো।
এখন আবার কোথায় যাবে বাবা।
আসলে চাচাজান ভালো লাগতেছে না, কোন কাজে মন বসতেছে না তাই ভাবলাম একটু কক্স বাজার গিয়ে সাগর পাড়ে ঘুরে আসি।
ওহ আচ্ছা যাও তাহলে।
কিন্তু টাকা পয়সাতো নাই, আপনিই আমার ভরসা।
হাঃ হাঃ হাঃ, আমিই ভরসা! ঠিক আছে দেখি তাহলে।ধন্যবাদ চাচাজান।

আসসালামু আলাইকুম, আমি নাহিদ। কেমন আছেন আপনারা?
ওয়া আলাইকুম সালাম, জ্বি বাবা ভালো আছি।
আপনি কেমন আছেন?
জ্বি আমিও ভালো আছি। আমি কিছু দিনের জন্য কক্স বাজার বেড়াতে যাবো তাই ফোন দিয়েছি। হয়তো ফিরতে দশ বার দিন লাগতে পারে আর ওইখানে ব্যস্তও থাকতে পারি ফোন করা সম্ভব নাও হতে পারে। আপনারা ভালো থাকবেন।
আপনিও ভালো থাকবেন। আল্লাহ যেন সহী সালামতে রাখে আপনাকে।
আপনাদের এই নাম্বারে একটা অ্যাকাউন্ট করে নিবেন। বিকাশ, রকেট যে কোন একটা হলেই হবে। আচ্ছা ঠিক আছে বাবা। আমি আপনার শুশুরকে বলবো উনি করে নিবে। কিন্তু হঠাৎ অ্যাকাউন্ট কেন দরকার হলো বাবা।
হাঃ হাঃ এমনি, হয়তো ভবিষ্যতে কখনো দরকারও হতে পারে। তাই করে রাখলে ভালো হবে আম্মা। দেখি আমি আপনাদের জন্য কিছু করতে পারি কিনা।
আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুণ।
দোয়া করবেন।

আমি প্রথমে কয়েকদিন ঢাকা থাকবো তারপর কক্স বাজার এবং রাঙ্গামাটি যাবো। সেখানে বেড়ানো আমার উদ্দেশ্য নয়, আমি যাইতেছি ওইখান হতে ব্যবসা বাণিজ্য করা যায় কিনা দেখার জন্য। সুজন, তোর কাছে কোন কথা গোপন রাখতে চাইতেছি না।
কিন্তু কী ব্যবসা করবি ওইখান হতে।
এইটা এখন বলবো না। আগে সব কিছু ঠিক করি তারপর সব তোকে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে বলবো।
ঠিক আছে, সব সময় তোর জন্য দোয়া এবং ভালোবাসা। এখন শিউলীও নাই যে তোর জন্য অপেক্ষা করবে আর “মা” সেই জানে না তোর অবস্থান। সুজন এত কঠিন হয়ে কেন কথা বলছিস।
তোকে আজকাল অনেক এলোমেলো মনে হয়। রাজনীতির গভীরে চলে গেলে মানুষ কখনো কখনো অচেনা হয়ে যায়, বৈধ কিংবা অবৈধ পথে টাকার কুমির বনে। তোর ব্যক্তিগত ইচ্ছায় আমি বাঁধা দিবো না তবে অবৈধ কোনো কাজ আমি সমর্থন করবো না তাই আমাকে ভুলে যেতে হবে, ক্ষমা করবি দোস্ত।

ঠিক আছে এখন তাহলে আমি আসি।
আমার কথায় মনে হয় রাগ করলি।
না না সুজন, তুই তোর জায়গায় শতভাগ সঠিক। আসলে আমি ছোটকাল হতে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে, আব্বুর কঠিন শাসন আমাকে বেপরো করে তুলেছে অথচ ভালো ছাত্র হয়েও আব্বুর কঠিন নিয়ম আর বকাঝকার কারণে আইএসসি পর আর পড়াশোনা হয়নি, শেষ পর্যন্ত গৃহ ত্যাগ করলাম। তুই একজন ভদ্রলোক শান্তিময় মানুষ তোর নীতি ও সততা কালিমা লেপন হোক আমি কখনো চাই না। আরে থাক থাক আমাকে এত উচুতে উঠানোর দরকার নাই। তবে কোনো দেশ ও সমাজ বিরোধী কাজের সহযোগী আমি হতে চাই না। রাজনীতি করে যারা আমির কুমির হয়েছে তাদের অনেকের চলার পথ অস্বচ্ছ ও ধোয়াশা। এদের আমি ঘৃণা করি নাহিদ (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী

20210201_001856

আস্তে আস্তে সব অফিস আদালত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয় সৌদি সরকার। তবে স্কুল কলেজ এবং ধুমপানের দোকান (হুক্কা দোকান) খুলে নাই ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। কারণ এইসবে মানুষ জমায়েত হয় এবং ধুমপান করোনায় মারত্মক প্রভাব ফেলে মানুষের হৃদপিণ্ডে। কিন্তু সিগারেট বিক্রি করা বন্ধ করে নাই এর উপর ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়ে দামও দ্বিগুণ করে তারপর ধুমপান একটুও কমেনি। ২০২০ সালে মার্চে প্রথমে করোনা রোগী সনাক্ত হয় তারপর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে এক পর্যায় প্রতিদিন তিন হাজার ছাড়িয়ে যায়। এইভাবে বাড়তে থাকে/কমতে থাকে চলে বেশ কিছু দিন তারপর কমতে থাকে ২০২০ সালের ডিসেম্বার ৮০/৯০ জনে আসে করোনা রোগী। কিন্তু ২০২১ সালে জানুয়ারিতে আবার বেড়ে হয়ে যায় ৩০০ জনের ভিতর। জানুয়ারিতে ৩০০ এর ভিতরই বাড়তে কমতে থাকে। করোনা ভ্যাকসিন বিশ্বে অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে সৌদি আরবেও নিয়ে আসে এবং দ্রুত টিকা প্রদান শুরু করে।

প্রথমে টিকা নেন সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ। এর পরে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। একটা এ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করে টিকা প্রদান চলতে থাকে। টিকা প্রদানকে তিন ভাগে ভাগ করা হয় প্রথম ধাপে টিকা দেয় বয়স্ক ও ভিআইপি লোকদের দ্বিতীয় ধাপে অফিস আদালত ও কর্মজীবি লোকদের তৃতীয় ধাপে দেশী বিদেশী সবাইকে। করোনা শুধু আবুল কালামের নয় সারা বিশ্বের মানুষের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মৃত মানুষ পাশাপাশি জীবিতদেরও জিন্দা লাশ বানিয়ে দেয়। শত শত লোক কর্ম হারিয়ে পড়ে বিপাকে, পরিচিত লোক মরে বেশ কয়েকজন। শরিয়তপুরের এনামের কথা মন পড়বে আজীবন। তাকে দোসারি টাওয়ারে (কমপিউটার মার্কেট ) সবাই মামু ডাকতো হাসিখুশি লোকটা কখনো মন খারাপ করতো না। করোনার প্রথম ধাপে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আর ফিরে আসেনি এনাম। ছোট একটা দোকান ছিলো প্রিন্টার মেরামত করার, এবং কালি রিফেল করতো ক্যাটরিজে ।

সকাল ও বিকাল টাওয়ারের গেইট খোলার সাথে সাথে নিজের দোকান খুলে বসতো গেইট বন্ধ করা পর্যন্ত দোকানে থাকতো। যথেষ্ট সততায় চলাফেরা করতে আমি দেখেছি। মোবাইলের রিচার্জ এবং বিকাশের ব্যবসা করছে বাংলাদেশী লোকের সাথে। মাঝে একবার বউ বাচ্চাও সৌদি নিয়ে আসে ভিজিট ভিসায়। করোনায় এনাম মারা গিয়েছে ভাবতেই যেন মন কালো মেঘে ডেকে যায়। জানি না ছোট বাচ্চাটার জন্য কী সহায় সম্পদ রেখে গিয়েছে। জানি না তার মা ও স্ত্রীর মনের কী অবস্থা, মা কিভাবে সন্তান হারানোর ব্যথা সহ্য করতেছে। প্রিয় স্ত্রী ও সন্তান কোনো দিন দেখবে না এনামের কবর। করোনা কেড়ে নিয়েছে এইভাবে শত শত এনামকে, আমরা অনেকে বেঁচে আছি হতাশা ও ভয়ের ভিতর। মরণ বেদনাময়, কিন্তু ভিনদেশে মরণ তাও আবার করোনা মহামারীতে। এই মরণে কেউ কাছে যায় না, কেউ দেখতেও চায় না।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৫২তম পর্ব।

আজ এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে তাই আকাশটা মেঘে ঢাকা। সারা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের যে ঢেউ সেটা সৌদিতেও লেগেছে। আগে অক্টোবর মাসে দুই এক বার মুষলধারে বৃষ্টি হয়ে জানান দিতো শীতের আগমন বার্তা। বাংলাদেশের সাথে মিলে একসাথে শীত আসলেও কিন্তু শীতের প্রকোপ ছিল প্রচণ্ড। ঘরের বাহিরে রাখা পানি কিংবা ট্রাংকির পানি বরফে জমাট হতো। রাস্তার সৌন্দর্যবর্ধক গাছপালার পাতায় বরফ জমতো এখন সেটা সুদূর অতীত। শীতে ইলেকট্রিক হিটার জ্বালিয়ে দুই তিনটা কম্বলের তলায় ঘুম যেতে হতো। এখন আর বৃষ্টি নেই অক্টোবরে, ডিসেম্বার, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে টিপটিপ বৃষ্টি হয় আবার কখনো কখনো মার্চে দুই একবার অঝোরে কাঁদে উঠে আকাশ। মার্চ ও এপ্রিল মাসে গরম পড়ে যৎসামান্য যেমন অক্টোবর ও নভোম্বরে হয়। মে মাসে গরম আরম্ভ হয় এরপর কয়েক মাস এত গরম যে পড়তো যে মুখের চামড়া পুড়ে যেত এখন সেটাও সুদূর অতীত। আর এই গরমে বাহিরে কাজ করে চামড়া পুড়িয়ে শত শত বাংলাদেশের লোক টাকা রোজগার করে নিজের পরিবারকে দিয়েছে। এই অঙ্গার হওয়া মানুষদের কেউ কেউ সুখ নামক শব্দে সমৃদ্ধি হয়েছে আবার কেউ কেউ দুঃখ নামক শব্দে বিষাক্ত হয়েছে।

আর সেই টাকার সুখে হয়তো স্ত্রী সন্তান রঙ্গীন চশমা পরেছে কিংবা ছোট ভাইরা প্লেনে উঠে ভিনদেশী হয়ে পর হয়েছে। বোনটা স্বামীর সংসারে গিয়ে ভুলে গিয়েছে অতীত, আর মা-বাবা স্বর্গের বাসিন্দা হয়েছে সুখ-দুঃখের মাঝে পড়ে। প্রবাসীদের জীবনের মতই এখন সৌদির আবহাওয়া আগের মত নেই গরম শীত ও বৃষ্টি। কমেছে প্রবাসীদের রোজগার বেড়েছে খরচ বেড়েছে প্রবাসীদের ঘরে অবিশ্বাস। তবুও প্রবাসীরা নিজেদের উজাড় করে দেয় পরিবারের সবার জন্য আর বৃদ্ধ হয়ে ফিরে গৃহে। তখন সন্তানদের কাছে হয়ে পড়ে অপ্রয়োজনীয় ভাই বোনদের কাছে হয়ে পড়ে বোঝা তাই পৃথক হয়ে দুরত্ব বজায় রাখে। তবে আমি আবুল কালামের এমন ঝামেলা নাই কারণ আমি গরিব পিতার একমাত্র ছেলে। মা-বাবা, স্ত্রী ও ছোট ছোট দুই ছেলে নিয়েই আমার সংসার।

এখন আর সন্ধ্যার পর রাস্তায় বাহির হতে ইচ্ছে করে না। নীরব চারিদিকে, লাইটের আলো না থাকলে ভয় লাগতো প্রচণ্ড। আমি এখন গুদামের রাতে পাহারাদার হওয়ায়, সন্ধ্যার পরই দোকানে যেতে হয় সওদা করতে। এখানে আইন মাক্স পরা, না পরলে জরিমানা গুণতে হবে। তবে ভিন দেশী শ্রমিক দেখলে জরিমানা না করে বাসায় ফেরত পাঠায় মাক্স পরতে। মহামারীর লকডাউনে পুলিশ ইকামাও খোজ করেনি, আমি কয়েকবারই পুলিশের সামনে পড়েছি, একবারতো পুলিশ গাড়িতে বসে চা পান করার সময় আমাকে ডেকে চা পান করতে দিয়েছে। দোকানে যাওয়ার পথে হঠাৎ টহলরত পুলিশ এসে যায় তাদের ডাকে ভয়ে আমার কপালে চিকন চিকন ঘামের রেখা, তা হাত দিয়ে মুছে পুলিশের সামনে যাই।

ইকামা বিহীন সৌদির প্রবাস জীবন নাবিক বিহীন জাহাজের মত যে কোন মুহূর্তে ডুবে যেতে পারে। তবে এই করোনা মহামারীতেও ইকামা ছাড়াও যে কাজ পেয়ে কাজ করতেছি তাও বিধাতার অশেষ রহমত। এইটি হয়তো আমার মা-বাপ, বউ-বাচ্চার দোয়া। এক বছরেও করোনা নির্মূল না হওয়ায় অজানা ভয় থেকেই যাচ্ছে, এইটি হয়তো পৃথিবীর মানুষকে প্রকৃতি এক ধরনের সাজা দিচ্ছে কারণ মানুষ প্রকৃতিকে অনেক কষ্ট দিয়েছে যুগ যুগ ধরে। আমি জীবন মরণের এই উত্থান পতনে এখনো ভালো আছি। ভালো থেকেই মা মাটি ও প্রিয় মানুষের মাঝে ফিরে যেতে চাই শ্যামল সবুজ ও অপরূপ বাংলায়।
(শেষ পর্ব)।

উঠে যায় ভালোবাসা

20210125_144701

বহুবার ভেবেছি, খুন করা, ঘুন পড়া
আমার সুকোমল হৃদয় হতে ভাঙ্গা ভাঙ্গা
স্মৃতিগুলো মুছে ফেলবো।
অথচ, সেই স্মৃতিগুলো শিকড় হয়ে
শীর্ণ হৃদয় জুড়ে রয়ে গেল অবশেষে!

তোমার নাম জপতে জপতে
ভালোবাসার বদঅভ্যাসে
ভিতরটা পুড়ে যায় কখনো কখনো।
তোমাকে পেতে পেতে হারিয়ে ফেলি !
তাতে কি? তোমাকে পাওয়ার চেয়েও
বেশি সুখ যে চাওয়ার প্রার্থনায় ।

হারিয়ে যাওয়া পদ চিহ্নরা ধরা দেয়
শ্বেত-শুভ্র আলাপে কিংবা নানা কথায়।
মনের আয়নায় শুভবুদ্ধি এঁকে চলে যায়
টহল দেওয়া কথারা প্রতিনিয়ত শাসায়।
আড়ষ্ট কলমে লিখতে গিয়ে ভেবে পাই না
বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দরা প্রহর গুনে।
কেউ হাসায়, কেউ কাঁদায়, কেউ বলে যাও ভুলে।

নীরব কবর কথা কয়

1tyu429_n

নদীর পাড়ে জেলে পাড়া আজকাল নীরব পড়ে থাকে,
একসময় সেখানে ছিলো চাঁদনী রাতের আলো।
এখন দিনেও সূর্যের আলোর দেখা মিলে না,
কয়েকটা মাত্র মনুষ্য বসতি ঘর, এখন যেন নীরব কবর।
বাড়ির সামনে বসে থাকা কুকুরটা, চোখ বুজে থাকে সারাটা প্রহর।

এইতো কিছু দিন আগেও যতীনের ঘর হতে ভেসে আসতো
এ,বি, সি কিংবা অ, আ, ই এর মিহি সুর।
যতীন বলে দাদাগো খাবার পাই না কেমনে পড়াই
মাইয়াটা, ঈশ্বর কেড়ে নিলো নদীর জোয়ার।
নেপাল বলে জাল ফেলতে পারি না নদীতে,
কি যেন বাঁধ দিয়েছে তিন নদীর মুখে।
ফেনী, মুহুরী আর কালী এক সময় ছিলো আমার
‘মা ও জননী‘ জোয়ার আসতেই জাল ফেলতে কত কত মাছ।

আজ আর ফেলতে পারি না জাল ধরতে পারি না মাছ, জমা হয় মিঠা পানি।
বালুর ট্রলারে কাজ করি ডুব দিয়ে বালু তুলি,
দিন শেষে ধার দেনা দিই, বাকি টাকা জমাই পোলাটার লাগি।

আচ্ছা দাদা বলতো, মিঠা পানির কেরামতি কি।
হয় না চাষাবাধ সব জিনিসের দাম বেশী।
কিছু লোক নদীর বালুর কারবারী তাই তারা কোটিপতি।
ফেনী নদীর এই স্বচ্ছ জলে ভারত মাতার জয়ধ্বনি।

করোনায় একজন প্রবাসী

20210117_110913

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৬তম পর্ব।

মিশরের শাসক মনে করে কাতার তাদের বিরোধী বিভিন্ন প্রচারের পাশাপাশি মুসলিম ব্রাদারহুড় নেতা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। আরো একটা বিষয় সামনে আসছে তা হলো সৌদি যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমান আর আরব আমিরাতের যুবরাজ বিন জায়েদের মত বিরোধ শুরু হয়েছে নানা বিষয় নিয়ে। এক নাম্বার হলো ২০১৫ সালে ইয়েমেনে শুরু করা যুদ্ধ। ইমেয়েন যুদ্ধে নেতৃত্ব কার আওতায় রয়েছে তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। ইয়েমেনের দক্ষিণা অংশ দখলে রয়েছে আমিরাতের অর্থায়ানে পরিচালিত মিলিশিয়া বাহিনীর হাতে অপর দিকে উত্তরাংশে সৌদি আরব লড়াইরত হুতি বিদ্রোহীদের সাথে। আরেকটি ইস্যু হলো ইসরায়েল, আমিরাত ইতিমধ্যে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে কাজকর্ম শুরু করে দিয়েছে। এই দিকে বাহারাইনও ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে পরিণত হয়েছে ঘনিষ্ঠ মিত্রে। তাদের মধ্যে দহরম-মহরম সৌদির ও মিশরের ভিতর এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেকে এক নাম্বার মিত্র দাবি করে থাকে তা সৌদি যুবরাজ নিজের জন্য সমস্যা তৈরী করতে পারে বলে মনে করে।

আসলে কাতারের সাথে তড়িঘড়ি করে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনের পিছনে সৌদি যুবরাজে অন্য মতলব হলো আমেরিকার নতুন প্রশাসনের সাথে সম্পর্কের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা মাত্র। আরেকটি সুপ্ত ইচ্ছা হলো কাতারের বহুল প্রচারিত টিভি চ্যানেল আল জাজিরার সমর্থন আদায় করা। আর এর সমর্থন ফেলে আল জাজিরার মাধ্যমে যুবরাজ নিজের প্রচার করে মুসলিম বিশ্বে নিজেকে জনপ্রিয় করতে পারবে বলে মনে করে। মধ্যপ্রাচ্যের জনগণ ব্যাপকভাবে আল জাজিরা আরবী দেখে থাকে কারণ আল জাজিরা স্বাধীনভাবে সত্য তথ্য তুলে ধরতে পারে। সৌদি আরব, মিশর কিংবা আমিরাতের চ্যানেলগুলি অকাট্য সত্য তুলে ধরতে পারে না কারণ তা সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই যুবরাজ মোহাম্মদ আল জাজিরার এই গ্রহণযোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে চান। তিনি তার পিতা সালমানকে অতি তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হতে সরিয়ে নিজেই ক্ষমতার আসনে বসতে চান। তারপর ইসরায়েলের সাথে কূটনীতি সম্পর্ক স্থাপন জোরদার করতে চান এবং ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে চান। তবে অনেকে মনে করে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার তার কাছে গুরুত্বহীন।

যুবরাজ ক্ষমতার চেয়ারে বসার জন্য প্রচণ্ড উতলা হয়ে আছেন। তাই তিনি ইসরায়েল এবং আমেরিকার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। জিসিসি সম্মিলনে এই প্রথম আমেরিকার কোন লোক উপস্থিত ছিলেন আর উনি হলেন ট্রাম্প জামাতা ইহুদী কুশনার আর এটা অনেকের মাঝে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে রাজ পরিবারে মতানৈক্য নেই এমনকি পিতা পুত্রের মাঝেও দ্বন্দ্ব। রাজ পরিবারের নীতি নির্ধারক অনেকেই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে নারাজ বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও বাদশাহ ফিলিস্তিনের অধিকার রহিত করে ইসরায়েলের সাথে আলাপ করতেও রাজি নয়। সৌদি জনগণও ইসরায়েলের সাথে সৌদির উষ্ণ সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ। যুবরাজ চান ইসরায়েল নিয়ে তার কাজকর্ম মিডিয়ায় যেন প্রচার কম হয়। বিশেষ করে আল জাজিরা যেন তাকে নিয়ে সরব না থাকে তাই বিনা শর্তে কাতারের অবরোধ তুলে নিয়ে কাতারকে সাথে রাখতে চান।

যুবরাজ মনে করে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলে খুশি হবে জো বাইডেন কিন্তু তাতে আরব বিশ্বে যে খারাপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে তা ভাবছেন না। এতে মুসলিম বিশ্বে সৌদি আরবের সম্মান কমবে মনে করে বাদশাহ সালমান। এবং ফিলিস্তিন অধিকার রহিত করে পূর্ববতী বাদশাহরা কেউ ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দানের চিন্তাও করেনি, বর্তমান বাদশাহও সেই পথ অনুসরণ করে ফিলিস্তিনের স্বার্থ আদায় দৃঢ় থাকতে চান।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৭তম পর্ব।

অনেকের ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশ্রয় পেয়ে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান কোন কিছুই তোয়াক্কা করেনি। ইয়েমেন যুদ্ধ, কাতারের উপর অবরোধ এবং ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা সবই হয়েছে ট্রাম্পের জানামতে। ট্রাম্পের সাথে প্রশ্নবোধক ঘনিষ্ঠতায় তিনি শুধু ইসরায়েলের সাথে গভীর যোগাযোগই স্থাপন করেননি আরো মুসলিম দেশকে চাপ দিয়েছেন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য। আমেরিকান ঘনিষ্ঠতার দম্ভে আরব দেশের সম্পর্ককে ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলছেন। কিন্তু নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উনাকে প্রশ্রয় দিবেন না তা বুঝাই যাচ্ছে। ইতিমধ্যে জো বাইডেন বলে দিয়েছেন আমরা সৌদি হতে গঠনমূলক আচরণ আশা করি, যদি বেপরোয় আচরণ করে এর পরিণাম অপেক্ষা করছে। মোহাম্মদের দমন নিপীড়নের আরো কিছু ঘটনা যোগ হয়েছে যার কারণে সৌদিকে সমাজচ্যুত ও যুবরাজকে ভয়ংকর মানুষ ভাবতে শুরু করেছে বিশ্ব।

এইতো মাত্র কয়েকদিন আগে সৌদি মানব অধিকার কর্মী লুজাইন আল হাথুরুলকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মানবাকার কর্মীর এই সাজা জো বাইডেনের সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে কারণ এই সাজায় যুবরাজের ইচ্ছার প্রতিফলন রয়েছে। তাকে সৌদি সন্ত্রাস বিরোধী আইনে ছয় বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে বলে সৌদি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। ৩১বছর বয়সী এই মানবাধিকার কর্মীর বিরূদ্ধে সৌদি রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে পাল্টানো চেষ্টা এবং জাতীয় নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগ করা হয়। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আদালত তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেয়। রায় ঘোষণার সময় তিনি অঝোরে কান্নায় থেকে বলেন উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তাঁর বোন এক বিবৃতি দিয়ে বলেন আমার বোন সন্ত্রাসী নয় উনি মানবাধিকার কর্মী। এই সাজার মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয় যুবরাজ এবং রাজবংশ যে বলে সৌদিতে ব্যাপক পরিবর্তনের যে কথা তা আসলে মুখের পাকা বুলি। এর মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দফতর বলেছেন হাথুরুলের এই সাজার প্রতি যুক্তরাষ্ট্র নজর রাখছে এবং এই ধরনের সাজায় তাঁরা চিন্তিত।

বাইডেনের সরকারের যোগ দেওয়া এক কর্মকর্তা বলেছেন বিশ্ব জুড়ে মানবাধিকারকে বাইডেন সরকার বেশী গুরত্ব দিবে। মানব অধিকার চর্চার জন্য সাজা দেওয়া অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য,আমরা এখনো বলছি বিশ্বের যেখানেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হবে বাইডেন সরকার সেখানেই দাঁড়াবে। জাতীয় সংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ হাথরুলের রায়কে জালিয়াতিপূর্ণ বলে মত দিয়েছেন এবং এটাকে গভীর উদ্বেগজনক বলে দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। এই মানবাধিকার কর্মী একজন নয় এমন শত শত রাজনৈতিক বন্দী রয়েছেন যাদের মিথ্যা অভিযোগে বিচারের মুখামুখি করেছে সৌদি । রিয়াদের যে আদালতে হাথরুলকে সাজা দিয়েছে সে বিশেষ আদালতে প্রভাবশালী মানবাধিকার কর্মী সালমান আলা উদাহর অবস্থা বর্ণনা করেছেন তাঁর ছেলে সৌদি স্কালার ও মানবাধিকার কর্মী আবদুল্লাহ আলা উদাহ। তিনি অভিযোগ করেন মে হতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উনার বাবাকে পরিবারের সাথে কথা বলতে দেয়নি এমনকি ফোনও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। অনেক চেষ্টার পর যখন দেখা করার অনুমতি পান তখন কাচের দেয়ালে আবদ্ধ রাখা ছিলেন বাবা।

তিনি বলেন ইসলামে পিএইচডি করা স্কালার ৬৪ বছর বয়সী আমার পিতাকে ২০১৭ সালে নির্জন কারাবাসে পাঠানো হয়। সৌদি আরব, সংযুক্ত আমিরাত, মিশর ও বাহারাইন যখন কাতারকে অবরোধ দেয় তখন এখানে জনগণ উত্তেজিত হয়ে পড়ে তা ভালো চোখে দেখেননি আমার বাবা। তিনি এক টুইটে এই অবরোধের সমালোচনা করে সব দেশের মধ্য ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেন। ঠিক এর কয়েক মাস পর তাকে পুলিশী হেফাজতে নেয়া হয়।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৮তম পর্ব।

কোন অভিযোগ ছাড়াই এক বছর আটকে রাখে তারপর বেশ কিছু অভিযোগ দায়ের করে বিশেষ কতৃপক্ষ। ২০১৮ সালে সেপ্টেম্বরে গোপন কামরায় আদালত বসে রিয়াদে বিচার শুরু হয়। জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়া এবং নিষিদ্ধ বই রাখাসহ কয়েকটি অভিযোগ ছিলো। ৩৭টি অভিযোগের জন্য এটনি জেনারেল সৌদ আল মুজিব আমার বাবার মৃত্যুদণ্ড চান আদালতে। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের আবেদনে যে হাজার হাজার সৌদি নাগরিক স্বাক্ষর করেন আমার বাবা তার হাই প্রৌফাইল সমর্থক ছিলেন। এই জন্য তার বিদেশে ভ্রমণেও নিষেধাজ্ঞা ছিলো। সালমান বাদশাহ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার তিন মাস পর তাঁর ছেলে ক্রাউন পিন্স মোহাম্মদ ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করে প্রচুর সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের কথা বলেন। এরপর ২০১৭ সালে যখন মোহাম্মদ বিন সালমান নিজেকে পূর্ণাঙ্গ পিন্স অধিষ্ঠিত করেন তখন হতে মানবতা- মানবাধিকার যেন হাওয়ায় উঠে যায়।

সর্বপ্রথমে বিশাল রাজ পরিবারে দমন-পীড়ন করে ন বিরোধীদের শায়েস্তা করে নিজ ক্ষমতা অগাধ করেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ধুলোয় মিশিয়ে দেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বে ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন সৌদি আরব এবং তাঁর ইচ্ছায় কাতারে অবরোধ দেওয়া হয়। মানবাধিকার কর্মী আলা উদাহকে যখন জেল হতে আদালতে তোলা হয় তখন তিনি এতই দুর্বল ছিলেন যে দাঁড়াতে পারছিলেন না। তিনি চোখে কম দেখতে ছিলেন এবং কেমন যেন উদভ্রান্ত ছিলেন অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সব কিছুতে সায় দিচ্ছিলেন, অত্যাচারে বাধ্য হয়ে তিনি হয়তো শাসকের কোন শিখানো কথা মেনে নিয়েছেন। নির্যাতন আর একাকীত্বের কারণে আলা উবাদাহর মন ও শরীর ভেঙে পড়ে ছিলো। কারাগার হতে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে আনা নেওয়ার সময় কারা রক্ষীরা তাঁর হাতে পায়ে শক্ত লোহার শিকলে বেঁধে রাখতেন এমনকি চোখও বাধা থাকতো যেন আশপাশ না দেখেন।

আলা উবাদাহ পরিবারকে জানিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদকারি তাকে ঘুমাইতে দেন না ঔষধ নিতে দেন না। কারাগার মানে নির্যাতনের স্টিম রোলার, ঔষধ নিতে না দেওয়া ও দুর্বব্যহার সৌদি কারাগারের সাধারণ বিষয়। ২০২০ সালের এপ্রিলে বিখ্যাত সংস্কারবাদি আবদুল্লাহ আল হামিদকে নির্যাতন করে হত্যার জন্য এই যুবরাজকে দায়ী করা হয়। জেলে নির্মম নির্যাতনে তিনি কোমায় চলে যান এবং কিছুদিন পর মৃত্যু বরণ করেন। তিনি যে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তা অস্বীকার করেন জেল কতৃপক্ষ। রিয়াদের জেলে থাকাকালীন তিনি মেঝেতে পড়ে যান এবং কয়েক ঘন্টা সেখানে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা অ্যামিনিস্ট ইন্টারন্যাশনালকে জানিয়েছেন। এরপর এক বিখ্যাত সাংবাদিক জেল হতে মুক্তি পেয়ে কয়েক মাস পর মারা যান। এই সাংবাদিককে ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয়, তিনি নাকি রাজ পরিবার এবং যুবরাজের দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট করেন পেপারে। রাজকীয় আদালতের সমালোচনা করেছেন তাই তাকেও পাঁচ বছর সাজা দেওয়া হয়ে ছিলো। কারাগারের এমনভাবে নির্যাতন করা হয় তাতে গভীর ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব পড়ে যার ফলে বন্দী ধীরে ধীরে মৃত্যুর কবলে ঢলে পড়ে।

কেউ খবরও রাখে না খাওয়া ও ঔষধপত্রের বিষয়। এই অবস্থায় সৌদির মানবাধিকার কর্মীরা একজোট হয়ে বিশ্বের কাছে আবেদন করেছেন যেন সৌদি নিয়ে নজর দেয়। শত শত রাজনৈতিক ও মানবাধিকার কর্মীর মুক্তির জন্য বিশ্বের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। যুবরাজের নানা বিতর্কিত কাজে ট্রাম্পের সমর্থন নিয়ে দেশটিতে কিংবা বিশ্বে মুখরোচক আলোচনা চালু আছে। জামাল খাসোগি হত্যায় ট্রাম্প উচ্চ-বাচ্য করলেও তার ইহুদী জামাতা কুশনারের সাথে যুবরাজ আলোচনা করার পর তা অন্যদিকে মোড় নেয়। এরপর সাদ আল জাবেরকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। তারপরও ট্রাম্প যুবরাজকে দায়ীমুক্তি দিতে চায় এবং তা বাইডেন ক্ষমতায় আসার আগেই যেন করে যায় ট্রাম্প। এই দায়ীমুক্তি যুবরাজকে বাঁচিয়ে দিবে সকল অন্যায় অবিচার হতে। এখন দেখার বিষয় আমেরিকার ভবিষ্যৎ প্রশাসন সৌদিকে কি করে কারণ বর্তমানে সৌদির আদি ভাবগম্ভীর ভাবও যেন যুবরাজের হাত ধরে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তাই মুসলিম বিশ্ব চিন্তিত ইসলামের এই খাদেমকে নিয়ে।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৯তম পর্ব।

গত শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় মধ্যপাচ্যের দেশগুলির মাটির তলায় আবিষ্কার হয় তরল সোনা। তারপর দেশগুলি যেন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছে পরিনত হয়। এতে এইসব দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি শুধু হয়ে উঠে গরিব দেশের লোকদের কাজের ক্ষেত্র। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপাল তথা দক্ষিন এশিয়ার মানুষের আয়ের প্রধান উৎস। আবার এই তরল সোনার দেলের আশপাশের দেশগুলির যেমন বিপুল পরিমাণ লোক কাজ করে তেমনি আফ্রিকা মহাদেশের লোকও কাজ করে টাকা রোজগার করতে পারছে। কিন্তু মাটির নিচের এই সম্পদ একদিন ফুরিয়ে যাবে তখন কি হবে এইসব দেশের। এই ভাবনা হতে আমিরাত নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। সৌদি আরবেও তাই যুবরাজ মোহাম্মদ তেল নির্ভর অর্থনীতি হতে অন্য দিকে মনোযোগী হচ্ছেন। তাই তিনি পর্যটন খাতের দিকে নজর দিয়েছেন বলে সৌদিকে প্রথমে রক্ষণশীল সমাজ হতে বের করে আনতে বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

নারী চালাতে পারে গাড়ি, চালু করেছেন সিনেমা হল,থাকছে লৌহিত সাগরে বিকিনি পরে সাতার কাটা। ইতিমধ্যে বিশ্বের নামকরা গায়ক ও ব্যান্ডদল অনুষ্ঠান করা এবং সিনেমা তৈরীর প্রসিদ্ধ জায়গা করে গঠে তোলা হচ্ছে। এই জন্য গঠে তোলা হচ্ছে পর্যটন শহর নিওম। আর এই ক্ষেত্রে আরবের মডেল সংযুক্ত আরব আমিরাত। তাই আমিরাত উপসাগরিয় অঞ্চলে অর্থনীতি নতুন দিগন্ত। দেশটির শাসক মোহাম্মদ বিন জায়েদকে সৌদি শাসকের উপদেষ্টা মনে করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে এরা কেন তেল নির্ভর অর্থনীতি হতে সরে আসতে চাইতেছে। বিশ বছর আগে সৌদি তেল বিশেষজ্ঞ সাদাত আল হৌসাইনি দেখিয়েন ১৯০০ সালে যেখানে উৎপাদন হতো এক মিলিয়ন ব্যারেলের সামান্য কিছু বেশী সেখানে এখন উৎপাদন হয় ৮৫ মিলিয়ন ব্যরেলেরও বেশী। আর এই বেশী উৎপাদন একদিন থমকে দাঁড়াতে বাধ্যই। আমদানিকারক দেশগুলি যেভাবে রিজার্ভ তেলের প্রতি হাত বাড়াচ্ছে তাতে একদিন তেল নিঃশেষ হবেই তাই আগেভাগে প্রস্তুত থাকতে হবে। আর যদি না থাকি তাহলে তেল শূণ্য একটা বিপদ জন্য অপেক্ষা করছে।

হতে পারে সেটা যুদ্ধকালীন কিংবা কোন মহামারীর সময় আর তখন সেটা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনবে তেল সমৃদ্ধ দেশের অর্থনীতিতে। ওপেক এর হিসাব মতে ২০২০ সালে বিশ্বে তেলের চাহিদা ২৯৮ মিলিয়ন ব্যারেল আর ২০৪০ সালে সেটা বেড়ে দাঁড়াবে ৩৭১ মিলিয়ন ব্যারেল। অনেক কোম্পানি স্বীকার করেছে তেলের উৎপাদন সেই পরিমান আদৌ বাড়বে না বিশেষ করে চীন, জাপান ও ভারতের মত শিল্প প্রধান দেশগুলির তেলের চাহিদা বেড়ে চলেছে হু হু করে। পরিস্থিতি যাই হোক একটা ভবিষ্যৎ বাণী প্রায় সত্য হয়ে উঠেছে সস্তা তেলের দিন শেষ। অতীত হতে কিছু যদি শিখে থাকে তাহলে ধরতে পারবে ভবিষ্যৎ অন্ধকারকে। সত্তর দশকে যখন আরব দেশের তেল কোম্পানিগুলি নিষেধাজ্ঞা জারি করে ছিলো তখন তেলের তৃষ্ণায় মরিয়া হয়ে পড়ে ছিলো মার্কিনী নীতি নির্ধারকেরা। তখন তারা সামরিক অভিযান চালিয়ে মধ্যপাচ্যের তেল কুপগুলি দখল করার পরিকল্পনা পর্যন্ত করে ছিলো।

পরে মধ্যপাচ্যে সামরিক অভিযান নিয়ে কাজ করেছে তেল রাজনীতি ও কূটনীতি। বিশ্বের তেল বাণিজ্যের ৭৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করে সৌদিসহ ওপেক সদস্যরা। তাদের তেলের রিজার্ভ কমতে শুরু করবে তেল সমৃদ্ধ অন্যান্য দেশের পরে তাই তাদের এখন হতে ভাবতে হচ্ছে তেল বিহীন অর্থনীতি নিয়ে। তাই মধ্যপাচ্যে তেল নির্ভর অর্থনীতির ধনী দেশগুলির বিলাসী জীবনের অন্ধকার আচড় লাগবে বলে এখন হতে ভীত ও সেই ভয়ে সব যেন এলোমেলো করে ফেলছেন। কোনটা আগে আর কোনটা পরে করতে হবে বুঝে উঠতে পারছেন না। দেশের মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতেন তা করতে হচ্ছে কাটছাঁট এতে ভয় আছে শাসকের ক্ষোভে পড়ার। এই ক্ষোভের সামন্য নমুনা গত আরব বসন্তে সারা বিশ্ব দেখেছে। তাই তরল সোনার দেশগুলি এখন মরিয়া হয়ে পড়েছে বাকি মজুত নিয়ন্ত্রণ করার।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৫০তম পর্ব।
তেল অর্থনীতি মাথায় রেখে সৌদি আরব পুরো শাসনের কৌশল বদলাতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে পুরো সমাজ ব্যবস্থা ও পররাষ্ট্র নীতি সব কিছুর উপর প্রভাব পড়তেছে। অনেক বিশ্লেষক মনে করেন সৌদিসহ এই অঞ্চলেের দেশগুলি ইসরায়েল প্রভাবিত নীতি কাজ করছে তেল নির্ভর অর্থনীতি হতে বের হয়ে আসার পরিকল্পনা। অনেক দেশ এখন ইসরায়েলের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি আর পর্যটন শিল্প বিকশিত করতে চাইতেছে। ট্রাম্পের তথাকথিত আব্রাহাম শান্তি চুক্তি সেই পথে হাঁটতে শুরু করছে। শেষ বিচারে এই অঞ্চলে হয়তো রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টিও হতে পারে। তেলের উৎপাদন কমে গেলে এই অঞ্চলে পরিস্থিতি কেমন হবে করোনা মহামারীতে তা পুরো দুনিয়া দেখেছে। হঠাৎ করে তেলের চাহিদা কমে যায় আর তখন উৎপাদনও কমে যায়। ফলে সৌদি আরবকে তখন ব্যয় কমানোর নীতি গ্রহণ করতে হয়। এই মহামারীর সময় সৌদি সরকার ভ্যাট বাড়ানোর ঘোষণা দেয় যা শতে আগে ছিল পাঁচ পারশেন্ট তা বাড়িয়ে করা হয় পনর পারশেন্ট। অর্থাৎ তেল কমে গেলে তেল নির্ভর এইসব ধনী দেশ কতটা বিপদে পড়বে একটু আচ করা গিয়েছে মহামারীতে।

আরব দেশে সবচে বড় অর্থনীতির দেশে সৌদি আরব। আর এই দেশটির দিকে তাকিয়ে পর্যালোচনা করলে বুঝা যাবে সৌদির অর্থনীতি ক্রমেই নিম্নগামী হচ্ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে দেশী-বিদেশী জনগণের উপর। এভাবে চলতে থাকলে দিন দিন মানুষের ভিতর ক্ষোভ বাড়বে। সৌদিতে বিভিন্ন দেশের মানুষ কাজ করে ইকামা নবায়ন করতেও বৈষম্য কারো ৬ শ রিয়াল কারো ১২০০০ রিয়াল আবার কারো কারো ২৫/৩০ হাজার রিয়াল খরচ করতে হয়। বাদশাহ সালমান যখন ২০১৫ সালে ২৩শে জানুয়ারি ক্ষমতায় আসেন তখন সৌদির বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ ছিল ৭৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আস্তে আস্তে সেটা কমতে থাকে ২০২০ সালে সৌদির বৈদেশিক মু্দ্রার রির্জাভ এসে দাঁড়ায় ৪৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এই হিসাব সৌদিয়ান মনিটরিং অথ্ররিটির। অপর দিকে বিশ্ব ব্যাংক বলেছে সৌদি মাথাপিছু আয় ২০১২ সালে ২৫২৪৩ মার্কিন ডলার কমে ২০১৮ সালে এসে দাঁড়ায় ২৩৩৩৮ মার্কিন ডলারে। এতে চাপ পড়া শুরু হয়েছে ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করা অর্থে।

আইএমএফ আভাস দিয়েছে সৌদির ঋণের পরিমান দাঁড়াবে জিড়িপির ১৯ শতাংশ এবং এই বছর ২৭ শতাংশ। করোনা এবং মুদ্রা স্ফীতির কারণে ২০২২ সালে তা বেড়ে দাড়াবে জিড়িপির অর্ধেকে। সৌদি আরবের অর্থনীতির এই নিম্নগামীর বহু কারণ আছে। ইয়েমেন যুদ্ধসহ সিরিয়া এবং লিবিয়া যুদ্ধে অর্থ যোগান, আশপাশের দেশগুলিতে অযথা হস্তক্ষেপ, মিশরে সামরিক ক্রুর সাথে জড়িত। এবং সামর্থ্যের বাহিরে গিয়ে আমেরিকা হতে বার বার অস্ত্র কেনা, উচ্চ ব্যয় বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা। এর বাহিরে সবচে বড় অপচয় রাজ পরিবারের বিলাসিতা পিছনে অগাধ অর্থ ব্যয় করাতো আছেই। আইএমএফ হিসাব কষে দেখিয়েছে তেলের দাম ব্যারল প্রতি ৫৫ হতে ৫০ ডলার কমে যাবে তখন সৌদির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে তা দিয়ে তাদের মাত্র ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মিটানো যাবে। সৌদির অর্থনীতি সচল রাখতে কথা ছিল রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানির ৫ শতাংশ শেয়ার বিদেশী স্টক এক্সসেঞ্জে তালিকাভুক্ত করিয়ে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে আসবে কিন্তু সেই আশা ভেস্তেও যায়।

এরপর পিএফআই নামে একটা তহবিল গঠন করে তেল বিহীন অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া করোনা মহামারী ঝড়ের কবলে পড়ে সেটিও তছনছ হয়ে গিয়ে। তাই আভ্যন্তরীণ নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে তৈরী হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব। সৌদি আরব যখন তেল নির্ভর অর্থনীতি হতে বের হয়ে যাবে তখন সৌদিয়ানদের অবশ্যই কাজের প্রতি মনোযোগ দিতে হবে এবং সরকার জনগণকে চাপ দিবে কাজ করাতে আর এতে বিদেশী লোকদের নিম্নতর কাজ ছাড়া অন্য কাজ হতে বাদ দিতে হবে। তখন বিদেশী পেশাজীবি বেকার হয়ে দেশে ফিরতে হবে। সাথে সাথে নিম্নতর শ্রমিকদের রোজগারও কমে যাবে। তবে এইসব একদিনে না হলেও ধীরে ধীরে তা দৃশ্যমান হচ্ছে কিংবা হবে। এর বিরুপ প্রভাব পড়বে রেমিটান্স আহরণকারি প্রত্যেক দেশের উপর।

তেলের দিন শেষ হলে এর প্রভাব দীর্ঘ মেয়াদি হবে। সৌদি আরবসহ উপসাগরিয় দেশে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের বহু শ্রমিক কাজ করে আর এদের পাঠানো রেমিটান্স এইসব দেশের অর্থনীতির প্রাণ সঞ্চার করে এই কারণে এইসব দেশ অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। আরো সবচে দুঃখজনক হবে অর্থনীতি মন্দা হলে মধ্যপাচ্যের দান খয়রাত করাও কমে যাবে। মধ্যপাচ্যের শাসকেরা প্রতি মিনিটে কয়েক মিলিয়ন দান করার ক্ষমতা রাখেন। অবশ্য অতীত ইতিহাস তাই বলে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান এর উদাহরণ। নাম প্রকাশ না করেও শত শত কোটি টাকা সাহায্যের খবর সামনে হয়তো আর আসবে না। (চলবে)।

শীতের জয়ধ্বনি

69104751

কুসুম কুসুম শীত ছুঁয়ে যাক তোমার আঙ্গিনা
সেই শীতে তুমি যেন লতা হয়ে জড়িয়ে যাও গাছে।
তারপর সেই শীত ছুঁয়ে পড়বে গাছের পাতায় পাতায়
তখন তুমি জবুথবু হয়ে হাত-পা গুটিয়ে উষ্ণ হতে
চাইবে রজকীর লোমশ বুকে।
তা দেখে লাফিয়ে চলা কাঠবিড়াল খেঁকীয়ে হাসে।

কাঠবিড়াল হেসে বলে দেখো রাজকন্যা
আমার যে বাড়ি নেই ঘর নেই বড় অসহায়।
ফুটপাথের ছিন্নমূল রাজরাণী কিংবা যুবরাজ
পরনের কাপড়টা টেনে মাথা ঢাকে, আমিও ঠিক তাদেরই মত।

আরো শীত ছড়িয়ে পড়ুক তোমার কথায় কথায়
হিমশীতল হয়ে পড়ে থাকুক বাক্স বন্দি কিছু ইচ্ছা।
এই শীত লেপ তোশকের মোড়া কারো কারো কাছে
আরো শীত বয়ে যাক সবজির ঝুড়িতে।
শীত এবার চিনে ফেলুক দিনের আলোর সূর্যকে
গভীর শীতে মনে পড়ুক পুরানো কিছু স্মৃতিরে।

Pic=Facebook

করোনায় একজন প্রবাসী

FB_IMG_1609669396488

সৌদি আরবের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা বহু পুরানো, পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতে বাণিজ্য ও অর্থনীতির অনেক বড় অংশীদার সৌদি আরব। এখন তা আস্তে আস্তে যেন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে তার সর্বশেষ নমুনা হলো পাকিস্তানকে ঋণ পরিশোধের জন্য সৌদি আরবের সময়সীমা বেধে দেওয়া। ২০১৮ সালে এক চুক্তিতে পাকিস্তানকে ঋণ ও তেল বাকি দেয় সৌদি আরব। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সেই ঋণ পরিশোধ করতে চাপ দিতে থাকে বাদশাহ সালমানের সৌদি আরব এবং বাকিতে তেল বিক্রীও বন্ধ করে দেয়। অর্থনীতির মন্দার ভিতর এই ঋণ পরিশোধ করা পাকিস্তানের জন্য প্রচণ্ড দুরূহ হয়ে পড়ে এমন অবস্থায় পাকিস্তান দ্বারস্থ হয় চীনের দুয়ারে। এবং চীন হতে ঋণ নিয়েই সৌদি ঋণ পরিশোধ করে পাকিস্তান। মহা বিপদে এগিয়ে এসে চীন প্রকৃত বন্ধুর পরিচয় দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের আরেক ধনী দেশ আমিরাত তের দেশের যে ভিসা বন্ধ করেছে তার মধ্যে পাকিস্তানও একটা। তাই সাথে সাথে ছুটে যেতে হয়েছে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে, বিভিন্নজনের সাথে বৈঠক করে বলেন খুব তাড়াতাড়ি এই ভিসার সমস্যা সমাধান হবে। আসলে এইসব হয়রানির মূলে কিন্তু ইস্যু একটাই তা হলো ইসরায়েল। পাকিস্তান যদি সৌদি আরবের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তাহলে ঋণ নিয়ে কোন জটিলতা সৃষ্টি করতো না রিয়াদ। এবং তেমনি ভিসা নিয়েও পাকিস্তানবাসী হয়রানি হতো না আমিরাতে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতে সৌদি আরবই সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী দেশ, ধর্মই দেশ দুইটির সম্পর্ক দৃঢ় করেছে অনেকে মনে করে। তাই সব বিপদ আপদে সবার আগে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায় সৌদি আরব। এই সৌদি আরবই মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের সাহায্য করেছে পাকিস্তানকে। ২০০৫ সালে বেলুচিস্তানে ভূমিকম্পে দশ মিলিয়ন ডলার ২০১০ সালে বন্যার পর হতে একশ সত্তর মিলিয়ন ডলারের সাহায্য করে সৌদি আরব, এমন উদাহরণ বহু আছে। পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের সম্পর্ক আছে সামরিক খাতেও, সৌদি সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং মক্কা ও মদিনার পবিত্রতা রক্ষায় কাজ করছে পাকিস্তান সৈন্যদল। সৌদি নেতৃত্বে ইসলামি মিলিটারি এ্যানালাইন্সের প্রধান করা হয়েছে পাকিস্তানি সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল রাহিল শরীফকে।

অবশ্য এই সবের সুযোগ নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র নীতিতে সৌদি আরব হস্তক্ষেপ করতো বলে কথা চালু আছে। আরব আমিরাতও পাকিস্তানের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাষ্ট্র, বিভিন্ন সময় প্রচুর অর্থ সাহায্য করেছে। পাকিস্তানে সোয়াতে শেখ জায়দ ব্রিজ কিংবা লাহোরে শেখ জায়েদ মেডিকেল কমপ্লেক্স এইসব তার উদাহরণ। ১৯৯৮ সালে পাকিস্তান পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানো পর যে দুইটি দেশ সর্ব প্রথম সমর্থন দিয়ে ছিলো তাহলো সৌদি আরব আর আরব আমিরাত। সেই সময় পাকিস্তানকে অবরোধ দিলে সৌদি আরব প্রতিদিন ৫০ ব্যারল তেল বিনা মূল্যে এক বছর পাকিস্তানকে দিয়ে ছিলো। পাকিস্তানের সবচেয় বড় রেমিটেন্সের বড় উৎস মধ্যপ্রাচ্যের এই দুইটি দেশ এইছাড়া শুধু সৌদি আরবে বাস করে পাকিস্তানের বিশ লাখ নাগরিক। এরা সৌদিতে গঠে তুলেছে পাকিস্তানি কলোনিসহ নানা ব্যবসা বাণিজ্য। বছরে আড়াই মিলিয়ন ডলার লেনদেন হয় সৌদি আর পাকিস্তানের ভিতর এবং আমিরাতেও প্রচুর পাকিস্তানি বাস করে। যাদের শ্রমে দাড়িয়ে আছে আমিরাত আর বাড়ছে পাকিস্তানের রেমিটেন্স।

এতকিছুর পরও এই দুইটি দেশের সাথে আস্তে আস্তে বাড়ে দূরত্ব পাকিস্তানের অথচ ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বেশ কয়েকবার সফর করেন এই দুই দেশ। সৌদি যুবরাজ ইমরান খানকে উষ্ণ সংবর্ধনা প্রদান করেন এবং বেশ কয়েকটি বিশাল বিশাল চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এর পরে তিক্ততা বাড়ে একটু একটু করে, ভারত যখন কাশ্মীরিদের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে তখন সৌদি আরব ও আমিরাত কোন কথাই না বলে চুপ করে ছিলো। এই ছাড়া মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ইমরান খানের উচ্চ কণ্ঠ সহজভাবে মানতে পারিনি এই দুই ধনী দেশ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪২তম পর্ব।

মুসলিমজগতের তীর্থস্থান মক্কা মদিনার খাদেম হলেও মুসলিমদের সমস্যা এবং ফিলিস্তিনের নিয়ে পুরানো নীতি হতে বর্তমানে সরে গিয়েছে সৌদি আরব। এমন অবস্থায় মহাথির মোহাম্মদ, এরদোয়ান এবং ইমরান খানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুসলিম বিশ্বের স্বার্থসম্পন্ন কিছু এজেন্ডা নিয়ে হাজির হলে আশার আলো দেখে মুসলিম বিশ্ব। এই তিন নেতা মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ শুরু করেন একে বলে বিকল্প ওআইসি গঠনের চেষ্টা আর এটা মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক সাড়া পেলে। এর সাথে কোন সম্পর্ক ছিলো না সৌদি আরবের তাহাছাড়া তুরস্কের সাথেও সৌদির সম্পর্ক তেমন ভালো না। সেই সময় এরদোয়ান ও মহাথিরের উদ্যোগে কুয়ালামপুর যে সম্মিলন করা হয়েছে তাতে যোগ দিতে যায়নি ইমরান খান কারণ সৌদির প্রচণ্ড চাপ ছিলো যোগ না দেওয়ার জন্য। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত সরকার যখন কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করলো তখন ইমরান খান মুসলিম দেশসহ সারা বিশ্বের কাছে অনুরোধ করে ছিল কাশ্মীর নিয়ে কথা বলতে কিন্তু সবাইকে বিস্মিত করে এইটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে আখ্যায়িত করে সৌদি আরব ও আরব আমিরাত। এরপরই সৌদিকে দোষারোপ করে একটি বিবৃতি দিয়ে ছিল পাকিস্তান।

যুক্তরাষ্ট্রের ওকালতিতে মধ্যপাচ্যের ধনী দেশ সৌদি আরব ও সংযুক্ত আমিরাত ইসরায়েলকে স্বীকৃতি পাইয়ে দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে তার বিরোধিতা করেছে ইমরান খান। সরাসরি দেশ দুইটিকে কিছু না বললেও ফিলিস্তিনের যুক্তিযুক্ত অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানি সাবেক এক সেনা প্রধান মনে করেন তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সৌদি ও আমিরাতের সাথে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ারও একটা কারণ। সৌদি জোট এই সম্পর্ক ভালোভাবে মেনে নিতে পারিনি। ২০০২ সালে এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পর এই পর্যন্ত মোট চার বার পাকিস্তান সফর করেছেন। তাই দুই দেশের ব্যবসা বাণিজ্য বেড়েছে বহুগুণ। এইদিকে পাকিস্তানে ইমরান খান ক্ষমতায় আসার পর এই সম্পর্ক বিদ্যুৎ গতিতে বাড়তে থাকে। আর সৌদি আরব নাখোশ তুরস্কের উপর আরব বসন্ত এবং ইরানসহ বিভিন্ন কারণে।

পাকিস্তানের সাথে সৌদি আরবের শীতল সম্পর্কের কারণে পাকিস্তান যখন সৌদি ঋণ পরিশোধ করতে দৌড়াচ্ছে তখন মধ্যপাচ্যে লম্বা এক সফর দেন ভারতের সেনা বাহিনীর প্রধান। এই সফরে সেনা প্রধান প্রতিরক্ষাসহ নানা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলেন দেশ দুইটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অবশ্য এর আগে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সফর করেন আরব আমিরাত। আর এতে বুঝা যাচ্ছে মধ্যপাচ্যের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার সম্পর্কের পরিবর্তন হচ্ছে তবে এই দুই দেশের সাথে ভারতের গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্ক আগে হতে কারণ দুই দেশের অপরিশোধিত তেলের বড় ক্রেতা হলো ভারত। তাহাছাড়া সৌদি আরবে রয়েছে সাতাশ লাখ ইন্ডিয়ান আর আরব আমিরাতে জনসংখ্যার শতকরা ত্রিশজনই ইন্ডিয়ান। এই সম্পর্ক বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে সামরিক খাতে প্রভাবিত হতে থাকে ২০১৪ সাল হতে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর মৌদি তিনবার আমিরাতে এবং দুইবার সৌদি আরব সফর করেন। এই সফরে প্রতিরক্ষা চুক্তির আওতায় সৌদি ও ভারত একটি যৌথ কমিশন গঠন করেন এবং আমিরাত সেনাবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনী যৌথ মহড়া পরিচালনা করেছেন একবার। একদিকে মুসলিম দেশ পাকিস্তানকে দুরে সরিয়ে এই দুইটি দেশ ভারতকে যে নতুন মিত্র বানাতেছে তা আজ খুবই পরিষ্কার। তাই বলা যায় দক্ষিন এশিয়ার সাথে মধ্যপাচ্যের সম্পর্ক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।

পাকিস্তানকে এই দুই দেশ বাদ দেওয়ায় পাকিস্তান বাধ্য হয়ে নতুন মিত্র খোজে নেয় তাই চীন, ইরান, কাতার ও তুরস্কের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠতা। সময়ে বলে দিবে পাকিস্তান ঋণের ফাঁদে পড়ে থাকবে কিনা। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করেন পাকিস্তানের সাথে দেশ দুইটির যেতই দুরত্ব তৈরী হোক তবে পাকিস্তানকে একদম দুরে সরিয়ে দিবে না এই ধনী দেশদ্বয়। পাকিস্তানের সাথে আরব দেশের এমন সম্পর্ক রয়েছে যা কোন কিছু দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয়। তার প্রমাণ পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দুবাই সফর । তিনি দুবাই বসে সাংবাদিক সম্মিলন করে জানিয়ে দেন যে ভারত পাকিস্তানে হামলার যে পরিকল্পনা করছে তার সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে আরব দেশে। এতে বুঝা যায় পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রী আমিরাত হতে এই তথ্য পেয়েছেন তাই দুবাইতে বসে দুনিয়াকে জানিয়ে দেন।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৩তম পর্ব।

সকল জল্পনা -কল্পনার অবসান করে সৌদি আরব এবং কাতার সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন হয়েছে। দীর্ঘ তিন বছরের অধিক সময় পর কাতারের উপর দেওয়া অবরোধ গত ৫ই জানুয়ারি প্রত্যাহার করে সৌদি জোট। সৌদিতে অনুষ্ঠিত জিসিসি সম্মিলনকে সামনে তাই বিবদমান দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হয়। কুয়েতের ওকালতিতে দুই দেশের মধ্যে একটা চুক্তি স্বাক্ষর হয় যার ফলে মধ্যপাচ্যে শান্তি ফিরে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে । ১৯৮১ সালে উপসাগরে দেশগুলির মধ্য গঠন করা হয় গালফ কোং অপরেশান ক্যাউন্সিল (জিসিসি)। কুয়েত, কাতার সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান ও বাহারাইন এই ছয়টি দেশ নিয়ে গঠন করা হয় জিসিসি মুলত এইটা আসলে একটা বাণিজ্য বক্ল। পারস্য উপসাগরের পশ্চিম পান্তে অবস্থিত ছোট দেশ কাতার যার আয়তন চার হাজার চারশ ঊনানব্বই মাইল, ১৯৭১ সালে বৃটেনের কাছ হতে কাতার পূর্ণ স্বাধীনতা লাভ করে। কাতারকে সর্ব প্রথম স্বীকৃতি দানকারী দেশের মধ্য আরব দেশগুলিই সামনের আসনে। একই বছর কাতার জাতি সংঘ ও আরব লীগের সদস্য পদ লাভ করে ১৯৮৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও সমাজতন্ত্রী চীনের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।

আটাশ লাখ জনসংখ্যার এই দেশটির একমাত্র সৌদি আরবের সাথে স্থল যোগাযোগ রয়েছে। ইয়েমেনে বর্তমানে হুতি আর সরকারের সাথে যে যুদ্ধ চলছে তা নিয়েই সৌদির সাথে কাতারের বিরোধ তুঙ্গে উঠে। আগেই বলেছি ইয়েমেন সরকারকে মদদ দেয় সৌদি আরব আর হুতি (শিয়া) গোষ্ঠীকে মদদ দেয় ইরান। ইয়েমেন যুদ্ধে কাতার,সৌদি ও আমিরাতের পক্ষ নিতে অস্বীকৃতি জানায় শুধু তা নয় কাতার ইরানের সাথে সমানতালে সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলে এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কাতারকে অবরোধ আরোপ করে সৌদি জোট। শুধু অবরোধ নয় জল স্থল সব রাস্ত বন্ধ করে দেয় যোগাযোগের আর এতে সাময়িক বেকাদায় পড়ে কাতার। ২০১৭ সালে ৫ই জুন জেসিসি ভুক্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের পাটল সৃষ্টি হয়। কাতারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ করে সৌদি জোটভুক্ত আরব আমিরাত, বাহারাইন ও মিশর এবং অবরোধ আরোপ করে এইসব দেশ সকল প্রকার কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তাদের অভিযোগ ২০১৪ সালের জেসিসি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে কাতার। এই অবরোধে যোগ দেয় মালদ্বীপ, মৌরিয়া, তানিয়া, জিবুতি, লিবিয়া ও সেনেগাল তবে ওমান কোন পক্ষেই ছিলো না আর কুয়েত চেষ্টা করে মধ্যস্থতা করার তাই মুলত কুয়েতের কারণে এই সম্পর্ক আবার স্থাপন হলো।

ওমান ও কুয়েত কোন পক্ষকে সমর্থন না করে নিরপেক্ষ থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। সৌদি ও কাতারের বিরোধ মিটাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কুয়েত আর এতে সমর্থন দেয় আরেক জিসিসিভুক্ত দেশ ওমান। বিশেষ করে কুয়েত শাসকের জন্য এইটা ছিলো বিরাট কূটনীতিক সাফল্য তাই মধ্যপাচ্যে বিরাট এক দ্বন্দ্ব মিটে যায়। কুয়েত ও ওমানের আন্তরিকতায় সৌদি ও কাতার আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি হয় তবে এতে যুক্তরাষ্ট্র বিরুদ্ধে ছিলো। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ডেমোক্রেট দলীয় বেশ কিছু সদস্য সৌদি যুবরাজের কর্মকাণ্ড ভালোভাবে নেয়নি।যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কিছু বিতর্কিত কাজ সৌদি ইমেজ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহনের পর জেসিসিভুক্ত দেশগুলি নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় তা নিয়েও চিন্তিত মধ্যপাচ্য। চুক্তি মোতাবেক জিসিসি সম্মিলনে যোগ দিতে সৌদি তার আকাশ, স্থল ও জল সব পথ খোলে দেয়, বিনিময় কাতার তার বিরুদ্ধে অবরোধকারি দেশসমূহের আইনি কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে রাজি হয়।

সৌদি আরব এবং কাতারের মধ্যে সম্পর্ক পুনরায় স্থাপনে জেসিসিভুক্ত দেশগুলির মধ্যে যে দ্বন্দ্ব পুরোপুরি মিটে যাবে তা এই মুহুত্বে বলা কঠিন। এবং সৌদি আর কাতারের দ্বন্ধ দুর না হলেও এই চুক্তির ফলে মধ্যপাচ্যের দেশগুলির মধ্যে স্থিতিশীলতা আসতে পারে হয়তো। তবে মধ্যপাচ্য গবেষকগণ মনে করেন এই দুই দেশের চুক্তি মধ্যপাচ্যে অতি তাড়াতাড়ি দ্বন্দ্ব সংঘাত দুর হবে তা বলা যায় না, তাহাছাড়া গত ৪০ বছরে তারা তাদের দেশের মধ্যে সামরিক বাহিনীর ভিতর আন্তরিকতা গড়ে তুলতে পারেনি এছাড়াও রয়েছে বাহিরের দেশের সাথে নানা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি। গত অবরোধে সৌদি জোট কাতারের সাথে সমঝোতা করার পূর্বশর্ত হিসাবে তেরটি শর্ত দিয়ে ছিলো গত তিন বছরে কাতার একটি শর্তও মেনে নেয়নি এমনকি বর্তমান সমঝোতার চুক্তিতে তের দফা মানতে কিংবা ভবিষ্যতে এমন হলে তখনও মানতে হবে এমন কথাও উল্লেখ করা হয়নি।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৪তম পর্ব।

তারপরও সৌদি আরব সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছে ভূ-রাজনৈতিক চাপে পড়ে, আর এটি নিঃসন্দেহে কাতারের বিরাট কূটনীতিক সাফল্য বলা যায়। কাতারের সাথে সৌদি জোটের সমঝোতার ফলে এই অঞ্চলে ক্ষমতাবান দেশেগুলির কী লাভ-লোকসান হয়েছে বা ভবিষ্যতে হবে তা নিয়ে চলছে মধ্যপাচ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ক্ষমতাবান দেশ তুরস্কের জন্য খবরটি ইতিবাচক বলা চলে,২০১৭ সালে যখন কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি জোট অবরোধ আরোপ করে তখন তুরস্ক খুব জোরালো ভাষায় কাতারের পক্ষে কথা বলে ছিলো এবং তুরস্ক তাড়াতাড়ি কাতারের পাশে দাড়িয়ে ছিলো। তুর্কী প্রসিডেন্ট এই অবরোধকে ইসলাম বিরোধী আখ্যা দিয়ে কাতারকে বলেছেন নিজের সামর্থ্য দিয়ে অবরোধ মোকাবিলা করার জন্য এবং নিজেদের স্বার্থে অটল থাকার জন্য। তুরস্ক সবসময় সৌদির সাথে সুসম্পর্ক গঠে তোলতে আপ্রাণ চেষ্টাও করে।

কিন্তু নানামুখি সংকট তুরস্কের এই প্রচেষ্টা বার বার বাধাগ্রস্ত করেছে। এখন সৌদি ও কাতার সম্পর্কের জোড়া লেগেছে আর তুরস্কের সাথে সৌদির জোরালো সম্পর্কের সুযোগ সৃষ্টি হয়ছে তাই এই বছর সৌদি ও তুরস্ক সম্পর্কে নতুন দিগন্তের সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্ক এখন কাতারের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে সৌদির সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক জোরালো করতে পারবে। তুরস্কের সহযোগিতার ফলে কাতার অবরোধকারি সৌদি জোটকে তোয়াক্কা করেনি এবং নিজেকে আরো সমৃদ্ধ করেছে এতে সবাই মনে করে তুরস্কের রাজনীতি এই অঞ্চলে প্রভাবশালী অবশ্যই। সৌদি আর কাতারের সম্পর্ক পুনঃস্থাপন হওয়ায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইরান। জিসিসি গঠনের পর হতে এই জোট ভাঙ্গতে বহু চেষ্টা করেছে ইরান কিন্তু সফল হয়নি। কাতারে অবরোধ দেওয়ার ফলে ইরান সবচেয়ে বেশী লাভবান হয়েছে এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাতারের সাথে সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। ইরানের সব পথই ব্যবহার করেছে কাতার, এইছাড়া উপায়ও ছিল না কাতারের সামনে।

নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে হলে তুরস্কের এবং ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া ছাড়া উপায়ও ছিলো না। সৌদির সাথে চুক্তি করা হলেও ইরান বিরোধী কোন জোটে কাতার কখনোই যাবে না কারণ রিয়াদকে কখনো মন থেকে বিশ্বাস করবে না দোহা। আঞ্চলিক রাজনীতি ও ভূ-রাজনীতির কথা মাথায় রেখে কাতার কখনো ইরানকে কোণ-ঠাসা করতে চাইবে না এমনকি ইরান বিরোধী কোন শর্ত সৌদি এবং আমেরিকা চাপিয়ে দিলেও কাতার মানবে না। ইরানের সহযোগিতা আঞ্চলিক রাজনীতিতে কাতারের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। তবে মজার কথা হলো সৌদির এই চুক্তিতে আরব আমিরাত অনেক ক্ষুব্ধ। কাতারের সাথে আমিরাতের মুল দ্বন্দ্বটা হলো রাজনীতি ইসলাম । মধ্যপাচ্যে শক্তিধর রাষ্ট্র কোনটা হবে এই উপসাগরে দেশগুলি তা নিয়ে আছে দ্বন্দ্বে । জিসিসি সম্মিলনে মিলিত হলেও আমিরাতের কাতার নিয়ে কঠোর মনোভাবের কোন পরিবর্তন হবে না।

আদর্শিক মত বিরোধের বাহিরেও এই দুইটি দেশের আফ্রিকায় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে বিরোধ আছে। বিরোধ আছে তুরস্কের সাথে সম্পর্ক নিয়েও। আরব আমিরাত তুরস্কের বিরুদ্ধে একটা জোট গঠনের চেষ্টা করছে বর্তমান পরিবর্তনশীল দুনিয়ায় আমিরাতের এই উদ্যোগ সফল হওয়ার সম্ভাবনা নাই। সৌদির সাথে তুরস্ক ও কাতারের সম্পর্ক উন্নত থাকলে লিবিয়া হতে শুরু করে পূর্ব ভূমধ্যসাগর এবং আফ্রিকা পর্যন্ত এই সম্পর্কের একটা বড় প্রভাব পড়তে বাধ্য।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪৫তম পর্ব।

আমরা সবাই জানি সাদ্দাম হোসেন ১৯৯১ সালে উপসাগরিয় যুদ্ধের সময় কুয়েত দখল করে ছিলেন। ঠিক সেইভাবে সৌদি আরব ও তার মিত্ররা কাতার দখল করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনার কথা জেনে যান ট্রাম্প সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তেল ব্যবসায়ী হওয়ায় আমেরিকান মন্ত্রী টিলার চেনের সাথে কাতারের ছিলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আমেরিকার শীর্ষ এই দুই মন্ত্রী কাতারে হামলার পরিকল্পনা বাদ দিতে সৌদি যুবরাজকে চাপ দিতে থাকেন। এরপর যেতই সময় গড়াতে থাকে তেতই কাতার পাক্কা হতে থাকে আবার তুরস্কের সৈন্যরাও কাতারে এসে পৌছে যায় এবং একটা শক্ত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে যাতে সৌদি সৈন্য কাতারে সহজে প্রবেশ করতে না পারে। ইরানের জল, স্থল ও আকাশ পথ ব্যবহার করে কাতার আগের চেয়েও আরো বেশী কাজকারবার চালাতে থাকে এতে সৌদি জোটের অবরোধ অকার্যকর হয়ে পড়ে। এক শক্তিশালী কাতারের জন্য তুরস্ক ও ইরানের পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন করে কাতারকে প্রধান্য দিতে থাকে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত ইউচুপ আল ওথাইবা আমেরিকার সরকারি মহলে যোগাযোগ বাড়িয়ে দেন। এবং তিনি সেখানে সৌদি লবিষ্টদের হটিয়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করেন ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে কাতারের সম্পর্ক জোরালো হয়ে উঠে এতে কাতারের প্রতি আমেরিকার সমর্থন বেড়ে যায়। তারপরও ট্রাম্প সৌদি জোটের কাতারের প্রতি অবরোধে সমর্থন অব্যাহত রাখেন। কাতারে মার্কিন সামরিক ঘাটি থাকায় আমেরিকার সেনা বাহিনীও ট্রাম্পের নীতি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। সৌদি যুবরাজ ট্রাম্পের সমর্থনকে অতিরিক্ত গুরত্ব দিয়ে ফেলেন এবং মার্কিন সামরিক বাহিনী যে অনেক ক্ষমতাবান সে কথা উপেক্ষা করেছেন। যুবরাজ মোহাম্মদ কাতারকে শিক্ষা দিতে গিয়ে যে সীমাহীন বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন সেই কথা বুঝতে পারেনি যখন বুঝতে পারেন তখন সময় অনেক চলে যায়। আর এই দিকে কাতার নিজের অবস্থান প্রচণ্ড শক্ত করে ফেলেন এবং বন্ধুর সংখ্যা দ্রুত বাড়িয়ে ফেলেন।

ইতিমধ্যে ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ এবং তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়ছেন। এইদিকে সৌদি যুবরাজের নানা কর্মকাণ্ড ডেমোক্রেট পার্থী জো বাইডেন ভালো নজের নেননি। বাইডেনের জয়ে যুবরাজের হুশ ফিরে এবং তিনি তড়িঘড়ি করে কাতারের অবরোধ প্রত্যাহার করেন এবং চুক্তি করেন। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড় সদস্যদের কাতারে আশ্রয় দেওয়া এবং আল জাজিরা টিভি বন্ধসহ কোন শর্তই কাতার মানেনি। পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন কাতার করেনি বরং তুরস্ক ও ইরান এখন কাতারের পরীক্ষিত বন্ধু । দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় অবিচল থাকায় নিজ দেশে কাতারের আমিরের মান মর্যদা জনগণের কাছে বেড়েছে আকাশচুম্বী। কাতারের জনগণেরও বেড়েছে অগাধ দেশ প্রেম ও জাতীয়তাবাদ এবং বেড়েছে আত্মবিশ্বাস। “দুবাইয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এক অধ্যাপক আগে কাতারের উপর অবরোধ আরোপের কঠোর সমর্থক ছিলেন আর এখন সুর পাল্টিয়ে বলছেন বলা যায় এই অবরোধৈ কাতারই লাভবান । তিনি বলেন এই লড়াইয়ে কাতারই জিতেছে, এই সাড়ে তিন বছরের লড়াইয়ে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। আসলে কাতার হচ্ছে জিসিসির একটা দুষ্ট বালক তাকে মেনে নিয়ে সাথে চলতে হবে। তিনি আরো বলেন জিসিসির অধ্যায় এই বছরগুলি কালো হয়ে থাকবে”।

তাড়াহুড়ো করে সৌদির এই চুক্তিতে লাভ হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না কারণ জিসিসি সম্মিলনে কাতার উপস্থিতিতে আরব আমিরাত, বাহারাইন ও মিশরের উচ্চ পর্যায়ের কেউই আসেনি। এমনকি সৌদি বাদশাহ সালমানও উপস্থিত ছিলেন না। কাতারের সাথে বাহারাইনের সীমানা নিয়ে জটিলতা রয়েছে আর মিশরের শাসক সিসি কাতারের সাথে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করতেও ইচ্ছুক নয়।
(চলবে)।

ফেসবুক কবি ও কেরামত আলী

20201230_084803

এই কেরামত উঠ মক্তবে পড়াতে যেতে হবে। বাবার চিৎকারে কেরামত পুরাতন কম্বলটা টেনে নিয়ে মুখ ঢেকে শীতের ভয়ে। একটা প্রবাদ আছে “মাঘের শীত বাঘের গায়ে” অর্থাৎ মাঘ মাসের শীত বাঘের গায়েও লাগে। মাঘ মাসে শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে ছোট বাচ্চার জন্য বাড়ির সদর দরজায় কাচারিতে সকালে আরবী পড়তে যাওয়া খুবই কষ্টকর। তবে ছোট বয়সে একটু সুরা কেরাত শিখলে নামাজ কালাম পড়তে পারবে এবং তা প্রত্যেক মুসলিম বাচ্চাদের শিখানো হয়। অলসতার কারণে কেরামত বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইতেছে না আজ। নবাব আলীর দুই ছেলে এক মেয়ের ভিতর কেরামত আলী মেজ। নবাব আলী স্থানীয় বাজারে হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, বড় ছেলে কলেজে পড়ে, কেরামত পড়ে মাদ্রাসায় এবং সে সকালে ছোট বাচ্চাদের মক্তবের হুজুর আর সবার ছোট মেয়েটা পড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

রোকন আলী বাপের সাথে হোমিওপ্যাথি দোকানে বসে রোজ বিকালে। তাই আস্তে আস্তে অনেকটা শিখে ফেলছে কখনো নবাব আলী না থাকলে পুত্র রোকন আলীই রোগী দেখে। এবং অবসরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টুকিটাকি লেখা-লেখি করে। তবে এলাকায় যেমন নবাব আলী ডাক্তার নামে পরিচিত তেমনি রোকন আলীও ডাক্তার নামে পরিচিত। নবাব আলীর ছেলেরা সবাই মেধাবী। রোকন আলী ইদানিং ফেসবুক নিয়ে পড়ে থাকে। ফেসবুকে জন প্রতি সাহিত্য গ্রুপ থাকলেও রোকন আলীর কোন গ্রুপ নাই। তবে সে নিজে হাজার গ্রুপের সদস্য, গ্রুপে সাহিত্যের প্রতিযোগিতা হয় সেও অংশগ্রহন করে, কখনো প্রথম হয় কখনো হয় দ্বিতীয় যার ফলস্বরূপে শত শত অভিনন্দন পত্র হোমিওপ্যাথি দোকানে ঝুলতেছে। এইসব দেখে তার বন্ধুরা কেউ হাসে কেউ বাহবা দেয়। কিন্তু কেরামত এইটা পাগলী মনে করে।

দোকানে গেলে কখনো কখনো দুই একটা অভিনন্দন পত্র ছিড়ে ডাস্টবিনে ফেলে অট্টহাসি দেয়। ঘরে দুই ভাই পড়তে বসলে কেরামত মোবাইল নিয়ে ফেসবুকে রোকেনের কিংবা অন্যদের কবিতা পড়ে ভাইয়ের সাথে রাগ করে। কারণ লেখায় বানান ভুল, বিরাম চিহ্নের অতিরিক্ত ব্যবহার, ছন্দহীন, ভাবহীন, সাময়িক চিন্তাহীন, রসহীন, মানহীন, মননহীন, সৃজনহীন ও শ্রুতিমধুরহীন কবিতার প্রতিযোগিতায় রোকন প্রথম কিংবা দ্বিতীয় হয়। কেরামত মনে করে কবিতা নয় যেন ববিতার ছবি দেখা। এইসব প্রতিযোগিতায় যারা বিচারক তারাও ফেসবুকের অখ্যাত কবি। হয়তো তাদের কারো কারো কবিতা বিচারের মানদণ্ডে ফেলার যোগ্যও নয়। গদ্য কবিতা, গীতি কবিতা, পদ্য কবিতার কোন বাচবিচার নাই। নাই কোন যথাযথ ব্যাকরণ ও অর্থপূর্ণ শব্দের ব্যবহার। ভুল বানানে শব্দের অর্থ পরিবর্তন হয়ে গেলে তখন সেটা সাহিত্যের ক্ষতি সাধন।

কেরামত ভাইকে বলে যারা তোমাকে এইসব সনদ দিচ্ছে তাদের কি বাংলা একাডেমির সাহিত্যিক সনদ আছে। রোকন তখন মুচকি হাসে বলে এখন টাকা দিয়ে বাংলা একাডেমি হতে সাহিত্য পুরস্কার নেয়। তাইতো সাহিত্যে শহর কিংবা গ্রামের মানুষের জীবনের ছবি ফুটে উঠে না। কোন গায়িকার গানের কথা “বন্ধু আমার নাইট কোচের ড্রাইভার”। কিংবা হিরো আলামের গানের কথা “বাবু খাইছো”। এই সব গানের মত ফেসবুকের বর্তমান সাহিত্যের অবস্থা কিংবা সনদ I
(প্রথম কিস্তি )।

ফেসবুক কবি ও কেরামত আলী।

ভাইয়া ফেসবুক গ্রুপের প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে ভার্চুয়াল সনদ পেয়ে এবং যে তোমার টাইমলাইনে পোষ্ট দাও এতে তোমার লজ্জা লাগার কথা, অথচ তোমার খুশি লাগে! কারণ যারা প্রকৃত সাহিত্য চর্চা করে তারা কখনো এমন পোষ্ট দিবে বলে মনে হয় না। কেরামতের কথায় রোকন আহতবোধ করে কিন্তু কোন উত্তর দেয় না। ঠিক এই সময় কয়েকটা বার্তা আসে ম্যাসেঞ্জার বক্সে কোনোটা সনদ পেয়ে নিজেকে প্রচার করা আবার কোনটা ভার্চুয়াল লাইভ অনুষ্ঠানের আত্ম প্রচার যা বিভিন্ন গ্রুপের পরিচালকের বার্তা। মনে হয় যেন এই প্রচারে সে দেশ সেরা কবি হয়ে যাবে।
এই যা তোর পড়া পড়তে যা রোকন রাগ করে কেরামত আলীর সাথে।
আরেকটা কথা ভাইয়া এখন ফেসবুকের গলিতে গলিতে কবিতা আবৃত্তিকার পাওয়া যায়। তাদের কি কবিতা আবৃতির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দীক্ষা আছে?

কারণ কবিতা আবৃতির জন্য সঠিক বাচনভঙ্গি দরকার, শুদ্ধ উচ্চারণ দরকার, শ্রুতিমধুরতা দরকার।
তুই এবার একটু চুপ কর ভাই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিধাতার দেওয়া নেইমা থাকে মানুষের ভিতর। যেমন কাজী নজরুল ইসলাম।
হাঃ হাঃ হাঃ এমন প্রতিভা হাজারে একটা হয় ভাইয়া।
তা ঠিক, রোকন বলে, সব সময় লেখার মান এক রকম হয় না। যারা পাঠক প্রিয় জিনিয়াস লেখক তাদের লেখাও সব এক রকম নয়।
তাই আমি বলতে চাই ভাইয়া। শত শত ফেসবুক সাহিত্যিক আছে যাদের লেখার মান খুব উচু মানের কিন্তু সব লেখা নয় তাই প্রতিযোগিতা করে লেখার মান যাচাই করা মোটেই যুক্তিপূর্ণ নয়। তাহাছাড়া ফেসবুক গ্রুপ সাহিত্যের কোন উপকারেই আসছে না তবে কিছু অনলাইন সংগঠন ও সংগঠক সৃষ্টি হয়েছে যারা কখনো কখনো গ্রুপিং করে এবং নিজেকে রাঘববোয়াল ভাবতে ভালোবাসে।

শুন কেরামত ফেসবুকে লিখেই অনেক কবি লেখক সৃষ্টি হয়েছে। শতভাগ সত্য কথা। যারা নিজের টাকা খরচ করে বই বাহির করে প্রতি দিন নিজের টাইমলাইনে বিজ্ঞাপন দেয় বইয়ের। ইনবক্সেও অন্যকে বলে আমার বইটা কিনুন। আবার কখনো কখনো প্রতারক প্রকাশকের খপ্পরে পড়ে আমও যায় ছালাও যায়। তবে আমারও কিন্তু কবিতা লিখতে ইচ্ছে করে।

“রাম, লক্ষণ ও সীতার সুখের সংসার
রাবণ দুষ্ট মুগ্ধ হয় সীতার রূপে। অথচ
রাবণ ধর্ষণ করেনি সীতাকে
কিন্তু রহিমেরা রোজ ধর্ষণ করে সেতারাকে।”

তুই মৌলভী মানুষ কবিতার কি বূঝবি, তোর ফেসবুক দেখাও ঠিক না।
কেন দেখা ঠিক না, ভুল ধারণা তোমার ভাইয়া। বর্তমানে ফেসবুক পেপার পত্রিকার চেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। ভালো খারাপ নিয়ে যেহেতু দুনিয়া তাই ভালো গ্রহণ করবো খারাপ পরিহার করবো। নুসরাত, তিন্নি সিনহা ও রায়হান এদের ঘটনা ফেসবুকের কারণে দেশে কাঁপন হয়েছে, সেই কাঁপনে বিচার হচ্ছে।
ফেইক আইডির ফেইক খবর আমি দেখি না তাই আমি কবিতা লিখি ও পড়ি বুঝলি কেরামত।
(দ্বিতীয় কিস্তি )।

ফেসবুক কবি ও কেরামত আলী।

আরো একটা দিক লক্ষণীয় ফেসবুকে সেটা অবশ্যই বিতর্কমূলক আর রাজনৈতিক পোষ্ট। রাজনৈতিক নেতা মারা গেলে একপক্ষ সেই লোককে খারাপ বলে পোষ্ট দেয় যা ভাইরাল হয় খুব দ্রুত, এইটা আমার দৃষ্টিতে ঘৃণিত কাজ। আরেক পক্ষ তা সহ্য করতে না পারলে মামলা হামলার আশ্রয় নেয়। এই দুইটাই বাজে কাজ, মৃত লোককে সব কিছুর উপরে রাখা ভদ্রতা কারণ বিধাতা তাঁর আত্মার মালিক। কেউ খারাপ কিংবা ভালো বললে মৃত লোকের কিছুই আসে যায় না। এই ফেসবুক অনেককে হিরো আবার অনেককে জিরো বানিয়েছে। তবে একটা কথা বলা দরকার যেটা তোর আমার বেলায় প্রযোজ্য ।
“একটা মোবাইল ভিতরে ইন্টারনেট, একটা মোটরসাইকেল ও একটা নির্জন কক্ষ,একজন সন্তান ধ্বংস। একটা স্বপ্ন ধ্বংস ও একটা পরিবার ধ্বংস।” আমাদের দেশে মিথ্যা এবং গুজবের উর্বর ক্ষেত্র ফেসবুক যেটা অন্য দেশে নেই এমনকি টুইটারসহ অন্য মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করা যায় না। তারা অভিযোগ পেলে যাচাই করে এবং পোষ্ট ডিলিট করে সর্তক করে পরে আবার একই কাজ করলে আইডি ব্যান করে দেয়। এতে আমেরিকা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকেও ছাড় দেয়নি টুইটার কতৃপক্ষ।

আর লিংকডইনে আইডি করাও কঠিন। সেখানে ব্যবসা বাণিজ্যসহ সব প্রচার হয় এবং বিশ্বের ক্ষমতাধর ও শক্তিমান নেতা, বড় বড় বহুজাতিক কোম্পানির আইডি আছে এবং চাকরী খোজ করার একটা বড় মাধ্যম। ফেসবুকের মত গাধা-ঘোড়ার দৌড়াদৌড়ি নাই। বগ্লতো আধুনিক যুগের উৎকৃষ্ট লেখার মাধ্যম সেখানে আধুনিক মানুষের আধুনিক চিন্তা রচনা হয়। তবে কিছু ইসলাম ধর্ম বিরোধী লেখা বাদ দিলে বগ্ল খুবই উত্তম মাধ্যম। যারা নাস্তিক তাদের লেখাও খুবই জ্ঞান গম্ভীর এবং আস্তিকদের লেখাও হাদিস কোরানের আলোকে এতই আকর্ষণীয় থাকে যে চিন্তার ধরন শক্ত করে। যেমন সামওয়্যার বগ্লে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছটিয়ে থাকা বাংলা ভাষার মানুষের বিচরণ ক্ষেত্র। সেখানে এমন প্রতিযোগিতা চোখে পড়ে না তবে সব ধরনের লেখায় গভীর আলোচনা-সমালোচনা হয় যা লেখক সহজ সরলভাবে মেনে নেয় এবং নিজেকে উন্নত করে।

ভাইয়া যাই করো যাই লিখো দেশে ডিজিটাল আইনের ৫৭ ধারা আছে। আমরা গরিব মানুষ, আমাদের জন্য খেয়ে পরে বেঁচে থাকাই যেখানে কঠিন সেখানে লেখাপড়া নষ্ট করে ফেসবুক উপভোগ করা বিলাসিতা।
ঠিক কথা। তাই কিছু রাজনৈতিক পোষ্ট এড়িয়ে চলি। বিশেষ করে দলীয় ভিডিও ও লেখা যা ফেসবুকে খুব জনপ্রিয় হয়, যা হাজার হাজার লাইক কমেন্টে ভরপুর থাকে। কিছু মাওলানার সত্য মিথ্যার মিশ্রণে ওয়াজ, মঞ্চে বসে সুর করে হেলেদুলে ওয়াজ লাইক কমেন্টে ভরপুর থাকে অথচ এই ওয়াজ ভারতবর্ষেই বিদ্যমান শুধু। এইটা কখনোই ধর্মের উপকারী নয়। ধর্ম শুনার নয় গবেষণার জিনিস যা পড়লেই আমরা জানতে পারবো।
I
ওয়াজ যেহেতু আমাদের দেশে একটা প্রচলিত প্রথা তাই মেনে চলাই ভালো। এতে কিছু মাওলানার সংসার চলে এইসব বন্ধ করা উচিত নয়। আর বর্তমান যুগে বাধা দিয়ে কোনো কিছু দমিয়ে রাখা যাবে না, গেলেও সেটা সাময়িক কারণ বাংলাদেশ ধর্মপ্রাণ মুসলিমের দেশ তবে জঙ্গীদের নয় প্রতিটি মানুষ বিজ্ঞানময় আধুনিক কর্মের শিক্ষায় শিক্ষিত হলে মানুষ যখন শিক্ষা শেষে চাকরী পাবে এইসব ওয়াজ নসীহত এমনিতে বন্ধ হয়ে যাবে।
(তৃতীয় কিস্তি)।

ফেসবুক কবি ও কেরামত আলী।

চুপচাপ দেখ কোন কথা বলবি না।
ঠিক আছে ভাইয়া, তবে একটা পোষ্ট দিবো তোমার টাইমলাইনে, লেখা শেষ হলে তোমাকে দেখিয়ে তারপর পোষ্ট করবো। অনেকের গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ পড়তে খুব ভালো লাগে আরো ভালো লাগে তুমি নামের আগে কিংবা পরে কোন বিশেষণ ব্যবহার করো না। অনেকে কবি, প্রবন্ধকার, গল্পকার, গীতিকার ও কথা সাহিত্যিক লিখে নিজেকে সাহিত্যের তালগাছ মনে করে।
আর কোন কথা বলবি না চুপচাপ লেখ।
ইয়েস ব্রাদার।কেরামত হাসি দিয়ে লিখতে থাকে।

নবাব এলএলবি সিনেমার পরিচালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অভিযোগ হলো পুলিশকে অপমান করা হয়েছে। কিন্তু ইসলামকে অপমান করায় “কমান্ডো” মুভির পরিচালককে কিছুই করা হয়নি!
খারাপ কাজ এবং খারাপ লোকের রূপক অর্থে মুখে দাড়ি মাথায় টুপি নাটক সিনেমায় দেখানো পুরানো রেওয়াজ। এবার ইসলামকে অপমান করতে সরাসরি কালিমা ব্যবহারের স্পর্ধা দেখিযেছে! পোস্টারে শুধু কালেমা না, নব্যুওতের মোহরও ব্যবহার করা হয়েছে! জঙ্গীবাদের সাথে এই ধারণা কিভাবে আসে? এই স্পর্ধা কোথায় পেলো এই “কমান্ডো” ছবির কলাকৌশলি!

কালেমা শ্রদ্ধার, সম্মানের, শান্তির ও গৌরবের। এ কলেমাকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য স্বয়ং নবী তৎকালে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন, এবং বুঝিয়েছেন কলেমার মহাত্ম্য। এটি ইসলামের একটা অবিচ্ছদ্য অংশ, এই কলেমা খচিত পতাকার অবমাননা কোনো বিবেকবান মুসলিমের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আপশোস হলো এই সিনেমায় জড়িত অনেকেই আবার মুসলিম।
এছাড়া আরেকটা বিষয় হলো ‘’কমান্ডো’‘ ছবিতে কোন বাংলাদেশকে দেখানো হয়েছে বুঝতেছি না। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে বাংলাদেশ যেন সন্ত্রাসের স্বর্গরাজ্য। আর সন্ত্রাসীদের দেখানো হয়েছে সুন্নতের লেবাসে। সন্ত্রাসীদের প্রতীক কালেমা খচিত পতাকা, ‘‘নারায়ে তাকবীর-আল্লাহু আকবার’‘ মুখে স্লোগান এবং তাদের উপস্থাপন করা হয়েছে ইসলামি জিহাদি হিসাবে।একজন এসে এইসব জিহাদিদের দমন করে। এরকম কাল্পনিক মনগড়া গল্প বানিয়ে র্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ব্যাপারে কী বার্তা দেয়া হচ্ছে! অথচ বাংলাদেশ হলো উদার মুসলমানদের দেশ।

এ রকম ছবি তৈরি করার উদ্দেশ্য কী? এরা কার দালালি করতেছে, কার টাকায় এমন ছবি। অন্য ধর্ম নিয়ে এমন ছবি এমন মনগড়া প্রচার কেউ করে না। একদল লোক মুসলিম হয়ে কেন নিজের ধর্ম অবমাননা করে বুঝি না, পছন্দ না হলে ধর্ম ত্যাগ করা যেতে পারে। কালেমা ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করি এবং এর চেতনা ধারণ করি। তাই আমার অপরিহার্য দায়িত্ব তা ব্যাপক ভাবে তুলে ধরা ও প্রচার করা। ইসলামের বিজয় যুগে যুগে হয়েছে। ইসলামের স্বর্ণালী উপাখ্যান বার বার সামনে আসবে।

নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, সাংবাদিক-সাহিত্যিক, বয়াতি মোটকথা উচ্চ পর্যায়ের নাগরিক সমাজ জীবনকে খুবই উপভোগ করে। দেশে বিদেশে ভ্রমণে আরাম আয়াসে এদের কমতি হয় না কারণ উনাদের কাছে অঢেল টাকা-পয়সা থাকে। মজার বিষয় মরণের আগে আবার রাষ্ট্রের কাছেই হাত পাতে চিকিৎসার জন্য। গুণী লোকের কদর করা রাষ্ট্রের অবশ্যই দায়িত্ব তাই রাষ্ট্রের টাকায় চিকিৎসা চলে। আর সেই টাকা আপনার ও আমার, তাঁরা যাদের ধর্মকর্মে আঘাত করে তাদের টাকায় চিকিৎসা করে কেউ ভালো হয়, কেউ মরে। কেরামত আলী ক্ষোভ নিয়ে লিখে ফেসবুকে।

(শেষ কিস্তি)।

করোনায় একজন প্রবাসী

20201227_125740

ইসরায়েলের সাথে সৌদি আরবের কোন আনুষ্ঠানিক কূটনীতিক সম্পর্ক নেই এর অর্থ এই নয় যে তাদের ভিতর কোন যোগাযোগ নেই। দুই দেশের মধ্যে গোয়েন্দা যোগাযোগ রয়েছে এবং কর্মকর্তারা নিয়মিত বৈঠকও করেন। সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ মিত্র আরব আমিরাত ও বাহারাইনের কূটনীতি চুক্তির পর এই সৌদির আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক সময়ের ব্যাপার মাত্র।কিন্তু করোনা মহামারীর লক ডাউনে সৌদি আরবের পিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর মধ্যে বৈঠকে মধ্যপাচ্যে ভবিষ্যৎ রাজনীতির সুদূর প্রসারি যোগসূত্র রয়েছে বলে অনেকে মনে করে। ইসরায়েলের আর্মি রেড়িওতে বলা হয় সৌদি আরবের বহুল আলোচিত লোহিত সাগরের উপকূলে অবস্থিত নতুন মেগা সিটি নিওমে দুই নেতার বৈঠক হয়। প্রমাণ আছে যে একটি ব্যক্তিগত জেট বিমান নিয়ে তেল আবিব হতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নিওম শহরে পৌছেন। ২২শে নভেম্বর সৌদি যুবরাজ, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে সাথে নিয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকের কথা। সেই বৈঠকে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধানও উপস্থিত ছিলেন,এই সফরে ইসরায়েলের বিকল্প প্রধানমন্ত্রী,পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সবাই অন্ধকারে ছিলেন কেউ কিছুই বলতে পারে না বলে ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যম বলেছে।

প্লাইট ট্যাকাকিং ওয়েব সাইটের তথ্য অনুসারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী প্রায় দুই ঘন্টা নিওমে অবস্থান করে। এর আগেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টে পুতিনের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য একাধিক বার এই জেট বিমানটি ব্যবহার করেন নেতানিয়াহু। যেই নিওম শহরে এই সাক্ষাৎ হয় তাকে যুবরাজের এক স্বপ্নের শহর বলা হয় কারণ সৌদি আরবের রক্ষণশীলতা ঝেড়ে ফেলে এক আধুনিক সৌদি স্বপ্নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করছেন যুবরাজ। এর আগেও সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফারহান বিন আল সৌদ ইসরায়েলের সাথে প্রকাশ্যে সম্পর্ক গড়ার ইঙ্গিত দেন। তবে এর জন্য একটা ছোট্ট শর্ত পূরণ করতে হবে তাদের আর তা হলো একটা স্থায়ী চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন ও মর্যাদাবান ফিলিস্তিন গঠনের রাজি হতে হবে তাহলে ইসরায়েলের সাথে পূর্ণ সম্পর্ক সৃষ্টি করবে সৌদি আরব। গত আগষ্ট মাসে প্রকাশ্য সম্পর্কের রূপ দেয় আরব আমিরাত, বাহারাইন ও সুদান তাহাছাড়া আরো কিছু মুসলিম রাষ্ট্র এই পথে হাটবে বলে মনে হয়।

ইতিমধ্যে মরক্কোও এগিয়ে এসেছে, এই চুক্তির প্রতি পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে সৌদি, তাই ইসরায়েলের জন্য আকাশ মুক্ত করে দিয়েছে যাতে বাহারাইন ও আমিরাতে অবাধে বিমান যাতায়াত করতে পারে। এই চুক্তিকে বিভিন্ন মুসলিম দেশ স্বাগত জানালেও ফিলিস্তিনীরা কঠোর ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে। সৌদি আরব মনে প্রাণে চাইলেও ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপন সহজ কাজ নয় ২০০২ সালে সৌদি শান্তি স্থাপনের জন্য একটা রূপরেখা দিয়ে ছিলো। তাতে বলা হয়ে ছিলো ১৯৬৭ সালের সীমান্তে ইসরায়েল ফিরে গেলে আরব দেশগুলি সবাই তাকে পূর্ণ স্বীকৃতি দিবে। এখনো পর্যন্ত সৌদি সরকার এই অবস্থা হতে প্রকাশ্যে সরে আসেনি আর ইসরায়েল এই পরিকল্পনা কখনোই মানবে না তা অস্পষ্ট, ট্রাম্প দ্বিতীয় বার জয় না হওয়ায় এখন প্রশ্নের তৈরি হয়েছে। আমেরিকায় যখন নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা বসতে যাচ্ছে ঠিক তখনি কেন এমন গোপন বৈঠক প্রয়োজন হলো।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন এমন সময় নেতানিয়াহু রিয়াদ সফর করেন যখন জো বাইডেনের জয়ে সৌদি প্রচণ্ড চাপের মুখে রয়েছে। নির্বাচনে জিতে যখন বাইডেন বিশ্ব নেতাদের দেওয়া ফুলেল শুভেচ্ছা ভাসছিলেন তখন দীর্ঘ সময় মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন রিয়াদ। কারণ জো বাইডেনের জয়ে গভীর হতাশার সৃষ্টি করে সৌদিতে আবার নেতানিয়াহু সরকার নিয়েও জো বাইডেনদের ভিতর হতাশা আছে। অনেকে মনে করে জো বাইডেন দায়িত্বভার নেওয়ার পর অনেক চাপে পড়বে সৌদি আরব। বিশেষ করে সৌদি যুবরাজের কর্মকাণ্ড নিয়ে এর আগেও সমালোচনা করেছেন বাইডেন।
(চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৭তম পর্ব।

সমালোচনা করার কারণে সৌদি যুবরাজ এখন আমেরিকার জন্য অন্য কোন ইহুদী লবিকে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন আর এইক্ষেত্রে একমাত্র ভরসা যোগ্য ও বিশ্বস্ত নেতানিয়াহু, তাই হয়তো এমন একটি বৈঠকের জন্য মোহাম্মদ বিন সালমান উদগ্রীব ছিলেন। আর ট্রাম্প এবং তাঁর ইহুদী জামাতা কুশনারের সাথে সৌদি যুবরাজের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। কুশনারের প্রচেষ্টায় সৌদি যুবরাজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে মুসলিম দেশগুলির অনেকে ইসরায়েলের সাথে কুটনীতিক সম্পর্ক গঠতে এগিয়ে আসে। এবং সৌদি আরবও ইসরায়েলকে মেনে নিবে বলে ট্রাম্প প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলেন তাই যুবরাজকে জামাল খাসোগি হত্যার অভিযোগ হতেও অব্যাহতি দানের চেষ্টা করেন এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের সুরক্ষা নিশ্চিত করেন। এখন আমেরিকা নির্বাচনে বাইডেনের জয়ে সব ওলটপালট হয়ে যায় এবং সৌদি হারাবে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমেরিকার হোয়াট হাউজ। জো বাইডেন জামাল খাসোগি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করে সুবিচারেরও অঙ্গীকার করেছেন। এবং ইয়েমেনে সৌদি আগ্রাসনে মার্কিনী সহায়তা বন্ধ করারও প্রতিশ্রুতি দেন তার নির্বাচনী প্রচারোণায়।

সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের আরেকটা কারণ হচ্ছে বাইডেন ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তিতে আগ্রহী । আর তা হলে ইরানের উপর চলা দীর্ঘ দিনের মার্কিন অবরোধের অবসানও হতে পারে। ইরানের ব্যাপারে ইসরায়েল ও সৌদি আরব একই নীতি মেনে চলে। সৌদি আরব ঘোষণা করেছে ইরানকে মোকাবিলায় দরকার হলে পরমাণু অস্ত্র বানাতেও দ্বিধা করবে না। তাই নেতানিয়াহু ও সৌদি যুবরাজ বৈঠকে ইরান ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে হয়। সৌদির চির প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান বর্তমানে ইরাক, ইয়েমেন ও লিবিয়ায় যেভাবে নিজের প্রভাব বলয় গঠে তুলছে তাতে সৌদি নিরাপত্তা বোধ করছে না তাই তাদের ইসরায়েলের সহযোগিতা দরকার। বহু আগে হতে মধ্যপাচ্যের মুসলিম দেশগুলি একে অপরের বিরুদ্ধে গোপনে ইসরায়েলের সহযোগিতা নিচ্ছে তবে এখন আর গোপনীয়তায় যেতে চাইতেছে না।

মধ্যপাচ্যে ইসলামি দল বিশেষ করে মুসলিম বাদ্রারহুড়কে দমনে পূর্ণ সমর্থন সৌদিকে দিচ্ছে ইসরায়েল। আরব আমিরাত ও বাহারাইনের সাথে কূটনীতি সম্পর্ক স্থাপনের পর হামাস নিয়ন্ত্রিত খাজায় হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল কিন্তু এই নিয়ে একদম চুপ সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ। সৌদি যুবরাজ বলেছেন ইসরায়েলের সাথে তার দেশের বাণিজ্য ও নিরাপত্তা স্বার্থ রয়েছে। তিনি অকূটনীতি সুলভ আচরণ করে বলেছেন ইসরায়েলিদের নিজ ভূমির অধিকার রয়েছে যদিও আন্তর্জাতিক আইনে ইসরায়েল অবৈধ রাষ্ট্র। যুবরাজ বলছেন ইসরায়েল বড় অর্থনীতির এবং উদয়মান অর্থনীতির দেশ তাই ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক করলে উপসাগরিয় দেশগুলি লাভবান হবে। তিনি আরো বলেছেন ইহুদীদের সাথে সৌদির বিরোধ নেই । এখন পর্যন্ত ইসরায়েলকে যেসব দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে তাতে ইসরায়েল তৃপ্ত নয় সে চায় সৌদি আরবের স্বীকৃতি। তারা মনে করে অন্য মুসলিম দেশের তুলনায় সৌদির স্বীকৃতি পেলে তাদের বৈধতার প্রশ্ন অনেকটা কেটে যায়। এই দিকে হোয়াটহাউজের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হারিয়েছে সৌদি আরব তাই সৌদি যুবরাজ ও নেতানিয়াহুর বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ তবে সৌদি আরব যে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রের উপর নানাভাবে চাপ দিবে তা স্পষ্ট । কিন্তু এত কিছুর আড়ালে ইসরায়েলের জন্য দুসংবাদ বিদ্যমান। তা হলো সৌদি বাদশাহ সালমান স্বাধীন ফিলিস্তিনের পক্ষে।

তাই বাহারাইন সম্মিলনে একদম কঠোর ভাষায় ইসরায়েল বিরোধী বক্তব্য রাখেন সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফারহান। কিছুদিন আগেও দুনিয়ার মানুষ দেখেছে সৌদি আরব ও ইসরায়েল জোরালো কূটনীতি সম্পর্ক বিদ্যমান কিন্তু হঠাৎ করে কেন সৌদি ইসরায়েলের সমালোচনা করছে। আসলে সব কিছুর মুলে হলো মার্কিন নির্বাচন যা সব হিসাব নিকাশ ওলোটপালট করে দিয়েছে। তাই সৌদি আরব তড়িঘড়ি করে নিজেদের পররাষ্ট্র নীতি কিছু পরিবর্তন করেছে তার অংশ হিসাবে ইসরায়েলকে তুলা -ধুনা। আর এই জন্য বিশ্বকে অন্ধকারে রেখে গোপনে দেখা করেন সৌদি যুবরাজের সাথে নেতানিয়াহু তখন যুবরাজ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্ভাবনা নাচক করে দেন এবং অন্য দিকে কাতারের অবরোধ তুলে নেওয়া চুড়ান্ত করেন। এখন সব ভুলে তুর্কীকে কাছে টানতে চান সৌদি আরব শুধু ট্রাম্প হেরে যাওয়ার কারণেই।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৮তম পর্ব।

সাবেক গোয়েন্দা প্রধান যুবরাজ ফয়সাল যুক্তরাষ্ট্রে সৌদি রাষ্ট্রদুত ছিলেন বর্তমানে তিনি বাদশাহ ফয়সাল ফাউন্ডেশানের প্রধান, এবং প্রভাবশালী হাউজ অফ সৌদির সদস্য। মানামা ডায়লগে সৌদি আরবের প্রতিনিধি দলে ছিলেন তিনি। যুবরাজ ফয়সাল যখন কঠোর ভাষায় ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলকে আক্রমণ করেন তখন ইসরাষেলি পররাষ্ট্র মন্ত্রী চুপ করে শুনেন। ধুমধাম করে আমিরাত ও বাহারাইন সম্পর্ক করে উৎসব মুখর ইসরায়েলি, সেখানে এমন কঠোর ভাষায় আক্রমণে পড়ে ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রী হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। সৌদি বাদশাহ সালমানের খুবই ঘনিষ্ঠ যুবরাজ ফয়সাল অতএব বুঝা যায় এই বক্তব্য হলো সৌদি বাদশাহ সালমানের। স্বাধীন ফিলিস্তিন নিয়ে সৌদির অবস্থা অত্যন্ত পরিষ্কার এবং কঠোর। এখন সৌদি আরব বলছে ইসরায়েল আমাদের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে চাইলে স্বাধীন ফিলিস্তিন মেনে নিতে হবে। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিরোধ না মিটলে এই অঞ্চলে শান্তি এবং স্থিতিশীলতা অধরা রয়ে যাবে। এই শান্তির জন্য দরকার একটা টেকসই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র । সৌদি আরব এখন সোজা বলে দিচ্ছেে আগে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান ।

২০০২ সালে সৌদি উদ্যোগে ইসরায়েলের সাথে শান্তি আলোচনায় বলা হয়ে ছিল ১৯৬৭ সালে যুদ্ধে অধিকৃত ভূমি ইসরায়েলকে ছেড়ে দিতে হবে এবং পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন ফিলিস্তিন গঠন করতে হবে। সৌদি আরবের এমন উল্টো সুর শুনে খুবই হতাশ হয়ে পড়েছে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েল।সৌদির এমন কঠোর আচরণে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের আচরণ কেমন হবে তা নিয়ে উদগ্রীব হয়ে পড়েছে ইহুদী রাষ্ট্র । মধ্যপাচ্যে ইসরায়েল প্রচণ্ড ক্ষমতাবান দেশ হলেও সব সময় নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে চিন্তায় থাকে। সৌদি আরবের সাথে টেকসই সম্পর্ক হলে অনেকটা নিশ্চিত হতে পারে নিজের অস্তিত্ব নিয়ে ইসরায়েল। হঠাৎ করে নিওমে সৌদি ও ইসরায়েলের বৈঠকের পর অনেকে মনে করে ছিলো এই দুই দেশের প্রকাশ্য সম্পর্ক এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। কিন্তু এমন আচরণে অদূর ভবিষ্যতে ইসরায়েলের সাথে সৌদির সম্পর্কের সম্ভাবনা এখন আর নেই। সৌদি আরব অন্য মিত্রদের ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক করার জন্য সামনে ঠেলে দিয়ে নিজে এখন দিন দিন দুরে সরে যাচ্ছে তা স্পষ্ট ।

লন্ডনের গবেষক শাদী হামদি বিবিসিকে বলেন সৌদির এমন আচরণে বাদশাহ সালমান আর পুত্রের ভিতর মতভেদ রয়েছে তাও স্পষ্ট। ফিলিস্তিনি অধিকার নসাৎ করে এবং তাদের কিছু না পাইয়ে দিয়ে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্কে জোর আপত্তি রয়েছে বাদশাহ সালমানের। সৌদি জনগণ আরব বিশ্বের জনগণের মতামত নিয়েও উদ্গীর্ণ এবং রাজ পরিবার উদ্গীর্ণ ক্ষমতা নিয়ে। ইতিমধ্যে সৌদি আরবের মধ্যপাচ্যে প্রভাব অনেকটা হাত ছাড়া হয়ে গিয়েছে তুরস্কের কাছে। গোপনে ইসরায়েলের সাথে গভীর কূটনীতিক সম্পর্ক থাকলেও সৌদি রাজতন্ত্রের একটা অংশ দেখাতে চায় যে মক্কা ও মদিনার রক্ষক হিসাবে আরব দেশের অন্যান্য সমস্যার মত ফিলিস্তিন সমস্যাকেও অনেক গুরুত্ব দেয়। আরো দেখাতে চায় যে বিশ্বের অন্য মুসলিমদের সমস্যাও তারা ফিলিস্তিনের মত গুরুত্ব দেয় তাই সৌদি আরব অনেক দিন চুপ থেকে হঠাৎ করে কাশ্মীর নিয়ে সোচ্চার হয়েছে। সৌদির এই দ্বৈত নীতির কারণে ইসরায়েল অনেক দোদুল্যমান থাকে সৌদি নিয়ে। ইসারায়েল প্রকাশ্য স্বীকার করে সৌদির এই নীতি তারা বুঝতে পারে না এবং উদ্বেগে থাকে।

ইসরায়েলের নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন সৌদির এই আচরণ অনেক উদ্বেগের। কারণ মুসলিম দেশের মধ্য সৌদি আরব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ। অন্য মুসলিম দেশ ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে মুসলিমদের তীর্থস্থানের মালিক সৌদি আরবের দিকে তাকিয়ে আছে যেমন মরক্কো। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েক বছর ধরে গোপনে নিরাপত্তা বিষয় যে সহযোগীতা আদান-প্রদান হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে।গবেষক শাদী হামদিও মনে করেন ফিলিস্তিন প্রসঙ্গ নিয়ে আসায় সৌদি কোন মৌলিক অবস্থান পরিবর্তন হবে না। তিনি আরো বলেন মিশর ইসরায়েলের সাথে কূটনীতি সম্পর্ক স্থাপনের পর এক সময় বাদশাহ ফয়সাল যে অগ্নি মূর্তি ধারণ করে ছিলেন এখন সেই কিছু দেখা যাচ্ছে না। আর সৌদি আরব আমিরাতের নিন্দা করেননি এবং সৌদির সবুজ সংকেত পেয়ে বাহারাইন ইসরায়েলের সাথে কূটনীতি সম্পর্ক স্থাপন করেছে। আমরা দেখছি সৌদি এখন ইসরায়েলের জন্য বিমান চলতে আকাশ পথ খুলে দিয়েছে। ইসরায়েল মনে করে সৌদি আরব এখন ইসরায়েল নিয়ে যা বলছে তা বাপ-বেটার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং জনগণের আস্থা অর্জনের চেষ্টা।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
৩৯তম পর্ব।

ইরানি বিজ্ঞানী পাকিজাদে হত্যার পিছনে ইসরায়েল ও ট্রাম্প প্রশাসন সন্দেহবাজন হলেও এর পিছনে সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আর এইটা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ হলো সৌদি যুবরাজ, ইষরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ও মার্কিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রী গোপন বৈঠকের পরপরই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। যেহেতু বৈঠক রুদ্ধধার ছিলো তাই বৈঠকে কী কথা হয়েছে আদৌ তা জানা সম্ভব নয় তাই বৈঠকে ইরানি বিজ্ঞানী হত্যার পরিকল্পনা হয়েছে তাও বলা ঠিক হবে না। এই হত্যায় উপসাগরে দেশগুলিকে কঠিন রেষারেষিতে নিয়ে গেল, ইরানি শাসক কঠোর হুমকি দিয়ে এর প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। ইরান অবশ্যই সন্দহের আঙ্গুল ইসরায়েলের দিকে ইশারা করছে। এমন অবস্থায় ইরান যদি ইসরায়েল ও আমেরিকার বিরুদ্ধে আঘাত আনে তাহলে প্রথম আঘাতটা হবে সৌদি আরবের মাটিতে। আর এই সময় কোন ঝামেলায় জড়াতে চাইতেছে না সৌদি শাসক। কিছু গবেষক আন্দাজ করে বলছেন ইসরায়েল যদি ইরানের সাথে যূদ্ধে যেতে চায় তবে সৌদি যুবরাজ এতে রাজি হবে না। নাম প্রকাশ না করে মিড়েল ইষ্ট আই জানান দুইটি কারণে সৌদি যুবরাজ যুদ্ধে জড়াতে ইচ্ছুক নয় ।
(১) যুদ্ধে জড়ালে বাইডেন প্রশাসন কোন সাহায্য সহযোগিতা করবেনা।
(২) ইরান তাদের ব্যাপক ক্ষতি করবে এবং কি কি ক্ষতি করবে তা সৌদি আরব ভালো করে জানে।

সৌদি আরব কেন ইরানকে ভয় পায় এইটা অনেকে জানে। ২০২০ সালে সেপ্টেম্বরে সৌদি আরব কিছুটা ইরানের শক্তি সম্পর্কে অনুমান করছে। সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে তেল ক্ষেত্রগুলি যে ক্রুসেড ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে তা ছিলো রীতিমত ভয়াবহ ।সেই সময় সৌদি আরবের তেল উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসে। যদিও ইয়েমেনর হুতি এই হামলার দায় স্বীকার করেছে তবে মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্ট দিয়েছে এই হামলার সমস্ত রসদ যুগিয়েছে ইরান তখন তারা তা অস্বীকার করে। ইয়েমেন হুতি হলো ইরানের সমর্থনপুষ্ট এইটা সবাই জানে এবং সৌদি তেল কোম্পানি আরাম কোং লক্ষ্য করে নির্ভুল আঘাত করে হুতি। মিডেল ইষ্ট আইয়ের মতে মোহাম্মদ বিন সালমান মনে করে সৌদি আরব যদি এই সময় যুদ্ধ জড়ায় তাহলে সৌদি আরবের অর্থনীতি ধ্বংসের দ্বারপান্তে নিয়ে যেতে পারে ইরান। তাহাছাড়া করোনা মহামারীতে তেলের বাজার খুবই মন্দা তাই এখন যুদ্ধে জড়ালে সৌদি আরবের রির্জাভে বড় ধরনের টান পড়বে উপসাগর অঞ্চলে প্রভাব বলয় থাকবে না

সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ জো বাইডেন, উনি ইরানের সাথে যুদ্ধে জড়ানো একদম পছন্দ করবেন না। ট্রাম্পের কারণে ইরানের সাথে খারাপ হওয়া সম্পর্ক জো বাইডেন মেরামত করতে চাইছেন। ইরানের সাথে আগে হওয়া পরমাণু চুক্তি হতে সটকে পড়েন ট্রাম্প, জো বাইডেন নির্বাচনী প্রচারে অঙ্গীকার করেছেন সেই চুক্তি তিনি পুনরায় চালু করবেন। যুক্তরাষ্ট্রের গুডবুকে রিয়াদকে বাইডেন আমলে নাম লিখাতে হলে অনেক কিছু করতে হবে। ইয়েমেনে যুদ্ধ, সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা এবং বিরোধীদের কঠোর হস্তে দমন বাইডেন কখনো সুদৃষ্টিতে নিবে না এবং মনে করে যে সৌদি আরব একটা অসামাজিক দেশ। বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের প্রাককালে সৌদি আরব এমন একটা যুদ্ধে জড়ানোর সমর্থন দিতে চাইতেছে না কারণ বাইডেনের ভিতর সৌদি নিয়ে খারাপ ধারণার জন্ম দিবে। আরো কারণ আছে সৌদি যুদ্ধে না জড়ানোর জন্য এর একটি হলো ইরানের ঠসামরিক শক্তি।

গবেষকদের মতে ইরান সামরিক শক্তিতে বিশ্বে চৌদ্দ নাম্বারে আর সৌদি আরব আছে সতর নাম্বারে অর্থাৎ সৌদি আরব তিন ধাপ পিছিয়ে আছে ইরান হতে। তবে ইরান আর সৌদির সাথে শত্রুতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ইরানে ইউরিনিয়াম মজুত করা নিয়ে সৌদি উদ্বেগে আছে সৌদি মনে করে ইরান ইউরিনিয়াম মজুত করে পারমাণবিক বোমা বানানোর কাছাকাছি পৌছে গিয়েছে। সমৃদ্ধ এই ইউরিনিয়াম দিয়ে যে কোন সময় ইরান বানিয়ে ফেলবে মারাত্মক বোমা। তবে ইরান সবসময় দাবি করে আসছে যে শান্তিময় কাজের জন্য পারমাণবিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছে। সৌদি আরব সবচেয়ে পরাজিত হয়েছে সিরীয়ায় সেখানে সৌদি আসাদ বিরোধীদের সহযোগিতা করে আসছে আর ইরান রাশিয়ার সাথে মিলে আসাদকে সহযোগিতা করে তাই আসাদ এখনো সবাইকে হটিয়ে ভয়াল তবিয়তেই আছে। সৌদি আরব ইয়েমেনে হুতিদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে আর হুতিদের পৃষ্টপোষক হলো ইরান। লেবাননে আছে হিজবুল্লা যার অকৃত্রিম বন্ধু হলো ইরান। তাই চতুর যুবরাজ সব হিসাব-নিকাশ করে দেখে ইরানের সাথে যুদ্ধে যাবে মনে হয় না।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৪০তম পর্ব।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী একটা টিভি চ্যানালকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় স্পষ্ট করে বলেননি কোন দেশটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিতে চাপ দিচ্ছে। একজন সাংবাদিক জানতে চান কোন দেশটি আপনার উপর চাপ দিচ্ছে সেই দেশ মুসলিম নাকি অন্য কোনো রাষ্ট্র,আপনি সোজাসুজি এই প্রশ্নের উত্তর দিন। মুচকি হেসে ইমরান খান ঝানু রাজনৈতিক নেতার মত কূটনীতির আশ্রয় নিয়ে উত্তর দেন। এবং বলেন আমরা চাইলেও সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না, তবে যে দেশ চাপ দিচ্ছে তা পাকিস্তানের পুরাতন বন্ধু। সম্প্রতি আরব আমিরাত ও বাহারাইন ইসরায়েলের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক চালু করেছে এবং মধ্যপাচ্যের আরো বেশ কিছু দেশ সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী এই তথ্য তূলে ধরে ইমরান খান বলেন আগে আমাদেরকে অর্থনৈতিক একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হতে হবে, নিজের পায়ের উপর শক্ত করে দাঁড়াতে হবে তারপর আমরা সব প্রশ্নের উত্তর খোলাখুলি দিতে পারবো। পাকিস্তানের অর্থনীতি এখনো সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের উপর অনেক নির্ভরশীল তাই কঠোর ভাষায় কথা বলা পাকিস্তানের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়।

তারপরও পাক প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়ভাবে পাকিস্তানের জনগণকে বলেন ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার কোন পরিকল্পনা তাঁর নেই। ফিলিস্তিনের একটা সুন্দর সমাধান না হলে এবং ফিলিস্তিনের মৌলিক অধিকার আদায় সন্তোষজনক সমাধান না হলে পাকিস্তান কখনোই ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না এবং কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কথা স্বরণ করে বলেন বার বার অনুরোধ করার পরও তিনি কখনো স্বীকৃতি দেননি। এইটা সত্য যে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এবং প্রশাসনের উপর ইহুদীদের প্রভাব অনেক তাই যুক্তরাষ্ট্র হতেও বার বার স্বীকৃতি দানের জন্য পাকিস্তানকে চাপ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকারে ইসরায়েলের প্রভাবের শক্ত বলয় সেটা পুরাতন কথা কিন্তু ট্রাম্প শাসন আমলে সেই প্রভাব প্রচণ্ড আকার ধারণ করে আর এই প্রভাব অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় তাই জো বাইডেন এই প্রভাব কিভাবে মোকাবিলা করে তা দেখার বিষয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন অনেকে মনে করে জো বাইডেন আফগানিস্তান নিয়ে বেশী নজর দিবে আমার তা মনে হয় না, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান নিয়ে জো বাইডেন আগের সরকারের পথই অনুসরণ করবে আমার মনে হয়।

বর্তমান মার্কিন প্রশাসন নানা দিক নিয়ে কাজ করছেন যাতে আফগানিস্তানে চলা গত উনিশ বছরে হানাহানির একটা রাজনৈতিক সমঝোতা করে শান্তিকর সমাধান করা যায়। আমার মনে হয় ইসরায়েলের প্রভাবকে মোকাবিলা করে মুসলিম দুনিয়া কিংবা অন্য দেশকে সাথে নিয়ে চলাই হবে জো বাইডেনের জন্য দুরূহ কাজ। ট্রাম্প ইসরায়েলের আমেরিকার সম্পর্ক যে উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন তা হতে বের হয়ে আসা খুব সহজ নয় এখন দেখার বিষয় বাইডেনও একই পথে হাটেন নাকি ভিন্নতা নিয়ে আসেন। ইসরায়েল, ইরান এবং কাশ্মীর নিয়ে বাইডেনের নীতি কী হবে এখনো বুঝা যাচ্ছে না তবে আফগানিস্তান নিয়ে নীতিতে তেমন পরিবর্তন আসবে না। এখন রিপাবলিক এবং ডেমোক্রেট উভয় দলই আফগানিস্তান হতে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার চায়।
সৌদি আরব ও আমিরাত বলয়ের বাহিরে গিয়ে তুরস্ক বলয়ে যোগ দিয়ে পাকিস্তান পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে, আজারবাইজানের পক্ষে ইমরান খানের জোরালো অবস্থানের প্রতিদানও পেতে পারে পাকিস্তান।

সৌদি আরব ও আমিরাত নির্ভর পাকিস্তানের জ্বালানি খাত হয়তো এখন আজারবাইজানের দিকে ঝুকতে পারে। অনেকে মনে করে সৌদি আরবকে বাদ দিয়ে আজারবাইজানের তেল রপ্তানি করতে পারে পাকিস্তান তাই আন্তর্জাতিক টেন্ডারের আজারবাইজান অংশ গ্রহন করে তা নিশ্চিত করেছে পাকিস্তান বেকাদায় আছে তাদের ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে তবে আমার মনে হয় করোনা মহামারীতে তাদের অর্থনীতি ছিলো স্থিতিশীল এবং ডলারের বিপরীতে রুপির মান বেড়েছে এতে তাদের সুবিধাও বাড়বে। পাকিস্তান সৌদি হতে তিন মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছে তার মধ্যে এক মিলিয়ন ডলার শোধ করেছে এবং বাকি দুই মিলিয়ন ডলারও তাড়াতাড়ি পরিশোধ করতে সৌদি আরব চাপ দিচ্ছে। তাই পাকিস্তান চীন হতে ঋণ নিয়ে সৌদি ঋন শোধ করার চেষ্টা করছে।
(চলবে)।

গাছ ও মানব

202012

যেখানে তোমার চলা থেমে যাবে
খোঁজ করে দেখো সেখানেই পাবে আমাকে।
মানবের ছায়া রূপে হয়তো নয়
পাবে আমায় প্রকৃতির একটা উপাদান গাছ হিসাবে।

গাছ ছায়া দেয়, ফুল ফল কাঠ দেয়।
হে মানব, তোমরা কি জানো গাছের নামও সুন্দরী হয়।
সে আমার কিংবা তোমার প্রেমিকা সুন্দরী নয়।
মূলত সে একটা মানবের উপকারী উপাদান।

আর আমরা মান এবং হুশ নিয়ে গঠিত দেহ বিশেষ
অথচ সুন্দর কিংবা সুন্দরী কোনটাই নয়।
আমরা নিজেরা নিজেকে কাটি আবার সুন্দরী গাছটাও কাটি, ভাবি না তার উপকার।
শুধু সুন্দরীর দেহটা চাই হোক সেটা গাছ কিংবা মানবী।
তারপর সুন্দর নকশি করা খাট, আমরা যাতে ঘুমাই।

করোনায় একজন প্রবাসী

FB_IMG_1608580419275

মিশরে গণবিক্ষোভে পতন ঘটে স্বৈরশাসক হোসনি মোবারকের। এতে সৌদি আরব বিচলিত হয়ে পড়ে। এর পর জনগণের অংশ গ্রহণে প্রথমবারের মত ভোটে বিজয় হয় মুসলিম ব্রাদাহুড়, প্রেসিডেন্ট হয় মুরসি। তখন হতে সৌদি আরব শুরু করে মুরসির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর এই তথ্য গোপনও থাকেনি এবং অন্যান্য দেশেও ইসলামি দলগুলো দমনে মরিয়া হয়ে উঠে সৌদি আরব। আর তুরস্ক সব দেশে ইসলামি দল এবং ব্রাদারহুড়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় চলে। এই জন্য ২০১৪ সালে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যপদে তুরস্কের প্রকাশ্য বিরোধিতা করে সৌদি আরব। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে এই দুই দেশ একই লক্ষ্যে মাঠে নামলেও কিছুদিন পর শুরু হয় বিভক্তি। বাশার আল আসাদকে হটানোর লক্ষ্য কাজ করে বিরোধীদের সাহায্য করতে গিয়ে তুরস্ক উদারপন্থীদের সমর্থন দেয় আর সৌদি আরব কট্টরপন্থীদের সমর্থন দেয় এই নিয়ে আস্তে আস্তে দূরত্ব তৈরী হয় সৌদি ও তুরস্কের।

এরপর ২০১৭ সালে কাতারকে নিয়ে চুড়ান্ত বিভেদ তৈরী হয়। তুরস্কের সর্বাত্মক সাহায্যে ছোট দেশ কাতার অবরোধে টিকে থাকে এবং আরো উন্নতি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। এর মধ্য আসে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধ, সেখানেও একে অপরের বিরোধী অবস্থান নেয়। এতকিছুর পরও টানেলের শেষ প্রান্তে দেখা দেয় আলোর ঝলকানি আর তা হলো তুরস্কে ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ। ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রতি সৌদির সহমর্মিতা সারা বিশ্বে আলোড়ন তোলে। এর পর আসে জি২০ সম্মিলন বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিধর বিশ দেশের এই সম্মিলন আয়োজন করে সৌদি আরব। তবে করোনা মহামারীর কারণে এই সম্মিলন ভার্চুয়ালি আয়োজন ছিলো আর তখন ফোন করেন সৌদি বাদশাহ তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে সেই সময় বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় দুই দেশের মত বিরোধ দূর করে একে অপরের সম্পর্ক জোরালো করার আলাপ হয়। ঠিক এর একদিন পর রাজ পরিবারের সদস্য সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন দুই দেশের সম্পর্ক এখন খুবই চমৎকার ও আন্তরিক।

এইসব আলাপ আলোচনাকে দুই দেশের সম্পর্ক গভীর করারই আভাস। তবে চিন্তার কথা হলো এত বছর দেশ দুইটি প্রচণ্ড বৈরি থাকার পরও এখন কেন বন্ধুতা গভীর করতে চাইছে। এর কয়েকটি কারণঃ
মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ককাসের বহু দেশে তুরস্কের প্রভাব বৃদ্ধি। এবং তুরস্কের সাথে যেখানেই বিরোধে জড়িয়েছে সৌদি কোথাও সফল হতে পারিনি সৌদি আরব। বরং তাদের চোখের সামনে কাতারকে টিকে থাকতে সাহায্য কিভাবে করেছে দেখেছে সৌদি। লিবিয়ায় খলিফা হাফতারকে যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য করেছে এবং আজারবাইজানকে আর্মেনিয়ার সাথে জিততে নিখুঁতভাবে সাহায্য করেছে তুরস্ক। এইসব দেখে সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে তুরস্কের সাথে বৈরিতা নয় বন্ধুত্ব বুদ্ধিমানের কাজ তাই সম্পর্ক জোরালো করার উদ্যোগ নিয়েছে। মোটকথা মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ক একটা পাক্কা খেলোয়াড হয়ে উঠেছে তাদের সাথে বৈরিতা তৈরী করে পথ চলা কঠিন।

মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের এখন শক্ত অবস্থান। এবং গ্রীসের সাথে সমুদ্র নিয়ে ঝামেলায় ফ্রান্স শক্তভাবে গ্রীসের পক্ষ নিলেও ইউরোপ তুরস্কের বিরুদ্ধে কোন কঠিন পদক্ষেপ নিতে চিন্তা করছে। আমেরিকায় জো বাইডেনের জয় এই অঞ্চলে রাজনীতি বদলে দিবে। ট্রাম্প শাসন আমলে ইসরায়েল এবং সৌদি আরব এই অঞ্চলে ছিল সর্বসেবা এবং এই দুই দেশ ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র আর ট্রাম্প ছিলো ইরানের উপর খুবই কঠোর যা সৌদি আরবের মনোকামনা। জিতেই জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি করার, আর এমন হলে এই অঞ্চলে ইরানের প্রভাব বেড়ে যাবে এবং সৌদি প্রভাব পড়বে হুমকির মুখে। জো বাইডেন তুরস্ককে কাছে টানবেন কারণ রাশিয়াকে মোকাবিলা করতে হলে তুরস্ককে কাছে না টেনে উপায় নেই কারণ তুরস্কের সাথে রাশিয়ার খুবই দহরম-মহরম। এইটাকে ট্রাম্প গুরুত্ব না দিলেও ঝানু রাজনৈতিক বাইডেন এইটাকে গুরুত্ব দিবেন। ট্রাম্পের আমলে বিশ্বে আমেরিকার যতটুকু প্রভাব কমেছে বাইডেন তা ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন কারণ তাই তাঁর নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিলো তাই বাইডেন তুরস্ককে দূরে সরিয়ে রাখবেন না। এই কারণে হয়তো সৌদি আরব আগেভাগেই তুরস্কের সাথে সম্পর্ক জোরদার করতে তৎপরতা শুরু করেছে। আর এই দুই মুসলিম দেশের সম্পর্ক উষ্ণ হলে মুসলমানদের রাজনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধিও পাবে।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩২তম পর্ব।

গত বিশে নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সৌদি বাদশা সালমান তুরস্কের প্রেসিডেন্টকে টেলিফোন করেন। এই উষ্ণ আলোচনায় দুই দেশের মধ্য বৈরিতা কমিয়ে সম্পর্ক গভীর করার কলাকৌশল নিয়ে আলাপ করেন। ওআইসি সম্মিলনের ফাঁকে মিলিত হন দুইদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীরাও, এর কয়েক দিন পর সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান কাতারের উপর অবরোধ তুলে নেওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এই ঘটনায় বিশ্লেষকগণ মনে করছেন সৌদি আরব আমেরিকায় পরিবর্তনের সাথে সাথে নিজেকেও পরিবর্তন করবে। তবে এটা সুরাজনীতির সুবাতাস নয় বরং এটা সৌদির নিষ্ঠুর রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার কূটকৌশল । এমনিতে ছায়া যুদ্ধে তুরস্কের সাথে একের পর এক হেরে নাস্তানাবুদ সৌদি আরব তাই সমঝোতা করতে হচ্ছে। গত কয়েক বছরে মুসলিম বিশ্বে এমকি মধ্যপাচ্যেও সৌদি আরবের প্রভাব ব্যাপকভাবে কমেছে। এর শুরু হয়ে ছিল মিশরের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে সেই দেশের সেনাবাহিনীকে নিষ্ঠুর সমর্থন দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা দান করে এক নির্মম স্বৈরশাসককে। এতে সৌদি রাজ পরিবারের কুমতলব ধরা পড়ে এবং সৌদি আরব বিশ্বে হয় ধিকৃত ও ক্ষুণ্ণ হয় সম্মান। এরপরও সৌদি আরব অনেক অনেক ভুলের রাজ্য গঠে তুলে।

কাতারের উপর অবরোধ, ইয়েমেনে যুদ্ধ যেখানে এখন দুর্ভিক্ষ চলছে,জামাল খাসোগি হত্যা সবই করেছে রাজতন্ত্রী সৌদি স্বৈরাচারী সরকার। একের পর এক অপরিপক্ব কাজ করে চলেছে সৌদি। সিরিয়ায় এখন স্বৈরাচারী আসাদকে টিকিয়ে রাখতে তার পাশে দাড়িয়েছে, লিবিয়ায় চরম যুদ্ধবাজ খলিফা হাফতাফের পরম বন্ধু সৌদি সরকার । সর্বশেষ ফিলিস্তিনের দীর্ঘকালের স্বপ্ন স্বাধীন ফিলিস্তিনকে কবর দিয়ে সৌদি আরবের মদদে ইহুদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের সাথে তিনটি মুসলিম রাষ্ট্র সম্পর্ক স্থাপন করেছে। এর প্রতিটি কাজের বিপরীতমুখী রয়েছে তুরস্কের সরকার বরঞ্চ সৌদি জোট তুরস্কের কূটনীতি ও সমরনীতির কাছে চরম হুমকির মুখে পড়েছে । তবে সবচেয়ে বড় আঘাতটা আসে আমেরিকার নির্বাচনে, তাই বাধ্য হয়ে সৌদির নীতিতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে শুধু রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য।

জো বাইডেন সৌদির নির্বাসিত সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার বদলা নিবেন বলেছেন এবং ইয়েমেনে যুদ্ধ নিয়ে কথা বলেছেন, এমনকি নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রী সৌদিকে কোন ছাড় দিবেন না তিনি ইরানে পরমাণু চুক্তির ঘোর সমর্থক। তাই সৌদি পিন্সের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছে তিনিই তুরস্কের সাথে বিরোধে জড়িয়েছে তাই এখন তাড়াতাড়ি তুরস্ককে ভাগে আনার চেষ্টা। সৌদি বাদশাহ সালমান নিজেই এরদোয়ানকে ফোন করে দুই দেশের মধ্যে সংলাপ করার পথ মুক্ত রাখার উপর জোর দেন। সৌদি আরব ও তুরস্কের মধ্যে এমন বৈরি সম্পর্ক আগে কখনো ছিলো না এর জন্য দায়ী সৌদি যুবরাজ । তিনিই সৌদির পররাষ্ট্র নীতি আমূল পরিবর্তন করেন এবং তুরস্কের মুখামুখি দাঁড়ান। তুরস্ক কাতারে শুধু মানবিক সাহায্যই পাঠায়নি সেখানে স্থাপন করেন সামরিক ঘাটি যার কারণে ছোট দেশ কাতার দখল করতে পারিনি যুবরাজ।সৌদির সাথে বিরোধপূর্ণ কোন দেশেই সুবিধা করতে পারিনি এই রাজতন্ত্রী।

তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ডাক দেন তুরস্কের পণ্য বর্জনের যাহ ছেলেমানুষি ছিলো এবং সৌদি জনগণকে তুরস্কের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে ব্যবহার করেন টিভি চ্যানাল উসমানিয় খেলাফতের সমালোচনা করে সৌদি পাঠ্যপুস্তকে এটির দখলদারিত্ব বর্ণনা করা হয়। অথচ উসমানিয়া খেলাফত নিয়ে প্রতিটি মুসলিম গর্ববোধ করেন এবং সৌদিকে পশ্চিমা ভাবধারায় নিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে এর মাঝে সৌদিতে শুরু হয় ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৩তম পর্ব।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কর্মকাণ্ডের কারণে দেশের ভিতরেও নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে এমন অবস্থায় রাজতন্ত্রই বিপন্ন হওয়ার ঝুকি রয়েছে। তাই রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে নিজের নীতি নমনীয় করতে হচ্ছে তাই তুরস্কের সাথে সম্পর্ক গঠতে এই তোড়জোড়। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন উচ্চ বিলাসী ও স্বৈরাচার যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে তুরস্কের বিশ্বাস করা কঠিন তাঁর এই পরিবর্তন কোন আদর্শগত কারণ নয় শুধু মাত্র স্বার্থের কারণে কন্ঠ নিচু করা। এই জন্য তুরস্ক সন্দহ প্রবণ থাকবে এবং ধীরে চলো নীতি গ্রহহণ করবে। তুরস্কের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা বলেন সৌদি বাদশাহ ফোন দিলেও সম্পর্কের নতুন মাত্রা এখনি যোগ হচ্ছে না আমাদের দেখতে হবে তারা কোথায় যেতে চায় এবং কি করতে চায় তবে আমরা সৌদির সাথে উষ্ণ সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। তুরস্ক বলেন গণতান্ত্রিক সরকার বিপ্লবীদের সমর্থন দেয় আর স্বৈরশাসন সমর্থন দেয় স্বৈরাচারকে। এখন তুরস্কের সাথে সম্পর্ক চাইলে মুসলিম ব্রাদারহুড় সম্পর্কে সৌদি আরবের অবস্থান বদলাতে হবে কারণ সৌদি আরব ব্রাদারহুড়কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইসলামি দল পশ্চিমা দুনিয়াতেও সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। তাই তুরস্ক ও কাতার মুসলিম ব্রাদারহুড়ের সবচেয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষক। অনেকে মনে করে ব্রাদারহুড় সৌদি রাজতন্ত্র উৎখাতে মদদ দিবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে এবং আরব বসন্তের সময় এমনই কথা ছিল। এরদোয়ান কখনোই ব্রাদারহুড়ের ব্যাপারে এক বিন্দুও ছাড় দিবে না আর জো বাইডেন বিশ্বে গণতন্তকামীদের সমর্থন করলে ব্রাদারহুড়কে বাদ দেওয়াও সম্ভব নয়। পরশ্পর বিপরীত-মেরুতে থাকলেও তুরস্ক চায় সৌদির সাথে উষ্ণ সম্পর্ক রাখতে নাইজার বৈঠকে তুর্কী পররাষ্ট্র মন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন আর সম্পর্ক ভালো হলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা উন্নত হবে। তবে এই দুই দেশের সম্পর্ক উষ্ণতায় বাধার কারণ হতে পারে আরব আমিরাত। একসময় আরব আমিরাত সৌদির সব কথায় সায় দিলেও এখন তার উল্টোও করতে পারে এইটা অনেক বিশ্লেষকের ভয় কারণ শেখ জায়েদ সৌদি যুবরাজের প্রধান পরামর্শ দাতা।

বর্তমানে আমিরাতের পররাষ্ট্র নীতি সৌদির চেয়েও আরো বেশী আগ্রাসী আরো বেশী তুর্কী বিরোধী। আমিরাত কখনো চায় না সৌদি তুর্কী সম্পর্ক উষ্ণ হোক, আমিরাত আবার কাতারেরও ঘোর বিরোধী। আমিরাতের কূটনীতিক ইউছুপ আল ওথাইবা সম্প্রতি ইসরায়েলের সাথে বলেছেন তুরস্ক ও কাতারের সাথে সৌদি জোটের বিবাদ অতি তাড়াতাড়ি মিটবে বলে মনে হয় না। আমিরাত মধ্যপাচ্যে রাজনৈতিক ইসলাম সম্প্রসারণের ঘোর বিরোধী তারা চায় পশ্চিমা ধাচের রাজনীতি দিয়ে মধ্যপাচ্যে প্রভাব বিস্তার করার জন্য। তাই সৌদির সাথে সম্পর্ক উষ্ণে সবচেয়ে বড় বাধা সৌদি যুবরাজের এই উপদেষ্টা তারপরও সম্পর্ক সৌদি জোরদার করলে আমিরাত মেনে নিতে পারে বলে অনেকে মনে করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ মনে করে মধ্যপাচ্যে স্থিতিশীলতা ফিরাতে হলে জো বাইডেনকে অবশ্যই আমিরাতের ব্যাপারেও কঠোর হতে হবে। পর্দার আড়ালে যতই বাধার স্তর থাকুক সম্পর্ক উষ্ণ হতেই পারে তবে এরদোয়ান নিজ দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে কিংবা আঞ্চলিক প্রভাব বাদ দিয়ে কখনোই সম্পর্ক গঠতে যাবেন না। অক্সফোর্ডের একজন গবেষক মনে করেন এরদোয়ান সম্পর্ক উষ্ণ করতেই চাইবেন কারণ আরব বসন্তের আগে দুই দেশের ছিল দহরম মহরম আর এরদোয়ান হলো একজন বাস্তববাদী নেতার সেরা উদাহরণ ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৪তম পর্ব।

সৌদি জোট ছোট্ট দেশ কাতারকে অবরোধ দিয়ে ভেবে ছিল কাতারের খেলা শেষ অবরোধ দেওয়ার সময় ভুলে যায় কাতারে রয়েছে মার্কিনী সেনা ঘাটি। কাতার সব উপেক্ষা করে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে আগের চেয়ে আরো কোমর শক্ত করে তাই এখন সৌদি জোট বুঝেছে কাতারের এরচেয়ে বেশী কিছু করা সম্ভব নয়। তাই এখন সৌদি জোটকে নিজের হাত কামড়ানো ছাড়া কিছুই করার নাই শুধু তারা নয় খোদ ট্রাম্পই আগে সৌদি জোটকে প্ররোচনা দিয়ে এখন তিনিও হাত কামড়াচ্ছেন। কয়েক দিন আগে ইউএস কাতার ডায়লগে মার্কিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রী পম্পেই একটি জমকালো বিবৃতি পাঠ করেন আর এতে বলেন আঞ্চলিক বিরোধ মিটমাট করার ক্ষেত্রে কাতারের ভূমিকা চমৎকার এবং সব দেশের মধ্য সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার সময় পার হয়ে যাচ্ছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে পম্পের এই আহ্বান একেবারে ফেলে দেওয়ার মত নয় আগেও একবার সৌদি সফর কালে একই আহ্বান জানিয়ে ছিলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মূলত ওই সফরের উদ্দেশ ছিলো উপসাগরীয় দেশগুলির বিরোধ মীমাংসা করা।

মার্কিন আরেক কূটনীতিক সফরে নিশ্চিত করে বলেন যে কুয়েতের উদ্যোগে যে আলোচনা চলছে তাতে সামনে একটা ভালো ফল আসতে পারে কেননা সবাই এখন নমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে তবে অদ্যাবধি কোনো ভালো ফল আসেনি, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। উপসাগরীয় অঞ্চলে এই বিরোধ অল্প দিনের রেষারেষি ফল নয় অনেক দীর্ঘ দিনের রেষারেষির ফলে আসে ২০১৭ সালে মে মাস। সৌদি আরব জোট করে কাতারের উপর অবরোধ চাপিয়ে দেয়, আকাশ, জল ও স্থল সব পথ বন্ধ করে দেয় কাতারের। অবরোধ আরপের আগে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহারাইন ও মিশর তেরটি শর্ত মানার অনুরোধ করে তেল সমৃদ্ধ কাতারকে। কাতার তাদের অন্যায় আবদার না মেনে খুব সতর্কভাবে আরো নতুন বন্ধু বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। এতে কাতারের প্রতিদ্বন্দ্বীও বসে থাকেনি সৌদি জোটের এক সময়ের শত্রু ইরাক,ইসরায়েল ও তুরস্কের সাথে সম্পর্কের হাত বাড়ায় এতে উপসাগরে সমস্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে বহুমুখী এবং মধ্যপাচ্যের সংকট হয়েছে গভীরতম।

উপসাগরীয় এই সংকটে সম্প্রতি সম্পাদিত আবরার চুক্তি স্বাক্ষরে বড় ভূমিকা রেখেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে আরব আমিরাত ও বাহারাইনের সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক সম্প্রসারিত হয়েছে। এই চুক্তি যদি যথাযথ সফল হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র দুইটা সফলতা দেখাবে একদিকে ইরান বিরোধী জোট সম্প্রসারিত এবং অন্যদিকে পররাষ্ট্র নীতির ব্যাপক সফলতা। মার্কিনী পররাষ্ট্র মন্ত্রী পম্পেও মনে করেন কাতার এবং তার বিরোধীদের মধ্য চূক্তি হলে উপসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি নেমে আসবে। তিনি হয়তো জানেন না এই অঞ্চলে সমস্যা, সংকট ও রাজনীতি অন্য অনেক কিছুর গভীরে গ্রথিত। প্রথমে আমেরিকা এই অঞ্চলের সমস্যাকে এত গুরুত্বের সাথে নেয়নি এবং মিটমাট করারও দরকার মনে করেনি। আমেরিকা এই আচরণ এই নয় যে তারা মধ্যপাচ্য হতে দুরে সরে যাচ্ছে বরং অন্য বিষয়ের প্রতি তাদের অগ্রাধিকার ফুটে উঠে তবে সমাধান রয়ে গিয়েছে অধরা। মধ্যপাচ্য বিবাদমান সব দেশেরই আমেরিকা প্রধান মিত্র কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কেন এই বিবাদ মিটিয়ে ফেলতে আমেরিকা সাহায্য করছে না।

কিন্তু মজার বিষয় হলো কাতারে সৌদি জোটের অবরোধের সাথে সাথে দ্রুত সময় এগিয়ে আসে তুরস্ক ও ইরান। সহযোগিতার অংশ হিসাবে এই দুই দেশ কাতারের জন্য খুলে দেয় আকাশ পথ, নৌপথ ও স্থলপথ এবং তুরস্ক পাঠায় সেনাদল। এই পর্যায় ইরান কাতারের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে সমঝোতা করে জ্বালানির এবং খুব দক্ষতার সাথে গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র নিয়ে দুই দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করে। তবে কাতারের মনে একটা ভয় সবসময় কাজ করে তা হলো ইরানের সাথে বেশী মাখামাখি পছন্দ করবে না দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকা ।
(চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
৩৫তম পর্ব।

মধ্যপাচ্যে সবচেয়ে বড় আমেরিকার সেনাঘাটি রয়েছে কাতারেই তাই আমেরিকাকে একটুতো তোয়াজ করে চলতেই হবে। এদিকে তুরস্ক এই কাতারের সাথে সম্পর্ক গভীরতম হতে গভীরতম করেছে। ২০১৭ সালে অবরোধ দেওয়ার পর জুন মাসে ইরানের মত তুরস্কও জাহাজ ভর্তি করে খাদ্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী পাঠায়। এর জবাবে কৃতজ্ঞ কাতার তাদের দেশে তুর্কী সেনাঘাটি সম্প্রসারণে অনুমতি দেয়। তাই তুরস্ক ও কাতার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বেড়েই চলেছে। এইভাবেই একটু একটু করে হয়ে যায় একে অপরের বহৎ বিনিয়োগকারী। সম্প্রতি কাতার তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পনর বিলিয়ন ডলার মজুত করেছে। করোনা মহামারীতে অর্থনৈতিক ধাক্কা সামাল দিতে যাতে তুরস্কের কোন রকম বেগ পেতে না হয়। এর বিপরীতে ক্রমশ ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ হচ্ছে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহারাইন ও মিশর। আর এই ঘনিষ্ঠতার মূলে রয়েছে তাদের ইরান ভীতি। আব্রাহাম চুক্তির মধ্যে দিয়ে মধ্যপাচ্যের ধনী ও শক্তিধর দেশের কয়েকটা ইচ্ছা পূরণ হলো তা হলো প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা বৃদ্ধির জন্য সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে ইসরায়েলের সাথে কাজ করা।

ইসরায়েলের সাথে আরব আমিরাতের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটা কারণ হলো সামরিক চুক্তি করা। আর ইসরায়েল এই সময় চায় তার পর্যটন খাতে ও হাইটেক সেক্টরে আমিরাতের বিনিয়োগ । ভূ- রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে দেখলে আব্রাহাম চুক্তি যেমন ইরানের বিরুদ্ধে তেমনি তুরস্কের বিরুদ্ধেও। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের আগুয়ান নীতি সিরিয়া ও লিবিয়া থিয়েটারগুলির এক প্রধান খেলোয়াড। তারা এখন ক্ষমতার চালাকের আসনে বসার জন্য এক দিকে ইরান ও আরেক দিকে সৌদি ও আমিরাতের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় লিপ্ত। আর কাতারতো তুরস্ক ছাড়া কিছুই বুঝে না। এইসবে মধ্যপাচ্যে ফাওয়ার হাউজ নামে পরিচিত দেশগুলোর একটা মাথা ব্যাথার বড় একটা কারণ। কাতার এবং তুরস্ক নিজের মধ্য অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা চুক্তি করেই ক্ষান্ত হয়নি দুই দেশের পররাষ্ট্র নীতিও নতুন করে সাজিয়েছে এই অঞ্চলে যেত গণআন্দোলন হবে তাতে সমর্থন দিবে। এর সোজা অর্থ মুসলিম ব্রাদারহুড়কে সাহায্য করা, যার নাম শুনলে মধ্যপাচ্যের রাজা বাদশাহরা স্বপ্নেও কেঁপে উঠেন কারণ এইদলটির বিজয় মানে রাজতন্ত্রের মৃত্যু হওয়া

এই একটা ইস্যুতে বিভক্ত মুসলিম দেশগুলো। আফ্রিকার লিবিয়া হতে ইয়েমেন পর্যন্ত দুইভাগে বিভক্ত। দুইভাগ কোনো না কোনোভাবে অন্যকে মদদ দিয়ে চলেছে এর উদাহরণ হলো লিবিয়া । সেখানে জাতীয় সংঘের স্বীকৃতি পাওয়া সরকারকে সমর্থন করছে তুরস্ক আর হাফতাফের মত জঙ্গী নেতাকে মদদ দিতে মরিয়া চেষ্টা করছে আরব আমিরাত। সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট বশীর ছিলো তুরস্ক ও কাতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, ২০১৪ সালে তাকে উৎখাত করে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করে। আর সেনাবাহিনীর পিছনে দ্রুত টাকার বাণ্ডিল নিয়ে এগিয়ে আসে সৌদি আর আরব আমিরাত এতে সুদানে আমিরাত ও সৌদি বিরোধী সমস্ত কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সোমালীয়াতে একই কাজ করতেছে এরা সবাই, সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে তুরস্ক ও কাতার আর বিরোধীদের মদদ দিচ্ছে সৌদি জোট। ইয়েমেনে সৌদির কারণে যুদ্ধ এবং দুর্ভিক্ষ চলছে এইভাবে গত কয়েক বছর ধরে চলছে মধ্যপাচ্যের রাজনীতি। একে অপরে বিরুদ্ধে লড়াই করছে রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে বাহিরের দেশ দুনিয়ার মোড়ল আমেরিকা সমাধান করতে পারলেও করছে না এবং বিপরীত মুখী মদদ দেয় আর এইসব মুসলিম দেশ তা লুফে নেয়। আমেরিকা এখনো সমাধানের দিকে নজর দিচ্ছে না এবং আদৌ দেয় কিনা বলা যায় না।
(চলবে)।

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) ( ৯ম পর্ব)

20201yuy

দুই হাতে উড়াই পোড়া স্বপ্নের ছাই, পিরিতি কাকন আর যেত আকুলতা। একান্তে প্রেম ভেঙ্গে গেলে পড়ে থাকে ঝড়ু ঝড়ু স্মৃতি আর বিষাক্ত চুল কাঁটা। প্রান্তিক রেখায় উড়ছে মেঘদল, ওদের চিনাবো বদ্ধ ভূমির ফাঁস। চার পাশে পুরুষ নেইতো কোন, যুথচার সব নৃপংশুকের নাচ। এই দুর্ভিক্ষে তুই আমি এক সুখী, চল যাই ভেসে দুহানিও মিলে দুর্ভাগ। বেপরোয়া নদী দ্বিধাহীন অস্নানোত, নিচু ফেলে মাটি আমরা পরস্পর।

সকাল হতে ছুটে চলে শহর সাথে ছুটে চলছি আমরাও। আমাদের সাথে ছুটে চলে কিছু অন্য লোক যাদের পরিচয় আছে সামাজিক স্বীকৃতি নেই। আসলে আধুনিকতার মোড়কে প্রগতিশীল হলেও সামাজিক হীনমন্যতা হতে বের হতে পারিনি আমরা। বয়ঃসন্ধি কালের পর হতে শুরু হয় লড়াই, তার বেড়ে উঠা বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি ফেলেও বেঁচে থাকা খুব সহজ নয়। আমি রুপালী রূপান্তর হয়েছি যে দশ বছর হয়েছে তবুও যেন অস্তিত্ব সংকটে আছি অথচ আমি শিক্ষিত মানুষ অভিনয়ও করি। এই লড়াই যে কতটা কন্টক তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।

এক কথায় বলে বুঝানো যাবে না, প্রতি মুহুর্ত নিজেকে জাস্টিফাই করা, সমাজ তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে তুমি খারাপ, তুমি ভুল, তুমি যা করছো সেটা ভুল করছো অন্যায় করছো, এবং সাথে সাথে সমাজ দণ্ডের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। যদি সমাজের নিয়ম অনুযায়ী চলতে না পারি সমাজ প্রতিনিয়ত শাস্তি দিবে এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আর সেখানে দাঁড়িয়েই সবসময় নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করা এবং কখনো কখনো বলা যদি নিজের প্রতি নিজের বলার সেই আত্নবিশ্বাসটা থাকে তাহলে বলা তোর চেয়ে আমি সত্য, এই বিশ্বাসে প্রাণ দিব দেখো।

আচ্ছা রুপালী রূপান্তরিত হতে হবে এই সিদ্ধান্তটা কেন।
আসলে আমার যেটা মনে হয় অন্তর আর বাহিরের এই দুইটা জায়গার মিল না থাকলে তো একটা মানুষ সম্পূর্ণ হয় না। অন্তত আমি, বাকিদের কথা বলতে পারবো না আমার নিজের ক্ষেত্রে আমার সে রকম অনুভূতি ছিল, যে আমার হৃদয়ের সাথে আমার শরীরের বাহিরের যদি মিল না হয় তাহলে আমি কখনো নিজেও স্বস্তিবোধ করছিলাম না যে সম্পূর্ণ নারী হিসাবে। যে কারণে বার বার মনে হয়েছে যে আমার বাহিরের গঠনটা পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। এখনো মনে পড়ে সে বাড়ি, সেই বাড়ির ছাদ যেখানে আমি একা একা বসে আকাশ দেখতাম।

বসে বসে হাঁটুর ভিতর মুখ লুকিয়ে কাঁদতাম, কাউকে কিছু বুঝানো যেত না বুঝাতে পারতাম না। আর এই না পারাটা নিজের সাথে ছাড়া পৃথিবীর কারো সাথে বলা যেত না।
মা কি বলতেন?
(কান্না) মা…..মাতো এ সমাজের একটা অংশ ছিলেন, তারপরও সন্তান হিসাবে কখনো অবহেলা ছিল না। শুধু পরিবারের সবার এক কথা ছিল আমাকে তাদের সমাজের একজন হতে হবে, আমি যদি সমাজের মত হতে না পারি নিন্দার শেষ নাই, লজ্জার শেষ নাই।

আমাদের সমাজে পুরুষকে সিংহের মত মনে করা হয়, পুরুষ যেন একটা প্রতুল।
তুমিতো অনেক পরিচিত মুখ, যখন রাস্তাঘাটে বাহির হও অন্যরা কি তীর্যক দৃষ্টি ফেলে।
কিছু কিছু জায়গায় এখনো হয়। একটা ঘটনা বললে বুঝতে পারবে। আমি তো অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংও করি তাই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনের সাথে মিশতে হয়। সেই রকম এক জায়গায় এক মহিলা খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ব্যবহার করে ছিল। তখন তাকে আমি বলি কেন আপনি এমন করছেন তখন সে অত্যন্ত চিড়-খাত্তয়া ভাষায় বলে—।

(চলবে)

হলুদ পাখির কিচিরমিচির

202012

তখন আমার কিশোরকাল, এক হলুদ পাখির আবিষ্কার মন্ত্র-মুগ্ধের মত চেয়ে থাকতাম। পাখিটা ঘরের দক্ষিণা জানালার ধারে আম গাছে আর জাম গাছে লাফাতো হলুদ গায়ের রং, লাল লম্বা ঠোঁট, কালো কালো চোখ। এত কি আর বুঝি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি, ঝরে পড়া পাকনাটা চুপি চুপি লুকিয়ে রাখি কোনো এক বইতে।

কখনো কখনো কালো বড় চোখে আমাকে দেখতো, আর তাই দেখতে দেখতে আমি যুবক হলাম। স্বপ্নে দেখি পৃথিবী পার হয়ে চাঁদের ওপারে হলুদ পাখির নীড় হবে রোজ আমাকে মিষ্টি মিষ্টি আদর দিবে। আচ্ছা হলুদ পাখি কাজল কালো চোখ দিয়ে তখন কি আমাকে রাগও দেখাবে!

যুবকের যৌবনোচ্ছল ভালোবাসা দিয়ে একদিন ধরতে গেলাম পাখিটাকে, চুপ করে কি যেন ভাবলো। তারপর উড়াল দিলো গহিন বনে, আমারও স্বপ্ন ভাঙ্গলো পড়ে রইলাম সেই সপ্তম শ্রেণীতে। বলা হলো না কত যে ভালোবাসি হলুদ পাখি তোমাকে।

একটা অকবিতা, মাধবী চলে তেলে

20201208_122139

ভাবছি একটা কবিতা লিখবো কবিতার শিরোনাম হলুদ পাখি, খাতা-কলম নিয়ে কবিতা লিখতে বসলে কাজের বুয়ার চিৎকার তেল নাই চুলা জ্বলে না। চারিদিকে এত তেল অথচ আমার ঘরে তেল নাই, বুয়াকে বলি সরিষার চাষ করে জমিতে বেড়া দিবো ভবিষ্যতে।

বুয়া আমার হেসে বলে জমিন এখন বেড়া খায়, চুপ করে বসে ভাবি যৌবনকালে তেলবাজ হলে একটা চাকরী পেতাম। তাহলে কুটুমতলার মাধবীকে বিয়ে করতাম, তাতে আমার ভালোবাসা হারাতো না। আর বুয়ার এত তেল নাই, তেল নাই শুনতে হতো না।

সব জায়গায় তেল, খাটে তেল, ঘরে তেল, সমাজে তেল, গ্রামে তেল, ইউনিয়নে তেল, উপজেলায় তেল, জেলায় তেল, ঢাকায় তেল, রাষ্ট্রেও তেল। তেলে চলে অফিস, আদালত, থানা, কোট-কাচারি। শুধু চলেনি মাধবী, কত তেল দিলাম, কত তোয়াজ করলাম, ধৈর্য্য ধরো চাকরী হবে, বিয়ে হবে, সংসার হবে, সন্তান হবে। তবে সবই হয়েছে মাধবীর তেলি মিয়ার তেলে, কিন্তু আমার হয়নি আদৌ অবধি।

ফয়জুল মহী।
০৮ -১২ -২০২০

স্বাধীনতা যুদ্ধে আলেম মাশায়েখের অংশগ্রহন ও বীরত্ব

423777

বাংলাদেশের ইতিহাস এখন যেন গাছের পাতা, স্বার্থবাজ চামচারা ছিড়ে আর ছাগলে খায়।
(সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ এর মধ্যে একজনও হুজুর নাই, আটষট্টি জন বীর উত্তমের মধ্যে একজনও মাওলানা নাই, ১৭৫ জন বীরবিক্রমের মধ্যে একজন মুফতি নাই, ৪২৬ জন বীরপ্রতীকের মধ্যে একজনও আন্তর্জাতিক খ্যাতি-সম্পন্ন মুফাচ্ছের নাই, তবে দুইজন মহিলা আছেন! দেশকে স্বাধীন করতে কত ধরণের মুক্তি বাহিনী গঠিত হয়েছে! কিন্তু একজন হুজুরের নেতৃত্ব ০৫-১০ জন মাদ্রাসার ছাত্র নিয়ে কোন প্রতিরোধ যুদ্ধের নজির পাওয়া যায়নি। নজির পাওয়া গেছে পাকিস্তানি কর্তৃক বাংলার মা বোনদের ধর্ষণে সহযোগিতায়।

আজ আমাদের ওলামাগণ মাইকে চিল্লাইয়া দেশপ্রেমের বুলি আওড়াচ্ছেন। অথচ তারাই তালেবান কর্তৃক মসজিদে/ স্কুলে আত্মঘাতী হামলায় নিরীহ মুসলিম/শিশু হত্যাকে সমর্থন করে, কখনো জিহাদি সাপ্লাইয়ের প্রত্যয়ও ব্যক্ত করে।
(কা‌র্টে‌সি: হুমায়ুন র‌শিদ খান)। )

আসল ইতিহাস ও সত্যঃ
ourislam.com এ কিছু হুজুরের কথা বলা হয়েছে যাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ভূমিকা ছিল। অনেকে সরাসরি যুদ্ধ করেছেন।

(১) মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ: আব্দুর রশিদ ২৪৩ দিন আত্মগোপন থেকে স্বাধীনতার যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। তার পরামর্শে অসংখ্য মানুষ যুদ্ধে অংশ নেয়, এবং এই কারণে পাকিস্তানী হানাদাররা তার বাড়ি-ঘর সব জ্বালিয়ে দেয়।

(২) মাওলানা আবুল হাসান যশোরী: তিনি ছিলেন যশোর রেল স্টেশন মাদরাসার মুহতামিম। তার মাদরাসার ছাত্ররা মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তার মাদরাসায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হামলা করে ২১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে কে শহিদ করে, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন সম্মানিত আলেম মাওলানা হাবীবুর রহমান এবং তার সাথে ছিলেন ৫ জন শাগরেদ আর বাকীরা ওখানে আশ্রয় নেয়া মুক্তিযোদ্ধা। পরে মাদরাসা প্রাঙ্গনেই শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর দেয়া হয়। ওই হামলায় যাশোরী গুলিবিদ্ধ হয়ে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

(৩) মাওলানা মুহাম্মদ কামরুজ্জামান চিশতী: পুরান ঢাকার জুরাইনের পীর হিসেবে যিনি পরিচিত। কথা সাহিত্যিক আনিসুল হকের “মা” উপন্যাসে আজাদের মা সফিয়া বেগম তার ছেলে আজাদকে এই পুরান ঢাকার জুরাইনের পীরের নির্দেশেই মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণ করেছিলেন। জুরাইনের পীরের বহু মুরীদ মুক্তিযোদ্ধা ছিল এবং জুরাইনের পীর সাহেব নিজে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তথ্য সূত্র: আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে।

(৪) মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর রহ.: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা ঢাকার লালবাগ মাদরাসায় ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন দিয়েছিলেন। সে সময় কওমি মাদরাসার কয়েক জন ছাত্র হুজুরকে জিজ্ঞাসা করেছিল, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? তিনি বলেন, এটা হচ্ছে জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের যুদ্ধ। পাকিস্তানিরা জালেম আর আমরা হচ্ছি মজলুম। হাফেজ্জি হুজুরের এই কথা শুনে অনেক আলেম দেশের টানে ও নির্যাতিত নারীদের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর লালসার হাত থেকে বাঁচাতে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু নিজে হাফেজ্জি হুজুরের সাথে দেখা করে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন।

(৫) শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহ.: তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের প্রধান মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হত্যা ও নারী ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে ইয়াহিয়া সরকার উনাকে জোর করে সৌদিআরব পাঠিয়ে দেয়। দেশ স্বাধীন হবার পর শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহ. বাংলাদেশে ফিরে আসেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের প্রধান খতিব হিসাবে নিযুক্ত করেন। তথ্য সূত্র: শায়খুল ইসলাম আমীমুল এহসান রহমাতুল্লাহ আলাইহি এর জীবন ও কর্ম।

(৬) ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ.: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের সবচেয়ে বড় কওমি মাদরাসা জামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসার মুহতামিম ছিলেন তিনি। তাকে মধ্যপ্রাচ্যের আলেমরা একনামে চিনতেন। যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ফতোয়া দেয়, তার ফতোয়া শুনে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার অনেক বড় বড় আলেম মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। বহু মুক্তিযোদ্ধাকে ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ. তার নিজ বাসায় আশ্রয় দিয়েছেন। দেশ স্বাধীন হবার পর বঙ্গবন্ধু উনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। তথ্য সূত্র: ফখরে বাঙাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ. ও উনার সাথীবর্গ।

এ রকম আরো অনেক আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ রয়েছে যাদের অবদান বাংলার মানুষ ভুলেনি। হয়তো ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম নেই। পরিতাপের বিষয় হচ্ছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক যতো নিবন্ধ, প্রবন্ধ এবং বই প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আলেমদের নেতিবাচক ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে এবং হচ্ছে। বর্তমান প্রজন্ম এসব বই, নাটক, সিনেমা দেখে আলেমদের বা দাড়ি টুপি দেখলেই রাজাকার মনে করে। তাই নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। এদেশের শত্রু-মিত্রদের চিনিয়ে দিতে হবে। সেজন্য মুক্তিযুদ্ধে আলেমদের যে বীরত্ব ও অবদান রয়েছে তা মানুষের কাছে, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।