ফয়জুল মহী এর সকল পোস্ট

ফয়জুল মহী সম্পর্কে

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র (26…30)

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২6তম পর্ব।
একটা কথা বলতাম আপনাকে । আগে বলেন শুনে চিৎকার দিবেন না ঠান্ডা মাথায় আমার কথা শুনবেন। হাঃ হাঃ হাঃ । আমি বুঝেছি তুমি কি বলবে ঠিক আছে বলো। তুমি মেয়ের কথা বলবে আমি জানি ইদানীং মেয়ের জন্য তোমার খাওয়া দাওয়া ঘুম এমনকি চলাফেরা ও কথাবার্তা সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। আমি ঢাকায় ভাবীর কাছে ফোন দিয়ে ছিলাম উনি বলেছেন আপনাকে একবার ফোন দিতে উনাকে।
ঠিক আছে ফোন দিবো, উনি ভালো মানুষ উনার মত দুই একজন লোক গ্রামে থাকলে আমাদের মত গরিবদের উপকার হতো। কিন্তু উনি থাকেন ঢাকা শহরে।

হ্যালো, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছেন ভাবী। আমি শিউলীর বাবা বলছি।
ওয়ালাইকুম সালাম। জ্বী আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।
জ্বী ভালো আছি। কিন্তু মেয়েটার জন্য মন কাঁদে। আর মেয়ের মা বলে আমি পাষাণ। আচ্ছা ভাবী আমার মত গরিব কি করতে পারি, থানা পুলিশ করতেও টাকা লাগে। দিন মুজুরি করে কি আর এইসব করা যায়। কয়েক বিঘা জমি আছে বলে ঘরে ভাত আছে না হয় এদের নিয়ে উপবাস দিন কাটতো।
তা ঠিক বলেছেন ভাইজান। কিন্তু মেয়েটার কোন বিপদ আপদও হতে পারে। থানায় একটা সাধারণ ডায়েরিতো করতে পারতেন। তাহাছাড়া বর্তমানে ব্যাপক হারে নারী নির্যাতন বেড়ে গিয়েছে রেপ করে হত্যা করছে এবং এমনও তো হতে পারে বিয়ে কথা বলে শিউলীর সাথে প্রতারণা করেছে। থানা পুলিশ করলে তারা অন্তত খোঁজ করতো মেয়েটার।

ভাবী আমি অশিক্ষিত কৃষক মানুষ এতো সব বুঝি। না বুঝলে আপনি আমাকে জানাতে পারতেন এখন ছয় মাস পর জানালেন। ঠিক আছে কি করবেন চিন্তা করে দেখেন। সমাজের লোকের সাথে বলেন যে শিউলী চলে গিয়েছে যে ছয় মাস হলো এখনো তার কোনো খোঁজ পাইনি এখন কি করবো। বলবেন তারা যেন সহযোগিতা করে শিউলীর খোঁজ নিতে। সে ফিরে আসলে তারপর বিচার হলে সমাজের সিদ্ধান্ত মেনে নিবেন। কোন সমস্যা হলে আমিতো আছি, কালকে সকালে আবার ফোন দিবেন। সবাইকে জানালে সাহায্যে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবে আমি ফোন করেও বলবো যেন আপনার সাথে থানায় যায় অভিযোগ করতে। আপনি লজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু না জানালে মেয়েটার বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। এখন এইসব কোন ব্যাপার না অহরহ ঘটছে প্রতিদিন।
ভাবী ঠিক বলেছেন লজ্জা লাগছে অনেক, গ্রামের মানুষ কানাঘুষো করে। একজন এক কথা বলে কেউ কেউ বলছে আমি চুরি করে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি কতশত আজেবাজে কথা। আসলে আপনার মত এমন আপন করে সুন্দর করে ভাই বোনের মত কেউ বুঝাতে চায় না। ঠিক আছে খোদা হাফেজ।

হ্যালো আম্মু, আসসালামুলাইকুম। কেমন আছো।
ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো। তোমার সবকিছু ঠিক আছেতো লেখাপড়া ঠিকমত হচ্ছে কিনা। খাওয়া দাওয়া ঠিকভাবে হচ্ছে ? ওহ! আম্মু আমি কি এখন সেই তোমার ছোট মামনি মৌরি আছি, আমি এখন বৃটেনে আছি এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে। তবে খেতে কষ্ট লাগে আগের মত তাও খেয়ে হয় কারণ আমার আম্মু নাই পাশে যে মুখে তুলে খাওয়াবে। আর ঢাকায় তুমি একা বলে ভয় লাগে কষ্ট লাগে।
আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করো না। তোমার নানী সপ্তাহে দুই/তিন দিন এসে দেখে যায়। আমিও ব্যস্ত থাকি সময় কেটে যাচ্ছে। তোমার দাদীর সাথে কথা বলেছো? প্রতিদিন আমি কথা বলি। মৌরি, একটা দুঃখজনক কথা গ্রামের শিউলী মেয়েটার এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি বা তার বাবা নেয়নি।
খুবই দুঃখজনক আম্মু। মেয়েটার কি হয়েছে খোজ নেওয়া দরকার ছিল চাচার আম্মু এখন রেখে দিবো। ভালো থাকো ।
তুমিও ভালো থাকো মৌরি মা।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র।
২৭তম পর্ব।

চাচা কেমন আছেন।
ভালো আছি তোমরা কেমন আছো।
জ্বী চাচা আমরা ভালো আছি। একটা কথা বলতে এসেছি আমরা। মনে হয় আপনি জানেন না।
কি কথা বলে ফেল তাড়াতাড়ি। আমার আবার একজনের সাথে দেখা করার কথা আছে।
ওই যে একটা পোলা নাহিদ মিয়া আপনার টিন সেড ঘরে ভাড়া থাকে তাকে ইয়াবাসহ পুলিশ ধরেছে আপনি কি জানেন আজ কয়েক দিন হলো ধরেছে যে
আরে কও কি তোমরা আমিতো জানি না। ওর বউ আমার কাছে আসে নাই বলতে, ঘর ভাড়াও বাকি। নাহিদের বন্ধু সুজনতো প্রতিদিন আসে তার বউয়ের কাছে। আপনি তাও জানেন না।
না তাও জানি না কিন্তু মেয়েটা ভালো ভদ্র মনে হলো। আরে চাচা ভালো খারাপ পরে যাচাই হবে। আপনি বললে আমরা পাহারা দিয়ে দেখতে পারি কেন আসে সুজন একবার ধরতে পারলে প্রমাণ হবে ভালো খারাপ। মানুষ দেখলে আপনার বদনাম হবে বলবে সোবহান মিয়ার কলোনিতে আজে বাজে লোক থাকে পরে ভাড়াটিয়া পাওয়া মুশকিল হবে।

কথা তোমরা ঠিক বলেছো তবে আমাকে একটু সময় দাও আমি মেয়েটার সাথে কথা বলে দেখি। দরকার হলে তোমাদের আমি ডাকবো এখন চুপ থাকো সবাই
ঠিক আছে আমরা চুপ থাকবো (তিনজনেই বলে উঠে)। যখনি দরকার হবে ডাক দিবেন চাচা।
সবাই চা খেয়ে যাও আমি এখন বের হবো।
সোবহান চাচা আসলে একজন ভালো লোক তাই ঝামেলা চায় না অন্য লোক হলে বলতো ধরে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিতে আর চাচা চুপ থাকতে বলতেছে। তা ঠিক মেয়েটা একা পেয়ে সুজন মজা নিতেছে আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখছি ।
চুপ কর শালা ছাগল খারাপ চিন্তা মাথা হতে বাদ দাও
আমরা চাই খারাপ কাজে বাধা দিতে আর তোমার মাথায় খারাপ চিন্তা চক্কর দেয়। মেয়েটা ভালোবেসে অপাপ্ত বয়সে আবেগী হয়ে একটা জুয়াড়ি মাদকসেবীর সাথে পালিয়ে এসেছে কিন্তু এইসব জানলে কখনো নাহিদের মত ছেলের সাথে গৃহ ত্যাগী হতো না। আর এখন কত বড় বিপদে পড়েছে দেখো।

তুমি ঠিক বলেছো আমরা চাই সুজন হতে মেয়েটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। সে যেন মেয়েটাকে কোন প্রলোভনে ফেলতে না পারে কোন খারাপ মতলব চরিতার্থ করতে না পারে। দরকার হলে চাচাকে দিয়ে ওর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করবো তার বাবা এসে তাকে নিয়ে যাবে।
বাহ আপনারা মহৎ অনেক মহান অনেক বড় সমাজ সেবক স্যালুট আপনাদের তবে আমি এইসবে নাই। তুমি একটা অজগর সাপ ছোবল মারতে চাও আরে বেটা তুুমি পুরুষ কবে হলে আমি সেটাই জানি না।
দেখো অপমান করবে না। আমি লাভ ছাড়া লসে নাই।
একদম ঠিক বলেছো দোস্ত এইটাও একটা লাভ। একটা ভালো কাজে অনেক লাভ আমাদের নিজের কেউ এমন বিপদে পড়লে আমরা দিশাহারা হতাম ঠিক তেমনি মেয়েটা ও তার পরিবার আজ দিশাহারা। এমন বিপদে মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করা মোটেই উচিত নয়। মানুষের দুর্বলতার সুযোগে ক্ষতি করা সুপুরুষের কাজ নয় কাপুরুষের কাজ আর তুমি একজন সুপুরুষ ও একজন ভদ্র মানুষেরই সন্তান।

আমাকে তেল কম মারো শাইখ সিরাজের তৈলাক্ত কলাগাছে আমি উঠতে ভালোবাসি।
হাঃ হাঃ হাঃ তুমি সত্যিই জিনিয়াস।
রাইট, সে জিনজিরার ইঞ্জিনিয়ার সাহেব। জিনিস নকল উনার মুল কাজ। যে কোন বিদেশী জিনিস অতি সহজে নকল করে আসল বলে বিক্রি করা উনার কাজ । কসমেটিক্স ব্যবহার করে মুখ হয় বিকৃত তেল ব্যবহার করে পুরুষ হয় চুল হারা আর গাড়ির পার্টস ব্যবহার করে মানুষ হয় জীবনহারা।
দুর শালা তোমরা দোস্ত না দুশমন।

(চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৮তম পর্ব।

কেউ আছে ঘরে ? আমি সোবহান মিয়া ।
জ্বী চাচা আছি ভিতরে আসেন ।
আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি।
আপনার বাড়ি আপনি অবশ্যই দেখতে আসবেন। আমি একটু চা বানিয়ে নিয়ে আসি আপনি বসেন।
আচ্ছা ঠিক আছে জলদি চা করে নিয়ে আসো। তোমার বর নাহিদ জেলে তুমি এই কথা আমাকে কেন বলো নাই।
ভুল হয়েছে চাচা। আমি ভয়ে আপনার কাছে যাই নাই কারণ আপনার ঘর ভাড়া বাকি নাহিদ জেলে শুনলে আপনি পাওনা টাকার জন্য চিন্তা করবেন আর হয়তো ঘর ছেড়ে দিতে বলবেন ,আমি একা এখন কোথায় যাব। তারপরও তোমার বলা উচিত ছিল আমি নাহিদের জন্য কোট কাচারিতে যেতাম তুমি একা কিন্তু সুজন আসে দিনে রাতে ছেলেরা আমার কাছে বিচার দিল।
জ্বী আসে গভীর ফ্যাকাশে হয়ে যায় মুখ শিউলীর। সে নাহিদের বন্ধু ভালো মানুষ আমাকে বোন ডাকছে। তাহাছাড়া সুজন ভাই চেষ্টা করতেছে নাহিদকে জেল হতে বাহির করতে।
ওহ তাই। আমি হলাম এখানের নেতা আমার সাথে থানা পুলিশ মন্ত্রীর সম্পর্ক আর সুজন আমার চেয়েও বড় নেতা নাকি। সবাই বলতেছে সে আসে তোমার সাথে খারাপ কাজ করতে আজ হতে আর আসতে পারবে না যদি কথা না শুনে তাহলে চরম অসুবিধা হবে। আর আমি আসবো তোমার কাছে তুমি আমার কথামত চললে আমি নাহিদকে এক সপ্তাহে বের করে নিয়ে আসবো। দুইজন এখানে সবসময় থাকতে পারবে আমি আর কোন ঘর ভাড়াও নিবো না। তুমি কোন চিন্তা করে দেখো আমি আসবো সন্ধ্যার পরে আর এই কথা আমি আর তুমি ছাড়া কেউ জানতে পারবে না। তুমি আমার চাওয়া পূরণ করলে বিনা ভাড়ায় দালান বাড়িতে থাকতে পারবে ভবিষ্যতে ।

হ্যালো ভাইয়া।
আরে কি হয়েছে বলো। কান্না বন্ধ করে কথা বলো। সোবহান মিয়া আসছে একটু আগে কি সব আজে বাজে কথা বললো আর বলছে আপনি আসতে পারবেন না একদম যদি আসেন তাহলে অসুবিধা হবে মেরে ফেলবে।
ওহ! আচ্ছা তাই , চিন্তার বিষয়। এখন কি করা যায়?
ভাইয়া আমার এখানে থাকতে ভয় লাগতেছে। দয়া করে কিছু করেন এই অসহায় বোনটার জন্য।
তা তো অবশ্যই করবো কিন্তু কি করা যায় ভাবতে হবে। ভয় পেয়েও না আমি তোমার কোন ক্ষতি হতে দিবো না। এখন রাখো একটু পরে আমি কল দিবো।
(শিউলী অঝোরে কান্না শুরু করে)।
মন শক্ত রাখতে হবে শিউলী একটু পরই ফোন দিচ্ছি।

মা একটা বলতে চাইতেছি অর্থাৎ একটা কিছু চাইবো বুঝে শুনে জবাব দিবেন আবেগী হয়ে নয়।
ঠিক আছে বলো কি কথা।
আমার বন্ধু নাহিদ জেলে আপনি জানেন ।
হুম , জানি এখন কি হয়েছে।
তার স্ত্রী বাসায় একা মানুষ আজে বাজে কথা বলতেছে । তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা বাড়ির মালিক লোকটা ভালো না শিউলীকে বাজে কথা বলতেছে। ঘর ছেড়ে দিতে বলতেছে কারণ ঘর ভাড়া বাকি।
তাই , এখন আমরা কি করতে পারি?
মা আমরা মেয়েটার ইজ্জত সম্মান বাঁচাতে পারি। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব ।
মা আমি চাইতেছি মেয়েটাকে দুই তিন আমার বাসায় আপনার কাছে রাখতে লোকজন জানার আগেই তাকে তার মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিবো।
কিন্তু তোর বাবা জানলে যদি রাগ করে। তাকে জিজ্ঞাসা করা দরকার না।

আম্মু মাত্র দুইদিন বাবা জানবেও না। উনাকে বললে রাজিতো হবেই না বরঞ্চ আপনাকে আরো বকা দিবে।
কিন্তু পরে জানলে অনেক রাগ করবে তাহাছাড়া এইসব কথা গোপন থাকে না। আবার পাড়া প্রতিবেশী শুনলে জানলে নানা কথা বলবে।
আম্মু মেয়েটা আশ্রয় না ফেলে তার সর্বনাশ হয়ে যাবে , মাত্র দুইটা দিন থাকবে কেউ জানবেও না শুনবেও না। আম্মু একটু দয়া করেন মেয়েটাকে। যদি আমার বোন হতো আপনি কি দয়া না করে পারতেন নিজেকে একবার মেয়েটার মা ভেবে চিন্তা করেন। শিউলীর মা অনেক উৎকণ্ঠায় দিন পার করলে জানে না উনার মেয়ে কতটা বিপদে এখন। আমরা সাহায্য না করলে শিউলীর মরণ ছাড়া উপায় থাকবে না । (চলবে) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৯তম পর্ব।

আমার কোন সমস্যা নাই কিন্তু ভাবছি তোমার বাবার কথা উনি চাকরী হতে কয়েক দিনের জন্য ছুটিতে আসে লোকজন যদি এইসব কথা বলে ,শুনলে উনার মন খারাপ হবে। তোমার আপু বিপদে পড়লে আমি মা হয়ে অনেক চিন্তা করতাম শিউলীর মাও চিন্তা করছে। কিন্তু মেয়েটা কেন এমন বাজে ছেলের সাথে ঘর ছাড়লো যে নাহিদকে তোমার বন্ধু বললেও আমার বিরক্ত লাগে। তাকে তোমার আব্বু একদম পছন্দ করে না। যখন শুনবে তোমার বন্ধু মাদক নিয়ে ধরা পড়ে জেলে আছে তখন তোমাকেও বকা দিবে এমন ছেলের সাথে চলার জন্য।
আম্মু পরে সবাই মিলে আমাকে ইচ্ছামত পিটাইতে পারবেন এখন হ্যা বলেন।
ঠিক আছে শর্ত হলো কেউ কেউ জানতে পারবে না সাবধান দেয়ালেরও কান আছে।
লাভ ইউ মা। হ্যা জয়যুক্ত হলো। আমার মা জগত সেরা। সুজন মাকে বুকে ছেপে ধরে আর মা ছেলের খুশিতে মিটমিট করে হাসে।

হ্যালো শিউলী।
ভাইয়া ফোন কেন দিতেছো না ।
কান্নাকাটি আর একদম না । কথা মনোযোগ দিয়ে শুনো তারপরও না বুঝলে প্রশ্ন করবে।
ঠিক আছে বলেন।
এখন হতে যে কোন সময় সুযোগমত একদম খালি হাতে বাসা হতে বের হয়ে মার্কেট যাবে সেখানে এইদিক সেইদিকে ঘুর আমাদের রিক্সা নিয়ে আমার বাসায় চলে আসবে। বুঝতে পেরেছো আমার কথা।
জ্বী বুঝেছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
সাবধানে বাহির হবে কেউ যেন টের না পায় তুমি পালিয়ে যাচ্ছো শুনো সাথে ব্যাগ ছাড়া আর কিছুই আনতে পারবে না ব্যাগে সম্ভব হলে একজোড়া কাপড় আনবে ব্যাস। বাসা হতে বাহির হয়েই আমাকে ফোন দিবে।
ঠিক আছে ভাইয়া।
বাই।

কি করে যে দোজখ হতে মুক্তি পাবো জানি না। আজ কয়েকদিন মায়ের কথাও খুব মনে পড়তেছে কোন অসুখ বিসুখ হলো কিনা আল্লাহ জানে। পরিবারের অবাধ্য হয়ে আমি সাগরে ডুবতে যাচ্ছি এখন সুজন ভাই না থাকলে কি যে হতো আমার, ইজ্জত বাঁচানোর জন্য হয়তো আত্মহত্যা করতে হতো। মা বদদোয়া না দিয়ে একটু দোয়া করো আমি সহী সালামতে তোমার বুকে ফিরতে চাই মা রে রে।
হ্যালো, ভাইয়া আমি বাহির হচ্ছি বাসা হতে।
ঠিক আছে আমিও বাসায় থাকবো।
ভাইয়া আমি হক টাওয়ারে গিয়ে কল দিবো। এবং আপনাদের বাসায় রওয়ানা দিয়ে আবার কল দিবো। আপনি ফোন হাতে রাখবেন।
এই এত ভয় পাওয়ার কিছু নাই। তোমাকে বাসা হতে বাহির হতে কেউ না দেখলে চলবে।
আমি রাস্তায় দেখে এসেছি কেউ নাই এখন।
ভেরী গুড।

ভাইয়া হ্যালো, আমি টাউনে কিন্তু একটা সমস্যা হচ্ছে। দূইটা ছেলে বার বার আমাকে অনুসরণ করতেছে অথচ আমি তাদের চিনি না।
শিউলী তুমি তাদের দিকে দেখার দরকার নাই। আপততঃ এই দোকান সেই দোকান ঘুরতে থাকো ওরা চলে গেলে তারপর এসে যাবে আমাদের বাসায়।আচ্ছা ঠিক আছে। (চলব)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩০তম পর্ব।

কি হলো শিউলী তুমি আসতেছো না কেন ।
ভাইয়া ছেলে দুইটা মনে হয় আমাকে চিনেছে ওরা আমার দিকে লক্ষ্য রাখতেছে ।
তুমি সেখান হতে বের হয়ে অন্য মার্কেটে চলে যাও। এইভাবে দুই তিন মার্কেটে ঘুরতে থাকো এরপর দেখো ওরা তোমার পিছে থাকে কিনা।
আচ্ছা ঠিক আছে।
আর টাকা থাকলে অল্প কিছু কিনতে চেষ্টা করো কম টাকায়। তাহলে দেখবে তুমি কেনাকাটা করতে এসেছো এতে সমস্যা কমে যাবে।
আচ্ছা ঠিক আছে। আমি আপনার বাসায় আসার জন্য রিক্সায় উঠেই কল দিবো।
ঠিক আছে কিন্তু সাবধানে ঠান্ডা মাথায় সব করো ।
হ্যালো ভাইয়া আমি রিক্সায় উঠেছি এবং আসতেছি।

সুজন দেখো কে এসেছে।
জ্বী দেখছি । আম্মু শিউলী এসেছে ।
আসসালামুলাইকুম ভাইয়া ।
এসো এসো ভিতরে এসো । ওয়ালাইকুম সালাম।
আসসালামুলাইকুম আন্টি। কেমন আছেন আপনি।
ওয়ালাইকুম সালাম, জ্বী আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো।
আমি ভালো আছি। আপনারা না থাকলে হয়তো ভালো থাকাই হতো না আজীবন।
যাও মা হাত মুখ ধুয়ে এসে বসো। মুখ একদম শুকিয়ে গিয়েছে। আমি খাবার দিচ্ছি এখন আর নাস্তা পানি দিবো না তোমার অপেক্ষায় থেকে আমরা মা ছেলেরও খাওয়া হয়নি।
ঠিক আছে আন্টি আরে আপনারা কেন না খেয়ে কষ্ট করতেছেন। ভাইয়া আসেন খেতে। সরি, আসতে দেরি হলো ছেলেগুলি একদম পিছনে পিছনে ছিল। তারা আমার সাথে সাথে অন্য মার্কেটও দেখতে গিয়েছে। আমি যখন ওড়না দেখছি আর তখন চলে যায়।
আচ্ছা , এখন খেয়ে ঘুম দাও পরে সব কথা হবে । আর একদম বাসার বাহিরে যাইবে না । তুমি এখন ক্লান্ত তাহাছাড়া ওইখানে একা ভয়ে তোমার ঘুম হওয়ার কথা না।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া ভয়ে সারা রাত ঘুম একদম আসতো না। কোন কিছুর আওয়াজ হলেই ভয় লাগতো মনে হয় দরজা খোলছে কেউ।
নাও মা নিয়ে খাও। এখানে কোন ভয় নাই এখন তুমি নিরাপদ। কোন কিছুর প্রয়োজন হলে বলবে লজ্জা পাবে না।

কেমন ঘুম হলো শিউলী।
জ্বী খুব ভালো ।
তোমার চেহারা দেখে বুঝেছি ।
সত্যিই আজ দুপরে এক ঘন্টার ঘুম যে প্রশান্তি মনে এনে দিয়েছে এক কথায় অসাধারণ। খুবই সতেজ লাগছে নিজেকে। মাথা মন কেমন যেন হালকা হালকা লাগছে ,এতদিন এইসব নিয়ে চলা যেন অসম্ভব হয়ে পড়ে ছিল। হাসনে হেনার গন্ধ মনে হয় জীবনে প্রথম নাকে লাগছে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারতেছি শুধু এই লোকদের জন্য। উনারকে কোন উপমায় আমি বন্ধি করবো না এই মা ছেলে থাক আকাশের মত বিশাল হয়ে। সংসার জীবনের কয়েক মাসে যে আমি শিক্ষা পেয়েছি তা অতীত জীবনের সব শিক্ষা হতে গুরুত্বপূর্ণ । সব পিছনে ফেলে এখন আমাকে ফিরতে হবে বাপ মায়ের বুকে। কিন্তু নাহিদকেও মুক্ত করা দরকার , লোকটাকে জীবন শুধরানোর জন্য একটা সুযোগ দেওয়া দরকার ।

ভাইয়া আসেন গরম গরম চা। হাঃ হাঃ।
তুমি কেন আম্মু কোথায় ।
আন্টি প্রতিদিন উনার ছেলেকে বানিয়ে খাওয়ায়।
আজ না হয় আমি খাওয়ালাম ভাইটি কে।
ঠিক আছে আমি খেতে পারলেই হলো। এখন তুমি কি করতে চাও বলো, যেটা তোমার পছন্দ সেটা বলবে। নাহিদ কখন জেল হতে ছাড়া পায় তার কোন নিশ্চয়তা নাই তবে তাকে আমি জামিন করাবো তুমি নিশ্চিত থাকো। তুমি কি এখন তোমার মা বাবার কাছে ফিরতে চাও নাকি আমাদের এখানে থাকতে চাও। (চলবে)।

পার্বত্য এলাকার উপজাতি কোনমতেই আদিবাসী নয়

পার্বত্য এলাকার উপজাতি কোন মতেই আদিবাসী নয়। যদি তাদের আমরা আদিবাসী বলে স্বীকার করি চরম ভুল করবো।

আদিবাসী, উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এই নিয়ে আমাদের অনেক কিছু জানার আছে। একটা জাতিকে আদিবাসী বললে সমস্যা কি এটা আমরা অনেকে জানিনা। কারা আদিবাসী সেই দিক বোঝার আগে জানা দরকার বাংলাদেশে যারা হঠাৎ করে নিজেদের আদিবাসী দাবি করছে এর পিছনে কারণ কি? সরকারের সাথে শান্তি চুক্তির সময়েও তারা নিজেদের আদিবাসী হিসাবে উল্লেখ করেনি। তাহলে এখন কেন করেছে।

মুল সমস্যা বাঁধিয়েছে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণাপত্রে সর্বমোট ৪৬টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এসব অনুচ্ছেদের বেশ কয়েকটি ধারা বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা, অস্তিত্ব, কর্তৃত্ব, সংবিধান ও আত্মপরিচয়ের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক। একথা নিশ্চিত করে বলা যায়, যেসব ব্যক্তিবর্গ খুব উপজাতিদের আদিবাসী বলতে আগ্রহী তাদের অনেকেই হয়তো এই ঘোষণাপত্রের মর্মার্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন।

নিম্নে জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক ঘোষণাপত্রের কিছু অনুচ্ছেদ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

অনুচ্ছেদ-৩: আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার বলে তারা অবাধে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ করে এবং অবাধে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখে।

অনুচ্ছেদ-৪: আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার উপভোগের বেলায়, তাদের অভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ে তথা স্বশাসিত কার্যাবলীর অর্থায়নের পন্থা ও উৎস নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের স্বায়ত্তশাসন বা স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৫: আদিবাসী জনগণ যদি পছন্দ করে তাহলে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রেখে তাদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, আইনগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অক্ষুন্ন রাখা ও শক্তিশালীকরণের অধিকার লাভ করবে।

অনুচ্ছেদ-৬: আদিবাসী ব্যক্তির জাতীয়তা লাভের অধিকার রয়েছে।

বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে বাংলাদেশের ভেতর কমপক্ষে ৪৫টি স্বায়ত্তশাসিত বা স্বশাসিত অঞ্চল ও সরকার ব্যবস্থার সৃষ্টি করতে চাইবে। তারা নিজস্ব রাজনৈতিক কাঠামো, জাতীয়তা, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, আইনপ্রণয়ন ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাবে।

এছাড়াও এই ঘোষণাপত্রে আদিবাসীদের ভূমির উপর যে অধিকারের কথা বলা হয়েছে তা আরো ভয়ানক। যেমন, অনুচ্ছেদ-২৬: ১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন, দখলীয় কিংবা অন্যথায় ব্যবহার্য কিংবা অধিগ্রহণকৃত জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের অধিকার রয়েছে।

২৬: ৩. রাষ্ট্র এসব জমি, ভূখণ্ড ও সম্পদের আইনগত স্বীকৃতি ও রক্ষার বিধান প্রদান করবে। সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথা, ঐতিহ্য এবং ভূমি মালিকানা ব্যবস্থাপনা মেনে সেই স্বীকৃতি প্রদান করবে।

অনুচ্ছেদ-২৮: ১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদ যা তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলকৃত বা ব্যবহারকৃত এবং তাদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ছাড়া বেদখল, ছিনতাই, দখল বা ক্ষতিসাধন করা হয়েছে এসব যাতে ফিরে পায় কিংবা তা সম্ভব না হলে, একটা ন্যায্য, যথাযথ ও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পায় তার প্রতিকার পাওয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩০: ১. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় সম্মতি জ্ঞাপন বা অনুরোধ ছাড়া ভূমি কিংবা ভূখন্ডে সামরিক কার্যক্রম হাতে নেয়া যাবে না।

অনুচ্ছেদ-৩২: ২. রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদের উপর প্রভাব বিস্তার করে এমন কোনো প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে, বিশেষ করে তাদের খনিজ, পানি কিংবা অন্য কোনো সম্পদের উন্নয়ন, ব্যবহার বা আহরণের পূর্বে স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি গ্রহণের জন্য তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সহযোগিতা করবে।

এই অনুচ্ছেদগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, বাংলাদেশের উপজাতীয় জনগোষ্ঠী আদিবাসী স্বীকৃতি পেলে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে নিজস্ব আইনে নিজস্ব ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রামের মুষ্টিমেয় চিহ্নিত উপজাতিরা দাবি করছে ঐতিহ্য ও প্রথাগত অধিকার বলে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ভূমির মালিক তারা। একই অধিকার বলে সমতলের উপজাতীয় অধ্যুষিত এলাকার সকল ভূমির মালিকানা সেখানকার উপজাতীয়রা দাবি করবে। সেখানে যেসব ভূমি সরকারি ও ব্যক্তিগত মালিকানায় বাঙালীরা রয়েছে তা ফেরত দিতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে যেহেতু ঐ গোষ্ঠী সকল সামরিক স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার দাবি জানাচ্ছে, সে কারণে সেখান থেকে সকল সামরিক স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে। ইউএনডিপিসহ কিছু বৈদেশিক সংস্থা ইতোমেধ্যে প্রকাশ্যে এ দাবি তুলেছে।

যখন দেখি দেশের কিছু মানুষ উপজাতি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী আর আদিবাসীর ভিতর পার্থক্য বুঝতে চায় না তখন নিজেকে খুব অসহায় লাগে! রাজনীতি তো দেশকে নিয়ে, আমার কাজ যদি দেশ বিরোধী হয়ে যায় তাহলে কিসের রাজনীতি করা?

শহীদ প্রেসিডেন্ট মেজর জিয়ার সুদূর পরিকল্পনায় আজও পার্বত্য এলাকা বাংলাদেশের অংশ হিসাবে টিকে আছে। মেজর জিয়া ভূমিহীন বাঙ্গালিদের তিন পার্বত্য জেলায় বসতি স্থাপন করেন। সেখানে এখন বাঙালি আর উপজাতি সম পরিমান আছে। না হয় এতদিনে পার্বত্য অঞ্চল বাংলাদেশ থেকে ছুটে যেত।
মেজর জিয়ার পরিকল্পনার কাছে উপজাতিরা ব্যর্থ হলে তখন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় তারা। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হলো আদিবাসী থিউরি।

আজ থেকে সর্বচ্চ ৩০০ বছর আগে চাকমারা বার্মা থেকে ধাওয়া খেয়ে এদেশের পার্বত্য চট্রগ্রামে আশ্রয় নেয়। অথচ এ ভুখণ্ডে হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে বাঙালীদের। আর এখন উপজাতিরা হইলো আদিবাসী। আদিবাসী হইলে পূর্ব তীমুরের মত তাদের স্বাধীন দেশ দিয়ে দিতে হবে।

২০০৫ সালে বিএনপি সরকার প্রথম জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে বাংলাদেশে কোন আদিবাসী নেই। রাষ্ট্রীয়ভাবে সেই ধারাবাহিকতা আওয়ামি লীগ ধরে রেখেছে। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় গঠনতন্ত্রে উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক পদ থাকায় এ বিষয়ে তাদের দলীয় অবস্থান পরিস্কার।

সূত্রঃ ক . মা। ছবিঃ মনট্টিল।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র (৬ষ্ট পর্ব )(6….25)

সকালে রবিনের মা আসে দাদির কাজ করার জন্য। দাদির প্রতি রবিনের মার যত্ন দেখে বুঝা যায়, দাদি উনার প্রতি অর্থনৈতিক হাত প্রসারিত করেন। ভালো হয়েছে কাজে এমন সহযোগী থাকায়। চাচি কেমন আছেন? ভালো আছি মা মৌরি। রাতে রবিন তোমার কথা বলেছে। বলে মা – দাদির বাড়িতে একটা আপু এসেছে। এত ভালো, সবার সাথে মিলে ধানের জমিতে ফটো তুলছে। কত কিছু জানতে চায় গ্রামের কথা। পড়তে বসেও সেই তোমার কথা, ভাবলাম একবার এসে দেখে যাবো কে আসলো। কিন্তু ভয়ে আসি নাই। অন্ধকার রাত, এমনিতেই মেয়ে মানুষ দেখলে জানোয়ার হামলে পড়ে। কত জোয়ান মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট হচ্ছে। আর বড় লোক বেটিরা বিচার পায় না, আমরা তো হলাম গরীব আমাদের জন্য বিচার হলো আকাশের চাঁদ। আমি চাচির কথা আর গ্রামের গরীব মানুষের সরলতা নিয়ে ভাবি। শুনছি আমি গ্রামের রাজনীতি জিলাপির প্যাঁচ।

নীলফামারী জেলার এক দরিদ্র ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের গ্রাম আমাদের। সহজ সরল অশিক্ষিত কিছু মানুষ নিয়ে অর্ধশিক্ষিত কিছু মানুষের পলিটিক্সের হাট বাজার। এখানেও দোয়েল কোয়েল পাখি আছে। এখানেও সামছুর রহমানের স্বাধীনতা কবিতার মেয়েরা পুকুরে অবাধে সাঁতার কাটে। কৃষক তাজা তাজা ষাঁড় দিয়ে চাষ করে। তামাক জমির আইলে বসে পান্তা ভাত কাঁচামরিচ দিয়ে সাবাড় করে। নেই শুধু কাজী নজরুলে কবিতা। নেই সায়ীদ স্যারের বইয়ের লাইব্রেরির মত এমন কিছু। আছে এনজিও নামক পাতানো খেলা। টাকা নাও, কিস্তি দাও। না পারলে বউ -ঝির গয়না বিক্রি করো। তুমি পারো না পারো, খাও না খাও কিস্তি সচল রাখতেই হবে। কি বিচিত্র, কি সরল অংক, কি সরল বাণিজ্য।

রবিন রাতে ভাত খেতে বসেও তার বাবাকে সেই তোমার কথা বলা শুরু করলো। তার বাবা সকালে চলে যায় তামাক জমিতে কাজ করতে, যাওয়ার সময় বলে আজ একটু জলদি যেও চাচীর বাড়ি। কে আসলো কি জানি। বাজার সদাই লাগবে কিনা জেনে নিও। মাহিন ভাইয়ের বউতো আসার কথা না। আহারে ভালো মানুষের দাম নাই। এই রকম অমায়িক মানুষ ছেড়ে দিয়েছে। চাচীর মতই আমাদের খেয়াল রাখতো বাড়ি আসলে। আমরা গরীব বলে কখনো অযত্ন করেনি। ভাই ভাই বললে মনে হতো যেন মায়ের পেটের আপন ভাই। খেয়েছি কিনা, বাড়িতে চাউল ডাল আছে কিনা সব জানতে চাইতো। এমন মানুষের কপালে সুখ সয় নাই। সবই কপাল।

রবিনের মা আম্মুকে কোন কাজই করতে দিচ্ছে না। তারপরও আম্মু সমস্ত ঘর পরিষ্কার করলো। দেখলাম আম্মু যে রুমে থাকতো সেখানে গিয়ে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। আর তখনি আমার হৃদয়টা শকড করে। বিরুদ্ধে দাঁড়াতে মন বিদ্রোহ করে আব্বু নামক লোকটার। বিদ্রূপ করে বলতে ইচ্ছ করে আমার আম্মু পৃথিবীর সেরা। আর কারো আমার সৎ মা হওয়ার যোগ্যতা নেই। আমি পিছন হতে আম্মু ডাক দেওয়ায় চমকে উঠে নিজেকে সামলে নেয়। বলে একটু আধটু খারাপ লাগার কথা। তোমাকে ছোট থাকতে নিয়ে আসলে তুমি পুরা রুমে খেলা করতে। আর এখন সেই রুমে অন্য জনের বাচ্চা—–। মা জলি তুমি কেন এইসব পরিষ্কার করতে গেলে। দাদি হয়তো বুঝতে পারে আম্মুর খারাপ লাগছে। আম্মুও দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় এবং বলে আপনি একা তাই একটু দেখছি আম্মা।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৭ম পর্ব।

আম্মুর জন্য এখানে কষ্টকর এবং অপমানজনকও বটে। তারপরও এসেছেন শুধু দাদি আর আমার জন্য। আম্মুকে পেয়ে দাদি যেমন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন তেমনি আমিও গ্রামে দাদির কাছে আসতে পারায় দেহ মন আন্দোলিত। আসলে একটা সাজানো গুছানো বাগান বিনা দোষে বিনাশ হলে কষ্ট লাগারই কথা। আম্মু ভাবেন কোথায় উনার ঘাটতি ছিল, ভালোবাসার কমতি ছিল কিনা। কেন আব্বুর হঠাৎ পরিবর্তন হলো, হয়তো তাঁর মনে লোভ এসে গিয়েছে। কানাডার নাগরিকত্ব আব্বুকে মোহাবিষ্ট করছে এই হবে প্রধান কারণ। এই বাড়ির এই ঘরের প্রতিটি ইট বালু আম্মুর অনেক অনেক পরিচিত। অথচ এখানে এখন একজন পরিচয়হীন ও অপ্রয়োজনীয় মেহমান। এই হতাশা হৃদয়ের মাঝ হতে ঝর্ণা হয়ে প্রভাবিত হচ্ছে কষ্ট নামক সাগরে। কিন্তু আমরা বুঝতেছিনা আর উনি বুঝতে দিচ্ছেন না। কারণ আম্মু এসেছেন দাদির আনন্দের জন্য, আম্মুর কষ্ট প্রকাশ করলে দাদি দুঃখ পাবে। আসলে ঝর্ণা সুউচ্চ পাহাড় হতে নিচে পড়ে বয়ে যায় সাগরে আর আমরা সেই ঝর্ণায় গোসল করে আনন্দ উপভোগ করি কিন্তু এই ঝর্ণার কষ্টও থাকতে তা কি কখনো অনুধাবন করার চেষ্টা করি, না করি না। আম্মু চেষ্টা করেন নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানোর জন্য। তাই রবিনের মা আসলে আম্মু তাকে অন্য কাজ করতে বলে। রবিনের আব্বু এসে বাজার হতে সব সওদা করে দিয়ে যায়। আরো কয়েকজন চাচা ও চাচী এসেছে দাদির খোঁজ নিতে। তারা আম্মুর সাথে অনেক আলাপও করে। বার বার দুঃখ প্রকাশ আব্বু কেন এটা করলো। এতে বুঝা যায় গ্রামের অভাবী মানুষ খাওয়ার খোঁজ করলেও ভালোবাসা খোঁজে না। স্বামী সন্তান নিয়ে খুপরিতে ওরা সুখের অট্টালিকায় থাকে।

আমি আর রবিন তার গ্রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়াই মাঠে ঘাটে। কখনো পুকুর পাড়ে আবার কখনো নদীর ধারে। ভুলে গিয়েছে আমি একজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। মাঝে মাঝে পথচারী এমনভাবে তাকায় যেন খেয়ে ফেলবে। মেম্বার চাচা দুই/একজনকে বলেছেও শহরের মেয়ের শরম নাই। হাদিস কোরান পড়ে না। তাই তারা বেহায়া, দুইদিন জন্য আসছে গ্রামে তাই একটু তিড়িং তিড়িং করে। আমি গ্রামের সবুজ শ্যামল রূপ দেখেই অভিভূত। চারিদিকে বাড়িঘর সবুজ সতেজ গাছপালার ভিতর বিস্তীর্ণ মাঠ। মুগ্ধ হয়ে গান গাই“এমন দেশটি কোথাও তুমি পাবে নাকো খুজে”। একদিকে ধান কাটার ধুম আরেক দিকে শাক-সবজি লাগানোর মৌসুম। কৃষকদের ফুসরত নেই এখন বসে থাকার। রবিনের বাবা দিন হিসাবে কাজ করে, একদিনও বেকার থাকে না। যখন যে কাজ থাকে তখন সেই কাজ করে, কখনো তামাক জমিতে আবার কখনো সবজি জমিতে। চাচা একদম সহজ সরল অমায়িক মানুষ। বেশী চাওয়া পাওয়ার নাই দুইবেলা বউ বাচ্চা নিয়ে দুইটা ডাল ভাত খেতে পারলেই চলে মা। এই সব লোকের অট্টালিকা গড়ার দৌড়ে নেই বলে এবং পরিমিত চাহিদার কারণে সুখ তাঁদের কাছে থাকে।

দাদির জন্য হেমন্ত কাকা দুধ নিয়ে আসে। আমাদের গ্রামের কয়েকটা বাড়ি পরে উনার বাড়ি। হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে এই গ্রামে বাস করে। দাদিকে বলে চাচী মেহমান আসবে কেন বলেন নাই। দুধ বেশী করে নিয়ে আসতাম। দাদি বলে ওরা আসবে এইটা আমি নিজেও জানতাম না বাবা। তোমার মা কেমন আছে। তাকে বলো একবার আসতে তাহলে আমার বউমার সাথে দেখা হবে। চাচী মা দুধ নিয়ে আসতে চায় আমি বারণ করি। মা বলে আপনার বাড়ি কয়েকদিন না আসলে, আপনাকে না দেখলে মন চটপট করে। বলে মাহিনের মা একা দেখে আসা ভালো। হুম তোমার মা আর আমি বয়সেও তেমন পার্থক্য হবে না। কোন দিন কোন মরে যাই বলা যায় না। মার দেখাশুনা করিও বাবা, ঔষধপত্র লাগলে বিরক্ত হয়ে যেও না। টাকাপয়সা লাগলে আমাকে বলবা। বাবা নাই মা আছে, তার সেবায় কমতি হয় না। আর চাচী অনেক দিয়েছেন আপনি। এই গ্রামে সবাই জানে আপনার কাছে সাহায্য চেয়ে খালি ফিরে যায় না কেউ।

আমাদের গ্রাম হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। অন্য ধর্মের লোক নাই এখানে। যে যার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে নিজের পছন্দমত। দাদির জন্য অনেকে খই চিড়া ও মুড়ি নিয়ে আসে হিন্দুদের আচার-অনুষ্ঠানের। রাজনৈতিক বিবাদে জড়ানো কয়েকটা মুসলিম ছেলে যেমন আছে তেমনি হিন্দুও আছে। এদের কারণে মাদক মুক্ত নয় গ্রামটা। তবে আমি এদের বিরুদ্ধে একটা মতবাদ গড়ে তোলা দরকার মনে করি। মহাজনেরা তামাক চাষে লাভবান। তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে গ্রামে মাদক বিক্রি করে স্থানীয় যুবকদ্বয়। আর এতে লাভবান ওইসব নেতাগণ।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৮ম পর্ব।

বিড়ি সিগারেট প্রকাশ্যে বেচাকেনা হয় এইটি নিম্নতর মাদক। গাজা, ফেনসিডিল এবং ইয়াবা কিছুটা চোরাচুরি ভাবে বিক্রি হয়। খরিদ্দার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের যুবক। হিরোইন সবচেয়ে দামি মাদক। আর এর খরিদ্দার বড়লোকদের বখাটে সন্তান। চোরাচালান ও মাদক এরা আপন দুই যমজ ভাই। যেসব লোক মাদক ব্যবসায় জড়িত তারা আবার অনেকেই পণ্য চোরাচালানেও জড়িত। বাংলাদেশের অনেকটা সীমানা জুড়ে ভারত এবং সামান্য একটুই সীমানা মায়ানমারের সাথে। কিন্তু আচার্য হল সীমান্তের মানুষ মাদকের কারবার করলেও তারা পুরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কিংবা রাজধানী পর্যন্ত এই মাদক পৌছে দিতে পারে। কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্ন আসা অবান্তর নয়। বুঝা যায় ক্ষমতাবান এর সাথে জড়িত। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটা ইয়াবা সেবন করে নিজেকে মেধাহীন করে ফেলছে। নিয়মিত নেশা করার জন্য টাকা জোগাড় করতে মা বাবা আদরের মেধাবী সন্তান অস্ত্র হাতে ডাকাত হয়ে যায়। কিন্তু রাঘব বোয়াল এর সন্তান এই মাদক বিক্রির টাকায় বিদেশে নামকরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। আমরা বেহুঁশ আমজনতা সেই নেতা সেই সরকারী কর্মকর্তার কথায় উঠবস করি। নিজের ক্ষতি করে ক্ষমতাবানদের পুজা করি সামান্য লোভে পড়ে। আপনি শত সন্তানের মেধা ও মনন ধ্বংস করে যে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জল করতেছেন, তাই মনে রাখবেন শেষ বয়সে আপনার জন্য বৃদ্ধ আশ্রম অপেক্ষা করছে। কারণ “যেমন কর্ম তেমন ফল”।

চাচা কেমন আছেন। রবিন কেন আসে নাই। ভালো আছি মা। তোমার চাচী আর রবিন বেড়াতে গিয়েছে। তাই তোমার দাদিকে বলতে আসলাম। আচ্ছা, আমি রবিনকে বলেছি আমি যতদিন থাকবো গ্রামের ছোট ছেলেমেয়ে সবাইকে সকালে বাড়িতে পড়াবো। যাতে তারা ভালো করে পড়ে স্কুলে।

মা এই কথাতো জানলে আমি তাকে যেতে দিতাম না। ঠিক আছে দুই/ এক দিনে আর অসুবিধা হবে না। আপনি ফোন করে বলে দিবেন চলে আসতে। ঠিক আছে মা। রবিনের মা আজ আসবে না চাচী। কেন, কোন অসুখ হলো নাকি। অনেক কাজ করে। না চাচী অসুখ না, বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। মন হয় সে অন্য কাউকে বলেও গিয়েছে আপনার জন্য আসতে। যাতে রান্নার কাজে অসুবিধা না হয়। আরে কি যে বলো, আমার বউমা আসায় আমার শক্তি বেড়ে গিয়েছে। আমি নিজেই সব করতে পারব হ্যা চাচী দেখতে পাচ্ছি। ভাবী অনেক ভালো মানুষ। তাই কপাল ভালো আপনার মত শাশুড়ী পেয়েছে। যে ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে। আমার মেয়ের অভাব ছিল সেটা জলি মা পূরণ করছে। তার মত বউমা পাওয়া এখন কঠিন। ভাবী কোথায় দেখছি না যে। প্রতিদিন আসলে এসেই ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করতো। মনে হয় ব্যস্ত আছে। হ্যাঁ কাজে ব্যস্ত আছে।

আগে খাল খনন করতো মানুষে। এখন খনন করে বুলড্রোজার দিয়ে। যাই হোক প্রমাণ হয়েছে খাল খনন ভুল ছিলো না। এইটি অত্যন্ত জরুরী আমাদের দেশে। খননের ফলে শীতকালে মিঠা পানি জমা থাকলে কৃষি কাজে সেচ দেওয়া যায় তেমনি বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির জল কিংবা বন্যার জল তাড়াতাড়ি নেমে যেতে পারে। শীতকালে শাকসবজি চাষে এখন সেচ সুবিধা আছে বলে কৃষক নিশ্চিত মনে চাষাবাদ করতে পারছে। কিন্তু একটাই সমস্যা তা হলো ন্যায্য দাম পায় না বলে কৃষক পেরেশান। এই সমস্যাও অদূর ভবিষ্যতে থাকবে না। শুধু শুভ চিন্তক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দরকার। যে কৃষক, শ্রমিক দুঃস্থ মানুষের কথা সরকারের উচ্চ পর্যায় পৌঁছে দিবে এবং তিনি ভক্ষক নয় রক্ষক হবেন।

খাল কাটার মাটি, এইটাতেও রাজনীতি, এটাতেও টাকার খেলা। শক্তিধর রাজনৈতিক নেতা আজ বালু খায়, মাটি খায়, নিরীহ ও গরীব লোকের রক্ত খায়। খালের পাড়ে রাখা মাটি নিয়ে রাজনৈতিক দলের দুই গ্রুপে একবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। শক্তিধর গ্রুপ দখল করে মাটি। আগে খালের পাড়ে জায়গার মালিক খাল কাটা মাটি নিজের প্রয়োজনমত ব্যবহার করতো। এখন আর সেই দিন নাই। এখন মাটি জায়গামত জমা করে ইট ভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করে দলীয় লোক। এই মাটির দখল নিতে নিজ দলে চলে যুদ্ধ। যে জিতে সেই খায় মাটি।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৯ম পর্ব।

অথচ আজ না হয় কাল এই মাটির নিচেই যেতে হবে। আর আজ মাটি বিক্রি করে খেতে রক্তপাত। যার কিছুই নেই সেও চুরি করে, আবার যার অনেক কিছু আছে সেও আরো বেশী সম্পদ করার জন্য চুরি করে। আজব দুনিয়া। এই যেন এক প্রতিযোগিতা চুরির। তবে ছোট চোর বড় চোরের কাছে পরাজিত হয়। কারণ বড় চোরদের আছে আলিশান বাড়ি, দামী গাড়ি, কাঠি কাঠি টাকা হোন্ডা ও গুন্ডা। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে যাদের কোন প্রচার নাই। শত শত ভালো লোক আছে নীরবে নিভৃতে। এক জনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আগের দিনের পুরাতন কথা।

থানায় নতুন ওসি বদলি হয়ে এসেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সে আসনের এমপি সাহেবের সাথে দেখা করতে ওসি উনার বাড়িতে গেলেন। ওসি যখন এমপি সাহেবের বাড়ির উঠানে পৌঁছলেন তখন দেখলেন এক মধ্যবয়সী দাড়িওয়ালা লোক একটি গাভীকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন ! তখন ওসি সাহেব ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন এমপি সাহেব বাড়িতে আছেন কিনা? তখন ঐ মধ্যবয়সী দাড়িওয়ালা লোকটি ওসি সাহেবের কাছে এসে বললেন তিনিই এই আসনের সংসদ সদস্য। ওসি সাহেব তো রিতিমতো হতবাক ! যেখানে ওসির ধারণা ছিল এমপি সাহেব আলিশান বাড়ির খাস কামরায় দলীয় নেতা কর্মী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবং নেতা কর্মী নিয়ে মার্সিডীজ, প্রাডো, দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে সরকারী টাকায় ঘুরে বেড়াবেন। সেখানে এই এমপির সাধারণ জীবন যাপন সত্যিই ওসি কে চমকিয়ে দিয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা আশাশুনি আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাওলানা রিয়াসত আলী। যিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।

ওয়ান ইলেভেনের পর আর্মি আতংকে যেখানে রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন এই মানুষটি আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার নামে কোন দূর্নীতি আছে কিনা। উনি মারা যাওয়ার পর প্রচার বিমুখ এই নেতার মৃত্যু সংবাদটিও কোন মিডিয়া প্রচার করে নাই। দেশ যখন অসৎ, চরিত্রহীন, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতায় ভরে গেছে সেখানে রিয়াসত আলীরা সততা, সরলতা, নিষ্ঠা ও চরিত্রের মাধুর্যের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন চুপিসারে, সবার অগোচরে। এমন নেতাই এই দেশে বেশী প্রয়োজন। তাই তিনি অনেকের মধ্যে একজন হয়েও অনন্য, অতি সাধারণ হয়েও অসাধারণ।

আরো অনেকই আছে যাদের আমরা চিনি না। যাদের কথা প্রচার হয়নি। এইসব লোকের ভালো কাজ প্রচার হয় না কখনো। তাঁদের লক্ষ্য থাকে মানব সেবা। মনে থাকে সৃষ্টিকর্তার ভয়। তারা মনে করে আজ না হয় কাল মরতে হবেই। তাহলে সামান্য লোভে পড়ে কেন বদনাম ও বদদোয়া কাঁধে নিবো। অথচ অন্যরা নিজে ভোগ করার চিন্তায় রত।

কোপাকোপির লড়াইয়ে জিতে যাওয়া পক্ষ মাটি বিক্রি করে দেয়। জায়গার মালিক নীরব দর্শক। কিছু টাকা হয়তো ইঞ্জিনিয়ার এবং বুলডোজার চালক পায়। মাটি সরবরাহ করে ট্রাকে করে। গ্রামের মাটির রাস্তা নষ্ট হয়। ধুলাবালিতে নষ্ট হয় পরিবেশ এবং বাড়ি ঘর। বাড়ির সামনে খেলাধূলা করতে বাহির হয়ে মাটির ট্রাকে চাপা পড়ে সুজন মিয়ার ছয় বছরে ছেলেটা। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার। সন্তান হারানো মায়ের কান্নায় গাছপালা নীরব হয়ে যায়। নীরব থাকে আকাশ, নীরব থাকে বাতাস। চোখ বুজে জল ফেলে মহামালিক। ভয়ে পাথর হয় এলাকাবাসী। শকুন চিৎকার করে মধ্য আকাশে। কিন্তু মাটি সরবরাহ বন্ধ হয় না। আমি ভাবী গ্রামে মানুষ নেই হয়তো। না আমার ধারণা ভুল হয়। তিন দিন পর সন্তান হারানো বাবাকে ডাক দেয় সমঝোতা করার জন্য। একজন দারোগাবাবু পরিপাটি হয়ে বসে কিছু গ্রামের টাউট বাটপাড় নিয়ে। বৈঠকে চলে কথার ফূলঝুড়ি। দারোগা সাহেব ঘোষণা দিলেন বাচ্চার বাবা পাবে ষাট হাজার টাকা। ঘোষণার সাথে সাথে মানুষ উঠে যায়। শকুন একদলা বিষ্ঠা ফেলে নেতার মাথায়। সিদ্ধান্ত পাক্কা জীবনের মূল্য ষাট হাজার। আচ্ছা টাকায় ওজন হয় জীবন। এ কেমন জীবন।

মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
১০ম পর্ব।

শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় নিরীহ মানুষদের উপর অত্যাচার চলে আসছে। যুগ যুগ ধরে এই অবিচার যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেখার কেউ নাই, বলার কেউ নাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকে গরীব হতে ধনী হয়ে তাঁর অতীত ভুলে বসে আছে। যে কোন পথে হোক ভাগ্যের জোরে ধনী হয়ে সে যেন এখন আকাশে বাস করে। আস্তে আস্তে মায়া শব্দটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে কারণ মানুষের মন হতে মায়া বিলীন হচ্ছে বলে। বিপদে পড়লে ধনীরা এখন গরীবদের তিরস্কার করে সাহায্য করার ভয়ে। সন্তান বৃদ্ধ মা বাবাকে বোঝা মনে করে এড়িয়ে চলে। শিক্ষা মানুষকে চাকরীমুখী করছে ঠিকই আত্মার বিকশিত করছে না। ধর্ম নিরীহ হয়ে এক জায়গায় পড়ে থাকছে। ধর্ম মানুষের জীবনে কোন প্রভাব ফেলছে না। অথচ আমরা আত্মসম্মানবোধ মানুষ যা জ্ঞান গরিমায় নিজে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। আমরা ধর্মকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করি। চীন গিয়ে হালাল খাবার খোঁজ করি। অথচ চীন যাওয়ার উদ্দেশ কিন্তু নামী এবং দামি পণ্য নকল করা।

আর নকল পণ্য বিক্রি করে কোটি টাকা রোজগার করে বিদেশে পাচার করি। এখানে ধর্ম এবং বিবেক অকেজো। কিন্তু নিজেকে সমাজে সাধু গুণী এবং সম্মানিত করার জন্য ধর্মের লেবাস ধারণ করে অনেকে। এইখানে সে নিজের বিবেককে প্রতারিত করে নিজেকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বনে। তবে সময়ের সাথে সাথে সাধারণ জনগণ বুঝতে শিখছে। নিজে পড়াশোনা না করলেও সন্তানদের পড়াশোনা করাতে বদ্ধপরিকর। সরকার অনেক চেষ্টা করতেছে মানুষকে শিক্ষিত করতে। তাই বৃত্তি উপবৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনই নয়-ছয় করে এইসব বৃত্তির টাকা পয়সা নিয়ে। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে কিছু বলা মুসকিল। এইসবের সাথে আবার জড়িত থাকে অসাধু শিক্ষক।

কিছু স্কুল শিক্ষক আর মাদ্রাসার শিক্ষক আছে একদম নীতিহীন। এরা এতই নৈতিক বর্জিত যে ছোট ছোট বাচ্চাদের যৌন কাজে বাধ্য করে। অথচ এদের ঘরে বউ বাচ্চা সব থাকে। এদের যৌন কামনা এত বেপরোয়া যে শিক্ষাকে পুঁজি করে বাচ্চাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তারা এতোটা হিংস্র যে ভুলে যায় যে তাদের বউ বাচ্চার চেহারা। ধর্ম যেখানে মানুষকে নমনীয় হতে শিখায়। সেখানে মৌল্লারা হয়ে পড়ছে ধর্ষক হিসাবে। এদের বিরুদ্ধে মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষকে লড়তে হবে, মানুষ লড়তে না পারলে স্বয়ং ঈশ্বরকে লড়তে হবে। এই জঘণ্য সমাজ আমাদের হতেই পারে না। যে কোন মুহূর্তে যে কোন কেউ এদের শিকারে পরিনত হতে পারে। এছাড়াও এখন অসৎ চরিত্রের কিছু মহিলা গ্রামের গরীব সুন্দরী মেয়েদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করছে। আবার এইসব মহিলা এত ক্ষমতাবান যে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে। কারণ এদের উপর আর্শীবাদ থাকে জাতীয় নেতাদের। গ্রাম কিংবা শহরে এই ভয়ানক কাজ সমানতালে হচ্ছে। মিডিয়ায় যা আসছে তা আমরা দেখতেছি। মিডিয়ায় না আসা দ্বিগুণ ভয়ানক চিত্র আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। সমাজটাকে ভেঙ্গে মেরামত করা দরকার হয়ে পড়েছে। না হয় বিধাতা কাউকে ক্ষমা করবেন না। মরণের পর যদি প্রশ্ন করে তোমার সমাজে এত অনাচার হয়েছে তুমি কেন প্রতিকার করতে চাওনি, তখন নিজেকে অপরাধী মনে হবে। তখন জবাব দেওয়ার কিছুই থাকবে না। অন্যায়কারী আর অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া সমান অপরাধী।

(কখন বুঝবে একটি দেশ ও সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে, যখন দেখবে দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে, মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং শাসকেরা মিথ্যা বলছে।
———— হযরত আলী (রাঃ) ।)

আম্মু তোমার একটা কাজের মেয়ে দরকার বলে ছিলে। আমাদের পাশের বাড়ির শিউলীকে নিয়ে চলো। আমি তাকে চিনি না। আসতে বলো কথা বলে দেখি যায় কিনা। ভালো মন্দ কথা বলেতো বুঝবো। আম্মু তুমি দাদিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। আচ্ছা ঠিক আছে তোমার দাদি গিয়ে কথা বলবে। তবে আমি বলেছি তাকে পড়াশোনা করতে হবে। তাহলে বাসার কাজ কে করবে। আমার কাজের লোক দরকার। পড়াশোনা লোক দিয়ে করবো। আমি একজন কথা বলার লোক পাবো আম্মু। তুমি সারা দিন বাসায় থাকো না আমি একা একা। আচ্ছা ঠিক আছে তোমার দাদি কথা বলে দেখবে। দাদি নবী চাচার মেয়ে শিউলীকে চিনো তুমি। কেন চিনতে হবে। কি ব্যাপার, কি হয়েছে শিউলীর। আমি তাকে আমাদের সাথে ঢাকায় নিতে চাই। বাসায় কাজ করবে আবার পড়াশোনাও করবে। সে যাবে কিনা সন্দেহ আছে। আরো ছোট মেয়ে হলে ভালো হয়। তাকে তার বাপও যেতে দিবে না।
যেতে দিবে দাদি, তুমি কথা বলো তাদের সাথে। বাসায় খরচ বেড়ে যাবে, তোমার আম্মুর কষ্ট হবে। তার পড়ার খরচ, খাওয়া দাওয়া আবার মাস শেষে কিছু টাকাও দিতে হবে। না, অনেক খরচ মৌরি। দাদি তুমি দিয়ে দিবে মাসিক টাকাটা। তা আম্মু জানতে হবে না। আব্বু যে টাকা পাঠায় তা হতে দিবে। কিন্তু জলি জানলে প্রচন্ড রাগ করবে। অবশ্যই বলতে হবে তাকে আমি তার সাথে কোন লুকাচুরি করতে পারবো নারে মৌরি। সে আমার আত্মা। সে ভুল বুঝলে আমার অনেক কষ্ট লাগবে।
আচ্ছা ঠিক আছে।

বউমা জলি এদিকে আসো মা। মৌরি কি বলে। জ্বী আম্মা, আমি মৌরিকে একদিন বাসায় বলে ছিলাম। একটা কাজের মেয়ে পেলে ভালো হয়। এখন সেটার বায়না ধরেছে। কথা বলে দেখেন। ঠিক আছে কথা বলে দেখি যায় কিনা। কিন্তু মৌরি বলে কি পড়াশোনাও করবে। আবার মাসিক বেতনও দিতে হব ‘এতে বাসার খরচ বেড়ে যাবে মা।
সমস্যা হবে না আম্মা। মৌরি একা একা বা- -সায়। (চলবে )।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১১তম পর্ব ।

আমি একটা ছোট মেয়ে চেয়ে ছিলাম । আমার কাছে গিয়ে যেন সব কিছু শিখে এবং জানে , কথা শুনে । শিউলী বড় মেয়ে । তোমার কথা শুনে হয়তো রাজি হয়েছে । না হয় দিতো না । গরীবের সন্তানও আদরের মৌরি কথা বলেছে তাই সে এসে বলতেছে আমাদের। আম্মা আপনার অনেক কাপড় , কিছু কাপড় গরীবদের দিয়ে দিবেন । সব কাপড়ই শেষ পর্যন্ত নষ্ট হবে। আর এইগুলি আপনি পরেন না কেন , পরবেন । আমি কোন দিন একটু বের করেও দেখি নাই কাপড় গুলি। অনেক নতুন কাপড়ের প্যাকেটও খুলে দেখিনি তাইতো দেখছি । এই যে এইটা কিছু দিন আগে আমি পাঠিয়ে ছিলাম। আর আপনি প্যাকেট সহ রেখে দিয়েছেন । কে আছে আপনার এই কাপড় পরবে যে। আমি আজ সব বাহির করে রোদ লাগতে দিয়ে দিব। আমার এত হুশ আছে মা জলি , যে কাপড় দেখবো। আম্মু দাদির একটা শাড়ি আমি নিয়ে যাবো । যখন দাদির কথা মনে পড়বে তখন শাড়িটা আমি পরবো। তাই , আহরে হৃদয়ের টুকরা । আমার কাছে আসো বোন হাজার আদর দিবো তোমার কপালে , আসো । মা জলি , তোমার মন খারাপ হলে কখনো মৌরিকে বকা দিও না । আমি যখন বুঝি তুমি মৌরিকে বকা দিয়েছো তখন আমারও মন খারাপ হয় । মানুষের দোষে আমরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকছি কিন্ত হৃদয়টা তো অভিন্ন। শুন মা জলি , এখানে একা থাকতে আমার খুব কষ্ট হয় । রাত হলে সেই কষ্ট এবং সাথে ভয় দ্বিগুণ হয় । আমার কিছু দরকার হলে কেউ নেই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেওয়ার । আজকাল মনে হয় ঘুমের মধ্যে মরে যাবো । কাজের লোক আসলে দেখবে আমি মরে আছি । কিন্তু তোমরা কেউ হয়তো খবরও পাবে না । অথচ তোমরাই আমার সব।
আম্মা আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমাদের — আমিও ভাবছি তা । তবে একটা কথা তুমি রাখতে হবে । আমি কখনো মাহিনের সাথে যোগাযোগ করতে চাই না । তাহলে সে আর ফোন দিবে না । আস্তে আস্তে আমাকে ভুলে যাবে আমিও ভুলে যাবো । তা কি করে হয় আম্মা । মৌরি যখন কথা বলবে তখন আপনিও কথা বলবেন , আচ্ছা এখন এইসব কথা বলা থাক । আপনি যাবেন কিনা বলেন । মৌরি এখানে আসো মামনি কথা শুনো , তোমার দাদিকেই আমরা নিয়ে যাবো । অনেক ভালো হবে তাই না । সত্যিই কি দাদি আমাদের সাথে যাবে , দাদি বলো । হ্যা যাবো , এখন গ্রামে ঘুরাঘুরি কম করো মৌরি ।
তোমার দাদিকে নিয়ে একটা চিন্তায় ছিলাম । এখন হতে চিন্তামুক্ত , এবং তোমাকে নিয়েও আর চিন্তা হবে না । তুমি দাদির সাথে সময় কাটাতে পারলে মন ভালো থাকবে এতে পড়ালেখাও ভালো হবে । আমি এমনিতেই অনেক পড়ি আম্মু । আমি অর্নাসে সব সেশনে প্রথম ক্লাস পাবো দেখবে , দোয়া করো।তোমরা মা মেয়ে ভালো থাকলে আমি মরেও শান্তি পাবো । তোমার আব্বুর সাথে এইসব বলার দরকার নেই । সে দেশে এসে তার জমিজমা দেখবে আমি আর এইসবের মধ্যে নেই । আমি তোমাদের সাথে থেকে নামাজ কালাম করে শান্তিতে মরতে পারবো । দাদি আব্বু তোমার ফোনেই সবসময় কথা বলবে । তা ঠিক আছে , তাকে আমার জন্য অবশ্যই টাকা পয়সা ঠিকভাবে দিতে হবে । তাই সে ফোন করবেই। এইবার আমার জন্যও টাকা দিতে বলবেন । আমার পড়ালেখায় অনেক খরচ । বই খাতা যাতায়াত ভাড়া। আব্বু কেন কোন দিন আমার খরচ দিতে চায় না । তা বুঝি না । আমি কি ছোট বাচ্চা মেয়ে নাকি যে টাকা পয়সা লাগে না । আপনি আব্বুকে বলে দিবেন যেন আমার জন্য টাকা পাঠায়।আমি আর চুপ থাকবো না
আসছো তুমি রবিনের মা । তোমার মা বাবা কেমন আছে । আজ কয়েকটি দিন আমার বউ মা সব কাজ করলো । রবিন না থাকায় মৌরির ঘুরাঘুরিও বন্ধ । জ্বী চাচী আসলাম , সবাই ভালো আছে । আপনারা? ভালোই এখন দিন যাচ্ছে । কিন্তু এরা চলে গেলে একা হয়ে যাবো । তারা বলতেছে ঢাকায় চলে যেতে । গেলে যে বিভিন্ন সামাজিক অসুবিধা সামনে আসে । আমিও চাই চলে যেতে । কিন্তু মাহিন একদম মেনে নিবে না। চাচী গেলে যে ভালো হয়। মাহিন ভাইকে বুঝিয়ে বলেন , একা একা রাত – বিরাত কত আপদ বিপদ হতে পারে । এখনো আল্লাহ ভালো রাখছে । হ্যা লাখ লাখ শোকর আল্লাহর দরবারে । আমি ঢাকা গেলে মৌরির জন্য ভালো হবে । কথা বলার লোক পাবে । তার মন ভালো থাকবে কিন্তু আমার যে উপায় নেই । শেষ বয়সে ছেলেটা যদি ভুল বুঝে । আচ্ছা থাক এইসব কথা , তুমি শিউলী এবং তার মাকে আসতে বলবে । তাদের সাথে কথা আছে । আচ্ছা চাচী বলবো আসতে , কি ব্যাপার হঠাৎ করে। মৌরি শিউলীকে সাথে করে ঢাকায় নিতে চায় । মেয়েটা সুন্দর , পড়ালেখা করে । ভালো পারে পড়া । আমিও শুনছি পড়ালেখায় ভালো । ঢাকায়ও পড়বে। তার মা বাবা রাজি হলেতো ভালোই হয় । এমন ভালো লোক কোথায় পাবে, জলি ভাবী খুব ভালো মানুষ । আমিও বুঝিয়ে বলবো চাচী যেন যায় ঢাকায় (চলব)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১২তম পর্ব ।

চাচী আপনি নাকি আমাদেরকে আসতে বলে ছিলেন হ্যা বউমা । কি খেয়েছো কি রান্নাবান্না করেছো আজ। মা রান্না করে আজ পাঠিয়েছে । সবাই ওটা খেয়েছি । তাহলে দুপুরে আর রান্না করতে হয়নি । ঝামেলা হতে বেঁচে গিয়েছো । জিনিস পত্রের যে দাম মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে । টাকার কোন দামই নাই। মানুষের আয় বাড়েনি কিন্তু ব্যয় বেড়েছে । চাচী আমরা গরীব মরবো বড় লোক আরামে আছে। আচ্ছা শুনো আমি তোমাদেরকে ডেকেছি একটা কথা জানতে , মৌরি আমার নাতনী সে শিউলীকে তাদের সাথে ঢাকা নিতে চায় । স্কুলে পড়বে আবার টুকটাক কাজকর্মও করবে । এখন তোমাদের কি মনোভাব ? মৌরি মা বলেছে আমাকে । শিউলী যেতে রাজি তার বাপও শুনছে কিছু বললো না । আপনাদের কাছে আমার মেয়ে থাকবে এতে আমার অমত হবে কেন। তাহলে তার বাবাকে ন্টি মন খারাপ হবে না । মৌরি আপু আমাকে পড়াবে দেখবে । আমি ভালো থাকবো ইনশাল্লাহ ।
সকালে জানালার পর্দা সরিয়ে সুর্যের সোনালী আভা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। নারিকেল গাছের চিকন পাতা আটকাতে পারেনি সুর্যরশ্মি । চিকন চিকন পাতার ছায়া আমার মুখে পড়ে আমি হাত দিয়ে ধরতে চাই ছায়াকে , আজ যেন সুখ সুখ মন উদাসী নয়ন । লেমন ফ্লেভার গ্রীন টিতে চুমুকে সতেজ হবে আমার দেহ মন। হাঃ হাঃ দাদির কাছে কোথায় পাবে গ্রীন টি।
বিছানা হতে উঠতেই মন চাইতেছে না আজ । অলসতা চেপে ধরেছে আমাকে । এক লাইনে কয়েকটা ফলের গাছ আছে । সবটি গাছ ফল শূন্য । শীতকালে টাটকা শাকসবজির মৌসুম । গরম কালের বৈশাখ জৈষ্ঠ এই দুই মাস মধুমাখা মুধ মাস । তাই প্রকৃতির খেয়ালে জামরুল গাছ , আমড়া গাছ এবং লিছু গাছ ফল শূণ্য , শুধু পাতাই বহন করছে গাছ। এইসব ফলের গাছ কয়েক বছর আগে আব্বু লাগিয়েছে । আসলে কত ভাবে মানুষের স্মৃতি চিহ্ন আটকে থাকে । শীত কালে গাছপালা রূক্ষ শ্রীহীন হয়ে যায়। ঠিক তেমনি আব্বুর স্মৃতিও । কিছু টাকা দিয়ে আর বাবা মেয়ের ভালোবাসার লেনদেন হয়। আব্বু যেন একটা পোষা প্রাণী লালন পালন করছে । ফোনে এক পান্ত হতে ভেসে আসে কিছু তীক্ষ্ণ রূঢ় দায়হীন প্রশ্ন । কেমন আছো , পড়াশোনা কেমন চলছে। আমি উত্তর দিই শ্রদ্ধাশীল হয়ে যা আমাকে কাঁদায়। লিছু গাছে প্রচুর পাতা আর আমড়া গাছ একদম পাতা বিহীন । লিছু গাছটা আব্বু আর আমড়া গাছটা আম্মুর মত। আব্বুর জীবনটা ভরপুর আর আম্মুর জীবনটা শূণ্য । এবং খুবই নরম কয়েকটি শাখা প্রশাখা দ্বারা জড়ানো । একটু বাতাস আসলে ভেঙ্গে যাবে । তাই আমি শুধু আম্মুর ।
কে ফোন দিল দেখোতো দাদিমা। বলো আমি আসছি
দাদি আব্বু ফোন দিয়েছে । আমি কথা বলবো না।
হ্যালো মাহিনঃ কেমন আছো তুমি। এতদিন পর ফোন
আসসালামুলাইকুম আম্মা । আমি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন । আপনি ফোন ধরছেন না আজও । আপনি ফোন ধরতে দেরি করেন কেন । আরে বাবা কাজে ব্যস্ত থাকি কখনো কখনো । এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই । একা একা আর কত । আম্মা আর একা থাকতে হবে না । আমি আগে বলে ছিলাম আপনাকে যে, আমি চেষ্টা করতেছি আপনার ভিসার জন্য যাতে আপনাকে কানাডায় নিয়ে আসতে পারি। কয়েক দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে । আমি আসবো দেশে মৌরিকে দেখেও আসবো , আপনাকে নিয়ে আসবো । আর অল্প কয়েকটা দিন কষ্ট করেন । আচ্ছা ওইসব কথা পরে বলবো । টাকা পাঠাও এখন ঠিক আছে পাঠাবো । আপনি মানসিক প্রস্তুতি নেন।
আল্লাহ হাফেজ । ভালো থাকবেন ।
মৌরি কিছু দিনের মধ্যে তোমার আব্বু আসবে দেশে । বললো আমাকে নিতে আসবে । ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার খবর দাদি । তুমি কানাডায় চলে যাবে । আম্মু আম্মু সুখবর শুনে যাও । দাদি কানাডায় চলে যাবে । তুমি দাদির জন্য আর চিন্তা করতে হবে না । থামো মা । কি হয়েছে ধীরস্থির হয়ে বুঝিয়ে বলো। আব্বু একটু আগে ফোন দিয়ে ছিলো দাদিকে । বলেছে যে দাদির কানাডার ভিসা হচ্ছে । আব্বু নিয়ে যেতে আসবে । কি মাদার খুশির খবর না এটা । অবশ্যই খুশির খবর। মা ছেলের কাছে থাকবে যত্নে। (চলবে) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৩তম পর্ব ।

আমরা চলে যেতে হবে মামনি । অনেক দিন বেড়ানো হলো। তোমার দাদি আর আমাদের সাথে যাবে নাকি। আমিও চলে যেতে যাই । দাদি কানাডায় চলে যাবে শুনে আর এখানে থাকতে একদম মন চাইতেছে না । মামনি পৃথিবীতে আমরা সবাই একা খুবই খুবই একা।আমার পাশে একদিন সব ছিল আজ শুধু তুমি আছ।জীবনের প্রয়োজনে তুমি হয়তো একদিন থাকবে না। হয়তো আমি নিজেও না থাকতে পারি ,সবই বিধাতার হাতে । মেয়ে মানুষ নিজেকে কচুপাতার উপর জলবিন্দুর মত টলমল করে রাখে । যেন পুরুষ মানুষ ধাক্কা দিলে গড়িয়ে মাটিতে পড়ে মিশে যায়। আমি যেমন তোমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে দশজনের একজন করতেছি মানুষ হিসাবে । তেমনি তোমার নানুমনি আমাকে করেছে তবে আরেকজনের গৃহিনী হতে। আমি গৃহিণী হওয়ার পাশাপাশি নিজ চেষ্টায় মানুষ হয়েছি বলে ঝড়ে আজ ভেঙ্গে পড়ি নাই । তোমাকে মানুষ হতে হবে নিজের প্রয়োজনে , অন্যের সংসারের প্রয়োজনে নয়। সংসার একটা সামাজিকতা । এখানে পছন্দ অপছন্দ , ভাঙ্গা গড়া থাকবেই । এইটা জীবনের একটা অংশ মাত্র মনে করতে হবে । এতে আবেগের কোন মূল্য নাই ।পৃথিবী সুন্দর আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ছুটতে হবে। এখানে আপন পর বলতে কিছুই নেই । সব মেয়ের এই ছুটে চলার যোগ্যতা থাকে না । এইটি তার অপরাধ নয়। তাই তাকে সংসারের সব কিছু আপন করে নিতে হবে। প্রতিহিংসার মনোভাব হলে তাকে অনলে পুড়তে হবে অবধারিত । আমি জীবনের দৌড়ে ছুটেছি বলে মাথা উচু করে তোমাকে বুকে আগলে রেখেছি । আবার সংসার আপন করেছি বলে তোমার দাদি আমার জন্য হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা বিলীয়ে দিচ্ছে ।এইটা আমার আশীর্বাদ ।খুব মন খারাপ হচ্ছে উনি চলে যাবে । হয়তো আর কোনদিন এই জীবনে দেখাও হবে না কোন দিন । তোমার নানীর বাড়ি গেলে ওরা ওদের মত বকঝকা করবে। যা আমার একদম ভালো লাগবে না । আম্মু আমরা মা মেয়ে পৃথিবীতে একা এইটাই সত্য। তবে তুমি আমার আম্মু এইটা আমার গর্ব । তুমি আমার মমতা , তুমি আমার মায়া , তুমি আমার মা।
আমি তোমাদের দেখতে আসবো । ফোনে প্রতিদিন কথা বলবো মৌরি আর তোমার সাথে। মন খারাপ করো না । কয়েক দিনের মধ্যে আমি শিউলীকে পাঠাতে চেষ্টা করবো। বাসায় পৌছেই ফোন দিও। যদি পরজমনে সুযোগ হয় আমি তোমার মা হবো , শাশুড়ী নয়। আমি তুমি আর মৌরি থাকবো স্বর্গীয় সেই ঘরে (উচ্চস্বরে কান্না )। ক্ষমা করে দিও আমাকে। কি যে কথা বলেন আম্মা । কেন জানি আপনাকে আমাদের কাছে রাখতে খুব মন চাইতেছে । ঢাকা যেতে একদম মন চাইতেছে না । আপনাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে । ভালো থাকবেন ।
আয় দাদিমা , আমি একটু কপালে আদর দিয়ে দিই। (মৌরি দাদিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে )। এত জোরে কান্নায় আশপাশের বাড়ির সবাই ছুটে আসে । সব মহিলা মৌরিকে বুকে নেয় এবং কান্নায় চোখ মুছে। রবিনের গ্রুপ সবাইর আগেই এসে হাজির মৌরিকে বিদায় জানাতে । মৌরি সবার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে । জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় । জীবনের নানা ঘটনাই নাটক। কিন্ত নাটক মানুষ সাজাতে পারলেও জীবন সাজানো কঠিন হয়ে পড়ে। আম্মু আসো আমরা বের হই । আসলে আম্মু দাদিকে অত্যন্ত ভালোবাসে । এবং সবচেয়ে সত্য কথা দাদি আম্মুকে ছাড়া কোন কিছু কল্পনাও করে না। এই কল্পনার আজ হয়তো যবনিকা এখানেই।
রেল গাড়ির কামরায় আম্মু নীরব বসে থাকে । চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখে । দাদি পানি খাবার সব দিয়ে দিয়েছে । তাই আর কিছু কিনতেও হবে না। হুইসেল পড়ার সাথে সাথে গাড়ি চলতে শুরু করে। বাঁকা রেল লাইন দেখে মনে পড়ে “রেল লাইন বয়ে সমান্তরাল ”। জীবনও ঠিক রেল লাইনের মত বয়ে চলে। গাড়ী ছুটে চলছে , আমি নীরব হয়ে আম্মুর কাঁধে মাথা রেখে ঘুম যাওয়ার চেষ্টা করি। অন্য সময় আম্মু কথা বললেও আজ একদম চুপ করে আছেন । তাই আমিও কোন কথা বলছি না তবে আমার একদম চুপ হয়ে থাকতে ভালো লাগে না আম্মু আমার জন্য নিজের জীবনের একাকিত্ব মেনে নিয়েছে । এই ভালোবাসার এই ত্যাগের কোন মাপ পরিমাপ কখনো হয় না। এত কষ্ট এত ঋণ সন্তান বুঝতে চায় না আদৌ । আমিও কি পারবো এই ঋন বয়ে বেড়াতে । তবে সব ভালোবাসা মায়ের চরণে । মৌরি উঠো আমরা ঢাকা এসে গিয়েছি , উঠো মামনি।বাসায় এসে দাদিকে ফোন করে আম্মু । মা মেয়ে মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। আমরা কেউ আর দাদির কথা বলি না মন খারাপ হবে বলে। চলে যায় কয়েকদিন , এখন অনেকটা স্বাভাবিক আমরা ।
হ্যালো দাদিমা । কেমন আছো । তোমার আম্মু কেমন আছে। জলিকে ফোন দিলাম ধরলো না ব্যস্ত মনে হয় জ্বী , আসসালামুলাইকুম । আমরা ভালো আছি । আম্মু স্কুলে তাই ফোন ধরে নাই মনে হয়। আপনি কেমন আছেন । আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো। আমি ভালো আছি । তোমার আব্বু আসবে পরশুদিন আচ্ছা , দাদি আমাদের বাসায় না আসলে ভালো হয়। কেন দাদিমা । তোমার সাথে দেখা করতে যাবে না । দাদি আমার মা আছে বাবা নেই । আর মা‘ই সবকিছু। তাই মায়ের কষ্ট হবে অপমান হবে এমন কোন কাজ করা কি আমার মানায় । উনার বাসায় থেকে আব্বুকে এনে চুরি করে দেখা করতে আমার বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। তাই মায়ের মাঝে বাবাকে দেখবো । আর আব্বু আসলে ফোন করারও দরকার নেই । দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আম্মু অনেক কষ্ট পাচ্ছে আপনি চলে যাবেন তাই। আপনাকে অনেক ভালোবাসে আম্মু । আব্বুর অপমান আর মেনে নিবে না । যদি আম্মুর মন পাল্টে যায় আমি কোথায় যাবো দাদি বলো । তাই দুরে থাকা ভালো হবে । (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৪তম পর্ব।

বৃদ্ধাশ্রমের বুড়া মা লাঠি ভর করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশপানে চেয়ে খোঁজ করে পঞ্চাশ বছর আগেও একটি রাতে এমন জোছনা ছিলো । মাঝখানে নেই আমার ভালোবাসা । মৌরি চলে গেলে আমাকেও হয়তো এইভাবে আকাশ দেখতে হবে কোন আশ্রম জীবনের শেষ পর্যায় । মৌরির জায়গায় আরো চারজন থাকলে যে জীবন সহজ হবে তার কিবা নিশ্চয়তা । তার চেয়ে ভালো মৌরিকে বুকে ধরে রাখি। হয়তো কোন ভুল ছিলো আমার তাই জীবন ছন্দহীন । থাক সেই ভুল আমার অলংকার হয়ে। আম্মু অন্ধকারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন । তুমি দাদির বাড়ি হতে আসার পর চুপচাপ হয়ে গিয়েছো । কি হয়েছে আম্মু বলা যাবে । দাদির জন্য তোমার মন কাঁদছে । এইটা সত্য আর এই জীবনে দাদির সাথে আমাদের দেখা হবে না । দাদি থাকলে আমরা গ্রামে বেড়াতে যেতে পারতাম। সে আমাদের অনেক যত্ন করেন । কিন্তু এখন আর কিছুই হবে না। তাই বলে আম্মু তুমি মন খারাপ করছো কেন । তোমার মন খারাপ থাকলে আমার কিছুই ভালো লাগে না । জানি তুমি দাদিকে অনেক ভালোবাসো । মা মৌরি জীবন এত জটিল হবে ভাবতে পারি নাই। পৃথিবীর সব থেকে বড় ডাস্টবিন মানুষের মন ,এটা পরিস্কার থাকলে পৃথিবী পরিস্কার থাকবে। অথচ আমাদের ঘরেই ডাস্টবিন ছিলো আর আমি বুঝতে পারি নাই । অগাধ বিশ্বাস আমার অপরাধ ছিলো । এই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে তোমার আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । আমি কিছুইতে তোমার দাদিকে ভুলতে পারবো না। উনার মত শাশুড়ী বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে হলে নারী নির্যাতন অনেক কমে যাবে । মানুষ যৌতুকের জন্য কিংবা মাদকগ্রস্ত হয়ে বউ পিটাতে আসলে এইসব শাশুড়ী প্রতিবাদ করবে,বাঁধা দিবে। উনি আমার জন্য কিছু করতে না পারলেও মানসিক সমর্থন করতেন । আমার একজন অভিভাবক ছিলেন । তোমার নানী মামা আমাকে বুঝতে চায় না । উনারা যেটা বুঝেন সেটা হলো সব ছেড়ে ছুড়ে আমি আবার বিয়ে করি । মারে মেয়েদের জন্য সংসার অপরিহার্য । কিন্তু তুমি এবং তোমার দাদি আমার অস্তিত্বে মিশে আছে এটা অন্যরা মূল্য দিবে না।

কান পাতলে দুনিয়াজুড়ে একটি শব্দই প্রায় শুনা যায়। ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি। এটা দুনিয়া, এই পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে, প্রিয় মানুষ আছে, প্রাণের বন্ধন আছে, কিন্তু দুঃখের সময়ে পাশে থাকার মানুষ নাই। মানুষের ধন সম্পদ, অর্থ বিত্ত থাকার পরও মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলেছে লোভ । যদি কেউ কোন সময় কিছু চেয়ে বসে এই ভয় মনের ভিতর। আমি তোমাকে আত্নকেন্দ্রিক হতে বারণ করবো । সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে চলবে তাহলে মানসিক যন্ত্রণা কম পাবে । সততা এবং সহনশীলতা মেনে চলবে জীবনের প্রতি পথে পথে। আমি সুযোগ পায়নি আত্নপক্ষ সমর্থন করার ।ফেলে বুঝতে পারতাম কি আমার ভুল ছিলো । সংসার কিংবা কর্ম কোথাও ধর্য্য হারা হওয়া যাবে না। এক সময় তুমি ছাড়া আমার আপন কেউ আর থাকবে না তখন আমাকে কষ্ট দিও না ।
আম্মু কি আজ পাগলের মত প্রলাপ করতেছো । তোমার কি শরীর খারাপ বা মন খারাপ লাগছে । সব ভুলে যাও আম্মু ।
“পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না ,বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়। জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি। মন রাখতে হবে আমি কোন ক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর অন্যের মতোই আমিও অনেক কিছু ভুলে যাই। এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে,আমাদের একে অপরের
ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে। জীবন খুবই ছোট, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেই হয়
না। যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।” বিখ্যাত লোক এমন কথাই বলে । মৌরি জীবনকে তুমি এমন ভাবে করে গড়ে তুলবে যেন মাঝ পথে এসে আমার মত এই রকম থমকে না যায়।
পরিশ্রম আর ভাগ্য’র পার্থক্য হলো পরিশ্রম সিড়িঁর মতন , ভাগ্য লিফটের মতন। লিফট যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে। কিন্তু সিড়িঁ সবসময় তোমাকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে। আমি মা হিসাবে তোমাকে আর কিবা করতে পারবো । কিন্তু উপরে উঠার সিড়িঁ তৈরি করে দিতে পারবো । এখন তোমার ইচ্ছা তুমি সিড়িঁ ব্যবহার করবে না লিফট ব্যবহার করবে।
আম্মু তোমার ফোন বাজে । আমি কি কথা বলবো । ঠিক আছে কথা বলে দেখো কে ফোন করলো ।
হ্যালো , আসসালামুলাইকুম দাদি । কেমন আছেন । মৌরি আমি আব্বু। আমি রাতে এসেছি তাই ফোন করি নাই । এখন দিলাম কেমন আছো মামনি । জ্বী ভালো আছি । ঠিক আছে এখন ফোন দিয়েছেন । তুমি আসবে গ্রামে নাকি আমি আসবো যেটা ভালো । আব্বু আমিও যাবো না আর আপনিও আসবেন না । এতে ভালো হয় , আর কোন দিন ফোন করারও দরকার নেই । সরি পাপা । আমি চাই না আপনার প্রভাব আমার জীবনে পড়ুক । আমার আম্মুই আমার সব । আমি জানি দাদিও চলে যাবে কানাডায় । আপনি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন । আর আমাদের হতে দুরে থেকে আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করবেন। আমার জন্য টাকাও পাঠাতে হবে না এইভাবে কেন কথা বলছো । আমি তোমার পাপা । জানি আমি আব্বু । কিন্তু আমার মা আপনার কেউ না। আর আমি আমার মায়ের সব কিছু । আমার মা আমার জন্য বক্ষস্থল । ঠিক আছে রেখে দিলাম ফোন। এত কথা বলতে ইচ্ছা করছে না সরি , আপনি ভালো থাকুন । (চলবে) I

মেয়ে ও মায়া , মাদক রাষ্ট্র । ১৫তম পর্ব।

আম্মু একটা কথা বলার ছিলো । তুমি আবার রাগ করো না । অবশ্যই তুমি শুনলে রাগ করার কথা। কি এমন কথা যে আমি শুনলে রাগ করবো , শুনি। আব্বু ফোন দিয়ে ছিলো । উনি বাসায় আসতে চায় । আমি না করেছি । এবং আর কোনদিন ফোন দিতেও নিষেদ করেছি। কারণ আমার ইচ্ছে করে না কথা বলতে। আব্বু কথা না বলেও আমার ক্ষতি নেই । মা কাজটা ঠিক হয়নি । উনি ভাববেন আমি নিষেদ করছি। তবে উনি বাসায় আসার দরকার নেই । আমার সময় নেই উনাকে দেওয়ার মত । তবে ফোন করতে কেন নিষেদ করেছো। আর তোমার মন চাইলে তুমি নিজেই ফোন করে কথা বলতে পারো সবসময়। আমি কিছুই মনে করবো না । কিন্তু আঘাত করার দরকার নেই। উনি ভাববে আমি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তোমাকে দিয়ে এমন করতে বলছি । মাহিনের জন্য দয়া এবং ঘৃণা কোন কিছুই আমি অনুভব করি না । এবং করা উচিতও না যার যার ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা শ্রেয়। সে হয়তো লোভে পড়ছে । একদিন লাভ এবং লোভ কোন কিছুই থাকবে না । তখন আবার ফিরে আসতে হবে নিজের পুরাতন নীড়ে । যেমন পাখি আকাশের শেষ ছোঁয়া বাকি রেখে নীড় খোজ করতে হয়। তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কাউকে নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই আমার । তোমাকে শিক্ষাদীক্ষায় বিকশিত করাই আমার কাজ। আম্মু আমার অনার্স শেষ হলে আমিও বাহিরে চলে যাবো পড়তে । এবং সেখানে সেটেলড হয়ে তোমাকে নিয়ে যাবো । আমিও চাই তুমি বিদেশ গিয়ে পড়ো । তবে আমি কোথায় থাকি তার কোন ঠিক নাই । তোমার নানীর বাড়ি গেলে মানসিক শান্তি পাবো না,না হয় সেখানে গিয়ে থাকতাম । তোমার নানী মামা মামনি রোজ বলবে জলি তুমি আবার বিয়ে করো ।
আমি মৌরিকে ফোন দিয়ে ছিলাম সকালে আম্মা । মেয়েটা এমনভাবে কথা বললো যেন আমাকে চিনে না। নাকি ওর আম্মু এইসব বলতে বলেছে, কি জানি। দেখো বাবা আমি এই সবের মধ্যে নেই । জানি না এদের মনে কি আছে । আমি দুরে আছি , দুরে থাকি।তবে আমি ফোন করে বলে দিবো কখন আমরা চলে যাবো। এখন তুমি জায়গা জমি কি করবে ঠিক করো। কাকে কি দিবে , কি করবে সব ভেবে চিন্তে ঠিক করো
সবটি জমি এতিমখানার কাছে দেখাশোনা দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। জমিও ঠিক থাকবে এবং চাষাবাদ করে এতিমখান চলবে। ব্যাংকের টাকা তুলে যারা এত দিন আমার দেখাশোনা করেছে তাদের কিছু কিছু দিয়ে দাও। আর বাড়ির আশপাশে খালি জায়গায় গাছ লাগিয়ে দাও। পাহারাদার একটা লোক এমনিতে বাড়িতে রাখতে হবে , সে এইসব দেখবে। এইসব জায়গা সম্পত্তি সব তোমার যেটা ভালো হয় সেটা করো। আমার এসব নিয়ে তোমার উপর কোন জোর নাই। আমি মরে গেলে তুমি হয়তো আর দেশেই আসবে না । এখনতো আমাকে নিতে এসেছো । আমি মনে করে ছিলাম কিছু জায়গা মৌরির নামে করে যাবো । এবং বেশ কিছু টাকা ওর নামে ব্যাংকে রেখে যাবো কিন্তু মেয়েটা কথায় আমার খুব হিট লাগলো । খুব অপমানবোধ মনে হলো আম্মা । আমি আগেই বলেছি সেটা তোমরা বাপ-বেটির ব্যাপার ।
হ্যালো বউমা । কেমন আছো । মৌরি কেমন আছে। আসসামুলাইকুম আম্মা । আমরা ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন। ঔষধ খাচ্ছেনতো ঠিকভাবে। আমি ঠিকভাবে সব কিছু করছি । সামনের শুক্রবার আমি চলে যাবো বউমা । আর দেখা হচ্ছে না তোমাদের সাথে। মৌরি আসলে ফোন দিতে বলো।মৌরির সাথে আমার কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। সবকিছু গোছানো লাগছে । ব্যস্ত থাকি তাই সময় পাই না । ফোন দিতে না পারলে রাগ করো না । তোমারা আমার হৃদয়ের অনেক গভীরে আছো এবং থাকবে। আমার মন খারাপ হলে তখন হৃদয়ে যে পুত্রবধূ আছে তার সাথে কথা বলি । একমাত্র নাতনী আজ তার বাবার হতে দুরে থাকতে ভালোবাসে । আর এই ভালোবাসা একজন মা‘কে শ্রদ্ধা করে। আমার দোয়া একজন একা যুদ্ধরত মায়ের প্রতি । আর শুনো শিউলী মেয়েটা নাকি কোন ছেলের সাথে চলে গিয়েছে । এত ছোট মেয়েও প্রেমটেম করে বুঝি না। ভালো হয়েছে এখানে এসে চলে গেলে আমার আইনগত সমস্যা হতো। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলো । আপনি মন খারাপ করবেন না আমাদের জন্য । ওখানে গিয়ে কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , সমাজ ও রাষ্ট্র ।
১৬তম পর্ব।

ভাবতে অবাক লাগে গ্রামের নবম কিংবা দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েটি অন্য একজন ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। আজকাল দশজন সাক্ষী হয়ে যে বিয়ে হয় সেটা ভেঙ্গে চুরে তছনছ হচ্ছে আর অবুঝ বালিকা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানকে হাসির খোরাক করতেছে। ইগোর কারণে ধৈর্য্য, সমঝোতা , সহমর্মিতা, সহনশীলতা এবং মানবতা ভুলে নারী পুরুষ উভয় অবিশ্বাসের জীবনে আটকে যাচ্ছে । সব কিছু মানিয়ে না চলার কারণে সংসারে অশান্তি নামক ঝড় সব উপড়ে ফেলছে । আর এত ছোট মেয়ে কি বুঝবে সংসারের । সংসার মানে রান্নাঘর দেখাশোনা আর সন্তান জন্ম দেওয়া হলে সংসার ভেঙ্গে যেত না । সংসার এক মহাসাগর । আর এখানে দক্ষ নাবিক হলে জাহাজ নিরাপদ শতভাগ। কিন্তু তারপরও হঠাৎ ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দেয় । আর সেখানে মেয়েরা নিজের আপনজন ছেড়ে দেয় অন্য একজনের মিষ্টি কথায় যা কিনা ভুল প্রমাণিত হয়। মামনি তোমার পড়ালেখা কেমন হচ্ছে কিছু বলো না। আম্মু সব ঠিক আছে । কোন সমস্যা হলেতো বলবো। আমি তোমাকে পড়াশোনায় সাহায্য করা লাগবে । না আম্মু ,তবে মনটা যেন কেমন এলোমেলো লাগছে। আমারও তাই লাগছে । তোমার দাদি চলে যাবে তাই । আসলে ঠিক আম্মু , প্রতিদিন দাদির কথা মনে পড়ে। কিছুই করার নেই মা , আমরা অসহায় বিধির কাছে।
মানুষ যাহা চায় তা হয় না কিংবা করতে পারে না । এইটা মানুষের হাতে না । যদি হতো তাহলে মানুষ নিজের স্বার্থমত চলতো । স্বার্থমত চলতে না পারাটাই সৃষ্টিকর্তার বড় রহস্য। এই জন্য মানুষ নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করে। মানুষ বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে আর মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে বিধাতা । যদি কেউ বিজ্ঞানের জয় দেখে নিজের ধর্মকে ভুলে যায় সেটা তার ব্যক্তিগত । সেই ব্যক্তি মরণের পর তাকে নিজ ধর্ম মেনেই মাটি চাপা দেওয়া হয়। ধর্ম অবিশ্বাসকারী লোকটা কিন্তু নিজের লোককে প্রভাবিত করতে পারিনি বলে মরণের পর ধর্মীয় রীতি মেনে তার জন্য প্রার্থনাও করা হয়।
আমরা কালকে সকালে চলে যাবো মা জলি। শুনো যদি কোন সময় টাকাপয়সার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বলবে আমাকে । আমার সহায় সম্পদ সব তোমার নামে করে দিয়েছি । মাহিনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। ব্যাংকের এবং জমির সমস্ত ডকুমেন্ট রবিনের মায়ের কাছে আছে । সব মিলে অর্ধ কোটি টাকার পরিমাণ হবে। তুমি কয়েক দিনের মধ্য নিয়ে আসতে চেষ্টা করিও । আগে বললে তুমি নিতে রাজি হতে না তাই বলা হয়নি। আমি ও মাহিন এখন ঢাকায় হোটেলে আছি। আমি যদি কোন অবিচার করে থাকি মা হিসাবে ভুলে যেও । দুঃখ লাগছে মৌরিকে দেখতে পাচ্ছি না বলে । আর মৌরিকে অনেক যাচাই বাচাই করে বিয়ে দিবে যে ছেলে তোমাকে সম্মান করবে তাকে পছন্দ করবে। যদি সে বিদেশে গিয়ে পড়তে চায় বারণ করিও না । তবে তোমাকে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করতে হবে । মরার আগে তোমার আবার মন ভাঙ্গার কথা শুনলে আমি কষ্ট সহ্য করতে পারবো না। হ্যালো তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো মা । কাঁদিয়া লাভ নাই । নিজেকে শক্ত করো বেঁচে থাকার লড়াই করার জন্য। কানাডা তোমাদের যাওয়ার কথা ছিল অথচ আমি যাচ্ছি মরতে। এইটাই বিধির বিধান। আপনার দোয়া আমার চলার পথের পাথেয় । যেত ঝড় তুফান আসুক আমি ভেঙ্গে পড়বো না । আমি শুধু আপনার সেবা যত্ন নিয়ে চিন্তিত থাকবো । কোন চিন্তা করার দরকার নেই আমি ঠিক আছি । সেখানে গিয়ে দেখি তারা কেমন আচরণ করে । এইসব দেশে আইন কানুন ভালো । সিনিয়র সিটিজেনদের সরকার গুরুত্ব দেয়। অতএব অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। ঠিক আছে ভালো থাকো । মৌরিকে তার দাদির ভালবাসা।
তোমার দাদি আজ কানাডায় চলে গিয়েছে ফোন করেছে । কি কাগজপত্র রেখে গিয়েছে তাই কালকে আমি দাদির বাড়ি যেতে হবে এবং পরের দিনই চলে আসবো । বাসায় তুমি একা একদিন থাকতে পারবে ? আমাকে নেওয়া যাবে না আম্মু ,যেতে ইচ্ছে করছে যে কিন্তু আসা যাওয়া অনেক ঝামেলা না, তাই বলছি বাসায় থাকতে। সেখানে থাকা খাওয়া কেমন হয় বলা যায় না । বাসায় সব রান্নাবানা তৈরি করে দিয়ে যাবো তাহাছাড়া আমি যাবো আর আসবো । তুমি কি ভয় । না না আম্মু ভয় পাবো কেন , একটা দিন শুধু একা । হুম একদিন মাত্র ,অনেক প্রয়োজনীয় তাই যেতে হচ্ছে । না গেলে তোমার দাদি শুনলে রাগ করবে । ঠিক আছে আম্মু যাও । তবে সাবধানে যেও এবং একদিন শুধু । ওখানে গিয়ে তুমি কোন কাজে জড়াবে না । ঘরবাড়ি যে আছে সেই থাক।
আমি আম্মুকে স্টেশন পৌঁছে দিয়ে নিজ কাজে চলে যাই। কি এমন কাগজ যে আম্মুকে জরুরী যেতে হল। আসলে হয়তো জানা যাবে বিস্তারিতভাবে । এই মামা যাবেন , আগে বলতাম এই খালি কিংবা এই রিক্সা । এখন বলি এই মামা । একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই এই মামা হয়ে যায় অনেক বড় দাদা। তখন দশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকায়ও যেতে চায় না। দেশটাতে সবাই রাজা । সুযোগ ফেলে অন্যকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায় করা । ঢাকায় রাস্তার রিক্সা কিংবা অটো রিক্সা যেটাই বলি এরা অরাজকতার রাজা। এদের আচরণে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় । মধ্যবিত্ত এদের ছাড়া রাস্তায় চলার উপায় নেই ।আর এরা চলে জোটবদ্ধ হয়ে , সিন্ডিকেট হয়ে । আমার মাঝে মাঝে এদের আচরণে কান্না আসে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে বাংলাদেশ তুমি আমার মাতৃভূমি না। (চলবে ) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৭তম পর্ব

আম্মু কোন দিন আমাকে একা বাসায় রেখে কোথায়ও যায়নি একদিনের জন্য। অথচ গতকালই দাদি গেল মাত্র আর আজ আম্মু বাড়ি চলে গেল । কি এমন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে গেল দাদি যে আম্মু জরুরী যেতে হল এমন কি আমাকেও বললো না। আসলে আম্মুু যেমন একজন আদর্শবাদী শাশুড়ী পেয়েছে তেমনি দাদিও একজন মায়াময় , চমৎকার বউমা পেয়েছিল। যদি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে এমন বউ শাশুড়ী হয় তাহলে সংসারের কলহ অনেক কমে যাবে। অনেক ঘর ফুলের কানন হবে। কিন্তু দেখি উল্টোটা বউ শাশুড়ী বনা বনি নাই। ঘরের বউকে অনেক শাশুড়ী আপন করে নিতে পারে না । আবার বউমাও নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের আপন করে নিতে পারে না। শুরু হয় পারিবারিক কলহ । শাশুড়ী ভুলে যায় সে একদিন এই ঘরে নতুন ছিল । এই ঘরে অনঅভিজ্ঞ একজন পুত্রবধূ ছিল । শুরুতে শুরু করে বউমার দোষ ত্রুটি খোঁজার । যার কারণে বউমা হয়ে পড়ে বীতশ্রদ্ধ তার মন মেজাজ হয়ে পড়ে খিটখিটে এবং ঘৃণা সঞ্চারক। নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের বুঝতে এবং জানতে সময় লাগে। তার উপর যৌথ সংসারের সব কাজ চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় এতে সে হাঁফিয়ে উঠে । একটা মেয়ে বাবা ভাইদের আদরে থেকে পড়াশোনা করে । সে অনেক কাজ করার অভ্যস্ত হয় না । কিন্তু স্বামীর সংসারে পুরা পরিবারের থালা-বাসন ধোয়া কিংবা রান্নাঘরে থাকতে হয় বলে মেয়েটি একা থাকতে চায় স্বামীকে নিয়ে এইটা তার অপরাধ নয়। শাশুড়ী নিজের মেয়েকে যে নয়নে যত্নশীল হয় ঠিক সেই নয়নে বউমার প্রতি যত্নহীন হয় । এর উপর আছে বউয়ের বাড়ি হতে এইটা সেটা না পাওয়ার লাঞ্ছনা গঞ্জনা । ঘরের সবাই মিলে কানাঘুষা করে , চলে তিরস্কার । তখন আর সংসারে সুখ থাকে না । বউমার কাছে সুখ হয়ে পড়ে অদুরা ও আপেক্ষিক । মানুষ বুঝতে চায় না সোনার খাটে সুখ বিচরণ করে না। পরিমিতবোধ এবং জীবনের সাথে মানিয়ে চলা সুখের অপর নাম। বউমাটারও ঘরের সবার প্রিয় হতে চাওয়া উচিত । আবার অনেক সময় চাইলেও হয়তো পারে না । বউ শাশুড়ী একেঅপরের প্রিয় হলে এবং চাওয়া পাওয়ার সমন্বয় থাকলে আনন্দ ধরা দেয়। ছোট ছোট পাপ্তিকে সহজে গ্রহন করলে তখন না পাওয়ার বেদনা থাকে না। সহজে গ্রহন করা মানুষ অল্পতেই তৃপ্তি হয়। এই তৃপ্তিই সুখ এই তৃপ্তি আনন্দ । অতৃপ্ত মানুষ কখনো সুখী হয় না এবং আনন্দিত হয় না। আর তখন হতাশার জন্ম হয়। শুরু হয় পারিবারিক কলহ। শাশুড়ীর ভয়ে এবং দম্ভে নতুন বউমা প্রথম প্রথম চুপ থাকলেও আস্তে আস্তে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। দম্ভ অার অহংকার এই দুইয়ের পিছনে কাজ করে এক ধরনের মূর্খতা । অাশ্চার্য জনক বিষয় হলো শিক্ষা যেখানে বিনয়ী হওয়ার কথা বলে সেখানে কিছু শিক্ষিত মানুষের দম্ভে সংসার ভেঙে খান খান হয়। আজকাল স্বামী স্ত্রীর কারণে যেখানে বিয়ে ভাঙ্গার মহামারী শুরু হচ্ছে সেখানে পরিবার অন্য সদস্যদের কারণে সংসার ভেঙ্গে যাওয়া খুবই দুঃখজনক । যে সংসারে অন্য লোকের কারণে বিয়ে ভাঙ্গে সেই সংসারে স্বামী বা পুত্র নীরব দর্শক মাত্র। এমন হলে যৌথ পরিবার থাকবে না । যা নষ্ট করবে আমাদের হাজার বছরের কালচারের ইতিহাস।
আজ ঘুম আসবে না একটুও , আম্মু নেই পাশে বসে আমাকে গল্প বলার । একা একা ভয়ও লাগছে যেন। করিডোরে দাঁড়াতেও যেন ভয় লাগছে । আকাশে কালো মেঘের বসতবাড়ি আজ। পাশের বাড়ির ছাদ জোড়া জোনাকির অপূর্ব খেলা । ছোটকালে দাদির বাড়ির উঠানে কত জানাকি আমি ধরেছি । জোনাকির আলো অংশটা দাদির কপালে দিতাম। এই জোনাকির মত তুমি আমার কপালের আলো। বৃষ্টি পড়ায় জোনাকি পানিতে ভিজে আমিও ভিজতাম যদি আম্মু থাকতো । ভিজে ভিজে জোনাক জল হতাম। ধ্যাত, ঝড় হাওয়ায় মজা নাই । শুধু ভারী বর্ষণে প্রণাম করি বিধাতাকে যেন পাপ মোচন করে ধুয়ে সাধ্বী করে।
ইস যদি আম্মু আমাকে নিয়ে যেত তাহলে সকালে এই বৃষ্টিতে অনেক মজা হতো। রাস্তায় হেঁটে দেখতাম বর্ষায় গ্রাম। বাতাস বেশ উদভ্রান্তের মত পাগলা ঘোড়া ।বাতাসের এই ধকল সয়ে গাছগুলো একনাগাড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো বাতাসের চোটে ছিড়ে যাচ্ছে। কয়েকটা হাঁস মাথা উচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুসুলধারে বৃষ্টির জাপটার লোভ বিসর্জন দিয়ে বাড়িতে ফিরতে হতো দাদি আর আম্মুর ভয়ে। খালি জমির জলে বৃষ্টি ফোঁড়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢেউ সৃষ্টি হয় , তবে বাতাসের ক্ষিপ্রতায় সেটা একটার সাথে আরেকটা মিলে যায় ।
একটা ডাল-পাতা কুড়ানো লোক অনেকগুলো কদমডাল মাথায় নিয়ে দ্রুত হেটে চলে যাচ্ছে। আমি ডাকতে লোকটা শুনতেই পেলো , আমায় কদমফুল দিলো। ইচ্ছেদের কদমফুলের ছোঁয়া দিতে বৃষ্টি- বাতাসে, কদমফুল কুড়াতে কত নেমে ছিলাম রাস্তায়।
কাদামাখা বিধ্বস্ত কদমফুলগুলো বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে ধুয়ে আবার সৌন্দর্যে সতেজ হলো। এমনি করে ঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষগুলোও আবার বাড়িঘর সাজিয়ে সতেজ হাসি হাসবে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলার গাছের কোন বিকল্প নেই সুন্দরবন বার বার প্রমান করে দেয়। তবুও আমরা গাছ লাগাতে অনিহা প্রকাশ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন জাতীয় স্বার্থেই গাছ কাটা হয়। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মুখে এ ধরনের উক্তি সত্যিই হতাশাজনক।একজন বিজ্ঞ লোক কেমন বোকার মত কথা বলে। অবশ্যই এতে এইসব লোকের মতলব থাকে। এরা সবসময় আমজনতাকে বোকা ভাবে। তবে কিছু লোক সর্বদা গাছের পেছনে লেগেই থাকে , গাছ কেটে তারা যেন পরিবেশ সুন্দর দেখতে পান। গাছ ফুল ফল দেয় , ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয় , গাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে আমাদের বাঁচায়। সুনন্দবনের কাছে রামপালের বিদ্যুত কেন্দ্র যে কতটা পরিবেশের ক্ষতি করবে সময় বলে দিবে কিন্ত তখন কিছুই করার থাকবে না । কয়লার দূষনে জর্জরীত হবে পরিবেশ।
প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে ধীরে ধীরে । অথচ এখন আমরা দেখছি উন্নয়নকেই । সবসময় ঘূর্ণিঝড় হতে সুন্দরবন আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা করে তার প্রমান ফণী বুলবুল এবং আমফান। একটা দেশ তখনি উন্নয়নের সহজ রাস্তায় আছে বুঝা যাধে যখন প্রাকৃতিক দূর্যোগকে সহজেই মোকাবিলা করতে পারে । খাগড়াছড়ি , বান্দরবন এবং রাঙ্গামাটি আমাদের জন্য সুইজারল্যান্ড আর সেখানের গাছ আজ উজাড়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ ধ্বংসের কাছে। দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার গাছের চোরাচালানে ব্যস্ত সেখানের নেতারা তাদের সাথে আছে উপজাতী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
(চলবে)

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৮তম পর্ব।

এই নেন ভাবী আপনার জিনিস বুঝে নেন। দেখে নেন সব ঠিক আছে কিনা। আমি খুব যত্ন করে রেখেছি । কি যে বলেন রবিনের মা। আপনাদেরকে আমার শাশুড়ী অনেক বিশ্বাস করে বলে সব আপনার কাছে দায়িত্ব দিয়েছে । সব ঠিক আছে , আমি আবার সকালে ফিরতে হবে ঢাকায়। ছুটি নেই তাহছাড়া মৌরি একা । আচ্ছা শিউলী মেয়েটা এমন করলো কেন। সে নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে থাকবে বললো। এখন কোন খোজ খবর আমরা জানি না । তার মা বললো বিয়ে করে ওই ছেলের সাথে আছে । তবে শিউলীর বাবা বলেছে কোন খোজ খবর নিবে না। গ্রামে সবার কাছে একটা লজ্জা পেয়েছে বেচারা । এতে কিসের লজ্জা তবে মেয়েটা ছোট । মানুষের কুতসিত চেহারা একনো তার অজানা। কোথায়কার কার ছেলে , কোন ছেলে এবং কি করে কি তার সামাজিক অবস্থা জানা দরকার ছিলো তাড়াতাড়ি । আমরা এত কিছু বুঝি না ভাবী । মনে হয় মেয়েটা ঢাকা চলে যাবে শুনে প্রলোভন দিয়ে তাড়াতাড়ি নিয়ে গিয়েছে। মেয়েটা আমার বাসা হতে পালালে সবাই আমাকে ভুল বুঝতো । তখন আমার লজ্জিত হতে হতো। পড়তে হতো আইন আদলতের ঝামেলায়। এই দুনিয়া যেমন কঠিন জায়গা তেমনি মানুষগুলি কঠিন। জীবন একটা দৌড় খেলা এখানে নিজের জায়গা ঠিক রেখে দৌড়াতে হবে । অল্প একটু নড়াচড়া করলেই ছিটকে পড়বে প্রতিযোগিতা হবে । আর যে মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য্য ধরে দৌড়াবে সে পৌছে যাবে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। আচ্ছা বলো রবিনের বাবা কেমন আছে ছেলেটা ঠিকভাবে পড়াশোনা করে কিনা । হুম, ভালো আছে তবে ছেলেটা স্কুলে যাইতে চায় না। বুঝেছি পড়াশোনায় তেমন মন নেই , কি করবে আর চেষ্টা করতে হবে , এতো সহজে হাল ছেড়ে দিবে ? না , অনেক বকাঝকা করে স্কুলে যেতে বাধ্য করি।
আজও টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে । গ্রামের কাঁচা রাস্তাঘাট খুব সাবধানে পথ চলতে হচ্ছে , প্রচন্ড পিচ্ছিল রাস্তা । যেমন আমার জীবন , ঠিক ব্যালেন্স নিয়ে হাঁটতে হয়। তবে কোন পূণ্য আছে বলে শাশুড়ী মার ভালোবাস আমার চলার শক্তি। ভালোবাসা জোর করে আদায় হয় না। অর্জন করে নিতে হয়,নিষ্ঠা, সততা,গুণ ও আন্তরিকতা দিয়ে এর পরও যে ভালোবাসা অর্জিত হয় না, সেটা প্রকৃত ভালোবাসা নয়, বরং এক তরফা ভালোবাসা । অতএব মাহিনের প্রতি দয়ার কোন সুযোগ থাকাও উচিত না । কারণ একতরফা ভালোবাসা মূল্যহীন। শাশুড়ী হয়ে সে ভালোবাসার মূল্য দিয়েছে ভালোবাসা দিয়ে , নিজের জীবনের শেষ সহায় সম্পদ এবং সম্পত্তি দিয়ে । জীবনটা দেওয়া এবং নেওয়ার ক্ষেত্র । মানুষ হতে মানুষ নেয় এবং দেয় । তবে কিছু মানুষ শুধু নিতে জানে , দিতে নয় । গাছের ফুল ফুটে গাছের প্রয়োজনেই, মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির প্রয়োজনেই। পাখি ডাকে পাখির প্রয়োজনেই। এভাবে সকল প্রাণী তার নিজ নিজ প্রয়োজনে তার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদের থেকে শুধু সুফলই গ্রহণ করি। আর মানব জাতি প্রকৃতির জন্য এবং মানুষের জন্য কি করি ? কিছুই করি না। যার প্রতিশোধ প্রকৃতি নিবে
প্রকৃতির ঋণ শোধ না করলে তার স্নেহমূর্তি পরিত্যাগ করে আমাদের উপর রুদ্রমূর্তি ধারণ করবেই। চারদিকে শুধুই বিপর্যয়নেমে আসবে। প্রতিকার খুঁজে বের করতে হবে দ্রুত। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিকার ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে গোটা পৃথিবী হুমকিতে পড়বে। তখন আর দৌড়ানোতে শেষ রক্ষা হবে না। তাই সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসবেন প্রাণী জগত রক্ষাকবচ হয়ে।
আম্মু তোমার শাশুড়ী আম্মা এখনো ফোন দিলো না। এমন করে মজা করার কি আছে মৌরি , সুযোগ হলে ফোন উনি অবশ্যই দিবে এবং ফোন দিয়েই মৌরেকে খোজ করা শুরু করবে , তখন দেখবো আমি । এই যে মামনি এই দিকে আসো দেখে যাও একটা জিনিস । আম্মু এই চিঠি দাদির হাতের লেখা , খুবই সুন্দর । কেন এত জরুরী একা একা আমি দাদির বাড়ি গিয়েছি, এখন দেখো দাদির কাজ , এইটা হলো জমির দলিল আর এইটা সই করা ব্যাংক চেক। সব মিলে উনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন অর্ধ কোটি টাকা। এইবার বলো আমার শাশুড়ী মা নাম্বার ওয়ান কিনা। আম্মু রাগ করো না জাস্ট ফান করেছি আমি । তবে হ্যা সব কিছু নিয়ে মজা করা ঠিক হয় না । জীবন নিয়ে মজা চলে না মা । তুমি বিদেশ যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকো । আর আমি আস্তে আস্তে চেষ্টা করবো । আমার পছন্দ লন্ডন যাওয়া , তোমার যদি কোন পছন্দ থাকে বলো । তবে তোমার মেধার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছূ । ঠিক আছে মা । আমিও লন্ডন যাওয়ার কথা ভাবছি । (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৯তম পর্ব।

আমি ভালোবাসলে যে আামাকেও ভালোবাসতে হবে, এমন কথা নেই। ভালোবাসা , না বাসার অধিকার প্রত্যেকের আছে। কিন্তু আঘাতের কি দরকার ছিল।
ভালোবাসার সাথে আঘাতের একটা যোগসূত্র থাকে বলে আঘাতের অধিকারও দেওয়া থাকে হয়তো। আর পৃথিবীতে এই আঘাতের এত অপপ্রয়োগ হয় যেটা খুবই দুঃখজনক । আর এইটা খুবই সাধারণ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িছে। আরে একটু অন্যরকম আঘাত দিতে মাহিন। যা অন্য কেউ কখনো আগে দেয়নি? সইতে কিংবা বইতে না পারার মতো অন্য রকম কিছু দিতে । অথচ আমি তোমাকে অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা ভাবতাম , একটু অন্যরকম ভাবতাম। আর তুমি হয়ে গেলে অন্য দশজনের একজন। যেটা আমাকে খুব বাস্তব হতে সাহায্য করে।আজকাল আমার মেয়েটাকে ভয় করি কারণ তোমার রক্ত শরীরে বহন করে সে বেড়ে উঠছে। তুমি তোমার মায়ের আদর্শ পাওনি আর তোমার মেয়ে তার মায়ের আদর্শ পাবে কিনা তা আকাশে । তবে হয়তো অচিরে কানাডায় তোমার সাথে দেখা হবে আমরা মা মেয়ের।
আচ্ছা আম্মু শিউলী যে পালিয়ে গেল একটা ছেলের সাথে , মেয়েটার কিন্তু বিয়ের বয়স হয়নি। তারা বিয়ে বিয়ে করতে জন্ম সনদ লাগবে জন্ম সনদ ছাড়া বিয়ে হলে আইন ভঙ্গ হবে। আর চাচা চাচী কি খোজ নিচ্ছে না। কোথায় আছে , কি করছে তাদেরতো বিয়ে হতে পারবে না । বয়স তাদের বড় বাধা বিয়েতে । আজ না হয় কাল তাদের ফেরত আসতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে সরকার কঠোর মনোভাব দেখায় । আম্মু আমার মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে। আমি এত কিছু খবর নেওয়ার সময় পাই নাই । তাহাছাড়া রবিনের মা বিস্তারিতভাবে সব কথা জানে না। আর সবচেয়ে ভালো কথা তুমি ওই মেয়ে সাথে নিয়ে আসো নাই। যদি আমাদের বাসা হতে পলাতক হতো তাহলে থানা পুলিশ এইসবে বিরাট এক ঝামেলায় পড়তে হতো। তাহাছাড়া নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হতো এখন সব দিকে মুক্ত। আমি তোমার মামাকে বলে দিয়েছি তোমার জন্য কানাডা অথবা লন্ডন স্টুডেন্ড ভিসার জন্য চেষ্টা করতে । তুমি মামার সাথে কথা বলে তাকে সহযোগিতা করবে। আমি ব্যস্ত থাকবো বলে তাকে বলেছি। এখন সব কিছু ঠিকমতো হলেই ভালো। আম্মু তুমি গ্রেট । তুমি বিশাল আকাশ আমার ।
আজকাল শহরের ছেলেমেয়ে ফুসকা খেতে খেতে প্রেমে পড়ে আর সেই প্রেম ফুসকার বিল দিয়ে জমাট বাঁধায়। কিন্তু গ্রামের ছেলেমেয়ে কেমন করে প্রেম করে জানা হলো না। আমি একটা বৃষ্টির মত প্রেম করবো। বৃষ্টি যেমন টুপ করে আসে গাছপালাকে সজীব এবং সতেজ করে চলে যায় তেমন। তবে আমি প্রতিবারই তোমার জন্য আসবো শুধু আষাঢ় মাসে নয় । তোমাকে রাস্তার নিয়ন আলোয় স্নিগ্ধ দেখাতে। থাকবে না কোন বজ্রপাতের ঝিলিক । ঝুপ করে এসে টুপ করে ভিজিয়ে দিয়ে গেলে তুমি খিল খিল হাসবে । প্রতিবারই তুমি মুগ্ধ হবৈ । আষাড়ে সন্ধ্যা,বজ্রপাত,বৃষ্টি আর তুমি মিলেমিশে একাকার হবে । থাকবে না অস্বচ্ছতা বিপন্নতা ঝুকি এবং বিহ্বলতা । এইসব বাদ দিয়ে তোমার সাথে আমার থাকবে নিগাঢ় ভালবাসা । এই ভালোবায় থাকবে না কোন চতুরতা। হে প্রকৃতি তোমায় আমি ভালোবাসি। (চলবে ) ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
২০তম পর্ব।

মেয়েটা বাড়ি হতে বাহির হয়ে গেল আজ এত দিন আপনি একটু খোজ নিলেন না। কোথায় আছে কি খাচ্ছে কিছুই জানি না । মেয়েটার চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না । আমি তার মা , আমি তাকে ভুলে থাকতে পারবো না । আপনি খোজ নেন। থানা পুলিশ করেন। তুমি মা হলে আমিতো তার বাবা । আমার মন কাঁদছে কিন্তু বলতে পারছি না তাই সয়ে যেতে সব কিছু। লোকজনকে মুখ দেখানো কষ্টকর , মানুষ আমাকে দেখলে কানাঘুষো করে। মেয়ে জন্ম দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে লালনপালন করার পর পালিয়ে গিয়ে হাটে বাজারে লোকজনের কাছে লজ্জিত করে তাকে খোজে কি হবে । সে ফেরত আসবে না আরো অপমান হবো । তাই বুকে কষ্ট ধারণ করো প্রকাশ করো না। তুমি মনে করো না আমি কষ্ট পাচ্ছ না । আমি জানি আপনি কষ্ট প্রকাশ করছেন না । শিউলী একবার ফোন হলেও করতে পারতো আমাদের । কোন দরকার নেই ফোন করার আমি ভালো আছি। তুমিও ভালো আছো , সে যেখানে থাকে যেন ভালো থাকুক ।
সম্পূর্ণ নতুন এক জায়গায় নিয়ে আসে আমাকে। তাই সবই আমার অপরিচিত। নানা রংয়ের নতুন নতুন দালান মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। প্রায় সবগুলোই দালান পাঁচ ছয় তলা। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো বাগানও আছে । অাগে এইখানে এর আগে কোনদিন আমার আসা হয়নি এবং আসার প্রয়োজনও হয়নি। এতো অভিজাত পাড়ায় আমার আসা যাওয়ার কিবা দরকার । সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো ও অপলক দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে । নাহিদ বুঝতে পারে এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে । অামি সম্বিত ফিরে পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে হাসি দিই । আমাদের রিক্সা সামনে এগিয়ে যায়। কিছু দুর যাওয়ার পর নাহিদ একটা পাঁচ তলা বাড়ির সামনে নামতে বলে ।
আমি আর নাহিদ দুজনে ঠিক করি বাড়ির লোক না চাইলেও আমরা দুজনে বিয়ে করবো। যেই ভাবা সেই কাজ , নাহিদ যেহেতু চাকরি করে সেহেতু তেমন কোন অসুবিধাই নেই। দু পক্ষের কারো বাড়ির হতে এই বিয়েকে মেনে নিবে না কোন রকমে। কারণ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা । তাহাছাড়া আমার বয়স। নাহিদ আগে থেকে সব যোগাড় করে রাখে । তার কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় সেইদিনেই আমারা বিয়ে করে ফেলি ।
দিন চলে তার আপন রূপে । সাথে সাথে নাহিদও তার রূপ পরিবর্তন করে । আমার স্কুল সময়ে যে ছেলে রোজ দাঁড়িয়ে থাকতো আমাকে দেখার জন্য একটু কথা বলার জন্য আজ তার সাথে প্রয়োজনীয় কথাও বলা যায় না। আমি এখানে আসার পর হতে দেখছি সারা দিন ঘুম যায় সন্ধ্যা হলে বাহির হয় এবং ভোর বেলায় বাসায় ফিরে। কিছু জিজ্ঞাসা করলে এড়িয়ে যায় । আমাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোন আগ্রহ দেখি না । এখন আমি একটা টিন সেড় ঘরে ভাড়া থাকি । কিন্তু সেটারও ভাড়া বাকি পড়ে আছে। ঘরের মালিক নেশাগ্রস্ত সোবহান মিয়া এসে গালি দেয় আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । নাহিদ বলে আমি নাকি তার মেয়ের চেহারা । আমি জানি নাহিদ মিথ্যা বলে সান্তনা দেয় আমাকে কিন্ত কিছু করার নাই। মাথায় ঘুরপাক করে আমি নাহিদের স্ত্রী, আর যে আমাকে ভালোবেসে পরিবার পরিজন ত্যাগ করে বিয়ে করছে সেই লোক সোবহান মিয়ার কামুক নজর কেন সমর্থন করে। বাসা ভাড়ার টাকার জন্য আমার ভালোবাসায় তাহলে মরিচা পড়তে শুরু করেছে। হায় করুণাময়। নাহিদ তুমি যদি কাজকর্ম না করো আমরা কিভাবে চলবো। তুমি কি করো আমি জানতে চাই । দেখো তোমার এত কিছু জেনে লাভ নাই। তোমার থাকা খাওয়ার সমস্যা না হলেই চলে। একটু কষ্ট করে চল। খেয়ে না খেয়ে এত দিন চলে আসছি। কিন্তু এইভাবে আর কত দিন চলবো । বাসা ভাড়া জমা হয়েছে দুই মাসের । তুমি ঠিকভাবে কাজকর্ম করলে সব ঠিক থাকতো । আচ্ছা বলো তুমি সারা রাত কি করো । ভোর রাতে কেন বাসায় ফিরো , তোমার মুখে কিসের যেন গন্ধ থাকে যা আমার ভালো লাগে না। এই শহরে আমি কিছুই জানি না , কিছুই চিনি না । সারা রাত একা একা ঘরে থাকতে ভয় লাগে । তুমি পাশে থাকলে মা -বাবা ভাই- বোনের কথা কম মনে পড়ে। রাত গডীর হলে ঘুম ভেঙ্গে যায় সোবহান মিয়ার চেহারা স্বপ্নে আসলে । তুমি রাতে বাসায় থাকলে হয়। এইসব তোমার ভুল ধারণা সোবহান মিয়া ভালো মানুষ। উনি এক জন জনদরদি রাজনৈতিক নেতা। পুরা পাড়ায় উনার সুনাম , পরোপকারী জনপ্রতিনিধি। মানুষ তোমার এইসব কথা শুনলে উনাকে বলে দিবে তখন আমাদের থাকার জায়গাও থাকবে না শিউলী। কিন্তু আমার ভালো লাগে না উনার স্বভাব চরিত্র। আরে বাদ দাও বাজে চিন্তা । আমি একটা কাজ পেলে এই বাসা ছেড়ে দিবো। (চলবে)।

 

মেয়ে ও মায়া,মাদক ও রাষ্ট্র ।
২১ তম পর্ব।

“পাখি উড়াল দিলো‘রে । উড়ালি হইয়া আগের মত খায় না দানা । হাতে বসিয়া পাখি উড়াল দিলো‘রে। কানের কাছে ঠোঁট লাগাইয়া শিখাইলাম কথা I আগে যদি যানতাম পাখি সব হবে অযথা । ”
শুধু গান শুনলে হবে , গান শুনার সাথে সাথে কাজও করতে হবে । না হয় রান্নাও হবে না, খাওয়াও হবে না। আরে নাহিদ মিয়া রান্না নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। যথাসময় আপনার সামনে খাবার এসে যাবে। তাই যেন হয় । আজকাল তুমি একটু গানে মনোযোগী তাই বলি দাও না একটা মোবাইল আমাকে । তুমি কয়েকদিন আগে তিনটা নতুন মোবাইল নিয়ে এসে ছিলে আজ আবার দেখছি না । কোথায় ফেলে আবার কি করেছো কিছুই জানলাম না । ওইখান হতে আমাকে একটা মোবাইল দিতেই পারো নাহিদ। তুমি যখন বাসায় থাকো না আমি একা একা সময় কাটাতে কষ্ট হয়, মন খারাপ হয়। তাই একটা মোবাইল হলে আমি গান শুনতে পারতাম । মন ভালো থাকতো । আর ইউটিউবে বিভিন্ন রান্না শিখে তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে পারবো । একটা কথা বলার ছিল , তোমার শুনার সময় হবে । আরে যে কোন কথা মনে সাহস নিয়ে বলে ফেলো। আগে মোবাইল নিয়ে আসলে , এখন আবার অনেক বাজার করে আনলে টাকা কোথায় পেয়েছো নাহিদ। আরে তোমার এত কিছু জেনে কোন কাজ আছে । আমার জামাগুলি সব খারাপ হয়ে গিয়েছে তুমি দেখছো না। যদি টাকা থাকে আমার জন্য অন্তত একটা জামা হলেও এনে দাও। এক মাসের হলেও বাসা ভাড়া দাও যাতে সোবহান মিয়া ভাড়া চাইতে কিছু দিন না আসে তাহলে আমি স্বস্তি পেতাম । চেষ্টা করতেছি ,কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরতে হবে যে ।জেনে শুনে আমি বিষ পান করেছি। জেনে শুনেই তোমার জন্য বৈরাগনী হয়েছি তাই ধৈর্য্যই আমার এখন সুখ। এই সুখের রাজ্যে তুমিই রাজ।

তুমি পাশে থাকলে আটকানো থাকবে অশ্রু জল,বয়ে যেতে দিবো না এক ফোটাও টলমলে। শাইন করবো , রোজ রোজ নতুন করে সাজিয়ে রাখবো আমার আঙিনা , প্রতিটি অসুন্দরকে উপড়ে ফেলবো সুন্দরের সাদা পর্দায় । একদম সহজ উপসর্গে রচবো জীবনের সংবিধান , সাগর মহাসাগর চমকে যাবে কমনীয় আয়োজনে। সোনা কিংবা হিরার মতো উচ্ছ্বাসে ভালোবাসবো তোমাকে । অবজ্ঞা আর উদ্বিগ্নকে হাওয়ায় মিশিয়ে দিবো হাসি তামাশায় । জীবনের কলামে রাখবো শিরোনাম করে উদ্দীপ্ত নয়নে ,জীবনের পাতায় পাতায় সুগন্ধী ছড়াবে সযত্নে। বছর বছর দ্বিগুণ উৎসাহে রাঙাবো মনের সূর্যশিশির। ক্ষোভের আগুনে পানি ঢেলে নিজেকে রাখবো শীতল । তুমি থাকলে পাশে পরিহার করবো সমস্ত অনিয়মের কালাকানুন। দৈন্যতা ঘুচাবো চঞ্চল কর্ম তৎপরতায় । তুমি পাশে থাকলে পৃথিবীর রানী আমিই। সুখের শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, বাজবে বাঁশি সুরের লহর তুলে। দূরত্বের দরোজায় তালা ঝুলিয়ে থাকবো পাশাপাশি আর দেখবো সহমর্মিতার আয়নায় তুমি আর আমি। বেঁধে নিবো আগের মতো সুখ সুখ অনুভবে গাঁথবো সংসার মালা বকুল ফুলের সুভাষে। নুপুরের তালে তালে এই চঞ্চল চপলা সোনার সংসার সুখে সুখে রবে।

আরে বাহ তুমি দার্শনিকের মত কথা বলো শিউলী। কি যে বলো । আমি কি এত জ্ঞানী যে দার্শনিক হবো।আসলে তোমার কথাগুলো শুনতে অনেক ভালো ।
আমার এখানে সব কিছু অচেনা শুধু তুমি ছাড়া । সম্পূর্ণ নতুন শহরে আমি , মনে হয় এখানে আমি যাযাবর । তুমি পাশে থাকলে নিজেকে চেনা মনে হয়। থাকে না ঘুমিয়ে যাওয়ার ব্যস্ততা , থাকে না আতংক।মনে এই সভ্য নগরের অলি গলি সব আমার আত্মীয় সব আমার অনেক চেনা। চাই শুধু তোমার একটা চাকরী । তখন আমরা অভিসারী হবো । সিনেমা দেখতে হলে যাবো , বসে বসে আইসক্রীম খাবো। এইটা আমার পছন্দ । তোমার পছন্দ কালো রংয়ের চা। তুমি ঘন ঘন আদা লেবুর রং চা খাবে আমি খাবো একটার পর একটা আইসক্রীম । হিঃ হিঃ হিঃ ।
পাগলী , বাচ্চা মেয়ের মত হাসে । অবশ্যই হাসলে তোমাকে সাদা দপদপে রাজহংসী মনে হয় ।
‌বিছানায় অনায়া‌সে শুয়ে থাকবে এক ফা‌লি আ‌য়ে‌শি সোনা‌লী সুখ । মুঠো মু‌ঠো সুখ দু’হা‌তে তু‌লে নিয়ে চোখে মু‌খে মা‌খিয়ে দিবো অজানা শিহরন ।
আমার দৃ‌ষ্টি‌তে না‌মবে উষ্ণ শীতলতা প‌বিত্র ইশারায় মহাসত্যের কাব্য রচনায় তুমি হবে ব্যস্ত। দেখার ভিতরে থাকতে থাকতে পাবে তুমি ‌সেই পরম শা‌ন্তিময় বু‌কের উষ্ণতা । ওহ চমৎকার ।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২২তম পর্ব।

আমরা একটি সুদীর্ঘ ভ্রমণের পথে আছি । এই ভ্রমণের মাঝে ক্লান্তি আসবে , অবসাদ আসবে , হতাশা আসবে , গতি মন্থর হবে এবং মাঝে মাঝে নাকে বিদখুটে দুর্গন্ধ আসবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাস রাখতে হবে সেটা সাময়িক,অল্প কিছু দিনের মধ্যে তা অতিক্রম করবো নিশ্চয়ই । এভাবেই জীবন নামের ভ্রমণ অতিক্রম করে আমাদেরকে শেষ গন্তব্যে পৌঁছতে হবে । আর সেই শেষ গন্তব্যই হলো চির বসন্তের চির স্থায়ী মহাসুখের আবাস্থল পরজনম । যেই জনমে জীবনের শুরু আছে শেষ নাই । ভালো কাজ দিয়ে সেখাানে আবাস নিশ্চিত করতে হয় । কিন্তু বেশ কিছু মানুষ আছে যারা দুনিয়াকে স্বর্গ ভেবে সম্পদের পাহাড়ে সুখের আবাস গড়ে তুলতে ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততাই মানুষ হয়ে পড়েছে লোভী ও দুর্নীতিবাজ । এই লোকগুলি সাধারণ মানুষের রক্ত পানি করা টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে করছে বিদেশে পাচার। বিদেশে গড়ে তুলছে বাড়ি , সেখানেই শুরু করছে কারবার। যাতে বিপদ আসলে দেশ হতে পালিয়ে বাঁচতে পারে। তারা কখনোই দেশ প্রেমিক নয়। এরা কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো শিল্পপতি , আবার কখনো উভয় নামে পরিচিত।

এভাবে তাকিয়ে আছো কেন শিউলী ?
তোমার এই তাকিয়ে থাকা আমাকে তোমার মায়ায় আকৃষ্ট করে যে । তোমার দৃষ্টি আমাকে হৃদয়গ্রাহী করে। দিবে একটা চুমু আমায় , এক বার দিলে আর তোমাকে বিরক্ত করবো না । ইচ্ছে করে তোমাকে দুই বাহুতে জড়িয়ে আকাশে উড়াল দিতে। কারণ তোমার এই অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাকে করে ব্যাকুল।
তোমার এই রহস্যময় চোখের ইশারায় আমি হই দিশাহারা । তোমার এই মায়াবী হরিণী চোখ মনে হয় মহাসাগর আর এই মহাসাগরে ভাসমান জাহাজের উদভ্রান্ত নাবিক আমি। যে কিনা সকল স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মস্তিষ্কের খাতা খুলে বসে স্মৃতি থেকে সুর তুলতে চায়। কানে কানে বলি কথাটা নিগাদ সত্য ।
প্রয়োজনে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে হবো সলিল সমাধি । তবুও দেহের ভালোবাসায় নয় মনের ভাালোবাসায় তোমাকে করে তুলবো মাতাল । আর এমনি প্রফেশনাল মাতালের মতই আদরে আদরে মিটিয়ে দিব তোমার চাওয়া । কি , তুমি ভাবছো নাটকের ডায়লগ । আরে আমি যে তোমার ভালোবাসার রাক্ষস । তুমি আর আমি দিনে এনে দিনে খাই তাই আমরা সুখী পরিবার। আমাদের স্বপ্ন আছে কিন্তু পরিমিত । আকাশের চাঁদ আমার ঘরে তাই আমি চাই না কৃত্রিম চাঁদ। তুমি আমার জোছনাময় চাঁদ । যে চাঁদে নেই কোন কালো দাগ।

জল নিয়ে খেলতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই আমি মেঘের বন্ধু হয়ে মেঘ হতে বৃষ্টি ঝরাই । তবুও কেন জানি আমার বুকে অসীম মরুতারা ঝিলিক দেয়। একবুক ঊষ্ণতা নিয়ে আমি মর্ত্যে দাঁড়িয়ে জলের জন্য মেঘ খুজি । তুমি আমার সবুজ পৃথিবী বলে কতো মেঘের আল্পনা উড়াই পৃথিবীতে । শুধু একবার তুমি আমার স্বপ্ন সাগরে ক্লান্ত মাঝি হও।
ভালোবাসায় কোন নিরাপদ দূরত্ব হয় না সোনামণি । তারাময় আকাশ আর পৃথিবীর একটা সুন্দর সন্ধি থাকে। আমাদেরও সন্ধি থাকতে হবে কারণ বুকের এই ভূমিতে লিখা হয়েছে তোমার আমার মিলনের অযুত অক্ষর। হয়তোবা এরই নাম প্রেম।
এইভাবে অনন্ত কাল এই মরা প্রান্তরে ছেড়া ছেড়া জীবন নিয়ে আমরা সুখের আখড়া বানাবো।

বাংলার সবুজ শ্যামল মাঠে রাখাল বাউল গান ধরে। আর বুকের সবটুকু আবেগ উজাড় করে প্রাণের সুর সৃষ্টি করে । এখানে তুলসী তলায় রাধার প্রেমগীত হয় সন্ধ্যা বাতির সাথে সাথে নারী উলু ধ্বনি করে ঠাকুর ঘরে বাতি জ্বালায়। ছোট ছোট বাচ্চারা পড়ার টেবিলে বসে পড়ার জন্য। পড়া শেষে মা তাদের আদর করে ভাত খাওয়ায়। কোন কোন বাচ্চা বায়না ধরে কত কিছুর। মা তার ভালোবায় সব ভুলিয়ে দেয় আদরে আদরে । যেমন তুমিও করবে একদিন। বুকের ভিতর নিয়ে মা শুনায় “আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা”। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া ,মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৩তম পর্ব। ।

জীবন কারো জন্য তো থেমে থাকেনা। পৃথিবী চলে পৃথিবীর নিয়মে। আর এটাই চলমান বাস্তবতা। যেমন খাল- বিল , সাগর -মহাসাগরে পানির স্রোত চলমান । নানা গাছে নানা ফুল ফোটে। ঝরে পড়া ফুলের খবর কতজনই রাখে? আবার ঝরে যাওয়া ফুলে মালা তৈরিতেও আমরা অভ্যস্ত নয় । আমরা বাগানের তাজা ফুলই ভালোবাসি। ঠিক তেমনি জীবন যুদ্ধে হোঁচট খাওয়া মানুষকে এড়িয়ে চলে সবাই। কারণ মানুষ ভাবে এই লোকটা অযোগ্য কিংবা অকর্মা । তবে কোন কাজে প্রথমবার কৃতকার্য না হলে শিক্ষা এবং সাহস নিয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করা জরুরী । এমন অনেক প্রমাণ আছে যে দ্বিতীয় বার চমক লাগানো কৃতকার্যতা তার জীবনের মোড় ঘুরে দিয়েছে। তাই জীবনে চলার পথে প্রতিট কাজ হতে ভালো দিকটা শিখতে হবে। একজনের সাথে চলার সময় তার মন্দ দিকটা পরিহার করে চলে ভালো দিকটা গ্রহন করে নিজের জীবনে প্রয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর বুদ্ধিমান কখনো হতাশ হয় না নিরাশ হয় না । তারা একবার না পারলে দেখো শতবারে বিশ্বাসী । সৎ চিন্তা সৎ সাহস নিয়ে সফলতা অর্জন করা প্রত্যেক জীবনের ব্রত হওয়া বাঞ্ছনীয় । আর আমাদের মত মানুষের জন্য সততা , সাহস এবং মনোবল হল জীবনের সুস্বাদু টনিক । মাথায় রাখতে হবে আমি কে , কি করতে চাই এবং পারতে আমাকে হবেই।

রাইট আম্মু । জীবনকে সুন্দর করতে হলে সুন্দর চিন্তা মাথায় থাকা চাই। সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ। শিক্ষা মানেই নিজেকে বিকশিত করা । শিক্ষায় সনদ অর্জন করে যেমন চাকরী পাওয়া লক্ষ্য থাকে তেমনি সেই চাকরীতে শতভাগ সততাপরায়ণ থাকা অপরিহার্য । তাহলে দেশ ও জাতি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। আজকাল মানুষ সরকারী চাকরী ফেলে অল্প দিনেই কোটিপতি বনে যায় । নামে বেনামে সম্পদ গড়ে তোলে , ব্যাংকে জমা করে অঢেল টাকা। পুলিশে একটু উপরে পদধারী হলেই টাকার কুমির । ভূমি অফিসে চাপোষা কেরাণী হলেই টাকার কুমির । বিমান বন্দর কিংবা নদী বন্দরে চাকরী ফেলেই অল্প দিনেই টাকার কুমির । বিদ্যুৎ ,টেলিফোন কিংবা গ্যাস শাখায় চাকরী পেলেই টাকার কুমির। তাদের চোখ পড়ে না মাটিতে । ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে । বাতাসের তালে তালে বেড়ে উঠে আঙ্গুল ফুলে গাছে পরিণত হয় । সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এরা রাজনৈতিক ছাতার নিচে নিজের দেহ নিরাপদ রাখে। শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য পাচার করে কাঠি কাঠি টাকা। বিদেশের ব্যাংকে এবং ব্যবসায় নিজেদের নিরাপত্তায় স্বস্তি মনে করে।আম্মু আমি একজন স্বচ্ছ মানুষ থাকতে চাই। মন এবং মননে দেশ প্রেম গচ্ছিত রাখতে চাই আমৃত্যু।

তাই বিদেশ হতে পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশে ফিরে আসাই দেশ প্রেম। অবশ্যই প্রতিকূল পরিবেশও থাকে কারো কারো তাই ইচ্ছে করলেও ফেরত আসতে পারে না । তবে তারাও দেশের মঙ্গল কামনা করে। দেশের একটা ভালো খবরে মন আন্দোলিত হয় তাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। কারণ সে লোক বুকে লালন করে প্রিয় স্বদেশকে । তারপরও , পৃথিবীময় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা জ্ঞানী গুণী , সৎ এবং দক্ষ মানুষকে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা দরকার আম্মু । তাঁদের ভিতর হতে সত্যকার দেশ প্রেমিকদের দেশের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া দরকার । যারা ভালোবাসবে কথা নয় কাজ । যারা মিথ্যায় নয় সত্যিকারে এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে উন্নতির দিকে। অবশ্যই বর্তমান রাজনীতি ঘুণে ধরা আমার একদম অপছন্দ কুটিল এই রাজনীতি । তোমার এই রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে না । আর সবসময় সাবধানে চলাফেরা করবে মৌরি। আমার মন পড়ে থাকবে তোমার কাছে। কালকে তোমার মামা সব কাগজপত্র দিয়ে যাবে। লন্ডন পৌছে গিয়ে আম্মুকে ফোন দিবে (চোখের কোণায় জল )। আমি অনেক একা হয়ে যাবো মৌরি। রোজ রোজ ফোন দিয়ে কথা বলবে আমার সাথে। ওহ! আম্মু মন খারাপ করো না । আমি সহ্য করতে পারবো না। আমরা মা মেয়ে একে অপরের পরিপূরক । আমারও মন পড়ে থাকবে আম্মু তোমার কাছে। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৪৩ম পর্ব।

আকাশের ওপারে জোছনাময় চাঁদ। চাঁদের আলো আর কাঁশফুলে মাঝে সংসার নামক স্বর্গ । অথচ এই স্বর্গীয় সুখ পদদলিত করে কখনো কখনো পুরুষ কিংবা নারী পা বাড়ায় নরক নামক আগুনে।
কাশবনে হাঁটার অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। চড়ুই ও অচেনা পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি। মাথার উপর তুলোর মত সাদা সাদা কাশফুল মাঝখানে স্বর্গীয় অনুভূতি। একটা কাশফুল আমার গাল ছুঁয়ে যেতেই চোখে ভাসে সংসারের টক ঝাল মিষ্টি মধুর খন্ড খন্ড স্মৃতি সুখ। অনেক সময় অনেক যুগল একসাথে কাশফুল দেখে রোমাঞ্চিত হয় । কাশফুলের নরম আলতো স্পর্শে পুলকিত হয় যুগলের মন। আকাশের ওপারে হে চাঁদ তুমি বড্ড একা ও বড্ড দূর । সংসারেও একত্রে বাস করে কখনো কখনো চেনা হয় না একে অপরকে। আমি আজও চিনতে পারিনি নাহিদক।

প্রতিদিন ফজরের আযান দিলেই নাহিদ বাসায় এসে যায় কিন্তু আজ এখনো আসে নাই অথচ সকাল হয়ে গেল। কোথায় গেলো কার কাছে জিজ্ঞাসা করবো ? আমি এখানে কাউকে চিনি না জানি না অথচ আমাকে একা ফেলে কোথাও গেলে তার আর খবর থাকে না। প্রতিদিন সকাল সকাল একসাথে বসে চা নাস্তা করি আর আজ নয়টা বাজে নাহিদ এখনো এলো না ।
হ্যালোঃ সুজন ভাই আমি আমি শিউলী ।
কেমন আছো। নাহিদ কেমন আছে।
জ্বী ভালো আছি । নাহিদ রাতে বাসায় ফিরে নাই । আপনি কি জানেন কোথায় গেল ।
তাই , আমি রাতে কাজে ব্যস্ত ছিলাম আমার সাথে দেখা কিংবা কোন কথা হয়নি । শুনো আমি তার অন্য বন্ধুদের হতে খোজ খবর নিয়ে তোমাকে ফোন দিবো একটু পর তুমি চিন্তা করো না শিউলী।
ভাইয়া ঠিক আছে কিন্তু খবু ভয় লাগছে একা একা।
আরে পাগলী ভয় পাওয়ার কি আছে ।

শিউলী শিউলী , দরজা খোল আমি তোর সুজন ভাই।
আসেন ভাইয়া ভিতরে আসেন , বসেন আমি চা করি।
না থাক এখন কিছু খাবো না আমি নাস্তা করেই তোমার বাসায় এসেছি নাহিদের খবর বলতে । শুনো , কাল রাতে নাহিদকে ইয়াবাসহ পুলিশ ধরে ফেলছে এখন থানায় আছে আমি তোমাকে বলে থানায় যাবো।
ভাইয়া এখন আমার কি হবে কোথায় যাব আমি। আহারে কান্না বন্ধ কর। তুই মন শক্ত করে এখানে থাকতে হবে । কোন কিছু দরকার হলে আমাকে বলবে আর নাহিদকে বাহির করতে আমি চেষ্টা করবো । সে আমার বন্ধু হলেও তুমি আমার ছোট বোন , তোমার জন্য হলেও নাহিদকে বাহির করতে সব চেষ্টাই আমি করবো তুমি টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না । শুধু নিজেকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখে চেষ্টা করবে ।

সেইটাই ভয় হচ্ছে ভাইয়া । সোবহান মিয়া লোক ভালো না যখনি শুনবে নাহিদ জেলে তখনি এসে যাবে বাসা ছাড়তে বলবে আর কয়েক মাসের ভাড়াও বাকি। আমি মরা ছাড়া আর কনো পথ নাই
আসলে সমস্যাটা কঠিন এখন নাহিদকে বাহির করাই বেশী দরকার কিন্তু বাসা ভাড়া তাহাছাড়া তুমিও একা ! তোমার মা বাপকে —— ।
ভাইয়া তাঁরা আমাকে পেলে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবে।
নাহিদের পরিবারও কোন সাহাস্য করে কিনা ঠিক নাই। সে আগে ভালো ছিল মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের ছেলে কিন্তু সঙ্গ দোষে বখাটে হয়ে পড়ে । পড়ালেখা ছেড়ে মাদকের নেশায় ডুবে তার পরে আবার তোমাকে বাগিয়ে নিয়ে আসে বিয়ে করে। আর তুমিও কম বয়সে খোজ খবর ছাড়া মা বাপ ছেড়ে দিয়ে চলে এসে বিপদে পড়লে। নাহিদ তোমার কথা কোন দিন কিছুই বলে নাই আমাকে । সে আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং সম্মানও করে আমি বাধা দিবো ভেবে গোপন করেছে,এই জন্য তাকে আমার ভালো লাগে। টাকা দিয়ে তার অন্য বন্ধুরা তোমার প্রাপ্তবয়স্ক সনদ তৈরি করে দেয় যেদিন তোমাকে নিয়ে আসে সেইদিন সবাই গিয়ে আমাকে ধরে মাপ চায় । এবং বাসায় এসে তোমাকে দেখে আমার খুব মায়া হয় ভুলে যাই তার দেওয়া কষ্ট । কিন্ত অনেক চেষ্টা করেও কিছু বখাটেদের কবল হতে মুক্ত করতে পারিনি । এই ব্যর্থতার ঢেউ এসে তোমার কপালে আজ আঘাত করলো বোন । (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৫তম পর্ব।

আমার একটা কথা ছিল বলার। শিউলীর মা তার বাবাকে বলে ।
কি কথা বলো ,আমার কাজের দেরী হচ্ছে।
আজ দুইদিন ধরে শিউলীর কথা খুব মনে পড়তেছে।তোমার মনে পড়লে আমি কি করবো ।
পাঁচ মাস হয়ে গেল মেয়েটা ঘর ছাড়লো। মেয়েটার জন্য আপনার একটু দয়ামায়া হয় না।
চুপ করো তুমি বাপের বুঝি মেয়ের জন্য দয়া হবে না। তাহলে খোজ কেন নিতে চান না ।
খোজ নিয়েছি তুমি জানো না।খোজ নিয়েছি পাড়া প্রতিবেশী জানে না । কারণ সবাই জানলে সমাজে থাকা দায় হবে, সমাজচ্যুত করবে আমাকে । আর মেয়েটা এইটা ভাবলো না গরিব মা বাবা অভাবের ভিতর কষ্ট করে সন্তান লালনপালন করে । সন্তানের মুখে আহার দিতে শত কষ্ট সহ্য করে এমন অকৃত্রিম ভালোবাসা ভুলে অন্যের হাত ধরে চলে যায়। শিউলীর এমন ঘৃণিত কাজে তার গরিব মা বাপকে সমাজের সর্দারগণ টুটি চেপে ধরবে তার বুঝা উচিত ছিল। তাকে সমাজে ফিরে আনতে হলে দশ হাজার টাকা সমাজকে জরিমানা দিতে হবে প্রভাবশালীদের চা নাস্তা খাওয়াতে হবে । আমি নিজে তোমাদের খাওয়াতে পারি না এইসব কি করে করবো। তাই চুপি চুপি খোজ করি যাতে তার খোজ পাই খবর পাই দেখা করতে পারি। যেখানে থাকুক ভালো থাকুক।

আমি যে তার মা আমার মন কি আর এতো সব বুঝে আমি মেয়েকে পেটে ধারণ করেছি আর আপনি নিয়েছেন পিঠে। সেও একদিন মা হবে তখন বুঝবে সন্তান হারিয়ে গেলে কিংবা সন্তান অবহেলা করলে কতটুকু কষ্ট পায় মা ।
ঠিক আছে ,আমি এখন যাই দেরী হচ্ছে আমার ।
ঠিক আছে যান , আমার কিছুই ভালো লাগে না উঠতে বসতে মেয়েটার কথা মনে পড়ে কিন্তু আজ দুইদিন বেশী মনে পড়ছে তাই কিছু খেতেও ভালো লাগে না গায়ে যেন জ্বালা পোড়া করছে জানি না মেয়েটার কোন বিপদ হলো কিনা । পড়ার টেবিল বিছানাপত্র দেখলে মেয়ের স্মৃতি মনে ভেসে উঠে আসলে বুঝতেই পারিনি মেয়ে বিয়ে করার মত বড় হয়ে গিয়েছে , মাঝে মাঝে মন খুব লাগে।

হ্যালো ভাবি আমি শিউলীর মা । আসসামুলাইকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছেন ।
আমি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন । মৌরি মা কেমন আছে । চাচীম্মা কেমন আছে , ওরা কি আজ ফোন করেছে আপনাকে।
হ্যা সবাই ভালো আছে , সকালে ফোন দিয়েছে । শিউলীর বাবা কেমন আছে । শিউলীর কোন খোজ পেলেন ।
উনি ভালো আছে । না ভাবি এখনো কোন খোজ খবর পাইনি । আল্লাহ জানে কোথায় আছে।
এইটা কেমন কথা হলো আপনারা এখনো খোজ নিলেন না আর আমাকে জানালেন না। মেয়েটার কি হলো জানা দরকার ছিলো। এইটা আপনারা ঠিক করেননি।
আমি কি করতে পারি যদি মেয়ের বাবা খোজ না নেয় উনি বলে খোজ নিচ্ছে। এদিকে বাড়ির মানুষ সমাজের মানুষ নানা কানাঘুষো করছে এসবের ভয়ে প্রকাশ্যে উনি কিছু করে না।
আহারে, আচার্য ব্যাপার আপনারা আমাকেও জানাচ্ছেন না কেন।
আজ কয়েকদিন আমার মন মেয়েটার জন্য বেশী অস্থির লাগতেছে কিছুই সহ্য হচ্ছে না তাই আপনার সাথে কথা বলে মন হালকা করতেছি।

আচ্ছা শুনেন শিউলীর বাবা আসলে আমাকে ফোন দিতে বলবেন আমি উনার সাথে কথা বলে দেখবো। ঠিক আছে ভাবি আপনি একটু সাহায্য করেন ভাবি আমি আর মেয়েটা ছাড়া থাকতে পারছি না ।
দেশে চারিদিকে যেভাবে নারী নির্যাতিত হচ্ছে প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে এই অবস্থায় চুপ থাকা ঠিক হয়নি। আপনারা ভুল করছেন। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী (21…25 পর্ব)

অনেক পুরাতন ইতিহাস। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সহজে স্বীকৃতি দেয়নি সৌদি আরব। স্বীকৃতি পেতে পেতে দেশে ঘটে অনেক রাজনৈতিক পরিবর্তন ক্ষমতার পালা বদলে মেজর জিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি তখন আর সৌদিতে বাদশা ফাহাদ। মেজর জিয়া মুসলিম দেশের সাথে কূটনীতি জোরালো করতে সিদ্ধান্ত নেন। তার ফলশ্রুতিতে বাদশা ফাহাদ মেজর জিয়াকে সৌদিতে আমন্ত্রণ জানান। রাষ্ট্রপতি জিয়া সৌদি সফরে যান এবং অত্যন্ত সম্মানের সাথে সৌদি বাদশা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে গ্রহন করেন। মেজর জিয়া যাওয়ার সময় কিছু নিম গাছ নিয়ে যান। এই ঔষধি গাছ যাহা মরুভূমিতে অল্প পানি ফেলেও বেঁচে থাকতে পারবে। এবং নিম গাছের পাতা পানি ধারণ করে বলে পরিবেশ ঠান্ডা রাখে। যেখানে এই গাছ আছে সেখানে পরিবেশ শীতল ও রোগ জীবাণু মুক্ত থাকে।

জিয়া বলেন হে প্রিয় বাদশা আমি গরিব দেশের গরিব রাষ্ট্রপতি আপনাকে দেওয়ার মত কিছু নেই। এই কয়েকটি ঔষধি গাছ নিয়ে আসলাম এতে সৌদি আরবের বাদশা অত্যন্ত খুশি হন। বাদশা বলেন আমি আপনার দেশের জন্য কি করতে পারি। জিয়া বলেন আমাদের দেশে জনসংখ্যার তুলনায় কাজ নেই যদি আপনি আমার দেশ হতে শ্রমিক নিয়ে আসেন তাহলে আমরাও আপনার দেশের উন্নয়নের অংশীদারিত্ব হতে পারবো। আপনার দেশে এসে কাজ করার বিনিময়ে যে পয়সা পাবে তাতে আমার দেশ উপকৃত হবে। এতে বাদশা ফাহাদ রাজি হয়ে যান এবং ১৯৭৭ সাল হতে সৌদি আরবে বাংলাদেশী শ্রমিক আসা শুরু হয়। আর বর্তমানে বাইশ লক্ষ বৈধ এবং প্রায় আরো এক লক্ষ অবৈধ শ্রমিক সৌদিতে কাজ করে। এর বাহিরে বাংলাদেশী পরিচয়ে আছে বৈধ অবৈধ মিলে আরো এক লক্ষ রোহিঙ্গা। তখন হতে সৌদি আরব গিয়ে কোটি কোটি পরিবার সচ্ছলতার মুখ দেখেছে দেশের উন্নয়ন হয়েছে।

নিম গাছ বর্তমানে সৌদিতে জিয়া সিজারা (জিয়া গাছ) নামে পরিচিত। এই গাছ আরাফাতের ময়দানে সারি সারি হাজারো লাগানো আছে। হজ্ব করতে গেলে লক্ষ লক্ষ হাজ্বী এই নিম গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেন। যেসব এলাকায় প্রচুর পরিমাণে এই গাছ লাগানো হয়েছে সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ বেশী, এই গাছে পরিবেশ রক্ষা করার সাথে সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও সৃষ্টি করেছে। তাই হজ্ব ছাড়াও হাজারো সৌদি নর-নারী আরাফাতের ময়দানে প্রতিদিন ঘুরতে যায় বিশ্রাম নিতে যায়। সেসব বাংলাদেশী শ্রমিক আরাফাতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করে অনেকই গর্ববোধ করে জিয়া সিজারার ইতিহাস জেনে এবং কখনো কখনো তারাও অন্যদেশের লোকদের এই ইতিহাস বর্ণনা করে। একজন বাংলাদেশী অনেক বছর ধরে সেখানে বাকালা (মুদি দোকান ) করে সে এই গাছের ইতিহাস বলতে গিয়ে তার চোখে মুখে প্রচণ্ড উজ্জ্বলতা ফুটে উঠে।

একসময় সৌদিতে আমাদের একটা সম্মান ছিল একটা ইজ্জত ছিল বাংলাদেশী শ্রমিকের চাহিদা ছিল সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমরাই সেই অবস্থা নষ্ট করেছি সেটা এখন ভারত আর নেপালের দখলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি নষ্ট মানুষের দেশ মনে করে তারা তাই শ্রমিক পাঠানোর আগে সৌদির কঠোর আইন কানুন মেনে চলার জন্য মানসিক উন্নতি করে কাজে দক্ষ করে লোক পাঠানো দরকার। একসময় ইরাক শ্রম বাজার ছিল একসময় লিবিয়া শ্রম বাজার ছিল এখন তা তাদের ক্ষমতা আর রাজনৈতিক হানাহানির কারণে প্রায় মৃত্যুকূপ এইসব দেশে না যাওয়াই উত্তম।(চলবে) I

করোনায় একজন প্রবাসী।
২২তম পর্ব।

এই মহামারীতে মানুষ মরেছে এমন নয় অনেক মানুষ বেঁচে থেকেও জিন্দা লাশ হয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে। সারা বিশ্বে শ্রম বাজার সংকটময় সৌদিও এর বাহিরে নয় বিরাট এক অর্থনৈতিক ধস নেমেছে। তারপরও সৌদিতে কাজের চাহিদা আছে কিন্তু পারিশ্রমিক আগের মত নেই। এই মহামারীর ধাক্কায় অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েও মধ্যপাচ্যের রাজনীতি বন্ধ হয়নি । ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে রাজ পরিবারে মত বিরোধ প্রকাশ পেয়েছে। আরব আমিরাত এবং বাহারাইন স্বীকৃতি দিয়ে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করলেও সৌদি বাদশাহ সুলতান চায় ফিলিস্থিনের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং অধিকার ঠিক রেখে সম্পর্ক করতে। তাও আবার মক্কা মদিনার মর্যাদার কথা মনে করে পিছে হটে কিন্ত বাদশাহর ছেলে চায় অতি সত্তর সম্পর্ক স্থাপন করে ইরান বিরোধী জোট গঠন করতে । যাতে করে ইরান ও তুর্কী বিরোধীদের পরাভূত করা যায় আমেরিকার শক্তি দিয়ে। আসলে সবদিকে মিলে মধ্যপাচ্য তুরস্ক এক মহাশক্তিধর রাষ্ট্র পরিণত হচ্ছে।

তুরস্কের সহায়তায় কাতার সৌদি জোটকে যথাযথ মোকাবিলা করে ইরানের সাথে মিলে ফিলিস্তিনের অধিকার আদায় চেষ্টা করতেছে তবে মজার কথা আমেরিকা আবার কাতারের বিশ্বস্ত বন্ধু।সৌদি জোট কাতারে হামলা করার সিদ্ধান্তও নিয়ে ছিল কিন্তু একদিকে তুরস্ক ও ইরান অপরদিকে আমেরিকা বাধা হয়। এই সংকটে আমেরিকা মিলিয়ন মিলিয়ন রিয়ালের অস্ত্র বিক্রি করে কাতারে। সৌদি জোট কাতারের অবরোধ প্রত্যাহার করতে বেশ কিছু শর্ত দেয় তবে কাতার একটাও মানেনি । আলজাজিরা টিভি বন্ধ , ইরান এবং তুরস্কের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা এবং ফিলিস্তিনের হামাজ ও ফাত্তাহকে সাহায্য করা বন্ধসহ আরো কয়েকটি ।

এইসব শর্ত না মেনে কাতার শুরু করে কূটনীতিক রাজনীতি আর এতে সাফল্য পায় কাতার। বর্তমানে কাতারে আগের চেয়ে তুরস্কের সামরিক উপস্থিতি বহুগুণ বেশী। ২০২২ সালে সফলভাবে ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। আমেরিকা ঘোষণা দিয়েছে অচিরে কাতারের অবরোধ প্রত্যাহার করা হবে। সবচেয়ে বড় খবর শ্রমিকদের সুবিধার জন্য একটা রোড়ম্যাপ ঘোষণা করেছে । কাজের ধরন অনুসারে নিম্ন বেতন আঠারশত দেরহাম দিতে হবে শ্রমিককে। ইকামার মেয়াদ থাকলে শ্রমিক ইচ্ছামত কাজ করতে পারবে এবং মালিক পরিবর্তনও করতে পারবে। শ্রমিকের সাথে কোন ধরনের জোরজুলুম করা যাবে না। আর সৌদিতে হচ্ছে এর বিপরীত ।

বর্তমানে সৌদিতে ইকামার সরকারি ফিস সব মিলে দশ হাজার রিয়েল (দুই লাখ ত্রিশ হাজার টাকা প্রায়)।শ্রমিকদের নিম্নে বেতন এক হাজার রিয়েলের নিচে আবার জিনিসপত্রেরও দাম বেশী। এই করোনা কালের ভিতর সরকার ভ্যাট বাড়ায় পনর পারসেন্ট। সৌদি আরবের নাগরিক হিমশিম খাচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করতে গিয়ে তবে কোন প্রতিবাদ নেই । শুনেছি রাজ পরিবার বিরোধীরা বিভিন্ন দেশে যারা পালিয়ে আছে তারা একটা রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করেছে রাজা বিরোধী । (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী
২৩তম পর্ব।

লোকমান, নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ির বাসিন্দা।দুই বছর হয়েছে সৌদি আরব আসার মেয়াদ। কিন্তু ইকামা পায়নি অদ্যাবধি পাবেও না কারণ কপিল (মালিক) তার ভিসা ক্যানসেল করে ফেলছে। দেশে ভিসা দালালের মিষ্টি কথায় সৌদি এসে মালিক খুজে পায়নি কিংবা সৌদিতে বাংলাদেশী দালালও মালিক খোজ করতে কোন সহযোগিতা করেনি। এইখানে সেখানে হাবুডুবু খেয়ে ছয় মাস পার করেছে। তারপর এক হুক্কা দোকানের পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজ পায় । মর্ধ বয়সী লোকমান কথাবার্তায় যেন ঝাল মরিচ মুখটা তার হাওয়ার আগে চলে। অথচ কষ্কালসার শরীর নিয়ে কাজ করতে দম যায় যায় তবুও চলে। দেশে সিএনজি চালতো সংসার চলতো কিন্তু বউ বলে সৌদি যাও টাকা কামাও ছেলেমেয়ে এর ভবিষ্যৎ গঠতে হবে। বউর চাপে ভিসা দালালের দারস্ত হয় আর দালাল করে বাজিমাত। আবুল কালামের কাজের পাশে হুক্কা দোকান তাই পরিচয় দুইজনে। লোকমানের কাজের কয়েক মাস যেতেই মার্চ মাসে করোনার প্রচণ্ড ধাক্কা সৌদিতে লাগে। আর প্রথম ধাক্কায় হুক্কা দোকান বন্ধ ঘোষণা করে সৌদি সরকার

হুক্কা দোকান অন্য দেশের মদের বারের মত। হুক্কা , চা পানি ও খাওয়ার আইটেম সব পাওয়া যায়। রাত বাড়তে থাকলে লোক সমাগম বাড়তে থাকে তবে চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে। সরকারি ছুটির দিনে ঈদের মত উপচে-পড়া ভিড় থাকে। রাস্তাঘাটে গাড়ি আর গাড়ি ঠিক যেমন হয় কোন ফুটবল খেলা থাকলে। ছোট ছোট ব্যক্তিগত রুম , খোলা দরজার রুম থাকে এইছাড়াও আছে খোলা জায়গায় সোফা বসানো। বড় বড় টিভিতে ফুটবল দেখতে খুব মজা পায় সৌদিয়ান। সৌদির কয়েকটা জাতিয় দল ছাড়াও আমেরিকা ইউরোপীয় ক্লাব ও দলের প্রতি প্রচুর আকৃষ্ট তারা। সৌদি জাতিয় দলগুলো এতই জনপ্রিয় যে বড় দুই দলে খেলা হলে সরকারি ছুটির আমেজ নেমে আসে। এইসব দোকানে ইয়েমেন ও বাংলাদেশি শ্রমিক বেশীর ভাগ কাজ করে। আগে প্রচুর বকশিস পেলেও এখন আগের মত সেই দিন নাই। দিন দিন সৌদিতে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে , জনসংখ্যা বেড়েছে এবং রোজগার কমেছে অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে।

এখন তারা কেউ কেউ দুই এক রিয়েলের জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেয় অবলীলায়। চুরি করে ছিনতাই করে তবে আইনের কঠোর প্রয়োগে এখনো মাত্রাতিরিক্ত হয়নি। লোকমানের শাররীক অবস্থার কারণে এমনি বেতন কম তার উপর তেমন কেউ বকশিসও দিতো না। কারণ সে ভাষা জানতো না কোন সৌদি কাস্টোমার কিছু চাইলে বাংলায় গালি দিতো এবং লোকমান প্রচণ্ড বিরক্তি প্রকাশ করতো। তারপরও রোজ রোজ যা পেত তা দিয়ে খাওয়ার খরচ চালিয়ে নিতো লোকমান বেতনের টাকা পুরোই দেশে পাঠাতো বউয়ের কাছে। এখন তার কাছে কোন টাকা পয়সা না থাকায় খুব কষ্টে পড়ে আছে। প্রথম প্রথম মালিক কিছু টাকা পয়সা দিতো খাওয়ার খরচ বাবত। তিন চার মাস দেওয়ার পর তা মালিক দেওয়া বন্ধ করে দেয়।

সাত মাস হলো লোকমানের হুক্কা দোকান বন্ধ চরম অমানবিক জীবনের পথে লোকমান। মালিক গোসলের কিংবা খাওয়ার পানির বিল দেওয়াও বন্ধ করে দেয় তবে বিদ্যুৎ বিল দেওয়া চালু রাখছে। প্রথম প্রথম লোকমান নিজের পরিচিত লোকজনের কাছে হাত পেতে চললেও এখন তাও সম্ভব না কারণ সবার একটা হাহাকারের ভিতর দিন কাটছে কে কাকে সাহায্য করবে। তাই বাধ্য হয়ে লোকমান পা বাড়ায় ভিক্ষায়। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী
২৪তম পর্ব।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর লোকমান বাহারাইন রিয়াদ রোড়ের পাশে একটা তেলের পাম্পে সুপার মার্কেটের সামনে গিয়ে দাড়ায়। লোক দেখে সুযোগ করে আধা বাংলা আধা আরবী মিশিয়ে টাকা চায় সৌদিয়ানদের কাছে। কখনো কখনো হাতে থাকা কাপড় দিয়ে গাড়ির ধুলাবালি পরিস্কার করে সৌদিয়ানদের মন জয় করতে চেষ্টা করে। তবে তার এই কাজ সবারই অপছন্দ কিন্তু লোকমান শুনে না। সুপার মার্কেট এর ক্যাশে ইয়েমেনি নাগরিক সে অনেকবার লোকমানকে বারণ করেছে মাঝে মাঝে দুই এক রিয়েল সেও দেয়। এইভাবে চলছে লোকমানের দিনকাল সারাদিন ঘুম সন্ধ্যায় এই কাজ না হলে যে উপবাস থাকতে হবে। তার সাথের লোকজন নিষেদ করে এই কাজ করতে, এই ভিক্ষাবৃত্তি সৌদি নাগরিক পৌরসভার অনুমতিপত্র নিয়ে করতে পারে আর কেউ না। অবশ্যই শুক্রবারে সৌদি মহিলা সমজিদের দরজায় বসে ভিক্ষা করে। তাদের অনেকের হাতে অনুমতিপত্র দেখা যায়্য ।

লোকমানের সাথে একদিন রীতিমত চিটাং এর আমিন ভাইয়ের ঝগড়া হয়ে যায়। আমিন ভাই বলে এইটা এখানে অবৈধ কাজ তারপরে নাই তোমার ইকামা একদিন পুলিশের হাতে ধরা পড়বে । তাহাছাড়া এতে দেশের বদনাম সবাই বলে বাঙ্গালী ভিক্ষা করে। এতে লোকমান প্রচণ্ড রাগ করে, বদনাম হলে আমি কি করবো আমাকে কে খাওয়াবে। তবে ভারতীয় এবং পাকিস্তানীও ভিক্ষা করে বাঙ্গালী হিন্দি ও পাকিস্তানী লোকজনের বাসায় চুপি চুপি এতে তারা ভিন্ন মিথ্যার আশ্রয় নেয় ভালো রোজগার করে। লোকমান কখনো কখনো নিরাশ হয়ে নিরব বসে থাকে দেখলে মায়া হয় কিন্তু কিছু করার নাই আমিও যে নিরুপায়। তারপরও মাঝে মাঝে এটা সেটা দিতে চেষ্টা করি কিন্তু মুখ পাকা বলে বিরক্ত লাগে।

সৌদিতে আসার জন্য নেওয়া ধার দেনা কিছুই শোধ হয়নি। করোনার আঘাতে সব লণ্ডভণ্ড না হয় এতদিনে একটা কূল পাওয়া যেত। এখনতো ঘরে চাল ডালও থাকে না ভাইবোন কত আর সাহায্য করবে। ছোট শালীর স্বামীটা দয়ালু ও সচ্ছল সেই এখন বউ বাচ্চার ত্রাণ দাতা। কিন্তু কত মাস আর চাওয়া যায় লজ্জায় পড়ে আজও রান্না বিহীন চুলা। অথচ এই সৌদিতে এসে কতজন কোটিপতি হলো আর আমাকেই পেল করোনা। এই যে করিম বক্সের ছেলে শিবির করতো বলে সৌদি পাঠিয়ে দিল। এখনো মনে হয় সেই দিন আসলো সৌদি আর আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয় দেশে চলে গেল। অবশ্যই আমিও দেখেছি তার নয়ছয় কাজ গুদাম হতে চুরি করে মালপত্র গাড়িয়ে গাড়িয়ে বিক্রি করতে। করোনায় লকডাউন হওয়ার দশদিন আগে ছুটি চলে গেল। শুনেছি কোম্পানির হিসাবরক্ষক চেক দিয়ে ছিল ব্যাংক হতে টাকা তুলে দিতে কারণ সে ড্রাইভার আর তখন তার হাতে ছুটি যাওয়ার পাসপোর্ট টিকেটও সে টাকা কোম্পানিতে না দিয়ে সে দেশে চলে যায়।

এক সময় যারা তার রাজনৈতিক বিরোধী ছিল তাকে মেরে পুলিশে দিয়েছে তারা আজ তার বড়িগার্ড। কুমিল্লার কান্দির পাড়ে ছয় তলা প্রাসাদ তার। বউটা রাখবে না গরিব মামতো বোন বিয়ে করা বউ এখন অচল তাই শুশুরকে (মামা) নাকানি চুবানি খাওয়ায়। মামা সালিশ বৈঠক করে নিজের মেয়েকে চোখের জলে ঘরে তোলে। মানুষ আচার্য হয় সহজ সরল ছেলেটা সৌদির টাকার গরমে নিজের অতীত ভুলে আকাশের চিল হওয়ায়। আর আমি সৌদি এসে কাঁদি কোথাও আমার চুলা জ্বলে না বলে। (চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী
২৫তম পর্ব।

চারিদিকে মাগরিবের আজান, একসাথে একসময় মাইকে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। মন উতলা হয় ওখন আল্লাহর পেয়ারে । যে কোন মুসলিম মানুষের মন উতলা হবেই যদি মনে আল্লাহকে ভয় থাকে । আর একসাথে একসময় চারিদিকে আল্লাহ শ্রেষ্ঠ আল্লাহ শ্রেষ্ঠ বর উঠে তাহলে যে কোন লোক আল্লাহর কাছে নত স্বীকার করবেই। তাই মনে হয় অন্য ধর্মের লোক সৌদিতে কাজ করতে এসে কখনো কখনো ইসলাম ধর্ম গ্রহন করে ফেলে। আজানের সাথে সাথে মানুষও কাজকর্ম ছেড়ে মসজিদের দিকে ছুটে আল্লাহর দরবারে নিজেকে সমর্পণ করতে। মুখ ফুটে বলতে হয় না আমি তোমার দরবারে হাজির । এই জন্য হয়তো তারা মোনাজাত করে না কারণ একমাত্র আল্লাহর কাছে মাথা নত করে নিজের মন ধ্যান সব একাত্মতা করে আল্লাহর একাত্মবাদে। নামাজের সেজদাই সব চাওয়া পাওয়ার কেন্দ্র বিন্দু তাই হাত তুলে চাওয়ার প্রয়োজন তেমন মনে করে না। আজান ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কোন কথাই মাইকে প্রচার করে না। মসজিদের জায়গা একমাত্র মাথা করার স্থান আর কোন জায়গায় কোন ধরনের পুজা অর্চনা কল্পনাতীত । তবে নামাজ যে কোন জায়গায় পড়া যায় কোন বিধিনিষেধ নাই এতে।

আজ লোকমান মাগরিবের আজানের আগেই তেলের পাম্পে হাজির হয়। নামাজ পড়ে অনেকের সাথে তবে এখানে আইনের কঠোর প্রয়োগে সবাই মুখোশ পরে থাকে। মুখোশ না পরলে সৌদিয়ানের এক হাজার রিয়েল জরিমানার কোন ছাড় নাই কোন মাফ নাই। বহিরাগতদের প্রথম বলে বাসায় পাঠায় দ্বিতীয় ধপায় মাফ নাই। পাশে ট্রি স্টল লোকমান একটা লেমন চা নিয়ে বসে সোড়িয়াম বাতির আলোয়। হাতে ধরা গ্লোডলিফে টান মারে একটা দুইটা পরে দম মেরে সুখ টান । কুণ্ডলী পাকিয়ে ধোয়া আকাশ পানে ছুড়ে মারে তারপর বিটবিট করে কি জানি গান বলে নাকি বিধাতাকে মন্দ বলে। একবার চায়ে চুমুক আরেকবার সিগারেটে চুমুক দুইয়ের মিলনে লোকমান চিত্র করে শিল্পীর। লোকমানের এই আর্টে থাকে হয়তো বউ বাচ্চার চাল ডালের যোগান না দিতে পারার গভীর ব্যর্থতা । আবার কখনো কখনো হাতে ধরা সিগারেট উপুড় করে জ্বলে যাওয়া দেখে। এই সময় কালো একটা কার এসে থামে।

বসা হতে দাঁড়িয়ে লোকমান তাদের সালাম দেয় হাত তোলে। তারা নেমে দ্রুত দোকানে চলে যায় লোকমান বসে পড়ে। তবে এদের দেখে লোকমানের কালো মাংসহীন মুখে হাসির ঝিলিক মারে। তারা ফিরে আসলে লোকমান সামনে গিয়ে দাঁড়ায় মাথা নিচু করে একজন পকেটে হাত দেয়। আবার লোকমান আগের জায়গায় গিয়ে বসে লোকগুলি চলে যায়। এইভাবে চলে লোকমানের সময় ঘন্টা দুয়েক কেউ কিছু বলে না। কালো পোষাকে পুলিশ আসে কখনো কখনো দেখতে আমাদের দেশের র্যাব এর মত হাতে কোন অস্ত্র থাকে না কোমরে থাকে পিস্তল। আগে ইকামা দেখার বাহিনী আলাদা ছিল রাস্তায় টহল দিতো জলপাই রংয়ের পোষাক পরে এখন তেমন রাস্তায় দেখা যায় না । কালো পোষাকের পুলিশই এখন আধুনিক বাহিনী রাস্তায় টহল দেয় ইকামা দেখে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করে।

লোকমান উঠে দোকানে যায় কিছু কিনতে । একজন পুলিশও এসে দোকানে ঢুকে পানি সিগারেট কিনে বের হয়। লোকমান পুলিশ দেখে ভয় পায় না কারণ করোনা কালে তেমন ইকামা চেক করে না । কিন্তু হঠাৎ করে সেই দিন লোকমানকে দোকানের সামনে পুলিশ বলে জিব ইকামা (ইকামা দাও তোমার ) । (চলবে)

 

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ (হিজড়া) (5. 6, 7,8 .9,10 পর্ব)

গীতা গুরুমা, ওর অধীনে আছে দুইশত হিজড়া কিন্তু তার আছে স্ত্রী ও সন্তান। অথচ সে হিজড়াদের গুরুমা। সুন্দরী ম্যাডাম গুরুমা এবং হিজড়াদের সিলেট বিভাগীয় প্রধান। গ্রামে ফরহাদ মঞ্জিল নামে ঢাউস বিল্ডিং-এ থাকে সুন্দরী ম্যাডাম নামদারী ফরহাদের বউ বাচ্চা। ঝুমুর হিজড়া সেও নকল। তবে এদের ভিতর শুধু ঝুমুর পুরুষ অঙ্গ কেটে নিজে হিজড়া সাজে এবং টাকা কামাই করার পথ বেছে নেয়। গীতা ও সুন্দরী আসলে কিন্তু পুরুষ তারপরও তাদের হিজড়ার ভূষণ। পনের হতে বিশ হাজার টাকার ভিতরই অস্ত্রোপচার করা যায়। নিজের ইচ্ছায় হিজড়া হওয়ার একমাত্র কারণ হলো অর্থ উপার্জন করা আর তারাই আবার ছেলেদের অপহরণ করে কিংবা দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে অসহায় ছেলেদের হিজড়া বানায়। দিপালী ও লিজা দুইজনে হিজড়া কামজ। আগে একজন রিপন এবং আরেকজন দুলাল ছিল।

রিপনের আগে মূত্র ত্যাগে সমস্যা হচ্ছে বলে এক সময় ডাক্তারের দ্বারস্থ হয়। বেসরকারি চিকিৎসালয় নামক একটি বাড়ির ভিতর ধামরাইয়ের রোম আমেরিকান হাসপাতালে। গোলাম রহমান শাহজাহান প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সে নিজেই এই হাসপাতালের মালিক। বাংলাদেশ এবং কলকাতার সব মিলে চারশ জনকে অস্ত্রোপচার করেছেন এই ডাক্তার। অথচ উনি একজন মানবিক মানুষ উনার লক্ষ্যও টাকা রোজগার। তাই তাঁর কাছে এটা কোন অপরাধ নয় অথচ আইনে আছে কাউকে অনৈতিকভাবে অঙ্গহানি করা মারাত্মক অপরাধ কারণ এতে একজনকে বিকলাঙ্গ করা হয়। আজব আমাদের দেশ তার চেয়েও আজব মানুষ, স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে সংসার থাকা সত্বেও হিজড়ার ভূষণে অপরাধ করে যাচ্ছে কিন্তু দেখার কেউ নাই।

গীতা চট্টগ্রামে এবং সুন্দরী ম্যাডাম সিলেটে নকল হিজড়া হয়েও তারা স্বকীয় বাহিনী গড়ে তুলেছে আসল নকল হিজড়া নিয়ে। তাদের কেউ করে চাঁদাবাজি, কেউ কেউ কামজ কিন্তু রোজগারের সব টাকাই নিয়ে যায় গুরুমা। গুরুমা নতুন হিজড়ার সাথে প্রথম প্রথম অমায়িক আচরণ করে যার কারণে পরিবার ও সমাজের রূঢ় আচরণে অতিষ্ট হিজড়ারা গুরুমার প্রতি অতি সহজে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। কিন্তু আস্তে আস্তে তার আসল চেহারা প্রকাশ করতে থাকে। যদি চেহারা সুরত সুন্দর হয় তাহলে হরমোন ইনজেকশন দিয়ে মেয়েলী ভাব নিয়ে আসে শরীরে। তারপর বিভিন্ন কলাকৌশলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে গুরুমার মনোনীত ডাক্তার দিয়ে অস্ত্রোপাচার করে নারী হিজড়ায় পরিণত করে তাদের যৌন কর্মী বানিয়ে টাকা রোজগারে আজ্ঞাবহ করে। রূপসী হিজড়ারা কুহকী সাজে সজ্জিত করে উচ্চ তলার মানুষের মনোরঞ্জন করতে পাঠায়।

কিছু হিজড়া রাস্তায় গাড়ি হতে চাঁদা তুলে, কিছু হিজড়া দোকান হতে চাঁদা তুলে তবে যে যাই করুক কেউ বসে খেতে পারে না। সারা দিন যে যা টাকা রোজগার করুক না কেন প্রত্যেক জনের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান টাকা ধার্য্য করা আছে এবং রাতে গুরুমার হাতে তুলে দিতে হয়। সেই নির্দিষ্ট পরিমান টাকা গুরু মার হাতে তুলে দিতে না পারলে নেমে আসে খাওয়া বন্ধসহ মনোগত ও শারিরীক নির্যাতন। তখন গুরুমার আচারণ হয়ে উঠে গণিকার রাণীর মত আর তাকে সহযোগীতা করে তারই ভৃত্য। কখনো কখনো অত্যাচার সহ্য করতে না পারলে মুক্ত হওয়ার পথ খোঁজে সাধারণ হিজড়া কিন্তু মুক্তি মিলতে চাই মৃত্যু না হয় বড় অংকের টাকা। টাকা চাওয়ার অংক এত বড় থাকে যে যোগাড় করা দুঃসাধ্য হয়ে থাকে।

আর তখনি চলে গুরুমার বিরুদ্ধে ভিতরে ভিতরে রাজনীতি। জাতীয় রাজনীতির মত প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখতে চলে অস্ত্রের ভাষা,চলে জখম ও খুন। গুরুমার আছে বিলাস বহুল জীবন, আছে বাড়ি গাড়ি। আর এদের রাজনীতির সাথে অংশু করে আরমান নামক আমাদের সমাজের আরেক রাজনীতিবিদ। রূপসীদের নিতে কখনো কখনো গাড়ি নিয়ে আসে অভিজাত শ্রেণী, হিজড়া গাড়িতে কিছুদূর গেলেই আরমানের লোক গতিরোধ করে নিঃস্ব করে সব নিয়ে যায় আর মানসম্মান হারানোর ভয়ে অভিজাত শ্রেণী থাকে অবর। হিজড়া ছোটকালে গুরুমার কাছে আসুক বড় হয়ে আসুক তাদের থেকে সমঝোতা চুক্তি করে দলিলে স্বাক্ষর নেয়। তবে মজার বিষয় সেই দলিল কেউ পড়ে দেখার সুযোগ পায় না ঝামেলা হলেই তা উন্মুক্ত করে।

মেয়ে হিজড়ার সাথে নকল গুরুমা যৌন কাজ করতেও বাধ্য করে। যৌন কাজ করে হোক আর চাঁদাবাজি করে হোক এক হাজার টাকা গুরুমার হাতে দিলে সে হয়তো একশ/দুইশ টাকা বকশিস দেয় আয়কারী হিজড়াকে। গরিব পরিবারের হিজড়ার ভিতর তাদের পরিবার নিয়েও চিন্তা থাকে তারা মা-বাপ, ভাই-বোনের ভরণপোষণের জন্য টাকা দিতে উদগ্রীব থাকে কিন্তু সে আশা হৃদয়ের ভিতর নিহত করতে হয় গুরুমার ভয়ে।(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
৬ষ্ঠ পর্ব।

গুরুমার কাছে টাকা চাওয়ার পর হুমকি আসে হাড্ডি ভেঙ্গে ফেলার। তখনি আবার নেত্রজলে ভেসে উঠে জন্ম দেওয়া মায়ের ছবি,ভেসে উঠে বাবা,ভাই ও বোনের ছবি। ইস,যদি তাদের জন্য কিছু টাকা দিতে পারতাম,তাদের একটু তরকারি দিয়ে ভাত কপালে জুটতো। বিধাতা জন্ম দিয়ে পৃথিবী দেখালো তাও আবার হিজড়া করে যাদের কোন ঘর নাই,বাড়ি নাই , সমাজ নাই এমনকি দেশও নাই। দুনিয়াটাকে বুঝতে পারার পর হতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনার স্খলিতচরণে চলন বন্ধি হতে হয়। নরক হতে সুখ খোজতে এসে আরেক নরকে ডুব দিতে হয়। জীবন জীবিকার তাড়নায় হিজড়া যে পথে নামে কেউ বুঝতে চায় না।

হিজড়া যে আকাশ হতে শিলা বৃষ্টি নয় তাও কেউ বুঝতে চায় না অথচ হিজড়ার মাকেই গালি দেয় উচু গলায়। নকল গুরুমা হিজড়া দিয়ে হাত পা টিপে দিতে ডাকে একদিন একজনকে আর কৌশল করে যৌন লালসা চরিতার্থ করে অবলীলায়। তাও বন্ধি থাকে গুরুমার ঝকঝকে কামরায়। কিন্তু কত দিন, নকল গুরুমার সংসার সন্তানের জন্য টাকার পাহাড় করে সাধারণ হিজড়ার রথে কামাই দিয়ে। যখনি গুরুমার সাথে বোঝাপড়া করতে সাধারণ হিজড়া একজোট হয় তখনি নেয়ে আসে নির্যাতন, বাহির হতে আসে
সন্ত্রাসী বাহিনী হাতে পায়ে পড়ে শিকল থাকতে হয় ভুখা। প্রতিটি গুরুমার থাকে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী থাকে থানা পুলিশে হাত যার কারণে প্রতিবাদ করার পর রাস্তাঘাটে নজর রাখে সন্ত্রাসী । রাস্তাঘাটে প্রচন্ড মেরে আহত করে ফেলে যায় যাতে অন্যরা গুরুমার সাথে কথা বলারও সাহস না পায়।

শুধু একটু ভাবুন গুরুমা তার মনোনীত ডাক্তার সন্ত্রাসী,পুলিশ দিয়ে যে মানুষটাকে অস্রোপাচার করে হিজড়ার আবরণে গণিকা বানাচ্ছে তার স্থান সমাজে কোথায় হবে। তার যখন বয়স হবে কে তার ভার বহন করবে। এমনিতে প্রাকৃতিকগত হিজড়ার ঘর পরিবার সমাজ দেশ এমনকি কবরের জায়গা হয়তো আকাশময়। দোকানপাট গাড়ি কিংবা রেলগাড়ী কোন কিছুই এখন বাদ যায় না চাঁদা তোলা হতে। যাত্রীদের গালি দেওয়ার সাখে সাথে শরীরে হাত দেওয়া এবং কাপড় ধরে টান দেওয়া যেন অতি সহজ হয়ে দাড়িয়েছে। হিজড়াদের এসবের কোন প্রতিবাদ করা  যায় না। সাংবাদিক ছবি তুলতে গেলে করে লংকা কান্ড,খোলে ফেলে পরনের কাপড় বলতে থাকে আমাদের কাজ চাই। তেড়ে আসে মারতে তাই সবাই ভয় পায়। কিন্তু প্রশ্ন হল কেন তারা টাকা উঠাবে।

হিজড়া বলে চাকরী পায় না বলে,নাকি আছে টাকার নেশা রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন। অফিস সহকারি পদে চাকরীর জন্য ত্রিশজনকে বাচাই করে সমাজসেবা অধিদপ্তর। ছয়টা প্রতিষ্ঠানে দুইজন করে মোট বারজনকে চুড়ান্ত করাও হয়। শেষ পর্যন্ত কারো চাকরী হয়নি কারণ ডাক্তারি পরীক্ষায় কেউ হিজড়া বলে প্রমান হয়নি। যেমন মিরপুরের গুরুমা রাখী যে গোপাল গঞ্জের রাকিবুল হাসান। কিন্তু তাকে দেখে বুঝার কোন উপায় নাই তিনি হিজড়া নয়। প্রচন্ড প্রভাবশালী রাখী যে কিনা সাংবাদিককে একবার মেরেছে। এদিকে আবার সমাজ বিজ্ঞানীরা ডাক্তারী পরিক্ষার সাথে একমত নয়। আমিও সমাজ বিজ্ঞানীদের সাথে একমত কারণ রাখীরও আছে ছেলে বন্ধু (পারিক)। সমাজ বিজ্ঞানী ড. আমানল্লা ফেরদৌস বলেন কিছু হিজড়ার female organ আছে কিন্তু female organ কাজ করে না আবার কিছু হিজড়ার male organ আছে কিন্তু male organ কাজ করে না।

এখন যদি সমাজসেবা অধিদপ্তর চলনে নারী হিজড়াকে male organ আছে বলে পুরুষ সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে হবে না। আর এই কারণে রাখী চাকরীর জন্য ডাক্তারি পরীক্ষায় বাদ পড়ায় প্রচন্ড ক্ষুব্ধ।সরকারের পাশাপাশি গণমাধ্যমকেও বিশ্বাস করে না হিজড়ারা। এই ক্ষোভ জমে তারা এখন অন্যায়কারী একে আইনের ভাষায় কি বলা যায়। অনেক হিজড়া বিত্তশালী বাবার সন্তান। তবে শুধু হিজড়া হওয়ার কারণেই বঞ্চিত হন বাবার কোটি কোটি টাকা হতে।আর এই অপমান অবজ্ঞা,অবহেলা ও না পাওয়ার বেদনায় ওরা গঠে তোলে নিজের অবৈধ সাম্রাজ্য আর জড়িয়ে বড় অপরাধে। নাজমা হিজড়া আশির দশকে ঢাকাতে এমন সাম্রাজ্যের একক অধিপতি ছিল এখন সে বৃদ্ধ। তারই শিয্যরা এখন ঢাকাকে ভাগভটোয়ারা করে চাঁদা তোলে।

এক সময় এত ক্ষমতাশালী ছিল যে কোন হিজড়া মাথা তুলে কথা বলার সাহসও করতো না। তবে গুরুমা হিসাবে শিয্যদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় এই নাজমা হিজড়া। এলাকা নিয়ন্ত্রণ বা দখলে নিতে চলে টার্গেট হত্যাকাণ্ড,বিষ খাইয়ে হত্যা করে পিংকি হিজড়াকে আরেকজনকে করা হয় গুম। রাখী এত বেপরোয় যে পুরো মিরপুর দখলে নিতে মরিয়া সে।আর এসব হত্যাকারী ও অপরাধীদের পুলিশ খোজে পায় না পুলিশ এসব দেখতে চায় না।(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
৭ম পর্ব।

কিন্তু কেন পুলিশ চুপ থাকে,তারা হিজড়া বলে নাকি অন্য কোন লেনদেনের কারণে। হিজড়ারা কি রাষ্ট্রের নাগরিক না,প্রতিটি নাগরিকের মালিকইতো রাষ্ট্র। তাহলে হিজড়া কেন আইনের সহযোগিতা পাবে না।মানুষ যেমন তাদেরকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখে তাহলে পুলিশও কি তাই,নাকি তাদের রোজগারের ভাগ পায়,কি জানি। পিংকি হত্যার আইনত কোন বিচারই হয়নি, হায়দার হত্যার জন্য জেল খাটে তার আপনজন তাও পুলিশের মিথ্যার জাল। মানিক যার নাম এখন সেই সেজুতি, এই সেজুতি প্রাণে বেঁচে গেলেও শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে গুলির জখম না মরে কোন রকম বেঁচে আছে সে। তাকে পিঠে পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে কচি হিজড়া, মাথায় আঘাত করে যেন মরে যায়। আর মরে গেলে প্রতিপক্ষ থাকবে না এবং প্রমান থাকবে না হামলার তাই মাথা থেতলে দেয় হামলাকারীরা। কিন্তু কেন এই মরণ লড়াই।

উত্তর একটাই টাকার ভাগাভাগি, প্রভাব বিস্তার জায়গা দখল। এই হামলা করে দেশের আইন এবং সাংবাদিক সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে কচি হিজড়া চলে যায় ভারতে। আর নিরাপদে চলে যেতে সাহায্য করে পুলিশ ও আরমানেরা। একটা কল্পনা করা যেতে পারে হিজড়ারা কত টাকা চাঁদা তোলে তার। একজন প্রতিদিন ২০০০ টাকা,মাসে ৬০,০০০ টাকা,প্রতি দলে ২৫ জনে আয় ১৫ লাখ টাকা,১০ দলের আয় ১.৫ কোটি। বিয়ে এবং বাচ্চা জন্ম নেওয়া বাড়ি হতে হাতিয়ে নেয় পাঁচ হাজার হতে এক লাখ টাকা। এই টাকা সব যায় গুরুমার হাতে তাই কোন কোন গুরুমা ঢাকাতে বাড়ি গাড়ির মালিক। তবে শিয্যদের সব সময় নিজের সমান সমান টাকার ভাগ দিয়েও ঢাকাতে বাড়ি এবং এলাকায় অনেক সম্পদের মালিক ছিলেন। নিজের পরিচয় গোপন করে ফ্লাট কিনেন হায়দার হিজড়া।

এই হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করে তার প্রতিপক্ষ, সে মারা যাওয়ার পর তার শিয্যরা তার কিনা ফ্লাটে থাকেন। কিন্তু তাকে মারা হল কেন? জামালপুর ইসলামপুরে হায়দারের বাড়িতেই তাকে হত্যা করা হয়। হায়দারের বোনের করা মামলায় স্বপ্না,কচি,পিংকিসহ সাতজনকে আসামি করা হয়। স্বপ্না হিজড়া ফার্মগেট এলাকার পাশাপাশি মগবাজার এলাকাও দখল করে নিয়েছে। ঢাকার বাড়িতে সিসি ক্যামরা এবং শিয্য দ্বারা পাহারা থাকায় রাতে গ্রামের বাড়িতে একা পেয়ে হত্যা করে। আর মজার ব্যাপার হল পুলিশ ধরে হায়দারের ভাইকে এবং সে জেল খাটে ছয় মাস। হত্যাকারী হিজড়ারা হায়দারের ভাইকে বিশ লাখ টাকা দিতে চেয়ে ছিল। সেখানের পুলিশও হিজড়াকে সন্দহ করে। কিন্তু পুলিশ আসামি ধরতে পারে না কারণ অজানা থাকুক আপনার আমার তবে চৈতন্য খোলা রাখবেন কারণ এই সমাজ আপনার, এই দেশ আপনার কোন পলিটিক্সম্যানের নয়। আমার চাহনিতে যারা নিজেকে মতিমান ভাবে আর অন্যকে ভাঁড় মনে করে, এবং সত্যকে দূরে রাখে মিথ্যার আবরণের কুদরতে টাকা রোজগার করে সেটাই রাজনীতি যাতে জনগণের কোন শুভ হয় না।

শহরে বিলাসী জীবন গ্রামে বিশাল অট্টালিকা,কিন্তু হায়দার একজন হিজড়া ,কত টাকার মালিক ছিল সে, আর কি করে এত টাকার মালিক হল। কিন্তু এসবেও তার চিত্তপ্রসাদ ছিল না আরো চাই। যেসময় সে নিহত হয় তখনও ইসলামপুর গিয়ে ছিল ব্যবসার কাজে, ইসলামপুর টাউনে একটা মার্কেট ক্রয়ের ব্যাপারে কথা শেষ করতে। যে মার্কেট এক কোটি টাকায় কিনতে গ্রাহক ছিল আর সেই মার্কেট হায়দার হিজড়া কয়েকগুন বেশি টাকায় কিনার জন্য প্রস্তুত ছিল এবং মালিক পক্ষের সাথে কথা শেষ করে বাড়ি ফেরে ওই রাতে সে খুন হয়।কিন্তু কি করে অন্য হিজড়া জানলো হায়দার বাড়িতে, কি করে খুন করে অপরাধী নিরাপদে চলে যায়, এলাকার কেউ জড়িত কিনা তা জানা যায়নি, যাবেও না। তবে কিছু লোক জেল জুলুমের স্বীকার হয়েছে এই হত্যাকান্ডকে ঘিরে। তবে সব কিছু দমিত হয়েছে রাজনীতির তলায়। বিচার তুমি হাওয়া হাওয়া। ঢাকার ফ্লাট হায়দারের শিয্যদের দখলে, গ্রামের প্রসাদ শূণ্য, আর খুনীরা তার রাজ্যের রাজা আইন অন্ধ রাজনীতি চলছে চলবে।
(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
৮ম পর্ব।

ইসলামপুরের সবচেয়ে বড় মার্কেট ক্রয়ের ক্ষমতায় বুঝা যায় হায়দারের টাকা বাড়ার সাথে সাথে শত্রুও বাড়ে। কিন্তু পুলিশ অবেক্ষণ শেষ হয় না, পুলিশ বলে সব মোটিভ আমরা তদন্ত করে দেখছি, কিন্তু কত দিন। তাহলে কি আইন সময়ের কাছে বন্ধি নাকি চলছে অন্য কোন রাজনীতি। আমি অপেক্ষা করি প্রেয়সী আসার মত সেই বিকাল চারটা হতে, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত, এরপর ভোর চারটা, সকাল পেরিয়ে রবি আকাশে প্রেয়সী হয়তো পথ ভুলে অজানায়।
আমি ফুল হাতে অপেক্ষা করি তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্য,এই অপেক্ষা যন্ত্রণার শেষ হওয়ার নয়, আইন তুমি আমার প্রেয়সী। সুনিদিষ্ট নাম থাকার পরও আসামী ধরা হয়নি,পুলিশ বলে প্রকৃত আসামী এবং তাদের অবস্হান জানতে সময়ের দরকার কিন্তু কত সময়। এক বছর নাকি অনেক বছর ,আর আসামী রাজধানীতে ঘুরে বেড়ালেও অবস্থান জানা যায় না। কিসের এই রাজনীতি, কেন তিনটা হিজড়া খুনের একটিরও বিচার হয়নি।

তৃতীয় লিঙ্গ স্বীকৃতি পাওয়ার পর সমাজ সেবা অধিদপ্তর তাদের চাকরী দেওয়ার জন্য ডাক্তারী চেক-আপ করতে গেলে সব ভেস্তে যায়। আর এতে সরকার হাত ধুয়ে পরিস্কার হয়ে বসে থাকে। এদের অভিযোগ আমরা স্বীকৃতি ফেলেও মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা পাইনি। তারা বলে বাসা ভাড়া পায় না, টাকা জমানোর জন্য ব্যাংক সেবা পায় না, হাসপাতালে সেবা পেতে কষ্ট, গণপরিবহনে কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হাসির পাত্র। বার-তের অর্থ বছরে সরকার সাত জেলায় ৬৬ লাখ টাকা বরাদ্দ করে হিজড়াদের ক্ষালনের জন্য। ২০১৩ হতে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৬ কোটি টাকা হিজড়ার জন্য খরচ করে সরকার আর এতে ৭০০০জন হিজড়া উপকারভোগী।

উপবৃৃত্তি, চিকিৎসা, বাসস্থান এসব খাতে সরকার খরচ করে হিজড়ার জন্য। এত সুবিধার পরও কেন এরা জীবনমান বদলায় না। যানবাহনে ভদ্র লোকের কাছে হাত পাতা পুরানো অভ্যাস। সস্তা পন্থায় টাকা রোজগার করার সহজ উপায়ের যে অভ্যাস তা ছাড়তে পারছেন না বলেন আবদুর রাজ্জাক (পরিচালক,হিজড়াদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসসূচী)। আসলে তা ঠিক।মিরপুরে গুরুমা রাখীর শিয্যরা সরকারি প্রশিক্ষণ পাওয়ার পরও যানবাহনের যাত্রী হতে টাকা তোলা বন্ধ হয়নি। এই সময় সাংবাদিক ছবি উঠাতে গেলে সবাই মিলে ক্যামরা নিয়ে ভেঙ্গে ফেলে, মারতে তেড়ে আসে। তাহলে কি অ্ভ্যাস বদলানো যাবে না। তাই বলে থেমে থাকা যায় না তাই হাত বাড়ান একটি সংস্থা।

এবং হিজড়াকে অপরাধ করা হতে দূরে রাখতে এগিয়ে আসেন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। উত্তরার বাওনিয়া এলাকায় আপন গুরুমা ২৫জন শিয্য নিয়ে থাকেন এক বাড়িতে। এদের কেউ কবুতর পালেন, কেউ আল্পনা আঁকেন, কেউ কেউ রান্না বান্না করে এবং অবসর সময়ের নাচ গান করে। তারা বলেন তখনই খারাপ লাগে যখন মানুষের কাছে হাত পাততে হয়, এভাবে ভিক্ষা করে ও জোর করে টাকা রোজগার করতে ভাল লাগে না। আপন বলেন আমরা যদি সম্মানের সাথে ডাল ভাত খেতে পারি তাহলে মানুষকে অপমান করা, হাত তালি দেওয়া, নাচ গান করা, চাঁদাবাজি করা এবং কাপড় খোলে ফেলা করবো না। যখন নিজে কাজ করে খাব তখন আমরা ঠিক থাকব এবং মানুুষ আমাদের সাথে মিলবে আমরাও মিলবো মানুষের সাথে। আমরাও শিক্ষিত মানুষ আর কতকাল ভিক্ষা করে খাবো।
তাই এমন আগ্রহ দেখে তাদের পাশে এসে দাঁড়ান অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান ও উত্তার ডিসি বিধান ত্রিপুরা। মানুষ যে তাদের আচরণে অতিষ্ট হয়ে যায় এবং তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে আমাদের উদ্যেগ বলেন বিধান ত্রিপুরা।

তাদেরকে যদি একটা প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে দেওয়া যায় তাহলে কাজ করে খাবে এবং সহজভাবে সমাজে বাস করবে ভদ্র হয়ে আমরা স্বস্তি পাব তারা পাবেন সম্মান। দুই পুলিশ কর্মকর্তা এদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সেলাই মেশিন কিনে দিয়েছেন আর এতে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ড্রেস তৈরি করবে এতে জীবনমান ভাল হবে। আমরা কাজ করেই খেতে চাই আর এতে খুশি। বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে আমরা অর্ডার নিয়ে আসবো প্রথম তারপর তারা আস্তে আস্তে সব নিজেরা করতে পারবে। আমরা তাদেরকে ভাল রাস্তায় তুলে দিলে তারা অপরাধমুলক কাজ করবে না সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে বলেন হাবিবুর রহমান। কাজটা যে অনেক শুভ এতে কোন সন্দেহ নেই,দেখা যাক আপন গুরুমার শিয্যরা হিজড়া হতে মানুষ বনে কিনা। এই প্রকল্প যদি সফল হয় তাহলে সারা ঢাকায় কাজ করার চেষ্টা করেন এই দুই জন মহত ব্যক্তি। এই যেন মরু পান্তরে এক ফোটা প্রাকৃতিক জল, আমরা যেমন হিজড়া দেখলে হিজড়া হয়ে যাই তেমনি পুলিশ দেখলেও স্বাধীন দেশে হিজড়া হতে হয়, কিন্তু এই ধারনা কিছুটা দূর হতে সাহায্য করলো এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। তাই ফিরে যাই পুরাতন স্লোগানে পুলিশ জনগণের বন্ধু।
(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
৯ম পর্ব।

দুই হাতে উড়াই পোড়া স্বপ্নের ছাই, পিরিতি কাকন আর যেত আকুলতা। একান্তে প্রেম ভেঙ্গে গেলে পড়ে থাকে ঝড়ু ঝড়ু স্মৃতি আর বিষাক্ত চুল কাঁটা। পান্তিক রেখায় উড়ছে মেঘদল, ওদের চিনাবো বদ্ধ ভূমির ফাঁস। চার পাশে পুরুষ নেইতো কোন, যুথচার সব নৃপংশুকের নাচ। এই দুর্ভিক্ষে তুই আমি এক সুখী, চল যাই ভেসে দুহানিও মিলে দুর্ভাগ। বেপরোয়া নদী দ্বিধাহীন অস্নানোত, নিচু ফেলে মাটি আমরা পরস্পর।

সকাল হতে ছুটে চলে শহর সাথে ছুটে চলছি আমরাও। আমাদের সাথে ছুটে চলে কিছু অন্য লোক যাদের পরিচয় আছে সামাজিক স্বীকৃতি নেই। আসলে আধুনিকতার মোড়কে প্রগতিশীল হলেও সামাজিক হীনমন্যতা হতে বের হতে পারিনি আমরা।বয়ঃসন্ধি কালের পর হতে শুরু হয় লড়াই, তার বেড়ে উঠা বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাত, তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি ফেলেও বেঁচে থাকা খুব সহজ নয়। আমি রুপালী রূপান্তর হয়েছি যে দশ বছর হয়েছে তবুও যেন অস্বিত্ব সংকটে আছি অথচ আমি শিক্ষিত মানুষ অভিনয়ও করি। এই লড়াই যে কতটা কন্টক তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানে।

এক কথায় বলে বুঝানো যাবে না, প্রতি মুহুর্ত নিজেকে জাস্টিপাই করা, সমাজ তোমাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে তুমি খারাপ, তুমি ভুল, তুমি যা করছো সেটা ভুল করছো অন্যায় করছো, এবং সাথে সাথে সমাজ দন্ডের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে। যদি সমাজের নিয়ম অনুযায়ী চলতে না পারি সমাজ প্রতিনিয়ত শাস্তি দিবে এবং শাস্তি দেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। আর সেখানে দাড়িয়েই সবসময় নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করা এবং কখনো কখনো বলা যদি নিজের প্রতি নিজের বলার সেই আত্নবিশ্বাসটা থাকে তাহলে বলা তোর চেয়ে আমি সত্য, এই বিশ্বাসে প্রাণ দিব দেখো।

আচ্ছা রুপালী রূপান্তরিত হতে হবে এই সিদ্ধান্তটা কেন।
আসলে আমার যেটা মনে হয় অন্তর আর বাহিরের এই দুইটো জায়গার মিল না থাকলেতো একটা মানুষ সম্পূর্ণ হয় না। অন্তত আমি, বাকিদের কথা বলতে পারবো না আমার নিজের ক্ষেত্রে আমার সে রকম অনুভূতি ছিল, যে আমার হৃদয়ের সাথে আমার শরীরের বাহিরের যদি মিল না হয় তাহলে আমি কখনো নিজেও স্বস্তিবোধ করছিলাম না যে সম্পূর্ণ নারী হিসাবে। যে কারণে বার বার মনে হয়েছে যে আমার বাহিরের গঠনটা পরিবর্তন হওয়া অত্যন্ত জরুরী। এখনো মনে পড়ে সে বাড়ি, সেই বাড়ির ছাদ যেখানে আমি একা একা বসে আকাশ দেখতাম।

বসে বসে হাঁটুর ভিতর মুখ লুকিয়ে কাঁদতাম, কাউকে কিছু বুঝানো যেত না বুঝাতে পারতাম না। আর এই না পারাটা নিজের সাথে ছাড়া পৃথিবীর কারো সাথে বলা যেত না।
মা কি বলতেন?
(কান্না) মা…..মাতো এসমাজের একটা অংশ ছিলেন, তারপরও সন্তান হিসাবে কখনো অবহেলা ছিল না। শুধু পরিবারের সবার এক কথা ছিল আমাকে তাদের সমাজের একজন হতে হবে, আমি যদি সমাজের মত হতে না পারি নিন্দার শেষ নাই, লজ্জার শেষ নাই।

আমাদের সমাজে পুরুষকে সিংহের মত মনে করা হয়, পুরুষ যেন একটা প্রতুল।
তুমিতো অনেক পরিচিত মুখ, যখন রাস্তাঘাটে বাহির হও অন্যরা কি তীর্যক দৃষ্টি ফেলে।
কিছু কিছু জায়গায় এখনো হয়। একটা ঘটনা বললে বুঝতে পারবে। আমিতো অভিনয়নের পাশাপাশি মডেলিংও করি তাই বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন জনের সাথে মিশতে হয়। সেই রকম এক জায়গায় এক মহিলা খুব তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ব্যবহার করে ছিল।তখন তাকে আমি বলি কেন আপনি এমন করছেন তখন সে অত্যন্ত চিড়-খাত্তয়া ভাষায় বলে—।
(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
১০ম পর্ব।
তোর মত হিজড়ার সাথে আমি কথা বলতে চাই না। কেমন করে আমরা সমাজের এই চুত মার্গ থেকে বাহির হতে পারব। এই চুত মার্গ হতেও সব চেয়ে অন্ধকার দিক হল মানুষের মননশীল মন না,অশিক্ষা কুশিক্ষা এর জন্য দায়। যাদের আমরা শিক্ষিত মনে করি তাদের হতে যখন বাজে মন্তব্য পেতে হয় তখন ভাবতে হয় এটা কি পুথিগত শিক্ষার সমস্যা, আসলে একটা লোকের জন্য সামাজিক সৃজনশীল শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষা যদি ভিতর হতে না হয়,যদি মানুষের ভিতর পরিবর্তন করতে না পারে তাহলে ওই শিক্ষা পুথির ভিতর থেকে গেল। যদি মানুষের ভিতরকার শিক্ষিত হয় তাহলে সগোত্রীয়দের সম্মানের পাশাপাশি অন্য লিঙ্গের মানুষকে সম্মান করবে।

একজন মানুষ রূপান্তরকামীতে পরিনত হওয়ার ক্ষেত্রে মা বাবার বড় ভূমিকা থাকে, বাহিরের মানুষের সাথেতো লড়াই করা যায় কিন্তু ঘরের মানুষ, আপনজন তাদের সঙ্গে লড়াই করাটা খুব একটা সহজ নয়। ভারতে অধিকাংশ হিজড়ার মা বাবাকে কয়েকটা সংগঠন ক্লাউন্সেলিং করে এবং সুন্দর করে যুক্তি দিয়ে বুঝান কিন্তু আমাদের দেশে সেই রকম এখনো হয় না।
আচ্ছা রুপালী এতে কি কাজ হয় বলে তোমার মনে হয়।
এটা নিয়ে আমার বন্ধুদের সাথে কথা হয়, যা বুঝলাম যে পরিবারের লোকদের ক্লাউন্সেলিং বেশি বেশি দরকার। আমি বেশ কয়েক বছর ধরে পরিবার হতে বিচ্ছিন্ন থাকি তারা কিছুটা অর্থনৈতিক সাহায্য করলেও তাদের সাথে রেখে মায়া মমতা ও ভালবাসা দিতে প্রচন্ড অনিহা।

বিদিতা ভট্টাযার্চ (মনোবিদ,কলকাতা) বলেন, মা বাবারই সবচেয়ে বেশি ক্লাউন্সেলিং দরকার কারণ তাদের একটা সন্তান হিজড়া এইটা মেনে নেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে যায়। তাই মুল হতে পরিবর্তন দরকার, তারা যে চেষ্টাটা করেন তা খুব ভুল চেষ্টা। অনেক সময় জোর লত্তয়া করেন, অনেক সময় বকাবকি করেন, এমনকি মারধরও করেন। অনেক সময় মা বাবা হতাশার গভীরে চলে যান তখন হিজড়া সন্তানটি আরো হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় সন্তানটি ওই সময়টাকে মোকাবেলা করতে হিমশিম খেতে হয়।
তোমার মা বাবার কি অবস্থান ছিল তোমাকে নিয়ে। মা বাবার দুঃখ বুঝি,আসলে তাদের সন্তান জন্ম নিয়েছে ছেলে হয়ে কিন্তু এখন মেয়ে অতএব তাদের কষ্ট লাগার কথা। সত্যিকার অর্থে যে সমস্যা হয় সেটা হচ্ছে প্রতিবেশীদের নিয়ে।

প্রত্যেকের পছন্দ আছে,এমনকি রুচি পছন্দ হরেক রকম, জেন্ডারের ব্যাপারটাও খানিকটা তাই, এবং জেন্ডার যাই হোক সে যেরকম আচরণ করতে চায় তার জেন্ডার নিয়ে সেখানে দ্বিতীয় কেউ তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না, তাদের মত করে চালানোটা সঠিক নয়। আমি আমার ছেলেকে মেয়ের মত সাজতে দেখেছি, তখন রীতিমত আমার পায়ের তলা হতে মাটি সরে যায়। মিড়িয়া দেখে, বই পড়ে সব কিছু জেনে আমি জানলাম এই জিনিসটা পুরা আলাদা, আমার সন্তান ঈশ্বরের এমনই কৃপা। এখন তাকে মেনে নিতে আমার কোন অসুবিধা নাই,ভয় নাই পাড়া প্রতিবেশীর তীর্যক নজরে,রুপালী আমার সন্তান আমি তার মা।
কী কী সমস্যা তোমার সামনে আসে।
সরকার যেত আমাদের স্বীকৃতি দিন না কেনো তারপরও সরকারি কোন কাজে গেলে আমার আইডি প্রমাণ করা লজ্জাজনক হয়ে পড়ে,সরকারি উচ্চস্তরে কিছুটা অনুবেদন দেখালেও নীচতলায় যারা তারা আমাদের নাকাল করে, বলে প্রমান দেখাতে হবে।

আমিতো জানি আমি কী কিন্তু লোকও বুঝতে হবে আমরা কী,আর সেটা এখনো হচ্ছে না। রুপালী শিক্ষিত নয় শুধু শাররীক গঠনেও অপরূপ,তাকে দেখে বুঝা যায় না সে এক সময় ছেলে ছিলো।চালচলনে পুরাই এক মেয়ে মানুষ, আমি মেয়েদের নারী বলতে নারাজ কারণ এতে নারী মানুষ হয়ে উঠে না বা সমাজ মানুষ হয়ে উঠতে দেয় না। তাই আমি নিজেকে মেয়ে মানুষ বলি যা পুরুষ মানুষ হতে শাররীক গঠনে আলাদা। আমরাও অন্য মানুষের মত চিন্তা চেতনায় কোনভাবেই কম নয়, সংগ্রাম করে জীবন চালাতে পারি, শুধু একটু সুযোগ ও সম্মান দরকার তবে কোনমতে করুণা চাই না।
(চলবে)

সরকারী চাকরী করি

আমি একজন ছোটখাটো চাকরীদার
মাইনা পাই কত আর।
তবে চালচলনে থাকতে চাই জমিদার
তাইতো ঘুষ খাই এবং অন্যদেরও খাওয়াই।
বাড়ি চাই গাড়ি চাই বাচ্চাদের বিদেশ পাঠাই
এত টাকা কোথায় পাই তাইতো আমি ঘুস খাই।
জানি আমি হারামেতে আরাম নাই
তাইতো ভাই দাড়িটা আরো একটু বাড়াই।
নীতিতে অটল থাকি বসদের ভালোবাসি
মাঝে মাঝে মক্কা মদিনাও স্বপ্নে দেখি।
হাতে তসবি মুখে কলমা ভালোবাসা
আমার এমনিতে পাওনা।
শুনেন হে জনগণ আমিতো নয় কারো আপনজন
তাই আমায় শায়েস্তা করা অতি প্রয়োজন।
আপনার পাশেই আমার অট্টালিকায় বাস
দুদকে খবর দিয়ে আমায় দিন না বাঁশ।

তবুও খদ্দরের আশায় রাস্তায়

স্বাধীনতার মাস তাই অরূপ সাজ। রাজধানীর বিজয় সরণি সিগনালের রূপ যেন জ্বলজ্বল করছে। রূপ ফুটেছে ওপারের সিগনালেও। লাল-নীল বেগুনী রঙের ঝাড়বাতিগুলো যেন এ আনন্দের রাতের অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আছে। সড়কের দু’ধারে সারি সারি লাল-সবুজের পতাকা পতপত করে উড়ছে। মধ্য রাতের সড়ক। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে খানিকটা বিশ্রাম নেয়ার ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস ফেলছে। তবে সে নিঃশ্বাস যেন লেপ্টে দিয়ে যাচ্ছে রাতের যন্ত্রগুলো। তেমনি একটি যন্ত্র থেকে (প্রাইভেটকার) উচ্চস্বরে ভেসে এলো “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা” শিরোনামের গানের সুর।

এদিকে এমন গান আর সুরেও ওদের মন গললো না। সন্ধ্যার পর থেকেই পুলিশ তাড়া করছে। এ বেলায় যে ওরা ভারি বিরক্ত, ক্লান্ত তা চোখের তির্যক চাহনিতেই প্রকাশ পাচ্ছিল। পুলিশের তাড়া খেয়ে অন্যেরা চলে গেছে। তবে রঙিন বাতিগুলোর সঙ্গ নিয়ে ‘ওরা’ তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। ওদের একজন লিমা। কড়া মেকআপ আর ছলনাময়ী অঙ্গ সাজের কারসাজিতে বয়সের সঠিক সীমানা দেয়া যাচ্ছিল না। কোন বেলায় পান খেয়েছিল, তা কে জানে? তবে পানরস শুকিয়ে গেলেও ঠোঁট খানিকটা লাল রয়েছে এ বেলাতেও। পাশ দিয়ে ছুটে চলা গাড়িগুলোর হেডলাইটের আলো যখন ওর মুখে গিয়ে পড়ছে, তখন পানমাখা ঠোঁট দুটো বেশ রক্তিম হয়ে উঠছে। ঠোঁটের নিচে লেগে থাকা এক চিমটি শুকনো চুনও সুভ্রতা ছড়াচ্ছিল অমন আলোতে।

গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। খানিকটা আনমনা বটে, তবে পথচারী পুরুষেরা ওর দৃষ্টি এড়াতে পারছে না। চোখ ঢুলুঢুলু। কিছুটা লালচেও। যে গাছে ভর করে দাঁড়িয়ে লিমা, তা যে একেবারেই সরু এমনটিও নয়। তবুও আড়াল করতে পারছে না লিমা নিজেকে। শরীর থেকে তার পেট যেন বেরিয়ে আসছে।কাছে গিয়ে কথা বলতেই ওড়না দিয়ে পেট আড়াল করার চেষ্টা। কিছুটা সংযতও বটে। কিন্তু পুরো পেট ঢাকার চেষ্টা বৃথাই রইল। ওড়নার বাকি অংশ দিয়ে মাথা ঢেকে নেয় লিমা। কথা বলায় প্রথমে অস্বস্তি ছিল, তবে আলাপের সৌজন্যে মুহূর্তেই জড়তা কেটে যায ওর। এ পথে আসা আরও দশজন যৌনকর্মীর মতোই লিমার জীবন কথা। সমাজ, পরিবার থেকে নিজেকে বাঁচাতে অনেক সময় ওদের কথায় অসচ্ছতা থাকে, থাকে সত্যের সঙ্গে মিথ্যার সংমিশ্রণও। হয়ত লিমাও তার ব্যতিক্রম নয়। সত্য-মিথ্যার মাপকাঠিতে ওর জীবনকথা মূল্যায়ন করা না গেলেও জীবনযুদ্ধে যে এক পরাজিত সৈনিক তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিল। না হলে মধ্যরাতে খদ্দেরের আশায় এমন শরীরে কেউ রাস্তায় দাঁড়ায়!

কৈশোরের সীমা না পেরুতেই এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ঢাকায় আসেন অন্যের বাসায় কাজের বুয়া হিসেবে। ভালোই কাটছিল সে সময়। কিন্তু ভাগ্য বিড়ম্বনায় সে সুখ স্থায়ী হয়নি তার। বাসার মালিক বিদেশ চলে যাওয়ার পরে ছন্দ পতন ঘটে লিমার জীবনে। পাশের বাসার আরেক বুয়ার সঙ্গে পরিচয় হয়েই জীবনের স্রোত বিপরীত মুখে প্রবাহিত হয় তার। ১৪ বছর বয়স থেকেই ফার্মগেটের হোটেলে দেহ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন এ কিশোরী। প্রায় ১৩ বছর ধরে রয়েছেন এ পেশায়। আলোর পথে ফেরার চেষ্টা ছিল। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি। রূপ আর গতরে ভাটা পড়ার পর ছাড়তে হয়েছে হোটেল আঙ্গিনা। এখন রোজ রাস্তায় দাঁড়িয়েই পুরুষের সঙ্গী হয় লিমা। দিনে ঘুমান ফার্মগেট পার্কে। আর নিশি কাটে ঢাকার ব্যস্ততম সড়কে খদ্দেরের পথ চেয়ে।

সুখ টানে নয়, সিগারেটের ধোয়ার সঙ্গে দীর্ঘ নিঃশ্বাসও ফেলেন লিমা। বলেন, ‘স্বাধীনতা নাকি কিসের দিন আইজ! আগ রাইত থেহে পুলিশে জ্বালাতন করতাছে। ভোরে ভিআইপি যাইব বলে আমাগো আর দাঁড়াইতে দিচ্ছে না। দৌড়ানি খায়া অনেকেই চলে গেছে।’ পেটের উপর অসহায়ত্বের হাত বুলিয়ে বলেন, আমি আছিই। দুটি কাজ করেছি। কন তো এমন ড্যাবড্যাবা প্যাট নিয়া কেউ রাস্তায় খাড়ায়! কি করুম? সবই কপাল। নইলে ভাতারের নেশার ট্যাকা পামু কই? দুঃখ ভুলতে নিজেও তো খাই।পেট নিয়েও লিমা রাস্তায় নিজের দেহ বিক্রি করে জীবন সচল রাখার জন্য অপর দিকে আতিয়া মহলের পাঁচ তলায় বসে হুংকার দেয় মর্জিনা।ঢাকা যেন মেক-আপ পরা নতুন বউ আর সিলেট যুদ্ধক্ষেত্র কিন্তু রাজনীতি লিমার পিছনে ছুটতেই যেন ভালবাসে।

৯৩৬ মিলিয়ন বিশ্ববাসীর জন্য পযাপ্ত খাওয়ার অভাব, ২০৮৬৪ জন প্রতিদিনই মরে খাওয়ার অভাবে। আমার দেশে মরা ও ভুগা থাকার সঠিক হিসাব আদৌ পাওয়া যাবে কি জানি না। আমি, তুমি কিংবা তোমরা সবাইতো ভালবাসি প্রাণপ্রিয় দেশটি, দোহাই তোমাদের তোমরা জঙ্গি হয়ে আমাকে হত্যা কর না তোমাদের টাকা লিমাকে দাও তার দোয়ায় তোমরা হয়তো দোজগে যাবে না।

# Manabzamin

সুখ অসুখের রাজ্য

এই সমাজ এই জীবন বাংলার
কেউ সুখী কেউ জনম দুঃখী।
অনেকে সুট টাই পরে চোখে লাগায় কালো চশমা
তাই সে দেখে না দিনের আলোটা।
ভদ্র বলে দেখে না রাস্তার অভদ্র পরিচয়হীন বাচ্চাকে,
কিন্তু রাতের আধারে ঠিকই দেখে বস্তির জোছনাকে।
অবিরাম চুপি চুপি মুখোশ পরে চেহারাটা ঢেকে দিয়ে হয়ে যায় বহুরূপী।
সমাজটা জানে আমি দানবীর সমাজসেবী,
দিকে দিকে রব উঠে আমার ভাই তোমার ভাই কদম ভাই কদম ভাই।
কদম ভাইয়ের চরিত্র গোলাপের মত পবিত্র।
মেয়েটা দেখতে চেহারাটা পেতনীর ছেলেটা হয়েছে গাজায় ধনী।
বউটা শুনেনা একটা কথাও যে, মঞ্চে ভাষাণ দেয় নীতিবান বাক্যরে।
দিনে আনে দিনে খাওয়া লোকটা আসলে সুখী যে।

সূর্যমুখী ও সময়ের শেষ সংলাপ

সবাই বলে ভালবাসা নাকি স্বর্গ থেকে আসে, আবার স্বর্গে চলে যায়। সূর্যমুখী পৃথিবীর আলো বাতাস পানির মাধ্যমে জন্ম নিয়ে সুর্যের দিকে মুখ করে থাকে। এবং আকাশে চলে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা, শিশিরের জন্ম কিন্তু আকাশে। শিশির আকাশে না থাকে পৃথিবীতে চলে আসে। শীতের সকাল বেলায় ঘর থেকে বাহির হলে আপনি দেখবেন শিশিরটা ঘাসের উপর সূর্যের আলোয় মুক্তার দানার মত চিক চিক করে জ্বলছে। এক পৃথিবীতে জন্ম নিয়ে আকাশে চলে যেতে চায়, আরেকটি আকাশে জন্ম নিয়ে পৃথিবীতে এসে যায়। এই দুয়ের মাঝে আদান প্রধাণটা কি ভালবাসা নয়?

কোন এক শিশির ভেজা শীতের সকালে তাকে আমি যেন এই প্রথম দেখি, এ কি সে যেন সূর্যমুখী! তাহলে আমি কি শিশির? আমার খণ্ড খণ্ড, সিকি সিকি, সময়গুলো আজ যেন সূর্যমুখীর দখলে তাই মুহুরী নদীর নীল জলে তার মুখ দেখি, আমার বাড়ির পাশে মুহুরী ও ফেনী নদী। পানিতে পরিপূর্ণ নদীর পাশে বসে আমি কি তাকে ভাবি, না না আমিতো তাকে ভালবাসি বলিনি। তাহলে কেন তাকে অনুভব করি?

এক সময় এই নদীতে জোয়ার আসত, ভাটা হত শীতের সময় নদীতে পানি থাকত না ওই পাড়ের জেলেদের পরিবার পরিজন নিয়ে শীতের সময় কষ্ট করত। কারণ বর্ষায় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও শীতে তা সম্ভব হত না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের ভাগ্যের পরিবর্তন অতি সহজে হলেও জেলেদের হওয়ার কথা না। শহীদ জিয়া ফেনী জেলার মানুষের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তিন নদীর মুখে বাঁধ দেওয়ার কথা বলেন…. শুকনা মৌসুমে নদীতে মিঠা পানি জমা করে, যাতে সেচের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষক ফসল ফেলতে পারে। কিন্তু ঘাতকেরা জিয়াকে বাঁচতে দেয়নি যদিও আমরা তিন নদীর মুখে বাধের মাধ্যমে পানি পেয়েছি, কৃষক মাট ভরে ফসল ফলাচ্ছে।

নদীর এই নীল পানিতে সূর্যমুখীর রুপ দেখতে ইচ্ছে করে আমার, বাঁশ পাতার মত লম্বা নাক, মায়াবী মুখ, হরিনী চোখ আমাকে যেন ভালবাসতে বলে। তাইতো বলে “নদীও নারীর মতো কথা কয়”, আজ কাল স্বচ্ছ এই নীল পানিতে কালো একটি প্রজাপতিও দেখা যায়, প্রজাপতির ডানায় লিখা জোছনা মনি। আমি পানিতে পাথর ছুড়ে মারি, আওয়াজ আসে পানি হতে জয় ভারতমাতা একি প্রজাপতি কথা বলতে পারে। আমি বিলীন হয়ে যাই আবারও পাথর ছুড়ে মারি, প্রজাপতিটাকে মারার জন্য এবারও সেই একই আওয়াজ জয় ভারতমাতা। এখন নদীর ধারে যেতে ইচ্ছে করে না পড়া লিখা, খাওয়া-দাওয়া কিছুই ভাল লাগে না এমনকি সূর্যমুখীকেও না।

লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় এদেশের জন্ম সাধারণ মানুষ যারা কৃষক শ্রমিক হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে যুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করেছে কোন প্রজাপতি মার্কা রাজনীতিক নেতাদের জন্য নয়। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সাধারণ মানুষ পবিত্র মনে করে মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। আর সেই মাকেই আমরা কবর দিই বাংলাদেশের মাটিতে !

সূর্যমুখী ক্লাসে আমাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে অবশ্য স্যারের চোখ ফাঁকি দিয়ে আজ তাকে আমারও খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, রক্ত গোলাপী কালো ঘর করা জামাটায় তাকে অপ্সরী মনে হচ্ছে। এ ভাবে শুধু ক্লাসেই, স্যারের চোখের আড়ালে চলে আমাদের দেখার লুকোচুরি। দিনে দিনে আমি তার প্রতি আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি সে হাসলে আমিও হাসি, মাঝে মাঝে পড়াটাই ভুলে যাই। কিন্তু তাকে দেখার সময় হঠাৎ হঠাৎ এক অজানা ভয় এসে আমাকে আচ্ছন্ন করে।

আমি ভয় পাই আমার মার জন্য কারণ আমি মাকে খুব ভালবাসি। আমার মনে হয় সূর্যমুখী মায়ের ভালবাসায় ভাগ বসাবে সূর্যমুখীর জন্য মায়ের প্রতি ভালবাসা এক নম্বর হতে নিচে নেমে যাবে। এখনও তার দিকে তাকাতে যদিও খুব ইচ্ছে করে সূর্যমুখী ইশারায় জানতে চায় কি হয়েছে শিশির। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকি চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে ভালবাসি-ভালবাসি মাকেই ভালবাসি। মাই আমার এক নম্বর ভালবাসা, মাই আমার রঙ্গিন পৃথিবী। মা না সূর্যমুখী এই দোলাচলের মাঝে সেকেন্ড সেকেন্ড, মিনিট মিনিট করে আমার যায় দিন। এমন আচরণে সূর্যমুখীও বিচলিত হয় কিন্তু কোন সুযোগ হচ্ছে না দুই জনে মিলে কথা বলার। ভয় এবং জড়তা দূর করতে চেষ্টা করি আমি জীবনটাই কি, যেন নাটক? সময়ের সাথে সাথে আমিও বুঝতে পারি মা ও সূর্যমুখীর ভালবাসার পার্থক্য। সূর্যমুখীর ভালবাসা অন্য রকম আস্তে আস্তে এই অন্য রকম ভালবাসাই আমাকে তার কাছে নিয়ে যায়। ভালবাসার পূর্বশর্ত একে অপরের সামাজিক মর্যাদা জেনে নেওয়া সেটাও আমার জানা হয় অতি তাড়াতাড়ি। কিন্তু এসএসসি পরীক্ষার পর দুই জনে কেমন করে যোগাযোগ করবো তাই ভেবে আমার মন প্রচণ্ড খারাপ হয়ে যায়.. তাই পরীক্ষার হলে যতটুকু সম্ভব তার সাথে থাকার চেষ্টা করি। এ নিয়ে অন্য সহপাঠীদের বাকা নজরও কম সহ্য করতে হয় না।

সূর্যমুখীর সবুজ সতেজ কচি কচি ভালবাসায়, অন্যদের ঝাল মিষ্টি কথার ভিতর ভালই সময় কেটে যায়। তার দুঃখী চোখ যেমন বলে ভুলে যেও না, আমিও তাই পরীক্ষা পর অফুরন্ত সময়। ফল প্রকাশে তিন মাস লাগবে এখন যেন সময় ফেনী বিলোনীয়ার রেলগাড়ী যার সব কিছুই অদৃশ্য ইশারায় চলে.যাতে করে কোটি কোটি টাকার চোরাচালানী আসে ফেনী শহরে। অলস দুপুর,মনের আয়নায় অতীত স্মৃতি একের পর এক ভেসে উঠায় আমি আলোড়িত হই, আসলে প্রতিটি মানুষই বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু স্মৃতির প্রয়োজন হয় অতীত স্মৃতি যখন ধূসর বিবর্ণ হয়ে যায়, তখনি মানুষ ছুটে নতুন স্মৃতির খোঁজে, আর এই স্মৃতি মানুষকে বেঁচে থাকার হয়তো প্রেরণা যোগায়।

তামান্না

দরজায় টক টক শব্দ শুনে তামান্না পড়ার টেবিল থেকে উঠে দরজা খোলে।
ও তুমি ?
হ্যাঁ আমি !! কেন,আমি আসতে পারি না?
আরে, তুমি ছাড়া এই শহরে আমার আর কে আছে। তামান্না কমলা রং এর ওড়না দিয়ে চোখ মুছে কয়েক বার ফোটা ফোটা জল লাবন্যময় মুখটাকে মলিন করে দেয়। কাল আমার পরীক্ষা তাই আমি মনে করছি মা আসবে দেখতে।
ও আচ্ছা, মার কথা মনে পড়ছে। তোমাকে ফোন করে নাই? আসতে না পারলেও একবার ফোনতো করতে পারে মা।
মা, –মাগো।
এই তোমাকে কোন দিন কাঁদতে তো দেখি নাই, আজ কি হল। মন খারাপ হলে পরীক্ষা ভাল হবে না আমার কথা শুনো, এই আমার কথা শুনো। সকালে তুমি পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে যাবে তাই এখন দেখা করে যেতে আসলাম। ভাল করে পরীক্ষা দিবা তোমার পায়ের নিচে শক্ত মাটি দরকার।
তুমি দোয়া করো।
হা হা হা (হাসি) দোয়া দিয়া পাশ করা যায়? ভর্তি পরীক্ষায় সবচেয়ে বেশী নাম্বার ফেলেও ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া যায় না যদি সে মাদ্রাসার ছাত্র হয়। হয়তো এদেশে দোয়া দিয়েই ছাত্র-ছাত্রী পার হবে একদিন। বরুড়ার চিকন সরু আকা বাঁকা রাস্তা আজ শুধু স্মৃতি। কুমিল্লা শহর টাকে মনে হয় আমার পৃথিবী এই শহরে সৌরভের বাস বলে হয়তো এত ভাল লাগে। কিন্তু কিছু কিছু লোক দেখলে কেন এত ভয় লাগে জানি না। ঘৃণায় কেন বমি বমি ভাব লাগে তা বুঝতে পারি না। সৌরভ শিক্ষিত বেকার গরীব এক ছেলে অথচ তার উপর সব ভরসা আমার। তাকে আপনজন থেকেও আপন লাগে।

(২য় খণ্ড)
তোর মত ছোট লোকের ঘরে আর থাকবো না তুই একটা হারামীর বাচ্চা।
ওই ওই, আমার মা বাপকে গালি দিলে ভাল হবে না তোর কপালে এই ঘরের ভাত উঠে যাবে।
আমিও আর থাকতে চাই না।
বউ-জামাইর ঝগড়া ফেল ফেল করে তাকিয়ে দেখতে থাকে দেড় বছরের তামান্না কি নিয়ে ঝগড়া বুঝতে চায় হয়তো। মেয়েটা ঝটকা মেরে কোলে তুলে জামাইর ঘর ছাড়ে রুপালী। মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি আসে, আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর। পাশের গ্রামের পরের গ্রামে রুপালীর বিয়ে হয় আব্বাস মিয়ার সাথে। রুপালী টকবগ যুবতী হয়ে উঠতে চোখ পড়ে আব্বাসের সাত ক্লাস পার হয়ে আর আট ক্লাস পড়া হয় না। রুপালীর বাপ-ভাইর কাছে আব্বাস বিয়ের জন্য প্রস্তাব পাঠায়। তারা তাতে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পায়, অনেক ধনবান শুনে খোঁজ খবর ছাড়া এক সপ্তাহের ভিতর বিয়ে দিয়ে দেয় রুপালীকে। বাসর রাতটা হয়তো সুখের ছিল।
না ভাবী সেই রাতও ছিল সাদা সুখের, প্রতি রাতে সে মদ খেয়ে বাড়ী ফিরত। আমি প্রথম প্রথম চুপ করে সহ্য করতাম আর যখনি তার খারাপ কাজের প্রতিবাদ শুরু করলাম, তখনি নেমে আসলো প্রচন্ড অত্যাচার। দেখো দেখো আমার শরীলটা মেরে আমাকে বেহুঁশ করে ফেলত। তোমাকে দেখাতে পারছি না আমি শরীরের সব অংঙ্গ সিগারেটের আগুন চেপে ধরত আমার গায়ে। এখন আবার তোমরা সবাই বলছো তার কাছে ফিরে যেতে।
মেয়ে মানুষ ফসলি জমিনের মত মন, শরীরের উপর অন্য লোক ফসল ফেলায়। যা মা যা, জামাই নিতে আসছে যা। স্বামীর পায়ের তলায় স্ত্রীর জান্নাত। তার পায়ের তলায় জাহান্নামও নাই মা । আমি আর তার সংসারে যাব না তার মেয়েটাকেও নিয়ে যেতে বলো। আমি তার মেয়েও রাখতে চাই না।

(৩য় খণ্ড)
আপা মেয়েটা কে? ঠিক যেন আপনার চেহারা। দোকানদারের এমন প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে রুপালী তামান্নার দিকে চেয়ে থাকে। চিকন একটা হাসি দিয়ে বলে আমার বোনের মেয়ে দোকানদারের সাথে মায়ের মিথ্যা পরিচয় দেওয়া যেন আত্মহত্যার মত লাগে।
জলদি জলদি এই দুইটা কাপড় প্যাকেট করে দিন আমি আবার কুমিল্লা ফিরে যেতে হবে। নিজের কামাই করা টাকায় মাকে শাড়ী কিনে দিতে গিয়ে পরিচয়হীন হয়ে যাওয়া, বাহ্ দুনিয়া!! আমার ভিতর যে দুইটি কিডনি একটি মায়ের আরেকটি বাবার মনে হয়। জানো সৌরভ মন চায় দুইটা কিডনিই শরীর থেকে চিড়ে ফেলে দিতে যে দিন মার বিয়ে হয় সে দিন খুব কেঁদে ছিলাম। ওই দিন থেকে শুরু ছোট দুই নদীর পানিতে প্লাবন, যে প্লাবনে আমার বুক প্লাবিত হত এখনো হয়। আমার সামনে মা বিয়ের শাড়ী পরে অন্য লোকের বউ হয়ে চলে গেলেন ছোট ছিলাম বলে বুঝতে পারতাম না,বলতে পারতাম না। কিন্তু বুকটা আমর তখন থেকে পাথর হয়ে গেছে যখনি মার কথা মনে পড়তো, ছুটে যেতাম তাঁর রুমটাতে, দাঁড়িয়ে থাকতাম নীরব হয়ে। তখন আমার বয়স হয়তো ৮-১০ হবে নানী যেন আমার মা হয়ে গেল।

রাতে নানীর বুকে স্বর্গ খোঁজতাম বড় হওয়ার সাথে সাথে মামনি ঘরের কাজ করতে দেওয়া শুরু করলো। কাজ না করলে মারতো, এখন যেমন বাংলা লাটসাহেবের বউরা চাকরানীদের মেরে নিউজ হেড়লাইন হয়। মা যখন নতুন বাবা কে নিয়ে তাঁর মায়ের বাড়ী বেড়াতে আসতো, তখন নানী আমাকে পাঠিয়ে দিত আমার কোন আত্নীয়ের বাড়ী, দেখা হতো না মায়ের সাথে। মায়ের দেখা পেতে, মায়ের একটু পরশ পেতে আজও আমি কেঁদে চলি। সব প্রতিকূলতায়ও কেমন জানি আমার লেখা-পড়া করতে মন চাইতো। নানী তাই মামনির চোখ রাঙ্গানী উপেক্ষা করে স্কুলে ভর্তি করায়,কাজ আর ভুল ভ্রান্তির নির্মম কষাঘাত এর ভিতরে আমার জীবন আটকে গেল। তারপরও পড়া-লিখা করলাম আমি।

(৪র্থ খণ্ড)
মেয়ে মানুষের রূপ কি আসলে থাকা দরকার?বলো সৌরভ। এই শরীরের রূপ দেখে তো আমার বাবা মা রুপালীকে বিয়ে করে ছিল। আর মার রূপের বিনিময় আজ আমি! মায়ের রূপের কারণেই আজ আমি মা হারানো। এই রূপের কারণে আজ আমি দেহ শ্রমিক। ওহ! চুপ করো।
না, আজ আমাকে বলতে দাও সৌরভ, এই রূপের কারণেই আমি মামা শালা দ্বারা ইজ্জত হারা। আর এই কথা আমি প্রকাশই করতে পারি নাই। মামনির শত অত্যাচারও সয়ে গিয়েছি কারণ থাকা-খাওয়া, পড়া-লিখার সুযোগ ছিল বলে। যে লোকটা আমাকে জন্ম দিলো আজ পর্যন্ত কোন দিন খোঁজও নিলো না। অথচ তাদের অপেক্ষায় আমার যায় দিন, আমি অপেক্ষা করি কাশ্মীরি সন্তানদের মত। আমি অপেক্ষা করি বাংলাদেশের গুম হওয়া লোকজনের স্বজনদের মত, আমি জানি আমার মা-বাপ জীবিত, তারপরও হবে না দেখা কোন দিন. শুন, আমি এই সব শুনতে চাই না, আমি তোমার অতীত বর্তমান সব কিছু নিয়ে। তোমাকে ভালবাসি বলে তোমার জন্য এই বন্ধুর পথ চলা সৌরভ। মেট্রিক পরীক্ষার পর মামনি বেড়াতে নিয়ে গেল তার বাবার বাড়ী। আমিও গেলাম হাসি-খুশি আমি তো জানতাম না ওইখানে অপেক্ষা করছে সর্পের ছোবল। মামনির ছোট ভাই আমার ইজ্জত লুুটে নেয় নানীকে বললাম সব কিছু, মামা শুনে বলে মিথ্যা কথা। বাড়াবাড়ী করলে নানী নাতনী দুইজনকে ঘর ছাড়তে হবে। এইটাই যেন মামি চায় তাই সে শুকনিমামার হাসি দেয়। কোন এক গ্রীষ্মের বাদলা দিনে আমি নানীর ঘর চাড়া হই। যে লোকটা আমাকে নিয়ে আসলো, সব কিছু বলেই নিয়ে আসলো। দেহ বিক্রির বিনিময় আমি শুধু ভাত চাই, একটু নিরাপদ রাত যাপন করার জায়গা চাই। কুমিল্লা শহরের গলি গলি দৌড়িয়েছি আমি, মানুষের একটু দয়াময় করুণার জন্য। কত মানুষ যে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে ছিল, তাদের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে আমি হয়ে যাই ধর্মহীন পতিতা, আর সেই সব লোক পবিত্র ও ভদ্র। তারপর ও বাঁচতে মন চায় শিক্ষিত হতে মন চায়, মা হতে মন চায়। চলার পথেতো তোমাকে পেলাম তোমাকে পেয়ে যেন বেঁচে থাকার শক্তি অর্জন করলাম। তুমি আমাকে ভালবাসো অনেক, তা আমি জানি আর আমি,পড়া-লিখা আর বেঁচে থাকার রসদ যোগাতে ছুটে চলি মানুষের বিছানায়।

তামান্না, আমি একটা চাকুরী ফেলেই বিয়ে করে ফেলবো তুমিই হবে আমার রাণী ভুলে যাব সব অতীত। চলে যাব কোন এক নতুন ঠিকানায়।

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ ( হিজড়া) (1,2,3,4 পর্ব )

সাধ-আহ্লাদ সবই আছে। আছে প্রবল ভালোবাসার অনুভূতি। ঘর বাঁধার স্বপ্নও দেখেন তারা। কিন্তু প্রকৃতির খেয়ালে তাদের রয়েছে সীমাবদ্ধতা। শারিরীকভাবে মিলিত হলেও সন্তানের মুখ দেখতে পান না তারা। তবু ঘর পাতেন। একসঙ্গে সংসার করেন। কিন্তু তাদের সংসার, ঘরবাঁধা ভিন্ন রকমের।

তাদের মধ্যে আছে বৈচিত্র্যতা। প্রত্যেক হিজড়াই একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন। পুরুষ সঙ্গীরা তাদের বন্ধু হিসেবে পরিচিত। এই বন্ধুকে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে রাখতে চান তারা। হিজড়াদের কাছে এই বন্ধু ‘পারিক’ নামে পরিচিত। তাদের প্রেম, বিয়ে ও সংসার সম্পর্ক এবং জীবন হচ্ছে এক গোপন ট্র্যাজেডি। তাড়িখানায় রুপালির গান-নৃত্য মুগ্ধ করে তাকে। প্রেমে পড়ে যান আরমান।

আরমান বড় সন্ত্রাসী ও রাজনৈতিক নেতা। আর আরমানকে ভালোবেসে পেলেন রুপালি। রুপালি স্বপ্ন দেখেন আরমানকে নিয়ে। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে সাহস পান না। শেষ পর্যন্ত আরমান প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, ‘আমি তো হিজড়া’। আরমান প্রথমে বিশ্বাস করেন না। তার চির চেনা পৃথিবী যেন অচেনা মনে হয়, কিন্তু রুপালীকে ভুলে যাবে কিছুতে না। পরবর্তীতে হিজড়া জেনেই রুপালির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। ছুটিয়ে প্রেম করেন তারা। তাদের মধ্যে একটা চুক্তি হয়। এই চুক্তিকে ‘বিয়ে’ বলেন হিজড়ারা। কয়েকজনকে সাক্ষী রেখে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একটি চুক্তি করা হয়। আরমানের সব ভরণ পোষণও রুপালি বহন করেন।

রুপালি আরমানকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন। তাকে কোনো কষ্ট করতে দেন না। তাকে নিয়ে দেশ-বিদেশে বেড়াতে গেছেন অনেকবার। তবে আরমান অন্য কোনো নারীর কাছে যাবেন তা সহ্য হয় না রুপালির। তাই ক্রমান্বয়ে অন্যের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে এনেছেন তাকে। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই রুপালির সঙ্গেই বসবাস করেন আরমান।আবার বাড়িতেও টাকা পাঠান আরমান, সব টাকা দেন রুপালি। আরমানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বসবাস করেন রুপালি।

হিজড়ারা টাকা নিয়ে বাসায় ফিরে তা তুলে দেন গুরুমার হাতে। বিনিময়ে গুরুমা থাকা, খাওয়া, নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। গুরুমাই অভিভাবক। তবে একজন সঙ্গী বা পারিক খোঁজেন সবাই। প্রত্যেক হিজড়াই নিজেকে নারী ভাবতে পছন্দ করেন। এজন্য একজন পুরুষ সঙ্গী খোঁজেন। রুপালীর বান্ধবী জোছনার একজন পারিক আছে। ওই পারিক অনেক ভালো, শিক্ষিত। একজন পারিকের সঙ্গে একাধিক হিজড়ার সম্পর্ক হতে পারে না। যদি কখনো এরকম হয় তাহলে কঠিন বিচার করেন গুরুমা। এ অপরাধে ওই হিজড়ার জরিমানা হয়। অন্যদিকে পারিককেও ভর্ৎসনা করা হয়।
(চলবে)।

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ ( হিজড়া)
২য় পর্ব।

পৃথিবীতে নারী ও পরুষ দুই প্রকার লিঙ্গ যুক্ত মানুষ থাকলেও মানুষের জটিল দেহ গঠনে মাতৃগর্ভে বাচ্চার লিঙ্গ জেনেটিক্যালি নির্ধারিত হবার সময় লক্ষ জন মানুষের ভেতর দু‘একটা ভুলচুক হয়ে যায় মাঝে মাঝে। স্বাভাবিক ভাবে শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হলেই নতুন প্রাণের উদ্ভব ঘটে। কিন্তু পোকা মাকড়দের অনেক এমন প্রজাতি আছে (যেমন পিঁপড়া, মৌমাছি ইত্যাদি) যাদের ডিম্বাণুতে এমন একটা স্পেশাল ক্ষমতা থাকে যেটার সাহায্যে তারা শুক্রাণু ছাড়াও নিজ থেকেই বাচ্চা জন্ম দিয়ে দিতে পারে।

ডিম্বাণুর এরকম নিজ থেকেই বাচ্চা উৎপাদনের পদ্ধতিকে পার্থেনোজেনেসিস বলে আর উৎপাদিত প্রাণীকে পার্থেনোকার্পিক প্রাণী বলে। এ ধরণের পোকা মাকড়ের উভয় রকম বাচ্চা হয়। যেসব বাচ্চারা শুক্রাণু ডিম্বাণু মিলিত হয়ে তৈরি হয় তারা হয় মেয়ে পোকা আর যারা খালি ডিম্বাণু থেকেই তৈরি হয়ে যায় তারা হয় ছেলে পোকা। আমরা যেসব মৌমাছিকে ফুলে ফুলে ঘুরতে দেখি বা দেয়ালে দেয়ালে আনাচে কানাচে যত পিঁপড়া দেখি সবাই ছেলে। ছেলেদের কারো বাবা থাকেনা, শুধু মা থাকে। এদের মেয়ে হয় খুব কম এবং এরা সাইজে অনেক বড় এবং এরা তাদের তৈরি বাসার বাইরে আসে না।বাসায় বসে খালি ডিম পাড়ে। এরা হল পার্থেনোজেনেসিসের।

গ্রীক পুরাণে দেবতা হার্মিস আর দেবী আফ্রোদিতির এক বাচ্চা এরকম ছেলে মেয়ে উভয়ের লিঙ্গ নিয়ে জন্মেছিল ধারণা করা হয় বলে এদের দুইজনের নাম মিশিয়ে এই ধরণের প্রাণীকে হার্মাফ্রোডাইট বলা হয়। হার্মাফ্রোডাইটরা দুই রকমের। সিকুয়েন্সিয়াল আর সাইমোল্টানিয়াস। সিকুয়েন্সিয়ালদের প্রজননতন্ত্র বছরে কিছু সময় ছেলেদের মত ও কিছু সময় মেয়েদের মত থাকে। অর্থাৎ বছরে এরা একবার মা হতে পারে এবং আরেকবার বাবা। বহু মাছ,পাখি আর উদ্ভিদ প্রজাতি এরকম পর্যায়ক্রমিক লিঙ্গ বদল করতে পারে এবং এটা স্বাভাবিক।

সাইমোল্টানিয়াস বা সমসাময়িকরা একই সাথে দেহের দুই স্থানে দুই বিপরীত লিঙ্গ ধারণ করে। এদের উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল কেঁচো। এদের একই প্রাণির দেহে দুই বিপরীত লিঙ্গ থাকলেও এরা স্বপ্রজনন করে না। এরা একই সাথে বাবা এবং মা হতে পারে। এই দুই প্রকারের বাইরে আরেকটা অতিরিক্ত প্রকারভেদ আছে তাকে মিথ্যা হার্মাফ্রোডাইট বলে। এটার উদাহরণ হল হায়েনা। হায়েনাদের পুরুষাঙ্গ দেখতে স্ত্রীদের মত এবং স্ত্রী অঙ্গ দেখতে পুরুষাঙ্গের মত। দেখতে বিপরীত মনে হলেও আসলে এরা উভলিঙ্গ নয় তাই এদের সিউডো বলা হয়।

মানুষের দেহে লিঙ্গ বদল বা অসম্পুর্ণভাবে গঠিত লিঙ্গ দেখা গেলে এদের আগে “মনুষ্য হার্মাফ্রোডাইট” বলা হত। পশু পাখি এবং উদ্ভিদে এই লিঙ্গ বদল স্বাভাবিক হলেও মানুষে এটা অস্বাভাবিক।

আমরা যাদের হিজড়া বলে চিনি তারা মোটেও এই ইন্টারসেক্স না। ইন্টারসেক্স মানুষ সম্পুর্ন অন্যরকম জিনিস। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র ছাত্রী তারা জানে যে ছেলেদের লিঙ্গ নির্ধারনের ক্রোমোজোম xy আর মেয়েদের xx । জন্মের আগে মায়ের পেটে আমাদের ক্রোমোজোম বিন্যাসের সময় হঠাৎ কিছু গোলযোগ হয়ে যায়। বিশেষ করে লিঙ্গ নির্ধারনকারী ক্রোমোজোমে এই গোলযোগ হলে xx বা xy না হয়ে xxy বা xxx বা xo বা xyy এরকম হতে পারে। বিজ্ঞানীরা ৫ ধরণের ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা চিহ্নিত করেছেন এরকম ইন্টারসেক্স হবার জন্য।আবার এধরনের অনেক রোগীর দেহের বিলিয়ন বিলিয়ন কোষের অর্ধেকে xx এবং বাকি অর্ধেকে xy ক্রোমোজোম থাকে। এদের জিন বিন্যাসকে মোজাইক জেনেটিক্স বলে। এ ধরণের রোগ নিয়ে জন্মালে কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখা যায়।

হয়তো জন্মের পরে মানুষটির দেহ দেখতে হবে মেয়ের মত কিন্তু এর যোনাঙ্গ হবে ছেলেদের মত যা ১০/১২ বছর পরে অদ্ভুত ভাবে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে হতে স্ত্রী অঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে মানুষটা পুরাই মেয়ে হয়ে যাবে অথবা জন্মের সময় ছেলের মত হয়ে গঠন হয়ে যোনাঙ্গ হবে মেয়ের মত যা পরে ছেলেদের মত হয়ে যাবে অথবা এদের কোনটাই না হয়ে অদ্ভুত এক প্রকারের জননাঙ্গ নিয়ে জন্ম হয় যা পুরুষাঙ্গও না স্ত্রীঅঙ্গও না।এই যোনাঙ্গ পরবর্তিতে হয়ত পুরোপুরি ছেলেদের মত বা পুরোপুরি মেয়েদের মত হয়ে যাবে। তবে ছেলে বা মেয়ে যাই হোক না কেন এদের প্রজনন ক্ষমতাহীন হবে। কিন্তু এ ধরণের ঘটনা পশু পাখিতে বা উদ্ভিদে হলে এরা সম্পূর্ণ প্রজননক্ষম হয়। এটা মানুষের সাথে তাদের পার্থক্য। (চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)
৩য় পর্ব।

হিজড়াদের জন্মগত ভাবেই কপাল মন্দ,আরো কপাল মন্দের ব্যাপার হল সামাজিক অবস্থান। উন্নত দেশের হিজড়ারা জনসাধারণের সাথে মিশে জনগণের মুল স্রোতের অন্তর্ভুক্ত হলেও আমাদের দেশে হিজড়াদের ভিন্ন চোখে দেখা হয়।হিজড়া শব্দটি এসেছে আরবী হিজরত বা হিজরী শব্দ হতে যার আভিধানিক অর্থ পরিবর্তন আর ইংরেজিতে হিজড়ার প্রতি শব্দ হচ্ছে ইউনাক যার অর্থ নপুংসক বা খোজা। আমরা জানি ক্রোমোজোমের ত্রুটির কারনে হিজড়ার জন্ম,জন্মের পর লিঙ্গ নির্ধারণে যাদের জটিলতা দেখা দেয় তারাই হিজড়া।বৈশিষ্ট্যগত ভাবে হিজড়া তিন প্রকার হয়,শাররীকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী তাদের অকুয়া বলে।শাররীকভাবে নারী কিন্তু মানসিকভাবে পুরুষ তাদের বলে জেনানা,আর মানুষের হাতে সৃষ্টি যারা (ক্যাসট্রেড) তাদের বলে চিন্নি।অকুয়া এবং জেননা মিলে ভয়ংকর ভাবে কখনো কখনো সৃষ্টি করে চিন্নি।

সাহিত্যের ভাষায় হিজড়ার নাম বৃহন্নলা,হিন্দি ভাষায় (KINNER) কৃন্নার,উর্দু ভাষায়(Khawaja) খাওয়াজা। এরা মানুষ হলে এদের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিতে পিছু পা হয়।কিন্তু ইতিহাস বলে মুঘল শাসন আমলে সম্রাটদের কাছে বিশ্বস্ত ভৃত্য হিসাবে পরিচিত ছিল হিজড়ারা।ছেলে আর মেয়ে উভয়ের মাঝামাঝি হওয়ার কারণে নারী পুরুষ সবার মাঝে অবাধ চলাফেরা ছিল তাদের,এই কারণে মুঘল সম্রাটদের নারীদের পাহারা এবং বাচ্চাদের দেখাশুনা করতো হিজড়ারা।আর সেই অতীত ইতিহাস হতে বের হয়ে এসে আমাদের দেশে বর্তমানে হিজড়ারা সাধারণ মানুষের মাঝে ত্রসন করে অর্থ উপার্জন করে।করে রাজনীতি,করে জবর দখল আর এসবের মূলে আরমানেরা থাকে ছায়া হয়ে।

এদের নচ্ছার চলাফেরা মানুষকে রাখে ভয়ের ভিতর।আবার কেউ কেউ পড়া লেখা শিখে ভদ্র জীবনযাপনও করে। এম.কম পাশ করা রুবেল আস্তে আস্তে বদলে রুপালী হয়ে যায়,এখন সে মডেল।সমাজবেসা অধিদপ্তরের মতে ষাট হাজার হিজড়া আছে দেশে আর ঢাকাতে আছে পনরশত,এবং প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের সাথে থাকে এখনো। তবে আমাদের সংবিধানে নারী পুরুষ এই দুয়ের স্বীকৃতি দেওয়া থাকলেও তৃতীয় জেন্ডারের কোন উল্লেখ নাই।ভোটার হতে মেয়ে বা পুরুষ লিখতে তাদের থাকে আপত্তি।কেউ যদি হিজড়া দলে ভিড়ে তাহলে গুরুমা নানা নিয়ম-কানুন ও হাতের তালির প্রশিক্ষণ দেন , দেন নানা রকম বিধিনিষেধ।

তারপরও পরিবার হতে বিছিন্ন হওয়া অসহায় নতুন হিজড়ার কাছে গুরুমাই সব।পরিবার হতে ছিঁটকে পড়া সব হিজড়ার গল্প একই রকম,হিজড়ার প্রতি পদে পদে ঘৃণা আর তিরস্কার। তাই তারা হয়ে উঠে ভয়ংকর। আর গুরুমা হয়ে উঠে গর্ভধারনী মায়ের মত,গুরুমা হিজড়াদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদের দিয়ে নানা অপকর্ম করিয়ে টাকা রোজগার করে আরামের জীবন যাপন করে এবং নতুন হিজড়াদের করে বঞ্চিত। অথচ বাস্তবতা বলে চিন্তা ভাবনায় একটু দৈবজ্ঞ হলেই এমন সমস্যা প্রথমেই সমাধান করা যায়।নদী তার পরিবারের সাথেই থাকে এবং হাটে বাজারে টাকা তোলে। বহমান নদী আবার মা বাবার বুকেই রাত যাপন করে। নদীর বাবা বলে সন্তান যে নাড়ীর ধন জন্মতো আমিই দিয়েছি তাকে কি করে দুর করি।

দিনমজুর বাবা হিজড়া সন্তানকে বুকে আগলে রাখলেও অনেক পিতা মাতাই দুর দুর করে।এই নদীর সাথে আছে আরো ত্রিশজন হিজড়া,তারা বছরে একবার সমাবেশও করে। কারণ তারা থাকে ঐক্যবদ্ধ। জোটবদ্ধ হয়ে তারা কতটা ভয়ংকর ত্রাস সৃষ্টি করে যাদের বাসায় বিয়ের দিন হিজড়া গিয়েছে কিংবা কারো বাসায় বাচ্চা জন্ম হয়ছে শুনেছে তাদের বাসার মানুষ জানে কতটা দুরূহ হিজড়া হতে নিষ্কৃতি পাওয়া, ভোক্তভুগীমাত্রই জানে যন্ত্রণাটা।
(চলবে)

রাজনীতি ও তৃতীয় লিঙ্গ(হিজড়া)।
৪র্থ পর্ব।

পৃথিবীতে হিজড়ার কবে হতে আর্বিভাব তার কোন সঠিক তথ্য নাই,তবে মনে করা হয় পৃথিবীতে যখন হতে মানুষের আর্বিভাব ঘটে তখন হতেই হিজড়ারও আর্বিভাব হয়।হিজড়াদের প্রতি ছোট বেলা থেকেই বিরূপ ধারণা বা মনোভাব নিয়ে আমরা বেড়ে উঠি। এদের সম্পর্কে কোন প্রকার সঠিক তথ্য আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষিতরা এমনকি অনেক ডাক্তার পর্যন্ত দিতে পারেন না। আমাদের দেশে এখনো পর্যন্ত প্রজনন এবং লিঙ্গ নির্ধারণ ভিত্তিক কথাবার্তা খুব ভীতি সহকারে এবং গোপনে আলোচনা করা হয় যার কারণে এরকম ব্যাপার গুলা খুবই স্পর্শকাতর বলে ভাবা হয়।

এসবের ফলে আমরা দ্বিধাদ্বন্ধে থাকি এরকম ব্যাপারে।স্বপ্ননীলকে নিয়ে তার মা বাপ ডাক্তারের দ্বারস্ত কারণ স্বপ্ননীল ছেলে না মেয়ে জন্মের তিন দিনেও নির্ধারন হয়নি চিকিৎসা শেষে হয়তো নির্ধারন হবে ছেলে না মেয়ে।ডাক্তার বলেন এই ধরনের বাচ্চা যদি জন্মের পর পরই হাসপাতালে নিয়ে আসে তাহলে সুস্থ এবং স্বাভাবিক জীবনের একটা নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।তাই বাচ্চার মা বাপকে সচেতন হতে হবে,আর মা বাপ সচেতন হলে পরিবারের একটা সম্পদ নষ্ট হয়ে হিজড়া হবে না।হিজড়া না হলে স্বাভাবিক সমাজের ত্রাসও বাড়ত না সাধারণ হতে চাঁদাবাজিও কম হতো।আসলে আশির দশকে হিজড়ারা এমন ছিল না,যখন হতে ভারতীয় হিজড়ার এদেশে অনুপ্রবেশ শুরু করে তখন হতে তাদের সাথে মিলে এদেশের হিজড়ারা অপরাধমূলক কাজের প্রসার করে।

অস্বাভাবিক চালচলনের কারণে কুল হতে নিগৃত হওয়ার পর তাদের জীবনের তাগিদে ও সঙ্গদোষে প্রমত্ত হয়ে উঠে।তারা যেসব কাজ করে তার কারণে নিস্তেজ মানুষ শঙ্কায় পড়ে।তবে রুপালী অন্যদের চেয়ে আলাদা,সে সাধারণ মানুষের সমাজে বাস করতে চায়।কিন্তু পরিবার হতে তাড়িত হওয়ার দুঃসহ স্মৃতি ব্যাথা দেয় ক্ষনে ক্ষনে।আরমানকে অন্য হিজড়াদের সাথে মিলিত হতে তার প্রচন্ড আপত্তি থাকে তবুও আরমান শুনে না রুপালীর কথা।আরমান হিজাড়াদের সহযোগিতায় লোকের পাওনা আদায় করে কমিশন ভিত্তীতে।ঢাকাতেই হিজড়াদের বিভিন্ন গ্রুপ নানা রকম অপরাধে জড়িত।

লায়লা,হামিদা,মনু,আবুল,নাজমা,হায়দার,রাখী,পিংকি ও স্বপ্না হিজড়া পুরা ঢাকাকে ভাগ করে নিয়ন্ত্রন করে।ডেমরা,শ্যামপুর ও ফতুল্লা নিয়ন্ত্রণ করে লায়লা হিজড়া।শ্যামলী ও মোহাম্মদপুর দখলে হামিদার।সাভার ও ধামরাই শাসন মনু হিজড়ার হাতে।সায়দাবাদ ও মতিঝিল নিয়ন্ত্রণ আবুল হিজড়া।দিপালী হিজড়া নিয়ন্ত্রণ করে পুরান ঢাকা। উত্তরা দখল করে আছে নাজমা হিজড়া,এখন আবার মিরপুর রাখীর আয়াত্তে।

এবং গুলশান,ফার্মগেট ও সংসদ ভবন এলাকা দখলে রেখেছে হায়দার ও সপ্না হিজড়া।আবার এরা এক গ্রুপ অন্য গ্রুপের মুখামুখিও হয়,এক দল আরেক দলের হিজড়াকে ধরে নিয়েও যায়।সুইটি হিজড়ার লোক ধরে নিয়ে যায় পিংকি হিজড়ার লোকেরা মূলত ফকিরাপোল এলাকায় টাকা উঠানো কে কেন্দ্র করে এই বিরোধ বাঁধে।পিংকি আবার বাঁধন হিজড়া সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক।হিজড়াদের কাজের বিস্তৃতি আপনার কল্পনাকেও হার মানাবে,রাত বাড়ার সাথে সাথে তাদের অপকর্ম বাড়াতে থাকে এরা নারী না হিজড়া তখন বুঝাও মুশকিল।মজার ব্যাপার হিজড়ার ভিতর আবার নকলও আছে।এরা সবাই মিলে করে অপরাধ।(চলবে))

করোনায় একজন প্রবাসী (১৬তম পর্ব)

একজন প্রবাসী বিয়ের পর স্বাভাবিকভাবে টাকা পয়সা নিজের স্ত্রীর কাছে পাঠায় কারণ এই সম্পর্কটা হলো সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্ক। যৌথ পরিবারও হলে মা বাপকে সংসার খরচ দিয়ে কিছু টাকা গচ্ছিত করতে চায় প্রত্যেক প্রবাসী । অনেক পরিবারে একটার পর একটা সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে প্রবাসী লোকটার জন্য বিয়ে করার টাকাই থাকে না । যেহেতু বিয়ের পর সংসারের অবস্থা দেখে মন খারাপ হয় বউয়ের সেই স্বামীকে পরামর্শ দিতে থাকে টাকা সঞ্চয় করার জন্য । বহু নারী আছে স্বামীর টাকা আমানত মনে করে এক টাকাও খরচ করে না । আজকাল প্রবাসী দেখলে বীমা করতে ধরে বীমাকারী তাহাছাড়া আছে ব্যাংক ডিপোজিট আছে আরো পোষ্ট অফিসে এককালীন জমা । এইসবের জন্য একজন প্রবাসী তাঁর স্ত্রীর উপরই ভরসা করতে হয় তাই একজন মানবিক ও সৎ নারী প্রত্যেক স্বামী অবশ্যই কামনা করে । কথায় বলে ’সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে”।

বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অসংখ্য প্রবাসীও বহুগামী হয়ে একের অধিক নারীর মোহগ্রস্ত হচ্ছে। মধ্যপাচ্যে কঠোর আইনের কারণে এরাবিয়ান নারী হতে প্রবাসীরা দুরে থাকলেও বিভিন্ন মাধ্যমে অনেকে দেশে অন্য নারীর সাথে জড়িয়ে পড়ছে। টাকা পয়সা খরচ করে শেষ পর্যন্ত প্রচণ্ড প্রতারিত হয়ে চুপ থাকে মান সম্মান হারানোর ভয়ে। মাঝে মাঝে শুনা যায় ইউরোপ প্রবাসীরা ওখানে বিয়ে করে বউ বাচ্চা ফেলে এসে আবার দেশেও বিয়ে করে
তেমনি মালেয়শিয়াও অনেক বাংলাদেশের লোক বিয়ে করে দেশে আর আসেনি , লেবাননের কথাও বলা যায় তবে তা খুবই নগণ্য । এক সময় পাকিস্তান যেত মানুষ রোজগার করার জন্য প্রথমে ভারত তারপর ভারত হতে সীমান্ত পার হয়ে পাকিস্তান যেত।
করাচীর গলিতে গলিতে যেমন বাংলাদেশের লোক আছে তেমনি বাঙ্গালী কলোনিও আছে। আশির দশকে ফেনী জেলার শত শত লোক পাকিস্তান প্রবাসী হয়েছে । কিছু লোক ফেরত চলে আসলেও বহু লোক পাকিস্তান হতেই ইউরোপ এবং মধ্যপাচ্য প্রবাসী হয়েছে । আবার বহু লোক বিয়ে করে স্থায়ী নিবাস গঠেছে। এখন যেমন রোহিঙ্গা আমাদের দেশ হতে মালয়শিয়া যায় ঠিক তেমন ।

রেমিট্যান্সের শতকরা আশি ভাগই আসে মধ্যপাচ্য হতে অথচ এই লোকগুলি অবহেলার স্বীকার হয় ঘরে বাহিরে এবং এরা বেশীর ভাগই কষ্টের কাজ করে । অফিস ও রাস্তা পরিস্কার , বাসা বাড়ির ব্যক্তিগত ড্রাইভার , কৃষি কাজ , নির্মাণ শ্রমিক (দালানের যাবতীয় কাজ) , দোকানপাট ও হোটেল রেস্তোরাঁয় , অল্প অসংখ্য লোক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষক ও অফিসিয়াল জব করে । আবার এরাবিয়ানের নাম ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা বাণিজ্যে আছে স্বল্প সংখ্যক দেশী লোক , মাত্র দুই এক পারসেন্ট লোক বাটপারি ও ধান্ধবাজি নিয়ে ব্যস্ত । আর এই দুই এক পারসেন্টের জন্য কখনো কখনো কলষ্কিত হয় পুরো বাংলাদেশ । এরা এতই বেপরোয়া থাকে যে সব ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে । ভিসার দালালি খুবই সাধারণ কাজ এদের জন্য এরা করে মাদকের কারবার , এরা করে ভাড়ায় সন্ত্রাসী , এরা করে চুরি এরা করে অবৈধ টেলিফোন ব্যবসা , এরা করে হুন্ডির ব্যবসা ।

কিছু লোকতো সাপ্লাই ( শ্রমিক ভাড়ায় খাটানো ) এর ব্যবসা করে চল চাতুরির আশ্রয় নিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে । এরাবিয়ানের নামে কাগজ পত্র করে নিরহ শ্রমিক সংগ্রহ করে বিভিন্ন কাজে দেয় এরা । মুল জায়গা হতে ঘন্টায় যেত রিয়েল নেয় তার অর্ধেক হয়তো তারও কম শ্রমিকদের দেয় । সবচেয়ে দুঃখজনক হলো কোন কোন সাপ্লাই ( আমাদের দেশীয় লোক ) নিরহ শ্রমিকের মজুরি সামন্য কিছু দিয়ে ( কেউ কেউ একদম না দিয়ে ) অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যায় তবে তারা কাজের টাকা ঠিকই নিয়ে নেয়। আবার কেউ কেউ দুই চার মাস হলে এক মাসের পয়সা দেয় বাকি পয়সা ঘুরাতে থাকে শ্রমিক বিপদে পড়ে কাজ ছাড়তে পারে না আবার মজুরি চাইলে খারাপ ব্যবহার করে । আর এইসবই করে আমাদের কিছু বাংলাদেশী লোক যাদের সাথে সম্পর্ক থাকে দেশী বিদেশী বড় বড় লোকদের। এই বৈধ ব্যবসার আড়ালে চলে হরেকরকম অবৈধ কাজকারবার । (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
১৭তম পর্ব ।

মাঝে মাঝে আমাদের কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে ভিসা বন্ধ করে দেয় বিভিন্ন দেশ। যেমন সৌদি আরব ২০০৮ সালে একবার বন্ধ করে দেওয়ার পর বহুদিন ভিসা বন্ধ ছিল পরে সরকার অনেক দেনদরবার করে চালু করে করে। কুয়েত , কাতার , ওমান ও আরব আমিরাত ভিসা বন্ধ করে বহুবার । দক্ষিন এশিয়ার দেশ মালয়শিয়াও ভিসা জালিয়াতির কারণে অতিষ্ঠ হয়ে ভিসা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার হলো সৌদি আরব সেখানে বৈধ অবৈধ মিলে প্রায় বিশ লাখ শ্রমিক কাজ করে । দক্ষ অদক্ষ সব ধরনের মিলে বিশাল শ্রম বাজার হলো এই সৌদি আরব। অবশ্যই প্রতি বছর প্রচুর লোক আমাদের দেশ হতে ওমরা ও হজ্ব করতেও যায় সৌদি অারব। শুধু এইবার করোনা মহামারীর কারণে রমজানে ওমরা কোরবানে হজ্ব বন্ধ থাকায় মুসলিম জনগণ হজ্ব করতে যায়নি । ধর্মীয় তীর্থ স্থান মক্কা মদিনা সৌদি আরব হওয়ায় মুসলিম শ্রমিকদের কাছে সৌদি আরবের একটা আলাদা মর্যদা রয়েছে। মানুষের মনে একটা আশা থাকে যে টাকা রোজগার করি আর না করি আল্লাহের ঘর দেখে আসতে পারবো।

সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেমন তেল হতে আসে তেমনি হজ্ব এবং ওমরার ভিসা হতেও আসে । এই হজ্ব ওমরার কারণে মক্কা মদিনায় গঠে উঠেছে অসংখ্য হোটেল মোটেল ও রেস্তোরাঁ । মক্কা মদিনা ও তায়েব সারা বছর থাকে লোকারণ্য এবং ব্যবসা বাণিজ্যে জমজমাট। মক্কায় মসজিদ হারাম এবং মদিনায় মসজিদ নবী নয়াভিরাম স্থাপত্য মানুষকে করে মুগ্ধ। সামর্থ্য থাকলে প্রত্যেক মুসলিমের একবার ইসলামের তীর্থ স্থানে এসে নিজেকে সহী শুদ্ধ করা উচিত। এই সৌদিতে আছে আল্লাহর কুদরতীতে সৃষ্টি পানি জমজম , যা দুনিয়ার সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সবচেয়ে মান সম্মত । পৃথিবীর ঝানু ঝানু বৈজ্ঞানিক এই পানি পরীক্ষা করে দেখে বলেছে সমস্ত উপদান এই পানিতে বিদ্যমান । এই পানি ইসলামের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং মানসম্মত বলে সকল শ্রেণীর মানুষের কাছে পবিত্র । সারা দুনিয়ার আনাছে কানাছে যেখানেই মুসলিম আছে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করতে ছুটে আসে সৌদি আরবে। হজ্বের সময় তিল ধারণের ঠায় হয় না মক্কা মদিনায় , লক্ষ লক্ষ মানুষের মুখে থাকে একটি শব্দ “আল্লাহুমা লাব্বাইক আল্লাহুমা লাব্বাইক”। ওমরা এবং হজ্বের সময় বহু প্রবাসী অবৈধ হলেও ভাত পানি বিক্রি করে প্রচুর রোজগার করে। এমনও দেখা যায় অন্য সময় বেকার থেকে শুধু দুই ঈদের সময় কাজ করে ভালো রোজগার করে ফেলে।

তবে এই সময় সাড়াশি পুলিশী অভিযান থাকে । রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুটপাতে কোন কিছু বিক্রির অনুমতি নাই সৌদি আরবে। তারপর বহু দেশী (অনেক আছে অবৈধ) ভাত পানি বাদেও ফলমূল হতে যাবতীয় জিনিসপত্রের হকারী করে, কিছু লোক আবার হুইল চেয়ারও ভাড়ায় চালায় । অনেক হাজ্বী বৃদ্ধ বলে অসুস্থ হয়ে পড়ে তাদের চলাফেরা কষ্ট হয় তাই হুইল চেয়ার ব্যবহার করে আর প্রবাসীরা এই সুযোগে ভালো রোজগার করতে পারে । কেউ কেউ নিজের থাকার বাসা রুম ভাড়া দিয়ে দেয় হাজ্বীদের কাছে তারা ওই সময় কোন রকম জান বাঁঁচিয়ে রাখে এখানে সেখানে থেকে। অনেকে আছে বাড়ী ভাড়ার ব্যবসাও করে কারণ হজ্বের সময় ভাড়া তিন/চার গুণ বেশী থাকে। দেশের অনেক নামী দামী লোকজন সৌদিতে বাড়ী ভাড়ার ব্যবসায় জড়িত। যেমন ফেনীর স্টার লাইন গ্রুপ বহু বছর ধরে নিজস্ব লোক দিয়ে ব্যবসা করে আসছে। তাদের মত এমন আরো বহু আছে।

প্রিয়জনহীন নিঃসঙ্গ জীবনের কষ্ট অন্যজন অনুভব করতে চায় না । প্রবাসীরা মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে অন্যের জন্য সুখের চাষ করে অহর্নিশ । যেসব সৌদি প্রবাসী হজ্ব ওমরা করে তারা কিছুটা মনের তৃপ্তি পায় এই ভেবে যে নিজের জন্য কিছু একটা করলাম মনের পর পরকালের একটা পুজি হলো । কবুল করার মালিক আল্লাহ । (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৮ তম পর্ব ।

এখন আমার কোন সমস্যা মনে হয় না কাজে তাহাছাড়া কাজও তেমন একটা বেশী নাই এইদিকে গরমও কমে আসছে । বেশ কয়েক মাস কাজ করলাম কিছু ধার দেনা শোধ করেছি আরো কিছু বাকি আছে মনে হয় আর এক বছর লাগবে ঋণ পুরো শোধ করতে । ফকির শাহ না থাকলে এখানে হয়তো কাজ করতে পারতাম না , সহজ সরল আমার মত অশিক্ষিত কলকাতার এই লোকটি প্রবাসে ভাষা ধর্মের টানে আমাকে কাছে টেনে নিয়েছে । কাজে সহযোগিতা করেছে রান্না করে খেতে দিয়েছে কৃতজ্ঞ আমি তার কাছে।

আশপাশে কোন আলো নাই। অনেক দুরে দক্ষিন পূর্ব কোণে কোটি কোটি জোনাকির মত আলো জ্বলছে ওটা ছোটখাটো একটা শহর তার একটু দুরে স্থানীয় বিমান বন্দর। আমি তাবুর বাহিরে বসে আছি মৃদ মৃদ বাতাস আকাশে লক্ষ কোটি তারা । এখন রাতে একটু একটু ঠান্ডা পড়ে ভালো লাগে ঘুমাতে কিন্ত আজ ঘুম আসছে না । বিদেশ এসে কত কষ্টকর অভিজ্ঞতা মানুষ সঞ্চয় করে জানা হল। আমি এখন অবৈধ প্রবাসী পাসপোর্টই পরিচয় বাংলাদেশী আমি, দেশে যেতে হলেও শত ঝামেলা সয়ে তারপর এই দেশ ত্যাগ । আকাশের দিকে তাকাতে নিজের না পাওয়া বেদনায় আঁখি জলে ভরপুর হয়। স্বজনের মত তারা গুলি ঘুমে আচ্ছন্ন আর আকাশ পানে বিধাতার করুণা খোজ করি আমি। ভাবছি চাকরী নিয়ে লোক আসবে আর আসলে হয়তো আমাকে চলে যেতে হবে । কিন্তু কোথায় যাব আমি এই বিশাল আকাশের নিচে। এক টানা কয়েকমাস চাকরী করে ভুলে গিয়ে ছিলাম আমি এখানে বদলিতে আসছি ।

হঠাৎ এক ঘটনা মনে পড়ে তখন আমি ঢাকায় সবজির আড়তে চাকরী করি । এমনি এক রাতে ঘুম আসছে না আমি ছাদের উপরে উঠে বসে আছি । একটা লোক লুঙ্গি পরা গেন্জি গায়ে কাঁধে একটা ব্যাগ এবং হাতে বালতি , চুপ করে দেখে থাকলাম এত রাতে লোকটি কি করে। পোস্টার লাগায় দেয়ালে দেয়ালে এটা করে কিছু টাকা পাবে আর বউ বাচ্চার আহার হবে । পেটের দায় এত রাতে আরামের ঘুম হারাম করে পোস্টার লাগাচ্ছে । আমি উনার হতে ভালো আছি তেমনি আরো দশজন হতেও ভালো আছি । পরক্ষনে নিজেকে নিয়ে ভাবনা কমে গেল আমার বউ বাচ্চারাতো আর না খেয়ে থাকে না । আমিতো রাতেম আরামের ঘুম খারাপ করে কষ্ট করছি না । লক্ষ্যে পৌছতে হলে কষ্ট করে চেষ্টা করতে হবে।

সুনশান জনমানবশূন্য রাস্তায় শুধু সোড়িয়াম বাতি জ্বল জ্বল করছে। আগে এই রাস্তায় লক্ষ কোটি গাড়ির ছুটাছুটি ছিল পারাপারে বেগ পেতে হতো সেই রাস্তা মৃত এখন ১৪৪ ধারার কারণে । করোনা মহামারী সমস্ত মানব জাতিকে ঘর বন্ধি রেখে ক্ষমতাহীন করেছে। মরুভূমি হতে জানুয়ারীর মাঝে আজিজিয়ায় এক গুদামে রাতের পাহাদারের চাকরী পেয়ে চলে আসি। এখানে গুদামের সাথেই থাকার রুম , খাওয়ারও সমস্যা হয় না । এখন শীতকাল আরব দেশে মেঘ বাদলের দিন। ভেড়ার কাজে থাকলে কষ্ট হতো কারণ ভেড়ার বাচ্চা দেওয়ার সময় এখন আর এই সময় অনেক যত্ন নিতে হয় । রাতে বার বার দেখতে হয় , নতুন বাচ্চা দিলে সাথে সাথে দুধ খাওয়াতে হয় , আলাদা ঘরে রাখতে হয় যাতে ঠান্ডা না লাগে । প্রচন্ড নোংরা কাজ হতে এখন ভালোই আছি কিন্তু একমাস যেতেই করোনায় সব বন্ধ তবে আমার চাকরী চালু আছে। আমার চাকরী চালু থাকলেও ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালত বন্ধ থাকায় বেতন পাচ্ছি না । এইখানে একমাস কাজ করতেই মহামারীর ধাক্কায় মার্চের নয় তারিখে সব বন্ধ হয়ে যায় । এক মাসের বেতন পেয়ে বিকাশ করে ভালোই করে ছিলাম না হয় বাড়িতেও সমস্যা হতো। বেতন পেলেই পাঠাই দিতে মন চায় পরে নিজে এইদিক সেদিক করি চলি এইবারও তাই কিন্তু হঠাৎ মহামারী সব এলোমেলো । (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
১৯ তম পর্ব।

সৌদি গৃহকর্তা ও তার ছেলে কুলসুম নামের এক বাংলাদেশী শিশু গৃহকর্মীর দুই হাঁটু ও কোমর ভেঙে চোখ উপড়ে মেরে ফেলে। অসহায় মেয়েটির বয়স ছিলো ১৪ বছর মাত্র। বাংলাদেশ সরকার সৌদি সরকারের কাছে এই শিশুটির হত্যার জন্য ন্যায্যবিচার দাবী করে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে কিনা এখনো শুনলাম না । দারিদ্রতার কাছে কতটা অসহায় হলে মা বাপ এই ছোট মেয়েকে বর্বর দেশে গৃহকর্মীর কাজ করতে পাঠায় ভেবে মন শিহরিত হয়। আর আমরাও কেমন মা বাবা এমন ছোট মেয়েকে বাঘের মুখে ঠেলে দিয়ে সুখ খুজি বুঝে আসে না । এইসব ভাবলে মন খারাপ হয় কান্না আসে অসহায় হয়ে দুঃখ লাগে। বাবা ভাই ও স্বামীরা সৌদি আরবের মানুষ প্রচণ্ড নারীর দেহ লোভী এই কথা কোন যুক্তি ছাড়া তোমরা বিশ্বাস করো । টাকার লোভে পড়ে নিজের ঘরের ইজ্জত আরবে প্রেরণ করে নিজের বিবেক ধ্বংস করছি আমরা । বিশাল হৃদয়ের মানুষ এবং বিশাল ব্যক্তিত্ববান মানুষ যেমন দুনিয়ায় কমে যাচ্ছে তেমনি উদরতা সহজ সরলতা ও মানবিকতা আজ মানুষের ভিতর কমে যাচ্ছে, এর ব্যতিক্রমও আছে।

বহু আগে আমাদের দেশ হতে হিন্দু কাজ করতে সৌদি আরব আসতে পারতো না । কিন্তু হিন্দু আসতো নিজের ধর্মীয় পরিচয় গোপন করে এই জন্য পাসপোর্টে মুসলিম নাম দিতে হতো । অবশ্যই তখন প্রযুক্তি এত আধুনিকও ছিল না হাতে লিখা পাসপোর্ট ছিল ইচ্ছামত নাম লিখে দিতো । এখন যে কোন ধর্মের লোক যেমন সৌদিতে স্বাগত তেমন ইউরোপের কিংবা আমেরিকার নাগরিক নর নারী হলেও বন্ধু হিসাবে একত্রে বাস করতে পারে ভ্রমনকারী হলে। অনেক ধর্মীয় কঠোর আইন সৌদিতে শিথিল করা হয়েছে বর্তমান শাসক আমলে। তাদের অভিমত আইন শিথিল করলে ভ্রমণকারী দেশটিতে আসবে এতে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে । শুধু তেলের উপর নির্ভর করে চলা সম্ভব না কারণ একসময় তেল ফুরিয়ে যেতে পারে। আমেরিকার সাথে যৌথভাবে সৌদি তেল কোম্পানি আরামকো প্রতিষ্ঠিত। তাহাছাড়া ইজরাঈল এর সাথে আরব বিশ্বের সম্পর্ক উন্নয়নে বর্তমান সৌদি রাজ পুত্রের বড় ভূমিকা আছে । আর প্রাচীন কাল হতে সৌদির পররাষ্ট্রনীতি চলে আমেরিকা পন্থী হয়ে ।

আমরা নিজের মেয়েদের ইচ্ছাকৃত আরবদের হাতে তুলে দিচ্ছি ভোগের পণ্য হিসাবে। চোদ্দ বছরের ছোট একটা মেয়েকে বয়স বাড়িয়ে গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি পাঠায় তৃতীয় বিশ্বের বোকা অভিভাবক। এদের লেবাস ধর্ম কর্ম আইন সবই রাস্তায় , বাসায় এরা যৌন লিপ্সু কামুক আরবী যার ফল ছোট মেয়েটার লাশ বাংলাদেশে । এই জন্য ইন্দোনেশিয়া গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ফিলিপাইনের গৃহকর্মী অনেকটা মানিয়ে নেয় কারণ ওদের দেশে ফ্রী সেক্সের প্রচলন আছে। বাংলার নারীর কাছে সৌদি রিয়েলের চেয়ে ইজ্জতের মূল্য অনেক বেশী তাই দেহ দিতে রাজি হয় না । যেহেতু গৃহকর্মী না দিলে পুরুষ শ্রমিকের ভিসা দিবে না সৌদি তাই সরকার কঠোর তদারকি করতে পারে যাতে কোনমতে কম বয়সের মেয়ে আসতে না পারে । আর অন্য নতুন নতুন দেশ খোঁজ করা উচিত যাতে শ্রমিক পাঠানো যায় । তবে সৌদিতে শ্রমিক পাঠানো বন্ধ করা যাবে না কারণ রেমিট্যান্সের বড় বাজার সৌদি। আর ভিসা বন্ধ করলেও ওদের ক্ষতি হবে না কারণ তাদের শ্রমিকের অভাব পূরণ করবে ভারত ও নেপাল । আর ভারত এই সুযোগের অপেক্ষায় আছে অবিরাম। তাই বাংলাদেশী শ্রমিকের ভুলভ্রান্তি ভারতের প্রত্রিকায় বড় আকারে প্রচার করে, কেরালা ও হিন্দী ও উর্দু ভাষায় প্রত্রিকা বের হয় সৌদিতে যার পাঠক ও সম্পাদক লেখক সবই ভারতীয় । (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
২০তম প্রবাসী।

এই করোনা মহামারীর ভিতর খবর যে চারশত পঞ্চাশজন ভারতীয় লোক আটক যারা ভিক্ষা করতো সৌদি আরবে। শুধু এইটা নয় অতীতেও মদ জুয়া কিংবা অন্য অপরাধেও ভারতীয় লোক আটক হলে তাদের পত্রিকার খবর হয় না । এইতো কিছু দিন আগে জাবেদ নামে এক ভারতীয় কম্পিউটার ব্যবসায়ী প্রায় দুইকোটি টাকা মেরে কানাডায় চলে যায়। এমন কাজ বাংলাদেশের কেউ করলে প্রতিটি ভারতীয় এই খবর ফলাও করে প্রচার করতো। আগে এইখানে রাস্তাখাট পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কর্মী ছিল একমাত্র বাংলাদেশী এখন সেটাতে ভারতীয় শ্রমিকও আসে। তবে নেপালীরা যে কোন কাজে আসে না । এবং বছরের পর বছর পড়েও থাকে না কারণ তাদের চাহিদা সামন্য আমাদের মত বিশাল নয় এবং পুরো পরিবার একজনের কাঁধের বোঝাও নয়। তারা আসেও শুধু বিমান ভাড়া দিয়ে তাই তেমন খরচ বেশী হয়না । আর আমরা আসতে লাগে আট দশ লাখ টাকা যা উঠাতে জীবন শেষ এরপর পুরো পরিবারের বোঝা বহনতো আছেই। অনেক ভারতীয় আছে কাজ করে না এরা ভারতীয় উপমহাদের শ্রমিকদের বাসায় বাসায় ভিন্ন মিথ্যা বলে ভিক্ষা করে । আমাদের দেশের লোক আগে বাথা হারা সাইকো কিংবা মক্কা মদিনায় হাত পাতলেও বর্তমানে একদম নাই তবে মক্কা মদিনায় পরিচ্ছন্ন কর্মীদের হাজ্বীরা এমনিতে টাকা পয়সা দেয়।

প্রচণ্ড গরমের দিনে রাস্তা পরিচ্ছন্ন কর্মীদের টাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ি হতেও ঠান্ডা পানীয় ও টাকা দেয় কেউ কেউ। রামু নামের এক হাসপাতাল পরিচ্ছন্ন কর্মী আট ঘন্টা ডিউটি শেষ করে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে মাসে দুই লাখ টাকা দেশে পাঠাতো । আর সে ছিল জেলের অশিক্ষিত সন্তান । এলাকার স্থানীয় বাজারে জায়গা কিনে দুই/তিনটা দোকান করেছে সে অথচ একদিন দিনে আনে দিনে খেতেও পারতো না । আরেক বৃদ্ধ লোক রাস্তার পরিচ্ছন্ন শ্রমিক যে কিনা ভারী কোন কাজ করার শক্তিও নাই সেও প্রতি মাসে এক লাখ টাকা দেশে পাঠাতো। ওই যে বললাম টাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো গাড়ি হতে সাহায্য করে আর উনাকে বৃদ্ধ দেখে সবাই সাহায্য করতো , উনি রাস্তার যে অংশ পরিস্কারের দায়িত্ব ছিলো তাতে আছে টাফিক জ্যাম এবং রাস্তার দুই পাশে দোকানপাট ও অফিস আদালত । একই জায়গায় অনেক বছর কাজ করায় উনি সবার পরিচিত অফিসের কিংবা দোকানেও পরিস্কার করার কাজ করে রোজগার করতে পারতো । এমন পছন্দমত জায়গায় কাজ করার জন্য কোম্পানির ফোরম্যানকে মাসে মাসে একটা কমিশন দিতে হয় । তারপরও লাভ আছে আর এইসব রোজগার করোনায় বন্ধ হয়ে যায় । এখন বেকার বসে মানুষের অতীত গল্প শুনি এবং শুনে।

আসলে ভাগ্য বলেও একটা ব্যাপার আছে। আমি সৌদিতে এসেই একের পর এক বিপদে পড়ছি । অধৈব হয়ে পড়া এবং স্থায়িত্বভাবে কোন চাকরীও না পাওয়া এখানে সেখানে গড়াগড়ি খাওয়া। গুদামঘরের রাতের পাহারাদার হয়ে কয়েক মাস কাজ করতে লাগে করোনার ঢেউ বন্ধ হয় যায় পুরো সৌদি আরব । মার্চের প্রথম সপ্তাহে সৌদির শিয়া বসতি এলাকা কাতিফে প্রথম ধরা পড়ে করোনা রোগী। বলা যেতে পারে শিয়াদের বাহারাইনে যাতায়াত বেশী কারণ সেখানে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ তবে শাসক সুন্নি । সৌদিসহ পুরো মধ্যপাচ্যে সুন্নি শাসক বিরোধী শিয়া সরকারী আনুগত্য মেনে চলেও এদের কঠোরভাবে নজরদারিতে রাখে। কাতিফে সামরিক আধাসামরিক বাহীনি সবসময় মোতায়েন থাকে তারপরও এরা সরকার বিরোধী সভা সমাবেশ করে এবং অকাতরে মরে ও জেলে যায়, যারা মরে তাদের অনেকের লাশও পাওয়া যায় না । এই কারণে ঝামেলা এড়াতে সরকার কাতিফকে প্রধান্য দেয় যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় আর শিয়াদের ভয় করোনা যদি শিয়াদের প্রথম ধরা পড়ে সরকার বিমাতাসুলভ আচরণ করতে পারে তবে কোনটাই সঠিক হয়নি সরকার যথাযথ চিকিৎসা দিয়েছে এবং শিয়ারাও সরকারকে সহযোগিতা করছে। তবে করোনা খুবই দ্যূত সারা সৌদি আরবে ছড়িয়ে পড়ে এবং কারো কারো মতে রিয়াদ ও জেদ্দায় প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায়। আর পাওয়া যাওয়ার সাথে সাথেই বিশেষ ব্যবস্থা রেখে সৌদির সমস্ত সীমান্ত এবং বিমান বন্দর বন্ধ ঘোষণা করে এবং সারা সৌদিতে সান্ধ্য আইন জারি করে । (চলবে)।

মাছ চাই না বড়শী চাই

একটা জনপ্রিয় চাইনিজ ছোট গল্প। ছেলে মাছ খেতে চাইলো। সরাসরি মাছ দিলে, সে একবারই মাছ খাবে। সাময়িকভাবে খুশি হবে। বাবা তাকে সেই সুযোগ দিলেন না। মাছ না দিয়ে ধরিয়ে দিলেন একটা বড়শি। মাছ ধরা শিখিয়ে দিলেন। ছেলের প্রথম কয়েকটা দিন কষ্টে কাটলো।
কিন্তু মাছ ধরার কৌশলটা জানার কারণে সে সারা জীবন মাছ খেতে পারলো।
আপনি কী চাইবেন? মাছ? না কী মাছ ধরার কৌশল?
১. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জরাজীর্ণ অবস্থায় ছিল জাপান। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি কোনো অবকাঠামোই তো অবশিষ্ট ছিল না। ছিল না তেমন কোনো প্রাকৃতিক সম্পদ। দেশটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিশ্বব্যাংক থেকে টাকা ধার নিলো। সেই টাকা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি করলো। শিনকানসেন (পৃথিবীর দ্রুততম ট্রেন) টানলো, বড় বড় শহরগুলোকে হাইওয়ে দিয়ে কানেক্ট করলো। শত শত ফ্লাইওভার তৈরি হলো, পাহাড়ের ভেতরে সমুদ্রের নিচে টানেল তৈরি হলো। মজার ব্যাপারটি হলো- বিদেশ থেকে কোনো শ্রমিক আমদানি করলো না।

কোম্পানিগুলোর ম্যানেজার বাইরে থেকে আনলো না। টয়োটা, হোন্ডা, তোসিবা, সনি, হিটাচি এমন শত শত কোম্পানি কাজ করে দিলো নিজেদের লোক দিয়ে। সিইও থেকে শুরু করে ম্যানেজার, শ্রমিক সবই জাপানি। নিজেদের কর্মদক্ষতা বাড়লো, অভিজ্ঞতা বাড়লো। এই কোম্পানিগুলো কোথাও টেন্ডারে অংশগ্রহণ করলে বা কোনো কর্মচারী চাকরিতে আবেদন করলে কেউ বলতে পারবে না- যাহ তোদের অভিজ্ঞতা নেই, আগে অভিজ্ঞতা নিয়ে আয়, তারপর চাকরি।
জিডিপি হু হু করে বাড়তে লাগলো। ধারের টাকা ফেরত দিয়ে ২০ বছরের মাথায় আমেরিকাকে, বিশ্বব্যাংকে উল্টো ঋণী করে ফেললো। শুরু থেকেই জাপান বাইরে থেকে কোনো প্রডাক্ট কেনেনি। টেকনোলজি আমদানি করেছে।
ধরুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকলাপ ধারণ করার জন্য ক্যামেরা লাগবে। ওনারা তিনজন নয় ছয়জন লোক পাঠাবেন। ক্যামেরা যাচাই বাছাই করার জন্য নয়। ক্যামেরা কিভাবে বানাতে হয় সেই টেকনোলজি শিখে মগজে ভরে আনার জন্য। যেন দেশে এসে শুধু প্রধানমন্ত্রীর জন্যই নয়, সাধারণ জনগণ ও এফোর্ড করতে পারে এমন ক্যামেরা বানাতে পারেন। নিজ দেশে কাজে লাগলে অন্য দেশেও কাজে লাগবে। রপ্তানি করো, আরো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করো। জিডিপি বাড়াও।
মাছ চাইলেই মাছ নয়, মাছ ধরার কৌশলটা শিখিয়ে দাও।

২. মালয়েশিয়ার মাহাতির মুহম্মদ জাপানে পড়াশোনা করেছেন। ক্যাপাসিটি বিল্ড করার জাপানিদের এই কৌশলটি শিখে গেলেন। আশি ও নব্বইয়ের দশকে স্ট্রাটিজিক্যালি দলে দলে মালয় গোষ্ঠীকে বিদেশে পাঠালেন। পড়াশোনার জন্য। স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর জন্য। আমেরিকা, ইউরোপ আর জাপান। বিদেশ থেকে ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই সেই বিদ্যা কাজে লাগানোর মতো জায়গায় সেট করে দিলেন। প্রোডাক্টিভিটি বাড়লো, আয় বাড়লো। ম্যানেজার শ্রেণির লোক তৈরি হলো। বিদেশ থেকে যা আমদানি করলো তা হলো শ্রমিক শ্রেণির লোক। যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসার অবকাঠামো তৈরি হলো। নিজের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ালেন। এখন আর মালয় ছাত্রদের তেমন বিদেশে যেতে হচ্ছে না। বরং বাইরে থেকে মালয়েশিয়াতে বিদেশি ছাত্র আসা শুরু করেছে। চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে হচ্ছে না।
জাপানি কোম্পানিগুলোকে ইনভেস্ট করার উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করে দিলেন। জাপানিরা ইনভেস্ট করলেন। গাড়ি কোম্পানি, হোম ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানি। মাহাতির এর দল স্ট্রাটিজিটা এমনভাবে করলেন যাতে টেকনোলজিটা ট্রান্সফার হয়। স্কিল ডেভেলপমেন্ট হয়। ৫০ বছরে জাপান যা টেকনোলজি ডেভেলপ করেছে তা যেন পাঁচ বছরে ট্রান্সফার হয়। তার ফলাফল দেখেন। ’৮৫-র দিকে মালয়েশিয়ান ব্র্যান্ডের প্রোটন সাগা (মিতসুবিশি জয়েন্ট ভেঞ্চার) গাড়ি বাজারে এলো।

আর আমরা আমাদের মন্ত্রী, এমপিদের জন্য বিনা ট্যাক্সে কিভাবে গাড়ি আমদানি করতে পারি সেই পলিসি বানিয়ে দিলাম। অথচ আমাদের প্রগতি, র‌্যাংগস বা সদ্য ওঠা ওয়ালটন দিয়ে গাড়ির ১০% জিনিস ও তৈরি করে শুরুটা করলে কেমন হতো? ইতিমধ্যে মেইড ইন বাংলাদেশ একটা ব্র্যান্ড বেরিয়ে আসতো না? কয়েক হাজার লোকের কর্মসংস্থান হতো না? টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট হতো না? সেই শুরুটা আজো সম্ভব। বেটার লেইট দ্যান নেভার।
ক্যামেরা থেকে শুরু করে হোম-ইলেক্ট্রনিক্সের এমন কোনো জাপানি প্রোডাক্ট নেই যাতে মেইড ইন মালয়েশিয়া লেখা নেই। একবার ম্যানচেস্টার থেকে জাপানি ফ্লাইটে করে জাপান ফিরছি। মুসলিম হালাল ফুড অর্ডার দিয়ে রেখেছিলাম। দেখি বাক্সে হালাল একটা সিল দেয়া। লেখা Certified by MHCTA (Malaysian Halal Consultation and Training Agency)। কত জায়গায় এদের বিচরণ।

৩. ২০১০ সালে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। বাংলাদেশের একজন নামকরা অর্থনীতিবিদ গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান। জেমস ওয়াট নামের যে বৈজ্ঞানিক স্টিম ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন ইন্সট্রুমেন্ট মেকার ছিলেন। গ্লাসগো শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন। শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা, ওয়াটার সাপ্লাই, পার্ক, টাউন হল ইত্যাদি। গ্লাসগো সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনটা তৈরি হয়েছে ১৮৭৯ সালে। অন্যান্য অবকাঠামোগুলোও একই সময়ের তৈরি। বৃটিশ সরকার আমাদের দেশগুলো থেকে ট্যাক্স কালেক্ট করেছেন আর ব্যয় করেছেন জনস্বার্থে। অর্থনীতিবিদ বললেন, আর আমাদের অবস্থা দেখেন- শাহজাহান সাহেব আমাদের অবকাঠামোতে মনোযোগ না দিয়ে বানালেন তাজমহল, নিজের জন্য। জনগণের জন্য নয়। শায়েস্তা খাঁ টাকায় আট মণ চাল খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। যারা কিনলো তাদের উপকার হলো, কিন্তু যে চাল তৈরি করলো সেই কৃষকের বারোটা বাজলো। আট মণ চাল মানে ১৪ মণ ধান। ১৪ মণ ধান বিক্রি করে মাত্র এক টাকা আয় হতো। গরিব কৃষক গরিবই রয়ে গেল।

১৯৯৬ সালের কথা l ভারতে আইটি সেক্টরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বেড়েই চলছে। ভারতের সরকার বড় তিনটি কোম্পানির প্রধানদের ডাকলেন। ইনফোসিস, টাটা আর আজিম প্রেমজির উইপ্রোকে। ডেকে বললেন, দেশের উন্নতির জন্য আপনাদের কন্ট্রিবিউশন অনেক। সরকারের কাছে কী আপনাদের কিছু চাওয়ার আছে? তিন কোম্পানিই অবাক হলেন। বললেন, আমাদের একমাস সময় দেন। আমরা একটা লিস্ট দেব। ওনারা এক সপ্তাহ পরেই একটা উইশ লিস্ট দিলেন। তিন কোম্পানির তিন দাবি- (ক) Stay away from us (খ) Stay away from us (গ) Stay away from us।
জাপানের জাইকা আমাদের অনেক সাহায্য করেন। আমরা খুশি।

এই খুশিটাকে স্বল্পমেয়াদী না করে দীর্ঘমেয়াদী করা চাই। শুনে থাকবেন বছর দুই আগে জাপানি সরকারের সঙ্গে আমাদের ৬০ বিলিয়ন ইয়েন এর একটা চুক্তি সই হয়েছে। বলেন তো দেখি এই টাকা কী সাহায্য? না কী ধার? ধার নিচ্ছে কে ফেরত দিচ্ছে কে? আমরা যদি ধারই নিয়ে থাকি, তাহলে এই টাকাটা কন্ট্রোল করছে কে? প্ল্যান করছে কে, ইমপ্লিমেন্ট করছে কে? কত টাকার প্রোডাক্ট কিনছি? কত টাকার টেকনোলজি কিনছি? কতটাকার স্কিল ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে? টাকাটা ফেরত দিচ্ছি কবে?

জাপান আমাদের একটা বন্ধু দেশ। প্রোডাক্ট না চেয়ে টেকনোলজি চাইলে ওনারা ‘না’ করবেন না। আমরা মাছ চাচ্ছি না কি মাছ ধরার টেকনোলজি চাচ্ছি, এই সিদ্ধান্ত দেয়ার দায়িত্ব আমাদের।

লেখা ও ছবিঃ সংগ্রহ করা।

করিমন বিবি

স্টেশনের পাশে পুরাতন পাটের বস্তা দিয়ে
তাঁবুর মত ঘরে করিমনের বাস। স্বামী আছে
সন্তান আছে সবই অকর্মার ত্রাস। করিমন বাসা
বাড়িতে করে ঝিয়ের কাজ। কখনো সহদেবপুর
হিন্দু বাড়িতে আবার কখনো রামপুরে মুসলিম ঘরে।

করিমনের স্বামী রহিম মিয়া খায় আবার ইয়াবা
বিড়ি টানে সুখ সুখ চোখে। পোলাটা কাজ করে স্টেশনে বসে, রোজ জুতা পালিশ জুতা পালিশ চিৎকার করে বলে। রাজা বনে গাজা টানে চোখ মুখ লাল করে ঘুমিয়ে যায় কদম তলায়।

করিমন একদিন যায় না কাজে, রহিম মিয়াও চুপ থাকে। বলে ওগো শুনছো শরীরটা ভালা না দাও না একটু ভালোবাসা। রহিম মিয়া চেপে ধরে মুখটা করিমনের, তারপর দুইটা ঠোক্কর মারে ঠোঁটে।
করিমন বলে ইস্ ছাড়োরে ভালোবাসার রাজ্যে আজ আমি রাণীরে।

আমাদের কথা শুনো না শুনলে মরো না হয় দেশ ত্যাগ করো পছন্দ তোমার

ছয় মাসও হলো না গাজীপুরে বুয়েট হতে পাস করা একজন ইঞ্জিনিয়ারকে কিছু টাকার বিনিময় ভাড়া করা গুণ্ডা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। উনার অপরাধ নিম্ন মানের কাজ করায় উনি বিল আটকে রেখে ছিলেন এই জন্য নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ রাস্তায় ফেলে যায়। পরিবারের রোজগার করা মানুষটার মরণে এখন পরিবারকে অভাব-অনটনে সীমাহীন কষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে। সন্তানদের লেখাপড়ায় নেমে আসবে চরম বিপর্যয়। কারণ সৎ লোকের অবৈধ সম্পদ গচ্ছিত থাকে না। হাজারো খুন হওয়া মানুষের সন্তানেরা জীবনের শুরুতে বাংলাদেশের এমন ঘৃণিত রূপ দেখে বড় হচ্ছে।

কয়েকদিন আগে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের আরো একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেরে রক্তাক্ত করেছেন কিছু গুণ্ডা। উনার অপরাধ পুঠিয়ায় ভূমি অফিস নির্মাণে ঠিকাদার নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

প্রশ্ন হলো কারা এই কাজ করতেছে। সহজ উত্তর যাদের এখন অপরিসীম ক্ষমতা আছে। যারা রডের বদলে বাঁশ দিয়ে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ -কালভার্ট ও সরকারী অফিস- আদালত করতে চায় এবং বিল নিতে চায় রডের চেয়ে দ্বিগুণ, তারাই। যে দেশে পেশাদারী দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে গুণ্ডার হাতে ডাণ্ডার মার খেয়ে রক্তাক্ত হতে হয় এবং একদল হায়নার হাতে মরণের ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় সে দেশে কে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইবে আর সৎ থাকতে চাইবে। হলেও প্রচুর প্রভাবশালী হতে হবে থাকতে হবে রাজনৈতিক যোগাযোগ।

এই লোকগুলি যদি আজ পুলিশ হতো, যদি ম্যাজিস্ট্রেট হতো তাহলে কেউ চোখ তুলে তাকানোর সাহস করতো না। আমরা অহরহ দেখছি পুলিশ কর্মকর্তা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের নাকে রশি লাগিয়ে ঘুরায়। বিচার না হতে হতে আজ এমন হয়েছে যে পুলিশ সাধারণ লোককে ধরে নিয়ে পরিমাণ মত চাঁদা না ফেলে ক্রস ফায়ার করতেছে। ঠিকাদার রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে নিম্ন মানের কাজ করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। দেশটা যেন চোর ডাকাত পুলিশ খেলায় মত্ত। আর আম জনতা নিয়ে চুপ থাকছে। এই চুপ থেকেও নিরাপদ থাকা যাচ্ছে না। গ্রামে গঞ্জে আজ মাদকের হাট বাজার বসে প্রতিবাদ করা সম্ভব হচ্ছে না। চোখের সামনে যুব সমাজ মাদকের নেশায় পৃথিবীকে রঙ্গীন দেখছে রাজনৈতিক ছায়া তলে। প্রতিবাদী হতে হলে শিরোনামের একটা অপশন পছন্দ করতে হবে।