
সকালে রবিনের মা আসে দাদির কাজ করার জন্য। দাদির প্রতি রবিনের মার যত্ন দেখে বুঝা যায়, দাদি উনার প্রতি অর্থনৈতিক হাত প্রসারিত করেন। ভালো হয়েছে কাজে এমন সহযোগী থাকায়। চাচি কেমন আছেন? ভালো আছি মা মৌরি। রাতে রবিন তোমার কথা বলেছে। বলে মা – দাদির বাড়িতে একটা আপু এসেছে। এত ভালো, সবার সাথে মিলে ধানের জমিতে ফটো তুলছে। কত কিছু জানতে চায় গ্রামের কথা। পড়তে বসেও সেই তোমার কথা, ভাবলাম একবার এসে দেখে যাবো কে আসলো। কিন্তু ভয়ে আসি নাই। অন্ধকার রাত, এমনিতেই মেয়ে মানুষ দেখলে জানোয়ার হামলে পড়ে। কত জোয়ান মেয়েদের ইজ্জত নষ্ট হচ্ছে। আর বড় লোক বেটিরা বিচার পায় না, আমরা তো হলাম গরীব আমাদের জন্য বিচার হলো আকাশের চাঁদ। আমি চাচির কথা আর গ্রামের গরীব মানুষের সরলতা নিয়ে ভাবি। শুনছি আমি গ্রামের রাজনীতি জিলাপির প্যাঁচ।
নীলফামারী জেলার এক দরিদ্র ও অর্ধশিক্ষিত মানুষের গ্রাম আমাদের। সহজ সরল অশিক্ষিত কিছু মানুষ নিয়ে অর্ধশিক্ষিত কিছু মানুষের পলিটিক্সের হাট বাজার। এখানেও দোয়েল কোয়েল পাখি আছে। এখানেও সামছুর রহমানের স্বাধীনতা কবিতার মেয়েরা পুকুরে অবাধে সাঁতার কাটে। কৃষক তাজা তাজা ষাঁড় দিয়ে চাষ করে। তামাক জমির আইলে বসে পান্তা ভাত কাঁচামরিচ দিয়ে সাবাড় করে। নেই শুধু কাজী নজরুলে কবিতা। নেই সায়ীদ স্যারের বইয়ের লাইব্রেরির মত এমন কিছু। আছে এনজিও নামক পাতানো খেলা। টাকা নাও, কিস্তি দাও। না পারলে বউ -ঝির গয়না বিক্রি করো। তুমি পারো না পারো, খাও না খাও কিস্তি সচল রাখতেই হবে। কি বিচিত্র, কি সরল অংক, কি সরল বাণিজ্য।
রবিন রাতে ভাত খেতে বসেও তার বাবাকে সেই তোমার কথা বলা শুরু করলো। তার বাবা সকালে চলে যায় তামাক জমিতে কাজ করতে, যাওয়ার সময় বলে আজ একটু জলদি যেও চাচীর বাড়ি। কে আসলো কি জানি। বাজার সদাই লাগবে কিনা জেনে নিও। মাহিন ভাইয়ের বউতো আসার কথা না। আহারে ভালো মানুষের দাম নাই। এই রকম অমায়িক মানুষ ছেড়ে দিয়েছে। চাচীর মতই আমাদের খেয়াল রাখতো বাড়ি আসলে। আমরা গরীব বলে কখনো অযত্ন করেনি। ভাই ভাই বললে মনে হতো যেন মায়ের পেটের আপন ভাই। খেয়েছি কিনা, বাড়িতে চাউল ডাল আছে কিনা সব জানতে চাইতো। এমন মানুষের কপালে সুখ সয় নাই। সবই কপাল।
রবিনের মা আম্মুকে কোন কাজই করতে দিচ্ছে না। তারপরও আম্মু সমস্ত ঘর পরিষ্কার করলো। দেখলাম আম্মু যে রুমে থাকতো সেখানে গিয়ে নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। আর তখনি আমার হৃদয়টা শকড করে। বিরুদ্ধে দাঁড়াতে মন বিদ্রোহ করে আব্বু নামক লোকটার। বিদ্রূপ করে বলতে ইচ্ছ করে আমার আম্মু পৃথিবীর সেরা। আর কারো আমার সৎ মা হওয়ার যোগ্যতা নেই। আমি পিছন হতে আম্মু ডাক দেওয়ায় চমকে উঠে নিজেকে সামলে নেয়। বলে একটু আধটু খারাপ লাগার কথা। তোমাকে ছোট থাকতে নিয়ে আসলে তুমি পুরা রুমে খেলা করতে। আর এখন সেই রুমে অন্য জনের বাচ্চা—–। মা জলি তুমি কেন এইসব পরিষ্কার করতে গেলে। দাদি হয়তো বুঝতে পারে আম্মুর খারাপ লাগছে। আম্মুও দ্রুত নিজেকে সামলে নেয় এবং বলে আপনি একা তাই একটু দেখছি আম্মা।
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৭ম পর্ব।
আম্মুর জন্য এখানে কষ্টকর এবং অপমানজনকও বটে। তারপরও এসেছেন শুধু দাদি আর আমার জন্য। আম্মুকে পেয়ে দাদি যেমন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছেন তেমনি আমিও গ্রামে দাদির কাছে আসতে পারায় দেহ মন আন্দোলিত। আসলে একটা সাজানো গুছানো বাগান বিনা দোষে বিনাশ হলে কষ্ট লাগারই কথা। আম্মু ভাবেন কোথায় উনার ঘাটতি ছিল, ভালোবাসার কমতি ছিল কিনা। কেন আব্বুর হঠাৎ পরিবর্তন হলো, হয়তো তাঁর মনে লোভ এসে গিয়েছে। কানাডার নাগরিকত্ব আব্বুকে মোহাবিষ্ট করছে এই হবে প্রধান কারণ। এই বাড়ির এই ঘরের প্রতিটি ইট বালু আম্মুর অনেক অনেক পরিচিত। অথচ এখানে এখন একজন পরিচয়হীন ও অপ্রয়োজনীয় মেহমান। এই হতাশা হৃদয়ের মাঝ হতে ঝর্ণা হয়ে প্রভাবিত হচ্ছে কষ্ট নামক সাগরে। কিন্তু আমরা বুঝতেছিনা আর উনি বুঝতে দিচ্ছেন না। কারণ আম্মু এসেছেন দাদির আনন্দের জন্য, আম্মুর কষ্ট প্রকাশ করলে দাদি দুঃখ পাবে। আসলে ঝর্ণা সুউচ্চ পাহাড় হতে নিচে পড়ে বয়ে যায় সাগরে আর আমরা সেই ঝর্ণায় গোসল করে আনন্দ উপভোগ করি কিন্তু এই ঝর্ণার কষ্টও থাকতে তা কি কখনো অনুধাবন করার চেষ্টা করি, না করি না। আম্মু চেষ্টা করেন নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ানোর জন্য। তাই রবিনের মা আসলে আম্মু তাকে অন্য কাজ করতে বলে। রবিনের আব্বু এসে বাজার হতে সব সওদা করে দিয়ে যায়। আরো কয়েকজন চাচা ও চাচী এসেছে দাদির খোঁজ নিতে। তারা আম্মুর সাথে অনেক আলাপও করে। বার বার দুঃখ প্রকাশ আব্বু কেন এটা করলো। এতে বুঝা যায় গ্রামের অভাবী মানুষ খাওয়ার খোঁজ করলেও ভালোবাসা খোঁজে না। স্বামী সন্তান নিয়ে খুপরিতে ওরা সুখের অট্টালিকায় থাকে।
আমি আর রবিন তার গ্রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়াই মাঠে ঘাটে। কখনো পুকুর পাড়ে আবার কখনো নদীর ধারে। ভুলে গিয়েছে আমি একজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। মাঝে মাঝে পথচারী এমনভাবে তাকায় যেন খেয়ে ফেলবে। মেম্বার চাচা দুই/একজনকে বলেছেও শহরের মেয়ের শরম নাই। হাদিস কোরান পড়ে না। তাই তারা বেহায়া, দুইদিন জন্য আসছে গ্রামে তাই একটু তিড়িং তিড়িং করে। আমি গ্রামের সবুজ শ্যামল রূপ দেখেই অভিভূত। চারিদিকে বাড়িঘর সবুজ সতেজ গাছপালার ভিতর বিস্তীর্ণ মাঠ। মুগ্ধ হয়ে গান গাই“এমন দেশটি কোথাও তুমি পাবে নাকো খুজে”। একদিকে ধান কাটার ধুম আরেক দিকে শাক-সবজি লাগানোর মৌসুম। কৃষকদের ফুসরত নেই এখন বসে থাকার। রবিনের বাবা দিন হিসাবে কাজ করে, একদিনও বেকার থাকে না। যখন যে কাজ থাকে তখন সেই কাজ করে, কখনো তামাক জমিতে আবার কখনো সবজি জমিতে। চাচা একদম সহজ সরল অমায়িক মানুষ। বেশী চাওয়া পাওয়ার নাই দুইবেলা বউ বাচ্চা নিয়ে দুইটা ডাল ভাত খেতে পারলেই চলে মা। এই সব লোকের অট্টালিকা গড়ার দৌড়ে নেই বলে এবং পরিমিত চাহিদার কারণে সুখ তাঁদের কাছে থাকে।
দাদির জন্য হেমন্ত কাকা দুধ নিয়ে আসে। আমাদের গ্রামের কয়েকটা বাড়ি পরে উনার বাড়ি। হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে এই গ্রামে বাস করে। দাদিকে বলে চাচী মেহমান আসবে কেন বলেন নাই। দুধ বেশী করে নিয়ে আসতাম। দাদি বলে ওরা আসবে এইটা আমি নিজেও জানতাম না বাবা। তোমার মা কেমন আছে। তাকে বলো একবার আসতে তাহলে আমার বউমার সাথে দেখা হবে। চাচী মা দুধ নিয়ে আসতে চায় আমি বারণ করি। মা বলে আপনার বাড়ি কয়েকদিন না আসলে, আপনাকে না দেখলে মন চটপট করে। বলে মাহিনের মা একা দেখে আসা ভালো। হুম তোমার মা আর আমি বয়সেও তেমন পার্থক্য হবে না। কোন দিন কোন মরে যাই বলা যায় না। মার দেখাশুনা করিও বাবা, ঔষধপত্র লাগলে বিরক্ত হয়ে যেও না। টাকাপয়সা লাগলে আমাকে বলবা। বাবা নাই মা আছে, তার সেবায় কমতি হয় না। আর চাচী অনেক দিয়েছেন আপনি। এই গ্রামে সবাই জানে আপনার কাছে সাহায্য চেয়ে খালি ফিরে যায় না কেউ।
আমাদের গ্রাম হিন্দু মুসলিম সবাই মিলে সম্প্রীতির এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। অন্য ধর্মের লোক নাই এখানে। যে যার ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে নিজের পছন্দমত। দাদির জন্য অনেকে খই চিড়া ও মুড়ি নিয়ে আসে হিন্দুদের আচার-অনুষ্ঠানের। রাজনৈতিক বিবাদে জড়ানো কয়েকটা মুসলিম ছেলে যেমন আছে তেমনি হিন্দুও আছে। এদের কারণে মাদক মুক্ত নয় গ্রামটা। তবে আমি এদের বিরুদ্ধে একটা মতবাদ গড়ে তোলা দরকার মনে করি। মহাজনেরা তামাক চাষে লাভবান। তেমনি রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে গ্রামে মাদক বিক্রি করে স্থানীয় যুবকদ্বয়। আর এতে লাভবান ওইসব নেতাগণ।
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৮ম পর্ব।
বিড়ি সিগারেট প্রকাশ্যে বেচাকেনা হয় এইটি নিম্নতর মাদক। গাজা, ফেনসিডিল এবং ইয়াবা কিছুটা চোরাচুরি ভাবে বিক্রি হয়। খরিদ্দার নিম্ন ও মধ্যবিত্তের যুবক। হিরোইন সবচেয়ে দামি মাদক। আর এর খরিদ্দার বড়লোকদের বখাটে সন্তান। চোরাচালান ও মাদক এরা আপন দুই যমজ ভাই। যেসব লোক মাদক ব্যবসায় জড়িত তারা আবার অনেকেই পণ্য চোরাচালানেও জড়িত। বাংলাদেশের অনেকটা সীমানা জুড়ে ভারত এবং সামান্য একটুই সীমানা মায়ানমারের সাথে। কিন্তু আচার্য হল সীমান্তের মানুষ মাদকের কারবার করলেও তারা পুরা বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকায় কিংবা রাজধানী পর্যন্ত এই মাদক পৌছে দিতে পারে। কিন্তু কিভাবে এই প্রশ্ন আসা অবান্তর নয়। বুঝা যায় ক্ষমতাবান এর সাথে জড়িত। কলেজ পড়ুয়া ছেলেটা ইয়াবা সেবন করে নিজেকে মেধাহীন করে ফেলছে। নিয়মিত নেশা করার জন্য টাকা জোগাড় করতে মা বাবা আদরের মেধাবী সন্তান অস্ত্র হাতে ডাকাত হয়ে যায়। কিন্তু রাঘব বোয়াল এর সন্তান এই মাদক বিক্রির টাকায় বিদেশে নামকরা স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র। আমরা বেহুঁশ আমজনতা সেই নেতা সেই সরকারী কর্মকর্তার কথায় উঠবস করি। নিজের ক্ষতি করে ক্ষমতাবানদের পুজা করি সামান্য লোভে পড়ে। আপনি শত সন্তানের মেধা ও মনন ধ্বংস করে যে নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জল করতেছেন, তাই মনে রাখবেন শেষ বয়সে আপনার জন্য বৃদ্ধ আশ্রম অপেক্ষা করছে। কারণ “যেমন কর্ম তেমন ফল”।
চাচা কেমন আছেন। রবিন কেন আসে নাই। ভালো আছি মা। তোমার চাচী আর রবিন বেড়াতে গিয়েছে। তাই তোমার দাদিকে বলতে আসলাম। আচ্ছা, আমি রবিনকে বলেছি আমি যতদিন থাকবো গ্রামের ছোট ছেলেমেয়ে সবাইকে সকালে বাড়িতে পড়াবো। যাতে তারা ভালো করে পড়ে স্কুলে।
মা এই কথাতো জানলে আমি তাকে যেতে দিতাম না। ঠিক আছে দুই/ এক দিনে আর অসুবিধা হবে না। আপনি ফোন করে বলে দিবেন চলে আসতে। ঠিক আছে মা। রবিনের মা আজ আসবে না চাচী। কেন, কোন অসুখ হলো নাকি। অনেক কাজ করে। না চাচী অসুখ না, বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। মন হয় সে অন্য কাউকে বলেও গিয়েছে আপনার জন্য আসতে। যাতে রান্নার কাজে অসুবিধা না হয়। আরে কি যে বলো, আমার বউমা আসায় আমার শক্তি বেড়ে গিয়েছে। আমি নিজেই সব করতে পারব হ্যা চাচী দেখতে পাচ্ছি। ভাবী অনেক ভালো মানুষ। তাই কপাল ভালো আপনার মত শাশুড়ী পেয়েছে। যে ছেলের বউকে নিজের মেয়ের মত ভালোবাসে। আমার মেয়ের অভাব ছিল সেটা জলি মা পূরণ করছে। তার মত বউমা পাওয়া এখন কঠিন। ভাবী কোথায় দেখছি না যে। প্রতিদিন আসলে এসেই ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করতো। মনে হয় ব্যস্ত আছে। হ্যাঁ কাজে ব্যস্ত আছে।
আগে খাল খনন করতো মানুষে। এখন খনন করে বুলড্রোজার দিয়ে। যাই হোক প্রমাণ হয়েছে খাল খনন ভুল ছিলো না। এইটি অত্যন্ত জরুরী আমাদের দেশে। খননের ফলে শীতকালে মিঠা পানি জমা থাকলে কৃষি কাজে সেচ দেওয়া যায় তেমনি বর্ষাকালে অতি বৃষ্টির জল কিংবা বন্যার জল তাড়াতাড়ি নেমে যেতে পারে। শীতকালে শাকসবজি চাষে এখন সেচ সুবিধা আছে বলে কৃষক নিশ্চিত মনে চাষাবাদ করতে পারছে। কিন্তু একটাই সমস্যা তা হলো ন্যায্য দাম পায় না বলে কৃষক পেরেশান। এই সমস্যাও অদূর ভবিষ্যতে থাকবে না। শুধু শুভ চিন্তক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি দরকার। যে কৃষক, শ্রমিক দুঃস্থ মানুষের কথা সরকারের উচ্চ পর্যায় পৌঁছে দিবে এবং তিনি ভক্ষক নয় রক্ষক হবেন।
খাল কাটার মাটি, এইটাতেও রাজনীতি, এটাতেও টাকার খেলা। শক্তিধর রাজনৈতিক নেতা আজ বালু খায়, মাটি খায়, নিরীহ ও গরীব লোকের রক্ত খায়। খালের পাড়ে রাখা মাটি নিয়ে রাজনৈতিক দলের দুই গ্রুপে একবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। শক্তিধর গ্রুপ দখল করে মাটি। আগে খালের পাড়ে জায়গার মালিক খাল কাটা মাটি নিজের প্রয়োজনমত ব্যবহার করতো। এখন আর সেই দিন নাই। এখন মাটি জায়গামত জমা করে ইট ভাটার মালিকের কাছে বিক্রি করে দলীয় লোক। এই মাটির দখল নিতে নিজ দলে চলে যুদ্ধ। যে জিতে সেই খায় মাটি।
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
৯ম পর্ব।
অথচ আজ না হয় কাল এই মাটির নিচেই যেতে হবে। আর আজ মাটি বিক্রি করে খেতে রক্তপাত। যার কিছুই নেই সেও চুরি করে, আবার যার অনেক কিছু আছে সেও আরো বেশী সম্পদ করার জন্য চুরি করে। আজব দুনিয়া। এই যেন এক প্রতিযোগিতা চুরির। তবে ছোট চোর বড় চোরের কাছে পরাজিত হয়। কারণ বড় চোরদের আছে আলিশান বাড়ি, দামী গাড়ি, কাঠি কাঠি টাকা হোন্ডা ও গুন্ডা। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে যাদের কোন প্রচার নাই। শত শত ভালো লোক আছে নীরবে নিভৃতে। এক জনের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আগের দিনের পুরাতন কথা।
থানায় নতুন ওসি বদলি হয়ে এসেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সে আসনের এমপি সাহেবের সাথে দেখা করতে ওসি উনার বাড়িতে গেলেন। ওসি যখন এমপি সাহেবের বাড়ির উঠানে পৌঁছলেন তখন দেখলেন এক মধ্যবয়সী দাড়িওয়ালা লোক একটি গাভীকে ঘাস খাওয়াচ্ছেন ! তখন ওসি সাহেব ঐ লোকটিকে জিজ্ঞাসা করলেন এমপি সাহেব বাড়িতে আছেন কিনা? তখন ঐ মধ্যবয়সী দাড়িওয়ালা লোকটি ওসি সাহেবের কাছে এসে বললেন তিনিই এই আসনের সংসদ সদস্য। ওসি সাহেব তো রিতিমতো হতবাক ! যেখানে ওসির ধারণা ছিল এমপি সাহেব আলিশান বাড়ির খাস কামরায় দলীয় নেতা কর্মী নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবং নেতা কর্মী নিয়ে মার্সিডীজ, প্রাডো, দামি ব্রান্ডের গাড়ি নিয়ে সরকারী টাকায় ঘুরে বেড়াবেন। সেখানে এই এমপির সাধারণ জীবন যাপন সত্যিই ওসি কে চমকিয়ে দিয়েছেন। তিনি সাতক্ষীরা আশাশুনি আসনের দুই বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাওলানা রিয়াসত আলী। যিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সারাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন।
ওয়ান ইলেভেনের পর আর্মি আতংকে যেখানে রাজনৈতিক রাঘব বোয়ালরা পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তখন এই মানুষটি আর্মি ক্যাম্পে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন তার নামে কোন দূর্নীতি আছে কিনা। উনি মারা যাওয়ার পর প্রচার বিমুখ এই নেতার মৃত্যু সংবাদটিও কোন মিডিয়া প্রচার করে নাই। দেশ যখন অসৎ, চরিত্রহীন, দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেতায় ভরে গেছে সেখানে রিয়াসত আলীরা সততা, সরলতা, নিষ্ঠা ও চরিত্রের মাধুর্যের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন চুপিসারে, সবার অগোচরে। এমন নেতাই এই দেশে বেশী প্রয়োজন। তাই তিনি অনেকের মধ্যে একজন হয়েও অনন্য, অতি সাধারণ হয়েও অসাধারণ।
আরো অনেকই আছে যাদের আমরা চিনি না। যাদের কথা প্রচার হয়নি। এইসব লোকের ভালো কাজ প্রচার হয় না কখনো। তাঁদের লক্ষ্য থাকে মানব সেবা। মনে থাকে সৃষ্টিকর্তার ভয়। তারা মনে করে আজ না হয় কাল মরতে হবেই। তাহলে সামান্য লোভে পড়ে কেন বদনাম ও বদদোয়া কাঁধে নিবো। অথচ অন্যরা নিজে ভোগ করার চিন্তায় রত।
কোপাকোপির লড়াইয়ে জিতে যাওয়া পক্ষ মাটি বিক্রি করে দেয়। জায়গার মালিক নীরব দর্শক। কিছু টাকা হয়তো ইঞ্জিনিয়ার এবং বুলডোজার চালক পায়। মাটি সরবরাহ করে ট্রাকে করে। গ্রামের মাটির রাস্তা নষ্ট হয়। ধুলাবালিতে নষ্ট হয় পরিবেশ এবং বাড়ি ঘর। বাড়ির সামনে খেলাধূলা করতে বাহির হয়ে মাটির ট্রাকে চাপা পড়ে সুজন মিয়ার ছয় বছরে ছেলেটা। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত ঘোষণা করে ডাক্তার। সন্তান হারানো মায়ের কান্নায় গাছপালা নীরব হয়ে যায়। নীরব থাকে আকাশ, নীরব থাকে বাতাস। চোখ বুজে জল ফেলে মহামালিক। ভয়ে পাথর হয় এলাকাবাসী। শকুন চিৎকার করে মধ্য আকাশে। কিন্তু মাটি সরবরাহ বন্ধ হয় না। আমি ভাবী গ্রামে মানুষ নেই হয়তো। না আমার ধারণা ভুল হয়। তিন দিন পর সন্তান হারানো বাবাকে ডাক দেয় সমঝোতা করার জন্য। একজন দারোগাবাবু পরিপাটি হয়ে বসে কিছু গ্রামের টাউট বাটপাড় নিয়ে। বৈঠকে চলে কথার ফূলঝুড়ি। দারোগা সাহেব ঘোষণা দিলেন বাচ্চার বাবা পাবে ষাট হাজার টাকা। ঘোষণার সাথে সাথে মানুষ উঠে যায়। শকুন একদলা বিষ্ঠা ফেলে নেতার মাথায়। সিদ্ধান্ত পাক্কা জীবনের মূল্য ষাট হাজার। আচ্ছা টাকায় ওজন হয় জীবন। এ কেমন জীবন।
মেয়ে ও মায়া, মাদক ও রাষ্ট্র।
১০ম পর্ব।
শহর কিংবা গ্রাম সব জায়গায় নিরীহ মানুষদের উপর অত্যাচার চলে আসছে। যুগ যুগ ধরে এই অবিচার যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। দেখার কেউ নাই, বলার কেউ নাই। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেকে গরীব হতে ধনী হয়ে তাঁর অতীত ভুলে বসে আছে। যে কোন পথে হোক ভাগ্যের জোরে ধনী হয়ে সে যেন এখন আকাশে বাস করে। আস্তে আস্তে মায়া শব্দটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে কারণ মানুষের মন হতে মায়া বিলীন হচ্ছে বলে। বিপদে পড়লে ধনীরা এখন গরীবদের তিরস্কার করে সাহায্য করার ভয়ে। সন্তান বৃদ্ধ মা বাবাকে বোঝা মনে করে এড়িয়ে চলে। শিক্ষা মানুষকে চাকরীমুখী করছে ঠিকই আত্মার বিকশিত করছে না। ধর্ম নিরীহ হয়ে এক জায়গায় পড়ে থাকছে। ধর্ম মানুষের জীবনে কোন প্রভাব ফেলছে না। অথচ আমরা আত্মসম্মানবোধ মানুষ যা জ্ঞান গরিমায় নিজে শ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। আমরা ধর্মকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করি। চীন গিয়ে হালাল খাবার খোঁজ করি। অথচ চীন যাওয়ার উদ্দেশ কিন্তু নামী এবং দামি পণ্য নকল করা।
আর নকল পণ্য বিক্রি করে কোটি টাকা রোজগার করে বিদেশে পাচার করি। এখানে ধর্ম এবং বিবেক অকেজো। কিন্তু নিজেকে সমাজে সাধু গুণী এবং সম্মানিত করার জন্য ধর্মের লেবাস ধারণ করে অনেকে। এইখানে সে নিজের বিবেককে প্রতারিত করে নিজেকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বনে। তবে সময়ের সাথে সাথে সাধারণ জনগণ বুঝতে শিখছে। নিজে পড়াশোনা না করলেও সন্তানদের পড়াশোনা করাতে বদ্ধপরিকর। সরকার অনেক চেষ্টা করতেছে মানুষকে শিক্ষিত করতে। তাই বৃত্তি উপবৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনই নয়-ছয় করে এইসব বৃত্তির টাকা পয়সা নিয়ে। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তির কারণে কিছু বলা মুসকিল। এইসবের সাথে আবার জড়িত থাকে অসাধু শিক্ষক।
কিছু স্কুল শিক্ষক আর মাদ্রাসার শিক্ষক আছে একদম নীতিহীন। এরা এতই নৈতিক বর্জিত যে ছোট ছোট বাচ্চাদের যৌন কাজে বাধ্য করে। অথচ এদের ঘরে বউ বাচ্চা সব থাকে। এদের যৌন কামনা এত বেপরোয়া যে শিক্ষাকে পুঁজি করে বাচ্চাদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। তারা এতোটা হিংস্র যে ভুলে যায় যে তাদের বউ বাচ্চার চেহারা। ধর্ম যেখানে মানুষকে নমনীয় হতে শিখায়। সেখানে মৌল্লারা হয়ে পড়ছে ধর্ষক হিসাবে। এদের বিরুদ্ধে মানবিক গুণ সম্পন্ন মানুষকে লড়তে হবে, মানুষ লড়তে না পারলে স্বয়ং ঈশ্বরকে লড়তে হবে। এই জঘণ্য সমাজ আমাদের হতেই পারে না। যে কোন মুহূর্তে যে কোন কেউ এদের শিকারে পরিনত হতে পারে। এছাড়াও এখন অসৎ চরিত্রের কিছু মহিলা গ্রামের গরীব সুন্দরী মেয়েদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করছে। আবার এইসব মহিলা এত ক্ষমতাবান যে এরা ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে। কারণ এদের উপর আর্শীবাদ থাকে জাতীয় নেতাদের। গ্রাম কিংবা শহরে এই ভয়ানক কাজ সমানতালে হচ্ছে। মিডিয়ায় যা আসছে তা আমরা দেখতেছি। মিডিয়ায় না আসা দ্বিগুণ ভয়ানক চিত্র আমাদের অজানা থেকে যাচ্ছে। সমাজটাকে ভেঙ্গে মেরামত করা দরকার হয়ে পড়েছে। না হয় বিধাতা কাউকে ক্ষমা করবেন না। মরণের পর যদি প্রশ্ন করে তোমার সমাজে এত অনাচার হয়েছে তুমি কেন প্রতিকার করতে চাওনি, তখন নিজেকে অপরাধী মনে হবে। তখন জবাব দেওয়ার কিছুই থাকবে না। অন্যায়কারী আর অন্যায় প্রশ্রয় দেওয়া সমান অপরাধী।
(কখন বুঝবে একটি দেশ ও সমাজ নষ্ট হয়ে গেছে, যখন দেখবে দরিদ্ররা ধৈর্যহারা হয়ে গেছে, ধনীরা কৃপণ হয়ে গেছে, মূর্খরা মঞ্চে বসে আছে, জ্ঞানীরা পালিয়ে যাচ্ছে এবং শাসকেরা মিথ্যা বলছে।
———— হযরত আলী (রাঃ) ।)
আম্মু তোমার একটা কাজের মেয়ে দরকার বলে ছিলে। আমাদের পাশের বাড়ির শিউলীকে নিয়ে চলো। আমি তাকে চিনি না। আসতে বলো কথা বলে দেখি যায় কিনা। ভালো মন্দ কথা বলেতো বুঝবো। আম্মু তুমি দাদিকে জিজ্ঞাসা করতে পারো। আচ্ছা ঠিক আছে তোমার দাদি গিয়ে কথা বলবে। তবে আমি বলেছি তাকে পড়াশোনা করতে হবে। তাহলে বাসার কাজ কে করবে। আমার কাজের লোক দরকার। পড়াশোনা লোক দিয়ে করবো। আমি একজন কথা বলার লোক পাবো আম্মু। তুমি সারা দিন বাসায় থাকো না আমি একা একা। আচ্ছা ঠিক আছে তোমার দাদি কথা বলে দেখবে। দাদি নবী চাচার মেয়ে শিউলীকে চিনো তুমি। কেন চিনতে হবে। কি ব্যাপার, কি হয়েছে শিউলীর। আমি তাকে আমাদের সাথে ঢাকায় নিতে চাই। বাসায় কাজ করবে আবার পড়াশোনাও করবে। সে যাবে কিনা সন্দেহ আছে। আরো ছোট মেয়ে হলে ভালো হয়। তাকে তার বাপও যেতে দিবে না।
যেতে দিবে দাদি, তুমি কথা বলো তাদের সাথে। বাসায় খরচ বেড়ে যাবে, তোমার আম্মুর কষ্ট হবে। তার পড়ার খরচ, খাওয়া দাওয়া আবার মাস শেষে কিছু টাকাও দিতে হবে। না, অনেক খরচ মৌরি। দাদি তুমি দিয়ে দিবে মাসিক টাকাটা। তা আম্মু জানতে হবে না। আব্বু যে টাকা পাঠায় তা হতে দিবে। কিন্তু জলি জানলে প্রচন্ড রাগ করবে। অবশ্যই বলতে হবে তাকে আমি তার সাথে কোন লুকাচুরি করতে পারবো নারে মৌরি। সে আমার আত্মা। সে ভুল বুঝলে আমার অনেক কষ্ট লাগবে।
আচ্ছা ঠিক আছে।
বউমা জলি এদিকে আসো মা। মৌরি কি বলে। জ্বী আম্মা, আমি মৌরিকে একদিন বাসায় বলে ছিলাম। একটা কাজের মেয়ে পেলে ভালো হয়। এখন সেটার বায়না ধরেছে। কথা বলে দেখেন। ঠিক আছে কথা বলে দেখি যায় কিনা। কিন্তু মৌরি বলে কি পড়াশোনাও করবে। আবার মাসিক বেতনও দিতে হব ‘এতে বাসার খরচ বেড়ে যাবে মা।
সমস্যা হবে না আম্মা। মৌরি একা একা বা- -সায়। (চলবে )।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১১তম পর্ব ।
আমি একটা ছোট মেয়ে চেয়ে ছিলাম । আমার কাছে গিয়ে যেন সব কিছু শিখে এবং জানে , কথা শুনে । শিউলী বড় মেয়ে । তোমার কথা শুনে হয়তো রাজি হয়েছে । না হয় দিতো না । গরীবের সন্তানও আদরের মৌরি কথা বলেছে তাই সে এসে বলতেছে আমাদের। আম্মা আপনার অনেক কাপড় , কিছু কাপড় গরীবদের দিয়ে দিবেন । সব কাপড়ই শেষ পর্যন্ত নষ্ট হবে। আর এইগুলি আপনি পরেন না কেন , পরবেন । আমি কোন দিন একটু বের করেও দেখি নাই কাপড় গুলি। অনেক নতুন কাপড়ের প্যাকেটও খুলে দেখিনি তাইতো দেখছি । এই যে এইটা কিছু দিন আগে আমি পাঠিয়ে ছিলাম। আর আপনি প্যাকেট সহ রেখে দিয়েছেন । কে আছে আপনার এই কাপড় পরবে যে। আমি আজ সব বাহির করে রোদ লাগতে দিয়ে দিব। আমার এত হুশ আছে মা জলি , যে কাপড় দেখবো। আম্মু দাদির একটা শাড়ি আমি নিয়ে যাবো । যখন দাদির কথা মনে পড়বে তখন শাড়িটা আমি পরবো। তাই , আহরে হৃদয়ের টুকরা । আমার কাছে আসো বোন হাজার আদর দিবো তোমার কপালে , আসো । মা জলি , তোমার মন খারাপ হলে কখনো মৌরিকে বকা দিও না । আমি যখন বুঝি তুমি মৌরিকে বকা দিয়েছো তখন আমারও মন খারাপ হয় । মানুষের দোষে আমরা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকছি কিন্ত হৃদয়টা তো অভিন্ন। শুন মা জলি , এখানে একা থাকতে আমার খুব কষ্ট হয় । রাত হলে সেই কষ্ট এবং সাথে ভয় দ্বিগুণ হয় । আমার কিছু দরকার হলে কেউ নেই হাত বাড়িয়ে এগিয়ে দেওয়ার । আজকাল মনে হয় ঘুমের মধ্যে মরে যাবো । কাজের লোক আসলে দেখবে আমি মরে আছি । কিন্তু তোমরা কেউ হয়তো খবরও পাবে না । অথচ তোমরাই আমার সব।
আম্মা আপনি যদি রাজি থাকেন তাহলে আমাদের — আমিও ভাবছি তা । তবে একটা কথা তুমি রাখতে হবে । আমি কখনো মাহিনের সাথে যোগাযোগ করতে চাই না । তাহলে সে আর ফোন দিবে না । আস্তে আস্তে আমাকে ভুলে যাবে আমিও ভুলে যাবো । তা কি করে হয় আম্মা । মৌরি যখন কথা বলবে তখন আপনিও কথা বলবেন , আচ্ছা এখন এইসব কথা বলা থাক । আপনি যাবেন কিনা বলেন । মৌরি এখানে আসো মামনি কথা শুনো , তোমার দাদিকেই আমরা নিয়ে যাবো । অনেক ভালো হবে তাই না । সত্যিই কি দাদি আমাদের সাথে যাবে , দাদি বলো । হ্যা যাবো , এখন গ্রামে ঘুরাঘুরি কম করো মৌরি ।
তোমার দাদিকে নিয়ে একটা চিন্তায় ছিলাম । এখন হতে চিন্তামুক্ত , এবং তোমাকে নিয়েও আর চিন্তা হবে না । তুমি দাদির সাথে সময় কাটাতে পারলে মন ভালো থাকবে এতে পড়ালেখাও ভালো হবে । আমি এমনিতেই অনেক পড়ি আম্মু । আমি অর্নাসে সব সেশনে প্রথম ক্লাস পাবো দেখবে , দোয়া করো।তোমরা মা মেয়ে ভালো থাকলে আমি মরেও শান্তি পাবো । তোমার আব্বুর সাথে এইসব বলার দরকার নেই । সে দেশে এসে তার জমিজমা দেখবে আমি আর এইসবের মধ্যে নেই । আমি তোমাদের সাথে থেকে নামাজ কালাম করে শান্তিতে মরতে পারবো । দাদি আব্বু তোমার ফোনেই সবসময় কথা বলবে । তা ঠিক আছে , তাকে আমার জন্য অবশ্যই টাকা পয়সা ঠিকভাবে দিতে হবে । তাই সে ফোন করবেই। এইবার আমার জন্যও টাকা দিতে বলবেন । আমার পড়ালেখায় অনেক খরচ । বই খাতা যাতায়াত ভাড়া। আব্বু কেন কোন দিন আমার খরচ দিতে চায় না । তা বুঝি না । আমি কি ছোট বাচ্চা মেয়ে নাকি যে টাকা পয়সা লাগে না । আপনি আব্বুকে বলে দিবেন যেন আমার জন্য টাকা পাঠায়।আমি আর চুপ থাকবো না
আসছো তুমি রবিনের মা । তোমার মা বাবা কেমন আছে । আজ কয়েকটি দিন আমার বউ মা সব কাজ করলো । রবিন না থাকায় মৌরির ঘুরাঘুরিও বন্ধ । জ্বী চাচী আসলাম , সবাই ভালো আছে । আপনারা? ভালোই এখন দিন যাচ্ছে । কিন্তু এরা চলে গেলে একা হয়ে যাবো । তারা বলতেছে ঢাকায় চলে যেতে । গেলে যে বিভিন্ন সামাজিক অসুবিধা সামনে আসে । আমিও চাই চলে যেতে । কিন্তু মাহিন একদম মেনে নিবে না। চাচী গেলে যে ভালো হয়। মাহিন ভাইকে বুঝিয়ে বলেন , একা একা রাত – বিরাত কত আপদ বিপদ হতে পারে । এখনো আল্লাহ ভালো রাখছে । হ্যা লাখ লাখ শোকর আল্লাহর দরবারে । আমি ঢাকা গেলে মৌরির জন্য ভালো হবে । কথা বলার লোক পাবে । তার মন ভালো থাকবে কিন্তু আমার যে উপায় নেই । শেষ বয়সে ছেলেটা যদি ভুল বুঝে । আচ্ছা থাক এইসব কথা , তুমি শিউলী এবং তার মাকে আসতে বলবে । তাদের সাথে কথা আছে । আচ্ছা চাচী বলবো আসতে , কি ব্যাপার হঠাৎ করে। মৌরি শিউলীকে সাথে করে ঢাকায় নিতে চায় । মেয়েটা সুন্দর , পড়ালেখা করে । ভালো পারে পড়া । আমিও শুনছি পড়ালেখায় ভালো । ঢাকায়ও পড়বে। তার মা বাবা রাজি হলেতো ভালোই হয় । এমন ভালো লোক কোথায় পাবে, জলি ভাবী খুব ভালো মানুষ । আমিও বুঝিয়ে বলবো চাচী যেন যায় ঢাকায় (চলব)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১২তম পর্ব ।
চাচী আপনি নাকি আমাদেরকে আসতে বলে ছিলেন হ্যা বউমা । কি খেয়েছো কি রান্নাবান্না করেছো আজ। মা রান্না করে আজ পাঠিয়েছে । সবাই ওটা খেয়েছি । তাহলে দুপুরে আর রান্না করতে হয়নি । ঝামেলা হতে বেঁচে গিয়েছো । জিনিস পত্রের যে দাম মানুষ খেয়ে পরে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে । টাকার কোন দামই নাই। মানুষের আয় বাড়েনি কিন্তু ব্যয় বেড়েছে । চাচী আমরা গরীব মরবো বড় লোক আরামে আছে। আচ্ছা শুনো আমি তোমাদেরকে ডেকেছি একটা কথা জানতে , মৌরি আমার নাতনী সে শিউলীকে তাদের সাথে ঢাকা নিতে চায় । স্কুলে পড়বে আবার টুকটাক কাজকর্মও করবে । এখন তোমাদের কি মনোভাব ? মৌরি মা বলেছে আমাকে । শিউলী যেতে রাজি তার বাপও শুনছে কিছু বললো না । আপনাদের কাছে আমার মেয়ে থাকবে এতে আমার অমত হবে কেন। তাহলে তার বাবাকে ন্টি মন খারাপ হবে না । মৌরি আপু আমাকে পড়াবে দেখবে । আমি ভালো থাকবো ইনশাল্লাহ ।
সকালে জানালার পর্দা সরিয়ে সুর্যের সোনালী আভা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। নারিকেল গাছের চিকন পাতা আটকাতে পারেনি সুর্যরশ্মি । চিকন চিকন পাতার ছায়া আমার মুখে পড়ে আমি হাত দিয়ে ধরতে চাই ছায়াকে , আজ যেন সুখ সুখ মন উদাসী নয়ন । লেমন ফ্লেভার গ্রীন টিতে চুমুকে সতেজ হবে আমার দেহ মন। হাঃ হাঃ দাদির কাছে কোথায় পাবে গ্রীন টি।
বিছানা হতে উঠতেই মন চাইতেছে না আজ । অলসতা চেপে ধরেছে আমাকে । এক লাইনে কয়েকটা ফলের গাছ আছে । সবটি গাছ ফল শূন্য । শীতকালে টাটকা শাকসবজির মৌসুম । গরম কালের বৈশাখ জৈষ্ঠ এই দুই মাস মধুমাখা মুধ মাস । তাই প্রকৃতির খেয়ালে জামরুল গাছ , আমড়া গাছ এবং লিছু গাছ ফল শূণ্য , শুধু পাতাই বহন করছে গাছ। এইসব ফলের গাছ কয়েক বছর আগে আব্বু লাগিয়েছে । আসলে কত ভাবে মানুষের স্মৃতি চিহ্ন আটকে থাকে । শীত কালে গাছপালা রূক্ষ শ্রীহীন হয়ে যায়। ঠিক তেমনি আব্বুর স্মৃতিও । কিছু টাকা দিয়ে আর বাবা মেয়ের ভালোবাসার লেনদেন হয়। আব্বু যেন একটা পোষা প্রাণী লালন পালন করছে । ফোনে এক পান্ত হতে ভেসে আসে কিছু তীক্ষ্ণ রূঢ় দায়হীন প্রশ্ন । কেমন আছো , পড়াশোনা কেমন চলছে। আমি উত্তর দিই শ্রদ্ধাশীল হয়ে যা আমাকে কাঁদায়। লিছু গাছে প্রচুর পাতা আর আমড়া গাছ একদম পাতা বিহীন । লিছু গাছটা আব্বু আর আমড়া গাছটা আম্মুর মত। আব্বুর জীবনটা ভরপুর আর আম্মুর জীবনটা শূণ্য । এবং খুবই নরম কয়েকটি শাখা প্রশাখা দ্বারা জড়ানো । একটু বাতাস আসলে ভেঙ্গে যাবে । তাই আমি শুধু আম্মুর ।
কে ফোন দিল দেখোতো দাদিমা। বলো আমি আসছি
দাদি আব্বু ফোন দিয়েছে । আমি কথা বলবো না।
হ্যালো মাহিনঃ কেমন আছো তুমি। এতদিন পর ফোন
আসসালামুলাইকুম আম্মা । আমি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন । আপনি ফোন ধরছেন না আজও । আপনি ফোন ধরতে দেরি করেন কেন । আরে বাবা কাজে ব্যস্ত থাকি কখনো কখনো । এত চিন্তিত হওয়ার কিছু নাই । একা একা আর কত । আম্মা আর একা থাকতে হবে না । আমি আগে বলে ছিলাম আপনাকে যে, আমি চেষ্টা করতেছি আপনার ভিসার জন্য যাতে আপনাকে কানাডায় নিয়ে আসতে পারি। কয়েক দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যাবে । আমি আসবো দেশে মৌরিকে দেখেও আসবো , আপনাকে নিয়ে আসবো । আর অল্প কয়েকটা দিন কষ্ট করেন । আচ্ছা ওইসব কথা পরে বলবো । টাকা পাঠাও এখন ঠিক আছে পাঠাবো । আপনি মানসিক প্রস্তুতি নেন।
আল্লাহ হাফেজ । ভালো থাকবেন ।
মৌরি কিছু দিনের মধ্যে তোমার আব্বু আসবে দেশে । বললো আমাকে নিতে আসবে । ভিসা পাওয়া যাচ্ছে। চমৎকার খবর দাদি । তুমি কানাডায় চলে যাবে । আম্মু আম্মু সুখবর শুনে যাও । দাদি কানাডায় চলে যাবে । তুমি দাদির জন্য আর চিন্তা করতে হবে না । থামো মা । কি হয়েছে ধীরস্থির হয়ে বুঝিয়ে বলো। আব্বু একটু আগে ফোন দিয়ে ছিলো দাদিকে । বলেছে যে দাদির কানাডার ভিসা হচ্ছে । আব্বু নিয়ে যেতে আসবে । কি মাদার খুশির খবর না এটা । অবশ্যই খুশির খবর। মা ছেলের কাছে থাকবে যত্নে। (চলবে) ।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৩তম পর্ব ।
আমরা চলে যেতে হবে মামনি । অনেক দিন বেড়ানো হলো। তোমার দাদি আর আমাদের সাথে যাবে নাকি। আমিও চলে যেতে যাই । দাদি কানাডায় চলে যাবে শুনে আর এখানে থাকতে একদম মন চাইতেছে না । মামনি পৃথিবীতে আমরা সবাই একা খুবই খুবই একা।আমার পাশে একদিন সব ছিল আজ শুধু তুমি আছ।জীবনের প্রয়োজনে তুমি হয়তো একদিন থাকবে না। হয়তো আমি নিজেও না থাকতে পারি ,সবই বিধাতার হাতে । মেয়ে মানুষ নিজেকে কচুপাতার উপর জলবিন্দুর মত টলমল করে রাখে । যেন পুরুষ মানুষ ধাক্কা দিলে গড়িয়ে মাটিতে পড়ে মিশে যায়। আমি যেমন তোমাকে লেখাপড়া শিখিয়ে দশজনের একজন করতেছি মানুষ হিসাবে । তেমনি তোমার নানুমনি আমাকে করেছে তবে আরেকজনের গৃহিনী হতে। আমি গৃহিণী হওয়ার পাশাপাশি নিজ চেষ্টায় মানুষ হয়েছি বলে ঝড়ে আজ ভেঙ্গে পড়ি নাই । তোমাকে মানুষ হতে হবে নিজের প্রয়োজনে , অন্যের সংসারের প্রয়োজনে নয়। সংসার একটা সামাজিকতা । এখানে পছন্দ অপছন্দ , ভাঙ্গা গড়া থাকবেই । এইটা জীবনের একটা অংশ মাত্র মনে করতে হবে । এতে আবেগের কোন মূল্য নাই ।পৃথিবী সুন্দর আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে ছুটতে হবে। এখানে আপন পর বলতে কিছুই নেই । সব মেয়ের এই ছুটে চলার যোগ্যতা থাকে না । এইটি তার অপরাধ নয়। তাই তাকে সংসারের সব কিছু আপন করে নিতে হবে। প্রতিহিংসার মনোভাব হলে তাকে অনলে পুড়তে হবে অবধারিত । আমি জীবনের দৌড়ে ছুটেছি বলে মাথা উচু করে তোমাকে বুকে আগলে রেখেছি । আবার সংসার আপন করেছি বলে তোমার দাদি আমার জন্য হৃদয় উজাড় করা ভালোবাসা বিলীয়ে দিচ্ছে ।এইটা আমার আশীর্বাদ ।খুব মন খারাপ হচ্ছে উনি চলে যাবে । হয়তো আর কোনদিন এই জীবনে দেখাও হবে না কোন দিন । তোমার নানীর বাড়ি গেলে ওরা ওদের মত বকঝকা করবে। যা আমার একদম ভালো লাগবে না । আম্মু আমরা মা মেয়ে পৃথিবীতে একা এইটাই সত্য। তবে তুমি আমার আম্মু এইটা আমার গর্ব । তুমি আমার মমতা , তুমি আমার মায়া , তুমি আমার মা।
আমি তোমাদের দেখতে আসবো । ফোনে প্রতিদিন কথা বলবো মৌরি আর তোমার সাথে। মন খারাপ করো না । কয়েক দিনের মধ্যে আমি শিউলীকে পাঠাতে চেষ্টা করবো। বাসায় পৌছেই ফোন দিও। যদি পরজমনে সুযোগ হয় আমি তোমার মা হবো , শাশুড়ী নয়। আমি তুমি আর মৌরি থাকবো স্বর্গীয় সেই ঘরে (উচ্চস্বরে কান্না )। ক্ষমা করে দিও আমাকে। কি যে কথা বলেন আম্মা । কেন জানি আপনাকে আমাদের কাছে রাখতে খুব মন চাইতেছে । ঢাকা যেতে একদম মন চাইতেছে না । আপনাকে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে । ভালো থাকবেন ।
আয় দাদিমা , আমি একটু কপালে আদর দিয়ে দিই। (মৌরি দাদিকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে )। এত জোরে কান্নায় আশপাশের বাড়ির সবাই ছুটে আসে । সব মহিলা মৌরিকে বুকে নেয় এবং কান্নায় চোখ মুছে। রবিনের গ্রুপ সবাইর আগেই এসে হাজির মৌরিকে বিদায় জানাতে । মৌরি সবার মাথায় হাত দিয়ে আদর করে । জীবন নাটকের চেয়েও নাটকীয় । জীবনের নানা ঘটনাই নাটক। কিন্ত নাটক মানুষ সাজাতে পারলেও জীবন সাজানো কঠিন হয়ে পড়ে। আম্মু আসো আমরা বের হই । আসলে আম্মু দাদিকে অত্যন্ত ভালোবাসে । এবং সবচেয়ে সত্য কথা দাদি আম্মুকে ছাড়া কোন কিছু কল্পনাও করে না। এই কল্পনার আজ হয়তো যবনিকা এখানেই।
রেল গাড়ির কামরায় আম্মু নীরব বসে থাকে । চুপচাপ জানালা দিয়ে বাহিরের প্রকৃতি দেখে । দাদি পানি খাবার সব দিয়ে দিয়েছে । তাই আর কিছু কিনতেও হবে না। হুইসেল পড়ার সাথে সাথে গাড়ি চলতে শুরু করে। বাঁকা রেল লাইন দেখে মনে পড়ে “রেল লাইন বয়ে সমান্তরাল ”। জীবনও ঠিক রেল লাইনের মত বয়ে চলে। গাড়ী ছুটে চলছে , আমি নীরব হয়ে আম্মুর কাঁধে মাথা রেখে ঘুম যাওয়ার চেষ্টা করি। অন্য সময় আম্মু কথা বললেও আজ একদম চুপ করে আছেন । তাই আমিও কোন কথা বলছি না তবে আমার একদম চুপ হয়ে থাকতে ভালো লাগে না আম্মু আমার জন্য নিজের জীবনের একাকিত্ব মেনে নিয়েছে । এই ভালোবাসার এই ত্যাগের কোন মাপ পরিমাপ কখনো হয় না। এত কষ্ট এত ঋণ সন্তান বুঝতে চায় না আদৌ । আমিও কি পারবো এই ঋন বয়ে বেড়াতে । তবে সব ভালোবাসা মায়ের চরণে । মৌরি উঠো আমরা ঢাকা এসে গিয়েছি , উঠো মামনি।বাসায় এসে দাদিকে ফোন করে আম্মু । মা মেয়ে মিলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে অনেক সময় লেগে যায়। আমরা কেউ আর দাদির কথা বলি না মন খারাপ হবে বলে। চলে যায় কয়েকদিন , এখন অনেকটা স্বাভাবিক আমরা ।
হ্যালো দাদিমা । কেমন আছো । তোমার আম্মু কেমন আছে। জলিকে ফোন দিলাম ধরলো না ব্যস্ত মনে হয় জ্বী , আসসালামুলাইকুম । আমরা ভালো আছি । আম্মু স্কুলে তাই ফোন ধরে নাই মনে হয়। আপনি কেমন আছেন । আপনার কোন সমস্যা হচ্ছে নাতো। আমি ভালো আছি । তোমার আব্বু আসবে পরশুদিন আচ্ছা , দাদি আমাদের বাসায় না আসলে ভালো হয়। কেন দাদিমা । তোমার সাথে দেখা করতে যাবে না । দাদি আমার মা আছে বাবা নেই । আর মা‘ই সবকিছু। তাই মায়ের কষ্ট হবে অপমান হবে এমন কোন কাজ করা কি আমার মানায় । উনার বাসায় থেকে আব্বুকে এনে চুরি করে দেখা করতে আমার বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। তাই মায়ের মাঝে বাবাকে দেখবো । আর আব্বু আসলে ফোন করারও দরকার নেই । দয়া করে ভুল বুঝবেন না। আম্মু অনেক কষ্ট পাচ্ছে আপনি চলে যাবেন তাই। আপনাকে অনেক ভালোবাসে আম্মু । আব্বুর অপমান আর মেনে নিবে না । যদি আম্মুর মন পাল্টে যায় আমি কোথায় যাবো দাদি বলো । তাই দুরে থাকা ভালো হবে । (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৪তম পর্ব।
বৃদ্ধাশ্রমের বুড়া মা লাঠি ভর করে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আকাশপানে চেয়ে খোঁজ করে পঞ্চাশ বছর আগেও একটি রাতে এমন জোছনা ছিলো । মাঝখানে নেই আমার ভালোবাসা । মৌরি চলে গেলে আমাকেও হয়তো এইভাবে আকাশ দেখতে হবে কোন আশ্রম জীবনের শেষ পর্যায় । মৌরির জায়গায় আরো চারজন থাকলে যে জীবন সহজ হবে তার কিবা নিশ্চয়তা । তার চেয়ে ভালো মৌরিকে বুকে ধরে রাখি। হয়তো কোন ভুল ছিলো আমার তাই জীবন ছন্দহীন । থাক সেই ভুল আমার অলংকার হয়ে। আম্মু অন্ধকারে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন । তুমি দাদির বাড়ি হতে আসার পর চুপচাপ হয়ে গিয়েছো । কি হয়েছে আম্মু বলা যাবে । দাদির জন্য তোমার মন কাঁদছে । এইটা সত্য আর এই জীবনে দাদির সাথে আমাদের দেখা হবে না । দাদি থাকলে আমরা গ্রামে বেড়াতে যেতে পারতাম। সে আমাদের অনেক যত্ন করেন । কিন্তু এখন আর কিছুই হবে না। তাই বলে আম্মু তুমি মন খারাপ করছো কেন । তোমার মন খারাপ থাকলে আমার কিছুই ভালো লাগে না । জানি তুমি দাদিকে অনেক ভালোবাসো । মা মৌরি জীবন এত জটিল হবে ভাবতে পারি নাই। পৃথিবীর সব থেকে বড় ডাস্টবিন মানুষের মন ,এটা পরিস্কার থাকলে পৃথিবী পরিস্কার থাকবে। অথচ আমাদের ঘরেই ডাস্টবিন ছিলো আর আমি বুঝতে পারি নাই । অগাধ বিশ্বাস আমার অপরাধ ছিলো । এই ডাস্টবিনের দুর্গন্ধে তোমার আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । আমি কিছুইতে তোমার দাদিকে ভুলতে পারবো না। উনার মত শাশুড়ী বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে হলে নারী নির্যাতন অনেক কমে যাবে । মানুষ যৌতুকের জন্য কিংবা মাদকগ্রস্ত হয়ে বউ পিটাতে আসলে এইসব শাশুড়ী প্রতিবাদ করবে,বাঁধা দিবে। উনি আমার জন্য কিছু করতে না পারলেও মানসিক সমর্থন করতেন । আমার একজন অভিভাবক ছিলেন । তোমার নানী মামা আমাকে বুঝতে চায় না । উনারা যেটা বুঝেন সেটা হলো সব ছেড়ে ছুড়ে আমি আবার বিয়ে করি । মারে মেয়েদের জন্য সংসার অপরিহার্য । কিন্তু তুমি এবং তোমার দাদি আমার অস্তিত্বে মিশে আছে এটা অন্যরা মূল্য দিবে না।
কান পাতলে দুনিয়াজুড়ে একটি শব্দই প্রায় শুনা যায়। ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি। এটা দুনিয়া, এই পৃথিবীতে ভালোবাসা আছে, প্রিয় মানুষ আছে, প্রাণের বন্ধন আছে, কিন্তু দুঃখের সময়ে পাশে থাকার মানুষ নাই। মানুষের ধন সম্পদ, অর্থ বিত্ত থাকার পরও মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক করে ফেলেছে লোভ । যদি কেউ কোন সময় কিছু চেয়ে বসে এই ভয় মনের ভিতর। আমি তোমাকে আত্নকেন্দ্রিক হতে বারণ করবো । সময় এবং পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে মানিয়ে চলবে তাহলে মানসিক যন্ত্রণা কম পাবে । সততা এবং সহনশীলতা মেনে চলবে জীবনের প্রতি পথে পথে। আমি সুযোগ পায়নি আত্নপক্ষ সমর্থন করার ।ফেলে বুঝতে পারতাম কি আমার ভুল ছিলো । সংসার কিংবা কর্ম কোথাও ধর্য্য হারা হওয়া যাবে না। এক সময় তুমি ছাড়া আমার আপন কেউ আর থাকবে না তখন আমাকে কষ্ট দিও না ।
আম্মু কি আজ পাগলের মত প্রলাপ করতেছো । তোমার কি শরীর খারাপ বা মন খারাপ লাগছে । সব ভুলে যাও আম্মু ।
“পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না ,বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়। জেনে রেখো, জীবন হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জিনিস এবং ত্রুটিপূর্ণ মানুষের সমষ্টি। মন রাখতে হবে আমি কোন ক্ষেত্রেই সেরা না বরং খুব কম ক্ষেত্রেই ভাল বলা যায়। আর অন্যের মতোই আমিও অনেক কিছু ভুলে যাই। এ জীবনে আমি যা শিখেছি সেটা হচ্ছে,আমাদের একে অপরের
ভুলগুলোকে মেনে নিতে হবে এবং সম্পর্কগুলোকে উপভোগ করতে হবে। জীবন খুবই ছোট, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে অনুতপ্ত বোধ করার কোন মানেই হয়
না। যে মানুষগুলো তোমাকে যথার্থ মূল্যায়ন করে তাদের ভালোবাসো আর যারা তোমাকে মূল্যায়ন করে না তাদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হও।” বিখ্যাত লোক এমন কথাই বলে । মৌরি জীবনকে তুমি এমন ভাবে করে গড়ে তুলবে যেন মাঝ পথে এসে আমার মত এই রকম থমকে না যায়।
পরিশ্রম আর ভাগ্য’র পার্থক্য হলো পরিশ্রম সিড়িঁর মতন , ভাগ্য লিফটের মতন। লিফট যে কোনো সময় বন্ধ হতে পারে। কিন্তু সিড়িঁ সবসময় তোমাকে উপরের দিকে নিয়ে যাবে। আমি মা হিসাবে তোমাকে আর কিবা করতে পারবো । কিন্তু উপরে উঠার সিড়িঁ তৈরি করে দিতে পারবো । এখন তোমার ইচ্ছা তুমি সিড়িঁ ব্যবহার করবে না লিফট ব্যবহার করবে।
আম্মু তোমার ফোন বাজে । আমি কি কথা বলবো । ঠিক আছে কথা বলে দেখো কে ফোন করলো ।
হ্যালো , আসসালামুলাইকুম দাদি । কেমন আছেন । মৌরি আমি আব্বু। আমি রাতে এসেছি তাই ফোন করি নাই । এখন দিলাম কেমন আছো মামনি । জ্বী ভালো আছি । ঠিক আছে এখন ফোন দিয়েছেন । তুমি আসবে গ্রামে নাকি আমি আসবো যেটা ভালো । আব্বু আমিও যাবো না আর আপনিও আসবেন না । এতে ভালো হয় , আর কোন দিন ফোন করারও দরকার নেই । সরি পাপা । আমি চাই না আপনার প্রভাব আমার জীবনে পড়ুক । আমার আম্মুই আমার সব । আমি জানি দাদিও চলে যাবে কানাডায় । আপনি সবাইকে নিয়ে ভালো থাকবেন । আর আমাদের হতে দুরে থেকে আমাদের ভালো থাকতে সাহায্য করবেন। আমার জন্য টাকাও পাঠাতে হবে না এইভাবে কেন কথা বলছো । আমি তোমার পাপা । জানি আমি আব্বু । কিন্তু আমার মা আপনার কেউ না। আর আমি আমার মায়ের সব কিছু । আমার মা আমার জন্য বক্ষস্থল । ঠিক আছে রেখে দিলাম ফোন। এত কথা বলতে ইচ্ছা করছে না সরি , আপনি ভালো থাকুন । (চলবে) I
মেয়ে ও মায়া , মাদক রাষ্ট্র । ১৫তম পর্ব।
আম্মু একটা কথা বলার ছিলো । তুমি আবার রাগ করো না । অবশ্যই তুমি শুনলে রাগ করার কথা। কি এমন কথা যে আমি শুনলে রাগ করবো , শুনি। আব্বু ফোন দিয়ে ছিলো । উনি বাসায় আসতে চায় । আমি না করেছি । এবং আর কোনদিন ফোন দিতেও নিষেদ করেছি। কারণ আমার ইচ্ছে করে না কথা বলতে। আব্বু কথা না বলেও আমার ক্ষতি নেই । মা কাজটা ঠিক হয়নি । উনি ভাববেন আমি নিষেদ করছি। তবে উনি বাসায় আসার দরকার নেই । আমার সময় নেই উনাকে দেওয়ার মত । তবে ফোন করতে কেন নিষেদ করেছো। আর তোমার মন চাইলে তুমি নিজেই ফোন করে কথা বলতে পারো সবসময়। আমি কিছুই মনে করবো না । কিন্তু আঘাত করার দরকার নেই। উনি ভাববে আমি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে তোমাকে দিয়ে এমন করতে বলছি । মাহিনের জন্য দয়া এবং ঘৃণা কোন কিছুই আমি অনুভব করি না । এবং করা উচিতও না যার যার ব্যক্তি স্বাধীনতা নিয়ে বেঁচে থাকা শ্রেয়। সে হয়তো লোভে পড়ছে । একদিন লাভ এবং লোভ কোন কিছুই থাকবে না । তখন আবার ফিরে আসতে হবে নিজের পুরাতন নীড়ে । যেমন পাখি আকাশের শেষ ছোঁয়া বাকি রেখে নীড় খোজ করতে হয়। তুমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কাউকে নিয়ে ভাবনার অবকাশ নেই আমার । তোমাকে শিক্ষাদীক্ষায় বিকশিত করাই আমার কাজ। আম্মু আমার অনার্স শেষ হলে আমিও বাহিরে চলে যাবো পড়তে । এবং সেখানে সেটেলড হয়ে তোমাকে নিয়ে যাবো । আমিও চাই তুমি বিদেশ গিয়ে পড়ো । তবে আমি কোথায় থাকি তার কোন ঠিক নাই । তোমার নানীর বাড়ি গেলে মানসিক শান্তি পাবো না,না হয় সেখানে গিয়ে থাকতাম । তোমার নানী মামা মামনি রোজ বলবে জলি তুমি আবার বিয়ে করো ।
আমি মৌরিকে ফোন দিয়ে ছিলাম সকালে আম্মা । মেয়েটা এমনভাবে কথা বললো যেন আমাকে চিনে না। নাকি ওর আম্মু এইসব বলতে বলেছে, কি জানি। দেখো বাবা আমি এই সবের মধ্যে নেই । জানি না এদের মনে কি আছে । আমি দুরে আছি , দুরে থাকি।তবে আমি ফোন করে বলে দিবো কখন আমরা চলে যাবো। এখন তুমি জায়গা জমি কি করবে ঠিক করো। কাকে কি দিবে , কি করবে সব ভেবে চিন্তে ঠিক করো
সবটি জমি এতিমখানার কাছে দেখাশোনা দায়িত্ব দিলে ভালো হয়। জমিও ঠিক থাকবে এবং চাষাবাদ করে এতিমখান চলবে। ব্যাংকের টাকা তুলে যারা এত দিন আমার দেখাশোনা করেছে তাদের কিছু কিছু দিয়ে দাও। আর বাড়ির আশপাশে খালি জায়গায় গাছ লাগিয়ে দাও। পাহারাদার একটা লোক এমনিতে বাড়িতে রাখতে হবে , সে এইসব দেখবে। এইসব জায়গা সম্পত্তি সব তোমার যেটা ভালো হয় সেটা করো। আমার এসব নিয়ে তোমার উপর কোন জোর নাই। আমি মরে গেলে তুমি হয়তো আর দেশেই আসবে না । এখনতো আমাকে নিতে এসেছো । আমি মনে করে ছিলাম কিছু জায়গা মৌরির নামে করে যাবো । এবং বেশ কিছু টাকা ওর নামে ব্যাংকে রেখে যাবো কিন্তু মেয়েটা কথায় আমার খুব হিট লাগলো । খুব অপমানবোধ মনে হলো আম্মা । আমি আগেই বলেছি সেটা তোমরা বাপ-বেটির ব্যাপার ।
হ্যালো বউমা । কেমন আছো । মৌরি কেমন আছে। আসসামুলাইকুম আম্মা । আমরা ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন। ঔষধ খাচ্ছেনতো ঠিকভাবে। আমি ঠিকভাবে সব কিছু করছি । সামনের শুক্রবার আমি চলে যাবো বউমা । আর দেখা হচ্ছে না তোমাদের সাথে। মৌরি আসলে ফোন দিতে বলো।মৌরির সাথে আমার কথা বলতে খুব ইচ্ছে করছে। সবকিছু গোছানো লাগছে । ব্যস্ত থাকি তাই সময় পাই না । ফোন দিতে না পারলে রাগ করো না । তোমারা আমার হৃদয়ের অনেক গভীরে আছো এবং থাকবে। আমার মন খারাপ হলে তখন হৃদয়ে যে পুত্রবধূ আছে তার সাথে কথা বলি । একমাত্র নাতনী আজ তার বাবার হতে দুরে থাকতে ভালোবাসে । আর এই ভালোবাসা একজন মা‘কে শ্রদ্ধা করে। আমার দোয়া একজন একা যুদ্ধরত মায়ের প্রতি । আর শুনো শিউলী মেয়েটা নাকি কোন ছেলের সাথে চলে গিয়েছে । এত ছোট মেয়েও প্রেমটেম করে বুঝি না। ভালো হয়েছে এখানে এসে চলে গেলে আমার আইনগত সমস্যা হতো। আল্লাহ বাঁচিয়ে দিলো । আপনি মন খারাপ করবেন না আমাদের জন্য । ওখানে গিয়ে কোন সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , সমাজ ও রাষ্ট্র ।
১৬তম পর্ব।
ভাবতে অবাক লাগে গ্রামের নবম কিংবা দশম শ্রেনীতে পড়ুয়া মেয়েটি অন্য একজন ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। আজকাল দশজন সাক্ষী হয়ে যে বিয়ে হয় সেটা ভেঙ্গে চুরে তছনছ হচ্ছে আর অবুঝ বালিকা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে নামক প্রতিষ্ঠানকে হাসির খোরাক করতেছে। ইগোর কারণে ধৈর্য্য, সমঝোতা , সহমর্মিতা, সহনশীলতা এবং মানবতা ভুলে নারী পুরুষ উভয় অবিশ্বাসের জীবনে আটকে যাচ্ছে । সব কিছু মানিয়ে না চলার কারণে সংসারে অশান্তি নামক ঝড় সব উপড়ে ফেলছে । আর এত ছোট মেয়ে কি বুঝবে সংসারের । সংসার মানে রান্নাঘর দেখাশোনা আর সন্তান জন্ম দেওয়া হলে সংসার ভেঙ্গে যেত না । সংসার এক মহাসাগর । আর এখানে দক্ষ নাবিক হলে জাহাজ নিরাপদ শতভাগ। কিন্তু তারপরও হঠাৎ ঝড় এসে সব এলোমেলো করে দেয় । আর সেখানে মেয়েরা নিজের আপনজন ছেড়ে দেয় অন্য একজনের মিষ্টি কথায় যা কিনা ভুল প্রমাণিত হয়। মামনি তোমার পড়ালেখা কেমন হচ্ছে কিছু বলো না। আম্মু সব ঠিক আছে । কোন সমস্যা হলেতো বলবো। আমি তোমাকে পড়াশোনায় সাহায্য করা লাগবে । না আম্মু ,তবে মনটা যেন কেমন এলোমেলো লাগছে। আমারও তাই লাগছে । তোমার দাদি চলে যাবে তাই । আসলে ঠিক আম্মু , প্রতিদিন দাদির কথা মনে পড়ে। কিছুই করার নেই মা , আমরা অসহায় বিধির কাছে।
মানুষ যাহা চায় তা হয় না কিংবা করতে পারে না । এইটা মানুষের হাতে না । যদি হতো তাহলে মানুষ নিজের স্বার্থমত চলতো । স্বার্থমত চলতে না পারাটাই সৃষ্টিকর্তার বড় রহস্য। এই জন্য মানুষ নিজ নিজ ধর্ম চর্চা করে। মানুষ বিজ্ঞান নিয়ন্ত্রণ করে আর মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে বিধাতা । যদি কেউ বিজ্ঞানের জয় দেখে নিজের ধর্মকে ভুলে যায় সেটা তার ব্যক্তিগত । সেই ব্যক্তি মরণের পর তাকে নিজ ধর্ম মেনেই মাটি চাপা দেওয়া হয়। ধর্ম অবিশ্বাসকারী লোকটা কিন্তু নিজের লোককে প্রভাবিত করতে পারিনি বলে মরণের পর ধর্মীয় রীতি মেনে তার জন্য প্রার্থনাও করা হয়।
আমরা কালকে সকালে চলে যাবো মা জলি। শুনো যদি কোন সময় টাকাপয়সার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে বলবে আমাকে । আমার সহায় সম্পদ সব তোমার নামে করে দিয়েছি । মাহিনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই। ব্যাংকের এবং জমির সমস্ত ডকুমেন্ট রবিনের মায়ের কাছে আছে । সব মিলে অর্ধ কোটি টাকার পরিমাণ হবে। তুমি কয়েক দিনের মধ্য নিয়ে আসতে চেষ্টা করিও । আগে বললে তুমি নিতে রাজি হতে না তাই বলা হয়নি। আমি ও মাহিন এখন ঢাকায় হোটেলে আছি। আমি যদি কোন অবিচার করে থাকি মা হিসাবে ভুলে যেও । দুঃখ লাগছে মৌরিকে দেখতে পাচ্ছি না বলে । আর মৌরিকে অনেক যাচাই বাচাই করে বিয়ে দিবে যে ছেলে তোমাকে সম্মান করবে তাকে পছন্দ করবে। যদি সে বিদেশে গিয়ে পড়তে চায় বারণ করিও না । তবে তোমাকে সঙ্গে রাখার চেষ্টা করতে হবে । মরার আগে তোমার আবার মন ভাঙ্গার কথা শুনলে আমি কষ্ট সহ্য করতে পারবো না। হ্যালো তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো মা । কাঁদিয়া লাভ নাই । নিজেকে শক্ত করো বেঁচে থাকার লড়াই করার জন্য। কানাডা তোমাদের যাওয়ার কথা ছিল অথচ আমি যাচ্ছি মরতে। এইটাই বিধির বিধান। আপনার দোয়া আমার চলার পথের পাথেয় । যেত ঝড় তুফান আসুক আমি ভেঙ্গে পড়বো না । আমি শুধু আপনার সেবা যত্ন নিয়ে চিন্তিত থাকবো । কোন চিন্তা করার দরকার নেই আমি ঠিক আছি । সেখানে গিয়ে দেখি তারা কেমন আচরণ করে । এইসব দেশে আইন কানুন ভালো । সিনিয়র সিটিজেনদের সরকার গুরুত্ব দেয়। অতএব অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা হবে। ঠিক আছে ভালো থাকো । মৌরিকে তার দাদির ভালবাসা।
তোমার দাদি আজ কানাডায় চলে গিয়েছে ফোন করেছে । কি কাগজপত্র রেখে গিয়েছে তাই কালকে আমি দাদির বাড়ি যেতে হবে এবং পরের দিনই চলে আসবো । বাসায় তুমি একা একদিন থাকতে পারবে ? আমাকে নেওয়া যাবে না আম্মু ,যেতে ইচ্ছে করছে যে কিন্তু আসা যাওয়া অনেক ঝামেলা না, তাই বলছি বাসায় থাকতে। সেখানে থাকা খাওয়া কেমন হয় বলা যায় না । বাসায় সব রান্নাবানা তৈরি করে দিয়ে যাবো তাহাছাড়া আমি যাবো আর আসবো । তুমি কি ভয় । না না আম্মু ভয় পাবো কেন , একটা দিন শুধু একা । হুম একদিন মাত্র ,অনেক প্রয়োজনীয় তাই যেতে হচ্ছে । না গেলে তোমার দাদি শুনলে রাগ করবে । ঠিক আছে আম্মু যাও । তবে সাবধানে যেও এবং একদিন শুধু । ওখানে গিয়ে তুমি কোন কাজে জড়াবে না । ঘরবাড়ি যে আছে সেই থাক।
আমি আম্মুকে স্টেশন পৌঁছে দিয়ে নিজ কাজে চলে যাই। কি এমন কাগজ যে আম্মুকে জরুরী যেতে হল। আসলে হয়তো জানা যাবে বিস্তারিতভাবে । এই মামা যাবেন , আগে বলতাম এই খালি কিংবা এই রিক্সা । এখন বলি এই মামা । একটু ঝড় বৃষ্টি হলেই এই মামা হয়ে যায় অনেক বড় দাদা। তখন দশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকায়ও যেতে চায় না। দেশটাতে সবাই রাজা । সুযোগ ফেলে অন্যকে জিম্মি করে স্বার্থ আদায় করা । ঢাকায় রাস্তার রিক্সা কিংবা অটো রিক্সা যেটাই বলি এরা অরাজকতার রাজা। এদের আচরণে ভয়ে ভয়ে থাকতে হয় । মধ্যবিত্ত এদের ছাড়া রাস্তায় চলার উপায় নেই ।আর এরা চলে জোটবদ্ধ হয়ে , সিন্ডিকেট হয়ে । আমার মাঝে মাঝে এদের আচরণে কান্না আসে চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছে করে বাংলাদেশ তুমি আমার মাতৃভূমি না। (চলবে ) ।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৭তম পর্ব
আম্মু কোন দিন আমাকে একা বাসায় রেখে কোথায়ও যায়নি একদিনের জন্য। অথচ গতকালই দাদি গেল মাত্র আর আজ আম্মু বাড়ি চলে গেল । কি এমন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে গেল দাদি যে আম্মু জরুরী যেতে হল এমন কি আমাকেও বললো না। আসলে আম্মুু যেমন একজন আদর্শবাদী শাশুড়ী পেয়েছে তেমনি দাদিও একজন মায়াময় , চমৎকার বউমা পেয়েছিল। যদি বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে এমন বউ শাশুড়ী হয় তাহলে সংসারের কলহ অনেক কমে যাবে। অনেক ঘর ফুলের কানন হবে। কিন্তু দেখি উল্টোটা বউ শাশুড়ী বনা বনি নাই। ঘরের বউকে অনেক শাশুড়ী আপন করে নিতে পারে না । আবার বউমাও নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের আপন করে নিতে পারে না। শুরু হয় পারিবারিক কলহ । শাশুড়ী ভুলে যায় সে একদিন এই ঘরে নতুন ছিল । এই ঘরে অনঅভিজ্ঞ একজন পুত্রবধূ ছিল । শুরুতে শুরু করে বউমার দোষ ত্রুটি খোঁজার । যার কারণে বউমা হয়ে পড়ে বীতশ্রদ্ধ তার মন মেজাজ হয়ে পড়ে খিটখিটে এবং ঘৃণা সঞ্চারক। নতুন পরিবেশে নতুন মানুষদের বুঝতে এবং জানতে সময় লাগে। তার উপর যৌথ সংসারের সব কাজ চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় এতে সে হাঁফিয়ে উঠে । একটা মেয়ে বাবা ভাইদের আদরে থেকে পড়াশোনা করে । সে অনেক কাজ করার অভ্যস্ত হয় না । কিন্তু স্বামীর সংসারে পুরা পরিবারের থালা-বাসন ধোয়া কিংবা রান্নাঘরে থাকতে হয় বলে মেয়েটি একা থাকতে চায় স্বামীকে নিয়ে এইটা তার অপরাধ নয়। শাশুড়ী নিজের মেয়েকে যে নয়নে যত্নশীল হয় ঠিক সেই নয়নে বউমার প্রতি যত্নহীন হয় । এর উপর আছে বউয়ের বাড়ি হতে এইটা সেটা না পাওয়ার লাঞ্ছনা গঞ্জনা । ঘরের সবাই মিলে কানাঘুষা করে , চলে তিরস্কার । তখন আর সংসারে সুখ থাকে না । বউমার কাছে সুখ হয়ে পড়ে অদুরা ও আপেক্ষিক । মানুষ বুঝতে চায় না সোনার খাটে সুখ বিচরণ করে না। পরিমিতবোধ এবং জীবনের সাথে মানিয়ে চলা সুখের অপর নাম। বউমাটারও ঘরের সবার প্রিয় হতে চাওয়া উচিত । আবার অনেক সময় চাইলেও হয়তো পারে না । বউ শাশুড়ী একেঅপরের প্রিয় হলে এবং চাওয়া পাওয়ার সমন্বয় থাকলে আনন্দ ধরা দেয়। ছোট ছোট পাপ্তিকে সহজে গ্রহন করলে তখন না পাওয়ার বেদনা থাকে না। সহজে গ্রহন করা মানুষ অল্পতেই তৃপ্তি হয়। এই তৃপ্তিই সুখ এই তৃপ্তি আনন্দ । অতৃপ্ত মানুষ কখনো সুখী হয় না এবং আনন্দিত হয় না। আর তখন হতাশার জন্ম হয়। শুরু হয় পারিবারিক কলহ। শাশুড়ীর ভয়ে এবং দম্ভে নতুন বউমা প্রথম প্রথম চুপ থাকলেও আস্তে আস্তে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠে। দম্ভ অার অহংকার এই দুইয়ের পিছনে কাজ করে এক ধরনের মূর্খতা । অাশ্চার্য জনক বিষয় হলো শিক্ষা যেখানে বিনয়ী হওয়ার কথা বলে সেখানে কিছু শিক্ষিত মানুষের দম্ভে সংসার ভেঙে খান খান হয়। আজকাল স্বামী স্ত্রীর কারণে যেখানে বিয়ে ভাঙ্গার মহামারী শুরু হচ্ছে সেখানে পরিবার অন্য সদস্যদের কারণে সংসার ভেঙ্গে যাওয়া খুবই দুঃখজনক । যে সংসারে অন্য লোকের কারণে বিয়ে ভাঙ্গে সেই সংসারে স্বামী বা পুত্র নীরব দর্শক মাত্র। এমন হলে যৌথ পরিবার থাকবে না । যা নষ্ট করবে আমাদের হাজার বছরের কালচারের ইতিহাস।
আজ ঘুম আসবে না একটুও , আম্মু নেই পাশে বসে আমাকে গল্প বলার । একা একা ভয়ও লাগছে যেন। করিডোরে দাঁড়াতেও যেন ভয় লাগছে । আকাশে কালো মেঘের বসতবাড়ি আজ। পাশের বাড়ির ছাদ জোড়া জোনাকির অপূর্ব খেলা । ছোটকালে দাদির বাড়ির উঠানে কত জানাকি আমি ধরেছি । জোনাকির আলো অংশটা দাদির কপালে দিতাম। এই জোনাকির মত তুমি আমার কপালের আলো। বৃষ্টি পড়ায় জোনাকি পানিতে ভিজে আমিও ভিজতাম যদি আম্মু থাকতো । ভিজে ভিজে জোনাক জল হতাম। ধ্যাত, ঝড় হাওয়ায় মজা নাই । শুধু ভারী বর্ষণে প্রণাম করি বিধাতাকে যেন পাপ মোচন করে ধুয়ে সাধ্বী করে।
ইস যদি আম্মু আমাকে নিয়ে যেত তাহলে সকালে এই বৃষ্টিতে অনেক মজা হতো। রাস্তায় হেঁটে দেখতাম বর্ষায় গ্রাম। বাতাস বেশ উদভ্রান্তের মত পাগলা ঘোড়া ।বাতাসের এই ধকল সয়ে গাছগুলো একনাগাড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো বাতাসের চোটে ছিড়ে যাচ্ছে। কয়েকটা হাঁস মাথা উচু করে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুসুলধারে বৃষ্টির জাপটার লোভ বিসর্জন দিয়ে বাড়িতে ফিরতে হতো দাদি আর আম্মুর ভয়ে। খালি জমির জলে বৃষ্টি ফোঁড়ায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঢেউ সৃষ্টি হয় , তবে বাতাসের ক্ষিপ্রতায় সেটা একটার সাথে আরেকটা মিলে যায় ।
একটা ডাল-পাতা কুড়ানো লোক অনেকগুলো কদমডাল মাথায় নিয়ে দ্রুত হেটে চলে যাচ্ছে। আমি ডাকতে লোকটা শুনতেই পেলো , আমায় কদমফুল দিলো। ইচ্ছেদের কদমফুলের ছোঁয়া দিতে বৃষ্টি- বাতাসে, কদমফুল কুড়াতে কত নেমে ছিলাম রাস্তায়।
কাদামাখা বিধ্বস্ত কদমফুলগুলো বৃষ্টির স্বচ্ছ জলে ধুয়ে আবার সৌন্দর্যে সতেজ হলো। এমনি করে ঝড়ে বিধ্বস্ত মানুষগুলোও আবার বাড়িঘর সাজিয়ে সতেজ হাসি হাসবে।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবিলার গাছের কোন বিকল্প নেই সুন্দরবন বার বার প্রমান করে দেয়। তবুও আমরা গাছ লাগাতে অনিহা প্রকাশ করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেন জাতীয় স্বার্থেই গাছ কাটা হয়। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের মুখে এ ধরনের উক্তি সত্যিই হতাশাজনক।একজন বিজ্ঞ লোক কেমন বোকার মত কথা বলে। অবশ্যই এতে এইসব লোকের মতলব থাকে। এরা সবসময় আমজনতাকে বোকা ভাবে। তবে কিছু লোক সর্বদা গাছের পেছনে লেগেই থাকে , গাছ কেটে তারা যেন পরিবেশ সুন্দর দেখতে পান। গাছ ফুল ফল দেয় , ছায়া দেয়, অক্সিজেন দেয় , গাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগ হতে আমাদের বাঁচায়। সুনন্দবনের কাছে রামপালের বিদ্যুত কেন্দ্র যে কতটা পরিবেশের ক্ষতি করবে সময় বলে দিবে কিন্ত তখন কিছুই করার থাকবে না । কয়লার দূষনে জর্জরীত হবে পরিবেশ।
প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র ধ্বংস হবে ধীরে ধীরে । অথচ এখন আমরা দেখছি উন্নয়নকেই । সবসময় ঘূর্ণিঝড় হতে সুন্দরবন আমাদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি থেকে রক্ষা করে তার প্রমান ফণী বুলবুল এবং আমফান। একটা দেশ তখনি উন্নয়নের সহজ রাস্তায় আছে বুঝা যাধে যখন প্রাকৃতিক দূর্যোগকে সহজেই মোকাবিলা করতে পারে । খাগড়াছড়ি , বান্দরবন এবং রাঙ্গামাটি আমাদের জন্য সুইজারল্যান্ড আর সেখানের গাছ আজ উজাড়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আজ ধ্বংসের কাছে। দলীয় প্রভাব কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার গাছের চোরাচালানে ব্যস্ত সেখানের নেতারা তাদের সাথে আছে উপজাতী সন্ত্রাসী গোষ্ঠী।
(চলবে)
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৮তম পর্ব।
এই নেন ভাবী আপনার জিনিস বুঝে নেন। দেখে নেন সব ঠিক আছে কিনা। আমি খুব যত্ন করে রেখেছি । কি যে বলেন রবিনের মা। আপনাদেরকে আমার শাশুড়ী অনেক বিশ্বাস করে বলে সব আপনার কাছে দায়িত্ব দিয়েছে । সব ঠিক আছে , আমি আবার সকালে ফিরতে হবে ঢাকায়। ছুটি নেই তাহছাড়া মৌরি একা । আচ্ছা শিউলী মেয়েটা এমন করলো কেন। সে নিজ ইচ্ছায় আমার সাথে থাকবে বললো। এখন কোন খোজ খবর আমরা জানি না । তার মা বললো বিয়ে করে ওই ছেলের সাথে আছে । তবে শিউলীর বাবা বলেছে কোন খোজ খবর নিবে না। গ্রামে সবার কাছে একটা লজ্জা পেয়েছে বেচারা । এতে কিসের লজ্জা তবে মেয়েটা ছোট । মানুষের কুতসিত চেহারা একনো তার অজানা। কোথায়কার কার ছেলে , কোন ছেলে এবং কি করে কি তার সামাজিক অবস্থা জানা দরকার ছিলো তাড়াতাড়ি । আমরা এত কিছু বুঝি না ভাবী । মনে হয় মেয়েটা ঢাকা চলে যাবে শুনে প্রলোভন দিয়ে তাড়াতাড়ি নিয়ে গিয়েছে। মেয়েটা আমার বাসা হতে পালালে সবাই আমাকে ভুল বুঝতো । তখন আমার লজ্জিত হতে হতো। পড়তে হতো আইন আদলতের ঝামেলায়। এই দুনিয়া যেমন কঠিন জায়গা তেমনি মানুষগুলি কঠিন। জীবন একটা দৌড় খেলা এখানে নিজের জায়গা ঠিক রেখে দৌড়াতে হবে । অল্প একটু নড়াচড়া করলেই ছিটকে পড়বে প্রতিযোগিতা হবে । আর যে মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য্য ধরে দৌড়াবে সে পৌছে যাবে অভিষ্ঠ লক্ষ্যে। আচ্ছা বলো রবিনের বাবা কেমন আছে ছেলেটা ঠিকভাবে পড়াশোনা করে কিনা । হুম, ভালো আছে তবে ছেলেটা স্কুলে যাইতে চায় না। বুঝেছি পড়াশোনায় তেমন মন নেই , কি করবে আর চেষ্টা করতে হবে , এতো সহজে হাল ছেড়ে দিবে ? না , অনেক বকাঝকা করে স্কুলে যেতে বাধ্য করি।
আজও টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে । গ্রামের কাঁচা রাস্তাঘাট খুব সাবধানে পথ চলতে হচ্ছে , প্রচন্ড পিচ্ছিল রাস্তা । যেমন আমার জীবন , ঠিক ব্যালেন্স নিয়ে হাঁটতে হয়। তবে কোন পূণ্য আছে বলে শাশুড়ী মার ভালোবাস আমার চলার শক্তি। ভালোবাসা জোর করে আদায় হয় না। অর্জন করে নিতে হয়,নিষ্ঠা, সততা,গুণ ও আন্তরিকতা দিয়ে এর পরও যে ভালোবাসা অর্জিত হয় না, সেটা প্রকৃত ভালোবাসা নয়, বরং এক তরফা ভালোবাসা । অতএব মাহিনের প্রতি দয়ার কোন সুযোগ থাকাও উচিত না । কারণ একতরফা ভালোবাসা মূল্যহীন। শাশুড়ী হয়ে সে ভালোবাসার মূল্য দিয়েছে ভালোবাসা দিয়ে , নিজের জীবনের শেষ সহায় সম্পদ এবং সম্পত্তি দিয়ে । জীবনটা দেওয়া এবং নেওয়ার ক্ষেত্র । মানুষ হতে মানুষ নেয় এবং দেয় । তবে কিছু মানুষ শুধু নিতে জানে , দিতে নয় । গাছের ফুল ফুটে গাছের প্রয়োজনেই, মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে মৌমাছির প্রয়োজনেই। পাখি ডাকে পাখির প্রয়োজনেই। এভাবে সকল প্রাণী তার নিজ নিজ প্রয়োজনে তার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা তাদের থেকে শুধু সুফলই গ্রহণ করি। আর মানব জাতি প্রকৃতির জন্য এবং মানুষের জন্য কি করি ? কিছুই করি না। যার প্রতিশোধ প্রকৃতি নিবে
প্রকৃতির ঋণ শোধ না করলে তার স্নেহমূর্তি পরিত্যাগ করে আমাদের উপর রুদ্রমূর্তি ধারণ করবেই। চারদিকে শুধুই বিপর্যয়নেমে আসবে। প্রতিকার খুঁজে বের করতে হবে দ্রুত। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিকার ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে গোটা পৃথিবী হুমকিতে পড়বে। তখন আর দৌড়ানোতে শেষ রক্ষা হবে না। তাই সময় ফুরিয়ে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সবাই এগিয়ে আসবেন প্রাণী জগত রক্ষাকবচ হয়ে।
আম্মু তোমার শাশুড়ী আম্মা এখনো ফোন দিলো না। এমন করে মজা করার কি আছে মৌরি , সুযোগ হলে ফোন উনি অবশ্যই দিবে এবং ফোন দিয়েই মৌরেকে খোজ করা শুরু করবে , তখন দেখবো আমি । এই যে মামনি এই দিকে আসো দেখে যাও একটা জিনিস । আম্মু এই চিঠি দাদির হাতের লেখা , খুবই সুন্দর । কেন এত জরুরী একা একা আমি দাদির বাড়ি গিয়েছি, এখন দেখো দাদির কাজ , এইটা হলো জমির দলিল আর এইটা সই করা ব্যাংক চেক। সব মিলে উনি আমাদের জন্য রেখে গেছেন অর্ধ কোটি টাকা। এইবার বলো আমার শাশুড়ী মা নাম্বার ওয়ান কিনা। আম্মু রাগ করো না জাস্ট ফান করেছি আমি । তবে হ্যা সব কিছু নিয়ে মজা করা ঠিক হয় না । জীবন নিয়ে মজা চলে না মা । তুমি বিদেশ যাওয়ার মানসিক প্রস্তুতি নিতে থাকো । আর আমি আস্তে আস্তে চেষ্টা করবো । আমার পছন্দ লন্ডন যাওয়া , তোমার যদি কোন পছন্দ থাকে বলো । তবে তোমার মেধার উপর নির্ভর করবে অনেক কিছূ । ঠিক আছে মা । আমিও লন্ডন যাওয়ার কথা ভাবছি । (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
১৯তম পর্ব।
আমি ভালোবাসলে যে আামাকেও ভালোবাসতে হবে, এমন কথা নেই। ভালোবাসা , না বাসার অধিকার প্রত্যেকের আছে। কিন্তু আঘাতের কি দরকার ছিল।
ভালোবাসার সাথে আঘাতের একটা যোগসূত্র থাকে বলে আঘাতের অধিকারও দেওয়া থাকে হয়তো। আর পৃথিবীতে এই আঘাতের এত অপপ্রয়োগ হয় যেটা খুবই দুঃখজনক । আর এইটা খুবই সাধারণ একটা বিষয় হয়ে দাঁড়িছে। আরে একটু অন্যরকম আঘাত দিতে মাহিন। যা অন্য কেউ কখনো আগে দেয়নি? সইতে কিংবা বইতে না পারার মতো অন্য রকম কিছু দিতে । অথচ আমি তোমাকে অন্য দশজনের চেয়ে আলাদা ভাবতাম , একটু অন্যরকম ভাবতাম। আর তুমি হয়ে গেলে অন্য দশজনের একজন। যেটা আমাকে খুব বাস্তব হতে সাহায্য করে।আজকাল আমার মেয়েটাকে ভয় করি কারণ তোমার রক্ত শরীরে বহন করে সে বেড়ে উঠছে। তুমি তোমার মায়ের আদর্শ পাওনি আর তোমার মেয়ে তার মায়ের আদর্শ পাবে কিনা তা আকাশে । তবে হয়তো অচিরে কানাডায় তোমার সাথে দেখা হবে আমরা মা মেয়ের।
আচ্ছা আম্মু শিউলী যে পালিয়ে গেল একটা ছেলের সাথে , মেয়েটার কিন্তু বিয়ের বয়স হয়নি। তারা বিয়ে বিয়ে করতে জন্ম সনদ লাগবে জন্ম সনদ ছাড়া বিয়ে হলে আইন ভঙ্গ হবে। আর চাচা চাচী কি খোজ নিচ্ছে না। কোথায় আছে , কি করছে তাদেরতো বিয়ে হতে পারবে না । বয়স তাদের বড় বাধা বিয়েতে । আজ না হয় কাল তাদের ফেরত আসতে হবে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে সরকার কঠোর মনোভাব দেখায় । আম্মু আমার মেয়েটার জন্য মায়া হচ্ছে। আমি এত কিছু খবর নেওয়ার সময় পাই নাই । তাহাছাড়া রবিনের মা বিস্তারিতভাবে সব কথা জানে না। আর সবচেয়ে ভালো কথা তুমি ওই মেয়ে সাথে নিয়ে আসো নাই। যদি আমাদের বাসা হতে পলাতক হতো তাহলে থানা পুলিশ এইসবে বিরাট এক ঝামেলায় পড়তে হতো। তাহাছাড়া নিজের কাছে নিজেকে অপরাধী মনে হতো এখন সব দিকে মুক্ত। আমি তোমার মামাকে বলে দিয়েছি তোমার জন্য কানাডা অথবা লন্ডন স্টুডেন্ড ভিসার জন্য চেষ্টা করতে । তুমি মামার সাথে কথা বলে তাকে সহযোগিতা করবে। আমি ব্যস্ত থাকবো বলে তাকে বলেছি। এখন সব কিছু ঠিকমতো হলেই ভালো। আম্মু তুমি গ্রেট । তুমি বিশাল আকাশ আমার ।
আজকাল শহরের ছেলেমেয়ে ফুসকা খেতে খেতে প্রেমে পড়ে আর সেই প্রেম ফুসকার বিল দিয়ে জমাট বাঁধায়। কিন্তু গ্রামের ছেলেমেয়ে কেমন করে প্রেম করে জানা হলো না। আমি একটা বৃষ্টির মত প্রেম করবো। বৃষ্টি যেমন টুপ করে আসে গাছপালাকে সজীব এবং সতেজ করে চলে যায় তেমন। তবে আমি প্রতিবারই তোমার জন্য আসবো শুধু আষাঢ় মাসে নয় । তোমাকে রাস্তার নিয়ন আলোয় স্নিগ্ধ দেখাতে। থাকবে না কোন বজ্রপাতের ঝিলিক । ঝুপ করে এসে টুপ করে ভিজিয়ে দিয়ে গেলে তুমি খিল খিল হাসবে । প্রতিবারই তুমি মুগ্ধ হবৈ । আষাড়ে সন্ধ্যা,বজ্রপাত,বৃষ্টি আর তুমি মিলেমিশে একাকার হবে । থাকবে না অস্বচ্ছতা বিপন্নতা ঝুকি এবং বিহ্বলতা । এইসব বাদ দিয়ে তোমার সাথে আমার থাকবে নিগাঢ় ভালবাসা । এই ভালোবায় থাকবে না কোন চতুরতা। হে প্রকৃতি তোমায় আমি ভালোবাসি। (চলবে ) ।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র।
২০তম পর্ব।
মেয়েটা বাড়ি হতে বাহির হয়ে গেল আজ এত দিন আপনি একটু খোজ নিলেন না। কোথায় আছে কি খাচ্ছে কিছুই জানি না । মেয়েটার চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না । আমি তার মা , আমি তাকে ভুলে থাকতে পারবো না । আপনি খোজ নেন। থানা পুলিশ করেন। তুমি মা হলে আমিতো তার বাবা । আমার মন কাঁদছে কিন্তু বলতে পারছি না তাই সয়ে যেতে সব কিছু। লোকজনকে মুখ দেখানো কষ্টকর , মানুষ আমাকে দেখলে কানাঘুষো করে। মেয়ে জন্ম দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে লালনপালন করার পর পালিয়ে গিয়ে হাটে বাজারে লোকজনের কাছে লজ্জিত করে তাকে খোজে কি হবে । সে ফেরত আসবে না আরো অপমান হবো । তাই বুকে কষ্ট ধারণ করো প্রকাশ করো না। তুমি মনে করো না আমি কষ্ট পাচ্ছ না । আমি জানি আপনি কষ্ট প্রকাশ করছেন না । শিউলী একবার ফোন হলেও করতে পারতো আমাদের । কোন দরকার নেই ফোন করার আমি ভালো আছি। তুমিও ভালো আছো , সে যেখানে থাকে যেন ভালো থাকুক ।
সম্পূর্ণ নতুন এক জায়গায় নিয়ে আসে আমাকে। তাই সবই আমার অপরিচিত। নানা রংয়ের নতুন নতুন দালান মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। প্রায় সবগুলোই দালান পাঁচ ছয় তলা। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো বাগানও আছে । অাগে এইখানে এর আগে কোনদিন আমার আসা হয়নি এবং আসার প্রয়োজনও হয়নি। এতো অভিজাত পাড়ায় আমার আসা যাওয়ার কিবা দরকার । সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো ও অপলক দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে দেখতে ইচ্ছে করে । নাহিদ বুঝতে পারে এবং আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে । অামি সম্বিত ফিরে পেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে হাসি দিই । আমাদের রিক্সা সামনে এগিয়ে যায়। কিছু দুর যাওয়ার পর নাহিদ একটা পাঁচ তলা বাড়ির সামনে নামতে বলে ।
আমি আর নাহিদ দুজনে ঠিক করি বাড়ির লোক না চাইলেও আমরা দুজনে বিয়ে করবো। যেই ভাবা সেই কাজ , নাহিদ যেহেতু চাকরি করে সেহেতু তেমন কোন অসুবিধাই নেই। দু পক্ষের কারো বাড়ির হতে এই বিয়েকে মেনে নিবে না কোন রকমে। কারণ পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করা । তাহাছাড়া আমার বয়স। নাহিদ আগে থেকে সব যোগাড় করে রাখে । তার কয়েকজন বন্ধুর সহযোগিতায় সেইদিনেই আমারা বিয়ে করে ফেলি ।
দিন চলে তার আপন রূপে । সাথে সাথে নাহিদও তার রূপ পরিবর্তন করে । আমার স্কুল সময়ে যে ছেলে রোজ দাঁড়িয়ে থাকতো আমাকে দেখার জন্য একটু কথা বলার জন্য আজ তার সাথে প্রয়োজনীয় কথাও বলা যায় না। আমি এখানে আসার পর হতে দেখছি সারা দিন ঘুম যায় সন্ধ্যা হলে বাহির হয় এবং ভোর বেলায় বাসায় ফিরে। কিছু জিজ্ঞাসা করলে এড়িয়ে যায় । আমাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কোন আগ্রহ দেখি না । এখন আমি একটা টিন সেড় ঘরে ভাড়া থাকি । কিন্তু সেটারও ভাড়া বাকি পড়ে আছে। ঘরের মালিক নেশাগ্রস্ত সোবহান মিয়া এসে গালি দেয় আর আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । নাহিদ বলে আমি নাকি তার মেয়ের চেহারা । আমি জানি নাহিদ মিথ্যা বলে সান্তনা দেয় আমাকে কিন্ত কিছু করার নাই। মাথায় ঘুরপাক করে আমি নাহিদের স্ত্রী, আর যে আমাকে ভালোবেসে পরিবার পরিজন ত্যাগ করে বিয়ে করছে সেই লোক সোবহান মিয়ার কামুক নজর কেন সমর্থন করে। বাসা ভাড়ার টাকার জন্য আমার ভালোবাসায় তাহলে মরিচা পড়তে শুরু করেছে। হায় করুণাময়। নাহিদ তুমি যদি কাজকর্ম না করো আমরা কিভাবে চলবো। তুমি কি করো আমি জানতে চাই । দেখো তোমার এত কিছু জেনে লাভ নাই। তোমার থাকা খাওয়ার সমস্যা না হলেই চলে। একটু কষ্ট করে চল। খেয়ে না খেয়ে এত দিন চলে আসছি। কিন্তু এইভাবে আর কত দিন চলবো । বাসা ভাড়া জমা হয়েছে দুই মাসের । তুমি ঠিকভাবে কাজকর্ম করলে সব ঠিক থাকতো । আচ্ছা বলো তুমি সারা রাত কি করো । ভোর রাতে কেন বাসায় ফিরো , তোমার মুখে কিসের যেন গন্ধ থাকে যা আমার ভালো লাগে না। এই শহরে আমি কিছুই জানি না , কিছুই চিনি না । সারা রাত একা একা ঘরে থাকতে ভয় লাগে । তুমি পাশে থাকলে মা -বাবা ভাই- বোনের কথা কম মনে পড়ে। রাত গডীর হলে ঘুম ভেঙ্গে যায় সোবহান মিয়ার চেহারা স্বপ্নে আসলে । তুমি রাতে বাসায় থাকলে হয়। এইসব তোমার ভুল ধারণা সোবহান মিয়া ভালো মানুষ। উনি এক জন জনদরদি রাজনৈতিক নেতা। পুরা পাড়ায় উনার সুনাম , পরোপকারী জনপ্রতিনিধি। মানুষ তোমার এইসব কথা শুনলে উনাকে বলে দিবে তখন আমাদের থাকার জায়গাও থাকবে না শিউলী। কিন্তু আমার ভালো লাগে না উনার স্বভাব চরিত্র। আরে বাদ দাও বাজে চিন্তা । আমি একটা কাজ পেলে এই বাসা ছেড়ে দিবো। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া,মাদক ও রাষ্ট্র ।
২১ তম পর্ব।
“পাখি উড়াল দিলো‘রে । উড়ালি হইয়া আগের মত খায় না দানা । হাতে বসিয়া পাখি উড়াল দিলো‘রে। কানের কাছে ঠোঁট লাগাইয়া শিখাইলাম কথা I আগে যদি যানতাম পাখি সব হবে অযথা । ”
শুধু গান শুনলে হবে , গান শুনার সাথে সাথে কাজও করতে হবে । না হয় রান্নাও হবে না, খাওয়াও হবে না। আরে নাহিদ মিয়া রান্না নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। যথাসময় আপনার সামনে খাবার এসে যাবে। তাই যেন হয় । আজকাল তুমি একটু গানে মনোযোগী তাই বলি দাও না একটা মোবাইল আমাকে । তুমি কয়েকদিন আগে তিনটা নতুন মোবাইল নিয়ে এসে ছিলে আজ আবার দেখছি না । কোথায় ফেলে আবার কি করেছো কিছুই জানলাম না । ওইখান হতে আমাকে একটা মোবাইল দিতেই পারো নাহিদ। তুমি যখন বাসায় থাকো না আমি একা একা সময় কাটাতে কষ্ট হয়, মন খারাপ হয়। তাই একটা মোবাইল হলে আমি গান শুনতে পারতাম । মন ভালো থাকতো । আর ইউটিউবে বিভিন্ন রান্না শিখে তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে পারবো । একটা কথা বলার ছিল , তোমার শুনার সময় হবে । আরে যে কোন কথা মনে সাহস নিয়ে বলে ফেলো। আগে মোবাইল নিয়ে আসলে , এখন আবার অনেক বাজার করে আনলে টাকা কোথায় পেয়েছো নাহিদ। আরে তোমার এত কিছু জেনে কোন কাজ আছে । আমার জামাগুলি সব খারাপ হয়ে গিয়েছে তুমি দেখছো না। যদি টাকা থাকে আমার জন্য অন্তত একটা জামা হলেও এনে দাও। এক মাসের হলেও বাসা ভাড়া দাও যাতে সোবহান মিয়া ভাড়া চাইতে কিছু দিন না আসে তাহলে আমি স্বস্তি পেতাম । চেষ্টা করতেছি ,কয়েকটা দিন ধৈর্য্য ধরতে হবে যে ।জেনে শুনে আমি বিষ পান করেছি। জেনে শুনেই তোমার জন্য বৈরাগনী হয়েছি তাই ধৈর্য্যই আমার এখন সুখ। এই সুখের রাজ্যে তুমিই রাজ।
তুমি পাশে থাকলে আটকানো থাকবে অশ্রু জল,বয়ে যেতে দিবো না এক ফোটাও টলমলে। শাইন করবো , রোজ রোজ নতুন করে সাজিয়ে রাখবো আমার আঙিনা , প্রতিটি অসুন্দরকে উপড়ে ফেলবো সুন্দরের সাদা পর্দায় । একদম সহজ উপসর্গে রচবো জীবনের সংবিধান , সাগর মহাসাগর চমকে যাবে কমনীয় আয়োজনে। সোনা কিংবা হিরার মতো উচ্ছ্বাসে ভালোবাসবো তোমাকে । অবজ্ঞা আর উদ্বিগ্নকে হাওয়ায় মিশিয়ে দিবো হাসি তামাশায় । জীবনের কলামে রাখবো শিরোনাম করে উদ্দীপ্ত নয়নে ,জীবনের পাতায় পাতায় সুগন্ধী ছড়াবে সযত্নে। বছর বছর দ্বিগুণ উৎসাহে রাঙাবো মনের সূর্যশিশির। ক্ষোভের আগুনে পানি ঢেলে নিজেকে রাখবো শীতল । তুমি থাকলে পাশে পরিহার করবো সমস্ত অনিয়মের কালাকানুন। দৈন্যতা ঘুচাবো চঞ্চল কর্ম তৎপরতায় । তুমি পাশে থাকলে পৃথিবীর রানী আমিই। সুখের শৃঙ্খলা বিরাজ করবে, বাজবে বাঁশি সুরের লহর তুলে। দূরত্বের দরোজায় তালা ঝুলিয়ে থাকবো পাশাপাশি আর দেখবো সহমর্মিতার আয়নায় তুমি আর আমি। বেঁধে নিবো আগের মতো সুখ সুখ অনুভবে গাঁথবো সংসার মালা বকুল ফুলের সুভাষে। নুপুরের তালে তালে এই চঞ্চল চপলা সোনার সংসার সুখে সুখে রবে।
আরে বাহ তুমি দার্শনিকের মত কথা বলো শিউলী। কি যে বলো । আমি কি এত জ্ঞানী যে দার্শনিক হবো।আসলে তোমার কথাগুলো শুনতে অনেক ভালো ।
আমার এখানে সব কিছু অচেনা শুধু তুমি ছাড়া । সম্পূর্ণ নতুন শহরে আমি , মনে হয় এখানে আমি যাযাবর । তুমি পাশে থাকলে নিজেকে চেনা মনে হয়। থাকে না ঘুমিয়ে যাওয়ার ব্যস্ততা , থাকে না আতংক।মনে এই সভ্য নগরের অলি গলি সব আমার আত্মীয় সব আমার অনেক চেনা। চাই শুধু তোমার একটা চাকরী । তখন আমরা অভিসারী হবো । সিনেমা দেখতে হলে যাবো , বসে বসে আইসক্রীম খাবো। এইটা আমার পছন্দ । তোমার পছন্দ কালো রংয়ের চা। তুমি ঘন ঘন আদা লেবুর রং চা খাবে আমি খাবো একটার পর একটা আইসক্রীম । হিঃ হিঃ হিঃ ।
পাগলী , বাচ্চা মেয়ের মত হাসে । অবশ্যই হাসলে তোমাকে সাদা দপদপে রাজহংসী মনে হয় ।
বিছানায় অনায়াসে শুয়ে থাকবে এক ফালি আয়েশি সোনালী সুখ । মুঠো মুঠো সুখ দু’হাতে তুলে নিয়ে চোখে মুখে মাখিয়ে দিবো অজানা শিহরন ।
আমার দৃষ্টিতে নামবে উষ্ণ শীতলতা পবিত্র ইশারায় মহাসত্যের কাব্য রচনায় তুমি হবে ব্যস্ত। দেখার ভিতরে থাকতে থাকতে পাবে তুমি সেই পরম শান্তিময় বুকের উষ্ণতা । ওহ চমৎকার ।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২২তম পর্ব।
আমরা একটি সুদীর্ঘ ভ্রমণের পথে আছি । এই ভ্রমণের মাঝে ক্লান্তি আসবে , অবসাদ আসবে , হতাশা আসবে , গতি মন্থর হবে এবং মাঝে মাঝে নাকে বিদখুটে দুর্গন্ধ আসবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিশ্বাস রাখতে হবে সেটা সাময়িক,অল্প কিছু দিনের মধ্যে তা অতিক্রম করবো নিশ্চয়ই । এভাবেই জীবন নামের ভ্রমণ অতিক্রম করে আমাদেরকে শেষ গন্তব্যে পৌঁছতে হবে । আর সেই শেষ গন্তব্যই হলো চির বসন্তের চির স্থায়ী মহাসুখের আবাস্থল পরজনম । যেই জনমে জীবনের শুরু আছে শেষ নাই । ভালো কাজ দিয়ে সেখাানে আবাস নিশ্চিত করতে হয় । কিন্তু বেশ কিছু মানুষ আছে যারা দুনিয়াকে স্বর্গ ভেবে সম্পদের পাহাড়ে সুখের আবাস গড়ে তুলতে ব্যস্ত। আর এই ব্যস্ততাই মানুষ হয়ে পড়েছে লোভী ও দুর্নীতিবাজ । এই লোকগুলি সাধারণ মানুষের রক্ত পানি করা টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে করছে বিদেশে পাচার। বিদেশে গড়ে তুলছে বাড়ি , সেখানেই শুরু করছে কারবার। যাতে বিপদ আসলে দেশ হতে পালিয়ে বাঁচতে পারে। তারা কখনোই দেশ প্রেমিক নয়। এরা কখনো রাজনীতিবিদ, কখনো শিল্পপতি , আবার কখনো উভয় নামে পরিচিত।
এভাবে তাকিয়ে আছো কেন শিউলী ?
তোমার এই তাকিয়ে থাকা আমাকে তোমার মায়ায় আকৃষ্ট করে যে । তোমার দৃষ্টি আমাকে হৃদয়গ্রাহী করে। দিবে একটা চুমু আমায় , এক বার দিলে আর তোমাকে বিরক্ত করবো না । ইচ্ছে করে তোমাকে দুই বাহুতে জড়িয়ে আকাশে উড়াল দিতে। কারণ তোমার এই অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাকে করে ব্যাকুল।
তোমার এই রহস্যময় চোখের ইশারায় আমি হই দিশাহারা । তোমার এই মায়াবী হরিণী চোখ মনে হয় মহাসাগর আর এই মহাসাগরে ভাসমান জাহাজের উদভ্রান্ত নাবিক আমি। যে কিনা সকল স্মৃতিশক্তি হারিয়ে মস্তিষ্কের খাতা খুলে বসে স্মৃতি থেকে সুর তুলতে চায়। কানে কানে বলি কথাটা নিগাদ সত্য ।
প্রয়োজনে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে হবো সলিল সমাধি । তবুও দেহের ভালোবাসায় নয় মনের ভাালোবাসায় তোমাকে করে তুলবো মাতাল । আর এমনি প্রফেশনাল মাতালের মতই আদরে আদরে মিটিয়ে দিব তোমার চাওয়া । কি , তুমি ভাবছো নাটকের ডায়লগ । আরে আমি যে তোমার ভালোবাসার রাক্ষস । তুমি আর আমি দিনে এনে দিনে খাই তাই আমরা সুখী পরিবার। আমাদের স্বপ্ন আছে কিন্তু পরিমিত । আকাশের চাঁদ আমার ঘরে তাই আমি চাই না কৃত্রিম চাঁদ। তুমি আমার জোছনাময় চাঁদ । যে চাঁদে নেই কোন কালো দাগ।
জল নিয়ে খেলতে আমার খুব ভালো লাগে। তাই আমি মেঘের বন্ধু হয়ে মেঘ হতে বৃষ্টি ঝরাই । তবুও কেন জানি আমার বুকে অসীম মরুতারা ঝিলিক দেয়। একবুক ঊষ্ণতা নিয়ে আমি মর্ত্যে দাঁড়িয়ে জলের জন্য মেঘ খুজি । তুমি আমার সবুজ পৃথিবী বলে কতো মেঘের আল্পনা উড়াই পৃথিবীতে । শুধু একবার তুমি আমার স্বপ্ন সাগরে ক্লান্ত মাঝি হও।
ভালোবাসায় কোন নিরাপদ দূরত্ব হয় না সোনামণি । তারাময় আকাশ আর পৃথিবীর একটা সুন্দর সন্ধি থাকে। আমাদেরও সন্ধি থাকতে হবে কারণ বুকের এই ভূমিতে লিখা হয়েছে তোমার আমার মিলনের অযুত অক্ষর। হয়তোবা এরই নাম প্রেম।
এইভাবে অনন্ত কাল এই মরা প্রান্তরে ছেড়া ছেড়া জীবন নিয়ে আমরা সুখের আখড়া বানাবো।
বাংলার সবুজ শ্যামল মাঠে রাখাল বাউল গান ধরে। আর বুকের সবটুকু আবেগ উজাড় করে প্রাণের সুর সৃষ্টি করে । এখানে তুলসী তলায় রাধার প্রেমগীত হয় সন্ধ্যা বাতির সাথে সাথে নারী উলু ধ্বনি করে ঠাকুর ঘরে বাতি জ্বালায়। ছোট ছোট বাচ্চারা পড়ার টেবিলে বসে পড়ার জন্য। পড়া শেষে মা তাদের আদর করে ভাত খাওয়ায়। কোন কোন বাচ্চা বায়না ধরে কত কিছুর। মা তার ভালোবায় সব ভুলিয়ে দেয় আদরে আদরে । যেমন তুমিও করবে একদিন। বুকের ভিতর নিয়ে মা শুনায় “আয় আয় চাঁদমামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা”। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া ,মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৩তম পর্ব। ।
জীবন কারো জন্য তো থেমে থাকেনা। পৃথিবী চলে পৃথিবীর নিয়মে। আর এটাই চলমান বাস্তবতা। যেমন খাল- বিল , সাগর -মহাসাগরে পানির স্রোত চলমান । নানা গাছে নানা ফুল ফোটে। ঝরে পড়া ফুলের খবর কতজনই রাখে? আবার ঝরে যাওয়া ফুলে মালা তৈরিতেও আমরা অভ্যস্ত নয় । আমরা বাগানের তাজা ফুলই ভালোবাসি। ঠিক তেমনি জীবন যুদ্ধে হোঁচট খাওয়া মানুষকে এড়িয়ে চলে সবাই। কারণ মানুষ ভাবে এই লোকটা অযোগ্য কিংবা অকর্মা । তবে কোন কাজে প্রথমবার কৃতকার্য না হলে শিক্ষা এবং সাহস নিয়ে দ্বিতীয়বার চেষ্টা করা জরুরী । এমন অনেক প্রমাণ আছে যে দ্বিতীয় বার চমক লাগানো কৃতকার্যতা তার জীবনের মোড় ঘুরে দিয়েছে। তাই জীবনে চলার পথে প্রতিট কাজ হতে ভালো দিকটা শিখতে হবে। একজনের সাথে চলার সময় তার মন্দ দিকটা পরিহার করে চলে ভালো দিকটা গ্রহন করে নিজের জীবনে প্রয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ। আর বুদ্ধিমান কখনো হতাশ হয় না নিরাশ হয় না । তারা একবার না পারলে দেখো শতবারে বিশ্বাসী । সৎ চিন্তা সৎ সাহস নিয়ে সফলতা অর্জন করা প্রত্যেক জীবনের ব্রত হওয়া বাঞ্ছনীয় । আর আমাদের মত মানুষের জন্য সততা , সাহস এবং মনোবল হল জীবনের সুস্বাদু টনিক । মাথায় রাখতে হবে আমি কে , কি করতে চাই এবং পারতে আমাকে হবেই।
রাইট আম্মু । জীবনকে সুন্দর করতে হলে সুন্দর চিন্তা মাথায় থাকা চাই। সম্পদহীনদের জন্য শিক্ষাই সম্পদ। শিক্ষা মানেই নিজেকে বিকশিত করা । শিক্ষায় সনদ অর্জন করে যেমন চাকরী পাওয়া লক্ষ্য থাকে তেমনি সেই চাকরীতে শতভাগ সততাপরায়ণ থাকা অপরিহার্য । তাহলে দেশ ও জাতি সামনের দিকে অগ্রসর হবে। আজকাল মানুষ সরকারী চাকরী ফেলে অল্প দিনেই কোটিপতি বনে যায় । নামে বেনামে সম্পদ গড়ে তোলে , ব্যাংকে জমা করে অঢেল টাকা। পুলিশে একটু উপরে পদধারী হলেই টাকার কুমির । ভূমি অফিসে চাপোষা কেরাণী হলেই টাকার কুমির । বিমান বন্দর কিংবা নদী বন্দরে চাকরী ফেলেই অল্প দিনেই টাকার কুমির । বিদ্যুৎ ,টেলিফোন কিংবা গ্যাস শাখায় চাকরী পেলেই টাকার কুমির। তাদের চোখ পড়ে না মাটিতে । ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে । বাতাসের তালে তালে বেড়ে উঠে আঙ্গুল ফুলে গাছে পরিণত হয় । সবচেয়ে মজার বিষয় হলো এরা রাজনৈতিক ছাতার নিচে নিজের দেহ নিরাপদ রাখে। শুরু করে ব্যবসা বাণিজ্য পাচার করে কাঠি কাঠি টাকা। বিদেশের ব্যাংকে এবং ব্যবসায় নিজেদের নিরাপত্তায় স্বস্তি মনে করে।আম্মু আমি একজন স্বচ্ছ মানুষ থাকতে চাই। মন এবং মননে দেশ প্রেম গচ্ছিত রাখতে চাই আমৃত্যু।
তাই বিদেশ হতে পড়াশোনা শেষ করে নিজ দেশে ফিরে আসাই দেশ প্রেম। অবশ্যই প্রতিকূল পরিবেশও থাকে কারো কারো তাই ইচ্ছে করলেও ফেরত আসতে পারে না । তবে তারাও দেশের মঙ্গল কামনা করে। দেশের একটা ভালো খবরে মন আন্দোলিত হয় তাদের। প্রাকৃতিক দুর্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের মানুষের জন্য সাহায্যের হাত প্রসারিত করে। কারণ সে লোক বুকে লালন করে প্রিয় স্বদেশকে । তারপরও , পৃথিবীময় ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা জ্ঞানী গুণী , সৎ এবং দক্ষ মানুষকে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা দরকার আম্মু । তাঁদের ভিতর হতে সত্যকার দেশ প্রেমিকদের দেশের রাজনীতিতে জড়িত হওয়া দরকার । যারা ভালোবাসবে কথা নয় কাজ । যারা মিথ্যায় নয় সত্যিকারে এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে উন্নতির দিকে। অবশ্যই বর্তমান রাজনীতি ঘুণে ধরা আমার একদম অপছন্দ কুটিল এই রাজনীতি । তোমার এই রাজনীতি নিয়ে ভাবতে হবে না । আর সবসময় সাবধানে চলাফেরা করবে মৌরি। আমার মন পড়ে থাকবে তোমার কাছে। কালকে তোমার মামা সব কাগজপত্র দিয়ে যাবে। লন্ডন পৌছে গিয়ে আম্মুকে ফোন দিবে (চোখের কোণায় জল )। আমি অনেক একা হয়ে যাবো মৌরি। রোজ রোজ ফোন দিয়ে কথা বলবে আমার সাথে। ওহ! আম্মু মন খারাপ করো না । আমি সহ্য করতে পারবো না। আমরা মা মেয়ে একে অপরের পরিপূরক । আমারও মন পড়ে থাকবে আম্মু তোমার কাছে। (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৪৩ম পর্ব।
আকাশের ওপারে জোছনাময় চাঁদ। চাঁদের আলো আর কাঁশফুলে মাঝে সংসার নামক স্বর্গ । অথচ এই স্বর্গীয় সুখ পদদলিত করে কখনো কখনো পুরুষ কিংবা নারী পা বাড়ায় নরক নামক আগুনে।
কাশবনে হাঁটার অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। চড়ুই ও অচেনা পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত থাকে চারপাশের সবুজ প্রকৃতি। মাথার উপর তুলোর মত সাদা সাদা কাশফুল মাঝখানে স্বর্গীয় অনুভূতি। একটা কাশফুল আমার গাল ছুঁয়ে যেতেই চোখে ভাসে সংসারের টক ঝাল মিষ্টি মধুর খন্ড খন্ড স্মৃতি সুখ। অনেক সময় অনেক যুগল একসাথে কাশফুল দেখে রোমাঞ্চিত হয় । কাশফুলের নরম আলতো স্পর্শে পুলকিত হয় যুগলের মন। আকাশের ওপারে হে চাঁদ তুমি বড্ড একা ও বড্ড দূর । সংসারেও একত্রে বাস করে কখনো কখনো চেনা হয় না একে অপরকে। আমি আজও চিনতে পারিনি নাহিদক।
প্রতিদিন ফজরের আযান দিলেই নাহিদ বাসায় এসে যায় কিন্তু আজ এখনো আসে নাই অথচ সকাল হয়ে গেল। কোথায় গেলো কার কাছে জিজ্ঞাসা করবো ? আমি এখানে কাউকে চিনি না জানি না অথচ আমাকে একা ফেলে কোথাও গেলে তার আর খবর থাকে না। প্রতিদিন সকাল সকাল একসাথে বসে চা নাস্তা করি আর আজ নয়টা বাজে নাহিদ এখনো এলো না ।
হ্যালোঃ সুজন ভাই আমি আমি শিউলী ।
কেমন আছো। নাহিদ কেমন আছে।
জ্বী ভালো আছি । নাহিদ রাতে বাসায় ফিরে নাই । আপনি কি জানেন কোথায় গেল ।
তাই , আমি রাতে কাজে ব্যস্ত ছিলাম আমার সাথে দেখা কিংবা কোন কথা হয়নি । শুনো আমি তার অন্য বন্ধুদের হতে খোজ খবর নিয়ে তোমাকে ফোন দিবো একটু পর তুমি চিন্তা করো না শিউলী।
ভাইয়া ঠিক আছে কিন্তু খবু ভয় লাগছে একা একা।
আরে পাগলী ভয় পাওয়ার কি আছে ।
শিউলী শিউলী , দরজা খোল আমি তোর সুজন ভাই।
আসেন ভাইয়া ভিতরে আসেন , বসেন আমি চা করি।
না থাক এখন কিছু খাবো না আমি নাস্তা করেই তোমার বাসায় এসেছি নাহিদের খবর বলতে । শুনো , কাল রাতে নাহিদকে ইয়াবাসহ পুলিশ ধরে ফেলছে এখন থানায় আছে আমি তোমাকে বলে থানায় যাবো।
ভাইয়া এখন আমার কি হবে কোথায় যাব আমি। আহারে কান্না বন্ধ কর। তুই মন শক্ত করে এখানে থাকতে হবে । কোন কিছু দরকার হলে আমাকে বলবে আর নাহিদকে বাহির করতে আমি চেষ্টা করবো । সে আমার বন্ধু হলেও তুমি আমার ছোট বোন , তোমার জন্য হলেও নাহিদকে বাহির করতে সব চেষ্টাই আমি করবো তুমি টাকা পয়সা নিয়ে ভাবতে হবে না । শুধু নিজেকে সুস্থ ও নিরাপদ রাখে চেষ্টা করবে ।
সেইটাই ভয় হচ্ছে ভাইয়া । সোবহান মিয়া লোক ভালো না যখনি শুনবে নাহিদ জেলে তখনি এসে যাবে বাসা ছাড়তে বলবে আর কয়েক মাসের ভাড়াও বাকি। আমি মরা ছাড়া আর কনো পথ নাই
আসলে সমস্যাটা কঠিন এখন নাহিদকে বাহির করাই বেশী দরকার কিন্তু বাসা ভাড়া তাহাছাড়া তুমিও একা ! তোমার মা বাপকে —— ।
ভাইয়া তাঁরা আমাকে পেলে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিবে।
নাহিদের পরিবারও কোন সাহাস্য করে কিনা ঠিক নাই। সে আগে ভালো ছিল মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের ছেলে কিন্তু সঙ্গ দোষে বখাটে হয়ে পড়ে । পড়ালেখা ছেড়ে মাদকের নেশায় ডুবে তার পরে আবার তোমাকে বাগিয়ে নিয়ে আসে বিয়ে করে। আর তুমিও কম বয়সে খোজ খবর ছাড়া মা বাপ ছেড়ে দিয়ে চলে এসে বিপদে পড়লে। নাহিদ তোমার কথা কোন দিন কিছুই বলে নাই আমাকে । সে আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং সম্মানও করে আমি বাধা দিবো ভেবে গোপন করেছে,এই জন্য তাকে আমার ভালো লাগে। টাকা দিয়ে তার অন্য বন্ধুরা তোমার প্রাপ্তবয়স্ক সনদ তৈরি করে দেয় যেদিন তোমাকে নিয়ে আসে সেইদিন সবাই গিয়ে আমাকে ধরে মাপ চায় । এবং বাসায় এসে তোমাকে দেখে আমার খুব মায়া হয় ভুলে যাই তার দেওয়া কষ্ট । কিন্ত অনেক চেষ্টা করেও কিছু বখাটেদের কবল হতে মুক্ত করতে পারিনি । এই ব্যর্থতার ঢেউ এসে তোমার কপালে আজ আঘাত করলো বোন । (চলবে)।
মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
২৫তম পর্ব।
আমার একটা কথা ছিল বলার। শিউলীর মা তার বাবাকে বলে ।
কি কথা বলো ,আমার কাজের দেরী হচ্ছে।
আজ দুইদিন ধরে শিউলীর কথা খুব মনে পড়তেছে।তোমার মনে পড়লে আমি কি করবো ।
পাঁচ মাস হয়ে গেল মেয়েটা ঘর ছাড়লো। মেয়েটার জন্য আপনার একটু দয়ামায়া হয় না।
চুপ করো তুমি বাপের বুঝি মেয়ের জন্য দয়া হবে না। তাহলে খোজ কেন নিতে চান না ।
খোজ নিয়েছি তুমি জানো না।খোজ নিয়েছি পাড়া প্রতিবেশী জানে না । কারণ সবাই জানলে সমাজে থাকা দায় হবে, সমাজচ্যুত করবে আমাকে । আর মেয়েটা এইটা ভাবলো না গরিব মা বাবা অভাবের ভিতর কষ্ট করে সন্তান লালনপালন করে । সন্তানের মুখে আহার দিতে শত কষ্ট সহ্য করে এমন অকৃত্রিম ভালোবাসা ভুলে অন্যের হাত ধরে চলে যায়। শিউলীর এমন ঘৃণিত কাজে তার গরিব মা বাপকে সমাজের সর্দারগণ টুটি চেপে ধরবে তার বুঝা উচিত ছিল। তাকে সমাজে ফিরে আনতে হলে দশ হাজার টাকা সমাজকে জরিমানা দিতে হবে প্রভাবশালীদের চা নাস্তা খাওয়াতে হবে । আমি নিজে তোমাদের খাওয়াতে পারি না এইসব কি করে করবো। তাই চুপি চুপি খোজ করি যাতে তার খোজ পাই খবর পাই দেখা করতে পারি। যেখানে থাকুক ভালো থাকুক।
আমি যে তার মা আমার মন কি আর এতো সব বুঝে আমি মেয়েকে পেটে ধারণ করেছি আর আপনি নিয়েছেন পিঠে। সেও একদিন মা হবে তখন বুঝবে সন্তান হারিয়ে গেলে কিংবা সন্তান অবহেলা করলে কতটুকু কষ্ট পায় মা ।
ঠিক আছে ,আমি এখন যাই দেরী হচ্ছে আমার ।
ঠিক আছে যান , আমার কিছুই ভালো লাগে না উঠতে বসতে মেয়েটার কথা মনে পড়ে কিন্তু আজ দুইদিন বেশী মনে পড়ছে তাই কিছু খেতেও ভালো লাগে না গায়ে যেন জ্বালা পোড়া করছে জানি না মেয়েটার কোন বিপদ হলো কিনা । পড়ার টেবিল বিছানাপত্র দেখলে মেয়ের স্মৃতি মনে ভেসে উঠে আসলে বুঝতেই পারিনি মেয়ে বিয়ে করার মত বড় হয়ে গিয়েছে , মাঝে মাঝে মন খুব লাগে।
হ্যালো ভাবি আমি শিউলীর মা । আসসামুলাইকুম।
ওয়ালাইকুম সালাম। কেমন আছেন ।
আমি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন । মৌরি মা কেমন আছে । চাচীম্মা কেমন আছে , ওরা কি আজ ফোন করেছে আপনাকে।
হ্যা সবাই ভালো আছে , সকালে ফোন দিয়েছে । শিউলীর বাবা কেমন আছে । শিউলীর কোন খোজ পেলেন ।
উনি ভালো আছে । না ভাবি এখনো কোন খোজ খবর পাইনি । আল্লাহ জানে কোথায় আছে।
এইটা কেমন কথা হলো আপনারা এখনো খোজ নিলেন না আর আমাকে জানালেন না। মেয়েটার কি হলো জানা দরকার ছিলো। এইটা আপনারা ঠিক করেননি।
আমি কি করতে পারি যদি মেয়ের বাবা খোজ না নেয় উনি বলে খোজ নিচ্ছে। এদিকে বাড়ির মানুষ সমাজের মানুষ নানা কানাঘুষো করছে এসবের ভয়ে প্রকাশ্যে উনি কিছু করে না।
আহারে, আচার্য ব্যাপার আপনারা আমাকেও জানাচ্ছেন না কেন।
আজ কয়েকদিন আমার মন মেয়েটার জন্য বেশী অস্থির লাগতেছে কিছুই সহ্য হচ্ছে না তাই আপনার সাথে কথা বলে মন হালকা করতেছি।
আচ্ছা শুনেন শিউলীর বাবা আসলে আমাকে ফোন দিতে বলবেন আমি উনার সাথে কথা বলে দেখবো। ঠিক আছে ভাবি আপনি একটু সাহায্য করেন ভাবি আমি আর মেয়েটা ছাড়া থাকতে পারছি না ।
দেশে চারিদিকে যেভাবে নারী নির্যাতিত হচ্ছে প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে এই অবস্থায় চুপ থাকা ঠিক হয়নি। আপনারা ভুল করছেন। (চলবে)।