ফয়জুল মহী এর সকল পোস্ট

ফয়জুল মহী সম্পর্কে

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

হাফ মুন

নরম, শান্ত আরব সাগর, পানি দেখে বুঝা মুসকিল-চলমান না স্থির। নীল আকাশের ছায়ায় পানিটাও নীল দেখায়। হাওয়ার কারণে কখনো কখনো উচু নিচু ঢেউ খেলে। একঝাক গাঙচিল কিচিরমিচির শব্দে উড়ে বেড়াচ্ছে। ওয়াসিফ ভাবতে থাকে গাঙচিলের দেশ কোনটা, বাহারাইন নাকি সৌদি আরব। আয়মন পাশে থেকে মুচকি হাসি বলে এই গাঙচিল গুলির বাড়ী বাংলাদেশ। ঠিক এই সময় একটা চিল উপর থেকে আয়মনের গায়ে বিষ্ঠা ছুড়ে দেয়। তোমার গায়ে বিষ্টা ছুড়ে দিয়ে, দারুণ একটা কাজ করেছে গাঙচিল। তোমাকে একটা উষ্টা মারা দরকার তুমি আমার জন্মভূমিকে অসম্মান করে কথা বলতে চাও। আরে, ওয়াসিফ তুমি রাগ করছো কেন, আমি একটু মজা করেছি।

আয়মন আমি কি তোমার সাথে এমন মজা করতে পারবো? আমি শুনেছি শীত থেকে বাঁচতে সাইবেরিয়া হতে প্রচুর পাখি বাংলাদেশ আসে, কিন্তু অর্ধেকও পরে ফেরত যেতে পারে না পাখিগুলা শিকার হয়। আর ওই গুলা মানুষের রসনা পূজার কাজে লাগে। তোমার দেশের মানুষ কি একবার চিন্তা করে দেখে না এই পাখিগুলি কত হাজার মাইল দূর হতে শুধু শীত থেকে বাঁচার জন্য বাংলাদেশ এসে শিকারে পরিণত হচ্ছে?

হাফমুন নৈসর্গ সাগরের জলতরঙ্গ জলের ভিতর মাছের নৃত্য মেঘমুক্ত আকাশ। প্রেয়সী তুমি প্রিয়তমা জন্মভূমি, সাগরের জল তরঙ্গ দারুণ এক নতুন দৃশ্য যেন। ছোট ছোট অচেনা মাছদের নৃত্য দেখতে খুব ভাল লাগছে। মাথার উপর যে আসমান ঠিক যেন বাংলাদেশের মত। কিন্তু সাগরটার কোন মিল নাই পদ্মা মেঘনার সাথে। যেমন মিল নাই রাজনৈতিক রাজাদের। সাগরের ভিতর দেশ (বাহারাইন) চোখ ধাঁধানো আলোর ঝলকানিতে রাতে মনে হয় যেন পানির ভিতর জান্নাত। ভাবতে গিয়ে মাথায় যেন ঝিমঝিম করে। প্রতি বছর মেঘনা কিংবা পদ্মায় বিলীন হয় হাজার মানুষের বসত ভিটাসহ হাজারো স্বপ্ন। আর ভিটাহারা স্বপ্নহারা মানুষ নিয়া রাজনীতি করে দেশের মালিক নামক স্বপ্নের ফেরিওয়ালারা।

আমি কেন মরবো সাগরে ঝাঁপ দিয়ে আমি কেন মরবো অন্য কোন দেশের জঙ্গল কিংবা মরু প্রান্তরে? আমি তো কোন রাজনীতি বুঝি না। আমি বুঝি মা যে তার বাবার বাড়ীর সম্পত্তি বিক্রি করে আমাকে ভরণপোষন করেছে তার ঋণ শোধ করতে হবে। আমি বুঝি ঘরে বিয়ের উপযুক্ত যে বোন আছে তাকে বিয়ে দিতে হবে ধর্ষিত হওয়ার আগে। আমি বুঝি প্রিয়তমার ভালবাসা পেতে হবে। কেন দেশটা স্বাধীন হল, আমার অধিকার কোথায়? আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা বলে পাকিস্তানি আর্মি এসে দাদি কে প্রচণ্ড জোরে বন্দুক দিয়ে কোমরে আঘাত করে, যার ব্যথা নিয়া দাদি বেঁচে ছিল অনেক বছর। আবার মরেও ছিল সেই ব্যথা নিয়ে। দাদীর সেই ব্যথা যেন আমার বুকটাতে সংক্রমিত হয়েছে। আজ-কাল সেই ব্যথাটা আমাকেও পীড়িত করে। আর কত কাল দেশান্তর থাকতে হবে? চোখ থেকে এক ফোটা, দু’ফোটা করে ফোটা ফোটা নোনা জল আরব সাগরে ভেসে দেয় ওয়াসিফ। তা দেখে আয়মন দ্রুত এসে ওয়াসিফকে বুকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমা দিতে থাকে। আমি আন্তরিক দুঃখিত ওয়াসিফ। তোমার দেশপ্রেম দেখে আমি অভিভূত। কিন্তু তোমার দেশের কিছু লোক ও নেতাদের দূর্নীতি, চরিত্রহীন, মিথ্যা, লোভ এবং লালসা তাদের যেন গলার মালা। ওই যে বাড়ী চাই, গাড়ী চাই, কাড়ি কাড়ি টাকা চাই, আসমান চাই, জমিন চাই দুনিয়াতে স্বর্গ বানাই মন মানসিকতা।

আমরা লড়াই করে ভাষা পেয়েছি। আমরা লড়াই করে জমিন পেয়েছি যার নাম বাংলাদেশ। এখন আমরা লড়াই করছি অর্থনৈতিক মুক্তির। তাই দরকার হলে আমরা মাহাথির হবো। দরকার হলে লি কুয়ান ইউ হবো। যেমন লি কুয়ান ইউ যাযাবর জাতিকে খুঁজে দেয় স্থানীয় ঠিকানা। যদিও আমরা হয়ে পড়ি যাযাবর সাইবেরিয়া হতে সাহারা মরুপ্রান্তর বাংলাদেশের দামাল ছেলেদের ঘর। একটু খানি জননীর হাসি মুখ দেখতে, প্রিয় প্রিয় মানুষগুলি থেকে দূরে সরে অর্থনৈতিক যুদ্ধে আমরা লিপ্ত, এই যুদ্ধে আমাদের জিততে হবেই, হবে।

আলোচিত খুন আলোচিত গুম আলোচিত ধর্ষণ ও আলোচিত খলনায়ক

মেজর সিনহাকে চারটা নাকি ছয়টা গুলি করেছে তা নিয়ে বিতর্ক করে কি লাভ এখন। তাকে নির্মম নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়েছে এটাই সত্য। আর এই হত্যা করেছে দেশের আইন শৃঙ্খলা যারা রক্ষা করে তারাই । গুলি করেছে এসআই পদবি লিয়াকত (যে কিনা ছাত্র জীবনে শিবির করতো বলে প্রচার করা হচ্ছে , আহ ! হাসি আর হাসি )। সিনহা গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়ে মাটিতে । ইস ! কি ভয়ানক কষ্ট করছে তখন। তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার আত্মা তখন কেমন করেছে এতদিনে সিনহা হয়তো জেনে গিয়েছে । বাবা ছেলেকে কাছে পেয়ে হয়তো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলছে এ কেমন অবিচার দেশটাতে অথচ এই দেশের জন্যই অস্ত্র হাতে মরণপণ লড়াই করেছি । ধর্মীয় লেবাস কাজে লাগিয়ে পাশের রাষ্ট্রে সম্পদ পাচারকারী প্রদীপ ( যে কিনা বিএনপি করে প্রচার করা হচ্ছে আবারও হাসি আর হাসি) মাটিতে পড়ে থাকা মেজরকে পা দিয়ে চেপে ধরে। ইস !এক ভয়ানক জালিমকে রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়া হয়ছে আরেক — এসপি ডিজি হয়তো অন্য কারো সুপারিশে । সাবেক এসপি আল্লাহ বকস আবার সিনহাকে হত্যার পর আইনী পরামর্শ দিয়েছেন । এই আল্লাহ বকসের ভাই বিএনপির আমলে পুলিশের আইজি ছিলেন ।

তবে এবার বিচার হতে পারে কারণ প্রদীপ আর লিয়াকত বিরোধী দলের লোক। তারা আওয়ামী লীগকে ধোকা দিয়েছে এত দিন। আর সাক্ষী বাঘের মুখ থেকে ফিরে আসা সিফাত আর শিপ্রা। ভয়ের কোন কারণ নেই সিফাত ও শিপ্রা সত্য বলে মরণ হোক আরেকবার । তোমরাতো সিনহার সাথে ওইদিন রাতেই মরে গিয়েছো ।
মেজরের মা কান্না করে এবং ছেলের জন্য কাঁদবে মরণ পর্যন্ত । মাননীয প্রধানমন্ত্রী ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচার করবে ওয়াদা করেছেন । প্রিয় মা এখন ধৈর্য্য ধারণ করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই আপনার , এই বাংলাদেশে। পিলখানায় ৫৭জন সেনা হত্যার বিচার হয়নি । আবরার হত্যার বিচার হয়নি। নারায়ণগঞ্জের ত্বকি ও টেন হত্যার বিচার হয়নি । তাইতো বিচার কাঁদে আকাশে বাতাসে।

প্রিয় মেঘ । ভালোবাসা তোমাকে । মা বাবা ছাড়া বড়ই কষ্টের জীবন তোমার । অল্প বয়সে মা বাবা খুন হতে দেখছো তুমি। জানি তাদের কথা মনে করে কান্না করো তুমি । তোমাদের মত এমন আরো হাজারো মেঘ কিংবা মা কেঁদেই চলেছে । তোমার মা বাবাকে খুনের পর ৪৮ ঘন্টার ভিতর আসামি ধরবে বলে ছিল রাষ্ট্র । এইটা এখন ইতিহাস । আশ্বাসের পর আশ্বাসে বছর ঘুরে বহু বছরে পড়েছে , তুমি এখন বড় হয়েছো সব বুঝতে শিখেছো । বিচার পাওনি বলে বাংলাদেশকে ঘৃণা করো না।

ইলিয়াস আলী বিএনপির নেতা । কে বা কারা ধরে নিয়ে যে গেল আজও ফিরে আসেনি । অবশ্যই অনেক খুন গুম হয় এবং হয়তো ভবিষ্যতে আরো হবে । তবে যেসব খুন গুম দেশকে নাড়া দেয় তাদের একজন ইলিয়াস আলী। তার স্ত্রী সন্তান অনেক দেনদরবার করলো জীবিত ইলিয়াসকে ফিরে পাওয়ার জন্য। রাষ্ট্র আশ্বাসও দিয়ে ছিল কিন্তু সেটাও বছর হতে বহু বছর হলো ইলিয়াস আলী ফিরে এলো না । আর সবচেয়ে বড় সত্য ইলিয়াস আলী বিএনপির প্রভাবশালী নেতা । তার ফিরে আসার সম্ভাবনা আদৌ কি ?

তনুকে আপনারা মনে হয় ভুলে গিয়েছেন । এই মেয়েটাকে কুমিল্লা সেনা নিবাসে কুমির খেয়ে ফেলেছে। তবে খাওয়ার আগে দেহের উপরে বিকৃত নৃত্য দেশবাসী দেখেছে । আমরা অনেক কাঁদলাম পেপারে ও সামাজিক সাইডে। কি লাভ হলো কিছুই হলো না । তার মা বাবা সন্তান হারালো বিচার ফেল না।

সিনহা , ইলিয়াস আলী ও সাগর রুনি আরো নাম না জানা মানুষের ভিড়ে অসংখ্য তনু যারা আকাশের তারা এখন। তনুর মা বাবা গ্রামের গরিব বলে ঢাকার রাজপথ অনেক আগেই নীরব হয়ে গিয়েছে । ইলিয়াস আলীর সন্তান আর সাগর রুনির সন্তান বড় হয়েছে সিনহার মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলতে পারবে বিচারের আশ্বাস আমরাও পেয়ে ছিলাম। যেই দেশে প্রদীপ লিয়াকত সেই দেশে ইলিয়াস কোবরা সিনামা বানাবে । আর আমরা তা চুপি চুপি দেখে যাবো ।

খল নায়ক ইলিয়াস কোবরা আসলে কিন্তু এই দেশের নাগরিকই না। মিয়ানমারের থেকে এসে কক্সবাজারে নিবাস গড়েছেন। মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে ইয়াবার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোবরা পরিবারের প্রায় সব পুরুষই ইয়াবা কারবারে জড়িত। জেলও খেটেছেন অনেকে আবার মামলাও চলমান ।

আর এই ইলিয়াস কোবরা প্রচণ্ড দাপটের সঙ্গে আমাদের চলচ্চিত্রে কাজ করে গিয়েছেন ! মেজর (অব.) সিনহা রাশেদ খানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এই ইলিয়াস কোবরার নাম চলে আসায় এটি নিয়ে গভীর তদন্ত দরকার। সবচেয়ে আজব ও মজার ব্যাপার , যার পুরো পরিবার ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত সেই ইলিয়াস কোবরাকে কক্সবাজারের ওই এলাকার মাদক নির্মূল কমিটির সভাপতি বানিয়ে ছিলেন সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার!!

ছবি ফেসবুক ও কোবরার নিউজ কালের কন্ঠ হতে ।

বিদেশে পথে পথে আমরা

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকসহ অন্য পেশাজীবিরা ভিসায় উল্লেখিত পেশার বাইরে কোনো কাজ করতে পারবে না। বিশেষ করে রাজনীতি, পেশাজীবি বা অরাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবে না। শ্রম ভিসায় গিয়ে অনেকে সাংবাদিকতা অর্থাৎ বাংলাদেশে খবর পাঠান অভিযোগের প্রমাণ হাজির করে সৌদি পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এক বাক্যে বলেছেন, প্রেস ভিসা ছাড়া অন্য কেউ সৌদিতে সাংবাদিকতা করতে পারবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিধিদের এই বলে সতর্ক করা হয় যে বাংলাদেশ মিশনের কেউ যাতে এসব কর্মে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সমর্থন কিংবা অনুমোদন না দেয়। দৃষ্টি আকর্ষণের পরও যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব কর্মে সম্পৃক্ত রয়েছে মর্মে প্রমাণ মিলে তবে, অবশ্যই তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি অবহিত করছে। ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরণের অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

এরপরও কোন ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের আওতায় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হওয়াসহ দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সৌদি সরকার জানায়, এখানে অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা প্রেস ভিসা ব্যতিরেকে যে সকল বাংলাদেশি নাগরিকগণ সাংবাদিকতা করছেন বা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ। এক্ষেত্রেও এসব অপরাধের জন্য জেল জরিমানাসহ দেশে প্রত্যাবর্তনের সম্মুখীন করা হবে বলে জানানো হয়।
সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বর্ণিত বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

অধিকাংশ লোক জায়গা বিক্রি করে, ধারদেনা করে কিংবা সুদের হিসাবে টাকা ধার করে বিদেশে যায়, এর মধ্যে সামান্য একটা অংশ কিছু সৌদি লোকের সহযোগিতায় বিভিন্ন ব্যবসা বানিজ্যে মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করে যেটা তারা দেশে বসে কল্পনাতেও হিসাব করেনি। এরাই কিছু লোক নিজেকে নেতা পরিচয় দিতে শুরু করেন। অনেক সময় স্থানীয় কোন এমপি বা নেতাকে আমন্ত্রণ করে, হোটেলে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমপি বা নেতাকে দিয়ে একটা সংগঠন এর নাম ঘোষণা করানো হয় এবং সেই সাথে কিছু পদ পদবিতে নাম ঘোষনা করা হয়। বিভিন্ন পদে উপনীত ব্যক্তিগণ নেতা হিসাবে পরিচিয় দিয়ে আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করেন। এইসব নেতারাই বিভিন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। আমাদের দেশে এই একটি মাত্র পদ আছে যে পদের জন্য কোন যোগ্যতা লাগেনা শুধু মাত্র পাগল না হলেই হলো, সেটা হচ্ছে নেতা। অবশ্য মন্ত্রী, এম পি হতেও যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই। কিছু টিভি চ্যানেল বিদেশে শ্রমিক হিসাবে যাওয়া কিছু লোককে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেয় যাদের ভাষা জ্ঞান তেমন নেই। এরা ভালো বাংলা উচ্চারনে কথা বলতে পারেন না, অবশ্য এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু যখন এদেরকে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেটা বুঝতে পারিনা। যারা সাংবাদিকতা করবেন, লাইভ সম্প্রচার করবেন তারা অবশ্যই উচ্চারণ এবং ভাষাজ্ঞানে সমৃদ্ধ থাকার কথা।

এই দিকে বাংলাদেশের কোন উড়োজাহাজ কুয়েতে ঢুকতে পারবেনা। ইটালীতে অনেক আগে হতে বাংলাদেশী ঢুকতে পারছেনা অথচ হাজার হাজার বাংলাদেশি যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। বাংলাদেশিরা ইটালীতে করোনা সনদ জালিয়াতি করে খবরের শিরোনাম হয়েছে সবার জানা কথা। জাপানও আজ বলে দিয়েছে বাংলাদেশের লোক ঢুকতে পারবে না। পাপুলের ভিসা জালিয়াতি করায় কুয়েত হয়তো নিরহ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নিতেও পারে। এখন হতে সরকার দক্ষ কূটনীতিক তৎপরতা চালানো দরকার যাতে শ্রমিক ফেরত না পাঠায়। সরকার এবং জনগণের বুঝা উচিত অকাতরে প্রবাসী ফেরত আসলে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যা কাটিয়ে উঠা দুরূহ ব্যাপার হবে।

মাসুম নামে এক লোক আমেরিকা বসে প্রায় প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ করে সরকারের বিরুদ্ধে। উনি আবার একটা ফেসবুক গ্রুপও করেছে রেমিটান্স ফাইটার অফ বাংলাদেশ (আরএফবি) নামে। যেখানে প্রবাসীদের এড করে এবং প্রচার করছে উনি নাকি সরকারের পদত্যাগ চায়। এবং সরকার বিরোধী যেসব লোক আছে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছে। আসলে সব হলো মিথ্যা এবং ধান্দাবাজি। আমেরিকার মাসুম, কাতার প্রবাসী একজন, এসকে মিডিয়ার টিপু চৌধুরী এবং সৌদি প্রবাসী মিনার মাহমুদের ভিতর মতবিরোধ শুরু হয়। মাসুম তার লোক দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে সৌদিতে মিনারকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয়। সে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে ডাক্তারী পেশার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে এবং বিভিন্ন বাংলাদেশী শ্রমিকও এইসব করে ( করোনা নিয়ে এবং মানুষের বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করতো আমিও দেখেছি )। তবে মিনার মাহমুদ একজন ভালো লোক কিন্তু তার এই লাইভ করা সৌদি আইনে নিষিদ্ধ এবং অপরাধ, জানতে পেরেছি সে এখন জেলে। যার কারণে সৌদি সরকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে। প্রথম হতে মাসুমের সরকার বিরোধী ফেসবুক লাইভ দেখে আমার মনে হয়েছে লোকটা বাটপার। কোন মতলব নিয়ে সে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় যাতে তার লাভ হয়। প্রিয় প্রবাসী ( রেমিটান্স যোদ্ধা ) ভাইবোন আপনারা এইসব মতলবাজ ধান্দাবাজ কূটচালবাজ এবং অসৎ লোক হতে দুরে থাকুন। বিদেশে বসে দেশে কোন দল সরকার থাকে তা নিয়ে রাজনীতি না করে আপনি নিরাপদ সুস্থ ও সবল থেকে সৎ পথে রোজগার করে বৈধ পথে টাকা পরিবারের কাছে পাঠান। এতে পরিবার চলবে, সমাজ দেশ উপকৃত হবে। সজাগ থাকুন ধান্দাবাজ আপনাকে ব্যবহার করে যেন উপরে উঠতে না পারে। মনে রাখবেন আপনি হলেন লাল সবুজ পতাকা, রক্তমাখা মানচিত্র ও জনমদুঃখী মায়ের সন্তান।

সূত্রঃ বিভিন্ন নিউজ পেপার ও ফেসবুক ভিডিও।

ঈদ মহামারী বন্যা ও আমরা

কোরবানের শাব্দিক অর্থ হল- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া। পারিভাষিক অর্থে ‘কোরবানি’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ, কোরবানির মূল দীক্ষাই হল আল্লাহর সকল হুকুমের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নমুনা স্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আঃ) নিজ প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কোরবানিকে কবুল করে নেন, এ ঘটনা আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই কোরবানিতে মানুষের জন্য অসংখ্য শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে।

কোরবানি অন্যতম শিক্ষা হলো দরিদ্র ও অনাথের সুখ দুঃখে ভাগিদার হওয়া। নামাজে ধনী দরিদ্রের সহাবস্থান এবং কোরবানির মাংস গরিবের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার ইসলামী নির্দেশ তা প্রমাণ করে। মাংস বিলিয়ে দেওয়ার আদেশ এই প্রমাণ করে যে ধনীদের সম্পদে অসহায়দের অধিকার আছে। কোরবানি মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব না বলে একে শুদ্ধ জীবন গঠনের অনুশীলন বলা উচিত। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করি। তাওহীদ, একনিষ্ঠতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এইটা। দরিদ্র জনগণের দুঃখের ভাগীদার হয়ে আল্লাহের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির লক্ষ্য হওয়া উচিত। কোনরকম নিজেকে জাহির করা কিংবা ফায়দা হাসিল এর মনোভাব স্থান লাভ করতে পারবে না। পবিত্র কোরানের সুরা আল -আমের ১৬২ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেছেন ‘বলুন হে নবী (সাঃ) আমার সালাত আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মৃত্যু, শুধুমাত্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিনের জন্যই”।

করোনা কালে খাদ্য এবং চিকিৎসার জন্য যেভাবে হাহাকার দেখা গিয়েছে বন্যাতেও দেখা যাবে। রাষ্ট্রের উচিত ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, মানব পাচারকারী ও জুয়াড়ি হতে জনগণের সম্পদ উদ্ধার করে দুঃস্থ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া।

মুখ ডুবিযে খাওয়া লোকেরা দেশটার রস খেয়ে ঈদে খাবে বড় বড় গরু, তাদের জন্য প্রতিদিনই ঈদ। কিন্তু আজ এই ঈদ মহামারী ও বন্যার মাঝে খাওয়ার জন্য নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানোর জন্য ও একটু আশ্রয়স্থলের জন্য যারা সংগ্রামে লিপ্ত তাদের ত্যাগ ও তিতীক্ষার ঈদ । ঈদ আসলে এখনো সাম্য আনতে পারেনি বৈষম্যও কমাতে পারিনি কিন্তু নেতারা ভাষণ দিবেন সাম্যের। সুদখোর, ঘুষখোর, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, মানব পাচারকারী ও জুয়াড়িরা আজ টাকা দেশে আলমারি ভর্তি করে আবার বিদেশে পাচার করেছে। সিঙ্গাপুর মালেশিয়া যেমন বাড়ি করেছে ব্যবসা পেতেছে তেমনি কানাডা আমেরিকাসহ ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশেও তাই করেছে। এই মহামারীতে এই বন্যায় এইসব মানুষ কতটুকু সাহায্যে এগিয়ে এসেছে, মোটেও আসেনি। এসেছে সৎ মানবিক দরদি লোকেরা। কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা এগিয়ে আসেনি তারাই নামের সাথে জনদরদি ও সমাজসেবক লিখে কিংবা লিখবে ভোটের সময় ও অন্য সময়।

কিছু কিছু এলাকায় কোরবানি আসলে মেয়ে পক্ষ থেকে জামাই বাড়িতে গরু ছাগল পাঠাইতে হয়। এই মহামারী সময় এইটা বন্ধ করা দরকার। এইসব নিয়মের ফলে প্রায় মেয়ের পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়। অনেক এলাকায় মেয়ের বিয়ের সময় একবার কষ্ট করে দিয়ে দেয় যেটা যৌতুকই। ঈদ আসলে আমরা আনন্দিত হই, আরেক পক্ষ আতঙ্কিত হয়।

দয়া করে এসব বন্ধ করুণ লজ্জাজনক কাজ। কোরবানি ওয়াজিব হলে নিজের টাকায় পশু খরিদ করে আল্লাহর নামে কোরবানি করুণ। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজন, গরিব দুঃস্থ, এতিম ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাধ্যমত খোঁজ খবর রাখতে চেষ্টা করি।

স্যার আপনারা হিরো ছাত্রদের জীবনে স্মরণীয় স্মৃতি বরণীয় আজও

গোপাল স্যার আমার বাবার ক্লাসমেট এবং আমার শিক্ষক। উনি লেমুয়া বাজারের দিন অনেক লোকের সামনে আমাকে গালে চড় মেরে ছিলেন। আমি তখন (নব্বই দশকে) একটা ছাত্র সংগঠনের লেমুয়া ইউনিয়নের পদে ছিলাম। গোপাল স্যারকে এলাকায় অনেকে চিনে না কিছু লোক চিনে মরণ বাবুর ভাই হিসাবে। বাজারে রটে গেল মহীকে হিন্দু এক লোক মারছে। আমি চড় খেয়ে লজ্জায় হতবুদ্ধি হয়ে মুখে হাত দিয়ে দাড়িয়ে রয়েছি। অনেক লোক জমা হয়ে যাওয়ায় স্যারও লজ্জা পেলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে চায়ের দোকানে ভিতরে নিয়ে গেলেন। পরে সবাই জানলো উনি আমার শিক্ষক। স্যার আরেক হিন্দু নিখিল বাবুর শশুরের কাছে বেশ কিছু টাকা পাবেন। এই টাকার জন্য লেমুয়া বাজারে অনেক বৈঠক হয়েছে। যারা বৈঠক করে সব দলের প্রভাবশালী মদখোর আর জুয়াচোর। এক বছরেও সমাধান না হওয়ায় আমি কিছু ছেলে নিয়ে গিয়ে পাওনাদারকে দমক দিয়ে আসি।

সেই পাওনাদার পরের দিনই গোপাল স্যারকে ধরলেন। এবং কি বলেছে আমার আজও জানা হয়নি। তবে স্যার আমাকে টাকা নিয়ে দিতে বলেনি। আমিই নিজে বলেছি সেই লোককে। চায়ের দোকানে আমি মাথা নিচু করে বসে থাকি। চা খেতে খেতে স্যার বললেন তুই আমার ছাত্র। তোকে দিয়ে টাকা আদায় করলে নিজের বিবেক মরে যাবে। স্কুলে আমি তোকে নিজের ছেলে পরিচয় দিতাম। বাবা হয়ে থাপ্পর মারলাম।

কর্ম জীবনের প্রথমেই এক লোকের মারফতে একটা সোনালী রংয়ের সিটিজেন ঘড়ি পাঠাই গোপাল স্যারের জন্য। কিছুদিন পর লোকটা ঘড়ি ফেরত দিয়ে বলে স্যার মারা গিয়েছেন। যে স্যার ক্লাস সিক্স হতে টেন পর্যন্ত প্রাইভেট পড়িয়ে একটা টাকাও নেন নাই সেই স্যার মরে গেল। কিন্তু ভালো লোক এত তাড়াতাড়ি, কেন মরবে আজও আমি বুঝি না। দুই / এক বার কিছু টাকা দিয়েছি মাত্র উনার ছোট ছোট বাচ্চাদের জন্য। আমার বাবা মরণ বাবুসহ গিয়ে (মরণবাবু ফালিজপুর কাদেরী হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক) যখন ম্যামকে টাকা দিতেন তখন নাকি ম্যামের মুখটা একটা স্বর্গ হয়ে যেত। আজ উনার সন্তানেরা বড় হয়েছে। কিন্তু একজন সৎ শিক্ষকের অকালে মরে গেলে পরিবারটা কত অসহায় হয় ভুক্তভোগী বুঝে। স্যার, বাবার যে চিঠি পড়ে আপনার মন খারাপ হয়ে ছিলো সেটা আমার কথার কারণে। আমি অংকে নাম্বার কম পেয়ে বাবাকে বলেছি স্যার পড়ায় না। আপনি কখনো কোন ছাত্রের প্রতি অনীহা প্রকাশ করেনি। স্বর্গে আপনি ভালো আছেন বলে আমার প্রচণ্ড বিশ্বাস।

আমরা পরীক্ষার ভালো ফল চাই কিন্তু ভালো শিক্ষক চাই না। ঘুস নিয়ে মাস্টার বানাই। শিক্ষকদের নিশ্চিত জীবন চাই না। শিক্ষককে লাথি উষ্ঠা মারি। আরে ভাই আমি নেতা সালিশ করে, নদীর বালু বিক্রি করে, মাদকের দালালি করে, স্কুলের পরিচালক হয়ে টাকা পাই। সেই টাকায় সংসার চালাই। এইটা খেয়ে আমার পোলা কেমন করে জিপিএ পাঁচ পাবে। আমারতো নীতিই নেই আর আমি পোলারে বলি বেটা পড়াশোনা করে ভালো মানুষ হইবি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান এখন স্কুল কলেজের সভাপতি হয়। এরা এতই প্রভাব দেখায় এদের নজর এড়িয়ে ধুলাও নড়চড় হয় না। পুরা পরিচালনা কমিটি রাজনৈতিক লোক দিয়ে করার কারণে শিক্ষকগণ জ্বী জ্বী করে উনাদেরকে (এইসব পরিচালক একই শিক্ষালয়ের ও শিক্ষকের সাবেক ছাত্র)। অবাধ্য হলে নেমে আসে অপমান অপবাদ। যার কারণে গ্রামের স্কুলে পাশের হার অত্যন্ত খারাপ। জেলা শহরে কয়েকটা স্কুল কলেজে লেখাপড়ার মান খুবই ভালো। যেমন ফেনীতে সরকারি পাইলট হাই স্কুল, সরকারি গার্লস হাই স্কুল, ফেনী ক্যাডেট স্কুল এবং কলেজ ও শাহীন একাডেমি (জামাত পরিচালিত)।

মীর স্যার আপনি মেধা সততা দিয়ে স্কুলকে আকাশের চাঁদ বানিয়ে ছিলেন। আশি নব্বই দশকে ( আমাদের সময় ) করৈয়া হাই স্কুল ফেনী জেলায় পাশের হারে শহরের স্কুলকে পিছনে ফেলে দিতো আর আজ সেই স্কুল মৃতপ্রায় হাতি। দশম শ্রেনীতে উঠে রাস্তার ঐপারের একটা হলুদ পাখি (মেয়েটা কোথায় আছে কেমন আছে জানি না ) ধরতে গিয়ে আপনার হাতে মার খেয়ে জ্বর হয়ে ছিল। ভয়ে বলি নাই আপনি মেরেছেন। প্রধান শিক্ষক হিসাবে আপনার ব্যক্তিত্ব সুনাম করৈয়ার মাটি বয়ে বেড়াবে পৃথিবীর শেষ অবধি।

ছবিঃ ফেসবুকের স্কুল গ্রুপ হতে নেওয়া। (মীর স্যার সাবেক প্রধান শিক্ষক)।

করোনায় একজন প্রবাসী (৬ষ্ঠ পর্ব )

টেলিভিশনের রিমোট হাতে নিয়েই ফকির শাহ চালু করে টিভি এমনি গান চলতে থাকে। “আনা হাব্বাক গলতান —”(আমার ভালোবাসা ভুল)। ফকির শাহ আমাকে অর্থ বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু ক্ষুধায় আমার পেট জ্বলে আর ফকির শাহ আমাকে আরবী গানের অর্থ তালিম দেয়। মাথা গরম হয়ে গেলেও সয়ে যেতে হয় কারণ ফকির শাহ ভারতীয় বাঙ্গালী দুই/ একদিন খাবে তাই অনেক কিছু। আমি বলে ফেলি ফকির ভাই আর তোমার গান শুনতে আমার কাছে ভালো লাগছে না ক্ষুধায় আমার জান শেষ, চলো খেয়ে আসি।

ফকির শাহ স্মিত মুখ বাঁকা করে সাথে আমিও। হোটেলে কাজ করার সময় সাড়ে বারটা হতে এক‘টার ভিতর খাওয়ার খেতে দিতো। কয়েক মাস এই নির্দিষ্ট সময় খেতে খেতে এখন তাই ক্ষুধায় দেরি সহ্য হচ্ছে না। কয়েক দিন দুপুরে খেপছা (বার-বি- কিউ মোরগ এবং তৈলাক্ত ভাত ) খেতে ভালোই লেগেছে, রাতেও সেই একই খাবার। তবে এরাবিয়ান অনেক প্রসিদ্ধ খাবার বিক্রি হয় এই হোটেলে। শিক কাবাব ও তুর্কী সালাদ আমার প্রিয় হয়ে যায় কিন্তু দাম বেশী বলে কর্মীদের খেতে দেয় না। এই দেশের মানুষ কখনো কখনো প্রয়োজনের তুলনায় বেশী খাবার অর্ডার করে। আবার কখনো কখনো একটু আধটু খেয়ে চলে যায়। সেই খাবার কর্মী হিসাবে খাওয়া যায় আর আমার ভালো লাগতো বলে শিক কাবাব খেতে চাইতাম।

এই দেশে তুর্কীস্থান, ইয়েমেন এবং আফগানিস্তানের মানুষ খাবার হোটেলের জমজমাট ব্যবসায় জড়িত। আফগানীদের বুকারী হোটেল বাঁশপতি চাউলের ভাত এবং সাথে ভেড়ার মাংস, স্যুপ ও কালো বেগুনের ভর্তা প্রসিদ্ধ এখানে। অনেক সময় দুপুরে খেতে গেলে লাইন ধরতে হয়, এইসবে অনেক বাংলাদেশীও কাজ করে। ম্যাকডোন্সাস, কেএফসি, পিৎজা হাট, টিক্কা কাবাব এইসব আমেরিকা ইউরোপের খাবার হোটেলের সাথে এরাবিয়ানদের হারফি, কদু, মিসওয়ার ও আলি বাবা ফাস্ট ফুড় চলে সমান তালে। আরবী ভাষা লোকদের হোটেলের পাশাপাশি পাকিস্তানি, ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশী লোকদের খাবার হোটেল আছে। আছে হায়দারাবাদের মিষ্টি পান, চা, বিরায়ানি আছে পাকিস্তানের কড়াই (ভাজা মাংস), বিরায়ানি ও পালুদা। আছে বাংলাদেশের চা সিংগারা, চমুছা ও তেহারি।

বড় বড় শহরে গড়ে উঠেছে মিনি বাংলাদেশ রিয়াদে বাথা ও হারা, দাম্মামে সাইকো, জেদ্দায় গুরাইয়া। আছে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তবে এইসব সরকারিভাবে সৌদিয়ানদের নামে তালিকাভুক্ত, তাই তারা লভ্যাংশ পায় ঘরে বসে। ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি বিয়েশাদিও করছে ভারত উপমহাদেশের লোক। মক্কায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আছে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারি, এদের ভিতর এমনও আছে সৌদিতে বসবাসের পঞ্চাশ বছর হয়েছে গিয়েছে, যে কারণে পরিবার পরিজন সবাই সৌদিতে। এরা নানা অপকর্মে জড়িত, এদের ভাষা চিটাং এর সাথে মিল হওয়ায় বুঝা যায় না তবে চিটাং এর লোক মক্কায় সবচেয়ে বেশী। এরা অনেকে ব্যবসা বাণিজ্য করে ভালো অবস্থানে আছে। মক্কা ও মদিনায় অনেকে বাড়ির ব্যবসায় জড়িত। রমজানে ওমরা আর কোরবানে হজ্জ এই দুই সময় বাড়ি ভাড়া এবং অন্যান্য কাজ জমজমাট থাকে বলে বৈধ অবৈধভাবে প্রচুর রোজগার করতে পারে সবাই। খাবার হোটেলে, ফল ফ্রুটের দোকানে উপচে পড়া ভিড় থাকে। পাকিস্তানিরা চুল কাটে যেন কোদাল দিয়ে, আফগানিরা বড় বড় রুটি বিক্রি করে লাইন দিয়ে। বাংলাদেশিরা চুরি করে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাস্তায় কিংবা বাসায় পানি এবং আদা কাঁচা খাবার বিক্রি করে।

ফকির শাহ চ্যানেল পরিবর্তন করে এমবিসি বলিউড দেয়। শালমান খানের দাবাং চলতেছে আমি ও ফকির শাহ টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে থাকি। আমি দেশে থাকতে ক্যাবল টিভিতে হিন্দি ছবি দেখার নেশায় ছিলাম। শালমান খানের কোন ছবিই দেখা বাদ পড়তো না এখনোও দাবাং ভাই আমাকে আকৃষ্ট করে। পেটের ক্ষুধা ভুলে আমি মাহীয়া গিলের চিকন কোমর দেখি। ভারতীয় নায়ক নায়িকা ব্যায়াম করে স্লিম থাকে আমাদের দেশের তারা যেন এক একটা আঠার মোটা মোটা বস্তা। এমবিসি গ্রুপের অনেক চ্যানেল, এমবিসি টু ও এমবিসি এ্যাকশান এই দুইটি চ্যানেলে হলিউড ছবি প্রচার করে চব্বিশ ঘন্টা আর এমবিসি বলিউডে হিন্দি ছবি ও সিরিয়াল চব্বিশ ঘন্টা প্রচার করে। এইসব বিশ্বমানের চ্যানেলে বিজ্ঞাপন যতসামান্য প্রচার করে যা আমাদের দেশের চ্যানেল চিন্তাও করতে পারবে না। এই মিশরী চ্যানেলের সমপর্যায় আছে এলবিসি লেবাননের চ্যানেল। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, ওমান ও বাহারাইনের বিনোদন কিংবা খবরের শত শত চ্যানেল চলে, শুধু চলে না আল জাজিরা। হাজার হাজার রিয়েল খরচ করে কার্ডের মাধ্যমে চালায় খেলার চ্যানেল। আমাদের দেশে যে রকম ক্রিকেট খেলা প্রিয় তাদের প্রিয় ফুটবল। আল হেলাল, নাসের ও ইত্তেহাদ সৌদি আরবের নামকরা ক্লাব। আমাদের দেশে নব্বই দশকে যেমন আবাহনী মোহামেডান এর খেলা হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তো। যেমন বাঘ এবং সিংহের লড়াই হতো সৌদিতেও ঠিক সেইরকম এখনো। আমেরিকা কিংবা ইউরোপীয় ক্লাবেরও প্রচুর সমর্থক আছে। বার্সালোনা এবং রিয়াল মাদ্রিদের খেলা হলেও উত্তেজনা দেখা যায় রাস্তাঘাটে। সৌদি আরব বিশ্ব কাপেও খেলেছে দুই একবার। তবে অনেক চেষ্টা করেছে কাতারে যেন বিশ্ব কাপ খেলা আয়োজন বিঘ্ন ঘটে তারা সফল হয়নি। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে এরা কিন্তু শয়তানের বাবা।

মানুষ হজ্জে গিয়ে শয়তানকে পাথর মারা হজ্জের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ইয়েমেনে হাজার হাজার শিশু তাদের বোমার আঘাতে মারা যাচ্ছে অথচ তাদের কেউ পাথর মারার নেই। শিয়া সুন্নির নোংরা রাজনৈতিক খেলায় মেতে আছে ইরান ও সৌদি। আল্লাহের ঘর তাদের কাছে কতটুকু নিরাপদ। এই ঘরকে পুজি করে তারা যে রোজগার করছে তা ব্যবহার করছে অগণিত নিষ্পাপ মানব শিশু হত্যায়। আমরা তাদের দেশের গিয়ে নিজেকে পাপ মুক্ত করতে চেষ্টা করি। কিন্তু তাদেরকে কে মুক্ত করবে পাপ হতে। ইসলাম ধর্মীয় মানুষের আরাধনার স্থান মক্কা মদিনা নিয়ে তারা গর্বিত। অলৌকিক পানি জমজম পুরা বিশ্বের মুসলিমের কাছে স্বর্গীয় গঙ্গা। যে পানি পৃথিবীর সব পানি হতে বিশুদ্ধ ও মান সম্মত যে পানিতে আল্লাহ মানব দেহের সব উপকারী উপাদান দিয়ে দিয়েছেন। সেই পানির জায়গার মালিক সৌদি আরবে মানুষেরই বাক স্বাধীনতা নাই। তবে হাই আদেশ দিয়েছে প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ইচ্ছামত আলাদা বাড়ি নিয়ে বসবাস করতে পারবে। মনে হয় বর্বর জাতি কামুকে একধাপ উপরে উঠলো।

(চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী ।
৭ম পর্ব।

ভাত খেতে খেতে টুকটাক কথা হয় ফকির শাহ এর সাথে। সে বুঝতে পারে আমি স্বস্তিবোধ করতেছি না কথা বলতে , তাই জলদি খেয়ে উঠে যাই। খাওয়া শেষে সিগারেট টানা আমার সেই পুরাতন অভ্যাস আজও ব্যতিক্রম হয়নি। ফকির শাহ সিগারেটে অভ্যস্ত নয় (অনেক ভালো অভ্যাস ) আমাকেও এই ধুমপান ছাড়তে হবে । অনেক চেষ্টা করি কিন্ত পারি না , আর হয়তো পারবো না । এই মরুভূমিতে ফকির শাহকে না ফেলে বোবা হয়ে যেতাম ছাগল আর ভেড়ার সর্দার হয়ে।
ঘুম আসে না একটুও ,হোটেলের কাজে আসার পর হতে দুপুরে ঘুম যাওয়ার সুযোগ হয়নি কিন্তু চোখ জুড়ে নেমে আসতো প্রচণ্ড অবসাদ । আর আজ ঘুমের সুযোগ পেয়েও ঘুম আসছে না , চোখে আসছে বাংলাদেশ । কিভাবে শোধ দিবো ঋণ , যদি ধরা পড়ি পুলিশের হাতে সব স্বপ্ন আশা ভরসা চুরমার হয়ে যাবে। কেন যে বিদেশ নামক বিপদে পা বাড়ালাম আজ টের পাচ্ছি , হাজারো মানুষ সৌদি আরব এসে বাড়ি ঘর দালান করেছে আর আমি প্রশান্ত মহাসাগরে ডুবতে বসেছি। বাদামতলীর সবজির আড়তেই আমি ভালো ছিলাম , নিজ দেশে লতাপাতা বিক্রি করে পেট চালানোও শান্তি এও সম্মানের। মা বাপ ভাইবোন ও বউ বাচ্চা নিয়ে শান্তিতে ছিলাম এখন বুঝতেছি। এখন আর আড়তদারও কাজে নিবে না । সৌদি হতে দেশে যাওয়াও আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে কারণ আমার নেই ইকামা (পরিচয় পত্র) বাংলাদেশি হিসাবে পাসপোর্টই আছে আমার কাছে। ইকামা না থাকলে জেল জরিমানা হবে তাও যদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হই না হয় এইভাবে থাকতে হবে মাসের পর মাস বছরের পর বছর । ইকামা না থাকলে অসুখ বিসুখ হলে যেতে পারবো না কোন হাসপাতালে । ইস ! কেন যে মোস্তাক মিয়ার সাথে পরিচয় হলো ,কেন যে বিদেশ আসার কথা মাথায় আসলো । আজ আমার কান্নার আওয়াজও কেউ শুনবে না ।

আবুল কালাম উঠে যাও কাজ করতে হবে । চলো আমি তোমাকে গানাম (ভেড়া) এর কাজ দেখিয়ে দিবো আমারও অন্য কাজ আছে , ফকির শাহ আমাকে ডাকে তুলে বিকাল হয়ে যাওয়ায় । তুমি আমার সাথে খাওয়া দাওয়া করলেও রাতে ঘুমাবে বাহিরে খেইমায় (তাবু) কারণ গানাম (ভেড়া) পাহারায় থাকতে হবে । দুপুরে খেয়ে এখানে ঘুমাবে আর রাতে খেয়ে চলে যাবে এবং ঘুমানোর আগে গানাম দেখবে আবার রাতে উঠে একবার দেখবে । আমি চুপচাপ ফকির শাহর কথা শুনি সে যেটা বলতেছে ঠিক সেইভাবে কাজ করতে হবে কারণ সে পুরাতন হিসাবে সব জানে । কিন্তু এই গরমে কিভাবে খেইমায় ঘুমাবো ভয় মন খারাপ হয়ে গেল । জানি মানুষ অভাসের দাস , আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে যাবে কিন্তু এই দুই /চার রাত ঘুমানো কঠিন হবে গরমের কারণে। ফকির শাহ পানির মোটর চালু করে খেজুর গাছ এবং অন্যান্য গাছে পানি ছেড়ে দেয় মাঝখানে দূর্বাঘাসে ফোয়ারার মত পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে অটোমেটিক । আমি ফকির শাহর সাথে খেজুর গাছসহ অন্য গাছে পানি ছেড়ে দিই । এখানে বাংলাদেশিরা বিভিন্নজন বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত কিন্তু রাই গানাম (ভেড়া পালক) খুর কম কারণ এই কাজ খুবই কষ্টকর । গভীর মরুভূমিতে ভেড়ার সাথেই তাবুতে থাকতে হয় মালিক দুই/একদিন পর পর খাবার ও পানি দিয়ে আসে আর মালিক না দিয়ে আসলে না খেয়ে পড়ে থাকতে হয় । তবে আমার ভাগ্য ভালো এসতারার (রেস্ট হাউজ ) এর সাথেই ভেড়া রাখা আর এসতারা হতে হেটে রোড়ে এসে দোকান হতে বাজার খরচ করা যায় ।

রেস্ট হাউজ হতে একটু দুরে গানামের সাবক (ভেড়ার ঘর ) চারিদিকে তারের বেড়া দেওয়া । পানির গাড়ি পাশেই রাখা ফকির শাহ গিয়েই পানি ছেড়ে দিল এমনি তৃষ্ণাত্ব কয়েকটা ভেড়া পানি খেতে চলে আসে হোতে (পানির পাত্র )। ফকির বলে আজ আমি সব কাজ করে তোমাকে দিখিয়ে দিবো , কাল হতে তুমি একা একা করবে তাই ভালো করে দেখে নাও। এখন খাদ্য পানি দেওয়া ছাড়া তেমন কাজ নাই কষ্ট হয় এবং কাজ বেশী হয় শীতের দিনে। তখন ৪বাচ্চা দেয় গানাম ,এখানে যেহেতু শীতকালে বৃষ্টি তাই শীত পড়ে বলে গানামের বাচ্চা সহ্য করতে পারে না মরে যায় এই জন্য বার বার দেখতে হয় গানাম। অনেক সময় বাচ্চা দেওয়ার পর পরই পরিস্কার করে দুধ খাওয়াতে হয় তখন এই প্রচণ্ড শীতে একা একা গানাম ধরতে কষ্ট হবে । খুব বিরক্ত লাগবে টকার জন্য এমন নোংরা কাজ সয়ে যেতে হয় । আবার শীত আসে আসে এমন সময় প্রচুর বৃষ্টি হলে মরুভূমিতে ঘাস জন্ম নেয় আর তখন সীমানাহীন মরুভূমিতে সৌদিয়ান গানাম নিয়ে এক স্থান হতে অন্য স্থানে দৌড়াতে থাকে ঘাস খাওয়ানোর জন্য। তখন প্রচণ্ড হাওয়া ও শীতে কষ্ট হয় , মন চায় দেশে চলে যেতে কিন্তু মন চাইলে আর কি যাওয়া যায়। প্রচুর বৃষ্টি হলে ঘাসের সাথে কিছু কিছু অঞ্চলে আলুর মত একটা জিনিস মাটি ফেটে উঠে তাকে পেগা বলে রান্না করে খাওয়া যায় । ভালো করে পরিস্কার করে মাংসের সাথে রান্না করলে খুবই মজা হয় এইটি অত্যন্ত পুষ্টিকর করে সৌদিয়ান খুব পছন্দ করে । তখন গরিব সৌদি মরু অঞ্চলে খুজে বিক্রি করে ভালো পয়সা পায়।

হাফার আল বাতেন কুয়েতের সীমান্ত এলাকা তাই সেখানে কুয়েতিদের বসবাস বেশী। রাফা ,আর আর ইরাকের সীমান্ত । সৌদির সাথে বাহারাইন , কুয়েত , ইরাক , ইরান ,জর্দান এবং ইয়েমেন এর সীমান্ত । জেদ্দা হলো লোহিত মহাসাগরের তীরে যার একপাশে সুদান আর এই জেদ্দা হলো সৌদির সবচেয়ে বড় পর্যটন এলাকা। সাগরের কূল ঘেসে আছে রাজ প্রসাদ যার সুউচ্চ ঝর্ণা কয়েক কিলোমিটার দুর হতে দেখা যায় । হাফার আল বাতেন , রাফা ও আরআর শত শত ইরাকি আছে আশ্রিত যারা মরুভূমিতে তাবু টানিয়ে থাকে এরা ইরাক কুয়েত যুদ্ধের সময় আশ্রয় পেয়েছে। এর হতে কিছু লোক সৌদির নাগরিকত্ব পেয়েছে , যারা সরকারি চাকরী পাবে না দেশ ত্যাগও করতে পারবে না তবে বসবাস করতে পারবে ঘরবাড়ি করে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারবে। অনেক অনেক আগে বিভিন্ন দেশের যারা নাগরিকত্ব পেয়েছে তারা সব সুবিধা পাবে তবে এই সময় নাগরিকত্ব কেউ আর পাচ্ছে না । (চলবে ) ।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
৮ম পর্ব।

এই সব ইরাকবাসীর তাবু আমাদের দেশের যাযাবর এর বস্তির মত । রৌদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে বস্তির কাঠ আর কাপড় জোড়াতালি হাজারের উপরে হয়েছে। হাফার আল বাতেন শহরের অতি দুরে আরআর রোড়ে বিস্তীর্ণ এলাকায় হাজার হাজার বস্তি আছে এসব ইরাকিদের । বয়স পার হওয়া লাখো যুবক যুবতী এসব বস্তিতে বসবাস , দেনমোহরের চাপে পড়ে যৌবনকাল তছনছ তাদের । এরা ইরাকে ফিরে যায় না অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়ে তবে এরা বাহিরে সৌদিয়ানদের মত চলাফেরা করায় চিনা যায় না মরুদ্বিপের নিকৃষ্ট ঘরের বাসিন্দা যে। ছেলেমেয়ে এর বিয়ে শাদি না হলে এইসব ইরাকির কেউ কেউ দুই বউয়ের সংসারও করে । আরবী ভাষার লোকেরা নামাজে সুন্নত আদায় না করলেও চারটা বিয়ের যে সুন্নত আছে তা পালনে কম কসরত করে না । দেখে যেন মনে হয় টাকা আর আইন থাকলে দশটা বিয়ে করতো আর দশ মহিলার গর্ভে দশটা সন্তান জন্ম দিতে চেষ্টা করতো। বিয়ের পর হতে যেত দিন বউ সন্তান জন্মদানে সক্ষম ঠিক তেতদিন প্রতি বছরই সন্তান জন্ম দেয় । তবে আচার্য ব্যাপার হলো এইভাবে সন্তান জন্ম দিলেও আরো বহুকাল পরেও বাংলাদেশের মত এমন ঘনবসতিপূর্ণ হবে না। আগে আরো বেশী বেশী নাগরিক সুবিধা থাকলেও এখনো সরকার সঠিক পরিকল্পনা করে দেশকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। যদিও বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা । এইবার বিশ্ব মহামারী করোনার প্রভাবে সব তছনছ হয়ে গিয়েছে তাই লক্ষ লক্ষ বিদেশী শ্রমিক হ্রাস করবে এবং সৌদিয়ান যেসব কাজ করতে সক্ষম সেইসব পদে তাদের নিয়োগ দিবে। সরকার তেলের উপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টারত তাই কঠোর ধর্মীয় আইন শিথিল করে পর্যটক আকৃষ্ট করতে চাইতেছে । আগে নামাজের সময় সমস্ত কাজ বন্ধ করে দিয়ে রাস্তায় মৌলভিরা পুলিশ সাথে করে গাড়ি নিয়ে টহল দিতো আর হ্যান্ড মাইকে চিৎকার দিতো নামাজ নামাজ করে । কেউ নামাজ না পড়লে রাস্তায় ঘুরলে ধরে নিয়ে যেত নামাজ পড়ার ওয়াদা করিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে ছাড়তো আর এখন সেটা অতীত। বিদেশী শ্রমিকের বাসায় বাসায় মৌলভিরা হানা দিতো জুয়া খেলা আর নীল ছবির ভিডিও ক্যাসেট খোজার জন্য এখন সেটাও অতীত। আকর্ষণীয় জায়গা এবং উদার কালচার বিশ্বে তুলে ধরতে মরিয়া এখন সৌদি আরব।

সাগর তীরে গড়ে তুলবে বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহর নিওম (neom ) ৫০০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে এই শহর গঠে তুলতে। সরকার ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে ভিশন ২০৩০, তবে সব উল্টাপাল্টা করে দিয়েছে বিশ্ব মহামারী করোনা । তারপরও তারা নিজের সম্পদ সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে দেশ পরিচালনায় ব্রত, তবে এই মহামারীর কবলে পড়ে অনেক বিদেশী শ্রমিক চাটাই করবে । আর আমরা দেশে ফেরত গিয়ে হয়তো না খেয়ে না পেয়ে হাহাকার করতে হবে । মধ্যপাচ্যে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে গিয়ে যুদ্ধের পিছনে খরচ করতে হচ্ছে মিলিয়ন মিলিয়ন রিয়াল । বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে অনেক ব্যয় করতে হচ্ছে তারপরও সুষ্ঠুভাবে সমাধান হবে না আরেক কঠোর রাষ্ট ইরানের কারণে। ইয়েমেন সিরীয়া ও ইরাক আজ ধ্বংস মুসলিমদের এই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় আর এই খেলা শুধু ক্ষমতার লোভেই । ইয়ানবু জাজান ইয়েমেনের সীমান্ত এলাকা জাজান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা । মাঝে মাঝে ইয়েমেনের শিয়ারা ( হুতি ) এইসব এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে থাকে যার কারণে ওইসব এলাকার মানুষ আতঙ্কের ভিতর থাকে। তবে সৌদি সাথে ইয়েমেনের সীমানা মহামারীকালীন ছাড়া সবসময় খোলা থাকে সাধারণ নাগরিক ভিসা নিয়ে বাসে চলাফেরা করতে কোন অসুবিধা হয় না । কুয়েত , আবু ধাবি , ওমান , বাহারাইনের নাগরিক এক দেশ হতে অন্যদেশে ভিসাহীন চলাফেরা করতে পারে এমন কি তারা সরকারি আইন মেনে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। তুরস্ক ও মিশরের লোকজন স্থল পথে অনেকে যাতায়াত করে সৌদি আরব হতে তাদের অনেকে শ্রমিক শ্রেণীর।

সব ভেড়া এক জায়গা করে আটকানো রেখে তারপর খাবার দিতে হয় । অনেকগুলি পাত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছে । এর মধ্যে কিছু পাত্রে গম আর কিছু পাত্রে ঘাস রাখে ফকির শাহ। ছোট ছোট বাচ্চা আলাদা করে বাঁধা রাখা হয়েছে যাতে খাবার খেতে অসুবিধা না হয় । খাবার দেওয়া শেষ হওয়ায় আমি ছেড়ে দিই ভেড়ার দল এমনি পাগলা কুকুরের মত দৌড় । একটার উপর একটা পড়ে কার আগে কে যাবে খেতে ! ফকির শাহ ঘাসের পাত্র পাহারা দিয়ে রাখলো আগে গম খেয়ে শেষ করার জন্য গম খাওয়া শেষ হলেই সরে যায় ফকির শাহ। কয়েকটা গানাম গম খেয়ে পানির দিকে ছুটে তবে দেরি করে না দৌড়ে ফিরে ঘাসের পাত্রে । এখন ছোট বাচ্চাও ছেড়ে দেয় দুধ খেতে তাই সব একসাথে । ভেড়ার দৌড়াদৌড়িতে ধুলাবালি উঠতে থাকে তাই গামছা দিয়ে ভালো করে মুখ বেধে নিতে হয়। গরম কালে কখনো কখনো প্রচণ্ডভাবে ধুলাবালি ঝড় হয় আর এইটি এতই জোরে আসে একদম অন্ধকার হয়ে যায় । এই ধুলাবালির কারণে মানুষের এ্যাজমা হয়ে যায় , হাঁচি কাশি হয়ে যায় ।

একটু দুরে কয়েকটা বেওয়ারিশ কুকুর গর্ত হতে উঠে এলো ফকির শাহ পাথর মেরে তাড়াতে গেল। এইসব পরিচয়হীন কুকুর মরুভূমিতে ঘুরে বেড়ায় মরা ছাগল ভেড়ার খোজে। গরম সহ্য করতে না পারলে ভেড়ার পানির পাত্রে এসে ডুব দেয় তবে আমার ভয় রাতে তাবুতে ঢুকে কিনা তা নিয়ে । একটু পরে মাগরিব হবে ছাগল ভেড়া গম ঘাস খেয়ে শান্ত এখন ফকির ফিরে যায় তার কাজে আমিও তাবুতে হারিকেন জ্বালিয়ে দিই । (চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী ।
৯ম পর্ব ।

সব ভেড়া তারের বেড়ার ভিতর ঢুকানো হয় নিরাপদ রাখার জন্য। এখন সৌদিতে চুরি , ডাকাতি ও রাহাজানি হয় বিশেষ করে বাহিরের লোক রাস্তায় একা ফেলে টাকা পয়সা ও মোবাইল চিনতাই করে ক্ষেত্রবিশেষ গায়ে আঘাতও করে । বড় ছোট দোকান কিংবা শপিং মলে মুখোশ পরে ডাকাতি করে । অবশ্যই এখন রাস্তাঘাটে এবং শহরের আানাছে কানাছে সিসিটিভি লাগানো হচ্ছে । দোকানপাটে সিসিটিভি লাগানো ছাড়া এবং লাগানোর প্রমাণপত্র ছাড়া দোকান , ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিস আদালত করার অনুমতি দিচ্ছে না সরকার ।
নাইজেরিয়ান , সোমালিয়ান , ইথোপিয়ান এবং সুদানি ভয়ংকর সব কাজ করে । পাকিস্তানি মাদকের ব্যবসায় জড়িত ব্যাপকভাবে । আগে অনেক পাকিস্তানির শিরোচ্ছেদ করেছে শুধু মাদক ব্যবসার জন্য অবশ্যই অনেক দিন আগে তিন জন বাংলাদেশিও শিরোচ্ছেদ করেছে হত্যার দায়ে । এখানে পুরাতন লোহালক্কড় ও পুরাতন জিনিসপত্রের ব্যবসা করে অনেক বাংলাদেশি কোটি কোটি টাকা রোজগারর করেছে । ২০০৮ সালে রিয়াদে অপটিক ফাইবার চুরিতে ধরা পড়ে বাংলাদেশের লোক তখন হতে এই ব্যবসায় নজরদারি জোরদার করে । ফেনী সোনাগাজীর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবদুর রহিম এই ব্যবসায় জড়িত আছে এখনো এবং উনি একজন সফল ও সৎ ব্যবসায়ী হিসাবে পরিচিত ।

চারিদিকে ঘন কালো অন্ধকার আকাশ চাঁদহীন তারায় ভরপুর । কার্পেটটা বিছিয়ে দিয়ে বিছানা করলাম ঘুমানোর জন্য। গামছা কাঁধে নিয়ে বের হলাম ফকির শাহর কাছে যাওয়ার জন্য ,গোসল করে রাতে খেয়ে একবারে চলে আসবো । মরুভূমিতে এইরকম একা নিঃসঙ্গ নীরব হয়ে দিন মাস বছর পার করতেছে বহু মানুষ শুধু পরিবাবের সুখ সমৃদ্ধ জীবনের জন্য। ঝড় বৃষ্টি ,রৌদ খরা কিংবা শীতের বরফে আমার মত এমন শত শত রাখাল নিজেকে বিলীন করে মা বাপ , ভাই বোন , স্ত্রী ও সন্তানের মুখে অন্ন যোগান দিতে গিয়ে । এইসব রাখালের অাত্ন ত্যাগের মূল্য খুব কমই পায় । কখনো কখনো চরম অপমান অসম্মান , গৃহহীন কিংবা জীবনহানিও ঘটে ।

বাড়িতে টাকা লাগবে ছোট ছেলেটার জ্বর ভালো হচ্ছে না রাতে কাশির জন্য ঘুমাইতে পারে না । তাই শহরে কোন ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে । কিন্তু মাসের মাঝখানে টাকা পাঠাবো কি করে তার উপর আমার আবার নতুন চাকরী । মনটা খুবই খারাপ লাগছে এই মরুভূমিতে কার কাছে টাকা চাইবো শহর এলাকা হলে লোকজনকে বলতে পারতাম কারো কাছে সাহায্য চাইতে পারতাম ।এইখানে ভেড়া আমি আর কলকাতার ফকির শাহ। তার সাথে ভাষার মিল হলেও আছে চিন্তা ও চেতনার অমিল । আর মাত্র দুই/একদিনের পরিচয়ে টাকা চাওয়াও ভালো লাগছে না । মন খারাপ হলে মুখে তা প্রকাশ পায় ফকির শাহ ধরতেে পারলো , মরুভূমিতে ভেড়ার রাখালর কাজে এসেছি বলে মন খারাপ করে আছি সে মনে করে আমিও কিছু বলি না । গোসল করে হালকা হলাম রং চায়ে চুমুক দিয়ে এয়ার কুলার বাতাসে এখন সজীব লাগছে অনেকটা ।

চায়ের কাপ হাতে খেইমায় (তাবুতে) বসলাম দুইজনে ফকির শাহ টেলিভিশনে এমবিসি বলিউড ধরলো অভিষেক অার ঐশ্বরিয়া রাই এর উমরাও ছবি চলছে । আমি রেখার উমরাও অগনিতবার দেখেছি কিন্তু ঐশ্বরিয়া রাই এর উমরাও দেখি নাই । এই ছবির গান “এই আখোকি মাস্তিমে—-” আমার প্রিয় গান সাথে রেখার ক্ল্যাসিক্যাল নাচ । তবে এখন ঐশ্বরিয়ার ছবিটাই আগ্রহপূর্ণ হয়ে দেখলাম । আমাদের দেশে কেন যে এইরকম কালজয়ী ছবি বানাতে পারে না বুঝি না । ছবি শেষ হতেই ফকির শাহ বলে চলো আবুল কালাম খেয়ে নাও তুমি তাবুতে চলে যাও ঘুমাইতে । যদিও আমার ইচ্ছা হচ্ছে না যেতে তবুও যেতে হবে এইটা আমার চাকরী । একটা নতুন সকাল আশা করি প্রতিনিয়ত হয়তো আল্লাহ সেই আশা পূরণও করতে পারে । কাজ যখন নিয়েছি চেষ্টা করি , করে যেতে । (চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১০ম পর্ব।
এই মহামারীতে নিজেকে অসহায় ভাবছেন? একবার ভেবে দেখুন প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছে এই করোনার মধ্যে কত প্রবাসী মারা গেছেন কেউ কি সঠিক হিসাব জানে? একটু ভাবুনতো পরিবারের সবাই বাংলাদেশে আর মাত্র একজনই জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে ছিল।আজ সেই নেই অথবা সেই করোনায় আক্রান্ত! অসহায় কে? আপনি , নাকি নিঃসঙ্গ সেই প্রবাসী। এইসব মনে হলে ভয়ে বুক কাঁপতে থাকে কারণ এক গ্লাস গরম পানি করতে হলেও নিজেকে করতে হবে । নিজেকে নিজে দেখে রাখতে হবে , মনোবল অটুট রাখতে একটু সাহস দেওয়ার আপনজনহীন এই জীবনের নাম প্রবাস ।

যারা অনেক বছর কাজ করেছে তারাও আজ দিশাহারা । যৌথ পরিবারে বোন বিয়ে , ভাইদের লাইন , ঘরবাড়ি দালান করা আস্তে আস্তে মা বাবা বুড়া হয় তাদের ঔষুধ খরচ । এইদিকে নিজেই বুড়া , দুই পা খাড়ায় আর মাঝের …… । তখন বিয়ে করে কোন রকম বাচ্চার বাবা হলেও বউ আইফোন পেয়ে পিরিত করে টাউনে ঘুরে ঘুরে। এর মাঝে ওয়ার্ক পারমিট (ইকামা) কোম্পানি হয়তো করবে না কারণ কোম্পানি দেওলিয়া , সরকারি ফিস বাড়িয়েছে বলেও অনেক কোম্পানি পারমিট করে না হয়ে পড়ে লোক অবৈধ । তবে একসময় এই লোকটাই কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। এই টাকা পরিবার খরচ করলেও বিদেশ হতে দেশেই গিয়েছে টাকাটা তাতে সমাজ দেশ উপকৃত হয়েছে। ৭১ সালে আপময় জনতা জীবনবাজি রেখে শত্রুর সাথে লড়াই করে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ চিনিয়ে এনেছে । আর এখন একদল জনগণ বিদেশে শরীরের ঘাম ঝরিয়ে টাকা রোজগার করে দেশে পাঠিয়ে দেশকে সমৃদ্ধশালী করে লাল সবুজ পতাকার মান ধরে রাখতে চেষ্টা করছে। তাই এরাও যোদ্ধা , রেমিটান্স যোদ্ধা ।

কিছু লোক চাকরী করে , ব্যবসা করে , ২০/২৫ বছর প্রবাস করে আজ ক্লান্ত , দেশে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছে ভাগ্য সহায় ছিলো । এখন এই মহামারীতে বিদেশে মরে লাভ কি, বাঁচলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো মরলেও পরিবার নিয়ে মরবো । এই ভেবে ভয়ে নিজ দেশে গিয়েছে এটা তার অপরাধ নয়। সব লোকের দেশে মরার অধিকার অবশ্যই আছে। নতুন লোক যারা বিদেশ এসেই অবৈধ হয়ে গেল তারা চলে গিয়ে ভালো করেছে তারা এমনিতেই জিন্দা লাশ। হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই হবে ভবিষ্যতে । প্রবাসী কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে এতে পরিবার, দেশ উপকৃত হয়েছে। আমি যেহেতু দেশের নাগরিক আমি দেশে আসবোই , সরকার কিভাবে আমাকে সুরক্ষিত করবে সেটা সরকার ভাববে। আমি দেশের ক্ষতি করি নাই অতএব সরকার আমার ক্ষতি করতে পারেন না।

ইউরোপে মানুষ মধ্যপাচ্যের মত যাইতে পারে না। অনেক টাকার বিনিময় সাগর , পাহাড় , বন- জঙ্গল পার হয়ে তারপর যায়। আপনরা জানেন কত বাংলাদেশী সাগর মহাসাগরে ভেসে গিয়েছে। কত লোক তুর্কী বরফে আর আফ্রিকার জঙ্গলে সলিল সমাধি হয়েছে। এত কষ্ট করে গিয়ে কেউ ফেরত আসতে চাইবে না । আর আমাদের দেশ হতে উন্নত দেশে জীবনমান অনেক অনেক উন্নত। আরাম ছেড়ে দেশে গিয়েছে শুধু পরিবার নিয়ে মরতে এবং বাঁচতে। বৈধ কাগজপত্র না থাকলে চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্টকর। অনেকের ডায়াবেটিস সহ আরো জটিল রোগও আছে তাই দেশে গিয়ে মা কিংবা মেয়ের কোলে মরাই এখন উত্তম। এই জন্য মহামারীর প্রথমে প্রবাসীদের হুমড়ি খেয়ে মাতৃভূমিতে যাওয়া ।

প্রায় ৫০০জন বাঙ্গালী সৌদিতে মারা গিয়েছে। এখন আর অভিবাসী নাগরিকদের পরিচয়ও প্রকাশ করছে না। বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে দাফনও হয়নি বহু লাশের। বাবা মা হারিয়েছে সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে প্রিয় ভাই, ছেলেমেয়ে হারিয়েছে বাবা, আর বউটা হয়েছে বিধাবা। যার লাশ কিংবা কবর স্বপ্নেও আসবে না । এত লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করে প্রবাসী দেশে গেলে বিমান বন্দরে আনসার আসে পাছায় মারতে ।

শুধু বিমান বন্দরে নয় প্রবাসীর সাথে চরম প্রতারণা করে নিজ ভাইবোন ও আত্মীয় স্বজন । সারা জীবনের সঞ্চয়ের যথাযথ হিসাব পায় না এমন কি হিসাব নিতে চাইলে ক্ষত্রবিশেষ মৃত্যুবরণও করে। সারা মাস কিংবা বছর নিজ সন্তানটাই চাপের উপর রাখে বাবা টাকা দাও টাকা দাও বলে। এই চাপের ফলে থাকতে হয় সর্বক্ষণ মানসিক অস্থিরতায় কারণ একজন বাবার কাছে সন্তানের সুখ শান্তিটাই মূর্খ । অথচ সেই সন্তান কখনোই পারে না বাবাকে ফিরিয়ে দিতে শান্তির পরশ। (চলবে )।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১১তম পর্ব।

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকসহ অন্য পেশাজীবিরা ভিসায় উল্লেখিত পেশার বাইরে কোন কাজ করতে পারবে না। বিশেষ করে রাজনীতি, পেশাজীবি বা অরাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবে না। শ্রম ভিসায় গিয়ে বাংলাদেশে খবর পাঠান অভিযোগের প্রমাণ হাজির করে সৌদি পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এক বাক্যে বলেছেন, প্রেস ভিসা ছাড়া অন্য কেউ সৌদিতে সাংবাদিকতা করতে পারবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিধিদের এই বলে সতর্ক করা হয় যে বাংলাদেশ মিশনের কেউ যাতে এসব কর্মে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সমর্থন কিংবা অনুমোদন না দেয়। দৃষ্টি আকর্ষণের পরও যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব কর্মে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রমাণ মিলে তবে, অবশ্যই তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি অবহিত করেছে । ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরণের অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

এরপরও কোন ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের আওতায় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হওয়াসহ দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সৌদি সরকার জানায়, এখানে অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা প্রেস ভিসা ব্যতিরেকে যে সকল বাংলাদেশি নাগরিকগণ সাংবাদিকতা করছেন বা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ।
সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বর্ণিত বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

অধিকাংশ লোক জায়গা বিক্রি করে, ধারদেনা করে কিংবা সুদের হিসাবে টাকা ধার করে বিদেশে আসে, এর মধ্যে সামান্য একটা অংশ বিভিন্ন ব্যাবসা বানিজ্যে এর মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করে যেটা তারা দেশে বসে কল্পনাতেও হিসাব করেনি। এরাই কিছু লোক নিজেকে নেতা পরিচয় দিতে শুরু করেন। অনেক সময় স্থানীয় কোন এমপি বা নেতাকে আমন্ত্রণ করে, হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমপি বা নেতাকে দিয়ে একটা সংগঠন এর নাম ঘোষণা করানো হয় এবং সেই সাথে কিছু পদ পদবিতেও নাম ঘোষনা করা হয় । বিভিন্ন পদে উপনীত ব্যক্তিগণ নেতা হিসাবে পরিচিয় দিয়ে আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করেন। পরবর্তিতে এইসব নেতারাই বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। আমাদের দেশে এই একটি মাত্র পদ আছে যে পদের জন্য কোন যোগ্যতা লাগেনা শুধু মাত্র পাগল না হলেই হলো, সেটা হচ্ছে নেতা। অবশ্য মন্ত্রী, এম পি হতেও যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই। কিছু টিভি চ্যানেল বিদেশে শ্রমিক হিসাবে আসা কিছু লোককে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেয় যাদের ভাষা জ্ঞান তেমন নেই। এরা ভালো বাংলা উচ্চারনে কথা বলতে পারেন না, অবশ্য এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু যখন এদেরকে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেটা বুঝতে পারিনা। যারা সাংবাদিকতা করবেন, লাইভ সম্প্রচার করবেন তারা অবশ্যই উচ্চারণ এবং ভাষাজ্ঞানে সমৃদ্ধ থাকার কথা।

এই দিকে বাংলাদেশের কোন উড়োজাহাজ কুয়েতে ঢুকতে পারছেনা । ইটালীতে অনেক আগে হতে বাংলাদেশী ঢুকতে পারছেনা অথচ হাজার হাজার বাংলাদেশি ইটালীতে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে । বাংলাদেশিরা ইটালীতে করোনা সনদ জালিয়াতি করে খবরের শিরোনাম হয়েছে আমরা সবাই জানি ।এইদিকে জাপানও বলে দিয়েছে বাংলাদেশের লোক ঢুকতে পারবে না । পাপুলের ভিসা জালিয়াতি করায় কুয়েত হয়তো নিরহ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নিতেও পারে। সরকারের দক্ষ কূটনীতিক তৎপরতা চালানো দরকার যাতে শ্রমিক কখনো ফেরত না পাঠায়। সরকার এবং জনগণের বুঝা উচিত অকাতরে প্রবাসী ফেরত গেলে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যা কাটিয়ে উঠা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।

রহমান মাসুম নামে একটা লোক আমেরিকা বসে প্রায় প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ করে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করেন । উনি আবার একটা ফেসবুক গ্রুপও করেছে রেমিটান্স ফাইটার অফ বাংলাদেশ (আরএফবি) নামে । যেখানে প্রবাসীদের এড করে এবং প্রচার করছে উনি নাকি সরকারের পদত্যাগ চায়। এবং সরকার বিরোধী যেসব লোক আছে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছে । আসলে সব হলো মিথ্যা এবং ধান্দাবাজি । আমেরিকার রহমান মাসুম , কাতার প্রবাসী একজন , এসকে মিডিয়ার টিপু চৌধুরী এবং সৌদি প্রবাসী মিনার মাহমুদের ভিতর মতবিরোধ শুরু হওয়ায়। মাসুম তার লোক দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে সৌদিতে মিনারকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় । সে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে ডাক্তারী পেশার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে এবং বিভিন্ন বাংলাদেশী শ্রমিকও এইসব করে ( করোনা নিয়ে এবং মানুষের বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করতো আমিও দেখেছি )। তবে মিনার মাহমুদ একজন ভালো লোক কিন্তু তার এই লাইভ করা সৌদি আইনে নিষিদ্ধ এবং অপরাধ , জানতে পেরেছি সে এখন জেলে ।

যার কারণে সৌদি সরকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে। প্রথম হতে মাসুমের সরকার বিরোধী ফেসবুক লাইভ দেখে আমার মনে হয়েছে লোকটা বাটপার । কোন মতলব নিয়ে সে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় যাতে তার লাভ হয় । প্রিয় প্রবাসী ( রেমিটান্স যোদ্ধা ) ভাইবোন আপনারা এইসব মতলবাজ ধান্দাবাজ কূটচালবাজ এবং অসৎ লোক হতে দুরে থাকুন । বিদেশে বসে দেশে কোন দল সরকারে থাকে তা নিয়ে রাজনীতি না করে আপনি নিরাপদ সুস্থ ও সবল থেকে সৎ পথে রোজগার করে বৈধ পন্থায় টাকা পরিবারের কাছে পাঠান । এতে পরিবার চলবে , সমাজ দেশ উপকৃত হবে। সজাগ থাকুন ধান্দাবাজ আপনাকে ব্যবহার করে যেন উপরে উঠতে না পারে।

মনে রাখবেন আপনি হলেন লাল সবুজ পতাকা , রক্তমাখা মানচিত্র ও জনমদুঃখী মায়ের সন্তান। আপনি কোন এক বোনের প্রিয় স্বামী , আপনি ফুটফুটে বাচ্চা সন্তানের বাবা । মা বা সন্তান ও প্রিয়তমা স্ত্রী অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ কখন তাদের হৃদয়টা ঘরে ফিরবে । মা আদর করে ভাত খাওয়াবে , সন্তান দৌড়ে এসে আপনার কোলে উঠবে , প্রিয়তমা ভালোবাসা চুমার নকশা করবে আপনার কপালে। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
১২তম পর্ব।

মায়া , মমতা ও মানবতা যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে । এই মহামারী শেষ হলে তা হয়তো আরো বেড়ে যাবে । সন্তান বাবার মৃত লাশ হাসপাতালে রেখে চলে যাওয়া আমাদের দেশেরই ঘটনা । তাও আবার পেনশানের টাকা উঠাতে যেন কোন সমস্যা না হয় তার জন্য বাবার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে যায় । মাকে রাতের আধারে গভীর জঙ্গলে রেখে চলে যায় নিজ সন্তান। প্রতিবন্ধী একজন লোককে বাসায় একা ফেলে চলে যায় স্ত্রী ও সন্তান। আর এই সন্তানকে মা পেটে নিয়ে এক একটা হিমালয় পাড়ি দেয় নয় মাসে। সন্তানের প্রস্রাবে ভিজা বিছানায় রাতের পর রাত যাপন করে শীত কিংবা ভরা বর্ষায়ও। আল্লাহ পর মাথা নত করতে হলে মায়েরই তা পাপ্য।

কিছু মা বৃদ্ধা আশ্রমে যাবে একটা নিদিষ্ট সময়ের পর। কিছু মা একা একা বন্ধ বাসায় অন্ধকার রুমে মরে থাকবে। কয়েকদিন পর প্রতিবেশীরা না দেখলে থানায় খবর দিবে । পুলিশ এসে গলিত মার মৃতদেহ বাহির করবে। তখন হয়তো সন্তান ব্যস্ত থাকবে দেশে কিংবা বিদেশে । আজকাল ধর্মীয় অনুশাসন মানুষকে বশ্যতায় রাখতে পারছে না। ধর্ম নিরহ হয়ে ধর্মের জায়গায় পড়ে আছে। আর মানুষ পাখি হয়ে আকাশে উড়ছে । যেমন কোন এরাবিয়ানের চীনে গিয়ে হালাল খাবার খোজ করার মত। অথচ সেই লোক চীন যায় কোন নামকরা কোম্পানির পণ্য নকল করার তদারকিতে। আমরাও এই মহামারীতে কীট হয়ে পলিটিক্স করছি।

বাবা এই সন্তানের সুখের জন্য পৃথিবীর এক পান্ত হতে অন্য পান্তে ছুটে চলছে । কত বাবা যে বরফের পাহাড় এবং ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে আল্লাহ এবং সন্তানের নাম মনে করেছে তার হিসাব কোন দিনই হবে না । কত বাবা যে মধ্যপাচ্যে বর্বর আরবের লাথি আর থাপ্পরে সন্তানের মুখ কল্পনা করে নীরবে চোখের জলে বুক ভিজিয়েছে তার হিসাব কখনো হবে না। করোনায় আক্রান্ত সন্তানকে বাবাই কাঁধে নিয়ে ছুটেছে । আরে একদিন আপনি নিজেই মা হবেন , বাবা হবেন। আর তখন ফিরে পাবেন কর্ম ফল। আল্লাহর কাছে শোকর কিছু লোক বাদ দিয়ে আমরা মা বাবা নিয়ে সুখেই আছি। নেইমা তোমার বিধাতা । সন্তান যদি এমন আচরণ করে তাহলে অন্য লোক কেমন আচরণ করবে। এইতো ভাবতেই পারি না। কারণ করোনা পরিবর্তি বিশ্ব হবে নিজে খাই নিজে বাঁচি।

বাংলাদেশে করোনার প্রভাব হয়তো দীর্ঘ মেয়াদি পড়বে । প্রবাসী যারা করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্যই হোক আর নাড়ীর টানেই হোক দেশে এসে গিয়েছে তারাও বাংলাদেশের বেকার হয়ে গিয়েছে । পাশাপাশি আরো লক্ষ কোটি লোক চাকরি হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করবে এমনিতে কয়েক মিলিয়ন শিক্ষিত বেকার আছে । ওদিকে রোহিঙ্গা তো আছেই । আমরা এই দুর্যোগে অত্যন্ত ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি । তাই আমরা একমাত্র মালিকের কাছেই সবকিছুতে আশ্রয় চাচ্ছি । হে আল্লাহ্‌ তুমি আমাদের করোনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দাও এবং করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ থেকেও রক্ষা করো

টাফ টাইম, অনেক সমস্যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, নতুন বিজনেস আইডিয়া সামনে নিয়ে আসে। এই টাফ টাইমে মুভি দেখে, গেম খেলে সময় নষ্ট না করে, নিজেকে নিয়ে ভাবুন। বিকল্প কি করা যেতে পারে। আপনি কি কি কাজ জানেন? কি কি স্কিল আছে? কোনটা করলে এখন পয়সা পাবেন? ভাবুন , ঠান্ডা মাথায় । আপনার সমস্যার চমৎকার সমাধান বের হবে , আপনি নিজেই সেটা বের করতে পারবেন। হতে পারে, তা অন্যের দেয়া সমাধানের চেয়েও অনেক গুণ ভালো।
যদি কোন সমাধান মাথায় না আসে তাহলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন । জমিতে শাকসবজি করা যেতে পারে । মনে রাখবেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না । এখনি পুকুরে মাছ চাষ করা শুরু করেন । মহিলারা হাঁস মুরগি পালন করা বাড়াতে হবে। তাহলে নিজের প্রয়োজনীয় ডিম এবং মাংসের যোগান হবে। বেশী হলে বিক্রি করা যাবে। বুঝা দরকার সময় খুব খারাপ আসছে সামনে । (চলবে )।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৩তম পর্ব।

পদ্মার যেমন কুল-কিনারা নাই। তেমনি বন্যার্ত মানুষজনের দু:খ-কষ্টেরও কোন কুল-কিনারা নাই। বন্যায় পদ্মার পানিতে নিমজ্জিত শত শত ঘর বাড়ি। এই যেন বিধাতার কঠিন এক পরীক্ষা মহামারী , বন্যা ও ত্যাগের ঈদ । মহামারী কেড়ে নিচ্ছে জীবন আর বন্যা কেড়ে নিচ্ছে জীবন ও বেঁচে থাকা মানুষের রসদ । আবার ঈদ হলো আনন্দের । কিন্তু জীবন ও রসদ হারিয়ে আনন্দ হয় না। পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ মহামারীতে বন্যার জলে সাঁতার কাটছে সেখানে কোরবানির জন্য পশু ক্রয় করা খুবই কষ্ট সাধ্য । এমন বহু পরিবার আছে যে পরিবারে কারো না কারো অসুখ এবং পরিবার গুলি মহামারীর কারণে রোজগারহীন তারা প্রচণ্ড দিশাহারা জীবন নিয়ে।

জীবনকে কখনো কখনো খুব সিরিয়াসলি নিতে হয়। জীবন নদীর মতো বয়ে যায়, একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে, সুখ দুঃখের পালাবদল হয়। জীবন আসলে সফলতা ব্যর্থতার সাতকাহন, কান্না হাসির কবিতা। নানান মানুষ এর নানান কান্ড! ভালো খারাপ এর ঝালমুড়ি ,আর এটা মেশানোর উপাদানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে জীবনের ভালো কিংবা মন্দ। তাতে জীবনের কিছু যায় আসে না, জীবন তার নিজের নিয়মে বয়ে যায়। নদী যেমন একসময় সাগর মহাসাগরে মিশে জীবনও তেমনি একদিন শেষ হয় বা আরো বড় করে শুরু হয় মহাকালের মহাস্রোতে। তাই জীবনকে বয়ে যেতে দিন । তবে হ্যাঁ নিজের মন ভালো রাখতে চেষ্টা করতে হবে, পরিস্কার রাখতে হবে, কারো উপকার করতে না পারলেও সমস্যা নাই কিন্তু জেনেশুনে আপনার দ্বারা যেন কারো কোন ক্ষতি না হয়। মহাকালের জীবনে গিয়ে হয়তো আপনাকে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হতে পারে আপনার জীবনের ভালো খারাপের হিসাবপত্র নিয়ে । তাই জীবনকে সেই মোতাবেক সাজিয়ে তুলতে হবে।

ঈদের খুশির মাঝে , মহামারী ও বন্যা। কোরবানের শাব্দিক অর্থ হল- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া। পারিভাষিক অর্থে ‘কোরবানি’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ, কোরবানির মূল দীক্ষাই হল আল্লাহর সকল হুকুমের প্রতি পূর্ণ আত্মসমার্পণ করা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আঃ) নিজ প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কোরবানিকে কবুল করে নেন, এ ঘটনা আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই কোরবানিতে মানুষের জন্য অসংখ্য শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে।

কোরবানি অন্যতম শিক্ষা হলো দরিদ্র ও অনাথের সুখ দুঃখে ভাগিদার হওয়া । নামাজে ধনী দরিদ্রের সহাবস্থান এবং কোরবানির মাংস গরিবের মাঝে বিলীয়ে দেওয়ার ইসলামী নির্দেশ তা প্রমাণ করে। মাংস বিলীয়ে দেওয়ার আদেশ এই প্রমাণ করে যে ধনীদের সম্পদে অসহায়দের অধিকার আছে। কোরবানি মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব না বলে একে শুদ্ধ জীবন গঠনের অনুশীলন বলা উচিত। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করি। তাওহীদ , একনিষ্ঠতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এইটা। দরিদ্র জনগণের দুঃখের ভাগীদার হয়ে আল্লাহের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির লক্ষ্য হওয়া উচিত । কোনরকম নিজেকে জাহির করা কিংবা ফায়দা হাসিল এর মনোভাব স্থান লাভ করতে পারবে না । পবিত্র কোরানের সুরা আল -আমের ১৬২ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেছেন ‘বলুন হে নবী (সাঃ) আমার সালাত আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মৃত্যু , শুধুমাত্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিনের জন্যই” ।

করোনা কালে খাদ্য এবং চিকিৎসার জন্য যেভাবে হাহাকার দেখা গিয়েছে বন্যাতেও দেখা যাবে। রাষ্টের উচিত ঘুষখোর , চাঁদাবাজ , দুর্নীতিবাজ , মানব পাচারকারি ও জুয়াড়ি হতে জনগণের সম্পদ উদ্ধার করে দুঃস্থ মানুষের মাঝে বিলীয়ে দেওয়া।

মুখ ডুবিযে খাওয়া লোকেরা দেশটার রস খেয়ে ঈদে খাবে বড় বড় গরু , তাদের জন্য প্রতিদিনই ঈদ। কিন্তু আজ এই ঈদ মহামারী ও বন্যার মাঝে খাওয়ার জন্য নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানোর জন্য ও একটু আশ্রয়স্থলের জন্য যারা সংগ্রামে লিপ্ত তাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষার ঈদ । ঈদ আসলে এখনো সাম্য আনতে পারেনি বৈষম্যও কমাতে পারিনি কিন্তু নেতারা ভাষণ দিবেন সাম্যের। সুদখোর, ঘুষখোর , চাঁদাবাজ , দুর্নীতিবাজ , মানব পাচারকারি ও জুয়াড়িরা আজ টাকা দেশে আলমারি ভর্তি করে আবার বিদেশে পাচার করেছে । সিঙ্গাপুর মালেশিয়া যেমন বাড়ি করেছে ব্যবসা পেতেছে তেমনি কানাডা আমেরিকাসহ ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশেও তাই করেছে। এই মহামারীতে এই বন্যায় এইসব মানুষ কতটুকু সাহায্যে এগিয়ে এসেছে , মোটেও আসেনি। এসেছে সৎ মানবিক দরদি লোকেরা । কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা এগিয়ে আসেনি তারাই নামের সাথে জনদরদি ও সমাজসেবক লিখে কিংবা লিখবে ভোটের সময় ও অন্য সময়।

কিছু কিছু এলাকায় কোরবানি আসলে মেয়ে পক্ষ থেকে জামাই বাড়িতে গরু ছাগল পাঠাইতে হয় । এই মহামারী সময় এইটা বন্ধ করা দরকার । এইসব নিয়মের ফলে প্রায় মেয়ের পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়। অনেক এলাকায় মেয়ের বিয়ের সময় একবার কষ্ট করে দিয়ে দেয় যেটা যৌতুকই। ঈদ আসলে আমরা আনন্দিত হই, আরেক পক্ষ আতঙ্কিত হয়।

বন্ধ করা দরকার এইসব লজ্জাজনক কাজ। কোরবানি ওয়াজিব হলে নিজের টাকায় পশু খরিদ করে আল্লাহর নামে কোরবানি করতে হবে। পাড়া প্রতিবেশী , আত্মীয় স্বজন ,গরিব দুঃস্থ , এতিম ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাধ্যমত খোঁজ খবর রাখতে চেষ্টা করতে হবে। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৪তম পর্ব।

আগষ্ট মাসের ১৪/১৫ তারিখ হতে গরম কমতে শুরু করে , আগে যেখানে ৪৫/৪৬ ডিগ্রী তাপমাত্রা পড়তো আর এখন ৪২/৪৩ ডিগ্রী পড়ে। রাত বাড়তে থাকে আর দিন ছোট হতে থাকে। তবে এখনো রোদের আলো এতই প্রকট যে কালো চশমা পরাই ভালো । দোকান হতে দশ রিয়েল (দুইশ বাইশ টাকা সাইত্রিশ পয়সা) দিয়ে একটা কালো চশমা কিনতে হয়েছে আমার। কালো চশমা চোখে দিলে বেবী নাজনীনের “ হেই যুবক” গান মনে পড়ে। তবে মন খারাপ হলে ফরিদা ইয়াসমিনের লালন গীতি শুনি । কয়েক মাস রাতে ৩,১৩ মিনিটে ফজর নামাজের আযান দিতো। তখনি উঠে যেতাম আমি নামাজ পড়েতে পড়তেই সকাল হতো । কাজ সব শেষ করতে করতে সকাল আটটা বেজে যায় তারপরই যেতাম ফকির শাহর কাছে নাস্তা করতে। এরপর আর কোন কাজই থাকে না ফকির শাহর সাথে বসে টেলিভিশনে ছবি দেখে সময় পার করতে হয়। সেই আবার আছর নামাজের পড়ে ভেড়ার পালের তদারকি করতে হয় ৬,৩৫ মিনিটে মাগরিব নামাজের আযান পর্যন্ত । প্রচণ্ড গরমে এই রুটিন মেনে কাজ করে অদ্যাবধি চালু রাখছি। রমজানের ঈদ কিংবা কোরবানির ঈদ কোনটাতেই ব্যতিক্রম হয়নি কাজের । ভেড়ার খাবার ও পানি দেওয়া ব্যতিক্রম করাও সম্ভব না। তাই ঈদের নামাজ ও আনন্দ মরুভূমিতে কল্পনা করা যায় না। জীবনের কাজ বহমান হওয়া , নদীতে পড়া নদী হতে সাগর কিংবা মহাসাগরে তারপর বিলীন হয়ে যাওয়া।

এমন টালমাটাল জীবনকে সুখী করতে এবং নিজ জীবনে পাশে আরো কিছু জীবনকে সুখ দিতেই এই নিরন্তর ছুটে চলা। গ্রাম্য প্রবাদ “ নিজের পেট নিজেই পালতে পারি” যদিও কথাটা শতভাগ সত্য । কিন্তু এতে জীবনের সার্থকতা নাই ,এতে জীবনের গভীরতা নাই। প্রত্যেক মানব জীবনের একটা দায়বদ্ধতা আছে আর সেটা পরিবার এবং সমাজের প্রতি। তবে কিছু কিছু মানুষ প্রবাসে এসেও এইটা ভুলে যায় , সৌদি আরবে অনেক প্রবাসী আছে যারা জুয়া খেলায় মত্ত আর থাই লটারিতে মগ্ন। লটারির নেশায় পড়ে এরা খাওয়ার টাকার জন্য ধার করতে হাত পাতে । হয়তো ভাগ্য জোরে বছরে একবার পেলে তার লোভে চাকরী করে সব টাকা লটারিতে বিনিয়োগ করে আর দেশে বউ বাচ্চা ভাতে মরে । কেউ কেউ আবার কাজ করে না ধার দেনা করে চলে খায় আর ঘুমায় এবং বন্ধু বান্ধব নিয়ে সৌখিনতা বজায় চলে। কিন্তু এরা লটারি খেলতে অভ্যস্ত নয়। এই দুই ধরনের লোকের কেউ বাড়ির খোজ খবর নেয় না এবং টাকা পয়সাও দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না ।

অথচ এদের অনেকে বাবার শেষ সম্বল বিক্রি করে বিদেশ আসে , এসে মোটা তাজা হলে সেই বাবার আর খোজ নিতে চায় না। মা বাবা কষ্টে থাকে অসুখ বিসুখে । কিছু লোকতো নিজের স্ত্রী সন্তানেরও খোজ নিতে চায় না তবে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বেশীর ভাগ লোক রোজগার করে নিজের বউ বাচ্চার কাছে কিংবা আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এমন অনেক আছে এই টাকার হিসাব নিতে গিয়ে সে লাঞ্ছনা গঞ্জনার স্বীকার হয় চরমভাবে । দুই একটা ঘটনা এমনও আছে সন্তান ও স্ত্রী মিলে লোকটাকে টাকার হিসাব না দেওয়ার জন্য হত্যা করেছে। ভাই বোনও টাকার হিসাব না দিয়ে প্রতারণা করে । এতে বুঝা যায় একজন প্রবাসী কতটা যন্ত্রণা বুকে ধারণ করে পরিবারকে সকল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়।

অনেক প্রবাসী পারিবারিক কলহে পড়ে মানসিক যন্ত্রণায় দিশেহারা থাকে এবং হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু বরণও করে। প্রতিদিন না হলেও প্রতিমাসে রোড় অ্যাক্সিডেন্ট করে মরে অভাগা প্রবাসী । যার সব খবর দেশের জনগণ জানতেও পারে না । মরে যাওয়া প্রবাসীর লাশ খুব কম সংখ্যক দেশে আসে কিছু লাশ দাফন হয় বাকি পড়ে থাকে হাসপাতালের ডিপ ফ্রিজে। একটা লাশ দেশে আনতে নিজস্ব লোকের প্রয়োজন হয় তাহাছাড়া লাগে টাকা পয়সা যা অনেকেরই থাকেে না। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৫তম পর্ব।

কোন লোক মারা গেলে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য দেশ হতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ঠিক করে আনতে হয় যা আবার রিয়াদে বাংলাদশ দূতাবাস যাচাই করে সৌদি আরবে যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে দিতে হয় । তারপর লাশ দেশে পাঠানোর অনুমতি মিলে। লাশ দেশে পাঠাতেও অনেক টাকা পয়সার দরকার হয়। যা কোন কোন লোকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে । সৌদি মালিক বড় কোম্পানি হলে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায় । ক্ষুদ্র ব্যবসায় হলে কিংবা সৌদিয়ানের বাসা বাড়ির ব্যক্তিগত লেবার মারা গেলে কিছু কিছু সৌদিয়ান খোজও নিতে চায় না টাকা দেওয়ার ভয়ে। আবার কিছু কিছু সৌদিয়ান অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে , এমনকি আত্মীয় স্বজন হতে টাকা পয়সা নিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য পাঠায়। আইনি জটিলতা কিংবা টাকা পয়সার জটিলতায় পড়ে অসংখ্য লাশ মাসের পর মাস বছরের পর বছর হাসপাতালের ফ্রীজে পড়ে আছে । অথচ মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা জানে না লাশের দাফন হলো কিনা । তাই বলবো পরিবার হতে মানসিক অশান্তি নয় শান্তির কথা শুনাবেন প্রবাসীকে। পারিবারিক কলহের রোষানলে পড়ে অনেক প্রবাসী হার্ট এ্যাটাকের কবলে পড়ে , আত্মা হত্যা করতে বাধ্য হয়।

প্রতি মাসে যানবাহনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় কোন না কোন প্রবাসী। বিদ্যুৎ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এবং রান্না করার গ্যাস সিলিণ্ডারে দুর্ঘটনায় আগুন লেগে প্রাণ হারায়। যার হিসাব দেশের কেউ রাখে না , যার হারায় সে হিসাব রাখে সে বুঝে নির্মম বেদনা । দেখেছিলাম রাস্তায় সৌদি কিশোরদের অমানবিক আচরণ কত নির্দয় হতে পারে । দিনের আনুমানিক বারটা কিংবা একটা হবে আমি রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় দাঁড়ানো ট্যাক্সি এর জন্য । একজন সাইকেল চালিয়ে কাজ শেষ করে বাসায় যাচ্ছে ট্যাফিক ইশারা নীল বাতি জ্বলার সাথে সাথে একটা গাড়ি সাইকেলের পিছনে ধাক্কা মারে । গাড়ির ভিতর কয়েকজন কিশোর হা হা হা করে হেসে উঠে বিচ্ছিরি আওয়াজ করে আমি রাস্তার অপর পান্তে দাড়িয়ে অসহায় চোখে দেখছি । সাইকেল হতে ছিটকে পড়ে লোকটা চটপট করতে লাগলো আমি গাড়ির জন্য রাস্তা পার হতে পারছি না । ট্যাফিক মোড় বলে কোন গাড়ি থামতেও পারছে না তবুও দুই একটা দুরে গিয়ে দাড়িয়ে ছুটে আসলো ততক্ষণে লোকটির নিঃশ্বাস বন্ধ আর কিশোর দল লাপাত্তা । রাস্তায় পড়ে রইলো প্রবাসী , রাস্তায় পড়ে রইলো সবুজ পাসপোর্ট , রাস্তায় পড়ে রইলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা আমি ছুটে গেলাম কাজের গোড়ায় । জীবন বীমা এবং পুলিশ এসে তদন্ত করে লাশ নিয়ে যাবে কোন এক হাসপাতালের লাশের ঘরে।

এইতো কিছু দিন আগের ঘটনা আগুনে পুড়ে মরলো চৌদ্দগ্রাম উপজেলা চিওড়ার এক বিশ বছরের যুবক । ছেলেটির বাবা একটা হত্যা মামলায় যাবতজীবন সাজাপাপ্ত আসামি , ছেলেটি বুঝ হওয়ার পর হতে বাবা জেলে। বড় দুই বোন নিয়ে মা চাচার ঘরে থাকে । চাচী যেমনই হোক চাচা খুবই ভালো মানুষ তাই ছেলেটার দুই বোন বিয়ে দিয়েছে এবং ছেলেটাকে সৌদি আরব পাঠায় । যদিও মাকে চাচার ঘরের যাবতীয় কাজ করে খেতে হয় । সংসারে অশান্তি হবে বলে চাচা চুপ থাকে এবং চাচীর অজান্তেই ছেলেটিকে ভিসা দেয়। আশা ছিল টাকা পয়সা রোজগার হলে আর মাকে এমন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে না চাচীর বকাঝকার ভিতর। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরে সোনালি হওয়ার আগেই থেমে যায় , ছেলেটি সৌদি আরব এসে এক বছরের ভিতরই লাল আভার আগুনের কবলে পড়ে ভাগ্যের নির্মম আচরণে পরাজিত হতে হয় তাকে। রান্না ঘরের গ্যাস সিলিণ্ডার হতে আগুন গেলে এক চরম দুঃখী মায়ের পরম ধন পুড়ে যায় । হাসপাতালের নিবিড় সেবা কেন্দ্রে ২০/২৫ পড়ে থেকে দম চলে যায় আকাশে ।

ছেলেটির পুরো শরীর পুড়ে যায় , যেতদিন হাসপাতালে ছিল চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখতে পায়নি।
এই প্রবাসে কে দেখার আছে এমন সীমাহীন কষ্টের সময় , কে দিবে এক ফোটা জল এই হতভাগা পুড়ে যাওয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে । আশেপাশে পরিচিত লোকজন থাকলে তাদের ছুটির দিনে হয়তো দেখতে যায় একবার কিন্তু অভাগা মার সন্তান চোখ খোলে দেখতেও পায়নি এইসব স্বজনদের। মরণ আজ না কাল সবার হবে কিন্তু এমন মায়ের সন্তান যদি বিদেশে মরে তাকে শুভ্র শ্বেত মরণ বলা যায় না । বিয়ের পর অভাবের সংসার পেলেও মা দুঃখী হয় না কিন্তু যখন স্বামী হাতে পায়ে বাচ্চার ভার দিয়ে চলে যায় তখন সেই মা চোখে সাগর মহাসাগর দেখে। এমন হাজারো স্বামীহীন মা আছে সন্তানের মুখ দেখে চুপ হয়ে ঘানি টানে। আর যখন সন্তান বড় হয়ে সুখের নীল রং জড়ানোর আগেই দুঃখের সাগরে ডুবে যায়। পুড়ে যাওয়া ছেলেটির চাচা এলাকার লোকজনকে ফোন দিয়ে টাকা ধার করে লোক ধরে লাশ দেশে নিয়ে আসে । সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য বাবাও সাময়িক মুক্তি নিয়ে বাড়িতে আসে । মা বাবা ভাই বোন সবাই একসাথে হয় কিন্তু একমাত্র প্রবাসী ছেলেটি সাদা কাপড়ে মুড়ানো নির্জীব বস্তুতে খাটে শোয়ানো বাক্যহীন ভাবে। মানবিক উদার চাচা লোকটি ঘরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে নির্বাক হয়ে ফেল ফেল চোখে সব অবলোকন করে । হঠাৎ আকাশপানে চেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বাবা, হাতে হ্যান্ডক্যাফ চারিদিকে পুলিশ পাহারায়। মা ও দুই বোন নীরব হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মরে গেলে সবাই ভুলে যায় চার দিন অথবা দশ দিন কাঁদে ও হতাশ্বাস ছাড়ে। আমার মনে হয় না এই মা এই বোনেরা ভুলে যাবে এই দয়াবান চাচা চিন্তিত থাকবে কেমন করে দেখাশোনা করবে ভাইয়ের বউ ও মেয়েদের।

প্রবাসে এমন অহরহ ঘটনা গড়ে। অনেকের পারিবারিক অশান্তি থাকে বছরের পর বছর পরিবারে কেউ কাউকে মানতে চায় না । প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে শাশুড়ী এবং দেবর ননদের ঝগড়া লেগেই থাকে মাঝখানে প্রবাসী লোকটাই মানসিক চিন্তায় আস্তে আস্তে অসুস্থ হতে থাকে । কোন কোন পরিবারে ছেলের বউকে একদম আপন মানতে চায় না শাশুড়ী আর এতে কলকাঠি নাড়ে অন্যরা । আবার কোন কোন প্রবাসীর স্ত্রীর এত লোভী এবং একরোখা পড়ে যে নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে শান্তিময় ঘরে বাস করবে তা একদম করে না। সত্য মিথ্যা বলে নিজের স্বামীকে বুঝিয়ে পরিবার হতে আলাদা করে ফেলে ফলস্বরূপ ভেঙ্গে যায় যৌথ পরিবার। আবার কোন কোন প্রবাসী অসৎ স্ত্রী নিয়ে থাকে চরম বিপদে। সভ্যতার আমূল পরিবর্তনে মানুষের মন এখন বহুগামী এবং ব্যক্তি কেন্দ্রিক নতুন কিছুতে সুখ খোজ করতে চায় এতে প্রবাসী লোকটা পড়ে চরম বিপাকে। সব বুঝে শুনেও মান সম্মান এবং স্ত্রীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে চুপ করে সব সহ্য করে। আবার এইসব অনেকে সহ্য করতে পারে না তাই ত্যাগ করতে হয় নিজের জীবনের ভালো লাগা কিছু। আবার অনেক প্রবাসীর বউ চালাকি করে সব গোপন রেখে একদিন পালিয়ে যায় কোন এক ছেলের হাত ধরে সাথে নিয়ে যায় প্রবাসীর ঘাম ঝরানো কষ্টাজিত টাকা পয়সা লোকটা হারায় সুখ নামক পায়রাটা । (চলবে)।

বিলিয়ে দাও ভালোবাসা

দিনে দিনে এ করোনার এখন
আমাদের সাথেই উঠবস
রেখো মনে জোর
তবেই সে পালাবে
আর তুমি হবেনা সর্বনাশ।

পরীক্ষা যদি করো,জনে
জনে সব দেখবে পজিটিভ তবে
ভয় পাও কেন, আসলে তো জানো
রিপোর্ট টাই নেগেটিভ।

রিজেন্ট জেকেজি নাম না জানা
আরো কত কি, চিটার বাটপার
পকেট কাটায় বেশুমার।

ভালোবাসার কবিতা লিখে যাও তুমি
ভালোবাসা বিলিয়ে রও ভালো
প্রিয়ার মননে সুখে খুশি হও
ভালোবাসায় বাঁচো বারো মাস।

১৬ —০৭—২০২০

করোনায় একজন প্রবাসী (৫ম পর্ব)

কালেমা লিখা, তলোয়ার এবং খেজুর গাছ খচিত পতাকা দেয়ালে সাঁটানো। সবাই ভক্তি শ্রদ্ধা করে পতাকাকে এইটাই নিয়ম। কিন্তু এদের মত এমন করে ঘরে সাঁটানো রাখে না। সরকার যা বলে তা সৌদি জনগণ শুনে। কারণ জনগণের চাহিদা সরকার মিটিয়ে থাকে। আগে রাজা মারা গেলে রাজার বয়সে ছোট ভাই রাজা হয়ে ক্ষমতা প্রদান হতেন। এখন রাজতন্ত্রের এইদেশে রাজা মরলে উনার ছেলেই রাজা হবে। আমাদের দেশের রাজনীতির হাওয়া লেগেছে কিছুটা। বুঝে নিবেন, বেশী বলা যাবে না। বিখ্যাত সাংবাদিক জামাল খাশোগী বেশী বলতে গিয়ে লাশও পায়নি। পালিয়ে থাকা খাশোগীকে তুরস্কে হত্যা করে লাশ পর্যন্ত পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এমন কি নিজের পরিবারের অনেক জনকে জেল জুলুম দিয়ে এবং দুই/একজনকে মেরে সিংহাসনে বসার পথ পরিস্কার এখন রাজার বড় ছেলের। তবে জনগণের এইসব নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সিংহাসনে কে বসলো তা নিয়ে তাদের কোন কিছু আসে যায় না। দুর্নীতি দমনের নামে রাজার ছেলের প্রতিদ্বন্দ্বী নিজ পরিবার লোকজন কিংবা সন্দেহভাজন বড় বড় কর্মকর্তাকে জেল জুলুম দিয়ে প্রচণ্ড হেনস্থা করা হয়েছে। তবে বাদশাহ ফয়সাল, খালেদ কিংবা আবদুল্লাহর শাসন আমলে বাহিরের লোক সবদিকে ভালো ছিল। ইকামার ফিস কম ছিল, কাজের চাহিদা ছিল। তাদের আমলে শুধু ধর্মীয় কঠোর বিধান মেনে চলতে হয়েছে। সীমান্তবর্তী সব দেশের সাথে মোটামুটি সদ্ভাব ছিল। আর আজ ইয়েমেন ও সিরীয়া যুদ্ধে জড়িত সৌদি। মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো শিয়া এবং সুন্নি মতবাদ অথচ উভয় মুসলিম। আর মুসলিম হয়ে শিয়া সুন্নির প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত ইরান এবং সৌদি। হত্যা করছে লাখ লাখ নিরীহ মানুষ কে। ইরান শিয়াদের দেশ আর সৌদি সুন্নি। ফিলিস্তিনে হাজারও মুসলিম হত্যা করছে ঈজরাইল নামক সার্বভৌমত্বহীন একটা ইহুদী রাষ্ট্র। অথচ মুসলিমদের তীর্থস্থান চুপ। কাতারের সাথে চলছে অর্থনৈতিক অবরোধ। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহারাইন কুয়েত এবং মিশর মিলে কাতারকে করে এক ঘরে। আর তখন তুরস্ক এগিয়ে আসে কাতারের পাশে। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি জিনিস যেমন রান্না ঘর হতে বাথরুম পর্যন্ত, এমনকি জীবন ধারণের যা প্রয়োজন তা সরবরাহ নিশ্চিত করে তুরস্ক। এই অপরিপক্ব রেষারেষিতে কাতার হল স্বাবলম্বী। দুর্ভিক্ষ অনাহার এবং বোমার আঘাতে রোজ রোজ সিরীয়া এবং ইয়েমেনে শিশু মহিলা পুরুষ অকাতরে মরতেছে। মুলত ইগো ক্ষমতার বলয় বিস্তারে আমেরিকার পদলেহনে এইসব পাপে লিপ্ত মক্কা মদিনার মালিক।

অথচ আমরা কাঁদি রোহিঙ্গা মুসলিম বলে। আমরা কাঁদি দিল্লী এবং কাশ্মীরের মানুষ মুসলিম বলে। আর আমাদের দেশের শাসকের চেয়ার পাকা পোক্ত হয় দিল্লীর অমুসলিমদের ইশারায়। ওরে বাবা! কি আজব পলিট্রিক্স। মধ্যপাচ্যে ক্ষমতার পালা বদল হয় আমেরিকা ইচ্ছাতে। পৃথিবীর সবচেয়ে শৃঙ্খলাপূর্ণ রেশন ব্যবস্থা ছিল ইরাকে। সেটা আজ অতীত আমেরিকার চালে। পৃথিবীতে সবচেয়ে শক্তিশালী টিভি চ্যানেল ইহুদীদের। সবচেয়ে বড় প্রসাধনী কোম্পানি ইহুদীদের। সবচেয়ে বড় পানীয় কোম্পানি ইহুদীদের। অথচ কুয়েত পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী টাকার মানধারী মুসলিম রাষ্ট্র। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী তেল উত্তোলন হয় সৌদিতে। সৌদি আরব, বাহারাইন, আরব আমিরাত, ওমান, কুয়েত এবং কাতার ইচ্ছে করলে পুরা দুনিয়ায় নির্যাতিত মুসলিমদের পাশে দাঁড়াতে পারে। অথচ তারা নিজের পাশের দেশে যুদ্ধে লিপ্ত। এইসব দেশ একজোট হলে ফিলিস্তিন একের একের জায়গা হারাতে হতো না। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র পেত মুসলিম জনগণ। আর এখন যাযাবর একটি জাতি গলা চেপে ধরেছে মুসলমানদের। এর পিছনে আছে এইসব রাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ ইন্ধন। একদিনে এই ঈসরাইল দানবে পরিনত হয়নি। আজকে তারা শিক্ষা দীক্ষা, জ্ঞান গরিমায়, বিজ্ঞান এবং আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত এক বিশাল মহীরুহ। পুরা দুনিয়ার ইহুদী ঈসরাইলকে টাকা পয়সা দিয়ে প্রথম হতে সাহায্য করেছে। স্কুল কলেজ গড়ে তুলেছে যাতে তারা শিক্ষিত হয়ে দেশ গঠনে মনোযোগ দেয়। ঈসরাইলের সেনাবাহিনীতে নারীরাও পৃথিবীর সেরা সৈনিক। রাস্তা ঘাট এবং আধুনিক স্থাপত্য ও গবেষণা দুনিয়ার মানুষকে অবাক করবে। ইয়েমেন এবং সিরীয়ায় যুদ্ধের কারণে শত শত শিশু দুধের অভাবে মরছে। অবরোধ চলছে ইয়েমেন সিরীয়া ইরান কাতারে এই সৌদি আরবের তত্বাবধানে। আমি আপনি কাশ্মীর কিংবা রোহিঙ্গা নিয়ে চোখের জল হাস্যকর তেমনি মুসলিমদের রক্তে স্নান করা সৌদি কালেমা খচিত পতাকা দেয়ালে সাঁটানোও হাস্যকর। ছোট ছোট শিশু শিয়া নয়, সুন্নি নয়, ইহুদী কিংবা মুসলিম নয়। কাশ্মীর রোহিঙ্গা ও ফিলিস্তিন তোমরা মানব সন্তান। প্রতিবাদ হোক লাল রক্তের সাগরে টেউ বন্ধে। প্রতিবাদ হোক গরিব মিসকিন ও ভূমিহীন মানব পাচারের। বিশ্ব হোক এক পাসপোর্টের। বিচার হোক যারা বাংলাদেশের পাসপোর্টকে কলুষিত করে মানহীন করছে।

ফকির শাহ দেওয়ানিয়া হতে বাহির হয়। দুপুর একটার উপরে বাজে আমি মনে করেছি ভাত খেতে যাবে ফকির শাহ। তা না গিয়ে পানির পাইপ হাতে নিয়ে দুর্বা ঘাসে পানি দিচ্ছে। দেয়ালের পাশে একটা আঙ্গুর এবং একটা ডালিম গাছ আছে। রৌদে আঙ্গুর গাছের পাতা মরে গিয়েছে। কয়েকটা ডালিম আছে গাছে। ফকির শাহ গাছগুলিতে পানি দিয়ে দেয়। খেইমা (তাবু) যেতেই আমি বলি ভাই চলো খেতে যাই। ফকির শাহ স্মিত মুখ করে। এটাও আড্ডাখানা তবে বাড়তি হলো হুক্কা পানের জায়গা। বার-বি কিউ করার সরঞ্জামও পড়ে আছে। এরা মাছ মাংস পুড়ে খায়। গভীর মরুভূমি হতে পাখি শিকার করে পুড়ে খায়। গরম কালে খুবই কম দিনে আড্ডা দেয়। রাতভর চলে পরিবার নিয়ে আড্ডাবাজি আর শুক্রবার আসলেতো রাস্তা ঘাট, খাওয়ার হোটেল, এটিএম বুথ থাকে জ্যামে পরিপূর্ণ। তবে করোনায় সব ওলোট পালট করেছে দিয়েছে। তিনশত জনের উপরে বাংলাদেশী মারা গিয়েছে। তের জুলাই পর্যন্ত করোনা রোগী সনাক্ত হয়েছে দুই লাখ তেত্রিশ হাজার তিনশত ঊনষাট জন। সর্বমোট মারা গিয়েছে দুই হাজার দুইশত বাইশ জন (বাহিরের লোকসহ)। আক্রান্তের দিক থেকে সৌদি আরব চৌদ্দ নম্বরে। এক নম্বরে আমেরিকা, একশ তিরাশি নম্বরে (সব শেষ) পাপুয়া নিউ গিনি ও ওয়েস্টিন সাহারা। প্রতি গরম কালে তিন মাস সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রীষ্মকাল এর ছুটি থাকে। এর ফলে সৌদিয়ানদের বেড়ানো বেড়ে যেত। বেড়ে যেত ব্যবসা বাণিজ্য কমে যেত অফিস আদালতের কাজ।

(চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী (৪র্থ পর্ব)

জেসমিন রিয়াদ হতে আটশ কিলোমিটার দূরে গ্রাম এলাকায় এক হাসপাতালের আয়া। বাপ মরা মেয়েটা সৌদি আসে মা এবং অন্যান্যদের সুখের আশায়। ভালোই দিন যেতে লাগল। ওই যে বলে না “সুখে থাকলে ভূতে কিলায়” জেসমিনের বেলায়ও তাই হলো। পরিচয় গাঢ় হলো তারই কলিগ কুমিল্লা নিবাসী এক ছেলের সাথে। তারপর আর কি – প্রেম ফিরিত অবশেষে বিয়ে। মৌলভীর মুখে মুখে কলমা পড়ে কবুল বললেই শুধু বিয়ে হয়না। বিয়ে প্রমাণের জন্য লিখিত কাগজপত্র লাগে। বিয়ে নামক খেলা খেলতে গিয়ে একত্রে বসবাস শুরু করে জেসমিনেরা। এমনি এক পর্যায় জেসমিনকে অবৈধ সেক্স করার দায় পুলিশ হাসপাতাল হতে গ্রেফতার করে। হয়তো কেউ তাদের তথ্য পুলিশকে দিয়েছে ! এখানে আবার বাংলাদেশীদের রাজনীতি ও রেষারেষির শেষ নাই। জেসমিন ধরা পড়ার পর পরই গা ঢাকা দেয় জেসমিনের স্বামী। স্বামীর বড় ভাই পরিচয় দিত না ভয়ে। তবে নিরক্ষর জেসমিন কাবিন ছাড়া বিয়ে হয় না, ছেলেটা যে তাকে প্রতারিত করেছে চৌদ্দ মাস জেলে থেকে তারপর বুঝতে পারে। জেসমিন যখন ধরা পড়ে তখন সে গর্ভবতী। জেলে গিয়ে ফুটফুটে একটা ছেলের মা হয়। এইসব মামলায় বাংলাদেশ দূতাবাস চোখে টিনের চশমা পরে কানে তালা মারে। আইনী লড়াইয়ে হারতে থাকে কাগজপত্রহীন বিয়ে করায়। এক পর্যায় দেশ হতে কাবিন করে নিয়ে দেখিয়ে অবৈধ সেক্স করার অপবাদ হতে পার পায়। এই পর্যন্ত লড়তে সাহায্য করে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিক ও কমিউনিটি। কিন্তু তারপরও তার মুক্তি মিলে না কারণ কোম্পানি তাকে স্বিকার করে না। এমনকি পাসপোর্টও হারিয়ে ফেলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক প্রচার হওয়ার পর দূতাবাস খোঁজ নিতে যায় জেসমিনের। এবং পাসপোর্ট করার আনুষঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করে। এই করোনা সব উলটপালট করে দেয়। জেসমিন দুধের বাচ্চা নিয়ে জেলে মানবেতর জীবন পার করছে।

গুটি কিছু বাংলাদেশী লোক মাঝে মাঝে নারীঘটিত ঝামেলায় জড়িয়েছে। যাহা হিসাবেও পড়ে না। নারী নিয়ে লোভ তেমন নেই বললে চলে। কিন্তু এর বিপরীত দেশে, তাহলে কি সব ভালো লোক সৌদিতে যায়। তা না, বরঞ্চ বেকার মামলা মোকদ্দমার আসামি বিদেশে পাড়ি দেয়। সেখানের আইনের কঠোর প্রয়োগ দেখে ভয়ে নারী নিয়ে উৎসাহ দেখায় না। আর বাংলাদেশ হতে গৃহকর্মী গিয়ে নিজের ইজ্জত আব্রু তুলে দিচ্ছে বর্বর হায়নাদের হাতে। ঢাকায় গৃহকর্মীর ভিসার দালাল আছে। এই দালালেরা মহিলা ভিসার নাম দিয়েছে গাই (গাভী) ভিসা। সৌদির অনেক গৃহকর্মী সরবরাহ অফিস আছে তারা গ্রুপ ভিসা ঢাকায় পাঠায়। আর ঢাকার রিক্রুটিং অফিস গাই খোঁজে লিপ্ত হয়। আর এই গাই সেখানে গিয়ে দুধ দিতে না পারলে জীবন নিয়ে ফিরতে কষ্ট হয়। আর এইসব গাই খেতে পারে না। ভয়ে বাহিরে যেতে পারে না। আইনের আশ্রয় নিতে পারে না।

বড় একটা হল রুম যেটাকে সৌদি ভাষায় দেওয়ানিয়া বলে। রাজ প্রাসাদের সব চেয়ে চমক এই হল রুম। দেয়ালে অপরূপ কারুকর্ম। বাদশা আজিজের ছবি এবং তার সাথে বর্তমান রাজার ছবিও দেয়ালে লাগনো। মেঝে বিছানো তুর্কীস্থানের সবচেয়ে দামি কার্পেট। এক কোণায় ডিস লাইনের রিসিভার বসানো। মাঝখানে ছোট ট্রি টেবিলে ফ্রাসের ছোট ছোট চায়ের পাত্র সাজানো। তবে কোন চেয়ার টেবিল নাই, সবাই চারিদিকে নিচে বসেই আলাপ করে। এখানে যারা আসে সরকারি বড় বড় অফিসার, আসে বড় বড় পয়সাওলা লোক। নারীদের জন্য আলাদা দেওয়ানিয়া (হল রুম) আছে। গাড়ি হতে নেমে আলাদা দরজা দিয়ে মহিলা রুমে চলে যায়। সৌদিতে প্রত্যেক বাড়ি হোটেল, মোটেল এবং রেস্ট হাউজ সব জায়গায় মহিলার জন্য সংরক্ষিত দরজা আছে। সদর দরজার সাথে রুমের দরজা সংযোগ যাতে পুরুষ না দেখে। মহিলাদের পর্দা রক্ষায় এই নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নারী ঘরের বাহিরে বোরখা পরা বাধ্যতামূলক। তবে এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা গাড়ি চালাতে পারে, গ্যালারিতে বসে ফুটবল খেলা দেখে, গ্যাল্যারিতে বসে ছবি দেখে। বাদশা সুলতান বিন আবদুল আজিজ ব্যাপকভাবে আধুনিকীকরণ করেছে সমাজ এবং অর্থনীতিকে। এই সৌদি প্রাচীন কাল হতে কঠোর ধর্মীয় বিধিনিষেধ মেনে চলা একটা দেশ। এখানে এখন ললনা স্বল্প বসনে সমুদ্র স্নান করে। বাহিরের লোক মহিলা পুরুষ বন্ধু হলেও হোটেলে রাত যাপন করতে নিষেধ নেই। যা আগে অবৈধ যৌনমিলন বলে ইসলামি শরিয়া মোতাবেক কঠোর অপরাধ ছিল।

বেশীর ভাগ পরিবারে গৃহকর্মী এবং পারিবারিক ড্রাইভার থাকে। এই ড্রাইভারদেরও অনেক অসহনীয় কষ্ট এবং অপমান সহ্য করে কাজ করতে হয়। ড্রাইভারের নির্দিষ্ট কোন সময় থাকে না কাজের। রাতে এবং দিনে যখনি প্রয়োজন তখনি তাদের কাজের ডাক পড়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ড্রাইভারের সাথে গৃহকর্মীর কিংবা সৌদি মেয়েদের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা প্রকাশ হয় খুবই খুবই কম। আর প্রকাশ হলে রেহাই নাই। শুনেছি সৌদি মেয়েদের সাথে সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করে ড্রাইভারকে দেশে ফেরত পাঠাতে। এই জন্য পারিবারিক ড্রাইভারের বয়স চল্লিশ বছর হতে হয়, বিবাহিত হতে হয়। এবং মহিলাদের কাপড় সেলাই করা ট্রেইলারদের বয়সও চল্লিশ বছর বয়স হতে হয়। এইসব ট্রেইলার দোকানে সবকিছু সংরক্ষিত হয়। মহিলা দোকানে গেলে নিজেকে নিরাপদ দূরত্ব রেখে ট্রেইলারের সাথে কথা বলতে হয়। জনবহুল এলাকায় এইসব মহিলা ট্রেইলারিং দোকান কম হয়। তবে এখন মহিলারা প্রচণ্ড পর্দা থেকে চাকরী, ব্যবসা বাণিজ্য, দোকান পাট সবই করতেছে। তবে আমাদের দেশের মত নারী আন্দোলন, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ হত্যা কোন কিছুই নেই। আছে অগণিত তালাক। আর সৌদিয়ান ঘরের নারীকে অত্যন্ত মূল্যহীন মনে করে। পুরুষদের ইচ্ছাই সব কিছু। এরা ছোট বড় সবাইকে নাম ধরে ডাকে। তবে সন্তান থাকলে বড় ছেলের নাম ধরে বলে অমুকের বাপ। মেয়ে বড় হলেও মেয়ের নাম বলে না। যেমন এই সৌদিয়ানের দুই মেয়ে বড়, ছেলে ছোট তবুও লোকজন উনাকে আবু আবদুল্লা (আবদুল্লার বাবা) বলে।

(চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী (২য় পর্ব)

জনমানবশূন্য মরু প্রান্তর। আমি আর আমার সাথে ভেড়ার পাল। যেন আমি শিক্ষক ওরা আমার ছাত্র। মোটা তারের বেড়া দিয়ে আবদ্ধ ভেড়ার সাথে ছাগলও আছে কয়েকটা। পাশে তাবু আমার থাকার ঘর। প্রচন্ড গরমে মনে হয় সূর্যটা দৃষ্টি সীমানার প্রান্ত শেষে। পানির তৃষ্ণায় শুকনো গলায় কথার বাহির হচ্ছে না। গাড়ি হতে নেমে কাপড়ের ব্যাগ রাখলাম তাঁবুতে। বালুর ভিতর একটা কার্পেট বিছানো। সৌদি আমাকে বসতে বললো। আমি অবনত মাথায় নিরীহ নির্বাক। সাত চল্লিশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় দপ করে মুখটা জ্বলে উঠলো। হৃদয়ে ভেসে উঠলো তিন বছরের মেয়েটার কথা। টাকা নেই তার জন্য যে দুধ কিনবে। মায়ের শ্বাসকষ্টের ঔষধ ফুরিয়ে আসছে। এনজিও আশা এবং চাচা আছে পিছনে পিছনে তবে কমুদ বাবু মেনে গিয়েছে। বলেছে তোর সুবিধা মত টাকা দিস তবে তাড়াতাড়ি দিলে সুদ কম হবে। তাবুতে আমার দিন রাত মাঝখানে ভেড়ার খেদমত। ইস! এই টাকায় প্রবাসীদের বউ চোখে কালো চশমা পরে টাউনে গিয়ে দোকানে দোকানে সৌন্দর্য বিলি করে। ভাইটা পড়ার নাম করে টাকা নিয়ে নিজের এ্যাকাউন্টে জমা করছে। ক্ষমতাশালী রাজনীতি করে চাঁদা নিয়ে মাদক ও নারীতে মগ্ন থাকে। ছোট বোন রাত জেগে নেটে ছবি দেখে। মা বাপ কখনো কখনো চোখের নেত্র বিসর্জন দেয়। ছোট ছোট শিশু সন্তান বলে বাবা কখন আসবে বাড়িতে। তারের বেড়ায় লোহার উপর হাত রাখতে ছ্যাঁত করে উঠে। ফোসকা পড়ে যায় হাতের তালুতে। য়ে দিকে তাকাই স্বচ্ছ আকাশ আর আকাশ। এই দেশে শীতকালে বৃষ্টি হয় আর গরম কালে রৌদ্রে আগুন ধরে।

স্বর্গে ডানে বামে সামনে পিছনে সুন্দরী হুর থাকবে খেদমতে। না চাইলেও থাকবে তারা। আর এখন আমি শিশুর দুধ কিনতে পারছি না। কি আজব রহস্য মরণের পর হুরের গন্ধে আমি হবো মাতোয়ারা আর এখন এক অযোগ্য বাবা। যাকে তুমি আরব দেশের রাখল বানিয়ে ছেড়ে দিয়েছো। সাদা, হলুদ গোলাপী রংয়ের হুরের সাথে সুরা হাতে এরাবিক নৃত্য হবে, মাঝে জয় জয় বলে চিৎকার করবো। নেশাগ্রস্ত হয়ে লুটিয়ে পড়লে হুর আমাকে চুমা দিয়ে শিহরিত করবে আর এখন আমি মায়ের হাঁপানির ঔষধ কিনতে না পারা অযোগ্য সন্তান। তুমি কি জানো ঈশ্বর আমার মা আমার কাছে স্বর্গ। যে চাঁদ আলো দিয়ে অন্ধকার পৃথিবী জ্যোৎস্নাময় করে সেই চাঁদ হতেও আমার মা বেশি জ্যোৎস্নাময়। আজ তাঁর হতে অনেক দূরে ধুধুবালু প্রান্তরে সৌদি আরবের গভীর জঙ্গলে মেষপালক আমি। মায়ের সন্তান প্রসব করার সময় যে ব্যথা হয় তার সামান্য পরিমাণও যদি পুরুষদের দেওয়া হয় তাহলে মেরুদণ্ডের বাইশটা হাড় ভেঙ্গে চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যাবে। তুমি সেই মা‘য়ের ঔষধ ও দুধ কিনতে আমাকে অপরাগ কেন করে রাখবে হে অধিপতি। আমার দেশে শত শত লোক হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে ব্যাংকে জমা করছে। তাদের সন্তানেরা বিদেশে উন্নত জীবনযাপন করছে। আর আমার সন্তান দুধ ভাতও পায় না। আমজনতার হোক মেরে খাওয়া লোক কত আরাম আয়াস করে আর তুমি আমাকে শাস্তি দিতে ব্যস্ত। দেশের শাসকও বৈষম্য তৈরি করে শিক্ষা চিকিৎসা ও আইনে আমাদের সেবা দেয় তুমিও তাই করছো।

সৌদিয়ান একজন ভারতীয় বাঙ্গালী সাথে করে নিয়ে ফেরত আসে। গায়ে সাদা লম্বা জামা তবে গামছা দিয়ে মুখ বাঁধা যাতে রোদ না লাগে। উনি এসেই বাংলা বলায় আমার আর কথা বলতে বেগ পেতে হলো না। কথা বলে বুঝা গেল কাজের পারদর্শী সে। কেমন আছো বাপু। আমি ফকির শাহ। পশ্চিম বঙ্গের মুর্শিদাবাদ বাড়ি। অনেক দিন আছি এখানে, সৌদি লোকটা ভালো। তুমি মন লাগিয়ে কাজ করো আস্তে আস্তে সব ভালো লাগবে। আর এখানে নিরাপদ থাকবা। আমি নিরব হয়ে তার কথা শুনি। সৌদিয়ান পঞ্চাশ রিয়েল আমাকে দিয়ে চলে যায়। পাশে রেস্ট হাউজে কাজ করে ফকির শাহ। আমি তার পিছে পিছে চলি। দরকারের চেয়ে একটু বেশী বলে ফকির শাহ। প্রাচীর ঘেরা রেস্ট হাউজ যেন রাজ প্রাসাদ। নানা জাতের ছোট বড় অসংখ্য খেজুর গাছ। পানির কৃত্রিম লেক, কুপ এবং ঝর্ণায় সজ্জিত। গেইট রাস্তায় কিংবা ঘর সব নিরাপত্তায় ঢাকা। সিসি ক্যামেরা ও নিরাপত্তা ঘন্টা দেওয়া আছে। তাবুতে চা গাওয়া (কফি) খায়। এবং মেহমান আসলে বসে। লিপটন, কুব্বুস, শ্রীলষ্কান চায়ের পাশে ফ্রাসী, তুর্কী আমেরিকান এবং মালাই, কোন কফি নাই তাদের। সবই আছে সাজানো আর বানানোর কারিগর ফকির শাহ।

ফকির শাহ কাজ করে রেস্ট হাউজে। তার জন্য আলাদা থাকার ঘর আছে। সেই ঘরে যাবতীয় সরঞ্জাম আছে। ভেড়া দেখার লোক ছুটিতে তাই সে ভেড়ার পালকে খাবার পানি দেয়। আমি তার কথা শুনি আর মাথা ডান বাম করি। ফ্রীজ হতে মোরগ বাহির করতে করতে বলে আজ মোরগটা ভালো করে রান্না দিতে হবে গো। আমি তার কোন কথায় মন দিতেছি না। আমার নাকে ঘুরে ভেড়ার বিচ্ছিরি গন্ধ। সকাল বিকাল খাবার দেওয়া। পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। রোগ জীবাণু হলে সেবা করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো ভেড়া হতে দুধ বাহির করতে হয়। এরাবিয়ানদের কাছে উট, ভেড়া এবং ছাগলের দুধ খুবই প্রিয়। এমনকি দুধ হতে মাখন বানিয়ে বিক্রিও করে। এমন অনেক এরাবিয়ান আছে যাদের কাছে শত শত ভেড়া কিংবা উট আছে। এইটা এদের কৃষি কাজ। সরকার এই কৃষিকাজে উচ্চ হারে ভতুর্কি দেয়। গম এবং কাঁচা ঘাস উট ও ভেড়ার খাদ্য। সীমানা হীন মরুভূমিতে বাঙ্গালীরাই কৃষি কাজে জড়িত। বাথরুমে ঢুকে পানির ঝর্ণা ছেড়ে দিই মাথার উপর। দশ মিনিটের গন্ধ সহ্য হচ্ছে না অথচ মানুষ শত দিন হাজার দিন এই কাজে নিয়োজিত। অার আমি! আমার কান্নার জল ঝর্ণার জলে মিশে হারিয়ে যায়। কাজ করতেই হবে, কাজ পারতেই হবে। ভয় পেলে পুরুষ কিসের। (চলবে)

করোনায় একজন প্রবাসী
(৩য় পর্ব)

আমার এলাকার এক হাই স্কুলের শিক্ষক সৌদিতে এসে ভেড়া পালনের কাজে পড়ে ভিসা দালালের মিথ্যার কারণে। সৌদিতে গিয়ে কাজের কথা শুনে উনি হতবাক। পরে অনেক দেন দরবার করে উনার সাবেক ছাত্ররা টাকা দিয়ে টিকেট কেটে দেশে ফেরত পাঠায়। উনার সৌদি মালিক কিছুতেই উনাকে রিলিজ দিতে কিংবা দেশে যেতে দিতে রাজি না। সৌদিয়ান বলে আমি ভিসা দিতে কোন টাকা পয়সা দাবি করি নাই। কারণ যে আসবে সে কষ্ট করবে তাই ভিসা বিনা পয়সায় দিয়েছি যাতে একজন মিসকিন কৃষক আসতে পারে। শিক্ষক কেন এই ভিসায় সৌদিতে আসলো। এইটা শিক্ষকের ভুল, আমার না। তাকে বুঝানো গেল না ভিসার দালাল মিথ্যা বলেছে। সৌদিয়ান বলে তোরা সবাই বাঙ্গালী মিথ্যাবাদী। যেহেতু আমার ভিসা নষ্ট হয়েছে এবং কাজের জন্য লোকও নাই তাই এখন এই কাজ করতেই হবে। ঊনি এর বাসায় ওর বাসায় পালিয়ে থেকেছেন কিছু দিন পরে এক পুলিশ অফিসারের সহযোগিতায় দেশে আসেন। এখনো উনি হাই স্কুলের শিক্ষকতায় নিয়োজিত। আসলে গরিবের জন্য শিক্ষাটাই অত্যন্ত উপকারী সম্পদ। যে কোন সময় এইটা বিক্রি করে আপনি খেয়ে পরে চলতে পারবেন। হয় আপনার কাছে অগাধ টাকা পয়সা থাকতে হবে না হয় যথেষ্ট শিক্ষা থাকতে হবে। আপনি অশিক্ষিত দীনহীন সময় পার করেছেন। তবুও মা বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই। তাদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া কামনা করেন। কিন্তু বর্তমানের সন্তান বলবে কেমন মা বাবা যারা আমাকে পড়াশোনাও করতে দেয়নি সম্পদও রেখে যায়নি। তাদের ভুলের কারণে আজ আমি অশিক্ষিত, তাই আমি খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে কষ্ট পাচ্ছি। এই জন্য সন্তানকে আধুনিক বিজ্ঞান সম্মত কর্মময় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চেষ্টা করুণ। যাতে সন্তান শিক্ষার সুফল পায়।

ভাই তোমার নাম জানা হলো না। আমি আর তুমি এক ভাষার মানুষ। মন খুলে চলবা আমার সাথে। আমি আবুল কালাম। বাংলাদেশে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি আমার বাড়ি।
এই লও বিড়ি খাও। পাতার বিড়ি এইটা। এত দিন একজন কথার বলার লোকও ছিল না। এখন তুমি আসায় ভালো লাগছে। চলো, ঘরের ভিতর দেখো। আমার মালিক লোক ভালো টাকা পয়সা ঝামেলা করে না। বৃহস্পতিবার বিকালে আসে পুরা পরিবার আবার শনিবার রাতে চলে যায়। এই দুই দিন আমার কাজ বেশী থাকে। দম ফেলতে পারি না। সে সরকারি বড় অফিসার তাই বিভিন্ন লোক আসে। খাওয়া – দাওয়া হয় প্রচুর। অনেকে আমাকে বকশিস দেয়।
আমি মন দিয়ে ফকির শাহর কথা শুনি। বাড়ির ভিতর সব কিছু এত দামি দামি যে চোখ ধাঁধানো। মনে হয় যেন রাজার মহল এইটা। দালানে রংয়ের কারুকর্ম, বাহারি বাতি, দামী ফার্নিচার। এইটাইতো স্বর্গ গরিবের জন্য।

দুইটা মেয়ে বিয়ের বয়স পার হয়েছে। এখনো বিয়ে দিতেছে না ছোট একটা পোলা আছে সেই বিরক্ত করে। ছেলেমেয়েদের পিছনে বেতনের অর্ধেক টাকা পনের দিনে শেষ করে। দামি দামি পোষাক কসমেটিক্স কিনে। এরপরও বিউটি পার্লারে যায় দুইবোন। বড় লোকের মেয়ে বড় লোকের কাছে বিয়ে দিবে। মোহরানাও অনেক বেশী দাবি করে। এমনিতে বিয়ে করতে হলে একজন লোকের বাড়ি গাড়ি সংসার খরচ যাবতীয় পরিপূর্ণ থাকতে হয়। এই মেয়েদের বিয়ের কথা হলে তাদের বাবা এক লাখ রিয়েল মোহরানা দাবি করে। আমাদের দেশে মোহরানার কথা, বিয়ের পরে আর কারো খবরই থাকে না। এইখানে কলমা পড়ার আগেই তার লেনদেন শেষ হয়। যাদের টাকা পয়সা বেশী থাকে বহু বিবাহ করে। এইটা ইসলামের সুন্নত। অথচ নামাজে অনেকে সুন্নত পড়েই না। আর বহু বিবাহ করে সুন্নত পালন করে। সবচেয়ে আচার্য্য কথা বৃদ্ধ বয়সেও যুবতী মেয়ে বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হয়। ঘরের ভিতর নারীর নূন্যতম মর্যাদা নেই। তবে বাহিরে কেউ চোখ তুলেও তাকাতে পারে না। একসাথে কয়েকটা মেয়ে কালো বোরখা পরে চললে মনে হয় পেঙ্গুনের দেশ।

অথচ এই এরাবিয়ানই গরিব দেশ হতে গৃহকর্মী নিয়ে আসে বেশীর ভাগ যৌন কাজের জন্য। ফিলিপাইন, শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশ হতে আসে এইসব গৃহকর্মী। ফিলিপাইনের বিধর্মী মেয়েরা আসার সময় সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েই আসে। আবার সৌদিয়ান প্রচুর ফিলিপাইন ভ্রমনেও যায়। এইসব গৃহকর্মীদের বরাতে বিয়েও করে। থালা বাসন ধোঁয়া হতে ঘরের সমস্ত কাজ করতে হয়। ঘর পরিষ্কার, কাপড় পরিষ্কার, শিশুদের দেখাশোনা এবং ঘরের পাশে গ্রোসারি দোকানে যেতে হয় খরিদ্দার হয়ে। খুব কম সময় মিলে ঘুমানোর জন্য। ঘুমানোর জায়গা হয় রান্না ঘর কিংবা স্যাঁতসেঁতে অস্বাস্থ্যকর ঘরের কোণা। এর ফাঁকে ঘরের যুবকের যৌন লালসায় পড়তে হয়। বাপ ব্যাটা উভয়ের কুনজর থাকে গৃহকর্মীর উপর। প্রাপ্তবয়স্ক বয়স্ক পুরুষ মানে কাদ্দমা (গৃহকর্মী) ভোগ। আর এর পরিমাণ হয়তো শতকরা আশি জনের ঘরে। প্রতিবাদ করলে নির্যাতন নেমে আসে বর্বরোচিতভাবে। যেমন আমাদের দেশে বড়লোকের বউরা করে ছোট গৃহকর্মীদের উপর। খবুই কম সৌদি পরিবার আছে গৃহকর্মীদের যৌনসংগমে বিরত থাকে। এবং হাদিস কোরানে প্রভাবিত হয়। তবে ঘরের বাহিরে এদের চলাফেরা দেখলে মনে হবে না এরা এমন বর্বর। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শতকরা ৯৮জন লোকই পড়ে। এবং সুযোগ পেলে কোরান তেলাওয়াতও করে। চীনের নকল পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার এই সৌদি। আবার এরা হালাল হারাম খাবার খুজে চীনে গিয়ে। আজব কথা হলো এইসব গৃহকর্মীদের কোন আজনবী ( সৌদিয়ান নয়) এর সাথে কথা বলতে দেখলে তারা খুব রাগ করে। বলে এইটা হারাম, ইসলাম অবমাননা। প্রেম ভালোবাসায় জড়ালে পড়তে হয় ইসলামি আইনের ম্যারপ্যাচে। হয় জেল জুলুম এবং অবশেষে নিজ দেশে ফেরত।

হাসপাতালের আয়া কিংবা নার্সের কাজে যারা আছে তারা ভালো আছে। নার্সের জায়গা ফিলিপাইনের দখলে আর আয়ার দখলে বাংলাদেশ। রাস্তা ঝাড়ু, অফিস আদালত ঝাড়ু, বিমান বন্দর ঝাড়ু কিংবা বাথরুম ঝাড়ু সব বাংলাদেশের পরিচ্ছন্ন কর্মীর দখলে। অথচ বাংলাদেশের রাজনীতিক নেতারা কথায় কথায় বলে দেশ অনেক উন্নত যে কানাডার মত। এইসব ঝাড়ুদারের রেমিটেন্স পাঠানো টাকায় রাজনৈতিক নেতারা নিজ পরিবার কানাডায় রাখে বলে তারা স্বপ্নিল থাকে। হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা ভালোবাসার মধু পান করতে গিয়ে করে অনৈতিক কাজ। এবং কখনো কখনো সীমাহীন প্রতারিত হয় মেয়েটা। যেমন এখন বাচ্চাসহ এক বছর ধরে জেলবাসী নোয়াখালীর জেসমিন। তার সহকর্মী কুমিল্লার ছেলের সাথে প্রেম তারপর বিয়ে। (চলবে)

(চলবে)।

পরীক্ষায় ভালো ফল ও নৈতিকমূল্যবোধে মা‘য়ের ভূমিকা

মায়ের শিক্ষাই হলো শিশুর আগামীর আসল বুনিয়াদ। আমি আপনি সবাই আমরা সমাজের সচেতন মা বাবা। নৈতিকতার বীজ ঘর হতে বপন করতে হবে। তবে আজকাল কিছু কিছু মা ভারতীয় টিভি চ্যানেল এবং নেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বাচ্চা পরে থাকে প্রাইভেট টিচার কিংবা কোন কোচিং সেন্টারে। মা এতে স্বস্তিতে থাকে যে সন্তান পড়ছে। আসলে সে কি পড়ছে, পড়ার ধরনটা কি, কোন কিছুই তদারকি করে না। একজন আদর্শ মানবিক গুণ সম্পূর্ণ মা‘য়ের কারণে একজন সন্তান ভালো জীবন গড়তে পারে। আপনার সন্তানকে সত্য ন্যায়, মায়া মমতা, মননশীল সৃজনশীল ও মানবিক হওয়া মা হিসাবে আপনিই শিখাতে পারবেন। ঘুম হতে সকালে ভালোবাসা মিশ্রিত কণ্ঠে ডেকে তুলে দিন। এবং পড়তে বসতে বলুন। কি পড়ছে আপনি পাশে বসে তদারকি করুণ। স্কুলে শ্রেণী শিক্ষকের পড়ায় মনোযোগ দিতে বলবেন। চলার পথে সালাম দিতে বলবেন। কেউ কিছু দিলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে বলবেন। সন্ধ্যার পর পাশে নিয়ে পড়াতে বসবেন। অনেক মা টিভি দেখে, না হয় ঘুম যায়, নিজেকে পাল্টান দয়া করে। তবে পড়া হতে হবে আনন্দময়। সন্তানের সবচেয়ে ভালো বন্ধুই হলো পরিবারের মানুষ। আর আমরা তাদের হাত পা বেঁধে মেরে মনে ভয় এবং ঘৃণা ঢুকিয়ে দিই। যা বর্তমানে খুব ভয়ংকর ফল বয়ে আনছে।

রাতেও তদারকি করতে ভুলবেন না পড়াশোনার। পড়ার ভিতর বিরতি দিবেন। মজার কোন গল্প করবেন। যা পারেন খেতে দিবেন। পড়া শেষে লিখতে বলবেন। একটা অংক চার/পাঁচ বার করতে বলবেন। স্কুলে কি পড়ালো, কিভাবে পড়ালো আপনিও দেখবেন। আজকের পড়া ২/৩ দিন পর আবার পুনরায় জিজ্ঞাসা করবেন। মনে রাখবেন আমরা গরীব। আর গরীবের জন্য শিক্ষাই হলো সম্পদ। এবং আপনার সন্তান আপনার সম্পত্তি। আমাদের জন্য মা বাবা কিছু না করতে পারলেও আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু আমাদের সন্তানের জন্য হয় অগাধ টাকা পয়সা রেখে যেতে হবে না হয় তাদের শিক্ষিত করতে হবে। শিক্ষিত হলে খেয়ে পরে চলার রাস্তা খোঁজ করে নিবে তারা। কারণ যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। খেলাধুলার সুযোগ দিবেন, রাজনীতি নামক ক্যান্সার হতে “দূরে” রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কলেজ ভার্সিটিতে গিয়ে রাজনীতি করুক। পড়ার ব্যাপারে স্কুলের রুটিন এর পাশাপাশি বাড়ির জন্য রুটিন ঠিক করে দিন। সন্তান কৃষক হবে না গবেষক হবে সময় বলে দিবে আপনি চাপিয়ে দিবেন না। পড়া রিড়িং পড়তে উৎসাহিত করবেন। শুধু সিলেবাস নিয়ে পড়ে থাকবেন না। বাহিরের জগত সম্পর্কে ধারণা দিবেন। সাধারণ জ্ঞান অর্জন করলে সৃজনী চোখ খুলে যাবে। চিন্তার পরিধি বাড়লে পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে অবলীলায়।

একটি আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতায় কেনিয়ান দৌড়বিদ আবেল মুতাই ফিনিশ লাইন শেষ করার ঠিক কয়েক ফুট আগেই দৌড় বন্ধ করে দিল। তার ধারনা ছিল যে, সে ফিনিশ লাইন শেষ করে ফেলেছে এবং সে জিতে গেছে। আবেলের ঠিক পিছনেই ছিল স্প্যানিশ দৌড়বিদ ইভান ফারনান্দেজ। সে চিৎকার করে আবেল কে বলতে লাগল, “হ্যালো, তুমি ফিনিশ লাইন শেষ করো নাই। তুমি দৌড় চালিয়ে যাও।” আবেল কেনিয়ান হওয়ায় ইভানের ভাষা “স্প্যানিশ” বুঝতে পারছিল না। সে দাঁড়িয়েই রইলো। ইভান এটা বুঝতে পেরে আবেলকে ধাক্কা দিয়ে ফিনিশ লাইন পার করে দিলো। তারপর কেনিয়ান দৌড়বিদ আবেল জিতলো এবং প্রথম হল। প্রতিযোগিতার শেষে এক সাংবাদিক ইভানকে জিজ্ঞাসা করল: তুমি এমনটা করলে কেন? ইভান বলল “আমার স্বপ্ন হল একদিন আমাদের একটি কমিউনিটি লাইফ থাকবে।” সাংবাদিকঃ তাতো বুঝলাম, কিন্তু ঐ কেনিয়ান আবেলকে কেন জিতিয়ে দিলে? ইভান আবারো বলল, আমি তো তাকে জিতিয়ে দেইনি। সেতো জিতেই যাচ্ছিল। সাংবাদিকঃ তুমি নিজেই তো জিততে পারতে, কারণ তুমি তো ঠিক তার পরেই ছিলে? ইভানঃ সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল। দেখ, সত্যিই আমি জিততে পারতাম। কিন্তু জেতার মুল্য কি হতে পারত? কি সম্মান আমি পেতাম। হয়ত একটি মেডেল পেতাম। তা দিয়ে আমি কি করতাম? আর এ রকম জেতায় আমার মা’ই বা আমাকে কি ভাবত!

মানুষের মূল্যবোধ বংশানুক্রমিক স্থানান্তর হয়। ইভান তার মায়ের কাছ যে মূল্যবোধ শিখে ছিলো তা হলো আরেকজনকে ঠকিয়ে জিতে না আসে। আর আমরা আমাদের বাচ্চাদের শিক্ষা দিচ্ছি যে কোন মূল্যে জিতে আসো। মনে রাখবেন ভালো কাজ করলে যেমন মানুষ বলে এইটা অমুকের সন্তান এবং খারাপ কাজ করলে মানুষ বলে এইটা অমুকের সন্তান।

(বিঃদ্রঃ আমার মেয়ে দুইটা। বড় মেয়ে সিক্সে পড়ে। ক্লাস প্রাইভেট ফেনী উপজেলায় দ্বিতীয় স্থানে হয়েছে। এবং সরকারি বৃত্তি পেয়েছে। ছোট মেয়ে ওয়ানে। আমি করৈয়া হাইস্কুলের ৯১ ব্যাচের ছাত্র। সেটা স্কুলের সোনালি অতীত। )

করোনায় একজন প্রবাসী

অনেক লম্বা সামনাসামনি দুইটা দালান। মাঝখানে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ফাঁকা গলি। একটা দালান গুদাম ঘরের মত আরেকটা শ্রমিক শ্রেণী লোকদের আবাস স্থল। একটু দূরে রাস্তার উপর সোডিয়াম বাতির ঝলমল আলো। তবে গলিটা আবছা আবছা অন্ধকার। আবাসস্থলের দরজার বাহিরে বাতিগুলি নষ্ট হওয়ার পর আর লাগানো হয়নি। শীতকালে যখন বৃষ্টি হয় দুই দালানের পানি এই গলিতে হাঁটু সমান হয়। বৃষ্টির পানি এবং বাথরুমের পানি মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকার ঘরে ঢুকে হাঁটু ডুবে। যেমন বাংলাদেশে বর্ষার সময় পিছ করা কালো রাস্তায় নৌকা চলে। আবুল কালাম তখন বিছানাপত্র ভাজ করে পা তুলে বসে থাকে। আর ভাবে কেমন আছে পরিবার।

কয়েক মাসের প্রবাস জীবন আমি আবুল কালামের। নিজ গ্রামের মোস্তাক মিয়া ভিসার কারবারী। তার হতে ভিসা নিয়ে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে সৌদি প্রবাসী আমি। দেশে আগে সে ঢাকায় বাদামতলিতে সবজির আড়তে চাকরী করতো। মোস্তাক মিয়া আগে কাতার থেকে গিয়েছে, আরবী ভাষায় যেমন পারদর্শী তেমন মিথ্যা বলার শিল্পী। সৌদি আরব মোস্তাক মিয়ার ছেলে থাকে। সে ভিসা পাঠায় আর মোস্তাক মিয়া কথার রংয়ে সাজিয়ে তা বিক্রি করে। তবে মোস্তাক মিয়ার ছেলে ভিসার কারবারে ক্ষুদ্র কণা। এমপি পাপুলের মত শত শত দালাল আছে সৌদি আরবে ভিসার ব্যবসা সাইনবোর্ড লাগিয়ে মানব পাচারকারী। যাদের এক হাত আছে বাংলাদেশ দুতাবাসে আরেক হাত আছে এরাবিক দুর্নীতিগ্রস্ত বড় বড় লোকদের সাথে। আবুল কালাম দুই বছরে আরবী শিখেছে দশ / বার টা। কথায় কথায় এরাবিয়ানদের সাথে বাংলা বলে। তারা কিছু না বুঝে হাসে আর তখন আবুল কালাম বলে “দুর শালার ঘরের শালারা”। বাংলা শিখো, বাংলা।

রিয়াদ বিমানবন্দরে আলোর ঝলকানিতে আবুল কালাম ভাবে ফরমালিনযুক্ত পচা সবজির গন্ধ আজ অনেক দুরে। ইস ! এত সুন্দর দেশের খেজুরে আমরা তেল মবিল ফরমালিন ঢেলেও মাছি মারি। আপেল বাগান নাই বলে আইনস্টাইন জন্ম হয়নি ঠিকই প্রচুর সরিষা-গাছ হয় বলে তেলবাজের জন্ম ঠিকই আমার দেশের গলিতে গলিতে। এত বাতি জ্বলে যেন দিনের মত আলো। আবুল কালাম ভাবে এই আলোতে জীবন জীবিকা সফে দিতে হবে। প্রথম মাসেই কিছু টাকা পাঠিয়ে চাচা হতে বসতবাড়ির দলিল নিতে হবে। না হয় চাচা আমার মা বাপকে গালি দিবে, বলবে টাকা দাও নাহয় জায়গা ছেড়ে দাও। তারপর কুমোদ বাবুর সুদের টাকা তারপর আঁশা হতে নেওয়া কিস্তি। মা বাপ আর বউ বাচ্চা, তাদের জন্য কিছু কিছু দিবো খরচের টাকা। এতে জমা হবে টাকা আর তাতে ঘরটা দালান করা যাবে।

চার / পাঁচ জনের থাকার ঘরে আমরা পনর জন গাদাগাদি করে ঢালাও বিছানায় ঘুমাই। কয়েকজন আছে ছয় মাস ধরে এখানে পড়ে আছে। থাকার কষ্টে, খাওয়ার কষ্টে নেই কোন চাকরীর খবর। এমনি কি নির্দিষ্ট তিন মাস পার হওয়ার পরও দেয়নি ইকামা (পরিচয় পত্র )। আমাকে মোস্তাক মিয়া তাহলে কি মিথ্যা বলেছে। বলেছে তার ছেলে কাজ নিয়ে দিবে, এক সপ্তাহ এর ভিতর সৌদি মালিক ইকামা বানিয়ে দিবে। তবে তার জন্য সরকারী ফ্রী বাবত সব টাকা পয়সা মোস্তাক মিয়ার ছেলে বহন করবে। আর সেই টাকা মোস্তাক মিয়া দেশে আমার হতে নিয়ে নিয়েছে। এবং আমি যে কোন কাজ করতে পারবো। যেটাকে আমরা বলি ফ্রী ভিসা। তবে সৌদিতে এসে বুঝলাম এই ফ্রী ভিসার আইনগত কোন বৈধতা নাই। যে এরাবিয়ানের নামে যে এলাকায় এবং যে কাজের জন্য ভিসা ইস্যু হয়েছে ঠিক সেই এরাবিয়ানের সেই এলাকায় যথাযথভাবে সেই কাজই করতে হবে। এইটাই আইন এখানের। এর ব্যতিক্রম হলে জেল জরিমানা এবং দেশে ফেরত পাঠায়। মোস্তাক মিয়ারা ভিসা বিক্রির জন্য এবং লাভ বেশী করার জন্য ফ্রী নামক শব্দের ব্যবহার করে। তবে সবচেয়ে প্রতারক হলো সৌদি নাগরিক। সে ভুয়া লাইসেন্স দিয়ে ঘুষ দিয়ে প্রয়োজনের অধিক ভিসার জন্য আবেদন করে। আর এতে টাকা পয়সা ও বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করে এমপি পাপুলের মত শত শত ভিসার দালাল। যাদের ক্ষমতা এবং টাকা পাথরের পাহাড় এর মত। একটা ভিসা বাবত সরকারি ফিস মাত্র দুই হাজার রিয়েল ( প্রায় ৪৫ হাজার টাকা )।

তাহলে বাংলাদেশী একজন শ্রমিক সৌদি যেতে পাঁচ হতে সাত লাখ টাকা কেন খরচ লাগে। একটা ভিসায় এরাবিয়ান লাভ করে, এরপর সৌদিস্থ বাংলাদেশী দালাল লাভ করে, রিক্রুটিং এজেন্ট এবং তাদের গ্রাম্য দালাল লাভ করে। এমনও হয় একটা ভিসা সৌদিতেই ছয় সাত বার বিক্রি হওয়ার পর বাংলাদেশ আসে। এই বিক্রির প্রক্রিয়া এমনও হয় সৌদি মালিকই জানে না তার ভিসা কতবার বিক্রি হলো। কয়েক মাস পরে বাংলাদেশের সৌদি দুতাবাস যোগাযোগ করলে মালিক জানতে পারে তার ভিসা প্রসেস হচ্ছে। এরাবিয়ানদের কাজ না থাকলেও লোভে পড়ে ভিসা বাহির করে তাই খরিদ্দারের সাথে মুখের একটা চুক্তি করে যে লোক আসলে টাকা দিলে ইকামা বানিয়ে দিবো এবং সে অন্যের কাজ করবে তবে মাসিক একটা লভ্যাংশ আমাকে দিতে হবে। এই হলো ফ্রী ভিসা যার কোন সরকারি বৈধতা নেই। এবং সরকার অন্যত্র কাজ করা লোকের ব্যাপারে খুবই কঠোর। আরো ভয়ংকর হলো এক রাজ্যের ভিসা অন্য রাজ্যে বিক্রি করে দেশীয় দালালেরা। অনেক সময় সমস্যা হলে মালিক কোন সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে না। কারণ তারা অবৈধ পন্থায় ভিসা বাহির করে লোক অন্যত্র ছেড়ে দিয়েছে বলে জেল জরিমানার ভয়ে থাকে। এবং যারা ভিসা বাহির করে তারা সরকারি সুবিধা পায় না। তাই অনেক সময় এই সুবিধার জন্যও শ্রমিক যাওয়ার কিছুদিন পর শ্রমিককে এক্সজিটও করে দেয়।

মোস্তাক মিয়ার ছেলে এই ধরনের ভিসা কিনেই দেশে পাঠায়। আর এইটা অমুক কোম্পানির, ভালো বেতন, থাকা খাওয়া কোম্পানির এইসব বলে মোস্তাক মিয়া ভিসা বিক্রি করে। আসলে সবই এক বিশাল মিথ্যার জমিন। চাষ করবেন আপনি ফল খাবে মোস্তাক মিয়ারা। মানুষও মিথ্যার কাননে মালি হয় পরিবারের সুখের জন্য। এই রকম ভিসায় আমি আবুল কালাম সৌদি প্রবাসী। কয়েক মাস ধরে যারা পড়ে আছে তাদের দেশে টাকা পয়সা বাকি বকেয়া আছে। এবং কিছু লোককে কাজ না দিয়ে শাস্তিমূলকও ফেলে রেখেছে কারণ দেশে মোস্তাক মিয়াকে গালি দিয়ে ছিল। এবং এখনো তাদের পরিবার হতে চাপ অব্যাহত রেখেছে কাজের জন্য। অথচ মোস্তাক মিয়ার ছেলে এইসব কেয়ার করে না। এক সপ্তাহ পরে আমরা পাঁচ জনকে বিক্রি করে দেয় মদিনায় যা রিয়াদ হতে হাজার মাইল দুরে। এক খাওয়ার হোটেলের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসাবে। বলে রাখা দরকার, নতুন অবস্থায় তিন মাসের ভিতর কাজ ফেলে মালিক পরিবর্তন করার সরকারি আইন আছে। সেই কাজের মালিক সরকারি ফিস এবং সমস্ত অফিসিয়াল আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে মালিক পরিবর্তন করে এবং ইকামা বানায়। যার ভিসায় আসা হয় তা পরিবর্তন হয়ে নতুন মালিকের অধীনে ইকামা হয় আর নতুন মালিক ক্ষেত্র বিশেষ সমস্ত খরচও বহন করে। এতে দালাল যে দেশে ইকামার টাকা বাড়তি নেয় সেটাও তার লাভ থাকে। এই জন্য লোক আসে জমা হয় এবং কাজ খুজতে থাকে।

মসজিদে নবীর নিকটে আমার হোটেল। বার ঘন্টা ডিউটি দুঃখ নাই, কাজ পেয়েছি। থাকা খাওয়া ফ্রী, এবার যা বেতন দেয়। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক যে হাহাকার চলছে তাতে আমার স্বপ্ন মরুদ্বীপের সুর্য কিরণে ভেসে উঠা জলপ্রপাত। এই জল পান করতে গেলে অতিদুরে আবার সেই রকম জল দেখা যায়। তবুও মন্দের ভালো কাজ করতে পারি। মা বাপ এবং বউ বাচ্চার সাথে ফোন করে সান্তনা দিতে পারছি। সকাল সাতটা হতে কাজ শুরু হয় চলে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত। থালা -বাসন, পাতিল ধৌতকরণে দিন যায় আসে রাত। মাঝারি সাইজের পাতিল ধুয়ে ঝকঝক করতে হয়। কারণ এইসব পাতিলে ভাত রান্না করে। হোটেলটাও চব্বিশ ঘন্টা কাস্টমারে ভরপুর থাকে। হোটেল মালিক ভালো লোক। মদিনা ছাড়াও মক্কা, তায়েব এবং আল কাছিম আরো হোটেল আছে। কখনো কখনো মালিক আসে শ্রমিকদের সাথে কৌশল বিনিময় করে। খাওয়া থাকায় কোন সমস্যা আছে কিনা জানতে চায়। এতে সবাই খুশি মনে কাজ করে। বিশ বাইশ দিন কাজে হয়ে যায়। পুরাতন বাঙ্গালী শ্রমিকদের কেউ কেউ সহযোগীতা করে কেউ কেউ নিজের কাজ করাতে চায়। ভাষা না জানার দুর্বলতার সুযোগে ফোর ম্যানের কাছে নালিশ করে।

একমাস পরেই আমাকে নিয়ে যায় আল কাছিম। আমার কোন আপত্তি ছিল না কারণ কাজ চাই, টাকা চাই। এখানে আমাদের দেশের মত বাসি পচা খাবার নেই। প্রত্যেকটি কর্মী পোষাক আষাকে পরিপাটি। হাতের নখ ছোট থাকে মাথায় টুপি পরতে হয় যেন চুল না পড়ে খাবারে। সরকারি কঠোর তদারকি নিত্য দিনের কাজ। মাছি তেলাপোকা দেখিনি কখনো। সাদা ধবধবে টাইলস সাবানের পানি দিয়ে জীবাণু মুক্ত করতে হয় সবসময়। আমি খুশি মনে নেচে গেয়ে কাজ করি মন প্রাণ উজাড় করে। মালিক এসে মাঝে মাঝে বলে আবুল কালাম মিয়া ( একশতে একশত)। আমি মাথা নেড়ে বলি কোয়েছ (ভালো)। এইভাবে চলতে চলতে একদিন দুপুরে মালিক এসে বলে আবুল কালাম মুশকিল। আমি বুঝলাম কোন সমস্যা হয়েছে। একজন ভাষা জানা লোক জিজ্ঞাসা করলো কি সমস্যা হয়ছে। মালিক বললো আমি সরকারি অফিস গিয়েছি আবুল কালামকে রিলিজ করে ইকামা করার জন্য পরামর্শ করতে। তখন জানতে পারি তার কপিল (মালিক) তাকে হুরুপ (প্রাথমিক এক্সজিট ) দিয়ে রাখছে। এখন তাকে রিলিজ করা এবং তার ইকামা করা যাবে না। তাকে দেশে তেরত যেতে হবে। সে এখন সৌদিতে অবৈধ। তাকে সৌদি থাকা কঠিন হবে। যে তাকে ভিসা দিয়েছে সে হয়তো আবুল কালামের কপিলের সাথে কোন যোগাযোগই করেনি। ইকামা করতে না পারলে, রিলিজ করতে না পারলে তাকে কাজে রাখা সম্ভব না। অবৈধ লোক রাখলে হোটেলের সমস্যা হবে। দোভাষি বাঙ্গালী আমাকে সব বুঝিয়ে বলার পর আমি হাউমাউ করতে কাঁদতে থাকি। ফোন করি মোস্তাক মিয়ার ছেলেকে। নাম্বার বন্ধ পাই, অর্থাৎ পুরাতন নাম্বার ফেলে দিয়েছে। সেই দিনই সুস্থ স্বাভাবিক আবুল কালামের মরণ হয়। তারপরই জিন্দা লাশ আবুল কালাম দেহ নিয়ে ছুটে কাজ পেতে।

হোটেল মালিক আমার অসহায়ত্বের কথা শুনে তার বন্ধুর খামারে পাঠায় কাজে। সুনশান নিরব মরুভূমিতে ভেড়া পালকের রাখাল হিসাবে।

মেয়ে ও মায়া মাদক ও রাষ্ট্র (২য় পর্ব )

শোন মা জলি সম্পর্ক কাগজে কলমে লিখিতভাবে হয় না। সম্পর্ক হয় মনের আদান প্রদান দিয়ে। আমি সারা জীবন তোমার শাশুড়ি মা‘ই থাকবো। আমাদের সম্পর্ক মা আর মেয়ের। আর এই সম্পর্ক থাকবে যুগ যুগান্তর। তুমি, আমি আর মৌরি এক আত্মা। তুমি আমার মা। তোমার মাঝে আমি আমার মা‘কে খুজে পেয়েছি। তোমার আচরণ, তোমার দায়িত্বজ্ঞান, তোমার প্রজ্ঞা ও প্রতিভা, তোমার ব্যক্তিত্ব ও কাজের প্রতি নিষ্ঠা এবং আমার প্রতি যত্ন। এইসবের কারণে তোমাকে আমার আমরণ শ্রদ্ধা করতে হবেই। আর মন চাইবে মরণের আগে তুমি এবং মৌরিকে কাছে পাওয়ার। বিকালের নরম নরম রৌদে দাদি আমি আর আম্মু বেলকনিতে বসা। আম্মু একটা ঔষধি গাছ এবং একটা পেয়ারা গাছ টবে লাগিয়েছে। আমি এইসব কথা না শুনে পেয়ারা তুলতে ব্যস্ত থাকি। পাশের বাসার ছাদে নয়ন ঘুড়ি উড়ানো নিয়ে ব্যস্ত। সে আম্মুকে ভয় পায় , আগে আমাদের বাসায় আসতো পড়তে । আম্মু রবীন্দ্র নাথ শুনে , এখনো স্লো সাউন্ডে বাজছে “আকাশের ওই মিটি মিটি তারার সাথ কইবো কথা নাইবা তুমি এলে”। দাদি কাঁদছে । আম্মু খুব শক্ত মনের মানুষ । আম্মু দাড়িয়ে আছে বিকালের নীল আকাশ পানে। আম্মু প্রায় আকাশ দেখে । তাই আমার মনে হয় আকাশ হতে আম্মু দৃঢ়তার শিক্ষা নেয় । কখনো দেখিনি মিথ্যা এবং চতুরতার আশ্রয় নিতে । সত্য এবং ন্যায়ে আম্মু কঠিন বলে কোন বিপদে ভেঙ্গে পড়ে না । কত সহজভাবে আব্বুকে এড়িয়ে চলছে অথচ হ্রদয়ের কান্না প্রকাশ করছে না । হয়তো আমি দেখছি না আম্মুর বরফ বরফ কষ্টগুলি।

আচ্ছা আম্মা আপনি ইচ্ছা করলে আমাদের সাথে এখানে থাকতে পারেন । নীরবতা ভেঙ্গে আম্মু দাদিকে বলে । এতে দাদির কান্না আরো বেড়ে যায় । না মা এই হয় না । কান্নারত অবস্থায় আম্মুর কথার জবাব দেয় দাদি । এতে আমার খুব মায়া হয় , আমি গিয়ে দাদিকে জড়িয়ে ধরি । এতে যেন পানির স্রোতে সাগরের বাঁধ ভেঙ্গে যায় । সেকি কান্না দাদি আর আমি । না আম্মু বিচলিত নয় । উনি গাছ দুইটার টবে পানি ঢালছেন । আমি রেগে গিয়ে আম্মুকে বলি দেখো আমি আর তুমি দাদির জন্য এই পানি। টবে যেমন পানি দিলে গাছ বাঁচবে তেমনি আমি আর তুমি পাশে থাকলে দাদি বাঁচবে। তখন আম্মু বলে আমিতো বলছি উনাকে এখানে থাকতে কিন্তু তোমার দাদি থাকতে রাজি না । থাকতে মন চায় মা কিন্তু নানাজন নানা কথা বলবে । আর আমি এখানে থাকলে মাহিন আমার সাথে যোগাযোগ করবে যা তোমার ভালো লাগবে না । শত হলেও আমি তার মা । আর তার অন্যায়ের সাজা মা হিসাবে আমিই ভোগ করি । এইটা আমার পাপ্য তাহলে ভাববো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছো ।

না না আম্মা , আমি কখনোই আপনাকে অপরাধী মনে করিনি। মাহিনকেও না । যা হচ্ছে তা আমার কপালে লিখন। এই শহরে কত শত মানুষ আছে নিরহ , একা , সহায়-সম্বলহীন আমরা কি তার হিসাব রাখি । না হয় আমিও তাদের ভিতর একজন । আমি চাকরী করছি মৌরিকে নিয়ে কেটে যাবে বাকি জীবন । আপনি একদম ভাববেন না , শুধু দোয়া করবেন । হ্যা মা দোয়া ছাড়া আর কিবা করতে পারবো । তুমি দোয়া চাইতে হবে না , আর আমিও মুখে প্রকাশ করতে হবে না । এই যে তোমার প্রতি , মৌরির ভালোবাসা । তোমাদের কাছে না পাওয়ার কষ্ট , এটার জন্য মাহিন দায় তবে মা হয়ে তাকে আমি অভিশাপ দিচ্ছি না । কিন্তু মনের মালিকতো সৃষ্টা । তিনিই দোয়া-বদদোয়া মন বুঝে তিনিই নির্ধারণ করবেন। আমি এখানে থাকলে মাহিন আমার মাধ্যমে মৌরির সাথে যোগাযোগ করবে । দশজন দশ কথা বলবে । যেটা তোমার মানতে খারাপ লাগবে। আর আমি এখানে থাকলে সে তার নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। মা ও মেয়ের দায়িত্ব তোমার কাঁধে দিয়ে সে নিশ্চিত থাকবে । আমি তোমার জায়গায় থাকলে বলতাম তার মেয়ে তার কাছে নিয়ে যেতে। (চলবে) I

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৩য় পর্ব ।

বাচ্চার দায়িত্ব মা এবং বাবা দুইজনেরই । তুমি কি পারবে না মৌরিকে ছাড়া থাকতে ,মাহিন যখন সব ভুলে থাকতে পারবে তুমি কেন পারবে না । দাদি রাতে সব গুছিয়ে রাখে , সকালে চলে যাবে । সকালে আমি আর আম্মু দাদিকে রেলগাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসি । দাদি চলে যায় গ্রামের বাড়িতে। দাদি আর আম্মুর একটা দারুণ মিল তা হল দুইজনে শক্ত মনের। কিন্তু আমার মন এদের কারো মত না । আমি এক বোতল পানি কিনে পান করে গলা সতেজ করি । মন চায় দাদির সাথে গ্রামে চলে যেতে । কিন্ত আম্মু !

স্বামী ও স্ত্রীর অবান্তর ইগোতে সন্তান যে কতটা মানসিক বিকালঙ্গ হয় তা উনাদের অজানা থাকে। তবে আমার বেলায় আমি আম্মুকে দোষ দিতে পারছি না । আম্মু আমার আব্বুকে অগাধ বিশ্বাস করেছেন । সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন , কানাডা যাওয়ার আগে আব্বু এমন ছিল না । আব্বু কানাডা গিয়ে অনেক দিন আমাদের কোন খোজ রাখেননি। তখন আম্মুই সংসার চালিয়েছেন ।
আমার আপনজন সবাই আছে অথচ আবার কেউ যেন নেই । আব্বু কি আর আসবে বাংলাদেশে , দাদি কি আর আসবে আমাদের বাসায় । ফোনে হয়তো কুশলাদি জানবো কিন্তু এক বৃত্তে আসা হবে না । আমার খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে । কিন্তু স্টেশনে এত মানুষের সামনে কাঁদলে আম্মুর খারাপ লাগবে । গাড়ি আসবে আবার চলে যাবে আমার আর চড়া হবে কিনা অজানা ।
কয়েক মাস পরে আব্বু ফোন দেয় তবে আমার সাথে কথা বলতে নয় । আমার সাথে সপ্তাহে দুইদিন কথা বলে। আব্বুর ফোন আসলেই আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে দুরে সরে যান। আর কখনো জিজ্ঞাসা করেন না আব্বু কি বলেছে। আব্বু প্রতিবার কথার একটা পর্যায় এসে জানতে চান মৌরি তোমার আম্মু কেমন আছে । তখন আমার খুব রাগ হয় তাই তাচ্ছিল্য করে বলি ভালো!আর এখন রাখি বলেই ফোন কেটে দিই। ফোন আসার সাথে সাথে আমি রিসিভ করে হ্যালো বলতেই আব্বু বলে ফোন তোমার আম্মুকে দাওতো মা । তখন রাগ আসে , বলতে বাধ্য হই আম্মু কথা বলবে না । তখন আব্বু নরম সুর করে বলে মৌরি ফোনটা জলিকে দাও । আমি আম্মুর রুমে গিয়ে বলি আব্বু তোমাকে চাইছে আম্মু । উনি কোন কথা না বাড়িয়ে ফোন নিয়ে বলে মাহিন আমি জলি বলছি । আমি দেখলাম বেশ কিছু সময় চুপ থেকে হ্যা শুনছি বলো আম্মু ,তারপর সবশেষে বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি আম্মাকে ফোন করে বলে দিব । ফোন কথা বলে আম্মুর কোন ভাবাবেগ দেখি না । আমি চাই আব্বু যেন আম্মু কটু বলে শাসিয়ে দেয় । আমার রাগ ধরে রাখতে পারি বলে কান্না আসে । আমি দৌড়ে আমার রুমে এসে দরজা বন্দ করে জোরে ফ্যান চালিয়ে দিই। কাঁদতে থাকি বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে ।

আম্মু সূর্যের রশ্মি কখনো সহ্য করতে পারে না । বাহিরে বের হলেই সান-গ্লাস পরেই বের হতে হয়। আর আজ গ্লাস দিয়ে দেখা দিনের আলো সেই নারীকে মানুষের কুৎসিত কাজ সহ্য করতে হচ্ছে । খালি চোখে দেখছে দুনিয়া কত কণ্টক । আমার প্রতি , আম্মুর প্রতি আব্বুর কি একটুও মায়া হলো না। চারজন মানুষ এক ঘরে থেকে কত আনন্দ , কত হাসি মজার গল্প আছে । কত সহজে মানুষ সব ভুলে যায়। আজ দাদি গ্রামে নিঃসঙ্গ , অসহায় । আম্মু জীবন জীবিকার জন্য রোজ ছুটে চলা । আর আমি কলেজ হতে এসে নীরব ভূতের বাড়ির পাহারাদার । (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৪র্থ পর্ব ।

আম্মু কেন তুমি আব্বুর সাথে কথা বলেছো। আম্মু সেই আগের মত ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে আমাকে কাছে টেনে নেয়। শুনো মা মৌরি , কোন অভিমান – অভিযোগ ,রাগ ও আবেগের অবিশিষ্ট মাত্রও তোমার আব্বুর প্রতি নাই । আমি ফোন রিসিভ না করলে উনি ভাববেন আমি তার জন্য কষ্ট পাই বলে রাগ করি । তোমার আব্বু আমার জীবনের কোথায়ও নাই। কথাটা শুনে আমার আবার কান্না পায় , আমি আরো জোরে কাঁদতে থাকি আম্মুর সামনে। আম্মু উঠে চলে যায় । আমি ভাবতাম আব্বু এসে একদিন হাত জোড় করে আম্মুর কাছে মাফ চাইবে আর আম্মু ক্ষমা করে দিবে। আমি এখন বুঝতে পারলাম আমার আম্মু আছে , আব্বু আছে কিন্তু আমরা আর কখনোই এক পরিবার হবো না । মনে হয় আমার জন্মটা তাদের ভুল ছিল। নিজের প্রতি মায় হয় না , করুণা হয়। এখন বুঝতে পারি আব্বু কেন আমার দুধ আনতে অনিহা করতো । কোথায় ভুল আম্মুর নাকি আমার , নাকি সৃষ্টিকর্তার । অথচ কখনো ঝগড়াও দেখি নাই দুইজনে। নাকি আব্বু আমার আম্মুকে মন হতে মেনে নিতে পারিনি । কিন্তু কেন । কিন্তু কেন আমাকে পৃথিবীতে আসতে হলো ! তাই হয়তো আব্বু কানাডা গিয়ে পালিয়ে বাঁচে। মিথ্যার আশ্রয়ে নিজের স্বাধীনতা নিয়ে খোজে। আব্বু নিজে ইচ্ছে করেই আমাদের সংসারটা ভেঙ্গে ফেলেছে , যা আর কখনো জোড়া লাগবে না ।

পরের দিন আম্মু দাদিকে ফোন করে এবং অনেক সময় ধরে কথা বলে। এক পর্যায় বলে আম্মা মাহিন আপনাকে নিয়ে অনেক চিন্তায় আছে। আপনি নাকি তার ফোন রিসিভ করেন না । আর আম্মা আপনি ফোন রিসিভ না করলে মাহিন বার বার আমার কাছে ফোন করবে যা আমার ভালো লাগবে না। আপনি ফোন রিসিভ করে যা বলার বলে দিবেন। দাদি প্রতিদিন ফোন দিয়ে আমাদের খোজ খবর নেয় । আম্মুর সাথে দীর্ঘক্ষন কথা বলে , মাঝে কান্নাকাটিও করে। বেড়াতে যেতে বলে কিন্তু আম্মু সময় করতে পারে না। তাই নানির বাসায় বেড়াতে যেতাম আগে । এখন আর সেখানেও যাওয়া হয় না। গেলে নানি আকাশ বাংলার খবর পড়া শুরু করে যেন । নানি মামা ও মামনি আমার সামনেই আব্বুকে নিয়ে নানা আজেবাজে কথা বলে যা শুনতে অরুচিকর । আর আম্মুকে বলে চাকরী করিস বলে কি হয়েছে , মৌরি কি তোর একার মেয়ে। মাহিনকে বলবি মৌরির সমস্ত খরচ দিতে । তোর একটা ভবিষ্যৎ নাই। শেষ বয়সে তোকে কে দেখবে , এখন কিবা এমন বয়স তোর । সারা জীবন কি একা থাকবি। আম্মু তখন খুব রেগে যায়। বলে আমার তোমাদের বাসায় আসাটা ভুল হয়েছে । বাসায়ই থাকা ভালো ছুটির দিনে । আর তখন নানি চুপ হয়ে যায়।

আমারও একদম ভালো লাগে না নানির বাসায়। তাই আসতেও মন চায় না তবুও আসি কারণ আমাদের কোথায়ও যাওয়ার তেমন একটা জায়গা নাই। আসলে প্রত্যেক মা তার সন্তানের ভালোটাই চিন্তা করে। যেমন আম্মু আমার জন্য দুনিয়া ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু আমাকে না। মান মর্যদায় সন্তান যেত বড় হোক পিতামাতার কাছে সেই শিশুটি থাকে। সন্তানের বিপদে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী চিন্তিত হয় পিতামাতা অথচ এক সময় আমরা কতনা অবহেলা করি। ভুলে যাই আমি একদিন শিশু ছিলাম। তাঁরা বৃদ্ধ হয়ে এখন শিশুর মত আচরণ করছে । একদিন আমিও এই পর্যায় আসবো। সকালে উঠে দেখি সুর্য পুর্ব দিগন্তে উঠে জানান দিচ্ছে আলোর । আর দিন শেষে বুঝি না সুর্য এখন নাই এখন অন্ধকার ।

আব্বু আর আম্মুর তালাকের পর অন্য আত্নীয় স্বজন সবাই এড়িয়ে চলে , আড়চোখে দেখে। আর আমার মামনি খুব ভালো রান্না করে । তাই আমি বায়না ধরি নানির বাসায় যাওয়ার। মাঝে মাঝে মন চায় যেন পাখীর মত উড়াল দিই । মা আর মেয়ে কতই আর কথা বলা যায়। আম্মু সকালে অফিস চলে যায় , আমি উনার আগেই কলেজ চলে যাই । রাতে দেখা আর একসাথে খাওয়া এই মা মেয়ের মিলন । শুক্রবার আসলে আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি আর ভাবি এই মা যদি আমার না থাকতো তাহলে কত না কষ্ট হতো । আম্মু একটু যদি নানির কথায় সায় দেয় তাহলে আমাকে কখনো তারা মেনে নিতো না । মা ছাড়া হয়ে দাদির সাথে গ্রামে চলে যেতে হতো। দাদি কি আর মায়ের অভাব পূরণ করতে পারতো। (চলবে)।

মেয়ে ও মায়া , মাদক ও রাষ্ট্র ।
৫র্ম পর্ব ।
বছরের শেষ মাসে আমার আর আম্মুর লম্বা ছুটির দিন। একদিন রাতে খাবার শেষে আমি আর আম্মু ভাবতে লাগলাম কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়। কক্সবাজার , রাঙ্গামাটি নাকি সাজেক বেলী । মা মেয়ে ভাবতেছি আর ভাবতেছি এমন সময় আম্মু বললো মৌরি তোমার দাদির কাছে গেলে কেমন হয় । আমি আনন্দে লাফ দিয়ে উঠি , এবং আম্মুর গলা জড়িয়ে ধরে বলি ধন্যবাদ মামনি , তুমি সত্যিই অনেক অনেক ভালো। সকালে উঠে আম্মু আর আমি শপিং করলাম দাদির জন্য সহ। এবং পরের দিন সকালে উঠে রওয়ানা হলাম গ্রামের উদ্দেশে । আমি আর আম্মু যখন বাড়ির গেইটের সামনে রিক্সা হতে নামবো তখন পাশের বাড়ির এক চাচ্চু দেখতে পায়। উনি এসে আমাদের ব্যাগ রিক্সা হতে নামিয়ে গেইটের সামনে রেখে গেইটে ধুমধাম ধাক্কা দিতে লাগে। এবং চেঁচিয়ে দাদিকে ডাকতে লাগে। দেখো চাচী কে এসেছে , গেইট খোলো জলদি।

আমরা চাচার পিছনে দাঁড়িয়ে আছি । দাদি এসে গেইট খুলতে চোখ পড়লো আমাদের উপর । এমনি হাত বাড়িয়ে দিলো আমার দিকে , বললো মৌরি । আমি দৌড়ে গিয়ে দাদিকে জড়িয়ে ধরলাম। দাদি তখন কাঁপছে মনে হয় যেন এখনি পড়ে যাবে মাটিতে
অথচ দাদি শক্ত মনের মানুষ , না হলে একা একা বাড়িতে কিভাবে থাকেন। দাদি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বার বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন । আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে আমাদের ভিতরে যেতে বলেন। আর আম্মুকে বলতে লাগলেন জলি মা , তুমি আমার সত্যিই মা । একমাত্র মা‘ই বুঝতে পারে সন্তান কি চায় । এখানে একা একা আমি যেন মরার আগেই মরে আছি। তোমরা এসে আমাকে অক্সিজেন দিলে । কথা বলতে বলতে আমরা ঘরে আসি , ড্রয়িং রুমে বসে দাদি আমাদের জন্য নাস্তা তৈরি করে । চাচ্চুকে বলে বাবারে আমার মার জন্য কচি নারিকেল নিয়ে আসো । গাছ হতে কিংবা বাজার হতে তুমি যেখান হতে পারো নিয়ে আসো। কচি নারিকেলের পানি আমার মায়ের খুব প্রিয়। আম্মু মুচকি হেসে বলে না থাক আম্মা আপনি এত অস্থির হবেন না । আমরা থাকবো কিছু দিন , আমাদের এখন ছুটির সময় । পরে খাওয়া যাবে , ভাই আপনি বসেন আমাদের সাথে। সত্যিই মা তোমরা থাকবে কিছু দিন আমার কাছে! জ্বী আম্মা , থাকবো ।

দাদি আনন্দে বার বার কেঁদে উঠছে । আমি এই রুম ওই রুম ছুটাছুটি করতেছি। এই ফাঁকে দাদি ড্রয়িং রুমে থাকা আব্বুর ছবিটা চাচাকে দিয়ে অন্যত্র সরিয়ে ফেললেন। দাদি মনে করে আম্মু এই ছবি দেখলে মন খারাপ করবে , এবং নিজেকে অপ্রস্তুত মনে করবে এইখানে। দাদি আম্মুকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে আর নানা প্রশ্নো করছে । মা যেমন নিজের মেয়েকে অনেক দিন পর দেখলে আদর যত্নে কমতি না হয় তার চিন্তায় থাকে , তার চেয়েও বেশী দাদি করছে। ভ্রমনের ক্লান্তি যেন উধাও দাদির বাড়িতে। আম্মু দাদিকে কাজে সাহায্য করতে চাইলে দাদি বারণ করে , আম্মু না শুনলে আদর মিশ্রিত দমক দেয়।

স্নিগ্ধ বিকাল , গ্রামের সবুজ প্রকৃতি । কৃষকদের ধান কাটা আর কৃষাণীদের দলবেধে উঠানে কাজ করা শ্যামল বাংলার চিরাচরিত প্রথা আমাকে ব্যাকুল করে। একদল ছেলেমেয়ে ধান কাটা জমিতে ধান কুড়িয়ে-পাওয়া ধান আমাকে দেখায়। আমি তাদের কাছে ডেকে ছবি তুলি মোবাইলে। আরেকটা ছেলে ইদুরের গর্তে ধান খোজে । হাঁড় কঙ্কাল ছেলেমেয়ে গুলির হাসি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুন্দর । আমি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করি ফেলি । তারা ধান কুড়ানো রেখে আমার সাথে ছুটাছুটিতে মেতে উঠে। একটা লোক তিনজন লোক নিয়ে পাশ কেটে চলে যায়। আমি সালাম দিলে জবাব না দিয়ে পাশ কাটে। একটা ছেলে বলে আপা এইটা কবির মেম্বার । সরকারী সব চাল ডাল এই বেটা খায় । আমার বাপ কাজ করতে পারে না অসুখ তবুও একটু রিলিফও দেয় না। সবাই অনেক ভয় করে তাকে। আপনার দাদি আমাদের অনেক উপকার করে । আমার মা কাজ করে দিয়ে আসে দাদির । (চলবে) ।

করোনায় সবচাইতে লাভবান দেশ ভিয়েতনাম

২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসে কুপোকাত হয়ে গিয়েছিল ভিয়েতনাম। এবার যখন ভিয়েতনামে করোনা ছড়ালো, পূর্বাভিজ্ঞতা থাকায় তারা সে করোনা খুব ইফেশিয়েন্টলি হ্যান্ডল করলো। ফলাফল করোনায় ভিয়েতনামে একটা লোকও মারা যায়নি। ভিয়েতনাম একদিনের জন্যও তাদের দেশের কলকারখানা বন্ধ করেনি। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশকে টপকে দ্বিতীয় স্থানে তারা চলে গিয়েছে সেই ২০১৯ এর নভেম্বরেই। এদিকে করোনায় ধাক্কা খাওয়ার পর চীন থেকে কারখানা সরিয়ে নিতে তৎপর হয়েছে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ও মার্কিনীদের তৎপরতা দেখে নড়েচড়ে বসেছে জার্মানীও।

জাপান অলরেডী তাদের কারখানাগুলো চায়না থেকে সরাতে ২৩.৫ বিলিয়ন ইউয়ানের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত পশ্চিমারা। Trump যদি আবারো ক্ষমতায় আসে তবে চীনের সাথে মার্কীনীদের দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে। চীনের উপর আরোপিত শুল্কারোপের সময় আরো লম্বা হবে। এসব বিবেচনায় জাপান, নেদারল্যান্ড এবং জার্মানী ইতোমধ্যে তাদের চায়না থেকে কারখানা সরিয়ে সেগুলো প্রতিস্থাপনের বিকল্প খোঁজা শুরু করেছে। এবং তাদের দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো বিকল্প হলো ভিয়েতনাম। ইতোমধ্যে জাপানের টয়োটা, মার্কিন প্যানাসনিকসহ ২৬টি প্রতিষ্ঠান প্রায় কনফার্ম করেই দিয়েছে তাদের পরবর্তী গন্তব্য ভিয়েতনাম। শ্রমিকের সহজলভ্যতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, চায়নার বর্ডার, স্মুথ কাস্টম প্রসেস থাকার কারণে ভিয়েতনামই হচ্ছে চায়নার অন্যতম বিকল্প।

কিন্তু আমরা কী করব? আমাদের চার দশকের বেশি বয়স্ক এই পোশাক শিল্প কী এই বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়ায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে? আমাদের স্কিলড ওয়ার্কার আছে, আছে উপযুক্ত প্রযুক্তিও, আছে স্বনামধন্য ফ্যাশন ডিজাইনার। সবকিছু থাকার পরেও চার দশকে আমাদের কোন আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড নেই। এমনকি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কোন প্রচেষ্টাও নেই। বিদেশী ব্র্যান্ডের দয়া দাক্ষিণ্যের উপর তিন কোটি মানুষের খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের নিশ্চয়তা টিকে থাকতে পারেনা। এখনই যদি এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য বিকল্প চিন্তা না করা হয় তবে অচিরেই এই শিল্প এদেশ থেকে ভ্যানিশ হবে। কারণ পাকিস্তান, কম্বোডিয়া আর মায়ানমারের মত দেশগুলো এই শিল্পে আমাদের ঘাড়ের উপর ইতিমধ্যে প্রতিযোগীতার নি:শ্বাস ফেলছে।

এত এত কারখানা ভিয়েতনামে যাওয়ার ঘোষণাতেও ভিয়েতনাম হাত গুটিয়ে বসে নেই। তারা মনোযোগ দিচ্ছে তাদের বর্তমান প্রধান আয়ের উৎস পোশাক শিল্পের দিকে। তারা দেখছে বিদেশী ব্র্যান্ডগুলো কোটি কোটি ডলারের প্রোডাক্ট নিয়ে গিয়ে পেমেন্ট না দিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়ে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করছে। ফলে তারা আর পেমেন্ট পাচ্ছেনা। এথেকে বুঝতে পেরেছে আসলে অনন্তকাল ধরে অন্য ব্র্যান্ডের অর্ডারকৃত পোশাক বানিয়ে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যাবেনা। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে নিজেদের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে হবে।তাই ভিয়েতনাম ঘোষণা দিয়েছে আগামী ১০ বছরে তারা অন্তত ২০টি আন্তর্জাতিক ব্র‍্যান্ড প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে। এবং এই ব্র‍্যান্ডগুলো প্রতিষ্ঠায় যেখানে যে ধরণের সহায়তা দেয়া দরকার ভিয়েতনাম শিল্পমন্ত্রণালয় তার সবধরণের সহায়তা করবে। ভিয়েতনামীরা বীরের জাতি। দীর্ঘ এক দশক মার্কিনীদের সাথে লড়াই করে তারা তাদের দেশ মুক্ত করেছে। গত শতকে মার্কিনীরা একমাত্র ভিয়েতনামীদের কাছেই মুখোমুখি যুদ্ধে পরাস্ত হয়েছে। অতএব ভিয়েতনাম দশ বছরে অন্তত ১০ টা আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেই ছাড়বে। আর আমরা ঘোষণা দিয়েছি শ্রমিক ছাঁটাইয়ের । প্রশ্ন হল কোথায় গেল জনগণের রক্ত পানি করা প্রণোদনা । কোথায় গেল শ্রমিকের লাঞ্চনা গঞ্জনা ।

সূত্রঃ LinkedIn

ছবিঃ ন্যাট।

ভুটান গোটা জাতি একটা বৃহত্তম পরিবার তাই সারা বিশ্বের বিস্ময় সৌন্দর্যের এই লীলাভূমি

প্রাকৃতিক নৈসর্গের লীলাভূমি ভুটান। আপেল, আঙ্গুর, কমলার দেশ ভুটান। করোনা মোকাবেলায় ভুটান বেশ সফল। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ২০ জন। একবার ভুটানে গিয়ে মোট ১২ দিন ছিলাম। ভুটানের আয়তন ১৪৮২৪ বর্গমাইল।জনসংখ্যা আট লক্ষের মতো। ৭০% বৌদ্ধ, ২৯% হিন্দু। ভুটানে মুসলমানের সংখ্যা মোটে ৭০০০ জন।

এখনো ক্রিজে টিকে আছে হিমালয় দুহিতা ভুটান। ভূবেষ্টিত এই দেশটি বিশ্বের কাছে এক রোল মডেল। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভুটানে কেউ মারা যায়নি। দেশটির শীর্ষ দৈনিক কুয়েনসেল তার অনলাইন প্রচ্ছদে এই অঞ্চলের আক্রান্তদের তথ্য দিয়ে চলছে। যেখানে ভুটানের নাম নেই। তারা লিখেছে, করোনা রোগী এই অঞ্চলে: ভারত এক লাখ ৬ হাজার ৪৭৫, সিঙ্গাপুর ২৮ হাজার ৭৯৪, বাংলাদেশ ৩২ হাজার ০৭৮, থাইল্যান্ড ৩০৩৩ এবং নেপাল ৪০২।

অবশ্য গোটা অঞ্চলের মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের থেকে অন্যরা অনেক ভালো অবস্থানে আছে। মালদ্বীপে করোনা রোগী ১২০৪ এবং সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯১ জন। মারা গেছেন ৪ জন।
ভুটানে করোনা রোগী ২১ জন। প্রতিবেশী মিয়ানমারও উদ্বেগজনক অবস্থানে এখনো নেই। তাদের করোনা রোগী ২০৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১০৮ জন। মারা গেছেন ৬ জন। যদি মনে করা যেতে পারে জান্তা শাসিত দেশটি যথেষ্ট তথ্য লুকানোর সুযোগ রেখেছে। শ্রীলংকাও অনেক ভালো অবস্থানে। শ্রীলংকাতেও মোট রোগী ১০৫৫ এবং মারা গেছেন মাত্র ৯ জন। নেপালে মারা গেছেন ৩ জন।

এই অঞ্চলের পাঁচটি দেশে মোট মৃতের সংখ্যা মাত্র ২৮ জন নির্দেশ করছে যে, সবটাই ছোট দেশ কিংবা জনসংখ্যা কম বলেই খাটো করে দেখা যাবে না। ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতার দিকটিকে উপেক্ষা করা যাবে না। এগুলোর কোনোটিই উন্নত নয়। এসব দেশের ক্ষমতাসীন নেতারা অবশ্য তাই বলে গর্ব করেন না। বলেন না যে, যুক্তরাষ্ট্র বা অমুক দেশের থেকে ভালো আছি। ভুটান সত্যি বিশ্বের বিস্ময়। এই পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়, বিশ্ববাসীর চোখ ভুটানের উপর। তারা দেখছে ভুটান কি করে মোকাবেলা করছে। চলতি সপ্তাহে বহু আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করেছে যে, ভুটান কি করে সাফল্যের সঙ্গে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে।

গত সোমবার ইংল্যান্ডের হাউস অব লর্ডসে ব্যারোনেস বাসকোম্বে ভুটানের রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ভুটান যেভাবে কোভিড–১৯ মোকাবেলা করছে, তার দক্ষতার প্রশংসা করেন। ভুটানকে অভিনন্দন জানান। ভুটানবাসির নিরাপদ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ কামনা করে ব্যরোনেস বলেন, মাই লর্ডস, আমি ভুটানের রাজার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি এবং তার জনগণকেও। কারণ তারা এই ভাইরাস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছে।

যখন এই ধরনের স্বীকৃতি আমাদেরকে একটা সুখানুভূতি এনে দেয়। কিন্তু আমাদের ভুললে চলবে না যে, এটা আমাদের সামনে আরো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। কারণ এখনও করোনা বিরোধী লড়াই শেষ হয়ে যায়নি। আমাদেরকে আরো অনেকটা পথ এগিয়ে যেতে হবে। আমাদেরকে যেটা অবশ্যই বুঝতে হবে, ভুটানকে বিশ্ববাসী কেন প্রশংসা করছে, তার কারণ বহু দেশ ত্রুটিপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এবং সেসব দেশে করোনা ভাইরাস এক ভয়ঙ্কর আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ভুটানবাসীর সৌভাগ্য যে ভুটানের সিংহাসনে এক সদাশয় বিচক্ষণ রাজা রয়েছেন। তিনি এই লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। স্মরণকালের ইতিহাসে এরকমের মরণঘাতী ব্যাধি মোকাবেলার কোনো নজির বিশ্বের কাছে নেই।

এটা এমন একটা সময় যখন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ভাইরাসের রাজনীতিকরণে ব্যস্ত রয়েছেন এবং তারা তাদের সামনে বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন। আর তাই অনেকেই মনে করেন, নেতৃত্বদান গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাসী তাই সেদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছেন। আর সেকারণেই আজ বিশ্ববাসী শ্রদ্ধার চোখে ভুটানের চোখে চোখ রাখছে। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করে বলছেন, কি করে সম্পদের অপ্রতুলতা এবং নানা প্রতিকূলতার মধ্যে থাকা ভুটান করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাফল্যের পরিচয় দিতে পেরেছে। এটা সম্ভব হয়েছে তার কারণ যেকোন প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ভুটান এক জাতি এক রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় দিতে পেরেছে। যেন গোটা জাতি একটি বৃহৎ পরিবার।

সামনের দিনগুলোতে আমাদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে তা হচ্ছে বিদেশ প্রত্যাগতদের নিয়ন্ত্রণ। যেসব দেশ করোনা আক্রান্ত, সেসব দেশ থেকে যারা আমাদের দেশে ফিরে আসবে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করাই হলো ভুটানের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু অবশ্যই আমাদেরকে বর্তমানের চেতনায় সেই চ্যালেঞ্জে জয়ী হতে হবে। সীমান্ত দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রবেশ সবথেকে বড় ঝুঁকি ভুটানের সামনে। আমাদের অবশ্য শক্তিশালী সার্ভিলেন্স পদ্ধতি রয়েছে। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে এর উপর আমরা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করতে পারি না। সে কারণে ব্যক্তি যিনি আক্রান্ত হবেন, তার সততা এবং নৈতিকতা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনি যদি সীমান্ত পেরিয়ে কোথাও ভ্রমণ করেন, তাহলে আপনাকে অবশ্যই টেস্ট সেন্টারে যেতে হবে। এবং আপনার ভ্রমণ বৃত্তান্ত প্রকাশ করতে হবে। তাহলে আপনাকে খুঁজে বের করা সহজ হবে। এমনকি সংক্রমণের বিস্তার রোধের ক্ষেত্রেও তা সহায়ক হবে। পত্রিকাটি বলেছে, আজ আমাদের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আয়ত্তের মধ্যে রয়েছে এবং আমাদেরকে এই ধারা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। আমরা এমন কিছু করবো না, যা আমাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে একটা ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ভুটান খাদ্য ঘটতি নিয়ে চিন্তিত। কারণ তাদের খাদ্যসামগ্রীর সিংহভাগই ভারত ও বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। কুয়েনসেল অন্য একটি সম্পাদকীয়তে বলেছে, সীমান্তের ওপারের উৎসগুলোতে ঝুকি তৈরি হলে আমরা কি খাব, সেটা ভাবতে হবে এখনই।

(সূত্রঃ মানবজমিন)।