ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট

সুবর্ণ গোলক

বিচ্ছিন্ন এক উপদ্বীপে অপেক্ষারত প্রেমিকা
জ্যোছনা রাতে ময়ূর পালক কলম তুলে নেয়।
প্রেমিকের তরে একটি একটি করে সংলাপ
লিখে যায় প্রবাল আর ঝিনুকে মোড়া পাতায়।

তার কাপড়ে ঝলমলে তারা, আঁচলে রামধনু,
খোলা চুল বাতাসে ভাসে, কানে মোতির দুল।
কাজল কালো চোখে হাসির বিদ্যুৎ খেলে যায়।
শঙ্খ প্রবালের হার গলায় দোলে, নাকে নোলক,
দু’ হাতে লাল মোতির চুড়ি আগুণ ঝলসায়।

তার রূপে মুগ্ধ হয়ে রাত পাখিরা ডানা ছড়িয়ে
বসে থাকে তার পাশে, চুপচাপ, তারাও জানে।
লেখা শেষে প্রেমিকা যত্ন করে মুড়ে নেয় পাতা,
চিঠিটি বেঁধে দেয় শুভ্রবসন লক্ষী পেঁচার পায়ে।

সে উড়ে চলে যায় বহুদূর, সারা রাত পার করে
ভোরের উজানে সেই তার ঘরের জানালায় বসে।
ঘুমে ঢোলা প্রেমিক চোখ মুছে হাতে নেয় সে চিঠি
তাতে লেখা, “সুবর্ণ গোলক সে শুধু তোমারি তরে।”

কলমিলতা

তুমি সব জানালা খুলে রাখো
আমি খুজে বেড়াই তোমার অস্তিত্ব
জ্যোৎস্না রাতে নক্ষত্রেরা স্থান বদলায়।
তোমার স্নেহের ছায়া পেলে বল কে চায়
স্বর্ণ সিংহাসন অথবা ব্যাংক ব্যালেন্স?
তুমি নাওনি আমায় তাই তাই অভিমানে
আজ পদ্মকলি আধবোজাই রইলো
পাখিরাও আজ ভালবাসার গান গায়নি
তোমার শ্রান্ত পায়ের ছাপ এখনো স্পষ্ট
তুমি আমায় নাওনি তাই আকাশটাও থমথমে।

শহরতলীতে ইভনিং ওয়াকের ইমেজারি

ind

ক্রমশঃ দিনের আলো ফিকে হয়ে আসে
আবছায়া আঁধারে শহর ঢেকে যায়
দূরে নদীর জলে বোটগুলো ঢেউয়ের তালে তালে দোলে
আরও দূরে নদীর ওপারে শহরের
উঁচু উঁচু ইমারতের মাথা মিশে আছে মেঘেদের দেশে
পাশে প্ল্যানেটোরিয়ামের ডিম্বাকৃতি চূড়া
গাছের ডাল হেলে হেলে পড়ে যায় জলের উপর
পাতাগুলো জলের সাথে ভেসে ভেসে ওঠে
ইঁটের রাস্তা আর পাশে জগিং ট্রেইল সোজা চলে গেছে বহুদূর
যেতে যেতে হাঁপিয়ে গেলে বেঞ্চিতে বসে যাই
পাশে হেঁটে যাওয়া হাঁসগুলোকে হাত নেড়ে নেড়ে ডাকি
তারা প্যাঁক প্যাঁক করতে করে শাবকগুলি নিয়ে রাস্তা পেরিয়ে যায়।

প্রতিফলন

ঝরণার পাশে পাথরের সিঁড়িতে
জলে পা ডুবিয়ে মেয়েটি বসে আছে
হাতে তার একটি প্রদীপ জ্বলছে
পুরাতন সাদা সিফনের জামাতে
আলো পড়ে বেশ চিকচিক করছে
তার সোনালী চুল আলতো বাঁধা
আকাশে সোনালী ও নীল আঁকা
তার প্রতিফলন পড়ে প্রতিটি ঢেউয়ে।

আখর

ঝরা পাতার প্রতিটি আখরে তার নাম
বহুদিন জলের দাগে নাম অদৃশ্য ছিল
সেদিন সকালে আলো পড়ে সরোবরে
মৃদু হাওয়ায় কেঁপে ওঠে দেবদারু পাতা
তার নাম জ্বলজ্বল করে চোখের সমুখে
মৃদু স্বরে তার চেনা নাম ধরে ডেকে উঠি
জলে ভাসিয়ে ছিলাম সবুজ কেয়াপাতা
তারা প্রদীপ হয়ে তার নগরে ভেসে যায়।

বিভোর

জীবনের সমান্তরালে এক নদী বয়ে গেছে
তার বুকে ফুটে ওঠে থোকা থোকা ফুল
পাহাড় মাঝে মাঝে সেই ফুলে হাত রাখে
সবুজ ছায়া মেলে পাইনের সারি দাঁড়িয়ে

আকাশ তখন তারাদের গানে বিভোর
ভোরের আলো ফুলের রেণু মেখে উচ্ছ্বল
মেঘের ঢেউ মুছে দিয়েছে রাতের কালোরেখা
শিশির ভেজা মাঠে কদমের পাতা ঝরে যায়।

বিশ্বকবিকে শ্রদ্ধাঞ্জলি

ওগো মহান কবি, বিশ্বকবি
আজ তোমার জন্মতিথির
এই মিলন সন্ধিক্ষণে
লহ মোর সহস্র প্রণাম।

তুমি মোর গুরু, তুমি মোর পিতা
তোমার গানে পাই আমি কথা —-
সে গান আমার কণ্ঠে বাজে।

তার সুরের কোমল মূর্ছনায়
আমি মুগ্ধ, অভিভূত
নয়নের ধারা বয় অবিরত।

আমি খুঁজে পাই তোমায়
তোমারি গানে গানে।
হে কবি, তোমার ওই সুন্দর
দেবোপম কান্তি স্নিগ্ধতায় ভরপুর।
সেই রূপ আমার মনে আনে
প্রগাঢ় শান্তির অনুভূতি।

কে বলে তুমি নেই ?
তুমি আছ, তুমি থাকবে,
এই মানবজাতির হৃদয়ে
প্রতিদিন বহুদিন চিরন্তন ভাবনায়।

সুরে সুরে ঋতু

পিয়ানোর রিডগুলি সুরের মূর্ছনায় ভেঙে পড়ে
শিল্পী তাঁর মনোহর সুর ও তালে
প্রকৃতির ঋতু পরিবর্তনের মহিমা গেঁথে যান।

তাঁর সুরের বিস্তারে গাছের ডালে ডালে
সঞ্জীবনী মন্ত্র ঢেলে দেয় শরৎ,
সবুজ পাতায় পাতায় ভরে ওঠে গাছের শাখা প্রশাখা।

সুরের মোহময় আকুতি গাছের পাতা ঝরানোর সুর তোলে
হলুদ, লাল শুকনো পাতা খসে গাছের তলায় জমা হয়,
কিছু বা হাওয়ার ঘূর্ণিতে ঘুরপাক দেয়,
শুকনো ডালপালার ফাঁক দিয়ে রোদের সোনালী আলো
বন বনান্তরে ছড়িয়ে যায়।
মলিন পৃথিবী যেন উত্তাপ পেয়ে হেসে ওঠে।

শিল্পীর সুর উঁচু লয় তুলে আবার নিচু হয়ে আসে।
পিয়ানোর রিড লয় কমিয়ে শীতের আহ্বান করে।

কবিতা

5c

লাল কলসে ধান রেখেছি
নীল পারিজাত ফুল
সোনা বন্ধু কোথায় গেলি
বাঁধি এলো চুল
গাঙের জলে ভরা ভাদর
নৌকা দেব পাড়ি
ভয়ে কাঁপে মনটা আমার
কেমনে যাব বাড়ি ?
বিজলি হানা আকাশ তলে
কালো মেঘের পাল
আয় বন্ধু ফিরে আয়
আজ নয় ত’ কাল।

পল্লবী

out.

বৃষ্টিভেজা তোমার মুখ
ভালোবেসে বুঝি বেড়েছে অসুখ
তুমি কি একটি কবিতা?
রাতের তারা হয়ে জ্বলজ্বল করো?

খরস্রোতা নদী তোমার বুকে
ভালোবাসা হয়ে জেগে থাকে।

চোখের তারায় মোমবাতির শিখা
মৃদু হাওয়ায় থরথর কাঁপে,
মনে হয় দূরের কোনো শহর
থমকে থেমে আছে।

তোমায় আমি

ind

তোমায় আমি শ্মশানের অখণ্ড নীরবতা এনে দেব
তোমায় আমি কাঁঠাল চাঁপার সুগন্ধে ভরিয়ে নেব
তোমার আহত শরীর ওষধি প্রলেপে শুশ্রূষা করব
তুমি শুধু তোমার আশীর্বাদী হস্ত এ ভাবে না বলে
না কয়ে আমার বিরান দালান হতে সরিয়ে নিও না।

ওগো সুকন্যা

তুমি কোন দেবতা প্রেরিত ওগো সুকন্যা ?
সুরেলা গানে স্পর্শ করে যাও আমাদের শহর
এতদিন তোমায় বালিকা ভেবে অন্য এক
অপরাজিতা ফুলের সাথে সম্বচ্ছরের প্রেম।

এই যে তুমি ফুলের মত হেসে হেসে ওঠো,
নির্জনতার প্রহরে টুপটুপিয়ে চাঁদের আলোয়
নক্ষত্রদের জেগে ওঠা দেখতে অভ্যস্ত আমি
মধ্যরাত্রে মোমবাতি প্রহরে নেশা খুঁজে ফিরি।

জানো না কোনো সদ্যজাগা প্রহরে তোমায়
ছোঁব বলে তোমার ছবি কর্নিয়াতে গেঁথেছি?
আর সেই মুহূর্তেই একটি শুকতারা তোমায়
চোখ থেকে খুলে নিয়ে আলোয় ধুয়ে নিল।

জানলা দিয়ে হাত ছুঁয়ে যায় সোনা রোদ্দুর,
বিটপী শাখায় তোমার মুখটি যেন পদ্মফুল,
আনমনে তোমার ঠোঁটে আল্পনা এঁকে নি,
অবশিষ্ট রসটুকু চোখের পাতায় ছুঁয়ে দিই।

সুকন্যা, পাললিক শিল্পের শেষ প্রতিভাস
তোমার শরীরেই লিখে রাখবে আমার স্বপ্ন।
সাগর ছেঁচে পাওয়া যে মুক্ত, তোমার চুলে
কাঁটার সাথে জড়িয়ে নেব শেষবারের মত।

রংবাহারি ফুলের মেলা

বাগানের ফুলটি জানে
ফুটলে ভালোবাসা হয়

যুঁইফুলের গন্ধ মেখে
অমৃতপাত্রে হাত রাখি।

বাহারি পাতার ঝাড়ে
মৃদু কম্পন খেলে যায়

দুটো পদ্মের পাপড়ি
খসে পড়ে মৃদু ঠোঁটে।

গভীর গন্ধে ঘন শ্বাস
হাতের পাতায় মুখটি

গাল থেকে ঝরে পড়ে
চুয়া চন্দন আর আবীর।

সাঁওতাল মেয়ে

024x478

মেঠোপথের আল ধরে আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে
হেঁটে আসে সেই সাঁওতাল মেয়ে ~
মাথায় তার চুড়ো করা খোঁপা
ঠোঁটে পানের লাল,
কাঁধে ঝোলা রুপার দুল,
নাকে তিলক মাটির ফোঁটা,
দুগালে দুটো আলতার ফোঁটা
পায়ে রুপোর নূপুর
মেঘলা দূপুরে আলুথালু বেশে গান গেয়ে
রিনিঝিনি পায়ে হাঁটে ওই সাঁওতাল মেয়ে~

ত্রস্তনয়ন কাজলে আঁকা
টিকোলো নাকে চকচকে ফোঁটা
আলতায় রাঙা ছোট পা দুটি ফেলে
একরাশ খুশি রেখে গেল ওই সাঁওতাল মেয়ে ~
বাঁশপাতা সরসর করে কেঁপে ওঠে
সর্ষেফুল ঢেউ তুলে মিলিয়ে যায়
একঝাঁক পাখি নীল আকাশের বুক চিরে
এলোমেলো হাওয়ায় দাগ কেটে যায়
সব কিছু ছাড়িয়ে কোমল পা দুটি ফেলে
বনপথে হারালো ওই সাঁওতাল মেয়ে।

জমে ওঠা প্রাচীন সম্পদ

ক্ষেতের ফসল ভরা মাঠ
পিতৃপুরুষদের পরিচয় রাখতে গিয়ে
আজ রিক্ত, শূণ্য

অনাবাদী জমি পরিত্যক্ত গহনার মত
সূর্য্যের আলোয় চকচক করে
অবাধ্য হাত তবু বারবার জলসিঞ্চনে ব্যস্ত

জড়োয়া রোদ মিনে করা জঙ্গলে
স্রোতের মত ছড়িয়ে পড়েছে

অর্থের প্রলাপ হাওয়ায় ভেসে আসে
সিন্দুকে জমে ওঠা প্রাচীন সম্পদ