বিদেশী ফুল সহজাত মৃত্তিকায় প্রস্ফুটিত
হতে চেয়ে সুবাতাস পেল এক গুচ্ছ ফুলের
শীতের হাওয়ায় কবিতার মৃদু ছোঁয়ায় যে
পূর্ণায়িত সকাল, দুলিয়ে গেল শীর্ষমঞ্জরী
কোকিলের কুহু তান ভরিয়ে দেয় আকাশ
সোপানে নেমে যাওয়া ঘাটের নিচে তরী
আঁধার নেমে আসে আলোকোজ্জ্বল বাগানে
শিশুতোষ বুকে নেওয়া ম্লানমুখ রমণীর।।
ইন্দ্রাণী সরকার এর সকল পোস্ট
শূন্য মুখাবয়ব
দিনে দিনে কমনীয়তা শূন্য মুখাবয়ব
আয়নায় প্রচ্ছন্নভাবে প্রকট হয়ে ওঠে
সবাইকে লুকোনো যায় আয়নাকে নয়
কোথায় গেল সেই সরল নরম মুখশ্রী ?
শীতের রক্তাক্ত আঁচড় মিলিয়ে যাচ্ছে
আকাশ বাতাস জুড়ে রৌদ্রের খরতা।
আজ কে জিতলো, কাল কে হারলো
তারই হিসেব করতে করতে উন্মুক্ত হয়
এক কারাগার, যেখানে তার বন্দীদশা।
যাযাবর চোখ
ঝিমিয়ে গিয়েছে ক্লান্ত পৃথিবী
থর মরুভূমিতে আলো ফেলে দিশেহারা চাঁদ
চকচকে বালি ঢেউয়ের মত ছড়িয়ে যায়
দূর থেকে ভেসে আসা গান
স্বপ্নের নিবিড়ে জড়িয়ে রাখে
এমনি ভাবেই হয় কোনো মায়াবী রাত
এমনি ভাবেই স্বপ্ন দেখে কোনো যাযাবর চোখ
মেঠো বাঁশির সুর বিছিয়ে আছে আঁধারে
ক্যাকটাসের পাতায় অশরীরী বাতাস
দূরে বালির ওপর বসে থাকে সোনা ছেলে
ঘুম ঘুম চোখ মনে অনেক প্রশ্ন
অথবা প্রশ্ন কিছু নেই সব উত্তরই তার জানা
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের স্মরণে
ভাষা আন্দোলন দিবস বা শহীদ দিবস, বাংলাদেশে পালিত একটি জাতীয় দিবস। ১৯৫২ সালে একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষা আন্দোলনের সময় বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে সংগ্রামে শহীদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য এই জাতীয় দিবসটি পালন করা হয়। সেই চর্যাপদের কবিদের থেকে শুরু করে বড়ু চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, কৃত্তিবাস, চণ্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ এবং আরও কতজন বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছেন তা বলার শেষ নেই। বাংলা ভাষা যে শুধু আমাদের মাতৃভাষা তা নয়, এ যেন আমাদের শৈশব অবস্থা থেকে পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক হবার এক অতীব প্রয়োজনীয় মাধ্যম। বাংলা ভাষার অনুধাবন ও অনুশীলনের মাধ্যমে বাঙালী আজ বাংলা সাহিত্যে পূর্ণ অবয়বে প্রস্ফুটিত হয়েছে। আজি কমল মুকুলদল খুলিল। রবীন্দ্রনাথের একটি গান বাংলা ভাষার সমৃদ্ধির স্মরণে:
মনোমন্দিরসুন্দরী ! মণিমঞ্জীর গুঞ্জরি স্খলদঞ্চলা চলচঞ্চলা? অয়ি মঞ্জুলা মুঞ্জরী ! রোষারুণরাগরঞ্জিতা ! বঙ্কিম-ভুরু-ভঞ্জিতা ! গোপনহাস্য-কুটিল-আস্য কপটকলহগঞ্জিতা ! সঙ্কোচনত অঙ্গিনী ! ভয়ভঙ্গুরভঙ্গিনী ! চকিত চপল নবকুরঙ্গ যৌবনবনরঙ্গিণী ! অয়ি খলছলগুণ্ঠিতা ! মধুকরভরকুণ্ঠিতা লুব্ধপবন -ক্ষুব্ধ-লোভন মল্লিকা অবলুণ্ঠিতা ! চুম্বনধনবঞ্চিনী দুরূহগর্বমঞ্চিনী ! রুদ্ধকোরক -সঞ্চিত-মধু কঠিনকনককঞ্জিনী।।
মাতৃভাষা
বাংলা মাতৃভাষা মায়ের শিক্ষা মোদের ধ্যানজ্ঞান
মায়ের সাবলীল চিন্তাশৈলী মোরা করেছি অনুদান
উজ্জীবিত আশা স্বপ্ন নিয়ে হয়েছি মায়ের অনুগামী
তাঁর ভাবনা চিন্তা সকলই মোদের কাছে অত্যন্ত দামি
ভাষা ব্যতীত শিক্ষা অসমাপ্ত, তাই শিক্ষাই যাবতীয়
নানান জাতি নানান ভাষা আমরা সবাই ভারতীয়
মায়ের প্রশস্ত ললাট, অপূর্ব কাব্যশৈলী করেছে মুগ্ধ
এসেছে শান্তির সহবাস থেমে গেছে বাকবিতন্ডা যুদ্ধ।
আবর্তন
নিঝুম রাতে পাতার খসখসানির মৃদু শব্দের সাথে
মিতালী করে মন অনেক দূরে চলে যায়
যেখানে সপ্তর্ষিমণ্ডল জোনাকি হয়ে ফোটে,
যেখানে কালো আকাশটায় তারাদের আঁকিবুকি,
যেখানে ঢেউ খেলানো মেঘের সাথে চাঁদের লুকোচুরি,
সেইসব খানে মনের অবারিত আনাগোনা
নদীর জলে তখন চাঁদের স্নিগ্ধ ছায়া ঢেউয়ের সাথে
ওঠানামা করে আর শত টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে
রাতপাখিদের ডাক নিস্তব্ধতা ভেঙে দেয়
শ্রান্ত মায়ের কোলে ছোট শিশু নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যায়
এমনি কোনো রাতে কোথাও মৃত্যু নেমে আসে,
জন্ম ও মৃত্যুর বিচিত্র আবর্তনে পৃথিবীর গতিময়তা॥
লিপি
তুই কি আজকাল কবিতা লিখিস না ?
চৈত্রের ছায়াঘন দুপুর, বাঁশপাতার সরসর,
মেঘলা জলে গাছের কাঁপা কাঁপা ছায়া
কবিতা জমে ওঠে অশ্বত্থের পাতার মত
শুধু তুই খুব চুপচাপ আর তোর কলম।
একদিন ঠিক খুঁজে পাবি কবিতার লাইন
ওই অস্তরাগের রঙে রাঙানো আকাশের কোলে
অথবা দিগন্তব্যাপী পাহাড়চূড়ার ধূসরতায়
নদীর কলকল জলের সাবলীল ভঙ্গিমায়
দূরে প্রশস্ত শস্যক্ষেত্রের অপার সবুজ মহিমায়
খুঁটে খাওয়া কোনো চড়ুই বা শালিকের সহজতায়,
এ সবই ফিরিয়ে দেবে তোকে কবিতার পংক্তি।
শীতের চাদর বিছানো দিগন্ত
সকালের মৃদু শীতল হাওয়া
সারা শরীর আমেজে জড়ায়
একরাশ জবা ফুল ফুটে আছে পথের ধারে
শীতের চাদর বিছানো দিগন্তে
মিলিয়ে যাওয়া সারি সারি গাছ
রোদ্দুর এসে পড়ে ছাদের কার্নিশ ও উঠোনে
দূর থেকে ভেসে আসে কীর্তনের সুর
বাগানে গোলাপ ও বেলিফুলের গন্ধ
ফুটে ওঠা দিন গোলাপের মত সুবাসিত হয়
বিস্মৃতির অতলে
রূপকথারা কবেই হারিয়ে গেছে
বিস্মৃতির অতলে।
পরিযায়ী প্রেম নিঃশব্দে ফিরে যায়
আপন নক্ষত্রলোকে।
একটা অসমাপ্ত কাব্যের মত
বিরান ভূমিতে ভালোবাসা পড়ে থাকে
একরাশ ঝরা ফুলের মত।
তবু তার সূত্র ধরে নিভু নিভু
শিখায় কাঁপে ফেলে আসা
মধুর মুহূর্তগুলি।
প্রিয় আখর
তোমার বিষাদগুলো কাজল করে
চোখে এঁকে নিলাম চেয়ে দেখোনা
একদিন একটা সুন্দর আইভিলতার
ফাঁক দিয়ে দেখে নেব তোমার হাসি
জলেতে ভেসে যায় যে হাঁসের পালক
তার উপরে একটা করে প্রিয় আখর
যখন ঝুম বর্ষায় ভাসবে বকুলতলা
তখনি একমুঠো স্বপ্নবীজ ছড়িয়ে দিও।
মৌবনী
কতবার ভেবেছি তুমি যদি মাঝি হয়ে
আমায় জলের বুকে ভাসিয়ে নিতে
দাঁড় বেয়ে বেয়ে চলে যেতে বহুদূর
আমি শাপলা পদ্ম তুলে নৌকায় রাখি
তুমি না হয় একটা মালা গড়ে দিও
কানপাশা খুলে ছোট্ট একরত্তি চুমু
তারপর নিয়ে যেও অচেনা এক পারে
যেখানে মৌবনী আলতা পা ধুয়ে যায়।
মেঘের তোরণে
অপূর্ব চাঁদনী মুখ তার ভাসে
অপার্থিব প্রেমের প্রত্যাশায়
নিশি জাগা পাখিরা বিষণ্নতার
বিকেল বেলা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়
আকাশে ভাঙা গড়া চাঁদ
মেঘের তোরণে ভেসে যায়
টুপটাপ শব্দে ঝরে পড়ে পাতা
তখন আকাশের অস্তরাগের লাজ
প্রতীক্ষার বিকেল গড়িয়ে যায়
মেঘের ভেলায় বয়ে চলে চাঁদ
তখনি পাতায় খসখস আওয়াজ
সে এল একরাশ ভালোবাসা নিয়ে।
অনিকেত ফুল
আনন্দে অনিকেতের কাছে যাই
অনিকেত নীরব থাকে
কখনো তার শরীর থেকে ঝরে
অযুত সহস্র আলো
কখনো আঁধারের চেয়েও গভীর
মিশকালো তার মুখ।
সহসা আমার মুখ কালো মেঘে
ঢাকা পড়ে যায়
চোখ থেকে, মুখ থেকে, গাল থেকে
ঝরে পড়ে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি
মাটিতে তৈরী হয় ছোটোখাটো স্রোত,
স্রোতে ভাসতে থাকে
অনিকেত ফুল আর তার অনুতপ্ত হাসি।
নৈশ অভিযান
রাতের তারারা জ্বলজ্বল করে আকাশে
চাঁদের আলো মেঘের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারে।
পাইন গাছের মাথায় বাতাসের কারচুপি
গাছের ছায়া পড়ে বাড়ির চালে আর আশেপাশে।
তিরতির বয়ে চলা নদীর জলে মৃদুমন্দ ঢেউ
পার্শ্ববর্তী শহরের আলোয় চিকচিক করে।
এমনি একটি রাতে তোমার হাত ধরে হেঁটে গেছি
অনেক দূর দেবদারু পাইনের মাথা ছাড়িয়ে।
আরও অনেক দূর যেতে চাই অন্য কোনো দেশে
তুমি থেকো সাথে চিরকালীন হাত ধরে ভালোবেসে।
ভৈরবী
ভোরের বেলা যখন বাসি
বেলি আর জুঁইয়ের গন্ধ
তখনো ছড়ানো আমাদের
ওই ঝুলবারান্দায়,
আহা কি মধুর সে গন্ধ
ভেসে আসে অদূরে
পাশের বাড়ির আমবাগানে
যেথায় মুকুল ধরে আছে,
ডালে ডালে, বাতাস
দুলিয়ে দেয় আম্রমঞ্জরী
পাশেই সুপারি গাছে
লেগে থাকা শিশির
ঝিকমিক করতে থাকে।
মাটিতে কাঁপা কাঁপা
দোদুল্যমান পত্রছায়া।
অপরিমিত
কখনও যদি মনে হয় আমি কোথায়
নিজের বুকের মাঝে খুঁজে নিও
আমি লুকিয়ে আছি খুব সংগোপনে
গভীর গোপনে তা কি জানো প্রিয় ?
এক দিন কোনো হরিণ শাবকের মত
শকুন্তলার আঁচলে লুকিয়ে যাব।
তখন যেন আবার বোলো না আমায়
তুমি রাখতে আমায় পারো নি তাই।
একটু হেসে একটু কেঁদে বিদায় নিয়ে
চিরকালীন শূন্যতায় ফিরে যেতে চাই।
হয়তঃ এক পলকই তোমার অস্তিত্ব,
বাকিটুকু শুধু চোখের আড়ালে আমার
নাগালের সম্পূর্ণ বাইরে, তবু কানাকড়ি
পাবার আশায় এক পাশে পড়েছিলাম।