নাজমা হেপতুল্লা এর সকল পোস্ট

নাজমা হেপতুল্লা সম্পর্কে

সাধারণ মেয়ে। কবিতা ভালোবাসি। কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসি। কবিতা আবৃত্তি শুনতে ভালোবাসি। বই পড়তে ভালোবাসি। আর প্রিয় মানুষটাকে খুউব ভালোবাসি।

আজও অর্ধেক হয়ে বাঁচি

পরিপূর্ণ একটা সংসার আমার
তবুও আমি অর্ধেক হয়ে বাঁচি
সাজগোজটা আজও ভীষণ অপছন্দের
তবুও রোজ তোমাকে ভেবে সাজি।

আমার তুমি আমার কাছে খুব বেশী দামী
কিন্তু আজ ভীষণ কষ্ট এ বুকের ভিতরে
কারণ, আমার বিছানায় অন্য পুরুষ
আর তুমিও যে আজ অন্য কারো স্বামী।

আজ‌ও গভীর রাত অবধি জাগিয়ে রাখে
তোমার অনুভূতি ,কখনো হয়নি মিলন তবুও
কেন জানি তোমার সঙ্গেই জড়িয়ে
আমার সব রোমাঞ্চকর স্মৃতি।

ভরা বিছানায় আজও শুধু
তোমাকেই হাতড়ে বেরাই
নিদ্রাহীন চোখ ,ক্লান্ত শরীর গভীর রাত
সবি তোমার ছোঁয়া চাই।

রাতবাতির আবছা আলোয়
আমি অন্ধকার হয়ে জেগে থাকি,
তুমি ছাড়া আমার অসম্পূর্ণ সব
তাইতো, পরিপূর্ণ একটা সংসারেও
আমি অর্ধেক হয়ে বাঁচি।

মেঘের প্রেমিকা এবং আমি…

যন্ত্রণা নিয়ে মেঘের সামনে উপস্থিত হতেই
দেখলাম তারও খুব মন খারাপ।
বারবার চিৎকার করছে নিজেই গর্জে উঠছে,
তার প্রেমিকা প্রকৃতিও অশান্ত হয়ে উঠলো
বিচ্ছেদগামি বিপদের আগাম অনুভূতি নিয়ে তাদের অসম্পূর্ণ ভালোবাসার প্রকাশ করছে,
গাছেরা সব নুইয়ে পরছে
যেন শেষবারের মতো একে অপরকে জড়িয়ে বাঁচতে চাইছে।
কী জানি কোন তৃষ্ণা নিবারণের আশাই তারা
বারবার উত্তেজিত হচ্ছে।

নিরব দর্শক আমি মেঘের প্রেমিকা আর আমার মিল খুঁজে পেলাম অনেক।
প্রেমিকার কষ্টে মেঘ তার গর্জন ভুলে অঝোরে কাদতে লাগলো।
প্রেমিকের অশ্রুর শীতল স্পর্শে প্রেমিকার সব অভিলাষ পূর্ণ হলো।
ধুলোমোলিন প্রেমিকা স্নান সেরে আবারো
প্রেমানয়নে তাকিয়ে রইলো মেঘের পানে।
কিন্তু আমার মনের যন্ত্রণা তখনও নিরুপায়।
সোদা মাটির গন্ধ নিয়ে আমারও চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে
আমার সর্বস্ব আজও তোমারই অপেক্ষায়।
তুমি ছাড়া বেঁচে আছি কিন্তু হয়ে বড়ো অসহায়।

বেঁচে আছি তোমার ভালবাসায়

প্রিয় তুমি কেমন আছো? খুব জানতে ইচ্ছা করছে
কতদিন দেখা হয়নি, কতদিন চেয়েছিলাম
একটু নির্জনতা
সবকিছু ভুলে তোমার বুকে রাখবো মাথা।

হাজার ভিড়েও লুকিয়ে দেখে চোখ জুড়াতো যার
মুঠোফোনের নিজস্বীতে তোমাকে দেখে
আর মন ভরে কী তার!

আমি মরণব্যাধি করোনার ভয়ে গৃহবন্দী হয়ে
ভীষন কষ্টে আছি,
আমার কষ্টে দেখেছি তোমার চোখেও জল
তোমার ভাঙা গলার স্বর আমাকে
ভীষণভাবে করেছে দুর্বল।

এত্তো ভালোবাসা বুকে নিয়ে
কী করে দূরে থাকা যায়
তোমার এই একই প্রশ্ন আমাকে খুব বেশি ভাবায়

গৃহবন্দি আছি বলে প্রেম কী কমে যাবে
এই প্রেম যে অন্যরকম ,
এর কল্পনারা আকাশছোঁয়া হলেও
সামাজিকতা যে খুব মানে
জানি আবার দেখা হবে, কথা হবে,
দুজনেরই চোখ জুড়াবে।
এটা কেউ না জানলেও আমাদের হৃদয় তো জানে

তাই প্লিজ তুমি ভালো থাকো
আমি শুধু তোমার হাসিমুখটা দেখতে চাই
কারণ তুমি তো জানো
আমি বেঁচে আছি শুধু তোমার ভালোবাসায়।

এমন তো কথা ছিলো না

কথার বুলেট যখন সব সীমা অতিক্রম করছে
তখনি এলো মুখ বন্ধের ঘোষনা
নিরীহ মানুষের রক্তে রাঙ্গানো হাতগুলো
বারবার পরিষ্কারের ঘোষনা।
ধর্ম নিয়ে মেতেছিল যারা তাদের নিজ ধর্মেও
আজ কাটাতারের সীমানা
হিন্দু হিন্দুকে ভয় পাচ্ছে, মুসলিম মুসলিমকে ভয় পাচ্ছে, মানুষ মানুষকে ভয় পাচ্ছে
যে তোমাকে মসজিদ পোড়াতে বিভ্রান্ত করলো
সেই কিনা আজ মন্দির বন্ধেরও ঘোষনা দিলো
এমন তো কথা ছিলো না।
কথা ছিলো ধর্মের নামে একটা পাঁচিল তোলার
বিধর্মীদের তাড়িয়ে এপারে সুখে বাঁচবে তোমার সংসার
মুখোষধারি নেতারাও যে আজ মুখোশ পড়েছে প্রকাশ্যে
মুখোশের আড়ালে কে জানে, আরো কতো
মুখোশের ভিড় জমবে সহাস্যে।

বাড়িয়ে দাও তোমার হাত

চলো একটা সমুদ্রে বেড়াতে যাবো
শুধু তুমি আর আমি।
সমুদ্রের শীতল হাওয়া আর বালির চাদরে
তুমি আর আমি বসবো হাতে হাত ধরে।
ইচ্ছে হলেই বেশ তোমার কাধেঁ মাথা রেখে,
না বলা গল্প, না বলা স্বপ্ন, অসম্পূর্ণ ইচ্ছা,
সবটা বলবো তোমাকে।
খুব কান্না পেলে জড়িয়ে ধরে কাদবো‍
তুমি আলতো করে এক আদুরে সোহাগে
বুকে জড়িয়ে নিবে আমায়।
সমুদ্রের শীতল হাওয়ায় এলোমেলো
আমার চুলে হাত বুলাবে,
তারপর সন্ধ্যা নামবে
সমুদ্রের বিশাল ঢেউ
আমার সমস্ত দুঃখগুলো বয়ে নিয়ে যাবে।
আর এমন সময়
তুমি আমার প্রিয় গানটা গাইবে
বাড়িয়ে দাও তোমার হাত…তোমার হাত…

প্রেমটা কবিতা হয়েই বেঁচে থাক

বদ্ধ জানলা, আর চার দেয়ালের মাঝে
তুমিহীন আমার দিন হয়তো যেতই চলে
কিন্তু জান? ইচ্ছেরাও আর শাষন মানেনা,
যেদিন থেকে তুমি প্রেমিক হলে।
তোমার আগে কোনো পুরুষ আমাকে
এত ভেঙেচুরে ভালোবাসেনি,
আমার সমস্ত ভালোলাগার প্রতি এতটা যত্নবান হয়নি।
জানি তুমি চায়ের শ্রেষ্ঠ প্রেমিক
কিন্তু আমার প্রতি প্রেমটা তার চেয়ে বহুগুণ অধিক
এত ভালোলাগা ভালোবাসা, এত অনুভূতি, এত আবেগ, এত কল্পনা,
এত অপেক্ষা – সবকিছু নিয়ে দূরে থাকাটা ভীষণই কঠিন।
কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দেখ
তুমিহীন আমার আর আমিহীন তোমার
কষ্টের হলেও বেশ কাটছে দিন।
দিনান্তে কিংবা ঘুমহীন চোখের অপেক্ষাদের শুধু
কল্পনাতেই যত অভিমান আর রাগ।
তাই আমার সমস্ত প্রেম কবিতা হয়ে
তোমার ওই ডায়েরির ভাজে বেচে থাক।

প্রথমে অধিকারটুকু দাও

নারী দিবসের বিশেষ শুভেচ্ছা আমার চাইনা,
ফিরিয়ে নাও।
দেওয়ার যদি খুব ‌ইচ্ছা থাকে তবে –
আমি যেমন তোমার জন্য বাঁচি ঠিক তেমনি তুমিও আমার জন্য বেঁচে দেখাও।
আমাকে শুধু আমার অধিকারটুকু দাও তাহলে আমার জন্য বিশেষ কোনো দিনের প্রয়োজন হবে না এতটুকু বুঝে নাও।
আমার চলার পথে বাধা না দিয়ে আমার পথকে সুগম করে দাও,
মুখ চেপে, হাত বেঁধে, ঘন অন্ধকারে নয়
ঠিকানা জিজ্ঞেস করে আমার গন্তব্যে পৌঁছে দাও।
রাজনীতির মোহে, ধর্মযুদ্ধে, কামনা বাসনার লোভে যখন হারাও তুমি মনুষ্যত্ব
বিশ্বাস কর, যে গর্ভে তুমি জন্ম নিয়েছ সেই গর্ভধারিনীও আজ তোমাকে জন্ম দিয়েই খুব লজ্জিত।
নারীর থেকে জন্ম নিয়ে নারীর শরীরেই যখন শান্তি খোঁজ,
ওহে পুরুষ মানসিকতার পরিবর্তন কর
সুন্দর সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রথমে নারীর অধিকারটুকু তো বোঝ।
তাই নারী দিবস নিয়ে লেখা তোমার ওই কয়েকটি লাইন দয়া করে মুছে নাও।
যে নারীর জন্য পুরুষ হয়েছ তাকে শুধু নারী হয়ে নয় মানুষ হয়েও বাঁচতে দাও।

আমি ভালোই আছি

কে বলেছে তোমাকে আমি ভালো নেই ?
আমায় কি চিৎকার করে বলতে হবে যে আমি ভালো নেই।
আমি তো কাউকে বলতে যায়নি বা কারো কাছে ভালো থাকার পরামর্শ‌ও চাইনি
তাহলে তুমি কি করে বুঝলে যে আমি ভালো নেই।
তবে মাঝে মাঝে আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে উঠি
তার মানে কি এটা যে আমি ভালো নেই ?
যদি তাই হয় তাহলে, সন্তানের জ্বালায় অতিষ্ঠ বাবা মায়েরা, হাসপাতালের শয্যাশায়ী রুগীরা,
যাযাবরেরা,অভাবের তাড়নায় কর্মরত অজস্র শিশু শ্রমিকেরা, বিনা অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত জেলখানার কয়েদিরা,
পিতৃহারা মাতৃহারা ইত্যাদি ইত্যাদি অজস্র বেদনাদায়ক জীবনেরা তাহলে কেমন আছে ?
অথচ আমি ভালো থাকবনা কেন, আমারতো আছে বাসকরার যথাযোগ্য স্থান, প্রয়োজনীয় আহারাদির সুব‍্যবস্থা
এবং খেয়াল রাখার অনেক আপনজন!
তাই দোহাই তোমার আমায় আর কখনো জিজ্ঞেস করো না যে আমি কেমন আছি ?
আমায় নিয়ে আর ভেবোনা কারন
সত্যিই আমি খুব ভালো আছি ।

এক কাপ চায়ে তোমাকে চাই

কল্পনার প্রেম নয়, বাস্তবে তোমাকে চাই ।
কোথাও এখনো উল্লেখ হয়নি,
সেরকম একটা উপন্যাস চাই।
উপহারে কোনো দামি অল‌ংকার নয়,
প্রতি মূহুর্তে তোমার ছোঁয়া পেতে চাই।
মুচকি হাসির স্টিকারে নয়,
তোমাকেই আমার হাসির কারণ বানাতে চাই।
আমার মন খারাপের দুপুর কিংবা
ঘুমহীন রাতগুলো তোমার অপেক্ষায় নয়,
প্রত্যেকটা রাত তোমার সঙ্গেই কাটাতে চাই।
সমস্ত ব্যস্ত শহরকে উপেক্ষা করে,
তোমার হাত ধরেই হাটতে চাই।
ঝকঝকে কাচের দেয়ালের চাইনিজ রেস্টুরেন্টে নয়,
এক কাপ চায়ে তোমাকে চাই।
আমার সমস্ত ব্যস্ততাগুলো
তোমার ভালোলাগাতেই কাটাতে চাই।
পারবে তুমি? আমাকে কাছে ডাকতে,
আমি যে আমার আমি কে ভুলে গিয়ে,
শুধু তোমার হয়েই বাচতে চাই!