তোমাদের বিষণ্ন নগরটা যাক না পুঁড়ে
বিবেকের অন্তর্দহনে,
অসময়ের কাশফুলের শুভ্রতা আসুক না নিয়ে
এ নগরের সব,
নরপশুর হৃদয়ে…
রোমেল আজিজ এর সকল পোস্ট
শব মিছিল
শব মিছিল পথ হারায় না কখনো
নেই শব মিছিলে পথ হারাবার ভয়।
শব যাত্রী আওড়ায় কোথাও
বল হরি হরি বোল,
কোথাও কালেমায়ে শাহাদাত।
ছুটে শব মিছিল দিতে চিরবিদায়
ছুটে শব মিছিল নতুন ঠিকানায়,
ছুটে শব যাত্রী জেনে, না জেনে ;
পালায় শব যাত্রী,
আলোতে আঁধার টেনে …
লিমিট অন লাভ
ঘুমহীন কেটে গেল সহস্র বছর
চোখের নিচে জমাট কালি
দীর্ঘ রাত্রি জাগা ছাপ,
গল্প বলে গল্প শোনায়
একাকী কাটানো শূন্যতায় ভরা
রাত গুলোর নিঃশাব্দিক অভিশাপ।
.
মিটার বিহীন রাত্রি জাগা
লিমিট অন লাভ,
চোখের গল্প চলে ইশারায়
হাতের মুঠোয় হাত…
এই শহরের রাতে
যে শহরে রাত ঘুমায় না
যে রাতে শহর ঘুমায় না,
সেই শহরের রাতে
ঘুমিয়ে থাকাই অভিশাপ …
.
সেই রাতের শহরে
দূরে বাজে দিকভ্রান্ত হুইসেল,
ট্রেন চলে, ট্রেন ছুঁটে যায়
ঝক ঝকাঝক, ঝকঝক ঝকঝক ..
.
সেই দিনের শহরে
সেই রাতের শহরে
না না, শহরের রাতে
কানে বাজে দূরের
ট্রেনের লাইট…
.
সেই শহরের রাতে
সেই রাতের শহরে
ছুঁটে যার নীরব হুইসেল….
.
এই শহরের রাতে
এই রাতের শহরে,
জেগে রয় সব
ঝকঝক ঝকঝক ..
শাপ মুক্তির ক্ষণ গণনা
এ পৃথিবীতে এখনো রাত আসে
চাঁদহীন অলস অন্ধকার রাত।
মিথ্যা শ্লোকের কল্পকথায়,
বেঁচে রয় অভিশপ্ত প্রাণ।
তৃপ্তির ঢেঁকুর খুনির চোখে
দিয়ে পুনরায় আঘাত।
.
বিচার চাই, বিচার চাই
বিচার চেয়ে উঠে জেগে
তরুণ কণ্ঠ রব।
বিচার হীনতায় কেটে গ্যাছে
দেখতে দেখতে চার দশক।
.
সু(কু)শীল শোনায় মর্মবাণী-
ক্ষমাই সকল ধর্ম পরম
ক্ষমাশীলই মহান,
ক্ষমার মাঝেই লুকিয়ে থাকে
বীর সৈনিকের অম্লান।
.
তরুণ কন্ঠ দেয় যে জবাব-
ওরে বেকুব, নব্য রাজাকার
গাইস না আর সেই পুরনো গান,
“যেথায় হয়নি যুদ্ধ কভু
সেথায় আবার কিসের যুদ্ধাপরাধ,
ভারত দালালদের কারসাজি সবই
মারছে তারাই রুমী – আযাদ !”
.
কই গেলি দেখ তোরা
হায়েনার সন্তানের দল,
অভিশাপের বোঝা মাথায়
ঝুলছে তোদের বাপ।
যাদের তোরা সিংহ বলিস,
চায় কি করে শেষে তারা
রাষ্ট্রের কাছে মাপ।
.
যুদ্ধ চলছে, চলবে যুদ্ধ
কসাইখানার দেয়ালে আজো
যায় শোনা শহীদদের আর্তনাদ,
এ যুদ্ধ শেষ হবে না
না মুছে সব অভিশাপ।
.
যুদ্ধ চলছে, চলবে যুদ্ধ
তাকিয়ে যে বধ্যভূমির
একবস্তা অসহায় চোখ;
এ যুদ্ধ শেষ হবে না
যতদিন না ফিরে এই বাংলায়
রাজাকার মুক্ত স্বপ্নীল ভোর।
কে যেন
কে যেন কড়া নাড়ে
দরোজার ওপাশে,
কে যেন ঘুম হয়ে
জড়ায় এ দু ‘চোখে।
.
কে যেন জানালায়
একা থাকে দাড়িয়ে,
কে যেন বলে গ্যাছে
একদিন আসবে ফিরে…
মাতাল পথিক
পার্থিব এক ফোঁটা এ্যালকোহল
অথবা স্বর্গের এক পেয়ালা সুরা,
দুটাই ভেজায় অধর
দুটাই ভরায় অন্তর,
মেটায় অন্তর্জ্বালা।
.
বেহিসাবি পিতল চক্ষু
অপার মায়ায় ভরা,
ঘুঙুর বাজে ঝুমুর ঝুমুর
ঘুঙুর বাজুক ঝুমুর ঝুমুর…
হারায় অচিন তারা।
পথ হারানো মাতাল পথিক
তাতেই পাগল পারা….
তোমাকে কাছে পেতে
পূর্ণিমার আলোকিত সমুদ্র দেখতে
তোমাকে কাছে পেতে চাই নি কখনো,
চেয়েছি নির্জন অন্ধকার রাতে
শ্বাপদ ভরা পথে, হাত ধরে একসাথে চলতে।
.
পদ্ম ফোঁটা ঝিলের জলে এক সংগে নৌকায় ভাসতে
তোমাকে কাছে পেতে চাই নি কখনো,
চেয়েছি প্রদীপ নেভা ঝড়ের সন্ধ্যায় এক সাথে
টিনের ফুটো দিয়ে গড়িয়ে পড়া জল থামাতে।
.
তোমাকে আমি কাছে পেতে চাইনি কখনো
আমার হতাশায় ডোবা অস্থির সেই দিন গুলোতে ;
কিভাবে চেয়েছি বুঝতে তুমিও –
গোধূলির আলোয় বাড়ি ফেরা
শ্রান্ত রাখালের চোখের ভাষা
যদি পড়তে তুমি পারতে…
নিরাশা
রক্তচক্ষুর মতো জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরির
মুখ দেখে ছিল কুয়াশা,
চায়ের ফুটন্ত জল তো নয়।
রংধনুর সাত রং থেকে
শুধু নীল বুকে ধারণ করেছিল বৃষ্টি,
জারুলের পাপড়ি তো নয়।
মেঘের ওপারে যেতে চেয়েছিল রাত্রি,
কাঁচা হলুদবাটা রংয়ের
আমের দেশে তো নয়।
সব শেষে সব আশা
ডুবে যায় নিরাশায়,
ভুল হাতে হাত ধরে
জীবনটা ফুরায় !!!
এখানে
এখানে তো মৃত্যুও অসাড়
অবাধে হয় যে এখানে,
বিধি ভঙ্গের অসম সমীকরণ।
এখানে পাহাড় যে হারায়
মিথ্যার প্রলোভনে,
এখানে যে ডুবে নদী
বিষাদের নোনা জলে,
হৃদয়ে জ্বলে যে এখানে
নিষিদ্ধ চিতার গোপন আগুন !
এখানে যে সম্পর্ক চলে
ছড়িয়ে স্বার্থের মায়াজাল,
অসত্য প্রতিষ্ঠিত যে এখানে
হয়ে পার্থিব উন্নতির বাহন।
সময়
টিক টিক করে সময় চলছে এগিয়ে,
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত
সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয়,
ছুটে চলছে সময়।
প্রতিটাক্ষণ কাটছে
আনন্দ-হতাশা-বিষাদ
আর বিপুল আয়োজনে।
একটাই সময়,
কেউ ছিনিয়ে নেয়,
কেউ ফিরিয়ে দেয়
কেউ কথা রাখে
কেউ বিশ্বাস ভাঙে;
কেউ হাসে
কেউ কাঁদে,
পার্থিব মোহে ছুটে চলে মানুষ —
….. ছুটে চলে অবিরাম………
পরিবর্তন ২
ফুল গাছ এখন গৃহপালিত হয়ে গেছে
কিন্তু বন্য রয়ে গেছে এখনো ঘাসফুল,
মাছ এখন আর শুধুই খাবার নয়
সৌখিন অ্যাক্যুরিয়ামে পোষা জলদও।
পৃথিবী পরিবর্তিত হচ্ছে —
পরিবর্তন আসছে মনুষ্যত্বকে ;
আর হয়তোবা তাই
ছিন্নমূল শিশু এখন ভাগ বসায়
ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া
কুকুরের পরিত্যক্ত খাবারে !
পরিবর্তন ১
ষড়্ঋতুর নিয়ম ভেঙে শীত এলো বর্ষার শেষে,
মহাকাশ ধূলোয় লুটালো পরিবর্তন আসবে বলে;
নীল অপবিত্রতা মিশে গেল
নিষিদ্ধ মায়া আর নীচতার পদতলে।
মানুষ ফুরিয়ে গেছে না কি মনুষ্যত্ব?
আলো আসবে বলে
নিভে গেছে সব দীপ,
মুছে দিয়ে অকৃত্রিম হাসি
জ্বেলে গেছে ধিক!
মেঘের জল
অতঃপর মেঘ গুলো
জল হয়ে গেলো;
ভিজিয়ে দিল-
ওই দূরের পাহাড়,
নীল শাড়ির আঁচল
আর তোর এলো চুল।
আড়াল থেকে তোকে দেখে,
হতাশ এই আমি ভাবছিলাম-
যদি হতে পারতাম,
‘ঐ মেঘের জল !’
অনুভব
পূবের আকাশ ধীরে ধীরে সোনালী হচ্ছে,
আর এই দেহে নেমে আসছে –
মৃত্যুর শীতল অনুভব।
ভাসছে চোখে
শৈশবের সেই চিরচেনা গ্রাম…
নীড় ছেড়ে ঐ যে উড়ছে আকাশে
সদ্য ঘুম ভাঙা পাখিরা
সকালের এই রাঙা আলোয়।
গ্রীষ্মের ভর দুপুরে
যখন চলতাম একা,
সেই সময়ে পুকুর দেখলেই
থমকে দাঁড়াতাম আমি।
জলে পা ডুবিয়ে দেখতাম
অস্পষ্ট জলছবি।
পাখির গান শুনে শুধুই ভাবতাম তখন,
অলস দুপুর গুলোতে গাছের ডালে বসে
মিষ্টি সুরে কীভাবে গান গায় নিঃসঙ্গতার ?
বৃষ্টির দিনে কতোই না স্কুল পালাতাম,
শীল কুড়াবো বলে।
কত দিন যে আমি –
প্রাচীন বৃক্ষ দেখি না,
ছুঁই না বৃষ্টির জল,
শুনি না পাখির কলকতান !
হারিয়ে গেছে সবই আজ
গড়ে উঠা কাক সভ্যতায়।
গ্রাস করেছে নিষ্ঠুর সভ্যতা
এই শহরটাকে তোর মত করে,
যেভাবে ছুঁড়ে ফেলেছিস তুই
একটা জীবনকে শূণ্য করে
সময়ের আস্তাকুঁড়ে।