আমিনুল ইসলাম রুদ্র এর সকল পোস্ট

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

চিঠি-২ (স্বামীর নিকট স্ত্রীর চিঠির জবাব)

wife wrote a letter her husband
কয়েকদিন পর বউয়ের চিঠি পেয়ে অর্ণব খুব খুশী, তার বউ তাকে পত্র লিখেছে টেলিযোগাযোগের মাধ্যমকে অবজ্ঞা করে..

প্রিয় স্বামী, তোমার পত্র পেয়েছি, পত্রটি পড়ে আমি এতোটাই সুখবোধ করছি সেটা তোমাকে বুঝতে পারবো না, আর তোমার মতো আমিও খুব বোরিং ফিল করেছি প্রথমত তোমাকে ছেড়ে থাকতে কিন্তু যেদিন বন্ধুটির সাথে দেখা হলো, কথা হলো, এখানে ওখানে হাত ধরে ঘুরে বেড়ালাম সবটাই ভুলে গেলাম কখন বলতে পারছি না, হু তোমাকে না বললেই নয়, বন্ধু আমার সাথে সর্বক্ষণ সময় দিয়ে আমাকে এতোটাই আনন্দ দিয়েছে সেটা তুমি আমাকে দেখলেই বুঝতে পারবে। অনেকটা বৃক্ষের পাতা ঝড়ে পরার পর যখন সেই বৃক্ষের নতুন পাতার জন্ম হয় আর সেই পাতার যে কোমলতা ঠিক তেমনি। বন্ধুটি আমাকে অনেক কিছুই শিখিয়েছে, শিখিয়েছে কিভাবে অনুর্বর জমিকে চাষাবাদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হয়।

প্রিয় স্বামী, তুমি চিন্তা করোনা আমি তোমার কাছে আসার পর তোমাকে সবটুকু শিখিয়ে দিবো, আর মাধবী লতার চিঠি পাঠায়নি, টেলিযোগাযোগে অনেকটাই বলেছে, ওর কথা শুনে তো আমি বিস্মিত! কেন আমরা এতোটা উপভোগ করতে পারিনি, এটাও বলেছে যে, ব্যস্ততায় আমরা কেউ কাউকে বুঝতে পারিনি, চিনতে পারিনি কিংবা কারো কষ্ট কেউ শেয়ার করতে রাজি ছিলাম না, আমি আমারটাই চেয়ে গেছি কিন্তু তোমার চাওয়া পাওয়ার কোনো গুরুত্ব দেইনি। হয়তো তুমিও আমার মতো, অবশ্য তোমাকে দোষ দেবো না, কারণ কর্মস্থল ছেড়ে তোমারও বিশ্রামের প্রয়োজন বোধ করা প্রয়োজন ছিলো আমার।

প্রিয় স্বামী, আজ আর লিখছি না, খুব দ্রুতই তোমার নিকট চলে আসছি, তুমি মন খারাপ করোনা, আমি এমন কোনো কাজ করিনি যা তোমার মাথা নত করতে হয়। তবে আমি এই সমুদ্র সৈকতে মাইন্ড পরিবর্তন করতে এসে খুব সুখী বলতে পারি।

[বিঃদ্রঃ স্বামী ও স্ত্রীকে একত্রিত হতে দিন, অপেক্ষায় থাকুন, কে কতটা পরিবর্তন হয়েছে]

বউয়ের নিকট স্বামীর চিঠি-০১

R
প্রিয় বউ,
তোমাকে বলাই হয়নি, তুমি তোমার বন্ধুকে নিয়ে সমুদ্র সৈকতে মাইন্ড পরিবর্তন করতে গেছো কিন্তু এদিকে ঘটে গেছে আরেকটি দুর্ঘটনা, তুমি এই পত্র পড়ার পর হয়তো বিস্মিত হবে কিংবা তেলে বেগুণে জ্বলে উঠবে, কোথাও কোথায় ফোসকা পরে যেতে পারে আবার নাও হতে পারে, তুমিও সাধুবাদ জানাতে পারো এমনটাই মনে করি।

তুমি চলে যাবার পর খুব একা একা লাগছিলো, মনে হচ্ছিল কি এমন বস্তু হারিয়েছি যার জন্য আলোকে অন্ধকার মনে হচ্ছে, যখন তুমি ঘরে থাকতে তখন বুঝতে পারিনি, কত রাত দুজনার মাঝে ফারাক্কার বাঁধ হিসেবে কোল বালিশ দিয়ে রেখেছি কিংবা তুমি রেখেছো, তুমি বলতে আমার জন্য কি তোমার সময় হবে না, বিয়ের আগেই তো ভালো ছিলে তুমি, একসাথে বসে কত ফুসকা খেয়েছি, কত জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি, অবশ্য তখন তুমিও পড়ালেখা করতে আর আমিও, তুমি চাকরি পেলে, এক সময় ধুমধাম করে রসায়নের বিক্রিয়ায় নিজেদের পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রে ফেলে ইতিহাস রচনা করতে চেয়েছিলাম। আজ তুমিও ব্যস্ত, তোমার ব্যস্ততা দেখে মনে হয় আমার ভেতর আর কোনো জৈবতা নেই যেটার জন্য জমিন পতিত থাকবে।
প্রিয় বউ সত্যি তুমি বেড়াতে যাওয়ার পর কয়েকদিন তোমার কথাগুলো আমাকে কুরেকুরে খেয়েছে, কিন্তু আজ অনেকটা হালকা মনে হচ্ছে। হয়তো তুমি আমাকে ফেলে মাইন্ড পরিবর্তন করতে গিয়ে ফুরফুরে আছো তোমার বন্ধুকে পেয়ে, শুনলাম তুমি যে হোটেলে উঠেছো সেটা তোমার বন্ধুর হোটেল, যাক তোমার পরিবর্তন হোক সেটাই চাই, আমিও বোরিং ফিল করছিলাম আর সেটা তোমার বান্ধবী মাধবী লতা অনেকটাই হালকা করে দিয়েছে।

প্রিয় বউ, পত্র পড়ে আশা করি আমাকে ভুল বুঝবে না, আমি এমন কোনো অন্যায় বা অপরাধের কাজ করিনি তোমার বান্ধবীর সাথে, তোমার বান্ধবীও আশা করি তোমার নিকট তেমন কোনো অভিযোগ পেশ করবে না কোনোদিন, কেননা তোমার বান্ধবীও খুব খুশী আমাকে হাসতে দেখে, তুমি জানোনা আমার উচ্চ হাসি শুনতে পেয়ে বলছে তুমি নাকি এমন হাসি হাসতে আমাকে দেখোনি তোমার আমার বিয়ের পর একটি দিনও।

প্রিয় বউ, আজ আর তেমন কিছুই লিখবো না, শুধু তোমার অপেক্ষায় থাকলাম, বাকিটা তোমার বান্ধবী মাধবী লতার কাছে জেনে নিও। … ইতি তোমার বর অর্ণব।

[বিঃদ্রঃ স্ত্রীর চিঠির জবাব পড়ার অপেক্ষায় থাকুন]

আদুরী দৃষ্টি ফিরে পেলো

বেলী,
আজ আদুরী দৃষ্টি ফিরে পেলো,
বেশ কিছু দিন যাবৎ এমনটাই ভাবনা চিল শকুনের মতো
হঠাৎ করে বললে হয়তো ভুল হবে
সময়ের স্রোতেই অপেক্ষার প্রহর ফুরালো
আঁধারকে আধার করে চলে গেলো।
মনের বাগানে জল ঢেলে
শুষ্ককে সবল করতে জোর তাগিদ দিচ্ছিলাম
কিন্তু ফলাফল; নামি দামি সুগন্ধি বাউরা সংস্রব
আসলে সতেজ বৃক্ষের দিকে দৃষ্টি না পড়লেও চলে
কিন্তু মৃত বৃক্ষের দিকে তা হবার নয়
ঝরে পড়া বাকল প্রশ্নের পর প্রশ্ন তুলে
সে সংস্কৃতের ইস্পাত ভাষা
জলোচ্ছাস, সুনামী, নাসরিন গর্জন করে চলে সর্জরস
যা কখনো কল্পনাতেও ভাবিনি
আদুরী
একবারও কি মৃত্যুর কথা মনে পড়ে?
ভালোবাসি শুধু মুখে বললেই হবে না
বলতে পারো ভালোবাসার মুখটা কেমন?
লাল, নীল, বেগুনী গাঢ় আঁধার তাও নয় আরজিবি কিংবা সিএমওয়াইকে
ওষ্ঠের নিন্মভাগে তিল অথবা ঘোমটায় ঢাকা মুখ
আমি নিশ্চিত বলতে পারি
ভালোবাসা নিজে যেমন তুইও তেমন জানিস না
বেলীকে দেখেই আমি বুঝেছিলাম
ভালোবাসা কাকে বলে, কেমন হয় তার দৃষ্টি
আদুরী চলে গেলো হাসতে হাসতে চাঁদ সুরুজের অপেক্ষায়
বেলীর স্পর্শ পেলাম না আদুরীর ভালোবাসায়
জুঁই, চামেলী, শিউলি, গোলাপ সবাই তো একটি গাছের ফল
আজ ভালোবাসতে সাহস পাই না, কি করে দেখবো
নিজের মৃত্যু নিজের চোখে,
বেলী,
আজ সাহস মরে গেছে।
উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, রাত: ১:৩০, ১৩০৩২০১৬।

ঘুম … (Ismat Shilpi -কে)

ঘুম আসে না,
বালিশে মাথা রেখে কি সব অদ্ভূত অদ্ভূত স্বপ্ন দেখি
তার কিচ্ছু বুঝিনা, কি তার তাল, লয়, সুর।

জিহ্‌বা জল কাটার বৈঠার মতো শুধু চিৎকার করে
যে বৈঠা জলে নেমে জল কাটছে তার আবার তৃষ্ণা?
ঘুমের তন্দ্রাচ্ছন্ন কেমিক্যাল সেও আজ পরাজিত
কোনো এক চিহ্নিত অচেনা তৃষ্ণায়, তবুও
এ তৃষ্ণা ঘুমের নয়, জেগে থাকার তৃষ্ণা;
এ তৃষ্ণা আলোর নয়, সোনালী এক সকালের।

এ তৃষ্ণা শুধু প্রভাতী রবির তির্যক কিরণের স্পর্শ পাবার
ঘুম আসেনা, ক্ষত-বিক্ষত প্রশ্নের জবাব খুঁজে ক্লান্ত প্রায়
এ কোনো কঠিন বা জটিল প্রশ্ন নয়, চোখ মুদলে ভাবি,
প্রভাত হবে তো ?

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, রাত: ৩:২০, ১৬১২১৬।

ঈশ্বর

চোখ খুলে দেখি সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছো, যখন নিন্দ্রায় নেশা গ্রস্থ দেখিনা পৃথিবীর স্পষ্ট আলো, তখনো দেখি একটি বালিশের অর্ধেকটা জুড়ে নিভুনিভু করে জ্বলছো।

যখন হাট বাজারের মতো স্থানের অলি গলিতে দেহের অর্ধেকটা দেয়ালে পুরে রাখি তখনো সেখানে দেখি ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছো। অতৃপ্ত সুখের অন্বেষণে সুখগুলোকে নিয়ে যখন হলী খেলা করি, একি সেখানেও সুখী মানুষের মতো উল্লাসে মত্ত থাকো।

পাপের সাথে যেমন পুণ্যের সাথেও তেমন, চুরি ডাকাতি, রাহাজানি এমন কি ধর্ষণের সাথে তেমন; চিঠির বদলে সম্মতি পেয়েছিলাম নরকের নর্তকীর, জানানো হয়েছিল গতদিনের অব্যক্ত যন্ত্রণার কথা। ছায়ার সাথে ছায়ার প্রতিচ্ছায়ার চলাফেরা কথা।

জবাবে জানালে তিনিও চলেন আমিও চলি, আমি চলি তিনিও চলেন। অথচ তার কোনো অপরাধ নেই। কুড়ি বছর পর আজ পৃথিবীটাকে শ্মশান মনে হয়। তুমি ঠিক বলেছো, সূর্য ডুবতে বসেছে। ধীরে ধীরে হাটছি একটু করে যাচ্ছি গন্তব্যের পথে। দরজায় যখন কড়া নাড়বে তখন কি দেখতে পাবো ছায়ার মতোন আছেন দাঁড়িয়ে। কই, তাঁকে তো দেখি না কোথাও?

উত্তরা, ঢাকা – ১২৩০, ১:১৫, ২১০২২০১৬

সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়

Rudra Amin
আমি সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়
যেন কোন বেলি আকাশ-পাতাল ফুটো না করে ফেলে,
মানুষ হয়ে মরতে পারবো না সেও নিশ্চিত বলে রাখি
পৃথিবীতে নামানুষের আয়ু বেশ দীর্ঘ মানুষ হওয়ার দায়ে।

আজ থেকে এক অনুভূতিহীন জানোয়ার হলে গেলাম
তুমি চাইলে যা ইচ্ছে তাই করতে পারো, কালো বনের
ভেতর সরু জ্বলন্ত ইস্পাত দন্ডের দ্বারা বিভাজন করতে
পারো খড়স্রোত জলের দু’টি পাড়, এক দীর্ঘশ্বাসের জন্য।

ভয় নেই, আত্মহুতি দেবো সেটাও ভেবো না; মরে গেলে
তো বেঁচেই গেলাম, কিন্তু তিল তিল করে নিজ হৃদপিন্ড
নিজেই কাবাব করে খেতে পারলেই বুঝবো আমি অনুভূতিহীন
এক জানোয়ার হয়ে উঠেছি শুধু একফোঁটা সৌন্দর্যের জন্য।

আমি সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো বিদায়
পৃথিবী যেমন পৃথিবী নেই, মানুষ যেমন মানুষ নেই, প্রেম-
ভালোবাসা-বন্ধুত্ব নেই, লাল বেনারশির যেমন কদর নেই
ঠিক তেমনি চলে যাবো একদিন সমাজ সভ্যতার নামে
মানবিকতার নষ্ট দানবের আনন্দ উল্লাসে অশ্লীল উরুতে।

ভালো থেকো বেলি, ভালো থেকো নীলাকাশ, ভালো
থেকো জন্মভূমির সেই ইছামতি নদীর পাড় স্মৃতিবিজরিত
আমার গাও; আমি সম্ভবত কারণ রেখেই পৃথিবীকে জানাবো
বিদায়, ছোট একটি দুঃখ ও ছোট একটি স্বপ্নকে বাঁচার জন্য।

হোটেল আমির, কসাইবাড়ি, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, রাত: ১০:০০, ১৯১২১৬।

ভালোবাসা ও স্বার্থ

তোমার দেয়া বিষ গ্রহণ করেও বেঁচে থাকতে পারি
যদি তুমি একবিন্দু বিষের বিষক্রিয়াকে অনুভব করতে পারো
কেননা ভালোবাসাকে আজ আমি স্বার্থের বাটখারায় পরিমাপ করি
ভাগ করি স্বার্থ তিন প্রকার, পিতা-মাতার স্বার্থ, ভাল ও মন্দ স্বার্থ।