আমিনুল ইসলাম রুদ্র এর সকল পোস্ট

আমিনুল ইসলাম রুদ্র সম্পর্কে

মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র, জন্ম : ১৪ জানুয়ারি, ১৯৮১। ডাক নাম রুদ্র আমিন (Rudra Amin)। একজন বাংলাদেশ কবি, লেখক ও সাংবাদিক। নক্ষত্র আয়োজিত সৃজনশীল প্রতিযোগিতা-২০১৬ কবিতা বিভাগে তিনি পুরস্কার গ্রহণ করেন। জন্ম ও শিক্ষাজীবন মোঃ আমিনুল ইসলাম রুদ্র ১৯৮১ সালের ১৪ জানুয়ারি মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার ফুলহারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ আব্দুল হাই ও মাতা আমেনা বেগম। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন কেটেছে খাগড়াছড়ি এবং বগুড়া সদর উপজেলায়। বগুড়ার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এসএসসি ও মানিকগঞ্জের দেবেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার গ্রাফিক্স ডিজাইন কোর্স সম্পন্ন করেন। কর্মজীবন মূল পেশা থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি লেখালেখি এবং সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি প্রায় সব ধরনের গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। কাজ করেছেন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায়। বর্তমানে তিনি জাতীয় দৈনিক আলোকিত প্রতিদিন এর ষ্টাফ রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজপোর্টাল নববার্তা.কম এর প্রকাশক ও সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি উইকিপিডিয়াকে ভালোবেসে উইকিপিডিয়ায় অবদানকারী হিসেবে উইকিপিডিয়া অধ্যয়নরত আছেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : যোগসূত্রের যন্ত্রণা (২০১৫); আমি ও আমার কবিতা (২০১৬); বিমূর্ত ভালোবাসা (২০১৮); অধরা- সিরিজ কবিতা (২০২০) প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ : আবিরের লালজামা (২০১৭)। আমার সকল লেখা পড়তে ভিজিট করুন : রুদ্র আমিন

স্বার্থের পাঠশালা

স্বার্থের পাঠশালা

আমার রংধনুর রঙ নেই
যখন চারপাশ আঁধারে ছেয়ে যায়
তখন তাকে দেখি নয়নে

আলোময় আকাশে যতবার রংধনু খুঁজে বেড়াই
ততবার সত্য আর বাস্তবতা প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়
ভুলে যাই রংধনু, ভুলে যাই নিজেকে

অতপর কেউ আমার নয়, আমিও কারো নই
স্বার্থের পৃথিবীতে ইহকাল-পরকাল স্বার্থ বিলিয়ে বেড়ায়ে
আসলে আমি ও পৃথিবী স্বার্থের পাঠশালা

বঙ্গ জীন

বঙ্গ জীন

এইতো যাচ্ছে দিন, বাজছে মাথায় বীণ
ভোরের আলো চোখের পাতায় দেখছে শুধু ঋণ
সপ্তাহে সাতদিন।

এইতো হচ্ছে ঘুম, চোখ টেনে খুন গুম
সত্যের মোড়ে মিথ্যে হেটে চলছে বামুন
মাসে ত্রিশখুন।

যাচ্ছে তবু দিন, জীবন যাত্রা ক্ষীণ
বস-এর মাথায় পিয়ন বসে বানাচ্ছে রুটিন
বর্ষে তিনশো পয়ষট্টিদিন।

আমি খাচ্ছি টেস্টি জেলি, তুমি পচা বিন
সপ্তাহে সাতদিন
ছয়-এ নয়-এ ভাবছি বসে বঙ্গে সবাই জীন।

একটি কবিতা

একটি কবিতা

একটি ঋতু, একটি দিন কিংবা এক সেকেন্ড
এখনো বৃষ্টির ঝরে পরা যন্ত্রণা অনুভব করি
দেখি জোৎস্না, উপলব্ধিহীন একটি কবিতা
হয়তো ক্ষণিক পরেই ভুলে যাই
ভুলে যাই নগরের কথা, অধিবাসীদের জীবন
জড়ো হওয়া সুখ ও দুখ; দেখি
সাগরও আজ ঝর্ণার নিকট সাহায্যের হাত বাড়ায়
আঁধারের নিকট সূর্য, দুখের নিকট সুখ
ক্ষণিক পরেই ভুলে যাই, একটি উপলব্ধিহীন কবিতার
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরা কান্না, অতঃপর জেগে থাকি
কি যেন হারিয়েছি, কী যেন নুতন কিছু পেয়েছি
মিথ্যে ছিলোনা কিংবা পুরো সত্যও নয়, একটি কবিতা
তোমার অবয়বে স্কেচ করা ছবি।

জল ও পানি

জল ও পানি

আলো আঁধারের মাঝে যতই লুকোচুরি খেলা খেলছি
কখনো দেখিনি নিজেকে,
নিদ্রা চোখে চাঁদ সুরুজের কিরণ যতই খুঁজে বেড়িয়েছি
অন্ধের ঠকঠক শব্দই দিয়েছে আমাকে।

চোখ বন্ধ করলেই দেখি খেলা করে চলেছে জল ও পানি
আমাতে আমি পাই না খুঁজে, দেখি রক্তের অগ্নিশিখা পলকে,
পাশে দাঁড়িয়েছো স্রোতের ভেলায় বারংবার তুমি দিবা-রাতে
আলো গড়ালেই জল ও পানি প্রতিকূলে ডাকে নিজেকে।

আমি আমাতে নেই, তোমাতে কি করে পাবো ঠাঁই?
গত দিনগুলোতে স্রোতের অনুকূল-প্রতিকূলে যেমন পেয়েছি আশ্রয়
জলকে জল, পানিকে পানি চিনিয়ে দাও আজি
বেলার ভেলায় আর হৃদ মন্দিরে যেন তোমাকেই পাশে পাই।

শেখ মুজিব ও সোনার বাংলার বর্তমান প্রেক্ষাপট

শেখ মুজিব ও সোনার বাংলার বর্তমান প্রেক্ষাপট

আজ সেই রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট, এমন নেতার বিয়োগান্তে বাঙালির শোকের দিন। আজ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকী। শেখ মুজিবর রহমান পৃথিবীর মানচিত্রে একটি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। শুধু তাই নয় তিনি বাংলার তিতুমীর, সূর্যসেন,ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, সুভাষ বসু, আলাওল, পদাবলী, মুকুন্দ দাস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাসকে ছাড়িয়ে হলেন ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী’। আর তাই বঙ্গবন্ধুর চেহারা কোটি কোটি বাঙালীর মুখচ্ছবি।

আজ সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৪২তম শাহাদাত বার্ষিকীতে বাঙালি জাতি ভুলে গেছে বাংলার ইতিহাস। ক্ষমতা আর হিংসার বশে ইতিহাসকে করে চলেছে নানা মুখে বিকৃত। ইতিহাস আর ইতিহাস নেই। যেন ছেড়া কাঁথা। সেই ছেড়া কাঁথা আজও সোনার বাংলায় প্রতিয়মান। কাঁথা যেদিকেই গায় জড়ানো হোক না কেন সকল দিকেই বেধে যায়, ছিড়ে যায়, এমনি নষ্ট হয়ে গেছে আমাদের মূল ইতিহাস। এখন ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়তে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে বাংলার ইতিহাস বলে কিছুই থাকতে না।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, “মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।”

বর্তমানের পরিপেক্ষিতে বলা যায় সোনার বাংলা তথা নোংরা বাংলা কখনোই আলোর মুখ দেখতে পারে না বা পারবে না যতদিন আমাদের নোংরামি দূর না হবে। আমরা এমন বাঙালি জাতি যে ভাল কাজের মর্যাদা কখনোই দিতে জানি না। সম্মান করতে জানি না যে সম্মান প্রাপ্য। শুধু রাজনীতি নয় শিল্প-সংস্কৃতিতেও এর প্রভাব। বাংলা স্বাধীন হয়েছে এমন কথাটি অনেকে বিশ্বাস করতেই পারে না। শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী, এ কে ফজলুল হক নামের যে কয়েজন ব্যক্তি এই বাংলার বুকে জন্ম নিয়েছিলেন এবং এই বাংলাকে সোনার বাংলায় রুপান্তরিত করেছেন সেটাই আজ স্বপ্নের মতো।

সকল বাংলার কারিগরদের এখন আর তেমন মর্যাদা দেয়া হয় না। আমাদের দু’টি দল তারা শুধুই তাদের সম্মান ছিনিয়ে নিতে ব্যস্ত। আমি হলফ করে বলতে পারি এভাবে সম্মান অর্জন আর নর্দমায় জল ঢালা একই কথা। দেশ কারিগর সবাইকে সঠিক সময়ে সম্মান করুন। দেশ উন্নত হবে, দেশের মানুষ প্রকৃত দেশ প্রেমিককে পরিণত হবে। দেখা যায় রাজনৈতিক ক্ষমতার বল-এ আমরা এতোটাই নিকৃষ্ট জাতিতে পরিণত হয়েছি যে, মানুষকে মানুষ ভাবতে পারি না।

আর হয়তো একারণেই সেদিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক নীরদশ্রী চৌধুরী বাঙালিদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, “বাঙালি জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বিশ্বের মানুষের কাছে নিজেদের আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে”।

শুধু এতোটুকুই ভাবতে পারি আমি নিজেই মানুষ বাকিরা সমাজ ও দেশের কীট-পতঙ্গ, তবে বলতেও ভয় হয়। আজ বাংলার অন্যতম ব্যক্তি যার নাম, যার কণ্ঠের স্বর কর্ণ স্পর্শ করলেই শরীরের প্রতিটি লোম সজারু কাটার মতো দাড়িয়ে স্যালুট করে সেই মহান ব্যক্তি সোনার বাংলার রূপকার শেখ মুজিবর রহমান তাকে নিয়েও বর্তমান নীতিহীন রাজনীতিতে কত রঙ তামাশা করে বেড়াই। মুছে দিতে মরিয়া বাংলার হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙালি শেখ মুজিবর রহমানের নাম।

শুধু বিরোধী দলের একার দোষ সেটা বলবো না, দোষ আমাদের সবার। রাজনীতিকে আমরা নর্দমার বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত করেছি। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে গান্ধীকে নিয়ে তো এতো কথা উঠেছে না তাদের রাজনীতিতে। তবে আমাদের বেলায় কেন এতোটা কাদা ছুড়াছুড়ি। আমরা এতো এতো জ্ঞানী রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দেখি, বই পুস্তকে তাদের নাম ধাম পড়ি, শুনি; কই তারা তো দেখি হিংসা বিদ্বেষ ছাড়া কিছুই জন্ম দিতে পারেনি। তারা যদি প্রকৃত জ্ঞানী-গুণী হয়েই থাকতেন তাহলে শেখ মুজিবর রহমানের মৃত্যুবাষির্কী-উদযাপনের নামে সরকার দলীয় নেতা কর্ম কোটি টাকা খরচ করতে পারতো না, পারতো না রাস্তাঘাটে মঞ্চ তৈরী করতে, যেখানে সাধারণ মানুষের ব্যবহার অপরিহার্য।

আজ সোনার বাংলায় বুদ্ধিজীবিরাও দলকানা। স্রোতের অনুকূলেই গা ভাসাতে মরিয়া কিছু বুদ্ধিজীবিরাও। দলকানা হওয়ার কারনেই তারা দলীয় মদদে সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যেকে সত্য প্রচার করে বেড়ায়। আমাদের ইতিহাস কি শুধুই একজনের ? নাকি এই ইতিহাস সৃষ্টি করতে লক্ষ প্রাণের রক্ত বির্সজন দিতে হয়েছে ?

শুধু শেখ মুজিবরের কথা বললে ভুল হবে, জিয়াউর রহমানের ভূমিকা এদেশে অবশ্যই রয়েছে। রয়েছে মাওলানা ভাসানী, তাজ উদ্দীন আহম্মদ, একে ফজলুল হক আরও অনেকে। এদের যদি আমরা সম্মান করতে না পারি তাহলে আমি মনে করি এদেশের কেউ সম্মানের যোগ্যতা রাখে না। সবাই ভণ্ড।

বেগম জিয়া আমাদের মতো এতো ছোট ব্যক্তি নয়, তার সম্মান অনেক। তিনি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী। এজন্য তার বিবেক জ্ঞান সূর্যের মতোই উজ্জ্বল থাকতে হবে। বেগম খালেদা কেন আমাদের গর্বের নেত্রী শেখ হাসিনাকেও মনে রাখতে হবে তিনি কেমন মহৎ মানুষের সন্তান। আসলে হাতের পাঁচ আঙ্গুল এক হয় না। কারো না কারো বিসর্জন একটু বেশি দিতেই হয়। পৃথিবীর বুকে নাম লেখার জন্য মহৎ কাজ করতে হয় নয়তো সবচেয়ে খারাপ কাজ করতে হয়।

আমাদের দেশের রাজনীতিতে যদি এভাবে দিন অতিবাহিত হতে থাকে তাহলে এদেশ একদিন কুকুর বেড়ালের দেশে পরিনত হবে। মানুষ বলে কেউ থাকবে না। শুধু মানুষের কাঠামোতে পুতুল হয়ে থাকবে বাঙালি জাতি। আওয়ামীলীগ বিএনপি দেশের বড় শক্তিধর দু’টি দল এরা এখন রাজনীতির অপব্যবহার করা ছাড়া আর কিছুই করছে না। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছে না। কারো ভেতর সহানুভূতি কিংবা ক্ষমা নামক গুণ নেই বললেই চলে। প্রতিহিংসার রাজনীতি সোনার বাংলাদেশে।

আচ্ছা ক্ষমতার উচ্চশিখরে উঠলেই কি মানুষ ভুলে যায় মৃত্যুর কথা? নাকি তারা ভাবে তাদের মৃত্যু বলে কিছুই নেই। কেন তারা কেউ ভাবে না এ পৃথিবীতে আমরা খুব বেশি দিনের জন্য আসিনি। আমরা সবাই একদিন আপনজন রেখে চলে যাবো। কিন্তু আমরা কি রেখে যাচ্ছি আগামী প্রজন্মের জন্য। আমাদের রাজনীতি আগামী প্রজন্মের জন্য রেখে যাচ্ছে রক্তের মদ, মানব গোস্তের কাবাব।

যে যতোই শেখ মুজিবর রহমানকে বাংলার ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে চান না কেন এটা কখনোই সম্ভব নয় এটা ভাবেন। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ যতদিন আছে ততদিন শেখ মুজিবর রহমান, জিয়াউর রহমান, মাওলানা ভাসানী, তাজ উদ্দীন আহম্মদ, একে ফজলুল হক আরও অনেকে সবার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। নাম হত্যা না করে আসুন সোনার বাংলাকে সোনার পরিণতি করি। সবুজের বাংলাকে সবুজে পরিপূর্ণ করি।

সর্বোপরি তুলে ধরতে চাই দ্য টাইমস অব লন্ডন এর ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয় ‘সবকিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সবসময় স্মরণ করা হবে। কারণ, তাঁকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই।’ একই দিন লন্ডন থেকে প্রকাশিত ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশের লাখ লাখ লোক শেখ মুজিবের জঘন্য হত্যাকান্ডকে অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে বিবেচনা করবে।’ আজও তেমনই হচ্ছে, হয়তো এভাবেই চলছে….

স্তন

স্তন

আমি তাঁর স্তন স্পর্শ করেই পৃথিবীর সুখ অনুভব করি
বুঝতে পারি আমার মতো সেও এমন স্পর্শে কাতর
এমনটা শুনে তোমরা পৃথিবীর নিকৃষ্ট প্রাণী বলে যে যার মতো
ঘৃণার অবাধ্য লালা আকাশে ছুড়ে মুখ ফিরিয়ে নাও

তোমরা আমাকে যে যাই বলো না ক্যানো, বলবো ঠিক বলেছো
আমি অন্ধ হলে তো তোমরা অন্ধ হতে পারোনা, দ্যাখো এবং বুঝো;
কিন্তু আমি, অতিসয় সহজ সরল, অবুঝ এক জীব; যার
বোধের ঘরে ভালোবাসা আর সরলতা ছাড়া কিছুই নেই
কোনটা অশালীন কোনটা অশ্লীল বুঝি না, শুধু বুঝি ভালোবাসা।

তোমরা যেটাকে অশ্লিলতা বলো আমি বলবো সেটাই শালীন
ক্যানো না আমার স্পর্শে যদি কেউ সুখানুভ করে তবেই আমি সুখী
তোমরা হয়তো স্পর্শ করতেই জানো না কিংবা তোমাদের ত্বক
ফেলে রাখা মরিচার বসবাসে আজ কাঠ থেকে পাথর হয়ে গ্যাছে,

মনে রেখো কতটুকু অধিকার থাকলে কারো স্তন স্পর্শ করা যায়,
তোমরা হয়তো সেটাই বুঝো না…

ফরিদমার্কেট, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, দুপুর: ১২:৩০, ০৬০৬২০১৭।

নাট্যমঞ্চ


কলাম করা একটি চারা গাছ এনেছিলাম। সময়টা শুধুই মনের দাবি। কখন, কোনদিন, কোন বার, কোন সময়ে? আকাশে কালমেঘ যখন স্বচ্ছ আকাশটাকে আধা জ্বলন্ত চুল্লির ধোয়ায় চোখে জল নিয়ে আসে ঠিক তেমনি। চোখের জল ছাড়া কিছুই বলতে পারি না। মনেও পড়ে না। শুধু বেদনার জল, স্মৃতির ছলছলানির কথাই স্মরণ হয়।

মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কলামের চারা থেকে ফল আহরন করবো না। যেদিন পরিপক্কতা পাবে কিংবা যেদিন ফল দিয়ে সে তৃপ্ত হবে সেইদিন নেব। চারা গাছে একদিন মুকুল এলো এর পর ফলের পথে পথ চলতে শুরু করলো। একদিন ফল পরিপক্কতার রূপ ধারন করলো। লোভ সামলানোটা কষ্টের রুপে বেদনা হয়ে উপস্থিত হলো। সকল বেদনার অবসান ঘটিয়ে মনকে সান্ত্বনা দিয়েই অপেক্ষায় রাখেছি।
ফলের ঘ্রাণে চারদিক মৌ মৌ সুগন্ধি। গাছের নিকট যাই আর ফলের পানে চোখ মেলে তাকাই। মাঝে মাঝে হাত বুলিয়ে দেই। একদিন ভাবতে থাকলাম। ফল পূর্ণতা পেয়ে গাছের নিচে পড়ুক। কলামের চারা নয় নাড়ীর চারা নিয়ে অন্য কোথাও বপন করবো।

দিন গেলো মাস গেলো। চারা গাছের নীচে চারার চারা দেখতে পেলাম। কি সতেজ চারা গাছের পাতা, কাণ্ড। খুব মায়া হলো মাটির বুক চিরে কিভাবে চারাটি অন্য স্থানে স্থানান্তর করি। দিনে দিনে মায়া বেড়েই চললো। আর হলো না চারা গাছটি উত্তোলন করে অন্যত্র বপন করা।

দিন,মাস, বছর পেরিয়ে চারা আর চারা নেই যৌবনের জোয়ারে ভাসছে। যার নিকট থেকে তার বেরিয়ে আসা আজ সে তার থেকেও অনেক অনেক বড় হতে চলেছে। কলামের সেই গাছটি আজ চারা গাছের আড়ালে খাবারের অভাবে শুকিয়ে গেছে। কোন মায়া মমতাই নেই। হায়রে চারা বৃক্ষ, যেখান থেকে তোর আসা সেই রাস্তাকে এভাবেই তিলেতিলে ধবংস করে দিলি।

একদিন কলামের গাছটির পাতা,মূল,কাণ্ড টলতে শুরু করেছে। অবহেলা অযত্নে আর কতদিন। খাবারের অভাবে আজ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। এতো গুলো ফল জন্ম দিয়েও আজ সে খাবারের অভাবে ঠিক ফাঁস দেয়া মানুষের মতো শ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। সেদিন রোদ-বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করে কি লাভ হলো। যেই রক্ষক আজ তাকেই ভোগ করে নিলো।

সৃষ্টির সৃষ্টতা সত্যই বড় অদ্ভুদ। একদিন সেও হয়তো এভাবেই কারো না কারো ভোগের সামগ্রী হয়ে পৃথিবীকে বিদায় জানাবে। আসলে ভবিষ্যত নিয়ে কেউ ভাবে না। বর্তমানকেই স্বর্গ ভেবে ভুলে যায় সৃষ্টির রহস্য। সৃষ্টি মাঝেই যে ধবংস সে কথা ভুলে যায় ক্ষণিকের আহলাদে, স্বার্থে। সত্য এটাই চলে যেতে হবে সবার। জীবনটা নাট্যমঞ্চের চেয়েও কঠিন নাট্যঙ্গায়ন।

“জন্মিলে মরিতে হবে রে, জানে তো সবাই
তবু মরণে মরণে অনেক
ফারাক আছে ভাই রে, সব মরণ নয় সমান।।”— প্রতুল মুখোপাধ্যায়

সময়

সময়

আর কতোটা সময়, কতোটা স্পর্শে
কতোটুকু দূরত্ব পেছনে ফেলে এলে
বুঝবো তুমি নারী, তুমি ভালোবাসা, তুমিই জগতের আলো

আজ যতোটা বুঝেছি সেইদিন গুলির সব কথাই ছিলো আবেগী
আগামীকে না ভেবে যদি বর্তমানকে জড়িয়ে ধরতাম
ভুল হয়তো ফুল হতো, পুড়তো না আশা

কতোটা কালের পরিবর্তন, আজ ভাবনায় ঝড় তুলে
কাল নয়, যা পেয়ছো তা তুলে নাও
মূহুর্তে অতীত হয়ে যায় সকল আগামী

আজ তুমি নারী, আমি নর; কাল হয়তো পুড়ে যাবে সব

চরিত্র

আমি উলঙ্গ হলেই যত সমস্যা পৃথিবীর
কিন্তু চ ছ জ ঝ এক চুল রাখেনি গায়ে বস্ত্র, কই?
কোথাও তো শুনিনি কান কথা কিংবা আন্দোলন
গ্রীষ্মের তাপদাহেও পুড়েনি কোনো চায়ের দোকান
তবু কেনো স্বর্গ নরকের হিসেব বুঝানো হয় শুধু আমাকেই!

উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, সকাল: ১০:৩০, ২৬০৯২০১৬

এ জীবন আমার নয়

এ জীবন আমার নয়

আশ্বাস পেলে ঘোর শত্রুর সাথে মিত্রতার সনদে দিতে পারি সই
এখন শুধু মনের মাঝে তুমি ছাড়া আর নেই কেউ,
আকাশে মেঘেদের লুটোপুটি খেলা আছে, জলে আছে মাছ
বাড়ির উঠোনে এখন নামে সন্ধ্যাতারা, চায়ের কাপে উঠে ঢেউ,
কিছুদিন আগেও এমনটি ছিলো না, এখন সূর্যাস্ত দেখে আনন্দ পাই
রাতের অন্ধকারে খুঁজে পাই তোমাকে, যেখানে যাই যেখানেই থাকি
সকলের উপেক্ষার মাঝেও খুঁজে পাই একটু ঠাই
আজ বলতে পারি সত্যিই এজীবন আমার নয়।

অভিলাষ

অভিলাষ

অধরা তোমার শীতল আঁচলে মুখ লুকাবো
কোমল হাতের স্পর্শে ক্লান্ত দেহ ফড়িং বানাবো
বাউরি হাওয়ায় দোল তোলা ধানের শীষের মতো
রেশমী কেশের সবুজ ঘ্রাণে মাতাল হবো,

অতঃপর,
আকাশ ভেবে মেঘের সাথে সুখের হলী খেলবো
সূর্যের ফলিত উত্তপ্ততাকে শরতের উষ্ণতায় ভরিয়ে দিবো
যদি একবার তোমার আঁচল তলে মুখটি লুকাতে দাও…

পরিণীতা

পরিণীতা

রাজপুত্র কিংবা অধরা নই
অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে দ্যাখো, অনুভব করো
কখনো ছায়া কখনো রোদেল হাওয়া
অতঃপর একটি প্রতিবিম্ব।

এটা কোনো স্বপ্ন নয়, হৃদয়ের কথা,
আলোতে এসে দ্যাখো, চোখ বন্ধ কোরে দ্যাখো
দু’হাত প্রসারিত কোরে মুক্তবায়ু গ্রহণ করো একবার
অতঃপর পৃথিবী থেকে পৃথিবীর অতি নগণ্য
এ যে এক টুকরো শান্তি।

সম্মুখে সবুজ অরণ্য, ভয় নেই
জড়িয়ে ধরে দেখো বুকের মাঝে কতোটা পতিত জমি
এক ফোটা জলের তৃষ্ণায় কতোটা কাতর
পৃথিবীর পৃথিবী।

দু’টি হাত একে অপরের বন্ধনে আবন্ধ
মেঠো পথ সবুজ শ্যামল গা রাখালের সুর
সবটাই তুমি, আমার পরিণীতা
বৃত্তের বিন্দুতে একে অপরের পরিপূরক।

তোকে হৃদয় কিনে দিবো

তুই যদি স্বপ্নের প্রজাপতি হয়ে
শুষ্ক নদীতে চিরচির করে বয়ে চলা
জলের স্রোত এনে দিতে পারিস
তবে, তোকে হৃদয় কিনে দিবো

তুই যদি তপ্ততায় বৃষ্টি হয়ে
চৌচির হয়ে যাওয়া মৃত্তিকার বুকে
একটু সুড়সুড়ি এনে দিতে পারিস
তবে, তোকে হৃদয় কিনে দিবো

গোলাপ, গাদা, শিউলি, বেলি, তোর চেয়ে দামী নয়
তুই মূল্যহীন অমূল্য, তোকে স্বপ্নের এক পৃথিবী দিবো
নীলাকাশ, গোধূলী সন্ধ্যা, শরতের নদী মোহনায়
তোকে হৃদয় কিনে দিবো, যদি হৃদয় চিনতে পারিস।

ফরিদমার্কেট, মধ্যআজমপুর, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০, দুপুর : ২:১৫, ২৮০৬২০১৬।

দৃষ্টি

Rudra Amin.dristy

দৃষ্টি ফেলো ভেবে চিন্তে
দৃষ্টি ফেলো মায়ায়
এমন দৃষ্টি ফেলোনা তুমি
দেখলে কাঁদে ছায়ায়

মিষ্টি কথায় মানুষ জোটে
তিক্ত কথায় দূরে
এক পলকের দৃষ্টি তোমায়
পুড়িয়ে ছাই করে

দৃষ্টির মাঝে আছে সুখ
দৃষ্টির মাঝে জ্বালা
অমন দৃষ্টি আর ফেলোনা
বুঝলে মানুষ কালা।

কসাইবাড়ি, দক্ষিণখান, রাত: ০১:০০, ২০০৪২০১৭।

পরিবর্তন

Paribarton

জল আনতে গিয়ে জল যে শুকিয়ে ফেলবো ভাবতেও পারিনি
আজকাল চোখেও খুব কম দেখি, দেখেও যেন দেখিনা বুঝি
দাউদাউ করে জ্বলন্ত মরুহৃদয় ভেজাতে এসেছিল এক বৃষ্টি
তবুও ভুলে যাই অতি সহজে যে চুল্লিতে নিত্যই দিতো জল
তেমনি ভুলে যাই কিছু নাম, কিছু দৃষ্টি, আঁকাবাঁকা ও সমান্তরাল হৃদয়
আসলে পূর্ণিমার চেয়ে শ্যামল জ্যোতিই দুরন্ত ও সূক্ষ্ম অস্ত্র।

Painting: Cameron Bryce Liston