রুকশানা হক এর সকল পোস্ট

প্রেজেন্ট এ্যাপস্ // রুকসানা হক

ধূপছায়ার কঠিন জেদ।
ঃ মায়ের কথা বলো।
ঃ সেই গল্পটার কথা মনে আছে তোমার ? ওই যে…..
নিঝুম এড়িয়ে যেতে চায় ধূপের জেদ। ধূপ ফের বলে।
ঃ মায়ের কথা বলো।
ঃ….. চাঁদ হারিয়ে গেলে যে রাত পড়ে থাকে….
কথা শেষ হয়না নিঝুমের, ধূপ কঠিন গলায় বলে
ঃ গল্পের কথা অনেক শুনেছি। এবার একজন মায়ের গল্প শুনতে চাই।

আকাশের দিকে তাকালো নিঝুম। নিঃশব্দে সন্ধ্যার আলোআঁধারি আকাশে মেঘের তোলপাড় গুনলো। মেঘেরা খন্ডিত হয়, টুকরো টুকরো হয়, তবুও ভাসে। খুব কষ্ট হলে মাটির কাছে জল গুলো জমা রাখে।

নিঝুম মেঘ হয়, খন্ডিত হয় ধূপের কথায়। জল হয়ে ঝরতে চায়। মাটি খুঁজে পায় না। তার পায়ের তলায় রাশি রাশি কংক্রিট।
আনমনে বলে ওঠে
ঃ মা মানে কয়েকটি সন্তানের জননী। মানুষ করার নামে মা ই তাদেরে অমানুষ হিসেবে গড়ে তোলে।
অবাক বিস্ময়ে তাকায় ধূপ। ঘোর লেগে যায়
ঃ মা কোথায়?
ঃ এখানে বা ওখানে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।
ঃ সন্তানেরা?
ঃ ব্যস্ত। সব মা সন্তানদের ব্যস্ত বানাতেই তো চায়।
ঃ হ্যাঁ, ব্যস্ত মানুষ বানাতে চায়।
ঃ ব্যস্ততা তাদেরে আর মানুষ রাখে না। ওরা যন্ত্র হয়। অনুভূতি শূণ্য কিছু অমানুষ।

ধূপছায়ার মায়ের ম্যাসিভ এটাক হয়। নিঝুম ভাবে এমন একজন মা যার কয়েকটি প্রতিষ্ঠিত সন্তান থাকা সত্ত্বেও তিনি পরনির্ভর আজ। গৃহকর্মীদের কাছে থাকেন। সন্তানেরা ব্যস্ততার অজুহাতে মাকে দেখতে আসে না। তিনি জগত সংসারে এখন একা।

নিঝুমের কষ্ট হয়। নিজের মাকে মনে পড়ে। মা এখন কোথায়? সে জানে সব; তবুও অজানার কাছে নতজানু হয়।
ছয় বছরের নিঝুম কোন এক লাল বেনারসি দেখে একা হয়েছিল। ট্রেনের শেষ হুইসেলের মতো বেনারসির আঁচল দুলিয়ে মা সেই অজানায় হারিয়ে গিয়েছিল তার।

এখন আর মাকে ভাবে না সে। বাবার মৃত মুখটাও কেমন ঝাপসা। নিঝুমের ভাবনা ছাড়িয়ে মা হয়তো দূরের কোন গাঁয় শাপলার ঝিলে অশ্রু ঝরান। মৃত বাবা সে অশ্রুতে নেয়ে পবিত্র হন। আর জীবিত বাবার বাকি সন্তানেরা মায়ের আঁচলটায় গিঁট দিয়ে রাখে তাদের সুখের চাবি।

গাঁও গেরামের মায়েরা একা থাকেন না। তাদের সন্তানেরা বড় মানুষ হতে গিয়ে যন্ত্র হয় না। নিঝুমকে একা রেখে গেলেও মা একা থাকেন না। বছর ঘুরতেই তিনি দুকা হন, তারপর তিনকা, চারকা।

ধূপ ঢোক গিলে। সে আর মায়ের গল্প শুনতে চায় না। নীরবে পুড়তে থাকে। অপরাধী হয়।

ম্যাসিভ এটাক তার মাকে শ্বাসরুদ্ধ করতে যেয়েও পারেনি। কারণ তারা আল্লাহ্‌র নামে গরু, খাশী উৎসর্গ করেছিল। মসজিদে মসজিদে হুজুরদের দিয়ে দোয়াদরুদ ও কম করায় নি।
অসুখটা হয়তো গরু, খাশীর ভয়ে ভড়কে গিয়ে মাকে ছেড়ে দিয়েছিল এবারের মতো। বেঁচে যাওয়া এক অথর্ব মা এখন সংসারের বোঝা। সে বোঝা এতটাই ভারী যে উচ্চ শিক্ষিত সন্তানদের কাঁধটা একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার মতো। তারা ভয় পেলো। মা তাদের সব ভয় অন্তরে গোপন করে একা হলেন।

নিঝুমের মাকে খুঁড়ে বের করতে যেয়ে ধূপছায়ার চোখে নিজের মায়ের ছবি ভেসে উঠলো। লজ্জা হলো হয়তো তার। কিন্তু তাও ক্ষণিকের। তার সহোদরেরা যন্ত্র হয়েছে তারই মতো। যন্ত্র মানেই তো অমানুষ — মনুষ্যত্ববোধহীন জড়পিন্ড।

নিঝুম হাসে, ধূপের ঠোঁট জলশূন্য হয়। ঢোক ও গিলতে পারে না আর। ছুটে পালাতে চায়। আড়ষ্ট পা দু’টোকে নাড়াতে পারে না।

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে নিঝুম। এবার খন্ডিত মেঘ নয়, অবিরাম জলরাশি হয়ে ঝরে। কংক্রিটে নয় মাটিতেই জল গড়ায়।

চার ভাইবোনকে দুই হাতে আগলে রাখতে গিয়ে মা নিজের অজান্তেই উঁচু প্রাচীর তৈরী করে ফেলেছিলেন। এত উঁচু যে, এই প্রাচীর টপকে মনুষ্যত্ববোধ ঘরে এসে ঢুকেনি। চাঁদ হারানো রাতের মতো তাই তিনি এখন একা।

ঃ মায়ের কথা শুনতে চাও না ধূপ?
ঃ চুপ করো।
ঃ কষ্ট না লজ্জা?
ঃ চুপ করো নিঝুম।
ঃ যার মায়ের দু’বার লাল বেনারসি পরার ঘটনা ঘটে এবং তার একবার নিজ সন্তানের সামনেই ঘটে, সেই হতভাগা সন্তানের কথা অন্তত জেনে যাও।
ঃ আমি আর শুনতে চাই না।
কান্নায় ভেঙে পড়ে ধূপছায়া।
ঃ ধূপ আমার মতো সন্তানরা শুধু নয়, ব্যস্ত সন্তানরাও দুর্ভাগা হয় তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো এখন ?
ঃ নিঝুম আমি আর পারছি না।

কিভাবে পারবে ধূপছায়ারা ! তাদের সে ক্ষমতা লুপ্ত। ধূপছায়াদের দুর্ভাগ্যকে মানিয়ে নিতে গিয়ে সব মায়েরা আজ অসহায়। শুধু অসহায়ত্বের ধরণটা ভিন্ন।

নিঝুম খোলা আকাশের নীচে পথ চলে। চলতে চলতে কখন যে ট্রেন লাইনের পাশে এসে দাঁড়ায় বুঝতে পারে না। কু ঝিক ঝিক ট্রেনটা কোন এক গাঁয়ের পাশ দিয়ে চলে যায় প্রতিদিন, যেখানে শাপলার ঝিলে আজো নোনা জল গড়ায়।
আর ধূপ ! সে তো আটকে থাকে টাইম মেশিনের স্থবির প্রেজেন্ট এ্যপস্ এ।

চা কন্যা // রুকসানা হক

ঢালু পাহাড় চা গাছ ভরা ঘন সবুজ বন
চায়ের পাতার মন ভোলানো গন্ধে বিভোর মন,
চা কন্যার নিটোল দেহের লালশাড়িটার ভাঁজে,
কোন সুদুরের সুখের বীণা কলকলিয়ে বাজে !

সুখ তারে কয় কে বা জানে, নাকি সুখের ভান?
কেউ কি বুঝে চা কন্যার গোপন অভিমান?
ভরাট হাতের চার আঙুলে যন্ত্র খেলা করে
চায়ের পাতায় তরতরিয়ে গাঁট যায় তার ভরে।

গিট্টু দেয়া গামছাতে তার ভীষণ আর্তনাদে,
মাই টেনে আর পায়না খাবার কাঁখে শিশু কাঁদে।
ঘোর সন্ধ্যায় চা কন্যার ক্লান্ত বুনো ঘামে
সবুজ পাতায় বিন্দু বিন্দু শিশির যেন নামে।

সংক্রমিত দুঃখগুলো চৌকাঠে বাস করে
কুপির আলোয় কালো মুখে স্বপ্ন খেলা করে,
কপাল জুড়ে ঝলকে উঠে রাঙা টিপের ভাষা
চা কন্যার দুই নয়নে তবুও খেলে আশা।।

অণুগল্প : স্বপ্নপোড়া গন্ধ // রুকসানা হক

পকেটে মাত্র একশ’ পঁয়ত্রিশ টাকা। নিটোলকে বিয়ে করতে কাজী অফিসের সামনে এসে রিকশা থেকে নামলো অর্ণব। সাথে বন্ধু সুদীপ।

প্রায় বিশ, পঁচিশ মিনিট আগে নিটোল এসেছে। একাই এসেছে সে। অফিস বারান্দার এককোণে ওড়না দিয়ে মাথায় আধখানা ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে আছে। শুকনো মুখ, টেনশন, দুশ্চিন্তায় হয়তো গলা দিয়ে কিছু নামেনি।

এতটুকু সাজগোজ ও করেনি নিটোল। তার একটা ব্যক্তিগত প্ল্যান রয়েছে, বাসরেই সে প্রথম সাজবে। আজ এমনিতেই বিক্ষিপ্ত মন তার। মাকে বার বার মনে পড়ছে। আজকের এ ঘটনা জানাজানি হলে সবচেয়ে বেশি মূল্য মাকেই দিতে হবে। বাবা মাকে ছেড়ে কথা বলবেন না।

নিরুপায় নিটোল। বিয়েটা আজ অথবা কালই তাকে করতে হবে। দেরি করা চলবে না, তাহলে অঘটন এড়ানো সম্ভব হবে না।

অর্ণবকে দেখে কোনরূপ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনি সে। বেশ নির্বিকার ভাবেই শুধু বললো
ঃ আজো তোমার দেরী !
ঃ বিশ্বাস করো সকাল থেকে ছুটাছুটি করছি।
ঃ টাকার জন্য ?
ঃ হ্যাঁ।
ঃ ম্যানেজ হয়েছে?
ঃ না।
ঃ তাহলে দেরি কেনো? সমস্যা নেই, আমার সাথে টাকা আছে।
ঃ চলো ভেতরে যাই। আজ একটা শাড়ি পরলে পারতে।
ঃ না পারতাম না। সমস্যা হতো।

কাজী অফিসের ভেতরে যেতে যেতে সুদীপকে লক্ষ্য করলো নিটোল। বেশ পরিপাটি পোশাক আশাক। পান্জাবী পরেছে, ক্লিন শেভ। পায়ের স্যান্ডেলটাও নতুন। হাতে একটা পলিব্যাগ। মনে হচ্ছে আজ অর্ণব বর নয়, বরং সুদীপই বর।
অর্ণবের উসকোখুসকো চুল, ঘামে ভেজা শার্ট, মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লান্তির ছাপ। কে বলবে সে আজ নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছে !

নিটোল, অর্ণব দু’জনকেই উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে এখন। এমন বিয়ের জন্য তারা প্রস্তুত ছিল না মোটেই। কথা ছিল পড়াশুনা শেষ করে দু’জন চাকরী বাকরী করে খানিকটা স্থিতিশীল হয়ে বিয়ে করবে।
কিন্তু উপায় ছিল না। প্ল্যান মাফিক কখনোই জীবন চলে না। নিটোলের একটা বিয়ের কথাবার্তা চলছে। দু’দিনের মধ্যেই বাড়ি যেতে হবে। এদিকে গরীবঘরের ছেলে অর্ণব নিজের আর্থিক অসংগতি নিয়ে কখনোই নিটোলের পরিবারের মুখোমুখি হবার সাহস রাখে না।

আজকাল অর্ণব তথাকথিত নৈতিকতার বুলিগুলোকেই ফাঁকা মনে করে। অর্থ যে কখনোই অনর্থের মূল নয়, বরং অর্থহীনতাই অনর্থের মূল তা হয়তো খোদ নীতিবাক্য রচয়িতা নিজেও ভালো করে জানতেন।

মানুষের কথা ও কাজের মাঝে বিস্তর ফারাক থাকে একথাটাও তার দারিদ্রতার অভিজ্ঞতা দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে সে।

নিটোলের পরিবার অর্ণবকে মেনে নিতে পারবে না এ সত্যটা ওরা দু’জনই ভালো করে জানে। অগত্যা বাড়ি যাওয়ার আগেই বিয়েটা সেরে ফেলার পরিকল্পনা করে ওরা। অর্ণব চেয়েছিল মাসের শুরুতে বিয়েটা করতে। তাহলে টিউশনির টাকাটাও হাতে আসতো। একজন ছাত্রের মায়ের কাছে এডভান্স দু’হাজার চেয়েছিল। মহিলা মুখের উপর না করে দিয়েছেন।

পকেট খালি। নতুন বউকে একটা কিছু গিফট ও করতে পারবে না। লজ্জায়, হীনমন্যতায় মাথা হেট হয়ে আসছে তার। নিটোল অর্ণবকে বুঝতে পারছে। তার নিজের ও কষ্ট হচ্ছে। চালচুলোহীন একটা ছেলের সাথে পুরোটা জীবন জড়িয়ে নিচ্ছে। ভালোমন্দ হিসেবটুকু করার ন্যুনতম সময় ও হাতে নেই।

মায়ের কোমল মুখটা মনে পড়ছে, সাথে একটি কঠিন বাক্য।
ঃ মেয়েদের জন্য দেখতে হয় ভাতের ঘর আর ছেলেদের জন্য জাতের ঘর।
অর্থাৎ মেয়েদেরকে বিয়ে দিতে হয় ধনী পরিবারে, যাতে অন্নবস্ত্রের জন্য কষ্ট না পায়, আর ছেলের বউটা আনতে হয় বংশ দেখে, কারণ এই মেয়ের দ্বারাই ছেলের সংসার গড়ে উঠবে।

কিন্তু নিটোল তো জাত ভাত কোনটির ঘরেই হাত দিচ্ছে না। সে অর্ণবের মতো একটি খাঁদহীন প্রেমিকের জীবনে হাত দিচ্ছে। মানুষটাই তো আসল, যাকে নিয়ে সারাজীবন চলতে হবে তাকেই তো খাঁদহীন হতে হবে ! একটা পরিপূর্ণ জীবনের প্রথম শর্ত পারষ্পরিক বুঝাপড়া। এই ক’ বছরে অর্ণবকে বুঝতে বাকি নেই নিটোলের। কত মান অভিমান গেছে, কত সুখ দুঃখ !

সবসময়ই অর্ণবকে দেখেছে চরম ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে।

পুরুষের ধৈর্য্যের বিকল্প কিছু নেই। বাবাকে আজীবন ধৈর্য্যহীন দেখে দেখে অর্ণবকে সে তুলনায় অনেক বেশি পারফেক্ট মনে হয়েছে তার কাছে।

পান্জাবীর পকেট থেকে একটা চকোলেট বার বের করে সুদীপ নিটোলের দিকে এগিয়ে দিলো
ঃ দু’জন ভাগ করে খাও। গলায় জল আসুক।

নিটোলের নির্লিপ্ত চোখ। চকোলেট হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে রইলো।
রাজ্যের ক্লান্তি অর্ণবের উদাস দৃষ্টিতে।
ঃ তুমি কি ভয় পাচ্ছো? নিটোলই নীরবতা ভাঙলো।
ঃ না, ভয় নয়, দুশ্চিন্তা।
ঃ আমার বোঝাটা খুব ভারী হবে না
ঃ যত ভারীই হোক, বয়ে নেয়ার সাহস রাখি
ঃ পাশ করার পর আমরা দু’জন মিলে একটা সংসার ভালোভাবেই চালাতে পারবো।

নিটোলের স্বপ্নভরা চকচকে চোখের দিকে তাকিয়ে ভীষণ মায়া হলো অর্ণবের। মেয়েটা হয়তো ভুল করছে একটা ভুল জীবনকে ভালবেসে। সংসারে টাকার বিকল্প কিছু নেই। জন্ম থেকেই অভাবের কুৎসিত রূপ দেখেছে সে। শুরু থেকে জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল তার, যে কোন উপায়ে অধিক অর্থোপার্জন। মানুষের লক্ষ্য সবসময় কি ঠিক থাকে। গতরাতে বাড়ি থেকে ফোন এসেছে মায়ের শরীর ভালো নেই। দূরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত মাকে ন্যুনতম চিকিৎসা দিতে পারেনি তারা। জীবনযুদ্ধে পরাজীত এক হতভাগী মায়ের সন্তান সে। সে নিজেও কি কোনভাবে জয়ী? হয়তো জয়ী। নিটোলের মতো একটি চমৎকার মেয়ের মন জয় করে নিতে পেরেছে। এর চেয়ে বড় জয় আর কি হতে পারে।

একসময় লক্ষ্য ছিল টাকা উপার্জন, যদিও সে লক্ষ্যে বিচ্যুতি ঘটেনি এখনো, তার সাথে যোগ হলো নিটোলকে পাওয়ার ইচ্ছে। মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াল নিটোল।

এরপর অসুস্থ মায়ের চিকিৎসা। একটি সার্জারী, কয়েকটি ক্যামো কিংবা মাকে ভালো রাখার যথোপযুক্ত ব্যবস্থা। এখন লক্ষ্যটা একমাত্র মা। খবর এসেছে মায়ের অবস্থা ভালো না। আজকের এই বড় ঘটনা না হলে ঘুম থেকে উঠেই বাড়ি চলে যেতো সে। আজকের দিনে নিটোলকে মায়ের কথা জানানো সমীচীন মনে করেনি অর্ণব। নতুন জীবনের স্বপ্ন ভরা দু’টি চোখে কি করে নোনাজল ঢালবে সে ! অসহ্য যন্ত্রণা বুকে চেপে কাজী অফিসে এসেছে আজ।

বিয়ের জন্য প্রস্তুত হতে কাজী সাহেব নির্দেশ দিলেন। ওদের প্রস্তুতি আর কি ? তারা তো প্রস্তুত হয়েই এসেছে। সুদীপ হাতের পলিব্যাগটা নিটোলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো
ঃপাশের রুমে যাও। রেডি হয়ে এসো।
ঃ কি এটা?
ঃ খুলে দেখো।
ত্রস্ত হাতে ব্যাগটা খুলে একটা শাড়ির প্যাকেট, আংটির বক্স, একটা পান্জাবী আর কিছু প্রসাধনি দেখতে পেলো নিটোল। বিস্ময় বিস্ফোরিত চোখে অর্ণবের দিকে চেয়ে অস্ফুট বললো
ঃ তুমি আমাকে অবাক করেছো। এখন এসবের প্রয়োজন ছিল না।

অর্ণব কোন কথা বলেনি। মাথাটা আরো কিছুটা যেন হেট হয়ে এলো তার। নিজের অক্ষমতার গ্লানি তাকে যেন মাটির সাথে মিশিয়ে দিচ্ছিল। বন্ধুর দানে কৃতজ্ঞতার বদলে চরম অপমান বোধ হচ্ছিল তার, তবুও নিটোলের ভুল ভাঙাতে সাহস হলো না কিছুতেই।

আচমকা অর্ণবের ফোন বেজে উঠলো।
কাজী সাহেব পূণরায় তাগাদা দিলেন।
ফোন রিসিভ করতেই তার সারা অবয়ব কষ্টে ছেয়ে গেলো। হাতের মুঠি প্রচন্ডভাবে শক্ত হয়ে এলো যেন। নিটোলের একটা হাত জোর করে চেপে ধরলো।
ঃ কোন দুঃসংবাদ ? উদ্বিঘ্ন নিটোল জানতে চাইলো।

অর্ণব কোন কথা বললো না। নিটোলের পাশ থেকে উঠে বারান্দায় গেলো। খোলা আকাশের দিকে তাকালো। এই ভর দুপুরেও সারা পৃথিবীতে এত অন্ধকার কেনো ! মাঝে মাঝে অন্ধকারের শক্তি এত প্রবল হয় যে গনগনে সূর্যের উপস্থিতিতেও অন্ধকার দূর হয় না। অর্ণবের ও তেমনটি মনে হলো। বারান্দা ছেড়ে বড় রাস্তায় নেমে এলো সে। এই পথটা জুড়েও গভীর অন্ধকার। কোথায় দিনের আলো ! কোথাও কোন আলো নেই, ছোপ ছোপ অন্ধকার শুধু। নিটোলের কথা মনে হলো। সেখানেও প্রবল অন্ধকার। একসময় এক কোটি তারা জ্বলতো নিটোলের মুখে, এককোটি জোনাকীরা নেচে বেড়াতো নিটোলের সারা শরীর জুড়ে, অথচ আজ এত এত অন্ধকার।

এখন তার লক্ষ্য টাকা উপার্জন নয়, নিটোল নয়, সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু।

বাড়ি ফেরার বাস ধরাটাই হয়তো এখন একমাত্র লক্ষ্য তার।

অনেক্ষণ হয়ে গেছে। কাজী সাহেব আবার ডাকলেন। নিটোল সুদীপকে বললো অর্ণবকে ডেকে আনতে। সুদীপ মাথা নিচু করে বসে আছে। একটু আগে অর্ণবের সাথে ফোনে কথা হয়েছে তার।

ঃ কি হলো সুদীপ ? অর্ণবকে ডাকছো না কেনো?

সুদীপের অসহায় দৃষ্টি দেখে এক লাফে চেয়ার ছেড়ে বারান্দায় গেলো নিটোল। অর্ণবকে না পেয়ে ফোন দিলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন বললো “এ মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না”।

ফিরে এসে ধপাস করে চেয়ারে বসলো নিটোল। দু’জনই নীরব। এভাবেই কতটা সময় কেটে গেলো কেউ টের পেলো না। অবশেষে সুদীপই বললো
ঃ চলো ফিরে যাই।
ঃ না।

শাড়ির প্যাকেট নিয়ে পাশের রুমে গেলো নিটোল। পরিপাটী সাজগোজ করে বেরিয়ে এলো। নিটোলকে এমন অভূতপূর্ব রূপে জীবনেও দেখেনি সুদীপ। সে কেঁপে উঠলো।
ঃ অর্ণব আজ আসতে পারবে না নিটোল
ঃ জানি।

নিটোলের চোখে ভিসুবিয়াস জ্বলছে। এই কিছুক্ষণ আগে যে চোখে রাজ্যের স্বপ্ন ছিল সেখানে এখন ভয়ঙ্কর দাবানল। এতদিনের জমানো রঙিন স্বপ্নগুলো পুড়ে পুড়ে ছাই হচ্ছে যেন। এমন স্বপ্নপোড়া গন্ধে সুদীপ আঁতকে উঠলো।

নিটোল দু’চোখে দাবানল নিয়ে সুদীপের চোখে চোখ রাখলো। সে আগুনে সুদীপ পুড়ে ভস্ম হতে চলেছে। নিটোলের গায়ে জড়ানো লাল শাড়িটা আগুনের লেলিহান শিখা হয়ে কাজীঅফিসের প্রতিটা কোণ পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। নিটোল পুড়ছে, সুদীপ পুড়ছে, স্বপ্ন পুড়ছে। আর জীবনের ঘন অন্ধকারে লক্ষ্য ভ্রষ্ট অর্ণব নিজের কষ্টগুলোকে জীবনের কঠিন লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করে বাড়ি অভিমুখে এগিয়ে চলেছে।

তার পকেট ভারি হয়ে আছে নিটোলের পোড়া স্বপ্নগুলোর ধূসর গন্ধে।

কথা// রুকসানা হক

কথা না বলতে বলতে কথা বলা প্রায় ভুলেই যাচ্ছি আমি,
কথা বললে অকারণে খুব বেশি ভুল হয় আমার,
ভুলগুলো কোন শ্লোগানের ভাষা পায় না,
চোখের পাতায় বারুদের মতো জ্বলে ওঠে না বিপ্লব।

যে তুমুল ডাকে অযুতকোটি হাতের মুঠোয় অংকুরিত হয়েছিল আগুন,
প্রদীপ্ত হয়েছিল স্বপ্নময় আকাশ,
তা এখন অসুস্থ কথার ভেতরে শুয়ে থাকা একখন্ড বিষন্নতা মাত্র।

আমি সেই বিষন্নতা ছুঁয়ে
অনিচ্ছায় যেসব ভুল করে থাকি
তার নাম বিপ্লব নয়, যুদ্ধ নয়, কিংবা বিজয় ও নয়।
আমার ভুলের ভেতরে শুয়ে থাকে কোটি কোটি নীরব স্বপ্ন,
আর অজস্র স্বপ্নধর্ষক শকূনের নীল চোখ।

আমি কথা বললেই শকূনেরা ঝাঁপিয়ে পড়ে নরম দেহে,
আমার ঝড়জল মাপা অপরাধী আঙুলে বেজে ওঠে সমুদ্রের সর্বনাশ,
বাকরুদ্ধ হয়ে যাই নিদারুণ অন্ধকারে।

প্রতিদিন হাজারটা শালিকের বেদনা স্পর্শ করে
আমি অপেক্ষায় থাকি আরেকটি তুমুল ডাকের,
আমার অন্তরে যে গর্বিত ধ্বনি সুতো কাটে অহর্নিশি,
আমি তার অপেক্ষায় থাকি কথা না বলে।
অপেক্ষায় থাকা নির্বাক ধ্বনিগুলো আমার কন্ঠে নির্জীব পড়ে থাকে,
আর আমি ধীরে ধীরে কথা বলা ভুলে যেতে থাকি।

বৃষ্টিরা আগুনে পুড়েছে শব্দহীন

কি কারণে জানিনা সেই রাতে উঠোনে কামিনী ফুলের গাছ থেকে
কোন সৌরভ এলো না,
হয়তো অপরিচিত শব্দটির কদর্যতা টের পেয়েছিল সব ফুল !
উঠোন ভেঙে থৈথৈ বৃষ্টি তখন-
মাঝরাতে বৃষ্টিভেজা তুমি দোরঘন্টি বাজালে, দরোজা খুলে তোমাকে দেখিনি আমি,
দেখেছি কামিনী-কাহিনীর ভুল পথ।
তাই হয়তো সৌরভ পালিয়েছে থোকা থোকা ফুলের বুক থেকে !

আগলে দাঁড়ালে তুমি, আমি বিস্মিত হয়ে খুঁজছিলাম মাঝরাতের একজোড়া বিধ্বস্ত কদমফুল,
কি কারণে জানিনা কদমের জন্মঋতুতে আমার মৃত্যুসমগ্র রচিত হলো।

সেই বিপন্ন রাতে অভিধান ঘেটে ‘তালাক’ শব্দটির কী নিখুঁত অর্থ দাঁড় করালে তুমি !
বাঁজপাখির ধারালো ঠোঁট তাই নিমিষেই খুবলে খেলো আমার মহাধমনীর গোপন চোখ; আর
প্রদীপের চিমনি ভেঙে আগুন ছড়িয়ে পড়লো আমার অন্তরে, শিথানে, বালিশে !

বস্তির ভাঙা ঘর থেকে চিৎকারগুলো খোলা আকাশে নিরুত্তাপ ভেসে থাকে বলে
জোনাকীরা কাটাকুটি খেলতে গিয়ে অন্ধকার কাটে, কিন্তু
সুউচ্চ প্রাচীর টপকে আমাদের চিৎকারগুলো পাষাণের করতলেই মুঠোবন্দী থাকে,
প্রাচীর-বন্দি এই আমাদের অন্ধকার তাই কখনোই কাটে না !

সেই বিষণ্ন রাতে আমার থৈ থৈ যন্ত্রণা সাক্ষী- যা কিছু ছিল অবসাদ
তার মাঝে শুধু ছিল বমির প্রভাব।
নিকষ কালো সেই দুর্যোগে তোমার “তালাক” শব্দটির ঝনঝনে আমি নির্জন হয়ে যাই।
অথচ একটা হৃদয়ে যাবার উচ্চাশায় আমি বহুবার কামিনীর প্রচার করেছি চোখে,
ধুয়ে মুছে রেখেছি আমার ঘুমন্ত বিশ্বাস।

যদি একবার প্রবেশ-দুয়ার খুলে দিতে
আমি পাখিকে পাঠাতাম আমার মৃত্যুকে এগিয়ে আনতে,
আপাদমস্তক কাফনে মুড়ে দিতাম নিজেকে।
মৃত্যু আসেনি আমার কাছে, এসেছে দুর্বহ এক শব্দ “তালাক”।

সেই রাতে একারনেই কী কামিনীর বুক থেকে সৌরভ পালিয়েছিল?
আমি জানিনা; তবে সেই নিথর রাতে
প্রাচীরবন্দি এই আমার চোখ থেকে ঝরেছে অথৈ আগুন, আর
সাত আসমানের পরাজিত বৃষ্টিরা আগুনে পুড়েছে শব্দহীন।।

সাদা জোছনায় খুঁটে বুকের বাঁপাশ// রুকসানা হক

আমাকে দিয়েছো তুমি অদম্য অন্তর,
ধানের শীষের মতো সোনালী ঠোঁটের নেশা,
যে নদী ক্ষয়ে ক্ষয়ে ছুঁয়ে গেছে খেয়ালী মেঘের ঘর
জলপাখি চোখ দু’টি করেছো যে তার দুখ ঘেষা।

সন্ধ্যার মেঘ হয়ে কত ঘাম শুষেছো যে চোখের পাতার,
ভোরের রোদের গায়ে গেঁথেছো আপন আকাশ,
একঝাঁক ঝিনুকের শ্লোক করে রেখেছো হৃদয় আমার,
তাই বিধবা শস্যভূমি সাদা জোছনায় খুঁটে বুকের বাঁপাশ।

আমাকে দিয়েছো তুমি স্ফুলিঙ্গের মতো নিজস্ব সুন্দর,
ভরা বর্ষার জলে নাওয়া ধূলোহীন নুড়ির মতন
আমি তাই নুয়ে থেকে তোমাতেই গড়েছি যে চর,
তোমাতেই রেখেছি আমার ঠোঁটে করে নিয়ে আসা অসমাপ্ত চুম্বন।

তুমিও বুকে নিয়ো শস্যের সুফলা নয়ন,
তোমাকেও ভিজতে হবে বধ্যভূমিতে হাঁটা ভাঙা জোছনায়,
অন্ধকারে মরে পড়ে থাকা সব বীরের মতন
আমার অন্তর ধরে তোমাকে ও ভাসতে হবে শ্লোগানের মূর্ছনায়।

#সাদা #জোছনা

কিছু ক্ষত কিছু কথন // রুকসানা হক

অনুভূতি বিবশ করা শব্দগুলো যখন চামড়ায় গেঁথে যায়,
সুনসান জীবনের গল্পে নুয়ে আসে মধ্যযুগ,
মানুষের কাতরতা স্পর্শ করে জঘন্য অশুচি।
কত কি বলার থাকে,
তবু বোধের ভেতরে চমকায় খানিকটা প্রত্যয়,
ভাবি বলে আর কি হবে,
পরাজিত শব্দগুলো ভাঙা কাঁচের গুঁড়োর মত রক্তক্ষয়ী তো হবেই।
ঠিক তখনি প্রবল সুখে একশ’টা বৃষ্টির ফোটা নিলামে তুলি,
একশ’টা কসমের গিঁট খুলে দেই,
একশ’টা উৎসবের আয়োজন ধরে রাখি,
এবং একশ’টা গাছের সহনশীলতা এঁকে নেই।

আমার প্রাতঃবিশ্বাসে আচমকা দৃঢ়তার দেখা পাই,
এসব শব্দেরা কত আর তীক্ষ্ণ হবে?
চামড়া পাল্টে নেবো নাহয় ক্ষতগুলি মুছে দিতে !
যদি হতাম দর্পভরা অহংকারী,
এই কুৎসিত শব্দের বিকাশ কবেই মাড়িয়ে যেতাম,
সব পরশ্রীকাতরতা উড়িয়ে দিতাম হিম ভোরে,
গুঁড়িয়ে দিতাম অলিতে গলিতে পচাগলা জিভের কুরুচি।
অথচ আমি আকাশ দেখি, সমুদ্র ও পাহাড় দেখি
মাটির বুকে কান পেতে তার পুঞ্জিভূত ব্যথা শুনি,
মুহূর্তেই কলুষিত শব্দগুলোতে আমার করুণা জমা হয়,
আর আমি হই চামড়ায় ক্ষত পুষে রাখা এক প্রবাল শরীর।

কেউ নেই, কিছু নেই, শুধু অবসাদ

দেয়ালের বুক ডুবে আছে,
কিলবিল কালো জলে ছেয়ে আছে চোখ,
মানুষের ক্ষতগুলি জলে ভিজে ফেঁপে আছে, সকরুণ মুখ।
উজানের ঢলে ঢেউ মৃত্যুর সতর্ক পিয়াস,
ডুবে গেছে জোছনার মৃদঙ্গ শরীর, প্রিয় সে নিবাস।
জোনাকির পাখা ছুঁয়ে ভেসে গেছে পরাভূত সাধ,
কেউ নেই, কিছু নেই, শুধু অবসাদ।

জলে ভাসা তরুনীর দেহে কাঁদে ভ্রুণের ছায়া,
বড় সুখে ভিটেপটে এঁকেছিল মেদুর মায়া।
মাদুরের বেতে আজ জীবনের অসহায় দ্রুতিগুলো কাঁদে,
কিলবিল কালো জলে নাগিনীর বিষশ্বাস, কেঁপে ওঠে চৌকাঠ কাতর নিনাদে।
দেবকুঁড়ি সকালটি পুড়ে যায় ক্ষিধের জ্বালায়,
সাঁজোয়ার সম্পদে ভাগিদার কতজনা, কে বা তার হিসেবটা চায়।
আত্নার ভেতরে বাজে অপয়া সে বাঁশিটির নিদারন দুখ,
জল যেন কলকল রক্তের করতল, বোধহীন মানুষের নির্বাক মুখ।

ঘরত্যাগী প্রাণীদের প্রখর পংক্তিগুলো
উষ্ণতা খুঁজে চলে ডেরার ভেতর,
ভাসমান শোকগাথা বুকে গেঁথে
জলচোখে জলে ভাসে তরুনীর প্রিয় সেই নর।
তার বুকে জলক্ষত জড়ো হয় অসহ্য অবাধ,
কেউ নেই, কিছু নেই, শুধুই অবসাদ।

নরকের কাছাকাছি থেকে…

আমাকে ফেরাও নদী, রোদজল চিকচিক
আমাকে ফেরাও এক জোড়াশালিক
আমাকে ফেরাও উইঢিবির মুখ,
আমাকে ফেরাও প্রজাপতি সুখ,
আমাকে ফেরাও ফেলে আসা উঠোনের লাউলতা,
আমাকে ফেরাও পুঁই মাচানের সবুজকথা।

ধূলো পড়া বই, কবিতা গল্প, আমাকে ফেরাও,
সন্ধ্যার ঝলমলে সোনালি চাঁদ আমাকে ফেরাও,
ঘুড়ি হাতে বালকের হাসি,
কিশোরীর দু’বেনীর নরম আবেগ আমাকে ফেরাও।

যৌবনের টলমলো উচ্ছ্বাস, শুনছো ?
আমি ফিরতে চাই,
জোনাকির সিঁথি, সাগরের ঢেউ, তোমরা ও শোন, আমি ফিরতে চাই,
আমি ফিরতে চাই বুনোফুল, মেঘচুল,
আমি ফিরতে চাই মুছে দিয়ে সব ভুল।
নাগরিক আলো থেকে ফিরতে চাই,
উত্তাপের অহংকার থেকে ফিরতে চাই।
আমাকে ফেরাও আলপথ, কাদামাটি,
আমাকে ফেরাও দেবকুঁড়ি ভোর, পবিত্র ঘরদোর,
আমাকে ফেরাও মাটির চুলা, ঘটিবাটি।

ঋতুদের ছয়ঘর শুনে যাও,
পিয়াইনের স্বচ্ছজল শুনে যাও,
ঝর্ণার কলকল শুনে যাও,
মাধবীলতার হাসি শুনে যাও
রাখালের বাঁশি তুমিও শুনে যাও
আমি ফিরতে চাই।
আদিগন্ত নরকের কাছাকাছি আমি আছি মোহঘোরে,
দোহাই তোমাদের, আমাকে ফেরাও, আমাকে ফেরাও সোনাঝরা ভোরে।।