রুকশানা হক এর সকল পোস্ট

ভৈচাল // রুকসানা হক

প্রচন্ড ভৈচালে ছিঁড়ে গেছে পৃথিবীর যাবতীয় স্নায়ু
নিঃশেষিত কাঁটাবিদ্ধ কন্ঠনালী থেকে ঝরা রক্তের পরমায়ু
চূর্ণ বিচূর্ণ বাতাসের পাঁজর,
ক্ষুধার্ত জঠরে শায়িত স্মৃতির বিদীর্ণ আঁকর,
উদ্ভ্রান্ত যন্ত্রণায় সশব্দে আতঙ্ক ছড়ায় রাত্রির ভয়াবহ অন্ধকার
শিশু-সম্ভ্রম গিলে খাওয়া শ্বাপদের চোখে আজ পুলকিত বজ্রের অঙ্গার।

এখানে মানুষ নেই, এখানে কেবলই বিধ্বস্ত কঙ্কাল,
গলিত নক্ষত্রের বীভৎস চিৎকার গুনে
জীবনের চৌকাঠে লাফায় স্খলিত কীটের জঞ্জাল।
ধ্বসনামা এ গ্রহের ধমনিতে আজ নিদারুন হাহাকার
ছিন্নভিন্ন ভৈচালে কেঁপে ওঠে পৃথিবীটা বারবার।

এ পৃথিবী নারীর নয়,
এ সূর্য শিশুর নয়,
এখানে বারোয়ারী পোশাকে নৃত্যরত বজ্র প্রলয় ,
হায়েনার পাল জলাতঙ্ক ক্রোধে ছিঁড়ে খায় চাঁদের প্রণয়।

বারবার পদানত গ্রহ ফ্যাকাশে রক্ত স্বল্পতায়,
জন্ম নেয় অযুত কুটিল ভ্রুণ পাপিষ্ঠ বন্যতায়
অপদস্ত জরায়ুর দেখি কীটদষ্ট তরল বিন্যাস,
মগজে মগজে ঘুরে নারকীয় বিবস্ত্র বিষশ্বাস।

এ গ্রহ নারীর নয়
এ চাঁদ ও নদী শিশুর নয়,
এখানে ধারালো অস্ত্র নাচে যুবকের ধূসরিত মাটির শরীরে
নির্লিপ্ত নপুংসক ! কক্ষচ্যুত স্পন্দন খসে পড়ে মৃত্যুর গভীরে।
এখানে মুহূর্তেই বিধবা হয় দারুণ ধিক্কারে নারী
ছত্রভঙ্গ প্রত্যয় আর ক্ষয়িষ্ণু সততা গিলে মানুষরূপী সব ঘৃণ্য পথচারী।।

রক্তে ভাসে নগরী ও পথ,
ভৈচালে ছিঁড়ে যায় গ্রহ, ছিঁড়ে যায় তার প্রতিটি পরত
নারকী কীটের পাল শিশুর বুকটা কাটে মধ্যযুগীয় তালে
জীর্ণ বাক্যে লিখি তুমুল চিৎকার প্রচন্ড এ ভৈচালে।।

ধ্বস // রুকসানা হক

তোমার ভেতরে চোখ পড়তেই এক পুরোনো ভৌতিক কবরস্থান ভেসে উঠলো
চার পাশে ঘন জঙ্গল
মধ্যদুপুরেও গভীর অন্ধকার।

তোমার ভেতরে কোনদিনই আলো পৌঁছেনি
নিঃসীম অন্ধকারে ঢাকা বিষন্ন কিছু কবর,
সেখানে স্তূপ স্তূপ যন্ত্রণাগুলো ঢিবির মতো উঁচু হয়ে আছে,
কোথাও আবার গভীর খাদ
জরায়ু ছিঁড়ে আসা মৃত শিশুদের মতো করুণ।

তোমাকে খুলতে গিয়ে চোখে পড়ে
ভৈচালে ধ্বসে পড়া দালানের নিরন্ন কংক্রিটের ক্ষত
ভাঙাড়ীর ঠেলায় অযাচিত চ্যাপা টিনের টুকরো।
তোমার ভেতরে নিয়তই কবরস্থ হয় ভালবাসার দগ্ধ চিত্রকল্প।

রমনীর নাভীমূলের কী বীভৎস মাজার তোমার ভেতর গাঁয়ে,
তোমাকে খুঁড়লেই উঠে আসে প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষিধে,
তুমি নিজের অভ্যন্তরে পুষে রেখেছো
কত নির্ঘুম কান্নার শ্লোক
কত রুদ্ধদ্বার বিলাপ।

তোমার ভেতর থেকে উত্থিত কয়লার মতো
উঠে আসে কাতারে কাতার কঙ্কাল
ক্রমশ রুদ্ধ করে দেয় ভালবাসার সবকটি কপাট,
পৃথিবী কেঁপে ওঠে দাহিত চিৎকারে।

তোমাকে খুঁড়তে গিয়ে
ভয়ঙ্কর মিথ্যে খুঁজে পাই,
দুপায়ে মাড়ানো ফুলের চিৎকার শুনি
“ওহ্ বিধাতা আমি খসে পড়ছি
প্রাগৈতিহাসিক রাত্রির গহবরে,
কালো কালো উচ্চকিত মৃত্যুর ইশারায়।”

কফিনের গায়ে উৎসবের ঢেউ // রুকসানা হক

খুব অযত্নে রাখা কাঠের পুরনো বাক্সটি খুলতেই বেখেয়ালি আঙুলে সুঁইয়ের খোঁচা লাগলো,
লালনীল সুতোয় পেঁচানো জংধরা সুইগুলো ওখানে আত্মবিশ্বাসহীন পড়ে আছে।
রুমালের সাদা কাপড়খানির ভাঁজ খুলতেই
দেখলাম আমার কৈশোরের কিছু নীরব কান্না,
ধবধবে রুমালটিতে এখন ছোপ ছোপ অন্ধকার বাসা বেঁধেছে
লাল সুতোয় বোনা গোলাপের ফাঁকে ফাঁকে স্মৃতির বিমর্ষতা কেবল।

দেখলাম ভিন্ন ভিন্ন আকারের বোতামগুলেতে থৈথৈ তৃষ্ণা,
কোনটা ছিল বাবার শার্টের কোনটা ভাইদের,
হুট করে মনে পড়ে গেলো
একবার শার্টের বোতাম সেলাইতে গিয়ে বাবার বুকে সুঁইয়ের খোঁচা লেগেছিল,
আমার ভীষণ অপ্রস্তুত কপালে বাবা আদর এঁকেছিলেন,
বাবার বুকে আঁকা সে কষ্ট কোনদিনই মুছতে পারিনি আমি,
তাঁর স্নেহের পরশ আজীবন আমার ব্যথাগুলো মুছতেই ব্যস্ত ছিল।

পুতুল খেলার বড় সখ ছিল আমার
দর্জিবাড়ি থেকে কুড়িয়ে আনা টুকরো কাপড় দিয়ে বোনা পুরোনো পুতুলগুলোর চোখে দেখলাম
খসেপড়া জোনাকির জল,
আমার টিপের বিবর্ণ পাতায় ঝিঁঝিদের ক্ষয়ে যাওয়া নিঃশ্বাস,
ছাতাপড়া আধভাঙা লিপস্টিকে লুকিয়ে আছে যৌবনের সমস্ত রঙ
নেলপলিশের বোতলে ছিপিআঁটা অনেকগুলো বসন্তকাল।

গুটিকয়েক চৌকোনা পিতলরঙা পাঁচপয়সার মূদ্রায় ক্ষরণের দীর্ঘস্রোত,
অগণিত ডাকটিকেটের সাথে ওরা অন্তহীন বেদনায় জড়ো হয়ে আছে পুরোনো বাক্সের কোণে।
মনে পড়ে সেই মেঘাল সন্ধ্যায় জার্মানি থেকে পাঠানো ভাইয়ের চিঠির খামে দেশবিদেশের সেসব স্ট্যাম্পের কথা,
আজ ভাইবোনের সেই কঠিন সুতোটিও অনেকটা ঢিলেঢালা।

ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে যাওয়া বিবর্ণ চিঠিখানি খুলতেই দপ করে জ্বলে উঠলো
বিশুদ্ধ সুন্দরের গলেপড়া সুখ,
অস্পষ্ট অক্ষরের ভিড়ে পালতোলা নাগরিক প্রেম।

আমার বিষন্ন ভালবাসা ভরা কাঠের বাক্সটি এখন জীবন্ত কফিন,
আর বাবার শার্টের বোতামটা যেনো কফিনের গায়ে দলা দলা উৎসবের ঢেউ।

শুকনো থালার কান্না // রুকসানা হক

কী করে যেন লাপাত্তা হয়ে যায় মধ্যাহ্নের শুকনো থালা,
বালকের ছালওঠা খরখরে ঠোঁট,
চোখের মণিতে লেগে থাকা নিষ্পাপ দীপ্তি
তখন মাদুরের ফাঁকে দপ করে জ্বলে উঠে বাইশতলার আগুন
পাঁচকুড়ি আকাশে মিছিল চলে ক্ষুদ্র পতঙ্গ দলের,
এদিকে শুকনো থালা পুড়ে ভস্ম হয় বালকের পেটের আগুনে।

পতঙ্গরা ঝাঁপ দিতে গিয়ে খানিকটা ভেবে নেয়,
তারাও জানে একটু মানবিক হলেই দরোজার খিল খুলে যায়
তরতর করে উঠে আসে পাঁচকুড়ি আকাশের অধিবাসী।

যে সত্যটি পতঙ্গের কাছ থেকে শিখেছিল বালক
তাকে অদ্ভুত আঁধারের গন্ধে ঠেলে দেয়া হলো,
সে এখন ক্লান্ত
তার লাপাত্তা হয়ে যাওয়া থালাখানির মমতা বিলাপ করে কাঁদে
কাঁদে বালক, কাঁদে পতঙ্গ,
হেসে ওঠে বাইশতলার দাউদাউ আগুন।।

গোধূলির আনত চিবুক

১.
তোমাকে নিয়ে দীর্ঘ কবিতা লেখার বড় ইচ্ছে আমার,
তীব্র কোন মনের দিকে ধাবমান শব্দগুলোয়
নিজেকে বেঁধে নিয়ে
চৌরাস্তায় থেমে থেকে খুঁজেছি শৈবাল ও ছত্রাকের সদ্ব্যবহার,
বিস্ময় গুনেছি লোকান্তরিত পোড়ামুখের বিতৃষ্ণা শুঁকে।
তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা হয়না আমার,
আমি দূরাগত অস্তিত্বের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বুনে রেখেছি আমার অবেলার প্রেম,
তোমাতে এতোটাই মগ্ন থাকি যে আমার শৈশব নিরুদ্দিষ্ট হয়,
কৈশোরের দুর্দান্ত ফুটেওঠা অনুভব অবিন্যস্ত হয়—
যখন এক টুকরো রোদের ডানায় বয়ঃসন্ধি গেঁথে উত্তাল হতাম আমি।
কবিতার মতো করে তখনো সাজিয়েছি তোমায়,
তখনো তোমার পকেটে পুরে রেখেছি আমার বুনো সন্ধ্যাগুলো।
আমার রাত্রির সমস্ত ঘুমে তোমাকে স্বপ্নপোষ্য করে রাখতে গিয়ে
লক্ষবার ভ্রষ্ট হয়েছি মেঘ ও মাঝির শব্দ থেকে,
দুর্বিসহ মনখারাপে তোমার জানালায় অন্ধকার হয়ে থেকেছি কচুরিপানার নিরুত্তাপ অহংকারে।
এগুলো জমা করে বড়জোর সময়ের তালিকা হয়, কবিতা হয়না জানি,
তোমাকে লিখতে হলে ইকারুসের ডানায় চেপে সূর্যের মুখোমুখি হতে হয়,
ঋতুদের ঘরে ঘরে অভ্যর্থনার আকাশ মেলে ধরতে হয়,
এতোটা যোগ্য হয়ে উঠিনি বলে তোমাকে নিয়ে কবিতা লেখা হয়না আমার।
তিনযুগ ধরে যে মায়া তিলে তিলে সর্ষের ক্ষেতে ঘাম লিখে
ফেনায়িত সমুদ্রের নুনরাশি কিনে এনেছে,
অজস্র সম্ভাবনায় তাকে চোখের দু’পাশে এঁকেছে নিরিবিলি সময়ে
তার কাছে ঋণখেলাপের দায়ে নিলামে উঠেছি আমি,
কারণ কবিতা লেখার সকল আয়োজনে আমি মায়া নয় তোমার ভালবাসা রাখতে চেয়েছি।
বড়বেশি সত্য হয়ে কাছে আসা তুমি অক্ষরের সীমানা ছেড়েছো মধ্যবেলাতেই।

২.
তোমাকে নিয়ে দীর্ঘ কবিতা লেখার সাধ আমার বহু জনমের,
হেলাল হাফিজের মতো করে যদি একবার বলতে,
“পরিণত প্রণয়ের উৎসমূল ছোঁব”
হয়তো কবিতার সব তোপধ্বনি গর্ভ ফুঁড়ে বের হতো
জোছনার ভ্রমণসঙ্গী হয়ে খসে পড়া জোনাকির নিঃশ্বাস হতো।
তুমি যতোটা ভালবাসার কথা বলেছো আমায়
তার চেয়ে অধিক গল্প হয়েছে চিলেকোঠা আর ছাদের প্রণয়,
আমি অনিমেষ তাকিয়ে থেকেছি মেঘের সাদা শরীরের দাবি মেনে,
কবিতার বদলে প্রবল গদ্যকথায় তোমাকে তুলে এনেছি।
অবশ্য তুমি এমনই এক হৃদয় খুঁড়া পলিমাটি
যার আকার দিতে খুব বেশি বৃষ্টির ঝুপঝাপ গুনতে হয়না
দু’মুঠো শিশির, দু’টো গাংচিল কিংবা দু’পশলা রূপালী জোছনা হলেই
তোমাকে রাত্রির আকাশ করে রাখা যায় । এমন আয়ুরেখা আঁকা হাতের তালুতে কবিতা নাহোক
খুব মমতায় গোধূলির আনত চিবুক তো হয়!
আমার এতোটা আকাঙ্খা জুড়ে যে চাবিগুচ্ছের ঝনঝন
তার দু’দণ্ড সংলাপে তুমি হয়ে ওঠো সুনিশ্চিত অন্তর।
কবিতার প্রয়োজন কি, আমি ভোরের আলপথ ধরে দোয়েলের শিষ লিখে যাবো
তোমার জামার আস্তিনে খোদাই করবো নীল প্রজাপতির নিরুদ্বিঘ্ন সুখ
বোতামের খাঁজে সেঁটে দেবো বেহালার উষ্ণ নিঃশ্বাস,
কবিতা লিখার অপরিণত হতাশা বিনিদ্র পূর্ণিমায় বিছিয়ে দেবো আমি।
তুমি দেখো তোমায় ঘিরে জেগে উঠবে নতুন চরের চকচকে রোদ,
উঠোনে ও মাচানে লতিয়ে উঠবে গেলো শতকের সুশোভিত পংক্তিরা,
নিরুদ্দিষ্ট হবে দাম্ভিক কবিদের আত্মপ্রতারণা
তোমাকে নিয়ে দীর্ঘ কবিতা নয়, জল ও শিশিরের স্বপ্ন লিখবো আমি
মৃত্যুহীন হবো ঝাঁকে ঝাঁকে প্রেম ললাটে ধারণ করে।
তুমি কবিতা হয়োনা প্রিয় ভালবাসা,
তুমি শুধু আমার নতুন ভোরের প্রথম নিঃশ্বাস হও।

স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই …

মৃত্যু অনিবার্য সত্য। তাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সে মৃত্যু স্বাভাবিক হোক এটুকু অন্তত মানুষের মানবিক অধিকার। আমরা এখন পদে পদে অধিকার হারাচ্ছি, হারাচ্ছি স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা।

চকবাজারের ঘটনার মাত্র সাঁইত্রিশ দিনের মাথায় বনানীর ভয়বহ প্রাণঘাতি আগুন। এদেশ যেন এক অগ্নিকুণ্ডে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কেনো? কারা এর জন্য দায়ী? কে নেবে এসব মৃত্যুর দায়? যারা দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারালো তাদের অপরাধটা কি ? এসব প্রশ্ন এখন গোটা জাতির।

বেঁচে থাকার জন্য মানুষ প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে, জীবন নিয়ে ভাবে, সমাজকে উপলব্ধি করে, আর জীবন সায়াহ্নে এসে অপেক্ষা করে স্বাভাবিক মৃত্যুকে বরণ করার জন্য। কিন্তু সায়াহ্নের আগেই তাকে প্রাণ দিতে হয় পদে পদে ফাঁদ পাতা অপঘাতে।

এদেশের মাটিতে প্রতিমুহূর্তে পাখির মতো অকালে ঝরছে প্রাণ। অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে জীবন। অথচ তার কোন সুরাহা হচ্ছে না। দুর্ঘটনার পরের কিছুদিন ফেইসবুকে স্ট্যাটাস, কাগজে কিছু প্রচার-প্রচারণা, মিডিয়ায় টকশো, সংবাদমাধ্যমে মৃত্যুর আপডেট, অতঃপর আবার সেই নীরবতা।

কতৃপক্ষের গাফিলতি কতটা নির্মম তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করা গেলেও তার প্রতিকার ফাইলচাপা পড়ে থাকে। তদন্ত কমিশন গঠন হলেও তদন্তরিপোর্ট হয় না, আর হলেও বা তা থাকে সাধারণের জানার বাইরে।

আমাদের দেশে পরিবহন দুর্ঘটনায়, বিল্ডিং ধ্বসে পড়ে এবং আগুন লেগে মৃতের সংখ্যা স্মরণকালের সকল রেকর্ড অতিক্রম করে চলেছে। সন্দেহাতীতভাবে এটা মানবতার মহাবিপর্যয় ।

মৃত্যু অবধারিত বলেই মানুষ শতবেদনায়ও তা মেনে নেয়। কিন্তু আকস্মিক বা অস্বাভাবিক মৃত্যু, যে মৃত্যুর জন্য মানুষের প্রস্তুতি নেই, যা মর্মান্তিক, হৃদয়বিদারক অথচ সতর্ক হলে অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব, তা কি করে মেনে নিতে পারে মানুষ ?

স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা পেতে কি তাহলে পথে নামতে হবে ? অন্য সব অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মতোই কি এটাও আন্দোলন করে আদায় করতে হবে? তাহলে জনগনের অর্থ ব্যয়ে নগর রক্ষার দায়িত্বে কতৃপক্ষকে কি অশ্বডিম্ব পাড়ার জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে?

আমরা আর কোন মৃত্যু চাইনা, অপঘাতে মৃত্যু নিষিদ্ধ হোক, আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই। এটুকু অধিকার তো আমরা চাইতেই পারি।

এফ আর টাওয়ারে অগ্নিদগ্ধ আহত ও নিহতদের জন্য গভীর সমবেদনা।

যুদ্ধাহত বাবার চিঠি // রুকসানা হক

সেদিন ভোরের আলো ফোটার আগেই বধির কাকেরা অন্ধ হয়,
বারুদের গন্ধে আচ্ছন্ন হয় নবজাত সূর্যালোক,
আমার ভয়ার্ত কচি শিরাগুলো বেয়ে উঠে আসে রক্তাক্ত জলপাই নদী,
ঠিক তখন মায়ের বুকে হায়েনার ঠেসে ধরা স্টেনগান খুঁজে ফেরে যুদ্ধাহত বাবার চিঠি।

আমি হাঁটু মুড়ে সরিসৃপের পদতলে বসে মায়ের জীবন ভিক্ষা চাই,
আমার সহোদর তখন ছুরির মতো তীক্ষ্ণ চোখে বাংলাদেশ সাজায়,
মায়ের নির্ভিক কন্ঠে তখন কি দীপ্ত সুরে ভেসে আসে স্বাধীনতার গান।

বাবা আসবে আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে,
হায়েনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র গর্জে উঠবে তার বলিষ্ঠ হাতে।
সেই অপেক্ষায় মায়ের বুকে ঠেসে ধরা স্টেনগানের নল বেয়ে উঠে আসে চিঠির দৃপ্ত বর্ণগুলো।
সহোদরের আগুনচোখে সোনার মোহরের মতো জ্বলজ্বল করে বাংলাদেশ।

আমাদের পুড়িয়ে মারার সকল আয়োজনে স্বাক্ষর করে লম্পট রাজাকার,
আমার কচি মুঠোয় তখনো একখন্ড বাংলাদেশ,
মায়ের বুকে মুক্তিযোদ্ধা বাবার তেজোদৃপ্ত অক্ষরে মোড়া স্বাধীনতা,
মুহূর্তেই আমরা নির্ভিক হয়ে উঠি অখন্ড বিশ্বাসে।

দেখতে পাই দরোজার ওপাশে স্বাধীন পতাকা শোভিত বর্নিল রাজপথ,
সেখানে লক্ষ শহীদের বুকের শ্লোগান।
আমাদের শরীর থেকে অঙ্কুরিত কষ্টের সকল বীজ মুহূর্তেই উড়ে যায় বিক্ষুব্ধ বাতাসে,
আমরা নির্ভিক হয়ে উঠি দৃপ্ত অহংকারে,
তখন বারুদের ধোঁয়ায় ঘেরা মধ্যরাত ভিজে যায় বিজয়ের বিনম্র বিশ্বাসে।।

ব্লগের সবাইকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ।

অবন্তীর অন্ধকার // রুকসানা হক

গোমড়ামুখো মেঘ-সন্ধ্যাটায় টুপ করে অন্ধকার নামলে
অবন্তী ঘরের অন্ধকার চোখে পুরে ব্যালকনিতে দাঁড়ায়,
গত একযুগ ধরে এভাবেই ঝাঁকে ঝাঁকে অন্ধকার পুষছে সে দুচোখ ভরে।
মশার উৎপাতে ভ্রু কুঁচকানো নজুর মার মৃদু ভর্ৎসনা,
“ভর সন্ধ্যায় বাইরে খাড়ায়া ক্যান”
সেও একযুগের কঠিন অভ্যাস।

চারপাশেের অন্ধকার আর নজুর মায়ের তীব্র স্নেহজ্যোতির কাছে
ষাট পাওয়ারের হলদেটে বাতির আলো বড় বেশি শীর্ণকায় ঠেকে।
সাইড টেবিলে এখনো সে মৃদু আলোর পাশে জুড়িয়ে যাওয়া আধকাপ চা আরশোলায় অপেক্ষায়,
আরশোলারও বুঝি অরুচি ধরে গেছে,
কত আর এসব টোস্টের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া যায়!

অবন্তীর তৃষ্ণায় গোটা আকাশ রাতকে কুঁকড়ে রাখে,
বৈশাখী ঘূর্ণিঝড়ের স্বেচ্ছাচারিতায় গৃহবন্দী হয় অযুত অন্ধকার,
অবন্তী জানেনা কত আলোকবর্ষ দূরে সূর্যের সীমানা।

যেদিন পুরো মুখমণ্ডল জুড়ে এসিডধর্ষণের চাষাবাদ হয়
অন্তঃসারশূন্য হয়ে উঠে তার জীবনের সব কোলাহল,
দুচোখে বীভৎস অন্ধকার আছড়ে পড়ে জন্ম জন্মান্তরের জন্য,
সেদিন থেকেই অন্তহীন মায়ায় এমন কালো যন্ত্রণা পুষে চলেছে অবন্তী।

তোমাদের ছায়াগুলো হাড়ছাড়া হয়ে যায়

যেদিন তুমি আমার অমীমাংসিত রূঢ়তায় মাউথঅর্গানের কষ্ট মাখিয়েছিলে
সেদিন থেকেই আঁচলে পুরে নিয়েছি এ শহরের রক্তাক্ত মুখ,
প্রতি সন্ধ্যায় হারানো হাতপাখাটির খোঁজে
তোমার বুক হাতড়ে বেড়াই,
ওখানে দুগ্ধপোষ্য শব্দের মিনমিনে হাহাকার গুণি।

অথচ পঁচিশে মার্চের গণমিছিলে উজ্জ্বল রোদ সদম্ভে দাঁড়ালে
প্রচন্ড শব্দে কেঁপে উঠেছিল বৈরি প্রাসাদ।

ইতিহাস কঁকিয়ে উঠুক তা কি তুমি চাও?
বারবার অর্থহীন দম্ভ বিছিয়ে নিরুত্তাপ করো বিলাসী ভাতঘুম,
তোমার নির্লিপ্ত ডানায় ঝুলে আছে জেব্রাক্রসিং এ পিষ্ট শুকপাখির মৃতদেহ,
তবু মাউথঅর্গানে বেজে চলে বুনিয়াদি মিথ্যের ঝোল।

শহরের অশিষ্ট জানালায় ধুপধাপ ক্লান্তি বিছিয়ে
কেটে পড়ে একাত্তরের ঘাতকচক্র,
মার্চ এলেই রক্তের হোলিখেলায় মেতে ওঠে
পুরোনো পাপ,
পাখিদের উদ্যমী ছুটে চলা থামিয়ে দিতে তুমি হাত মুছো রাস্তার নুড়িতে।

বাতাস এখনো বয়ে চলে ছাদে ও কার্ণিশে তুমি হয়তো জানোনা
আকাশের সমস্ত অভিমান জড়ো হলে দুর্নিবার বিস্ফোরণ ঘটে
তোমাদের ছায়াগুলো হাড়ছাড়া হয়ে যায়,
আর তুলতুলে মাংসপিণ্ড ঘৃণায় খামছে শুকপাখি চিৎকার করে উঠে,
“এ আমার বাংলাদেশ
বারবার রক্ত দেবো, রাঙিয়ে দিয়ে যাবো সীমানাপ্রাচীর”।

মধ্যবিত্ত মাটির চেনা গন্ধ // রুকসানা হক

অযুত বর্ষ ধরে মধ্যবিত্ত-মাটির চেনা গন্ধে
পুড়ছে জীবন !
এ মাটিতে দাঁড়িয়ে কেউ কখনো বুনোনীল আকাশ দেখে না
এখানে পা রেখে কেউ অন্তঃসত্বা নদীর গুন্জন ও শুনতে পায় না,
অন্ধকারের কঠিন ক্ষত তাদের চোখের পাতায় গাঢ় হতে হতে কেবলি মেঘ হয়ে যায় ,
অরন্যের একচেটিয়া রিক্ততায় তারা বিনিদ্র থাকে মধ্যরাত অবধি।

মধ্যবিত্ত-মাটি মানেই
বিরহী পাখিদের গোপন পিয়াস; ফসলের বিমুখ ঘ্রান
কষ্ট শিশিরে ঘাস ফড়িং এর আধেক স্নান
জীবনের ক্ষতে টুকরো টুকরো অশুদ্ধ উত্তাপ !

এ মাটি মানেই ললাটের ভাঁজে স্তূপীকৃত স্বেদজল, দুঃখ অতল;
অযুত শূণ্যতার হাহাকারে শূণ্য আঁকা করতল।

এ মাটিতে দাঁড়ানো বিবেক সত্য উচ্চারণের সনদ হারায়,
লুন্ঠিত আকাশের কষ্টে অশ্রুপাত করতে ও ভুলে যায় ।
অব্যক্ত যন্ত্রণা পুষে রাখে বনজারুলের গায়ে, বুকের বাঁয়ে !

নিজস্ব কক্ষপথে থেমে থাকা বিষন্ন বিকেলগুলো ছুঁয়ে থাকে বলে
মধ্যবিত্ত আত্মাভিমানে উচ্চাকাঙ্খার সিঁড়িতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে প্রজাপতি মন,
সমাজের রুক্ষ চোখের নির্মম চাহনী ঘিরে রাখে তাদের আটপৌরে স্বপন ।

মধ্যবিত্ত-মাটি মানেই জীবনমেলায় জীবন বেঁচে জীবন কেনা,
আক্ষেপের ক্ষরণ শুষে ঝুপঝাপ শ্রাবণের পিয়াস, মৃত্যু-বিশ্বাস;
মধ্যবিত্ত-মাটি মানেই অযুত বছর না মেটানো জীবনের দেনা;
তবুও সূর্য পুড়ে-খাক এ মাটিই নাহয় হোক আমার আজন্মের নিঃশ্বাস।

জোছনা ও জলরং // রুকসানা হক

“আমাগো ঘরে চান্দ আহে না রে মা। জোছনা এইখানে লজ্জা পায়। চাঁদের রূপ ধইরা দুঃখ আহে শুধু। দুঃখের নাম আমরা চান সুরুজ রাখি। ”

মায়ের এসব তত্ত্ব কথা চৌদ্দ বছরের জলপরীর মাথায় ঢুকে না। সে ভাঙা চৌকির এককোণে তেলচিটচিটে কাঁথা গায়ে দিয়ে জড়োসড়ো শুয়ে জোছনার আনাগোনা দেখছে আর মিটিমিটি হাসছে।

আসলেই তেরো চৌদ্দ বছর বয়সটা দারুণ আবেগে ভরা থাকে। তাই বুঝি জলপরীর চোখে মায়ের আঁকা এসব দুঃখকেও চাঁদ মনে হচ্ছে, জোছনা মনে হচ্ছে। ছাপড়া ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে চাঁদের উকিঝুকি, জোছনার লুটোনো শরীর জলপরীর চোখ, মন সব ধাঁধিয়ে দিচ্ছে যেন।

চিলতে মাটির বারান্দায় মা বেলাবানু উনুনে ভাতের হাড়ি চড়িয়ে আধভেজা পাতা ঠেলে ঠেলে আগুন দিচ্ছে । ভেজা পাতার ধোঁয়ায় চারপাশ ধোঁয়াটে হয়ে যায়। উনুন মানে ক’খানা ভাঙা ইটের ত্রিভুজ অবস্থান। তাতেই তাদের একবেলার রান্না বেশ ভালোমতোই চলে যায়।

এ বস্তিতে এখনো শীত তেমনটা ঝাঁকিয়ে বসেনি। তবে শহরের দালানকোঠায় শীত না ঢুকলেও বস্তির ছাপড়া ঘরে দুঃখের আরেকটা অঙ্গ হয়ে চাঁদ জোছনার মতো শীতেরা ও হুড়মুড়িয়ে ঢুকে।

মা একা একা বকবক করে চলেন। পাতাপোড়া ধোঁয়ায় চোখ দিয়ে পানি ঝরে। আগুন নিভু নিভু হয়ে আসে। বেলাবানু মাথা নুইয়ে জোরে জোরে আগুন ফুঁকে আর মেয়েকে কথা শোনায়।
ঃ কামাই খাইতে গেলে মাইয়াগো ইসকুলে দেওন নাই। দুই কেলাশ পাশ দিতে না দিতে আমার মাইয়া এখন লাটসাহেবের বেটি বইনা গেছেন।

জলপরী এসব শোনে না। সে ছয় ক্লাসে পড়া কৈশোর ডিঙানো প্রায় তরুনী । গায়ে গতরেও বেশ বাড়ন্ত। কাকবন্ধ্যা বেলাবানুর একমাত্র সম্বল। দ্বিতীয় স্বামী সানু মিয়ার ঘরে এসেছে আজ এতগুলো বছর। কোন সন্তানাদি নাই।
বেলাবানু তো বন্ধ্যা না। আসলে সানু মিয়ারই যত সমস্যা।

“পুরুষ মানুষকে কি আর বন্ধ্যা বলা যায় ? আরো কিছু নেতিবাচক শব্দের মতো এই শব্দটা ও কেবল মেয়েদের জন্য বরাদ্দ করেছে আমাদের সমাজ। ” বেলাবানু যে বাসায় কাজ করে ওই বাসার মেমসাহেব এসব কথা বলেছিলেন। ওসবের খুব একটা তার মাথায় না ঢুকলেও সানু মিয়ার সন্তান দেয়ার যে ক্ষমতা নেই তা বেলা ভালো করেই জানে। সন্তান চায় না বেলা। সানু মানুষ হিসেবে খুব খাঁটি। তার প্রবল ভালবাসায়,বেলার সব কষ্ট কর্পূরের মতো উড়ে যায়।

ঠেলাগাড়িটা শক্ত দড়ি দিয়ে বারান্দার খুঁটির সাথে বাঁধতে বাঁধতে সানু মিয়া বলে
ঃ মাইয়াডার সাথে তোর খুটখুটানি শুরু হইয়া গেলো বউ ?
ঃ কি করবো ? সারাদিন বাসায় কাজ করি। পাতাগুলানেরে রোদে শুকাইতে দিলেও তো পারে।
ঃ বইলা গেলেই তো পারতি।
ঃ বইলা বইলা কতকাল কাম শিখামু। গরীবের ঘরে জন্মাইছে। কাজ কাম না জানলে খাইবো কেমনে?
ঃ আমার মাইয়ারে বড় বড় পাশ দেয়ামু দেহিস। তোর মতো কামের বেডি হইবো না।

উনুনের পাশে বসে দুই হাত উল্টে পাল্টে ঘসে ঘসে আগুনের তাপে দিতে দিতে সানুমিয়ার চোখ চকচক করে ওঠে। এই মেয়েকে নিয়ে তার স্বপ্নের শেষ নেই। মেয়েটার বাবা নেই, সেই তো জলপরীর বাবা। তার আদুরে বউ বেলার নাড়িছেঁড়া ধন। জলপরীকে ভালবাসতে শিখেছে সানু মিয়া বেলার ভালবাসা দেখে দেখে।

ধোঁয়ার তান্ডবে আর উনুন ফুঁকিয়ে নাকের জল চোখের জলে বেলাবানুর ফর্সা মুখ লাল টকটকে হয়ে যায়। সানু নিজের গামছা দিয়ে বেলার মুখটা মুছে দিয়ে নিজেই আগুন ফুঁকতে থাকে। বেলা ভাবে চাঁদ জোছনারা ভাঙা বেড়ার ফাঁক গলিয়ে কেবল দুঃখ হয়ে ঢুকে না, রাশি রাশি সুখ হয়ে ও ঝরে।

আজ ভরা পূর্ণিমার রাত।
সারাদিন দু’জনই এত খাটাখাটুনি করে যে রাতের খাবার খেয়েই ওরা ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে। গরীবরা তাই হয়তো পূর্ণিমা বুঝে না, ‘ঝলসানো রুটি’ ভেবে পূর্ণিমা গিলে খায়। কিন্তু না, আজ সানু মিয়া বউকে নিয়ে ঝলসানো রুটির বদলে স্নিগ্ধ পূর্ণিমা খাবে। ঘরে সোমত্ত মেয়ে, তাই বাইরে চিলতে বারান্দায় উনুনের পাশেই দু’জন হারিয়ে যায় সুখের স্বর্গরাজ্যে।
জলপরী পিতামাতার সুখের শব্দে বিমোহিত হয়।

পরদিন ঘুম ভাঙে অনেক বেলায়। বস্তির কলতলায় এই ভোরেই মেয়েপুরুষের লম্বা লাইন লেগে যায়। লম্বা লাইন ধরে নাইতে গেলে বেশ দেরি হয়ে যাবে ভেবে বেলাবানু দ্রুত বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। জলপরী ঘুমেই থাকে।

বাসায় ঢুকতেই মেমসাহেব রাগত স্বরে জানালেন
এভাবে কাজে দেরি করে আসলে তিনি অন্য বুয়া দেখবেন। বেলা কোন কথা না বলেই কিচেনে ঢুকে। সে জানে এখানে কথা বলা অনর্থক।
দ্রুত হাতে কিচেনের কাজ সারে, টেবিলে নাস্তা লাগায়। এদিক ওদিক ছুটাছুটিতে ক্লান্ত হয়ে হাঁপায়। মেমসাহেবের নজর এড়ায় না।

একা এক হাতে এত কাজ না করে মেয়েকে সাথে আনলেই পারো বুয়া।
ঃ মেয়ে তো ইসকুলে যায় মেমসাহেব। আজ ইসকুল খোলা।
ঃ স্কুলে পড়ে কি হবে? সেই তো বুয়াগিরী। তোমাদের এসব আদিখ্যেতা দেখলে গা পুড়ে যায়। ঘোড়ারোগ আর কাকে বলে !

মেমসাহেব আপন মনেই গজগজ করতে থাকেন। বেলা নিরুত্তর। একমনে নিজের কাজ করে। সে নিজেও জানে তার পেয়ে “ইসকুলের শেষ কেলাশ” ও পাশ দিতে পারবে না। এখনি বস্তির মাস্তান ছেলেগুলোর ছোকছোক চোখ দেখতে পায়, তার মেয়ের শরীর জুড়ে ছেলে বুড়ো সবগুলো পিশাচের লালসা খেলা করে। মেয়ের নিরাপত্তা সে দেবে কেমন করে। ভোর হলেই বাসায় ছুটে যাওয়া, রাত করে ঘরে ফেরা। সারাদিন মেয়েটার জন্য মন আঁকুপাকু করে। সেদিন খুব মনমরা হয়ে সানুমিয়াকে ছেলে দেখতে বলে বেলা। সানু মিয়া তো রীতিমত ক্ষেপে যায়। বেলা নীরবে চোখ মুছে। সানু তার ময়লা গামছা দিয়ে বেলার চোখ মুছে দিতে দিতে বলে
ঃ দেহিস বউ আমগো মাইয়া অনেক বড় মানুষ হইবো।

বেলা এসব কল্পিত সুখে গা ভাসায় না। সে জানে মেয়েমানুষ হয়ে জন্মানোর কষ্ট কতখানি। বাসা বাড়ির কাজের বুয়া হয়ে খুব নির্বিঘ্নে জীবন পার করেনি সে। তার শরীরে কত অলিখিত কথা গোপন আছে একমাত্র সে নিজে জানে। এখনো এই চল্লিশ বছর বয়সে ও কি সে নিরাপদ ! মনে মনে হাসে বেলা। মেমসাহেবরা কত নজরদারীতে রাখেন নিজেদের পুরুষগুলোকে, অথচ ভাবতেও পারেন না পুরুষ নামক এসব ক্ষুধার্ত নরপিশাচরা কোন নজরদারীতেই বন্দি থাকে না। রূপসী বেলাবানুর অভিজ্ঞতার ঝুলি একেবারেই ছোট নয়।

এ বাসার মেমসাহেব যতবারই জলপরীকে এখানে আনতে বলেছেন, বেলা ততবারই পড়াশুনার অজুহাত দেখিয়ে মেয়েকে দূরে রেখেছে।

তবুও কি শেষ রক্ষা হয় !
আজ কেনো জানি বেলার কোন কাজে মন বসছে না। বার বার উল্টাপাল্টা করছে দেখে মেমসাহেব বিরক্ত হচ্ছেন।

আচমকাই বড় পাইরেক্সের ডিসটা হাত থেকে পড়ে চুন চুন হয়ে ভেঙে গেলো। মেমসাহেব তো রীতিমত হায় হায় করে উঠলেন। চিৎকার চেঁচামেচিতে ওঘর থেকে সাহেব ও দৌড়ে আসলেন।
ঃ থাক না। ভঙুর জিনিস, পড়ে ভেঙে গেছে। এত চিৎকার করছো কেনো?
সাহেবের কথা শুনে মেমসাহেবের মেজাজ সপ্তমে উঠলো। মেম সাহেবের তীক্ষ্ণনজরে যেনো বেলার শরীর ভস্ম হয়ে যাচ্ছিল।
সাহেবের দুর্বলতা কোথায় তা তো বেলা জানে। তবুও পাশে এসে দাঁড়ানোতে মন অনেকটা ভালো হলো।
জলপরী স্কুল থেকে ফিরলো কিনা কে জানে। সানুমিয়াকে ফোন দিলো বেলা। কিন্তু সে তো ঠেলায় সবজি নিয়ে ফেরি করতে অনেক দূর চলে গেছে।

সন্ধ্যে নামার আগেই মেমসাহেবের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ির দিকে দ্রুত পা চালালো বেলা। ঘর অন্ধকার। ধক করে উঠলো মায়ের মন। পলিথিন মোড়া চাটাইয়ের দুয়ারখানা টেনে ভীত পায়ে ঘরে ঢুকলো সে।

ঃ জলপরী, ও জলপরী
জলরঙে আঁকা জলছবিটার কোন সাড়াশব্দ নেই।

ঘরে পা দিতেই পায়ের নিচটা চটচট করে ওঠে। বেলা টলতে টলতে এগিয়ে গিয়ে জলছবিটায় হাত রাখে। মুহূর্তেই সারাঘরে নেমে আসে এক ভয়ানক শীতল অন্ধকার। সে বিভৎস অন্ধকারে একটু একটু করে যেন বেলা তলিয়ে যেতে থাকে। সানুমিয়ার চকচকে স্বপ্নগুলো ও সেইসাথে এক সমুদ্র নোনাজলের স্রোতের তোড়ে কোথায় যেনো নিমেষেই হারিয়ে যায়।

অকৈতব // রুকসানা হক

দুঃখজনক হলেও সত্যি
যে ভূমিতে সারিসারি জুঁই কামিনী ফোটার কথা
সেখানে আজ ভক ভক করে ফুটছে অবিন্যস্ত গরল।
পৃথক নদীতে শুয়ে থাকা চাঁদে ও দাউ দাউ আগুন ফুটছে ,
বিবস্ত্র হচ্ছে ভোরের কোমল আজান।

অথচ বেদনাভারাক্রান্ত এই ক্ষণজন্মা ভূমির অন্তরে
ভূরি ভূরি ঝর্ণার ডানাঝাপটানো সুখ থাকার কথা ,
বিকেলের দুরন্ত ছায়ায় সিক্ত হবার কথা অকৈতব প্রেম।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি
রাজপথ অভিমুখী কিছু শ্লোগানের ভাষায়
নির্বিঘ্নে অত্যুচ্চ ভন্ডামী ফুটছে,
আর তাতে ক্রোধান্বিত চুড়ির হাতগুলো হচ্ছে অস্ত্রের মত কঠিন ।
যদি এসব হাতিয়ার একবার গর্জে ওঠে,
জুঁই কামিনীর স্বদেশ নির্বাসিত হতে বাধ্য,
রাশিফলের পিছু ছুটা ভাগ্যেরা ও কর্তিত হতে বাধ্য ক্রোধের ছোরায়।

মরণাপন্ন সাম্রাজ্যের স্মৃতিচিহ্নগুলি তখন রক্তাক্ত চর্মকাগজের মতো দুর্বোধ্য হবে,
শৈশবের নরম উদ্যান থেকে পালাবে সস্নেহ কলকল সকাল।

অতএব, বিশ্বাসঘাতকেরা সাবধান হয়ে যাও,
এই ঘুমন্ত নারীযোদ্ধাদের জাগিয়ো না,
তাহলে, মানচিত্রের ভেতরে তারা আর যাযাবর হয়ে থাকতে চাইবে না,
মুহূর্তেই তোমাদের লাম্পট্যে ছড়াবে ভীমরুলের বিষ,
নিজ ভূমের চিড় খাওয়া মাটিতেই রোপণ করবে অস্ত্র,
মাদকের মত আর পাচার হতে দেবে না নারী, নদী ও কবিতা।।

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিবাদ দিবসে সহিংসতায় আক্রান্ত নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমার এ কবিতা পুঁইফুল

আমি পুঁইফুল অষ্টমীর চাঁদে জন্ম নেয়া এক ক্রোধ ক্ষুধা,
আমার না আছে কোন অতীত, না আছে আগামীর স্বপ্ন।
গ্রহে নিগ্রহে ঘুমন্ত চোখের অর্ধেকটা রাখি খুলে
বাকি অর্ধেকে লিখে রাখি ত্বকের তল্লাশি ধ্বনি।
আমার জন্ম নিয়ে ততটা উচ্ছ্বাস দেখিনি কারো মাঝে,
আমার মা বলে যে ছিল সেও আমার জন্মে সুখি হয়নি,
আমাকে ক্ষুধার অজুহাতে পশুদের খোঁয়াড়ে পাঠিয়ে দিয়েছিল,
সেই থেকে আমার বেড়ে ওঠা পশুদের সাথে।

রূপকথার ধ্বনিধুননে মা আমার ঝর্ণাফুর্তি আঁকতে
রাস্তার ওপারে উদ্দাম হয়েছিল আমি দেখেছি,
তাঁর অমানুষপনা নিয়ে মঙ্গলের ধুলোয় আমি অশ্রু ঢেলেছি কেবল।
পশুরা আমাকে যখন খাবলাতো
আমি ফাঁকা ফুসফুস নিয়ে বনজারুলের ডালে ভীত বসে থেকেছি,
অন্ধকার রাতে কবরমুখী লম্বা নীরবতায় আত্মমৈথুন হয়েছি।

মাত্র সাতশ’পঁয়তাল্লিশ টাকায় বিক্রি হওয়া এই আমি
যে পশুটাকে বাবা বলে ডেকেছিলাম,
সেই প্রথম আমার রোদ্দুরকণা অশৈল্পিক উল্লাসে ছিঁড়েছিল,
আমার অভিমানী তলপেটে রুগ্নরাতের কিমাকার আগুন ছড়িয়েছিল।
সে দহনে একটি অঙ্কুর যখন প্রথম লজ্জাপত্রে সই দিলো
আমি অনন্ত বিষাদে বীজক্ষেত্রে সাপের নীলবিষ ঢাললাম
অঙ্কুরের মৃতরক্তে আমার স্বয়ংমৃত্যু হলো প্রথমবার,
আমার মৃত্যুর মূল্য ছিল মাত্র দু’হাজার কাগজের নোট।

পথ আমাকে বারবার পথে নামিয়েছে,
আমি কুমারী কলঙ্ক নিয়ে আবারো এক পশুর খোঁয়াড়ে আশ্রয় নিলাম,
সেখানে বাবা বলে আর কাউকে ডাকিনি,
ক্ষুধার বদলে শ্রম, শ্রমের বদলে দেহ, দেহের বদলে সুখ
আমি নৃশংস সুখে শয়ে শয়ে দীনাত্মার ঘৃণা আঙুলের তুবড়িতে উড়িয়েছি,
বর্ষা নামিয়েছি ভাঙচুর বিশ্বাসে।

মন্দ সময় শূন্যতার বুকপকেটে ঢেলে আমি পুঁইফুল লাল হয়ে ফুটেছি,
আমার মননদীর খেয়া ধরে জীবনানন্দের শালিকটি উড়েছে,
শিশিরের হিমে কবিতার খুনোখুনি দেখে
আমি অহেতুক পদ্মার জলে নেমে স্নিগ্ধ হয়েছি,
বাড়ন্ত যৌবনে বীজেরা পাতা মেলতে চাইলে নিপুন শিল্প হয়েছি।
আবারো অঙ্কুরোদগম হলো, আবারো রেশমপথে শিশিরকণা স্বপ্ন হলো,
আমার ছিপছিপে অস্তিত্বকে বাজি রেখে অঙ্কুরের প্রশ্রয় গুনেছি,
চমৎকার নদীতে ধানের ছড়া বিছিয়ে
সৎকার করেছি আমার সকল ভীরুতা, হয়েছি জ্বলজ্বলে এক পূর্নাঙ্গ নারী।

আমি এখন আমার অতীতকে জুয়োর দানে ধরে রেখেছি,
অঙ্কুরোদগমের অপরিণত সুখে নিলামে তুলেছি কুমারী কলঙ্ক, আমার অজস্র মৃত সংলাপ,
এক পূর্ণাঙ্গ নারী এখন ক্রোধদৈন্য লোকাচারের প্রতি কোন দায় রাখে না,
তার পুরোটা দায় কেবল পুঁইফুলের লালিমায় অঙ্কুরিত এক বিন্দু শিশিরকণা।

ঘাসমাটি অন্তরের কাছাকাছি // রুকসানা হক

এতদিনে বুঝি নিরালা খানিকটা নির্ভার হলো। তেতলার ছাদে উঠে ভেজা চোখে দমচাপা শ্বাসটুকু ছাড়িয়ে নিলো আড়াইবছরের নীলআকাশ থেকে। ওখানে অযুত ক্লান্তি ছিল, ছিল বন্ধনের খুব শীতল রং। সুখ ও ছিল ক্লান্তিহীন। ছিল নিবিড় বন্ধন। তাই চোখদু’টো বারবার ভিজে ওঠে।

যেকোন বন্ধনই ছিন্ন করার কষ্টগুলো হয় ভয়ানক। তাই হয়তো নিরালার কষ্টেরা দুঃখের অণুবীজ হয়ে বুকের গহীনে ঝড় তুলছে আজ।

আড়াই বছর !
সময়টা নেহায়েত কম না। স্মৃতিরা ও কম মুখরিত নয়। শুরু থেকেই দীপ্তের সাথে কোথায় যেন একটা ফারাক ছিল তার। হতে পারে এটা নিরালার ইগো, হতে পারে দীপ্তের অধিক ভালবাসার দায়ভার।

বেশি ভালবাসা কখনো কখনো চন্দ্রভুক গল্প হয়ে যায়। গল্পের আড়ালে থাকে আরো কিছু উপগল্প। সেখানে ভালবাসার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে পারষ্পরিক অবুঝাপড়া। দীপ্তের সাথে বুঝাপড়া হয়নি নিরালার। নিজের অহংবোধে যখন ক্ষীপ্রতা ঝড় তোলে, ক্ষয় শুরু হয় সেখান থেকেই।

নিরালার কথোপকথন বাতাসের সাথে ইকো হয়ে আবার নিজের কানেই ফিরে আসে
ঃ শৃঙ্খলের নাম কখনো ভালবাসা হয়না দীপ্ত।
ঃ ভালবাসার ও নাম কখনো নিজের সীমা অতিক্রম করা নয় নীর।

নিজের সীমা বলতে কি বুঝায়, জানে না নিরালা। পুরোটা জীবন জুড়েই ছিল অনতিক্রম্য একটা লেভেল। সেই লেভেলটা ক্রস করতে পারেনি বলেই আশেপাশের মানুষকে ছোট করে ভাবতে শেখেনি সে।

নিরালার চারপাশের মুখগুলোই যেন দীপ্তের একমাত্র এলার্জি। সুখের অনুভূতিকে নিবিড়ভাবে অনুভব করতে গিয়ে নিরালা চারপাশ থেকে খুব যতনে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল। সে অনুভূতিটার নাম ছিল দীপ্ত।
সেটা কি দীপ্ত জানতো না ?
ঃ তুমি জেনেও কেনো তৃতীয় পক্ষ নিয়ে এতটা মুখর থাকো ? বিরক্তিভরে জানতে চাইলো নিরালা।
ঃ ওরা পঁচা মানুষ। তুমি সংক্রমিত হবে।
ঃ ওরা আমার চারপাশ। তুমি অন্তর। অন্তর শুদ্ধ থাকলে শরীরে সংক্রমণ হয় না।
ঃ ছোটবেলা গুরুজনেরা এদেরকেই মেলামেশার অনুপযোগী ভাবতেন।
ঃ আমি এখন পূর্ণ মানুষ। ছোট নই।
ঃ আমাকে ছাড়াই তাহলে পূর্ণ তুমি নীর ?

দীপ্তের জেদ তার অন্তরের চোখদু’টো অন্ধ করে দিয়েছিল। সে জানতো চারপাশ মানে তার থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। তাকেই কেন্দ্র করে আবর্তিত নিরালার চারপাশ।

এতসব জটিলতা সরল সমীকরণকে অমিমাংসিত রাখতে বাধ্য করে। নিরালার কাছে তার অন্তর অমীমাংসিতই থেকে যায়।

তেতলার ছাদটা আজ জোছনায় ভেসে যাচ্ছে। ছাদবাগানে টুপটুপ চাঁদনী বৃস্টি। নির্ভার নিরালার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠছে নরম নীল আলোর স্পর্শে। ছাদ থেকে জোছনাভেজা চোখ দু’টো নিচে ঘাসমাটিতে গিয়ে ঠেকলো। তুলতুলে সবুজ ঘাসেরাও ভেজা ভেজা আলোর সাথে লুকোচুরি খেলছে। নিরালার ও খেলতে বড় সাধ হলো। ঘাসের চাদরে যেন তার অন্তর শুয়ে আছে।

নিরালা অন্তর ছুঁতে চায়। প্রচন্ড জেদে জোছনার নীল আলোতে নিজেকে ছেড়ে দেয় ঘাসমাটি অন্তরের কাছাকাছি।

একটা বিকট শব্দে ভয়ার্ত রাতের পাখিরা ক্যাঁচক্যাঁচ করে এলোপাথাড়ি উড়ে যায়।

চুক্তিনামা// রুকসানা হক

মৃত্যু তোমার কাছে সহজ স্বীকারোক্তি আমার,
একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে পৃথিবীতে এসেছি আমি,
এটুকু সময় অন্তত আমাকে নির্বিঘ্নে বাঁচতে দাও,
ঈশ্বরের পাখির মতো আমার নির্ভেজাল নীড় খুঁজতে দাও।

আমার বেঁচে থাকা মুহূর্ত গুলোকে অন্তত ছিন্নভিন্ন করো না,
পিতৃপুরুষের সম্ভ্রান্ত অতীত থেকে —-
দু’ফোটা স্বপ্ন এনে আমার রক্তশূন্য চোখে ঢালতে চাই।
নিজ ভূমে যাযাবর হয়ে থাকা মানুষের সমস্ত বিশ্বাসে
গেঁথে দিতে চাই জীবনের অপার সৌন্দর্যটুকু।

মৃত্যু, এ সময়টুকু অন্তত আমার করে দাও,
প্রেতাত্মার দখলে থাকা অস্ত্রগুলো জারুলের মতো ফুটিয়ে দাও এই মানচিত্রে,
যেখানে আমার নিজ ভূমি শুয়ে আছে চৌদ্দ পুরুষ ধরে।
আমাদের কর্তিত শিরাউপশিরা আর রক্তাক্ত চর্মকাগজ
এখনি নিলাম করো সভ্যতার দামে।

আমার বেঁচে থাকা সময়ে
নেকড়ের কাছে প্রিয় পাহাড় ধর্ষিত হোক আমি চাই না,
চাই না কোনভাবে দুর্বোধ্য হোক আমার শৈশবের জোছনা,
বিশ্বাসঘাতক নেতাদের হাতে লাঞ্চিত হোক বাম বুক।
আমার সীমিত জীবিতকালে অধিকারহীনেরা যেন আতঙ্কিত না থাকে।

মৃত্যু অন্তত এই নিশ্চয়তাটুকু আমাকে দাও তুমি;
তারপর অনুগত ভৃত্যের মতো কোন এক শ্রাবণের শেষ বৃষ্টিতে
আমার ক্রন্দনরত চারণভূমি ছেড়ে অনায়াসে চলে যাবো ,
যে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে পৃথিবীতে এসেছি
তার বেশি একটি মুহূর্ত ও থাকবো না আমি।

#অনুগত ভৃত্য