কি কারণে জানিনা সেই রাতে উঠোনে কামিনী ফুলের গাছ থেকে
কোন সৌরভ এলো না,
হয়তো অপরিচিত শব্দটির কদর্যতা টের পেয়েছিল সব ফুল !
উঠোন ভেঙে থৈথৈ বৃষ্টি তখন-
মাঝরাতে বৃষ্টিভেজা তুমি দোরঘন্টি বাজালে, দরোজা খুলে তোমাকে দেখিনি আমি,
দেখেছি কামিনী-কাহিনীর ভুল পথ।
তাই হয়তো সৌরভ পালিয়েছে থোকা থোকা ফুলের বুক থেকে !
আগলে দাঁড়ালে তুমি, আমি বিস্মিত হয়ে খুঁজছিলাম মাঝরাতের একজোড়া বিধ্বস্ত কদমফুল,
কি কারণে জানিনা কদমের জন্মঋতুতে আমার মৃত্যুসমগ্র রচিত হলো।
–
সেই বিপন্ন রাতে অভিধান ঘেটে ‘তালাক’ শব্দটির কী নিখুঁত অর্থ দাঁড় করালে তুমি !
বাঁজপাখির ধারালো ঠোঁট তাই নিমিষেই খুবলে খেলো আমার মহাধমনীর গোপন চোখ; আর
প্রদীপের চিমনি ভেঙে আগুন ছড়িয়ে পড়লো আমার অন্তরে, শিথানে, বালিশে !
বস্তির ভাঙা ঘর থেকে চিৎকারগুলো খোলা আকাশে নিরুত্তাপ ভেসে থাকে বলে
জোনাকীরা কাটাকুটি খেলতে গিয়ে অন্ধকার কাটে, কিন্তু
সুউচ্চ প্রাচীর টপকে আমাদের চিৎকারগুলো পাষাণের করতলেই মুঠোবন্দী থাকে,
প্রাচীর-বন্দি এই আমাদের অন্ধকার তাই কখনোই কাটে না !
–
সেই বিষণ্ন রাতে আমার থৈ থৈ যন্ত্রণা সাক্ষী- যা কিছু ছিল অবসাদ
তার মাঝে শুধু ছিল বমির প্রভাব।
নিকষ কালো সেই দুর্যোগে তোমার “তালাক” শব্দটির ঝনঝনে আমি নির্জন হয়ে যাই।
অথচ একটা হৃদয়ে যাবার উচ্চাশায় আমি বহুবার কামিনীর প্রচার করেছি চোখে,
ধুয়ে মুছে রেখেছি আমার ঘুমন্ত বিশ্বাস।
–
যদি একবার প্রবেশ-দুয়ার খুলে দিতে
আমি পাখিকে পাঠাতাম আমার মৃত্যুকে এগিয়ে আনতে,
আপাদমস্তক কাফনে মুড়ে দিতাম নিজেকে।
মৃত্যু আসেনি আমার কাছে, এসেছে দুর্বহ এক শব্দ “তালাক”।
–
সেই রাতে একারনেই কী কামিনীর বুক থেকে সৌরভ পালিয়েছিল?
আমি জানিনা; তবে সেই নিথর রাতে
প্রাচীরবন্দি এই আমার চোখ থেকে ঝরেছে অথৈ আগুন, আর
সাত আসমানের পরাজিত বৃষ্টিরা আগুনে পুড়েছে শব্দহীন।।
মুগ্ধ হলাম দিদি ভাই। মনে হলো একটি জীবনের গল্প পড়লাম। সুন্দর।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দিদি। মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
কবিতাটি পড়ে ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো মন!
শুভেচ্ছা কবি রুকশানা হক কে এমন একটি কবিতা উপহার দেয়ার জন্য
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।
লিখাটি যেন সবিস্তারে এসেছে। বলা এবং না বলা বেশ কিছু বিষয় চমৎকার উঠে এসেছে। অনুভব প্রকাশের পাশাপাশি এর পরিসরও বেড়েছে। ধন্যবাদ আপা। সুন্দর।
আপনার চমৎকার অনুভূতিতে উৎসাহিত হলাম । অসংখ্য ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
প্রাচীরবন্দি এই আমার চোখ থেকে ঝরেছে অথৈ আগুন, আর
সাত আসমানের পরাজিত বৃষ্টিরা আগুনে পুড়েছে শব্দহীন।।
* অপূর্ব চিত্রকল্প…
কবিতার পাশে থেকে উৎসাহিত করার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন ।
অসাধারণ রুপকল্প, মনকাড়া বিনির্মাণ কবিতাটাকে আকাশ-উচুতে নিয়ে গেছে। দৃশ্যমান হরফের লেখায় যা পড়েছি অদৃশ্য হরফে লেখা কথাগুলিতে তারচে কম পড়িনি। মহৎ এই বিষয়বস্তুর এমন শিল্পরুপ বিবেককে নাড়া দেবেই!
অসাধারণ বুনন! পড়েছি আর ভেবেছি, কলমের নিবে নাকি বাবুই পাখির ঠোঁটে এই কবিতা নির্মিত হয়েছে?
শেষ চরণে এসে এর চমৎকারিত্ব এবং ব্যঞ্জনায় থমকে গিয়ে ভেবেছি, ঈশ্বর এসে কলমে ভর করলেই কেবল এমন কবিতা লেখা যায়!