সিনিয়র রিপোর্টার : নিশ্চিতভাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইটে’র নামে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গণহত্যা চালানো ছিল একটি সুসংগঠিত পূর্ব পরিকল্পনার অংশ।
সেনাবাহিনী শুধুমাত্র বিদ্রোহীদের সশস্ত্র হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছে পাকিস্তান সরকারের এমন দাবি ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়েছে।
১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে সেনা ইউনিটের পাঠানো রেডিও বার্তার এক প্রতিলিপি থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়।
পরে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার (মুজিবনগর সরকার) এর প্রতিলিপি পায়, তারপরে তারা জাতিসংঘের মহাসচিব এবং বিভিন্ন সরকার প্রধানের কাছে এর কপি পাঠিয়েছে।
১৯৭১ সালে ২ জুন রেডিও বার্তাটির প্রতিলিপির কিছু অংশ ‘টাইমসে’ প্রকাশিত হয়।
সদর দপ্তরে সামরিক গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান এবং সেনা ইউনিটগুলোর মধ্যে যে কথা বিনিময় হয়েছে এখানে তার কিছু উদ্ধৃতি করা হল।
কন্ট্রোল : ভালো করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের হতাহতের আনুমানিক সংখ্যা কেমন হবে বলে আপনি মনে করেন ?
৮৮ : প্রায় ৩০০। ওভার
কন্ট্রোল : ভালো করেছেন। তিন শত নিহত। কেউ আহত বা বন্দী ? পরিস্থিতির খবর। ওভার।
৮৮ : আমার বিশ্বাস ও ভাবনা শুধুমাত্র ৩০০ নিহত। ওভার।
কন্ট্রোল : হ্যাঁ আমি আপনার সাথে একমত। এটি খুবই সহজ। কিছুই জানার নেই কিছুই করার নেই। আপনাকে কিছু ব্যাখ্যা করতে হবে না। আমি আবারো আপনিসহ সব ছেলেদেরকে সাবাস দিতে চাই …
৭৭ : সর্বশেষ ৮৮ থেকে তার অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু যাতে অনেক ভবন আছে তাকে প্রতিটি ঘুরে ক্রমশ কমিয়ে আনতে হবে। তাকে এ পর্যন্ত কোন হতাহতের ঘটনার মধ্যে পড়তে হয়নি। কিন্তু তার বিরুদ্ধে গুলি করা হয়েছে। সে যা পেয়েছেন সব কিছুর ব্যবহার করেছে। ওভার।
কন্ট্রোল : তাকে বলুন, তার বড় ভাইয়েরা (আর্টিলারি সমর্থন) খুব শীঘ্রই আসছে। আমি আশা করি, ভবনগুলোতে কড়ানাড়ার শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। এখন অন্যদিকে, এছাড়াও আমার মনে হয় লিয়াকত ও ইকবাল (ছাত্রাবাসগুলো) এখন শান্ত…
কন্ট্রোল : ইমাম (দ্যা কমান্ডিং অফিসার) এর কাছ থেকে সব বাংলাদেশের পতাকা বা কালো পতাকা সংক্রান্ত নির্দেশ। ভবনের ছাদে উড়ন্ত সব পতাকা নামানোর জন্য সতর্ক করতে হবে অন্যথায় মালিকদের আইনের আওতায় নেয়া হবে। যে কোন স্থানে রাস্তা বন্ধক একটি ফৌজদারী অপরাধ হবে। এতে যে কাউকে জড়িত দেখতে পেলে এ গুলি করা আবশ্যক। উভয় পাশের ঘর এবং বিল্ডিং ধ্বংস করা হবে।
৮৮: উইলকো। অন্য কিছু আছে ? ওভার।
কন্ট্রোল : ইমাম এখন ইমাম ২৬ এর সঙ্গে। আপনি যে কোন বিষয়ে আরও সহায়তার প্রয়োজনে তাকে জানাতে পারেন। বক্সার (ডেমুলেশন স্কোয়াড) সদস্য সংক্রান্ত। তারা তাদের বেস অবস্থান থেকে শুরু যাত্রা শুরু করেছে এবং আপনার সামনের সব বাধা ধ্বংস করতে সাহায্য করার জন্য উষালগ্নে অবিলম্বে আপনাকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে। ওভার।
কন্ট্রোল : সাধারণ মানুষের আবস্থা কি হবে (দ্যা ডেইলি পিউপিল নিউজপেপার)? ওভার।
২৬ : উড়িয়ে দাও। আমি আবার বলছি, উড়িয়ে দাও। আমাদের দুইজন গুরুত্বর আহতকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
কন্ট্রোল : এছাড়া কি অন্য কোথাও হতাহতের কোন খবর আছে ? ওভার।
২৬ : এটি এ মুহূর্তে বিচার করা কঠিন। বিভিন্ন স্থানে আগুন বা সম্পূণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে।
কন্ট্রোল : আপনাদের আক্রমণে কোনো পুলিশ লাইন আছে ? ওভার।
২৬ : পুলিশ লাইনে আগুন জ্বলছে। ওভার।
কন্ট্রোল : খুব ভালো। আউট।
(টুডে সংবাদ/তা.সু.পি)
‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর নামে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ঢাকায় ২৫ মার্চ মধ্যরাতে গণহত্যা চালানো ছিল একটি সুসংগঠিত পূর্ব পরিকল্পনার অংশ। সত্য।
“ইস্ট পাকিস্তানকা আদমি নেই চাইয়ে, ইস্ট পাকিস্তানকা মিট্টি চাইয়ে” পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ চাইনা, পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই।
এই ছিল অদের উক্তি।
করাচী থেকে আমাদের PIA এর ফ্লাইট ছিল ৯ মার্চ ১৯৭১ কিন্তু পাকিস্তানি সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ি হত্যাযজ্ঞ চালানোর জন্য সমস্ত ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়ে আনতে শুরু করল পাকিস্তানি আর্মি। ৩ মার্চ ১৯৭১ আমাদেরকে টেলিগ্রাম করে জানিয়ে দিল অনিবার্য কারণবশত আপনার ফ্লাইট বাতিল করা হলো ফ্লাইটের তা্রিখ পরে জানানো হবে।
২৫শে মার্চ ১৯৭১ শুরু হলো স্বাধীনভাবে হত্যাযজ্ঞ।
এ কথা সবাই জানে যে ২৫ মার্চের গণহত্যা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত।