শেখ মুজিব

আমি আমার মা কে অসংখ্য বার বলতে শুনেছি যে দিন- যে সময় শেখ মুজিব হত্যার খবর এলো সেদিন সে সময় মা আমার উঠোনে ধান মাড়ানির কাজে ব্যাস্ত, অথচ তখনো তিনি দশ মাসের গর্ববতী আমিই ছিলাম আমার মায়ের গর্ভে। স্বভাবতই তার কয়েকদিন পর আমি ভূমিষ্ট হই, জন্ম নিই বঙ্গবন্ধু হারা শোকার্ত বাংলাদেশে। আমার বাবা ষাটের দশকের ছাত্রলীগ নেতা এবং পরবর্তীকালের আওয়ামীলীগ নেতা ফলে সেই সময়কার ভয়ার্ত পরিস্থিতিতে তিনি আমাকে নিয়ে খুব ভীত সন্ত্রস্ত থাকতেন। কিন্তু মায়ের কাছে শুনেছি বাবা নাকি যখন আমাকে আদর করতেন আদরের ছলে শ্লোগান দিতেন এক মুজিব লোকান্তরে লক্ষ মুজিব ঘরে ঘরে…।

এই জন্যই হয়তো পরবর্তী কালে আমারো ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠার পেছনে জেনেটিকেলি প্রভাব রয়েছে। ৯০এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় আমি নবম শ্রেনীর ছাত্র, তখনকার আন্দোলনের কথা আমার স্পষ্ট মনে থাকার কারণ হলো আমরা তখনকার আন্দোলনে বিশেষ করে বড় ভাইদের সাথে মিছিলে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে অংশ নিতাম এবং পরবর্তী কালে ৯৬ এর অসহযোগ আন্দোলন এবং তার পূর্বের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে আন্দোলনের ইতিহাস তো অসংখ্য রক্ত, ঘাম মাখা!…

এই যে আমার তারুণ্য আমার উদ্দাম ছুটে চলার এক অদম্য স্পৃহা এসব কিছুর পেছনে যে শক্তি কাজ করেছে সেটাই বঙ্গবন্ধুর চেতনা- বঙ্গবন্ধুর প্রভাব। বাবার মুখে বারবার শেখ মুজিবের নাম, শেখ মুজিবের ইতিহাস, তিনি ছাত্র জীবনে স্কুলে কি করেছেন, কিভাবে দাবী আদায়ের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সামনে দাঁড়িয়েছেন, কি ভাবে নানান আন্দোলনে শ্লোগান দিয়েছেন, কখন জেলে গেছেন, কখন কেন আহত হয়েছেন এসব শুনে শুনে বড় হওয়া আর সেই সাথে টুক টাক বই পড়ার নেশা তো ছিলই।

পরাধীন বাংলা বা স্বাধীন বাংলা, হাজার বছরের ইতিহাসে তারুণ্যের ঔজ্জ্বল্যে এক ব্যতিক্রমী কিংবদন্তির ব্যক্তিত্ব হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য বঙ্গবন্ধুর সমকক্ষ আর কেউই নাই। ১৯৪০ থেকে ১৯৭৫-এর ১৪ আগস্ট দীর্ঘ ৩৫ বছরের কিছু বেশি সময়ের রাজনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুকে একটি মহা শক্তিতে বলিয়ান হতে দেখা গেছে সেটা হচ্ছে তার তারুণ্যের শক্তি… যৌবন উদ্দীপ্ত এক বলিষ্ঠ শক্তি! …তাঁর রাজনৈতিক ইতিহাস, সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এবং চিন্তা-চেতনার পরিধি স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী রাজনীতি বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বা যোগ্যতা আমার মত ছাপোষা মানুষের কক্ষনো হবেনা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন মনেপ্রাণে তরুণ বাঙালি। এ কারণে মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলের আদর্শ, বিশ্বাস ও নিজের জীবনদর্শনকে একীভূত করে নিয়েছেন তিনি। তাঁর স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তোলা। এবং ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি স্বাধীন দেশে প্রথম পা রেখেই তিনি উচ্চারণ করেছিলেন `বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে। আর তার ভিত্তি কোনো ধর্মভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা ‘যার যার ধর্ম তার তার `ধর্মনিরপেক্ষতার এই অনন্য ব্যাখ্যা বঙ্গবন্ধুই প্রথম উপস্থাপন করেন।

তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা এদেশের তরুন সমাজের মধ্যে নতুন এক উদ্দীপনা এক অসম্ভব কর্ম চঞ্চলতা দেখতে পাচ্ছি, তরুনরা আজ উদ্যোক্তা, তরুনরা আজ কেবল চাকুরীর জন্য হন্য হয়ে ছুটে না, তারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও বাস্তবায়নে এবং এর যথাযথ মর্যাদা দিতে নিজেদেরকে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে তুলছে, বিদেশ না গিয়ে উপার্জন করছে বিদেশী মুদ্রা, শুধু তাই নয়- তরুণ’রা বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষন কে গবেষনা করে নিজদের জীবনে কাজে লাগাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সে দিন বলেছিলেন …
”যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে” আজ এদেশের তরুণ’রা সেই মন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে যার যা আছে তা দিয়ে পথে নামছে নিজের পায়ে দাঁড়াতে, জীবিকার সন্ধানে আর কোন অপেক্ষা নয় যা আছে তা দিয়ে শুরু করছেন কাজ। আমি নিজেই সেই মন্ত্র ( যার যা আছে তা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে) জীবনে কাজে লাগিয়েছি বহুবার।

বাঙালি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদের নাম শেখ মুজিব। শেখ মুজিব মহা গ্রন্থ, একটি মহা হাতিয়ার, শেখ মুজিব একটি মহা বিদ্যালয়, একটি মহা স্পন্দন যা ধারণ করতে পারলে জীবনের পরতে পরতে উন্মোচিত হবে বিজয়ের শিখা! … অপূর্ব বিস্ময়কর এক আবেগের নাম শেখ মুজিব। শেখ মুজিবকে না জানলে না বুঝলে না মানলে জীবনের কিছুই বুঝা হবেনা কিছুই জানা হবেনা, মানা হবেনা।

অনেক প্রজন্ম বিগত হয়েছে আরো অনেক প্রজন্ম আসবে – যাবে কিন্তু শেখ মুজিব থেকে যাবে। কারণ শেখ মুজিব চিরকালের তরুণ। তিনি তারুণ্যের জন্য বেঁচেছিলেন তারুণ্যের জন্য লড়েছেন, তারুণ্যের জন্য শত্রুর বুলেটের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেও অমর হয়ে আছেন। কারণ তারুণ্যের মৃত্যু নাই। তরুণ’রা যুগে যুগে কালে বেঁচে থাকে, লড়াই করে। আর শুধু বাংলা নয় পৃথিবীর যেখানে লড়াই সেখানেই শেখ মুজিব, সেখানেই বঙ্গবন্ধু…। যেখানে দাবী আদায়ের মিছিল সেখানেই শেখ মুজিব। সেখানে স্বাধীনতাকামীদের তর্জনী উঠবে সেখানে জেগে উঠবে শেখ মুজিব।

দাউদুল ইসলাম সম্পর্কে

সব সময় নিজেকে বলি- মানুষ হবি যদি- অন্ধকার ঘরে যখন একা থাকবি তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করে নিস তুই কতটা মানুষ। কতটা তোর সভ্যতা কতটা তোর ভদ্রতা! স্নান ঘরে যখন একা শাওয়ারের নিচে দাঁড়াস- তখন নিজেকে জিজ্ঞেস করিস কত টা আছে তোর মনুষত্বের রুচি! জিজ্ঞেস করিস কতটা তুই ভদ্র, সভ্য!

4 thoughts on “শেখ মুজিব

  1. যেখানে দাবী আদায়ের মিছিল সেখানেই শেখ মুজিব। সেখানে স্বাধীনতাকামীদের তর্জনী উঠবে সেখানে জেগে উঠবে শেখ মুজিব। চির ভাস্বর একটি নাম শেখ মুজিবর রহমান।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।