নিজেকে অসহায় ভাবছেন? একবার ভেবে দেখুন প্রবাসী বাংলাদেশীরা কেমন আছে এই করোনার মধ্যে। কত প্রবাসী মারা গেছেন জানেন তো? একটু ভাবুন তো পরিবারের সবাই বাংলাদেশে আর মাত্র একজনই জীবিকার সন্ধানে দেশের বাইরে ছিল। আজ সেই নেই অথবা সেই করোনায় আক্রান্ত! অসহায় কে? আপনি, নাকি নিঃসঙ্গ সেই প্রবাসী। মধ্যপ্রাচ্যে জেলে আছে ২৯ হাজার প্রবাসী যারা সবাই বৈধভাবে এসে অবৈধ হয়েছে। আর আসতে সুদ ও ধার কর্জ করেই বিদেশে আসতে হয়। একজন লোক আসার সময় সরকার কোন অর্থনৈতিক সাহায্যই করে না। সব কিছু নিজেকে করতে হয়। প্রতারক দালালের কথা শতকরা ৯৮টাই মিথ্যা। বিদেশ এসেই সে চরম বাস্তবতা ও কঠিন প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। আছে মালিকদের বর্বর আচরণ। অনেকে এসেই কাজ পায় না, বৈধ ওয়ার্ক পারমিট পায় না। হয়ে পড়ে দিশাহারা, হয়ে পড়ে অবৈধ। তবে মনে একটাই চিন্তা থাকে কিছু টাকা রোজগার করতে পারলেই সুদটা পরিশোধ হবে। ঘর ভিটা রক্ষা করতে পারলে দেশে গিয়ে না খেয়েও পরিবার নিয়ে থাকতে পারবো। কিছু টাকা পাঠালে এনজিও আব্বাকে কোমরে রশি লাগবে না। আর তখন কাজ করতে গিয়ে ধরা পড়ছে। আমও গেল ছালাও গেল। সরকার কি আছে সংযোগ এতে। না নাই।
যারা অনেক বছর কাজ করেছে তারাও আজ দিশাহারা। যৌথ পরিবারে বোন বিয়ে, ভাইদের লাইন, ঘরবাড়ি দালান করা আস্তে আস্তে মা বাবা বুড়া হয় তাদের ঔষধ খরচ। এইদিকে নিজেই বুড়া, দুই পা খাড়ায় আর মাঝের …… । তখন বিয়ে, কোন রকম বাচ্চার বাবা হলেও বউ আইফোন পেয়ে ফিরিত করে টাউনে ঘুরে ঘুরে। এর মাঝে ওয়ার্ক পারমিট কোম্পানি করে না কারণ কোম্পানি দেওলিয়া, সরকারি ফিস বাড়িয়েছে বলেও অনেক কোম্পানি পারমিট করে না। হয়ে পড়ে লোক অবৈধ। তবে একসময় এই লোকই কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে। এই টাকা পরিবার খরচ করলেও বিদেশ হতে দেশেই গিয়েছে টাকাটা।
কিছু লোক চাকরী করে, ব্যবসা করে, ২০/২৫ বছর প্রবাস করে আজ ক্লান্ত, দেশে কোটি কোটি টাকা পাঠিয়েছে। ভাগ্য সহায় ছিলো। এখন এই মহামারিতে বিদেশে মরে লাভ কি। বাঁচলে পরিবার নিয়ে বাঁচবো মরলে একসাথে মরবো। তাই ভয়ে নিজ দেশে গিয়েছে এটা তার অপরাধ নয়। আগে বলেছি বিদেশ আসতে সরকার কিছুই সাহায্য করে না। সব লোকের দেশে মরার অধিকার অবশ্যই আছে। নতুন লোক যারা বিদেশ এসেই অবৈধ হয়ে গেল তারা চলে গিয়ে ভালো করেছে। তারা এমনি জিন্দা লাশ। হাজার হাজার শ্রমিক ছাটাই হবে ভবিষ্যতে। যারা কোটি কোটি টাকা দেশে পাঠিয়েছে এতে পরিবার, দেশের সরকার উপকৃত হয়েছে। আমি দেশের নাগরিক আমি দেশে আসবোই, সরকার কিভাবে আমাকে সুরক্ষিত করবে সেটা সরকার ভাববে। আমি দেশের ক্ষতি করি নাই অতএব সরকার আমার ক্ষতি করতে পারেন না।
ইউরোপে মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের মত যাইতে পারে না। অনেক টাকার বিনিময় সাগর, পাহাড়, বন- জঙ্গল পার হয়ে তারপর যায়। আপনরা জানেন কত বাঙ্গালী সাগর মহাসাগরে ভেসে গিয়েছে। কত লোক তুর্কী বরফে আর আফ্রিকার জঙ্গলে সলিল সমাধি হয়েছে। এত কষ্ট করে গিয়ে কেউ ফেরত আসতে চাইবে না। আর আমাদের দেশ হতে উন্নত দেশে জীবনমান অনেক অনেক উন্নত। এমন আরাম ছেড়ে দেশে গিয়েছে শুধু পরিবার নিয়ে মরতে। বৈধ কাগজ না থাকলে চিকিৎসা পেতে অনেক কষ্টকর। অনেকের ডায়াবেটিস সহ আরো জটিল রোগও আছে। টাকা সব নয় জীবনে টাকা অনেক কামাই করেছি এবার দেশে গিয়ে মা কিংবা মেয়ের কোলোই মরি। তাই মহামারীর প্রথমে প্রবাসীদের হুমড়ি খেয়ে মাতৃভূমিতে যাওয়া। আর দেশ তুমি দিলা বেশ।
৬৮জন বাঙ্গালী সৌদিতে মারা গিয়েছে। ৩০২১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এখন আর অভিবাসী নাগরিকদের পরিচয়ও প্রকাশ করছে না। বিভিন্ন আইনি জটিলতার কারণে দাফনও হয়নি বহু লাশের। বাবা মা হারিয়েছে সন্তান, ভাইবোন হারিয়েছে প্রিয় ভাই, ছেলেমেয়ে হারিয়েছে বাবা, আর বউটা হয়েছে বিধবা। যার লাশ কিংবা কবর স্বপ্নেও আসবে না। আপনি কষ্ট করে অন্যান্য দেশের প্রবাসী বাংলাদেশী লাশের হিসাবটা নিবেন। আর তাদের গালি দিবেন কারণ একজন ইটালী প্রবাসী দেশকে গালি দিয়েছে কারণ প্রবাসীরা ফকিরের বাচ্চা। আর জীবিত যারা আছে দেশে গেলে বিমান বন্দরে আনসার দিয়ে পাছায় দুইটা বেত মেরে বলবেন এই দেশ তোমার না।
খুবই তিক্ত এই অভিজ্ঞতা। দীর্ঘ একটি সময় প্রবাসে কাটনোয় এই দুঃসহ স্মৃতিভার আমাকেও তাড়িত করে। এ কোন দেশের নাগরিক আমরা। আদৌ কি প্রবাসীদের মূল্য আছে আমাদের দেশে !! রেমিটেন্স যোদ্ধা নামের পদ-পদবীতে সত্যকে আড়াল করা যায় না।