নাহিদ সাহেবের ঘুম আসছে না। এপাশ ওপাশ ফিরছে বিছানায়।
একবার ঘুম এসেছিল কিন্তু তন্দ্রার ভেতরে কাকে যেন দেখার পর ঘুম ভেঙে গেলো। তাওতো ঘন্টা তিনেক আগের কথা। এখন রাত ৩টা বাজে। হঠাৎ ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় শব্দ হতে শুরু করলো। ওই শব্দটার ভেতরে প্রচন্ড কষ্ট এবং ভয়ের কম্পন বুঝা যায়। নাহিদ সাহেব বাসায় একা। তার স্ত্রী সন্তান কিছু দিনের জন্য শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে। এতো রাতে একা একা, লাইট অফ করা, তার মধ্যে এই ঘড়ঘড় শব্দ কেমন যেন লাগছে। আরেকটি শব্দ ওই ঘড়ঘড় শব্দটাকে ধমক দিয়ে বললো, চুপ!
ঘড়ঘড় শব্দটা থেমে গেলো। এখন যেই শব্দটা ধমক দিয়েছিলো সেই শব্দটা মোলায়েম সুরে ডাক দিলো, নাহিদ সাহেব! আপনি জেগে আছেন আমি জানি।
নাহিদ সাহেব ওই মোলায়েম কন্ঠের উত্তরে বললেন, কে কথা বলছেন?
উত্তর এলো, আমি ডুডুভ ক্রক্ক।
নাহিদ সাহেব বললেন, ও আচ্ছা – কিন্তু ঘড়ঘড় শব্দটা কিসের?
ডুডুভন উত্তর দিলো, ওটা একটা পাপাত্মা।
– এখানে এসেছে কেন? আর এমন শব্দ করছে কেন?
– সে খুব কষ্টে আছে, ওই আত্মাটা শান্তি পাচ্ছে না
– কেন?
– ভয়ানক এক শাস্তি চলছে আত্মাটার যা সে সহ্য করতে পারছে না।
– তা আমি ওই শব্দ শুনেই বুঝতে পেরেছি কিন্তু কেন এই ভয়ানক শাস্তি?
– সেটা ওই আত্মাটার কাছ থেকেই শুনুন।
আবার ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় শব্দ হতে শুরু করলো। ঘড়ঘড় শব্দটা কেঁপে কেঁপে উঠছে। ওভাবেই কথা বলতে চেষ্টা করছে। ভারী ঘড়ঘড় কাঁপা ভয়ার্ত কন্ঠে ওই আত্মাটা কথা বলতে লাগলোঃ
– আমি আজ এই ভয়ানক শাস্তি সহ্য করতে না পেরে আপনার কাছে এসেছি। আমাকে বাঁচান।
– আমি কি করে একটি আত্মাকে শাস্তি থেকে বাঁচাবো?
– শুনুন, আমি জীবিত থাকা অবস্থায় অনেক বেঈমানি করেছি। এক মহৎ ব্যক্তিকে সপরিবারে হত্যা করেছি। অনেক নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করেছি। আজ তাই আমার এই অবস্থা। আমাকে বাঁচান।
– কিন্তু আমি কি করে বাঁচাবো?
– আমি এই দেশের মানুষ না। আমাকে আমার দেশে পাঠিয়ে দিন।
– আপনার দেশ কোনটা?
– যেই দেশের সাথে এই দেশের যুদ্ধ হয়েছিল সেটাই আমার দেশ।
– তার কি প্রমাণ আছে?
– প্রমাণ খুঁজলেই পাবেন আর সবচেয়ে বড় প্রমাণ আমার বাবা এবং মা এর কবর ওই দেশেই আছে। আমি ওই দেশের লোক। আমাকে ওই দেশে পাঠিয়ে দিন।
– আশ্চর্য! কি করে তা সম্ভব? আর এখন এই দেশে কি হচ্ছে আপনি কিছু জানেন?
– জানি, সব জানি
– কি জানেন?
– আমি যেই মহৎ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলাম তাঁর বংশধরদের আমার বংশধরেরা অনেকবার হত্যা করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে এখন বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র করছে।
– কি কি ষড়যন্ত্র করছে? কবে থেকে করছে?
– ষড়যন্ত্র অনেক আগে থেকেই চলছে ।
– কিছু রিসেন্ট ষড়যন্ত্রের কথা বলুন।
– একটি সেতুতে দুর্নীতির মিথ্যা অভিযোগ, সেতুতে মাথা লাগবে সহ নানা ধরণের গুজব, ধর্মীয় সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ওই মহৎ ব্যক্তির অবয়ব ভাঙার চেষ্টা……
– কিন্তু একটি গণমাধ্যম……
– জানি জানি, ওই প্রতিবেদনটার ষড়যন্ত্র সুদূর প্রসারিত এবং সুকৌশলে করা হয়েছে,
– কেমন?
– দেখুন ওখানে ওই মহৎ ব্যক্তির পক্ষে প্রতিবেদন দিয়ে প্রথমেই এই দেশের প্রধানকে বোকা বানাতে চেষ্টা করেছে। তারপর একটি বাহিনীর প্রধানকে টারগেট করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
– কিন্তু এটা সুদূর প্রসারিত ষড়যন্ত্র কি করে?
– যেহেতু দেশের প্রধানের পক্ষে অর্থাৎ ওই মহৎ ব্যক্তির পক্ষে কথা বলে একটি বাহিনীর প্রধানকে অপরাধী হিসেবে প্রকাশ করার চেষ্টা- এই কৌশলে দেশের প্রধান এবং ওই বাহিনীর প্রধানের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাত এর সূত্রপাত ঘটানোই এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য।
-কেন এমন কৌশল অবলম্বন করলো?
– রিসেন্টলি পাশের দেশে কি হচ্ছে তা জানেন না?
– তা তো জানি
– ওই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে সুকৌশলে যদি এমন কিছু এদেশে ঘটে কিন্তু এ দেশে সে সম্ভাবনা একেবারেই নেই কারণ ইতোমধ্যে সবাই ওই প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য বুঝতে শুরু করেছে।
– দুইজন মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্ব বাঁধানো তো শয়তানের কাজ।
– ওরা তো মানুষরূপী শয়তান। আমিও তাই ছিলাম। আমার বংশধরেরাও তাই হয়েছে কিন্তু ওরাতো জানে না আমি কি কষ্টে আছি। আমাকে বাঁচান।
– কি করে বাঁচাবো বলুনতো?
– আমার শাস্তি খুব অল্পই কমবে যদি আমার সম্মাননা বাতিল করে কিন্তু আমি এই পুরো শাস্তি থেকে রেহাই পেতে চাই।
– বলুন কি করতে হবে?
– আমার বংশধরদের এই দেশ থেকে বহিষ্কার করুন আর আমার কবর তুলে ওই দেশে নিয়ে গিয়ে আমার মা-বাবার পাশে স্থান্তরিত করুন – এ ছাড়া এ শাস্তি থেকে আমি রেহাই পাবো না।
– কিন্তু আপনার বংশধরদের কি করে দেশ থেকে বহিষ্কার করা যাবে?
– কেন? এক লেখিকাকে বহিষ্কার করা হয় নি?
– সে তো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে
– ভালো করে সংবিধান ঘাটুন। আমার বংশধরদের বহিষ্কার করারও উপায় পেয়ে যাবেন কারণ ওরা অতীতে কি কি করেছে সব আমি জানি। আর আমার এই প্রার্থনা দুটি গ্রহণ করলে সব ষড়যন্ত্র থেমে যাবে এবং ওই গণমাধ্যমও ঠিক হয়ে যাবে।
হঠাৎ কন্ঠটা ভারী ঘড়ঘড় কাঁপা ভয়ার্ত কন্ঠে পরিনত হতে লাগলো।
ডুডুভন ক্রক্ক ওই আত্মাটিকে বললো, তুমি চলে যাও।
আত্মাটি চলে গেলো।
ডুডুভন বললো, নাহিদ সাহেব – ওই আত্মাটার শাস্তি বাড়তে শুরু করেছে তাই চলে যেতে বললাম।
নাহিদ সাহেব বললেন, কিন্তু সে যে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য দুটি প্রার্থনা করে গেলো এখন এগুলো কি করে করা যায়?
– শাস্তি পাচ্ছে পাক না, শাস্তি পাওয়ার কজ করেছে তো শাস্তি পাবে না?
– না, কিন্তু তার আকুতি খুব করুন। তার এই প্রার্থনা দুটি কবুল করতে হবে।
দারুণ একটা লেখা উপহার দিলেন
অসাধারণ এক বোধনের লিখা। আপনার লিখায় এক ধরণের স্বতন্ত্রতা আছে … পড়তে এবং বুঝতে ভালো লাগে। অভিনন্দন কবি এবং কথা শিল্পী মি. ইলহাম।