অন্ধজনে দেহ আলো

অন্ধজনে দেহ আলো
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

দেখিনু সেদিন অফিস যাওয়ার পথে,
ছোট খুকি এক মাগিছে ভিক্ষা বাটি ধরে হস্তেতে।
একটি পয়সা দাও গো বাবু সারাদিন খাইনি কিছু,
শত ছিন্ন তার হাত কাটা ফ্রক লজ্জায় মাথা নীচু।

দুই চক্ষু ভরিয়া আসিল জলে,
এমনি করিয়া ভিক্ষা চায় ওরা সহস্র জনতার কোলাহলে।
রাজপথে কত ছুটিছে বাইক, বাস মোটর চলিছে জোরে,
ট্যাক্সি থেকে নামি মেমসাব তারে ফেলে দিল ধাক্কা মেরে।

মুদ্রা ক’টি তার বাটিতে নাই আর, পথে গড়াগড়ি যায়,
কপাল কাটিয়া, রুধির ঝরিছে, বহিছে অঝোর ধারায়।

ট্যাক্সিতে চড়ি, মেমসাব এবার তার গাড়িতে স্টার্ট দেয়,
রাজপথে পড়ি কাঁদে ছোট খুকি বল কেবা খোঁজ নেয়?
কান্না শুনিয়া আসিল ধাইয়া অন্ধজন এক লাঠি ধরে,
স্বহস্তে ধরিয়া উঠাইল তাহারে কতই না যতন করে।

চক্ষু থাকিতে দেখিতে না পায় কি হবে সে চক্ষু দিয়ে?
অন্ধের কাজ অন্ধে করিল একা, নিজ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে।
চক্ষুস্মানের কাজ করে দৃষ্টিহীনে বিবেকের চক্ষু দিয়ে।
ভগবান তুমি কি সুখ পাও ওদেরই দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে?

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

5 thoughts on “অন্ধজনে দেহ আলো

  1. চক্ষুস্মানের কাজ করে দৃষ্টিহীনে বিবেকের চক্ষু দিয়ে
    ভগবান তুমি কি সুখ পাও ওদেরই দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে?

    কবিতার সারকথায় মন আর্দ্র হয়ে উঠলো। আমরা কেন মানবিক নই !! :(

  2. সমাজে আমাদের বৈষম্য দূর করতে হবে। আমরা সবাই যেন হই পরস্পর পরস্পরের।

  3. আপনার প্রতিটি লেখাই অসাধারণ মানের। শুভেচ্ছা নিন। 

  4. কষ্টকর এক সমাজ ব্যবস্থায় আমাদের বসবাস। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।