জনক দিবসের কবিতা

বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে থেকে পিতৃ দিবস পালন শুরু হয়। আসলে মায়েদের পাশাপাশি বাবারাও যে তাদের সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল – এটা বোঝানোর জন্যই এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর সব বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা প্রকাশের ইচ্ছা থেকে যার শুরু। ধারণা করা হয়, ১৯০৮ সালের ৫ই জুলাই, আমেরিকার পশ্চিম র্জেনিয়ার ফেয়ারমন্টের এক গির্জায় এই দিনটি প্রথম পালিত হয়। আবার, সনোরা স্মার্ট ডড নামের ওয়াশিংটনের এক ভদ্রমহিলার মাথাতেও পিতৃ দিবসের আইডিয়া আসে। যদিও তিনি ১৯০৯ সালে, ভার্জিনিয়ার বাবা দিবসের কথা একেবারেই জানতেন না। ডড এই আইডিয়াটা পান গির্জার এক পুরোহিতের বক্তব্য থেকে, সেই পুরোহিত আবার মা’কে নিয়ে অনেক ভালো ভালো কথা বলছিলেন। তার মনে হয়, তাহলে বাবাদের নিয়েও তো কিছু করা দরকার। ডড আবার তার বাবাকে খুব ভালবাসতেন। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগেই পরের বছর, অর্থ্যাৎ ১৯শে জুন, ১৯১০ সালের থেকে বাবা দিবস পালন করা শুরু করেন।

সন্তানের জন্য বাবার ভালোবাসা অসীম। মুঘল সাম্রাজ্যরের প্রতিষ্ঠাতা সম্রাট বাবর সন্তানের প্রতি বাবার ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছেন। তিনি সন্তান হুমায়ুনের জীবনের বিনিময়ে নিজের জীবন ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি। এমন স্বার্থহীন যার ভালোবাসা, সেই বাবাকে সন্তানের খুশির জন্য জীবনের অনেক কিছুই ত্যাগ করতে হয়। পিতৃ দিবসে সন্তানদের সামনে সুযোগ আসে বাবাকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ধন্যবাদ জানানোর। তাছাড়া পিতৃ দিবস পালনের ফলে সমাজে এবং পরিবারে পিতাদের যে অবদান তা যে সমাজ এবং নিজের সন্তানরা মূল্যায়ন করছে, এ বিষয়টিও বাবাদের বেশ আনন্দ দেয়। তাছাড়া অনেক সন্তানই আছে, যারা পিতা-মাতার দেখাশোনার প্রতি খুব একটা মনোযোগী নয়। মা দিবস বা বাবা দিবস তাদের চোখের সামনের পর্দাটি খুলে ফেলে পিতা-মাতার প্রতি তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাই বলা যায়, পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করতে মা দিবস বা বাবা দিবসের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। মোটকথা আমাদের পরিবার তথা সমাজে পিতার যে গুরুত্ব তা আলাদাভাবে তুলে ধরাই পিতৃ দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য।

বিভিন্ন ভাষায় পিতা-
জার্মান ভাষায় পিতা শব্দটি হচ্ছে “ফ্যাট্যা” আর ড্যানিশ ভাষায় “ফার”। আফ্রিকান ভাষায় ‘ভাদের’ হচ্ছেন পিতা! চীনে ভাষায় চীনারা আবার ‘বাবা’ কেটে ‘বা’ বানিয়ে নিয়েছে! ক্রী (কানাডিয়ান) ভাষায় পিতা হচ্ছেন ‘পাপা’ তেমনি ক্রোয়েশিয়ান এ ‘ওটেক’ ভাগ্যিশ! ক্রোয়েশিয়ায় জন্মাই নি! কারণ ওরা পিতাকে ‘ওটেক’ ওটেক বলে! দাঁড়ান আরো আছে, ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় পিতা ডাক হচ্ছে ‘পাই’। ডাচ ভাষায় পাপা, ভাডের আর পাপাই এই তিনটি হচ্ছে পিতা ডাক। সবচাইতে বেশী প্রতিশব্দ বোধহয় ইংরেজি ভাষাতেই! ইংরেজরা পিতাকে ডাকেন, ফাদার, ড্যাড, ড্যাডি, পপ, পপা বা পাপা! ফিলিপিনো ভাষাও কম যায় না, এই ভাষায় পিতা হচ্ছেন তাতেই, ইতেই, তেয় আর আমা। আমরা কিন্তু পিতাকে আদর করে হিব্রু ভাষাতেও ডাকি! হিব্রু ভাষায় পিতা হচ্ছে ’আব্বাহ্‌’। হিন্দি ভাষার পিতা ডাকটি পিতাজী! আবার ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় অর্থাৎ সেই ‘বাহাসা ইন্দোনেশিয়া’য় যদি পিতা ডাকি তাহলে সেটা হবে- বাপা কিংবা আইয়্যাহ! জাপানিরা তাদের ভাষায় পিতাকে ডাকেন- ওতোসান, পাপা। পুর্ব আফ্রিকায় অবশ্য পিতাকে ‘বাবা’ ডাকা হয়! হাঙ্গেরিয়ান ভাষায় পাপা ছাড়াও পিতা শব্দের অনেকগুলো প্রতিশব্দ আছে, যেমন- আপা, আপু, এদেসাপা। বাংলা ভাষায় বাবা বা আব্বা।

আসুন আজ জনক দিবসে আমরা সকলে শপথ গ্রহণ করি যেন শেষ বয়সে কোন জনকের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে না হয়। তাহলেই সমাজজীবন হবে সুখময়। সংসার হয়ে উঠবে সুখের স্বর্গধাম।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!

জনক দিবসের কবিতা
– লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পরিবার গড়ে পিতা বহু পরিশ্রমে,
জন্মদাতা পিতা তবু কাঁদে বৃদ্ধাশ্রমে।
পাথর দেবতা পূজে কিবা হবে ফল,
জনক দেবতা যদি ফেলে চোখে জল।

পিতারে না চেনে পুত্র যুগের বিচার,
ঘরে ঘরে হেরি কেন হেন অবিচার।
পিতাপুত্রে হানাহানি, বাক্যযুদ্ধ হয়,
পিতা পরাজিত হয়, সন্তানের জয়।

জনক দিবস আজি জানে সর্বজন,
জনকেরে কর পূজা, ধরহ চরণ।
পিতারে সম্মান কর পাবে পূণ্যফল,
লভিবে সম্মান যশ এই ধরাতল।

পিতৃসম নাহি গুরু, কেহ বসুধায়,
লিখেন লক্ষ্মণ কবি তার কবিতায়।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “জনক দিবসের কবিতা

    1. মন্তব্যে মুগ্ধ করলেন প্রিয় কবি বন্ধু।
      পাতায় সুস্বাগতম কবিবর।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু!

  1. পিতারে না চেনে পুত্র যুগের বিচার,
    ঘরে ঘরে হেরি কেন হেন অবিচার।
    পিতাপুত্রে হানাহানি, বাক্যযুদ্ধ হয়,
    পিতা পরাজিত হয়, সন্তানের জয়। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

    1. আপনার মুগ্ধ করা সুন্দর মন্তব্যে বরাবরই অনুপ্রাণিত
      আমার সশ্রদ্ধ ও বিনম্র অভিবাদন গ্রহণ করুন
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      জয়গুরু।

  2. ইতিহাস ঐতিহ্যের পাশাপাশি নিজস্ব ভাব চেতনার বহির্প্রকাশ প্রিয় কবি। 

    1. সুন্দর মন্তব্য হৃদয় স্পর্শ করে কবি দিদিভাই।
      পাশে রাখুন, সাথে থাকুন।
      জয়গুরু!

  3. বাবা বা জনক দিবসের প্রাকঃকথায় আমাদের প্রিয় ব্লগার মুরুব্বী আজাদ ভাইয়ের একটি পোস্টের কথা মনে পড়ে গেলো। কবিতা অংশের জন্য ধন্যবাদ কবি। শুভেচ্ছা। :)

    1. সুন্দর মন্তব্যে বিমুগ্ধ হলাম প্রিয়কবি।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      শুভেচ্ছা অনন্ত। জয়গুরু!

  4. পোস্ট পাঠক নন্দিত হোক কবি ভাণ্ডারী দা। ভালোবাসা। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_heart.gif

    1. সুন্দর মন্তব্যে অনুপ্রাণিত হলাম। মুগ্ধ ও অভিভূত হলাম।
      শুভেচ্ছা সদা-সর্বদা। সাথেই থাকুন।
      জয়গুরু!

  5. আজ জনক দিবসে আমরা সকলে শপথ গ্রহণ করি যেন শেষ বয়সে কোন জনকের স্থান বৃদ্ধাশ্রমে না হয়। তাহলেই সমাজজীবন হবে সুখময়। সংসার হয়ে উঠবে সুখের স্বর্গধাম। জয়গুরু! https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. সুন্দর মন্তব্যে বিমুগ্ধ হলাম কবি বোন আমার।
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
      শুভেচ্ছা অনন্ত। জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।