পালাকীর্তন ও বাউল গান (প্রথম অধ্যায়)

পালাকীর্তন ও বাউল গান।(প্রথম অধ্যায়)

কীর্তনবাংলা সঙ্গীতের অন্যতম আদি ধারা। কীর্তন বলতে সঙ্গীতের একটি সঙ্গীতশৈলীকে বোঝায়। বাংলা ভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত হিসেবে কীর্তনকে ধরা হয়। সাধারণ লোকের পক্ষে অতি সহজে ঈশ্বর সাধনার একটি উপায় হিসেবে এর উদ্ভব। গানের মাধ্যমে ধর্মচর্চার এ ধারা প্রাচীনকাল থেকেই এদেশে চলে আসছে।ঈশ্বরের নাম, গুণ ও লীলা বিষয়ক গানই কীর্তন।

সে ধারাবাহিকতায় বাংলার বৈষ্ণবধর্মজাত সঙ্গীতধারার বিকশিত রূপই কীর্তন। এতে সাধারণত ঈশ্বরের গুণ ও লীলা বর্ণিত হয়। তবে প্রাচীন, মধ্য ও বর্তমান এই তিন যুগেই কীর্তনের প্রচলন ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। ১২ শতকে রচিত ‘গীত গোবিন্দ’ প্রথম কীর্তন গ্রন্থের সন্ধান পাত্তয়া যায়। এরপর যে সব কীর্তন রচয়িতার নাম উল্লেখ করা যায়। তাদের মধ্যে বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের কথা উল্লেখযোগ্য।

কীর্তন দুপ্রকার-

১) নামকীর্তন বা নামসংকীর্তন এবং
২ ) লীলাকীর্তন বা রসকীর্তন।

নামকীর্তন

হরি বা বিষ্ণুকে সম্বোধন করে ‘হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে/ হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে\’ এ ষোল পদবিশিষ্ট কীর্তনই নামকীর্তন। অবশ্য নামকীর্তনের এ বোল ছাড়া আরও বোল আছে। সেগুলিও নামকীর্তন হিসেবেই প্রচলিত।

লীলাকীর্তন

রাধাকৃষ্ণ এবং গোপী-শ্রীকৃষ্ণের কাহিনী অবলম্বনে যে তা লীলাকীর্তন। পরবর্তীকালে গৌরাঙ্গ বা শ্রীচৈতন্যের কাহিনী অবলম্বনেও লীলাকীর্তনের প্রচলন হয়। কয়েকটি প্রধান লীলাকীর্তন হলো গোষ্ঠ, মান, মাথুর, নৌকাবিলাস, নিমাই সন্ন্যাস ইত্যাদি। এগুলি পদাবলি কীর্তন নামেও পরিচিত।

পালা কীর্তন

পালা কীর্তন গুলোতে বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী পালা করে গাওয়া হয় বলে একে পালা কীর্তন বলা হয়। পালা কীর্তন এ গায়ক অথবা গায়িকা গান গেয়ে থাকে এবং সাথে সংগীরা নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজাতে থাকে। পালা কীর্তন এক সময় গ্রাম গঞ্জের অনেক জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ছিল, এখন ও কিছু কিছু অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয়। পালা কীর্তন এ বিভিন্ন ধর্মীয় কাহিনী বর্ণনা করা হয়, পালা কীর্তনকে পালা গান ও বলা হয়ে থাকে। এই গানটি হিন্দু ধর্মেই বেশি জনপ্রিয়। হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী যেমন রামায়ণ , মহাভারত, শ্রীকৃষ্ণের বিভিন্ন কথা বলা হয়ে থাকে।

বাউল গান

একতারা।

বাংলার লোকসঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই তার যন্ত্র। বাউল গানে আলাদা মাত্রা দেয় এই একতারা। অথচ এই একটা তারই কাজ করতে পারে চারটি পৃথক যন্ত্রের। গত ৮ বছর ধরে সেই গবেষণাই করছেন বকখালির বাসিন্দা গৌতম হাজরা। লালন ফকিরের এই গান আজও চিরন্তন। শুধু লালন ফকিরই নন। বাউল সম্রাট পূর্ণদাস বাউল থেকে শুরু করে লক্ষণদাস বাউল কিম্বা কার্তিক দাস বাউলের মত শিল্পীদের কথায় সুর তোলে এই একতারা। কিন্তু জানেন কি যে একতারার একটা তার থেকেই তৈরি হতে পারে চারটে পৃথক যন্ত্রের সুর? বোঝা গেল না তো?

বাউল গান-১

আমার বাউল ঘরে জনম যেন হয়
শিল্পী-গোষ্ঠ গোপাল দাস

আমার বাউল ঘরে
জনম যেন হয় গো বারে বার
আমি চাইনা রে সুখ,
দাও ভরা দুঃখ।।
ওগো অন্তরে আমার;
হয় যেন বারে বার।

আমি ভিক্ষা মাগিয়া দ্বারে দ্বারে।।
পাই যাহা পাই ভালো।
আমি চাইনা ওগো
পূব আকাশে রমণ সুরা জানুক;
আমার একতারা হোক জীবন সাথি
এই দুঃখ পারাবার
হয় যেন বারে বার।

আমার কুঁড়েঘরে দারুন শাওন
বাধে প্রীতির বাসা
তবু এ ঘর স্বর্গ নরক
সুখের সর্বনাশা।
আমার নাইরে বান্ধব
স্বজন সুজন
ডেকে কথা কয় রে
খাই কি না খাই কোন পথে যাই
কেমনে জনম কাটাই রে
আমি দুঃখের মাঝে পেলাম খুঁজে
এই সুখেরই সংসার।
হয় যেন বারে বার।
আমার বাউল ঘরে জনম যেন
হয় গো বারে বার।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

3 thoughts on “পালাকীর্তন ও বাউল গান (প্রথম অধ্যায়)

  1. কীর্তন ও বাউল গান নিয়ে চমৎকার পোস্ট দাদা। সঙ্গীতের আদি ধারাগুলোর সংরক্ষণের সুব্যবস্থা করা জরুরী। আপনার চর্চা তাকে অনেকটা এগিয়ে দিতে সক্ষম ।       

  2. আজই ব্লগে প্রবেশ করলাম। আপনার নতুন ধারাবাহিকটি পড়লাম। চলুক মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

  3. ধারাবাহিকটি নিয়মিত হবে এই প্রত্যাশা করি। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।