পালাকীর্তন ও বাউল গান তৃতীয় অধ্যায়

পালাকীর্তন ও বাউল গান তৃতীয় অধ্যায়

আজকের পালাকীর্তন রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা

রাধা কৃষ্ণ লীলা সম্পর্কে ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণে বর্নিত আছে
ব্রক্ষ্মা বলছেন ” হে বৎস! আমার আজ্ঞানুসারে আমার নিয়োজিত কার্য করিতে উদযুক্ত হও।”

জগদ্বিধাতা ঈশ্বরের বাক্য শ্রবণ করিয়া রাধা কৃষ্ণকে প্রণাম করত: নিজ মন্দিরে গমন করিলেন। ব্রহ্মা প্রস্থান করিলে দেবী রাধিকা সহাস্যবদনে সকটাক্ষ নেত্রে কৃষ্ণের রদনমন্ডল বারংবার দর্শন করত: লজ্জায় মুখ আচ্ছাদন করিলেন। অত্যন্ত কামবানে পীড়িত হওয়াতে রাধিকার সর্বাঙ্গ পুলকিত হইল। তখন তিনি ভক্তিপূর্বক কৃষ্ণকে প্রণাম করত: তাহার শয়নাগারে গমন করিয়া কস্তুরী কুম্কুম মিশ্রিত চন্দন ও অগুরুর পন্ক কৃষ্ণের বক্ষে বিলেপন করিলেন এবং স্বয়ং কপালে তিলক ধারন করিলেন।

তৎপর কৃষ্ণ রাধিকার কর ধারন করিয়া স্বীয় বক্ষে স্থাপন করত: চতুর্বিধ চুম্বনপূর্বক তাহার বস্ত্র শিথিল করিলেন। হে সুমে । রতি যুদ্ধে ক্ষুদ্র ঘন্টিকা সমস্ত বিচ্ছিন্ন হইল, চুম্বনে ওষ্ঠরাগ, আলিঙ্গনে চিত্রিত পত্রাবলী, শৃঙ্গারে করবী ও সিন্দুর তিলক এবং বিপরীত বিহারে অলন্কাঙ্গুর প্রভৃতি দূরীভুত হইল। রাধিকার সরসঙ্গম বশে পুলকিত হইল। তিনি মুর্ছিতা প্রায় হইলেন। তার দিবা-রাত্রি জ্ঞান থাকিল না। কামশাস্ত্র পারদর্শী কৃষ্ণ অঙ্গ-প্রতঙ্গ দ্বারা রাধিকার অঙ্গ-প্রতঙ্গ আলিঙ্গন করত: অষ্টবিধ শৃঙ্গার করিলেন, পুর্নবার সেই বক্রলোচনা রাধিকাকে করিয়া হস্ত ও নখ দ্বারা সর্বাঙ্গ ক্ষত-বিক্ষত করিলেন।

শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক নিষ্ঠুরভাবে শরীর ক্ষত-বিক্ষত হওয়ায় এবং সারা রাতভর যৌন নিপীড়নের কারণে প্রভাতকালে দেখা গেল রাধিকার পরিহিত বস্ত্র এত বেশী রক্ত রঞ্জিত হয়ে পড়েছে যে, লোক লজ্জায় রাধিকা ঘরের বাইরে আসতে পারছেন না। তখন শ্রীকৃষ্ণ দোল পুজার ঘোষনা দিয়ে হোলি খেলার আদেশ দেন। সবাই সবাইকে রঙ দ্বারা রঞ্জিত করতে শুরু করে। তাতে রাধিকার বস্ত্রে রক্তের দাগ রঙের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়। সেই থেকে হোলি খেলার প্রচলন শুরু হয়।

শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধিকার পালাকীর্তন রাসলীলার নেপথ্য কাহিনী

হিন্দু পুরাণে কথিত হয়েছে গোপিনীদের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলার কাহিনি। আপনার কি মনে হয়, এসব গল্পকথা মাত্র? তাহলে জেনে রাখুন, এই ভারতের বুকেই এমন জায়গা রয়েছে যেখানে নাকি আজও রোজ রাত্রে গোপিনীদের সঙ্গে লীলাখেলা করেন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ।

বৃন্দাবনের ‘বাঁকে বিহারী’ কৃষ্ণের একটি পবিত্র মন্দির। মন্দিরটি নিধিবন নামের ঘন অরণ্যে আবৃত। ‘নিধি’ কথার অর্থ সম্পদ, আর ‘বন’ কথার অর্থ অরণ্য। এই অরণ্যের গাছগুলির এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। গাছগুলির কাণ্ডগুলি ফাঁপা, এবং ডালপালাগুলি নীচের দিকে নামানো। ভক্তেরা বলেন, এই গাছগুলি আসলে ছদ্মবেশী গোপিনী। রাত্রিবেলা নাকি এই গোপিনীরা তাঁদের স্বরূপ ধারণ করে শ্রীকৃষ্ণ আর রাধার সঙ্গে রাসলীলা করেন। কৃষ্ণভক্তির টানে ভক্তেরা দূরদুরান্ত থেকে ছুটে আসেন এই মন্দিরে। তাঁদের কন্ঠ নিঃসৃত কৃষ্ণনামকীর্তন ও মন্ত্রে গুঞ্জরিত হতে থাকে বনভূমি ও মন্দিরপ্রাঙ্গন। মন্দির চত্ত্বরে একটি কুয়ো রয়েছে। কথিত আছে, কৃষ্ণের সঙ্গে রাসলীলা চলাকালীন রাধা তৃষ্ণার্ত বোধ করলে কৃষ্ণ তাঁর বাঁশি দিয়ে এই কুয়ো তৈরি করে দেন, এবং রাধা তৃষ্ণা নিবারণ করেন সেই কুয়োর জল খেয়ে। মন্দিরের ভিতরে রাধা-কৃষ্ণের অসামান্য কারুকার্যমণ্ডিত একটি মূর্তি রয়েছে। এই বিগ্রহের সৌন্দর্যও আকর্ষণ করে বহু ভক্তকে।

সন্ধ্যারতির পর এই মন্দিরের সমস্ত জানলা-দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। সারারাত এগুলো বন্ধই রাখা হয়। রাত্রে নাকি এই বনভূমিতে অবতীর্ণ হন স্বয়ং কৃষ্ণ। তিনি গোপিনীদের সঙ্গে মহা রাসলীলায় মত্ত হন। কৃ্ষ্ণকে স্বাগত জানানোর জন্য বনভূমি আলোকিত হয়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে অনেকেই দাবি করেন, তাঁরা রাত্রে এই বনভূমিতে নূপুরের শব্দ শুনেছেন। কিন্তু স্বচক্ষে কি কেউ দেখেছেন রাধাকৃষ্ণের সেই লীলা? না, সেটা সম্ভব নয়। কারণ মন্দির কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী সূ্র্যাস্তের পর আর কাউকে এই মন্দির চত্বরে থাকতে দেওয়া হয় না। কেউ কেউ নাকি সেই নির্দেশ অমান্য করেই মহা রাসলীলা প্রত্যক্ষ করবেন বলে লুকিয়ে রাত্রে থেকে গিয়েছিলেন এই মন্দিরে। পরদিন সকালে হয় সেইসব মানুষকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে, অথবা তারা সম্পূর্ণ উন্মাদ হয়ে গিয়েছেন।

সন্ধ্যার পূজার পর মন্দিরের বিগ্রহের সামনে কিছু লাড্ডু, চুড়ি, শাড়ি বা পান পাতা রেখে দেওয়া হয়। তারপর বন্ধ করে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। পরদিন সকালে দরজা খুলে দেখা যায় সমস্ত উপকরণ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এমনকী পানের পাতা ও লাড্ডুও পড়ে রয়েছে অর্ধভুক্ত অবস্থায়। ভক্তেরা বিশ্বাস করেন, রাধা-কৃষ্ণই লীলার শেষে এই মন্দিরে আসেন বিশ্রামের জন্য, এবং তাঁরাই সেই সময় ওই পান ও লাড্ডু খেয়ে ক্ষুধা নিবৃত্তি করেন।

রহস্যময় নিধিবন

ভক্তেরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের ভক্তি আর ভালবাসার টানেই কৃষ্ণ এবং রাধা বাধ্য হন রোজ রাতে এই বনভূমে ফিরে আসতে। বিজ্ঞানীরা বিষয়টিকে যুক্তিবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাঁরাও স্বীকার করতে বাধ্য হন যে, নিধিবনে রাত্রিবেলা এমন কিছু ঘটে, বিজ্ঞান যার ব্যাখ্যা দিতে অক্ষম। সবমিলিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বে হিন্দু ভক্তদের মনে এক বিশেষ স্থান করে নিয়েছে বৃন্দাবনের এই মন্দির।

জানেন কি? আজও এই বনে রাধাকৃষ্ণের রাসলীলা হয়

আমাদের দেশে অধিকাংশ স্থানই তার অতীত ইতিহাস বর্ণনা করে। অনেক স্থান আবার ধর্মীয় ঘটনা, ইতিহাস-ঐতিহ্যের জানান দেয়। এমনই একটি স্থান হচ্ছে বৃন্দাবনের নিকট অবস্থিত নিধি বন বা নিধু বন। এই বনকে মধুবনও বলা হয়। এই বনকে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পবিত্র ও ধর্মীয়ভাবে রহস্যজনক ভেবে থাকেন।

নিধি বন কেন রহস্যজনক বা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিকট তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র স্থান আজকের লেখায় সে সম্পর্কে কিছু তথ্য জানানোর চেষ্টা করব।

নিধি বনকে ‘কৃষ্ণের ভূমি’ বলা হয়। উপাসকগণ ও এলাকাবাসী বিশ্বাস করেন, এই বনে প্রতিরাতে শ্রী কৃষ্ণ ভ্রমণ করতে আসেন। এছাড়াও প্রতিরাতে তিনি গোপীর সাথে রাসলীলা করেন। এ কারণেই প্রতিদিন সন্ধ্যা সাতটায় আরতী অনুষ্ঠানের পর নিধি বনে প্রবেশ দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর সকালে দরজা খোলা হয়। এ সময় বনের ভিতরে কেউ থাকতে পারেন না। শুধু তাই নয়, সেখানকার পশুপাখির সংখ্যাও রাতের বেলা অনেক কমে যায়।

নিধি বনের ভেতর একটা প্রাসাদ রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রঙ মহল’। সেখানে চন্দন কাঠের তৈরি একটি বিছানা রয়েছে। বিছানাটি প্রতিরাতে কৃষ্ণের জন্য সাঁজিয়ে রাখা হয়। এছাড়াও মহলের ভেতর পানি ভর্তি পাত্র, নিমের দাঁতন ও পান সাঁজিয়ে রাখা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, ভোর পাঁচটায় যখন রঙ মহলের দরজা খোলা হয় তখন বিছানার অবস্থা এমন দেখায় যেন রাতে কেউ সেখানে ঘুমিয়ে ছিল। এছাড়াও পানির পাত্রের পানি থাকে না কিংবা অর্ধেক খালি হয়ে থাকে। পাশাপাশি নিমের দাঁতন ব্যবহৃত হয় ও পান খেয়ে যায়।

নিধি বনে ঘটা রাসলীলা দেখার জন্য কেউ যদি বনের ভিতর লুকিয়ে থাকেন তবে তিনি অন্ধ, বোকা, বধির ও পাগল হয়ে যান। এজন্য রাত ৮টা বাজতেই বনের যাবতীয় পশুপাখি, বানর, ভক্ত, পূজারী সকলেই ঐ স্থান ত্যাগ করে থাকে। পশুপাখি নিধি বন ছেড়ে পার্শ্ববর্তী বনে চলে যায়। স্থানীয় লোকেরা বলেন, এখানে কেউ রাতের বেলা থাকলে তার সাংসারিক বন্ধন ছিন্ন হয়।

প্রায় আড়াই একর এলাকার জুড়ে নিধি বনের গাছপালা বিস্তৃত রয়েছে। সবুজ এই বনের কোনো গাছই সোজা নয়। প্যাঁচানো ছোটখাট গাছের প্রায় প্রতিটির কাণ্ডই নিচের দিকে হেলে রয়েছে। সেখানকার তুলসি গাছগুলোও জোড়ায় জোড়ায় রয়েছে। কথিত আছে রাতের বেলা গাছগুলো গোপীর রূপ ধারণ করে ও কৃষ্ণের সাথে রাসলীলায় অংশ নেয়। ভোর হতে না হতেই সেগুলো পুনরায় তুলসি গাছে রূপান্তরিত হয়। লোকমুখে প্রচলিত আছে, তুলসি গাছের কোনো অংশই কেউ নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারেন না। যদি কেউ নিয়ে যান তবে তাকে মারাত্মক খারাপ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

নিধি বনের আশেপাশে কিন্তু মানব বসতি রয়েছে। রয়েছে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়িও। এই সাধারণ লোকজন দিনের বেলায় দরজা-জানালা খোলা রেখে বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারেন। কিন্তু আরতি অনুষ্ঠানের পরপরই অর্থাত্‍ রাত ৮ টার পরপর দরজা-জানালা খোলার সাহস করেন না। যদি কেউ খোলা রাখেন বা রাতের বেলায় বনের দিকে তাকান তবে তিনিও অন্ধ ও পাগল হয়ে যাবেন।

ভারতের মথুরা জেলার বৃন্দাবন সত্যিই এক রহস্যময় স্থান। এই নিধি বনে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটকের সমাগম ঘটে। বনের রহস্য সেখানে আগত সকল পর্যটককে ভাবনার জগতে ফেলে দেয়। তবে এই বনের রহস্য উন্মোচন করার সাহসিকতা দেখানোর মতো কাউকে পাওয়া যায় না। আবার অনেকেই মনে করেন এই রহস্য উন্মোচন করা সম্ভবও নয়।

তবে নিধি বন ও রঙ মহল সম্পর্কে এখনও অনেককিছু অনুসন্ধান করার বাকি রয়েছে। সাহস করে কেউ অনুসন্ধান করতে চাইলে যেতে পারেন নিধি বনে। যাবে নাকি কেউ অনুসন্ধান করতে?

বাউল গানের উত্সব ও মানুষের মিলনমেলা

বিগত কয়েক বছর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বাউল উৎসবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রথম অবস্থায় জেলার দুই এক স্থানে এই বাউল উৎসব শুরু হলেও বর্তমানে তা জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে সারাবছর ধরেই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে চলে বাউল গানের অনুষ্ঠান। কোথাও দুই দিন, কোথাও তিন দিন কোথাও বা আবার এক সপ্তাহ অর্থাৎ ৭ দিন ধরে চলে বাউল সংগীতের আসর। আর এই উৎসবে শামিল ৮ থেকে ৮০ বছরের মানুষ সকলেই। কিন্তু বর্তমানে কেন এই বাউলের জনপ্রিয়তা এই নিয়ে আজকের প্রতিবেদন। প্রায় দুই দশক আগে পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে কোনো ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে একদিন বা দুই দিনের জন্য সেখানে বাউল গানের আসর বসত। তবে পরবর্তীকালে পুরাতন মালদা ব্লকের সাহাপুর গ্রামের অধিবাসীরা দোলপূর্ণিমা উপলক্ষ্যে প্রথম ৭ দিনের বাউল উৎসবের সূচনা করেন। প্রথমদিকে তা ছিল নিতান্ত সাদামাটা। পরবর্তীকালে ধীরে ধীরে উত্তরোত্তর এর বৃদ্ধি পেতে থাকে।

শুধু তাই নয় এই বাউল মেলার সংগঠকরা তাদের অনুষ্ঠানে অনেক বেতার ও দূরদর্শনখ্যাত বাউল শিল্পীর আমন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের বাউল উৎসবের কৌলীন্য বৃদ্ধি করাতে সক্ষম হয়েছেন। খাতনামা বাউল শিল্পীদের মধ্যে পূর্ণদাস বাউল, সমীরণ দাস বাউল, সনজিৎ দাস, এছাড়া বেশ কিছু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী নিলুফার লিলি, এস বিজয় এই উৎসবে সংগীত পরিবেশন করেছেন।

প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে যে, মালদা জেলার বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে বাউল গান যথেষ্ট জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সার্ক কালচারাল সোসাইটির নির্বাহী সভাপতি এটিএম মমতাজুল করিম বলেন যে, মালদা জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষই বাংলাদেশ থেকে রাজনৈতিক কারণে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, যারা বর্তমানে ভারতের নাগরিক। এদের জীবনযাত্রা খুবই সাধারণ ও তারা ধর্মভীরু। সামাজিক পেশাগত দিক থেকে এরা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কিত বাউল, ভাটিয়ালি, সারিগানের গুণমুগ্ধ শ্রোতাও বটে। কারণ বাউল, ভাটিয়ালি ইত্যাদি গানগুলি বাংলার সাধারণ মানুষের সমাজ ও জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই সকল অঞ্চলে বাউল গানের জনপ্রিয়তা যথেষ্ট। তিনি আরও বলেন যে, মূলত হিন্দুদের কোনো ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলগুলিতে বাউল গান ও উৎসব চলে। কিন্তু বর্তমানে এই উৎসবে মুসলিম শিল্পিরাও জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ না করে এই উৎসবে শামিল হয়ে সুফি গান ও লোকগীতি পরিবেশন করেন। যার মূল অর্থই মানবজীবনের গান।

প্রায় একই বক্তব্য জেলার বেশ কয়েকটি বাউল গানের উদ্যোক্তাদের। তাদের বক্তব্য যে, স্থানীয় শ্রমজীবি মানুষদের আনন্দদানের অন্যতম হাতিয়ার হল এই বাউল গান, কারণ এই গানের ভাষা ও অর্থ সাধারণ মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। প্রত্যেক উদ্যোক্তাদের দাবি, প্রত্যেক বছর তাদের বাউল উৎসবে জনসমাগম ক্রমশ বেড়েই চলেছে। শুধু সাধারণ মানুষ নয় জেলার প্রতিষ্ঠিত বহু ব্যক্তিত্ব এই বাউল গানগুলির পৃষ্ঠপোষক ও শ্রোতা এবং তাঁরা আর্থিকভাবে এই বাউল উৎসবের জন্য সহায়তা করেন বলে দাবি করেছেন জেলার বিভিন্ন বাউল উৎসবের উদ্যোক্তা’রা।

এখন প্রশ্ন হল এই উৎসবের জন্য যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয় তার উৎস কী? উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, বাউল রীতি অনুযায়ী উৎসবে আগত দর্শনাথী ও শ্রোতারা বাউলদের ভিক্ষের ঝুলিতে অর্থ ও খাদ্যসামগ্রী দান করে থাকেন এছাড়া জেলার বাইরের বহু মানুষ আর্থিক সহায়তা করে থাকেন। এর জন্য তাঁরা জেলাবাসীর সহযোগিতা প্রার্থনা করে থাকেন এবং প্রতিবছর এই উৎসব সফল করার জন্য তাঁরা সকলকে ধন্যবাদ জানান।

সর্বশেষে বলা যেতে, পারে যে বিভিন্ন বিনোদনমূলক চ্যানেলগুলিতে যে আধুনিক গানের ব্যাপক প্রচার বর্তমানে বিরাজমান তা সত্ত্বেও মালদা জেলায় বাউল গানের শ্রোতার সংখ্যা ক্রমশ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার বিভিন্ন লোকশিল্পী ও বাউলশিল্পীরা একযোগে স্বীকার করেন যে, বর্তমানে আধুনিক গানের যারা শ্রোতা তারাই আবার বাউল গানের শ্রোতা। বিশেষ করে যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে বাউল গানের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে তাঁদের দাবি। আর এই বাউল উৎসবকে কেন্দ্র করে সংগঠিত হছে মানুষের মিলনমেলা।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

2 thoughts on “পালাকীর্তন ও বাউল গান তৃতীয় অধ্যায়

  1. সংগঠিত হোক মানুষের মিলনমেলা। আলোচনার জন্য অভিনন্দন মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. নিবন্ধটি পড়লাম কবি ভাণ্ডারী। বোঝার চেষ্টা করছি। আপনাকে ধন্যবাদ। 

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।