গ্রামবাংলার সংস্কৃতি ও লোকগান
ষষ্ঠ পর্ব- ঘাটুগান-৬
গীতরচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
বাংলার কৃষক ফসল তোলার সময় এক গোছা ধান মাঠ থেকে এনে ঘরের চালে ঝুলিয়ে রাখেন৷ একে বলা হয় ‘লক্ষ্মীর ছড়া’৷ বিশ্বের নানা দেশের কৃষকসমাজেও একই প্রথা চালু আছে৷ কোথাও তা ‘শস্যরাণী’, কোথাও ‘শস্যপুতুল’, কোথাও বা ‘শস্যমাতা’ নামে অভিহিত৷ তাই লোকসংস্কৃতির একটা বিশ্বজনীন ও সর্বকালীন রূপ আছে৷
সাধারণের জীবন ধর্মই হলো লোকসংস্কৃতি৷ গ্রামে গ্রামে কৃষি ও শ্রমজীবী মানুষকে কেন্দ্র করেই লোকসংস্কৃতির উদ্ভব৷ গ্রামীণ জীবনের একটি যাত্রাপালা সহজ এবং সাধারণ জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ এটারই পোশাকি রূপ হলো নাটক৷ তাই সহজেই বলা যায় আধুনিক সংস্কৃতি তথা সাহিত্যের ভিত্তিই হলো লোকসংস্কৃতি বা লোকসাহিত্য৷”
ষোড়শ শতকের শেষের দিকে ঘাটু গানের প্রচলন হয় বলে মনে করা হয়। অধিকাংশ গবেষকের ধারণা, কৃষ্ণ প্রেম-মগ্ন কোন এক ভক্ত রাধা সেজে কৃষ্ণের অপেক্ষায় ছিলো, তখন তার কিছু ভক্ত গড়ে ওঠে; তখন এই ভক্তদের মধ্য হতে ছেলেশিশুদের রাধার সখী সাজিয়ে নেচে নেচে বিরহ সংগীত পরিবেশন করা হয় এবং এভাবেই প্রচলন ঘটে ঘাটু গানের।
ঘাট শব্দটি থেকে ‘ঘাটু’ শব্দটি এসেছে বলে মনে করা হয়; কারণ গান পরিবেশন ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে পরিবেশন করা হতো। একে অনেকে ‘ঘাটের গান’-ও বলে।
ঘাটুগান:
ঘাট থেকে ঘাটু। বর্ষাকালে নৌকার উপর বালিকা বা বালিকাবেশী বালকের নৃত্যকে কেন্দ্র করে এই গান গাওয়া হয়।
এই গানের বিশেষত্ব
• বালকদের পরিবেশনা: বালিকাবেশে সুদর্শনা কিশোর বালক নৃত্য করে ঘাটু গান পরিবেশন করে।
• বংশ পরস্পরার পরিবেশক; এই গানের শিল্পীরা বংশ-পরম্পরায় ঘাটু গান গেয়ে থাকে।
• বর্ষাকালীন পরিবেশনা; এই গান বর্ষাকালে পরিবেশন করা হয়।
• নৌকা সংশ্লিষ্ট পরিবেশনা; এই গানের আসর নৌকায় বসতো।
ঘেটুপুত্র কমলা
উপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ কর্তৃক রচিত উপন্যাস ঘেটুপুত্র কমলা। এ উপন্যাসটিকে কেন্দ্র করে উপন্যাসিক নিজেই একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন যার কেন্দ্রীয় চরিত্র একজন ঘাটুছেলে। যার নাম কমলা। অবশেষে জমিদারের যৌনসঙ্গী হওয়ায় তারই স্ত্রীর ঈর্ষায় প্রাণ হারায় কিশোর কমলা।
জনপ্রিয় ঘাটু গান
গীতরচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আমার মনের বেদনা
সে বিনে কেউ জানে না
কালা যখন বাঁজায় বাঁশি
তখন আমি রান্তে বসি
বাঁশির সুরে মন উদাসী
ঘরে থাকতে পারি না
আমার মনের বেদনা
সে বিনে কেউ জানে না।
প্রচলিত ঘাটুগান
গীতরচনা- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
সুর –অপ্রচলিত।
প্রথমজন:
ঘাটু ঘাটু নাড়ি,
একপাই চাল কাঁড়ি।
চাল কাঁইড়তে হলো বেলা,
হয়ে গেলো কত ঝামেলা।
আয় রে আয় ঘাটু,
দেবো তো লাট্টু।
ধোপা ঘাটের জল চেয়ে।
ঘাটু পড়ে আছাড় খেয়ে।
অন্যান্যরা: বোল রাম গাইবে
[সারি গান]
রাধাবেশী কৃষ্ণরা নৃত্য করে। সবাই জয়ধ্বনি ও বাহবা দেয়। পরে বাঁশি ও খঞ্জনি সুরের মূর্ছনায় মধুর স্বরে রাধাবেশী বালকদল গেয়ে ওঠে। পরে গীতান্তে সকলেই প্রস্থান করে।
যথেষ্ঠ তথ্য সন্নিবেশ করায় অসাধারণ হয়েছে পোস্ট খানা। ভালোবাসা।
ধন্যবাদ প্রিয় কবিবর। আপনার সুন্দর মন্তব্যে আমি অনুপ্রেরণা পাই।
সাথে থাকবেন প্রতিনিয়ত এটা প্রত্যাশা রাখি।
জয়গুরু!
খুব ভালো হয়েছে পোস্ট। যে বিষয় গুলোন জানতাম না সেটাও জানা হলো। আপনাকে ধন্যবাদ।
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শারদীয়া শুভেচ্ছা গ্রহণ করুণ।
সাথে থাকুন, পাশে রাখুন।
জয়গুরু!
আপনাকে আমার ভীষণ পরিশ্রমী এবং সিরিয়াস ঘরানার অনুসন্ধানী মনে হয়। অসাধারণ এই পোস্টের জন্য পাঁচটি তারকা রেটিং করছি। অভিনন্দন।
আপনার সুন্দর মন্তব্যে সতত অনুপ্রেরণা পাই।
নতুন করে আরো সুন্দর লেখার অনুপ্রেরণা পেলাম।
সাথে থাকবেন- এটা প্রত্যাশা রাখি।
জয়গুরু!
ঘাটুগান এর ইতিবৃত্ত জানলাম প্রিয় কবি দা। সুন্দর।
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। শারদীয়া শুভেচ্ছা গ্রহণ করুণ।
সাথে থাকবেন- এটা প্রত্যাশা রাখি।
জয়গুরু!
ঘাট শব্দটি থেকে ‘ঘাটু’ শব্দটি এসেছে বলে মনে করা হয়; কারণ গান পরিবেশন ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে পরিবেশন করা হতো। একে অনেকে ‘ঘাটের গান’-ও বলে।
ঘেটুপুত্র কমলা চলচ্চিত্রের উদাহরণ টেনেছেন। আলোচনার প্রেক্ষিতে আপনি যথেষ্ঠ তথ্যের সমাহার ঘটিয়েছেন মি. ভাণ্ডারী। গুড জব।
সুন্দর হৃদয়গ্রাহী মন্তব্যে পুলক জাগে প্রাণে।
নতুন লেখার অনুপ্রেরণা দিলেন।
প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই।
জয়গুরু!