শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন অষ্টম পর্ব- আগমনী কাব্য-৮

শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
অষ্টম পর্ব- আগমনী কাব্য-৮
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বেশির ভাগ রচনায় রয়েছে প্রকৃতির জয়গান। তিনি পদ্মায় নৌকা ভ্রমণকালে শরতের ময়ূরকণ্ঠী নীল নির্মল আকাশে শিমুল তুলার মতো শুভ্রমেঘেদের দল বেঁধে ছুটে বেড়ানো দেখে লিখেছিলেন—
“অমল ধবল পালে লেগেছে মন্দ মধুর হাওয়া/দেখি নাই কভু দেখি নাই এমন তরনী বাওয়া I”

শরৎ বন্দনায় এগিয়ে রয়েছেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তার অসংখ্য গান ও কবিতায় শরতে বাংলার প্রকৃতির নিখুঁত আল্পনা এঁকেছেন।তার ‘শিউলি ফুলের মালা দোলে শারদ রাতের বুকে ঐ’, ‘এসো শারদ প্রাতের পথিক ’সহ অনেক গানই শরৎ-প্রকৃতির লাবণ্যময় রূপ নিয়ে হাজির রয়েছে।শরতের অসম্ভব চিত্ররূপময়তা ফুটে উঠেছে এ সব রচনায়:

“এসো শারদ প্রাতের পথিক এসো শিউলি বিছানো পথে
এসো ধুইয়া চরণ শিশিরে এসো অরুণ-কিরণ রথে।
দলি শাপলা শালুক শত দল এসো রাঙায়ে তোমার পদতল
নীল লাল ঝরায়ে ঢলঢল এসো অরণ্য পর্বতেi”

বাঙলা সাহিত্য জগতে মহাকবি কালিদাস ‘মেঘদূত’ কাব্যের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন Iমহাকবি কালিদাস শরৎ বন্দনায় ও ছিলেন অগ্রবর্তী।

তিনি বলেন-“প্রিয়তম আমার, ঐ চেয়ে দেখ, নব বধূর ন্যায় সুসজ্জিত শরৎ কাল সমাগত।’ কবি ‘ঋতুসংহার’ কাব্যে শরৎ কাল বিষয়ে লিখেছেন—‘কাশ ফুলের মতো যার পরিধান, প্রফুল্ল পদ্মের মতো যার মুখ, উন্মত্ত হাঁসের ডাকের মতো রমণীয় যার নূপুরের শব্দ, পাকা শালি ধানের মতো সুন্দর যার ক্ষীণ দেহলতা, অপরূপ যার আকৃতি সেই নব বধূর মতো শরৎকাল আসে I” কবি কল্পনায় শরতের সাথে প্রকৃতি ও নারীর এই উপমা দেখে বিস্ময়াভিভূত না হয়ে উপায় নেই।

শরতের আরেকটি উল্লেখ যোগ্য দিক হলো—এ সময় মাঠ জুড়ে থাকে সবুজ ধানের সমারোহ। ধানের কচিপাতায় জমা হওয়া শিশিরের ওপর প্রভাতের তরুণ আলো মুক্তার মতো দ্যুতি ছড়ায়। আমাদের দেশের কৃষকরা নবান্নের আশায় দিন গোনে। আর বাঙালির সার্বজনীন প্রাণের উৎসব, হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দূর্গাউৎসবের কথা বলাই বাহুল্য। শরৎকাল শারদীয় আরাধনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের যেমন উৎসব মুখর করে, তেমনি বিজয়ার বেদনায়ও করে তোলে ব্যথিত। শরৎ বাঙলার প্রকৃতিতে আসে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে, নানা মাত্রিক আনন্দের বারতা নিয়ে।

কবি বিনয় মজুমদার শরতের একটি চিত্র এঁকেছেন—
“শরতের দ্বিপ্রহরে সুধীর সমীর-পরে জল-ঝরা শাদা শাদা মেঘ উড়ে যায় ;
ভাবি,এক দৃষ্টে চেয়ে, যদি ঊর্ধ্ব পথ বেয়ে শুভ্র অনাসক্ত প্রাণ অভ্র ভেদি ধায়!”
তবে শরৎকে কবি গুরু বরাবরই দেখেছেন শান্তি, মঙ্গল ও সমৃদ্ধির ঋতু হিসেবে।
তিনি বলেছেন—
‘আমরা বেঁধেছি কাশের গুচ্ছ শেফালী ফুলের মালা
নবীন ধানের মঞ্জুরি দিয়ে সাজিয়ে এনেছি ডালা
এসো হে শারদ লক্ষ্মী তোমার শুভ্র মেঘের রথে
এসো চির নির্মল নীল পথে…’

পরিশেষে বলা যায়, শরত প্রকৃতিকে অপরূপ রূপে সাজিয়ে যায় যার আবেশে অতি সাধারন মানুষ ও ভাবাবেগে আপ্লুত হয়। শরত অবসাদগ্রস্ত মনেও নতুন প্রেরণার সঞ্চার করে।তাই তো আমরা প্রকৃতিতে দেখি, এই ঋতুতে কি অপূর্ব রঙের খেলা, কি অপরূপ রঙিন ভুবন সাজায় প্রকৃতি। শরতে প্রাণবন্ত রূপ নিয়ে হেসে ওঠে গ্রাম বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত প্রকৃতি।

শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন
অষ্টম পর্ব- আগমনী কাব্য-৮
কবি-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

শরতের আগমন কাঁপে শিউলির বন
কাননে কুসুম কলি ফুটে,
সুনীল শারদাকাশে শুভ্র মেঘপুঞ্জ ভাসে
পূরবে অরুণ রবি উঠে।

ভরা দিঘি কাল জলে মরাল-মরালী খেলে
সারাদিন দিতেছে সাঁতার,
কাজল দিঘির জল ফুটে কুমুদ কমল।
পানকৌড়ি ডুবে বার বার।

শারদীয়া দুর্গাপূজা আসেন মা দশভূজা
দিকে দিকে আগমনী গান,
ঢাকীরা বাজায় ঢাক চতুর্দিকে হাঁকডাক
পুলকিত সবাকার প্রাণ।

মন্দিরে কাঁসর বাজে আসেন মা নবসাজে
দিকেদিকে তারই আহ্বান,
শরতের দিবসেতে প্রাণ তাই উঠে মেতে
ওঠে বেজে আগমনী গান।

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

12 thoughts on “শারদ অর্ঘ- ১৪২৬ কবিতা সংকলন অষ্টম পর্ব- আগমনী কাব্য-৮

  1. শরতের আগমন কাঁপে শিউলির বন
    কাননে কুসুম কলি ফুটে,
    সুনীল শারদাকাশে শুভ্র মেঘপুঞ্জ ভাসে
    পূরবে অরুণ রবি উঠে।

    শরতের বন্দনা অসাধারণ হয়েছে কবি মি. ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Yes.gif.gif

    1. আপনার সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম
      সাথে থাকুন, পাশে রাখুন শারদীয়া অভিনন্দন রইল
      জয়গুরু!

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম সাথে থাকবেন।
      শারদীয়া অভিনন্দন
      জয়গুরু!

  2. শারদীয়া দুর্গাপূজা আসেন মা দশভূজা
    দিকে দিকে আগমনী গান,
    ঢাকীরা বাজায় ঢাক চতুর্দিকে হাঁকডাক
    পুলকিত সবাকার প্রাণ।

    মায়ের আগমনী বার্তায় আপনাকে শারদীয়া শুভেচ্ছা। 

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম সাথে থাকবেন।
      শারদীয়া অভিনন্দন প্ৰিয় কবিবৰ।
      জয়গুরু!

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম সাথে থাকবেন প্ৰিয় কবিবৰ।
      শারদীয়া অভিনন্দন। জয়গুরু!

    1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
      শারদীয়া অভিনন্দন প্ৰিয় কবি।
      জয়গুরু!

      1. সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সাথে থাকবেন।
        শারদীয়া অভিনন্দন রইল প্ৰিয় কবি।
        জয়গুরু!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।