পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান দ্বিতীয় পর্ব

পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান
দ্বিতীয় পর্ব।
তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা আর
সম্পাদকীয় কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম রাঢ়ের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ছাড়াও বিহারের ধানবাদ, সিংভূম এই উত্সবের ব্যাপ্তি হলেও উৎসবের প্রাণকেন্দ্র হল পুরুলিয়া। তুষু, টুসু, তোষলা, তোষালি, মকর ইত্যাদি নানা নামে এর পরিচয়। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে উৎসবের উদ্বোধন এবং এক মাস পরে পৌষ সংক্রান্তিতে তার সমাপন।

স্থাপন,পালন, জাগরণ ও বিসর্জন। উত্সবের সমগ্র বিস্তারটির চারটি পর্ব। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে বাড়ির আঙিনা বা অন্য কোনও উপযুক্ত স্থানে আলপনা এঁকে সেখানে টুসুকে স্থাপন করা হয়। পৌষ মাসের প্রতিদিন সেখানে প্রদীপ দেওয়া হয়। টুসুর ঘুম ভাঙিয়ে চিঁড়ে, মুড়ি, গুড়, মণ্ডা ইত্যাদি উৎসর্গ করা হয়। অনেক রাত ধরে চলে মেয়ে-বউদের গান। তার পরদিন সন্ধ্যা টুসুকে ঘুম পাড়ানো হয়। এটা হল পালন পর্ব। পৌষ-সংক্রান্তির আগের রাত হল জাগরণের রাত। রাত ধরে গানে গানে হয় পুজোর অনুষ্ঠান। পৌষ-সংক্রান্তির দিন টুসুর বিসর্জন। এবং পরের দিন তারা নতুন কৃষিবর্ষকে বরন করে।

পুজোর উপচারও সরল। পোড়া মাটির সরার চারপাশে জ্বলে মাটির প্রদীপ। পিটুলি গোলা দিয়ে সরার গায়ে আঁকা হয় নানা চিত্র। সরার ভেতরে থাকে নতুন ধান, তুষ মেশানো নাড়ু, গোবরের দলা।সরা সাজানো হয় ফুল, ফুলের মালা, কড়ি, কুঁচ, সরষে ইত্যাদি দিয়ে। সরার বদলে কেউ কেউ ঘটও ব্যবহার করে। কেউ আবার সরার ওপরে ঘট বসায়। এই-ই হল টুসু। আজকাল মূর্তি গড়েও পুজো করছে অনেকে যা কুড়মালী সংস্কৃতি বিরুদ্ধ। ছোট হলুদ রঙের মূর্তি, পরনে লাল বাঃ নীল শাড়ি। মাথার পেছনে জ্যোতির্বলয়। বিসর্জনের দিন চোড়লের ভেতরে সরা বসিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নদীতে বা বাঁধে।

চোড়ল বা চৌড়োল বা চৌডোল অর্থাত চতুর্দোলা টুসু পুজোর এক অপরিহার্য অঙ্গ। বাঁশের বাখারি বা চেলা কাঠ আর গাছের সরু ডাল দিয়ে তৈরি খাঁচার ওপর রঙিন কাগজ মুড়ে নানা নকশা আর কাগজের ফুলে-মালায় সাজিয়ে তৈরি করা হয় এক চমত্কার চারপায়া রথ।

পৌষ-সংক্রান্তির কয়েক দিন আগের থেকেই চোড়ল বিক্রি শুরু হয়। টুসু পুজোর সবচেয়ে বর্ণাঢ্য অংশ বিসর্জনের দিন সকালে চোড়ল নিয়ে শোভাযাত্রা। টাঁড়, ডহি-ডুংরি পেরিয়ে, পায়ের-পাতা-ডোবা ধুলো বাতাসে উড়িয়ে, উঁচু-নিচু আলের পথ ভেঙে লাল-নীল-সবুজ-হলুদ শাড়ি-জামা পরা মেয়েদের চোড়ল মাথায় নিয়ে গান গাইতে গাইতে নদী বা বাঁধের দিকে শোভাযাত্রা এক অনুপম চিত্তহারী দৃশ্য রচনা করে। এক দলের সঙ্গে আরেক দলের দেখা হলে গান আরও উচ্চগ্রামে ওঠে এবং গানের লড়াই শুরু হয়ে যায়। দুই টুসুতে সই পাতানো হয়। আবার কার টুসু কত গুণের তাই নিয়ে বিবাদও হয়। সবই গানে গানে। বিসর্জন ঘাটের পথে শোভাযাত্রা করে গানে গানে এগিয়ে যায় সবাই। ঘরের মেয়েকে বিদায় জানানোর পালা, শোকবিহ্বল হয়ে পড়ে গ্রাম্য নারীরা। চোখের জলে আত্মমর্যাদার প্রতীক নয়ণের মনি টুসুকে বিদায় জানায় ভূম। গানের ভাষাতেই সেই দুঃখ ফুটে ওঠে।

টুসুর গান-২ সুর- প্রচলিত

” আমার টুসু ধনে
বিদায় দিব কেমনে
মাসাবধি টুসুধন কে
পুজেছি যতনে।
শাঁখা সাড়ি সিঁদুর দিলাম
আলতা দিলাম চরণে।
মনে দুঃখু হয় বড়
ফিরে যাতে ভবনে
দয়া কইরে আসবে আবার
থাকে যেন মনে
ভুইলনা ভুইলনা টুসু
আসবে আমার সনে।”

তথ্য সহায়তায়: আনন্দবাজার পত্রিকা

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

1 thought on “পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান দ্বিতীয় পর্ব

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।