পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান ষষ্ঠ পর্ব

পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান
ষষ্ঠ পর্ব

তথ্য সংগ্রহ ও সম্পাদনা আর সম্পাদকীয় কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

পৌষ মাসের গোড়া থেকে বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলার বহু মহিলা টুসুগান গাইছেন। অনেকে রীতিমতো মহড়াও দিচ্ছেন। বিষ্ণুপুরের খড়বাংলা, কাদাকুলি, রঘুনাথসায়ের, বড়কালীতলা, কৃষ্ণগঞ্জ, গোপালগঞ্জ তো বটেই আশেপাশের মধুবন, চৌকান গ্রামেও গত কয়েকদিন ধরে টুসু গানের মহড়া চলে। সেখানেই শোনা গেল বালিখাদান বন্ধ হওয়ায় অনেকের কাজ হারিয়ে সমস্যায় পড়ার কথা।

তাই তাঁরা গান বেঁধেছেন—
‘বালির জন্য কাজ বন্ধ হল, গরিব দুঃখীর অভাব গো/
চলো সবাই দলবেঁধে, সরকারের কাছে যাব গো’।

রোজ পুরুলিয়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে চলে যান গাঁয়ের মানুষ দূর দূরান্তের কর্মস্থলে। সন্ধ্যায় ফিরে আসেন ঘরে। এমন ভাবে বছর যায়। একটা সময়ে টুসু আসে লাল মাটির দেশে, সময়ের স্টেশন পার হতে হতে। মানভূম, পুরুলিয়া—নামগুলো পাল্টে যায়। টুসুর ঠিকানা বদলায় না।

‘‘টুসুর ঘরটাই আসলে আমাদের দেশ,’’ বলছিলেন নিতুড়িয়ার একটি স্কুলের শিক্ষিকা জয়তী দেওঘরিয়া, আদ্রার বেকো হাইস্কুলের শিক্ষিকা রোমি চৌধুরীরা। রবিবার কংসাবতীর চরে চৌডল নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। ট্রেনের নিত্যযাত্রা থেকে আলাপ তাঁদের দশ-বারো জনের। সেই থেকে বন্ধুত্ব। নিজেদের বলেন, ‘পথের সাথী’। ছেলেবেলার টুসু নিয়ে উন্মাদনা বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ক্রমশ ফিকে হয়ে যাচ্ছে বলে গত বছর আক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা।

এ বছর এগিয়ে এসেছেন নিজেরাই। শনিবার চৌডল কিনে এনে রাতভর সাজিয়েছেন। রবিবার নিয়ে এসেছেন কংসাবতীর তীরের মেলায়। গান গেয়েছেন নিজেরাই। সাঁতুড়ির মুরাডি গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা প্রতিভা চার বলেন, ‘‘আমি নিজেও এই জেলারই মেয়ে। টুসুর সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক। মনে হচ্ছিল, নতুন প্রজন্মের কাছে এই উৎসব আকর্ষণ হারাচ্ছে। তাই ছেলেকেও নিয়ে এসেছি।’’ প্রতিভাদেবীর স্বামী উজ্জ্বলকুমার চারও বলছেন, ‘‘নিজেদের সংস্কৃতিকে নিজেরা রক্ষা না করলে কে করবে?’’

জেলার এক গবেষকের মতে, সংস্কৃতি ইতিহাসকে ধারণ করে রাখে। ইতিহাস বলতে আমরা সচরাচর যা বুঝি, তারও একটা ইতিহাস হয়। যেমন, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ওলটপালট হয়ে যায় সব। ঘটন-অঘটন যাই হোক, তার পিছনে খুব ধীরে কাজ করে যায় দেশের নদ-নদী, গাছপালা, বাতাস, মাটি। ইতিহাসের সেই যে ইতিহাস, সংস্কৃতি তারই গল্প বলে। কৃষি সভ্যতা থেকে টুসুকে বছর বছর নিয়ে আসে নদীমাতৃক দেশে।

শিক্ষিকা সুপ্রিয়া বাগ, সুজাতা মণ্ডল, মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়রা বলেন, ‘‘তামাম পুরুলিয়া বঙ্গভুক্তির জন্য হাতিয়ার করে নিয়েছিল টুসু গানকেই। গেয়েছিল, ‘শুন বিহারী ভাই, তরা রাইখতে লারবি ডাং দেখাঁই’। ভাষা আর সংস্কৃতির সঙ্গে মাটির যোগটা যে কোথায়, টুসু ছাড়া আর কী দিয়েই বা সেই সময়ে বোঝানো যেত?’’
এ দিনের মেলায় একটুকরো ছেলেবেলা ফিরে পেলেন তাঁরা। অতিদূর অতীতে এই নদীর তীরেই হয়তো টুসু ভাসিয়ে গিয়েছিলেন নাম না জানা কোনও পূর্বসূরী। উত্তর প্রজন্মকে নিয়ে মকর সংক্রান্তিতে তাঁরা সেখান দিয়ে হেঁটে গেলেন।

কংসাবতীর তীরে এ বার টুসুগান আর চৌডলের প্রতিযোগিতা হয়েছে। ভিড়ও হয়েছিল প্রচুর। তবে জেলা কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো বলছেন, ‘‘মেয়েরা ভোরে গান গাইতে গাইতে চৌডল হাতে নদীর দিকে চলেছে, ছেলেরা গানে গানেই পাল্টা উত্তর দিচ্ছে— সেই টুসু পরব তো এখন ইতিহাসের পাতায়। ভিড় হচ্ছে বটে, কিন্তু সেটা হুজুগে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কাছে পৌঁছনোর জন্য ফের কাজ শুরু করতে হবে।’’

তথ্য সহায়তায়: আনন্দবাজার পত্রিকা

পুরুলিয়া অঞ্চলে প্রচন্ড শীতের পরিপ্রেক্ষিতে হাসি ঠাট্টায় রচনা করা এমন টুসু গান।
জনপ্রিয় টুসুর গান –
“টুসু আমার মা যা চাইবি চা/
টুসু আমার মা দেবী মা শুধু দেয় কিছু নেয় না/
টুসু আমার ঠাকুর মা, সর্বদা অনন্যা/
টুসু আমার মেয়ে সুন্দরী সবার চেয়ে/
টুসু আমার ভালবাসা, মেটে না কভু আশা/
টুসু আমার টুসুধ্বনী, সর্বগুনে গুনমণী/
টুসু আমার প্রেমিকা যা চাই, পাই তা/
টুসু আমার দেবী খুশি হয় অভাবী/
টুসু আমার জীবন, মরেও হয় না মরণ।”

তথ্য সহায়তায়: সংবাদ প্রতিদিন

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

10 thoughts on “পৌষমাসে টুসু পূজা…….. টুসুর বন্দনা লোকগান ষষ্ঠ পর্ব

    1. নতুন আশা! 
      নতুন রেজোলিউশন! 
      নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা! 
      আপনার জীবনে প্রেমের হাসি!
      আপনার জীবনে নেমে আসুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি!
       
      আপনার সাফল্য নতুন বছরের ভাল সময়ের অপেক্ষা রাখে। শুভ নববর্ষ-2020

    1. নতুন আশা! 
      নতুন রেজোলিউশন! 
      নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা! 
      আপনার জীবনে প্রেমের হাসি!
      আপনার জীবনে নেমে আসুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি! 
      আপনার সাফল্য নতুন বছরের ভাল সময়ের অপেক্ষা রাখে। শুভ নববর্ষ-2020

  1. ‘‘মেয়েরা ভোরে গান গাইতে গাইতে চৌডল হাতে নদীর দিকে চলেছে, ছেলেরা গানে গানেই পাল্টা উত্তর দিচ্ছে— সেই টুসু পরব তো এখন ইতিহাসের পাতায়। ভিড় হচ্ছে বটে, কিন্তু সেটা হুজুগে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কাছে পৌঁছনোর জন্য ফের কাজ শুরু করতে হবে।’’

    কুড়মি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল মাহাতো সঠিক বলেছেন। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

    1. নতুন আশা! 
      নতুন রেজোলিউশন! 
      নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা! 
      আপনার জীবনে প্রেমের হাসি!
      আপনার জীবনে নেমে আসুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি! 
      আপনার সাফল্য নতুন বছরের ভাল সময়ের অপেক্ষা রাখে। শুভ নববর্ষ-2020

    1. নতুন আশা! 
      নতুন রেজোলিউশন! 
      নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা! 
      আপনার জীবনে প্রেমের হাসি!
      আপনার জীবনে নেমে আসুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি! 
      আপনার সাফল্য নতুন বছরের ভাল সময়ের অপেক্ষা রাখে। শুভ নববর্ষ-2020

    1. নতুন আশা! 
      নতুন রেজোলিউশন! 
      নতুন উচ্চাকাঙ্ক্ষা! 
      আপনার জীবনে প্রেমের হাসি!
      আপনার জীবনে নেমে আসুক শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি! 
      আপনার সাফল্য নতুন বছরের ভাল সময়ের অপেক্ষা রাখে। শুভ নববর্ষ-2020

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।