যাত্রাপালার আসর- সমাপ্তি পর্ব
তথ্যসংগ্রহ, সম্পাদনার কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
আমাদের দেশের অতি প্রাচীন ও বলবান শিল্পমাধ্যম হলো এই যাত্রাশিল্প। এ মুহূর্তে যাত্রাশিল্প মৌলিক শিল্প মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী। একবিংশ শতাব্দীর প্রত্যাশা ছিল এই যাত্রাশিল্প মাধ্যমটি আমাদের সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে সমাজে একটি নবজাগরণের সৃষ্টি করবে। কিন্তু এই শতাব্দীর শুরুতেই আমাদের লোকজ এই শক্তিশালী মাধ্যমটি মুখ থুবড়ে পড়ে। যাত্রাশিল্পকে নিয়ে আমাদের দেশের মৌলবাদীদের নানামুখী আগ্রাসন, অন্যদিকে এই যাত্রাশিল্পের আয়োজকদের অর্থলিপসার মোহে যাত্রামঞ্চে অশ্লীলতার অভিযোগে নানাভাবে এই লোকজ মাধ্যমটিকে কলুষিত করে তোলে। এদিকে এই সমস্যার গভীরে না গিয়ে দেশের প্রশাসনও পড়ে বিব্রতকর অবস্থায়, ফলে প্রশাসন ও যাত্রাশিল্পের মধ্যে বেড়ে যায় দূরত্ব। নানা প্রকার প্রজ্ঞাপন জারির ফলে যাত্রাশিল্পটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে।
যাত্রাদলের মহাজনরা দিনের পর দিন যাত্রা উৎসবের অনুমতি না পেয়ে অনেকে যাত্রা দলের যবণিকা টানছেন। কে শুনাবে তাদের আশার বাণী, “ওঠো মা ওঠো মুছো তোমার অশ্রুজল”। দীর্ঘদিন পরে হলেও সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মহোদয় রাব্বী মিয়া বলেন, সম্মিলিত প্রয়াসে যাত্রাপালাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। জেলা প্রশাসক মহোদয়ের এ কথার উপর যথেষ্ট শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, সৎ সুন্দর সৃষ্টিশীল কর্মের মন-মানসিকতা প্রশংসার দাবি রাখে। আশাহত যাত্রাশিল্পীদের মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটেছে। যাত্রাশিল্পী মৃণাল কান্তি দে তার এই শিল্প জীবনে যাত্রাশিল্পকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বহু সংগ্রাম করে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ দীর্ঘদিন যাবত লোকসংস্কৃতির শক্তিশালী মাধ্যমটি টিকিয়ে রাখার জন্য সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে, সুশীল সমাজের, সরকারের, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, সাংস্কৃতিক সংগঠনের, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে বহুবার ঘুরে ঘুরে আলোচনা ও সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজার চেষ্টা করে; কিন্তু খুব বেশি সহযোগিতা তারা পায় না।
যাত্রাকে অশালীনতা থেকে মুক্ত করতে এবং যাত্রা শিল্পকে বাঁচাতে সংস্কৃতিবান্ধব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার প্রণয়ন করে যাত্রা নীতিমালা। ২০১২ সালে এই যাত্রা নীতিমালা গেজেটভুক্ত হয়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৮৮টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এখনকার নামকরা যাত্রাদলগুলো হলো যশোরের আনন্দ অপেরা, চ্যালেঞ্জার অপেরা, অগ্রগামী নাট্যসংস্থা, মাগুরার চৈতালি অপেরা, নারায়ণগঞ্জের ভোলানাথ যাত্রা সম্প্রদায়, কোহিনূর অপেরা, গাজীপুরের দিশারী অপেরা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস যাত্রা ইউনিট, খুলনার স্বদেশ অপেরা, রাজমহল অপেরা, রঙমহল অপেরা, ফরিদপুরের মধুচ্ছন্দা যাত্রা ইউনিট, নাটোরের পদ্মযাত্রা ইউনিট, বাগেরহাটের সুন্দরবন অপেরা, লক্ষ্মীপুরের কেয়া যাত্রা ইউনিট ইত্যাদি। বর্তমান সরকার ৭টি বিভাগীয় শহরে শিল্পকলার মাধ্যমে এবং যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সহযোগিতায় যাত্রা উৎসবের আয়োজন করে থাকে।
যাত্রা একটি শিল্প এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার যে কর্মকাণ্ডের উদ্যেগ নিয়েছেন সরকার সেটা সত্যিই সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। আমরা আরো বলতে চাই এই যাত্রাপালার সাথে জড়িত অনেক শিল্পী। সুতরাং যাত্রাপালা বাঁচলে শিল্পী বাঁচবে এবং মানুষ সঠিক দিকনির্দেশনাও পাবে এই যাত্রাপালার মধ্য দিয়ে। যাত্রা মানুষের কথা বলে ও গল্পের মধ্য দিয়ে তারা দেশ, জাতি ও সমাজের কথা বলে। যেমন একজন শিক্ষিত মা তার সন্তানকে সুশিক্ষায় গড়ে তুলেন; ঠিক তেমনিভাবে শিল্প সংস্কৃতিই একটি দেশের সুনাম অর্জন করে দেশ থেকে বিদেশের মাটিতে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিক বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং শিল্পের মতামত মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই সোনার বাংলায় সোনা ফলবে।
তথ্যসুত্র: দৈনিক খবরের আলো
সুন্দর লেখনী, ভালো লাগলো ।
সুন্দর মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম।
জয়গুরু!
যাত্রা মানুষের কথা বলে ও গল্পের মধ্য দিয়ে তারা দেশ, জাতি ও সমাজের কথা বলে। দেশ ও জাতির কল্যাণে শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিক বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং শিল্পের মতামত মূল্যায়ন করতে হবে। তবেই সোনার বাংলায় সোনা ফলবে।
চমৎকার।
শুভেচ্ছা রইলো দাদা।
