বিশ্বত্রাস করোনা! পৃথিবী জেলখানা।
যাত্রাদলের অবক্ষয় (প্রথম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
করোনার আবহে থমকে গিয়েছে চিতপুরের যাত্রাপালা। কবে হবে ফের তাদের পালা তা তারা নিজেও জানে না। কেবলমাত্র অনাহারই নয়,যে অনিশ্চয়তার মেঘ ওদের জীবনে এসে পড়েছে তাতে করে সেই মেঘ যে কবে কাটবে তা নিয়ে রীতিমতো দ্বন্দ্বের মধ্যে দিন গুজরান করছেন ওরা। মানে যারা চিতপুরের যাত্রাপালার সঙ্গে যুক্ত, কেউ একা নয়,যতগুলো অপেরা আছে সকলেরই একই অবস্থা।
ফাল্গুন, চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ এই চারটি মাস যাত্রা দলগুলির কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই চার মাসে যাত্রা দলগুলি ১০০ থেকে ১৫০ পালা করে থাকে বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে। বুকিং শুরু হয়ে যায় আরো অনেক আগে থেকে। কিন্তু এবছর করোনা আবহে বাতিল হয়ে গিয়েছে সব পালা। গ্রামে-গঞ্জে বিভিন্ন সংস্থা, ক্লাব কর্তৃপক্ষকে ফেরত দিয়ে দিতে হচ্ছে টাকা।বড় যাত্রা দলগুলি তবু কিছুটা পালা করতে পারলেও, ছোট দলগুলি ২০-২৫ বেশি পালা করতে পারেনি চলতি বছরে। বছর শুরুতেই ২০ – ৩০ লাখ টাকা ঢেলে বসে আছে প্রযোজকরা।
রোজগার না থাকায় প্রযোজকরাও আর টাকা দিতে চাইছে না কর্মীদের। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা যাত্রাপালার সঙ্গে যুক্ত রোজ মজুরি ভিত্তিতে কাজ করা কর্মীরা। অনামী শিল্পী, মিউজিক-লাইট বয়, যাত্রা দলগুলির ম্যানেজার এদের অবস্থা শোচনীয়। যাত্রা দলগুলির সঙ্গে যুক্ত সাধারণ মানুষ কর্মচারী বেশিরভাগই গ্রাম থেকে আসেন কাজ করতে। গ্রামে ফিরে গেলেও অনেকেই অর্থকষ্টে ভুগছেন। চিৎপুর যাত্রা দলগুলির অফিসে অনবরত ফোন বেজেই চলেছে বিভিন্ন কর্মীদের টাকা চাওয়ার দাবিতে। পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা একাডেমি পরিচালন কমিটির সদস্য কনক ভট্টাচার্য এদিন জানান, ‘অবস্থা খুব খারাপ অন্ধকারে চলে গেল যাত্রা দলগুলি। চৈত্র-বৈশাখ মাসে প্রচুর শো হয়। এবার কিছুই হতে পারল না। আমরা প্রযোজকরা এক টাকাও ঘরে তুলতে পারেনি। আমার নিজেরই ৩০ লাখ টাকা লোকসান হয়ে গেল। কি করে অভিনেতা কলাকুশলী কর্মীদের টাকা দেবো।’
যাত্রাদল গুলি প্রতি বছর রথের সময় নতুন দল গড়ে। রথের দিন আত্মপ্রকাশ করে নতুন যাত্রা পালা নতুন দল। জুলাই মাসে রথ।চলতি বছরে রোজগার না হওয়ায় আগামী বছর কি হবে, কিভাবে নতুন যাত্রা পালা, নতুন দল করা হবে সে বিষয়ে পুরোপুরি অন্ধকারে চিৎপুর যাত্রা পাড়া। রথের দিন নতুন যাত্রাপালা নতুন দল নিয়ে আত্মপ্রকাশ না করতে পারলে, চিৎপুর যাত্রা পাড়ায় এটাই হবে প্রথম অঘটন। করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস গড়িয়ে যাবে বলেই মনে করছেন অনেকে। লকডাউন উঠে গেলেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি-নিষেধ জারি থাকবে। সে ক্ষেত্রে যাত্রা পালা বুকিং পেতেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হবে দলগুলিকে। তার উপর বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আর্থিক মন্দার সম্মুখীন হতে হবে সবাইকেই। তাই সেক্ষেত্রেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ক্লাব বিভিন্ন সংস্থা যাত্রা পালা বুকিং করবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে চিৎপুর যাত্রা পাড়া। তবু এবছর দুর্গাপুজো দেরিতে হওয়ায় কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে দলগুলি।
শিরোনামে সমস্যা হয়েছে । এডিট করুন
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
জয়গুরু!
যাত্রাপালার একাল আর সেকাল ইতিহাস পর্যালোচনা করলে মনটা খারাপ হয়ে যায়।
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
জয়গুরু!
সৃষ্টিশীলসহ সব ধরনের ব্যবসাই লোকসানে পড়েছে। কবে যে সব স্বাভাবিক হবে !
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
জয়গুরু!
এই বিশ্বত্রাস করোনা শুধু যাত্রাদলের ক্ষতিই করেনি, ক্ষতি এবং ধ্বংস করে দিয়েছে মানুষের প্রেমপ্রীতি, ভালোবাসা, আদর, সোহাগ-সহ ব্যবসা-বাণিজ্য, সকল ধর্মের ধর্মীয় সৃংস্কৃতি। করোনা নিয়ে আপনার আলোচনাটি হয়েছে সময়োপযোগী। তবে কবে যে এ থেকে বিশ্ববাসী মুক্তিলাভ করে, তা কারোই জানা নেই।
শুভকামনা থাকলো।
মন্তব্যে মুগ্ধ হলাম। সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন।
জয়গুরু!