বিশ্বত্রাস করোনা! পৃথিবী জেলখানা।
যাত্রাদলের অবক্ষয় (নবম পর্ব)
তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী
ঘরবন্দির আইন ভেঙে ওষুধের বাক্স হাতে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে করোনার চিকিৎসা করছেন ‘আইন ভাঙা বউ’। ‘ঘরে ফিরেছে দুর্গা’য় আবার মহিষাসুরের বদলে ‘করোনাসুর’কে নিধন করে সাধারণের বেশে ঘরে আসছেন দুর্গা। শুধু ভাইরাস জয়ের গল্পই নয়, ভয়াল ভাইরাসে কী ভাবে সারা দুনিয়ার ভোল পাল্টে গেল, তা-ও তুলে ধরার পরিকল্পনা ছিল ‘বিশ্বত্রাস করোনা’ যাত্রায়। ‘ছিল’, কেননা মঞ্চে সত্যিই তুলে ধরা যাবে কি না, রথের দিনে বায়নাশূন্যতায় সবটাই অনিশ্চিত। তুলনায় পটুয়াপাড়ায় কিছুটা হলেও আশার আলো ফিরেছে রথে। কিছু প্রতিমার বায়না পেয়েছে কুমোরটুলি।
রথের দিনটাই কার্যত হালখাতার চেহারা নেয় চিৎপুরের যাত্রাপাড়া। দপ্তর পরিষ্কার করে পুজোর ব্যবস্থা, প্রসাদ বিলি দিয়ে শুরু হয় সিজন। এতদিন এমনই হয়ে এসেছে। নতুন সিজনে করোনাকে খলনায়কের ভূমিকায় রেখে যাত্রার গাঙে জোয়ার আনার পরিকল্পনা করেছিলেন বিভিন্ন অপেরার কর্তারা। কিন্তু করোনাই সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিয়েছে। রথের দিন একটাও বায়না পায়নি চিৎপুর।
পশ্চিমবঙ্গ যাত্রা সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক ও রত্নদীপ, স্বর্ণদীপ এবং সন্ধ্যাদীপ অপেরার কর্ণধার কণক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘গত সিজনেও আমার একটা অপেরা ৭৪টা এবং অন্য একটা অপেরা ১১৪টা শো করেছে। এ বছর যা অবস্থা তাতে কিছুই হবে বলে মনে হচ্ছে না। এই সময়টায় দল, পালা সব ঠিক হয়। রথের দিন অফিসই খুলতে পারিনি।’
ভৈরব অপেরার মেঘদূত গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘এ বছর করোনাই হট টপিক। ওই নিয়ে দু’টো পালা ’আইন ভাঙা বউ’ আর ‘ঘরে ফিরেছে দুর্গা’ তৈরি। কিন্তু বায়না হল কোথায়? আর্টিস্টও ঠিক করা যায়নি।’ তপোবন অপেরার নীলকমল চট্টোপাধ্যায়ও পালায় করোনা রেখেছেন। নতুন সিজনে ‘বিশ্বত্রাস করোনা’ মঞ্চস্থ করবেন বলে ঠিক করেছিলেন। বলছেন, ‘বায়না না হলে ঘর থেকে টাকা বের করে আর্টিস্ট বুক করব কোন ভরসায়? উম্পুনে দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিধ্বস্ত। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের হাল খারাপ, বর্ধমানও সন্ত্রস্ত। পালা দেখবে কে?’
তুলনামূলক ভাবে একটু হলেও আশার আলো দেখেছে কুমোরটুলি। রথের দিন উত্তর কলকাতার পুরোনো এই পাড়াতেও শুরু হয় দুর্গাপুজোর প্রতিমা বায়না। গত বছর প্রথম দিনে প্রায় দেড়শো বায়না হয়েছিল। এ বছর কিছু হবে না বলেই মন খারাপ করে বসেছিলেন শিল্পী ও কারিগরের দল। কিন্তু দিনের শেষে ৩৫টি বায়নায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে তাঁরা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সংস্কৃতি সমিতির পক্ষে বাবু পাল বলেন, ‘গত বছরের সঙ্গে তুলনায় যেতে চাইছি না। পুজো হবে কি না সেটা নিয়েই সংশয় ছিল। তবে বুধবার সকালেও দু’টো বায়না এসেছে।’ খানিক স্বস্তিতে সুনীল পাল, চায়না পাল, মহাদেব পাল, সনাতন পালের মতো শিল্পীরাও। কুমোরটুলিতে অন্তত ১৫০ স্টুডিয়োয় প্রায় ৪০০ শিল্পী কাজ করেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন সবাই। যার জন্য এত কিছু সেই করোনা কি এ বার অসুর হিসাবে দেখা দেবে মণ্ডপে?
একটি অর্থপূর্ণ লেখা পড়লাম যার মধ্যে হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যের সাথেও পরিচিত হলাম। খুব ভালো লাগলো লেখাটি পড়ে। এগিয়ে যান প্রিয় লেখক।
ধারাবাহিক এই পর্ব গুলোন নিয়মিত পড়ে চলেছি। শুভেচ্ছা নেবেন কবি।
চমৎকার লিখনী।