ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- ২০২০ (চতুর্থ পর্ব) ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন

ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- ২০২০ (চতুর্থ পর্ব)
ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভাদুর সময়কাল ও ভাদু পালন:
ভাদু পুজো প্রতি বছর ভাদ্র সংক্রান্তিতে জাঁকজমক সহকারে অনুষ্ঠিত হয়। যদিও এর প্রস্তুতি শুরু হয়ে প্রায় এক মাস আগে থেকেই। ভাদ্র মাসের শুরু থেকেই গ্রামের বাড়ির একটি নির্দিষ্ট স্থানে ভাদুর পিঁড়ি বা চৌকি স্থাপন করে। প্রতিদিন স্নান করে এসে বাড়িয়ে সকল মেয়েরা ভাদু পিঁড়িতে ফুল দিয়ে, ধুপ জ্বালিয়ে ভাদুর উদ্দেশ্যে প্রণাম করে এবং ভাদু গান গেয়ে চলে আরাধনা।

এই ভাবে একমাসব্যাপী চলার পর অবশেষে আসে ভাদ্র মাসের সংক্রান্তি। তবে এর আগের দিন হয় ভাদু ‘রাত জাগরণ’। এই দিন সকাল বেলা বাজার থেকে পিঁড়িতে ভাদুর মৃন্ময় মূর্তি কিনে এনে, তাকে মনের মত করে ফুল-মালা দিয়ে সাজিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর সারারাত ধরে চলে গানের মাধ্যমে চলে ভাদু র আরাধনা।

“তিরিশ দিন রাইখলাম ভাদু তিরিশ টিফুল দিয়ে
আর ত রাইখতে লাইরবঅ ভাদু চাতা হইলঅ বাদী গো।”

তবে ভাদু কে বিসর্জন দেওয়ার আগে ভাদু র মৃন্ময় মূর্তিকে বাড়ির ও গ্রামের সবাই বরণ করে। একে বলা হয় চুমানো। এরপর ভাদু কে মাথায় করে সারাগ্রাম ঘুরে ভাদু কে কোনও নদীতে বিসর্জনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

ভাদুকে বিসর্জনের আগে আরও একবার গ্রামের সবাই মেতে ওঠে ভাদু গান ও নাচে। এরপরই তাদের আদরের ভাদু ধন কে বিদায় দেওয়ার পালা, যদিও তাদের মন চায় না। তবুও নিয়ম তো মানতেই হয়।গ্রামের কোনো মহিলা ভাদুকে মাথায় নিয়ে ধীরে ধীরে প্রবেশ করে জলাশয়ে।

জলাশয়ে আদরের কন্যাকে বিদায় দিয়ে সমস্ত গ্রামের মহিলারা সমবেতভাবে আবেগঘন কন্ঠে গেয়ে ওঠে-
“যাছঅ যদি ভাদুমনি কাঁদঅ কেনে অকারণ।
আর বছরে থাকি যদি আইনব গো প্রাণধন।”

www.youtube.com/watch?v=lrSzhR8f4pk

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

1 thought on “ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- ২০২০ (চতুর্থ পর্ব) ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন

  1. ইন্টারেস্টিং সিরিজ। আমার কাছে ভালো লাগছে। শুভেচ্ছা কবি লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_good.gif

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।