ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- ২০২০ (সপ্তম পর্ব) ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন

ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- ২০২০ (সপ্তম পর্ব)
ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে-লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

ভাদু আদতে লোকজীবনের সঙ্গে লেপ্টে থাকা মেয়েদের গান। শুধু তাই নয়, ভাদু আসলে লোকউৎসবও। যে গান, যে উৎসবের গড়ন, রীতি ঐ রাজপরিবারের দরবার ছাড়িয়ে নেমে এসেছে মাটিতে। এ কেমন করে সম্ভব? ভদ্রাবতীকে নিয়ে আরেকটি গল্পে হয়তো রয়েছে এর ইঙ্গিত। সেই গল্পে ভদ্রাবতী রাজার ঔরসজাত রাজকন্যে নয়।

লাড়া গ্রামের মোড়ল এক ভাদ্রমাসে ধানখেতের আলের পাশ থেকে কুড়িয়ে পেলেন ফুটফুটে এক কন্যাসন্তানকে। তাকে কোলে নিয়েই মোড়ল বুঝলেন, শিশুটি সদ্যোজাত। কে জানে, হয়তো এই উর্বরা ভূমিই জন্ম দিয়েছে তার। যেভাবে ভূমি জন্ম দিয়েছিল সীতারও। মোড়ল শিশুটিকে নিয়ে এলেন ঘরে। সেই ভাদ্র ছিল রোদে পোড়া, খটখটে। কিন্তু, এই মেয়ে ঘরে আসতেই বৃষ্টি এল ঝেঁপে। ধান হল খুব। সবাই বললে, এ মেয়ে ভারী লক্ষ্মীমন্ত। মোড়ল-দম্পতি মেয়ের নাম দিলেন ভদ্রাবতী। ডাকনাম ভাদু। ভাদুর রূপ হল খুব। চাষির ঘরে এমন রূপ মানায় না। রাজা নীলমণি সিংদেওর কানেও গেল ভাদুর কথা। মন্ত্রী ধ্রুবচাঁদকে রাজা বললেন, ওই মেয়েকে তিনি দত্তক নেবেন। রাজপরিবারই ওর যোগ্য স্থান। কিন্তু, ভাদু কিছুতেই যেতে চাইল না বাবা-মাকে ছেড়ে। তখন রাজা গ্রামে-গ্রামে ঢেঁড়া পিটিয়ে বলে দিলেন, রাজপ্রাসাদে না থাকলেও ভদ্রাবতী রাজকন্যেই।

ভাদু তখন ষোড়শী। তার কানে উজিয়ে আসে বাঁশির সুর। গ্রামের কবিরাজের ছেলে অঞ্জন সেই বংশীবাদক। মন দেওয়া-নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে, হইহই করে পঞ্চকোটেও এসে পড়ে ১৮৫৭-র সিপাহি বিদ্রোহের আগুন। বিদ্রোহে মদত দেওয়ার অভিযোগে ইংরেজদের হাতে বন্দি হন রাজা নীলমণি সিংদেও। রাজা বন্দি, এদিকে রাজকন্যে প্রেমে পড়েছে কবিরাজপুত্রর। মন্ত্রী ধ্রুবচাঁদের দুশ্চিন্তা বাড়ে। রাজা মুক্তি পেতেই সে জানায় সবটা। ক্রুদ্ধ রাজা বন্দি করেন অঞ্জনকে।

অঞ্জনের কয়েদের খবরে ছুটে আসে ভদ্রাবতী। তার করুণ আকুতিতেও মন গলে না রাজার। তখন ভাদু, দিনের পর দিন হৃদয় নিঙড়ানো করুণ গান গেয়ে ঘুরতে থাকে কয়েদখানার চারপাশে। সেই গানে একদিন মন গলল রাজার। অঞ্জনকে মুক্তি দিলেন তিনি। কিন্তু, ভাদুর খোঁজ আর মেলে না। কেউ বলল, ভাদু শোকে আত্মঘাতী হয়েছে নদীর জলে। কেউ বলল, আকাশ থেকে মাটিতে নেমেছিল ভাদু, আবার ফিরে গেছে আকাশেই। বাকিরা বলল, ভাদু ভেসে গেছে নদীর কান্নার সঙ্গে। সেই থেকে ভাদুর গান ভাসতে ভাসতে ছড়িয়ে পড়ল বাংলাদেশের নানান কোণে।

এই গল্প বিশ্বাস করতে বড়ো সাধ হয়। যদিও, বীরভূমে গেলে দেখা যাবে ভদ্রাবতী নাকি পুরুলিয়ার নন, হেতমপুরের রাজকন্যে। বর্দ্ধমানের রাজপুত্রকে মন দিয়েছিল সে। ইলামবাজারের কাছে চৌপারির শালবনে ডাকাতরা যখন মেরে ফেলল রাজুপুত্রকে, তখন তাঁর সঙ্গেই সহমরণে গেছিল ভদ্রাবতী। সেই যন্ত্রণার ইতিহাসই নাকি বোনা ভাদু গানে।

www.youtube.com/watch?v=HzCUvwC7fUg

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী সম্পর্কে

লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন। কাব্যচর্চার সাথে সাথে তিনি সাহিত্যচর্চাও করেন। গল্প ও রম্য রচনা আর ছোট গল্প লিখেন। বহু একাঙ্ক নাটকও তিনি লিখেছেন। অন্ধকারের অন্তরালে, সমাজের শত্রু ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বহু যাত্রাপালা -সোনা ডাকাত, শ্মশানে জ্বলছে স্বামীর চিতা উল্লেখযোগ্য। কবির অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিচারক মণ্ডলী তাঁকে বহু সম্মানে ভূষিত করেছেন। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী একাধারে কবি ও অপর দিকে লেখক। তার লেখা “আমার গাঁ আমার মাটি”, আমার প্রিয় শহর জামুরিয়া, আমার প্রিয় শহর কুলটি, আমার প্রিয় শহর আসানসোল, আমার প্রিয় শহর রাণীগঞ্জ বহু পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী প্রকৃতপক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্বী হয়েও তিনি অন্য ধর্মকেও শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বিশ্বাস করেন সব মানুষই ঈশ্বরের সন্তান। তাই ধর্মে আলাদা হলেও আমরা সবাই ভাই ভাই।

2 thoughts on “ভাদুগান ও ভাদু উত্সব- ২০২০ (সপ্তম পর্ব) ভাদুর কাহিনী, আলোচনা ও গীত সংকলন

  1. ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানবেন প্রিয় কবি মি. লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_rose.gif

  2. ভাদুগান ও ভাদু উত্সব নিয়ে অজানা অনেককিছু জানা হয়ে গেলো। শুভকামনা থাকলো শ্রদ্ধেয় কবি দাদা।

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।