সকলের প্রতি আল্লাহ তা’লার শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক।পরম করুনাময় ও মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু-
ইসলাম শব্দের অর্থ আল্লাহকে এক উপাস্য ও মুহম্মদ কে আল্লাহর রাসূল বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা।আল্লাহর পরিচয় হচ্ছে আল ইলাহ।এখানে আল শব্দের অর্থ একমাত্র আর ইলাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা।কাজেই আল্লাহ শব্দের অর্থ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।।অন্যদিকে মুহম্মদ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রশংসিত।আর এই প্রশংসিত ব্যক্তি হচ্ছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূল শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি আল্লাহর বার্তাবাহক আর তার মাধ্যমেই আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে থাকেন।যুগে যুগে আল্লাহ এমন অনেক রাসূল প্রেরন করেছেন যেন তিনি মানুষ ও জিনকে সতর্ক করতে পারেন এবং সঠিক নির্দেশনা পৌঁছাতে পারেন। হযরত মুহ’ম্মদ (সঃ) ঠিক এমনই একজন ব্যক্তি। তার উপর মহান রাব্বুল আ’লামিন আল্লাহ একটি গ্রন্থ নাযিল করেন যার নাম আল কোরআন। এটি এমন একটি গ্রন্থ যেখানে আল্লাহর পরিচয় ও তার সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ ও জীনকে জীবন যাপনের বিষয়ে সকল প্রকার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।আর এই বিষয় নিয়েই আমার আলোচনা চলবে আল্লাহ যদি চান-
সূরাহ ফাতিহা বা উন্মুক্তকরন বা উদ্বোধন। এর শ্রেনী হচ্ছে এটি একটি মাক্কী সূরাহ অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটাই আল্লাহর রাসূলের উপর আল্লাহর বান্দাদের জন্য নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরাহ। এখানে সাতটি আয়াত বা বাক্য রয়েছে-
পরম করুনাময় ও অসীম মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি-
১- সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহ ও তার অধিবাসীদের প্রতিপালন করেন।
২- তিনি অসীম দয়ালু ও অসীম মেহেরবান।
৩- তিনি বিচার দিবসের মালিক।
৪- আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি আর তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
৫- আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো।
৬- তাদের পথ যাদের প্রতি তোমার দয়া ছিলো।
৭- তাদের নয় যারা তোমার নির্দেশ অমান্য করে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তোমার লানতপ্রাপ্ত।
আমিন অর্থাৎ কবুল করো।
এখানে আলোচ্য বিষয় হলো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ভয় করা, সাহায্য চাওয়া এবং সতর্ক হওয়া।
যেমন- আমার খুবই বিপদ আর এমতাবস্থায় আমি এক্কেবারেই অসহায়। আমি এখন মুরুব্বীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা ধার চেয়ে বসলাম। মুরুব্বী বললেন, আরে এটা তো দুধভাত। এই নিন টাকা পাঁচ হাজার। আমার হৃদয়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো। আমি বললাম, দাদাভাই আপনার এই কথা আজীবন আমার স্মরণে থাকবে। তারপর আমি বিপদ্মুক্ত হলাম। তারপর থেকে মুরুব্বীকে দেখলেই সম্মানে আমার হৃদয় তার সামনে যেন বিগলিত হয়ে যায় অবস্থা। দেখা মাত্রই সালাম। এটাকে বলা হয় কৃতজ্ঞ ব্যক্তির পরিচয়। আল্লাহ তা’লা যেমন আমাদের আহার দিচ্ছেন, থাকার জন্য জায়গা দিচ্ছেন এবং পরার জন্য পরিচ্ছদ দিচ্ছেন এটাকে বলা হয় বান্দার প্রতি তার রবের অনুগ্রহ। এই জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলা উচিত আলহা’মদুলিল্লাহ।
আল্লাহ বিচার দিবসের মালিক। এই মুসাফিরি জীবনে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন আমরা যদি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আর নাই করি কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার পর কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করে আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে জীবন যাপন করি বিচার দিবসে তিনি আমাদের এ সবকিছুর জন্য প্রতিফল দান করবেন। হতে পারে সেটা আমাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি যার ভার তোলা অসম্ভব কিংবা একটি সুন্দর জান্নাত যা আমাদের পৃথিবী থেকেও অনেক বড় আর যার মালিক হবো আমরা প্রত্যেকে আর আল্লাহই সেটা দান করবেন। কাজেই উত্তম প্রতিফল পাওয়ার জন্য আল্লাহকে ভয় করে তার নির্দেশনাকে সামনে রেখে পথ চলতে হবে। এটা এই জন্য যে মানুষের মনে দয়া যেমন আছে, আছে জুলুমও। এখান আপনি অন্যের প্রতি দয়া করবেন নাকি জুলুম করবেন এটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু যদি আল্লাহকে ভয় করেন হাজার চাইলেও আপনি কিছুতেই জুলুম করতে পারবেন না অন্যের ওপর।
এখন শান্তি কে আছে যে না চায়? প্রত্যেকেই শান্তি চায় আর একটি চিরস্থায়ী জীবন চায়। এর জন্য উচিৎ হচ্ছে এমন একটি নীতিকে সামনে রেখে জীবন যাপন করা যা আমাদেরকে সেই শান্তিময় চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আর সেটা হচ্ছে আল কোরআনকে সামনে রেখে জীবন যাপন করা আমাদের প্রত্যেকেরই অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের জন্য সব বিধিবিধান এখানে বলে দিয়েছেন যা অনুসরণ করলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন প্রতিটি বিপদ-আপদে, জীবনকে করবেন সুন্দর ও সহজ। এর বিস্তারিত সামনে আসবে আল্লাহ যদি চান।
সতর্ক হওয়ার অর্থ হচ্ছে এমন অনেক মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ তার তার যোগ্যতা মোতাবেক জীবনোপকরন দান করেছেন এবং তাদের অনেকে আছে যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে অর্থাৎ আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় পাশাপাশি এমন একজনের কাছে গিয়েও চায় যে নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে পারে না। যেমন মুরুব্বীকে গিয়ে বললাম আল্লাহ যেমন আমার রব আপনিও আমার রব। আল্লাহ যেমন আমাকে সাহায্য করে আপনিও আমাকে সাহায্য করেন অথচ মুরুব্বী নিজেই আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। এটাকে বলা হয় শরীক করা যাকে শিরক নামেও অভিহিত করা হয়। আবার এমনও অনেক ব্যক্তি আছেন যারা নামাজ পড়েন কিন্তু অন্যের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন কিংবা অন্যকে কষ্ট দেন। এই সকল ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা’লা অভিশাপ দিয়েছেন এবং এদেরকেই আল্লাহ তা’লা পথভ্রষ্ট করেন। তাই সম্পূর্ণ আল কোরআনকে সামনে রেখেই জীবনে পথ চলতে হবে।
আশা করি সুরাহ ফাতিহার ব্যাখ্যার ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই কারো। থাকলে মন্তব্যে জানান চেষ্টা করবো নিজের ভুল সংশোধন করতে নতুবা সঠিকটা জানিয়ে দিতে।
আল্লাহ, আমাকে ও আপনাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করুক।
নৈপুণ্যময় লিখনশৈলী।
একমাত্র সত্য হচ্ছে … আল কোরআনকে সামনে রেখেই জীবনে পথ চলতে হবে।
ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।