ট্যাগ আর্কাইভঃ ইসলাম

ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহ

639581

ঈমান ভঙ্গের কারণ
ঈমান হচ্ছে আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস। আর এই বিশ্বাস বিভিন্ন কারণে বিভিন্নভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আর ঈমান নষ্ট হওয়া মানেই ঈমান ভঙ্গ হওয়া। আজ আমরা কী কী কারণে ঈমান নষ্ট হয়ে যেতে পারে তা জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

প্রাককথাঃ
ঈমান ভঙ্গের কারণ জানতে হলে আগে পরিপূর্ণ ঈমান” কী সেটা জানত হবে। আর পরিপূর্ণ ঈমান কী জানার আগে “ইসলাম”কী সেটা জানা উচিত।

ইসলাম হচ্ছে আল্লাহর পরিপূর্ণ বিধানে আনুগত্য করা। এই পরিপূর্ণ বিধানকে মুখে স্বীকৃতি, অন্তরে বিশ্বাস এবং কাজে পূর্ণ করাই হচ্ছে ঈমান। যার সহজ অর্থ হলো ইসলামের বিধানকে মুখে স্বীকার করা, অন্তরে বিশ্বাস করা এবং সেইমতে কাজ (আমল) করাই হচ্ছে ঈমান। যে এই কাজ অর্থাৎ ঈমান এনে ইসলামের প্রতি আনুগত্যশীল হয় তাকে বলা হয় মুসলিম।

সুতরাং ঈমানের অর্থ হলো আল্লাহ্ এবং আল্লাহ্ সম্পর্কিত সকল বিষয়ের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস। এই বিশ্বাস মূলত তিন ভাবে তথা বিশ্বাসগত, কর্মগত এবং উক্তিগত ভাবে ভঙ্গ হয়ে থাকে। এখন আমরা পবিত্র কুরআন এবং হাদিসের আলোকে প্রধানত কী কী কারণে ঈমান ভঙ্গ তথা বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায় তা জানার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

১) শির্ক করাঃ

আল্লাহ্‌র সাথে শির্ক করার কারণে যেকোনো ঈমানদার তার ঈমান হারিয়ে ফেলে। শির্ক অর্থ হলো আল্লাহ্‌র সাথে অন্যান্য ইলাহ বা উপাস্য সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র সমকক্ষ অন্য কাউকে মনে করা স্বীকার করা বা কাজে প্রমাণিত করা।

বিভিন্নভাবে শির্ক হয়ে থাকে।

ক) ইবাদতের শির্কঃ

আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ মনে করে তার ইবাদত করা হচ্ছে ইবাদতের শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র জন্য যেমন সিজদা, সিয়াম, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হয়। ঠিক তেমনি অন্য কোনো উপাস্যকে যেমনঃ দেবদেবী, আল্লাহ্‌র কোনো বান্দার (পীরের) জন্য বা অন্য কারো (অলি, আউলিয়ার) উদ্দেশ্যে একইভাবে ভাবে জীবিত বা কবরের ব্যক্তির জন্য সিজদা, সিয়াম, মান্নত, কুরবানি, তাওয়াফ ইত্যাদি করা হচ্ছে সুস্পষ্ট শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
” আল্লাহর সাথে অন্য কোন উপাস্য স্থির কর না। তাহ’লে নিন্দিত ও (আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে) বিতাড়িত অবস্থায় জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে ” (বানী ইসরাঈল ৩৯)।

অন্য আয়াতে রাসুল সাঃকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ্ বলেন,

“(হে নবী!) আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকবেন না। তাহ’লে আপনি শাস্তিতে নিপতিত হবেন ” (শু‘আরা ২১৩)।

আল্লাহ্ স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন আল্লাহর সাথে শরিক করা যাবে না। শুধু তাইনয় আল্লাহ্ সরাসরি তাঁর রাসুলকেও নির্দেশ দিয়েছেন শরিক না করার জন্য। অথচ সকল নবী রাসুলগন হচ্ছেন নিষ্পাপ।

আল্লাহ্ এটা এইজন্যই বললেন যাতে মানুষ শির্কের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে। অথচ অনেকে শির্কের সম্পর্কে না জানার কারণে বিভিন্ন পীর অলি আউলিয়াদের দরবারে গিয়ে সিজদা, মান্নত, তাওয়াফ, কুরবানি ইত্যাদি করছে। যদিও এইসব ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।

খ) আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্কঃ

আল্লাহ্‌র গুণাবলীতে অন্য কাউকে গুণান্বিত করা। অর্থাৎ আল্লাহ্‌র যা করার ক্ষমতা আছে তা তাঁর অন্য কোনো বান্দা বা অন্য কেউ করতে পারে এমন বিশ্বাস রাখা হচ্ছে আল্লাহর সিফাতের সাথে শির্ক। অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা হচ্ছে কাউকে জীবন দেওয়া, নেওয়া, সুখ দুঃখ , সন্তান, বিপদে উদ্ধার ইত্যাদি। এখন কেউ যদি আল্লাহর কোনো বান্দার বা অন্য কারো এমন ক্ষমতা আছে বলে বিশ্বাস করে তাহলে তা হবে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“(হে নবী!) বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা ভাল ও মন্দের মালিকও নয়” (রা‘দ ১৬)

“আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব আল্লাহরই। তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা দান করেন পুত্র-কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বন্ধ্যা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি সর্বজ্ঞ সর্বশক্তিমান।” [ আশ শূরা ৪২:৪৯, ৫০ ]

“আর যদি আল্লাহ তোমাকে কোন দুর্দশা (দুঃখ কষ্ট) দ্বারা স্পর্শ করেন, তবে তিনি ছাড়া তা দূরকারী কেউ নেই। আর যদি কোন কল্যাণ (সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য) দ্বারা স্পর্শ করেন তবে তিনিই তো সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” (সূরা আনআম ৬:১৭)

উপরোক্ত আয়াত গুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, সবকিছুর উপরই আল্লাহর ক্ষমতা। তিনিই একক এবং একমাত্র ক্ষমতাবান। তিনিই মানুষকে দুঃখ, দূর্দশা, সুখ, শান্তি, সন্তান ইত্যাদি প্রদান করেন।

তিনি তাঁর ক্ষমতা কাউকে প্রদান করেননি যে অন্য কেউ তা দিতে পারবেন যেমন আল্লাহ্ দেওয়ার ক্ষমতা আছে। সুতরাং কোনো বান্দা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নিকট আল্লাহর ক্ষমতাসীন কিছু চাইলে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

গ) আল্লাহর রাজত্বের সাথে শির্কঃ

আল্লাহ্‌ মানুষ সৃষ্টির সাথে তাদের জীবনযাপন করার জন্য বিভিন্ন বিধিবিধানও তৈরি করে দিয়েছেন। ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনবিধান। যে বিধান বা সংবিধান দিয়ে মুসলমানগণ তাদের সকল সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় কাজ কর্ম পরিচালনা করবে।

এখন যদি কেউ আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে নতুন কোনো দুনিয়াবী বিধান (বাধ্যতামূলক না হলে আপোষে) মেনে নেয় বা প্রতিষ্ঠা করে বা করার জন্য সাহায্য করে তাহলে তা হবে আল্লাহর রাজত্বের সাথে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“জেনে রেখো সৃষ্টি যেহেতু তার (আল্লাহর) সুতরাং সমগ্র সৃষ্টির উপর ক্ষমতা ও একমাত্র (আল্লাহর) তার”( সূরা আরাফ ৫৪”)।
অন্য আয়াতে বলেন,

“আল্লাহ ব্যতীত বিচার ফায়সালা ও শাসন করার ক্ষমতা কারো নেই”। (সূরা নাম আনাম ৫৭)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এহ ঘোষণা দিচ্ছেন যে, সবকিছুর মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্। এবং তাঁর সৃষ্টির উপর তাঁর বিধিবিধানেরই ক্ষমতা চলবে। দুনিয়ার কারো কোনো বিধান বা সংবিধান এখানে প্রযোজ্য নয়। যদি আল্লাহর পরিবর্তে অন্য কিছু তালাশ করে তবে তা হবে শির্ক।

২) কারো মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাওয়াঃ

আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দেন যে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি তাঁর বান্দাদের শোনেন এবং দেখেন। তাঁর বান্দাদের যেকোনো প্রয়োজনে তিনি সাড়া দেন। তারপরও কেউ যদি আল্লাহর কাছে কিছু চাইতে বা বিপদে উদ্ধার হতে আল্লাহর কোনো বান্দাকে মাধ্যম ধরে বা উছিলা মনে করে, তবে তা হবে শির্ক।

আল্লাহ্ বলেন,
“যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তবে আল্লাহর উপর ভরসা কর” (মায়েদাহ ২৩)।

” বলুন, (হে নবী!) আমার পক্ষে আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে ” (যুমার ৩৮)।

অর্থাৎ যারা ঈমানদার তারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করবে। যারা সরাসরি আল্লাহ্কে ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহর কাছে মাধ্যম বানাবে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে ঈমানহারা হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“তারা আল্লাহকে ব্যতিত যার ইবাদাত করে তা তাদের ক্ষতিও করতে পারে না,উপকারও করতে পারে না। তারা বলে, ‘এইগুলি আল্লাহর নিকট আমাদের সুপারিশকারী।’ বল, ‘তোমরা কি আল্লাহকে আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর এমন কিছুর সংবাদ দিবে যা তিনি জানেন না?তিনি মহান, পবিত্র’ এবং তারা যাকে শরীক করে তা হতে তিনি উর্দ্ধে।”(সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ১৮)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“জেনে রেখ, আল্লাহর জন্যই বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য। আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করে তারা বলে, ‘আমরা কেবল এজন্যই তাদের ‘ইবাদাত করি যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেবে।’ যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে আল্লাহ নিশ্চয় সে ব্যাপারে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন। যে মিথ্যাবাদী কাফির, নিশ্চয় আল্লাহ তাকে হিদায়াত দেন না।” (সূরা যুমার : ৩)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, যারা আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া বা পাওয়ার জন্য অন্য কাউকে মিডিয়া বা মাধ্যম লাগাবে বা প্রয়োজন মনে করবে। তাহলে তা হবে আল্লাহর সাথে শির্ক। অর্থাৎ যিনি আল্লাহর কাছে সুপারিশকারী হিসাবে কাউকে মাধ্যম মানবেন তার ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

অর্থাৎ আল্লাহর কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় তথাকথিত পীর অলি আউলিয়া ইত্যাদির দরবারে গিয়ে তাদের নাম করে সিজদা মান্নাত কুরবানি করা হচ্ছে শির্ক। যা ঈমানদারের ঈমান নষ্ট করে শির্কে লিপ্ত করে।

৩) মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করাঃ

কেউ যদি স্বীকৃত মুশরিক কাফিরদের কাফির মনে না করে তাদের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করে তাদের খারাপ মনে না করে, তাহলে ঐ ব্যক্তির ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ সুস্পষ্ট বলেন,
‘নিশ্চয়ই মুশরিকরা অপবিত্র’ (তওবা ২৮)।

“নিশ্চয়ই আহলে কিতাবদের(ইহুদী, খ্রিস্টানদের) মধ্যে যারা কুফরী করেছে এবং শিরক করে তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং এরাই সৃষ্টির মধ্যে নিকৃষ্ট সৃষ্টি” (বায়্যিনাহ ৬)।

অতএব আল্লাহর ঘোষণা চূড়ান্ত যে, ইহুদী, নাসারা, মুশরিক (যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে) তারা চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তাদের ব্যাপারে কখনোই কাফির নয় (তারাও আল্লাহর বান্দা তারাও ভালো কাজে নাজাত পাবে) এমন সন্দেহ করা যাবে না। কেউ এমন করলে তার ঈমান থাকবে না।

৪) ইসলামের বিধানকে অচল মনে করাঃ

আল্লাহর দেওয়া বিধিবিধানকে প্রাগৈতিহাসিক পুরোনো অচল ইত্যাদি মনে করে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা। অর্থাৎ আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুলের দেওয়া বিধিবিধান না মেনে অন্য কোনো দুনিয়াবী বিধি বিধান সংবিধান মেনে চলা এবং ঐটাকেই যথার্থ মনে করা।

সোজা কথায় বর্তমান দুনিয়ায় ইসলামী শাসনতন্ত্রের প‌রিবর্তে মানব সৃষ্ট গনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র ইত্যাদি মেনে চলা হচ্ছে ঈমান বিধ্বংসী কাজ। যারা আপোষে কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়াই ইসলামী বিধি বিধান মানবে না এবং দুনিয়াবী বিধি বিধান প্রতিষ্ঠা করবে এবং মানবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার নারী-পুরুষের সে বিষয়ে ভিন্ন সিদ্ধান্তের অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে ” (আহযাব ৩৬)।

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,
“যে কেউ রসূলের বিরুদ্ধাচারণ করে, তার কাছে সরল পথ (ইসলাম) প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের (রাসুলের সুন্নাহর) বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান”। (সূরাঃ আন নিসা, আয়াতঃ ১১৫)

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা এটা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে ইসলাম ব্যতীত কোনো কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছু মানে, ভালো লাগে বা মানানোর জন্য অন্যকে উৎসাহিত বা চাপ দেয়, তাহলে তার ঈমান বাতিল হয়ে যাবে। যেমন বর্তমান যুগের গনতন্ত্রের রাজনীতি। যেখানে প্রতিনিয়ত ইসলামী আইন বাতিল করে ইসলাম বিরোধী আইন হচ্ছে।

৫) ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করলেঃ

যদি কোনো ঈমানদার ইসলামের কোনো একটি বিধান অপছন্দ করলে সাথে সাথে তার ঈমান চলে যাবে। কোনো অবস্থাতেই কেউ ই ইসলামের কোনো বিধানকে অপছন্দ করতে পারবে না।

আল্লাহ্ বলেন,
“আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।” [ আল বাকারা ২ :৮]

“আর যারা কাফির তাদের জন্য রয়েছে দুর্গতি এবং তিনি তাদের কর্ম বিনষ্ট করে দিবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পসন্দ করে না। অতএব তাদের কর্মসমূহ আল্লাহ ব্যর্থ করে দিবেন’ (মুহাম্মাদ ৮-৯)।

এ আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, ঈমান এনে বা না এনে আমল সমূহ বাতিল হওয়ার অন্যতম কারণ আল্লাহর নাযিলকৃত বিষয় অপছন্দ করা। উক্ত বিষয়ে ঈমানদার হয়ে আমল করলেও অপছন্দ করার কারণে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। অর্থাৎ কারো পর্দার বিধান ভালো লাগে না যদিও সে পর্দা করে। অথবা কারো জিহাদের কথা ভালো লাগে না অথবা পুরুষদের একাধিক বিয়ের অনুমতিও ভালো লাগে না। যদি কারো বিশ্বাস এমন হয় তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

৬) দ্বীনের কোনো বিধান নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করাঃ

কোনো ঈমানদার ইসলামকে নিয়ে বা ইসলামের কোনো বিধি বিধান কাজ আমল নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করলে তার ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“আর যদি তুমি তাদেরকে প্রশ্ন কর, অবশ্যই তারা বলবে, ‘আমরা আলাপচারিতা ও খেল-তামাশা করছিলাম। বল, ‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলের সাথে তোমরা বিদ্রূপ করছিলে’?”[ আত তাওবাহ্ ৯:৬৫]

“তোমরা ওযর পেশ করো না। তোমরা তোমাদের ঈমানের পর অবশ্যই কুফরী করেছ। যদি আমি তোমাদের থেকে একটি দলকে ক্ষমা করে দেই, তবে অপর দলকে আযাব দেব। কারণ, তারা হচ্ছে অপরাধী।[ আত তাওবাহ্ ৯:৬৬ ]

উপরোক্ত আয়াত দ্বারা আল্লাহ্ স্পষ্ট করে দিলেন যে, আল্লাহ্, আল্লাহর রাসুল ও তাঁর আয়াত নিয়ে কেউ যদি খেল, তামাশা, বিদ্রুপ, মজা ইত্যাদি করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে। যেমনঃ অনেকে দাড়ি রাখা, টাকনুর উপর প্যান্ট পড়া, বিভিন্ন বিদআতী কর্মকাণ্ডে জড়িত না হওয়া নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে। যা কখনোই উচিত।

আল্লাহ্ আরো বলেন,
“সুতরাং যারা আমার সাথে সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টামীতে ব্যতিব্যস্ত করে রাখি” (ইউনুস ১১)।

তারা আল্লাহ্ না চাইলে কখনোই হিদায়াত পাবে না। দুষ্টুমিতেই জীবন পার হবে। সুতরাং তাদের সাথে চলাফেরা যোগাযোগ রাখা যাবে না। এব্যাপারে আল্লাহ্ক বলেন,

“আর (আল্লাহ্) কুরআনের মাধ্যমে তোমাদের প্রতি এই হুকুম জারী করে দিয়েছেন যে, যখন আল্লাহর আয়াত সমূহের প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন ও বিদ্রূপ করতে শুনবে, তখন তোমরা তাদের সাথে বসবে না, যতক্ষণ না তারা প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে। অন্যথা তোমরাও তাদেরই মত হয়ে যাবে। আল্লাহ মুনাফিক ও কাফিরদেরকে জাহান্নামে একই জায়গায় সমবেত করবেন’ (নিসা ১৪০)।

তাদের বন্ধু রূপেও গ্রহণ করা যাবেনা। তাদের থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

আল্লাহ্ বলেন,
‘হে মুমিনগণ! আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা তোমাদের ধর্মকে উপহাস ও খেলা মনে করে, তাদেরকে এবং অন্যান্য কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ কর না। আল্লাহকে ভয় কর, যদি তোমরা মুমিন হও। আর যখন তোমরা ছালাতের জন্য আহবান কর, তখন তারা একে উপহাস ও খেলা মনে করে। কারণ তারা নির্বোধ’ (মায়েদাহ ৫৭-৫৮)।

সুতরাং দ্বীন নিয়ে যারাই হাসি ঠাট্টা করবে তাদের থেকে তৎক্ষণাৎ দূরত্ব সৃষ্টি করতে হবে। কেননা দ্বীন নিয়ে তামাশাকারীরা হচ্ছে মুনাফিক। আর মুনাফিকদের জায়গা হচ্ছে জাহান্নামে।

৭) জাদু টোনা বা কুফরী কালাম করাঃ

আল্লাহর উপর বিশ্বাসের পরিবর্তে কেউ যদি জাদু টোনা বা শয়তানী কুফরি কাজের মাধ্যমে কিছু পেতে চায় বা কারো ক্ষতি করতে চায় তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ ঈামান খারিজের কাজ। কুফরি কাজের দ্বারা যত ভালো কাজই হোক না কেন। ইসলামে সকল প্রকার জাদু টোনা করা হারাম।

আল্লাহ্ সূরা বাকারার ১০২ নংং আয়াাতে বলেন,

“আর তারা অনুসরণ করেছে, যা শয়তানরা সুলাইমানের রাজত্বে পাঠ করত। আর সুলাইমান কুফরী করেনি; বরং শয়তানরা কুফরী করেছে। তারা মানুষকে যাদু শেখাত এবং (তারা অনুসরণ করেছে) যা নাযিল করা হয়েছিল বাবেলের দুই ফেরেশতা হারূত ও মারূতের উপর। আর তারা কাউকে শেখাত না যে পর্যন্ত না বলত যে, ‘আমরা তো পরীক্ষা, সুতরাং তোমরা কুফরী করো না। এরপরও তারা এদের কাছ থেকে শিখত, যার মাধ্যমে তারা পুরুষ ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাত। অথচ তারা তার মাধ্যমে কারো কোন ক্ষতি করতে পারত না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া। আর তারা শিখত যা তাদের ক্ষতি করত, তাদের উপকার করত না এবং তারা অবশ্যই জানত যে, যে ব্যক্তি তা ক্রয় করবে, আখিরাতে তার কোন অংশ থাকবে না। আর তা নিশ্চিতরূপে কতই-না মন্দ, যার বিনিময়ে তারা নিজদেরকে বিক্রয় করেছে। যদি তারা জানত।”

অতএব যারাই এইসব করে তাদের আর ঈমানের অস্তিত্ব থাকেনা। আজ উপমহাদেশের অধিকাংশ মানুষই কুফরি কালামে লিপ্ত।

৮) ইসলামের বিপক্ষে কাফিরদের সাহায্য করাঃ

কোনো ঈামানের দাবিদার যদি ইসলামের বিপক্ষে কাফির মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

আল্লাহ্ সূরা আত তাওবাহ্ ২৩ নং আয়াতে বলেন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম। ”

অন্য আয়াতে বলেন,

“তোমাদের মধ্যে যে তাদের (বিধর্মীদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলা যালিমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না ” (মায়েদাহ ৫১)।

অতএব কখনোই বিধর্মীদের আন্তরিকভাবে বন্ধু করা যাবে না যতটুকু দুনিয়ায় প্রয়োজন। সেইসাথে যারা ইসলামের বিপক্ষে বা কোনো মুসলিমের বিপক্ষে বিধর্মীদের সাহায্য সহযোগিতা করবে তাদের ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

৯) কাউকে দ্বীন ইসলাম এবং শরীয়তের ঊর্ধ্বে মনে করাঃ

কেউ যদি রাসুলুল্লাহ সাঃএর আনীত শরীয়তের বিধি বিধান মানার চাইতে অন্য কোনো পীর বুজুর্গের দেওয়া (শরীয়ত বহির্ভূত) কাজ করে বা করাকে জায়েজ মনে করে তাহ‌লে তাঁর ঈমান থাকবে না। কেননা শরীয়তের ঊর্ধ্বে কেউ নেই। ইসলামে যা কিছু চলবে সবই রাসুলুল্লাহর নির্দেশ এবং সম্মতিতে।

এখন কেউ যদি পীর অলি আউলিয়াকে শরীয়তের উৎস ধরে (স্বপ্নের বার্তা, কাশফ) সেইমতো বিভিন্ন বিধি বিধান চালু এবং পালন করে তাহ‌লে তার ঈমান থাকবে না। কেননা ইসলামে একমাত্র অনুসরণ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ।

আল্লাহ্ বলেন,

“(হে রাসুল! আপনি) বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তাহলেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল দয়ালু।” (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ্ আরো বলেন,

“তোমাদের প্রতি তোমাদের রবের পক্ষ থেকে যা নাযিল করা হয়েছে, তা অনুসরণ কর এবং তাকে ছাড়া অন্য অভিভাবকের(শরীয়ত বহির্ভূত কারোর) অনুসরণ করো না। তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ কর”। ( আল আরাফ : ৩)

অর্থাৎ আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাইলে একমাত্র রাসুলের অনুসরণ করতে হবে। রাসুলের প্রদর্শিত পথ ছাড়া অন্য কারো অনুসরণ করা যাবে না।

১০) শরীয়তের বিধিবিধানে কম বেশী বা নতুনত্ব সৃষ্টি করাঃ

কেউ যদি মনে করে আল্লাহ্ এবং আল্লাহর রাসুল কতৃক আনীত ইসলামের বিধানে নতুন করে কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করলে ভালো হবে। অথবা কেউ যদি রাসুলুল্লাহর দেওয়া শরীয়তের নির্ধারিত বিধি বিধানে (ঈমান, আকিদা, আমলে) কম বেশী বা নতুনত্ব ( বিদআত) সৃষ্টি করে বা জায়েজ মনে করে এবং সেইমতো আমলেও করে তাহলে তার ঈমান চলে যাবে।

নতুনত্ব আনা বা বাদ দেওয়ার মধ্যে তারা রাসুলুল্লাহ রিসালাতকে অস্বীকার করে। এর দ্বারা আল্লাহ্ যে তাঁর রাসুল সাঃ দ্বারা ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেটা মিথ্যা হয়ে যাওয়া। অথচ আল্লাহ্ বলেন,

‘যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিকে সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান’ (নিসা ১১৫)।

এটা দ্বারা সুস্পষ্ট যে কিয়ামত পর্যন্ত প্রতিটি মানুষকে একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাঃএর অনুসরণে দ্বীন ইসলামে জীবনযাপন করতে হবে।

কেননা আল্লাহ্ বলেন,

” আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম” (সূরা মায়িদা ৫ : ৩)।

১১) ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্ম তালাশঃ

কেউ যদি আল্লাহর দ্বীন ইসলামকে ছেড়ে অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে তাদেরও ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ্ বলেন,
“যে ব্যক্তি ইসলাম ব্যতীত অন্য ধর্মকে গ্রহণ করবে তার কোন আমল গ্রহণ করা হবে না এবং সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। (আলে ইমরান ৮৫)।

অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ছাড়া আর কোনো ধর্মই আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। সুতরাং ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম কেউ পালন করলে তাকে অবশ্যই জাহান্নামের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।

১২) দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াঃ

কেউ যদি দ্বীন ইসলামের বিধি বিধান বা আমল সমূহকে বোঝা মনে করে তা থেকে বিরত থাকে তাহলে তার ঈমান থাকবে না।

আল্লাহ্ বলেন,

“আর তার চেয়ে বড় যালিম আর কে, যাকে স্বীয় রবের আয়াতসমূহের মাধ্যমে উপদেশ দেয়ার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয় আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণকারী।।[ আস সেজদাহ্‌ :২২ ]

অর্থাৎ যেসব ঈমাদারদের আল্লাহর বিভিন্ন বিষয়ের উপর ঈমান এবং আমল করতে বলা হয় তখন তাদের দ্বীনের হুকুম আহকামকে বোঝা মনে করে। তখন তারা দ্বীনের বিভিন্ন বিধি নিষেধ এবং আমল থেকে নিজেদের গুটিয়ে রাখে। এইসব ব্যক্তিদের ঈমান আর অবশিষ্ট থাকে না।

আল্লাহ্ আরো বলেন,

“আমার স্মরণ (ঈমান, আমল, জিকির ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ (কষ্টে পতিত) হবে এবং আমি তাকে ক্বিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! কেন আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? আমিতো চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এমনিভাবে তোমার কাছে আমার আয়াত সমূহ এসেছিল। অতঃপর তুমি সেগুলো ভুলে গিয়েছিলে। তেমনিভাবে আজ তোমাকে ভুলে যাব’ (ত্ব-হা ১২৪-১২৬)।

অতএব দ্বীন ইসলাম থেকে আল্লাহ্ থেকে কেউ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে তার ঈমান বিনষ্ট হবে।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামী আক্বীদাহ ও তাওহীদ গ্রহণের পর যদি কেউ উপরোল্লিখিত বিষয়গুলিতে নিপতিত হয়, তবে সে ঈমান হারা হবে বা মুরতাদ হয়ে যাবে। তার উপর মুরতাদের হুকুম (মৃত্যুদন্ড) ওয়াজিব হবে। যা কার্যকর করার মালিক হচ্ছেন দেশের সরকার। কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই দন্ড কার্যকর করার অধিকার রাখে না।

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।

মানুষের মর্যাদা কিসে?

মানুষের মর্যাদা কিসেমানুষ ভয়হীন, অশান্তিহীন, নিরাপদ সমাজে বাস করতে চায়। আসলে চূড়ান্ত সুখ-শান্তি (Ultimate happiness and peace) এখানে সম্ভব নয়। পরিপূর্ণ সুখ হলো জান্নাতে। এখানে অর্থাৎ পৃথিবী হলো মর্যাদা অর্জনের প্রতিযোগিতার স্থান, পরীক্ষাস্থল। মর্যাদা কীসে?
.
মর্যাদা হলো আত্মার সংর্ঘষে। আপনি যত বেশি সংর্ঘষে লিপ্ত হবেন তত বেশি মর্যাদাবান হবেন। যত বেশি নির্বিবাদী জীবনযাপন করবেন তত কম মর্যাদাবান হবেন।
.
এটা দু’রকমের হতে পারে। একটা হলো ইচ্ছা করে সংঘর্ষে অবতীর্ণ হওয়া, এটার আমি বিরোধিতা করি। ইচ্ছা করে আত্মাকে সংর্ঘষে নেয়ার দরকার নেই। ইচ্ছা করে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়া নিষেধ, আল্লাহর নীতিমালা পরিপন্থী। বরং কোরআনে আল্লাহ পরীক্ষা থেকে পানাহ চাওয়ার, ক্ষমা চাওয়ার দোয়া দিয়েছেন।
.
আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- জীবনের স্বাভাবিক প্রবাহের মাঝেই যে পর্বগুলো আসে সেগুলোকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করে নিজের মর্যাদা বৃদ্ধি করা। এটাই যথেষ্ট আপনার মর্যাদা অর্জনের জন্য। টেনে টেনে বিপদ ডেকে আনার দরকার নাই।
.
প্রশ্ন হলো- সমস্যা নিবেন কি নিবেন না, মোকাবিলা করবেন কি করবেন না। প্রকৃতপক্ষে মোকাবেলা আপনাকে করতেই হবে। কারণ সময় এবং ঘটনা দুইটা একসঙ্গে লাগানো। সময় এবং ঘটনা দু’টি নিয়েই সৃষ্টি। সময় অতিবাহিত হচ্ছে মানেই ঘটনা ঘটবে। কারো জীবনই সরলরেখায় পথ চলবে না।
.
জীবনে উত্থান-পতন থাকবেই। তিতা-মিঠা, রাত-দিন, আলো-আধাঁর, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না সব মিলিয়েই জীবন। এর মাঝে থেকে সে আত্মাই বেশি মর্যাদাবান হবে যে আত্মা ক্রমাগতভাবে আসা সংঘাতগুলোকে সবরের সাথে মোকাবেলা করেছে। সংঘাতে না জড়ানো পর্যন্ত আত্মা মর্যাদা লাভ করবে না। পরীক্ষাটা হলো এখানেই। পরীক্ষা দিবেন কি না দিবেন সে ব্যাপারে জোরাজুরি নেই, আপনি স্বাধীন। কিন্তু পরীক্ষা না দিয়ে মর্যাদা লাভ হবে না।
.
যেই না আপনার সামনে কোনো সংকট আসলো সংকটের মোকাবেলা করলে আপনি মর্যাদাবান হবেন। সময় ও ঘটনা স্বাভাবিক গতিতেই চলতে থাকবে। অতিক্রান্ত সময় ও অতিক্রান্ত ঘটনা শত চেষ্টা করলেও আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। এটা একেবারে নির্ধারিত, হবেই হবে, এরই নাম ‘কদর’। সূর্য উঠছে, ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে, ১টা, ২টা, ৩টা আর থামবেনা চলবেই। ঘটনাও ঘটবেই।
.
কাজেই যে কোনো ঘটনাতেই হইচই করার বা হতাশ হবার কারণ নেই। আল্লাহর নির্দেশনা মতো সবর করেন, আপনি মর্যাদাবান হবেন। আর যে ব্যক্তি সবর করতে পারে নি, সে মর্যাদাও লাভ করতে পারে নি। এক সময় হয়তো দেখা গেল যে, ঘটনাও নেই, সময়ও নেই, মর্যাদাবান হবার সুযোগও নেই। অর্থাৎ প্রত্যেক ঘটনা, প্রত্যেক সময় প্রত্যেক মো’মেন বান্দার জন্য সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সুযোগ।
.
এই হলো মানুষের মর্যাদার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। সে দৃষ্টিতে মো’মেনদের কোনো ঘটনাই হতাশার নয়, দুঃখের নয়, কষ্টের নয়। যদিও আপনার দুই হাতের কামাই আর কদর, দুটো মিলিয়ে ঘটনা ঘটছে। কিন্তু আপনার এ কামাইটাকে আপনি পরবর্তীতে সুখময় করতে পারবেন এখনকার সবরের কারণে।
.
হেযবুত তওহীদের পথ চলায় বহু ঘটনা ঘটছে এবং একইসাথে সময়ও চলে যাচ্ছে। এরই মধ্যে কেউ মর্যাদায় উপরে উঠে যাচ্ছে, কেউ নিচে নেমে যাচ্ছে। এই যে সময়টা, এটা কিন্তু প্রত্যেকেই ব্যয় করছে। কেউ সেটাকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারছে কেউ পারছে না।
.
যারা এ সময়ের প্রত্যেকটি ঘটনাকে মোকাবেলা করে চলেছে, সংঘাত থেকে পলায়ন করে নি, তারা ক্রমাগত মর্যাদার সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছে। আর যারা সংঘাত থেকে পলায়নপর হয়েছে তারা মানব ইতিহাসের অনেক বড় সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করেছে।
.
সুতরাং বোঝা গেল, মানুষের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় সংঘাতে। ভাল-মন্দের সংঘাত, ন্যায়-অন্যায়ের সংঘাত, গ্রহণ-বর্জনের সংঘাত। কাজেই সংঘাতপূর্ণ কাজ, অপ্রত্যাশিত কাজ, কষ্টের কাজ মো’মেনের জন্য দুঃখের নয়, এটা মর্যাদা বৃদ্ধির একটা উপায়।
.
সংঘাত কীভাবে মর্যাদা বৃদ্ধি করে? একটি উদাহরণ দেই। একজন দাবি করল- সে লোভী নয়। অর্থ-সম্পদের উপর তার কোনো লোভ নেই। এখন তার নির্লোভিতার কোনো পরীক্ষা না দিয়েই কি সে মর্যাদাবান হতে পারবে? না, পরীক্ষা তাকে দিতেই হবে। কারণ তার আত্মা তখনও সংঘাতে জড়ায় নি। যত ভালো ছাত্রই হোক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে সার্টিফিকেট পায় না।
.
ধরা যাক, জনগণের এক লক্ষ টাকা ওই নির্লোভ ব্যক্তির কাছে আমানত রাখা হলো। শুরু হলো তার সংঘাতের পালা, অর্থাৎ পরীক্ষা। এখন বোঝা যাবে সে লোভী না নির্লোভ। আবার যদি সে জনগণের ওই টাকা আমানত হিসেবে রাখতে অনাগ্রহ প্রকাশ করে তার মানে সে মুত্তাকী বটে, কিন্তু আল্লাহ সংঘাত বা পরীক্ষা থেকে পলায়নমুখী মুত্তাকীকে পছন্দ করেন না।
.
আর যদি সে অন্তরের লোভকে দমন করে শেষ পর্যন্ত যথাযথভাবে সেই আমানত রক্ষা করতে পারে তাহলে ওই এক লক্ষ টাকা তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিল। সে ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠিতে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলো। সময়ের নিরন্তর প্রবাহে একটি ঘটনাকে সে তার মর্যাদা বৃদ্ধির সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে পারল। কিন্তু যদি সে এই ঘটনা থেকে পলায়ন করত, তাতে তার মর্যাদা বাড়ত না, আর যদি পরীক্ষায় ব্যর্থ হতো তাহলে মর্যাদাহানি ঘটত।
.
সংঘর্ষ থেকে পলায়নমুখী সবসময় কাপুরুষ। তার দ্বারা না নিজের উপকার হবে, না মানবজাতির উপকার হবে। যারা বলে বেশি সম্পত্তির দরকার নাই, বেশি সম্পত্তি হলে বিপদ, সংঘাত, পরীক্ষা; সে হলো কাপুরুষ। অবশ্যই সম্পদ দরকার আছে। নিজের জন্য দরকার নেই তো কী হয়েছে, মানবতার কল্যাণের জন্য সম্পদ দরকার আছে।
.
সুতরাং মানুষের জীবন প্রবাহ যে কত মূল্যবান, কত অর্থবহ, তা কল্পনাও করা যায় না। এ জীবনপ্রবাহ পাওয়া বিশাল এক ভাগ্যের ব্যাপার। কোটি কোটি টাকার বিনিময়েও এ জীবনপ্রবাহ পাওয়া যাবে না। এ জীবনকে কি আপনি অভিশাপ হিসেবে নিয়েছেন? মরে গেলে ভাল হতো এমন ভাবছেন? তাহলে আপনি জীবনের অর্থই বুঝেন নি।
.
জীবনের বিশাল অর্থ। হাশরের দিন দেখবেন কত মর্যাদা। প্রকৃত মো’মেনরা সংঘাত দেখলে পঙ্গপালের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণ ওখানেই মরতবা, মর্যাদা। যারা আধ্যাত্মিক সাধনা করে, হুজরা খানকার বাইরে বের হয় না, তার চার দেয়ালের মধ্যে বন্দী থাকে, পৃথিবীর যাবতীয় সংঘাত, সংঘর্ষ থেকে গা বাঁচিয়ে থাকে তাদের তো আত্মাই নাই। তাদের আত্মা মরে গেছে।
.
যে আত্মা ক্রমাগত ন্যায়-অন্যায়ের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে আসছে এবং তার মোকাবেলা করছে সে আত্মাই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আত্মা। মাহাত্মটাই হলো সংঘাতমুখী, জীবনটা নির্ধারিত হয়েছে সংঘাতের দিকে, মর্যাদা নির্ধারিত সংঘাতের মধ্যে, অথচ তারা সেখানে যায়ই নি। যত বেশি ছাত্র তত বেশি প্রতিযোগিতা। সেখানে ভাল করলে মর্যাদাও বেশি। যে ক্লাসে একজন মাত্র ছাত্র পড়ে, তাতে রোল নং এক হওয়ায় কোনো মর্যাদা আছে কি?
.
প্রতিযোগিতা যত কঠিন হবে ততই আপনার মর্যাদা বাড়বে। পৃথিবীতে যত বিকৃত সুফীবাদ আছে কখনই তা প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা নয়। প্রকৃত আধ্যাত্মিকতা হলো মো’মেনদের জীবনে যেটা ঘটে। দুনিয়াতে লোভ, কাম, ক্রোধ, ঈর্ষা, অহংকার যা আছে এগুলোর কেন্দ্রে দু’টি বিষয়। জান ও মাল এ দু’টোই যখন মো’মেনরা আল্লাহর রাস্তায় অর্থাৎ মানবতার কল্যাণে অন্য মানুষের শান্তির জন্য বিলিয়ে দেবে তখন তার মর্যাদা কত উপরে উঠে যাবে কল্পনাও করা যায় না।
.
আমাদের পারিবারিক সংকট আসলে, ব্যক্তিগত সংকট আসলে আমরা মুষড়ে পড়ি। এটা ঠিক না। সংকট আসলো মানে মর্যাদা বাড়ার একটা সুযোগ তৈরি হলো। এটা বিরাট একটা সুযোগ। এগুলো মোকাবেলা করব সব আল্লাহর হুকুম মোতাবেক। এই মাপকাঠি (standard) নির্দিষ্ট করে দেয়ার জন্যই নবী-রসুলগণের আগমন ঘটেছিল। কারণ মাপকাঠি লাগবে। কতটুকু পর্যন্ত কাজ করবে, কতটুকু পর্যন্ত যাওয়া যাবে, এগুলোর মাপকাঠি।

আমার কণ্ঠে ইসলাম- সূরাহ ফাতিহা-১

সকলের প্রতি আল্লাহ তা’লার শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক।পরম করুনাময় ও মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু-
ইসলাম শব্দের অর্থ আল্লাহকে এক উপাস্য ও মুহম্মদ কে আল্লাহর রাসূল বলে বিশ্বাস করার মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা।আল্লাহর পরিচয় হচ্ছে আল ইলাহ।এখানে আল শব্দের অর্থ একমাত্র আর ইলাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা।কাজেই আল্লাহ শব্দের অর্থ একমাত্র সৃষ্টিকর্তা।।অন্যদিকে মুহম্মদ শব্দের অর্থ হচ্ছে প্রশংসিত।আর এই প্রশংসিত ব্যক্তি হচ্ছে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। রাসূল শব্দের অর্থ হচ্ছে যিনি আল্লাহর বার্তাবাহক আর তার মাধ্যমেই আল্লাহ মানুষকে সতর্ক করে থাকেন।যুগে যুগে আল্লাহ এমন অনেক রাসূল প্রেরন করেছেন যেন তিনি মানুষ ও জিনকে সতর্ক করতে পারেন এবং সঠিক নির্দেশনা পৌঁছাতে পারেন। হযরত মুহ’ম্মদ (সঃ) ঠিক এমনই একজন ব্যক্তি। তার উপর মহান রাব্বুল আ’লামিন আল্লাহ একটি গ্রন্থ নাযিল করেন যার নাম আল কোরআন। এটি এমন একটি গ্রন্থ যেখানে আল্লাহর পরিচয় ও তার সৃষ্টিকুলের মধ্যে মানুষ ও জীনকে জীবন যাপনের বিষয়ে সকল প্রকার গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।আর এই বিষয় নিয়েই আমার আলোচনা চলবে আল্লাহ যদি চান-

সূরাহ ফাতিহা বা উন্মুক্তকরন বা উদ্বোধন। এর শ্রেনী হচ্ছে এটি একটি মাক্কী সূরাহ অর্থাৎ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এটাই আল্লাহর রাসূলের উপর আল্লাহর বান্দাদের জন্য নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরাহ। এখানে সাতটি আয়াত বা বাক্য রয়েছে-
পরম করুনাময় ও অসীম মেহেরবান আল্লাহর নামে শুরু করছি-
১- সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহ ও তার অধিবাসীদের প্রতিপালন করেন।
২- তিনি অসীম দয়ালু ও অসীম মেহেরবান।
৩- তিনি বিচার দিবসের মালিক।
৪- আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি আর তোমার কাছেই সাহায্য চাই।
৫- আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো।
৬- তাদের পথ যাদের প্রতি তোমার দয়া ছিলো।
৭- তাদের নয় যারা তোমার নির্দেশ অমান্য করে পথভ্রষ্ট হয়েছে এবং তোমার লানতপ্রাপ্ত।

আমিন অর্থাৎ কবুল করো।

এখানে আলোচ্য বিষয় হলো, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, ভয় করা, সাহায্য চাওয়া এবং সতর্ক হওয়া।
যেমন- আমার খুবই বিপদ আর এমতাবস্থায় আমি এক্কেবারেই অসহায়। আমি এখন মুরুব্বীর কাছে পাঁচ হাজার টাকা ধার চেয়ে বসলাম। মুরুব্বী বললেন, আরে এটা তো দুধভাত। এই নিন টাকা পাঁচ হাজার। আমার হৃদয়ে যেন প্রাণ ফিরে এলো। আমি বললাম, দাদাভাই আপনার এই কথা আজীবন আমার স্মরণে থাকবে। তারপর আমি বিপদ্মুক্ত হলাম। তারপর থেকে মুরুব্বীকে দেখলেই সম্মানে আমার হৃদয় তার সামনে যেন বিগলিত হয়ে যায় অবস্থা। দেখা মাত্রই সালাম। এটাকে বলা হয় কৃতজ্ঞ ব্যক্তির পরিচয়। আল্লাহ তা’লা যেমন আমাদের আহার দিচ্ছেন, থাকার জন্য জায়গা দিচ্ছেন এবং পরার জন্য পরিচ্ছদ দিচ্ছেন এটাকে বলা হয় বান্দার প্রতি তার রবের অনুগ্রহ। এই জন্য আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলা উচিত আলহা’মদুলিল্লাহ।

আল্লাহ বিচার দিবসের মালিক। এই মুসাফিরি জীবনে আল্লাহ আমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন আমরা যদি তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি আর নাই করি কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার পর কিংবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করে আল্লাহর নির্দেশ উপেক্ষা করে জীবন যাপন করি বিচার দিবসে তিনি আমাদের এ সবকিছুর জন্য প্রতিফল দান করবেন। হতে পারে সেটা আমাদের জন্য যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি যার ভার তোলা অসম্ভব কিংবা একটি সুন্দর জান্নাত যা আমাদের পৃথিবী থেকেও অনেক বড় আর যার মালিক হবো আমরা প্রত্যেকে আর আল্লাহই সেটা দান করবেন। কাজেই উত্তম প্রতিফল পাওয়ার জন্য আল্লাহকে ভয় করে তার নির্দেশনাকে সামনে রেখে পথ চলতে হবে। এটা এই জন্য যে মানুষের মনে দয়া যেমন আছে, আছে জুলুমও। এখান আপনি অন্যের প্রতি দয়া করবেন নাকি জুলুম করবেন এটা আপনার ব্যাপার। কিন্তু যদি আল্লাহকে ভয় করেন হাজার চাইলেও আপনি কিছুতেই জুলুম করতে পারবেন না অন্যের ওপর।

এখন শান্তি কে আছে যে না চায়? প্রত্যেকেই শান্তি চায় আর একটি চিরস্থায়ী জীবন চায়। এর জন্য উচিৎ হচ্ছে এমন একটি নীতিকে সামনে রেখে জীবন যাপন করা যা আমাদেরকে সেই শান্তিময় চিরস্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবে। আর সেটা হচ্ছে আল কোরআনকে সামনে রেখে জীবন যাপন করা আমাদের প্রত্যেকেরই অবশ্য কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের জন্য সব বিধিবিধান এখানে বলে দিয়েছেন যা অনুসরণ করলে আল্লাহ আমাদের সাহায্য করবেন প্রতিটি বিপদ-আপদে, জীবনকে করবেন সুন্দর ও সহজ। এর বিস্তারিত সামনে আসবে আল্লাহ যদি চান।

সতর্ক হওয়ার অর্থ হচ্ছে এমন অনেক মানুষ আছে যাদেরকে আল্লাহ তার তার যোগ্যতা মোতাবেক জীবনোপকরন দান করেছেন এবং তাদের অনেকে আছে যারা আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক করে অর্থাৎ আল্লাহর কাছে সাহায্য চায় পাশাপাশি এমন একজনের কাছে গিয়েও চায় যে নিজেই নিজেকে সাহায্য করতে পারে না। যেমন মুরুব্বীকে গিয়ে বললাম আল্লাহ যেমন আমার রব আপনিও আমার রব। আল্লাহ যেমন আমাকে সাহায্য করে আপনিও আমাকে সাহায্য করেন অথচ মুরুব্বী নিজেই আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল। এটাকে বলা হয় শরীক করা যাকে শিরক নামেও অভিহিত করা হয়। আবার এমনও অনেক ব্যক্তি আছেন যারা নামাজ পড়েন কিন্তু অন্যের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকেন কিংবা অন্যকে কষ্ট দেন। এই সকল ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তা’লা অভিশাপ দিয়েছেন এবং এদেরকেই আল্লাহ তা’লা পথভ্রষ্ট করেন। তাই সম্পূর্ণ আল কোরআনকে সামনে রেখেই জীবনে পথ চলতে হবে।

আশা করি সুরাহ ফাতিহার ব্যাখ্যার ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই কারো। থাকলে মন্তব্যে জানান চেষ্টা করবো নিজের ভুল সংশোধন করতে নতুবা সঠিকটা জানিয়ে দিতে।

আল্লাহ, আমাকে ও আপনাদেরকে সঠিক জ্ঞান দান করুক।