নক্ষত্রে গোধূলি-৫১

৬৯।
নিচে চেঁচামেচির শব্দ শুনে উঠে দাঁড়ালো। লোকজন উঠছে। বারোটা বাজার দশ মিনিট বাকি। কাজের পোষাক পরে নিচে নেমে এলো। কিচেনের লাইট জ্বালিয়ে গত দুই দিনের অভিজ্ঞতায় যা যা করতে হবে তা করতে করতে কবির নেমে এলো।
-ভাইছাব ঐ মাঝারি ডেকচিটায় চার পট চাউল আনেন।
-আচ্ছা আনছি, এই যে চাউল।
-এবারে এই তাজমহল মার্কা ডালডার বাকেট থেকে এই চামচ দিয়ে সাত আট চামচ ডালডা নেন। লবণ, গরম মশলা দেন, তেজপাতা দেন। এবারে আঙ্গুলের কড় দেখিয়ে বললো এই পরিমাণ পানি দেন।
-আচ্ছা দিলাম।
-এবারে ঢাকনা দিয়ে এই চুলায় বসিয়ে দেন। আজকের পোলাও আপনেই রান্না করলেন। এবারে লক্ষ রাখবেন চালটা ফুটে উঠলেই এই যে ওভেন এইটা জালিয়ে দেন, হ্যাঁ এটা গরম হোক। এইখানে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিবেন দশ থেকে পনের মিনিট। ব্যাস পোলাও শেষ। এরপর ওভেন থেকে বের করে নামিয়ে এইখানে রাখবেন। আজ বেশি কাজ নেই যা আছে ধীরে সুস্থে করা যাবে চিন্তা নাই।
বলে সে নিজেই বাইরে বের হয়ে গেলো বাইরের স্টোরের দিকে। কিছুক্ষণের মধ্যে আদা রসুন নিয়ে ফিরে এলো।
-এবারে ঐ কেটলিতে এক কেটলি পানি গরম দেন। পানি গরম হলে এই রসুনগুলি এই বাকেটে ভিজিয়ে দিবেন। গরম পানিতে রসুনের খোসা ছাড়াতে সুবিধা। এবারে বসে বসে ছুরি দিয়ে আদা গুলি ছিলে এই বাকেটে রাখেন।
দুইজনের আদা রসুন ছেলা হলে একটা ব্লেন্ডার বের করে এনে বললো-
-এবারে এইগুলি পেস্ট বানিয়ে এইরকম কন্টেইনারে রাখবেন। তারপরে ব্লেন্ডারটা ধুয়ে পানি ঝরিয়ে ওখানে রেখে দিবেন। কিচেন ছেড়ে যাবার আগে ঐ যে কুরুনি ওটা দিয়ে পোলাওগুলি এই যে এই ভাবে কুরিয়ে রেখে যাবেন। কুরিয়ে রাখলে পোলাও ঝরঝরে থাকে, দেখবেন সারাদিন লাগাবেন না। দুপুর দুইটার মধ্যে সব শেষ করবেন।
এর মধ্যে মারুফ এলে তাকে বললো-
-আজকে ভাইছাবকে দিয়ে পোলাও রান্না করিয়েছি।
-বাহ! এইতো দেখলেন তিন দিনেই আপনি কুক হয়ে গেছেন। রাতে কি খাবেন বের করেছেন?
-না ভুলে গেছি।
-ঠিক আছে এবারে নিয়ে আসেন।
-সেহেরিরটা?
-হ্যাঁ ওটাও আনেন।
এক প্যাকেট ল্যাম্ব আর এক প্যাকেট মাছ এনে ভিজিয়ে রাখলেন।
মারুফ বললো –
-ভাইছাব আজকের ল্যাম্বটা আপনে রান্না করেন আমি বলে দেই।
-বলেন।
-একটু পরে বলি মাংসের বরফ গলতে দেন আগে।
আজকে বেশ নিরিবিলি মনে হলো, কোন তারা হুড়ো নেই। হাঁক ডাক নেই, সবার মন একটু ভিন্ন রকমের। বেশ গল্পে গল্পে চলছে কাজ কর্ম। প্রায় একটার দিকে মারুফ বললো-
-ভাইছাব এবারে মাংস ধুয়ে একটু পানি দিয়ে সেদ্ধ দেন এখানকার মাংস আমাদের দেশের মত না। এগুলি আগে সেদ্ধ করে রান্না করতে হয়।
একটু সেদ্ধ হলে মশলা দেখিয়ে বললো-
-চামচ নেন, এখান থেকে আমি যেমনে বলি তেমন পরিমাণ মশলা দেন, পিঁয়াজ নেন ওখান থেকে গরম মশলা তেজপাতা এগুলি দিয়ে এই চুলায় বসিয়ে দেন। সবসময় এই চুলাটা ব্যাবহার করবেন এটা ছোটতো তাই।
-আচ্ছা মারুফ ভাই, আপনারা জায়ফল জৈত্রি ব্যাবহার করেন না?
-না আমরা এখানে এগুলি করি না তবে আমি জানি ঢাকাইয়ারা মাংসে জায়ফল জৈত্রি দেয়। আচ্ছা যা যা বললাম তা মনে থাকবে?
-হ্যাঁ থাকতে পারে।

1 thought on “নক্ষত্রে গোধূলি-৫১

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।