ল্যাপটপ ভাজ করে একটু দূরে সরিয়ে রেখে সুবোধ বরুয়া টিভি অন করলো। একটা চব্বিশ ঘণ্টা খবরের চ্যানেল। ওটার এক সিনিয়র রিপোর্টার ঢাকা থেকে উখিয়ায় গিয়ে কাজ করছে। সাথে এক তরুণী; সে স্থানীয় প্রতিনিধি। তরুণীটি রাখাইন বাংলা জানে। একজন রোহিঙ্গা বালকের সব হারানোর কাহিনি তারা রেকর্ড করছে!
বালকটি কি বলছে সুবোধ কিছু বুঝতে পারছেনা; সম্ভবত অনেকেই না। একটু পর তরুণীটি দর্শক-শ্রোতার জন্য তা শুদ্ধ বাংলায় সংক্ষেপে অনুবাদ করে শুনালো।
“বালকটির নাম সামসুল; বয়স নয় বছর। রাখাইনে ওর পরিবার মোটামুটি স্বচ্ছল ছিল। তিনদিন আগে হঠাৎ গেরুয়া রঙের লোকজন এসে তার বাবা মাকে গুলি করে মেরেছে। তাতেও তারা থামেনি। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেহ থেকে তাদের কলিজা বের করে এনেছে। আড়াল থেকে সে সবই দেখেছে। তারপর পাঁচ বছরের ছোট ভাই এর মুখ চেপে ধরে সামসুল ঘর থেকে বের হয়ে দৌড়ে পালিয়েছে। পড়শী শ্যাম চন্দ্রসহ আরো কয়েকজন বন্ধুও ছিল। তারা তিন দিন হেঁটে নাফ নদির এপাড়ে এসেছে। এই তিনদিন ছোট ভাইটির মুখে ন্যূনতম কিছু দিতে পারেনি। সে জানেনা ভাইকে কিভাবে বাঁচাবে। তাকে এক জায়গায় বসিয়ে রেখে সামসুল কিছুক্ষণ আগে খাবারের খোঁজে বের হয়েছিলো! খাবার নিয়ে ফিরে এসে দেখে, আদরের ছোট হারিয়ে গেছে “!
এটুকু অনুবাদ করেই তরুণী থেমে গেলো। আসলে সে থামেনি; বাকহীন থেকে নিযুত কথা বলে গেছে! সুবোধ দেখলো, তরুণীটি যে হাত দিয়ে তার নিজের চোখ ঢেকেছে তা থরথর কাঁপছে; হাতের ভিতর ঢেকে থাকা মুখখানাও।
সুবোধ ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে এক ঝাপটা জল দিয়ে আবার টিভির সামনে বসলো। এবার তরুণীটিকে নয়; নিজের বিবেককে সে কাঁপতে দেখলো! একটা বিশ্বকে কাঁপতে দেখলো। সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো; তাঁর চোখ দুটি এখন নাফ নদি ! এই নাফজল গেরুয়া নয়; বর্ণহীন! তবে মিঠা থেকে নোনা হয়ে গেছে!
সুবোধ আবার টিভির পর্দায় চোখ রাখলো। ক্যামেরাম্যান নয় বছরের নিঃস্ব শিশুটিকে ফোকাস করেছে। পাশে তারই মতো আরেক জন। ওরা নিরুদ্দেশে হাঁটছে! নেপথ্য কন্ঠে বলছিল, রাখাইনের দুই নিঃস্ব শিশু যাচ্ছে!
কিন্তু সুবোধ শুনতে পেল ঈশ্বর বলছেন, “সামসুল বা শ্যাম নয়; মহামতি বুদ্ধ যাচ্ছেন”!
“বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি”!
এমন সহস্র পরিবার গল্পের পটভূমি রাখাইন আরাকানের ঐ আঁধারপল্লী।
শিরোনাম সঠিক হয়েছে মি. ডে। "বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি।"
মন্তব্যে আনন্দিত হয়েছি মিঃ মুরুব্বী।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ !
সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো; তাঁর চোখ দুটি এখন নাফ নদি ! এই নাফজল গেরুয়া নয়; বর্ণহীন! তবে মিঠা থেকে নোনা হয়ে গেছে! ভালো লাগলো লেখাটা মিড ডে ডেজারট
মন্তব্যে আনন্দিত হয়েছি।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ !
অসুস্থতার জন্য অফিসে যাওয়া হয়নি। বাড়িতেই লাঞ্চ করে এসে গল্পটা পড়লাম। এতো ভাই লক্ষ রোহিংগার কথা। আমাদের নজরে যা এসেছে ওরা এর চেয়ে অ-নে-ক বেশি নির্যাতিত হয়েছে যা আমাদের কল্পনায় আসছেনা।
মন্তব্যে মুগ্ধ হয়েছি।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ খালিদ ভাই!
শুধু রোহিঙ্গা নয়; বিশ্বের যেখানেই মানতবতা লঙ্ঘিত হচ্ছে তার জন্য আমি কষ্ট পাই।
যথার্থ বলেছেন। শতভাগ একমত।
আর শিশুদের জন্য বলি, ওরা বিশেষ কোন দেশ, ধর্মের নয়। ওরা সবার।
অশেষ ধন্যবাদ আপনাকে!
সুবোধ শুনতে পেল ঈশ্বর বলছেন, “সামসুল বা শ্যাম নয়; মহামতি বুদ্ধ যাচ্ছেন”! ইনফিনিটি ….
অসাধারণ মন্তব্য; মুগ্ধ হয়েছি দিদি।
* জয় হোক মানবতার…
শুভরাত্রি, সুপ্রিয়।
মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ কবি!
রোহিঙ্গাদের জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অমানবিক এবং বাস্তব কাহিনী এটি। লেখকের সুনিপুণ হাতের ছোঁয়ায় এটি অন্তর স্পর্শ করে গেলো।
এ রকম হাজার হাজার মানবেতর রোহিঙ্গা শিশুরা এর চেয়েও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে।
কাহিনীটি চমৎকারভাবে উপস্থাপনের জন্য লেখককে সাধুবাদ।
"এ রকম হাজার হাজার মানবেতর রোহিঙ্গা শিশুরা এর চেয়েও ভয়ঙ্কর নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে অনুপ্রবেশ করেছে"।—শতভাগ একমত।
দামি মন্তব্যে ভীষণ মুগ্ধ হয়েছি!