প্রক্ষালন, হাগন কুঠি এবং অসহায় কবিতা পাঠক

একঃ
গতকাল শুক্রবার ছিল। বন্ধু মাজহারের চেম্বারে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম।
-এখানে “প্রক্ষালন” কোথায়?
এক মিলিটারি বন্ধু মাজহারকে প্রশ্ন করলো।

উপস্থিত অন্য বন্ধুরা যে যার মতো করে প্রক্ষালনের অর্থ করে মাজহারকে একই প্রশ্ন করতে লাগলো। প্রশ্নে জর্জরিত বন্ধুটি তখন উল্টা জানতে চাইলো,
-তবে কী ইহা কোন মিলিটারি জারগন?
-নহে, নহে। ইহা “হাগন কুঠি”!
মিলিটারী বন্ধু জবাব দিল।

দুইঃ
কবিতার খাতা হাতে দিয়ে একদিন এক আত্মীয়া বললেন, “দেখো তো বাবা, কেমন হয়েছে”! পড়ে দেখলাম। তাঁর ছেলের লেখা কবিতা। ছেলে সবেমাত্র “ও” লেভেল উত্তীর্ণ তখন। আমি গ্র্যাজুয়েশন করছিলাম।

কঠিন সব শব্দ দিয়ে কবিতার নামে সেই আত্মীয়া-পুত্র যে কী লিখেছিল সেদিন তা উদ্ধার করতে পারি নাই। পরে জেনেছিলাম, কোন বড় কবির লেখা টুকিয়ে শব্দগুলি যতোটা সম্ভব পরিবর্তন করে সে নিজের বলে চালিয়ে দিতো। এজন্য সে অভিধান থেকে কঠিনতম সব প্রতিশব্দ খুঁজে বের করতো। তারপর আমি আর তার লেখা পড়ার সাহস করি নাই।

আজ থেকে কয়েক বছর আগের কথা। আমার ফেবু লিস্টে এক কবি যুক্ত হলেন। তিরিশোর্ধ। কয়েকটা কবিতা দেখেই মোটামুটি ঠিক করে রাখি, তার কবিতা পড়ে অনর্থক সময় ব্যয় করবোনা। গয়-গত্তিকে যদি হঠাৎ তার লেখা পড়ে ফেলতাম; তখন নির্মমভাবে মনে হত, “বাংলা কী সত্যিই আমার মাতৃভাষা?!”

প্রায় একই রকম শতটা গল্প আছে। কোন কোন লেখা আমাকে মিসলিড করেছে। প্রথমে সেসবের কাব্যসুখে উচ্ছ্বসিত হয়েছি। পরে নকল জেনে লজ্জিত হয়েছি। আমি আর তাদের লেখার পাঠক থাকিনাই।

একটু মন দিয়ে পড়তে গিয়ে যে বিষয়টা উদ্ধার করেছি সেটা হল, ওপরের ঐসব কবির অনেকেই হয়ত তাদের কবিতার কোন অর্থ দাঁড় করাতে পারবেনা। কারণ উদ্ভট সব শব্দযোগে অনেক সময় তারা শুদ্ধ বাক্যও গঠন করতে পারেনাই। তারা সবাই আসলে কবিতা নকল করতে গিয়ে গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছে।

তিন (শেষ)ঃ
আগে একটা গ্রুপে যেতাম। ওটাকে কবিতার জন্য সবচে উন্নত গ্রুপ মনে হতো। গ্রুপটা সম্ভবত এখন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছে। সেই জৌলশ নাই; আমিও তাই গ্রুপটাতে যাইনা। একেবারেই সময় পাইনা; তবুও মাঝে মধ্যে ভালো লেখা পড়তে ইচ্ছে করে। সম্প্রতি একটা ফেবু গ্রুপে যুক্ত হয়েছি। সেখানে একজনের কবিতা পড়ে আমি কোনভাবেই কোন অর্থ দাঁড় করাতে পারছিলাম না। তখন আগের কথাটা নির্মমভাবে মনে এলো, “বাংলা কী সত্যিই আমার মাতৃভাষা?!” কিছুটা কিউরিয়াস হয়ে এই একটু আগেই তার ওয়ালে গেলাম; এবং সেখানে যা (কবিতা) পেলাম তাতে গতকাল সকালের আড্ডাটা খুব মিস করতে লাগলাম!

কারণ গতকালের আড্ডাটা যদি আজ এখন হোত তাইলে কবিতাটা দেখায়ে বন্ধুদেরকে বলতে পারতাম, “পাইয়াছি পাইয়াছি; তোরা দ্যাখ, এইতো এই যে প্রক্ষালন পাইয়াছি!”

19 thoughts on “প্রক্ষালন, হাগন কুঠি এবং অসহায় কবিতা পাঠক

  1. হাহাহা। লেখাটির বক্তব্যের সত্যতা আমার আত্মবিশ্বাসটিকে আরও পোক্ত করেছে। আমি নিজে লিখতে তেমন না পারলেও অনেক অখাদ্য আমি প্রতিদিনই চিবুই। প্রক্ষালনের জায়গা পাই না। https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Claps.gif.gif

    1. ফেবুতে অকবিতা হচ্ছে, নকবিতা (নকল কবিতা) হচ্ছে এবং কোন কোন লেখা কনফিউজড করে দিচ্ছে, "বাংলা আমার মাতৃভাষা কী"? যে সাহিত্য পড়ে আমি কোন অর্থ করতে পারিনা তা কীভাবে আমাকে সাহিত্য-সুখ দেবে? 

      আপনার সাথে একদম একমত।  

  2. শব্দনীড়ে প্রকাশিত বেশীর ভাগ কবিতাই আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। কি আর করার !! ব্লগটিকে যে নিজের করে নিয়েছি। পড়তে হয়েই। :)

    তবে বিভিন্ন গ্রুপের কবিতা পড়তে পড়তে আমার মাথা ঝিম ধরার জোগার হয়ে গেছে অনেক আগে থেকেই। পরিশেষে প্রক্ষালন না পেয়ে ফেসবুক ছেড়ে দিয়েছি।  devil

    1. মুরুব্বীর মন্তব্যে যে প্রতিমন্তব্যটা করেছি সেটাই নিচে কপি পেস্ট করলাম। আপনার মন্তব্যের ২য় ভাগের সাথে কেউই সম্ভবত দ্বিমত করতে পারবেনা।

      "শব্দনীড়ের কবিতা বিষয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই।

      এখানে অনেক কবি আছেন যারা প্রকৃতই জাত কবি। তাঁদের মধ্যে আবার বেশ ক'জন আছেন যারা আমার কাছে বিস্ময়-জাগানিয়া !! অবিশ্বাসযোগ্য ঠেকতে পারে; কিন্তু এটা সত্য যে মন ভার হলে আমি উনাদের কবিতা পড়তে আসি।"

      আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ !

  3. কবিতার পাঠকের মনো অবস্থার প্রতি আমি সমবেদনা জানাই। 

  4. প্রতি বছরের মতো এ বছরও ইতিমধ্যে দেশব্যাপী শুরু হয়ে গেছে নানান রঙের নানান ঢঙের কবি আর কবিতার মহোৎসব!…
     এছাড়া সারা বছরই লেগে থেকে তথাকথিত কবি সম্মাননা, জমকালো আয়োজনের এসব সম্মাননা যারা দিচ্ছেন বা যারা নিচ্ছেন তাদের অধিকাংশই কবিতার বাহিরের মানুষ।
    আসলে এখন কবিরা কবিতা লিখছে কম
    আর ফেসবুকার'রা কবিতার দখল নিচ্ছে বেশী।

    এই অপচেষ্টা ও অপসংস্কৃতি রোধ করা না গেলে কবিদেরকে আরো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।

    1. "ফেসবুকার'রা কবিতার দখল নিচ্ছে বেশী।

      এই অপচেষ্টা ও অপসংস্কৃতি রোধ করা না গেলে কবিদেরকে আরো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হবে।"

      আপনার এই পর্যবেক্ষণ যথার্থ।

      মন্তব্যে মুগ্ধ হয়েছি। অশেষ ধন্যবাদ!

       

  5. অভিজ্ঞতা জানলাম প্রিয় মিড দা। আজকাল বিভিন্ন সাহিত্য অনুষ্ঠানে যাবার সুযোগ হচ্ছে। কবিতা পাঠের নামে যা শুনছি তাতে করে কানে হাত চাপা দিতে ইচ্ছে করছে। :(

    1. ঠিক বলেছেন দিদি। নকল করার সুযোগ বেড়ে গেছে। প্রচার এবং প্রসারে অকবি, নকবি (নকল কবি) দেরও সুযোগ বেড়েছে নানান ভাবে।

      তবে শব্দনীড় আমার কাছে কবিতার এক অনন্য সাধারণ প্লাটফর্ম। এখানে অনেক কবি আছেন যারা প্রকৃতই জাতকবি। তাঁদের মধ্যে অনেকের কবিতা আমার কাছে বিস্ময়-জাগানিয়া সুন্দর!!  

       

  6. কবিতাটা দেখায়ে বন্ধুদেরকে বলতে পারতাম, “পাইয়াছি পাইয়াছি; তোরা দ্যাখ, এইতো এই যে প্রক্ষালন পাইয়াছি!” আহা !! devil

  7. মোটামুটি অনেকেই তাদের মতামত দিয়েছেন। শুভেচ্ছা মি. মিড ডে ডেজারট।

    এখন আমি কবিতা পড়তে গেলে অসুস্থ্য বোধ করি। শব্দনীড় না হলে কবিতা নামের এই শব্দজট থেকে আমি অনেক আগেই পালাতাম। হালের বেশীরভাগ কবিতাকে আমার অন্তঃসার শূন্য মনে হয়। (শব্দনীড় লেখকরা অখুশি হলেও আমার কিছু করার নেই। কবিতার প্রতি আবার অামার অতি সৌজন্যতাবোধের প্রকাশেও পুলকিত হওয়ার কিছ নাই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত ) https://www.shobdonir.com/wp-content/plugins/wp-monalisa/icons/wpml_Confused.gif.gif

    1. শব্দনীড়ের কবিতা বিষয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই।

      এখানে অনেক কবি আছেন যারা প্রকৃতই জাত কবি। তাঁদের মধ্যে আবার বেশ ক'জন আছেন যারা আমার কাছে বিস্ময়-জাগানিয়া !! অবিশ্বাসযোগ্য ঠেকতে পারে; কিন্তু এটা সত্য যে মন ভার হলে আমি উনাদের কবিতা পড়তে আসি।

      আপনার সুস্থতা কামনা করছি মিঃ মুরুব্বী!

      1. ধন্যবাদ স্যার। 

        এম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে। আগামী ১৬ই ডিসেম্বর দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবো ইনশাল্লাহ। আমার জন্য দোয়া করবেন। সময় পেলে কথা  বলবেন। ভালো লাগবে। 

  8. কাল সকালে ফ্লাই করবো।

    ধারণা করছি, এঞ্জিওগ্রাম করা হবে সাথে প্রয়োজন পড়লে রিং পরানো অথবা অন্যকোন ইন্টারভেনশন।  

    যদি এঞ্জিওগ্রাম হয় তবে আশ্বস্ত হোন যে, এতে তেমন কোন ঝুঁকি নেই বললেই চলে। এখন মেডিক্যাল সায়েন্স অনেক উন্নত হয়েছে। 

    নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা আপনার সহায় হবেন!

মন্তব্য প্রধান বন্ধ আছে।